এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  শনিবারবেলা

  • ক্যালিডোস্কোপে দেখা – বদল

    অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
    ধারাবাহিক | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪৭৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)
  • ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়


    কুচবিহারে বাবার চাকরিতে বদলি হয়ে যাওয়ার সুবাদে প্রথম ‘বদলি’ কথাটার সাথে পরিচয়। কথাটা আচমকা এসে উদয় হলেও আস্তে আস্তে তাকে মর্মে মর্মে অনুভব করলাম। জানলাম, জ্ঞান হওয়া ইস্তক যে বাড়িটিকে আমার পরম নিশ্চিন্তের থাকার আস্তানা বলে জেনে এসেছি, সেটায় আমরা ভাড়া থাকি এবং বড়দের নিজেদের পরিস্থিতির কারণে যে কোন সময় সেখান থেকে চলে যেতে হতে পারে। পরে অবশ্য এই বদলি, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে সরে যাওয়া, কখনো বাধ্য হয়ে, কখনও স্বেচ্ছায়, আর তার সাথে সাথে জীবন যাপনের বদল ঘটে যাওয়া, জীবনের অংশ হয়ে গেল। যাপনের এক পর্যায়ে এসে এও জেনেছি যে চুক্তিপত্র করে বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে নেওয়া বাড়িতে আমার অধিকারও চূড়ান্ত নয়। তা আদতে আরও বড় এক অদৃশ্য চুক্তিভিত্তিক, চুক্তি – রাষ্ট্রের সাথে, যেদিন রাষ্ট্র চাইবেনা কিংবা তার সমর্থন সরে যাবে, তার প্রতিনিধি কিংবা তাকে পরাজিত করা বিজেতা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি এসে বলবে - “ওটা দিতে হবে”, এই অধিকার ছেড়ে দিতে হবে, দিতে হয়; হয়ত তখন চলে যেতে হয় সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা কোন দুনিয়ায়।

    উত্তরবঙ্গে গিয়ে পড়ার আগে দূরে যাওয়া বলে জানতাম দমদম ক্যান্টনমেন্টে আমাদের বাড়ি থেকে মায়ের সাথে কিছুদিন পরপর কলকাতায় কোন না কোন মেডিক্যাল কলেজে চোখ দেখাতে যাওয়া, একবার সকলের সাথে কলকাতাতেই চিড়িয়াখানায় যাওয়া আর নিয়মিত, বছরে কয়েকবার দত্তপুকুর আর সেখান থেকে কাশিমপুরে মামাবাড়ি যাওয়া। এইবার জানলাম যে সেইসব জায়গাগুলোয় আর যাওয়া যাবেনা, কারণ ওই জায়গাগুলো এখন আমাদের থেকে অনেক দূরের হয়ে গেছে। সেই প্রথম আমার এমন দূরত্বের বোধের সামনে দাঁড়ানো - যে দূরত্বকে অতিক্রম করা সাধ্যের অতীত হয়ে যায়। কুচবিহারের ঐ তিনটি বছরে একবারের জন্যও মামাবাড়ি যেতে পারিনি আমরা। আর সেই নির্বাসনকালে মামাবাড়ির যেসব স্মৃতি সযত্নে মাথার ভিতর গেঁথে রেখেছিলাম, আবার যেদিন মামাবাড়িতে পা রেখেছিলাম, অবাক বেদনায় উপলব্ধি করলাম তারা অনেকেই আর স্মৃতির কুঠরি থেকে মাটিতে নামবেনা, নামার উপায় নেই - সেই বাড়ি, সেই মানুষেরা, সেই আদর, সব আছে, তবু, সব বদলে গেছে।

    বদলের অনুভব আরো কিছু কিছু ভাবে এসেছিল দমদম ক্যন্টনমেন্টের দিনগুলোতেই। তারা বাস্তবে যতটা বড় ছিল, আমার বোধে ততটা বড় বা গভীর ছিল না। কিছু ছাপ রেখে মিলিয়ে গেছে। কতগুলো ছবি বা ভিডিও ক্লিপ যেন। টাইমলাইন ধরে তাদের ভাল করে সাজিয়ে নিলে ঘটনার পর্যায়ক্রমিক প্রবাহ বুঝতে সুবিধা হত, কিন্তু আমার এই ক্যালিডোস্কোপে দেখায় সেই ধারাবাহিকতা রাখতে ইচ্ছা করছেনা। যখন যেমন যেই ছবি ভেসে ওঠে –

    একদিন সন্ধ্যাবেলা বাবার সাথে খেলার মাঠ থেকে বেড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে দেখলাম রাস্তাগুলো আলো কম লাগছে, একটা নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হলাম – ব্ল্যাকআউট, রাস্তার বাতিস্তম্ভের আলোগুলোয় ঠুলি পরানো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই পাড়ার অনেক বাড়ির, আমাদের বাড়িতেও, জানালায় ভারী পর্দা, ঘরের থেকে রাতের আলো যেন বাইরে রাস্তায় না যায়। চারিদিকে ভয়ের ছাপ, যুদ্ধ লেগেছে, বিমান হানা হতে পারে, যে কোন দিন, যে কোন সময়। ঐ বাসায় থাকার সময়কালে ভারত দুটো যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল, ৬২-তে চিনের সাথে আর ৬৫-তে পাকিস্তানের সাথে। এই ব্ল্যাক আউটের ঘটনা সম্ভবত ৬৫-র যুদ্ধ চলাকালীন ঘটেছিল। সে বছর দুর্গাপূজার আগে, কাছাকাছি সময়ে, বড়দের কারো কারো কথায় মনে হল ভারত যুদ্ধ জিতেছে। আবার কেউ কেউ বলছে জেতা এখনো বাকি আছে। সবাই খুব উত্তেজিত। পাড়ার যুবসংঘের পূজায় রাস্তার পাশে একটা উঁচু, একটুখানি চওড়া কিন্তু অনেকটা লম্বা একটা চারিদিক ঘেরা ঘর বানিয়েছিল। তার ভিতর কি সব কলাকৌশল করে সেই ঘরের একদিকে বড়দের চোখের সমান উঁচুতে বসানো কাঁচের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে অন্য দিকে আরো উঁচুতে টাঙ্গানো পর্দায় পাহাড়ের বুকে ভারতীয় সেনার যুদ্ধের ছবি দেখানো হয়েছিল। আমার নিজের পক্ষে সেই কলাকৌশল উপভোগ করা সম্ভব হয়নি, বন্ধুদের মধ্যে যাদের যাদের বড়দের কারো কোলে চেপে সেই কাঁচের মধ্য দিয়ে উঁকি দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে বলে দাবি করেছিল, তাদের কাছে শোনা। তাই ঠিক কিভাবে কি দেখানো হয়েছিল সেটার নির্ভুল বয়ান জানা নেই। তবে ঐ অদ্ভুত ঘর আর তার সামনে সমবেত জনতার কখনো লাইন আর কখনো ঠেলাঠেলি ভিড় দেখা এখনো মনে করতে পারি।

    সেইবারই বন্ধুদের কাছ থেকে খবর পেয়ে, মেজ ভাই আর আমি, বাড়ি থেকে একটু দূরে, রেললাইন পার হয়ে গিয়ে, এক পূজা প্যান্ডেলের ভিতরের সজ্জা দেখে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কোন পূজা, ঠিক মত মনে নেই, দুর্গার অথবা কালীর। প্যান্ডেলের ভিতর ঠাকুরের সামনে বাঁশ দিয়ে খানিকটা জায়গা ঘিরে রাখা আছে। ঘেরা জায়গার মধ্যে এক পাশে একটা ছোট পাটাতনের উপর বড়দের মাপে এক মিলিটারি জওয়ানের মূর্তি, ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে দুই হাতে বন্দুক বাগিয়ে এগিয়ে চলেছে; আরেক পাশে একটা ছোট বাঁশের খুঁটির উপর নল উঁচিয়ে এত্তবড় একটা ট্যাঙ্ক। আর দুটোই ধীর গতিতে নিজদের জায়গায় দাঁড়িয়ে পাক খেয়ে চলেছে। এর আগে বাড়ির উঠানে ঝুলন সাজাবার সময় কাঠের গুঁড়ো দিয়ে বানানো রাস্তায় কি মাঠে প্লাস্টিকের ছোট ছোট সৈন্য, টিনের ট্যাঙ্ক বসিয়েছি বটে। কিন্তু এত বড় আর এইরকম অটোমেটিক ঘুরে যাচ্ছে। এমন আশ্চর্য কাণ্ড নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যায়না। ঐ দিন থেকে যুদ্ধ মনের ভিতর বিরাট এক গৌরবের জায়গা নিয়ে আসীন হয়ে গেল।

    এই দিনগুলিরও আগের কিছু ছবি তুলনায় আবছা ভাবে মনে পড়ে। বাবা এবং অন্যান্য বড়দের কথা থেকে আমাদের দেশের বাইরে কয়েকটা দেশের নাম শুনতে পেতাম। তাদের মধ্যে বড় দেশ ছিল চীন আর আমেরিকা। প্রথমটি শত্রু আর দ্বিতীয়টি পরম বন্ধু। শত্রু দেশটির সাথে আমাদের যুদ্ধে বন্ধু দেশটি আমাদের পাশে দাঁড়াতে সবসময় প্রস্তুত। কাছের বা দূরের খবর শুধু যে বড়দের কথা থেকেই পেতাম, তা নয়। আরো একজন আমাদের রোজ নিয়মিত জানিয়ে দিত। আমাদের বাসাবাড়ির দুটি ঘরের যেটি মা-বাবার ঘর সেটিতে দরজা দিয়ে ঢুকেই বাঁদিকে দেয়ালের গায়ে লাগানো একটি ছোট তাকের উপর বসানো থাকত আমাদের পরিবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় যন্ত্রটি, একটি বড় রেডিও। শিশুর চোখের বড়, আসলে বড় না ও হতে পারে। তবে সুতোর কাজ করা যে ঢাকনা দিয়ে সেটি আবৃত থাকত সেটি যে বেশ সুন্দর ছিল সে আমি আজও হলফ করে বলতে রাজি আছি। মাঝে মাঝেই সেটির সামনে চৌকিতে, চেয়ারে, টুলে বাড়ির এবং পাড়ার মানুষদের জমায়েত হয়ে যেত। বাইরে দেয়ালের ওপাশে জানালা ঘিরেও লোক জমত। এই রেডিও থেকেই না কি খবরের কাগজ থেকে দুঃসংবাদটি প্রথম জানা গিয়েছিল, সে তথ্য আমার স্মৃতিতে নেই। কিন্তু রেডিওর খবর শুনে বাবা-মায়ের বারে বারে চোখ মোছার কথা মনে আছে। দূরের বন্ধু দেশের প্রধান মানুষটিকে খুনী গুলি করে মেরে ফেলেছে। জন কেনেডি আর বেঁচে নেই। কখনও না দেখা দূর কোন দেশের কোন মানুষের শোকে স্তব্ধ হওয়ার এই ছবি এর আগে আর কখনও দেখিনি।

    এই মৃত্যুর কিছুদিন পরে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধের সময় সেই বন্ধু দেশ আর ভারতের বন্ধু থাকেনি; আরেক বিরাট দেশ এসে তার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল।

    ক্যান্টনমেন্টের দিনগুলিতে ঐ রেডিও আমাদের আরও একটি বড় মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু আর বেঁচে নেই। অনেকদিন ধরে খবরের কাগজে এই নিয়ে খবর বের হয়েছিল, সারা পৃথিবীর নানা দেশ থেকে বড় বড় মানুষেরা ওনার জন্য শোক জানিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের বাড়িতে এই মৃত্যু নিয়ে তেমন উদ্বেলতা দেখিনি। পিছনে তাকিয়ে মনে হয়, দেশভাগ, চিনের সাথে যুদ্ধ জিততে না পারা এমন সব নানা কারণে আমাদের বাড়িতে হয়ত ওনার তেমন মর্যাদা ছিলনা। এর সাথে জুড়ে গিয়েছিল একটা অন্যরকম ঘটনা। ওনার উইল অনুসারে ওনার মৃতদেহ দাহ করার পর দগ্ধাবশেষ আকাশ থেকে দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই ছাই ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা বাবা অনেকদিন পর্যন্ত খুব তিক্ততার সাথে বলতেন। পরবর্তীকালে মনে হয়েছে এই চিন্তাধারায় বাবা একা ছিলেননা।

    নেহরুর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। দায়িত্ব নেওয়ার পরে পরেই বাধল পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ। ওদিকে কৃষিতেও পরিস্থিতি কঠিন। প্রধানমন্ত্রী শ্লোগান দিলেন – জয় জওয়ান, জয় কিষাণ। সেই প্রথম শ্লোগান কথাটা আমার মাথায় ঢুকল। পরে অবশ্য এই শব্দটা জীবন যাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাবে। এই সময় লেখাপড়ার জন্য যত সাদা বা রুল টানা খাতা কিনতাম তাদের বেশির ভাগের কভারে চাষি আর সৈনিকের ছবি দিয়ে এই শ্লোগানটা লেখা থাকত, বাংলায়, ইংরেজিতে দু’রকমই দেখেছি। আমাদের স্মৃতিতে শ্লোগানটি ভালো রকম জায়গা করে নিল। যতদূর মনে পরে, যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পরেও অনেক বছর কভারে এই শ্লোগান ওয়ালা খাতা কিনতে পাওয়া যেত।

    ক্যান্টনমেন্টে আমাদের বাসাবাড়ির দোতলায় বাড়িওয়ালা কাকুদের ঘরে গ্রামোফোন রেকর্ড বাজত। গান রেকর্ড করে রাখা চাকতিগুলোর মাঝখানের ফুটোটাকে ঘিরে গানের নাম আর আরো অনেক কিছু লেখা থাকত; চাকতি ভরে রাখার প্যাকেটের গায়েও ঐরকম লেখা থাকত। আর লেখা ছাড়াও থাকত একটা সুন্দর কুকুরের আর চোঙা সহ গ্রামোফোনের ছবি। কুকুরটি ঐ চোঙার দিকে তাকিয়ে আছে, যেন চোঙা থেকে ভেসে আসা কথা শুনছে। কার কথা? ওর মালিকের কথা। হিজ মাস্টার্স ভয়েস। ঐসব রেকর্ড যেই কোম্পানি বিক্রি করে তার নাম, এইচ এম ভি - হিজ মাস্টার্স ভয়েস।

    সময় বদলে যাচ্ছিল। কোন বদল আমার নজরে পড়েছিল। কোন বদল আমি খেয়াল করতে পারিনি। করার মত বয়সে ছিলামনা। মনে পড়ে, দেখেছি, দেয়ালে দেয়ালে লেখা আর ছবি। সেই কুকুরের আর চোঙার ছবি। চোঙা থেকে ভেসে আসা কথা লেখা আছে – লাদাখ, লাদাখ, লাদাখ। মানে কি তার? প্রশ্ন করলে উত্তর পেয়েছি, সে অনেক জটিল কথা, বড় হলে বুঝব। বড় হতে হতে এই ছবি, এই লেখা আরও অনেক বিস্তার নিয়ে নিয়েছিল। সে বিস্তার এখনও হয়ে চলেছে।

    এক রাতে বাবা আর মা কলকাতা থেকে থিয়েটার দেখে এল। বেশ কয়েকদিন ধরে সেই থিয়েটারের গল্প চলল। থিয়েটারের প্রধান মানুষটিকে নিয়ে মা, বাবা দুজনেই শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় ভেসে আছে। পরাধীন ভারতের নৌ-বিদ্রোহের কাহিনি। কিন্তু শুধু সেটুকুই নয়। ঐ গল্প বলতে বলতে নাটক আরো অন্য কথা বলেছে এই সময়ের কথা বলেছে। সেটা সরকারের ভাল লাগবেনা। সরকার? কে সে? গভর্নমেন্ট। যেখানে বাবা চাকরি করে? মামা যেখানে অফিসার? হ্যাঁ, কিন্তু এই গল্প অনেক বড় ব্যাপার, এখন বুঝবেনা, বড় হতে হবে। বেশ তাই হবে, বড় হয়ে বুঝব। এখন শুধু মনে রেখে দেই, মঞ্চের উপর একটা গোটা জাহাজ চলে আসে এই নাটকে। নাটকের নাম – কল্লোল। আর এই নাটক যাঁর সৃষ্টি – উৎপল দত্ত। পরে একসময় তাঁর অভিনয় সামনে থেকে দেখে আমিও মুগ্ধ হয়ে যাব, কিন্তু সে অনেক দিনের পরে।

    ঠিক এই সময়েই কিনা মনে নেই, কিছুদিন আগে থেকেও হতে পারে, বড়দের আলোচনায় মাঝে মাঝে শুনতাম আমাদের চারপাশেই চিন আর পাকিস্তানের চরেরা ছড়িয়ে আছে, তারা কারা কেউ জানেনা, এই নিয়ে বেশি মুখ খোলা নয়, ফিসফিস, ফিসফিস। খুব বেশি আর কিছু মনে নেই, কেবল আরও একটি শব্দের সাথে সেই সময় প্রথম পরিচিত হওয়া ছাড়া – গুজব। চারিদিকে, লোকেদের আলোচনায়, খবরের কাগজে নানা খবর আর গল্পের ওড়াউড়ি। সময়ের এগিয়ে চলার সাথে সাথে গুজব আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে গেল।

    এই বছরের শেষে আমরা কুচবিহারে চলে এলাম। এখানে সব অন্য রকম। অনেকখানি করে জমি নিয়ে বাড়ি সব। কোথাও কোথাও দুই বাড়ির মাঝে বেড়া কি গাছের সারি। একটি-দুটি বাড়ি ঘিরে নীচু পাঁচিল। দুই দিকে জমি-বাড়ি নিয়ে খোলা আকাশের নীচে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে পথ, পিচের, মাটির, কিংবা মাঠের মাঝখান দিয়ে পায়ে পায়ে চলা আভাষ মাত্র। কোথাও কোন টানা-দেয়াল নেই। দেয়াল-লিখনও নেই। জীবন চলেছে নিজের ছন্দে। খবরের ঢেউ এসে তাকে নিত্য এলোমেলো করে দিচ্ছে না। খবরের কাগজ আসে খুব কম বাড়িতে, আসে রেলের গাড়িতে, লঞ্চে নদি পার হয়ে কিংবা বিমানে চেপে, বাসি হয়ে। সেই বাসি খবর নিয়েও বড়রা অফিসে-দোকানে কথা বলে নিশ্চয়ই, কিন্তু আমাদের পাড়ায় না আছে কোন অফিস, না আছে কোন দোকান। এখানে যেভাবে জীবন চলে বড় হয়ে তার একটা খুব সুন্দর নাম পেয়েছিলাম – মন্দাক্রান্তা।

    তা বলে অবশ্য গুজব আসা থেমে থাকে না। ফরাক্কায় বাঁধ তৈরি হচ্ছে, এই বাঁধ তোর্সা নদীর পাড় ধরে চলা বাঁধ নয়, গঙ্গা নদীর এ পাড়-ও পাড় জুড়ে দেবে। তার উপর রেল লাইন বসবে। মোটেও সোজা কাজ না। অনেক মজবুত পিলার বসাতে হবে। সে বড় কঠিন আর ভয়ানক কাজ। এমনি হবে না। বাচ্চা ছেলে চাই। কেন? বাচ্চা ছেলে কি করবে? কিছু করবেনা। পিলারের নীচে পুঁতে দিতে হবে। তা না হলে পিলার দাঁড়াবে না। শিউরে উঠি। বিশ্বাস করতে মন চায়না। কিন্তু বন্ধুরা কি আর মিথ্যে বলে? সেও ত কারো কাছ থেকে শুনেছে! দুনিয়া শুদ্ধ সবাই কি মিথ্যে কথা বলছে? মিথ্যে বলা ত পাপ! বেশ, মিথ্যে যদি নাও হয়, ভুল ত হতে পারে! সবার কথা ভুল? কথায় বলে, যা রটে তার কিছু বটে। ঠাকুমা পই পই করে বলে, আমরা যেন সাবধানে থাকি, অচেনা-অজানা কারো সাথে না যাই, স্কুল থেকে সোজা বাড়ি চলে আসি, না বলে দূরে কোথাও না চলে যাই। বাচ্চা ছেলেরা ত সত্যিই হারিয়ে যাচ্ছে, কাগজেই আছে। ওঃ! কবে যে বড় হব! তখন কি আর জানতাম, যত বড় হব, তত আরো বড় গুজবের সমুদ্ররা ঘিরে নেবে আমাদের, আমরাও গুজব ছড়াব, কোন পিলারের নীচে কোন সত্যকে যে কখন পুঁতে দেব! তা না হলে যে পিলার দাঁড়াবেনা!

    কুচবিহারের তুলনামূলক নিস্তরঙ্গ জীবন যাপনে একটি প্রবল উত্তেজনার আগমন ঘটেছিল। সেখানেই প্রথম জানলাম যে আমাদের মা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা নয়, কারণ কুমারী জীবনে সেই সুযোগ আসেনি তার। এখন মা ঠিক করেছে তার এই খামতি সে এবার অতিক্রম করবে, বদলে ফেলবে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার মান। সরকারের অ্যাডাল্ট এডুকেশন প্রোগ্রামে যোগ দিয়েছে মেয়েদের স্থানীয় স্কুলটি, চালু করেছে জোড়া-ক্লাসের শিক্ষাক্রম। আমি আমার স্কুলে ভর্তি হলাম ক্লাস ফাইভে, মা তার স্কুলে ভর্তি হল কম্বাইন্ড ক্লাস ফাইভ-সিক্সে। ঠিক কিভাবে এই জোড়া ক্লাসগুলি চালানো হত জানিনা। যেমন জানিনা মা ছাড়া আর কোন বিবাহিত বা অবিবাহিত অ্যাাডাল্ট ছাত্রী যোগ দিয়েছিল কিনা। মা উচ্ছসিত ছিল তার পড়া নিয়ে, তার কন্যাসমা বন্ধুদের নিয়ে, তার প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে। ঠাকুমা আর বাবারও বিপুল উৎসাহ। সবচেয়ে উচ্ছসিত ছিলেন মায়ের স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টারমশাই, খগেনবাবু। মা যেদিন প্রথম হয়ে ক্লাস সেভেন-এইটে উঠল, উনি ছুটির পর মাকে সাথে নিয়ে মিষ্টি হাতে আমাদের বাড়ি এসে হাজির। উৎসব সেদিন।

    মায়ের স্কুলে পড়তে ঢোকায় আমার একটা নিজস্ব মজা আমদানি হয়েছিল। বাড়িতে এক-দু ক্লাস উঁচুতে থাকা দাদা-দিদি থাকলে যে সব মজা পাওয়া যায়, তাদের একটি। এগিয়ে থাকা পাঠক্রমের বই এখনই হাতে এসে যাওয়া। নিজের পড়ার বইয়ের বাইরের বই পড়তে কি ভাল যে লাগে! আর সে বই যখন কয়েকদিন বাদে নিজেরই উপকারে লাগার সম্ভাবনা, তখন সে বই পড়ে ফেলা ত অবশ্যই ভালো কাজ। কত গল্প, কবিতা, অজানা তথ্য – ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞানের! আর সেগুলো পড়া মানে শুধুই পড়া, সেই পাঠ নিয়ে এখনি কোন পরীক্ষা দিতে হবে না। মা আবার আমার হাতে বই ধরিয়ে তার পাঠ ঝালিয়ে নিত। সেই খুশি ত উপরি পাওনা, মা-ছেলে দুজনেরই।

    রাশভারী বাবারও নূতন পড়া শুরু হয়েছিল। আর সেটা নিয়ে সে একেবারেই খুশি ছিলনা। এ কারণে নয় যে সে পড়তে ভালোবাসতনা। সে এই বিষয়টা পড়তে একেবারে ইচ্ছুক ছিলনা। কিন্তু উপায় নেই, সরকারী আধিকারিক, সরকারের ফরমান ত মানতেই হবে। নামে ঐচ্ছিক, কিন্তু না শিখলে উন্নতির আশা করার দরকার নেই। অতএব হিন্দি শিখতে হবে, আভি, ইসি ওয়ক্ত। বাবা মাঝে মাঝেই ফুঁসে উঠত, এ ত গায়ের জোরে রাষ্ট্রের খবর্দারি। হিন্দি কি আমাদের রাষ্ট্রভাষা নাকি! এই ক্ষোভ আমার বোধের বাইরে ছিল। দুটো বই ছিল, একটায় ছবি দেওয়া, হিন্দি অক্ষর চেনানোর বই। সেই সাথে শব্দ, বাক্য, অনুচ্ছেদ শেখানো। অন্যটা অভিধান ধরণের। বইদুটো পড়তে আমার ভালই লাগত। হিন্দি ভাষাটা শেখা হয়নি বিশেষ কিছু, কিন্তু তাতে কি! একটা অচেনা-অজানা জগতে ঘুরে বেড়ানো ত হয়! তখন জানতামনা, এই ভাষাকে বাহন করে আসলেই একটা বিশাল বড় অচেনা অজানা জগৎ আমাদের ঘিরে নেবে একসময়, বদলে যাবে আমাদের অনেকদিনের চেনা জগৎ।




    ক্রমশ...




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.244.82 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১৬537081
  • এই লেখাটা পড়ে আমার মনে হলো সময়ের দূরবীন উল্টো করে চোখে লাগিয়ে দেখছি। ঐ ব্ল্যাক- আউটের গল্প, কেনেডি, নেহেরুর মারা যাওয়ার গল্প মায়ের মুখে অনেকবার শুনেছি। অবিকল এইভাবেই বলা। হয়তো সেই একই সেন্টিমেন্ট বয়ে যায় সবার মনের মধ্যে দিয়ে, যারা কোনো না কোনো বয়সের হয়ে সেই সময়্গুলো দেখেছিলো। শেষে হিন্দি ভাষা সম্পর্কে পড়তে গিয়ে মনে হলো, এই যে আজ হিন্দি সব জায়গায় এনক্রোচ করছে বলে অনেকেরই মনে খুব কষ্ট হচ্ছে, এটা আমার ক্ষেত্রে অন্যভাবে কাজ করে। আমি যে শহরে জন্মেছি, বড় হয়েছি সেটা বিহারের বর্ডারে। আশি শতাংশ মানুষ সেখানে হিন্দি বলে। দোকানে বাজারে, সাধারণ মানুষের মুখে হিন্দি শুনে ও নিজেও বলেই বড় হয়েছি। কোনোদিন মনে হয়নি বাংলার থেকে এটা আলাদা কোনো ভাষা। আমার একবার একটা অ্যাক্সিডেন্টে হেড-ইন্জুরি হলে পর আমি গোপাল ভাঁড়ের "ষড়া অন্ধা অছি" গল্প মিথ্যে করে দিয়ে শুদ্ধ হিন্দিতে দু ঘন্টা ডিলিরিয়াম বকে গেছিলাম। তাই এই বদলটা আমার চোখে পড়ে, কিন্তু মনে অত আঁচড় কাটেনা। যা হোক, এগুলি অবান্তর কথা, লেখার মান সম্পর্কিত নয়। লেখার মান নিয়ে সত্যি আর নতুন কী বলবো! অপেক্ষায় থাকি এই পর্বগুলোর জন্য। আজ অব্দি কোনো পর্ব পড়ে নিরাশ হইনি।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৫১537103
  • এক অদ্ভুত জগৎ থেকে টাইম ট্রাভেল করিয়ে আনল এই লেখাটা। অনেক জিনিস অনেক ঘটনা, যা কোনোদিন স্বচক্ষে দেখতে পাইনি, সব পরিষ্কার দেখতে পেলাম এই ক্যালিডোস্কোপে চোখ রেখে। খুব খুব ভালো লাগল। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৩০537110
  • প্রিয় কেকে, আমার লেখার পাঠক খুব কম। তাদের ভালো লাগবে এই ইচ্ছাতেই লিখি। তাদের কেউ কেউ বলেছেন যে আমি যেন পাঠকদের কথা না ভেবে নিজের জন্য লিখি। কিন্তু সে পরামর্শ আমি নিতে পারিনি। আমার নিজের জন্য আমার একটি লাইনও লেখার সাধ নেই‌। পারলে সেই সময়টুকু আমি চমৎকার সব লেখা পড়ব, বা পছন্দের কিছু দেখব। না পারলে স্রেফ চুপচাপ মনপবনের নাও নিয়ে ভেসে বেড়াব। তাই এই পর্বগুলি যে এখনও তোমায় নিরাশ করেনি সেটা পরের পর্ব আসার জন্য দরকারি কথা। 
     
    আমরা সময়ের এক অসামান্য পর্বের মধ্য দিয়ে চলেছি, দ্রুত। মাইলমার্কারগুলো পার হয়ে যাচ্ছি একটার পর আরেকটা, অনেক সময় তাদের ভালো করে দেখার বা বোঝার আগেই। যে যেটা নজর করতে পারি, তাই নিয়ে গল্প করে চলি। আমাদের গল্পগুলো তাই কাছাকাছি, আবার যার যার অনুভবে জারিত হয়ে বেশ অন্য রকমও হয় বটে। হয়ত সেই জন‍্যই অনেক স্মৃতিচারণ পড়ার পরেও আরেকটি পেলে, পড়ে ফেলতে পারা যায়, যেন নিজদের মধ্যেই গল্প হচ্ছে। তাই তোমার আর আমার আত্মজনেদের গল্প এত আমাদের পরস্পরের, একই বৃত্তের গল্প।
     
    তুমি পড়বে বলেই, 
    কী-বোর্ডে কেউ 
    আঙ্গুল রেখেছে তার, 
    তুমি পড়বে বলেই 
    স্মৃতির আকাশে 
    ডানা মেলা দরকার।
    তুমি পড়বে বলেই ... 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:৩৩537121
  • প্রিয় রমিতবাবু, এই লেখাটি লিখতে লিখতে আমারও মনে হচ্ছিল যেন কোন এক অন্য সময়ের মধ‍্য দিয়ে চলেছি, এতটাই বদলে গিয়েছে আমাদের জগৎ, বদলে গিয়েছি আমি, আমরা। লেখা ভালো লাগা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ জেনো।
  • সুধাংশু শেখর | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:৪৫537122
  • "শোনা কথা

    ভাড়াবাড়ি ছাড়তে গিয়ে
    শেষের ক'দিন সিঁড়িতে
    আমাদের পা ভারী হয়ে আসে

    আমরা তো তবু দেশভাগ দেখিইনি।"
     
    - জ্যোতির্ময় বিশ্বাস, 'তুমি একটা অপরূপ মানুষ' (২০২৩, পত্রপাঠ প্রকাশনী) বই থেকে।
  • Kishore Ghosal | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪537139
  • পণ্ডিত নেহেরুর মৃত্যুকালটা আমার মনে আছে এভাবে - আমার পিতৃদেব এবং তাঁর সম বয়স্ক মানুষদের কথা থেকে "ইন্দ্রপতন" শব্দটা শিখেছিলাম।  একটি বই বাড়িতে এসেছিল - "নেহরু অমর রহে" - কবে যে হারিয়ে গেল সেই বইটা... আর আমাদের পাড়ায় একজন ভদ্রলোক আসতেন - নিজের লেখা কবিতা ছাপানো অতি পাতলা বই নিয়ে - "জহরলাল মারা গেছেন, জাগরে ভারতবাসী..."। মাথায় গান্ধীটুপি - পরনে খদ্দরের ধুতি আর ফুলহাতা "হেমন্তবাবু" শার্ট - শীর্ণদেহ বৃদ্ধ উচ্চকণ্ঠে নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করতে করতে হেঁটে যেতেন পথে পথে - 
     
    আপনার লেখায় হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলি ফিরে আসছে আবার...        
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪১537176
  • কিশোর, আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল খুব। অনেক ধন্যবাদ।
     
    হ‍্যাঁ, নেহরুকে নিয়ে সেই সময় পক্ষে-বিপক্ষে উভয় দিকেই প্রবল আবেগের প্রকাশ দেখা যেত, কোন পক্ষে বেশি দেখা যেত সেটি প্রত‍্যক্ষ অভিজ্ঞতায় বলতে পারবনা কারণ আমার ঐ বয়সে সেটা নজর করার মত কিছু বলে মনে হয়নি। তবে সমর্থন এবং বিরোধিতা নিয়ে জোর বাদানুবাদের কিছু আবছা স্মৃতি আছে। 
  • Ranjan Roy | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৫৯537204
  • আপনার মায়ের প্রৌঢ় শিক্ষার ক্লাসের কথা পড়ে 
    আমার নিজের মায়ের কথা মনে পড়ছে।
     
    লেখাপড়ার খুব ইচ্ছে ছিল মহিলার।
    ময়মনসিংহের উয়ারা গ্রামে দিদিমার প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ফোর অব্দি পড়েছিল। এরপরে পড়তে হলে জেলা সদরে যেতে হবে। পিতৃহীন মেয়েটি গোঁড়া বড়দার  অভিভাবকত্বে আর পড়তে পারল না।
    বিয়ের পর একান্নবর্তী  পরিবারের হাঁড়ি ঠেলে চলল। কিন্তু এক উৎসাহী দেওর উত্তর কলকাতার  চৈতন্য লাইব্রেরি থেকে কার্ড করিয়ে প্রতিমাসে নতুন বৌদিকে রেজিস্টার্ড ডাকে দেশের বাড়িতে বই পাঠাতো। শ্বশুর এই বাড়তি খরচকে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখতেন।
    পঁচাশি বছর বয়েস অব্দি পড়ে চলল বাংলা গল্পের বই, পূজা সংখ্যা আর কবিতা।
     
     শেষের কবিতার শেষ কবিতা "কালের যাত্রার ধ্বনি" আর জীবনানন্দের "হায় চিল! সোনালি ডানার চিল" মুখস্থ ছিল। এইসব শুনিয়ে আমাদের ঘুম পাড়াতো। 
     
    আপনার লেখা পড়ে আজ ফের মনে পড়ে গেল।  
     
     
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৫:১৮537235
  • রঞ্জনদা, আপনার মায়ের কথা পড়ে একই সাথে আনন্দ এবং বেদনা অনুভব করলাম। অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
  • অভিজিৎ। | 2401:4900:5abb:9042:bf8c:89c0:5e2:69d3 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:১০537255
  • ঐ রেডিও টির মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠান শোনার জন্য ঘর শ্রোতায় ভরে যেত। তারপর সম্ভবত বাবা পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তরপণ অনুষ্ঠান শুরু করার প্রস্তুতি নিত।ঐ হিন্দী ভাষা রপ্ত করানোর মধ্যে দিয়ে যে আগ্রাসনের রূপের সাথে সামান্য হলেও পরিচিত হয়েছিলাম, তা আজ মহীরুহ হয়ে বিবিধ ডালপালা বিস্তার করে দেশে বিদেশে  ঝাঁকিয়ে বসেছে। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩০537277
  • @অভিজিৎ
    হ‍্যাঁ, আমাদের জীবনে ঐ রেডিওটিকে পেয়েছি অত্যন্ত অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু স্মৃতিতে তার আসনটি পাকা হয়ে আছে।
     
    ব‍্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে খুঁজে নিয়ে পড়ে মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য অনেক আদর আর ভালোবাসা নিস।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:3048:84d4:3f4e:15c | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৩537278
  • অমিতাভদা, আপনার লেখা দুতিনবার করে পড়ি। কতো যে ছোটবেলার কথা আর বড়োদের কথা মনে পড়ে! আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন আমাদের বাড়িতেও ওরকম একটা রেডিও ছিলো। আবছা মনে পড়ে, সন্ধেবেলা ঠাকুমার কোলে শুয়ে রেডিও শুনতাম, আর রেডিওটার সামনে দুটো বড়ো আলো জ্বলতো, আমি সেগুলো দেখতাম। আরও কতো কতো কথা মনে পড়ে! আরেকটু বড়ো হওয়ার পর দেখতাম বাবা আর জেঠু নানারকম রেডিও, টেপ রেকর্ডার এনে সেসব খুলে ভেতরটা দেখতো, বিরাট বড়ো একেকটা ব্লুপ্রিন্ট পেতে তার সাথে সার্কিট মেলাতো। দুজনেরই সেসবে খুব শখ ছিলো। তারপর জেঠু মারা গেল, তারপর বাবা আর কোনদিন রেডিও খুলে দেখেনি। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৫537288
  • প্রিয় ডিসি, তোমার মন্তব্য এই লেখা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার উৎসাহ যোগায়। অনেক ধন্যবাদ জেনো।
     
    তোমার বাবা আর জেঠার রেডিও-টেপ রেকর্ডার খুলে দেখার গল্পে সেই সময়ের বাড়িতে নিজে হাতে এইসব বানানোর কাহিনি মনে এল। এক অন্য রকম যুগ ছিল তখন।
  • kk | 172.58.244.82 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৫০537293
  • ডিসির পোস্টের শেষ লাইনটা খুব কাব্যিক লাগলো আমার।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৪৫537295
  • kk | 172.58.244.82 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৫০
    একদম। কঠিন গদ্য অথচ।
  • অনুপম চক্রবর্তী | 2409:4060:30f:d9af::34b:48a1 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৪537394
  • বাঃ বাঃ চলুক, চলতেই থাকুক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন