এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • দুই দেশ, ছয় রাজ্য, দুই চাকা, পাঁচ হাজার একশো কিলোমিটার ও এক পাগল

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১০ নভেম্বর ২০১৭ | ৩১৮২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিকি | ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৪০370526
  • ভূটান মতলব ও লাদাখ কে পাস জো গাঁও হ্যায় না? উধার জানে কে লিয়ে স্মার্ট কার্ড নেহি চাহিয়ে হোতা হ্যায়।

    উপক্রমণিকা

    অর্থাৎ কিনা, যখন বেরিয়ে পড়ার উপক্রম করছি, বেরোই নি, তখনকার গল্প। আপনারা যাঁরা অ্যাদ্দিন ধরে আমার লেখা পড়ছেন, তাঁরা দিব্যি জানেন যে আমার বেড়ানোর গল্প শুরু হবার শুরুতে তার প্রস্তুতির গল্প থাকে। একেবারেই প্রথম দিন শেষরাতে বেরিয়ে পড়া দিয়ে শুরু করি না।

    তো, গল্পের শুরু ২০১৬র শেষদিক থেকে। নর্থ ইস্ট যাবো, এবং মোটরসাইকেল নিয়েই যাবো, এই রকম একটা চিন্তাভাবনা দানা বাঁধছিল, গেছোদাদাও তাতে যথেচ্ছ ধুনো দিচ্ছিল। প্ল্যান তৈরি, মোটামুটি তাতে তারিখ বসানো বাকি, এই সময়ে নিয়তান্তই অপ্রয়োজনে শীতকালের বরফঢাকা মানালি দেখতে পরিবার নিয়ে বেরোলাম গাড়ি নিয়ে, এবং কুলু পৌঁছনোরও আগে, একটা ভয়ঙ্কর অ্যাক্সিডেন্টে গাড়িটাকে প্রায় অর্ধেক নষ্ট করে ফেলেছিলাম। আমি আর আমার মেয়ে, অ্যাপারেন্টলি আমাদের যা কিছু হয়ে যেতে পারত, কেবল সেদিন মরা ভাগ্যে লেখা ছিল না বলে মরি নি।

    সে গল্প লিখেছি আমার স্পিতির ট্র্যাভেলগে। কনফিডেন্স শূন্যে নেমে গেছিল, আর একটা ট্রমা তাড়া করে বেড়াত সব সময়ে, যখনই রাস্তায় বাইক চালাচ্ছি, খালি ফিরে ফিরে আসত সেই মুহূর্তটার স্মৃতি। ফোকাস সরে যেত, কনসেন্ট্রেশন নষ্ট হয়ে যেত ক্ষণে ক্ষণে। সে এক অসহনীয় অবস্থা। গাড়ি সারানোর খরচাতেই এত টাকা বেরিয়ে গেল, যে ফেব্রুয়ারিতে নর্থ ইস্ট বেড়াবার প্ল্যানকে তখনই মাটিচাপা দিতে হল। … অবিশ্যি মাটিচাপা দেবার আরও একটা কারণও ছিল, আরও বেশ কিছু বিশেষ বন্ধুর সাথে নর্থ ইস্টের সেই সব জায়গা ঘুরতে যাবার একটা প্ল্যান চলছে এখনও, সে প্ল্যান সামনের বছরের আগে মেটিরিয়ালাইজ হতে পারবে না। কিন্তু, নর্থ ইস্ট না হয় না-ই হল, তাই বলে কি এই ট্রমা নিয়েই আমাকে থাকতে হবে?

    ট্রমা কাটাতে সাহায্য করল ফেব্রুয়ারির স্পিতি যাত্রা। আবার আমি নর্মালসিতে ফিরে এলাম। বরফের মাঝে পড়েছিলাম, একবার নয়, চার-পাঁচবার, কিন্তু সে পড়া ছিল অন্য। আসল কথা যেটা, কনফিডেন্স ফিরে পাওয়া – সেইটা হল। আস্তে আস্তে সেদিনের অ্যাক্সিডেন্টের স্মৃতি ঝাপসা হয়ে এল।

    নর্থ ইস্ট বলতে, আমরা বুঝি পূর্বোত্তরের সাতটা রাজ্য – আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড আর ত্রিপুরা। সেভেন সিস্টার্স। কিন্তু এর বাইরেও যে উত্তরের আরও কিছু সুন্দর জায়গা আছে, সে আমি জেনেছি কলেজে পড়ার সময়েই। তরাইয়ের কোলে ছিল আমার কলেজ।

    সিকিমটা ঠিক কীভাবে আমার বাকেট লিস্টে ঢুকল, এখন আর মনে পড়ছে না, বোধ হয় ব্ল্যাঙ্কি বা অরিজিৎই বলেছিল নর্থ ইস্ট না গিয়ে আপাতত সিকিমটা মেরে এসো। ব্ল্যাঙ্কি একটা টেনটেটিভ প্ল্যানও বানিয়ে দিয়েছিল। আর বলেছিল পারমিট ফারমিটের ব্যাপার আছে, হোটেল হোমস্টে বুকিংয়ের ব্যাপার আছে, সেগুলো তাড়াতাড়ি শুরু করতে। সময় সেট করেছিলাম অক্টোবরের শেষে, কালীপুজোর পরে।

    প্ল্যান বানালাম দু সপ্তাহের, হেসেখেলে নেমে যাবে। শুধু দিল্লি থেকে শিলিগুড়িটা দুদিনে যাবো না তিনদিনে, তাই নিয়ে মাথা ঘামাবার জন্য খানিকটা সময় রেখে দিলাম। এইবারে পারমিটের জন্য খোঁজখবর করা। প্লাস, এতটা লম্বা ট্যুর, একা একা বেশ বোরিং হওয়াটাই স্বাভাবিক, একটা দুটো পার্টনার খুঁজে বের করতেও হবে।

    ‘লাদাখ রিটার্ন’ নামে একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি তার সদস্য। আমার বাড়ির কাছেই থাকেন মিস্টার ডিকে পণ্ডিত নামে একজন সত্তর বছরের যুবক, তিনি এই গ্রুপের মডারেটর। তাঁকে একদিন ফোন করলাম, ফেসবুকের গ্রুপে পোস্টও করলাম, পার্টনার চাই – এই মর্মে। ডিকে পণ্ডিত শুনলেন আমার প্ল্যান, বললেন, এ তো তোমার দশদিনে নেমে যাবে, এত টাইম নিচ্ছো কেন, তার চেয়ে ওখান থেকে তো ভূটান কাছে, সিকিম সেরে ভূটানটাও ঘুরে এসো না। থিম্পু আর পারো সেরে এসো – পনেরো দিনে আরামসে নেমে যাবে। আমি তোমাকে ওখানকার এজেন্টের নাম ঠিকানা দিয়ে দেব, পারমিট পেতে তোমার কোনও অসুবিধে হবে না।

    – বলে উনি আমাকে প্ল্যানটা রিভাইজ করে দিলেন। সিকিমের সাথে ভূটানও ঢুকল আমার বাকেট লিস্টে। তার সাথে আরেকটা জিনিসও ঢুকে গেল বাই ডিফল্ট।

    আমার কলেজ। জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ। উত্তরবঙ্গ বলে একটা ধারাবাহিক লিখতাম অনেকদিন আগে, সেটা আর শেষ করা হয়ে ওঠে নি, এমনিতে খুব একটা ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট নেই আমার, কলেজের সঙ্গে, বিশেষ কোনও সুখস্মৃতিও নেই, তবু, এতদিন পরে ঐ তল্লাটে গেলে, একবার কি না দেখে আসা যায়? আমাদের কলেজ থেকে এদিকে সিকিম যতটা দূর, ওদিকে ভূটানও ঠিক ততটাই দূর, বরং আরও কাছে। কলেজে থাকাকালীন তিনবার গ্যাংটক আর তিনবার ফুন্টশোলিং গেছি। তবে তখন সে এমনিই ঘোরা ছিল, বেড়ানোর পোকা একেবারেই আমার মাথায় কিলবিল করত না তখন। জাস্ট কিছু স্মৃতি, সেগুলোকে ফিরে দেখার একটা ছোট ইচ্ছে। এইটুকুই।

    প্ল্যান দাঁড়াল এই রকমঃ

    দিন ১ – দিল্লি – গোরখপুর
    দিন ২ – গোরখপুর থেকে শিলিগুড়ি
    দিন ৩ – শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক
    দিন ৪ – গ্যাংটক থেকে লাচেন
    দিন ৫ – লাচেন থেকে গুরুদোংমার লেক এবং লাচেনে ফেরা
    দিন ৬ – লাচেন থেকে লাচুং হয়ে ইয়ুমথাং, জিরো পয়েন্ট দেখে গ্যাংটক ফেরা
    দিন ৭ – গ্যাংটক থেকে চাঙ্গু, নাথুলা হয়ে জুলুক
    দিন ৮ – জুলুক থেকে শিলিগুড়ি
    দিন ৯ – শিলিগুড়ি থেকে জয়গাঁও / ফুন্টশোলিং
    দিন ১০ – পারমিট নিয়ে পারো
    দিন ১১ – টাইগার নেস্ট – পারো
    দিন ১২ – চেলে লা পাস, থিম্পু হয়ে পারো
    দিন ১৩ – পারো – ফুন্টশোলিং – জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ
    দিন ১৪ – জলপাইগুড়িতে একদিন রেস্ট এবং বর্তমান ছাত্রদের সাথে খেজুর
    দিন ১৫ – জলপাইগুড়ি – গোরখপুর
    দিন ১৬ – গোরখপুর – দিল্লি

    এইবার এই প্ল্যান আরও কয়েক হাত ঘুরবে, আমার কাছে এক এক করে আরও কিছু এজেন্টের নাম ও ফোন নম্বর যুক্ত হবে, যারা সিকিম বা ভূটানের পারমিটের জন্য সাহায্য করে, যাতে আমাকে পারমিটের জন্য লাইন দিয়ে দিন নষ্ট না করতে হয়। বিস্তারিত বিবরণে গেলাম না সেসবের, তবে প্রত্যেকের সাথে কথা বলে বুঝলাম, এই পারমিটের এজেন্সির ব্যাপারটা অল্পবিস্তর খরচাসাপেক্ষ, তাতে যে হবেই এমন কোনও গ্যারান্টি নেই, আর বেশির ভাগ এই পারমিট ‘করে দেওয়া’ লোকজনই একটু কমবুদ্ধিসম্পন্ন। উদাহরণস্বরূপ, শিলিগুড়ির এক বাঙালিকে পেলাম, যে সিকিমের পারমিটের ব্যবস্থা করে দেবে, সে আমার প্ল্যানটাকে আরও একটু মডিফাই করে দিল, খুব প্রফেশনালি কথা বলল টলল, কিন্তু তার পরে আমি যখন আমার বাইকের পেপার ইত্যাদি স্ক্যান করে পাঠালাম – তখন সে উত্তরে তার কাছে অ্যাভেইলেবল মোটরসাইকেলের রেন্টিং চার্জ ইত্যাদি নিয়ে একটা মেল করে বসল। আবার আমাকে বোঝাতে হল যে আমি ওর কাছ থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া নিচ্ছি না, আমি নিজের মোটরসাইকেল দিল্লি থেকেই চালিয়ে আসব। তাতে সে খুবই দমে গেল এবং আমাকেও বুঝে নিতে হল যে সে কেবল নিজের বাইকের পারমিট বের করার ব্যাপারেই সিদ্ধহস্ত, অন্য বাইকের পারমিট বের করার ব্যাপারে তার বিশেষ ফাণ্ডা নেই।

    ভূটানেও বিভিন্ন কেস। এক এজেন্ট বলল, অনলাইন অ্যাপ্লাই করা যায়, করে নাও। আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আজ পর্যন্ত অনলাইন পারমিটের কোনও লিঙ্ক খুঁজে পাই নি। সেটা জানাতে সে এজেন্ট বলল, ঠিক আছে, আসার আগে বলবেন, আমি অনলাইন পারমিট বের করে দেব। এর কদিন পরেই তার ফোন একেবারেই নট রিচেবল হয়ে যায়। এর পর সন্ধান পেলাম এক ভূটানিজ এজেন্টের। তিনি, আমি একা আসছি শুনেই আর উৎসাহ দেখালেন না, কারণ ভূটানে সোলো ট্র্যাভেলারদের পারমিট দেওয়া হয় না। এদিকে, আমি শুনেছি যে যদি স্থানীয় কোনও ভূটানিজ নাগরিক লিখিত অ্যাসুওরেন্স দেয় যে ভূটানে এই ট্যুরিস্টের আসা থাকা ঘোরা সমস্ত আমার দায়িত্বে হবে, তা হলে আর কোনও সমস্যা হয় না। তা আমি বিনীতভাবে সেই ভূটানিজ এজেন্টকে বললাম, আপনি কি আমাকে এই রকমের একটা লেটার করে দিতে পারবেন? ভয় নেই, আমি নিজের মতই ঘুরব, আপনার ঘাড়ে চাপব না, জাস্ট ফর্ম্যালিটি হিসেবে পারমিট পাবার জন্য যদি চিঠিটা করে দেন – যথারীতি, তিনি আর উত্তরই দিলেন না। একেবারেই না।

    এসব যখন ঘটছে, তখন মে জুন মাস। আমি টার্গেট করছি অক্টোবরের একুশ তারিখে স্টার্ট করার। লম্বা ছুটি, শেষ মুহূর্তে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তাই জুন মাসেই ছুটি অ্যাপ্লাই করে ফেললাম, ম্যানেজারদের সাথে কথা বলে।

    ভূটান দেশে ঢোকার তিনটে রাস্তা। একটা তিব্বত / চীন দিয়ে, আর দুটো ভারত দিয়ে। ভারতের দুটোর মধ্যে একটা আসাম দিয়ে, আর অন্যটা পশ্চিমবঙ্গের জয়গাঁও দিয়ে। এই জয়গাঁও, আমি শেষ যখন ফুন্টশোলিং গেছিলাম, তখন একটা ছোটখাটো গঞ্জ মত ছিল। খবর পেলাম আমার কলেজের বন্ধু স্বরাজ, এখন জয়গাঁও থানার ওসি।

    ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের গ্র্যাজুয়েট কীভাবে পুলিশের ওসি হয়, সে সম্বন্ধে আমার একেবারেই কোনও ধারণা ছিল না, কিন্তু ফেসবুকের কল্যাণে যোগাযোগ হয়ে গেল, আর স্বরাজও বলল, চলে আয়, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে, চিন্তা করিস না।

    জুন জুলাই মাসটা গেল একটা একটা করে ডেস্টিনেশন ধরে থাকার জায়গা বুক করতে।

    আপনারা যারা আমার ‘সর্ষেদানায় ইচ্ছেডানায়’ বইটা উল্টেপাল্টে দেখেছেন বা আমার লাদাখ আর স্পিতি বেড়ানোর গপ্পো পড়েছেন, তারা সকলেই জানেন, প্রথম রাস্তায় বেরিয়ে কীভাবে লাগেজ নিয়ে আমি সারারাস্তা নাকানিচোবানি খেয়েছিলাম। উত্তাল ছড়িয়েছিলাম, তাই নিয়ে হাসাহাসি করে ভালো লেখা হয়, লোকে পড়ে আনন্দ পায়, কিন্তু দ্বিতীয়বার সেই এক্সপিরিয়েন্স করার ইচ্ছে আমার একেবারেই ছিল না। তাই ঠিক করলাম এইবারে আমার বাইকের পেছনে একটু খরচা করব। বেড়ানোর খরচা একটা পরিমাণ লাগবে, এক লপ্তে তো অত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়, তাই প্রতি মাসে একটু একটু করে সেই হাতখরচের টাকা জমাবার মত করে টাকা সরিয়ে সরিয়ে রাখছিলাম, যাতে অক্টোবর মাসে গিয়ে পরিমাণমত টাকা জমে যায়। তার বাইরে এই বাইকের সাজসজ্জা।

    প্রথমেই, লাগেজ ক্যারিয়ার। বাইকের জগতে যার নাম, লাদাখ ক্যারিয়ার। যদিও লাদাখে যাচ্ছি না এইবারে, এবং যদিও এই ক্যারিয়ারটি মূলত এনফিল্ড বুলেটেই লাগানো যায়, স্পেশালি তার জন্যই তৈরি – কিন্তু আমি থাকি দিল্লির মত একটা জায়গায়, যেখানে করোল বাগ বলে একটা অদ্ভূত মায়াবী জায়গা আছে। সেইখানে বাইক নিয়ে গিয়ে যে কোনও রকমের মডিফিকেশন করিয়ে নেওয়া যায়। তো, প্রতি মাসে একবার করে করোল বাগে গিয়ে একটা একটা করে জিনিস কিনে ফিট করিয়ে আনা শুরু করলাম।

    হেলমেটে ব্লুটুথ – যাতে গাড়ি চালানোর সময়ে ফোন এলে কথা বলতে কোনও সমস্যা না হয়। অসাধারণ জিনিস, আমি সমস্ত বাইকারকে এই ব্লুটুথ হেডসেটটা রেকো করলাম।
    বাইকের স্টক হেডলাইট – যেটা হলদে রঙের আলো দেয়, বদলে এলইডির জোরালো সাদা লাইট লাগালাম।
    হ্যান্ডেলে দুটো ফগ লাইট লাগালাম, মানে আরও জোরালো দুটো এলইডি প্যানেল।
    মোবাইল মাউন্ট। এর আগের বারে একটা কী জিনিস লাগিয়েছিলাম, মাঝরাস্তায় মোবাইল সমেত ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে মোবাইল পড়েছিল ট্রাকের সামনে। এইবারে যেটা লাগালাম, একেবারে শক্তপোক্ত জিনিস, ভাঙবার কোনও চান্সই নেই।
    স্টোব লাইট – সামনে আর পেছনে অনবরত ব্লিঙ্ক করার জন্য। হাইওয়েতে চলার সময়ে অন্যান্য গাড়ির কাছে বাইকের ভিজিবল থাকাটা জরুরি।
    বাইকের ব্যাটারি বদলালাম, প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল, স্টার্ট নিতে সমস্যা হচ্ছিল স্পিতিতে।
    রিয়ার টায়ার বদলাতে হল, পুরনো হয়ে গেছিল, ঘন ঘন পাংচার হচ্ছিল। পিরেলির নতুন টায়ার লাগালাম, কী শস্তায় পাওয়া গেল রে ভাই করোল বাগে! আর কী অসাম জিনিস।
    অ্যামাজন থেকে দুটো জিনিস কিনলাম, একটা হল পাংচার কিট – টিউবলেস টায়ার পাংচার হলে সেটা সারানো খুব সোজা।
    আরেকটা হল, টায়ার ইনফ্লেটর। হাওয়া কমে গেলে হাওয়া ভরার জন্য।
    এইটা চালাবার জন্য পাওয়ার সোর্স লাগে একটা লাইটার পয়েন্ট থেকে, আর সেটা গাড়িতে থাকে, বাইকে নয়। কিন্তু আমি কিনা দিল্লিতে থাকি, আর দিল্লিতে কিনা করোল বাগ নামে একটা অদ্ভূত মায়াবী জায়গা আছে, তাই সেটাও লেগে গেল এক উইকেন্ডে আমার বাইকে।
    অ্যামাজন থেকে আরেকটা জিনিস কিনলাম, সেটা হচ্ছে অ্যামাজন বেসিকস ব্যাকপ্যাক। এমনিতে অফিস ব্যাকপ্যাক, কিন্তু বিশাল স্টোরেজ ক্যাপাসিটি, আর খুব টেঁকসই।

    লাদাখ ক্যারিয়ারটা লাগালাম একদম শেষে, যাবার ঠিক এক সপ্তাহ আগে, দুর্গাপুজোর পরে।



    লাদাখ ক্যারিয়ার লাগানোর আরও একটা কারণ ছিল, সেটা হল গেছোদাদা। এই ট্রিপে শিলিগুড়ি থেকে গেছোদাদার আমার সাথে যোগ দেবার কথা ছিল, ফলে পেছনের সীটটা খালি রাখতে হত। এমনিতে পেছনে ভায়াট্রার স্যাডল ব্যাগ বাঁধা হয়, কিন্তু এবারে আর সেটা করার উপায় নেই, তাই লাদাখ ক্যারিয়ার। অবশ্য, যতদিনে এটা লাগিয়েছি, তার বেশ কিছুদিন আগেই, দুর্গাপুজোরও আগে গেছোদাদা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে যে সে আসতে পারছে না, তার ছুটি অ্যাপ্রুভাল নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।

    দুঃখ পাওয়াই উচিত, কিন্তু ততদিনে আমি নিজের মনকে পুরোপুরি সোলো জার্নির জন্য তৈরি করে ফেলেছি, ফলে – গেছোদাদা আমার সাথে জয়েন করতে পারছে না শুনে আমার অবস্থাটা হল খানিকটা এই রকম – ক্যাপ্টেন প্যাডলক, না না, ক্যাপ্টেন মারডক, থুড়ি, ক্যাপ্টেন হ্যাডকের মতঃ



    (গেছোদাদা এটা পড়ে মারাত্মক দূঃখ পাবে, রেগে যাবে, কিন্তু কী করি, সইত্যের পথ থেকে বিচ্যুত ইত্যাদি … সরি গেছোদাদা, তুমি সঙ্গে গেলে তো ভালো লাগতই, কিন্তু না যাওয়াতে এই পুরো ট্রিপটা একা করে আমার যে অন্য রকমের আনন্দ হয়েছে, সেটা আর কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়)

    তবে, গেছোদাদা আসছে না জানা সত্ত্বেও লাদাখ ক্যারিয়ার আমি লাগিয়েছি, এবং তার পরে পিঠে ভর্তি ব্যাগ নিয়ে বাইকে বসে বুঝতে পেরেছি, এই অবস্থায় পেছনে কাউকে বসানো একেবারে সম্ভব ছিল না।

    অন্যদের মতই সুকুমার রায়কে আমি প্রফেট মানি, তাঁর বানানো হযবরল দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে পারলে আমরা সকলেই যারপরনাই খুশি হতাম, কিন্তু আমরা থাকি বাস্তবের দুনিয়ায়, আমাদের কারুর শ্বশুরের নাম বিস্কুট নয়, আমাদের বয়েস চল্লিশের পরে কমে না, কেবল বেড়েই চলে। আর চল্লিশ পেরিয়ে গেলে আমাদের কর্পোরেট আমাদের একটু বাড়তি যত্নআত্তি করে। বিনামূল্যে ফুল বডি চেক আপ হয়। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত।

    কর্পোরেট অফিসের জন্য কর্পোরেট হাসপাতাল। এক শনিবার, আগস্ট মাসে, আমি আর সিকিনী চলে গেলাম সেখানে, সারাদিনের জন্য চেক আপ করাতে। সেখানে আলট্রাসাউন্ডের জন্য বিক্ষিপ্ত লাইন, নাম রেজিস্টার সিরিয়াল মেনটেন করেই করা হয়েছে, সকলেই ঘনঘন জল খাচ্ছেন, কিন্তু সকলের ব্লাডার তো এক সময়ে এক সিকোয়েন্সে ফুল হয় না, ফলে সেইখানটিতে এসে লাইন ভেঙে যাচ্ছে, পরের জন আগে চান্স পেয়ে যাচ্ছেন, আগের জন তখনও “প্রেসার” না আসায় করুণ মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।

    এক সময়ে আমার ডাক এল। অল্পবয়েসী সুদর্শনা ডাক্তার আমার জামা গেঞ্জি তুলে পেটে কীসব লোশন মাখিয়ে আলট্রাসাউন্ডের ছবি তুলতে লাগলেন। আমি শুয়ে শুয়ে শুনছি, বাইরে গুঞ্জন প্রবলতর হচ্ছে, বাইরের যিনি অ্যাটেনডেন্ট, তিনি আর সামলে উঠতে পারছেন না – আমার পেটে হাত বোলানো সুদর্শনা তরুণী ডাক্তার কঠিন মুখে অ্যাটেনডেন্টকে ডেকে বললেন, পেশেন্টস কো বোলো কি না চিল্লায়েঁ। ইয়ে প্রাইভেট হসপিটাল হ্যায়, ইসকো সরকারি হসপিটাল না বানায়েঁ – বোলো উনকো।

    অ্যাটেনডেন্ট বাইরে গিয়ে ঠিক এই কথাটিই বললেন – আপনারা শান্ত হয়ে অপেক্ষা করুন, সবাইকার ডাক আসবে – ‘সরকারি হাসপাতালের’ মত ‘শোর’ করবেন না।

    আমি, বেডে শুয়ে শুয়ে মাটিতে মিশে যেতে চাইলাম, সুদর্শনা ডাক্তারের চেহারায় মুহূর্তের জন্য দেখলাম কর্পোরেটের দম্ভ, অহঙ্কার। এটা প্রাইভেট হসপিটাল। সরকারি নয়। চেঁচাবেন না। কী অপরিসীম তাচ্ছিল্য। বাইরে তখন বসে আছে সিকিনী, একজন সরকারি কর্মচারি। তার দুটো বড় অপারেশন হয়েছে দিল্লির সরকারি হাসপাতালেই।

    সেই মুহূর্তে চলে আসতে পারলেই খুশি হতাম। কিন্তু পারি নি। প্রতিবাদ করতে পারি নি। খারাপ লাগে আজও সে জন্য।

    আলট্রাসাউন্ড হল, ট্রেডমিল টেস্ট হল, এক্সরে হল, চোখের দাঁতের হাড়ের সর্বাঙ্গের চেক আপ হল। পরের শনিবার রিপোর্ট নিতে গিয়ে শুনলাম – আমার দূরদৃষ্টি আর নিকটদৃষ্টি – দুটোই কমেছে। চশমা নিতে হবে। আর, আর, কিডনিতে জমেছে কুচি কুচি পাথর। খুব বেশি জল খেলে হয় তো এমনিই সেরে যাবে, নইলে – ছুরির তলায় শুতে হবে একবার।

    ফুসফুস তো ক্ষতিগ্রস্ত ছিলই, সুতরাং, সেটা নতুন কোনও খবর নয় আমার কাছে।

    রিপোর্ট দেখে টেখে প্রথম যে প্রতিক্রিয়াটা এল মনে, সেটা হল, যাঃ, তা হলে বুড়ো হয়েই গেলাম? এমনিতেও মাথার চুল পাতলা হয়ে আসছে – টাকের আভাস দেখা যাচ্ছে ব্রহ্মতালু ঘেঁষে। তাই বলে এত তাড়াতাড়ি সবকিছু?

    সম্ভবত, সেই মুহূর্তেই মনস্থির করে ফেলেছিলাম, চশমা তো নিতে হবেই, কিডনিরও যত্ন নিতে হবে, কিন্তু আমি সমস্ত করব ফিরে আসার পরে। এই আমি, এই মুহূর্তে ঠিক যেমনটি আছি, সেই অবস্থায় সিকিম আর ভূটান ঘুরে আসতে চাই, তার পরে এসে হাসপাতালের চেয়ারে বসে লালনীল লেন্স পরব। তার আগে নয়। দূরের দৃষ্টি যতই ঝাপসা হোক, ট্র্যাফিক না দেখতে পাবার মত কিছু খারাপ হয় নি এখনও। শরীরে কোনও রকমের ইমিডিয়েট মেরামতি না করে আমি এই ট্রিপটা করতে চাই।

    তাই করেছি। তাই করতে পেরেছি। এই শনিবার যাচ্ছি চোখ দেখাতে, কিছুদিনের মধ্যেই চোখে চশমা উঠবে।

    আরও একটা গল্প না লিখলে আসল গল্পে ঢুকতে পারছি না। ড্রাইভিং লাইসেন্সের গল্প।

    আমার ড্রাইভিং লাইসেন দুখানি। একটা টু হুইলারের, সেই ভুবনেশ্বরে দু হাজার এক সালে বানানো, কুড়ি বছরের ভ্যালিডিটি। দ্বিতীয়টি ফোর হুইলারের, গাজিয়াবাদে বানানো দু হাজার ছয় সালে। টু হুইলারেরটা তাও ইংরেজিতে লেখা, ফোর হুইলারেরটা আদ্যোপান্ত হিন্দিতে লেখা। মানে, মোদ্দা কথা, এই দুটি লাইসেন্সই স্মার্ট-কার্ড জমানার আগে তৈরি, বুকলেট টাইপের দেখতে। এমন কি, পুরনো দিনের মানুষ কিনা, আমার প্যান কার্ডটাও একটা ল্যাতপ্যাতে ল্যামিনেটেড চৌকো কাগজের টুকরো, আজকালকার মতন স্মার্ট কার্ড নয়। আমরা যে সব প্রি-ডিজিটাল যুগের জনতা।

    এইবারে, যাচ্ছি ভূটানে, সেখানে এই ধরণের হাতে লেখা ড্রাইভিং লাইসেন্স দিলে তারা পারমিট দেবে কিনা – সেইটা একটা চিন্তার বিষয় হতেই পারে। চিন্তাটা আমার মাথায় যখন এল, তখন অলরেডি আগস্ট মাস পড়ে গেছে। হাতে আর ঠিক দু মাস সময়। ঝটপট পড়াশোনা শুরু করলাম কীভাবে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। তো, লাইসেন্স যাঁরাই বানিয়েছেন, তাঁরাই জানেন, এটা দু ভাবে বানানো যায়, এক, নিজে ফী জমা দিয়ে, ড্রাইভিং টেস্ট দিয়ে, আর দুই, দালালকে টাকা দিয়ে।

    সময় যে হেতু খুবই কম, তাই নিজে ড্রাইভিং টেস্ট দিয়ে নতুন লাইসেন্স পাবার রিস্ক নেওয়া উচিত হবে কিনা ভাবতে ভাবতে কয়েকজন এজেন্টের সাথে কথা বললাম। এখন আমার দিল্লির পিনকোডে একটি ঠিকানা হয়েছে, ফলে লাইসেন্সটা দিল্লিতেই অ্যাপ্লাই করব। আর দিল্লিতে এখন সব কিছুই অনলাইন হয়ে গেছে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবার প্রসেস, ফী জমা দেওয়া – সমস্ত অনলাইনে করা যায়। শুধু নির্দিষ্ট দিনে আরটিও অফিসে গিয়ে টেস্টটা নিজে দিয়ে আসতে হয়। আগে এই সব আরটিও অফিসের সামনে দালালদের রমরমা ছিল, অনলাইন হয়ে যাবার ফলে গত সাত আট বছরে দালালদের ভাত মারা গেছে। ফলে রেট সাংঘাতিক উঁচু। দু চারজন এজেন্টের সাথে কথা বলে আমি চার হাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত কোটেশন পেলাম। এদিকে দিল্লি গভর্নমেন্টের সাইটে দেখছি লাগে শুধু নশো প্লাস তিনশো। বারোশো টাকা। তাতেই টু প্লাস ফোর হুইলারের লাইসেন্স একসাথে হয়ে যায়।

    একবার গাজিয়াবাদে ট্রাই করে দেখি। এখানেও তো স্মার্ট কার্ড সিস্টেম হয়ে গেছে। যদি কম নেয়। – গেলাম পাড়ার মোটর ট্রেনিং স্কুলে। সে লোকটি মহাজ্ঞানী। জিজ্ঞেস করলাম, আমার তো ভ্যালিড লাইসেন্স রয়েছে, গাজিয়াবাদেরই। আমাকে কি আবার লার্নার থেকে শুরু করতে হবে? লোকটি শুনে খুবই অবাক হয়ে বলল, লা লাইসেন্স আছে তো আবার স্মার্ট কার্ড করাচ্ছো কেন? ওটা দিয়েই চালিয়ে নাও। বললাম, ভূটান যাবো, এই এই ব্যাপার। শুনেই সে খুব উত্তেজিত হয়ে বলল, আচ্ছা আচ্ছা, ভূটান মতলব ও লাদাখ কে পাস জো গাঁও হ্যায় না? উধার জানে কে লিয়ে স্মার্ট কার্ড নেহি চাহিয়ে হোতা হ্যায়।

    মহা মুশকিল। তাকে বলতে গেলাম ওটা ফরেন কান্ট্রি, তাতে সে আরও অবাক হয়ে গেল। ফরেন কান্ট্রি মে আপ আপনি গাড়ি লে জাওগে? কিঁউ? উধার বাইক নেহি মিলতি?

    অতঃপর বাংলায় “ধোর বাল” বলে বাড়ি ফিরে অনলাইনে ড্রাইভিং টেস্টের জন্য আবেদন করে ফেললাম।

    প্রথমে লার্নার লাইসেন্স। তাতে একটা অনলাইন টেস্ট দিতে হয়, দশটা কোশ্চেন। এইবারে সেই কোশ্চেনেয়ারও দিল্লি গভর্নমেন্টের সাইটে পাওয়া যায়, প্রায় চারশো কোশ্চেন আর তার অ্যানসার সমৃদ্ধ এক চোতা। পিডিএফটা নামালাম, আর প্রথম নব্বইটা কোশ্চেন দেখে বুঝলাম সবই বেসিক রোডরুলের ওপর আর বিভিন্ন সাইনেজ বিষয়ক, আমি মোটামুটি সবই জানি।

    পাঁচই সেপ্টেম্বর সকাল সকাল পৌঁছে গেলাম আরটিও অফিসে। সেখানে ফর্ম ভরে লাইনে দাঁড়িয়ে ফটো তুলে ফর্ম জমা দিয়ে একটা কাগজের স্ট্যাম্প মারা টুকরো পেলাম। চারদিকে ভিড়ে থিকথিক করছে, মূলত বাস, ট্রাক, ট্যাক্সি আর অটো ড্রাইভার, দালালরাও ইতিউতি ঘুরছে, কিন্তু আমার দালালের দরকার নেই। আমি পরের লাইনে দাঁড়ালাম, যেখানে অনলাইন টেস্টটা হবে।

    লাইনে আমার আগে পিছে জনা তিনেক অটো ড্রাইভার। তাঁরা আমাকে “ভদ্রলোক” পেয়ে ফাণ্ডা নেওয়া শুরু করলেন – কী কোশ্চেন করবে? কম্পিউটার কী করে অন করব? ঠাণ্ডা মাথায় বোঝাবার চেষ্টা করলাম যে প্রশ্ন তো এদের ওয়েবসাইটেই রাখা আছে, আর কম্পিউটার অনই থাকবে, আপনাকে নিশ্চয়ই কেউ দেখিয়ে দেবে, তাতে তাঁদের মুখ আরও শুকিয়ে গেল। এঁরা এমন একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন, যেখানে ওয়েবসাইট, কোয়েশ্চেনেয়ার, ইংরেজিতে লেখা প্রশ্ন – এগুলো ভিনগ্রহের জিনিস। কিছুই বোঝেন না। হাতে এমনকি স্মার্টফোনও নেই। সদ্য কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দিল্লি এসেছেন রোজগারের আশায়।

    কী আর করব। লাইন ধীরে ধীরে এগোল। বারোটার সময়ে একটা ঘরে ঢুকে বসে পড়লাম একটা কম্পিউটার টার্মিনালের সামনে। হিন্দি বা ইংরেজি, যে কোনও একটা ভাষা পছন্দ করে নেওয়া যায় শুরুতে। দশটা প্রশ্ন, দশ মিনিট সময়। আমি তিন মিনিটে দশটা প্রশ্ন শেষ করে অন স্পট জেনে গেলাম দশটাই ঠিক উত্তর দিয়েছি। উঠে পড়তে যাবো, এমন সময়ে পাশের টার্মিনালে বসা কমবয়েসী ছেলেটা আমাকে খুবই করুণ আর শুকনো মুখে বলল, ভাইসাব, ইসকা আনসার কেয়া হোগা –

    আমি তাকিয়ে দেখলাম, সে হিন্দি স্ক্রিনের সামনে বোকা মুখে বসে আছে। হিন্দি আমি পড়তে পারি না তা নয়, তবে প্রশ্নগুলো এমনই শুদ্ধ হিন্দিতে লেখা যে আমি দুবার পড়েও বুঝতেই পারলাম না কী প্রশ্ন করেছে। বিনীতভাবে বললাম, ভাই, আমি হিন্দি ভালো পড়তে পারি না, সরি, বলে টুক করে বেরিয়ে এলাম।

    বাইরে রোদের তেজ যথেষ্টই। দুটো নাগাদ হাতে হাতে লার্নার লাইসেন্স পাওয়া যাবে। খিদেও পেয়েছে – কিন্তু একদম লাইসেন্স নিয়েই যাবো।

    কোলাপসিবল গেট সামলাচ্ছিলেন যে দারোয়ান, তিনি পৌনে দুটোর সময়ে বেরিয়ে এলেন হাতে একগুচ্ছ কাগজ নিয়ে, এই বারে নাম ডেকে ডেকে লাইসেন্স দেওয়া হবে। অপেক্ষারত লোকজন ঘিরে ধরল দারোয়ানবাবুকে, এবং তাতে তিনি যারপরনাই বিরক্ত হয়ে বললেন – আরে ইয়ার, কুত্তোঁ কে তরহ্‌ কিঁউ চিল্লামিল্লি কর রহে হো? মুঝে বাঁটনে দো না – সব লোগ মিলকে কুত্তোঁ জ্যায়সা ভৌঁক রহে হ্যায়।

    উপস্থিত জনতা, আগেই বলেছি প্রায় সকলেই কমার্শিয়াল গাড়ির ড্রাইভার গোত্রের, কেউ একটা প্রতিবাদও করল না। সবাইকেই লাইসেন্স পেতে হবে।

    আমাকেও তো। আমিও শুনলাম। কোনও প্রতিবাদ করলাম না। উপস্থিত জনতাকে ‘কুকুর’ বলা লোকটির হাত থেকেই এক সময়ে আমি আমার লার্নার লাইসেন্স নিলাম। ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলাম আরটিও চত্ত্বর থেকে। চারপাশে তখন ভিড় হাল্কা হয়ে গেছে। ইতিউতি ঘুরছে শুকনো কিছু মুখ, যারা অনলাইন টেস্ট পাস করতে পারে নি। লার্নার লাইসেন্স পায় নি। তাদের আবার দশদিন বাদে চেষ্টা করতে হবে।

    বাড়ি এসে শুনলাম, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেদিন তাঁর অধীনস্থ রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের বলেছেন, “ঘেউ ঘেউ করবেন না। ঘেউ ঘেউ করে কোনও লাভ হবে না”। কর্মচারিরা মহার্ঘ্যভাতার দাবিতে সরব হয়েছিলেন সেদিন।

    এক মাস বাদে পার্মানেন্ট লাইসেন্সের জন্য টেস্ট দিতে পারব। অর্থাৎ ছয়ই অক্টোবর বা তার পরে। আমি সাত তারিখ, শনিবারের জন্য সকালের স্লট বুক করলাম। আমার যাবার তারিখ বিশে অক্টোবর। তার আগে কি লাইসেন্স হাতে পাবো?

    এক মাস সময়। সমস্ত ওয়েবসাইট, ব্লগ পড়ে ফেললাম, কী কী জিজ্ঞেস করে পার্মানেন্ট টেস্টের সময়, সেগুলো জানার জন্য, বোঝার জন্য। দেখলাম, খুব শক্ত কিছু নয়। গাড়ি চালাতে জানলে, আর বেসিক রোড রুল আর সাইনেজ জানলে যে কেউ এটা পাস করতে পারে।

    আমার লাইসেন্স দুটো গাড়ির জন্যেই, একসাথে, দু চাকা আর চার চাকা। দুটো গাড়ি তো একা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। অতএব, গাড়ির জন্য একজন ড্রাইভার ভাড়া করতে হল একবেলা। ছশো টাকার কড়ারে তিনি এলেন, গাড়ি নিয়ে বাইকে বসা আমার সাথে সাথে চললেন আরটিও, সেখানে সবার প্রথমে আমার বাইকের টেস্ট নেওয়া হল। কিছুই না, খানিক দূরে দূরে দুটো ট্র্যাফিক কোন বসিয়ে বললেন, এদের চারপাশ দিয়ে ইংরেজি আট বানিয়ে ঘুরতে হবে, মাটিতে পা না ফেলে।

    করে ফেললাম। দেড়বার করার পরেই ইনস্পেক্টর বললেন, ব্যস, থামো, বাইক সাইডে করো, গাড়িতে বসো।

    বসলাম। ইনস্পেক্টর বললেন, হুই যে কালো গাড়ি দেখছো, ঐখান পর্যন্ত যাও, আর ওখান থেকে ব্যাক গিয়ার লাগিয়ে ফিরে এসো ঠিক এইখানে।

    গেলাম, এবং ফিরেও এলাম। জানলা দিয়ে গলা বাড়িয়ে বললেন, ব্যাক গিয়ারে চলবার সময়ে হ্যাজার্ড লাইট অন রাখা উচিত ছিল। সেটা রাখো নি। যাই হোক, তোমার টেস্ট হয়ে গেছে। লাইসেন্স পেয়ে যাবে বাই পোস্ট।

    সোমবার নয়ই অক্টোবর দুপুরে এসএমএস এল – তোমার লাইসেন্স স্পিড পোস্টে পাঠানো হয়েছে। এগারোই অক্টোবর আমার দিল্লির ঠিকানায় সকাল সকাল লাইসেন্স এসে গেল, চকচকে স্মার্ট কার্ড। ঠিক চার দিনের মধ্যে।

    ইতিমধ্যে প্ল্যানে আরও কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মূল কারণ, আমার লেখা বই, সর্ষেদানায়, ইচ্ছেডানায়। প্রকাশিত হবে, তো হুগলিতে কেন নয়? আর আমি সেই সময়েই যখন শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়িতেই থাকছি, অতএব একদিনের জন্য হুগলি না এসে থাকি কী করে? পশ্চিমবঙ্গে এসেও বাবা মায়ের সাথে দেখা না করেই ফিরে যাবো, এটা তাদেরও ঠিক মনঃপূত হচ্ছিল না, তাই পাকাপাকি ভাবে এই প্ল্যানটা ফাইনাল করলাম –

    দিন ১/২০ অক্টোবরঃ দিল্লি থেকে গোরখপুর – ৮০৬ কিলোমিটার
    দিন ২/২১ অক্টোবরঃ গোরখপুর থেকে শিলিগুড়ি – ৬৩৫ কিলোমিটার
    দিন ৩/২২ অক্টোবরঃ শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক – ১২০ কিলোমিটার
    দিন ৪/২৩ অক্টোবরঃ গ্যাংটকেই থাকা এবং নর্থ আর ইস্ট সিকিমের জন্য পারমিট নেওয়া (পুরো দিন লেগে যাবেই, তাই একদিন থাকা)
    দিন ৫/২৪ অক্টোবরঃ গ্যাংটক থেকে লাচেন – ১০৮ কিলোমিটার
    দিন ৬/২৫ অক্টোবরঃ লাচেন থেকে গুরুদোংমার হয়ে আবার লাচেন হয়ে লাচুং। ১৮০কিলোমিটার।
    দিন ৭/২৬ অক্টোবরঃ লাচুং থেকে ইয়ুমথাং, জিরো পয়েন্ট সেরে আবার লাচুং হয়ে গ্যাংটকে ফেরত। ২০৪ কিলোমিটার।
    দিন ৮/২৭ অক্টোবরঃ গ্যাংটক থেকে ছাঙ্গু লেক, নাথুলা পাস হয়ে নাথাং ভ্যালিতে রাত্রিযাপন – ৯০ কিলোমিটার।
    দিন ৯/২৮ অক্টোবরঃ নাথাং থেকে রোরাথাং বলে একটা জায়গায় – পশ্চিমবঙ্গ-সিকিম বর্ডার – রাত্রিযাপন – ৫০ কিলোমিটার।
    দিন ১০/২৯ অক্টোবরঃ রোরাথাং থেকে জয়গাঁও। ২১০ কিলোমিটার।
    দিন ১১/৩০ অক্টোবরঃ পারমিট নিয়ে ফুন্টশোলিং থেকে পারো। ১৬০ কিলোমিটার।
    দিন ১২/৩১ অক্টোবরঃ টাইগার্স নেস্ট ট্রেক। সারাদিন লেগে যাবে। ২৫ কিলোমিটার।
    দিন ১৩/১ নভেম্বরঃ পারো এবং থিম্পু শহর দেখা। পারলে চেলে লা পাস দেখে আসা। ১০০ কিলোমিটার।
    দিন ১৪/২ নভেম্বরঃ পারো থেকে ফুন্টশোলিং, জয়গাঁও পেরিয়ে সোজা জলপাইগুড়ি। ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে রাত কাটানো। ৩৩০ কিলোমিটার।
    দিন ১৫/৩ নভেম্বরঃ জলপাইগুড়ি থেকে হুগলি। ৫৬০ কিলোমিটার।
    দিন ১৬/৪ নভেম্বরঃ হুগলিতে আমার বইয়ের উদ্বোধন। হইহল্লা। গজল্লা।
    দিন ১৭/৫ নভেম্বরঃ হুগলি থেকে বারাণসী।
    দিন ১৮/৬ নভেম্বরঃ বারাণসী থেকে দিল্লি।

    দুই সপ্তাহের প্রোগ্রাম গিয়ে দাঁড়াল আঠেরো দিনে। এমনিতে, দুই সপ্তাহ মানে পাঁচ পাঁচ দশ দিনের ছুটি। আগে, পিছে, মাঝে তিনটে উইকেন্ডের ছ দিন জুড়লে হয় ষোল দিন – এটাকে আঠেরো করতে হলে আমাকে আগে আর পিছে দুটো দিন গুপি করতে হয়। মানে শনিবারের বদলে শুক্রবার স্টার্ট করো, আর রবিবারের বদলে সোমবার ফেরো।

    তাই হোক। বৃহস্পতিবার উনিশে অক্টোবর কালীপুজো, দিওয়ালি, আমি শুক্রবার কুড়ি তারিখে বেরোব। ফিরব ৬ই নভেম্বর, সোমবার রাতে।

    অল সেট?

    অলমোস্ট!
  • dd | 59.207.56.184 | ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০৮:১২370620
  • বাঃ, জমছে।
  • pi | 24.139.209.3 | ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০৮:১৬370631
  • হ্যাঁ, ক্ষীরের দিকে যাচ্ছে।
  • dc | 132.174.89.28 | ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০৮:২৬370642
  • লম্বা ড্রাইভের আগে চশমা না নিয়ে খুব ভালো ডিসিশান নিয়েছেন।
  • de | 69.185.236.55 | ১০ নভেম্বর ২০১৭ ১২:১৫370653
  • বাঃ, বাঃ - খুব ভালো হচ্চে -
  • অসীম | 113.217.233.148 | ১০ নভেম্বর ২০১৭ ১৬:৫৯370664
  • কিডনিতে কুচো পাথরের জন্য কুলথ্থ কলাই ভিজিয়ে জলটা তিন মাস রোজ সকালে খান, সেরে যাবে।
  • Blank | 213.132.214.84 | ১০ নভেম্বর ২০১৭ ১৮:০০370675
  • তাপ্পর
  • বানান | 195.11.167.4 | ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:৩১370686
  • *স্ট্রোবলাইট

    ডায়ালগ বোঝাতে গেলে হয় দীর্ঘমাত্রা (এন ড্যাশ, এম ড্যাশ – —, এমএস ওয়ার্ডে কন্ট্রোল মাইনাস, অল্ট, কন্ট্রোল মাইনাস, দুটো মাইনাসই নামপ্যাড মাইনাস ) দিন,

    নয়তো সিংগল-ডাবল কোটেশন মার্ক ( '', "" ) দিন। বাংলায় সাধারণত সিংগল কোটেশন মার্কই দেয়া হয়।
  • সিকি | ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:৩৩370697
  • এম এস ওয়ার্ডে লিখি নি তো, নোটপ্যাডে লিখতে হয়েছিল।
  • শঙ্খ | 113.242.197.14 | ১১ নভেম্বর ২০১৭ ১২:১৯370527
  • ধন্য সিকি, ধন্য সিকির বাইক। শুধু টইয়ের নামটা কেমঙ্গ যেন চেতন ভগৎ মার্কা ;p
  • abcd | 113.42.175.118 | ১১ নভেম্বর ২০১৭ ১৩:৫৯370538
  • অপেক্ষায় আছি পরের কিস্তির জন্য
  • সিকি | ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ২৩:১৩370549
  • আপনারা রান্না করতে ভালোবাসেন তো? এটা তো মানেন যে শুধু রান্নার প্রসেসটা ধরলে সেটা খুব লম্বা সময় ধরে চলে না, ঝটপটই হয়ে যায়। আসল সময়টা লাগে রান্নার জোগাড়যন্ত্র করতে। এই মশলা, সেই সবজি আনো রে, ছুরি বঁটি বাটি হাতা, হাঁড়ি না প্রেসার কুকার, সে কত ব্যাখ্যান। দারচিনি আছে তো ছোট এলাচ নেই, জাফরান আনতে বলেছিলেম, ব্যাটা একদম ভুলে মেরে দিয়েছে – বিরিয়ানির চাল চড়াবার পরে সে কথা মনে পড়েছে, মানে শুরুর দিকে সে বিভিন্ন রকমের গাওনা চলে। কিন্তু জিনিসপত্র একবার জায়গামত এসে গেলে রান্নাটা করতে লাগে খুব বেশি হলে আধঘণ্টা বা চল্লিশ মিনিট।

    বেড়াবার গল্পটাও এক রকমের। শুধু ডেস্টিনেশন সেট করা আর তাতে তারিখ বসানোর কাজটুকুতেই যদি শেষ হত, তা হলে তো কোনও কথাই ছিল না। … ও হ্যাঁ, হোটেল বুকিং। সে পর্বও চুকিয়ে ফেলেছি। নিজের ক্যাপায় ড্রাইভিং টেস্ট দিয়ে চকচকে স্মার্ট কার্ড পেয়ে গেছি। গাড়িতে যা যা গয়নাগাঁটি লাগানোর তা-ও লাগানো শেষ। আর কী বাকি থাকে?

    থাকে রে দাদা, থাকে। খুব সামান্য কিছু জিনিস, খিচুড়িতে নুন যতটা সামান্য, অথচ যতটা ভাইটাল, সেই রকম কিছু জিনিসে ফাঁক রয়ে যায়। এই যেমন ধরুন, প্রথম দিনের যাত্রা। যাবো দিল্লি থেকে গোরখপুর। তো, যাবার রাস্তা কী? না, দিল্লি – আগ্রা – লখনউ – রায়বেরিলি – বারাবাঁকি – ফৈজাবাদ – গোরখপুর। এখন, দিল্লি থেকে আগ্রার জন্য একটা চমৎকার এক্সপ্রেসওয়ে আছেন, আপনারা সবাই জানেন, কেউ তাকে বলে তাজ এক্সপ্রেসওয়ে, কেউ বলে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে। ইদিকে, গদি হারানোর ঠিক আগে আগে অখিলেশ যাদবও একটা চমৎকার কাজ করে দিয়ে গেছেন, সেটা হচ্ছে, আগ্রা থেকে লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে। তিনশো দুই কিলোমিটার লম্বা এই এক্সপ্রেসওয়ে এই মুহূর্তে দেশের দীর্ঘতম এক্সপ্রেসওয়ে। রাস্তা তৈরি হয়ে গেছে, কেবল বাকি কাজকর্ম এখনও শেষ হয় নি – যেমন, টোল গেট বসে নি এখনও, ফলে এই লম্বা রাস্তা যাওয়া আসা করা যাচ্ছে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়। এটা যেমন একটা ভালো ব্যাপার, তেমনি এই পুরো রাস্তায় একটাও পেট্রল পাম্প নেই, একটাও খাবার জায়গা নেই, একটাও রিফ্রেশমেন্টের জায়গা নেই। মানে, দিল্লি থেকে লখনউ – পুরো পাঁচশো কুড়ি কিলোমিটার একেবারে নন-স্টপ। যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে অবশ্য সবই আছে, টোল, রিফ্রেশমেন্ট, পেট্রল পাম্প – কিন্তু শেষ পেট্রল পাম্প আছে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হবারও সত্তর কিলোমিটার আগে। মানে সেখানে তেল ভরলেও প্রথমে সত্তর কিলোমিটার, তার পরে তিনশো দুই কিলোমিটার, মোট তিনশো বাহাত্তর কিলোমিটার চলতে হবে একটানা। পেট্রল ক্যারি করতেই হবে, প্রথম দিনের জন্যেই। এমনকি এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হবার কত পরে প্রথম পেট্রল পাম্প পাবো – তাও তো জানি না। সুতরাং, পেট্রল ক্যারি করতে হবে।

    আরে, সে তো করতেই হবে। বাইকে ক্যারিয়ার লাগিয়েছি তো সেই জন্যেই। কিন্তু সেই ক্যারিয়ারে পেট্রল ক্যান হোল্ড করার জন্য যে চৌকো চৌকো দুটো খুপরি, তাতে তো আমার হরিদ্বার থেকে কেনা প্লাস্টিকের জেরিক্যান ঢুকছে না – বিশাল বড়। দশ দশ লিটারের এক একটা ক্যান। তা হলে কী করা যায়?

    এই একটা জিনিস বাজারে খুবই আকাল। দিল্লির মত জায়গাতেও পেট্রল জেরিক্যান খুঁজতে গেলেই ঐ হরিদ্বার মার্কা প্লাস্টিক জেরিক্যান পাওয়া যায়। এর বাইরে মায়াপুরী বলে একটা এলাকা আছে দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের কাছে, সেখানে শুনেছি আর্মির ব্যবহৃত বিভিন্ন সাইজের প্লাস্টিক আর মেটাল ক্যান পাওয়া যায় – তার কোনওটা আমার ক্যারিয়ারের খোপে ফিট করে গেলেও যেতে পারে।

    যাওয়া যাক তবে মায়াপুরী। একদিন সময় নিয়ে গেলাম, উত্তমনগর থেকে মায়াপুরী হয়ে দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত চষে ফেললাম, কোথাও কোনও জেরিক্যানের দোকানের সন্ধান পেলাম না, মেন রাস্তাতেও নয়, গলিঘুঁজির ভেতরেও না। … তবে যে লোকে বলে মায়াপুরীতে নাকি পাওয়া যায়?

    হতোদ্যম হয়ে বাড়ি ফিরে গুগলের সামনে বসলাম আবার। কিছু দোকানের খবর পেলাম যারা পেট্রল জেরিক্যান বেচে, তবে পাইকিরি বেচে – খুচরো নয়। তিনশো টাকা থেকে সাতশো টাকা পার পিস। ঠিকানা দেখলাম পাহাড়গঞ্জ, করোল বাগ। ফোন নম্বর বের করে ফোন করতে গেলাম, ফোন গিয়ে লাগল ইন্ডিয়ামার্টের কাস্টমার কেয়ারে। এইবারে সেখানে এক গর্দভ বসে আছে, কে জানে উত্তরপ্রদেশের কোন গ্রাম থেকে এসেছে – এদিকে তাকে ইংরেজি বলতেই হবে, আমি হিন্দি বললেও সে ইংরেজিতেই দাবিদাওয়া পেশ করছে, আর সে কী মারাত্মক ইংরেজি – তাকে আমি টানা কুড়ি মিনিট ধরে কিছুতেই বোঝাতে পারলাম না যে আমার কোনও ইন্ডাস্ট্রি নেই, আমি নেহাতই এক পাপা (মানে পাতি পাবলিক), আমার শুধুমাত্র দুটোই জেরিক্যান চাই – সাইজ বলতে পারছি না, আমি মোটরসাইকেল নিয়ে দোকানের সামনে একটিবারের জন্য দাঁড়াতে চাই, যে সাইজ ফিট করবে, ঠিক সেই সাইজের জেরিক্যান দুখানি নিয়ে আমি ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে চাই। সে পাবলিক বুঝতেই পারে না – খালি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে, স্যার ইউ ওয়ান্ট টু-পীস, মেটাল অর ফাইবার, হাউ ফ্রিকোয়েন্টলি ডি ইউ ওয়ান্ট টু প্লেস ইওর অর্ডার স্যার –

    এক সময় ক্লান্ত হয়ে ফোন রাখতেই হল। তখন আমি অফিসে, একটু পরেই কল শুরু হবে। ফোনটা পকেটে রেখে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দিলাম, একটু হাল্কা হয়ে এসে কল জয়েন করব।

    ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই আমার পা থমকে গেল। … আমি কী দেখছি? আমার চোখের ঠিক সামনে, ওয়াশরুমের সাইডে যে একটা ক্যাবিনেট বানানো রয়েছে – যেখানে সাধারণত পরিষ্কার করার জিনিসপত্র রাখা থাকে, অফিসের সুইপাররা সেখান থেকে ঝাঁটা ন্যাতা মপার ইত্যাদি নিয়ে সর্বসময় মেঝে মুছছে, সেই ক্যাবিনেটের ঠিক সামনেই … ওটা কী পড়ে রয়েছে?



    একটা খালি প্লাস্টিকের ক্যান। সাইজটা, অন্তত চোখের আন্দাজে যা লাগছে, একেবারে খাপে খাপ! মানে, আমার মোটরসাইকেলের লাগেজ ক্যারিয়ারে যে খোপ বানানো রয়েছে, ঠিক সেই রকমেরই সাইজের লাগছে তো! এদিক ওদিক তাকালাম – একটু দূরেই একজন সুইপার এগিয়ে আসছে, তাকেই গিয়ে ধরলাম। ভাই, এটা কীসের ক্যান?

    সে বলল – এটা লিকুইড সোপ, প্রতিটা ওয়াশরুমে ডিসপেন্সারের মধ্যে যে জিনিসটা ঢালা হয়, তার পাঁচ লিটারের কন্টেনার। বিশাল বড় অফিস, তার প্রত্যেক তলায় দুটো করে বড় বড় ওয়াশরুম, দুটো লেডিস দুটো জেন্টস, ফলে এ রকম প্রচুর ক্যান প্রতিদিনই আসে।

    আর সাবান শেষ হয়ে গেলে কী করো?

    কী আর করব, ফেলে দিই।

    ক্যানটা হাতে নিয়ে দেখলাম, ভেতরে সাবান আর নেই, সদ্য শেষ হয়েছে। রীতিমত শক্তপোক্ত প্লাস্টিক, সহজে ঘা তো খাবেই না, স্ক্র্যাচও পড়বে না এমন শক্ত। … আমি এই ক্যানটা নিতে পারি?

    নিন না – সুইপার ছেলেটা একগাল হাসল, এ তো শেষই হয়ে গেছে।

    কথা না বাড়িয়ে সাথে সাথে জিনিসটা বগলদাবা করে প্রথমে নিজের সীটে ফিরলাম। কল ছিল, সেটা শেষ হতে হতে চল্লিশ মিনিট, সাথে সাথে একদম স্প্রিংয়ের মত আবার ছিটকে উঠলাম সীট ছেড়ে, সোজা নিচে পার্কিং লটে। … হ্যাঁ, এই ক্যানটা সম্ভবত এই ক্যারিয়ারের জন্যেই বানানো হয়েছিল, একদম খাপে খাপে ঢুকে গেল, রীতিমত টাইট, এখন বাইক উলটে পড়ুক, ছিটকে পড়ুক, হোল্ডার থেকে ক্যান বেরোবে না। মুখের ঢাকনাটাও রীতিমত টাইট, পেট্রল বেরোবার জাস্ট কোনও জায়গাই নেই।

    আবার ওপরে উঠে এলাম, সুইপার ছেলেটাকে আবার পাকড়ালাম – ভাই, আমার আরেকটা এই রকমের ক্যান দরকার। শেষ হলেই আমাকে একটু এনে দেবে একখানা?

    সাতশো টাকা পার পিস হিসেবে যে জিনিস বিক্রি হয় পাহাড়গঞ্জের ফ্যাক্টরিতে, সেই জিনিস আমি দু দুখানা বিনা পয়সায় বগলদাবা করে সেদিন সন্ধ্যেয় অফিস থেকে ফিরলাম। কে কে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেছিল, আমি সে সব ফিরেও দেখি নি – এ এখন আমার প্রাইজড পজেশন, আমার লাইফলাইন। পাঁচ-পাঁচ দশ লিটার পেট্রলের সংস্থান।

    দিওয়ালি তখন আর ঠিক তিনদিন বাকি। আর আমার যাওয়া, চতুর্থ দিন ভোরে।

    ইতিমধ্যে টুকিটাকি কেনাকাটাযেটুকু করার, ব্যাগপত্র যা গোছাবার, সবই করে নিয়েছি। এইবারে আমি সম্পূর্ণভাবে তৈরি। বিসিএমট্যুরিং, আর হোয়াটস্যাপ ফেসবুকের কিছু বাইকার্স গ্রুপের দিকে নজর রাখছি, যদি পার্টনার জুটে যায়। দু একজনের সাথে কথাও হল, কিন্তু তাদের প্ল্যান আলাদা, আমার আলাদা। যা বুঝছি, একাই যেতে হবে। এটুকু জানি – গ্যাংটকে বা ফুন্টশোলিং পৌঁছলে অন্য বাইকার ঠিক জুটেই যাবে, সেখানে টিম আপ করে নিলেই হবে। এমনিতেও গেছোদাদার সাথে দেখা হবার কথা ছিল শিলিগুড়ি গিয়ে। গ্যাংটক তো তার একদিন পরেই পৌঁছচ্ছি। রাস্তা ডাকছে। এখন বাতাস উঠুক, তুফান ছুটুক, ফিরব না গো আর।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

    ২০শে অক্টোবর, প্রথম দিন
    ================

    অ্যালার্ম বাজার সাথে সাথে উঠে পড়েছি। সকাল চারটে। আগের দিন দিওয়ালি তো ছিলই, আমার শ্যালিকার জন্মদিনও ছিল, তাই খাওয়াটা একটু বেশি মাত্রাতেই হয়েছে। বেহরুজের বিরিয়ানি, আর কী কী সব যেন। হাল্কা একটা ভুঁড়ি বানিয়ে শুতে গেছিলাম আগের রাত্রে। এনজিটি আর সুপ্রিম কোর্টের ব্যানের প্রভাব এ বারে ভালো মতনই পড়েছে। অন্যান্যবারের মত এবার দিওয়ালিতে বোম ফেটেছে বাজি পুড়েছে ঠিকই, কিন্তু তার পরিমাণ অনেক, অনেক কম। আওয়াজ প্রায় নেই, বাইরে সালফার আর বারুদের কটু গন্ধ নেই, ছ ঘণ্টার সলিড ঘুম দিয়ে আমি তৈরি।

    তৈরি হয়ে সাড়ে চারটের মধ্যে বেরোলাম। ব্যাগ হয়েছে তিনটে, প্লাস স্লিপিং ব্যাগ, ও আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস মিলিয়ে লাগেজ হয়েছে বেএশ খানিকটা। তার সাথে আছে দু ক্যান পেট্রল। সবচেয়ে দামী। প্রথম পাঁচশো কুড়ি কিলোমিটার আশা করি নির্বিঘ্নে পেরিয়ে যেতে পারব, যদি বড় কোনও অঘটন না ঘটে।

    বাঁধাছাঁদা সেরে, ঠিক পাঁচটা পঁচিশে স্টার্ট দিলাম বাইকে। নিমেষের মধ্যে গাজিপুর, ময়ূর বিহার পেরিয়ে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ফেললাম – সূর্য তখনও ওঠে নি। বাতাস পরিষ্কার, নির্মল, আগের দিনের দিওয়ালির কোনও রেশ তখন আর নেই, নাকে পোড়া গন্ধ লাগছে না, চোখ জ্বলছে না। ফাঁকা হাইওয়ে, স্পিড তুললাম।

    গ্রেটার নয়ডাতে এসে সূর্য উঠতে দেখলাম।





    খুব তাড়াহুড়ো করে চালাবো না, আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, আর দরকার না হলে দাঁড়াবো না। এমনিতেই যতক্ষণ চালাই, আমার খিদে, বায়ো ব্রেক প্রায় কিছুই দরকার হয় না। হুশহাশ করে পেরিয়ে গেলাম সত্তর কিলোমিটার, যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথম টোল প্লাজা। এই রাস্তায় টু হুইলারেরও টোল লাগে, দুশো পাঁচ টাকা।







    প্রায় একশো কিলোমিটার চলার পরে একবার দাঁড়ালাম। বাইকের পেছনে ক্যারিয়ারে বাঁধা সমস্ত লাগেজ একবার ভালো করে চেক করে নিলাম। না, এক চুলও হেলে নি, যেমনটি বেঁধেছি, ঠিক তেমনটিই বাঁধা রয়েছে। দেখতে দেখতে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে পেরিয়ে এলাম – দুশো কুড়ি কিলোমিটার। কিন্তু আশঙ্কা যেটা করেছিলাম, সেটাই হল। আমি ভেবেছিলাম, এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হলে সেটা এমনি হাইওয়েতে পড়বে, সেইটা দিয়ে খানিক যাবার পরে নতুন করে আগ্রা লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হবে। এখন দুটো এক্সপ্রেসওয়ের মাঝে পেট্রল পাম্প পাবো না বলে আশঙ্কা করেছিলাম, কিন্তু অখিলেশ যাদব কী করেছে গুরু! যমুনার সাথে জুড়ে দিয়েছে লখনউ এক্সপ্রেসওয়েকে! আর সে কী মোহময় রাস্তার শুরু! এক তো যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে আদ্যোপান্ত কংক্রিটের রাস্তা – হাইস্পিডে চললে টায়ার গরম হয়ে যায় বেশি ঘর্ষণে, টায়ারের ক্ষতিও হয়, কিন্তু লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে পুরোপুরি টারড্‌, অ্যাসফল্টের রাস্তা। আর সে রীতিমত হাই কোয়ালিটির রাস্তা, অ্যাসফল্ডের মধ্যে মনে হচ্ছে রূপো বা অভ্রের কুচি মেশানো আছে, মসৃণ রাস্তার গা থেকে ঠিকরে উঠে ঝিকমিকোচ্ছে সকাল নটার রোদ্দুর। প্রতি একশো মিটারে একটা করে ছোট বোর্ড – তাতে ১০০, ২০০, ৩০০ এই রকম লেখা, আর প্রতি কিলোমিটারে একটা বড় বোর্ড, তাতে লেখা, কত কিলোমিটার বাকি আছে। তিনশো দুই থেকে শুরু।





    উড়িয়ে দিলাম গাড়ি। অবশ্যই আশি থেকে নব্বইয়ের মধ্যে স্পিড। তার বাইরে আমি তুলিই না। কিন্তু এক সময়ে দেখলাম আমার বাইক ছুটছে একশো চার কিলোমিটারের স্পিডে। মিনিট চারেক ছুটতে দিলাম, তার পরে আবার স্পিড কমিয়ে আনলাম নব্বইতে।

    প্রায় একশো তিরিশ কিলোমিটার যাবার পর মনে হল বাইকের তেল শেষ হয়ে আসছে। বাড়ি থেকে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার চলে এসেছি ততক্ষণে। পিঠও তখন বেশ টনটনাচ্ছে। দীর্ঘদিনের অনভ্যেস। অতএব, বাইক সাইড করলাম। প্রায় সাড়ে দশটা বাজে, খিদে পেয়েছে। এই রাস্তায় খাবার কিচ্ছু প্রভিশন নেই – সেটা জেনেই আমি বাড়ি থেকে হাল্কা খাবার নিয়ে এসেছি। সিকিনী এক হরলিকসের কৌটো ভর্তি চিড়েবাদামভাজা বানিয়ে দিয়েছে, কৌটোটা রয়েছে পিঠের ব্যাগে। খুলে কয়েকমুঠো ঐ খেয়ে ঢকঢক করে জল। খিদে মরল। এবার বাইককে খেতে দিতে হয়।

    বানজি কর্ড খুলে একটা ক্যান বের করলাম। পাঁচ লিটারে বাকি এক্সপ্রেসওয়েটা কভার করে ফেলতে পারব। বাকি আছে আর একশো সত্তর কিলোমিটার। তার পরে দরকার হলে, পেট্রল পাম্প কাছাকাছি না পেলে আরেক ক্যান তেল ঢেলে নেওয়া যাবে।

    ঠিক সাড়ে সাত ঘণ্টায় শেষ করলাম পরপর দুটো এক্সপ্রেসওয়ে। বেলা একটায় লখনউ ঢুকলাম যখন, তখন বাইকের তেল আবার প্রায় শেষ – কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হবার ঠিক মুখেই দেখলাম একটা পেট্রল পাম্প রয়েছে। সাথে সাথে সেখানে ঢুকে বাইকের ট্যাঙ্ক আর খালি ক্যান শেষ অবধি ভরলাম। এইবার নিজের ট্যাঙ্ক ভরতে হবে। খিদে পেয়েছে, এবং জায়গাটার নাম লখনউ।

    কিন্তু খাবো বললেই, একা বাইকারের পক্ষে খাওয়া সম্ভব হয় না। এমন জায়গা দেখতে হয়, যেখানে খাবার জায়গা থেকে বাইক দেখতে পাওয়া যায়, কারণ সমস্ত লাগেজ বাঁধা রয়েছে বাইকে। চোখের আড়াল করা সম্ভব নয়। এবং, এমন জায়গা দেখতে হয়, যেখানে লোকজনের ভিড় কম। জনবসতির মধ্যে অন্য জায়গার নাম্বারওলা গাড়ি, তাতে কিছু লাগেজ বাঁধা, কয়েক রকমের লাইট ইনস্টল করা, মোবাইল মাউন্ট বসানো – এসব দেখলেই স্বাভাবিকভাবে ভিড় জমে কৌতূহলী মানুষজনের। একলা বেরিয়ে অচেনা জায়গায় অপ্রত্যাশিত লোকজনের ভিড় আমি এক্কেবারে চাই না। তাই, এগিয়ে চললাম, যতক্ষণ না একটা ফাঁকা জায়গায় ধাবা টাইপের কিছু পাই।

    হাইওয়ে গেছে লখনউ শহরের বাইরে বাইরে দিয়ে, ফলে শহর কিছুই দেখা হয় নি, শুধু এটুকু বুঝলাম – পুরো শহর জুড়ে সমাজবাদী পার্টির রাজত্ব। জায়গায় জায়গায় অখিলেশ মুলায়ম ইত্যাদিদের বিশাল বিশাল পোস্টার ব্যানার, আদিত্যনাথ কোথাও নেই, বিজেপিও নেই। – সে না থাক, যাচ্ছি তো আরও ভয়ঙ্কর জায়গা দিয়ে – অযোধ্যা, যেখানে হিন্দুত্বের চাষ হয়, যাবো তো গোরখপুর, যেখানে ঐ নোংরা লোকটার বাসস্থান, কে জানে কী অভিজ্ঞতা হবে। একটু নার্ভাস লাগছিল ঠিকই। কাগজে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ঘটনার কথা পড়ি টড়ি, জোর করে গাড়ি আটকে সওয়ারিকে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা – এসব প্রচুর ঘটে এই তল্লাটে।

    লখনউ শহর শেষ হয়ে গেল, উপযুক্ত খাবার জায়গা পেলাম না। রায়বেরিলি এল একটু পরেই। রায়বেরিলির পাশ দিয়ে আরও শ খানেক কিলোমিটার এগিয়ে একটা জায়গাতে এলাম, যে জায়গার নাম দেখেই আমার সেই সুমহান ব্যক্তিত্বের মুখটি মনে পড়ে গেল, আমাদের জাতীয় ফেরিওয়ালা, জাতীয় কৃষক, মহামান্য শ্রীলশ্রীযুক্ত অমিতাভ বচ্চন। জায়গাটির নাম – বারাবাঁকি। কৃষকটির খেতিবাড়ি এই এলাকাতেই।

    তো, সেই বারাবাঁকিতে এসে একটা ধাবা পেলাম, উপযুক্ত। বেশি লোক নেই, দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে, আর একদম খাবার জায়গার পাশেই গাড়ি রাখার অঢেল জায়গা।

    উঠোন চত্ত্বরে টেবিল চেয়ার পাতা, কিছু লোক খাচ্ছে, আমি বসে আছি তো বসেই আছি, সোয়া দুটো বাজে, কেউ আসেও না, জিজ্ঞেস করেও না। হাত তুলে একজনকে ডাকলাম, নিতান্তই গ্রাম্য দেহাতি লোকজন, কেমন যেন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে। সে এলও না, একবার কিচেনের ভেতর ঢুকে, খানিক বাদে বেরিয়ে এল হাতে একতাড়া রুটি নিয়ে, একে তাকে দিতে লাগল।

    দশ মিনিট বসার পরে ধৈর্যভঙ্গ হল, উঠে গিয়ে কিচেনে হাঁক মারলাম, কী ভাই, ডাকলেও আসো না, সমস্যাটা কী?

    তখন একজন বুড়ো মতন লোক খুব ইনিয়ে বিনিয়ে ন্যাড়া স্টাইলে বলতে শুরু করল, হ্যাঁ ভাই, রাগ করবেন না ভাই, কাল অবধি দিওয়ালির খোঁয়াড়ি চলেচে কিনা ভাই, তাই আমাদের কাজের লোক সবাই আসে নি, তাই একটু দেরি হচ্চে। আমরা এক্ষুনি আপনাকে খাবার দিচ্ছি।

    আরও দশ মিনিট বাদে খাবার পেলাম। খিদে জম্পেশ পেয়েছিল, তাই ভ্যাজই খেয়ে নিলাম। রুটিগুলো শক্ত হলেও গোবি-মটর, অর্থাৎ কিনা ফুলকপি আর মটরের তরকারিটা বেশ উমদা ছিল। খেয়েদেয়ে ইয়া একটা ঢেঁকুর তুলে যখন আবার বাইকে স্টার্ট দিলাম, তখন সওয়া তিনটে বেজে গেছে।

    মাত্রই কয়েক কিলোমিটার এগিয়েছি, হঠাৎ কড়াং করে একটা আওয়াজ, একেবারে আমার বাঁ হাতের সামনে থেকে। কী হল, কী গেল? ঝট করে তাকিয়ে নিলাম, না, মাউন্টে মোবাইলটা দিব্যি রয়েছে, কেবল বাঁ হাতে গোঁত্তা মারছে আমার বাইকের বাঁদিকের হ্যান্ডেলে লাগানো ফগলাইটটা। রাস্তা খুব সুবিধের ছিল না, আগাগোড়া কী রকম একটা অদ্ভূত টাইপের খাঁজখাটা কংক্রিটের হাইওয়ে, গাড়ি অল্প অল্প ঝাঁকুনি খেতে খেতেই যাচ্ছিল, কিন্তু তাই বলে শক্ত করে বাঁধা অমন তাগড়া ফগলাইটটা ভেঙে যাবে?

    বাইক থামালাম। ভালো করে ঝুলন্ত ফগলাইটটা হাতে নিয়ে দেখলাম – হ্যাঁ, ঝুলন্ত তো বটেই, তার তো খোলে নি, তার ভেতরেই লাগানো আছে। খুলে গেছে কেবল হোল্ডারে যে নাট-স্ক্রু দিয়ে লাগানো ছিল, সেইটা। নাট স্ক্রু-ও খুলে বেরিয়ে যায় নি, তারাও লুজ হয়ে ঝুলছে হোল্ডারের খাঁজে। কী করে এত শক্ত করে লাগানো জিনিস খুলে গেল কে জানে – নাট-স্ক্রু সাবধানে খাঁজ থেকে বের করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম – কোনও রিপেয়ারিং শপ পেলে লাগিয়ে নিতে হবে।

    কোমর ধরে গেছিল প্রচণ্ড, বোরিং রাস্তা চূড়ান্ত, আর এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হবার পর থেকেই টিপিকাল উত্তরভারতীয় ট্র্যাফিক শুরু হয়ে গেছে, উল্টোদিক থেকে যখন তখন এসে পড়ছে ট্রাক্টর, সাইকেল, মোটরসাইকেল, কুকুর, শুওর – এমনকি হাঁসমুরগিও। দিনের বেলা তাও একরকম, রাতের বেলা অন্য ঝামেলা শুরু হয়, হাই বীমের আলো। উল্টোদিক থেকে হাই বীমে আলো জ্বালিয়ে আসে, বারবার সিগন্যাল দিলেও ডিপার ইউজ করে না – মানে সে এক ক্যাডাভ্যারাস ব্যাপার হয়। উত্তরপ্রদেশ আর বিহারের প্রায় সমস্ত হাইওয়ের এই একই হাল।

    যত এগোচ্ছি, বুকের মধ্যে একটা গুড়গুড়ে ব্যাপার হচ্ছিল, কারণ আর একটু পরেই এসে যাবে অযোধ্যা। ফৈজাবাদ। জায়গাটার নাম শুনলেই আমার অনেক অনেক পুরনো, পঁচিশ বছর আগেকার এক ডিসেম্বর মাসের কথা মনে পড়ে যায়। … তবে সাইনেজ ইত্যাদি দেখে মনে হল অযোধ্যা শহরটা বাঁদিকে অনেকটা ভেতর দিকে, এই হাইওয়েটা শহরের বাইরে বাইরে দিয়ে বেরিয়ে গেছে একদম সোজা।

    নির্বিঘ্নেই পেরিয়ে গেলাম অযোধ্যা। গোরখপুর যখন আর পঞ্চাশ কিলোমিটার বাকি, তখন সন্ধ্যে হল। রাস্তা এখান থেকে ডাইভার্ট হয়ে ঢুকে গেছে গোরখপুরের মধ্যে। ঢুকতে গিয়ে প্রথম বুঝতে পারলাম হোটেল যেটা বুক করেছি, সেটা শহরের একদম সেন্টারে, বাইরে হাইওয়ের আশেপাশেই হোটেল বুক করে নিলে হত, শহরে না ঢোকাই ভালো ছিল। অনেকটা যাবার পর একটু একটু করে রাস্তা খারাপ হতে শুরু করল, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ল উন্মাদের মত ট্র্যাফিক এবং ভাঙা রাস্তাঘাট। সে কী গর্ত রে ভাই, এক একটাতে চাকা পড়ছে আর লাগেজভর্তি বাইক পুউরো লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। তার মধ্যে সেই হাঁ-করা জনতার ঢল আশেপাশে, খুবই, মানে খুবই অস্বস্তিকর।

    জিপিএস অন করাই ছিল, কোনও ভুল রাস্তায় না ঢুকে সরাসরি আমাকে হোটেলের সামনে পৌঁছে দিল তখন বাজে রাত পৌনে আটটা। গোরখপুরের মেডিকেল কলেজ, তার পাশেই পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র, তার তিনতলায় হোটেল। বুক করাই ছিল। সুবিশাল ফাঁকা বেসমেন্টে বাইক পার্ক করে বানজি কর্ড ফর্ড খুলে লাগেজ নামানো, তার পরে সেগুলোকে ওপরে নিয়ে যাওয়াতে লেগে গেল প্রায় আরও আধ ঘণ্টা। এর পরে প্রতিটা দিনই এই সময়টা আমাকে হিসেব করেই চলতে হবে – লাগেজ বাঁধতে আধঘণ্টা, খুলতেও প্রায় তাই।

    হা-ক্লান্ত, পিঠে হাতে টিমটিমে ব্যথা, সেই অবস্থায় হেঁইয়ো হেঁইয়ো করে ব্যাগপত্র নিয়ে তিনতলায় উঠলাম। রিসেপশনের ছেলেটি আমাকে খুব নিরীহ মুখ করে বলল, একটা ঘর রেখেছি আপনার জন্য – কিন্তু তার আয়নাটা ভাঙা। আপনি কি সেখানে থাকবেন? যদি না চান, তা হলে অন্য ঘর দিচ্ছি।

    আমি একবার হাঁ করে তাকিয়ে দেখলাম ছেলেটাকে। টিপিকাল ব্লান্ট ফেস। মানে, আমি এতদিন আগে বুক করেছি, যদি ভাঙা আয়না থেকেই থাকে সেখানে, আর যদি তার পরেও তোর কাছে অন্য ঘর থেকে থাকে, তা হলে এত কথার দরকার কী, আমাকে অন্য একটা ঘর দিলেই তো মিটে যায়, এত এক্সপ্ল্যানেশনের দরকারই হত না! আমি তো আর ভাঙা আয়না পছন্দ করে রুম বুক করি নি! কিন্তু তখন এতই টায়ার্ড, আর কথায় যাবার ইচ্ছে ছিল না। গলা শুকিয়ে কাঠ, বোতলে জল শেষ, কোনওরকমে বললাম – যা ইচ্ছে তাই দাও। আমি এখানে ঘুমোতে এসেছি। শুধু দ্যাখো বাথরুমে গরম জল যেন পাওয়া যায়। চান করতে হবে।

    সেই ভাঙা আয়নাই পেলাম। অবিশ্যি বাথরুমের ভেতর আরেকটা আয়না ছিল, চান করে চুল আঁচড়ানোর কাজটা মিটে গেছিল তাতেই। গরম জলে চান করে গায়ের ব্যথা অনেকটাই কমল। চাউমিন অর্ডার করেছিলাম, তাই খেয়ে পৌনে দশটার মধ্যে নরম বিছানায় ধপাস, এবং ঘুম। ঘরের এসিটা দুর্দান্ত কাজ করছিল।

    প্রথম দিনের মেগা দৌড় খতম, আটশো তিন কিলোমিটার। কাল সাতশো এবং বঙ্গে আগমন।
  • dd | 59.207.61.170 | ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ২৩:৩০370560
  • বা বা বা । খাসা চলছে।

    চলুক চলুক
  • rabaahuta | 132.172.109.51 | ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ২৩:৫৩370571
  • দারুন, পড়ছি
  • Du | 182.56.6.80 | ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০৪370582
  • উড়ছে। কিন্তু সিকিনী টাকে নীনাদি স্টাইলে সিকিয়া করে দিলে হয়্না?
  • সিকি | ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ২২:১৩370593
  • নাঃ। সিকিনীই ঠিক হ্যায়।

    আচ্ছা, পরের পর্ব আসতে একটু সময় লাগবে। অন্যত্র পুরো লেখাটা মানে পুরো ট্র্যাভেলগটা ছোট করে লিখে পাঠাতে হবে, সেটা সেরে অবার গুরুর পাঠকদের জন্য বড় লেখা নিয়ে ফিরে আসব। হপ্তাখানেক সময় লাগবে।
  • abcd | 113.42.175.52 | ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ১৯:৫৭370604
  • @সিকি, বুড়ো গোরুগুলো শুনছিলাম ইউ পি-এর এন এইচ গুলোতে চলে আসছে। সেরকম কিছু ফেস করেননি?
  • de | 192.57.74.176 | ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ২৩:২১370615
  • অন্য লেখা শেষ হয়ে গেলে এখানে আরেকটু ফ্রিকোয়েন্টলি দিও - এতো ভালো লেখা, কেমন নেশার মতো পড়ে ফেলি।
  • aranya | 172.118.16.5 | ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:০৫370619
  • টু গুড চলছে। এ জিনিস কতজনকে বাইক্যাডভেঞ্চারের পথে নিয়ে যাবে, ভাবতেই রোমাঞ্চ হয়

    ৯০ কিমি মানে ঘন্টায় ৫৬ মাইল মত, ফাঁকা রাস্তার পক্ষে স্পিড-টা একটু কম না? অন্তত ৭০ মাইল মানে ১১০ কিমি/ঘন্টায় যাওয়া যায় না?
  • সিকি | ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:১৯370621
  • এই একটা জিনিস কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি নি। আসা যাওয়া, দু পথেই সমানে সময় আর কিলোমিটারের গুণ ভাগ করে দেখেছি, কিছুতেই এক ঘন্টা কুড়ি মিনিটের কমে একশো কিমি কমপ্লিট করতে পারি নি। মানে ম্যাক্সিমাম সত্তর কেএমপিএইচ। কেন হচ্ছিল বুঝি নি। অথচ এক্সপ্রেসওয়েতে আমি মোটামুটি আশি নব্বইতে চলেছি।

    (আমি মাইলের হিসেব ভিজুয়ালাইজ করতে পারি না)
  • aranya | 172.118.16.5 | ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:৩১370622
  • মাইল নিয়ে ভাবতে হবে না।

    ধর যখন ১০৪ কিমি/ঘন্টাতে চালাচ্ছিলে, তখন কি হ্যান্ডেল কাঁপছিল? তোমারটা বোধহয় খুব বড়সড় বাইক নয়।

    জার্মানীর অটোবানে একটা টয়োটা করোলা টাইপ গাড়ি চালিয়েছিলাম, খুব দুঃখ হয়েছিল। ১০০ মাইলের বেশি স্পিড তুললেই স্টিয়ারিং কাঁপছিল। স্পিড লিমিট নেই, আর একটু পাওয়ারফুল গাড়ি ভাড়া করলে কত বেশি স্পিডে চালান যেত
  • aranya | 172.118.16.5 | ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:৫৬370623
  • বেশ কিছু পথ নিশ্চয় লোকাল রাস্তায় চালিয়েছ, যেখানে রাস্তার দুরবস্থা আর হাই ট্রাফিকের জন্য হয়ত ৪০-৫০ কিমি বা আরও কম স্পিডে অনেকক্ষণ যেতে হয়েছে
  • সিকি | ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ১০:২৯370624
  • লোকাল রাস্তাতে পঞ্চাশ পেয়েছি, সেটা অ্যাকসেপটেড।

    হ্যাঁ, বাইক কেমন হাল্কা হয়ে যায়, কাঁপে না ঠিক, ঐ হাল্কা হয়ে যাওয়া দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম স্পিড বেড়ে গেছে। লাগেজ সমেত দেড়শো কেজি ওজন, সেটা হাল্কা হয়ে গেলে ভয় লাগে।

    অটোবানে যদি কোনোদিন এই বাইক নিয়ে যেতে পারি, আমাকে আশি নব্বইএর স্পিডে চালাতে দেবে তো?
  • গোমড়াথেরিয়াম | 233.191.3.96 | ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ১০:৩৫370625
  • এখানে গাড়ি বা বাইকের ইঞ্জিন পাওয়ার অনেকই কম। ১৩০০ সিসির গাড়ি, ১০০/১১০ কিমির বেশি তোলা যায় না, রোলিং হয়। ইংল্যান্ডে মোটরওয়েতে হামেশাই ১০০ মাইল তুলেছি।
  • গোমড়াথেরিয়াম | 233.191.3.96 | ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ১০:৩৭370626
  • মাইলেজ বাড়ানোর জন্যে গাড়ির বিল্ডও কমজোরি হয়ে গেছে - হালকা বডি/সাসপেনশন। কাজেই..
  • aranya | 172.118.16.5 | ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ১২:৩৭370627
  • সিকি, রাইটমোস্ট লেনে স্বচ্ছন্দে চালাতে পারবে, গুগল করে দেখলাম মিনিমাম স্পিড ৬০ কিমি/ঘন্টা।
    শুধু পাশ দিয়ে প্রচন্ড স্পিডে সব গাড়ী পাস করবে, ৩০০ কিমি/ঘন্টাতেও লোকে ড্রাইভ করে, খুব পাওয়ারফুল ইঞ্জিন হলে
  • de | 192.57.106.108 | ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ১৪:০৯370628
  • বম্বে-পুণে এক্সপ্রেস-ওয়েতে প্রায় প্রত্যেক উইকেন্ডে চালিয়ে যাই ১১০-১২০ কিমি/ঘন্টা। আরামসে চালাই - উইদাউট ভাইব্রেশন। ১২০ ছাড়ালে একটু কাঁপে - ফোর্ড ফিগো টাইটেনিয়াম।
  • সোমনাথ | 24.139.160.252 | ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ২৩:২৯370629
  • আপনার অন্য লেখাগুলোর মতোই একরাশ ভালোলাগা নিয়ে পড়ছি । অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের ।

    সাইকেল এ একটু বেশী দূরত্বে যাতায়াত করে, এরকম কোনো গ্রুপ এর খবর একটু জানাবেন , পারলে ?
  • সিকি | ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:১১370630
  • গ্রুপ জানি না, এ রকম লোককে চিনি। সাইকেল চালিয়ে লখনউ থেকে লুরু গেছেন।
  • সোমনাথ | 24.139.160.252 | ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ১৬:৩৪370632
  • ধন্যবাদ সিকিদা,
    ওনার সাথে কোনভাবে যোগাযোগ করা যাবে ? আমি শ্রীসেন্নাই থেকে কোলকাতা যেতে চাই । পরামর্শ দরকার ছিল খুবই ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন