আমরা ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতাম শবে বরাতে। আমাদের দুপুরের মধ্যেই খোঁজ খবর নেওয়া হয়ে যেত কোন মসজিদে কখন মিলাদ হবে, তবারক হিসেবে কী থাকছে ইত্যাদি! সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাতাম। একই সময় দুই মসজিদে মিলাদ হলে প্রাধান্য পেত তবারকের উপরে। সারারাত বাহিরে থাকার লাইসেন্স পেয়ে আমরা সেদিন উড়ছি। এমন একদিন উড়তে উড়তে রাত পার করে আমি আর আমার বন্ধু রনি বাড়ির পথ ধরেছিলাম। ফজরের আজান হল। আমি বললাম, ফজর নামাজ পড়ে পরে বাড়ি যাব। রনি আমাকে বলল, ধুর, সারারাত নামাজের খবর নাই এখন ফজর পড়বে, বাড়িত যাও মিয়া! আমি শুনলাম না। রনি বাড়ি চলে গেল আর আমি মসজিদে। নামাজ শেষে বের হয়ে দেখি আমার নতুন কেনা জুতাটা নাই! শবে বরাতের রাত শেষ করে কেউ ওই ভোরে আমার জুতা চুরি করল? মানতেই পারছিলাম না। কিন্তু মেনে নিতে হল, খালি পায়ে বাড়ি ফিরে ছিলাম। এবং এরপরে আমার শবে বরাতে প্রতি দুর্বলতাও চলে গেল! ঘরে বসেও ইবাদত করা যায় ফর্মুলায় চলে আসলাম! যাই হোক, উৎসবটা খারাপ ছিল না, বিশেষ করে পারিবারিক ভাবে যে আয়োজন হত তা আজীবন মিস করব। ... ...
এরপর ক্লিক ক্লিক, অনেকগুলো ছবি আর ফেসবুক জুড়ে পোস্ট...তাতে এখন অসংখ্য লাইক ছড়িয়ে পড়ছে... এদিকে শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রহরও...আবারও একটা বছর পর... স্টল প্রায় খালি করে চলে যাচ্ছে সবাই...এক এক করে, এক এক গন্তব্যে... আর ভেতরে একটা আশ্চর্য হু হু... শূন্য হয়ে যাওয়ার মতন অনুভব। যদিও এই তিন জুটির সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবারের বইমেলা মনে রাখার মতন... রুদ্র কথা দিল, যোগাযোগ রাখবে...কথা দিল শ্রীপর্নাও... দেবারতীর সাথে নম্বর আদান প্রদান হলো সৌরভের...আর অল্প কথা কিছু… এবার থেকে প্রোফাইলে ছবি দেবে তো? দেবারতী হাসল শুধু...তারপর বেরোনোর পথে বলে গেল... তোমার নতুন কবিতার অপেক্ষা থাকবে, সৌরভ। দিও ... ... ...
হ্যারল্ড ক্রিক এক সকালে জানতে পেরেছিল, যে, তার জীবনটা তার নিজের নয়—এক লেখিকার গল্পের সে মুখ্য চরিত্র। মহিলার আবার বদনাম আছে—নিজের সব মুখ্য চরিত্রকেই তিনি গল্পের শেষে টুক করে মেরে ফেলেন। সক্কাল সক্কাল নিজের জীবনের ধারাবিবরণী শুনতে শুরু করা হ্যারল্ডের সঙ্গে অবশেষে একদিন দেখা হয় তার জীবনের লেখিকার... হ্যারল্ডের মত নেপথ্য-কথকের কণ্ঠস্বর আমরা শুনতে পাইনে ঠিকই, কিন্তু কোনো কোনো ধূসর মুহূর্তে সকলেই নিশ্চয়ই ভেবে আকুল হয়েছি: নিজেদের জীবনের—যার ওপর মালিকানা ঘোষণা করতে আমাদের একটুও সমস্যা হয় না—তার কতটুকু আমার নিজের লেখা? ... ...
মগজ যখন হাঙরের ... ...
এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই। ... ...
‘মৌলবাদ’ বস্তুটি যে আধুনিকতার বিরুদ্ধে এক প্রতিক্রিয়া এবং সেইহেতু তারই এক উপজাত, সে ব্যাপারে বোধহয় আর সন্দেহ থাকার কথা না। মৌলবাদ যতই ধর্মের সনাতন, মূল ও বিশুদ্ধ সারবস্তুতে ফিরে যাবার কথা বলুক, মূল্যবোধে যতই সংরক্ষণশীল হোক, এবং যতই প্রাচীন এক স্বর্ণযুগের মিথ নির্মাণ করে তাতে ফিরে যাবার ডাক দিক, তা আসলে নিতান্ত আধুনিক এক ‘ফেনোমেনন’ বা প্রপঞ্চ। শুনতে অসম্ভব লাগলেও, ভেতরের সত্যি এটাই। এ প্রপঞ্চ নির্মিত হয় আধুনিক পৃথিবীতে ধর্মের অপ্রাসঙ্গিক ও বিলুপ্ত হয়ে যাবার উদ্বেগের অভিঘাতে। ... ...
বিগত প্রায় পঞ্চাশ বছর সময়কাল ধরে ‘ফান্ডামেন্টালিজম’ বা ‘মৌলবাদ’ সারা পৃথিবী জুড়ে এমনই এক ‘ফেনোমেনন’ হয়ে দেখা দিয়েছে, কোনও চিন্তাশীল মানুষই যাকে আর উপেক্ষা করতে পারেন না। ইউরোপে রেনেসাঁ, বৈজ্ঞানিক বিপ্লব, এনলাইটেনমেন্ট, শিল্প বিপ্লব এইসব ঘটে যাবার পর থেকে আলোকপ্রাপ্তদের মনে ক্রমশ এই ধারণাটাই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছিল যে, জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি অর্থনীতি এইসবের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের প্রভাব আস্তে আস্তে কমে আসবে, এবং এক সময়ে হয়ত তা পুরোপুরিই অবলুপ্ত হয়ে যাবে। সমাজতন্ত্রের ধ্যানধারণার প্রচার ও প্রসারের ফলে এ প্রত্যাশা আরও অনেক জোরালো হয়েছিল, শেষতক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক বা না-ই হোক। সেদিক থেকে দেখলে, বিশ শতকের শেষে ধর্মের রমরমা বেড়ে ওঠা এবং মৌলবাদের উত্থান প্রায় এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এখন, বিষয়টি নিয়ে চর্চা করতে হবে, গভীরভাবে ভাবতে হবে যুক্তি সহকারে, এবং পৌঁছতে হবে কোনও এক বুদ্ধিগ্রাহ্য উপলব্ধিতে। বোঝার চেষ্টা করতে হবে, সমকালীন সমাজবিজ্ঞান এ নিয়ে কী ভাবছে। ... ...