৭ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করছেন যে আমরা অতিমারির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি; ৩০ মার্চ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে; ২৭ এপ্রিল বলছেন সরকার মারির মোকাবিলায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে অনেক বেশি প্রস্তুত, সারা দেশে যখন খোলা আকাশের নীচে লাইন দিয়ে চুল্লি জ্বলছে তখন নির্লজ্জ ভাবে মিথ্যা বলছেন যে বেড, অক্সিজেন, ওষুধের কোনও অভাব নেই; ২৯ এপ্রিল গর্ব করছেন মৃত্যুহার সারা বিশ্বে ভারতেই সবচেয়ে কম (১.১১%); পরের দিন আবার গর্ব করছেন যে ২.৬৯ লক্ষ মানুষ আরোগ্য লাভ করেছে, ২.২৮ কোটি মানুষ টীকাকরণের জন্য নাম লিখিয়েছে এবং আবারও নির্লজ্জ ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন যে কোনও রাজ্য সরকারের কাছে টীকা মজুত নেই। এর সাথে আছে হিমালয়সম দম্ভ, স্বেচ্ছাচারিতা এবং হিরো সাজবার উদগ্র বাসনা। ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের কাছে ত্রাতা সাজলেন। নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করলেন যে, ভারত বহু দেশকে টীকা সরবরাহ করে পৃথিবীকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তিন মাসের মধ্যে দেখা গেলো টীকার অভাব এতোই প্রকট যে নিজের দেশের বরিষ্ঠ নাগরিকদেরই দু ডোজ দিতে পারা যাচ্ছে না। তিনি এতোই বেপরোয়া, বাংলার মসনদ দখলে এতোই মত্ত যে ১৭ এপ্রিল যখন কোভিড ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তখনো নির্বাচনী সভায় সদম্ভে দাবি করলেন যে এতো মানুষ এর আগে কোনও সভায় তিনি দেখেননি। ... ...
বীরচন্দ্রের মৃত্যুর পরে ১৮৯৬ সালের শেষে মহারাজা রাধাকিশোর সিংহাসনে বসেন চল্লিশ বছর বয়সে। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথেরই সমবয়সী। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। রাধাকিশোরের রাজত্বের ছমাস কাটতে না কাটতেই ১৮৯৭ সালের প্রবল ভূমিকম্পে ত্রিপুরা সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে করুণ আর্থিক অবস্থার মুখোমুখি হয় রাজ্য এবং তার মধ্যেই রাজপারিষদদের স্বার্থপর আচরণে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। রাধাকিশোরের একান্ত অনুরোধে তাঁকে সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ভেবে অবাক হতে হয়, সাহিত্যের নান্দনিক বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে এসে বিরাট ধৈর্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বন্ধুকে রাষ্ট্রশাসনের কূটিল বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, নিজে ত্রিপুরায় হাজির হয়ে শাসন ব্যবস্থার নানা ত্রুটি বিচ্যুতি লক্ষ্য করে উপযুক্ত বিশ্লেষণ সহ একটি গোপন নোট পাঠান রাজার কাছে। তাতে রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে কবির বিচক্ষণতার পরিচয় মেলে... ... ...
করোনা প্রতিরোধের নাম করে মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলকে এড়িয়ে খোলা হয়েছিল " PM Care Fund"- যার পরিচালক মন্ডলী শাসকদলের কার্যকর্তায় ভর্তি। উঠেছে ৩৫ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা কর ছাড়ের জন্য ঐ তহবিলে ঢেলে অনুদান দিয়েছেন। সে টাকা কোথায় গেল? ভারতের ১৩৮ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৪০% এর বয়স ১৮- এর নীচে। বাকি রইলো ৮৪ কোটি নাগরিক। ১৫০টাকা (বর্তমান বিক্রয়মূল্য?) করে ডোজ দিতে খরচ হয় ২৫,২০০ কোটি টাকা। এই টাকা কি ভারত সরকারের নেই! ২০২১ শে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বাজেটে মোট বরাদ্দ প্রায় ২.২০ লক্ষ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৩৪ হাজার কোটি কোভিড টীকার জন্য। P. M. Care এ আরো ৩৫ হাজার কোটি। এই সত্তর হাজার কোটি টাকা থেকে ২৫ হাজার কোটি বার করা কি অসম্ভব? আরও আশ্চর্যের বিষয় নিধিরাম সর্দার রাজ্যগুলির দিকে দায়িত্ব পুরো ঠেলে দেওয়া হল, তাদের সরাসরি একটা বেসরকারি সংস্থার থেকে টীকা কিনে নিতে বলা হলো অগ্রিম অর্থ দিয়ে। অথচ টীকার সামগ্রিক উত্পাদন ও বন্টনে রাজ্যের কোনো হাত নেই। বর্তমানে যে হারে দুটি ভ্যাক্সিন উত্পাদন হচ্ছে, তাতে সবাইকে টীকা দিতে গেলে দেড় বছর সময় লেগে যাবে। তার মধ্যে তৃতীয়( বুস্টার) ডোজের দরকার হবে কিনা কে জানে ! প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকার ৬০০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন যা নাগরিকদের করের টাকা। যুক্তি ছিল জনস্বার্থ। এখন পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আদার পুনাওয়ালা আবার সাহায্য চাইছেন। অথচ মানুষ টীকা কিনবে সাত থেকে দশগুণ দামে (যদি ক্ষমতায় কুলোয়)। এরা কি সাধারণ ভারতবাসীকে দিয়ে লাশবিপণি খুলে বসেছেন? ... ...
ও-জে-সিম্পসন নিজের স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন, বহুদিন ধরে বহুল-চর্চিত ট্রায়াল হয় তার, সে ট্রায়ালের সম্প্রচার হয় সারা আমেরিকা জুড়ে টেলিভিশনে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, প্রথমবার ট্রায়ালে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ছাড় পেয়ে যান ওজে। প্রসিকিউশন প্রমাণ এনে দেন ওজে নিজের স্ত্রীকে মারধোর করতেন, কিন্তু ডিফেন্স অ্যাটর্নি অ্যালান ডেরশোউইজ সওয়ালে বলেছিলেন, তাতে কী? প্রতি ২৫০০-এ নির্যাতনকারীর ১ জন খুন করেন শেষমেশ। জুরির লোকেরা একটু বেইজ থিয়োরেম জানলেই দেখতে পেতেন এই তথ্য বরং প্রমাণ করে যে ওজে সিম্পসনের দোষী হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% এর উপরে! ... ...
কবিতাপ্রয়াসী হিসেবেই শুধু নই, একজন পাঠক হিসেবে মনে হয়, কবিতা ও কবিতা সংক্রান্ত ভাবনাবিশ্বের যে যুগলবন্দি তিনি তৈরি করেছিলেন ধারাবাহিক ভাবেই, তা আমাদের খোলা হাওয়ার বাঁচতে শেখায়। কারণ একপ্রকার ভাবনাগত দৈন্যের মধ্যে আমরা পড়ে গেছি। এ সময় শঙ্খ ও অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মতো কবিদ্বয় আমাদের জন্য যা রেখে গেছেন, তাই আমাদের আগামীদিনের সহায় হয়ে উঠতে পারে। দুজনকেই আমরা হারিয়েছি খুব অল্প ব্যবধানে। অথচ দুজনেই তাঁদের চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগে পর্যন্ত তাঁদের সৃষ্টি ও ভাবনায় আমাদের সমৃদ্ধ করে গেছেন। ... ...
প্রকৃতপ্রস্তাবে বর্তমানের বিজেপি হল ভারতীয় জনমনের প্রকৃত প্রতিফলন। এই সরকার দেশের উদার-গণতন্ত্রের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে জনগণকে একেবারে তার উলঙ্গ প্রতিলিপির সামনে সটান দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিজেপি দেশকে একটি বাইনারির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ... ...
সঙ্ঘের চেয়ে সত্য বড়। আর সেই সত্যের খাতিরে রেয়াত করা চলে না কারোকেই। দ্বিতীয় তথ্যটিও এই সত্যভাবনা সম্পর্কিত। একেবারে শুরু থেকেই সে নিষ্ঠা প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়েছে। শান্তিনিকেতনের সাহিত্যমেলায় উচ্ছ্বসিত সুভাষ মুখোপাধ্যায় পড়ে ফেললেন তরুণ শঙ্খের একটি কবিতা। কবি তখন পদ্মাপারের শৈশব স্মৃতি ও ছন্নছাড়া বড় হয়ে ওঠা পেরিয়ে প্রেসিডেন্সির ছাত্র। বুদ্ধদেব বসু উপস্থিত ছিলেন সে সভায়। মুখচোরা লাজুক শঙখ যাবেন না ভেবেও কী করতে যেন সেখানে উপস্থিত। সুভাষের বক্তব্যের পর বুদ্ধদেব মহা উত্তেজিত হয়ে অনাহুত ভাবেই মাইক তুলে নিলেন৷ কবিতা লেখা এতো সোজা নয়। স্লোগান বা প্রচার তার উপজীব্য হতে পারে না কখনো। কবিতা এক গাঢ়তর বোধের জগত,ভাত ভাত বলে সরল চিৎকার করলেই সেটা কবিতা হয় না। এইরকমই কিছু নাকি সেদিন বলেছিলেন তিনি। ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে মার্কিন সাংবাদিক মিল্টন মায়ার গিয়েছিলেন জার্মান মহানগর ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে একটা গ্রামে। উদ্দেশ্য: গ্রামের সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলে বোঝা যে, নাজ়ি পার্টির শাসনে থাকাটা সাধারণ গ্রাম্য জার্মান নাগরিকের চোখে কেমন ছিল। মায়ার সেখানে দশ জন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলেন, এবং তাঁদের সাথে কথা বলে তাঁদের চিন্তাভাবনা বুঝে দেখার চেষ্টা করেছিলেন। মায়ার আবিষ্কার করেন যে, সেই দশজনের মধ্যে কেবলমাত্র একজন (হ্যাঁ, ঠিক-ই ভাবছেন, মানে মাত্র ১০ শতাংশ) মনে করতেন যে, হিটলারের নাজ়ি পার্টির শাসন ছিল স্বৈরাচারী শাসন। ... ...
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক থেকে প্রচারিত 'প্রোনিং' বিষয়ক পরামর্শ - বাংলা অনুবাদ। ... ...
বাঙালি এতকাল ভোটমগ্ন ছিল। ঘুম ভাঙছে এতদিনে! যখন বলা হচ্ছিল, মহারাষ্ট্র দিল্লি গুজরাট মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা ট্রেনের যাত্রী দের সবাইকে অন্তত 'ৱ্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট' করে ট্রেনে ওঠানো হোক, সবাই ভোটধ্যানে ছিলেন। আগেরবারের অভিজ্ঞতা বলছে, একমাস আগে থেকে এবার অন্তত এয়ারপোর্টে টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক হলে এত রোগ ছড়াতে পারত না বাঙলায়। এসব বলতে গিয়ে 'জিঙ্গল বেল আইটি সেল' এর খাতায় নাম তুললেন যারা, তাদের গাল দিন মনের সুখে। শুধু মাথায় রাখুন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। মাস্ক না - পরে, দূরত্ববিধি না মেনে যারা ঘুরে বেড়িয়েছি যত্রতত্র, দিল্লি বাঙলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে গেলেন যারা, সঙ্গে আনা বহু স্ট্রেনের করোনা ভাইরাস তাদের অনেককেই রেয়াত করবে না। 'ভাইরাসের স্মৃতি নেই', বিলকুল ঠিক, তবে ভাইরাসটা কিন্ত মানুষ মারতে আসে নি, এসেছে নিজেদের বাঁচাতে। নিজে বাঁচতে মরণকামড় এবারও হয়তো দেবে না, এখনো পর্যন্ত সংক্রমিত মানুষের মৃত্যুহার কুড়ি সালের তুলনায় সামান্য বেশি, খুব বেশি নয়। তবে, এই ঢেউই শেষ নয়, লাইনে আছে আরও অনেক বাস্তুচ্যুত ভাইরাস, গোটা বিশ্ব জুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে একের পর এক স্ট্রেন, কোনটা নবজাতক, কোনটা হাইব্রিড, বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছেন ভাইরাস নিয়ে কাজ করে চলা বিজ্ঞানীরা। ... ...
আরেকদল বলে চলেছে, সরকার কী করবে? মানুষগুলোই বদ। মানুষগুলোই কোনও কথা শোনে না। তাই তো বটে। রাজনৈতিক প্রচার থেকে কুম্ভমেলা, তাতে তো সরকারের কোনও দায় নেই। যাবতীয় সচেতনতার প্রচার যে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল, তাতে সরকারের দায় নেই। দাবাই ভি আওর কড়াই ভি বলে চলা নেতা মাস্ক না পরে ব্রিগেডে সভা করছে, সরকারের কোনও দায় নেই। কোভিড টাস্কফোর্স যে গত দু-মাস কোনও মিটিং করে নি তাতেও সরকারের দায় নেই। মানুষ যে আজ লকডাউন শব্দটা শুনলে রেগে যাচ্ছে, তাতেও রাষ্ট্রের দায় নেই। অক্সিজেন বিদেশে এক্সপোর্ট হল, সরকারের কোনও দায় নেই। খাদ্য থেকে ওষুধ, কোনও কিছুতেই সুরক্ষা দেওয়ার কোনও দায় রাষ্ট্রের নেই। সব মানুষদের দোষ। এর বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে আছে আরেক যুযুধান পক্ষ। মাস্ক পরতে বললে তারা নিয়ে চলে আসছে গরীব মুটে-মজুরদের অসহায়তার কথা। তারা দুটো কথা ভুলে যাচ্ছে। এক, মহামারীতে সব থেকে বেশি কষ্ট সহ্য করবে ওই নীচেরতলার মানুষগুলোই। যে যত ওপরে, তার চিকিৎসা পাওয়ার সুরক্ষা তত বেশি। দুই, একথা অর্থনীতিতে প্রমাণিত সত্য যে গরীবদের চিকিৎসা ও তৎসংক্রাম্ত আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা কম। ... ...
অনেক দূরের একটি নক্ষত্র, যার আলো আর তাপ সে একদা খুব ভালোবাসতো, আর এখনো সে শীত বুঝলে সেই আলো আর তাপের কাছে ফিরে ফিরে যায়, যদিও অনেক কাল খুব একটা দেখাশোনা নেই। এইমাত্র সেই নক্ষত্রপতনের শব্দ হল। লোকটার মন খারাপ লাগছে। তার বেঁচে থাকার টুকরোটাকরা দিয়ে তাই সে লিখে ফেলছে আবোলতাবোল। সেই সব দিনগুলি-রাতগুলির কথা, যাদের মধ্যে একদা সেই নক্ষত্রের আলো, আগুন আর জলের ছাপ পড়েছিল। ... ...
কাজে লাগে না বলে সাধারণ চাকুরিজীবী মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত যখন নিজের সংস্কৃতিকে বাতিলই করে দিয়েছেন তখন আর ভয় কী? ছেলেমেয়েকে বাংলা বই পড়ানো দূরে থাক, বাংলা টিভি চ্যানেল পর্যন্ত দেখতে বারণ করেছেন। তা কেন্দ্রীয় সরকার আর আপনার হিন্দিভাষী প্রতিবেশীরা যদি বাংলা বলাটুকুও বন্ধ করে দেন, সে তো ভালই, তাই না? আসলে এত দিনে মাথায় ঢুকেছে যে শক্তিশালী জাতিবিদ্বেষী যখন মারতে আসে তখন স্রেফ নামটা দেখেই মারে। ... ...
খাপ পঞ্চায়েত প্রেম, বিয়ে, জাতপাত, নারী বিষয়ক অবস্থান থেকে সরে খানিক অন্য ধারণায় উপনীত হবে কিনা আড্ডা আর সেদিকে গড়ায় না। নওদীপ ঘুম থেকে উঠে আমাদের মাঝে এসে বসে। ওকে নিয়ে ‘সাথী’রা রসিকতা করতে থাকে, ‘হামারে নওদীপ সেলিব্রিটি বন গ্যায়ি।’ সবাই মিলে হো হো হেসে ওঠে। নওদীপ–এর হাসিতে মিশে থাকে লাজুক আভা। ... ...
এটাও বুঝতে হবে যে আমার ১৩৫ কোটির দেশ। প্রতিদিন তার প্রত্যেকটা মানুষকে যদি দিনের শেষে দু-বেলা খাওয়াতে হয় তাহলে আমাকে কোথাও না কোথাও একটা ব্যালেন্স করতে হবে। যদি আপনি বলেন যে ব্যালেন্সটা কী হওয়া উচিত অভিষেক, সত্যি আমার কাছে তার কোনো উত্তর নেই। হয়তো অর্গানিক ফার্মিং একটা বিকল্প কিন্তু শুধু এই অর্গানিক ফার্মিং দিয়ে আমি ১৩৫ কোটি মানুষের মুখে অন্ন কালকেই জোগাতে পারব কি না আমার কাছে উত্তর নেই। তাই অবশ্যই আমাদের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে যারা হয়তো একটা ভালো ভবিষ্যৎ আমাদের উপহার দেবেন। ... ...
হ্যাপি নিউ ইয়ার হ্যাপি নিউ ইয়ার বলতে দু হাজার কুড়ি এসে গেছে। দু হাজার কুড়ির সাথে সাথে ভাইরাস এসেছে। বিদেশের ভাইরাসের খবরে পাত্তা না দিয়ে ফ্লাইটে করে রোগ নিয়ে মানুষদের আসতে দিয়েছে। ঘুরে বেড়াতে দিয়েছে। তারপর হঠাৎ ভয় পেয়েছে সরকার। তাই চব্বিশ ঘণ্টার নোটিসে সারাদেশের ট্রেন বাস রোড সব বন্ধ করে দিয়েছে। সিল করে দিয়েছে সব বর্ডার। দেশে দেশে বর্ডার। রাজ্যে রাজ্যে বর্ডার। ব্যবস্থা করেছে বাইরে বেরোলেই গ্রেপ্তার করার আর দেদার লাঠির বাড়ি মারার। জারি করেছে লকডাউন। মাসের পর মাস জারি করে রেখেছে লকডাউন। রাজ্যে রাজ্যের হাইওয়েতে বর্ডারে এসে জমা হয়েছে লাখে লাখে মানুষ। ট্রাকের মাথায় পাইপের ভেতর জঙ্গলের মাঝে মানুষ দিন কাটিয়েছে। হাজার কিলোমিটার হেঁটেছে। সাইকেল চালিয়েছে । ট্রাংক বাক্স গ্যাস সিলিন্ডার কোদাল ঝুড়ি বালতি বাচ্চা বুড়ো কাঁধে নিয়ে হেঁটেছে। ... ...
ক্ষমতার লোভ বরাবরই ছিল, তার ওপর বড় নেতা আর মন্ত্রী হওয়ার উচ্চাশা তাঁকে নিয়ে গেলো হিন্দু মহাসভায়। তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখছেন যে তৎকালীন সরকারে যোগ দেওয়া তাঁর মত সাচ্চা হিন্দুর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু দু'বছরের মধ্যেই, ১৯৪১ সালের ১২ই ডিসেম্বর, তিনি ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করলেন অর্থমন্ত্রী হিসেবে। রাজনৈতিক জীবনে বারংবার তাঁর দল বদল করা কিন্তু শ্যামাপ্রসাদের মনের অস্থিরতার পরিচয় দেয়না। বরং উল্টোটাই। অত্যন্ত 'বিচক্ষণতার' সঙ্গে মওকা বুঝে, হাওয়া যেদিকে যাচ্ছে, বিবেক বিসর্জন দিয়ে সেদিকে যেতে তিনি কখনোই পিছপা হননি। ... ...
সাফল্যের ইতিহাস উল্লেখ্য বিষয় হলেও সেই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য নয়। প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য পাঠকদের কাছে এই সত্য পরিবেশন করা যে প্রাণঘাতী জীবাণুর সঙ্গে মানব সভ্যতায় সংঘাত এই প্রথম নয়। একশ বছর আগে ১৯১৮-র আর একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যাকে স্প্যানিশ ফ্লু বলা হয়, এক বছরে প্রায় পাঁচ কোটি (৫০,০০০,০০০)মানুষের প্রাণ হরণ করেছিল। শিশু, বৃদ্ধ, তরুণ, জওয়ান কেউ রেহাই পায়নি ভাইরাসের কবল থেকে। ১৯১৮র ভয়াবহ প্যান্ডেমিকের পর এক শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, এবং প্রযুক্তিগত বিদ্যায় অভাবনীয় উন্নতি সত্ত্বেও, স্প্যানিশ ফ্লুএর চেয়ে শতভাগ দুর্বল কোভিড-১৯-এর হাতে এক বছরে সাতাশ লক্ষ (২,৭২০,০০০)মানুষের প্রাণনাশ কি এই প্রমাণ করে যে রক্তপিপাসু প্রকৃতির হাতে মানুষ আজও অসহায়? ... ...
দেশভাগ যেহেতু সংঘটিত হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে লোক বিনিময়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে আসার সুযোগ করে দেওয়া ছিল রাষ্ট্রেরই কর্তব্য। রাষ্ট্র সে কাজ তো করেইনি, উল্টে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের ফেরৎ পাঠানো বা ১৯৫০-এর দাঙ্গার পরেও সে দেশেই তাঁরা যাতে থেকে যান, সেজন্য নেহেরু সরকার দুজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পাঠিয়ে তাদের নিরস্ত করেছেন। বাংলাভাগের উদ্দেশ্য মেনে নিলে পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুরা পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক অংশীদার। দীর্ঘদিন কৌশলে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পর, ২০০৩-এ পাকাপোক্ত আইনই করে ফেলা হলো। ... ...
আসামের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা দরকার যে অসমিয়াভাষী জনগণকে আসাম চুক্তির ৬ নং ধারা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাংবিধানিক আইনগত প্রশাসনিক সুরক্ষা দেওয়ার নামে শর্মা কমিটি যে শক্তিশেল প্রয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, তাতে গাঁওপঞ্চায়েত হেকে জেলা পরিষদ, পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা পর্যন্ত অসমিয়া ভূমিপুত্রদের জন্য ১০০% সংরক্ষণ নিশ্চিত হবে। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ১০০% জীবিকা তাদের জন্য সংরক্ষিত হবে। এ ছাড়া হরিশঙ্কর ব্রহ্ম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সমস্ত জমি কেনাবেচার অধিকার অসমিয়া ভূমিপুত্রদের জন্য ১০০% সংরক্ষণ করা হবে। ... ...