এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • বিজ্ঞান-মনস্কতার অ-আ-ক-খ # দুই

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩৯০১ বার পঠিত
  • [গ] বিজ্ঞানমনস্কতা বলতে কী বোঝায়

    এপর্যন্ত পড়ে কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, বিজ্ঞান-মনস্কতার কথা বলতে বসে আমি স্রেফ ভূগোল আর ইতিহাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কেন? বিজ্ঞান নিয়ে এখন অবধি একটাও কথা তো পাড়িনি। বিজ্ঞান বাদ দিয়ে বিজ্ঞান-বোধ হয় নাকি? বিজ্ঞান মানে বিশেষ জ্ঞান যা পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্তের উপর প্রতিষ্ঠিত—এই সব কথা তো বলছি না। বিজ্ঞান মানে সব কিছুকে যুক্তি তর্ক করে বিচার বিশ্লেষণ করে তবে গ্রহণ করতে হবে—সেই সব পুরনো কাসুন্দির কথা তুলছি না তো? ধান ভানতে বসে শিবের গীত গাইছি কেন?

    সেই কথাই এবার বলব। তারও কারণ আছে।

    বিজ্ঞান-মনস্কতা মানে নিছক বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সচেতনতা নয়, প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষতা বা সপ্রতিভতা নয়। বিজ্ঞান-মনস্কতা মানে হল বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি, যুক্তিশীল মননচর্চা, বৈচারিক চিন্তাকৌশল। ব্যাপারটা এমন নয় যে শুধু বিজ্ঞানের ছাত্রদেরই বিজ্ঞান-মনস্ক হওয়া প্রয়োজন, অন্য বিষয়ের ছাত্রদের বিজ্ঞান-বোধ না থাকলেও চলবে। বিজ্ঞানের কোনো বিষয় নিয়ে পড়ি বা না পড়ি, শিক্ষকতা গবেষণা করি বা না করি, সবাইকেই সব কিছু বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তির আধারে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। বিজ্ঞান আর বৈজ্ঞানিক মানসিকতা পরস্পর সম্পর্কিত হলেও দুটো ঠিক এক জিনিস নয়। একটা হলেই আর একটা হয় না। আপনা আপনি হয় না। একজন বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে, গবেষণা করে, চর্চা করে, ছাত্র পড়ায়—কিন্তু হাতের আঙুল ভর্তি আংটি; একটা হয়ত মঙ্গলকে ভয় দেখাচ্ছে, আর একটা হয়ত আবার ভাইরাস ব্যাকটিরিয়াদের শাসন করার কাজে ব্যস্ত, তৃতীয়টার উদ্দেশ্য কোনো জটিল মামলা জেতা, ইত্যাদি—এমন তো আকছারই দেখা যায়। যারা এইরকম আংটি পরে, ধাতুরত্ন ধারণ করে, তার পক্ষে তারা আবার কত বৈজ্ঞানিক যুক্তি দেয়! বস্তুর উপর বস্তুর কি ক্রিয়া নেই? জীবাণুদের সম্পর্কে রসায়ন-শাস্ত্র রাসায়নিক অস্ত্র ধারণ করতে বলছে না? কিংবা, সব শেষে একখানা মোক্ষম প্রশ্ন, “বিজ্ঞান কি সব জানে?” আর অন্যরা জানুন বা না জানুন, বিজ্ঞানের লোকেরা তো জানেই—যে বিজ্ঞান এখনও সব জানে না, আর কখনও সব জানবে বলে মনে করে না। সুতরাং . . .

    এমন অনেককেই দেখা যায়, যারা ভগবান মানে না কিন্তু যাদের ভূতের ভয় আছে। কিংবা তাদের হয়ত ভূত-প্রেতে ঘোর অবিশ্বাস, অথচ ছেলেমেয়ের কোনো সময় কঠিন অসুখ-বিসুখ হলে মা কালীর থানে বা রাস্তার মোড়ের শনিঠাকুরের বেদীতে দু টাকার বাতাসা মানত করে রাখে। আবার এমনও বহু লোক আছে, যাদের পড়াশুনো কলা বিভাগে, কিন্তু খাদ্যাখাদ্য বিচারে রান্নার উপকরণে ছেলেমেয়ের পোশাক বা স্বাস্থ্যের প্রশ্নে তারা অত্যন্ত যুক্তিশীল এবং বিজ্ঞান-মনস্ক।

    ধরুন, বিজ্ঞাপনে দেখাচ্ছে, কমপ্ল্যান খেলে একটি ছেলে বা মেয়ে দ্বিগুণ তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে, লম্বা হবে। বহু লোক বিশ্বাস করছে। তারা বেশিরভাগ লক্ষই করছে না, যে স্কেল দিয়ে বৃদ্ধিটা দেখানো হচ্ছে, তাতে চার ফুট পর্যন্ত উচ্চতার মাপটা ফুটে দেখিয়ে বৃদ্ধির পরিমাপ দেখানো হচ্ছে সেন্টিমিটারে। কেন? এরকম স্কেল বাজারে হয় নাকি? কারোর উচ্চতা আপনি কি বলবেন চার ফুট পাঁচ সেন্টিমিটার? তার মানে বিজ্ঞাপনটায় গোলমাল আছে। বা কোনো গূঢ় মতলব আছে। কজন সাধারণ মানুষ এটা খেয়াল করেছে? এই ধরনের একটা সাধারণ চালাকি বোঝার জন্য কি বিজ্ঞান পড়ার বিশেষ দরকার আছে? রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অ্যাকাউন্টেন্সিতে অনার্স নিয়ে পড়লে এটা বোঝা যাবে না? বরং বাস্তবে আমরা দেখছি, বিজ্ঞানের ছাত্ররাও এটা ধরতে পারছে না। তাদেরও একটা বিরাট অংশ এই সব বিজ্ঞাপনী চালাকিতে ভিরমি খেয়ে যাচ্ছে। এবং লম্বা হওয়ার জন্য রোজ রোজ কমপ্ল্যান খাচ্ছে। অথবা তীক্ষ্ণবুদ্ধি পাওয়ার জন্য শক্তি সঞ্চয় করার জন্য অন্য কিছু খাচ্ছে। এই প্রশ্নটা তারা করছে না, স্বাস্থ্যবান হওয়া বা লম্বা হওয়ার যে জৈবিক প্রক্রিয়া, এই ধরনের কৌটোবন্দি খাদ্য বা পানীয় তার উপরে কীভাবে প্রভাব ফেলে। অথবা আদৌ ফেলতে পারে কিনা।

    রাজশেখর বসু তাঁর একটি বৈজ্ঞানিক মনোভাব সংক্রান্ত প্রবন্ধে দেখিয়েছিলেন, বিজ্ঞাপনে কীভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ঠকানো হয়। কোনো একটি মাথার তেলের কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনে লিখেছিল, “ইহাতে পারদ নাই।” যেন, অন্য সব প্রস্তুতকারকের তেলে ভেজাল হিসাবে পারদ থাকার কথা। আজ বেঁচে থাকলে তিনি দেখতে পেতেন, সেই সাবেকি কায়দাটা আজও মরেনি। আজ আবার কোনো এক তেল উৎপাদকের হয়ে একজন বিখ্যাত ফিল্মি নায়ক বলছেন, তাঁদের বিজ্ঞাপিত তেলে নাকি অ্যামোনিয়া নেই। এই রকম অসংখ্য বিজ্ঞাপনী চালাকি ধরতে না পারার পেছনেও আছে বিজ্ঞানমনস্কতার অভাব।

    [ঘ]
    এবার কয়েকটা কাজের কথা পাড়া যাক।

    বিজ্ঞান-মনস্কতার প্রধান প্রধান লক্ষণগুলি কী কী?

    অবিশ্বাস, ভয়, কৌতূহল, সংশয়, প্রশ্ন, . . . ।

    সে কি? কী বলছেন মশাই? এসব তো নেতিবাচক লক্ষণ।

    ঠিক তাই। বিজ্ঞান-মনস্কদের যে লোকে নাস্তিক বলে জানেন নিশ্চয়ই। সেটা এই কারণেই বলে। সব ব্যাপারেই শুরুতে তারা খালি বলে—না, না, না, নাস্তি, নাস্তি, নাস্তি, . . .। এতে বিশ্বাস করতে পারছি না, ওটা বলতে ভয় পাচ্ছি পাছে ভুল প্রমাণ হয়ে যায়, অমুক তত্ত্বটায় ঘোরতর সন্দেহ আছে ঠিক হবে কিনা, . . ., ইত্যাদি। আর কেবলই বলেন, জানি না, খানিকটা জানা গেছে, অনেক কিছু এখনও জানায় বাকি আছে, অল্প অল্প করে জানা যাচ্ছে, এই রকম আর কি। সহজে কোনো প্রস্তাবে কিছুতেই হ্যাঁ বলতে পারেন না বিজ্ঞান জগতের লোকেরা। একেবারে বলেন না তা নয়, তবে না-এর তুলনায় হ্যাঁ-এর সংখ্যা খুব কম। মাইকেল ফ্যারাডে এক সময় একটা গড় হিসাবে বলেছিলেন, বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের দশটা প্রস্তাবের নটাতেই নাকি ওনারা না বলে দেন। একটাতে অতি কষ্টে হ্যাঁ বলেন। সায় দেবার ব্যাপারে বড্ড কিপটে। বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যান। দেখবেন, প্রতিটি ব্যাপারে খালি প্রশ্ন, প্রশ্নের পর প্রশ্ন। কী ভয়ানক সন্দেহবাতিক ভাবা যায় না। কারোর সঙ্গে কারোর ঝগড়াঝাঁটি আছে, ব্যাপারটা এমন নয় কিন্তু। হয়ত বাইরে গলায় গলায় ভাব। কিন্তু বিজ্ঞানের সমস্যা এলে, পরীক্ষার ফলাফলের কথা উঠলে অমনি তক্কাতক্কি শুরু হয়ে যায়। তাঁদের শুধু ভীষণ ভয়, পাছে কিছু একটা ভ্রান্ত তত্ত্ব সম্মেলনে গৃহীত হয়ে যায়।

    তুলনায় একটা ধর্মের জলসায় গিয়ে দেখুন। কোনো একজন বড় ধার্মিক সাধুর বচনামৃত পাঠ করুন। বারবার কী দেখতে পাবেন? বিশ্বাস, নির্ভাবনা, নিঃসন্দেহ, নিস্তর্ক, মেনে নেবার আগ্রহ, . . . । যেমন এদেশে তেমনই ওদের দেশে। আমাদের পূর্বপুরুষরা যখন বলতেন, “বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ তর্কে বহুদূর”, লাতিনে ওরা বলত “Credo ut intelligam” (বিশ্বাস করলে তবেই আমি বুঝতে পারব)। এগুলো সবই হচ্ছে ইতিবাচক লক্ষণ। সব কিছুতেই হ্যাঁ বলবার ঝোঁক বা ইচ্ছা। এই জন্যই ধর্মে বিশ্বাসীদের লোকে আস্তিক বলে। তারা সব কিছু সহজে মেনে নেয়, বিশ্বাস করে, তাদের কোনো ব্যাপারেই খুব একটা সন্দেহ হয় না, প্রশ্নও জাগে না। তাদের মনে কোনো কিছুই গভীরে গিয়ে জানার খুব একটা ইচ্ছা নেই। ধর্মগুরুরা আবার মানা করেও দেন। যেমন, রামকৃষ্ণ রূপক ছলে বলে দিয়েছিলেন, “বাগানে আম খেতে এয়েছ খেয়ে যাও; বাগানে কটা গাছ, গাছে কটা করে আম—এত খোঁজে তোমার দরকার কী?”

    শিবদুর্গার তিনটি ছেলে মেয়ে স্বাভাবিক, কিন্তু গণেশের বেলায় হাতির মুন্ডু। তা-ই কোটি কোটি লোক দু তিন হাজার বছর ধরে মেনে এসেছে। সন্দেহ করেনি, প্রশ্নও তোলেনি। গণেশের একটা মাথা থাকা দরকার, আছে। তা হাতির না কিসের, অত খোঁজে দরকার কী বাপু আমাদের?

    আচ্ছা, সে না হয় পুরা কালের কথা। কিন্তু এই সেদিন যে পাথরমূর্তি গণেশের শুঁড় দিয়ে দুধ পানের গল্প দেশময় ছড়িয়ে গেল, শুধু সাধারণ পিকলু-ন্যাবলা-পাচি নয়, বহু ডক্টরেট, অফিসার, ম্যানেজার, আইনজ্ঞ তথা ভিআইপি যে গ্লাশে দুধ আর হাতে চামচ নিয়ে রাস্তায় লম্বা লাইনে আম আদমিদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়লেন, সারা দেশে কম বেশি বাহাত্তর লক্ষ লিটার দুধ মাটিতে খেল, তার পেছনেও তো সেই আদি অকৃত্রিম বিশ্বাস। প্রশ্ন বা সন্দেহ নেই। মেনে নেবার কী অসীম আগ্রহ। প্রত্যকেরই বক্তব্য, গনেশের ধাতব বা পাথরের মূর্তি দুধ যদি না-ই খাবে, এত এত লোকে তাহলে ছুটে এল কেন? সকলেই কি বোকা?

    বিজ্ঞান-মনস্কতা এই অন্ধ বিশ্বাসকেই বদলাতে চায়। আগেভাগেই বিশ্বাস না করে, প্রথমে প্রশ্ন কর, নানা দিক থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বুঝবার চেষ্টা কর, সমস্ত সন্দেহ মোচন হলে তবে মানবে। তথ্য যুক্তি প্রমাণ ও প্রয়োগ—এই হল বিজ্ঞান তথা বিজ্ঞান-মনস্কতার প্রধান চারটে স্তম্ভ। নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করে বাস্তব তথ্য যোগাড় কর, তার মধ্যে তুলনা করে হিসাবনিকাশ করে মাপজোক করে যুক্তি দিয়ে সাজিয়ে মূল পরিঘটনাটিকে দেখার চেষ্টা কর। হাতে কলমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করা যায় কিনা দেখ। যে সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসছে তাকে কোন জায়গায় কীভাবে প্রয়োগ করা যায় দেখ, অর্থাৎ, তাকে কাজে লাগানো যায় কিনা দেখ। তারপর সেই সিদ্ধান্তকে গ্রহণ কর।

    আমার অবশ্য মাঝে মাঝে মনে হয়, আস্তিক নাস্তিক শব্দ-জোড়ার অন্য রকম অর্থও থাকা সম্ভব। যে বিচারের ধারায় যুক্তিবুদ্ধি স্বভাবগতভাবে অস্তমিত হয়ে যায় তাই হল আস্তিক দর্শন। পক্ষান্তরে, যে ধরনের চিন্তাধারার মধ্যে যুক্তিতর্ক প্রমাণ ও প্রয়োগের বুদ্ধি আবশ্যিকভাবে ন্যস্ত রয়েছে, তাকে বলা হয় নাস্তিক দর্শন। এইভাবে ভাবলেই বা ক্ষতি কী?

    [ঙ]
    এই পার্থক্যটা ঠিকমতো বোঝার দরকার আছে। কেন না, অনেক সময়ই কিছু লোককে বলতে শুনি, ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের নাকি কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ নাকি দুই তরফেরই কট্টরপন্থীদের মধ্যে। সত্যিকারের ধর্মের সারকথা যে মেনে চলে সে নাকি সত্য জানতে কখনও আপত্তি করে না, বরং জানতেই চায়। সত্যিকারের বড় বিজ্ঞানীদেরও নাকি ধর্মের প্রতি কোনো অসহিষ্ণুতা নেই, তাঁরা নাকি ধর্মকে বুঝতে চান, অনেকে নিজেরাই ধর্মপ্রাণ হয়ে থাকেন। ইত্যাদি।

    এই বক্তব্যে আমার দ্বিবিধ আপত্তি আছে। আপত্তিটা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গায় গিয়ে নয়। যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাস করেন কিন্তু বিজ্ঞানের কাজটা বিজ্ঞানের নিয়মেই করেন, তাঁদের এই বিশ্বাস-আচরণের দ্বিভাজন (dichotomy) নিয়েই আমার আপত্তি। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী বিজ্ঞান চর্চা করা যায় না বলেই তাঁদের জোড়াতালি দিতে হয়। অক্ষয় কুমার দত্তের ফরমুলা অনুযায়ী বলতে পারি, জ্বর হলে আপনি মা কালীর নাম করতে পারেন, প্যারাসিটামল খেতে পারেন, আবার মা কালীর নাম নিতে নিতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। জ্বর কমার হলে ওই ওষুধেই কমবে। মা কালীর নামের মাহাত্ম্যে নয়। বীজগণিতের সমীকরণের আকারে লিখলে কালীনামের ফলাফল শেষ অবধি শূন্যই হবে।

    হ্যাঁ, এর মধ্যে ফরাসি যুক্তিবাদী দার্শনিক ভোলতেয়ারের সেই বিখ্যাত রসিকতারও ছাপ আছে। কে একজন তাঁকে বলেছিল, “আচ্ছা মশাই, মন্ত্র দিয়ে কি কাউকে মেরে ফেলা যায়?”

    “যায়, অবশ্যই যায়। তবে সঙ্গে আর একটা জিনিসও লাগবে।”

    “আর কী লাগবে?”

    “তেমন কিছু নয়, উপযুক্ত পরিমাণে কিছুটা সেঁকো বিষ। তাহলে মন্ত্রের কাজ ভালো হবে।”

    বিজ্ঞানের সাথে যে কোনো প্রকারের অন্ধ বিশ্বাসের একমাত্র এরকম “সেঁকো বিষ যুক্ত” সমন্বয়ই করা যায়। ধর্মের ক্ষেত্রেও এটা সত্য।

    সুতরাং, কোনো বড় বিজ্ঞানী হয়ত বলতে পারেন, অনেক কিছু জানার পরেও আমাদের এত জানতে বাকি যে জগতের রহস্য যেন আরও নিগূঢ় হয়ে উঠছে। জগতের এই শৃঙ্খলা, এত জটিলতা—এসবের ব্যাখ্যা হয় না একজন সুপারপাওয়ারের কথা ধরে না নিলে। তখনও আমাদের প্রশ্ন থেকেই যাবে, ধরে নিলেই কি সমস্ত রহস্যের ব্যাখ্যা হয়? সকলেই জানেন, হয় না। একটি বাস্তব পরিঘটনার পেছনে আর একটি কোনো আরও মৌলিক ও বাস্তব পরিঘটনাকে খুঁজে পেলে দ্বিতীয়টার সাহায্যে প্রথমটার ব্যাখ্যা হয়। মেঘ কীভাবে উৎপন্ন হয় জানলে বৃষ্টির একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। অন্যত্র সেই জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব হয়। কিন্তু ভগবান আমাদের বৃষ্টি দেন বললে নতুন কী জানা যায়? বৃষ্টি সম্পর্কে আমাদের এক দানাও জ্ঞান বাড়ে না। সেই জানা কাজেও লাগে না। যা জানি না, ঐশী শক্তি ঘটাচ্ছেন ধরে নিলেও তা অজানা এবং অধরাই থাকে। আবার অক্ষয় কুমারের ফরমুলায় বলতে হবে, জ্ঞানের জগতে একজন সুপারপাওয়ার আছে ধরে নেবার ফলও সেই শূন্যই। তবে আর তা ধরে নিয়ে কাম কী? অর্থাৎ, প্রশ্নটা ঝগড়ার নয়, ফলাফলের।

    জ্ঞানের সাথে জ্ঞানের সমন্বয় হয়। জ্ঞানের সাথে অজ্ঞতার কোনো সমন্বয় হয় কি? হয় না বলেই বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সমন্বয় সম্ভব নয়। যুক্তিবাদের সাথে কুসংস্কারের সমন্বয় সম্ভব হয় না। একটা চাইলে আর একটাকে ছাড়তে হবেই। ধর্ম হিন্দুকে বলে, গোমাংস ভক্ষণ করিও না, উহাতে মহাপাপ; ধর্ম মুসলমানকে বলে, কদাচ ভুলিও না, শুয়রের মাংস ভয়ানক হারাম। আর খাদ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞান থেকে জানা যায়, রক্তচাপ হৃদরোগ ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদির সমস্যা না থাকলে বাল্য কৈশোর যৌবনে এই দুই (এবং আরও নানা) প্রকারের মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে শুধু ভালো নয়, অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অশিক্ষিত ধর্মান্ধ গোঁড়া হিন্দু-মুসলমানের কথা ছেড়ে দিন, শিক্ষিত উদার মনস্ক কতজন এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে আগ্রহী হবেন? বা আদৌ হয়ে থাকেন? এইভাবে দেখলে বোঝা যাবে, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই বিজ্ঞান মনস্ক হতে চাইলে ধর্মমনস্কতাকে ছাড়িয়ে আসতে হবে। তা না হলে যেটা হবে সেটা আরও হাস্যকর। ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তাঁদের শিক্ষার মালমশলা কাজে লাগিয়ে সেই ধর্মান্ধতার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করবেন। অশৌচ পালনের সাথে ব্যাক্টিরিয়া নিধন, দাড়ি রাখলে গালে মশার কামড়ের হাত থেকে অব্যাহতি, ইত্যাদি . . . ।

    উল্টোটা তাঁরা কেউ করবেন না। কোনো বিজ্ঞানশিক্ষিত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিই কখনও বলবেন না, অন্তত এযাবত আমি কাউকে বলতে শুনিনি, “আমাদের ঈশ্বর ভক্তির সঙ্গে আমরা কে কী খাই তার কোনোই সম্পর্ক নেই। ঈশ্বর মুরগিও দিয়েছেন, কলাও দিয়েছেন; গরুও দিয়েছেন, লেটুস পাতাও তৈরি করেছেন; ফুলকপিও বানিয়েছেন, শুয়রও পয়দা করেছেন। যিনি আল্লাহ তিনিই ভগবান তিনিই তো গড। নামে ভিন্ন হলেও আসলে তো এক। তা না হলে দুনিয়ায় অনেক ভগবানের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে হত; সেটা সমস্ত ধর্মের পক্ষেই অস্বস্তিকর হয়ে যেত। সবই যখন সেই তাঁরই সৃষ্টি, তাঁর একটা জিনিস খেলে ভালো আর অন্য একটা খেলে দোষ হবে কেন? বিশেষ করে যখন এক ধর্মের নিষিদ্ধ খাদ্যগুলো অন্য ধর্মের ঈশ্বর বিশ্বাসীরা খেয়েদেয়ে দিব্যি হাজার হাজার বছর ধরে হজমও করেছে, টিকেও রয়েছে?” এইভাবে তাঁদের কেউ বলতে পারলে, ঈশ্বরব্যঞ্জনার কথাটা সত্য না হলেও একটা সমন্বয়ের আভাস অন্তত পাওয়া যেত। সেটুকুও আজ অবধি পাইনি।

    আরও একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ দিই। ভারতে প্রতিবছর সাগরমেলায় বা প্রতি চার বছর অন্তর কুম্ভমেলায় লক্ষ লক্ষ লোক জড়ো হয়ে যে পবিত্র গঙ্গাস্নান করে তাতে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ব্যাপক পরিবেশ দুষণ হয়। এই অসংখ্য মানুষের ফেলে যাওয়া বর্জ্য থেকে নদী সমুদ্র ও মেলার চারপাশের জল মাটি বায়ুর দীর্ঘমেয়াদি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। অনেক সময় ব্যাপক দুর্ঘটনাটা ঘটে, বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়। আরবে যারা হজ করতে যায় তাদের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। আজ পর্যন্ত কোনো একজন ধর্মপ্রাণ শিক্ষিত চিন্তাশীল মানুষকে বলতে শুনেছেন কি কেউ, “না, এরকম জমায়েত ভালো নয়। ব্যক্তি স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের স্বাস্থ্য—কোনোটার পক্ষেই ভালো নয়”? কেউ কি বলেছেন, “ভগবান বল, আল্লাহ বল তিনি সর্বত্র বিরাজমান; তাঁকে খুঁজতে বা পেতে এত ক্লেশ স্বীকার করে কোনো একটা বিশেষ জায়গাতেই বা যেতে হবে কেন? তুমি যেখানে আছ, সেখানেও তিনি আছেন। সেখানেই তাঁর পূজাপাঠ আরাধনা সেজদা কর”? আমার জানা নেই।

    যদি ধর্মে বিশ্বাসী একজনও কেউ সাহস করে এসব কথা বলতে পারতেন, তাহলে বুঝতাম, সমন্বয়ের সামান্য হলেও সম্ভাবনা আছে। কিন্তু না। ধর্মে বিশ্বাসী কেউই তা বলতে পারেন না। পারেন না কেন না, তাঁরাও জানেন, শুধু একজন আপনভোলা ঈশ্বর নিয়ে ধর্ম হয় না। বাকি সমস্ত আচার বিচার প্রথা প্রকরণ গরু শুয়র টিকি দাড়ি আলতা সিঁদুর বোরখা মিলিয়েই ধর্ম। হিন্দুদের ক্ষেত্রে জাতপাত ছোঁয়াছুঁয়ি বজায় রেখেই ধর্ম। অন্তত বৃহত্তর জনসমষ্টির জন্য ধর্ম মানে তাই।

    এই অবস্থায় বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করার একটাই মানে। তা হল, ধর্মবিশ্বাসীরা তাঁদের বিশ্বাস ও আচরণ থেকে এক চুলও নড়বেন না; বিজ্ঞান অনুরাগী যুক্তিবাদীদেরই তাঁদের জায়গা থেকে সরে আসতে হবে। মেনে নিতে হবে, হ্যাঁ, ধর্মে কিছু কিছু সত্য থাকলে থাকতেও পারে। ঈশ্বর বিশ্বাস থাকলে বিজ্ঞানের তো আর তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। অতএব আপাতত না হয় এরকম একটি প্রতিপাদ্যকে মেনে নেওয়াই যাক। আমার মনে হয়, বিজ্ঞানমনস্কতার তরফে এরকম ছাড় দেবার কোনো প্রয়োজন সপ্তদশ শতকে দকার্তের সময়ে থাকলেও আজ আর নেই। আমাদের পক্ষ থেকে এই সত্যটা স্পষ্ট উচ্চারণে বলতে পারা উচিৎ।

    [চ]
    পরিশেষে এ-ও দেখা দরকার, মানুষের জ্ঞান কোন রাস্তাতে বাড়ছে। যতদিন মানুষ শুধু ধর্মে গুরুতে মান্যগ্রন্থে বিশ্বাস করেছে ততদিন তার জ্ঞানের বিকাশ কতটা হয়েছে, আর যবে থেকে মানুষ জিজ্ঞাসার পথে, সংশয়ের পথে জানতে শুরু করেছে তখন থেকে তার জ্ঞানের বৃদ্ধি ও বিকাশের হার কী। এই তুলনায় গেলেই বোঝা যাবে কোনটা সত্যিকারের জানার পথ, আর কোন পথে হাঁটলে বিহারের ঘটনায় গিয়ে পৌঁছতে হবে। শুধু পদার্থবিজ্ঞান রসায়ন গণিত জ্যামিতি জীববিদ্যা ভূতত্ত্ব নৃতত্ত্ব ইত্যাদি নয়, ইতিহাস ভূগোল পুরাতত্ত্ব ভাষাতত্ত্ব অর্থনীতি—সব ক্ষেত্রে প্রশ্ন করে করে উত্তর খুঁজতে খুঁজতে, একের পর এক সন্দেহ নিরসন করতে করতে, মানুষ জানছে। মানুষের জ্ঞান সমৃদ্ধতর হচ্ছে। এই পথ ছেড়ে দেওয়ার মানে হল এযাবত যা জেনেছেন তাকে একটা গুদামঘরে ঢুকিয়ে দরজায় তালা মেরে চলে আসা।

    আমাদের দেশের ছাত্রদেরও তাই প্রশ্ন করতে শেখাতে হবে। শুধু বিজ্ঞানের বিষয় নয়, ইতিহাস ভূগোলও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শেখাতে হবে। সূর্য চন্দ্রকেও চেনাতে হবে। দিক চেনাতে হবে। ছোটবেলা থেকেই যেন দিকভ্রষ্ট হয়ে না যায়। ইতিহাসের শিক্ষককেও ক্লাশে সংশ্লিষ্ট ভূগোলের মানচিত্র নিয়ে ঢুকতে হবে। শিক্ষার মধ্যে আরও অনেক কিছু করতে হবে, করা যায়। বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রেই শুধু নয়, শিক্ষার সমস্ত প্রকোষ্ঠেই বিজ্ঞানকে নিয়ে যেতে হবে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তিকে নিয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞান-মনস্কতা বৃদ্ধির আর কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই।

    পুনশ্চ: এই প্রবন্ধে কোনো ধর্মবিশ্বাসীর ব্যক্তিগত বিশ্বাসে আঘাত দেবার কোনো অভিপ্রায় ছিল না। তথাপি যদি কেউ আহত বোধ করেন তার জন্য আমি আমার অসহায়তা প্রকাশ করে রাখছি। বিহারের ঘটনাটি জানার পর ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে বিজ্ঞানমনস্কতার পক্ষ থেকে উপরোক্ত কথাগুলি উচ্চারণ না করে আমিও পারছিলাম না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩৯০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 132.174.115.198 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৮51878
  • হুঁ তবে স্টেটের হয়ে কাজ করতে গেলে বিজ্ঞান-মনস্কতার কথা বলা চলবে না। এদুটো আলাদা।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪১51879
  • আহা বিজ্ঞানের কাজ কত্তে যাবেন তো! গরুর পিঠে নইলে চড়তে দেবে ক্যানো?
    ঃ-)
  • অভি | 113.220.208.200 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৬51880
  • বিজ্ঞানই সভ্যতার অভিশাপ। নাকি, অভিশাপই বিজ্ঞানের সভ্যতা? না সভ্যতাই অভিশাপের বিজ্ঞান? সব গুলিয়ে গেল।
  • cm | 127.247.96.151 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০51881
  • সভ্যতাই বিজ্ঞানের অভিশাপটা বাদ গেছে।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.76.87 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৮51882
  • ও অশোক বাবু ,এতো সেই ক্যাথলিক যাজক অথবা স্টালিনের রাশিয়া -যেখানে আইডল এবং আইডিয়া’র বিরুদ্ধে এক লাইন বললেই রে রে করে তেড়ে আসবে । আপনি না বলছিলেন “ বিজ্ঞান-মনস্কতা মানে হল বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি, যুক্তিশীল মননচর্চা, বৈচারিক চিন্তাকৌশল” এতো নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ । আর এইখানেই কু'সংস্কার এবং আধিপত্যের মুল - বিনা প্রশ্নে কারো এবং কোন আইডিয়ার সুপ্রিমেসি স্বীকার করে নেওয়া -সে ভগবানই হোক , শিবদাস ঘোষ কিংবা বিজ্ঞান ।

    তা পল ফেয়েরাবেন্ড Nice শহরে ডিফেন্স অফ কালচার নামক কনফারেন্সে আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে যখন তার “How to Defend Society Against Science” প্রবন্ধটি পাঠ করে শোনালেন তা সেইখানে উপস্থিত শ্রোতারা পারলে প্রায় মারে আর কি , আমন্ত্রিত বক্তা তাদের সভায় স্বযত্নলালিত বিজ্ঞান বিষয়ক উচ্চ ধারনা এবং আইডিয়াকে চ্যালেঞ্জ করছেন , টিকিটের পয়সা ফেরত নেওয়া হউক । পরবর্তিতে ফেয়েরাবেন্ড যখন একই বক্তৃতা অন্য একটি শহরে দেন তিনি তার Nice শহরে’র শ্রোতাদের সম্বন্ধে বলেছিলেন “ My audience in Nice was full of professors, businessmen, and television executives, and the average age was about 58 1/2. “ তার মানে এই নয় যে একটা নির্দিষ্ট বয়স এবং একধরনের শিক্ষিত মানুষ ,প্রফেসর ইত্যাদি বেশী গেঁড়ে হবে । তবে এক ধরনের আইডিওলজি সমস্ত মুক্তির পথ এবং যে কোন বিষয়ে ক্রিটিকাল মাইন্ডের অনুপস্থিতি গেঁড়ে তৈরি তো করবেই -একদল মনে করে ধর্মই শ্রেষ্ঠ মানুষ কে উন্নত করবার একমাত্র পন্থা অন্যদল মনে করে না না ওইসব মিথ ,অসত্যবচন বিজ্ঞান একমাত্র পথ এবং বিজ্ঞান শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিৎ -There is nothing inherent in science or in any other ideology that makes it essentially liberating.

    তবে পল ফেয়েরাবেন্ডের সেই রচনা থেকে এইটুকু যদি বলি “ that seventeenth- and eighteenth-century science indeed was an instrument of liberation and enlightenment. It does not follow that science is bound to remain such an instrument. There is nothing inherent in science or in any other ideology that makes it essentially liberating. Ideologies can deteriorate and become stupid religions. Look at Marxism. And that the science of today is very different from the science of 1650 is evident at the most superficial glance”।

    ( নেন এই টই আগামী তিন সপ্তাহ টপে থাকবে ,কুসংস্কার দূর করতে এইটুকু তো করাই উচিৎ )
  • বিচার | 186.126.252.12 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০২51883
  • অনেক কোট নয়, একটাই কোট -
    http://www.ramakrishnavivekananda.info/kathamrita/unicodekathamrita/07_d_undescribablebrahma_99_100.html

    অন্য বিচার এখানে -
    “আমি রাজসিক ভাবের আরোপ করতাম -- ত্যাগ করবার জন্য। সাধ হয়েছিল সাচ্চা জরির পোশাক পরব, আংটি আঙুলে দেব, নল দিয়ে গুড়গুড়িতে তামাক খাব। সাচ্চা জরির পোশাক পরলাম -- এরা (মথুরবাবু) আনিয়ে দিলে। খানিকক্ষণ পরে মনকে বললাম, মন এর নাম সাচ্চা জরির পোশাক! তখন সেগুলোকে খুলে ফেলে দিলাম। আর ভাল লাগল না। বললাম, মন, এরই নাম শাল -- এরই নাম আঙটি! এরই নাম নল দিয়ে গুড়গুড়িতে তামাক খাওয়া! সেই যে সব ফেলে দিলাম আর মনে উঠে নাই।”
  • sm | 53.251.91.253 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:২৯51884
  • দেবব্রত বাবু অন্যায় তো কিছু লেখেন নি।বিজ্ঞান মনস্ক হওয়া এক জিনিস আর বিজ্ঞানের আধিপত্য নিরঙ্কুশ ভাবে মেনে নেওয়াও এক ধরণের ধর্মান্ধতা। বিজ্ঞানও ধর্মের মতো মানুষের জীবনে বহুবিধ ক্ষতি সাধন করেছে ও করে চলেছে।
    এ নিয়ে বিস্তর ডিবেট ও হয়েছে। সারাৎসার একটাই,এটা বিজ্ঞানের দোষে নয়; বিজ্ঞান কে মানুষ কোনো পথে চালনা করবে তার ওপর নির্ভরশীল।
    অর্থাৎ সেই এক কাসুন্দি; সমস্ত টাই নির্ভর করছে মানুষের শুভ বুদ্ধির ওপর।
    এবার আসল প্রশ্ন; মানুষের শুভ বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে কেডা?
  • avi | 113.220.208.200 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:৪৬51885
  • sm, অরবাইটোফ্রন্টাল আর প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স। :-)))
  • ashoke mukhopadhyay | 127.223.219.6 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:৩২51886
  • [১] আদিবাসীদের ধর্ম বলে যা বলা হয়, আমার মতে তা আসলে প্রাক্‌ধর্ম ম্যাজিক সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। ফলে পরবর্তীকালের বিকশিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সাথে তার অনেক পার্থক্য আছে। আবার তাদের এই ম্যাজিক সংস্কৃতিও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই, (আরও অনেক কিছু সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক উপাদান সহ) চার পাশের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রভাব তার উপরও পড়ছে। তারও বিশ্বাস এবং আচারে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। কিন্তু অন্যদিকে আবার এই ম্যাজিক সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রকরণের যে অবশেষ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ভিত্তিক সমাজে থেকে গেছে, ধর্মের আশ্রয়ে এবং প্রশ্রয়ে সুরক্ষিত থেকেছে, তা থেকেই বেশিরভাগ কুসংস্কারের জন্ম হয়েছে। সুতরাং, আদিবাসীদের মধ্যেও তাদের ম্যাজিক সংস্কৃতি শেষ পর্যন্ত নানা রকম কুসংস্কারের জন্ম দেবে—এ প্রায় অবধারিত।

    সামাজিক আন্দোলনে এমনিতেই বিভিন্ন জিনিস মিলে মিশে থাকে। নিয়ামগিরি রক্ষার আন্দোলনে আদিবাসীদের বিশ্বাস হয়ত কাজে লেগেছে। তার জন্য সেটাকে বিজ্ঞানসম্মত দাবি করার মানে নেই। আমার ধারণা, একটা সময় নিশ্চয়ই আসবে, যখন এই বিশ্বাসের ভিত্তিগুলিকেও দূর করতে হবে।

    হিন্দু ধর্মের বেশিরভাগ উপকরণই এই প্রাক্‌ধর্মীয় ম্যাজিক সংস্কৃতির সাথে মিলেমিশে আছে। শিবের পূজার আচার প্রথার সাথে নিয়ামগিরি পূজার বিরাট কিছু ফারাক আছে বলে মনে হয় না। ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের পরিমাণ এতে খুবই কম। উর্বরতা-ক্রিয়ানুষ্ঠান (fertility cult), কুলকেতুত্ব (totemism), আঞ্চলিকতা (localism), ইত্যাদিই এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।

    [২] বিজ্ঞানের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বলতে কী বোঝানো হচ্ছে আমার কাছে পরিষ্কার নয়। বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তির বিকল্প আর কোনো বিচার পদ্ধতি আছে কিনা—এ ব্যাপারে আমার খুবই (হয়ত অজ্ঞানতা বশত) সন্দেহ আছে। একই ভাবে সত্যের নিরঙ্কুশ আধিপত্য, সৌজন্যের নির্বিচার দাপট, সততার একপেশে প্রভাব—ইত্যাদির কথাও বলা যেতে পারে। তাতে আমরা কতটা সংকীর্ণতা থেকে বেরতে পারি ভেবে দেখতে হবে। অন্তত, যাঁরা এইভাবে ভাবছেন, তাঁদের একই সঙ্গে বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক বিশ্লেষণ পদ্ধতির আধিপত্যের বাইরে বেরিয়ে এসে অন্য কী রাস্তা আছে তা প্রদর্শন করে আলোচনা করলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হত।
  • dc | 132.174.115.198 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:৫২51887
  • বিজ্ঞানের নিরঙ্কুশ আধিপত্যর থেকে আমাদের বেরোতেই হবে। শুধু যুক্তিবাদী হলে চলবে না, হাফ মতো কুসংস্কারও মিশিয়ে নিতে হবে। আফটার অল বেচারা গণেশ দুধ না খেতে পেলে তো শুকিয়ে যাবে!
  • ashoke mukhopadhyay | 127.194.35.185 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৮:১৬51893
  • To Debabrata Chakraborty: ফেয়েরাব্যান্ড যা বলেছেন তা তাঁর মত। বক্তব্য। যুক্তি নয়। বিজ্ঞানকে তিনি একটি মতাদর্শ বলে মনে করেন। আরও অনেকেই করেন। তিনি আবার বিশেষ করে আধুনিক বিজ্ঞানের গায়ে এই রঙ চাপিয়েছেন। নিউটনীয় বলবিদ্যার সমান্তরাল আর কি বলবিদ্যা হতে পারে না দেখিয়ে নিউটনের তত্ত্বকে তাঁর মতবাদ বলা যায় না। আইনস্টাইনের তত্ত্বের ক্ষেত্রেও তাই। আলোসদৃশ গতিময় বস্তুর জন্য আপেক্ষিকতা-“মতবাদের” একটা বিকল্প মতবাদ প্রতিষ্ঠা না করে কী করে একে একটা মতবাদ বলা যায় আমার কাছে পরিষ্কার নয়। এইভাবে গণিতকেও মতবাদ বলতে হলে আরও দু একটা বিকল্প গাণিতিক পরিকাঠামো আছে বলে দেখাতে হবে।

    সত্য স্বাধীনতা ইত্যাদির প্রশ্নে এসে তাই ফেয়েরাব্যান্ডও কার্যত থমকে গেছেন। সত্য আর স্বাধীনতার মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে কী করব, ভাবতে বলেছেন। কিন্তু সত্যকে একটা মতবাদ বলে তার কোনো বিকল্পের কথা ভাবতে বলতে পারেননি। স্বাধীনতার নিরঙ্কুশ আধিপত্য তো মেনেই নিয়েছেন। সততার প্রশ্নে বোধ হয় ঢোকেননি।

    বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণের বিজ্ঞান-অতিরিক্ত বা বিজ্ঞান বহির্ভূত আর কোনো পদ্ধতি জানা থাকলে সেটা আমাকে শেখাতে হবে। বিজ্ঞানের আধিপত্য অস্বীকার করে, তথ্য যুক্তি প্রমাণ ও প্রয়োগের বাইরে গিয়ে, কীভাবে জানা যায়, দেখাতে হবে।
  • Debabrata Chakrabarty | 59.32.16.236 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৮:৩৩51888
  • অশোক বাবু বলছেন “ বিজ্ঞানের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বলতে কী বোঝানো হচ্ছে আমার কাছে পরিষ্কার নয়। বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তির বিকল্প আর কোনো বিচার পদ্ধতি আছে কিনা—এ ব্যাপারে আমার খুবই (হয়ত অজ্ঞানতা বশত) সন্দেহ আছে। একই ভাবে সত্যের নিরঙ্কুশ আধিপত্য, সৌজন্যের নির্বিচার দাপট, সততার একপেশে প্রভাব—ইত্যাদির কথাও বলা যেতে পারে। তাতে আমরা কতটা সংকীর্ণতা থেকে বেরতে পারি ভেবে দেখতে হবে। এই বিষয়ে ব্যাখ্যা করবার ক্ষমতা আমার কম ( অজ্ঞানতা বশত ) তাই সেই পল ফেয়েরাবেন্ডের “How to Defend Society Against Science” প্রবন্ধের কাউন্টার যুক্তির দিকটা দেখা যাক যাকে Nice শহরের গণ্যমান্য বিশিষ্ট শ্রোতা গন যাদের গড় বয়স 58 1/2. এই প্রবন্ধ টি পড়বার দায়ে প্লেনের টিকিটের পয়সা ফেরত দিতে বলেছিলেন - উদ্ধৃতি টি দীর্ঘ কিন্তু সুখপাঠ্য

    “ I want to defend society and its inhabitants from all ideologies, science included. All ideologies must be seen in perspective. One must not take them too seriously. One must read them like fairytales which have lots of interesting things to say but which also contain wicked lies, or like ethical prescriptions which may be useful rules of thumb but which are deadly when followed to the letter.

    এই প্রসঙ্গে পল ফেয়েরাবেন্ড একটা জেনারেল এবং একটি স্পেসিফিক যুক্তি সাজাচ্ছেন -থাকলো সেই সাধারণ ব্যখ্যাটি ঃ-
    “ The general explanation is simple. Any ideology that breaks the hold a comprehensive system of thought has on the minds of men contributes to the liberation of man. Any ideology that makes man question inherited beliefs is an aid to enlightenment. A truth that reigns without checks and balances is a tyrant who must be overthrown, and any falsehood that can aid us in the over throw of this tyrant is to be welcomed. It follows that seventeenth- and eighteenth-century science indeed was an instrument of liberation and enlightenment. It does not follow that science is bound to remain such an instrument. There is nothing inherent in science or in any other ideology that makes it essentially liberating. Ideologies can deteriorate and become stupid religions. Look at Marxism. And that the science of today is very different from the science of 1650 is evident at the most superficial glance.

    For example, consider the role science now plays in education. Scientific "facts"are taught at a very early age and in the very same manner in which religious "facts"were taught only a century ago. There is no attempt to waken the critical abilities of the pupil so that he may be able to see things in perspective. At the universities the situation is even worse, for indoctrination is here carried out in a much more systematic manner. Criticism is not entirely absent. Society, for example, and itsinstitutions, are criticised most severely and often most unfairly and this already at the elementary school level. But science is excepted from the criticism. In society at large the judgement of the scientist is received with the same reverence as the judgement of bishops and cardinals was accepted not too long ago. The move towards "demythologization," for example, is largely motivated by the wish to avoid any clash between Christianity and scientific ideas. If such a clash occurs, then science is certainly right and Christianity wrong. Pursue this investigation further and you will see that science has now become as oppressive as the ideologies it had once to fight. Do not be misled by the fact that today hardly anyone gets killed for joining a scientific heresy. This has nothing to do with science. It has something to do with the general quality of our civilization. Heretics in science are still made to suffer from the most severe sanctions this relatively tolerant civilization has to offer.

    But-is this description not utterly unfair? Have I not presented the matter in a very distorted light by using tendentious and distorting terminology? Must we not describe the situation in a very different way? I have said that science has becomerigid, that it has ceased to be an instrument of change and liberation, without adding that it has found the truth, or a large part thereof. Considering this additional fact we realise, so the objection goes, that the rigidity of science is not due to human wilfulness. It lies in the nature of things. For once we have discovered thetruth_-what else can we do but follow it?

    This trite reply is anything but original. It is used whenever an ideology wants to reinforce the faith of its followers. "Truth" is such a nicely neutral word. Nobody would deny that it is commendable to speak the truth and wicked to tell lies. Nobody would deny that_-and yet nobody knows what such an attitude amounts to. So it is easy to twist matters and to change allegiance to truth in one's everyday affairs into allegiance to the Truth of an ideology which is nothing but the dogmatic defense of that ideology.

    অশোক বাবু বলছেন একই ভাবে সত্যের নিরঙ্কুশ আধিপত্য, সৌজন্যের নির্বিচার দাপট, সততার একপেশে প্রভাব—ইত্যাদির কথাও বলা যেতে পারে। তাতে আমরা কতটা সংকীর্ণতা থেকে বেরতে পারি ভেবে দেখতে হবে। সম্ভবত সেক্ষেত্রে এই পল ফেয়েরাবেন্ডের প্রবন্ধের এই অংশটি ভেবে দেখবার মত “ And it is of course not true that we have to follow the truth. Human life is guided by many ideas. Truth is one of them. Freedom and mental independence are others. If Truth, as conceived by some ideologists, conflicts with freedom, then we have a choice. We may abandon freedom. But we may also abandon Truth. (Alternatively, we may adopt a more sophisticated idea of truth that no longer contradicts freedom; that was Hegel's solution.) My criticism of modern science is that it inhibits freedom of thought. If the reason is that it has found the truth and now follows it, then I would say that there are better things than first finding, and then following such a monster.”

    পল ফেয়েরাবেন্ডের “How to Defend Society Against Science” পুরো প্রবন্ধটি ইন্টারনেটে উপলব্ধ ,যে কেউ পড়ে ফেলতে পারেন । যে কেন আধুনিক বিজ্ঞান inhibits freedom of thought ।
  • amit | 213.220.94.135 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৮:৪০51889
  • পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল।
    কাননে ______________
  • Dilip | 186.10.107.180 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৮:৫৯51890
  • sm বাবু, আমি কিন্তু আদিবাসিদের সারল্য বা আন্তরিকতা নিয়ে কোন প্রস্ন তুলিনি । কিন্তু তাদের ধর্মও আর পাঁচটা ধর্মের মতই অবৈজ্ঞানিক । এটাই বলছি । তাদের অশিক্ষা তাদের উন্নতির পক্ষে বড় বাধা । তাদের সারল্য যদি কুসংস্কারে অন্ধ বিশ্বাস তইরি করে, সেটা কি ভাল ?
  • মনোজ ভট্টাচার্য | 113.218.238.222 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:০২51891
  • অশোকবাবু,

    আপনার বিজ্ঞান মনস্কতার ওপর - দ্বিতীয় পর্ব পড়লাম ! - ভালো লাগছে এই কারনে যে , আপনি খুব সুন্দর যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারছেন ! - এর মধ্যে অনেক কিছু আমাদের জীবনে প্র্যাকটিস করেই থাকি ।

    আসলে শিক্ষিত অনেকেই । কিন্তু সেই শিক্ষা আমরা বেশীরভাগ সময়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করি না ! - বিজ্ঞান মনস্কতার ওপর দুটো বই আমি আগেই পেয়েছিলাম - প্রবীর ঘোষের ! - মুস্কিল হচ্ছে - বহুল প্রচারিত মিডিয়াগুলো তাদের বিজ্ঞাপনের তাগিদে এসব প্রচার করতে দ্বিধা করে !

    যাইহোক - আপনার এখানে লেখার পর্বগুলো যদি ছোট্ট বই আকারে বের করেন ও শারদীয়া মণ্ডপগুলো তে বিক্রি করতে পারেন - তাতে প্রকৃত উপকার হতে পারে ! - আরও লিখতে থাকুন !

    মনোজ ভট্টাচার্য
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:১৩51874
  • ওই পাখিটাকে পাখিটাকে পাখিটাকে .....
    ঃ-)
  • কিন্তু | 202.42.116.16 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:৩৫51892
  • "কিন্তু আগে তো জানতে হবে যে আলো বা সূর্য আছে। তবে তাকে দেখতে ঘরের থেকে বেরনোর প্রশ্ন।"
    রঞ্জনবাবু, এ মানে ক্যাচ-২২ সিচুয়েশন । সূর্য আছে না জানলে ঘর থেকে বেরোব না, আবার ঘর থেকে বেরোব না বলে সূর্য আছে জানব না । :)
    রামকৃষ্ণ জানা বলতে পড়ে জানা নয়, দেখে জানার কথা বলতেন ।

    “অনেকে মনে করে, বই না পড়ে বুঝি জ্ঞান হয় না, বিদ্যা হয় না। কিন্তু পড়ার চেয়ে শুনা ভাল, শুনার চেয়ে দেখা ভাল। কাশীর বিষয় পড়া, কাশীর বিষয় শুনা, আর কাশীদর্শন অনেক তফাত।"
  • Ranjan Roy | 132.162.116.133 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:৪৫51875
  • ১)
    "বিচার" অনেকগুলো সুন্দর উদাহরণ একজায়গায় উদ্ধৃত করেছেন, একটি বাদে। যেখানে ঠাকুর শ্রীমকে বলছেন--আর বিচার করবে?
    আরেকটি ইন্টারেস্টিং জায়গা হল ওনার বিদ্যাসাগরের সঙ্গে এবং বিদ্যাসাগরকে নিয়ে কথোপকথন।

    ২) "কিন্তু " ঠিকই বলেছেন। প্র্যাকটিসের জন্যে।
    কিন্তু আগে তো জানতে হবে যে আলো বা সূর্য আছে। তবে তাকে দেখতে ঘরের থেকে বেরনোর প্রশ্ন।
    ধরুন, যদি মদ বলে একটি জিনিস আছে, যা খেলে একটি বিশেষ ক্রিয়া/প্রতিক্রিয়া হয় , সেটা যতক্ষণ না জানছি ততক্ষণ সেটা খাবার বা তার থেকে দূরে সরে যাবার প্রশ্নই নেই।
    প্র্যকটিস কোন ধারণাকে বিশেষ ভাবে জানার জন্যে। কিন্তু আগে তো সেই বিষয়টি সম্বন্ধে একটা প্রাথমিক ধারণা তৈরি হতে হবে।
    আমরা কেউ কুমড়োপটাশ দেখতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি না তো!
  • dc | 132.174.115.198 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:৫৪51876
  • সায়েন্স আর স্টেটকে একে অপরের কবল থেকে মুক্ত করার প্রস্তাব মন্দ না। স্টেট যে এতো সব ডিপার্টমেন্ট চালায় সেসব বিদ্যুতের হাত থেকে মুক্ত করা হোক, আর কম্পিউটারগুলোকে তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিতে হবে। স্টেট যে সেনসাস নেয়, সেসব ডেটার স্ট্যাটিসটিকাল অ্যানালিসিস করে, নানান ইনডেক্স তৈরি করে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে কারন রাশিবিজ্ঞান আর স্টেটকে অবশ্যই আলাদা করতে হবে। মেডিকাল সায়েন্সও বাদ, কাজেই স্টেট রান মেডিকাল প্রোগ্রামগুলোকেও ফালতু বোঝা হিসেবে সেপারেট করে দিতে হবে। জয় গৌমাতা!
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:৫৭51877
  • গরুর পিঠে চড়ে হরিন্নাম কত্তে কত্তে কাজে যাবেন। ঃ-)
  • aka | 34.96.86.249 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১২51903
  • এই সিরিজটা ভালো হয়েছে। মানে মূল লেখাটা। লেখার নীচে আলোচনা নয়।
  • Abhyu | 126.202.80.87 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:৪৪51904
  • রামকৃষ্ণ প্রসঙ্গেঃ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সের লোকও তো পরীক্ষা করে দেখেছেন - পুরোটাই হ্যালুসিনেশন নাও হতে পারে।
  • avi | 113.217.234.88 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:৫৭51905
  • সে নাই হতে পারে। তবে বিশ শতকের আগে এই হ্যালু ইত্যাদি জিনিসপত্রের স্ট্রাকচারড অ্যাপ্রোচ তৈরিই হয় নি। ফলে ডা. সরকারের এই বাবদ পরীক্ষার সেরকম ভ্যালু নেই, যদি আদৌ করে থাকেন। অবশ্যই, একইভাবে প্রমাণ বা অপ্রমাণ কিছুই করা যায় না। :-)
  • Ekak | 53.224.129.46 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:০৯51906
  • হ্যালু বা হ্যালু নয় মাত্র এইদুটো চয়েস ক্যানো ? ভক্তিবাদ কেমন পয়জনিং দেখুন , বিশ্বাসী হোক বা অবিস্বাসী , প্রমান করার চেষ্টা করেন রামকৃষ্ণ ভগবান কে দেখেছিলেন বা না দেখেননি , হ্যালুতে ভুগেছিলেন ।

    নো ওয়ান ডেয়ারথিঙ্ক যে রামকৃষ্ণ ভেবে চিনতে ঠান্ডা মাথায় একটা গপ্পো দিয়েছিলেন । 'দেখেছি " কেও বলেনি অনেকদিন , অথচ ডিভাইন রিভিলেশন না থাকলে ভক্তির মডেল দাঁড়ায়না , তো রামকৃষ্ণ যুগধর্ম বুঝে , ঠান্ডা মাথায় এই মারাত্মক ঢপটি দেন । এটাও তো একটা সম্ভাবনা। কোনো একজন লোক যাঁর উপস্থিত বুধধি বেশ চরুবরু , গ্রহণযোগ্যতা আছে , শুধু ডিরি নেই বলে ভক্তির মডেল টা কেও খাচ্ছেনা , টুক করে ঐখানে "দেখেছি " বলে দিলেই হু হু বাকি স্ট্রাকচার দাঁড়িয়ে যায় । এতো মারাত্মক জিনিস । শুধু রামকৃষ্ণ কেন বহু "অবতার " এটা করেছেন বলেই মনে মনে হয় । এবং বেশ করেছেন । আমি ওনাদের গরু বা অসুস্থ্য ভাবার চে বুধ্ধিমান ভাবতে বেশি পছন্দ করবো । এবং শুধু একটা জায়গায় ঢপ দিয়ে বাকি সমস্তক্ষেত্রে ইন্টিগ্রিটি মেন্টেন করার যে স্যালভেশন সেটাই কিন্তু রামকৃষ্ণ কে রামকৃষ্ণ বা ক্রাইস্ট কে ক্রাইস্ট করেছে । ক্রাইস্ট আদৌ রাতের অন্ধকারে বাগানে কিছু শুনেছিলেন , না মনে হয়েছিল এইভাবে গপ্পো সাজালে পর পর অত্যাচার আস্তে থাকবে এবং তার মধ্যে দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেলে একটা মডেল দাঁড়িয়ে যাবে । এটাই আমার অনেক গ্রহণযোগ্য লাগে ।
  • ধুত্তোর | 75.19.167.131 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:১০51907
  • আপনারাও যেমন ! গিরিশ ঘোষ ভাল অভিনয় করতেন, পুরু রাজা তেড়ে যুদ্ধ করতেন, রামক্রিষ্ণ ভগবান দেখতেন - এ সবের সঙ্গে বিজ্ঞানের কি ?
    গুরু দেখি রামক্রিষ্ণের নামে পাগল ! অশোকবাবু একটি ঢিল ছুঁড়ে দিলেন, ব্যস লাও জলঘোলা । ভ্যাজর ভ্যাজর ভ্যাজর ।
  • Abhyu | 126.202.80.87 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:১১51908
  • আরেকটা ডিরোজিও টই?
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:১৩51909
  • বুদ্ধের গল্পই বা কী এমন আলাদা? ঐ যে বোধিলাভের রাত্রে মার মার করে "মার" তেড়ে এলো, তিনি তাদের পরাজিত করে বোধি পেলেন, এসব চমৎকার চমৎকার জিনিস না থাকলে তেমন কিছু হত?
    ঃ-)
  • পুরোটা | 203.90.12.89 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:১৬51911
  • দেখেছি, তোকেও দেখাতে পারি ।
  • Abhyu | 126.202.80.87 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:১৬51910
  • হ্যাঁ এ নিয়ে তো দাড়িদাদু গানও লিখে গেছেন - আমি মারের সাগর পাড়ি দেব। যদিও কেউ কেউ বলে এটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষণপদ্ধতি নিয়ে লেখা।
  • ranjan roy | 132.162.116.133 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:৪৩51912
  • অভ্যু,
    ঃ)))।
    পুরোটা,
    দেখাও।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন