সমস্যার বিপদসংকেত শোনা যাচ্ছে পাহাড়েও। পুরো হিমালয় অঞ্চল আজ বিপদের মুখে। ধ্বস, ভূমিকম্প হয়ে উঠেছে নিয়মিত ঘটনা। অথচ তার মধ্যেই গড়ে তোলা হচ্ছে আরো পর্যটনকেন্দ্র যার অর্থ আরো বিলাস ব্যসন আর দেদার ফুর্তির মোচ্ছব। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের সাততালে এমনই এক পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করার প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। সাততাল একটি অতি নিরিবিলি জায়গা, পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গ। প্রতিবাদ হচ্ছে, যদিও জানা নেই শেষ পর্যন্ত এই পাখিরালয়টিকে পর্যটকের ভিড় থেকে বাঁচানো যাবে কিনা। সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাবটি অন্যান্য রাজনৈতিক কারণগুলির সংগে যুক্ত হয়ে একটা বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছে। ... ...
ইউনাইটেড নেশনসের উদ্যোগে ২০ জুন পালিত হয় বিশ্ব শরণার্থী দিবস হিসেবে। বাঙালী হিসেবে শরণার্থী, উদ্বাস্তু, রিফিজি - এই কথা গুলি আমাদের অতি পরিচিত। যদিও জাতি হিসেবে, পরিচিত হলেও, যথেষ্ট সমানুভূতি ও সহমর্মিতা আছে কিনা তা বলা কঠিন। সুকন্যা কর ভৌমিকের অভিজ্ঞতা, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা মানুষদের আনন্দ বেদনায় তাঁর অংশভাগ নিয়ে। ... ...
ম্যানগ্রোভ যেভাবে বেঁচে ওঠে বেড়ে ওঠে, দুই মেরুপ্রদেশ বাদ দিলে পৃথিবীর সর্বত্রই যেখানে নোনাজল আছে, খাঁড়ি এলাকা আছে সেখানে ম্যানগ্রোভ আছে। ম্যানগ্রোভ নিজেই সেই ব্যবস্থা করে নিয়েছে, নদীর যদি একটুকরো চর পড়ে থাকে বা নদীবাঁধ যদি কাঁচা হয় তাহলে। যে প্রয়োজনীয় ম্যানগ্রোভগুলো বাঁধকে সুরক্ষা দিতে পারে, মাটিকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে পারে, সেগুলো ম্যানগ্রোভ নিজেই করে নিতে পারে। তারপরেও গাছ লাগানোর প্রশ্ন আসছে? সেটার কারণ হচ্ছে ওই গাছগুলো আমরা কেটে ফেলি। আঞ্চলিকভাবে হোক আমাদের সচেতনতার অভাবে হোক আমরা গাছগুলো কেটে ফেলি ব'লে--- আবার সেখানে গাছ লাগানোর প্রশ্ন আসছে। ... ...
অনেকেই হয়তো জানেন না, পৃথিবীতে মাত্র দুটি অঞ্চল আছে, যার প্রায় পুরো বসতিটাই সমুদ্রতল থেকে অনেকখানি নীচে – একটি হল হল্যান্ড আর অন্যটি আমাদের সুন্দরবন। সমুদ্রের খুব কাছে হওয়ায় জোয়ার-ভাটায় সুন্দরবনের নদীগুলিতে জল ওঠানামা করে কুড়ি থেকে পঁচিশ ফিট। তাই সুন্দরবনের সে সমস্ত দ্বীপে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, জোয়ারের সময় সেগুলো সবই চলে যায় জলের নীচে, জেগে থাকে শুধু গাছপালার মাথা। আর যে দ্বীপগুলোতে মানুষের বাস, জোয়ারের জল যাতে সেই দ্বীপগুলোকে ডুবিয়ে দিতে না পারে, সেই কারণেই প্রতিটি দ্বীপকে চারপাশে বেড় দিয়ে রাখে দেড় মানুষ বা দু-মানুষ সমান উঁচু বাঁধ। জোয়ারের জলের প্রবল চাপ ধারণ করে রাখে সেই বাঁধ। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, একবার কোনো জায়গায় সেই বাঁধ ভাঙলে নোনাজল ঢুকে বেশ কয়েকটি গ্রাম আর কয়েকশো একর জমিকে ডুবিয়ে দেয়। এই কারণেই নদীবাঁধগুলোকে বলা হয় সুন্দরবনের লাইফ-লাইন বা জীবন-রেখা। ... ...
আমার বাংলা সাদামাটা বাংলা। চাইলে যে সুমিতদা সেভাবেও লিখতে পারত তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ- বিভূতিভূষণের ‘পোনু’-কে নতুন ভাবে মার্কিন মুলুকে আত্মপ্রকাশ করিয়ে সুমিতদা-র লেখা এক গুচ্ছ ‘পোনুর চিঠি’। পুরোনো ‘অবসর’ আর অধুনালুপ্ত ‘আন্তরিক’ পত্রিকায় প্রকাশিত চিঠিগুলো ছিল ব্যাঙ্গ আর শ্লেষে পরিপূর্ণ! অত্যন্ত সুপাঠ্য সেই চিঠির একটাতে হোঁচট খেয়েছিলাম ‘পন্টক’ শব্দটা দেখে - ব্যবহার করা হয়েছে কোনও এক সম্মেলনে কয়েকজনকে উদ্দেশ্য করে। ... ...
Wittgenstein মনে করতেন দর্শন ও জীবন বা জীবনযাপন সম্পৃক্ত! এই জন্য তাঁর দর্শন Liberation-এর দর্শন বা মুক্তির দর্শন হিসেবেও পরিচিত। Russell-কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘How can I be a logician before I am a human being?’। এখানে এসে পূর্ব-পশ্চিম কোথাও একটা মিলে যায়। আদি ভারতে যাজ্ঞবল্ক্য, গার্গী, মৈত্রেয়ীরা তাঁদের নিজস্ব পথে দার্শনিক সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজেছিলেন আর বিংশ শতাব্দীতে পশ্চিমে আরেকজন মনীষী দার্শনিক তাঁর নিজস্ব প্রতিভায় পৌঁছলেন প্রায় সেই একই পথে! সম্ভ্রমের ব্যাপার হল Wittgenstein আমাদের দেশে আধুনিককালে যার সঙ্গে তাঁর চিন্তা ও বুদ্ধির সবচেয়ে বেশি সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি তথাকথিত কোনো দার্শনিক বা ধর্মগুরু বা সমাজসংস্কারক ছিলেন না, ছিলেন মূলত একজন কবি। প্রকৃতপক্ষে যে উপনিষদীয় ভারত রবীন্দ্রনাথের আধুনিক উদার ও সংস্কারমুক্ত মনের অনুপ্রেরণা ছিল তার সাথে এসে মিশেছিল পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, অন্যদিকে যুক্তিবাদী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন Wittgenstein-এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়েছিল উপনিষদীয় প্রজ্ঞা। মৃত্যুর আগে তাঁর বলে যাওয়া শেষ কথা ছিল, ‘Tell them I have had a wonderful life’। ... ...
প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন বোর্ডের বাংলা সিলেবাসের নির্মিতি অংশ নিয়েই আমার মনে এমন প্রশ্ন জাগে। ধরা যাক, সমার্থক শব্দ পড়াতে গিয়ে জলের প্রতিশব্দ শিখিয়েছি- অপ, সলিল,অম্বু, উদক, তোয়, পয়ঃ, নীর, পানি, ইলা ইত্যাদি। বা কন্যা শব্দের প্রতিশব্দ শেখাতে হয়েছে তনয়া, দুহিতা, আত্মজা, নন্দিনী, মেয়ে, দারিকা, ইত্যাদি। বা পৃথিবীর প্রতিশব্দ শেখাতে গিয়ে শিখিয়েছি- ধরা, ধরণী, বসুধা, ভূ, ধরিত্রী, মেদিনী, ক্ষিতি, জগত ইত্যাদি। এত সমার্থক শব্দ মুখস্থ করিয়ে পড়ুয়াদের লাভ কী! কিন্তু আমরা যারা পড়াই তাদের শেখাতেই হবে। অন্ধের মতো মুখস্থ করা ছাড়া ছোটোদের কাছেও কোন উপায় থাকে না! ... ...
গত বছরে যে সব সূচক ধরে মাপা হয়েছিল, এ বছরে তার অনেক ক'টিই পরিত্যক্ত হয়েছে। আবার গত বছর রাখা হয়নি এমন কিছু সূচক এ বছরে এসেছে। আমরা আগে দেখতাম দারিদ্র্যরেখার নীচে অবস্থানকারী মানুষজনদের চিহ্নিত করার সূচক কোনো দুটি পর্বে এক থাকতো না। ফলে আগের বছরের গরিব এ বছরেও গরিব কি না তা বোঝার উপায় থাকতো না। কেবল বোঝা যেত এ বছর, ওঁদের মাপকাঠিতে কারা গরিব। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সংশ্লিষ্ট কর্তারা জানাতেন এটা উন্নততর সূচক, অতএব অকারণে প্রশ্ন করো না। পরে দেখেছিলাম অমর্ত্য সেন, জঁ দ্রেজ রাও এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। ... ...
ফলে এক ব্যালেন্সের খেলা চলতে থাকে – যতটা সম্ভব দেরিতে শাটডাউন নেওয়া হতে থাকে। আর একটা কাজ করা হয় – পুরো প্ল্যাটফর্ম শাটডাউন না করে যতটা পারা যায় কাজ সেরে ফেলা। মানে যেখানে কাজ করতে চান শুধু সেইখানের আশেপাশে শাটডাউন করে টুক করে কাজ করে নিলেন। এবার বুঝতেই পারছেন আমি যেমন সহজভাবে লিখলাম জিনিসটা তত সহজ নয়! আপনাকে পদে পদে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট করতে হবে। আমরা জানি যে আগুনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস চাই তিনটি – দাহ্য পদার্থ, আগুনের উৎস এবং অক্সিজেন। এই তিন জিনিস মিলিয়ে তৈরি হয় ফায়ার ট্রাঙ্গেল - এর মধ্যে যে কোন একটা জিনিস সরিয়ে নিলেই আর আগুন লাগবে না ... ...
আজকের সময়টা তথ্যের সময়, যাঁর কাছে যত তথ্য, তিনি তত বেশি শক্তিশালী। যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই ‘দিদিকে বলো’ প্রকল্প। তারপর সেই তথ্য সংশ্লেষণ করে, অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করে, সমস্যা চিহ্নিত করে, আবার সেই মানুষটির কাছে পৌঁছনোর প্রক্রিয়াটিই এই প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা করেছেন এই নির্বাচনের শেষ অবধি। এর পাশাপাশি, নির্বাচনী প্রচারে, কোন নেতা কীভাবে কোন জায়গায় কতটুকু বলবেন, কোন সাংবাদিক সম্মেলনে কোন কথা বলা হবে সেই সমস্ত কিছু আগে থেকে ঠিক করা ছিল, সৌজন্য আইপ্যাক। কোন জায়গায় কে প্রার্থী হবেন থেকে শুরু করে কাকে দলে রাখা উচিত হবে না, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাকে দলে কতটুকু স্থান দেওয়া হবে, সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে এই সংস্থা। আরো অনেক বিষয় হয়তো কাজ করেছে। ‘বিজেপিকে ভোট নয়’ যাঁরা প্রচার করেছিলেন তাঁদের হয়তো অবদান আছে কিন্তু দিনের শেষে আইপ্যাকের ভূমিকা বড় নির্ধারক হয়ে দাঁড়াল। ... ...
যুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি আর দর্শন চর্চার মধ্যে যেতে চাননি। প্রথমত তাঁর ধারণা হয়েছিল ‘ট্রাক্টেটাস লজিকা-ফিলজফিকাস’ গ্রন্থে তিনি সমস্ত দার্শনিক সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন, দ্বিতীয় কারণ যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। পূর্বে উল্লেখিত Tolstoy-এর গস্পেল এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈল্পিক সৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় (যার কথা একটু পরেই আমরা বলবো) তাঁর মনে আগামী করণীয় ও তদুপরি জীবন সম্পর্কেও একধরণের আধ্যাত্মিক ধন্দ তৈরি করেছিল। এই সময় মঠে কিছুদিন মালির কাজ করার পর তিনি ঠিক করেন স্কুলে শিক্ষকতা করবেন। সেই মর্মে তিনি প্রশিক্ষণ নেন এবং ১৯২০-২৬ অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন গ্রামে শিক্ষকতার কাজ করতে থাকেন। স্কুলের বাইরেও বিনা পয়সায় ছাত্রদের পড়াতেন, গরিব ছাত্রদের নানা ভাবে সাহায্য করতেন। স্কুলের মাইনে তাঁর কাছে যথেষ্ট বেশি বলে মনে হত। একবার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে এত মাইনে নিয়ে তিনি কী করবেন। প্রকারান্তরে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রধান শিক্ষককে নিজের পুরো মাইনেটাই দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনের এই স্পৃহা Wittgenstein-এর জীবনের একটা প্রধান দিক। ... ...
সলিলদা খুঁজে পেলেন অন্য শিক্ষার ধারণা পাওলো ফ্রের-এর লেখায়। প্রয়োগে আমরা। আমার প্রয়োগে থাকার গল্প বলে সলিলদা, সলিলদা দের গল্প বলি। দেবাশিস আমি বেছে নিলাম নিউ আলিপুরের পিছনে সাহাপুরে গরীব পরিচারিকাদের বসতি। পরিচারিকাদের পরিবারের বসতি। সলিলদা আমাদের বোঝালেন কি করতে হবে। আমরা সেই মতো অন্য লেখাপড়ার আন্দোলনের কর্মী হয়ে গেলাম। সপ্তাহের কয়েকটা দিন সন্ধাবেলা আমরা পরিচারিকাদের নিয়ে বসতাম। প্রথামাফিক অ আ ক খ বর্ণমালা শেখাইনি। পাওলো ফ্রের দর্শনে, সলিলদার, সলিলদাদের পরিচালনায় অন্যভাবে শুরু। একটা উদাহরণ দিই। ... ...
দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি যে, ভারতীয় সমাজ গড়পড়তাভাবে পুলিশকে সাম্প্রদায়িক ভাবেই দেখতে চায়। পুলিশ নিরপেক্ষ হবে, হিন্দু- মুসলমান দুজনকেই সমান দৃষ্টিতে দেখতে সাধারণভাবে যে এটা ভারতীয় সমাজ চায় না বিভূতি নারায়ণ রাই ক্ষেত্র সমীক্ষা জনিত বিশ্লেষণের ভিতর দিয়ে তা দেখিয়েছেন।পুলিশ ও নিজেদের কেবলমাত্র সংখ্যাগুরুর রক্ষাকর্তা বলেই মনে করে।পুলিশ আর মুসলমানের সম্পর্কটা প্রথম থেকেই যে সংঘাতের সেকথা খুব পরিষ্কার ভাবেই বিভূতি রাই বলেছেন। পুলিশ যে ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে মুসলমানের উপরে করে চলেছে তার প্রেক্ষিতে এটা ধরে নেওয়া যায় না যে, মুসলমান পুলিশের নামেই অচলাভক্তি নিয়ে থাকবে। ... ...
আগামীতে এ দেশে বামপন্থার বিকাশের চাবিকাঠিও রয়েছে এই বিশাল বহুত্ববাদী সমাজের মাঝে বামমন্থীরা কতটা নিজেদের সাক্ষর রাখতে পারে এই জনজাতি সমূহের য়ার্থ-সামাজিক অস্মিতার উত্থানে। বাংলা, তামিলনাড়ুর বা কেরালায় বিজেপির পরাজয় আসলে বিজেপির আরএসএস-এর একমাত্রিক ভারত গড়ার প্রকল্পে এক বড় ধাক্কা যেমন বাংলায় ‘জয় শ্রীরাম’ পরাস্ত হল ‘জয় বাংলা’ র কাছে। কিন্তু এই লগ্নে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল নানা ধারা-উপধারায় বিভক্ত বামেরা কি পারবে এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে? হিটলারের উত্থানের পশ্চাতে অন্যান্য নানাবিধ কারণের সাথে সে দেশের বামেদেরও অবদান ছিল বলে মনে করা হয়। সবচেয়ে অদ্ভুত হল রাজ্যে রাজ্যে বাম দলগুলি অবাম দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে নির্বাচনী আঁতাতে সেই বোধ উধাও হয়ে যায়। আরও দুর্ভাগ্যজনক এই অতীব সংকটকালীন সময়েও এদের কেউ কেউ অপরকে ব্যঙ্গ করে বিপ্লবী আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন যা ভবিষ্যতে বাম ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। প্রশ্ন জাগে বিহারের বিজেপি বিরোধী জোটে বামেদের সাফল্য থেকে কি কিছুই শিখবে না তথাকথিত বড় বাম দলগুলি? ... ...
সুন্দরবন ডেল্টা আজ অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে। একদিকে গোটা সুন্দরবন ভূমিরূপ গঠনের দিক দিয়ে যেমন নবীন, অন্যদিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে তীব্র হচ্ছে সংলগ্ন জনবসতির ‘ক্লাইমেট রিফিউজি’ হওয়ার সম্ভাবনা। বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে একদিকে যেমন বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা। একই সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠছে বাড়তে থাকা জনবসতির বেঁচে থাকার আর্তি। পরিবেশবিদ ও ভুতাত্ত্বিকেরা সুদুরপ্রসারি দৃষ্টি দিয়ে বাঁচাতে চাইছেন গোটা প্রকৃতি। আর স্থানীয় মানুষ চাইছেন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় আশু উন্নয়ন। গণদাবী হয়ে উঠছে কংক্রিট বাঁধ। ফলে, ‘বনাম’ হয়ে মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে 'উন্নয়ন’ আর ‘নিসর্গ’। ‘বনাম’ হয়ে মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে ‘কংক্রিট বাঁধ’ আর ‘মাটির বাঁধ’। ... ...
খুবই আশ্চর্যের বিষয়, রাষ্ট্র কোনভাবেই পরিবেশ প্রতিবেশের আরো অবনতি হতে পারে এমন বিষয়কে ছাড়পত্র দেবে না, যদি না পক্ষে খুব শক্তিশালী যুক্তি থাকে, এটা এদেশের পরিবেশ আইনের একেবারে মূল কথা। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট সেন্টাল ভিস্তার ওপর যে রায় দিয়েছে তাতে এর কোনো ছাপ নেই। যদিও পিটিশনাররা সবিস্তারে জানিয়েছিলেন কিভাবে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট এক্টকে কলা দেখিয়ে জমির ব্যবহারে দ্রুত পরিবর্তন করা হয়েছে, কিভাবে হেরিটেজ এবং আর্কিটেকচারাল বিবেচনাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে এবং পরিবেশের পক্ষে এই প্রজেক্ট কতখানি ক্ষতিকারক সে সম্বন্ধে কোনোরকম বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা না করেই এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে,তবুও সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে কোনো পরিবর্তনে বাধ্য না করেই পুরো প্রজেক্টকে ছাড় দেয়। শেষ পয়েন্টটিতে তাদের মনে হয়েছে বৃক্ষ সংরক্ষণের সরকারি প্রতিশ্রুতিতেই কাজ হবে এবং পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে খানকতক স্মগ টাওয়ার বসালেই যথেষ্ট হবে। পরিবেশ ভাবনা এবং দূষণ কমানো যে এক ও অভিন্ন বিষয় নয়, সেটা বোঝার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে বিরল। ... ...
গত প্রায় দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাসের অতিমারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করেছে, জীবনের নানান দিক আর আগের মতন নেই | প্রাণঘাতী এই বিশ্বব্যাপী অতিমারী না হয় একরকম, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরেকটি অতিমারী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, সেটি তথ্যবিভ্রান্তির অতিমারী। বিশেষ করে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের টিকা, এবং টিকা দেওয়া-নেওয়া নিয়ে নানান রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য চোখে পড়ছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি নিয়ে এই আলোচনা। প্রতিটি “ভ্রান্ত ধারণা” (“মিথ”) আমরা প্রথমে উল্লেখ করে তারপর সেটিকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। ... ...
আজকে ১৩৮ কোটি মানুষ প্রত্যেকেই মনে করবে টিকা নেওয়া দরকার যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা অসম্ভব। হাজার বারোশ টাকা খরচ করে টিকা নিতে যাবে ভারতের কত শতাংশ মানুষ? অনেকের ক্ষমতা নেই, কিন্তু এটা পুরোপুরি ক্রয় ক্ষমতার প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হল আমি এতে খরচ করব কি করব না এটা অর্থনীতির নিয়ম। এর সঙ্গে ন্যায্যতার প্রশ্ন। অর্থনীতির প্রশ্ন আর ন্যায্যতার প্রশ্ন আলাদা করে বলতে চাইছি এই কারণে যে, আমেরিকাতে শোনা যাচ্ছে আমি ততক্ষণ সুরক্ষিত নই যতক্ষন না সবাই সুরক্ষিত। এটার মানে হচ্ছে আমার নিজের সুরক্ষার জন্য অন্যদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু এটা সংক্রমক রোগ, অতএব যতক্ষণ সেটা ঠেকাতে না পারছি আমি সুরক্ষিত নই। এখানে কিন্তু একটা সেল্ফ ইন্টারেস্ট-ই আমাকে এই কথা বলাচ্ছে। সরকারও একরকম ভাবে এই সেল্ফ ইন্টারেস্টটা মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তোমার প্রয়োজনেই দরকার অন্যদের ফ্রিতে টিকা দেওয়ার। এটা আমরা অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে বলতে পারি। এখানে প্রশ্ন হল, যদি রোগটা সংক্রমক না হয় তাহলে কি আমি প্রতিবেশীর থেকে সেই ইন্টারেস্টটা দেখতে পাব না? আমার যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে আমি তো সংক্রমণ করছি না কাউকে, তাহলে কি পাশের বাড়ির মানুষটির কিছু এসে যাবে না? সেল্ফ ইন্টারেস্ট ছাড়া সমাজে আর কিছু আমাদের প্রণোদিত করবে না? তাহলে টিকার বন্টনের ক্ষেত্রে সব যুক্তিগুলোকে যদি শুধু সেল্ফ ইন্টারেস্টে নিয়ে আসি, যেটা এক্সটার্নিলিটির আর্গুমেন্ট, তাহলে ন্যায্যতার বা সমানুভুতির কোনও পরিসর থাকবে না? এই এক্সটার্নিলিটির জন্য অবশ্যই সরকারের ভূমিকা আছে। একজনও যদি সংক্রমিত থাকে তাহলে বাকিদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। ফলে সরকার এই ভাবে বোঝাচ্ছে যে, যতক্ষণ না সবাই সুরক্ষিত হচ্ছে তুমিও সুরক্ষিত নও। এটা আমি আমার সেল্ফ ইন্টারেস্ট থেকেই চাইব সবাই সুরক্ষিত হোক। এমনকি দরকার হলে পাশের বাড়ির লোকের যদি পয়সা না থাকে, আমি তাকে পয়সা দিয়ে বলব টিকাটা নিতে। কারণ আমি নিজে সুরক্ষিত থাকতে চাই। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অন্য মোটিভেশন নিয়েও ভাবতে হবে। ... ...
খবরে প্রকাশ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দু হাজারের কম হয়ে যাওয়ার কারণে রাজ্যে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। যে রাজ্যে কোনও সংবেদনশীল প্রশাসন নেই, নেই নূন্যতম স্বাস্থ্যব্যবস্থা সেখানে লকডাউন থাকলেও বা কী না থাকলেও বা কী? এখনো অক্সিজেন, বেড, ওষুধ অমিল তেমনই দাহ করার কাঠের চূড়ান্ত অভাব। পাওয়া গেলেও দাম এতো চড়া যে গরিব মানুষের পক্ষে তা কেনা দুঃসাধ্য। এখনো মৃতদেহ কোনও রকমে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে, কুকুর বিড়াল তা নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করছে। কোথাও প্রিয়জনের দেহ জঞ্জালের ট্রাকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে, কোথাও সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এখনো কিছু জায়গায় গণচিতা জ্বলছে। সুপ্রিম কোর্ট মৃতদের প্রাপ্য সম্মান প্রদান করার কথা বলছেন, কিন্তু এই নেই-রাজ্যের জড়ভরত মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের কাছে এসব কথা মূল্যহীন। উত্তরপ্রদেশে নীরবে যা ঘটে গেল তা এক কথায় নরমেধ। মানবতার বিরুদ্ধে এই চূড়ান্ত অপরাধ ইতিহাস মনে রাখবে। সব কুছ ইয়াদ রাখা যায়েগা। ... ...
কিন্তু এতদসত্ত্বেও শেষেশ বিজেপির ব্যর্থতা নিয়ে এ যাবৎ কালে বহু আলোচনা সামনে এসেছে। আদি-নব্য সংঘাত, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঠিক করতে না পারা, মেরুকরণের তাস ঠিক মতো কাজে না আসা ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ ব্যখ্যা রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর অতি হিন্দুত্ব, যোগী আদিত্যনাথের অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডের হুঙ্কার ইত্যাদি নানা কিছু। আমার মনে হয়েছে এর কারণ 'আরবিট্রারি মেকানিজম', খেয়ালখুশির নীতি। ২০১৪-এর আগে থেকেই বিজেপি আর স্রেফ রাজনৈতিক দল নয়, তার কর্মপরিচালন পদ্ধতি একটা কর্পোরেট হাউজের মতোই। ভোট পরিচালনার জন্য আইটি-সেল সহ নানা বিভাগের কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, টার্গেট ঠিক করে দেওয়া হয়। পাখির চোখটাও সুনির্দিষ্ট থাকে। ঠিক যেমন কোনও পণ্যের বাজারিকরণের ক্ষেত্রে প্রচার অভিযান যে ভাবে হয়, বিজেপিও সেইটাই করে। এমনটাই হয়ে এসেছে এ যাবৎ। বিজেপি ঘেঁষা বুদ্ধিজীবী সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিজেপির ভোট বিস্ফোরণ না হওয়া নিয়ে। তাঁর যুক্তি, বিজেপি যথেষ্ট হিন্দুত্বের প্রচার করেনি। মোহিত রায়ের যুক্তি একরকম ভাবে ঠিকই। বিজেপির নির্বাচন পটীয়ানরা এই একটা ইস্যুতে লক্ষ্য স্থির না করে যেখানে যেমন সেখানে তেমন নীতি নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। কোথাও চেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীকে মুসলিম বিরোধিতা ও হিন্দুত্বের মুখ করতে। কোথাও চেয়েছেন নতুন জেলার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরতে। কোথাও আবার মতুয়া তাস, রাজবংশী তাস ফেলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর অভিন্নহৃদয় সহোদর। ভার্চুয়াল ক্যাম্পেনিংও হয়েছে তদনুসারী। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ঈষৎ জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তিমাত্রেই বলবে, বিপর্যয়ের কারণটাই এইটাই, একটি মূল ফোকাস ঠিক করতে না পারা। ... ...