এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কলম মলম

    Suvasri Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ আগস্ট ২০২৪ | ১৬৮ বার পঠিত
  • কোনো কবিই অনন্তকাল মানুষের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত থাকেন না। সমস্ত লেখকের রচনাকেই মহাকাল এক দিন গ্রাস করে নেয়। সুতরাং আমার লেখা স্থায়ী হ'বে না, অামি জানি। আমার মৃত্যুর এক দিন পরে আমার লেখা কেউ পড়বে কিনা সন্দেহ। 

    এমন একটি জ্বলন্ত সত্য মাথায় রেখে এই মুহূর্তে আমি লিখব না, তা কিন্তু হয় না। কারণ আমার কাছে আজ সত্যি, এই মুহূর্তের যন্ত্রণা ও ভালোবাসা সব সত্যি। 

    লেখার মধ্যে বাস্তবের সংস্পর্শ থাকতেই হবে। যুগ যেমন, স্থির বা অস্থির, কবিতা-গল্পের মধ্যে তার প্রতিফলন না পড়লে সেটা বাস্তব ঘেঁষা সাহিত্য নয়। তবে পাঠ করার সময় সমস্ত কিছুই পড়লে ভালো। অতীতের ভালো ভালো লেখাও যত সম্ভব পড়তে হ'বে। ক্লাসিক সাহিত্য পড়েও আজ কলম চালানোর সময়ে এখনকার ধরণেই লিখতে হ'বে। 

    ক্রমে ক্রমে আমাদের সভ্যতা এগিয়েছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের  সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের  খাদ্যাভ্যাস, পোষাক সব কিছু অন্য সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধীরে ধীরে অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে গেছে আর সাহিত্যের evolution হবে না? সাহিত্য unevolved, static, আগেকার মতোই থেকে যাবে, তা হয় না। এক হাজার কী পাঁচশো বছর আগেকার ধরণ অনুযায়ী এখন সাহিত্য রচনা করতে হবে, এটা ভাবাও ভুল।

    সমকাল অস্থির সন্দেহ নেই। রমরম করে অনৈতিকতার চাষ হচ্ছে। শহরগুলোয় উচ্চবিত্ত মানুষ ভোগবাদী মানসিকতা দ্বারা পরিচালিত। গরীব মানুষও তাঁদের মতো হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করেন কিন্তু পারেন না। প্রতি মুহূর্তে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে ফারাক বাড়ছে। এমন অস্থির সময়ে লেখা গল্প, কবিতা, রম্য রচনা সব কিছুতেই যুগের উষ্ণ স্পর্শ থাকবে। সেটা যুগের বাস্তব ছবি আঁকা। তার মানে এই নয় যে কলমচি নিজে নীতিহীনতায় বিশ্বাস করেন ৷ তা বলে তিনি সমকালের প্রকৃত ছবি আঁকবেন না, তাও হ'তে পারে না ৷ গড়ে তোলার দরকার আছে তা বোঝানোর জন্যই তো ধ্বংসের দিকটা লেখার মাধ্যমে দেখানো। 

    শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কবি ও লেখক এমন কী প্রকৃত পাঠকেরাও গঠনমূলক চিন্তা অব্যাহত রাখবেন, কোনো শূন্যতা সহ্য করবেন না। মনে রাখতে হবে যে লেখকেরা গঠনমূলক চিন্তা করলেও তাঁদের লেখার মাধ্যমেই সমাজে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে এমনো নয়। তাই বলে, অস্থির সময়ের মূল্যবোধহীনতাকে লেখার মধ্যে আনলে সেই লেখাকে হাল্কা আর সাহিত্যিককে এলেবেলে বলে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়। চারপাশে অনেক মানুষেরই ন্যায়নীতি বলে কিছু নেই। সেই সত্যটা সাহিত্যের মধ্যে প্রতিফলিত না হ'লে সেই রচনা তো যুগকে সঠিকভাবে দেখাতে পারবে না। তাহলে আর সেটা যুগের দলিল হবে না। তাই না?

    আরো একটা কথা মনে হয়। লেখালিখি বা যে কোনো সৃজন শুধু তাঁদের পক্ষেই সম্ভব যাদের মনে নিজের জীবন ও পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে অসন্তোষ রয়েছে। সুখী ও সন্তুষ্ট মানুষ নতুন কিছু করার কথা ভাবে না কারণ তার মনে কোনো প্রশ্ন থাকে না। ভোঁতা ভোঁতা সুখ সৃজনের অন্তরায়। মনে প্রশ্ন ও সেগুলো নিয়ে খালি খালি নাড়াচাড়া করতে করতে উত্তর পাওয়া ও না পাওয়া....সৃজন এমনই একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। 

    জীবন সমস্ত লেখালিখির উৎস। জীবনে যা অাছে এবং যা নেই সেটার চাহিদা সব কিছুই যুগে যুগে লেখালিখির মধ্যে ঢুকে যায়। এটা একেকজন কলমচির ক্ষেত্রে একেকভাবে হয়। এমন কী কাল্পনিক ব্যাপারগুলোও বাস্তবের না পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্নভাবে প্রসারিত হয়। সেই কবে লেখা বাচ্চাদের ছড়ায় বলা হয়েছে, আয় অায় চাঁদ মামা খোকার কপালে টিপ দিয়ে যা। এই ছড়া শুনিয়ে অাজও বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানো হয়। এটা তো কল্পনাই , বাস্তবের খোকাকে ঘুম পাড়ানোর তাগিদে এই মিষ্টি কল্পনাশ্রিত ছড়া। সবাই জানে, চাঁদ কখনো কোনো খোকার কপালে টিপ দিতে অাসে না। তবু ঘুমে চোখ জড়িয়ে অাসা শিশুর জন্য মায়াময় এক নরম জগৎ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই ছড়ার উদ্ভব। শিশুদের জগৎ এমনিতেই স্নিগ্ধ। সেটাকে আরো স্নিগ্ধ করে তোলার জন্য এই ছড়া। 

    যা হয়েছে, যা হয়নি, যা হতে পারত, সব কিছুই আমার লেখায় থাকে। যা হতে পারত সে ব্যাপারেও আমার ধ্যানধারণা লেখার মধ্যে ঢুকে পড়ে বইকি। যা হয়েছে তার সম্বন্ধে লেখকের ব্যাখ্যা, প্রতিক্রিয়া সব কিছুই প্রত্যেক কলমচির লেখাতেই থাকে। আরেকটা ব্যাপার সমস্ত সৃজনের পেছনে থাকে। তা হ'ল, অস্বস্তি, ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে চলতে না পারা। এই অস্বস্তি সব সময় মুখে প্রকাশ করা যায় না। লেখার মাধ্যমে কিছুটা করা যায় বৈকী। তাই তো লেখায় থাকে জীবন নিয়ে প্রশ্ন, অবিরত আত্মজিজ্ঞাসা। লেখালিখির মাধ্যমে ক্রমাগত নিজেকে প্রশ্ন করা, সমাজকে প্রশ্ন করা আর উত্তর খোঁজা চলে। এই ভাবেই লেখা এগোয়, পরিণত হয়, ক্রমে ক্রমে কলমচির নিজস্ব একটা শৈলী তৈরি হয়ে যায়। 

    অস্বস্তি মনের ওপর চাপ বাড়ালে অনেকের মতন অামিও লিখে ফেলি। চাপ কমে যায়। অনেকটা স্বস্তি পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত অস্বস্তিই স্বস্তি এনে দেয়। পরে কোনো প্রশ্ন মনে এলে, তখন আবার কলম ধরা। কলম চলাচল মোটের ওপর এই ভাবেই চলে। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাপাঙ্গুল | ২২ আগস্ট ২০২৪ ১৩:৫১536753
  • লেখাটা ভাল। কিন্তু এখানে একটা বাজার অর্থনীতির ব্যাপার আছে যেখানে বছর বছর শারদীয়ার বিজ্ঞাপন বিক্রি বা ছাপা কাগজে জায়গা ভরানোর জন্য লেখকদের টাকা দিয়ে কিছু লিখে দিতে বলা হয়। সেসবে অধিকাংশ সময় সমকাল পাওয়া যাবে না। 
  • Suvasri Roy | ২২ আগস্ট ২০২৪ ১৪:০২536754
  • @পাপাঙ্গুল
    মতামত পড়লাম। সত্যিই তো এ দিকটা ভেবে দেখা হয়নি। মতামত জানানো অব্যাহত রাখার অনুরোধ রইল। 
    শুভেচ্ছা।
  • চিত্তরঞ্জন হীরা। | 2409:4060:2e83:7056:bff7:1b11:bce9:7c1b | ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৩:৫৮536800
  • অসাধারণ অনুভূতির প্রকাশ। খুব ভালো লাগলো।
  • Suvasri Roy | ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৬:২৬536804
  • @চিত্তরঞ্জন হীরা
    মতামত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল। 
  • Subhas Ghosal | 2405:201:403a:4041:fd74:27a3:1311:1b71 | ২৬ আগস্ট ২০২৪ ০০:৪৪536847
  • খুব ভালো লেখা, এগুলোর songe অসহমত হওয়া jai না. এরকম kichu উপলব্ধি আমার o hoyeche. 
    চলুক এরকম লেখা 
  • Suvasri Roy | ২৬ আগস্ট ২০২৪ ০৬:২০536857
  • @Subhas Ghosal
    মতামত জানিয়েছেন দেখে ভালো লাগছে। 
    শুভেচ্ছা। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন