এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • বিজ্ঞান-মনস্কতার অ-আ-ক-খ # দুই

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩৯০৪ বার পঠিত
  • [গ] বিজ্ঞানমনস্কতা বলতে কী বোঝায়

    এপর্যন্ত পড়ে কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, বিজ্ঞান-মনস্কতার কথা বলতে বসে আমি স্রেফ ভূগোল আর ইতিহাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কেন? বিজ্ঞান নিয়ে এখন অবধি একটাও কথা তো পাড়িনি। বিজ্ঞান বাদ দিয়ে বিজ্ঞান-বোধ হয় নাকি? বিজ্ঞান মানে বিশেষ জ্ঞান যা পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্তের উপর প্রতিষ্ঠিত—এই সব কথা তো বলছি না। বিজ্ঞান মানে সব কিছুকে যুক্তি তর্ক করে বিচার বিশ্লেষণ করে তবে গ্রহণ করতে হবে—সেই সব পুরনো কাসুন্দির কথা তুলছি না তো? ধান ভানতে বসে শিবের গীত গাইছি কেন?

    সেই কথাই এবার বলব। তারও কারণ আছে।

    বিজ্ঞান-মনস্কতা মানে নিছক বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সচেতনতা নয়, প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষতা বা সপ্রতিভতা নয়। বিজ্ঞান-মনস্কতা মানে হল বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি, যুক্তিশীল মননচর্চা, বৈচারিক চিন্তাকৌশল। ব্যাপারটা এমন নয় যে শুধু বিজ্ঞানের ছাত্রদেরই বিজ্ঞান-মনস্ক হওয়া প্রয়োজন, অন্য বিষয়ের ছাত্রদের বিজ্ঞান-বোধ না থাকলেও চলবে। বিজ্ঞানের কোনো বিষয় নিয়ে পড়ি বা না পড়ি, শিক্ষকতা গবেষণা করি বা না করি, সবাইকেই সব কিছু বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তির আধারে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। বিজ্ঞান আর বৈজ্ঞানিক মানসিকতা পরস্পর সম্পর্কিত হলেও দুটো ঠিক এক জিনিস নয়। একটা হলেই আর একটা হয় না। আপনা আপনি হয় না। একজন বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে, গবেষণা করে, চর্চা করে, ছাত্র পড়ায়—কিন্তু হাতের আঙুল ভর্তি আংটি; একটা হয়ত মঙ্গলকে ভয় দেখাচ্ছে, আর একটা হয়ত আবার ভাইরাস ব্যাকটিরিয়াদের শাসন করার কাজে ব্যস্ত, তৃতীয়টার উদ্দেশ্য কোনো জটিল মামলা জেতা, ইত্যাদি—এমন তো আকছারই দেখা যায়। যারা এইরকম আংটি পরে, ধাতুরত্ন ধারণ করে, তার পক্ষে তারা আবার কত বৈজ্ঞানিক যুক্তি দেয়! বস্তুর উপর বস্তুর কি ক্রিয়া নেই? জীবাণুদের সম্পর্কে রসায়ন-শাস্ত্র রাসায়নিক অস্ত্র ধারণ করতে বলছে না? কিংবা, সব শেষে একখানা মোক্ষম প্রশ্ন, “বিজ্ঞান কি সব জানে?” আর অন্যরা জানুন বা না জানুন, বিজ্ঞানের লোকেরা তো জানেই—যে বিজ্ঞান এখনও সব জানে না, আর কখনও সব জানবে বলে মনে করে না। সুতরাং . . .

    এমন অনেককেই দেখা যায়, যারা ভগবান মানে না কিন্তু যাদের ভূতের ভয় আছে। কিংবা তাদের হয়ত ভূত-প্রেতে ঘোর অবিশ্বাস, অথচ ছেলেমেয়ের কোনো সময় কঠিন অসুখ-বিসুখ হলে মা কালীর থানে বা রাস্তার মোড়ের শনিঠাকুরের বেদীতে দু টাকার বাতাসা মানত করে রাখে। আবার এমনও বহু লোক আছে, যাদের পড়াশুনো কলা বিভাগে, কিন্তু খাদ্যাখাদ্য বিচারে রান্নার উপকরণে ছেলেমেয়ের পোশাক বা স্বাস্থ্যের প্রশ্নে তারা অত্যন্ত যুক্তিশীল এবং বিজ্ঞান-মনস্ক।

    ধরুন, বিজ্ঞাপনে দেখাচ্ছে, কমপ্ল্যান খেলে একটি ছেলে বা মেয়ে দ্বিগুণ তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে, লম্বা হবে। বহু লোক বিশ্বাস করছে। তারা বেশিরভাগ লক্ষই করছে না, যে স্কেল দিয়ে বৃদ্ধিটা দেখানো হচ্ছে, তাতে চার ফুট পর্যন্ত উচ্চতার মাপটা ফুটে দেখিয়ে বৃদ্ধির পরিমাপ দেখানো হচ্ছে সেন্টিমিটারে। কেন? এরকম স্কেল বাজারে হয় নাকি? কারোর উচ্চতা আপনি কি বলবেন চার ফুট পাঁচ সেন্টিমিটার? তার মানে বিজ্ঞাপনটায় গোলমাল আছে। বা কোনো গূঢ় মতলব আছে। কজন সাধারণ মানুষ এটা খেয়াল করেছে? এই ধরনের একটা সাধারণ চালাকি বোঝার জন্য কি বিজ্ঞান পড়ার বিশেষ দরকার আছে? রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অ্যাকাউন্টেন্সিতে অনার্স নিয়ে পড়লে এটা বোঝা যাবে না? বরং বাস্তবে আমরা দেখছি, বিজ্ঞানের ছাত্ররাও এটা ধরতে পারছে না। তাদেরও একটা বিরাট অংশ এই সব বিজ্ঞাপনী চালাকিতে ভিরমি খেয়ে যাচ্ছে। এবং লম্বা হওয়ার জন্য রোজ রোজ কমপ্ল্যান খাচ্ছে। অথবা তীক্ষ্ণবুদ্ধি পাওয়ার জন্য শক্তি সঞ্চয় করার জন্য অন্য কিছু খাচ্ছে। এই প্রশ্নটা তারা করছে না, স্বাস্থ্যবান হওয়া বা লম্বা হওয়ার যে জৈবিক প্রক্রিয়া, এই ধরনের কৌটোবন্দি খাদ্য বা পানীয় তার উপরে কীভাবে প্রভাব ফেলে। অথবা আদৌ ফেলতে পারে কিনা।

    রাজশেখর বসু তাঁর একটি বৈজ্ঞানিক মনোভাব সংক্রান্ত প্রবন্ধে দেখিয়েছিলেন, বিজ্ঞাপনে কীভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ঠকানো হয়। কোনো একটি মাথার তেলের কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনে লিখেছিল, “ইহাতে পারদ নাই।” যেন, অন্য সব প্রস্তুতকারকের তেলে ভেজাল হিসাবে পারদ থাকার কথা। আজ বেঁচে থাকলে তিনি দেখতে পেতেন, সেই সাবেকি কায়দাটা আজও মরেনি। আজ আবার কোনো এক তেল উৎপাদকের হয়ে একজন বিখ্যাত ফিল্মি নায়ক বলছেন, তাঁদের বিজ্ঞাপিত তেলে নাকি অ্যামোনিয়া নেই। এই রকম অসংখ্য বিজ্ঞাপনী চালাকি ধরতে না পারার পেছনেও আছে বিজ্ঞানমনস্কতার অভাব।

    [ঘ]
    এবার কয়েকটা কাজের কথা পাড়া যাক।

    বিজ্ঞান-মনস্কতার প্রধান প্রধান লক্ষণগুলি কী কী?

    অবিশ্বাস, ভয়, কৌতূহল, সংশয়, প্রশ্ন, . . . ।

    সে কি? কী বলছেন মশাই? এসব তো নেতিবাচক লক্ষণ।

    ঠিক তাই। বিজ্ঞান-মনস্কদের যে লোকে নাস্তিক বলে জানেন নিশ্চয়ই। সেটা এই কারণেই বলে। সব ব্যাপারেই শুরুতে তারা খালি বলে—না, না, না, নাস্তি, নাস্তি, নাস্তি, . . .। এতে বিশ্বাস করতে পারছি না, ওটা বলতে ভয় পাচ্ছি পাছে ভুল প্রমাণ হয়ে যায়, অমুক তত্ত্বটায় ঘোরতর সন্দেহ আছে ঠিক হবে কিনা, . . ., ইত্যাদি। আর কেবলই বলেন, জানি না, খানিকটা জানা গেছে, অনেক কিছু এখনও জানায় বাকি আছে, অল্প অল্প করে জানা যাচ্ছে, এই রকম আর কি। সহজে কোনো প্রস্তাবে কিছুতেই হ্যাঁ বলতে পারেন না বিজ্ঞান জগতের লোকেরা। একেবারে বলেন না তা নয়, তবে না-এর তুলনায় হ্যাঁ-এর সংখ্যা খুব কম। মাইকেল ফ্যারাডে এক সময় একটা গড় হিসাবে বলেছিলেন, বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের দশটা প্রস্তাবের নটাতেই নাকি ওনারা না বলে দেন। একটাতে অতি কষ্টে হ্যাঁ বলেন। সায় দেবার ব্যাপারে বড্ড কিপটে। বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যান। দেখবেন, প্রতিটি ব্যাপারে খালি প্রশ্ন, প্রশ্নের পর প্রশ্ন। কী ভয়ানক সন্দেহবাতিক ভাবা যায় না। কারোর সঙ্গে কারোর ঝগড়াঝাঁটি আছে, ব্যাপারটা এমন নয় কিন্তু। হয়ত বাইরে গলায় গলায় ভাব। কিন্তু বিজ্ঞানের সমস্যা এলে, পরীক্ষার ফলাফলের কথা উঠলে অমনি তক্কাতক্কি শুরু হয়ে যায়। তাঁদের শুধু ভীষণ ভয়, পাছে কিছু একটা ভ্রান্ত তত্ত্ব সম্মেলনে গৃহীত হয়ে যায়।

    তুলনায় একটা ধর্মের জলসায় গিয়ে দেখুন। কোনো একজন বড় ধার্মিক সাধুর বচনামৃত পাঠ করুন। বারবার কী দেখতে পাবেন? বিশ্বাস, নির্ভাবনা, নিঃসন্দেহ, নিস্তর্ক, মেনে নেবার আগ্রহ, . . . । যেমন এদেশে তেমনই ওদের দেশে। আমাদের পূর্বপুরুষরা যখন বলতেন, “বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ তর্কে বহুদূর”, লাতিনে ওরা বলত “Credo ut intelligam” (বিশ্বাস করলে তবেই আমি বুঝতে পারব)। এগুলো সবই হচ্ছে ইতিবাচক লক্ষণ। সব কিছুতেই হ্যাঁ বলবার ঝোঁক বা ইচ্ছা। এই জন্যই ধর্মে বিশ্বাসীদের লোকে আস্তিক বলে। তারা সব কিছু সহজে মেনে নেয়, বিশ্বাস করে, তাদের কোনো ব্যাপারেই খুব একটা সন্দেহ হয় না, প্রশ্নও জাগে না। তাদের মনে কোনো কিছুই গভীরে গিয়ে জানার খুব একটা ইচ্ছা নেই। ধর্মগুরুরা আবার মানা করেও দেন। যেমন, রামকৃষ্ণ রূপক ছলে বলে দিয়েছিলেন, “বাগানে আম খেতে এয়েছ খেয়ে যাও; বাগানে কটা গাছ, গাছে কটা করে আম—এত খোঁজে তোমার দরকার কী?”

    শিবদুর্গার তিনটি ছেলে মেয়ে স্বাভাবিক, কিন্তু গণেশের বেলায় হাতির মুন্ডু। তা-ই কোটি কোটি লোক দু তিন হাজার বছর ধরে মেনে এসেছে। সন্দেহ করেনি, প্রশ্নও তোলেনি। গণেশের একটা মাথা থাকা দরকার, আছে। তা হাতির না কিসের, অত খোঁজে দরকার কী বাপু আমাদের?

    আচ্ছা, সে না হয় পুরা কালের কথা। কিন্তু এই সেদিন যে পাথরমূর্তি গণেশের শুঁড় দিয়ে দুধ পানের গল্প দেশময় ছড়িয়ে গেল, শুধু সাধারণ পিকলু-ন্যাবলা-পাচি নয়, বহু ডক্টরেট, অফিসার, ম্যানেজার, আইনজ্ঞ তথা ভিআইপি যে গ্লাশে দুধ আর হাতে চামচ নিয়ে রাস্তায় লম্বা লাইনে আম আদমিদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়লেন, সারা দেশে কম বেশি বাহাত্তর লক্ষ লিটার দুধ মাটিতে খেল, তার পেছনেও তো সেই আদি অকৃত্রিম বিশ্বাস। প্রশ্ন বা সন্দেহ নেই। মেনে নেবার কী অসীম আগ্রহ। প্রত্যকেরই বক্তব্য, গনেশের ধাতব বা পাথরের মূর্তি দুধ যদি না-ই খাবে, এত এত লোকে তাহলে ছুটে এল কেন? সকলেই কি বোকা?

    বিজ্ঞান-মনস্কতা এই অন্ধ বিশ্বাসকেই বদলাতে চায়। আগেভাগেই বিশ্বাস না করে, প্রথমে প্রশ্ন কর, নানা দিক থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বুঝবার চেষ্টা কর, সমস্ত সন্দেহ মোচন হলে তবে মানবে। তথ্য যুক্তি প্রমাণ ও প্রয়োগ—এই হল বিজ্ঞান তথা বিজ্ঞান-মনস্কতার প্রধান চারটে স্তম্ভ। নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করে বাস্তব তথ্য যোগাড় কর, তার মধ্যে তুলনা করে হিসাবনিকাশ করে মাপজোক করে যুক্তি দিয়ে সাজিয়ে মূল পরিঘটনাটিকে দেখার চেষ্টা কর। হাতে কলমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করা যায় কিনা দেখ। যে সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসছে তাকে কোন জায়গায় কীভাবে প্রয়োগ করা যায় দেখ, অর্থাৎ, তাকে কাজে লাগানো যায় কিনা দেখ। তারপর সেই সিদ্ধান্তকে গ্রহণ কর।

    আমার অবশ্য মাঝে মাঝে মনে হয়, আস্তিক নাস্তিক শব্দ-জোড়ার অন্য রকম অর্থও থাকা সম্ভব। যে বিচারের ধারায় যুক্তিবুদ্ধি স্বভাবগতভাবে অস্তমিত হয়ে যায় তাই হল আস্তিক দর্শন। পক্ষান্তরে, যে ধরনের চিন্তাধারার মধ্যে যুক্তিতর্ক প্রমাণ ও প্রয়োগের বুদ্ধি আবশ্যিকভাবে ন্যস্ত রয়েছে, তাকে বলা হয় নাস্তিক দর্শন। এইভাবে ভাবলেই বা ক্ষতি কী?

    [ঙ]
    এই পার্থক্যটা ঠিকমতো বোঝার দরকার আছে। কেন না, অনেক সময়ই কিছু লোককে বলতে শুনি, ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের নাকি কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ নাকি দুই তরফেরই কট্টরপন্থীদের মধ্যে। সত্যিকারের ধর্মের সারকথা যে মেনে চলে সে নাকি সত্য জানতে কখনও আপত্তি করে না, বরং জানতেই চায়। সত্যিকারের বড় বিজ্ঞানীদেরও নাকি ধর্মের প্রতি কোনো অসহিষ্ণুতা নেই, তাঁরা নাকি ধর্মকে বুঝতে চান, অনেকে নিজেরাই ধর্মপ্রাণ হয়ে থাকেন। ইত্যাদি।

    এই বক্তব্যে আমার দ্বিবিধ আপত্তি আছে। আপত্তিটা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গায় গিয়ে নয়। যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাস করেন কিন্তু বিজ্ঞানের কাজটা বিজ্ঞানের নিয়মেই করেন, তাঁদের এই বিশ্বাস-আচরণের দ্বিভাজন (dichotomy) নিয়েই আমার আপত্তি। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী বিজ্ঞান চর্চা করা যায় না বলেই তাঁদের জোড়াতালি দিতে হয়। অক্ষয় কুমার দত্তের ফরমুলা অনুযায়ী বলতে পারি, জ্বর হলে আপনি মা কালীর নাম করতে পারেন, প্যারাসিটামল খেতে পারেন, আবার মা কালীর নাম নিতে নিতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। জ্বর কমার হলে ওই ওষুধেই কমবে। মা কালীর নামের মাহাত্ম্যে নয়। বীজগণিতের সমীকরণের আকারে লিখলে কালীনামের ফলাফল শেষ অবধি শূন্যই হবে।

    হ্যাঁ, এর মধ্যে ফরাসি যুক্তিবাদী দার্শনিক ভোলতেয়ারের সেই বিখ্যাত রসিকতারও ছাপ আছে। কে একজন তাঁকে বলেছিল, “আচ্ছা মশাই, মন্ত্র দিয়ে কি কাউকে মেরে ফেলা যায়?”

    “যায়, অবশ্যই যায়। তবে সঙ্গে আর একটা জিনিসও লাগবে।”

    “আর কী লাগবে?”

    “তেমন কিছু নয়, উপযুক্ত পরিমাণে কিছুটা সেঁকো বিষ। তাহলে মন্ত্রের কাজ ভালো হবে।”

    বিজ্ঞানের সাথে যে কোনো প্রকারের অন্ধ বিশ্বাসের একমাত্র এরকম “সেঁকো বিষ যুক্ত” সমন্বয়ই করা যায়। ধর্মের ক্ষেত্রেও এটা সত্য।

    সুতরাং, কোনো বড় বিজ্ঞানী হয়ত বলতে পারেন, অনেক কিছু জানার পরেও আমাদের এত জানতে বাকি যে জগতের রহস্য যেন আরও নিগূঢ় হয়ে উঠছে। জগতের এই শৃঙ্খলা, এত জটিলতা—এসবের ব্যাখ্যা হয় না একজন সুপারপাওয়ারের কথা ধরে না নিলে। তখনও আমাদের প্রশ্ন থেকেই যাবে, ধরে নিলেই কি সমস্ত রহস্যের ব্যাখ্যা হয়? সকলেই জানেন, হয় না। একটি বাস্তব পরিঘটনার পেছনে আর একটি কোনো আরও মৌলিক ও বাস্তব পরিঘটনাকে খুঁজে পেলে দ্বিতীয়টার সাহায্যে প্রথমটার ব্যাখ্যা হয়। মেঘ কীভাবে উৎপন্ন হয় জানলে বৃষ্টির একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। অন্যত্র সেই জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব হয়। কিন্তু ভগবান আমাদের বৃষ্টি দেন বললে নতুন কী জানা যায়? বৃষ্টি সম্পর্কে আমাদের এক দানাও জ্ঞান বাড়ে না। সেই জানা কাজেও লাগে না। যা জানি না, ঐশী শক্তি ঘটাচ্ছেন ধরে নিলেও তা অজানা এবং অধরাই থাকে। আবার অক্ষয় কুমারের ফরমুলায় বলতে হবে, জ্ঞানের জগতে একজন সুপারপাওয়ার আছে ধরে নেবার ফলও সেই শূন্যই। তবে আর তা ধরে নিয়ে কাম কী? অর্থাৎ, প্রশ্নটা ঝগড়ার নয়, ফলাফলের।

    জ্ঞানের সাথে জ্ঞানের সমন্বয় হয়। জ্ঞানের সাথে অজ্ঞতার কোনো সমন্বয় হয় কি? হয় না বলেই বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সমন্বয় সম্ভব নয়। যুক্তিবাদের সাথে কুসংস্কারের সমন্বয় সম্ভব হয় না। একটা চাইলে আর একটাকে ছাড়তে হবেই। ধর্ম হিন্দুকে বলে, গোমাংস ভক্ষণ করিও না, উহাতে মহাপাপ; ধর্ম মুসলমানকে বলে, কদাচ ভুলিও না, শুয়রের মাংস ভয়ানক হারাম। আর খাদ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞান থেকে জানা যায়, রক্তচাপ হৃদরোগ ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদির সমস্যা না থাকলে বাল্য কৈশোর যৌবনে এই দুই (এবং আরও নানা) প্রকারের মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে শুধু ভালো নয়, অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অশিক্ষিত ধর্মান্ধ গোঁড়া হিন্দু-মুসলমানের কথা ছেড়ে দিন, শিক্ষিত উদার মনস্ক কতজন এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে আগ্রহী হবেন? বা আদৌ হয়ে থাকেন? এইভাবে দেখলে বোঝা যাবে, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই বিজ্ঞান মনস্ক হতে চাইলে ধর্মমনস্কতাকে ছাড়িয়ে আসতে হবে। তা না হলে যেটা হবে সেটা আরও হাস্যকর। ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তাঁদের শিক্ষার মালমশলা কাজে লাগিয়ে সেই ধর্মান্ধতার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করবেন। অশৌচ পালনের সাথে ব্যাক্টিরিয়া নিধন, দাড়ি রাখলে গালে মশার কামড়ের হাত থেকে অব্যাহতি, ইত্যাদি . . . ।

    উল্টোটা তাঁরা কেউ করবেন না। কোনো বিজ্ঞানশিক্ষিত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিই কখনও বলবেন না, অন্তত এযাবত আমি কাউকে বলতে শুনিনি, “আমাদের ঈশ্বর ভক্তির সঙ্গে আমরা কে কী খাই তার কোনোই সম্পর্ক নেই। ঈশ্বর মুরগিও দিয়েছেন, কলাও দিয়েছেন; গরুও দিয়েছেন, লেটুস পাতাও তৈরি করেছেন; ফুলকপিও বানিয়েছেন, শুয়রও পয়দা করেছেন। যিনি আল্লাহ তিনিই ভগবান তিনিই তো গড। নামে ভিন্ন হলেও আসলে তো এক। তা না হলে দুনিয়ায় অনেক ভগবানের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে হত; সেটা সমস্ত ধর্মের পক্ষেই অস্বস্তিকর হয়ে যেত। সবই যখন সেই তাঁরই সৃষ্টি, তাঁর একটা জিনিস খেলে ভালো আর অন্য একটা খেলে দোষ হবে কেন? বিশেষ করে যখন এক ধর্মের নিষিদ্ধ খাদ্যগুলো অন্য ধর্মের ঈশ্বর বিশ্বাসীরা খেয়েদেয়ে দিব্যি হাজার হাজার বছর ধরে হজমও করেছে, টিকেও রয়েছে?” এইভাবে তাঁদের কেউ বলতে পারলে, ঈশ্বরব্যঞ্জনার কথাটা সত্য না হলেও একটা সমন্বয়ের আভাস অন্তত পাওয়া যেত। সেটুকুও আজ অবধি পাইনি।

    আরও একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ দিই। ভারতে প্রতিবছর সাগরমেলায় বা প্রতি চার বছর অন্তর কুম্ভমেলায় লক্ষ লক্ষ লোক জড়ো হয়ে যে পবিত্র গঙ্গাস্নান করে তাতে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ব্যাপক পরিবেশ দুষণ হয়। এই অসংখ্য মানুষের ফেলে যাওয়া বর্জ্য থেকে নদী সমুদ্র ও মেলার চারপাশের জল মাটি বায়ুর দীর্ঘমেয়াদি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। অনেক সময় ব্যাপক দুর্ঘটনাটা ঘটে, বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়। আরবে যারা হজ করতে যায় তাদের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। আজ পর্যন্ত কোনো একজন ধর্মপ্রাণ শিক্ষিত চিন্তাশীল মানুষকে বলতে শুনেছেন কি কেউ, “না, এরকম জমায়েত ভালো নয়। ব্যক্তি স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের স্বাস্থ্য—কোনোটার পক্ষেই ভালো নয়”? কেউ কি বলেছেন, “ভগবান বল, আল্লাহ বল তিনি সর্বত্র বিরাজমান; তাঁকে খুঁজতে বা পেতে এত ক্লেশ স্বীকার করে কোনো একটা বিশেষ জায়গাতেই বা যেতে হবে কেন? তুমি যেখানে আছ, সেখানেও তিনি আছেন। সেখানেই তাঁর পূজাপাঠ আরাধনা সেজদা কর”? আমার জানা নেই।

    যদি ধর্মে বিশ্বাসী একজনও কেউ সাহস করে এসব কথা বলতে পারতেন, তাহলে বুঝতাম, সমন্বয়ের সামান্য হলেও সম্ভাবনা আছে। কিন্তু না। ধর্মে বিশ্বাসী কেউই তা বলতে পারেন না। পারেন না কেন না, তাঁরাও জানেন, শুধু একজন আপনভোলা ঈশ্বর নিয়ে ধর্ম হয় না। বাকি সমস্ত আচার বিচার প্রথা প্রকরণ গরু শুয়র টিকি দাড়ি আলতা সিঁদুর বোরখা মিলিয়েই ধর্ম। হিন্দুদের ক্ষেত্রে জাতপাত ছোঁয়াছুঁয়ি বজায় রেখেই ধর্ম। অন্তত বৃহত্তর জনসমষ্টির জন্য ধর্ম মানে তাই।

    এই অবস্থায় বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করার একটাই মানে। তা হল, ধর্মবিশ্বাসীরা তাঁদের বিশ্বাস ও আচরণ থেকে এক চুলও নড়বেন না; বিজ্ঞান অনুরাগী যুক্তিবাদীদেরই তাঁদের জায়গা থেকে সরে আসতে হবে। মেনে নিতে হবে, হ্যাঁ, ধর্মে কিছু কিছু সত্য থাকলে থাকতেও পারে। ঈশ্বর বিশ্বাস থাকলে বিজ্ঞানের তো আর তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। অতএব আপাতত না হয় এরকম একটি প্রতিপাদ্যকে মেনে নেওয়াই যাক। আমার মনে হয়, বিজ্ঞানমনস্কতার তরফে এরকম ছাড় দেবার কোনো প্রয়োজন সপ্তদশ শতকে দকার্তের সময়ে থাকলেও আজ আর নেই। আমাদের পক্ষ থেকে এই সত্যটা স্পষ্ট উচ্চারণে বলতে পারা উচিৎ।

    [চ]
    পরিশেষে এ-ও দেখা দরকার, মানুষের জ্ঞান কোন রাস্তাতে বাড়ছে। যতদিন মানুষ শুধু ধর্মে গুরুতে মান্যগ্রন্থে বিশ্বাস করেছে ততদিন তার জ্ঞানের বিকাশ কতটা হয়েছে, আর যবে থেকে মানুষ জিজ্ঞাসার পথে, সংশয়ের পথে জানতে শুরু করেছে তখন থেকে তার জ্ঞানের বৃদ্ধি ও বিকাশের হার কী। এই তুলনায় গেলেই বোঝা যাবে কোনটা সত্যিকারের জানার পথ, আর কোন পথে হাঁটলে বিহারের ঘটনায় গিয়ে পৌঁছতে হবে। শুধু পদার্থবিজ্ঞান রসায়ন গণিত জ্যামিতি জীববিদ্যা ভূতত্ত্ব নৃতত্ত্ব ইত্যাদি নয়, ইতিহাস ভূগোল পুরাতত্ত্ব ভাষাতত্ত্ব অর্থনীতি—সব ক্ষেত্রে প্রশ্ন করে করে উত্তর খুঁজতে খুঁজতে, একের পর এক সন্দেহ নিরসন করতে করতে, মানুষ জানছে। মানুষের জ্ঞান সমৃদ্ধতর হচ্ছে। এই পথ ছেড়ে দেওয়ার মানে হল এযাবত যা জেনেছেন তাকে একটা গুদামঘরে ঢুকিয়ে দরজায় তালা মেরে চলে আসা।

    আমাদের দেশের ছাত্রদেরও তাই প্রশ্ন করতে শেখাতে হবে। শুধু বিজ্ঞানের বিষয় নয়, ইতিহাস ভূগোলও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শেখাতে হবে। সূর্য চন্দ্রকেও চেনাতে হবে। দিক চেনাতে হবে। ছোটবেলা থেকেই যেন দিকভ্রষ্ট হয়ে না যায়। ইতিহাসের শিক্ষককেও ক্লাশে সংশ্লিষ্ট ভূগোলের মানচিত্র নিয়ে ঢুকতে হবে। শিক্ষার মধ্যে আরও অনেক কিছু করতে হবে, করা যায়। বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রেই শুধু নয়, শিক্ষার সমস্ত প্রকোষ্ঠেই বিজ্ঞানকে নিয়ে যেতে হবে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তিকে নিয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞান-মনস্কতা বৃদ্ধির আর কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই।

    পুনশ্চ: এই প্রবন্ধে কোনো ধর্মবিশ্বাসীর ব্যক্তিগত বিশ্বাসে আঘাত দেবার কোনো অভিপ্রায় ছিল না। তথাপি যদি কেউ আহত বোধ করেন তার জন্য আমি আমার অসহায়তা প্রকাশ করে রাখছি। বিহারের ঘটনাটি জানার পর ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে বিজ্ঞানমনস্কতার পক্ষ থেকে উপরোক্ত কথাগুলি উচ্চারণ না করে আমিও পারছিলাম না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩৯০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • একক | 53.224.129.46 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:৪৯51913
  • ওটা তো নাক কাটা সাধুর গপ্প । বুদ্ধিমান লোক নিজেই হিন্ট দিয়ে গেছেন । আপনাকেও "দেখালে" কাল থেকে রেপ্লিকেট করবেন :)
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.76.154 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:৫১51914
  • অশোক বাবু বলছেন " ফেয়েরাব্যান্ড যা বলেছেন তা তাঁর মত। বক্তব্য। যুক্তি নয়। বিজ্ঞানকে তিনি একটি মতাদর্শ বলে মনে করেন। “ To defenders of science, like Karl Popper, the claim that science itself might be prey to distortion, prejudice and ideology is anathema. "

    " নিউটনীয় বলবিদ্যার সমান্তরাল আর কি বলবিদ্যা হতে পারে না দেখিয়ে নিউটনের তত্ত্বকে তাঁর মতবাদ বলা যায় না। আইনস্টাইনের তত্ত্বের ক্ষেত্রেও তাই। আলোসদৃশ গতিময় বস্তুর জন্য আপেক্ষিকতা-“মতবাদের” একটা বিকল্প মতবাদ প্রতিষ্ঠা না করে কী করে একে একটা মতবাদ বলা যায় আমার কাছে পরিষ্কার নয়। " এ বিষয়ে “ that all forms of knowledge, including scientific knowledge, are ‘ideological’ in the sense that there is no neutral, objective body of knowledge that is not infected by the purpose-relative concepts of a group of inquirers.” ঠিক এই কারনেই একে মানে বিজ্ঞান , গীতা , কুরান এবং মার্ক্সবাদ কে একটা মতবাদ বলা যায়

    আর যাদের বিজ্ঞান আলোচনায় রামকৃষ্ণ মহা হ্যাজ বা ভুল ভাল কমপ্যারিসন বলে মনে হচ্ছে তাদের কে ফেয়ারবেন্ড মূলত অশিক্ষিত বলেছেন ।

    “Our well-conditioned materialistic contemporaries are liable to burst with excitement over events such as the moonshots, the double helix, nonequilibrium thermodynamics. But let us look at the matter from a different point of view, and it becomes a ridiculous exercise in futility. It needed millions of dollars, thousands of well-trained assistants, years of hard work to enable some inarticulate and rather limited contemporaries to perform a few graceless hops in a place nobody in his right mind would think of visiting – a dried out, airless, hot stone. But mystics, using only their minds, travelled across the celestial spheres to God himself whom they viewed in his splendour receiving strength for continuing their lives and enlightenment for themselves and their fellow men. It is only the illiteracy of the general public and of their stern trainers that makes them reject such comparisons without further ado. A free society does not object to such an attitude but it will not permit it to become a basic ideology either.” (P. Feyerabend, Science In A Free Society, Verso/NLB 1982, p.31). পুনরায় " All ideologies must be seen in perspective. One must not take them too seriously." বিজ্ঞান কে অত সিরিয়াসলি নিয়ে জীবনের একমাত্র এবং বেসিক মতাদর্শ হিসাবে ধরে নেওয়ার মত যুক্তি সঙ্গত কোন কারন নেই , অন্তত ফ্রি সোসাইটিতে তো নেইই - তবে কুসংস্কার দূর করতে থাকলে আপত্তিরও কিছু নেই ।
  • কি জ্বালা | 91.7.16.13 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:৫৫51894
  • সায়েন্স আর স্টেটকে আলাদা করলে অ্যাটম বোমা কে ফেলবে ? পাখি ?
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৬:৫৭51915
  • আরে!!!! স্থবির এর সত্যদা!!!! তিনি তো সূর্যে যেতেন! যোগ এর দ্বারা!
    ঃ-)
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৭:০১51916
  • স্থবির জিগ্গেস করেছিল, "সূর্যটা কীরকম, সত্যদা?"
    সত্যদা বললেন, "ওহ্হ্হ, সে একেবারে জবাকুসুমসঙ্কাশং। " ঃ-)
    আরো বল্লেন পুরাকালে সূর্যে যাবার খুব চল ছিল। এই যে সূর্যসিদ্ধান্তের মতন বই যে লেখা হয়েছে, সে কি এমনি এমনি? সূর্যে গিয়ে গিয়েই তো!
    ঃ-)
  • Ranjan Roy | 132.162.116.133 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৭:১৩51895
  • বিচারবাবুকে ধন্যাবাদ--শ্রীশ্রীকথামৃত'র লিং দেওয়ার জন্যে।
    ইস্যু একটাইঃ ঠাকুর বিচারকে ছেড়ে দিয়ে ভক্তিমার্গের উপদেশ দিতেন কি না!

    আমি আপনার কোট করা লিং থেকেই ঠাকুরের নিজের বক্তব্য তুলে দিচ্ছিঃ
    “ভক্তিই সার। ঈশ্বরকে বিচার করে কে জানতে পারবে। আমার দরকার ভক্তি। তাঁর অনন্ত ঐশ্বর্য অত জানবার কি দরকার?
    কেশব সেন শম্ভু মল্লিকের সঙ্গে এসেছিল, আমি তাকে বললাম, গাছের পাতাটি পর্যন্ত ঈশ্বরের ইচ্ছা ভিন্ন নড়ে না। স্বাধীন ইচ্ছা (রী িল্ল) কোথায়? সকলই ঈশ্বরাধীন।
    মাস্টার -- বিদ্যাসাগর অভিমান করে বলেন, “ঈশ্বরকে ডাকবার আর কি দরকার! দেখ চেঙ্গিস খাঁ যখন লুটপাট আরম্ভ করলে তখন অনেক লোককে বন্দী করলে; ক্রমে প্রায় এক লক্ষ বন্দী জমে গেল। তখন সেনাপতিরা এসে বললে মহাশয়, এদের খাওয়াবে কে? সঙ্গে এদের রাখলে আমাদের বিপদ। কি করা যায়? ছেড়ে দিলেও বিপদ। তখন চেঙ্গিস খাঁ বললেন, তাহলে কি করা যায়। ওদের সব বধ কর। তাই কচাকচ করে কাটবার হুকুম হয়ে গেল। এই হত্যাকাণ্ড তো ঈশ্বর দেখলেন? কই একটু নিবারণ তো করলেন না। তা তিনি থাকেন থাকুন, আমার দরকার বোধ হচ্ছে না। আমার তো কোন উপকার হল না!”

    শ্রীরামকৃষ্ণ -- ঈশ্বরের কার্য কি বুঝা যায়, তিনি কি উদ্দেশ্যে কি করেন? তিনি সৃষ্টি, পালন, সংহার সবই করছেন। তিনি কেন সংহার করছেন আমরা কি বুঝতে পারি? আমি বলি, মা, আমার বোঝবারও দরাকার নাই, তোমার পাদপদ্মে ভক্তি দিও। মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য এই ভক্তিলাভ। আর সব মা জানেন। বাগানে আম খেতে এসেছি; কত গাছ, কত ডাল, কত কোটি পাতা -- এ-সব বসে বসে হিসাব করবার আমার কি দরকার! আমি আম খাই, গাছপাতার হিসাবে আমার দরকার নাই।
    শ্রীরামকৃষ্ণ -- বিদ্যাসাগরের পাণ্ডিত্য আছে, দয়া আছে, কিন্তু অর্ন্তদৃষ্টি নাই। অন্তরে সোনা চাপা আছে, যদি সেই সোনার সন্ধান পেত, এত বাহিরের কাজ যা কচ্ছে সে-সব কম পড়ে যেত;
    (চৌধুরীর প্রতি) -- “পাণ্ডিত্য দ্বারা তাঁকে পাওয়া যায় না।

    “আর তাঁর বিষয় কে বিচার করে বুঝবে? তাঁর পাদপদ্মে ভক্তি যাতে হয়, তাই সকলের করা উচিত।”
    তোমার ফিলজফিতে (হিলোসোফ্য) কেবল হিসাব কিতাব করে! কেবল বিচার করে! ওতে তাঁকে পাওয়া যায় না।”
    [অধরকে উপদেশ -- “বেশি বিচার করো না” ]

    “বেশি বিচার করা ভাল নয়, মার পাদপদ্মে ভক্তি থাকলেই হল। বেশি বিচার করতে গেলে সব গুলিয়ে যায়।
    “শুধু বিচার! থু! থু! -- কাজ নাই।

    (ঠাকুর মুখামৃত ফেলিলেন।)

    “কেন বিচার করে শুষ্ক হয়ে থাকব? যতক্ষণ ‘আমি তুমি’ আছে, ততক্ষণ যেন তাঁর পাদপদ্মে শুদ্ধাভক্তি থাকে।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (বৈদ্যনাথের প্রতি) -- তর্ক করা ভাল নয়; আপনি কি বল?

    ছেলেটি যুবা পুরুষ -- শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি ঠাকুরকে প্রণাম করিলেন।

    নবদ্বীপ -- ঘরে শাস্ত্র পড়ে। এ-দেশে বেদ একরকম পাওয়াই যেত না। মোক্ষমূলর ছাপালেন, তাই তবু লোকে পড়ছে।

    [পাণ্ডিত্য ও শাস্ত্র -- শাস্ত্রের সার জেনে নিতে হয় ]

    শ্রীরামকৃষ্ণ -- বেশি শাস্ত্র পড়াতে আরও হানি হয়।

    “শাস্ত্রের সার জেনে নিতে হয়। তারপর আর গ্রন্থের কি দরকার!

    “তাঁর কাণ্ড মানুষে কি বুঝবে? অনন্ত কাণ্ড! তাই আমি ও-সব বুঝতে আদপে চেষ্টা করি না। শুনে রেখেছি তাঁর সৃষ্টিতে সবই হতে পারে। তাই ও-সব চিন্তা না করে কেবল তাঁরই চিন্তা করি।
    শ্রীরামকৃষ্ণ (বলরামের পিতার প্রতি) -- বই আর পড়ো না, তবে ভক্তিশাস্ত্র পড়ো যেমন শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত।
    নরেন্দ্র -- “আর কাজ নাই জ্ঞানবিচারে, দে মা পাগল করে।” (মাস্টারের প্রতি) দেখুন, হ্যামিলটন্‌এ পড়লুম -- লিখছেন, “আ লেঅর্নেদ ইগ্নোরে ইস থে এন্দ ওফ হিলোসোফ্য অন্দ থে বেগিন্নিঙ্গ ওফ Rেলিগিওন।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) -- এর মানে কি গা?

    নরেন্দ্র -- ফিলসফি (দর্শনশাস্ত্র) পড়া শেষ হলে মানুষটা পণ্ডিতমূর্খ হয়ে দাঁড়ায়, তখন ধর্ম ধর্ম করে। তখন ধর্মের আরম্ভ হয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) -- ঠন্ক য়ৌ! ঠন্ক য়ৌ! (হাস্য)

    “এ যা বললুম সব বিচারের কথা। ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা -- এই বিচার। সব স্বপ্নবৎ! বড় কঠিন পথ। এ-পথে তাঁর লীলা স্বপ্নবৎ, মিথ্যা হয়ে যায়। আবার ‘আমি’টাও উড়ে যায়। এ-পথে অবতারও মানে না। বড় কঠিন। এ-সব বিচারের কথা ভক্তদের বেশি শুনতে নাই।
    ঠাকুর মণিকে বিচার করিতে বারণ করিয়াছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (রাখালের প্রতি) -- বেশি বিচার করা ভাল না। আগে ঈশ্বর তারপর জগৎ -- তাঁকে লাভ করলে তাঁর জগতের বিষয়ও জানা যায়।

    ঠাকুরের রাস্তায় ক্রন্দন -- “মা বিচার-বুদ্ধিতে বজ্রাঘাত দাও” -- ১৮৬৮ ]

    (মণির প্রতি) -- “তাই তোমাকে বলছি, -- আর বিচার করো না। আমি ঝাউতলা থেকে উঠে যাচ্ছিলাম ওই কথা বলতে। বেশি বিচার করলে শেষে হানি হয়। শেষে হাজরার মতো হয়ে যাবে। আমি রাত্রে একলা রাস্তায় কেঁদে কেঁদে বেড়াতাম আর বলেছিলাম --

    ‘মা, বিচার-বুদ্ধিতে বজ্রাঘাত দাও।’

    “বল, আর (বিচার) করবে না?”

    মণি -- আজ্ঞা, না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ -- ভক্তিতেই সব পাওয়া যায়। যারা ব্রহ্মজ্ঞান চায়, যদি ভক্তির রাস্তা ধরে থাকে, তারা ব্রহ্মজ্ঞানও পাবে।

    এটা শুধু আপনার দেওয়া চতুর্থ খন্ডের অংশ থেকে। বাকি চারখন্ডে একই পরিমাণে এই চিন্তাধারা প্রবাহমানঃ
    বল আর বিচার করবে?
    আর
    ‘মা, বিচার-বুদ্ধিতে বজ্রাঘাত দাও।
  • Ranjan Roy | 132.162.116.133 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৭:১৬51896
  • ডিঃ
    নরেন্দ্রঃ‘“A learned ignorance is the end of Philosophy and the beginning of Religion.”

    ঠাকুরঃ Thank you! Thank you!
  • বিচার | 118.61.99.238 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১০:১৬51897
  • বিচারের নানা অর্থ । এই দেখুন বিচার করতে বলছেন -
    "বস্তু বিচার করবে। মেয়েমানুষের শরীরে কি আছে — রক্ত, মাংস, চর্বি, নাড়ীভুঁড়ি, কৃমি, মুত, বিষ্ঠা এইসব। সেই শরীরের উপর ভালবাসা কেন?"
    পাঁচজনে ভাবের আবেগে যা নিয়ে মুগ্ধ হয়ে থাকে, তাকে প্রায় ডাক্তারের দৃষ্টিতে (প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমা মনে করুন) কেটেছিঁড়ে দিলেন ।

    আবার বিচার বলতে জ্ঞানযোগ বোঝাচ্ছেন যখন, তখন ডিসকারেজ করছেন । কেন ? না পথটা কঠিন ।

    “ভক্তিযোগ জ্ঞানযোগ এ সবই পথ । যে পথ দিয়েই যাও তাকে পাবে। ভক্তির পথ সহজ পথ। জ্ঞান বিচারের পথ কঠিন পথ। "

    আবার -
    বিজয় -- যাঁরা বেদান্ত বিচার করেন, তাঁরাও তো তাঁকে পান?
    শ্রীরামকৃষ্ণ -- হাঁ, বিচারপথেও তাঁকে পাওয়া যায়। একেই জ্ঞানযোগ বলে। বিচারপথ বড় কঠিন। ...কলিতে জীব অন্নগত প্রাণ, “ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা” কেমন করে বোধ হবে? সে-বোধ দেহবুদ্ধি না গেলে হয় না। “আমি দেহ নই, আমি মন নই, চতুর্বিংশতি তত্ত্ব নই, আমি সুখ-দুঃখের অতীত, আমার রোগ, শোক, জরা, মৃত্যু কই?” -- এ-সব বোধ কলিতে হওয়া কঠিন। যতই বিচার কর, কোন্‌খান থেকে দেহাত্মবুদ্ধি এসে দেখা দেয়। অশ্বত্থগাছ এই কেটে দাও, মনে করলে মূলসুদ্ধ উঠে গেল। কিন্তু তার পরদিন সকালে দেখ, গাছের একটি ফেঁকড়ি দেখা দিয়েছে! দেহাভিমান যায় না। তাই ভক্তিযোগ কলির পক্ষে ভাল, সহজ।

    আবার -
    “বিচারপথে জ্ঞানযোগের পথে, তাঁকে পাওয়া যায়। কিন্তু এ-পথ বড় কঠিন। আমি শরীর নই, মন নই, বুদ্ধি নই। আমার রোগ নাই, শোক নাই, অশান্তি নাই; আমি সচ্চিদানন্দস্বরূপ, আমি সুখ-দুঃখের অতীত, আমি ইন্দ্রিয়ের বশ নই, এ-সব কথা মুখে বলা খুব সোজা। কাজে করা, ধারণা হওয়া বড় কঠিন। কাঁটাতে হাত কেটে যাচ্ছে, দরদর করে রক্ত পড়ছে, অথচ বলছি, কই কাঁটায় আমার হাত কাটে নাই, আমি বেশ আছি। এ-সব বলা সাজে না। আগে ওই কাঁটাকে জ্ঞানাগ্নিতে পোড়াতে হবে তো।”

    কোথাও পৌঁছনোর অনেকগুলো রাস্তার মধ্যে যেটা সহজ মনে করছেন, সেটা ধরতে বলছেন । তা সে তো খুবই নর্মাল, না ? বিচার করেই দেখুন । :)
  • Ekak | 53.224.129.55 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১০:৫০51898
  • আবার সেই রামকৃষ্ণ :(( সমস্ত আলোচনা ভোগে যায় এই এক বেকার হ্যাজ । বিজ্ঞানমনস্কতার আলোচনায় রামকৃষ্ণ ফ্রিশন আসেন কোদ্দিয়ে ?? আর কতবার কথামৃত পড়লে আপনাদের ঘিলু কাজ করবে ? রামকৃষ্ণ ধার্মিক বলে নন , ওই একই স্কুলে বেশ কিছু দার্শনিক ও আছেন , ওরা ওই যে বিচার বলেন ওটা বৈজ্ঞানিক বিচার না , অন্ধকার ঘরে সেফটিপিন খুঁজছেন নেতি নেতি করে , এর জন্যে আগে থেকে জানা দরকার সেফটিপিন এ হাত পড়লে ঠিক কেমনটি লাগে । এই বিচারের মডেলটা ফ্ল্যড বলেই এই ধারার দার্শনিক দের শেষবধি ডিভাইন রিভিলেশনের তত্ব আন্তে হয় , ফাঁক ভোরের জন্যে যে "তিনি বুঝিয়ে দেবেন " । এটা রামকৃষ্ণ বলে আলাদা কিছু নয় , দিস ইস এন ওল্ড থট মডেল এন্ড ইট বিহেভস লাইক দিস ।

    এটা কোনোভাবেই সায়েন্স না । সায়েন্স বাবু কে জেনে নেতি নেতি করে না । টি এথ মোমেন্টে একটা জিনিস কে রিড করে এবং তাকে ক্লাসিফায়ার দিয়ে চিহ্নিত করে । তখন তার নাম টি ওয়ান । এবার এটা ইভোলিউট করতে থাকে । সে খানিকদূর যাওয়ার পর বাবু ও হতে পারে বাবুর বাঁদর ও হতে পারে । এই প্রসেস রিকার্সনটা বুঝুন । এখানে এত এত একাদেমিক্স এর প্রতিষ্ঠিত লোক রয়েছেন , অথচ সায়েন্টিফিক থট মডেল এর মধ্যে রামকৃষ্ণ ফৃষ্ণ এসে পড়লে সিরিয়াসলি মহা বিরক্তিকর লাগে । পাড়ায় দোকানে এরকম বাজে হ্যাজ হয় ।
  • dc | 116.207.122.205 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:১৬51899
  • হুঁ এই রামকৃষ্ণ হ্যাজ টা সত্যি বোরিং হয়ে উঠেছে। ভদ্রলোকের সাইকোলজিকাল প্রব্লেম ছিল, বিস্তর হ্যালুসিনেট করতেন। এখনকার দিনে হলে ওনার চিকিৎসা হতো, আগেকার দিনে বলে রামকৃষ্ণ হয়ে গেছেন। আর তো কোন কনট্রিবিউশান নেই।
  • একক | 53.224.129.55 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:১৯51900
  • আর এই হয়েছে "ভক্তিমার্গ " আর "জ্ঞানমার্গ" !! বিজ্ঞানের আলোচনায় এসবের জায়গা কতটুকু ? ভক্তিমার্গ -জ্ঞানমার্গের মডেল টা ভুল না কিন্তু ওটা খাটে যখন ইন্টেনশনালি মডেল ডিসাইন করছেন একটা ফিক্সড ফোকাস কে সামনে রেখে । কিছু ভ্যালু বাইরে থেকে এম্বেড করছেন সিস্টেমে , সেটা দিয়ে শুরু করে , এবার সিস্টেম এক্সটার্নাল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কনফ্লিক্ট এর মধ্যে দিয়ে নলেজ বেস তৈরী করছে । এবার আপনি যদি বাইরের লোকটা না হয়ে নিজেকে একটা মাইক্রোচিপ ভাবেন তাহলে ওই প্রাইমারি এম্বেড গুলো কে ভক্তিমার্গ বলা যায় । দিস মডেল ওয়ার্কস হয়েন দেয়ার ইস এন ইন্তেন্সনাল থার্ড পার্টি ।

    কিন্তু বিজ্ঞানের আলোচনার জায়গা এটা নয় । এই জন্যেই বারবার বলি বিজ্ঞানের কোনো খারাপ বা মহৎ উদ্দেশ্য নেই । রান্ডম সিকোয়েন্স এর নেচার অফ ইভলিউসনকে বিজ্ঞান বোঝার চেষ্টা করে । ব্যাস । কেও কোথাও কিছু এম্বেড করে যায়নি কারন কোনো ইন্টেনশন ও ছিলনা । এবার আপনি সিস্টেমটার মধ্যে বসে একটা সিস্টেম বাননোর সময় ভক্তি-জ্ঞান যা কিছু ব্যবহার করতে পারেন টুল হিসেবে । কিন্তু ওই পর্যন্তই । এর মানে আদৌ এই নয় যে কোনো এক অদৃশ্য হাওয়াকল এরকম কোনো টুল ইউস করে সব বানিয়েছে । এরকম কোনো লার্জ ইন্টেনশন যে নেই তার অনেক প্রমান আছে । সেগুলো পড়ুন বরং । ভুল ভাঙবে । নইলে বিজ্ঞানআলোচনা করে তার ওপর ভক্তির টমেটো স্যস মাখিয়ে ঘেঁটে বসে থাকবেন আর বিগায়্ন আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা লিখবেন পরীক্ষায় । বোগাস যত ।
  • Ekak | 53.224.129.55 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:৩০51901
  • হ্যালুসিনেট করেছিলেন কিনা জানিনা , ডাক্তার তো নোই , যা পড়েছি তাতে অনেকদিন আগেই এটা মনে হয়েছে : রামকৃষ্ণ ওয়াস এন এন্ড্রোইড ড্রীমিং অফ ইলেকট্রিক শীপস । হুইচ ইস ন্যাচারাল । এন্ড্রোইডরা তো তাদের চিপ লেভেল থেকে এভাবেই ভাববে ।

    বিরক্ত লাগে ওনার মডেলকে বিজ্ঞানচেতনার সঙ্গে গোলালে । আরে রামকৃষ্ণকে কাজে লাগাতে চান তো কিছুক্ষন রামকৃষ্ণ মডেলের মধ্যে ঢুকে সব কিছু ভাবুন , বেশ গোল গোল সমাধানে পৌঁছন এবং কাজের সময় হলে আবার সেই জোব্বা ছেড়ে বেরিয়ে আসুন । মিটে গ্যালো । স্পিরিচুয়াল ফিকশন ওয়ার্ল্ডের মজা পাবেন । হরমোন লেভেল রিফ্রেশ হবে । এনারা না নিজেরা মজা পাচ্ছেন , না বাকিদের কাজের আলোচনা করতে দিচ্ছেন । আমি এখনো খঞ্জনি বাজিয়ে গান গাই মিশনে গেলে , তাইবলে বিজ্ঞানের আলোচনাকে তাই দিয়ে কেঁচে গণ্ডুষ করবো নাকী !
  • যা বলেছেন | 175.231.0.242 (*) | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:৫১51902
  • হ্যাঃ, এই হ্যালুসিনেট-ফিনেট জাস্ট মনগড়া থিওরি, বিজ্ঞানমনস্ক কেউ দুমদাম এসব লাগিয়ে দেন না ।
  • ঈশান | 183.24.110.20 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৪51917
  • এত রামকেষ্ট টেষ্ট দরকার কেন বুঝছিনা।

    ধরুন, আমার বয়স দশ। ইশকুলে গিয়ে বললাম, 'এই সূর্য জিনিসটা রোজ ওঠে আর নামে কিকরে? চাকা লাগানো আছে নাকি?' শুনে মাস্টার বললেন, 'ধুর বোকা সূর্য ওঠে আর নামেনা। পৃথিবী নিজের চারদিকে বাঁই বাঁই করে ঘোরে। তাই ওরকম লাগে'। আমি জিগালাম 'কিকরে জানা গেল?' মাস্টার বললেন, 'বিজ্ঞান বলেছে।' বলে চাট্টি যুক্তি দিয়ে সৌরকেন্দ্রিক মডেলটা আমাকে বুঝিয়ে দিলেন। আমি সেটা 'বুঝে' নিলাম, এবং 'বিজ্ঞান বলেছে' বলে সারাজীবন ধ্রুবসত্য হিসেবে বিশ্বাস করলাম। এবং কেসি পালকে প্যাঁক দিলাম।

    এবার ফ্ল্যাশ ব্যাক। সন ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ। ধরুন আমার বয়স তখনও দশ। ইশকুলে গিয়ে বললাম, 'এই সূর্য জিনিসটা রোজ ওঠে আর নামে কিকরে? চাকা লাগানো আছে নাকি?' শুনে মাস্টার বললেন,'ধুর বোকা চাকা লাগানো থাকবে কেন, পৃথিবীর চারদিকে নানারকম গোলক আছে, তাতে গ্রহ নক্ষত্রগুলো ফিট করা আছে। গোলকগুলো বোঁবোঁ করে ঘোরে'। আমি জিগালাম 'কিকরে জানা গেল?' মাস্টার বললেন, 'পবিত্র গ্রন্থে ওরকম লেখা আছে'। বলে টলেমির মডেলটা চাট্টি যুক্তি দিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন। আমি সেটা 'বুঝে' নিলাম। এবং 'পবিত্র গ্রন্থে আছে' বলে পরবর্তী ছশো বছর ধ্রুবসত্য বলে বিশ্বাস করলাম। এবং এ নিয়ে কেউ ট্যাঁফোঁ করলে তাকে ধরে জ্বালিয়ে দিলাম (যদিও সর্বক্ষেত্রেই জ্বালানো হত এমন না)।

    এই দুটো অ্যাপ্রোচে বিশেষ তফাত নেই। ওই ফিজিকালি জ্বালিয়ে দেওয়াটা বাদ দিলে। অসহিষ্ণুতার অভিযোগ উঠতেই পারে, সেটা আলাদা প্রসঙ্গ। কিন্তু পদ্ধতিগতভাবে খুব আলাদা কিছু না। চিরকালই 'পর্যবেক্ষণ -- হাইপোথিসিস -- থিয়োরি' মডেলে জ্ঞান চর্চা চলেছে। থিয়োরিকে প্রাণপনে রক্ষা করার চেষ্টা হয়েছে। একেবারেই না করা গেলে জ্ঞানচর্চায় প্যারাডাইম শিফট এসেছে। এইভাবেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে ফসল ফলানো হয়েছে। ব্রিড করার টেকনিক আবিষ্কার হয়েছে। সৌরকেন্দ্রিক/পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেল বেরিয়েছে। এমনকি ঈশ্বরের উদ্ভবও, আন্দাজ করা যায়, এইভাবেই। ওরকম পরেও হয়েছে, যেমন ধরুন ইথার, বা এখনকার চতুর্থ মাত্রা, বা কোয়ান্টাম আনসার্টেন্টি।

    তফাত একেবারে নেই তা নয়। একটা আগেই বললাম। তবু আরেক্বারও লিখি। ১। চিন্তা বদলে শারীরিক হিংস্রতা এখন অনেক কম। ২। এখন পরিবর্তন অনেক দ্রুত। ৩। এখন 'পবিত্র গ্রন্থ' এবং যাজকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যাদেরকে আমরা যথাক্রমে 'বিজ্ঞান' ও 'এক্সপার্ট' বলি। আগে 'জ্ঞানচর্চা' ব্যাপারটা এক জীবনে একটা লোকের পক্ষে সমস্ত শাখাতেই করা সম্ভব ছিল। এখন আর সেটা সম্ভব না। ফলে 'এক্সপার্ট'রা অপরিহার্য। এবং সার্মনের গুরুত্ব বেড়েছে।

    এর মধ্যে, ১ এবং ২, এটা ব্যক্তিগতভাবে আমি পজিটিভ মনে করি। এর উপরেই ব্যক্তি, বাকস্বাধীনতা এই স্তম্ভগুলো দাঁড়িয়ে আছে, বা উল্টো করে বললে এই স্তম্ভগুলো তৈরি হয়েছে বলেই ১,২ আছে। ৩ টা আবার আমার বেশ অ্যালার্মিং লাগে। ব্যক্তিগতভাবে। ধরুন, দুশো বছর আগে একটা ফাঁকা জায়গায় আমার কোনো পূর্বপুরুষকে ছেড়ে দিলে তিনি খেয়ে পরে বাঁচতে পারতেন (বহু জায়গার মানুষ এখনও পারে)। বেঁচে থাকার সাধারণ জ্ঞান তাঁদের আয়ত্ত্ব ছিল। কিন্তু আমাকে একটা দ্বীপে ছেড়ে দিলে আমি বোধহয় মরেই যাব। কারণ, জীবনযাপনের সমস্ত 'জ্ঞান'এর জন্যই আমি এক্সপার্ট মুখাপেক্ষী। কোনটা কিভাবে হয় খতিয়ে দেখিনা, দেখার সময়ও নেই, এক্সপার্টের কথাই ধ্রুবসত্য বলে মেনে নিই। আমিও একটা খুব ছোটো ক্ষেত্রে এক্সপার্ট। কিন্তু বাকি এক্সপার্টরা না থাকলে সেটার আলাদা কোনো মূল্য নেই। যাজক এবং পবিত্র গ্রন্থের এই সংখ্যাবৃদ্ধি, এ খুবই অস্বস্তিকর লাগে।

    এই তিনটে পরিবর্তন আমি দেখতে পাই (অবশ্যই মৌলিক দাবী না)। কিন্তু জ্ঞানচর্চার 'পর্যবেক্ষণ -- হাইপোথিসিস -- থিয়োরি' মডেলে গত দুহাজার বছরে সংস্কার, ধর্ম বা বিজ্ঞানের জমানায় অ্যাপ্রোচে আর কোনো বদল হয়েছে বলে তো মনে হয়না।
  • cm | 127.247.99.240 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১২51918
  • অল্পকথায় বৈজ্ঞানিক মতবাদ গতিশীল (ডাইনামিক) ধর্মীয় মতবাদ স্থির।
  • ঈশান | 183.24.110.20 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৬51919
  • নাঃ ওটা মিথ। স্থিতিজাড্য বেশি, এইটা হয়তো বলা গেলেও যেতে পারে। আর অসহিষ্ঞুতা। সেটাও সার্বজনীন কিনা সন্দেহ।
  • cm | 127.247.99.240 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৪51920
  • ধর্মের দিকে ঝোঁক লক্ষ্য করছি, ভাল।
  • T | 165.69.199.255 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৬51921
  • না দুটো মডেলের তফাত আছে। সেটাই পপারের দাবী। প্রথম মডেল তার বেসিক অ্যাসাম্পশন সমেত বিবিধ ভৌত ব্যাপারগুলোর কনসিস্টেন্ট ব্যাখ্যা দেয়।

    দ্বিতীয় মডেলটি ভৌত ব্যাপারগুলোর যে ব্যাখ্যাগুলো দেয় সেটা একে অপরের সাথে কনসিস্টেন্ট নয়।
  • PT | 213.110.242.5 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০২51922
  • "প্রমাণ" বলে একটা শব্দ ও তার প্রয়োগ আছে। ধর্ম বলে বিশ্বাস দিয়ে শুরু করতে আর বিজ্ঞান শেখায় প্রশ্ন দিয়ে শুরু করতে। তাই গ্যালিলীও প্রশ্ন করেন।
    তাই কেসিপালও ফিরে আসতে পারেন বৈকি!! কিন্তু "প্রমাণ" দেখাতে হবে তো।
  • ঈশান | 183.24.110.20 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৩51923
  • পপারের দাবীতে সমস্যা একটাই। "বিবিধ ভৌত ব্যাপারগুলোর কনসিস্টেন্ট ব্যাখ্যা" -- এই "বিবিধ" ব্যাপারটার সীমারেখাটা অস্পষ্ট। মানে তিনটে ব্যাপার হলে বিবিধ এবং কনসিস্টেন্ট হবে, না নটা হলে, এর কোনো মাপকাঠি নেই। যেকোনো মডেলেই সাধারণভাবে কিছু ইনকসিস্টেন্সি দেখা যায়। বিগ ব্যাং থেকে ডারউইন সবেতেই আছে। আজকে দেখতে না পেলেও কাল দেখা যাবে, এরকম। সেইজন্যই কাজকম্মো চলতেই থাকে।

    এর অ্যাকচুয়ালি খুব ইন্টারেস্টিং উদাহরণ আছে লিবনিৎস বনাম নিউটন বিতর্কে। মহাকর্ষ তত্ত্বে স্লাইট ইনকনিস্টেন্সি ছিল, উভয়েই সেটাকে নিয়ে গুচ্ছের বক্তব্য পেশ করেছিলেন। নিউটন বলেছিলেন, ওটাই অর্থাৎ ইনকনসিস্টেন্সিটাই ঈশ্বরের হস্তক্ষেপের প্রমাণ, ঈশ্বর হাত দেন বলেই ওটা মিটে যায়। আর লিবনিৎস বলেছিলেন, ঈশ্বর এমন সৃষ্টি করতেই পারেননা, যা নিখুঁত না। :-)

    এর মানে এই না, যে, বিজ্ঞানমনস্কতা বস্তুটাকেই আমি উড়িয়ে দিচ্ছি। আমার কাছে ওটার মানে হল সমানে প্রশ্ন করে যাওয়া। অন্য নামে ডাকলেও কিছু যায় আসেনা, যেমন নেতি-নেতি পদ্ধতিও বলতে পারেন। আমার বক্তব্য হল বস্তুটা বিংশ শতাব্দীর সম্পত্তি না। আর বিংশ শতকেও ওটার খুব যথাযথ ব্যবহার হয়েছে এমন না।
  • ঈশান | 183.24.110.20 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৬51924
  • প্রমাণ মানে কি? থিয়োরির সঙ্গে কিছু পর্যবেক্ষণ মিলে যাওয়া। টলেমির থিয়োরিরও 'প্রমাণ' ছিল, গ্যালিলিওর থিয়োরিরও। দুটোই প্রমাণ।
  • dc | 132.174.114.23 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৮51925
  • "এখন 'পবিত্র গ্রন্থ' এবং যাজকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যাদেরকে আমরা যথাক্রমে 'বিজ্ঞান' ও 'এক্সপার্ট' বলি"

    এখানটা একেবারেই ভুল মনে হল। তাছাড়া পপারের মূল দাবী ফলসিফায়েবিলিটি, যেটা আধুনিক ফিলসফি অফ সায়েন্সের একটা বেসিক প্রিনসিপল।

    'বিজ্ঞান' কে 'পবিত্র গ্রন্থ' এইজন্যই বলা যায় না কারন 'পবিত্র গ্রন্থ' ফলসিফায়েবল না। ঘ্রুইয়েও বলা যায়, যা ফলসিফায়েবল না তা 'বিজ্ঞান' না। 'এক্সপার্ট' রা এইজন্যই যাজক না কারন যাজকদের কাজ 'পবিত্র গ্রন্থ' ভিত্তিক প্রচার করা, আর 'এক্সপার্ট' দের কাজ কোন একটা ক্লেইমের ভ্যালিডিটি এস্টাব্লিশ করা। আবার এই ভ্যালিডিটি কোন কনটেক্সটে এস্টাব্লিশ করা গেল বা গেল না সেটাকেও টেস্ট করা।

    এই টেস্ট-ফলসিফায়েবিলিটি মডেলটা 'বিজ্ঞান' এ এতোটাই ইমপরট্যান্ট যে তিরিশ বছর পেরিয়ে গেল, স্ট্রিং থিওরি নিয়ে কাজ হচ্ছে কিন্তু এখনো সেটাকে 'বিজ্ঞান' ইন জেনারাল অ্যাক্সেপ্ট করে নি। অন্যদিকে, রিলেটিভিটি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স এখনো অবধি 'বিজ্ঞান' এর দুটো বেসিক পিলার ধরা হয় এজন্যই যে এই স্ট্রাকচার দুটো ইতিহাসের সবথেকে বেশী এক্সপেরিমেন্টালি টেস্টেড। কোন 'পবিত্র গ্রন্থ' আর কোন যাজকদেরই এরকম সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক ভাবে টেস্ট দিতে হয়নি।
  • PT | 213.110.242.5 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৮51926
  • কোরাণ বা বাইবেলে যা লেখা আছে তা ফাইনাল-সেই সিদ্ধান্তের মধ্যে বাঁধা থেকেই ধর্মীয় পন্ডিতেরা নানাবিধ ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। কিন্তু বিজ্ঞান-সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ ক্রমাগত রিফাইন্ড হতেই থাকে। কোন একজনের পর্যবেক্ষণ "মিলে যাওয়া"-তে বিজ্ঞান থেমে থাকেনা। তাই আইন্স্টাইনের তত্ব এখনো পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। তাই কেসিপালের ফিরে আসার সম্ভাবনাও কখনই শেষ হয়ে যায় না।
  • ঈশান | 214.54.36.245 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৯51943
  • বিজ্ঞান = পবিত্র গ্রন্থ -- এ কথা আমি বলিনি তো।

    যেটা বলেছি, সেটা সিম্পল। জ্ঞান চর্চার একটা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে মানবসমাজে। সেটা দীর্ঘ সময় ধরে মোটামুটি একই ভাবধারায় চলছে। অল্প কিছু কিছু বদল হয়েছে, সেগুলো লিখেছি। (লক্ষ্য করবেন, জ্ঞানচর্চা লিখেছি, বিজ্ঞান না, কারণ বিজ্ঞান নামক ধারণাটাই, ধরুন চারশো বছর আগে ছিলনা)।

    এবার এর সঙ্গে নানা আইডিওলজির চর্চা চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে। তাদের একটা ঘরনার নাম ধর্ম (যদিও ধর্ম বললে কী কভার করা যায় আমি নিশ্চিত নই)। কিছু লোকাচার। কিছু সংস্কৃতি। বিগত কয়েকশো বছরে আরেকটা নতুন আইডিওলজি হয়েছে, যার নাম বিজ্ঞান। এই আইডিওলজিগুলো নানা পবিত্র গ্রন্থ বনিয়েছে (প্লুরালিটিটা লক্ষ্যণীয়), আবার সেগুলো ভেঙে আরও কিছু বানিয়েছে। এইভাবেই চলেছে। "সব বেদে আছে" এরকম একটা আইডিওলজি। নিউটন এরকম আইডিওলজিতে বিশ্বাস করতেন। আবার "মার্কসবাদ সর্বশক্তিমান কারণ ইহা বিজ্ঞান", আরেকটা। এখানে মার্কসবাদ কথাটা বাদ দিয়ে বাকিটা দেখুন, "সত্য=বিজ্ঞান" এরকম একটা ইকুয়েশন আছে। এটা একটা 'পবিত্র ধারণা', টিভিতে খবরের কাগজে সর্বত্র এই আইডিওলজির দাপট দেখতে পাই। এইরকম নানা ঘরানার জিনিস আছে। আইডিওলজিকালি।

    এই হল বক্তব্য। এবার ডিসি নিজের মতবিরোধ পেশ করুন।
  • dc | 132.174.114.23 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩51927
  • "থিয়োরির সঙ্গে কিছু পর্যবেক্ষণ মিলে যাওয়া। টলেমির থিয়োরিরও 'প্রমাণ' ছিল, গ্যালিলিওর থিয়োরিরও। দুটোই প্রমাণ।"

    এটাও ভুল মনে হল। থিওরির সাথে অবসার্ভেশান মিলে যাওয়াই একমাত্র 'বিজ্ঞান' এর একমাত্র প্যারামিটার না। আরেকেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্সিপল হলো অক্যামস রেজর। "মঙ্গলগ্রহের চারধারে একটা অদৃশ্য টিপট ঘুরছে", "মাদার টেরেসা মিরাকল করে ক্যান্সার সারাতেন", "গণেশ দুধ খায়", এরকম যাবতীয় স্টেটমেন্টকে অক্যামস রেজর দিয়ে পরীক্ষা করা যায়।
  • ঈশান | 183.24.110.20 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৭51928
  • আমি প্রথম পোস্টে অ্যাকচুয়ালি "ধর্ম" নিয়ে প্রায় কিছুই লিখিনি।

    তবে ধর্মীয় জাজমেন্ট নিয়ে যা বলছেন সেগুলো ঠিক না। "বিধান" বদলায়। এমনকি "ধর্ম" ও বদলায়। এই ধরুন আজকের পোপ যা ফরমান দেন সে কি আর দুশো বছর আগের পোপ দিতেন? প্রোটেস্টান্ট বা হাজার গন্ডা গোষ্ঠীর উদ্ভবও তো বদলের কারণেই।

    এইটা আমার মূল বক্তব্যের অংশ ছিলনা। তবে এসেছে বলে লিখলাম। আবার কাল লিখব না হয় একটু বড়ো করে।
  • dc | 132.174.114.23 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯51929
  • "তাই আইন্স্টাইনের তত্ব এখনো পরীক্ষার সম্মুখীন হয়"

    এক্স্যাকটলি। সম্মুখীন হয়, হতেই থাকে, নানান ডিফারেন্ট টেস্ট কন্ডিশানে, টু এভার মোর অ্যাকিউরেসি লিমিটস। আবার এই পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার ফলেই একেকটা থিওরির লিমিটেশান জানতে পারা যায়, তখন থিওরিটা হয় রিফাইন করতে হয় নাতো প্যারাডাইম শিফট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এভাবেই মিকেলসন-মোরলির এক্সপেরিমেন্টের ফলে রিলেটিভিটি নামক প্যারাডাইম শিফটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এভাবেই আজকে আমরা দেখছি যে সাব অ্যাটোমিক লেভেলে রিলেটিভিটি আর কোয়ান্টাম মেক মেলানো যাচ্ছেনা বলেই হয় স্ট্রিং থিওরি নাতো এলকিউজি নাতো অন্য কিছুর দরকার হচ্ছে। 'বিজ্ঞান' আর 'পবিত্র গ্রন্থ' র তফাত এখানেই যে 'বিজ্ঞান' এ আসলে পবিত্র বলে কিছুই নেই। পুরোটাই ফলসিফায়েবল।
  • ঈশান | 183.24.110.20 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১51930
  • অক্যামস রেজর কবেকার ধারণা? তার ফিলজফিকাল রুট গুলো কি? কোনোটাই আজকের তো নয়, বিগত কয়েকশো বছরেরও না। হাজারের ইউনিটে মাপতে হবে :-) এইটাই বলছিলাম।
  • cm | 127.247.98.48 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১51944
  • এতো আপনার অবসার্ভেশন, বিরোধিতার অবকাশ কই? আর একধাপ এগিয়ে এও বলা যায় পবিত্র গ্রন্থ ছাড়া আমাদের পক্ষে চলা অসম্ভব। ওর জন্য একধাপ বাড়তি কম্পিউটেশনাল পাওয়ার চাই।
  • dc | 132.174.114.23 (*) | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩51931
  • বুঝলাম না। অক্যামস রেজর কয়েকশো বছরের পুরনো ধারনা। তাতে কি হল?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন