গুগল ম্যাপ অনুযায়ী আমাদের ঘন্টা তিন চারের মধ্যেই পৌঁছানোর কথা। কিন্তু পৌঁছাতে রাত সাড়ে সাতটা বেজে গেল। মূলত আগস্টে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ধ্বসের ফলে কুলু মানালি অঞ্চলে যে নির্মম ধ্বংসলীলা চলেছে তাতে চারলেনের হাইওয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। নতুন করে তৈরী হওয়া সরু একফালি রাস্তায় দুই লেনে আপ ও ডাউন গাড়ি যাওয়া আসা করছে, ফলে যানবাহনের গতি ধীর। ধ্বংসের চেহারা দেখে হাড়ের ভেতর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। মানালির ভলভো বাসের স্ট্যান্ড, শহরের গাড়ি ট্যাক্সি পার্কিং এলাকা ভেঙেচুরে বিপাশা নদী খলখলিয়ে বয়ে যাচ্ছে। হাড় পাঁজরা বের করে কটা নিরূপায় গাড়ি, একটা ভলভোবাস বেঁকেচুরে উল্টেপাল্টে দাঁড়িয়ে আছে অজস্র বড় মাঝারি বোল্ডারের মধ্যে। ... ...
শুভ কেমন মুজিব? চলন সই। যতখানি খারাপ মনোভাব নিয়ে গেছিলাম ততখানি খারাপ না। আমার ধরনা, দেশের বাহিরের দর্শক, যারা শুভকে চিনে না, যারা তৃষা কে চিনে না তারা ভাল করে তাদের মূল্যায়ন করতে পারবে। আমাদের চোখে দুইটাই পরিচিত মুখ, মানে মুজিবের চেহারা যেমন আমাদের মুখস্থ তেমনই শুভর চেহারাও। তাই আমাদের জন্য একটু কষ্টকর মুজিব হিসেবে শুভকে মেনে নেওয়া বা তৃষাকে বেগম মুজিব হিসেবে। দীঘিকে ছোটবেলার রেণু মানে বেগম মুজিব হিসেবে ভাল লাগছে কারণ দুইটা চেহারাই অপরিচিত। এমনেও দীঘি ভাল করছে। শুভ পরিশ্রম করছে এইটা বুঝা গেছে। কিন্তু আমি বুঝি নাই যে এত পরিশ্রম করতে রাজি ছিল সে পরচুলা পরতে গেল কেন? গোঁফটা পর্যন্ত রাখতে পারত না? এই দিকটা খেয়াল করলে আরও ভাল হত। ... ...
খোল পাখোয়াজের স্বর্গীয় শিল্পী বিশ্বভারতীর অনাদিনাথ দত্তকে তাঁর শতবর্ষে প্রণাম। ... ...
"বাবাই পাল এখন মধ্য চল্লিশ! সেই দুগ্গা পুজো, সেই আলোর মালা আর কুয়াশায় মোড়া দশমীর পাড়া, সেই চোখ পাকানো কল্যাণকাকা, সেই দস্যি হেবো.. বা বলা ভালো, নিজের সেই গোটা অমলিন শৈশবটাই এখন অলীক অলৌকিক বলে প্রতীয়মান হয় তার কাছে। দায়দায়িত্ব আর রোজগারপাতির চক্করে পুরুষমানুষের নরমসরম হয়ে রয়ে যাওয়ার জো থাকে নাকি?" ....... পুজোর পরে পুজোর গপ্প! সময় পেলে পড়ে দেখতে পারেন একবার! ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৬ - - - তেমাথায় দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছি। কী খুঁজছেন? কমল মিত্রর মতো রাশভারী গলা শুনে ঘুরে তাকাই। বছর পঞ্চাশের প্রশ্নকর্তার লম্বা চওড়া সুঠাম চেহারা, ব্যক্তিত্বময় মুখ, মর্মভেদী দৃষ্টি। বলি, হনুমান মন্দির। কোত্থেকে আসছেন? নিক্ষিপ্ত হয় দ্বিতীয় প্রশ্নবাণ। কলকাতা। ধেয়ে আসে তৃতীয় মিসাইল, ওখানে কী দরকার? অচেনা কারুর এহেন অবাঞ্ছিত প্রশ্নমালা শুনে ভ্রু কুঁচকে যায়। ভাবি ইনি কেন এতো সওয়াল করছেন? মন্দিরে কেন যায় লোকে? বাজার করতে নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু তখনই একটু খটকা লাগে। অজনবীর ভাবিত মুখে পড়েছে অন্য ছায়া - স্বগতোক্তির ঢঙে বিড়বিড় করেন, ক ল কা তা! পরক্ষণেই আবার দারোগার মতো সওয়াল, আপনি কী বাঙ্গালী? ভাবি কলকাতা কী কিরিবাতি আইল্যান্ডের মতো দূরবর্তী না বাঙ্গালী নর্থ সেন্টিনেলীসদের মতো দুর্লভ? কলকাতা শুনে, বাঙ্গালী ভেবে অবাক হওয়ায় কী আছে? সাহারা থেকে সাইবেরিয়া - খুঁজলে দু এক পিস বাঙালি কোথায় নেই। সম্মতিসূচক মাথা নাড়ি। প্রশ্নকর্তার দৃষ্টি নরম হয়। এগিয়ে আসে একটা বলিষ্ঠ হাত। ... ...
ছৌনাচ বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে হোটেলগুলি তাদের ন্যূনতম দক্ষিণায় হোটেল নর্তক বানাচ্ছে, এটা বুঝতে পেরে ভালো লাগলনা। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা শিল্পীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা কিছু করেছে। একেবারে শিশুকাল থেকে শিল্পীরা এই নাচ শিখছেন এবং নিয়মিত অভ্যেস করেন, তাই শান বাঁধানো মেঝেতে আছড়ে পড়েও আঘাত লাগেনা। পরে সকলে ভাবলাম, যদিও শিল্পের দাম টাকা দিয়ে হয়না, তবুও এই অনুষ্ঠানে কতটাকা পেলেন, এই প্রশ্নটা লজ্জার মাথা খেয়ে করে ফেললেই হত। ... ...
একঘন্টা ধরে নাকের ডগায় লাইভ যুদ্ধ সহ্য করা কি চাট্টিখানি কথা! যা হোক, শেষে এক ভয়ানক যুদ্ধের মাধ্যমে মহিষাসুর অক্কা পেল। মা দুর্গা ব্যালান্স করে সেই বিশাল সিংহের পিঠে উঠে পড়লেন, আর অমনি তাঁর ঝলমলে ছেলেমেয়েরা আর তাঁদের বাহনরা পজিশন নিল। আমার ছেলেমেয়েরা থুড়ি ছাত্রছাত্রীরাও হৈ হৈ করে উঠোনে নেমে পড়ল। ওরা মনে হয় এতক্ষণ আমার ভয়েই চুপ করে চেয়ারে বসেছিল। ... ...
কৈশোরে গম্ভীর স্থানীয় রাজার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। একজন শিল্পীর বড় হওয়ার পিছনে ভাত কাপড় যোগানোর একটা হাত খুব জরুরী, যেটা আজকের শিল্পীরা পাচ্ছেন না। ছৌনাচ যিনিই সামনে থেকে দেখেছেন, তিনিই বুঝবেন, এ আসলে একধরণের প্রাচীন সিনক্রোনাইজড জিমন্যাসটিকস। কোন আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া ছৌ নৃত্যশিল্পীরা কীভাবে এই বিদ্যা করায়ত্ব করেন সে এক বিস্ময়। ... ...
চড়িদা গ্রামটি হোটেল থেকে বেশি দূরে নয় - আন্দাজ তিন কিলোমিটার দূরে হবে। রাস্তার ধারে ধারে ছৌ মুখোশ বিক্রির দোকান। পথে কয়েকটি বিদ্যালয়ও চোখে পড়ল। কুড়ি বছর আগেও একবার এ গ্রামে এসেছিলাম, তখনকার থেকে এখনকার দৃশ্যপট আমূল পরিবর্তিত হয়ে গেছে। তখন এমন রাস্তা ছিলনা। হেঁটে উঠতে হয়েছিল। ইতিউতি বাড়িঘরের মধ্যে দোকানঘর ছিল অল্প। এখন পাকা রাস্তায় হু হু করে গাড়ি করেই এসে পড়লাম। সামনে অগুন্তি দোকানঘর। ... ...
'নগর' স্টাইলে মন্দিরগুলো কোনো গাঁথুনি ছাড়াই শুধু পাথরের ব্লক বসিয়ে বসিয়ে বানানো। প্রায় সব পূর্ব মুখী, সূর্যোদয়ের দিকে। অধিষ্ঠান হচ্ছে মন্দিরগুলোর কমন ভিত্তি। তার ওপরে ধীরে ধীরে অর্ধ মন্ডপ, মন্ডপ, মহামন্ডপ, অন্তরাল এবং সবশেষে গর্ভগৃহ। সূর্য ওঠার সময় সূর্যের আলো ধীরে ধীরে দরজা দিয়ে ঢুকে গর্ভগৃহের মূর্তির ওপর পড়বে, মন্দির স্থাপত্যগুলো সেভাবেই তৈরী। গর্ভগৃহের চারদিকে প্রদক্ষিণ করার জায়গা। গর্ভগৃহের ওপরে মন্দিরের বাইরের দিকে প্রধান মিনারটাকে শিখর এবং ছোট ছোট মিনারগুলোকে উরুশৃঙ্গ বলে। শিখরের একদম ওপরে বসানো থাকে একটা কলসী। মন্দিরগুলোর বাইরের এবং ভেতরের বেশিরভাগ মূর্তিই কোনোরকম যৌন অনুষঙ্গ ছাড়া তৎকালীন সাধারণ জীবনযাপনের গল্প। এছাড়াও মন্দিরগুলোর গায়ে কিছু কিছু জায়গায় আছে ব্রহ্মার মূর্তি যেটা অন্য কোথাও দেখা যায় না। ... ...
‘‘জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে, এটা সত্যি। কেউ এসেছে দেহ নিয়ে, কেউ এসেছে মানসিক তীব্র আকর্ষণ নিয়ে। কিন্তু ছাড়িনি কাউকে। ধরেছি, আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছি। হজম করে ছিবড়ে করে ছেড়েছি। হজম করার মানে জানো? ও মন্ত্রটা আমার গুরুদেবের কাছে শেখা। তাঁর থেকে জন্ম নিয়েছে আমার অনেক ছবি, মূর্তি, অনেক কল্পনা, আর অনুভব।…আমার মডেলরা আমার বহু স্কেচে, ছবিতে, মূর্তিতে, বেঁচে আছে। মডেলরা তো এভাবেই বেঁচে থাকে।’’ ... ...