এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • দেশভাগঃ ফিরে দেখা(দ্বিতীয় পর্ব)

    I
    অন্যান্য | ২৬ অক্টোবর ২০১৭ | ৫৯১১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • গবু | 2345.110.564512.251 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ১৫:১০370922
  • সত্যি, এই লেখাটা শেষ না হলে খারাপ লাগবে।
  • I | 7845.15.672323.80 | ০১ আগস্ট ২০১৮ ২৩:৪৪370924
  • জিন্না ও তাঁর দ্বিজাতিতত্ব নিয়ে একটি অ্যানেকডোট রয়েছে (অ্যানেকডোট বললাম এই কারণে, যে এর সমর্থনে কোনো নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স আমি খুঁজে পাই নি)। ১৯৪৭ সালের মে মাসে যখন বাংলা ও পাঞ্জাব বিভাজনের কথা চলছে, তখন জিন্না নাকি তাঁর অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে মাউন্টব্যাটেনকে বলেন-
    "Your Excellency doesn't understand that the Punjab is a nation. Bengal is a nation. A man is a Punjabi or a Bengali first before he is a Hindu or a Muslim. If you give us those provinces you must, under no condition, partition them. You will destroy their viability and cause endless bloodshed and trouble.

    উত্তরে সদা-স্ট্রিটস্মার্ট হাজির-জবাব মাউন্টব্যাটেন নাকি বলেছিলেন-

    "Yes, of course. A man is not only a Punjabi or a Bengali before he is a Muslim or Hindu, but he is an Indian before all else. What you're saying is the perfect, absolute answer I've been looking for. You've presented me the arguments to keep India united."

    ঘটনাটি সত্যি-মিথ্যা যাই হোক না কেন, একথা কিছুতেই এড়ানো যায় না যে পাকিস্তান রাষ্ট্র তৈরী হয়ে যাবার পরে দ্বিজাতিতত্বের ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা মুসলিম লিগের কাছে ফুরিয়ে এসেছিল। পাকিস্তান মুসলিম লিগের প্রথম সভাপতি চৌধরি খালিকুজ্জামান তাঁর স্মৃতিকথা 'Pathway to Pakistan'বইতে লিখেছেনঃ "The two-nation theory, which we had used in the fight for Pakistan, had created not only bad blood against the Muslims of the minority provinces, but also an ideological wedge, between them and the Hindus of India.".(1) পরে আবার লিখছেন ...."He (Huseyn Shaheed Suhrawardy) doubted the utility of the two-nation theory, which to my mind also had never paid any dividends to us, but after the partition, it proved positively injurious to the Muslims of India, and on a long-view basis for Muslims everywhere."(2)

    ১৯৪৭ সালের ১লা অগাস্ট জিন্না তাঁর দিল্লির বাড়িতে ভারতীয় গণপরিষদের মুসলিম লিগ সদস্যদের একটি বিদায়-সম্বর্ধনায় আমন্ত্রন জানান। সেখানে জনৈক রিজওয়ানুল্লা জিন্নাকে ভারতে-থেকে যাওয়া মুসলিমদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু অপ্রীতিকর প্রশ্ন করেন। জিন্নাকে কোনোদিন কোনো প্রশ্নের মুখে এরকম বিচলিত দেখায় নি। হয়তো সেই মিটিংয়ের স্মৃতি জিন্নার ঘাড় থেকে দ্বিজাতিতত্বের ভুত নামাতে সাহায্য করে থাকবে (অন্ততঃ খালিকুজ্জামান তাই মনে করেন )।কেননা এর ঠিক পরের বক্তৃতাতেই (১১ই অগাস্ট,১৯৪৭) পাকিস্তানের মনোনীত গভর্নর জেনারেল ও পাকিস্তান গণপরিষদের প্রধান মহম্মদ আলি জিন্না ইসলামিক জাতীয়তার বদলে পাকিস্তানি জাতীয়তার কথা বলবেন, যেখানে সব জাতি-ধর্ম -সম্প্রদায়ের সমানাধিকার -" ... You may belong to any religion or caste or creed—that has nothing to do with the business of the State ... I think we should keep that in front of us as our ideal and you will find that in course of time Hindus would cease to be Hindus and Muslims would cease to be Muslims, not in the religious sense, because that is the personal faith of each individual, but in the political sense as citizens of the State.(3)"। দুর্ভাগ্যের কথা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের পরবর্তী গতিপ্রকৃতি জিন্নার সেই ঘোষণার কোনো মর্যাদা দেয় নি।

    দ্বিজাতিতত্বের সমালোচকদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ইতিহাসবিদ হুসেইন হাক্কানি, ক্রেইগ ব্যাক্সটার,তারেক ফাতা, রাজনৈতিক ভাষ্যকার ইরফান হুসেইন......লিস্ট বেশ লম্বা। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পরেও প্রায় এক তৃতীয়াংশ মুসলিম ভারতে থেকে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছিলেন। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গঠন ছিল দ্বিজাতিতত্বের নাকে আরেকটি পেল্লায় ঘুষি। সিন্ধ, বালোচ, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের (খাইবার পাখতুনখোয়া) চলমান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলির প্রত্যেকটিই ইসলামিক সত্ত্বার উর্ধ্বে জাতিসত্ত্বার অগ্রাধিকার তুলে ধরেছে। মোহাজিরদের দল এম কিউ এম কোনোকালেই দ্বিজাতিতত্ব মানে নি। তাদের নেতা ফারুক সাত্তার একদা বলেছিলেন-"যদি এমন কোনো তত্ব থেকেও থাকে তবে তা নিশ্চয় এতদিনে বঙ্গোপসাগরে ডুবে মরেছে।"

    এই সুযোগে দ্বিজাতিতত্ত্বের আর এক পিতার আত্মিক সংকটের কথা বলা যেতে পারে। একটু অপ্রাসংগিক শোনাতে পারে, কিন্তু এসব কথা বলবার সুযোগ পরে আসবে বলে মনে হয় না। মহম্মদ ইকবালের বিপন্নতার কথা। ইকবালের ইসলামের ধারণা তাঁর সাথীরা কেউ নিতে পেরেছিলেন বলে মনে হয় না। জিন্নাও নন। প্রতিষ্ঠিত ইসলামের ধারণার বাইরে গিয়ে তাঁর ইসলাম ছিল মানুষের এক মহান মুক্তির পথ। মনে করেছিলেন "ফক্‌র" ই হতে পারে যথার্থ সমাজব্যবস্থার ভিত্তি, যার মধ্যে রয়েছে জিক্‌র আর ফিক্‌র। ধনিক শ্রেণীর ধ্বংস আর 'গরিবের সর্বাত্মক মঙ্গল আর মুক্তি'ই ছিল ইকবালের ফিক্‌র। (4) ভেবেছিলেন সর্বশক্তিমান শয়তানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মত শক্তি হল মার্কসবাদ। রুশ দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ইকবাল। বলেছিলেন, একটাই তার নেতির দিক, তা হল তাদের ঈশ্বরহীনতা। সূর্যে দেবত্ব আরোপ করেছিলেন তিনি, রামকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কখনো বা। উপনিষদ ছিল তাঁর প্রিয় বই; শ্রদ্ধা করতেন খ্রীষ্ট ও বুদ্ধকে। চেয়েছিলেন ইসলামের পুনর্গঠন। স্বভাবতঃই তাঁকে আক্রান্ত হতে হয়েছিল গোঁড়া মুসলিম ও হিন্দু উভয় পক্ষ থেকেই। লিখেছিলেন-
    'জাহিদ-এ তং নজরনে মুঝে কাফির জানা
    আউর কাফির ইয়ে সমঝতা হ্যয় মুসলমান হুঁ ম্যয়।'
    (গোঁড়া মুসলিম আমাকে কাফের বলে আর কাফের ভাবে যে আমি নিছক মুসলমান।)

    অমিয় চক্রবর্তী লিখে গেছেন-'ইকবাল দীর্ঘ রোগশয্যায় জীবন্মৃত, বিশেষ একটি রাষ্ট্রিক দলের কাছে তিনি প্রাত্যহিক জীবিকার জন্য আপাদমস্তক বিক্রীত নির্ভরশীল। বলতেন, দলকে বলেছিলাম তোমাদের মতামতে আমি বিশ্বাসী নই, আমি কবি। দলপতি উত্তর করলেন, তোমার বিশ্বাস চাই না, তোমার নাম চাই; বিপদকাল এসেছে দলের। দীর্ঘ্শ্বাস ফেলে কবি ইকবাল বললেন,"আমার নাম দিয়েছি। ইকবাল বেঁচে নেই। ইকবাল মৃত"।' (5)

    ইকবাল তাও ভাগ্যবান, তাঁকে ৪৬-৪৭ সাল দেখে যেতে হয় নি। তাঁর সাধের দ্বিজাতিতত্বের চরম ফলিত পরিণাম, লাখ লাখ মানুষের হত্যা-অপহরণ-ধর্ষণ-দেশত্যাগ, উপমহাদেশ জুড়ে মৃত্যুর মহোৎসব দেখে তিনি কী বলতেন কে জানে !

    'দে উইল ড্যান্স অন মাই গ্রেভ'-আত্মধিক্কারে এ কথাই নাকি বলেছিলেন একদা ইকবাল।

    দ্বিজাতিতত্বের হিন্দু পিতাদের অবশ্য কোনো আত্মধিক্কার বা অপরাধবোধ কোনোদিন হয়েছিল বলে শোনা যায় নি।

    Notes
    1.Khaliquzzaman, Pathway to Pakistan 1961, p. 390
    2.Ibid, p.400
    3.Wolpert, Stanley (1984). Jinnah of Pakistan. New York: Oxford University Press. ISBN 978-0-19-503412-7, pp 337-339
    4.শঙ্খ ঘোষ, ঐতিহ্যের বিস্তার, প্যাপিরাস,আগস্ট ১৯৯৮, পৃ ৫৩।
    5.শঙ্খ ঘোষ, ঐতিহ্যের বিস্তার, প্যাপিরাস,আগস্ট ১৯৯৮, পৃ ৮৫-৮৬।
  • I | 7845.15.672323.80 | ০১ আগস্ট ২০১৮ ২৩:৪৪370923
  • জিন্না ও তাঁর দ্বিজাতিতত্ব নিয়ে একটি অ্যানেকডোট রয়েছে (অ্যানেকডোট বললাম এই কারণে, যে এর সমর্থনে কোনো নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স আমি খুঁজে পাই নি)। ১৯৪৭ সালের মে মাসে যখন বাংলা ও পাঞ্জাব বিভাজনের কথা চলছে, তখন জিন্না নাকি তাঁর অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে মাউন্টব্যাটেনকে বলেন-
    "Your Excellency doesn't understand that the Punjab is a nation. Bengal is a nation. A man is a Punjabi or a Bengali first before he is a Hindu or a Muslim. If you give us those provinces you must, under no condition, partition them. You will destroy their viability and cause endless bloodshed and trouble.

    উত্তরে সদা-স্ট্রিটস্মার্ট হাজির-জবাব মাউন্টব্যাটেন নাকি বলেছিলেন-

    "Yes, of course. A man is not only a Punjabi or a Bengali before he is a Muslim or Hindu, but he is an Indian before all else. What you're saying is the perfect, absolute answer I've been looking for. You've presented me the arguments to keep India united."

    ঘটনাটি সত্যি-মিথ্যা যাই হোক না কেন, একথা কিছুতেই এড়ানো যায় না যে পাকিস্তান রাষ্ট্র তৈরী হয়ে যাবার পরে দ্বিজাতিতত্বের ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা মুসলিম লিগের কাছে ফুরিয়ে এসেছিল। পাকিস্তান মুসলিম লিগের প্রথম সভাপতি চৌধরি খালিকুজ্জামান তাঁর স্মৃতিকথা 'Pathway to Pakistan'বইতে লিখেছেনঃ "The two-nation theory, which we had used in the fight for Pakistan, had created not only bad blood against the Muslims of the minority provinces, but also an ideological wedge, between them and the Hindus of India.".(1) পরে আবার লিখছেন ...."He (Huseyn Shaheed Suhrawardy) doubted the utility of the two-nation theory, which to my mind also had never paid any dividends to us, but after the partition, it proved positively injurious to the Muslims of India, and on a long-view basis for Muslims everywhere."(2)

    ১৯৪৭ সালের ১লা অগাস্ট জিন্না তাঁর দিল্লির বাড়িতে ভারতীয় গণপরিষদের মুসলিম লিগ সদস্যদের একটি বিদায়-সম্বর্ধনায় আমন্ত্রন জানান। সেখানে জনৈক রিজওয়ানুল্লা জিন্নাকে ভারতে-থেকে যাওয়া মুসলিমদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু অপ্রীতিকর প্রশ্ন করেন। জিন্নাকে কোনোদিন কোনো প্রশ্নের মুখে এরকম বিচলিত দেখায় নি। হয়তো সেই মিটিংয়ের স্মৃতি জিন্নার ঘাড় থেকে দ্বিজাতিতত্বের ভুত নামাতে সাহায্য করে থাকবে (অন্ততঃ খালিকুজ্জামান তাই মনে করেন )।কেননা এর ঠিক পরের বক্তৃতাতেই (১১ই অগাস্ট,১৯৪৭) পাকিস্তানের মনোনীত গভর্নর জেনারেল ও পাকিস্তান গণপরিষদের প্রধান মহম্মদ আলি জিন্না ইসলামিক জাতীয়তার বদলে পাকিস্তানি জাতীয়তার কথা বলবেন, যেখানে সব জাতি-ধর্ম -সম্প্রদায়ের সমানাধিকার -" ... You may belong to any religion or caste or creed—that has nothing to do with the business of the State ... I think we should keep that in front of us as our ideal and you will find that in course of time Hindus would cease to be Hindus and Muslims would cease to be Muslims, not in the religious sense, because that is the personal faith of each individual, but in the political sense as citizens of the State.(3)"। দুর্ভাগ্যের কথা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের পরবর্তী গতিপ্রকৃতি জিন্নার সেই ঘোষণার কোনো মর্যাদা দেয় নি।

    দ্বিজাতিতত্বের সমালোচকদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ইতিহাসবিদ হুসেইন হাক্কানি, ক্রেইগ ব্যাক্সটার,তারেক ফাতা, রাজনৈতিক ভাষ্যকার ইরফান হুসেইন......লিস্ট বেশ লম্বা। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পরেও প্রায় এক তৃতীয়াংশ মুসলিম ভারতে থেকে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছিলেন। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গঠন ছিল দ্বিজাতিতত্বের নাকে আরেকটি পেল্লায় ঘুষি। সিন্ধ, বালোচ, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের (খাইবার পাখতুনখোয়া) চলমান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলির প্রত্যেকটিই ইসলামিক সত্ত্বার উর্ধ্বে জাতিসত্ত্বার অগ্রাধিকার তুলে ধরেছে। মোহাজিরদের দল এম কিউ এম কোনোকালেই দ্বিজাতিতত্ব মানে নি। তাদের নেতা ফারুক সাত্তার একদা বলেছিলেন-"যদি এমন কোনো তত্ব থেকেও থাকে তবে তা নিশ্চয় এতদিনে বঙ্গোপসাগরে ডুবে মরেছে।"

    এই সুযোগে দ্বিজাতিতত্ত্বের আর এক পিতার আত্মিক সংকটের কথা বলা যেতে পারে। একটু অপ্রাসংগিক শোনাতে পারে, কিন্তু এসব কথা বলবার সুযোগ পরে আসবে বলে মনে হয় না। মহম্মদ ইকবালের বিপন্নতার কথা। ইকবালের ইসলামের ধারণা তাঁর সাথীরা কেউ নিতে পেরেছিলেন বলে মনে হয় না। জিন্নাও নন। প্রতিষ্ঠিত ইসলামের ধারণার বাইরে গিয়ে তাঁর ইসলাম ছিল মানুষের এক মহান মুক্তির পথ। মনে করেছিলেন "ফক্‌র" ই হতে পারে যথার্থ সমাজব্যবস্থার ভিত্তি, যার মধ্যে রয়েছে জিক্‌র আর ফিক্‌র। ধনিক শ্রেণীর ধ্বংস আর 'গরিবের সর্বাত্মক মঙ্গল আর মুক্তি'ই ছিল ইকবালের ফিক্‌র। (4) ভেবেছিলেন সর্বশক্তিমান শয়তানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মত শক্তি হল মার্কসবাদ। রুশ দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ইকবাল। বলেছিলেন, একটাই তার নেতির দিক, তা হল তাদের ঈশ্বরহীনতা। সূর্যে দেবত্ব আরোপ করেছিলেন তিনি, রামকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কখনো বা। উপনিষদ ছিল তাঁর প্রিয় বই; শ্রদ্ধা করতেন খ্রীষ্ট ও বুদ্ধকে। চেয়েছিলেন ইসলামের পুনর্গঠন। স্বভাবতঃই তাঁকে আক্রান্ত হতে হয়েছিল গোঁড়া মুসলিম ও হিন্দু উভয় পক্ষ থেকেই। লিখেছিলেন-
    'জাহিদ-এ তং নজরনে মুঝে কাফির জানা
    আউর কাফির ইয়ে সমঝতা হ্যয় মুসলমান হুঁ ম্যয়।'
    (গোঁড়া মুসলিম আমাকে কাফের বলে আর কাফের ভাবে যে আমি নিছক মুসলমান।)

    অমিয় চক্রবর্তী লিখে গেছেন-'ইকবাল দীর্ঘ রোগশয্যায় জীবন্মৃত, বিশেষ একটি রাষ্ট্রিক দলের কাছে তিনি প্রাত্যহিক জীবিকার জন্য আপাদমস্তক বিক্রীত নির্ভরশীল। বলতেন, দলকে বলেছিলাম তোমাদের মতামতে আমি বিশ্বাসী নই, আমি কবি। দলপতি উত্তর করলেন, তোমার বিশ্বাস চাই না, তোমার নাম চাই; বিপদকাল এসেছে দলের। দীর্ঘ্শ্বাস ফেলে কবি ইকবাল বললেন,"আমার নাম দিয়েছি। ইকবাল বেঁচে নেই। ইকবাল মৃত"।' (5)

    ইকবাল তাও ভাগ্যবান, তাঁকে ৪৬-৪৭ সাল দেখে যেতে হয় নি। তাঁর সাধের দ্বিজাতিতত্বের চরম ফলিত পরিণাম, লাখ লাখ মানুষের হত্যা-অপহরণ-ধর্ষণ-দেশত্যাগ, উপমহাদেশ জুড়ে মৃত্যুর মহোৎসব দেখে তিনি কী বলতেন কে জানে !

    'দে উইল ড্যান্স অন মাই গ্রেভ'-আত্মধিক্কারে এ কথাই নাকি বলেছিলেন একদা ইকবাল।

    দ্বিজাতিতত্বের হিন্দু পিতাদের অবশ্য কোনো আত্মধিক্কার বা অপরাধবোধ কোনোদিন হয়েছিল বলে শোনা যায় নি।

    Notes
    1.Khaliquzzaman, Pathway to Pakistan 1961, p. 390
    2.Ibid, p.400
    3.Wolpert, Stanley (1984). Jinnah of Pakistan. New York: Oxford University Press. ISBN 978-0-19-503412-7, pp 337-339
    4.শঙ্খ ঘোষ, ঐতিহ্যের বিস্তার, প্যাপিরাস,আগস্ট ১৯৯৮, পৃ ৫৩।
    5.শঙ্খ ঘোষ, ঐতিহ্যের বিস্তার, প্যাপিরাস,আগস্ট ১৯৯৮, পৃ ৮৫-৮৬।
  • I | 7845.15.672323.80 | ০১ আগস্ট ২০১৮ ২৩:৪৯370925
  • দুঃখিত, দু বার পোস্ট হয়ে গেল। আমার নেট কানেকশনের গলদ।
  • Du | 237812.58.890112.136 | ০২ আগস্ট ২০১৮ ০১:৫৮370926
  • ইকবাল !! ঃ((((
  • I | 7845.15.456712.95 | ১২ আগস্ট ২০১৮ ০১:৪৫370927
  • ১৯৩৫ সালে 'গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া' আইন চালু হল। ভারতকে ১১টি প্রদেশে ভাগ করে প্রতিটি প্রদেশের জন্য একটি নির্বাচিত প্রাদেশিক সরকারের ব্যবস্থা করা হল। প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র সমেত আসল ক্ষমতা অবশ্য রইল দিল্লীর হাতেই, সেখানে প্রদেশ সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। তাছাড়া প্রদেশ সরকারগুলির মাথায় রইলেন ব্রিটিশ গভর্নর, যে কোনো বিষয়ে যাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। মোটামুটিভাবে বিশৃঙ্খলার চূড়ান্ত । কার ক্ষমতা কতদূর সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হল না। ফলতঃ আপৎকালে প্রাদেশিক সরকার ও গভর্নর উভয়েরই হাত গুটিয়ে বসে থাকা ও একে-অন্যকে দোষারোপ করার রাস্তা খোলা রইল, যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া গেছিল ৪২-৪৩ এ বাংলার দুর্ভিক্ষ ও ৪৬এ কলকাতার দাঙ্গার সময়। যাইহোক নির্বাচকমন্ডলীর আয়তন বেশ খানিকটা বাড়ানো হল- ৬০ লক্ষ থেকে ৩ কোটি (মতান্তরে সাড়ে তিন কোটি)-যা তৎকালীন মোট জনসংখ্যার ১২%। মেয়েরাও এই প্রথম ভোটাধিকার পেলেন।

    নতুন ব্যবস্থায় ভারতের প্রথম নির্বাচন হল ১৯৩৭ সালে। ১১টি প্রদেশের মধ্যে ৮টিতে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল-বাদ গেল বাংলা, পাঞ্জাব ও সিন্ধ।মুসলিম লিগের হাল বেশ খারাপ হল। একটি প্রদেশেও লিগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারে-কাছেও এল না। তাদের সবচেয়ে ভালো ফল হল মুসলিম-মাইনরিটি প্রদেশগুলিতে। যুক্তপ্রদেশে ৬৪টি মুসলিম আসনের মধ্যে তারা ২৯টি পেল।লক্ষণীয়, তারা সবচেয়ে খারাপ করল মুসলিম-সংখ্যাগুরু প্রদেশগুলিতে( যেগুলি পরে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে)-যথা বাংলা, পাঞ্জাব, সিন্ধ ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে। বাংলায় ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি কংগ্রেসের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে মুসলিম লিগের হাত ধরলেন। পাঞ্জাবে জিন্নার আশায় জল ঢেলে ক্ষমতায় এলেন ইউনিয়নিস্ট পার্টির নেতা সিকন্দর হায়াত খান। ক্রুদ্ধ জিন্না ঘোষণা করলেন-'আমি আর কোনোদিন পাঞ্জাবে আসবো না... একটা হোপলেস জায়গা !' (1) সিন্ধে ক্ষমতা দখল করল সিন্ধ ইউনাইটেড পার্টি। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ক্ষমতায় এল খান আব্দুল জব্বর খানের নেতৃত্বে (ইনি 'সীমান্ত গান্ধি' খান আব্দুল গফফর খানের দাদা) ফ্রন্টিয়ার ন্যাশন্যাল কংগ্রেস (জাতীয় কংগ্রেসের শাখা সংগঠন) এবং সকলকে বিস্মিত করে মুসলিম লিগ একটিও আসন দখল করতে পারল না।

    ৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিম লিগ যে খুব একটা ভালো ফল করতে পারবে না, সেটা জিন্না মোটামুটি আঁচ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু সে ফল যে এতটাই হতাশাব্যঞ্জক হবে, সেটা তাঁর ভাবনার বাইরে ছিল। তাই বলে এত সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার লোক ছিলেন না তিনি। সাময়িক হতাশার অভিব্যক্তি বাদ দিলে জিন্নার ধৈর্য ও জয়ের অদম্য ইচ্ছা ছিল প্রবাদপ্রতিম। এই পরাজয় থেকে বেশ কিছু শিক্ষা পেলেন তিনি। স্পষ্ট্তঃ বোঝা যাচ্ছিল, মুখে যতই দাবী করুক না কেন, মুসলিম লিগ প্রকৃত অর্থে তখনো ভারতীয় মুসলিমদের প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারে নি। প্রাদেশিক মুসলিম নেতারা মুসলিম লিগকে বিশ্বাস করেন না। গরীব মুসলিম জনগণ মুসলিম লিগকে তাঁদের প্রতিনিধি বলে ভাবেন না। তাঁদের চোখে মুসলিম লিগ কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় উচ্চশিক্ষিত বড়লোক মুসলমানদের একটি গোষ্ঠী। দেশের কোথাও কংগ্রেসের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মত শক্তপোক্ত সংগঠন মুসলিম লিগের নেই। একটিই শুধু আশার আলো, ভারতীয় মুসলিমরা মুসলিম লিগকে তেমন পছন্দ করেন না ঠিকই; কিন্তু কংগ্রেসের প্রতিও তাঁদের মনোভাব যে অনুকূল, এমনটা নয়। দেশের মোট ৪৮২টি মুসলিম আসনের মধ্যে কংগ্রেস প্রার্থী দাঁড় করাতে পেরেছে মাত্র ৫৮টিতে, জিতেছে কেবল ২৬টিতে। (2)

    দলের ফুটোফাটা সারাইয়ে কালক্ষেপ করলেন না জিন্না। সবার আগে দরকার মুসলিম আম জনতার চোখে দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। লিগ যে শুধু অল্প কিছু বড়লোকের দল নয়, ভারতের সকল মুসলিমের দল সেই বার্তা গোটা দেশে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিলেন। দলের বার্ষিক সদস্যচাঁদা ধার্য করলেন খুব কম-দু আনা (কংগ্রেসের চাঁদার অর্ধেক), যাতে গরীবগুর্বো মুসলিমরাও দলের সদস্য হতে পারেন। জেলাস্তরে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করলেন। যে রাজ্যে যার সঙ্গে যতটুকু সমঝোতার সুযোগ পেলেন, কৃতজ্ঞচিত্তে দু হাত ভরে নিলেন। আশু ফললাভের লক্ষ্যে নয়, তাঁর লক্ষ্য সুদূর। বাংলার মুসলিম লিগ নেতা ইস্পাহানিকে লেখা তাঁর সেই সময়কার একটি চিঠির খানিকটা তুলে দেওয়া হল-"...The aims are not achieved immediately, they are laid down. But I think, on the whole, Bengal has done well and we must be thankful for small mercies. As you go on, of course with patience and tact, things are bound to develop and improve more and more...." (3) . প্রয়োজনে এমন কি শত্রুর সঙ্গেও সমঝোতা করতে রাজি ছিলেন জিন্না। নির্বাচন-পরবর্তীকালে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ্ভাবে সরকার গঠন করায় আগ্রহ দেখান তিনি; বিশেষ করে যুক্ত প্রদেশে। কংগ্রেস নেতা গোবিন্দবল্লভ পন্থ ও লিগ নেতা খালিকুজ্জামান যৌথ সরকার গঠনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনায় বেশ খানিক দূর এগিয়েও যান। কিন্তু নেহরু ও কংগ্রেসের আরো কিছু জাতীয় নেতা '৩৭ সালের নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে দুর্বল মুসলিম লিগকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন নি। জাতীয় নেতারা মুসলিম লিগের সঙ্গে যৌথ সরকার গঠনের প্রস্তাব খারিজ করে দেন। সম্ভবতঃ এটি কংগ্রেসের তরফে একটি মস্ত বড় ভুল হয়েছিল। বিজয়ীর মহানুভবতায় কংগ্রেস যদি মুসলিম লিগের সঙ্গে মন্ত্রীসভা ভাগ করে নিত, তাহলে ভবিষ্যতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি অন্যরকম হতে পারত। ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কংগ্রেস নেতাদের দূরদর্শিতার অভাব চোখে পড়ার মত।এই ঘটনা শুধু যে প্রত্যাখ্যাত জিন্না'র রোখ বাড়িয়ে দেয়, তাই নয়। এর থেকে তিনি কংগ্রেসের 'হিন্দু বায়াস' নিয়ে প্রচার চালানোর একটি চমৎকার সুযোগ পেয়ে যান। অভিযোগ করেন, যেখানেই কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে, সেখানেই তারা মুসলিম দলগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করতে নারাজ হয় এবং মুসলমানদের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবী করে।

    পেন্ডেরেল মুন লিখেছেন, এটি একটি "... fatal error-the prime cause of creation of Pakistan"....(The Congress) passionately desired to preserve the unity of India. They consistently
    acted so as to make its partition certain'. (4)

    Notes:
    1.Ayesha Jalal, The Sole Spokesman, p22.
    2.Ian Talbot and Gurharpal Singh, The Partition of India,Cambridge University Press, p.32
    3.Jinnah to Ispahani, 4 April 1937, Jinnah-Ispahani correspondent, p.81
    4.Penderel Moon, Divide and Quit, pp 13-15..
  • সিকি | ১২ আগস্ট ২০১৮ ২০:৫৩370928
  • পড়ছি।
  • dd | 670112.51.3423.180 | ১২ আগস্ট ২০১৮ ২১:৩১370929
  • খুবই দারুন হচ্ছে, এটাও জানিয়ে গেলেম।
  • Du | 7845.184.90012.64 | ১৩ আগস্ট ২০১৮ ০৯:৩১370930
  • হ্যাঁ দারুন
  • I | 7845.15.123412.227 | ১৫ আগস্ট ২০১৮ ০০:৪৬370739
  • দেশভাগের ৭২ বছর পুর্তিতে অন্ততঃ একটা কিস্তি লেখা উচিত ছিল।কিন্তু আমি অপারগ। ছেলের পরীক্ষা।
  • Ishan | 2390012.189.892312.15 | ১৫ আগস্ট ২০১৮ ০০:৫৪370740
  • ইন্দো আমার একটা ভুল ধরিয়ে দিয়েছে, এই লক্ষ্য করলাম। থ্যাংকু। কিন্তু সেটা দেখেই নাজিমুদ্দিন সম্পর্কে শিবরামের অনন্য একটা মূল্যায়ন মনে পড়ল। ফজলুল হক আর সুরাবর্দীর মাঝখানে নাজিমুদ্দিন বাংলার প্রধানমন্ত্রী হন। শিবরাম তাঁকে নিয়ে এই রকম কিছু একটা লিখেছিলনঃ

    -- এই নাৎসিমুদ্দিন ভদ্রলোক।
    -- সেটা আবার কে?
    -- Nazi এর উচ্চারণ নাৎসি হয় জানেন না?

    ডায়লগ গুলো বানালাম। কিন্তু পানটা শিবরামেরই।
  • pi | 2345.110.674512.224 | ১৫ আগস্ট ২০১৮ ০৭:৪৭370741
  • জমিয়ে জমিয়ে পড়ছি। অনেক কিছুই জানা ছিলনা এভাবে।আজ কিন্তু একটা কিস্তির আশায় ছিলাম।
  • pi | 2345.110.674512.224 | ১৫ আগস্ট ২০১৮ ০৭:৫১370742
  • সেসময় মেয়েদের ভোটাধিকার পাওয়া নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত হবে? এর জন্য চাপ ছিল কিনা, থাকলে কাদের থেকে? ইন্গ্ল্যান্ডে ত অরো অনেক আগে এসে গে্ঘিল, এখানে এনিয়েও দেরি কেন?
  • I | 7845.15.457812.91 | ১৫ আগস্ট ২০১৮ ১২:৩৩370743
  • The Women's Indian Association founded by Margaret Cousins and her colleagues in 1917 demanded women's franchise and eligibility to the legislature on the same basis as men. The WIA launched a vigorous campaign and was supported by the Indian National Congress and the Muslim League. The Montagu-Chelmsford Reforms left the question of women's suffrage to be decided by the provincial legislatures. Madras was the first province to grant votes to women and between 1921 and 1930 one by one the provinces extended the franchise to women and allowed them to stand as legisalative candidates.

    In the years 1928–1937, there were debates on the terms under which women's franchise should be expanded. The British Government supported reservation of seats for women, separate electorates and continued but expanded franchise qualifications. Most of the leaders of the women's movement opposed separate electorates and reservation of seats for women and demanded adult franchise.

    The demand of the women's movement for equal political rights and women's active participation in the freedom struggle led the Indian National Congress at its Karachi session in 1931 to pledge gender equality before the law and universal adult franchise. This pledge was honoured in the Constitution of free India.
  • I | 7845.15.2345.192 | ১৯ আগস্ট ২০১৮ ০২:১৭370745
  • ১৯৩৪ সালে কংগ্রেসের মধ্যে সোশ্যালিস্ট ও অন্যান্য বামপন্থীরা মিলিত হয়ে 'কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি' গঠন করেন। নেহরু কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে এই গোষ্ঠীতে যোগদান করেন নি, তবে এঁদের মতাদর্শের প্রতি নেহরুর সমর্থন ছিল। '৩৭ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জয়ী হলে সরকার গঠন-এই ইস্যুতে কংগ্রেসে দ্বিমত দেখা দেয়। নেহরু ও সোশ্যালিষ্টরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের হাতের পুতুল হয়ে মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে চান নি। কিন্তু গান্ধির আশীর্বাদপুষ্ট বল্লভভাই প্যাটেল ও রাজেন্দ্রপ্রসাদ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের লাইন-কে জিতিয়ে আনেন। তা না না করে আটটি প্রদেশে কংগ্রেস সরকারেও আসে, এমন কি আসামে পর্যন্ত , যেখানে তারা একক বৃহত্তম দল হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি গিয়ে উঠতে পারে নি। নির্বাচনী ফলাফলের অঙ্ক একইরকম হওয়া সত্তেও বাংলা যে কেন বাদ গেল তা আগেই বলেছি।

    '৩৭ থেকে '৩৯ ভারতের ইতিহাসে অপেক্ষাকৃত শান্তির সময়। '৩৯ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতেই অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টে গেল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না ঘটলে গোটা পৃথিবীর মতই ভারতেও রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পূর্ণ আলাদা খাতে বইতে পারত। হয়তো দেশভাগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হত। ইয়ান ট্যালবটের মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও '৩৭-'৩৯ এর মধ্যে মুসলিম-মাইনরিটি প্রদেশে মুসলিমদের মধ্যে কংগ্রেসশাসনের অভিজ্ঞতা -এই ঘটনাদ্বয় এবং জিন্নার এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা-এইসব না হলে পাকিস্তান তৈরী হত না। (1)

    নির্বাচনে অভুতপূর্ব সাফল্য কংগ্রেসের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ১৯৩৭ সালে নেহরু দলের পক্ষ থেকে কে. এম আশরফের ওপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন ভারতীয় মুসলিমদের সঙ্গে কংগ্রেসের জনসংযোগ বাড়ানোর। সে সব পরিকল্পনা অচিরেই পরিত্যক্ত হল। ভারতীয় মুসলিমদের টেকন ফর গ্রান্টেড ধরে নেওয়া হল। নেহরু বিশ্বাসই করতেন না অর্থনৈতিক ইস্যু ছাড়া আর কোনো ইস্যু , বিশেষতঃ ধর্মীয় ইস্যু ভারতীয় জনমনে কোনো আবেদন সৃষ্টি করতে পারে। যদিও '৩৭ সালে মুসলিমদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ভেবে 'বন্দে মাতরম' গানটির শেষ কয়েকটি স্তবক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। (2) তবে কংগ্রেসের ভেতরকার হিন্দুত্ববাদী নেতারা মুসলিমদের এতটা মাথায় তোলার পক্ষপাতী ছিলেন না।

    জিন্না এদিকে হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন না। মুসলিম লিগের পক্ষ থেকে জোরালো প্রচার শুরু হল কংগ্রেসের 'হিন্দু পক্ষপাত' নিয়ে। যুক্ত প্রদেশে গো-সংরক্ষণ, উর্দুর পরিবর্তে হিন্দিকে সরকারী ভাষা হিসেবে চালু করা -এই ইস্যুগুলি লিগের প্রচারে আরো ধুয়ো দিল। ১৯৩৮ সালে লিগ 'পীরপুর কমিটি' গঠন করল মুসলিমদের ওপর কংগ্রেস শাসনের 'অত্যাচার' খতিয়ে দেখবার জন্য। বিহারেও এক বছর পরে অনুরূপ একটি কমিটি (শরিফ কমিটি)তৈরী হল। সে সব কমিটির রিপোর্টে কংগ্রেসী 'অত্যাচার'কে প্রবল ফুলিয়েফাঁপিয়ে দেখানো হল। সত্যি-মিথ্যা'র এই অপূর্ব ককটেল কিন্তু মুসলিম জনমানসে বেশ প্রভাব ফেলেছিল।(3)

    ১৯৩৮ সালেই জিন্না তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড ব্রাবোর্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুসলিম লিগের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করবার আশ্বাস দিলেন। বিনিময়ে সরকারকে মুসলিম লিগকেই ভারতীয় মুসলিমদের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। কিন্তু '৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিম লিগের এমনই দুরবস্থা হয়েছে, যে তাদের আর গ্রাহ্যের মধ্যে না আনলেও চলে। ব্রাবোর্ণ জিন্নাকে পাত্তা দিলেন না। ব্রিটিশ প্রশাসনের নেকনজরে আসবার জন্য জিন্নাকে আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। (4)

    স্বল্পমেয়াদী এই শান্তি অবশ্যই ছিল ঝড় উঠবার আগের আপাত শান্তি। মুসলিম মৌলবাদীদের সঙ্গে হিন্দু মৌলবাদীদের আস্ফালনও তাল দিয়ে বেড়ে উঠছিল। ১৯৩৭ সালে সাভারকর তাঁর নিজস্ব দ্বিজাতিতত্ত নিয়ে হাজির হবেন (আগেই উল্লিখিত)। এক বছর পরে চরমপন্থার দিকে আরো এগিয়ে গিয়ে তিনি ঘোষণা করবেন : “the Hindus are the nation in India – in Hindusthan, and the Moslem minority a community." (5)

    এই সেই সময় যখন কংগ্রেসের সঙ্গে ভারতীয় পুঁজিবাদীদের মধুচন্দ্রিমা শুরু হবে। স্বভাবতই দু বছরের এই কংগ্রেসী শাসনকালে কৃষক-মজুর ও দলিতদের মধ্যে কংগ্রেসের প্রতি বিরুদ্ধতা বাড়তে থাকবে। বামপন্থী আন্দোলন জনপ্রিয় হতে শুরু করে। বম্বে, যুক্ত প্রদেশ ও বাংলায় জঙ্গী শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। কংগ্রেস সরকারগুলি ক্রমশঃই শ্রমিক-বিরোধী অবস্থান নিতে শুরু করে। ১৯৩৮ সালে বম্বে সরকার ধর্মঘট ও লক-আউট বন্ধ করবার উদ্দেশ্যে 'ট্রেডার্স ডিসপুট অ্যাক্ট' বিলটি পেশ করে। শ্রমিকরা এর বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে আসেন। সুভাষ চন্দ্র বসু পর্যন্ত দলীয় লাইনের বিপক্ষে গিয়ে শ্রমিকদের প্রতি সহানুভুতি প্রকাশ করেন।
    (6)

    এই সেই সময় যখন গান্ধি ও সুভাষের মধ্যে তিক্ত ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। চরমপন্থী সুভাষকে গান্ধি কখনোই তেমন পছন্দ করতেন না। ১৯৩৯ সালে গান্ধি-মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে সুভাষ কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন (গান্ধির প্রথম পছন্দ ছিলেন নেহরু, কিন্তু নেহরু রাজী হন নি। তিনি মৌলানা আজাদের নাম প্রস্তাব করেন, যদিও আজাদ প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেন।) কিন্তু সুভাষের পথ ছিল কাঁটা- বিছানো। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে তখনো গান্ধির সমর্থকরাই দলে ভারী। পদে পদে খটাখটি লাগতে থাকায় সুভাষ অবশেষে ১৯৩৯ এর মে মাসে পদত্যাগ করেন। তার ২ বছর পরেই তাঁর 'মহানিষ্ক্রমণ'-ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে কাবুল ও মস্কো হয়ে জার্মানি পৌঁছনো।

    Notes
    1.Ian Talbot and Gurharpal Singh, The Partition of India,Cambridge University Press, p.32
    2.http://www.historydiscussion.net/essay/indian-polity-1939-1945-during-the-period-of-second-world-war/2089.
    3.Ian Talbot and Gurharpal Singh, The Partition of India,Cambridge University Press, p.33.
    4. Tunzelmann, Indian Summer, Pocket Books, ed. 2008, pp.104.
    5. https://thewire.in/history/a-short-history-of-the-rss-and-bjps-double-standard-on-sedition.
    6.https://www.marxists.org/history/international/comintern/sections/britain/periodicals/labour_monthly/1939/01/x01.htm
  • I | 7845.15.453412.151 | ২৬ আগস্ট ২০১৮ ০২:০৯370746
  • ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ৩রা সেপ্টেম্বর ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। সেই দিনই রাত সাড়ে আটটার সময় ভারতের ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো তাঁর সিমলার গভর্নর হাউস থেকে অল ইণ্ডিয়া রেডিও'র মাধ্যমে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন এবং যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থা জারি করলেন। এই ঘোষণাটি ছিল সম্পূর্ণই একতরফা, কারণ লিনলিথগো এই ঘোষণার আগে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন মনে করেন নি। পক্ষান্তরে অন্য চারটি ব্রিটিশ কলোনি -অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড , কানাডা ও দক্ষিন আফ্রিকায় কিন্তু নিজ নিজ পার্লামেন্টে আলোচনা ও সম্মতি আদায়ের পরেই সেসব দেশের ব্রিটিশ প্রশাসন যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। স্বভাবতঃই জাতীয় নেতারা এতে অপমানিত বোধ করেছিলেন। পরের দিন, অর্থাৎ ৪ঠা সেপ্টেম্বর লিনলিথগো জিন্না ও গান্ধিকে ডেকে পাঠালেন তাঁদের প্রতিক্রিয়া যাচাই করবার জন্য। জিন্না ব্রিটেনকে সাহায্য করবার জন্য মুখিয়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁর কিছু শর্ত ছিল। তাদের মধ্যে প্রধান শর্তটিই হল মুসলিম লিগকে ভারতের মুসলিমদের একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে মেনে নিতে হবে এবং ভবিষ্যতে ক্ষমতা হস্তান্তর অথবা সংবিধান প্রণয়নের মত ইস্যুতে মুসলিম লিগের সম্মতি ছাড়া এগোনো চলবে না।

    পক্ষান্তরে গান্ধি নীতিগতভাবে বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনকে সাহায্য করতে রাজি ছিলেন, যদিও অহিংসায় বিশ্বাসী 'মহাত্মা' ইতিমধ্যে ব্রিটিশপক্ষকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকেই বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছিলেন-'Let them take possession of your beautiful island.... allow yourself,man , woman and child, to be slaughtered,but you will refuse to owe allegiance to them.'(1) কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারাও নীতিগতভাবে রাজিই ছিলেন, বিশেষতঃ জওহরলাল নেহরু , যিনি ফ্যাসিবাদকে ভারতবর্ষ তথা গোটা বিশ্বের পয়লা নম্বর শত্রু বলে ভাবতেন ['Hitler and Japan must go to hell.. I shall fight them to the end...'] (2) কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় সৈনিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ভারতের লবডঙ্কা প্রাপ্তির তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁরা ভোলেন নি। জাতীয় কংগ্রেস সবিস্ময়ে জানতে চাইল একটি অগণতান্ত্রিকভাবে শাসিত পরাধীন জাতি কিভাবে বিশ্বের 'গণতন্ত্র রক্ষা'র লড়াইয়ে সামিল হতে পারে। ১৪ই সেপ্টেম্বর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ব্রিটিশ-যুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে অবিলম্বে ভারতরাষ্ট্রের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী জানালেন।

    মাসাধিককাল পরে ১৮ই অক্টোবর লিনলিথগো তাঁর প্রতিক্রিয়া জানালেন। কংগ্রেসকে একটি 'হিন্দু' সংগঠন বলে বর্ণনা করে তিনি পক্ষান্তরে মুসলিম লিগকে মুসলিমদের একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে মেনেই নিলেন।(3) . জানালেন, পূর্ণ স্বাধীনতা দূরস্থান, ব্রিটিশ সরকার ভারতকে বড়জোর ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস-এর মর্যাদা দিতে পারে, এবং তা-ও নিকট ভবিষ্যতে নয়। জিন্না ও মুসলিম লিগের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ভালোই এগিয়েছিল। ৪ঠা সেপ্টেম্বরই লিগ নেতা মহম্মদ জাফরুল্লা খান যুদ্ধে ব্রিটিশপক্ষকে সাহায্য করবার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছিলেন। পাঞ্জাব, বাংলা ও সিন্ধের অকংগ্রেসী প্রাদেশিক সরকারগুলিও পিছিয়ে ছিল না।(4) মুসলিম লিগ, পাঞ্জাবের ইউনিয়নিস্ট নেতারা ও ভারতীয় রাজাদের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে লিনলিথগো কংগ্রেসকে আমল না দেওয়ার ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বিশেষ করে স্বাধীন ভারতের দাবী মঞ্জুর করা তখন লন্ডন ও নয়া দিল্লি উভয়ের কাছেই বিপজ্জনক ঠেকছিল, কেননা জাপান ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে এবং নতুন ভারত সরকার তৈরী হলে তারা যে জাপানী পক্ষ নেবে না, সে বিষয়ে ব্রিটেন মোটেও নিশ্চিত ছিল না।

    লিনলিথগো মুসলিম লিগকে আশ্বস্ত করে জানালেন-"It was unthinkable that we should proceed to plan afresh, or to modify in any respect any important part of India's constitution without again taking counsel with those who have in the recent past been so closely associated on alike task with His majesty's Government.(5)। জিন্নার আশা অবশেষে পূর্ণ হল, লিগ ও কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের কাছে সমান মর্যাদা পেল। লিনলিথগো পরে বলবেন, সেসময় কংগ্রেসের দাবীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জিন্না তাঁকে প্রভূত সাহায্য করেছিলেন এবং সেজন্য তিনি জিন্নার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন। (6). পরের বছর অগাস্ট মাসে জিন্নাকে আরো খুশী করে লিনলিথগো পরিষ্কার জানিয়ে দেবেন, ব্রিটেন এমন কারো হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না, যাদের কর্তৃত্ব ভারতের 'large and powerful elements' (পড়ুন মুসলিম লিগ) মেনে নেবে না।(7)

    ভাইসরয়ের জবাবে অসন্তুষ্ট কংগ্রেস প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় আইনসভা থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিল। ২২শে ডিসেম্বর পদত্যাগের দিন চূড়ান্ত হল। গান্ধি অবশ্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধী ছিলেন, কেননা তাঁর মনে হয়েছিল এতে ব্রিটিশ সরকার ও মুসলিম লিগের সুবিধে করে দেওয়া হবে ।(8) অনেকের মতে লিনলিথগো ইচ্ছাকৃতভাবেই কংগ্রেস নেতৃবৃন্দকে অপমান করেছিলেন এবং তাঁর গোপন অভিসন্ধি ছিল কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করা; স্বভাবতঃই তিনি বেশ খুশী হলেন। (9)

    বলাই বাহুল্য , সব চেয়ে বেশী খুশী হলেন জিন্না। ২২শে ডিসেম্বরকে তিনি (কংগ্রেসের অপশাসন থেকে) 'মুক্তি দিবস' (Day of Deliverence) হিসাবে পালন করবার ডাক দিলেন ভারতীয় মুসলিমদের উদ্দেশ্যে। আবুল কালাম আজাদ এর তীব্র সমালোচনা করলেন। গান্ধি এবং নেহরু জিন্নাকে অনুরোধ জানালেন সাম্প্রদায়িকতায় ইন্ধন না জুগিয়ে আলোচনার টেবিলে এসে কংগ্রেসের মুসলিম বিরোধিতার ইস্যুটি কেস বাই কেস খতিয়ে দেখতে। জিন্না অটল রইলেন।

    এরপর এল ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে লাহোরে মুসলিম লিগের সেই বিখ্যাত অধিবেশন, যেখানে জিন্না তাঁর দ্বিজাতিতত্ত ও পাকিস্তান-এর দাবী ঘোষণা করবেন। আয়েষা জালাল ( এবং আরো কেউ কেউ) অবশ্য মনে করেন, জিন্নার এই পাকিস্তান-এর দাবী ছিল নিছকই একটি 'বার্গেনিং কাউন্টার'। মনে রাখতে হবে মুসলিম লিগ এর জন্ম ও তার মূল ভিত্তি ছিল মুসলিম-মাইনরিটি এলাকাগুলিতে ( মূলতঃ যুক্ত প্রদেশ)। হঠাৎ করে মুসলিম মেজরিটি প্রদেশগুলি নিয়ে পাকিস্তান গঠনের পরিকল্পনা হত মুসলিম লিগের রাজনৈতিক জন্মভূমি ও তার মানুষদের প্রতি বিশ্বাসঘাত।দ্শ কোটি মুসলমানের 'একমাত্র প্রতিনিধি' মুসলিম লিগ কেনই বা পাকিস্তানের বাইরের বিশাল সংখ্যক মুসলিমদের (বম্বে, যুক্ত প্রদেশ, বিহার ইত্যাদি এলাকার) ওপর তাদের দাবী ছেড়ে দিতে যাবে? আসলেই কি জিন্না কায়মনোবাক্যে পাকিস্তান চেয়েছিলেন? বিশেষ করে যেখানে লাহোর প্রস্তাবের কয়েক মাস আগেই তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ভারতের ভবিষ্যত যে সংবিধান রচিত হতে চলেছে, তাতে যেন উভয় নেশনেরই (হিন্দু ও মুসলিম) সরকারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয় ('.... two nations who must share the governance of their common mothreland')(10) সম্ভবতঃ জিন্নার লক্ষ্য ছিল এই প্রস্তাবের মাধ্যমে মুসলিম জনগণকে এক তাঁবুর তলায় সংঘবদ্ধ করা; মুসলিম লিগকে এমন একটি উচ্চ্তায় নিয়ে যাওয়া, যেখানে ভবিষ্যতে ব্রিটিশ রাজ অথবা কংগ্রেস কেউই লিগকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না।আসলেই তিনি চেয়েছিলেন একটি ফেডারেল ভারতীয় কনফেডারেশন, যেখানে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলিম লিগের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষমতা থাকবে এবং মুসলিম-মেজরিটি প্রদেশগুলিতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিনিময়ে তিনি মুসলিম -মাইনরিটি প্রদেশগুলিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। জিন্নার কাছের মানুষ লিগ নেতা চুন্দ্রিগর, রিফর্মস কমিশনার হডসনকে ১৯৪০-এর এপ্রিল মাসে বলবেন লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্য আসলে ভারতকে বিভক্ত করা নয়, স্রেফ সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা তুলে ধরা, যেখানে সংখ্যালঘুদেরও যথেষ্ট ক্ষমতা থাকবে। পরের বছর নভেম্বর মাসে জিন্না স্বয়ং তাঁর অনুগত নবাব মহম্মদ ইসমাইল খানকে একটি চিঠি লিখে জানাবেন, এই সব কথা তিনি এখনই প্রকাশ্যে আনতে চান না, কেননা বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকে ভুল বুঝবে; এবং আশা প্রকাশ করেন যে হডসন ঠিকই বুঝবেন জিন্না আসলে কী চাইছেন। (11)।

    অর্থাৎ জিন্না একটি বিপজ্জনক খেলা খেলছিলেন। তিনি জানতেন, তিনি মুখে যা চাইছেন(অর্থাৎ দেশভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টি), কংগ্রেস কিছুতেই তাতে সম্মত হবে না। তখন তিনি আস্তিন থেকে তাঁর আসল তাস বের করবেন-ফেডারেল ভারতে একটি শক্তিশালী মুসলিম ক্ষমতা-কেন্দ্রের দাবী। কিন্তু এখানেই জিন্নার চালে ভুল হয়ে গিয়েছিল। কংগ্রেস যে দেশভাগ মেনে নেবে তা তিনি ভাবতে পারেন নি।
    ব্রিটিশদের কাছেও জিন্নার গেম-প্ল্যানটি দুর্বোধ্য ছিল না।১৯৪৭ সালের ২৮শে মার্চ ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেল ব্রিটিশ ক্যাবিনেটকে জানাবেন-'...although he [Jinnah] would continue to press for pakistan in the widest sense, he no doubt recognized that there was no chance of securing this.' শুধু এই বলেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না ওয়াভেল; এর বিপদের দিকটিও তিনি জানাচ্ছেন- যে, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে 'where it was impossible for him to go back on his public statement.' (12)

    জিন্না খুব সম্ভবতঃ ১৯৩৯ সালে প্যালেস্টাইন নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের প্রকাশিত শ্বেতপত্রটি পড়ে উজ্জীবিত হয়েছিলেন (বলে রাখা দরকার, প্যালেস্টাইনের ঘটনাক্রম সম্বন্ধে
    তৎকালীন ভারতীয় নেতারা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন)। লন্ডনে আরব-ইহুদী আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার এই শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করে। ব্রিটেন জানায় আগামী দশ বছরের মধ্যে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য, যেখানে আরব ও ইহুদী উভয়পক্ষই সরকারে অংশগ্রহণ করবে এবং উভয়েরই স্বার্থ ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে। বার্নি স্পানারের মতে ,এমনটা হওয়া খুবই সম্ভব যে হিন্দু-মুসলিম সমস্যার সমাধানে উৎসুক জিন্নার মনে প্যালেস্টাইন-এর প্রস্তাবিত সমাধানটি বেশ মনে ধরেছিল। (13)

    Notes
    1.Alex Von Tunzelmann, Indian Summer, Pocket books,2008 ed, pp.107.
    2.Ibid,pp. 109.
    3.Talbot,pp.34
    4.Out Break of the Second World War and Attitude of the All India Muslim League-Parveen Usmani,.
    5.Burney White Spunner, Partition,Simon and Schuster UK Ltd. ed. 2017, pp.93
    6.Ibid,pp. 93
    7.H. V. Hodson, The Great Divide: Britain-India-Pakistan (London, Hutchinson,1969),pp.84-5
    8.Wolpert, Stanley (2001). Gandhi's Passion: The Life and Legacy of Mahatma Gandhi. Oxford University Press. pp. 192–193. ISBN 0-19-515634-X. Retrieved 2007-12-04.
    9.Bandhyopadhyay, Sekhara (2004). From Plassey to Partition: A History of Modern India. India: Orient Longman. p. 412. ISBN 81-250-2596-0. Retrieved 2007-12-04.
    10.Jalal, p.57.
    11.https://www.frontline.in/static/html/fl1826/18260810.htm- A. G. Noorani, The Partition of India
    12.White-Spunner, Partition,pp. 94
    13.Ibid, pp. 95
  • সিকি | ২৬ আগস্ট ২০১৮ ১৪:১০370747
  • পড়ছি।
  • গবু | 2345.110.894512.133 | ২৬ আগস্ট ২০১৮ ১৮:৪০370748
  • ছোট কিস্তি হলেও, এলো তো। পড়ছি।

    এবং লেখার সঙ্গে সঙ্গে রেফারেন্স দেওয়া খুব ভালো লাগছে।
  • I | 7845.15.122312.3 | ২৬ আগস্ট ২০১৮ ২১:২০370750
  • দাঁড়ান, ১৮ তারিখের পর থেকে হাত খুলে লিখবো। মানে , সেই বাসনা মনে আছে আর কি।তারপর বাকিটা ভগমানের লীলা।
  • সিকি | 894512.168.0145.123 | ২৭ আগস্ট ২০১৮ ০৯:১৩370751
  • এইখানে, ইন্দোদাদা, একটু লেম্যানের মতন করে বুঝিয়ে দেবে, পূর্ণ স্বরাজ বা স্বাধীনতা আর ডমিনিয়ন স্টেটাসের মধ্যে তফাৎ কী কী? মানে একটা ইংরেজি আর একটা বাংলা ফ্রেজের মধ্যে তুলনা করা একটু সমস্যা হচ্ছে।
  • b | 562312.20.2389.164 | ২৭ আগস্ট ২০১৮ ০৯:২৬370752
  • পূর্ণ স্বরাজঃ এখনকার অবস্তা।
    ডমিনিয়নঃ যেমতি কানাডা/অস্ট্রেলিয়া/ নিউ জিল্যান্ড ১৯০০দশকের শেষে।
    রাণীকে নমো করে, নিজেদের ইলেকশন করে নিজেরা নিজেদের পলিসি ফলো করা। রাণীর প্রতিনিধি হিসেবে গবর্ণর জেনেরাল থাকবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অবশ্য রাণীভক্তি কমে গেছে।
  • I | 7845.15.3423.93 | ২৭ আগস্ট ২০১৮ ১৩:৪২370753
  • একদম। অটোনমাস সরকার থাকবে কিন্তু রাণীর প্রজা হয়ে থাকতে হবে। ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল সরকারের মাথার ওপর থাকবেন।কিন্তু তাঁর ক্ষমতা কী হবে সেকথা পষ্টো করে কোথাও বলা নেই।
  • I | 7845.15.90078.1 | ২৭ আগস্ট ২০১৮ ১৩:৪৯370754
  • অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর জেনারেলকে এখনো ব্রিটেনের রাণী মনোনীত করেন।অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীই তাঁকে সিলেক্ট করেন। কিন্তু খাতায় কলমে তিনি রাণীর প্রতিনিধি।১৯৭৫ সালে সেসময়কার গভর্নর জেনারেল অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট ডিজল্ভ করে দিয়েছিলেন।
  • সিকি | 894512.168.0145.123 | ২৭ আগস্ট ২০১৮ ১৬:১৩370755
  • ওকে। বুঝিনু।
  • অর্জুন অভিষেক | 341212.21.0178.43 | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ০১:০৯370756
  • এই আলোচনার প্রেক্ষিতে কিছু সামান্য সংযোজন। মাউন্টব্যাটেনের আগে ভাইসরয় ছিলেন ভিসকাউন্ট ওয়াভেল। ওয়াভেলের সঙ্গে কংগ্রেস দলের সম্পর্ক ছিল খারাপ। তিনি গান্ধী ও নেহেরুকে পছন্দ করতেন এবং তার অনেক কাছের ছিল মহম্মদ আলী জিন্না এবং মুসলিম লিগ। এই নিয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাটলির সঙ্গে তার সমস্যা শুরু হয়। ওয়াভেল পদত্যাগ করবেন বলে সিধান্তে আসছিলেন এবং ঠিক তখনই তাকে অ্যাটলি সরিয়ে দিয়ে বর্মা মাউন্টব্যাটেনকে নিয়ে আসেন।

    দেশভাগ যখন অবধারিত তখন মাউন্টব্যাটেন জিন্নাকে জানান যে পঞ্জাব ও বাংলার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। উত্তরে জিন্না বলে ওঠেন ' আপনি এ দেশে নতুন এসেছেন, আপনি জানেন না, বুঝছেন না, পঞ্জাব ও বাংলা দুটি জাতের নাম। একজন আগে পঞ্জাবী ও বাঙালী, তারপর হিন্দু বা মুসলমান।'

    জিন্নার মতে ছিল দেশভাবে যদি বাংলা ও পঞ্জাব পাকিস্তানে পরে তাহলে দুটিতে ভাগ না করে সম্পূর্ণ যেন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নইলে ভয়াবহ রক্তপাত ও chaos অবশ্যম্ভাবি।

    মাউন্টব্যাটেন জিন্নাকে জানিয়েছিলেন ' ইউ আর রাইট। একজন মানুষ হিন্দু বা মুসলমান হবার আগে শুধু সে পঞ্জাবী বা বাঙালিই নয়, সে সবার আগে ভারতীয়। আপনি নিজে যে যুক্তি দিলেন তাতে ত ভারতেকে অখণ্ড রাখার পক্ষেই যুক্তি।'

    অকাট্য যুক্তি।

    দুঁদে ব্যারিস্টার জিন্নাও চুপ মেরে যান ও মিনমিন করে বলে ওঠেন ' তার মানে আপনি আমায় পোকায় খাওয়া পাকিস্তান দেবেনই।'

    মাউন্টব্যাটেনে জানান ' আমি আপনাকে পোকায় খাওয়া পাকিস্তান নিতে বলছি না একবারও। আমি তো ভারত অখণ্ড রাখতেই বলছি।'
  • অর্জুন অভিষেক | 341212.21.0178.43 | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ০১:৫৫370757
  • I র তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্লেষণী লেখাটা খুবই ভাল লাগছে।

    কিন্তু এখানে হয়ত কিছু বলতে ইচ্ছে করছে।

    I র 19 august এর লেখায় 'জিন্না এদিকে হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন না। মুসলিম লিগের পক্ষ থেকে জোরালো প্রচার শুরু হল কংগ্রেসের 'হিন্দু পক্ষপাত' নিয়ে।'

    ব্যাপার হল মুসলিম লীগ ও জিন্না synonymous হয়ে গেছিল। ১৯০৬ থেকে '৪৭ পর্যন্ত জিন্না ছাড়া আর কোনো নেতা কোনোরকম প্রভাব ফেলতে পারেনি। মাঝে মাঝে দু একটা নাম উঠে এসেছে মাত্র।

    তাই মাউন্টব্যাটনের দেওয়া 'পোকায় কাটা' পাকিস্তানেই তাকে শেষমেশ রাজী হতেই হয়। আর এটা বোধহয় এখন সবাই জানে যে জিন্না ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার ইংল্যান্ডের চিকিৎসক তাকে জানিয়ে দিয়েছিল যে তার আয়ু খুব বেশী হলে আর ৭-৮ মাস। তাই ভিতরে পাকিস্তান নিয়ে তার অস্থিরতাও প্রবল ছিল। তিনি যদি এটা বাস্তবায়িত করে না যেতে পারেন তাহলে মুসলীম লিগের কাছে 'পাকিস্তান' স্বপ্নই থাকে যাবে। মুসলীগের নেতাদের জিন্না নিজেও বিশেষ ধর্তব্যের মধ্যে ফেলতেন না।

    লিয়াকত আলী খান জিন্নার উপস্থিতিতে চেয়ারে হেলান দিয়েও বসতে সাহস করতেন না, আর জিন্নার কোনো প্রশ্নের উত্তর বা কথার সায়ে দিতে বলে উঠতেন ' ইয়েস, কায়েদ-ই-আজম'।

    তার এই একমেবাদ্বিতীয়ম ইমেজ সম্পর্কে খুব সচেতন ছিলেন।

    এই বিষয়ে একটা গল্প আছে। এক মুসলিম যুবক জিন্নার কাছে চাকরীর সাহায্য চাইতে গিয়ে বলে যে সে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় জিন্নাকে সাহায্য করেছিল। উত্তরে জিন্না তাকে জানান, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় তাকে সাহাজ্য করেছে এমন তার নিজেরই জানা নেই। তিনি একটি টাইপ রাইটারের সাহায্যে তার পাকিস্তান দাবী বাস্তবে পরিণত করেছেন।
  • . | 342312.242.234523.16 | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ১০:২২370758
  • শেষ দুটি লেখাই হোয়াট্স্যাপের তাই সত্যতা জানা নেই।I এর লেখার মান আলাদা।
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ১১:২৪370759
  • এগুলো হোয়াটস্যাপের ?

    যাই হোক, এই শেষ দুটো পোস্টে যেসব স্টেটমেন্ট (বা অ্যানেকডোট) আছে সেগুলোর রেফারেন্স কী?
  • I | 7845.15.013412.209 | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ১৩:৩০370761
  • যদ্দুর জানি জিন্না টিবিতে ভুগছিলেন।ক্যান্সার নয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন