আমি ২০১৯ সালে বলেছিলাম, “কংগ্রেসকে অবশ্যই মরতে হবে”। আমি তখন কী বোঝাতে চেয়েছিলাম? এখন কি সেই চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়েছে? কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ একটি মৌলিক প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে ছিল, যে ভারতকে বাঁচানোর জন্য তাদের অবশ্যই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এই কারণেই আমি ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রাকে সমর্থন করছি। এই সমর্থন শর্তহীন নয়। কংগ্রেস কি শেষ তিন বছরে একটুও বদলেছে? আমাদের প্রজাতন্ত্রের ভিত্তির ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে আমি প্রতিরোধের সম্ভাবনা হিসেবে এখন বিশ্বাস করি? ... ...
ক্রিশ্চান গোষ্ঠীর সঙ্গে বিজেপির সংঘাতের ইতিহাস নতুন না। গ্রাম স্টেনের কথা হয়তো অনেকেই মনে রেখেছেন। কিন্তু এখানে যে জিনিসটি নতুন, তা হল বিজেপির অ্যাজেন্ডার রাজনৈতিক সম্প্রসারণ। গোটা ভারতবর্ষে ইতিমধ্যেই বিজেপিকে রুখতে নরম-হিন্দুত্বের ঝোঁক দেখা যাচ্ছিল। তৃণমূলের গণেশ-পুজো থেকে শুরু করে কেজরিওয়ালের কাগজের নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপানোর প্রস্তাব পর্যন্ত। কিন্তু সংখ্যালঘুর 'দাঙ্গা' বাধানোর পরিকল্পনাকে রুখতে বিজেপি মডেলে হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরা, বিজেপির গণমঞ্চের নিচে আসা, এটা বিগত কয়েক দশকে এই প্রথম দেখা গেল। এর পরে কাউকে আদৌ বিজেপি-বিরোধী কেন বলা হবে, সেটা একটা প্রশ্ন। কংগ্রেস নেতা বেনুগোপাল, একে 'অশুভ আঁতাত' বলেছেন। রাজ্যপালের চাপের সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত করেছেন। যদিও তাঁর পার্টির অবস্থানও প্রশ্নচিহ্নের ঊর্ধ্বে না। আদানির বরাতপ্রাপ্তি কংগ্রেস জমানাতেই। ... ...
কীসের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে ভারতের স্বধর্ম আজ আক্রমণের মুখে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য নিবন্ধের প্রথম পর্বে আমি স্বধর্মের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বোঝাতে চেয়েছি যে স্বধর্ম আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতার সেই অংশ, যাকে আমরা সর্বোত্তম হিসেবে গ্রহণ করতে চাই। অর্থাৎ মানব জীবনের আদর্শ হল স্বধর্ম খুঁজে বের করে তাকে অনুসরণ করা। এখন প্রশ্ন জাগে, একটি দেশের কি স্বধর্ম থাকতে পারে? আপনি যদি এর বাইরের রূপটি নিয়ে চিন্তা করেন, তবে কথাটি অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। ধর্ম তাই, যা ধারণ করা যায়। ধারণ করার জন্য প্রয়োজন চেতনাশীল ধারক। তাই একজন মানুষের ধর্ম থাকতে পারে। পশুপাখি বা গাছ-গাছালিরও থাকে। কিন্তু দেশের মত একটা অচেতন সত্ত্বার কীভাবে ধর্ম থাকতে পারে? দেশ যদি মানচিত্রে চিহ্নিত একটি রেখা হয়, তবে তার ইতিহাস এবং আবহাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু ধর্ম থাকতে পারে না। ... ...
বিজেপিকে টক্কর দিতে কংগ্রেসের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, প্রায় দুশো আসনে মুখোমুখি লড়াই। বাকি আঞ্চলিক দলদের অনেকটাই কম। কিন্তু বিগত ১৯-এর নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপির কাছে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হয় এবং তার ফলেই বিজেপি এতবড় সাফল্য পায়। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই, যে, কংগ্রেস ৫০/৫২তেই আটকে থাকবে ও আঞ্চলিক বা অন্যান্য দলেরা এতটাই ভালো ফল করবে, যে, বিজেপি ২০০র নীচেই থেমে যাবে। গণিত কিন্তু তা বলছে না। ... ...
ভারতের স্বধর্ম কী? ব্যক্তি বা বর্ণের স্বধর্মের কথা আপনি শুনেছেন। কিন্তু দেশেরও কি স্বধর্ম থাকতে পারে? স্বধর্মের মতো একটি শব্দ শুনলে কিছু লোক আতঙ্কিত হয় যে এটি একটি জাতীয় ধর্মের মতো কিছু। কিছু দেশে ইসলাম বা খ্রিস্টধর্ম সরকারিভাবে স্বীকৃত। তার আদলে কিছু মানুষ ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাইছেন। তাহলে ভারতের স্বধর্মের ভাবনা কি কোথাও এই বিষয়টিতেই ইঙ্গিত করছে? যাই হোক, এখন প্রশ্ন, ভারতের স্বধর্ম কোথায় পাব? এটা কে ব্যাখ্যা করবে? আসুন ভগবদ্গীতা দিয়ে শুরু করি। ধর্মের ধারণাটি এই গ্রন্থ থেকে শুরু হওয়ার কারণে নয়। বরং ভগবদ্গীতা বৈদিক ঐতিহ্য এবং বৌদ্ধ প্রতিস্পর্ধার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় সভ্যতার কিছু মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। ... ...
একটা জিনিস খুব স্পষ্ট – কলকাতার প্রথম অ্যাকুইফারের উপরে ১০ থেকে ৫০ মিটার পুরু একটি অ্যাকুইটার্ড বা কর্দমের স্তর আছে, যা অপ্রেবেশ্য বা আংশিক প্রবেশ্য। এটি থাকার জন্য এবং কলকাতার অধিকাংশই কংক্রিট বা অ্যাসফল্টে ঢাকা বলে কলকাতার বৃষ্টির জল সরাসরি ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে না বা পারলেও এত ধীরগতিতে, যে তা হিসাবের মধ্যে আসে না। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, কলকাতায় এত যে বৃষ্টি হচ্ছে – তা কলকাতার কোনো কাজেই আসছে না। প্রায় সবটাই বয়ে চলে যাচ্ছে। উল্টে তা আবার জলমগ্নতার সমস্যা সৃষ্টি করছে। কলকাতায় তো বৃষ্টির জল ভূগর্ভে যেতে পারে না, তবে এই ভূগর্ভের অ্যাকুইফারগুলি পুষ্ট হয় কীভাবে? ... ...
আজাদির ৭৫ বছরের অমৃত মহোৎসব, খিদের সূচকে আমাদের দেশকে শেষ বেঞ্চের ছাত্র-র তকমা দিয়েছে। তবে আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যায় আমরা জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পেয়েছি। ‘বেটি বঁচাও বেটি পড়াও’-এর দৌলতে মুখ ঢেকেছে সরকারি বিজ্ঞাপনে, পোস্টার-ব্যানার-ফ্লেক্সে। কিন্তু সেই একই দেশের মহিলাদের মধ্যে আত্মহননের হার বাকি পৃথিবীর মহিলাদের দ্বিগুণ। এনসিআরবি-র রিপোর্টের প্রতিটা পাতার প্রতিটা অক্ষর আমাদের কার্যত মুখ লুকোবার জন্য হাতছানি দেয়। এক পরিচিত মনোবিদকে বলতে শুনেছিলাম, ‘এক সুস্থ ব্যক্তিকে অবসাদগ্রস্ত করে তোলার জন্য এই রিপোর্টের পাতাগুলোর সঙ্গে এক ঘণ্টার সান্নিধ্যই যথেষ্ট।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, শূন্যের দিকে তাকিয়ে এর পরে বলেছিলেন, ‘অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না।’ ... ...
আগে বলা হত রাজনৈতিক দল গঠনে দলীয় কর্মী, দলীয় কর্মসূচী, দলীয় কার্যালয় ও দলীয় তহবিলের মত চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মুখ্য হয়ে ওঠে। এখন রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমশই ফাঁপা হয়ে যাওয়ায় এই চারটি স্তম্ভ এখন ক্রমশই আবছা হয়ে গেছে। একালে রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল জনসমর্থন আছে, অর্থ ও মিডিয়ার বিশাল নেটওয়ার্ক আছে, নেতাদের দরবার আছে কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তা ও চর্চার বড়ই অভাব। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই, তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তাপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার মত উপযুক্ত কোনো পরিকাঠামো নেই। ... ...
‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হতে পারে না। দেশের সবথেকে নিচুতলার মানুষের সুখ-দুঃখকে না ছুঁতে পারলে ‘ভারত জোড়ো’ কেবলমাত্র একটা স্লোগান হয়েই থেকে যাবে। এটাও আমরা মাথায় রাখছি যে, ‘ভারত জোড়ো’-কে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হলে আমাদের একটি রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। সেটা হল দেশের মানুষের রোজগার সংক্রান্ত পরিসংখ্যান। গত ২ বছরে দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে, কিন্তু একই সময়ে মুকেশ আম্বানির সম্পদ বেড়েছে ৩ গুণ এবং আদানির সাম্রাজ্য ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, দেশের বিত্তশালীদের মধ্যে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে শামিল হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গত কয়েক বছরে লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়ে বিদেশে বসত গড়েছে। এইসব ধনী ভারতীয়রা আজকাল দেশের বাইরে বিনিয়োগ করছে। এছাড়া ‘হাম দো হামারে দো’, এটাই তো এই সরকারের অর্থনৈতিক নীতি। মোদি-শাহের এই আদানি-আম্বানিমুখী অর্থনীতিতে দেশ দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ না করে ভারত জোড়ার স্বপ্ন দেখাও বৃথা। নজিরবিহীন বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশার এই সময়ে ভারত ঐক্যবদ্ধ করার অর্থ হবে লুঠেরা-ডাকাতাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে শ্রমজীবী-কৃষিজীবী মানুষকে অর্থনীতির কেন্দ্রেস্থলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। গর্বকে কর্মের সঙ্গে যুক্ত করা। ... ...
আমি বলছি না, যে ওপরে সেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা চূড়ান্ত সত্য। আসুন আমরা অনুমান করি যে এইগুলি অসত্য ছিল, এমনকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারপরেও, যখন মাটির তলায় চাপা দেওয়া এইসব অভিযোগগুলোকে ওপরে তুলে এনে তা জনসমক্ষে পেশ করা হয় এবং আইনি প্রকিয়ার মাধ্যমে কয়েক ডজন নথিপত্র, তথ্য, উপাত্ত, প্রমাণ-সহ সেগুলো হাজির করা হয় – তখন আমরা কি আশা করতে পারি না, যে আদালত একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি ফয়সালা করবে, যাতে কোনো ভুলত্রুটি না থাকে? আমরা যদি ধরেও নিই, যে অভিযোগগুলি সত্য হলেও, সংশ্লিষ্ট বিচারকদের আচরণ বাইরের থেকে প্রভাবিত হয়নি – তারপরেও স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং আর্থিক নথি প্রকাশের নির্দেশিকা নিয়ে আসতে এই মামলাগুলি খতিয়ে দেখা কি সাহায্য করবে না? এবং যদি এই অভিযোগগুলিতে সত্যের কোনো উপাদান থেকে থাকে তবে এই ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠু শুনানি কি বিচারবিভাগীয় দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি ও সংস্কারের সহায়ক হত না? ... ...
“বিদ্যুৎ (সংশোধনী) আইন ২০২২” নামক এই বিলের আসল কাজ হল বিদ্যুৎ বিতরণকে প্রাইভেট কোম্পানির হাতে তাদের মনমাফিক শর্তের ভিত্তিতে তুলে দেওয়া। বিদ্যুৎ ব্যবসার মোট তিনটে অঙ্গ আছে: কয়লা, জল বা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন (জেনরেশন), হাইটেনশন টাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ (ট্রান্সমিশন) এবং স্থানীয় বা আঞ্চলিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ (ডিস্ট্রিবিউশন)। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ২০০৩ সাল থেকেই প্রাইভেট কোম্পানি অনুমতি পেয়েছে। এখনো পর্যন্ত অর্ধেক উৎপাদন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর একটুও আগ্রহ নেই। ... ...
দ্য প্রিন্টের ওপিনিয়ন এডিটর রমা লক্ষ্মী এই পদ্ধতিকে “বৃহৎ-ই-সেরা, প্রযুক্তি-সজ্জিত, চমকপ্রদ” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এটাই মোদি-র সযত্নে তৈরি করা এই ক্ষমতাবান ভাবমূর্তিকে বিকশিত করার তন্ত্র। যদি ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল স্বাধীনতা যুদ্ধের বিষয় থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধগুলির দিকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়, তাহলে ঠিক একইভাবে গ্র্যান্ড স্ট্যাচু অফ ইউনিটি এবং আম্বেদকর মেমোরিয়াল হচ্ছে প্রাক-স্বাধীনতা পর্বের থেকে বর্তমান শাসকরা যা কৌশলে চুরি করে নিজেদের অনুকুলে ব্যবহার করতে পারে, তারই প্রচেষ্টা। সেন্ট্রাল ভিস্তা এখনও উদ্বোধন করা হয়নি, তবে আমরা অনুমান করতে পারি, যে এটা একটা মহিমা প্রচার এবং বিস্ময়ে তাক লাগানোর প্রচেষ্টা হবে। সম্ভবত ওয়াল্টার বেঞ্জামিন ‘দেখনদারির রাজনীতি’ বলতে এইটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। যা জনসাধারণকে ফাঁকা বুলি দিয়ে প্রভাবিত করে, যা চারুকলা, বিনোদন এবং চমকের ভেল্কিতে মানুষকে বাস্তব পরিস্থিতি ভুলিয়ে মাতিয়ে রাখে। ... ...
ভারতে খাদ্য হিসেবে জিনশস্য চালু করতে অনেক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। একমাত্র অখাদ্য ফসল হিসেবে জিনশস্য তুলোর চাষ ভারতে সর্বাধিক হয়। কিন্ত ওই তুলো বীজের তেল বনস্পতি তৈরীতে ব্যবহার হয়। এবার ভারতে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যার দোহাই দিয়ে এবার নতুন চাল। বছরে খরচ হবে প্রায় ২৭০০ কোটি টাকা (indianexpress.com/article/india/cabinet-fortified-rice-cost-rs-2700-crore-per-yea…)। সব কিছুর মূলে রয়েছে পরোক্ষ ভাবে সেই বিশ্ব বানিজ্য চুক্তি ও ভারত মার্কিন কৃষি চুক্তি ২০০৫ (AKI চুক্তি)। ভিটামিন এ’র অভাবে রাতকানা রোগ, লোহার অভাবে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কম হওয়ার জন্য রক্তাপ্লতা ও অনান্য অনুখাদ্য ও প্রোটিনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। অপুষ্টি দুরীকরনের জন্য বিশেষ কিছু ফসলে প্রথাগত প্রজনন, বাইরের থেকে খাবারে লোহা ও জিঙ্ক মৌলের লবন মিশিয়ে ও জিন পরিবর্তনের দ্বারা ফসলের “পুষ্টিগুন” বাড়িয়ে দেওয়া হবে। সেই ভাবে তৈরী “পুষ্টিকর ফসল” খেয়ে ভারতবাসীর অপুষ্টি দূর করা যাবে বলে দাবী করা হয়েছে। ২০১৬ সালের আগে থেকেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ অনান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা যৌথ ভাবে কাজ শুরু করেছে। ২০২১ এর ১৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেন অপুষ্টিতে ভোগা গরীব গরিব মহিলা ও শিশুদের জন্য ২০২৪ সালের মধ্যে রেশনে, অঙ্গনওয়াড়ী ও দুপুরের খাবার হবে জৈবিক ভাবে “পুষ্টি সমৃদ্ধ” চাল। এ হল “পোষান অভিযান” প্রকল্প। ... ...
জনমত সমীক্ষার একজন গবেষক হিসাবে, সাধারণ মানুষের তরফে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়নের চেয়ে পরিবারিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়ায় অনেক বেশি করে আস্থা রাখি। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ইচ্ছামত উজ্জ্বল কিংবা অন্ধকারাচ্ছন্ন হিসাবে তুলে ধরে মানুষকে বোকা বানানো সহজ। কিন্তু দৈনন্দিন সাংসারিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে জনতাকে ঠকানো যায় না। কিন্তু গত ৬ বছর ধরে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ মানুষকে প্রশ্ন করে গেছে, “২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনীতির কতটা পরিবর্তন হয়েছ বলে মনে করেন?” এরকম প্রশ্নের মাধ্যমে একদিকে সূক্ষ্ম কায়দায় নরেন্দ্র মোদির নামটাকে আরও বেশি করে জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই প্রশ্নটি এমনভাবে করা হয়েছে, যার অভিমুখটাই ছিল মোদির পক্ষে। যদিও ৩৬ শতাংশের প্রতিক্রিয়া যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হয়েছে। তুলনায়, ২৮ শতাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়া যে ২০১৪-র থেকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি জারি আছে। অর্থাৎ এই যে বেশি সংখ্যক মানুষ যারা নিজেদের পরিস্থিতির উন্নতি আশা করেন কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা যে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে — এই পরিসংখ্যান যে কোনও সরকারের জন্য ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার পতনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ... ...
এই অপরাধীদের ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত কি আইন মেনে হয়েছে? এটা প্রসিডিওরাল বা পদ্ধতিগত প্রশ্ন; বুঝতে আমাদের আগে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। এক, ধারা ৪৩২(৭) অনুযায়ী ‘appropriate government’ কে? গুজরাত সরকার নাকি মহারাষ্ট্র? দুই, মকুবের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত নেওয়া কি জরুরি ছিল? তিন, শাস্তি ঘোষণার আদালতের মতামত নেওয়া কি জরুরি? চার, সুপ্রিম কোর্টের আগের রায়গুলোর সঙ্গে এই রেমিসনের সিদ্ধান্ত কি সংগতিপূর্ণ? এক এক করে দেখা যাক। ... ...
মনে করুন, বিমলা দেবী নামে ২১ বছর বয়সী এক মহিলা আছে। যিনি পাঁচ মাস ধরে অন্তঃসত্ত্বা। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কোনো এক আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছেন। যাওয়ার জন্য সবাই একটা ট্রাকে উঠেছেন। হঠাৎ একদল লোক গাড়িটিকে থামাল। গাড়ির মধ্যে থাকা সকল পুরুষ সদস্যকে খুন করা হল! বিমলা দেবীর চোখের সামনে তাঁর তিন বছরের কন্যাকেও রাস্তায় নামিয়ে নৃশংসভাবে খতম করা হল! একে একে গণধর্ষণ করল বিমলা দেবীকে! অবশেষে তারা বিমলা দেবীর নগ্ন শরীরটিকে ফেলে রেখে চলে গেল! ... ...
ফিল্ম আর্কাইভের প্রতিশ্রুতি থাকতো প্রত্যেক বুধবার করে। প্রত্যেক বুধবার সন্ধ্যা ছ-টায় দেখানো হত ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক, নন্দন তিন-এ। তবে সব বুধবার হত না। আর্কাইভের একটা ফোন নম্বর জোগাড় করেছিলাম আমরা। বুধবার শো-য়ের ঘণ্টা তিনেক আগে ফোন করে কি ছবি এবং তার থেকেও বড় হল আজ দেখানো হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে নেওয়া হত। ৯৮-৯৯ সাল ও শূন্য দশকের শুরুর দিকে নন্দনের অধিকর্তা ছিলেন অংশু শূর। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব, সিনে সেন্ট্রাল, আইজেন্সটাইন সিনে ক্লাব, আর্কাইভের শো ও আরো অনেক ফিল্ম সোসাইটি - এসব মিলিয়েও আমরা পরিমিত আহার পাচ্ছি না মনে করেই সম্ভবত নন্দনে শুরু হল মাসিক রেট্রোস্পেক্টিভ! নন্দনের অধিকর্তা বদলে গিয়ে তখন নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেক মাসে না হলেও মোটামুটি নিয়মিতভাবেই মাসের শেষে নির্দিষ্ট পরিচালকের এক-গুচ্ছ ছবি দেখানো হত। নন্দনের মূল গেট দিয়ে ঢোকার আগে বাঁ-দিকের কাঁচের শোকেসে নতুবা ডান দিকে দাঁড় করানো স্ট্যান্ডে আটকানো থাকতো এই কর্মসূচির কাগজ। ছবিগুলি দেখানো হবে নন্দন দুই-এ। যারা দেখতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ থাকত নন্দনের লাইব্রেরি থেকে বিনি পয়সার পাস জোগাড় করে নেওয়ার! প্রথম রেট্রোস্পেক্টিভ দেখানো হয় অ্যালফ্রেড হিচককের (১৮৯৯-১৯৮০)! চারটি ছবির কথা পরিষ্কার মনে আছে, 'রোপ'(১৯৪৮), 'রিয়ার উইন্ডো'(১৯৫৪), 'সাইকো'(১৯৬০) এবং 'দা বার্ডস'(১৯৬৩)! ... ...
কলেজজীবনের সময় থেকেই প্রদীপ হাংরি জেনারেশন সাহিত্য আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রদীপকে হাংরি আন্দোলনের সাথে পরিচয় করান। প্রতিষ্ঠানবিরোধী এই সাহিত্য আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৬১ সালে পাটনা থেকে প্রথম ম্যানিফেস্টো প্রকাশের মাধ্যমে। আন্দোলনের মূল স্রষ্টা ছিলেন কবি-সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরী। কবিতা সম্পর্কে হাংরিদের বক্তব্য ছিল, “…it is a holocaust, a violent and somnambulistic jazzling of the hymning five, a sowing of the tempestual hunger.”। হাংরিরা মনে করতেন পঞ্চাশের দশক অবধি বাংলা কবিতায় যে স্থিতাবস্থা চলে আসছে, কবিতার ভাষাকে সেই স্থিতাবস্থার শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে। একইসাথে স্বাধীনতা পরবর্তী উত্তর ঔপনিবেশিক ভারতে এবং বিশেষ করে দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা ও কায়েমি স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষের যে স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছে হাংরিদের আন্দোলন সেসবের প্রতিই এক কাউন্টার ডিসকোর্স। ... ...