এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • এন-২ ভুটানি লেখক সোনাম ওংমোর গল্প থেকে অনুবাদ 

    মোহাম্মদ কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৩ আগস্ট ২০২৪ | ২০১ বার পঠিত
  • একটি সূর্যবিহীন কনকনে শীতের নভেম্বর সকাল। আমি হাতের তালু দুটোকে সমানে কচলাচ্ছিলাম ও মাঝে মাঝে ঘঁষছিলামও শুধু একটুখানি উষ্ণ রাখার জন্য নিজেকে। আমি তখন এন-২ স্টিকার লাগানো একটি দরজার সামনে অপেক্ষার প্রহর গুনছি।  কিছুক্ষণ বাদে একটি কালো গাত্রবর্ণের পুরুষ নার্স আমার ডাকে সাড়া দেয়। মাথাটা বাইরে গলিয়ে দিয়ে সে প্রশ্ন করে, ‘’কার কাছে?’’ ‘স্যানগে’ – আমি জবাব দেই। নার্সটি সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে আমায় ভেতরে প্রবেশ করতে  অনুমতি প্রদান করে। ধাতব দরজাটা পেছন থেকে বিকট আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে যায়।  ভেতরে অবশ্য একজন নিরাপত্তারক্ষী ধারালো বস্তুর খোঁজে আমার প্লাস্টিক ব্যাগটি খুলে দেখার প্রয়োজন অনুভব করে। তারপর যখন সেখানে ভাত ও তরিতরকারির বাটি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না, বিদায়বেলায় আমি যেন ব্যাগটি সাথে করে নিয়ে যেতে ভুল না করি সে আহবান জানিয়ে তার দায়িত্ব সাড়ে নিরাপত্তারক্ষীটি। ভয় এতটা গভীরে শেকড় গেড়েছে এদেশে যে একটি নিরীহ প্লাস্টিক ব্যাগেরও ব্যাপক ক্ষতিসাধনের ক্ষমতা আছে বলে মনে করা হয় এখানে।

    যখন পরবর্তী করনীয় নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে নার্সটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকি, পুরুষ সেই নার্সটি হঠাৎ উদয় হয়ে তাকে অনুসরণ করতে ইশারা করে আমায়। এরপর আমরা হাঁটতে থাকি একটি ক্ষুদ্র অথচ প্রশস্ত করিডর দিয়ে যার দেয়ালগুলো ছিল একদম দুধসাদা। গোলাপী পাজামা পরিহিত আর ঢেউ খেলানো হালকা বাদামি চুলের অধিকারী এক তরুণীকে একটি বাদামি টেডি বিয়ার জড়িয়ে রেখে ঘরটির কোনার দিকে এগুতে দেখা গেল। একটি গোলাপি রঙের  পিচ্ছিল বেড স্লিপার পায়ে সে আমাদের পাশ কেটে গেল অনেকটা দুমড়ে মুচড়ে, কোন প্রকার দৃষ্টি বিনিময় ছাড়াই। করিডরটি ডানদিকে এগিয়ে ঢুকে পড়ে একটি টিভি রুমে। একটি যুবককে টিভির সামনের একটি কফি টেবিলে হাতপা ছাড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায় সেখানে। আরো তিনজনকে টেবিলটির পেছনের একটি সোফায় বসে থাকতে দেখা যায়, চোখ আটকে ছিল তাদের টিভিস্ক্রিনে, কি একটি অনুষ্ঠান দেখছিল তারা ভীষণ মনোযোগ দিয়ে! তাদের আড়াআড়ি অবস্থান করছিল অন্য আরো একজন, একটি আরামকেদারায় বসেছিল সে আশেপাশের দুনিয়াকে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে। কারো সাথে একান্ত আলাপে নিমগ্ন ছিল সে, যদিও সাধারণ চোখে তা ধরা পড়ার কথা নয়। এছাড়া ছিল আরো একজন, যে খিল দেয়া জানালাগুলোয় দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল, সম্ভবত, কারো জন্য অপেক্ষা করছে! নার্সটি তাদের সবাইকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে নিচ্ছিল আমাকে; এদের মাঝে সাদা ইউনিফর্ম পরিহিত এক মহিলা নার্সের ডেস্কও ছিল, যার মাথাটা নোয়ানো ছিল ফাইলের স্তুপে। অতঃপর আমরা একটা দরজার দেখা পাই। একটি আলোআঁধারি কক্ষ আবির্ভূত হয় আমাদের সামনে। বাহির থেকে আসা আলোয় আমার চোখে ঝাপসা করে ধরা পড়ে এক কৃশকায় ও ক্ষুদ্রাঙ্গী তরুণীর কোচঁকানো কাঠামো – একটি বিছানার উপর সে পড়ে রয়েছে প্রায় ভ্রূণের ভঙ্গিমায়, কোন জামাকাপড় ছাড়া নগ্ন দেহে।  

    মেয়েটি একটি ভয়ার্ত প্রাণীর মত উঠে বসার প্রয়াস চালায় যখন টের পায় কক্ষটিতে সে আর একা নয়। সে তার আঙ্লগুলোকে মোঁচা করে চোখগুলোকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলে হঠাৎ আলোর বন্যায় ভেসে যাওয়া কক্ষটির ঝলকানি থেকে রক্ষা পেতে। তার খাটো চুলগুলি আলুথালু, তার মুখমন্ডল ফ্যাকাশে এবং ভাবলেশহীণ। ওকে সর্বশেষ যেমনটি দেখেছিলাম তার তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র ও ক্ষীণ দেখাচ্ছিল। ওর ঠোঁটগুলো ছিল শুষ্ক এবং রোদে পোড়া; গায়ের চামড়া পান্ডুবর্ণের। আমাকে বলা হল যে, সে কদিন ধরে জল খাবার মুখে নিচ্ছে না। তার নখগুলো দৈর্ঘ্যবিস্তার করেছিল যথেষ্ঠ, খুব নোংরা দেখাচ্ছিল সেগুলোকে।  তার শরীর থেকে ভুসভুস করে একটা দুর্গন্ধ ছুটছিল চারপাশে।  

    আমি সত্বর ঘরটির চারধারে চোখ বুলাতে শুরু করি। এক কোণে পাতা একটি বিছানা ও টেবিল ছাড়া  ঘরটি শূন্যই ছিল বলতে গেলে। কোলগেটের একটি টিউব ও আর একটি টুথব্রাশ - এখনো মোড়কবন্দী হয়ে পড়ে আছে করুণার দেবি চেনরেজিগ এর ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবির সামনে।  সিকি ঘন্টার একটি স্তুপও রয়েছে যা ডাকের প্রতীক্ষায়  থাকা একজন পরিদর্শক থাকার ইংগিত দিচ্ছিল।

    আমি স্যানগেকে মাত্র একবারই দেখেছিলাম এর আগে। এটা সেই সময়কার কথা যখন আমি প্রথম ভুটান থেকে এসেছিলাম কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হয়ে, একটি স্কোলারশিপ নিয়ে। নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানোর আগে ‘পৃথিবীর রাজধানী’তে আগমন নিয়ে আনন্দে আটখানাই ছিলাম বলতে গেলে। একটি মর্যাদসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারার বিষয়টি মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল আমার, উন্মাদ করে তুলেছিল প্রায়। কিন্তু জায়গাটিতে পৌঁছুতেই অনুভূতিগুলো ফিকে হতে শুরু করল। কিছু দিনের মধ্যেই গৃহকাতরতা সম্পূর্ণরুপে গ্রাস করলো আমায়। এর আগে বাড়ি থেকে দূরে শুধুমাত্র ভারতেই গিয়েছি এবং তাও সপ্তাহখানেকের জন্য। একটা আস্ত ঘরকুনো ছিলাম কিনা! বেশ মনে করতে পারলাম, নিজ ভুবনের পরিচিত গন্ডি ছেড়ে দূরে থাকার রেকর্ডটি কখনোই সপ্তাহ ছাড়াতে সক্ষম হয়নি আমার ক্ষেত্রে। নিউইয়র্কের সেই প্রথম দিনগুলিতে  আমার মন আকুলিবিকুলি করতো পাহাড়, পর্বতশ্রেণী, আর ধানক্ষেতের দৃশ্যের জন্য। আমি ছটফট করতাম ঝাল মরিচ, শুষ্ক মাংস, মানুষ, চেনাশোনা বন্ধু এবং সর্বোপরি আমার স্ত্রী ও তিন মাসের ছেলেটির জন্য। একটা বিষয় আমায় খুব বিষ্মিত  করেছিল, আমার বিশ্ববিদ্যালয় সহপাঠিদের কেউই বিবাহিত ছিল না। অথচ আমাদের দেশের সামাজিক প্রথা অনুযায়ী, আমার বয়সী একটি তরুণের পক্ষে অবিবাহিত থাকাটা ছিল নিতান্তই অবাস্তব ও অসম্ভব এক ব্যাপার। এই কারণেই হয়তো বা, মাঝে মাঝে নিজেকে সবার থেকে আলাদা মনে হত। আর খুব নিঃসঙ্গ লাগতো।   

    শনিবার সকালে সংখ্যাটি নিতে নিতে আমি ম্যানহাটানের মফস্বল ট্রেনে চড়ে বসি। হঠাৎ একটি তরুণ আমার চোখে পড়ে যে দেখতে ভুটানিজদের মত ছিল। অবশ্য তার তিব্বতিয়ান বা অন্য এশিয়ান হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু নিজের লোককে চিনতে মানুষের ভুল খুব কমই হয়। আমার নিঃসঙ্গতা আমার মধ্যে নিশ্চিত একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দিয়েছিল,  তা না হলে, যে আমি অচেনা লোকেদের সাথে মিশতেই পারতাম না, চরম আড়ষ্টতায় ভুগেছি সব সময়, সেই আমিই, ট্রেনটি ৪২তম সড়কের কাছাকাছি পৌঁছুতেই, আত্মসমর্পন করলাম, সংকোচ-লাজ-লজ্জাকে জলাঞ্চলি দিয়ে  তরুণটির দিকে এগিয়ে গেলাম। সে আমার চলার পথে চকিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল এবং কোনরূপ বিষ্ময়ের ভনিতা না করে হাসতে লাগলো। সম্ভবত তার মাথাতেও ঘুরছিল একই চিন্তা।  ‘তুমি কি একজন ভুটানি?’ – সে দোজংখ্যা ভাষায় জিজ্ঞাসা করল আমার পরিচয় দেয়ার আগেই। ‘কেন, হ্যাঁ, ‘’ –  উচ্চারণ করলাম আমি। দরজি-ই ছিল সেই লোক যার মাধ্যমে নিউইয়র্কে বসবাস করা ভুটানি অভিবাসীদের দুনিয়া কুইনস-কে আবিষ্কার করি আমি। এই পরিচিতি আমাকে আগের থেকে অনেক সুখী এক মানুষে পরিণত করল।   

    এক সাপ্তাহিক ছুটিতে দরজি আমায় ম্যানহাটানের এক ভুটানি পরিবারে নিয়ে গেল। এটি সেই জায়গা ছিল যেখানে স্যানগে’র সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে আমার। যেহেতু পরিবারটির কাউকেই চিনতাম না, নীরবে সুজা রস টেনে নিচ্ছিলাম আমি মুখগহবরে, যা আমাদের একটি বড় চাইনিস পোরসেলিন মগে ঢেলে দেয়া হয়েছিল। মাখন এবং লবন চায়ের এমন স্বাদ আমার ভাগ্যে জোটেনি কখনো আগে। আমি কড়মড় করে চিবুতে লাগলাম ‘জো’, যা আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল একটি ব্যাংচুংয়ে, একদম বাড়িতে যেমন করে পরিবেশন করা হয় তেমনি করে। আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে নীরব শুনে যাচ্ছিলাম দরজি ও বাড়ির কর্তাব্যাক্তির মধ্যকার কথোপকথন। নিজের মানুষের আতিথেয়তা ও ঘনিষ্ঠতার মাঝে উষ্ণ রোদ পোহানোর অনুভূতি হচ্ছিল আমার। বিদেশ বিঁভূইয়ে নিজের ভাষায় কথা শুনতে পাওয়ার থেকে আরামদায়ক আর কিছু নেই! কয়েক মুহূর্ত পরে আমি অভিযান চালালাম দশম তলায় অবস্থিত সেই অ্যাাপার্টমেন্টটির ক্ষুদে বারান্দায়। আর সেখানেই আবিষ্কার করলাম তাকে একটি চেয়ারের মাঝে; মটরের খোসা ছাড়াতে ছড়াতে মিঠেকড়া রোদ উপভোগ করছিল সে।  

    তার মুখে ছিল একটি সরল হাসি। ‘বসো’, দোজংখা ভাষায় বলল সে পাশের একটি খালি চেয়ার থেকে লাল মরিচের প্লাস্টিক বয়োমটা সরাতে সরাতে। ‘কি অসাধারণ একটি দিন’, আমি কিছু একটা বলার চেষ্টায় শব্দগুলো বের করতে পারলাম।

    ‘হ্যাঁ, আমি থিনলে’, হাত না বাড়িয়েই বললাম।  ‘এবং তুমি?’

    ‘স্যানগে’, কিছুটা লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল সে।

    কথায় কথায় জানলাম, সে বাড়ির কর্ত্রীর দিকের আত্মীয় ছিল। সে এই পরিবারটির সাথে নিউ ইয়র্ক এসেছিল পড়াশুনো বা কোন একটি চাকরির স্বপ্নকে সামনে রেখে। আমি তার পিতামাতার কথা জানতে চাইলাম। যেহেতু ভুটানের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও নিবিড় সমাজ থেকে তার আগমন, ভেবেছিলাম কোন নাম বললে চিনেও ফেলতে পারি। কিন্তু তাকে দ্বিধা করতে দেখে মনে হল, প্রশ্নটি করা ঠিক হয়নি হয়তো। আমার তখন একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল যা ঘটেছিল আমার বিয়ের পূর্বেই। এটি আমার স্ত্রীর ক্ষেত্রে ঘটেছিল যখন সে একটি কলেজে মেয়েদের আবাসিক ভবনের সুপারভাইজার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল আরো তিনটি মেয়ের সাথে । প্রিন্সিপালের অফিসে তখন নবনির্বাচিতদের একটি পরিচিতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।  প্রিন্সিপাল একে একে তাদের কাছে নিজ বাবাদের সম্পর্কে জানতে চাইছিলেন ।  জিজ্ঞাসাবাদ পর্বটা কোনমতেই এড়ানো সম্ভব ছিল না। অন্য মেয়েদের বাবারা ছিল সরকারে দায়িত্বরত উচ্চ পর্যায়ের অফিসার। তাদেরকে তাদের বাবার নামটুকু শুধু বলতে হয়েছিল, যদিও প্রিন্সিপাল ভাল করেই জানতেন কারা তারা। “আমার বাবা একজন কৃষক,” আমার স্ত্রী তার পালা এলে জানিয়েছিল। সে স্পষ্টতই বিরক্ত ছিল, তবে তা বাবার পেশা নিয়ে বিব্রত হয়েছে বলে নয়; বরং, তার কাছে এটি ছিল এমন একটি বিষয় যা নিয়ে কখনোই প্রশ্ন করা উচিত নয়। “তোমার বাবার কি কোন নাম নেই?” প্রিন্সিপাল জিজ্ঞাসা করেছিল। “হ্যাঁ, তা আছে, কিন্তু নাম বললেও তাকে চিনবে না তুমি”, উত্তরে বলেছিল আমার স্ত্রী। যতদূর মনে পড়ছে, আমার স্ত্রী প্রিন্সিপালের চরম বিরাগভাজন হয়ে পড়েছিল ঘটনাটার পর থেকে।  

    ‘তুমি যদি তার সামনে কোন বিশেষ মনোভাব প্রদর্শন কর, সে তোমাকে সেভাবেই ট্রিট করবে, সেই আচরণটাই করবে।“- আমি তাকে বলেছিলাম। কিন্তু আমার স্ত্রী দাবী করল যে, তার বিরক্ত হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ ছিল। প্রিন্সিপাল খুব ভাল করেই জানতো কার কন্যা সে, একান্ত ব্যাক্তিগত একটি সাক্ষাৎকারে নিজের পিতার পরিচয় আগেই জানিয়েছিল সে। এরপরো কেন তাকে বিষয়টা জিজ্ঞাসা করা হল সবার সামনে!!  আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর বা খারাপ কোন উপাদান না থাকলেও  প্রশ্নটি আমার স্ত্রীকে যথেষ্ট ক্ষুদ্ধ করেছিল। ‘’কেন মানুষকে তোমায় চেনাতে হবে তোমার পিতামাতার পরিচয় দিয়ে? সত্যি বলতে কি, এটা খুব নির্দয় ও অসভ্য একটা পন্থা। এতে একটি ধারণা জন্মে যে, তোমার পিতামাতা যা, তুমি তা-ই, আলাদা কিছু নও। আমি বলতে চাইছি যে, কেউ যখন তোমায় এমন প্রশ্ন করে, তোমার অনুমান করতে একটুও কষ্ট হবে না যে তোমার প্রতি সে কেমন মনোভাব পোষণ করতে যাচ্ছে, যখন সে শুনবে তোমার বাবা একজন ডাশো ছিলেন নাকি কৃষকের কাজ করেন।“  

    আমি এই মুহূর্তে স্যানগেকে প্রশ্নটি করে স্পষ্টতই আত্মপীড়ায় ভুগছিলাম কারণ এটি একটি সেকেলে প্রশ্ন ছিল যাতে অবশ্য আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম কোন দোষের কিছু খুঁজে পেত না। “আমার তো কেবল মনে হয়েছিল যে, তাদের চিনি থাকতে পারি,” স্যানগে-কে বললাম নিজেকে শুদ্ধ করার তাগিদে।  

    “তা ঠিক আছে, তবে নাম বলে দিলেও তুমি তাদের চিনতে পারতে না” সে জবাব দিল।

    “তারা একটি দীর্ঘ সময় ধরে আলাদা বাস করছে।“ কয়েকটি মুহূর্ত অতিবাহিত হতে দিয়ে সে যোগ করল।  সে অবশ্য আমায় কিছু আত্মীয়ের নাম বলল যারা ভুটান সরকারের অফিসার পদ অলংকৃত করে ছিলেন। দেখা গেল যে, তারা প্রত্যেকেই আমার পরিচিত। এতক্ষণে আমরা উভয়ের চেনা  কিছু মানুষ খুঁজে পেলাম কথাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

    যখন সে হাত গলিয়ে বয়ম থেকে বাটিতে চালান করে দিচ্ছিল মটরশুঁটিগুলো, স্যানগে-কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করছিলাম আমি । তার দেহের গড়ন ছিল ক্ষুদ্র ও পাতলা।  চব্বিশ বছর - নিজের বয়স সম্পর্কে জানিয়েছিল সে। অথচ তার থেকেও তরুণ দেখাত তাকে। আর ওদিকে আমি অবস্থান করছিলাম তিরিশের কোঠায়। আমার চোখ গেঁথে রইল তার আশ্চর্য রকমের ফর্সা ত্বক আর সুন্দর  মুখমন্ডল জুড়ে আঁকা ছিল তিলক সরোবরে। তার লম্বা ঘন চুলে ছিল উথাল পাতাল ঢেউয়ের রাজত্ব। তার আচরণের মধ্যে এমন কিছু ছিল যা নিজের বোনের মনে করাল আমাকে,  যে কিনা বাবার মৃত্যুর পর তার স্কুলজীবনকে বিসর্জন দিয়েছিল মা ও ছোট ভাইবোনগুলিকে দেখভাল করার জন্য।  

    “ তুমি অনেক সৌভাগ্যবান যে, একটা স্কোলারশিপ জোটাতে পেরেছো,” সে ঈষৎ ইর্ষাকাতর কণ্ঠে বলল আমার দিবাস্বপ্নকে ছিন্নভিন্ন করে। “জানো, আমি সবসময়ই চেয়েছি পড়াশুনো করতে, আর তোমার মত ওরকম কিছু অর্জন করতে, কিন্তু যত কঠোর চেষ্টাই করি না কেন, সাফল্য আমায় ধরা দেয়নি। আমি এমনকি গ্রেড টেন শেষ করতে পারিনি,” সে যোগ করল খেদের সাথে। তারপর সে ‘জেড’ বলে একটি প্রোগ্রামের কথা জানালো, যা স্কুলের গন্ডি না পেরুনো লোকেদের জন্য চালু হয়েছে শহরটিতে।  “আমি শেষ করতে চাই আমার পড়াশুনোটা,” সে বলল, “ আর এটা খুবই ভাল একটা প্রোগ্রাম,  কারণ সবার জন্য দ্বার উন্মুক্ত রাখা হয়েছে এখানে, যেউ কেউ ভর্তি হতে পারে,  সে যেই হউক না কেন, বা যেখান থেকেই এসে থাকুক না কেন।“ কথাটা শেষ হতে না হতেই স্যানগের উদ্দেশ্যে ভেতর থেকে একটি  ডাক ভেসে আসে বারান্দায় “তাড়াতাড়ি কর, লাঞ্চ বানাতে হবে।“ 

    “আসছি,” বলে সে উঠে দাঁড়ালো এবং মেঝে থেকে মটর দানার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা অংশগুলি জড়ো করতে লাগলো। আমিও উঠে দাঁড়ালাম তাকে সাহায্য করতে।

    এক মাস পরে আমার নতুন বন্ধু দরজি আমায় কুইনসের জ্যাকসান হাইটে নিয়ে গেল। আমি এই ৩য় বিশ্বের মত দেখতে ছিটমহলটিতে আসতে পেরে খুব খুশী ছিলাম কারণ এটা নিউ ইয়র্কের মধ্যে একমাত্র জায়গা ছিল যেখানে এলে পরে আমার মনে হত স্বদেশের খুব কাছাকাছি আছি। জ্যাকসান হাইট বলতে উত্তর বুলভার্ডের একটি রাস্তাকে বোঝাত যা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলিতে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশী, নেপালি, চাইনিস,  তিব্বতিয়ান ও কিছু ভুটানি দিয়ে ঠাসা থাকতো। এই রাস্তায় যে দৃশ্যগুলি রচিত হত তা আপনায় এমন একটি অনুভূতি দান করবে যে কখনোই ছেড়ে আসতে মন চাইবে না আপনার। পৃথিবীতে ঐ একটি স্থান ছিল নিউইয়র্কে থাকাকালীন যার অভাব আমি সর সময় অনুভব করতাম।  বিপনিবিতানগুলোর জানালা থেকে উঁকি মারছিল রঙ্গিন সলোয়ার কামিজ ও শাড়ি পরিহিত সারি সারি ডল। সুরুচিপূর্ণ সোনার গহনা, যেমনঃসূক্ম সব নকশায় গড়া ভারতীয় বালা, হার, কানের দুল ইত্যাদি জুয়েলারি স্টোরগুলির জানালায় প্রদর্শন করা হচ্ছিল। মসলা এবং ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় রান্নার গন্ধ সংকীর্ণ রাস্তাটার বাতাসকে সমানে  ঝাপ্টা মেরে যাচ্ছিল।  বলিউড সংগীত ও ভাঙরার আওয়াজকে এড়িয়ে চলা এখানে কারো পক্ষে ছিল নিতান্তই অসম্ভব এক কাজ। সত্যি বলতে, আমি যেন এক স্বর্গে অবস্থান করছিলাম। এক তরুণ তিব্বতীয় নাগরিককে ঠেলাগাড়ি বয়ে বাড়িতে নির্মিত মোমো বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছিল। ‘প্যাটেল ব্রাদার্স’ নামে একটি মুদির দোকান ছিল, যে মনে হয় পণ করেছিল, নিউ ইয়র্কে বসবাসরত একজন ভারতীয় অথবা দক্ষীণ এশিয়ো নাগরিককেও স্বদেশী পণ্যের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে দেবে না – আমুল পনির, বরফাচ্ছদিত পারোঠা, ম্যাগি নুডলস, বাসমতি চাল, গ্লুকোজ, এবং ক্র্যাকজ্যাক বিস্কুট, ডাবুর আমলা, - কি না ছিল ওখানে! আমরা তখন প্যাটলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম প্রায়… দরজি-ই প্রথম দেখতে পেল স্যানগেকে, কয়েকজন বন্ধুসহ বেরিয়ে আসছিল দোকানটির ভেতর থেকে। আমি কিন্তু ওকে চিনতে পারছিলাম না বলতে গেলে। প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ওকে,  সেই অবস্থা থেকে একটা বড়সড় রূপান্তর হয়েছিল ওর। চুলগুলি ছেঁটে এতটা ছোট করে ফেলেছিল যে, সেগুলো কানের পাশে দুলছিল সুন্দর মুখশ্রীটিকে উন্মোচন করে - সব মিলিয়ে তাকে এখন একটি সতেজ ও নবীণ রূপে পাওয়া যাচ্ছিল। সে একটি ঢেউ খেলানো প্যান্ট পরেছিল, তার উর্ধাংশ দখলে রেখেছিল একটি ঝকমকে রঙ্গিন জামা, ও ঘোর নীল ডেনিম জ্যাকেট। সে কিন্তু আমাদের দেখতে পায়নি। আমরাও অবশ্য খুব একটা আগ্রহ অনুভব করলাম না উপরে যেয়ে তার সাথে কথা বলতে। দরজি এবং আমি বরং তার পরিবর্তে একটি ভারতীয় রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম ‘চাই’ ও ‘জেলেবিস’ এর জন্য। ভারতীয় খাবারের স্বাদ আমাদের মাতাল করে তুলছিল। তবে সেখানেও শেষমেষ  স্যানগে আলোচনার বিষয়বস্তুকে অলক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলো। দরজি কথায় কথায়  আমাকে বলল যে, স্যানগে তার কাজিনদের সাথে আর বাস করছে না। “তাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল,” সে বলল, “ সে এখন ব্রনক্সে একটি দম্পতির বাসায় সার্বক্ষণিক গভর্নেস হিসেবে নিয়োজীয় হয়েছে তাদের বাচ্চাগুলোকে দেখাশুনো করতে। স্যানগে নাকি দরজিকে জানিয়েছিল যে, কাজিনদের সাথে বসবাস করা তার কাছে দিন দিন কঠিন হয়ে উঠেছিল।  সে নিউইয়র্কের মত একটি চিরসুযোগের দেশে জীবনটাকে নিজের মত করে সাজানোর একটা তাগিদ অনুভব করছিল; আর সে কারণেই নিজেকে আলাদা করে নিয়েছে কাজিনদের থেকে। তার নতুন মনিব খুব ভাল মানুষ ছিল, কিন্তু তিনটি কচি শিশুর সাথে কাজ করা সত্যি খুব চাপের ছিল তার জন্য! স্যানগে তার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো ফরেস্ট হিলস - এ কাটাতো যেখানে সে তার অ্যাাপার্টমেন্ট ভাগ করে নিত লেকি নামের আর একজন তরুণ ভুটানি মহিলার সাথে।

    এক সপ্তাহ বা এরো বেশি পরে দর্জি এবং আমি ঘটনাক্রমে জ্যাকসান হাইটে হাজির হয়েছিলাম। সেখানে স্যানগের বন্ধু ও রুমমেট লেকির কাছে দৌড়ে গিয়েছিলাম আমরা। দরজি আমায় লেকির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর স্যানগেকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন করার সুযোগটি আমি পূর্নমাত্রায় গ্রহণ করলাম। “সত্যি বলতে কি, তার সাথে আমার ...আমার.. অনেক দিন কথা হয় না,” কেমন যেন একটা দ্বিধা জড়ানো ছিল তার কণ্ঠে।  “সে এখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আসতো, তাও দেরী করে। আমার মনে হয়, সে এই সময়টাতে পুরো কাজের মধ্যে ডুবে রয়েছে। বলতে কি, গত কয়েক সপ্তাহ তার সাথে দেখা হয়নি আমার।“  

    লেকি চলে যাওয়ার পর, আমি দরজি’র দিকে ফিরলাম, “এটা কি বেশ অদ্ভুত একটা ব্যাপার না? লেকি’র পক্ষে এটা কি করে না জেনে থাকা সম্ভব? তার বন্ধুটি কোথায় আছে, কি করছে – সে কিছুই জানবে না? লেকির কথাটা , মানে, স্যানগে যে লেকির সাথে কোন সাথে যোগাযোগই করছে না – সত্যি হলে কিন্তু  ভয়ের যথেষ্ট কারণ রয়েছে … এই এত বড় শহরে যেকোন কিছু ঘটতে পারে স্যানগে’র সাথে, ” আমি বললাম টিভি সংবাদে আসা নিখোঁজ মহিলাদের দুর্ভাগ্যজনক কাহিনীগুলোকে মাথায় রেখে। দরজিকে খুব একটা বিচলিত মনে হল না, বরং সে মনে হয় আমার এই উদ্বেগে এক প্রকার আমোদই অনুভব করল। “তুমি খুব বেশী টিভি দেখছো ইদানিং” সে বলল।  

    সপ্তাহখানে পর দরজি যখন আমায় ফোন করল,  অনেকটা উদ্দেশ্যবিহীনভাবেই আমি তার কাছে স্যানগে’র ব্যাপারে জানতে চাইলাম। “কেন তুমি তার সম্পর্কে প্রশ্ন করেই চলেছো, বলতো?” দরজির কন্ঠে সন্দেহ ফুটে উঠে যেন। “দেখ, এটা নিউ ইয়র্ক,” আমি বলি, “যদি সে নিখোঁজ থাকে এত দীর্ঘ সময় ধরে এবং কেউ যদি না জানে, সে কোথায় …..”

    “থামো, থামো, অনেক হয়েছে।  যদি সেরকম কিছু হয় বা বা অন্য কিছুও ঘটে থাকে, আমার একদমই কোন ধারণা নেই এ ব্যাপারে, বুঝলে?” তার কণ্ঠে প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপের আভাস। “আর দেখ, ভুলে যেও না যে, তোমার একটি স্ত্রী ও সন্তান আছে দেশের বাড়িতে।“

    “আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি; কিন্তু তুমি কি অন্তত লেকিকে জিজ্ঞাসা করে দেখবে যে নতুন কিছু শুনেছে কিনা স্যানগের কাছ থেকে? এই যে কেউই কিছু শুনেনি বা জানে না মেয়েটি সম্পর্কে - এই বিষয়টাই উদ্বিগ্ন করছে আমায় সব থেকে বেশী,” আমি বলি তাকে। এক দিন পরে দরজি আমার ডেরায় হানা দেয় এবং কোন ভনিতা ছাড়াই জানায়, শহরে একটি গুজব রটেছে স্যানগেকে নিয়ে এবং সব থেকে ভাল হয়, যদি আমি নিজেই লেকিকে ফোন দেই এই বিষয়ে।

    লেকি ও আমার সর্বশেষ সাক্ষাতের পরে অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে এবং  স্যানগের কাছ থেকে নতুন কোন ফোন সে পায়নি এর মাঝে । তবে এ নিয়ে লেকিকে ভীত বা উদ্বিগ্ন মনে হল না। আমি যখন স্যানগের নিয়োগদাতার ফোন নাম্বার চাইলাম, লেকি তাও দিতে অপরাগতা প্রকাশ করল। আমি হতাশ হয়ে ফোন রেখে দিলাম বটে, কিন্তু আমার মনকে পাঠ্যপুস্তকে ফেরাতে ব্যর্থ হলাম। কয়েক মিনিট পরে ফোনটি অপ্রত্যাশিতভাবে বেজে উঠল। লেকির ফোন ছিল।

    “আও,” সে ব্যতিক্রমি বৈশিষ্টসূচক ধ্বনিটি উচ্চারণ করল যা সাধারণত তরুণ ভুটানিরা ব্যবহার করে থাকে তাদের থেকে বয়সে বড়দের সম্বোধন করতে। “আমি … ইয়ে মানে, আমি জানি, কোথায় আছে সে…আমি দুঃখিত যে, তোমায় বলিনি আগে। তবে সত্যটা হল, আমি বলতে পারিনি আসলে, কারণ আমি চেষ্টা করছিলাম  খবরটা অন্য ভুটানিদের থেকে দূরে রাখতে। তুমিতো  জানোই, বিষয়টা কেমন ঘোঁট পাকাতে থাকে, যখন লোকে এসব নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। সে …সে… র …র …ভর্তি আছে ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টির একটি মানসিক হাসপাতালে । আমি তাকে দেখে এসেছি। আমি তাকে ফোন দেয়ার জন্য বলে এসেছিলাম,  কিন্তু এখন পর্যন্ত একবারও তার ফোন পাইনি। আমার মনে হয়, সে এখনো ওখানেই আছে।“  

    এটা বিশ্বাস করা কঠিন ছিল যে, আমরা একটি তরুণীকে নিয়ে কথা বলছিলাম যার সাথে মাত্র কয়েক মাস আগেই দেখা হয়েছিল। তাকে তখন কতটা সুখী ও স্বাস্থ্যবান দেখিয়েছিল!  কিন্তু এখন আমি অনুধাবন করি যে, আমি তার সম্পর্কে আসলে কিছুই জানতাম না। সে ভুটানি ছিল আর আমি নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলাম যে, আমি তাকে সবটুকুই জানি; আমার অনুমান বা বিশ্বাস ছিল যে, তাকে খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছি আমি। যে আত্মীয়দের সাথে সে প্রথম অবস্থান করছিল, আর যেখান থেকে সে এসেছে, এবং যে অল্প কিছু তথ্য সে দিয়েছিল নিজের সম্পর্কে – এসব ছাড়া আর সবকিছুই অজ্ঞাত ছিল আমার। কিছু একটা করার জন্য হঠাৎ একটা তীব্র গরজ অনুভব করলাম আমি; কারণ,  কোন এক বিচিত্র কারণে মেয়েটি নিজের বোনের কথা মনে করাচ্ছিল আমাকে বারবার; কারণ, আমি জানতাম বাড়ি থেকে দূরে থাকা কেমন অনুভূতির সৃষ্টি করে, কেমন লাগে একজন তরুণের নিজের চিরচেনা গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশ-বিঁভুইয়ের অচেনা সময়কে পাড়ি দিতে! এছাড়াও ছিল সেই সকল কারণ যা আমার জানা ছিল খুব ভাল করে – মানে, কেন কেউ এই পথে চালিত হতে পারে। আমি সত্যিই খুব কৌতূহলী ছিলাম জানতে যে, মেয়েটিও কি সেইসব কারণেই ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে মানসিক হাসপাতালের একটি নির্জন কক্ষে? 
     
    (সমাপ্ত) 
    ...........

    লেখক পরিচিতিঃ

    সোনাম ওংমো নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সাংবাদিকতা’ বিষয়ে অধ্যায়ন করেছেন ১৯৮৮ সালে। তিনি কাজ করেছেন স্ট্রেইট টাইমস এর সাথে ১৯৯২-৯৫ সময়কালে। এছাড়াও সিঙ্গাপুর ডেইলি, সেভ দ্য চিল্ড্রেন, ইউএসএ এবং জাতীয় পরিবেশ কমিশনের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সোনাম নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমিয়েছেন ১৯৮০ সালে। তিনি ভুটানের পত্রপত্রিকার জন্য লেখালিখি অব্যাহত রেখেছেন; লিখেছেন  ভুটান টাইমস, দ্য জার্নালিস্ট, কুয়েনসেল এবং ম্যাগাজিনসমূহে; তাশি ডেলেক, দ্রুপকার জন্যও কলম চলেছে তার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক স্কুলের হয়ে কাজ করার সময় উপন্যাস ও ছোট  গল্পের বই লিখেছেন। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২৩ আগস্ট ২০২৪ | ২০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • . | ২৩ আগস্ট ২০২৪ ১৭:২৬536779
  • গল্পটি মেলানকোলিক, তবে অনুবাদ আরও যত্ন নিয়ে করা যেত।
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ২৬ আগস্ট ২০২৪ ১৪:২১536867
  • অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পাঠ ও মন্তব্যের জন্য। সামনে কোন অনুবাদে হাত দিলে অবশ্যই আরো যত্নবান হওয়ার চেষ্টা করব।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন