সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সৌন্দর্য কোনো জন্মান্ধ মানুষকে ব্যাখ্যা করে বোঝানো যেমন অসম্ভব, তেমনি, মন যদি সঠিকভাবে গ্রহণক্ষম না হয়, তা হলে রসপোলব্ধি দুষ্কর। ধীশক্তিও সাধারণভাবে বুদ্ধি বলতে যা বোঝায় তা নয়। ধীশক্তি বলতে বোঝানো হচ্ছে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞা দুর্লভ বস্তু, বোধ ও বুদ্ধির এক অতি উন্নত স্তরকে প্রজ্ঞা বলে। বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মধ্যে তফাতটা গুণগত, পরিমাণগত নয়। ধীশক্তির ফসল বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি। রসের ফসল সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। এটা খুবই আশ্চর্যের যে এই মাধ্যমগুলির উৎপত্তির মূলে যে সংস্কৃতি নামক জিনিসটি কাজ করছে, তা যে ‘জৈবিক’, নিছক আবেগের ব্যপার নয়, তা মানবসমাজ বহু যুগ পরেও বুঝতে পারে নি। ... ...
এখানেই একটা মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন এসে যায়। গোপনীয়তা মানে কোনও কিছু লুকোনো নয়, উল্টে প্রতিটি নাগরিকের একটি নিজস্ব জায়গা থাকাটাই গোপনীয়তা, যা কোনওভাবেই অন্য কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। যাঁরা ভাবছেন যে তাঁর ব্যক্তিগত ফোনে তো এই স্পাইওয়ার সরকার ঢোকায় নি, তাহলে তাঁর এই বিষয়ে না ভাবলেও চলবে, তাঁরা সম্পুর্ণ মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। যেহেতু কোনও একটি ব্যক্তির সমস্ত কিছুর নাগাল পাওয়া সম্ভব এই স্পাইওয়ারের দৌলতে, সুতরাং তাঁর কন্টাক্ট তালিকারও নাগাল পাওয়া এমন কিছু কঠিন নয়, সেই সুত্র ধরে তাঁদের অর্থনৈতিক লেনদেনও যে সরকার দেখছে না, তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়? ... ...
বিদ্যেকে নেহাত বোঝা করেফেলা বাবুমশাইয়ের শেষমেশ কী পরিণতি হয়েছিল,সেটা সুকুমার রায় আমাদের বলে যাননি। কিন্তু, প্রকৃতবিদ্যা ও শিক্ষা বলতে আমরা ঠিক কী বুঝবো? কেবলডিগ্রি? নাকি বাস্তব জীবনে পথ চলাকে অর্থবহ ও সহজ সুন্দর করা? আর, প্রয়োজনে তাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সাধের একমাত্র জীবন বাঁচানোর কাজেও তার তাৎক্ষণিক প্রয়োগগুলোও জেনে বুঝে রাখা? কোনটা বুঝব? এই তো সেদিন ১৪ জুন ইউরোকাপ ২০২০ র ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড এর ম্যাচে ডেনমার্কের ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল খেলার মাঠে! কিন্তু সহ ফুটবলারদের এবং পরে মেডিকেল টিমের তাৎক্ষণিক সিপিআর প্রদান ফুটবলারের জীবন বাঁচিয়ে দিল। হই হই করে সবাই শিখতে ও শেখাতে চাইলেন কেবলমাত্র বুকের চ্যাপ্টা হাড়ের মাঝে নির্দিষ্ট গভীরতায় পর্যায়ক্রমিক চাপ দিয়ে থেমে যাওয়া হৃৎপিণ্ডের এস এ - এভি নোডে পুনরায় তড়িৎ প্রবাহ চালু করে হৃদপিণ্ডের লাবডুব আবার চালু করার প্রকৌশল। জীবনদায়ী। কিন্তু খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক পদ্ধতিমালা মেনে ওই কাজটি না করলে তা একেবারেই কাজ করবেনা । ... ...
শিক্ষার প্রথম সারিতে থাকা মানুষজন ক্রিয়েটিভ হবেন এটা স্বাভাবিক। আমার আপত্তি নেই। আমার আপত্তি অন্য জায়গায়। আমার এক পরিচিত মাস্টারমশাই সোশ্যাল গ্রুপে জ্বালাময়ী কবিতা আবৃত্তি করে ফাটিয়ে দিচ্ছেন। সাধু সাধু। গল্পটা হচ্ছে ব্লক লেবেল বা পাড়া লেবেল এও ওনার স্কুলের কোন ছাত্র বা ছাত্রীকে দেখেনি কোন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায়। ওনার স্কুলের কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম ওরা জানেই না অমুক মাস্টারমশাই এত ক্রিয়েটিভ বলে। তা মশাই এই সোশ্যাল গ্রুপ ক্রিয়েটিভিটি সমাজের কি লাভ দিলো। মানে ধরুন আপনি হাসপাতালের ডাক্তার, কিন্তু আপনার হাসপাতালের লোকজন জানেনই না আপনি চিকিৎসা করেন। তা এতে কি সম্মান বাড়ে? কী জানি? ... ...
ভার্চুয়াল ক্লাসরুম বা আপিসঘরে দৃশ্যমানতা কিঞ্চিৎ উচ্চস্তরের, মানে পর্দার ক্যামেরার নজর ব্যক্তির উর্ধাঙ্গটুকুতেই সীমাবদ্ধ। ‘বিলো দ্য বেল্ট’ ইনফরমাল হলে সমস্যা নেই। বাঁকুড়ার গামছার সঙ্গে শার্ট-টাই-ব্লেজার পরে উচ্চপর্যায়ের মিটিং চলছে দেখলে অতএব ভিরমি খাওয়া নিষ্প্রয়োজন। মিটিং-ধারী দাঁত খিচিয়ে বলবেন, "তাতে কোন মহাভারতটা অশুদ্ধ হচ্ছে ,শুনি! আমি তো আর এই পোশাকে সমুদ্রসৈকতে সেলফি তুলতে যাচ্ছিনা।" ক্যামেরা চালু করা যে ক্লাসে জরুরি নয়, তার ড্রেস কোডে আবার রংচটা, ফুটোফাটা ভেন্টিলেটেড গেঞ্জিও নাকি চলতে পারে। তা বলে পরীক্ষার দিনেও? দইয়ের ফোঁটা অবসোলিট হয় হোক, পাটভাঙা জামাটুকু তো অন্তত পরবে! ... ...
p>অনলাইন ক্লাস ইস্কুলের বিকল্প হতে পারবে না কোনওভাবেই - তা প্রথম থেকে জানা ছিল। কিন্তু অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থাকল গত পনেরো ষোলো মাসে - ততটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবারও বোধহয় কথা ছিল না। বিশেষ করে যত ঘরে স্মার্ট ফোন আছে, ইন্টারনেট ডেটা প্যাক যতটা সস্তা হয়েছে আগের চেয়ে তার হিসাব নিকাশ করলে মনেই হয় যে অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থেকেছে, তার চেয়ে প্রসারিত হতে পারত। কেন অনলাইন ক্লাস আরো খানিকটা প্রসারিত হতে পারল না সেই আলোচনা একটা স্বতন্ত্র বিষয়। সেখানে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক, কানেকশান ও গতির সহজলভ্যতা এসবের প্রশ্ন আছে, ছোটদের মনঃসংযোগের প্রশ্ন আছে, শিক্ষাদপ্তরের পরিকল্পনার খামতি নিয়েও প্রশ্ন যে একেবারেই নেই তাও নয়। কেন এতদিনেও বিভিন্ন শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক ক্লাস মেটেরিয়াল এক জায়গায় রাখার একটা ওয়েব সাইট ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করে ফেলা গেল না, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সময় সুযোগ মত ঢুকতে পারত আর দেখে নিতে পারত তাদের পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ভিডিও, ছবি, চার্ট, ম্যাপ, গ্রাফ, লেখা ইত্যাদি তা বোঝা দুষ্কর। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন রাখার আর উত্তর পাওয়ার জায়গাও সেখানে রাখা যেতে পারত, ওয়েব পোর্টালটিকে ইন্টার্যাকটিভ করে তোলার অনেক সুযোগ তো প্রযুক্তি করেই দিয়েছে। তবুও সেই সুযোগকে ব্যবহার করে নেবার দিকে শিক্ষা দপ্তর এগোলেন না। এই অতিমারীকে মোকাবিলা করে এই সময়ে শিক্ষাকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা যে এক একটি বিদ্যালয় ও তার শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের বিষয় নয়, সেই উদ্যোগ যতই আন্তরিক হোক না কেন শেষ পর্যন্ত একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো এই বিপুল সমস্যার মোকাবিলায় জরুরি - তা শিক্ষা দপ্তর বুঝে উঠতে পারেন নি বলেই মনে হয়। এই সমস্ত নানা ধরনের বিষয় ছাড়াও অন ক্লাইস ক্লাস সংক্রান্ত সমস্যাটা অনেকটাই অর্থনৈতিক। ... ...
নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের দারিদ্র জিনিসটা যেন প্রায় হাইলাইটার দিয়ে চিহ্নিত করা। তার পোশাকআশাক দেখে তৎক্ষণাৎ আপনি বুঝে যাবেন যে মানুষটা গরিব। সেজন্য আপনি মানুষ হিসেবে মোটামুটি ভালো হলে তাঁর প্রতি কিছুটা অতিরিক্ত সহানুভূতিশীলও হবেন। অর্থনৈতিক সংকটের সময় আপনি নিজে এবং বৃহত্তর অর্থে সরকার স্বয়ং চেষ্টা করবে তাঁর পাশে থাকার। ঠিক এই কারণেই প্রকট দারিদ্র অনেকের ক্ষেত্রে একটা ক্যামোফ্লাজও বটে। তিনি হয়তো ততটাও গরিব নন যতটা তিনি দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো। সে আসলে যতটা গরিব তার তুলনায় নিজেকে তিনি সম্পন্ন দেখাতে চান। দারিদ্র তাঁর কাছে লজ্জার। দরিদ্রনারায়ণ সেবার খিচুড়ির লাইনে তিনি দাঁড়াতে পারেন না। সেজন্য সমস্ত রকম সরকারি এবং বেসরকারি রিলিফ এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে হামেশাই তিনি হন বঞ্চিত। ... ...
এবার প্রশ্ন, গাছ তো লাগানো হবে, কিন্তু কোন প্রজাতির গাছ? জানা থাকা ভালো যে, সমস্ত গাছ দূষণকে সমানভাবে রোধ করতে পারে না। গাছেদের এই ক্ষমতা পরীক্ষা করার যে সূচক তাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় বায়ু দূষণ সহনশীলতা সূচক (Air Pollution Tolerance Index বা APTI). এই APTI সংখ্যাটি ধূলিকণা এবং বায়বীয় দূষকের প্রতি গাছের সহনশীলতা বুঝতে সাহায্য করে। এটি পাতায় ক্লোরোফিল, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, অম্ল-ক্ষারক অনুপাত বা pH ফ্যাক্টর এবং জলীয় সামগ্রীর স্তরের উপর নির্ভর করে। এর মান যত বেশি, গাছের দূষণ রোধ করার ক্ষমতাও তত বেশি। গবেষণায় পাওয়া বিভিন্ন গাছের APTI মানের সাধারণ গড় হচ্ছে: পর্ণমোচী ১৪-২৪, চিরহরিৎ ১২-২০, ঝোপঝাড় ১০-১৮ এবং ঘাস ১৬-২৯। এগুলি সাধারণভাবে প্রাপ্ত APTI মানের ভিত্তিতে সংজ্ঞাবদ্ধ করা হয়েছে। এই হিসেব অনুযায়ী আমাদের খুব চেনা কিছু গাছের গুণ দেখে নেওয়া যাক। ... ...
সেই সকালে, বাবুদা যে দিন দু’টাকা চেয়ে আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছিলেন, আমার হাতে সে দিন অনেক টাকা৷ কিন্তু আমার নয়, স্কুলে এনসিসি-র অনুষ্ঠানের জন্য সহপাঠীদের চাঁদার টাকা৷ রবিবার সকালে এনসিসি স্যারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা৷ সাত-পাঁচ না ভেবে, একটু যেন দয়াপরবশ হয়ে স্কুলে ঢোকার মুখে, চার ধারে কেউ কিছু বুঝতে না-পারে, এমন ভাবে বাবুদার হাতে পাঁচ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে হাঁটা দিলাম৷ ... ...
টোটো উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতি মঙ্গলবার টোটোপাড়ায় হাট বসে। দোকানিরা পসরা সাজিয়ে সার সার দিয়ে বসে পড়েন টোটোপাড়ার গৌরবহীন হাটে। অনতিদূরের ভুটান থেকেও ক্রেতারা হাটে আসেন। রোজগারের হাতছানিতে টোটোরাও নিত্যদিন ছুটে যান ভুটানে। কেউ যান এলাচ ছাড়ানোর কাজে, কেউ বা সুপারি ছাড়ানোর কাজে, কেউ কেউ আবার অন্যান্য দিনমজুরের কাজের খোঁজে। ভুটান থেকে দিনে মাথাপিছু ৩০০ টাকার মতো আয় হয়। এই পরিপূরক নির্ভরশীলতার মাধ্যমেই নিবিড় সখ্য গড়ে উঠেছে টোটো আদিবাসী জনজাতি এবং সংলগ্ন ভুটানি মানুষজনের মধ্যে। ... ...
এফিক্যাসি ৭০% মানে কিন্তু এটা নয় যে প্রতি ১০০ জন মানুষকে ধরে ধরে গুনলে আপনি দেখবেন ৭০ জন সংক্রমিত হয় নি আর ৩০ জন সংক্রমিত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে টীকা নিলে আপনার সংক্রমণ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা ৭০%। গুলিয়ে গেলো? বেশ। হাতে একটা কয়েন নিন। টস করলে হেড পড়ার স্বম্ভাবনা ৫০%। বেশ। পড়লো টেল। তাহলে কি পরের বার টস করলে হেড পড়তেই হবে? হাতে নাতে চেষ্টা করে দেখুন – এরকম কোন নিশ্চয়তা নেই। পরের বারেও হেড পড়ার স্বম্ভাবনা সেই ৫০%। আর একটা উদাহরণ। কোনো এক জটিল অপারেশন এর সাফল্যের হার ৯০% - যাকে এভাবেও বলা যায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন রুগী মারা যাবেন। বেশ, এবার যদি কোনো হাসপাতালে প্রথম ৯ জন রুগী ভালো হয়ে যান তাহলে কি দশম রুগীটির মৃত্যু ছাড়া গতি নেই? কাজেই ছোট পরিসরে কিন্তু এভাবে গুনে আপনি হিসেব মেলাতে পারবেন না। ওটা অঙ্ক নয়। এটা একারনেই লেখা, কারন অনেকেই হাতের আঙ্গুলে গুনে বলছেন ধুত ধুত – সব ঝুট হ্যায়। ... ...
সবার্না গ্রুপের তিনটি ভ্যাকসিন নিয়ে ফেজ থ্রি ট্রায়ালের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে কাজটা করা খুব সহজ ছিল না। আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধের জন্য ভ্যাকসিন তৈরির মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টই তারা কিনতে পারে নি। বড়দার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে কে তাকে যন্ত্র বেচবে? কিউবা করোনাপীড়িত আমেরিকার দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বছর বছর আমেরিকার ছেলেমেয়েদের স্কলারশিপ দিয়ে ইলাম মেডিক্যাল স্কুল থেকে শিখিয়ে পড়িয়ে আমেরিকা পাঠাচ্ছে। আর তার প্রতিদানস্বরূপ ট্রাম্প প্রশাসন অর্থনৈতিক অবরোধের ফাঁস আরো শক্ত করেছে। বারাক ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেই সময় সম্পর্ক ভালো করার একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, ট্রাম্পের সময় তার অবনতি হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এখনো পর্যন্ত কোনো সদর্থক পদক্ষেপ নেন নি। ... ...
বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে আর কর্পোরেটের স্ট্রেসগরিমা ইত্যাদি ভাষ্যের অন্তরালে প্রকৃত ভারতবর্ষের মানব সম্পদের পরিচর্যায় সরকারি ব্যবস্থার অবদানকে ভুলতে থাকার কারণ বিবিধ হতে পারে। সরকারের নিজের দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে ফেলার ইচ্ছা, সর্বগ্রাসী মুনাফাপিপাসা, জনগণের সঙ্গত ক্ষোভ - এইসব অনেক কিছুই তার মধ্যে থাকা সম্ভব। তার পরেও, যেসব জায়গায় পৌঁছে যাওয়া পুঁজির কাছে লাভজনক নয়, সেসব জায়গায় পৌঁছনোর দায় রাষ্ট্রযন্ত্রের। সেই যন্ত্রকে সচল রাখার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিকূল পথে চলতে গেলে শুধু চাকরির দায়ের বাইরেও, মানুষের প্রতি পারস্পরিক মমতা এক আবশ্যিক উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি বা অলাভজনক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে রাখা আমাদের অভিপ্রায়। আজকের পর্বে থাকছে সত্তরের দশকের ত্রিপুরায় সমাজ কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক জয়া বর্মনের অভিজ্ঞ্তা। আপনিও আপনার অভিজ্ঞ্তা নিয়ে লিখুন খেরোর খাতা অথবা হরিদাস পাল বিভাগে, কিংবা সম্পাদকীয় বিবেচনার জন্যে ইমেল করুন [email protected] ঠিকানায়। ... ...
মৃত্যু বলতে চাই, মৃত্যু লিখতে চাই। শুরুতে না হয় শেষে, সমস্ত চেতনা জুড়ে থাকার মতো এই মৃত্যুর নিদারুণ অপচয়। যতো জীবনে লগ্ন হবার স্বপ্ন দেখবো, ততোই মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণা নিয়ে আসবে স্ট্যান স্বামীর এই অনর্থক মৃত্যু, নির্দয় হত্যা। ভারত রাষ্ট্রকে এই হত্যার দায় নিতে হবে। জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে কেন সাজানো মামলায় তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, কেনই বা মাওবাদী যোগের মিথ্যা অপবাদ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। কর্পোরেটের পথ নিষ্কন্টক করার জন্য আর কতো বলিদান চাই, উত্তর দিতে হবে। ... ...
কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দের হার কমছে। রাজ্যের মতামত অগ্রাহ্য করে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থতিতে করোনা মহামারীর প্রেক্ষিতে স্কুল কলেজ বন্ধ করে দিয়ে সরকারবাহাদুর বললেন ‘ইন্ডিয়া পড়ে অনলাইন’। প্রাথমিক শিক্ষার আঙিনায় এই ডিজিটাল শিক্ষা কীভাবে চলছে? কীভাবে সামলানো যাচ্ছে স্কুলছুট হওয়ার সমস্যা, শিশুদের অপুষ্টি ও সর্বাঙ্গীণ বিকাশের অন্তরায়ের জটিলতাগুলি? কেমন করে সেইসকল শিশুর শিক্ষণ চলছে, যাদের অভবাবকদের হাতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ঢালাও সুবিধা নেই? এইসব প্রশ্নের পর্যালোচনা করলেন শিশুশিক্ষকরা, অতিমারীপর্যায়ে তাঁদের কর্মজীবনের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতীচী (ইন্ডিয়া) ট্রাস্টের প্রকাশিত এই ই-পুস্তিকাটিতে। ... ...
কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে আদিবাসীদের সমস্যার কি কোনও সুরাহা হয়েছে? নতুন সরকার ২০১২ সালের একটি হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট প্রকাশ করে যেটি আগের বিব্জেপি চেপে রেখেছিল। ঐ বছর ২৮ জুন বিজাপুর জেলায় সারকেগুড়া নামে একটি জায়গায় বাহিনীর গুলিতে সতেরো জন মানুষের মৃত্যু হয়। বাহিনী তাঁদের বিজ্ঞপ্তিতে বলে যে মৃতেরা সবাই মাওবাদী ছিলেন। গ্রামবাসীরা এবং সুধা ভরদ্বাজের (যিনি নিজে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ভুয়ো অভিযোগে কারাবন্দি) নেতৃত্বে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং দাবি করেন যে মৃতরা কেউ মাওবাদী ছিলেন না। চাপে পড়ে সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বিজয় কুমার আগরওয়ালের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। প্রায় সাত বছর বাদে কমিশন তাঁরা রিপোর্ট পেশ করেন এবং প্রমাণিত হয় যে মৃতরা কেউ মাওবাদী ছিলেন না। কংগ্রেস সরকার যদিও এই রিপোর্ট সর্বসমক্ষে আনে কিন্তু যে সতেরো জন নিহত হন এবং দশ জন আহত হন তাঁদের কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে। একই ভাবে যারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল তাদেরও হয়নি। ... ...
আফ্রিকার একটি ছোট্ট দেশ উগান্ডার উদাহরণ দিয়ে লেখা শুরু করা যাক। কোটি কোটি উগান্ডাবাসী সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কারণ তাঁদের অনেকেরই ডিজিটাল পরিচয়পত্র নেই। উগান্ডা সরকারের আইন অনুযায়ী এই ডিজিটাল পরিচয়পত্র জাতীয় সুরক্ষার জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, কিন্তু সেই ব্যবস্থাকে যখন সরকারি পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে তা থেকে বহু মানুষ বাদ পড়ছেন। ... ...
ছোটবেলা থেকেই আস্থা রেখেছিলাম বিজ্ঞানে, সত্যে, যুক্তিতে। ঠিক সেই কারণেই আজ যাদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে বাধ্য হলাম, তাঁদের একএকটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবেই ধরতাম। তাঁরা যখন কিছু লিখতেন, বলতেন, যাচাই না করেই সেই ফ্যাক্টগুলো মেনে নিতাম, অনেক সময় দ্বিমত হতাম তথ্যের ব্যাখ্যায়, কিন্তু তথ্যে বা basic framework এ নয়। একটা আস্থা ছিলো, বিশ্বাস ছিলো, শ্রদ্ধা ছিলো - তাঁদের সততায়, জ্ঞানে, বুদ্ধিবৃত্তিতে। কিন্তু এখন যখন দেখি এঁদের অনেকেই পূর্বনির্ধারিত বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বাস্তবকে অস্বীকার করে অন্ধ বিশ্বাসের প্রচার করেন তখন মানতেই হলো, কোভিড১৯ অনেক কিছুই কেড়ে নিয়ে গেল তার মধ্যে নিয়ে গেলো এই আস্থাটাও, এতেও কম রিক্ত হলাম না – অন্তত ব্যক্তিগত ভাবে । এই বয়সে আস্থার জায়গা খুব কম, সেখানেও যখন টান পড়ে, হতাশ লাগাটা বোধহয় অস্বাভাবিক নয়। ... ...
স্বৈরাচারকে একটা নান্দনিক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেই ব্যাটনই হাতে তুলে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। হিন্দু রাষ্ট্রকে নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ গড়ে তোলার জন্য যে নগর পরিকল্পনা তিনি করেছেন তার কাছে সঞ্জয় নেহাতই বামন। সঞ্জয় বড়জোর চাইতেন শহরটাকে নতুন করে দেওয়াল দিয়ে ঘিরতে। আর মোদির উচ্চাকাঙ্ক্ষা গোটা শহরটাকে নতুন করে গড়ার। যখন স্বাস্থ্য পরিষেবা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন তখন মোদির ধ্যান-জ্ঞান সেন্ট্রাল প্রোজেক্ট। শোনা যাচ্ছে, এমন ভাবেই এই সেন্ট্রাল ভিস্তা তৈরি করা হবে যাতে রাষ্ট্রপতি ভবন সংসদ ভবন অন্যান্য প্রশাসনিক দফতরগুলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকেই দেখা যায়। এর থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যদি সুযোগ থাকত তাহলে গোটা দেশটাই নতুন করে গড়তে প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই আমরা দেখে ফেলেছি বেনারস ঘাটের 'সৌন্দর্যায়ন' বা আমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়ামের নব নামকরণ। এগুলি সেই বৃহত্তর পরিকল্পনারই অংশবিশেষ। ... ...
সলিলদা মনে হয় একটা সত্যকে জীবনের ধ্রুব করে নিয়েছিলেন, সেটা হল --- 'শিক্ষা আমার ব্রত'। বাচ্চাদের ইংরাজি শেখাতেন কিন্তু তাদের সঠিক উন্নতির জন্য, বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেন। 'কোমা গাতা মারু' নামে একটি জাহাজ ব্রিটিশ আমলে বজবজের কোন একটা ঘাটে ভেড়ে, সেখানে বিদ্রোহী জাহাজিদের সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়, অনেকে শহিদ হন। তাদের স্মৃতিস্তম্ভ দেখাতে সলিলদা বাচ্চাদের নিয়ে চললেন। রবীন্দ্রনাথের জোঁড়াসাঁকোর বাড়ি দেখাতে একবার বাচ্চাদের নিয়ে গেলেন। আই এস আই তে ডাইনোসরের একটা ফসিল আছে সেটা দেখাতে একবার নিয়ে গেলেন। সর্বত্রই ওঁর বন্ধুবান্ধব ছিলেন, তাঁরা এই সব কাজে সলিলদাকে সাহায্য করতেন। সলিলদা বাচ্চাদের ইংরাজি গান শোনাতেন ইংরাজি সিনেমা দ্যাখাতেন। আবার সুমনের গানও শোনাতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সলিলদার কোনো দূরত্ব ছিল না। ... ...