এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • দেশভাগঃ ফিরে দেখা(দ্বিতীয় পর্ব)

    I
    অন্যান্য | ২৬ অক্টোবর ২০১৭ | ৫৯০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • I | 57.15.9.41 | ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ২২:০৯370737
  • স্রেফ লেখার সুবিধার জন্য টই খোলা হল। এবং আশা করি পড়ার সুবিধেও হবে(যদি অবশ্য কেউ পড়েন),কেননা আগের লেখায় স্ক্রোল ডাউন করে নতুন পর্বে পৌঁছতে অসুবিধে হচ্ছিল।আসলে লেখাটা না চাইতেও খুব বড় হয়ে যাচ্ছে,শেষ করা যাবে কিনা জানিনা।নতুন কোনো ডিপার্চার নয়,আগের কন্টিনিউটি বজায় থাকবে।নতুন জায়গায় নতুন ইঁট পেতে রাখলাম।
  • Du | 57.184.42.117 | ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৮:৩৮370843
  • ঈটটা একটু ঝেড়েঝুরে রাখলাম।
  • de | 69.185.236.53 | ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:৫০370854
  • আম্মো - প্রথমটা পড়েছি - কিন্তু খুব মন দিয়ে পড়ার মতো যে সময়টা দরকার, সেটা হচ্ছেনা বলে মন্তব্য করিনি -
  • গবু | 57.15.10.228 | ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ১৩:২৫370865
  • আসিতেছে! আসিতেছে! আসিতেছে!

    এই সপ্তাহান্তে?
  • I | 53.239.82.6 | ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩৫370876
  • জালিয়নওয়ালাবাগের ঘটনায় গান্ধির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল সবচেয়ে অদ্ভুত। ১৮ এপ্রিল খবরের কাগজে চিঠি লিখে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি-"I am sorry, when I embarked on a mass movement, I underrated the forces of evil." আহত-নিহত মানুষদের তিনি শহীদের সম্মান দিতে অস্বীকার করলেন ; বললেন, তাঁদের উচিৎ ছিল পালাবার চেষ্টা না করে শান্তভাবে মৃত্যুবরণ করা। গান্ধির এইধরনের মনোভাবের প্রকাশ পেয়েছিল হলোকস্টে মৃত ইহুদীদের ক্ষেত্রেও। জার্মান ইহুদিদের তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন হিটলারের সরাসরি বিরুদ্ধতা না করে জার্মান মারণযন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করে দলে দলে প্রাণ বিসর্জন দিতে। বলেছিলেন হিটলারের জন্য ইহুদিরা যেন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। এই ধরণের মনোভঙ্গি একজন সংসারত্যাগী সন্তের ক্ষেত্রে হয়তো স্বাভাবিক, যিনি সকল রকম জাগতিক প্রক্রিয়ার ওপরে পৌঁছে গিয়েছেন; কিন্তু গান্ধির ক্ষেত্রে সমস্যাটি হল তিনি কোনো সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী ছিলেন না। যদি তাও হতেন, তাহলেও তাঁর অন্যতর এবং মুখ্যতর ভূমিকাটি ছিল একটি জাগ্রত স্বাধীনতাকামী জাতির নেতৃত্বের, যে কাজটি তাঁকে প্রায় জীবনের উপান্ত অবধি করে চলতে হবে। এবং খুব স্থূলভাবে বললে, যেমন Alex Von Tunzelmann বলেছেন-রাজনীতি কোনো চার্চের বক্তৃতা নয়। টলস্টয়ের প্রভাব, ভারতীয় বৈষ্ণব ও জৈনবাদের এক ককটেল তাঁকে নৈতিকতার এই বাড়াবাড়িরকমের শুচিবায়ুগ্রস্ততা ধরিয়েছিল কিনা , এবং তাতে করে ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের কখনো কখনো ক্ষতিও হয়েছে কিনা তা তর্কযোগ্য। তাছাড়া আর একটি বিষয় প্রনিধানযোগ্য- গান্ধি তখনো অবধি ব্রিটিশ ন্যায়বিচারের ওপর তাঁর আস্থা হারিয়ে ফেলেন নি এবং বিশ্বাস করতেন বিলেতের সাদা চামড়ার মানুষজনের মত উপনিবেশের কালো চামড়ার মানুষেরাও ব্রিটিশরাজের কাছে মর্যাদা ও অধিকারের প্রশ্নে তুল্যমুল্য।

    এই বিশ্বাস অবশ্য খুব শিগগিরই অপনোদিত হবে তাঁর; কেননা জালিয়নওয়ালাবাগ-পরবর্তী ঘটনাক্রমে ব্রিটিশ সিংহ খুব তেমন লজ্জিত তো হয়ই নি, লজ্জিত হবার ভানও করে নি। এবং ক্ষুব্ধ-ব্যথিত নিরুপায় পরাধীন দেশবাসীর বেদনা সম্ভবতঃ তাঁর বিবেককে ভারাক্রান্ত করে তুলছিল। দ্রুতই তিনি এই সরকারকে satanic বলে বর্ণনা করবেন; বলবেন এই সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলা একটি "পাপকাজ" (গান্ধির সকল ক্রিয়া, সকল প্রকরণ ছিল 'ন্যায়-অন্যায়', 'পাপ-পুণ্য'র নিক্তিতে মাপা)। ১৯২০-র ১লা অগাস্ট কংগ্রেস গান্ধির নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিল। অফিস-কাছারি বন্ধ রাখা, ব্রিটিশ পণ্য, বিশেষ করে ব্রিটিশ বস্ত্র বয়কট, স্বদেশী পণ্য কেনাবেচা, সরকারী স্কুল-কলেজ বর্জন, পুলিশ-সেনাবাহিনী-আইন-আদালত ছেড়ে দেশের মানুষকে বেরিয়ে আসতে বলা-আন্দোলনের এই ছিল রূপরেখা। জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক জীবনে এটি ছিল প্রথম বড় পরীক্ষা। শুধু বড় বললে কম বলা হবে, বিশাল বড় পরীক্ষা। মধ্য-উচ্চবিত্ত ভারতীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ এই রাজনৈতিক দল এই প্রথম ঝাঁপিয়ে পড়ল তার পরিচিত জনভিত্তির বাইরে থাকা বিশাল শহুরে ও গ্রামীণ প্রান্তিক জনতার আগ্রহ আকর্ষণ করতে। আন্দোলনে সাড়া পড়ল অভুতপূর্ব। শুধু হিন্দু ভারতবাসীই নয়, মুসলিম ভারতকেও এই আন্দোলন তথা কংগ্রেসী আনুগত্যের গন্ডির মধ্যে টেনে আনতে গান্ধি খিলাফত আন্দোলনের দাবীকে সমর্থন করলেন, পরিবর্তে খিলাফত আন্দোলনের নেতারাও অসহযোগ আন্দোলনে তাঁদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন।

    প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পক্ষে থাকা তুরস্কের সুলতান মিত্রপক্ষের কাছে পরাজিত ও হতমান হয়েছিলেন। তাঁর বিশাল অটোমান সাম্রাজ্যের ডানা ছাঁটা হয়েছিল নির্মমভাবে। এবং তুরস্কের সুলতান যেহেতু মুসলিম দুনিয়ার এক বড় অংশের কাছে তখনো খলিফার মর্যাদা পেয়ে আসছেন, এই ঘটনাক্রমের বেদনা বিশ্ব জুড়ে মুসলিমদের কাছে মর্মন্তুদ হয়েছিল। সবচেয়ে বেশী আহত হয়েছিলেন সম্ভবতঃ ভারতবর্ষীয় মুসলমানরা। মৌলানা মুহাম্মদ আলি , তাঁর ভাই মৌলানা সওকত আলি এবং আরো বেশ কিছু উচ্চশিক্ষিত মুসলিম নেতা তুরস্কের খলিফার এই অবমাননার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ -বিরোধী খিলাফত আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল যুক্ত প্রদেশের লক্ষ্ণৌ শহরে ( মুসলিম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলির সবারই জন্মস্থান ছিল এই 'মুসলিম মাইনরিটি' যুক্ত প্রদেশ- এ কথা মনে রাখা জরুরী। বিশেষভাবে মুসলিম লিগের পাকিস্তানের দাবীর যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখবার সময় তো আরো জরুরী।কেন, সে কথায় পরে আসছি।) ১৯১৯ সালে এই আন্দোলনের জন্ম ; ১৯২০ তে এই আন্দোলন গাঁটছড়া বাঁধল কংগ্রেস - বা বলা ভালো, গান্ধি-পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে।

    ১৯২০-র এই সময় গান্ধি তথা কংগ্রেসের সোনার সময়।জনতার চোখের মণি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ততদিনে 'গান্ধিজি' থেকে 'মহাত্মাজি'তে উত্তরিত হয়েছেন। এই সময় হিন্দু-মুসলিম জাতীয় ঐক্যেরও সোনার সময়। এই খিলাফত আন্দোলন থেকেই কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকে পড়বেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ডাঃ হাকিম আজমল খান, ডাঃ মুখতার আহমেদ আনসারি।

    কিন্তু একজন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবেন। মাত্র ৭ বছর আগেই গোপালকৃষ্ণ গোখলে যাঁকে হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের শ্রেষ্ঠতম প্রতিনিধি বলে বর্ণনা করেছিলেন। মহম্মদ আলি জিন্না।

    জিন্নার আপত্তি ছিল দ্বিবিধ। আপাদমস্তক কনস্টিটিউশনাল রীতিনীতিতে বিশ্বাসী জিন্নার মনে হয়েছিল-অসহযোগ আন্দোলনের নামে সরাসরি সরকার-বিরোধিতার এই নীতি ভ্রান্ত। সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার নীতিই (যে নীতিতে ততদিনে কংগ্রেস নেতারা আস্থা হারিয়েছেন) হতে পারে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস অর্জনের শ্রেষ্ঠ পন্থা।তাছাড়াও কংগ্রেসের সংগঠনের যা ক্ষমতা, তাতে এই মুহূর্তে দেশজোড়া এমন একটি সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দেওয়ার অর্থ একটি বড় ঝুঁকি নেওয়া। বললেনঃ "It is not the right step to take at this moment... you are committing the Indian National Congress to a programme which you will not be able to carry out." মনে রাখতে হবে এ কথা জিন্না বলছেন ১৯২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগপুর কংগ্রেসের সম্মেলনে দাঁড়িয়ে; তখনো অসহযোগ আন্দোলনের শক্তি-সামর্থ্য যাচাই করে ওঠার সময় হয় নি, তার মাস পাঁচেক আগেই সবে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। তবুও জিন্নার এই উক্তি আন্দোলনটি নিয়ে তাঁর সেইমুহূর্তের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয় দেয় ( যদি অব্শ্য ধরে নিই আন্দোলনটির বিরুদ্ধে তাঁর এই উক্তিটি ছিল অকপট)।

    জিন্নার দ্বিতীয় কারণটি ছিল আরো সিরিয়াস। আপাদমস্তক (আবারো) সেকুলার এই নেতা মনে করেছিলেন আন্দোলনের নামে গান্ধি হিন্দু ও মুসলিম জনতার ধর্মীয় অনুভুতি নিয়ে খেলা করছেন -হিন্দুদের জন্য 'রামরাজ্য', মুসলিমদের জন্য 'খিলাফত'। রাজনীতি ও ধর্মের এই ককটেল জিন্নার ছিল বিলকুল না-পসন্দ, অন্ততঃ ১৯২০ সালে (হা ইতিহাস !)

    পঞ্চাশ হাজার উদগ্রীব জনতার মধ্যে জিন্না সেদিন ছিলেন একমাত্র ডেলিগেট, যিনি অসহযোগ আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। সম্মেলনে তিনি গান্ধিকে 'মিস্টার গান্ধি' বলে সম্বোধন করা মাত্র চতুর্দিক থেকে 'মহাত্মাজি' , মহাত্মাজি' ধ্বনি ওঠে। অনিচ্ছুক জিন্না শুধরে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মহাত্মা গান্ধি সম্বোধনে চলে যান। বাদবাকি সময়ে তাকে জনতার প্রবল বুইংয়ের সম্মুখীন হতে হয়। এবং জিন্নাপন্থী ইতিহাসবিদদের দাবী, একবারের জন্যও গান্ধি জিন্নাকে এই অপমানের হাত থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন নি, বরং যখন তাঁকে 'মহাত্মা' বলতে বাধ্য করা হচ্ছে, গান্ধি চুপচাপ দর্শক হয়েই থাকছেন, যেন বা উপভোগ করছেন; যদিও ভবিষ্যতে অন্য মানুষজনের ক্ষেত্রে অনুরূপ অভিজ্ঞতায় গান্ধি এর বিপরীত প্রতিক্রিয়াই দেখিয়ে থাকবেন। সেদিনের সেই সভাই ছিল কংগ্রেসের মঞ্চে জিন্নার শেষ অংশগ্রহণ, সেদিনই তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করবেন; বাদবাকি জীবন মুসলিম লিগই হবে তাঁর আশ্রয় (বা উল্টোটা)। অনেকে মনে করেন, মতের তফাতের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সংঘাতও জিন্নার কংগ্রেস ত্যাগের অন্যতম কারণ। উচ্চাকাঙ্খী এই রাজনীতিবিদ হয়তো ততদিনে বুঝতে পেরে গেছেন, এক আকাশে যেমন দুই সূর্যের সহাবস্থান সম্ভব নয়, এক কংগ্রেসে তেমনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ও মহম্মদ আলি জিন্না- এই দুই প্রখর গুজরাটীর একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। সভার বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সাংবাদিক দুর্গাদাসকে তিনি বলেনঃ " Well young man, I will have nothing to do with this pseudo-religious approach to politics. I part company with the Congress and Gandhi. I do not believe in working up mob hysteria."

    মব হিস্টেরিয়ার একটি লিলিপুট প্রদর্শন ফেরার পথে জিন্না নিজের চোখেই দেখতে পাবেন। নাগপুর থেকে বম্বে ফেরার পথে স্টেশনে স্টেশনে অত্যুৎসাহী কংগ্রেস কর্মীরা জিন্নার ট্রেনে ইঁট-পাথর ছুঁড়ে মারবে। হাই পলিটিক্স-এ উৎসাহী ইতিহাসবিদরা হয়তো বলবেন এর প্রতিটি পাথর দিয়ে আরো পঁচিশ বছর বাদে ভারতীয় ইউনিয়ন ভেঙে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের ভিত তৈরী হবে এবং জিন্না হবেন সেই কান্ডের কান্ডারী। এবং পাথরে পাথরে নাচবে আগুন, যে আগুন পুড়িয়ে মারবে উপমহাদেশের পশ্চিম প্রান্ত পাঞ্জাব থেকে পূর্ব প্রান্ত বাংলাকে; মাঝখানেও কেউ বাদ যাবে না। জন্ম হবে এক নতুন দোজখনামার। তবে তার সূচনা হতে তখনো আরো বছর দুয়েক বাকি।
  • গবু | 57.15.9.226 | ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৩:৩০370887
  • পড়ছি। ভালো লাগছে। পুরোটা শেষ না হলে খুব খারাপ লাগবে।
  • Indranil Ghosh Dastidar | ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ২১:০৭370898
  • ১৯২২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি চৌরিচৌরা-র ঘটনা ঘটল। যুক্ত প্রদেশের চৌরিচৌরায় আনুমানিক আড়াই হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন থানা ঘেরাও করতে। পুলিশ শুন্যে গুলি ছুঁড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে জনতা পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। প্রত্যুত্তরে পুলিশ সরাসরি জনতার দিকে গুলি ছোঁড়ে। তিন জন ঘটনাস্থলেই মারা যান, বেশ কিছু মানুষ আহত হন। উত্তেজিত মানুষ পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে থানা ঘিরে ফেলে সেটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ২৩ জন পুলিশ কর্মী জ্যান্ত পুড়ে মারা যান।

    গান্ধির কাছে এই ঘটনার খবর এসে পৌঁছলে তিনি মর্মাহত হয়ে পড়েন। জালিয়নওয়ালাবাগ-পরবর্তী সময়ের মতই আবারও তাঁর মনে হয়, অসহযোগ আন্দোলনের আহ্বায়ক ও প্রধান নেতা হিসেবে তিনি এই হিংসাত্মক ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করার ডাক দেন; ৫ দিনের জন্য অনশনের মাধ্যমে 'চিত্তশুদ্ধি'র ঘোষণা করেন। অবশ্য ব্রিটিশ সরকার তাতে বিন্দুমাত্র নরম হওয়ার লক্ষণ দেখায় নি। সরকার গান্ধিকে গ্রেপ্তার করে; আদালতে তাঁর ৬ বছরের জন্য কারাদন্ডের বিধান হয়, যদিও ২ বছর বাদে তাঁকে ভগ্ন-স্বাস্থ্যের কারণে মুক্তি দেওয়া হবে।

    গান্ধির এই ঘোষণা কংগ্রেস নেতা ও কর্মীদের মধ্যে অসম্ভব হতাশার জন্ম দেয়। তাঁদের মনে হয়েছিল লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ যাঁরা গান্ধির ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে স্রেফ স্বাধীনতার জন্য পথে নেমেছেন, এটা তাঁদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।

    সবচেয়ে ক্ষিপ্ত হন খিলাফত আন্দোলনের নেতা ও কর্মীরা। তাঁরা নিজেদের প্রতারিত মনে করেছিলেন। প্রয়োজনের সময় গান্ধি তাঁদের আবেগ ও দাবীকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে দ্বিধা করেন নি, আবার যখন তাঁর মনে হয়েছে, তিনি নিজের ইচ্ছেমত সেই আন্দোলন প্রত্যাহার করতেও দেরী করেন নি। আলি ভাইয়েরা গান্ধির এই অহিংসার প্রতি অবসেশন-এর কড়া সমালোচনা করেন । খিলাফত নেতা মৌলানা আব্দুল বারি বলেন - "আমার মনে হয় গান্ধিজি যেন একজন পঙ্গু মানুষ, তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাঁর বশে নেই, কিন্তু মস্তিষ্ক এখনো সজাগ।তাঁর (ভবিষ্যৎ) সাফল্য সম্বন্ধে আমার সন্দেহ আছে, কেননা তিনি এখনো তাঁর (অহিংস) আন্দোলনে খুব একটা সাফল্য লাভ করতে পারেন নি..একটা সর্বব্যপী অবসাদ চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে।"

    এর আগেই ১৯২১ সালে মালাবার উপকূলে খিলাফত আন্দোলনের অংশ হিসেবে হিংসাত্মক মোপলা বিদ্রোহ ঘটে গেছে, যা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন হিসেবে কিন্তু পরবর্তীতে অভিমুখ বদলে হিন্দু-বিরোধী দাঙ্গায় পরিণত হয়। মোপলা আন্দোলনের ফলে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যে বেশ ভালোরকম চিড় ধরেছিল (যদিও গান্ধি আপ্রাণ চেষ্টা করেন সেটি মেরামত করবার); এবারের অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার সেই ঐক্যের মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দিল।

    ব্রিটিশ সরকারের খুশি হবার সঙ্গত কারণ ছিল। যুক্ত প্রদেশের গভর্নর হারকোর্ট বাটলার মন্তব্য করলেন হিন্দু-মুসলিম ঐক্য মৃত্যুশয্যায় শুয়ে। এই মৃত্যু সুনিশ্চিত করতে ভাইসরয় লর্ড রিডিং একটি কৌশলী চাল দিলেন; লন্ডনে টেলিগ্রাম করে তিনি ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করলেন যেন তুরস্কের সুলতানের সঙ্গে Treaty of Sevres কে পুনর্বিবেচনা করে দেখা হয়। অন্যদিকে সরকারের প্ররোচনায় স্টেটসম্যান পত্রিকায় খবর ছাপানো হল আন্দোলনের নাম করে তহবিল তছরুপ করেছেন খিলাফত নেতা আলি ভ্রাতৃদ্বয়।

    কিছুদিন পরে এল সেই খবর-তুরস্কের নতুন নেতা কামাল আতাতুর্ক ক্ষমতা দখল করেছেন। তুরস্কের তৎকালীন সুলতানকে আসনচ্যুত করা হল। রাজতন্ত্রের ক্ষমতা যথাসম্ভব সীমিত করা হল।

    সেই সাথে ভারতবর্ষে খিলাফত আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতাও ফুরিয়ে এল।

    শুরু হল ১৯২২-পরবর্তী ভারতবর্ষের নতুন অধ্যায়। হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের সাময়িক ঐক্যের দিন ফুরিয়ে গিয়ে শুরু হল এক বিদ্বেষময় অধ্যায়, যা আর কোনোদিন শুধরোবে না। অবস্থা ক্রমেই খারাপ থেকে খারাপতর হবে।
  • 0 | ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ১৩:৪১370909
  • পড়ছি। ব্লগে আগের পর্বগুলোও।
    লেখার টানেই যা পড়ি, নইলে এই বহুচর্চিত ঘাঁটা ব্যাপার আর তেমন টানে না :-(
    মনে হয় ... এমন কলমে যদি এর চাইতে আরেকটা উপন্যাস কি অন্তত একটা বড়গল্পও লিখে ফেলতেন!
  • I | 57.15.4.17 | ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ২৩:৫১370920
  • জয়া চ্যাটার্জির একটা বই আছে Bengal divided :Hindu communalism and partition । বইটার সফ্ট কপি কারো কাছে হবে? বড্ড দাম।
  • Du | 182.58.105.112 | ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪১370738
  • রক্তপাত বন্ধ করা নিয়ে অবসেসড গান্ধীজী জীবনের শেষদিকে গবীর অসহায়তায় বুঝতে পেরেছিলেন কত রক্ত তার জাতিকে, তার দেশকে দিতে হবে এর ফলে।
  • T | 165.69.191.249 | ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:২৭370749
  • ক্যাপিটাল আই, জয়া চ্যাটার্জির বইটির সফট কপি রয়েচে। অবশ্যই পাঠাতে পারি। এই আই ডি তে মেইল ঠুকে দিন। btitas অ্যাট ntu.edu.sg
  • I | 57.15.4.17 | ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:৩০370760
  • ধন্যবাদ টি।
  • de | 24.139.119.171 | ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ১৫:২৬370782
  • ভালো হচ্ছে -
  • Indranil Ghosh Dastidar | ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ১৯:৩৬370793
  • dc, নেট-পুলুশ ধরবে না তো?
  • dc | 132.174.182.53 | ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ২০:১৩370804
  • সেটা আবার কি বস্তু?
  • h | 117.77.76.89 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০০:১৪370815
  • রেফারেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্তটা কি ডেলিবারেট?
  • I | 57.15.3.169 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ১৭:১৪370826
  • একদম শেষে দেবো।
  • de | 69.185.236.52 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ১৭:৩৬370837
  • বড়াই - যাবতীয় স্টাডি বুক বরাবর এখান থেকে নামাই আর সাই-ফাই থেকে জার্নাল পেপার - সারা দুনিয়ার লোকে এখান থেকেই নামায় - কারো কখনো প্রবলেম হয়েচে বলে শুনিনি। মাঝে ইন্ডিয়াতে সাইটটা খুলছিলো না -
  • h | 117.77.106.18 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ১৯:৫৫370844
  • ওকে। দ্যাখ তোর দুটো চ্যালে'ণ্জ, এক হলো বহু চ্চি ত বিষয় কেও যখন আঅডেমিয়ার বাইরে আলোচনা করা হোচ্ছে , রাজনৈতিক প্রচারে, দাঙ্গা কাতাতে কজে লাগানো হোচ্ছে তখন নিজের নতো নে জা পারে বোলছে আবার ফ্যাক্ট বেস্ড আকাডেমিক হিস্টরি তে আকাদেমিয়ার বাইরের লোকের অ্যাকাএস নেই। দুটোর মধ্যে ব্যাপারে আনতে পারে সেশে ভালো চাওয়া সেন্সিবল ন্যারেটিভ সেক্ষেত্রে, তোকে সোর্স ইউসেজ এর ব্যাপারটা গুরুত্ত্ব দিতে হোবে আবার জেনেরাল রিডেবিলিটি কমালে হবে না তাই পরে বিব্লিওগ্রফি ভালো আইডিয়া ফুট নোটের বদলে কিন্তু তাহলে তোকে অন্তত এক্টা ইনলাইন ইন্ডেক্সিঙ্গ করতে হবে এবোঙ্গ সুব্জে্তিভে কম্নেট থেকে বিরত থাকতে হবে। যিন্ন রেগে কাই এই কমেন্টে সোর্স লাগবে। Kআরন তুই মেম্ব লিখ ছিশ না। জদিও মানসিক স্তাত ইতিহাস ইত্যাদি আজ্কাল হয়েছে কিন্ফু বড় চরিত্র দের পারলাম ইকুতেশন দিয়ে আমাদের দেশে হুস্টরি লেখা হয় বিশেষত রাজবীরিতে রেফার হয় সেটা থেকে বিরত না থাকলে ফোর গ্রহণ্জোগ্য তা কোমবে। এক্টু ভেবে দেখিশ। দার্মী কাজে হাত দিতেছিশ সাফল্য চাই বলে বোললাম
  • I | 57.15.5.162 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ২০:০৬370845
  • যদিও তোমার টাইপিংএর গোলমালের জন্য পুরো বক্তব্যটা বুঝতে পারলাম না(একটু মাইরি যত্ন করে টাইপিং করো),তবে এসেন্সটা বুঝলাম মনে হলো।উপদেশটা ভালো লাগলো। ঠিকই বলেছো। এবার থেকে বরং ফুটনোটই ব্যবহার করব।যদিও তাতে রিডেবিলিটি একটু মার খাবে,কিন্তু ব্যাপারটা আমার ক্ষেত্রে সহজ হবে।
    আর রেগে কাঁই জাতীয় কিছু লিখেছি বলে মনে পড়ছে না।যাহোক আরো বেশি অবজেক্টিভ হওয়ার কথা মাথায় রাখবো।এবং যদ্দুর পারি রেফারেন্স।
  • I | 57.15.5.162 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ২০:২২370846
  • দে,তালে খুশি হয়ে আরেকটা বই নামাই।
    ঃ)
  • h | 117.77.106.18 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ২০:৫৮370847
  • অনুবাদ করে দিলাম।

    --ওকে। দ্যাখ তোর দুটো চ্যালে'ণ্জ, এক হলো বহু চর্চিত ত বিষয় কেও যখন আকাডেমিয়ার বাইরে আলোচনা করা হোচ্ছে , রাজনৈতিক প্রচারে, দাঙ্গা করাতে কজে লাগানো হোচ্ছে তখন নিজের মত যে যা পারে বোলছে, এটা ফ্যাসিস্ট দের বড় শক্তি, আবার ফ্যাক্ট বেসড হিস্টরি তে আকাদেমিয়ার বাইরের লোকের অ্যাকসেস নেই। ছাত্র আন্দোলন জোরদার হলে, অবশ্য পাবলিক ডিসকোর্সে গবেষণার জিনিস পত্র জোটে। তার মধ্যে আছে রাম ছাগল ন্যাশনালিজম। আয়েশা জালাল এর বই আমাদের দেশে কেউ পড়বে না, আবার সুমিত সরকার রাম গুহ জয়া চ্যাটার্জি পাকিস্তান বাংলাদেশে র মেনস্ট্রীমে নেই। শেয়ার্ড হিস্টরি তো রে বাবা।

    এই সমস্ত ব্যাপারে ব্যালন্স আনতে পারে দেশের ভালো চাওয়া সেন্সিবল নন স্পেশালিস্ট ন্যারেটিভ। এটাই মিঠুন ভৌমিক অ্যাটেম্প্ট করছে, অনেকেই করছে। কানহাইয়া রা ও করচে, বড় চ্যানেল গুলো করছে অন্য অ্যাংগল থেকে, দিস ফাইট ইজ দ্য মেন ফাইট, বিকজ উই আর সর্টিং আঔআর ফাউন্ডেশনাল স্টোরি অফ দ্য রিপাবলিক অ্যাট আ টাইম হোয়েন উই মাইট অ্যাজ ওয়েল লুজ ইট।

    সেক্ষেত্রে, তোকে সোর্স ইউসেজ এর ব্যাপারটা গুরুত্ত্ব দিতে হবে আবার জেনেরাল রিডেবিলিটি কমালে হবে না তাই পরে বিব্লিওগ্রফি ভালো আইডিয়া ফুট নোটের বদলে কিন্তু তাহলে তোকে অন্তত এক্টা ইনলাইন ইন্ডেক্সিঙ্গ করতে হবে।
    এ ব্যাপারে রয় পোর্টার হল ভালো স্ট্যান্ডার্ড, আবা প্রকাশিত ইতিহাস গ্রন্থমালা ভালো স্ট্যান্ডার্ড। ওখানে প্রফেসনাল হিস্টরিয়ান রা লিখছেন, তোর দায়িত্ত্ব বেশি, কারণ তোর উদ্দেশ্য হল আমরা বোকাচোদারা যাতে সেন্সিবলি ভাবতে শিখি। ঐতিহাসিকের লেখা ইতিহাস বই দেখে পালিয়ে না যাই।

    এবোঙ্গ সাবজেক্টিভ কমেন্ট থেকে বিরত থাকতে হবে। রেগে কাই তুই বলিশ নি, আমার এই বাক্য টায় সিরিয়াস আপত্তি আছে।

    "অনেকে মনে করেন, মতের তফাতের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সংঘাতও জিন্নার কংগ্রেস ত্যাগের অন্যতম কারণ। উচ্চাকাঙ্খী এই রাজনীতিবিদ হয়তো ততদিনে বুঝতে পেরে গেছেন, এক আকাশে যেমন দুই সূর্যের সহাবস্থান সম্ভব নয়, এক কংগ্রেসে তেমনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ও মহম্মদ আলি জিন্না- এই দুই প্রখর গুজরাটীর একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়।"

    পারসোনালিটি ক্ল্যাশ কে গুরুত্ত্ব দিয়ে এই পার্টের ইতিহাস অনেক লেখা হয়েছে। সেটা রে বাড়ায়ে তোর কি লাভ।

    মানসিকতার ইতিহাস ইত্যাদি আজকাল হয়েছে, কিন্ফু বড় চরিত্র দের পারসোনাল ইকুয়েশন দিয়ে আমাদের দেশে হিস্টরি লেখা হয় বিশেষত রাজবীরিতে রেফার হয় সেটা থেকে বিরত না থাকলে তোর গ্রহণযোগ্যতা কমবে। এক্টু ভেবে দেখিশ। দার্মী কাজে হাত দিতেছিশ সাফল্য চাই বলে বোললাম।

    ইন্ফ্যাক্ট সব্যসাচী ভট্টাচার্য্য দের থেকে তোর দায় বেশি, তোকে হয়তো দাঙ্গাও থামাতে হবে, পোলারাইজেশন আটকাতে হবে, শুধু তাই না, বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসে আগ্রহ মানুষের ফেরাতে হবে। অথচ আকাদেমিক হওয়া চলবে না, তাঁদের ক্রেডিবিলিটি পুনরুদ্ধার এও তোকে সাহায্য করতে হবে। ব্যক্তিগত না, জঁর টার এটাই মেন দায়িত্ত।

    তাই সাবধানে। এবং সোর্স সহ। অল্প ফুটনোট, কিছু রিডিং লিস্ট, এবং, একটু ডিতেল্ড বিবলিওগ্রাফি, ফর এনিথিং দ্যাট ইজ সোর্স্ড, পারলে প্রইমারি সোর্স , না পারলেও চলবে, তবে পাকিস্তান বাংলাদেশের নতুন রাইটিং রেফার করলে তুই যে যুদ্ধ থামানোর কাজটা চাইছিশ, সেটায় সুবিধে হবে।

    অনেক বড় কথা বলেছি, অধিকার না থাক সত্ত্বেও, কিন্তু চাই এমন বই লেখ, যাতে লোকে তিন জেনারেশন পড়ে। বারা ভালো বই নেই।
  • পাই | 24.139.209.3 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ২১:০৪370848
  • যিন্ন রেগে কাই বোলে তো ?

    এদিকে এটা জানা ছিল না। বেশ অবাক হলাম। বিশেষ করে ইহুদীদেরকে দেওয়া উপদেশে।

    'আহত-নিহত মানুষদের তিনি শহীদের সম্মান দিতে অস্বীকার করলেন ; বললেন, তাঁদের উচিৎ ছিল পালাবার চেষ্টা না করে শান্তভাবে মৃত্যুবরণ করা। গান্ধির এইধরনের মনোভাবের প্রকাশ পেয়েছিল হলোকস্টে মৃত ইহুদীদের ক্ষেত্রেও। জার্মান ইহুদিদের তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন হিটলারের সরাসরি বিরুদ্ধতা না করে জার্মান মারণযন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করে দলে দলে প্রাণ বিসর্জন দিতে।'
  • I | 53.239.82.6 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ২৩:২০370849
  • পাই, হ্যাঁ।
    সোর্স Alex Von Tunzelmann, Indian Summer : The Secret History of the End of an Empire(Pocket Books,2008), p.49।

    প্রথম অংশটির প্রাইমারি সোর্স S.R . Singh, 'Gandhi and the Jallianwala Bagh Tragedy: A turning point in the Indian Nationalist Movement', V. N Datta & S. Settar, eds.,Jallinwala Bagh Massacre (Pragati Publications, Delhi,2000),pp.196-9।

    দ্বিতীয়টির প্রাইমারি সোর্স Louis Fischer, Life of Mahatma Gandhi,p. 374।

    গান্ধি সম্বন্ধে Tunzelmann বেশ কস্টিক। "Gandhi's position on non-violence was absolute...He did not believe that women should resist rape, but preferred that they should 'defeat' their assailants by remaining passive and silent(Kendal, India and the British,p.329)....He advised the British to give up fight against Hitler and Mussolini:Let them take possession of your beautiful island...allow yourself,man , woman and child, to be slaughtered,but you will refuse to owe allegiance to them(Collected Works of Mahatma Gandhi, vol 72, p.230)"-Indian Summer, p. 107
  • h | 117.77.106.18 | ০১ নভেম্বর ২০১৭ ২৩:২৩370850
  • লাইক বাটন।
  • h | 117.77.106.18 | ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০২370852
  • এই বইটা আমি পড়ি নি। কিন্তু এই বইটার রিভু বলছে পার্সোনালিটিন্কে বেশি গুরুত্ত্ব দেওয়া হয়েছে , মুশ্কিল হল জেনেরাল পোপুলর হুস্টরি বলতে তাই বোঝনো হয়, কার ন এটাতে নন ফিক্শন হলেও ন্যারেটিভ বানাতে সুবিধে হয় , এই ধর দুই প্রখর গুজরাটি এই এক্স প্রেসন নরমালি আসবে না, তোর অপিনিয়ন কে প্রভাবিত না করে বলতে চাই ইতিহাস কে এমনকি ক্রান্রিকারী সময় কেও পার্সোনালিটু ইসু হিসেবে দেখলে তোর জেনেরাল রিডিঙ্গ পাবলিকের যে বাইনাঅরি ধারণা ব্যজ্তুত্ত্ব সম্পর্কে সেটা বদলাবে কিনা এবঙ্গ জেনেরাল কমিউনাল মোবিলাইজেশন কমবে কিনা। এবার একটা কথা আছে এটা ইতিহাস চর্চ ঘতনার ব্যাপার। এবোঙ্গ দেয়াঅরফোর তোর ইচ্ছা। সম্প্রতি একটা বইয়ের রিভু পোর্লম, তাতে একটা বড় বাড়ি তার ৫০০ ফ্ল্যাটের লোকের কেচ্ছা নিয়ে লেখা হয়েছে ১৯৩০স ১৯৫০স মস্কো র এইবার এই দিয়ে রাশিয়াঅন সোভিয়েত পেতেওনেজ সিঅটেম বোঝা র ্গেঅহ্হ্টা করা হয়েছে সেটা একটা অথরিটারিয়ান ক্ষমতা সীন শক্তির অয়্ণালিসিস হতে পারে তোর পক্ষে জবে কিনা এটা প্রেরোগেটিভ।
  • h | 117.77.106.18 | ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০২370851
  • এই বইটা আমি পড়ি নি। কিন্তু এই বইটার রিভু বলছে পার্সোনালিটিন্কে বেশি গুরুত্ত্ব দেওয়া হয়েছে , মুশ্কিল হল জেনেরাল পোপুলর হুস্টরি বলতে তাই বোঝনো হয়, কার ন এটাতে নন ফিক্শন হলেও ন্যারেটিভ বানাতে সুবিধে হয় , এই ধর দুই প্রখর গুজরাটি এই এক্স প্রেসন নরমালি আসবে না, তোর অপিনিয়ন কে প্রভাবিত না করে বলতে চাই ইতিহাস কে এমনকি ক্রান্রিকারী সময় কেও পার্সোনালিটু ইসু হিসেবে দেখলে তোর জেনেরাল রিডিঙ্গ পাবলিকের যে বাইনাঅরি ধারণা ব্যজ্তুত্ত্ব সম্পর্কে সেটা বদলাবে কিনা এবঙ্গ জেনেরাল কমিউনাল মোবিলাইজেশন কমবে কিনা। এবার একটা কথা আছে এটা ইতিহাস চর্চ ঘতনার ব্যাপার। এবোঙ্গ দেয়াঅরফোর তোর ইচ্ছা। সম্প্রতি একটা বইয়ের রিভু পোর্লম, তাতে একটা বড় বাড়ি তার ৫০০ ফ্ল্যাটের লোকের কেচ্ছা নিয়ে লেখা হয়েছে ১৯৩০স ১৯৫০স মস্কো র এইবার এই দিয়ে রাশিয়াঅন সোভিয়েত পেতেওনেজ সিঅটেম বোঝা র ্গেঅহ্হ্টা করা হয়েছে সেটা একটা অথরিটারিয়ান ক্ষমতা সীন শক্তির অয়্ণালিসিস হতে পারে তোর পক্ষে জবে কিনা এটা প্রেরোগেটিভ।
  • h | 117.77.106.18 | ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১০370853
  • বহুত বিরক্ত করেছি সরি। আর করব না।
  • I | 57.15.12.71 | ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৬370855
  • বিষফোঁড়ার মত ভারতবর্ষের গায়ে ফুটে ফুটে বেরোতে লাগল অগণিত ছোট-বড় দাঙ্গা। মূলতঃ পাঞ্জাব, বাংলা, যুক্ত প্রদেশে।১৯২৩ সালে হল ১১টি দাঙ্গা, ২৪-এ ১৮টি, ২৫এ ১৬টি, ২৬- এ ৩৫ টি, ২৭ সালে ৪০ টি। এই বিদ্বেষের আবহের মধ্যে ১৯২৫ সালের বিজয়া দশমীর দিন মারাঠী দেশস্থ ব্রাহ্মণ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা করলেন (প্রসঙ্গতঃ, ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টিরও জন্ম ঐ একই বছরের ডিসেম্বর মাসে)। একদা কংগ্রেস-কর্মী হেডগেওয়ার শুরু থেকেই হিন্দুত্বের ছত্রছায়ায় ছিলেন; তাঁর মেন্টর ছিলেন যুগপৎ কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার নেতা বি এস মুঞ্জে। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত সাভারকরের 'হিন্দুত্বঃ হিন্দু কে?" বইটি পড়ে এবং রত্নগিরি জেলে সাভারকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হেডগেওয়ারের হিন্দুত্ববাদী আদর্শ আরো হার্ডলাইনড হয় ও ফলস্বরূপ তৈরী হয় হিন্দু প্যারামিলিটারি সংগঠন আর এস এস , যা কালে কালে প্রভাব-প্রতিপত্তিতে তার অগ্রজ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু মহাসভাকেও ছাপিয়ে যাবে।

    এই সুবাদে হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সম্বন্ধে কিছু কথা সেরে রাখা যেতে পারে।

    ১৯ শতকে ব্রিটিশ আধিপত্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারতবর্ষে নব্য-হিন্দুত্ববাদের জন্ম হয়[1]। এই জন্মস্থানটি ছিল বাংলা-ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম বসতি।উঁচু জাত ও উচ্চবিত্ত বাঙালী 'ভদ্রলোক শ্রেণী' (প্রায়শঃ জমিদার ও মহাজন) ব্রিটিশ শিক্ষার সুযোগ নিয়ে একটি বাঙালী বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের জন্ম দেন। এঁরা ব্রিটিশ তথা ইউরোপীয় সভ্যতার প্রতি অনুগত, আবার সনাতন ভারতীয় ঐতিহ্য যে এই প্রবল সভ্যতার ঢেউয়ে ভেসে যেতে পারে, সে বিষয়েও সম্যক অভিহিত। এই দ্বৈত চেতনা থেকেই হিন্দুধর্মের সংস্কার ('রিফর্ম')-এর প্রয়াস শুরু, যার হোতা রাজা রামমোহন রায়। এবং কালে কালে এই রিফর্ম-প্রয়াস হাত বদল হয়ে চলে যাবে হিন্দু-পুনর্জাগরণবাদীদের দখলে, যার প্রবক্তা আর্য-সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী। এই গুজরাটী ব্রাহ্মণ ১৮৭৩ সালে কলকাতায় এসে কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ভবিষ্যতে তিনি রাজা রামমোহন রায় ও কেশব সেনের উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে যাবেন, কিন্তু কিছুটা অন্য অভিমুখে। ব্রাহ্ম সমাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল বৈদিক স্বর্ণযুগের 'ধর্মীয়' গরিমার প্রচার। দয়ানন্দ দাবী করেন প্রাচীন ভারতের মহত্ব ও গরিমা শুধুমাত্র 'ধর্মীয়' নয়, তা একইসঙ্গে 'সাংস্কৃতিক' ও 'সামাজিক'ও বটে[2]। দয়ানন্দের এই হিন্দু পুনর্জাগরণবাদ ('রিভাইভালিজম') সেই সঙ্গে এক 'অপর'-এর নির্মাণেও সহায়্ক হয়ে উঠবে। প্রাথমিকভাবে সেই 'অপর' হল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ( ও ব্রিটিশ মিশনারী কার্যকলাপ), যাকে তিনি হিন্দু সভ্যতার পক্ষে বিপজ্জনক মনে করেছিলেন। হিন্দুদের , বিশেষতঃ অচ্ছ্যুতদের (দয়ানন্দ হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথা অস্বীকার করেন নি, কিন্তু তিনি এর এক নতুনতর ব্যাখ্যা দেন; তাঁর মতে জাতিভেদ বংশগত নয়, তা আসলে যোগ্যতাভিত্তিক এক শ্রমবিভাজন, যা সমাজের পক্ষে জরুরি) খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত করার খ্রীষ্টান মিশনারি প্রক্রিয়াটিকে প্রতিরোধ করবার জন্য তিনি 'পুনর্ধর্মান্তরকরণ' এর এক রিচ্যুয়াল শুরু করেন-প্রাচীন হিন্দু টেক্সটে যার কোনো অনুমোদন নেই । এই রিচ্যুয়ালটির নাম দেন তিনি 'শুদ্ধি'-যেটি অবশ্য একটি প্রাচীন প্রথা , উঁচু জাতের হিন্দু পাপকাজ করলে যে পাপস্খালন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সে/তারা সামাজিক সম্মান ও অনুমোদন ফিরে পেত। যদিও মুলতঃ ধর্মান্তরিত খ্রীষ্টানদের হিন্দুধর্মের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্যই এই আন্দোলনের সূচনা, কিন্তু দয়ানন্দের জীবদ্দশাতেই, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আরো বেশী করে শুদ্ধি আন্দোলনের লক্ষ্য হয়ে ওঠে মুসলিম ও শিখরা[3]। ইসলাম ধর্মের প্রতি স্বয়ং দয়ানন্দের মনোভাব বেশ বিরূপ ছিল; তিনি ইসলামকে 'যুদ্ধবাদী' ও 'ইমমর‌্যাল' মনে করতেন। যে ঈশ্বর ধর্মে র নামে 'কাফির'দের ঘৃণা করতে শেখান, পশুবলি'র বিধান দেন-তাঁর প্রতি তাঁর কোনো অনুমোদন ছিল না[4]। সেই সঙ্গে অবশ্য এ কথাও বলা উচিৎ,শুধুমাত্র ইসলাম নয়, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ,জৈন ও শিখ ধর্মও তাঁর সমালোচনা এড়ায় নি।

    ১৮৭৫ সালে দয়ানন্দ আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন পাঞ্জাবে। পাঞ্জাবের তৎকালীন হিন্দু এলিট-যাঁরা ছিলেন উঁচু জাতের ক্ষত্রী ও বানিয়া-তাঁরা সাগ্রহে সমাজকে গ্রহণ করলেন। তার একটি কারণ আর্য সমাজে ব্রাহ্মণপ্রাধান্যের অস্বীকৃতি, যা অব্রাহ্মণ ক্ষত্রী ও বানিয়াদের পক্ষে সুখবর। অপর একটি কারণ অবশ্যই মুসলিমদের তুলনায় পাঞ্জাবে হিন্দুসমাজের সংখ্যাগত দুর্বলতা [5]। হিন্দু ধনী ব্যবসায়ী ও মহাজনদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রাধান্য কমে আসবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের এই সংখ্যালঘু- নিরাপত্তাহীনতাও ক্রমে বেড়ে চলবে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ দমনে পাঞ্জাবের অবদানের কথা মাথায় রেখে ব্রিটিশ শাসক পাঞ্জাবীদের (মূলতঃ শিখ ও মুসলিম) পুরস্কৃত করবে মার্শাল রেসের অভিধা দিয়ে। এই মার্শাল রেসকে টিকিয়ে রাখবার জন্য সরকারের দরকার পড়বে পাঞ্জাবের কৃষি-ব্যবস্থার উন্নয়ন, কেননা ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাঞ্জাবি রিক্রুট অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষক পরিবারের সন্তান। এই উদ্দেশ্যে পাঞ্জাবে সেচ -ব্যবস্থার উন্নতিতে সরকার মন দেবে এবং ১৯০০ সালে প্রবর্তন করবে বিতর্কিত Punjab Land Alientaion Actএর। পাঞ্জাবের গ্রামাঞ্চলে হিন্দু ব্যবসায়ী ও মহাজন সম্প্রদায় সেসময় এতটাই ক্ষমতাবান ছিলেন, যে প্রায়শঃ সঙ্গতিহীন কৃষক (অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমান) তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া ধার শোধ করতে না পেরে জমিজমা তাঁদের কাছে বেচে দিতে বাধ্য হতেন। এই অবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন এই বিলটি প্রণয়ন করেন, যার বলে agricultural tribe এর হাত থেকে non-agricultural Tribeএর সদস্যদের কাছে জমিজমা হস্তান্তর রদ হল। বলা বাহুল্য হিন্দু মহাজন-ব্যবসায়ী ও উকিলরা পরের সম্প্রদায়্ভুক্ত ছিলেন। উল্লেখনীয় যে, ১৯০৭ সালে এই অ্যাক্ট-এর একটি অ্যামেন্ডমেন্ট প্রণয়নের প্রচেষ্টাই আরো দু বছর পরে ১৯০৯ সালে পাঞ্জাব হিন্দুসভার জন্ম দেবে[6]।

    ১৯০৬ সালে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা পাঞ্জাবী হিন্দু এলিটদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধকে উসকে দেয়। তাঁদের উষ্মা আরো বাড়িয়ে ১৯০৯ সালে লর্ড মিন্টো আগা খান ও সম্প্রদায়কে প্রতিশ্রুত পৃথক মুসলিম ইলেকটোরেটের ব্যবস্থা করেন মর্লে-মিন্টো সংস্কারের মাধ্যমে। সেই বছরেই পাঞ্জাব জুড়ে হিন্দু সভার নানা শাখার প্রতিষ্ঠা হয় আর্য সমাজীদের চেষ্টায়; এঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুখ হলেন লালা লাজপত রাই , শাদী লাল ও রায়বাহাদুর লাল চাঁদ (যিনি observer ছদ্মনামের আড়ালে "পাঞ্জাবী" সংবাদপত্রে একের পর এক চিঠি লিখে যাবেন পাঞ্জাবী হিন্দু মধ্য-উচ্চবিত্তের দুর্দশার বিষয়ে এবং অন্য নানাবিধ কারণের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসকেও দায়ী করবেন )[7]। লাহোরে পাঞ্জাব হিন্দুসভার প্রথম প্রাদেশিক সম্মেলনে পৌরোহিত্য করেন আরেক কংগ্রেসী মদন মোহন মালব্য। সভা জানায়, তারা কোনো "সাম্প্রদায়িক সংগঠন" নয়, তবে "সমগ্র হিন্দু সমাজ"এর স্বার্থরক্ষাই তাদের উদ্দেশ্য। প্রথম সম্মেলন থেকেই হিন্দু-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয় এবং জাতীয় কংগ্রেসের সমালোচনা করা হয় হিন্দু স্বার্থ সুনিশ্চিত করতে না পারার জন্য [8]।

    শুরুর দিকে আর্য সমাজীরা নিজেদের 'হিন্দু' বলে স্বীকার না করলেও এইসব বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাঁরা বাধ্য হন নিজেদের হিন্দু ধর্মের মূল স্রোতের অংশ হিসেবে ঘোষণা করতে; সেই সঙ্গে বাধ্য হন হিন্দুসমাজের আরো রক্ষণশীল অংশটির সঙ্গে (সনাতনী হিন্দু যাঁরা আর্য সমাজের ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধিতা, পৌত্তলিকতাবিরোধিতা, অচ্ছ্যুতদের হিন্দুসমাজের অংশ বলে স্বীকার করা এইসব কারণে আর্য সমাজীদের পছন্দ করতেন না) হাত মেলাতে । সনাতনী হিন্দুদের মূল প্রতিপত্তির জায়গা ছিল যুক্ত প্রদেশ। এঁদের নেতা মদন মোহন মালব্যের প্রভাবে যুক্ত প্রদেশে হিন্দুসভার পত্তন হয়। পরবর্তী বছরগুলিতে এরকম আরো হিন্দুসভা ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও(বিহার, বাংলা, সেন্ট্রাল প্রভিন্স, বম্বে প্রেসিডেন্সি ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং সবক'টি সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনবার জন্য ১৯১৫ সালে হরিদ্বারের কুম্ভ মেলায় একটি জাতীয় সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়। সেই সম্মেলনে একটি জাতীয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার নাম দেওয়া হয় সর্বদেশক হিন্দুসভা ( যা পরে বদলে হবে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা)। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী। তিনি ঘোষণা করেন, এই সংগঠন ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনুগত থাকবে। সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ও আর্যসমাজ নেতা স্বামী শ্রদ্ধানন্দ এবং উভয়েই এই সংগঠনের সাফল্য কামনা করেন, যদিও স্বামী শ্রদ্ধানন্দ ব্রিটিশ-আনুগত্যের প্রশ্নে হিন্দু মহাসভার সমালোচনা করেন[9]।

    শুরুর দিনগুলিতে হিন্দু মহাসভা একটি পৃথক দল হিসেবে কাজ না করে কংগ্রেসের মধ্যে একটি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে টিকে থাকার মধ্যেই নিজেদের সীমিত রেখেছিল[10]।যদিও সে কাজেও তারা তেমন সাফল্য পায় নি; তার কারণ সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার ছাড়াও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মনোভাব নিয়ে আর্য সমাজী ও সনাতনীদের বিরোধ। আর্য সমাজীরা ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে উৎসুক ছিল, যা ছিল সনাতন ধর্মীয়দের আপত্তির অন্যতম কারণ।

    হিন্দু মহাসভার পালে নতুন করে হাওয়া লাগে বিশের দশকের শুরুতে; খিলাফৎ আন্দোলনের অবসান ও দেশ জুড়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার আবহে। এই সময় থেকেই হিন্দু মহাসভা একটি বিপজ্জনক "অপর"-এর সাপেক্ষে ক্রমেই নিজেদের দৃঢ়ভাবে সংগঠিত করবে -সে "অপর" হল "ভারতীয় মুসলমান"; খ্রীষ্টান মিশনারি কিম্বা ব্রিটিশ ব্যুরোক্র্যাট নয় [11]। বস্তুতঃ বিশের দশক জুড়ে সভায় সাভারকরের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকবে এবং হিন্দু মহাসভা ক্রমেই ব্রিটিশ-সমর্থন ও মুসলিম-বিরোধিতার প্রশ্নে আরো কট্টর অবস্থান নিতে থাকবে। ভবিষ্যতে হিন্দু মহাসভার সদস্যরা কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন শুধু নয়, তাঁরা সযত্নে কংগ্রেস- পরিচালিত জাতীয় আন্দোলনগুলি থেকে সব রকমের সংস্রবও বাঁচিয়ে চলবেন। যদিও আশ্চর্যজনক ভাবে তাঁরা ১৯৩৯ সালে প্রাদেশিক আইনসভায় সিন্ধ এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম লিগের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে কোনো ছুৎমার্গ দেখাবেন না। স্বাধীনতাপূর্ব ক্ষমতা-হস্তান্তর পর্বে এই হিন্দু মহাসভাই দেশভাগের কট্টর সমর্থক হয়ে দাঁড়াবে। বস্তুতঃ ভারতীয় উপমহাদেশে দেশভাগের প্রয়োজনীয়তার কথা সবার প্রথমে বলবেন হিন্দু মহাসভা নেতা লালা লাজপত রাই সেই ১৯২৫ সালে (১৯২৫ সালে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেন ও ১৯২৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ইস্যুতে; যদিও তার পরের বছর আবার তিনি কংগ্রেসে ফিরে আসেন); দ্বিজাতিতত্বের জন্মেরও ৫ বছর আগে। ১৯২৪ সালে কোহটের দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পাঞ্জাবকে মুসলিম ও অমুসলিম দুই ভাগে ভাগ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন; এবং বলেন 'Unity cannot be purchased at the cost of Hindu rights'[12]।

    Notes:
    1.Hindu Nationalism - A Reader: edited by Christophe Jaffrelot,Prineton University Press,2007 vol.,p.6
    2.ibid, p.9
    3.K. Jones, ‘Ham Hindu Nahin: Arya–Sikh Relations, 1877–1905’, Journal of Asian Studies, vol. 32, no. 3, May 1973.
    4. Saraswati, Dayanand (1875). "An Examination Of The Doctrine Of Islam". Satyarth Prakash (The Light of Truth). Varanasi, India: Star Press. pp. 672–683. Retrieved 2 April 2012.
    5.Hindu Nationalism - A Reader: edited by Christophe Jaffrelot,Prineton University Press,2007 vol.,p.10.
    6.Neeti Nair: Changing Homelands-Hindu Politics and the Partition of India. Permanent Black,2011. p.13.
    7. Lajpat Rai, A History of the Arya Samaj (Bombay: Orient Longman, 1967).
    8.Bapu, Prabhu (2013). Hindu Mahasabha in Colonial North India, 1915-1930: Constructing Nation and History. Routledge. ISBN 0415671655.
    9.ibid
    10.R. Gordon, ‘The Hindu Mahasabha and the Indian National Congress 1915 to 1926’, Modern Asian Studies, vol. 9, no. 2, 1975.
    11. Hindu Nationalism - A Reader: edited by Christophe Jaffrelot,Prineton University Press,2007 vol.,p.13.
    12.Neeti Nair: Changing Homelands-Hindu Politics and the Partition of India. Permanent Black,2011. p.77-81.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন