কেন ঐ যুবকেরা সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ে, ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ শ্লোগান তুলেছিলেন সেই প্রশ্নও সামনে চলে আসতে পারে। একদিকে বিজেপির ছোট বড় নেতারা, বিষয়টিকে বলছেন, শুধুমাত্র নিরাপত্তাজনিত খামতির ফলে এই ঘটনা ঘটেছে, অন্যদিকে যে যুবকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। যদি ধৃত যুবক-যুবতীদের মধ্যে কোনও একটি নামও সংখ্যালঘু মুসলমান হতো, তাহলে কি শাসকদল এবং তাঁদের পোষা গণমাধ্যম এই রকম চুপচাপ থাকতো? তখন কি এই আক্রমণকে সামনে রেখে, তাঁরা হিন্দু মুসলমানের মেরুকরণের রাজনীতি করতেন না? ... ...
শিবপুজনজি সারা জীবন কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বেশ কয়েকবার জেলে গিয়েছিলেন। তিনি আশির দশকে মহেন্দ্র সিং টিকাইতের ঘনিষ্ঠ সহযোগীও ছিলেন। ১৯৮০ সালে খালে জলের জন্য আন্দোলনের সময় তিনি গ্রেফতার হন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি জামিন চাইবেন না। ফলস্বরূপ, ছাব্বিশ মাস তিনি সাসারাম জেলে ছিলেন। তাঁর মুক্তির জন্য তারই এলাকার কৃষকরা দিনারা থেকে সাসারাম পর্যন্ত চল্লিশ কিলোমিটার পদযাত্রা করেছিল। একবার বিধায়ক হওয়ার পরে, শিবপুজনজি নিজেকে বড় দলগুলির থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি আর কখনও নির্বাচনী রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি। কিন্তু শত প্রলোভন সত্ত্বেও ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে আপোষ করেননি। ... ...
বিজেপি সমর্থকরা ইতিমধ্যেই জয়ের উচ্ছ্বাসে মত্ত। অন্যদিকে বিরোধীরা হতাশ। কিন্তু কারও জিজ্ঞাসা করার সময় নেই: এই সারমর্ম কি আদপে সত্যি? এভাবেই বিজেপি মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলে এবং জিতে যায়। সত্যের একটি ছোট বেলুন এত বড় করে ফুলিয়ে তোলা হয় যে বিপরীত সত্যিটা লুকিয়ে পড়ে। লড়াই শুরুর আগেই প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে পড়লে ম্যাচ ওয়াক ওভার পেতে পারে। অতএব, আমাদের এই দাবিটি ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। ... ...
আজ থেকে প্রায় বাহাত্তর বছর আগে, ১৯৫০ সালে, প্রোফেসর উইলিয়ম এস রবিনসন একটি যুগান্তকারী পেপারে (“Ecological Correlations and the Behavior of Individuals”) প্রমাণ করে দেখান, যে, দুটি রাশির মধ্যে সম্পর্ক (অর্থাৎ কোরিলেশন) সম্পূর্ণ আলাদা-আলাদা দুরকম হতেই পারে, যদি একটি মাপা হয় সমষ্টির জন্য (অর্থাৎ এগ্রিগেট লেভেল) আর একটি ব্যক্তির পর্যায়ে (অর্থাৎ ইন্ডিভিজুয়াল লেভেলে)। রবিনসনের পেপারে ১৯৩০ সালের আমেরিকান জনগণনার—অর্থাৎ সেন্সাসের—ডেটা অ্যানালাইজ করে দেখানো হয়, যে ঐ সময়ের ৪৮টি স্টেটে যদি বিদেশে-জন্মানো (ফরেন-বর্ন) শতাংশ এবং সাক্ষর জনতার (আমেরিকান ইংলিশে সাক্ষর) শতাংশের মধ্যে কোরিলেশন পজিটিভ: ০.৫৩। এর থেকে ধারণা হতে পারে—যে রাজ্যে যত বিদেশ থেকে আসা লোক, সে রাজ্যে তত কম নিরক্ষর মানুষের শতাংশ, অথবা, তত বেশি সাক্ষরতার হার। আর একটু এগিয়ে ব্যক্তি-স্তরে নিয়ে গেলে, এমন মনে হতে পারে—যে, বিদেশে-জন্মানো মানুষের (আমেরিকান ইংলিশে) সাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা দেশে-জন্মানোদের থেকে বেশি। কিন্তু, এই সম্পর্ক-ই যদি ব্যক্তির স্তরে দেখেন, ঐ দুই রাশি—বিদেশে জন্ম আর সাক্ষরতা—এবার কিন্তু কোরিলেশন নেগেটিভ: —০.১১, অর্থাৎ সমষ্টি থেকে ব্যষ্টি-স্তরে আসতেই সম্পর্ক উল্টে গেলো। তবুও কখনো কখনো ব্যক্তির আচরণ আর সমষ্টির ব্যবহার এক-ই হয়, কখনো হয় এক্কেবারে উলটো। সেই গণ্ডগোলের নাম “ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসি”। “ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসি” শব্দবন্ধ অবিশ্যি রবিনসনের দেওয়া নাম নয়, সেটির আবির্ভাব কিছুদিন পর সেলভিনের ১৯৫৮ সালের পেপারে – ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসির সংজ্ঞা পেলাম আমরাঃ ‘the invalid transfer of aggregate results to individuals’! ... ...
সেই যে ফিলিস্তিন বা প্যালেস্তাইন নামকরণ হয়েছিল ১৩৪ সাল নাগাদ, সেই নাম সরকারিভাবে ব্যবহার হয়েছে রোমের পতনের এক হাজার বছর পরেও। রোমানরা যে বিভিন্ন প্রদেশের রাজনৈতিক সীমানা তৈরি করেছিল সেই সীমানাগুলো রোমের পতনের পরও ব্যবহার হয়েছে- কিছু অদলবদল করে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে, তারপর খিলাফত সাম্রাজ্যে আর মামলুক সাম্রাজ্যেও। ... ...
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী তখনও ক্ষমতায় আসেননি, সারা দেশে তখন একটাই শ্লোগান ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’, যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, নিজেও চুরি করবো না, অন্যকেও চুরি করতে দেবো না। সারা দেশের সমস্ত মানুষ তখন একযোগে একটাই কথা বলছেন, একমাত্র নরেন্দ্র মোদীই পারবেন, দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করতে। মানুষের মনে তখন অনেক আশা, গত সত্তর বছর ধরে, কংগ্রেস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলো যেভাবে চুরি করে, দেশটাকে ফোঁপড়া করে দিয়েছে, তাতে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীই এখন একমাত্র পারেন দেশকে রক্ষা করতে। তাই শ্লোগান উঠেছিল, ‘আব কি বার, মোদী সরকার’, অর্থাৎ এবার চাই মোদী সরকার। কিন্তু আজকে যখন আমরা ২০২৪ সালের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছি, তখন কি মনে হচ্ছে, দুর্নীতি কমেছে? ... ...
রিনকিন বলেন তাঁর গভীর মানসিক দ্বন্দ্ব বা Moral Dilemmaই নানাভাবে হানা দিচ্ছে তাঁর দুঃস্বপ্নে। সাদা পবিত্রতার প্রতীক। যেহেতু তিনি তাঁর ধর্মবিশ্বাস, স্কাউটিংয়ের শপথ, গীর্জায় নেওয়া বিবাহ শপথের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারেন নি তাই তাঁর হারানো পবিত্রতাবোধ প্রতিশোধ নিতে স্বপ্নে শ্বেত-কঙ্কাল হয়ে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। র-বাবু বলেন, যদি স্ত্রীকে ত্যাগ না করি - ফ-মণিকেও বিয়ে না করি - তবে স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ তলানিতে ঠেকেছে বলে ফ-মণির সাথে মেলামশা করে নিছক আনন্দ পেতে চাই - কেমন হয়? রিনকিন বললেন, এভাবে দু নৌকায় পা দিয়ে চলা শক্ত তবু চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি দুই মহিলাই, বিশেষ করে আপনার স্ত্রী, তা মেনে নেন তো ভালোই। তবে আমার পরামর্শ এখন কিছুদিন কার্টুন আঁকা থেকে বিশ্রাম নিন, ফ-মণি থেকেও দুরে থাকুন, দেখুন তাও ঐ দুঃস্বপ্ন ফিরে আসছে কিনা। ... ...
এদের মধ্যেকার সম্পর্কের এতো অবনতির কারণটা কি? জাতিগত এই ঘৃণা, হানাহানি এটা কি রাজ্যে বরাবরই ছিল? এরা কি কখনই একত্রে বসবাস করতে পারেনি? এদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করা কি একেবারেই সম্ভব নয়? এই প্রশ্নগুলির ওপরেই কিন্তু রাজ্যের ভৌগলিক ঐক্য অটুট থাকবে কি না তা নির্ভর করছে। এটা ঘটনা যে এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যেকার আন্তসম্পর্ক জটিল। এই প্রতিবেদনে আমরা নিজেদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে সমস্যাগুলো বুঝবার চেষ্টা করবো এবং সামনে এগোনোর কিছু সূত্র সন্ধানের চেষ্টা করব। ... ...
বাংলার বুকে বহুদিন বাদে গণআন্দোলনের ময়দানে খেটে খাওয়া মানুষের এই বিপুল অংশগ্রহণ এত দিনের নৈশব্দ ভেদ করে সকলের কাছেই আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে জীবিকা নির্বাহ করার লড়াইয়ের পাশাপাশি কেন্দ্রের আগ্রাসী হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান প্রকল্পের বিরোধিতা ধারাবাহিকভাবে করে এসেছে জাতীয় বাংলা সম্মেলন। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। অর্থনৈতিক দাবীদাওয়া এবং মর্যাদার প্রশ্নে লড়াইয়ের পাশাপাশি এই আন্দোলনের আরও দুটো দিক রয়েছে। একটি হল ৯৬ সালের অপারেশন সানসাইন বিরোধি আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০০৬-২০০৭-এর উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কর্পোরেট উন্নয়নের এই মডেলকে চ্যালেঞ্জ করার প্রশ্ন। বাংলার বুকে হকার আন্দোলনের ঐতিহ্যকে মনে রেখে এখানে কয়েকটা কথা বলি। ১৯৯৬ সালে হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিল বামফ্রন্ট সরকার। সে প্রকল্পের নাম ছিল 'অপারেশন সানশাইন'। যুক্তিটা প্রায় একই রকম ছিল। আজ যেমন বলা হচ্ছে স্টেশনকে উন্নত করা হবে, স্টেশনটা যাত্রীদের, হকারদের নয়। সেদিনও বলা হয়েছিল ফুটপাথে হকার বসলে তা শহরের সৌন্দর্যের পক্ষে হানিকারক এবং সেই দৃশ্য মহানগরীর অন্ধকার ছবি তুলে ধরে। ... ...
এই মন্ত্রের অপূর্ব অনুবাদ আমরা পাই রবীন্দ্রনাথের রচনায় -- "বায়ু মধু বহন করিতেছে। নদী সিন্ধু সকল মধুক্ষরণ করিতেছে। ওষধি বনস্পতি সকল মধুময় হউক। রাত্রি মধু হউক, ঊষা মধু হউক, পৃথিবীর ধূলি মধুমৎ হউক। সূর্য মধুমান হউক।" বিশ্বজনীন কল্যাণ কামনায় ভারতীয় ঋষিদের এই প্রার্থনা গভীর আধ্যাত্মিক উপলব্ধি থেকে উৎসারিত। অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায় মধুর ব্যবহারের কথা আমরা পাই গ্রিক মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসিতেও। ... ...
তামিলনাড়ু সরকারের মন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিনের ‘সনাতন ধর্ম’ প্রসঙ্গে মন্তব্যের জেরে জোর শোরগোল পড়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন এই বলে যে, বিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘সনাতন ধর্ম’ ধ্বংস করতে সচেষ্ট। তুমুল রাজনৈতিক বাদানুবাদের মধ্যে ‘সনাতন ধর্ম’ বিষয়টি প্রসঙ্গে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ... ...
মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক, দার্শনিক এবং জীবনবোধের বিশিষ্টতা এমন সর্বব্যাপী যে তাঁর এ দিকগুলোকে নিয়ে চর্চা অনেক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকেরা করেছেন। এদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দুটি বিষয় সহজেই চোখে পড়ে – প্রথম, তাঁর ধারণায় ও বীক্ষণে অহিংসার স্থান এবং দ্বিতীয়, তাঁর লেখা “হিন্দ-স্বরাজ” পুস্তিকাটি ও এ পুস্তিকায় নিহিত ধারণার ব্যাপ্তি। তুলনায় গান্ধীর বোধে মেডিসিনের দৃষ্টিকোণ থেকে চিকিৎসা, দেহ, দেশজ চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা কম। ... ...
ইতিহাসের কোন বিশেষ ক্ষণে এসে ব্যক্তির কণ্ঠের প্রসঙ্গ কি আলাদা গুরুত্ব পায়? কোন বিশেষ ঐতিহাসিক মুহূর্তে ব্যক্তির স্বর কি চাপা পড়ে যায় কৌম কিংবা সমষ্টির কণ্ঠের আড়ালে? রাজনৈতিক ইতিহাসের কোন বাঁকে এসে ব্যক্তির উন্মেষের “discrete identity” একটি “concrete reality” হয়ে ওঠে? উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে – “আধুনিকতা” যখন মধ্যগগনে – তখন অন্তত দুটি বিষয় বৌদ্ধিক স্তরে আলোচ্য বিষয়ের তালিকাভুক্ত হল। ... ...
বাইরে থেকে রোপণ করা বা এনগ্র্যাফটেড আধুনিকতার যে যাত্রা ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রিক উদ্যোগে শুরু হয়েছিল সেখানে সমস্ত ভারতবাসী হয়ে উঠলো নাগরিক, খানিকটা হঠাৎ করেই। লক্ষণীয় যে যেখানে ইউরোপের একটি বড়ো অংশ প্রায় ৩০০ বছর ধরে ধীরে ধীরে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছে, ভারতে তা অর্জিত হয়েছে মাত্র কয়েকটি দশকে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে যেভাবে ব্যক্তির অভ্যুদয়, রাষ্ট্রের সাথে ব্যক্তি-নাগরিকের সহাবস্থান, সমাজ বা কৌমের অবস্থান বিলুপ্ত হওয়া এবং সমাজ জীবনে ধর্ম-নির্লিপ্ততার (সেক্যুলারিজম) পরিসর তৈরি হয়েছে ভারতে তা হয়নি। ... ...
আমাদের ভারতবর্ষ যখন ‘আজাদির অমৃত মহোৎসব’-এ বুঁদ হয়ে আছে সেসময়ও কি ভারতের টুকরো হয়ে যাওয়াকে বাদ দিয়ে কোনভাবে লেখা যায় এ দেশের টুকরো হয়ে যাবার কোন কাহিনী? জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে তাঁর Remembering Partition: Violence, Nationalism and History in India (২০০৩) গ্রন্থের গোড়াতেই দু’টি প্রশ্ন তুলেছেন – (১) সরকারি সহস্র-অযুত বয়ানের মধ্য থেকে ‘ইতিহাস’ কিভাবে ‘সত্য’-কে (১৯৪৭-এর হিংসার সত্যকে) জন্ম দেবে, (২) সেদিনের সেই চরম মুহূর্তগুলোকে আজকের ইতিহাসে কিভাবে “struggle back into history” ঘটাবে? (পৃঃ ৪) এ গ্রন্থেরই অন্তিমে লেখক এক জরুরী প্রশ্ন রেখেছেন – “What would it mean to imagine India as a society in which the Muslim does not figure as a ‘minority’, but as Bengali or Malayali, labourer or professional, literate or non-literate, young or old, man or woman?” (পৃঃ ২০৫) ... ...
কাঞ্চনমূল্যে প্রতিভা তৈরি অজস্র ছোটবড় কারখানা এখন আর কোনো বিসদৃশ, লজ্জার ব্যাপার নয়, বরং, সমাজ এই ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মস্তিষ্কে জায়গা করে দিয়েছে। যারা এই বাজারে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে, তাদের অনুপাতটি কম হতে পারে, কিন্তু, অর্থ ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তির জোরে তারা সংখ্যাগত লঘুত্বকে সহজেই অতিক্রম করে গোটা সমাজকে নিজেদের প্রতাপে প্রভাবিত করে। সেই প্রভাব নামতে থাকে দেশের হাজার হাজার সরকারি, এমনকি অনেক বেসরকারি স্কুলেও। যেমন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একটি উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুল। ছাত্রছাত্রীরা খেতমজুর, গরিব চাষি, ভ্যান চালক, বা ছোট ব্যবসায়ী বাড়ির সন্তান। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হয়, শিক্ষকের সংখ্যা তুলনায় কম হলেও কাজ চালিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। অথচ, এখান থেকে পাস করার পর, কতজন যে শিক্ষাব্যবস্থায় টিকে থাকবে তার “গ্যারান্টি নেই।” “কেন নেই?” “এরা ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার, তার ওপর সবার মা-বাবা ট্যুশন দিতে পারে না, পারলেও কমজোরি মাস্টার দেয়, ভাল মাস্টার দেওয়ার ক্ষমতা নেই।” “স্কুলে কি লেখাপড়া হয় না?” “হয়, কিন্তু আমরা কী করতে পারি? এরা প্রাইমারিতে কিছু শিখে আসে না, এখানে আর কতটা শেখাব?” এ সবে সমস্যার তালিকা দেওয়া শুরু। পর্যবেক্ষক যত এগোবেন, ততই তিনি দেখতে পাবেন, এক বিশ্বাসের প্রতিমূর্তি, “টাকা ছাড়া বাচ্চার লেখাপড়া হবে না”। ... ...
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে, জ্যোর্তিবিজ্ঞানের পরিসীমার মধ্যে কালক্রমে এমন অনেক নতুন নতুন ধারণা যুক্ত হতে থেকেছে যা সনাতনী আইনস্টাইনীয় ধারণাকে বদলে ফেলতে বাধ্য করেছে বা সেই ধারণাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। সনাতনী আইনস্টাইনীয় ধারণাকে এমনই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন বাঙালি পদার্থবিদ অমল কুমার রায়চৌধুরী। আপেক্ষিকতাবাদ সংক্রান্ত আইনস্টাইনের ফিল্ড ইকুয়েশন থেকে শুরু করে নিজস্ব পদ্ধতিতে গাণিতিক ভাবে এগিয়ে নতুন একটা সমীকরণ তৈরি করেন তিনি, যা রায়চৌধুরী ইকুয়েশন নামে খ্যাত। কি লিখেছিলেন তিনি সেই সমীকরণে? ... ...
প্রতিবছর গরম পড়লেই মানুষের খেয়াল হয় এবারের গরমটা যেন আগের বছরের থেকে অনেকটাই বেশি। তারপরেই চারিদিকে 'গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান"এর ধুম পড়ে যায়। খুব বেশি বৃষ্টি হলে বা বিশেষ শীত না পড়লে, নভেম্বর ডিসেম্বরে পাখা চালাতে হলেও পরিবেশের কথা খেয়াল হয় মানুষের। ভারতের প্রায় সবকটা মেট্রোসিটিতে ভারী বৃষ্টি ত বটেই এমনকি স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও রাস্তায় জল জমে শহর অচল হয়ে যায় অন্তত তিন চারদিনের জন্য। জল জমে থাকার একটা কারণ যেমন অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ছোটবড় জলাজমির বিলুপ্তি, তেমনি আর একটা অন্যতম প্রধান কারণ হল নর্দমা ও পয়ঃপ্রণালীগুলো জঞ্জালের ভারে বুজে আটকে যাওয়া। এই জঞ্জালের অধিকাংশই বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাস্টিক বর্জ্য। আজ বরং প্ল্যাস্টিক নিয়ে বলি। রাস্তায় ঘাটে, যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে বড় ছোট যে কোনও গাছের গোড়ার দিকে লক্ষ করে দেখেছেন? দেখবেন নানারকম প্ল্যাস্টিকের মোড়ক, বোতল ইত্যাদি ছড়িয়ে রয়েছে। দীঘার সমুদ্রতীর থেকে সিটঙের কমলালেবুর বন পর্যন্ত সর্বত্র ছড়িয়ে আছে প্ল্যাস্টিক জঞ্জাল। ... ...
প্রতিবছর গরম বেড়ে উঠলেই মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়েন ‘চলো গাছ লাগাই, এক্ষুণি লাগাই’ করে। আমাদের বাঙালবাড়ির ভাষায় যাকে বলে লোকে একেবারে ‘উসুইল্যা উঠে’। তা গাছ লাগানো খুবই ভাল উদ্যোগ। তবে পরিবেশ রক্ষায়, পরিবেশের উন্নতিকল্পে গাছ লাগাতে হলে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার মাধ্যমে বনসৃজন করা প্রয়োজন। আমি যে সংস্থায় কাজ করি তাদের সিএসআর প্রোগ্রামের সূত্রে ২০১৬ থেকে কোভিড লক ডাউনের আগে পর্যন্ত পুণে ও পুণের আশেপাশে এবং আহমদনগর জেলায় এরকম বনসৃজন প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলাম। এই সময় আমরা প্রায় ১৮ হাজার গাছ লাগিয়েছি, এলাকা ভেদে যার ৭০-৭৫ শতাংশ বাঁচিয়ে রাখতে পারা গেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কয়েকটা কথা বলি। ... ...
প্রথমেই এখানে যে প্রশ্ন ওঠে সেটি হল কর্মীর যোগ্যতার আগে সেই কর্মীকে দিয়ে কাজ করানো সিস্টেমের যোগ্যতা নিয়ে। কোনো কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাঁর প্রাপ্ত নম্বর অথবা একটি কাজ করার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার পরিমাপ (সেরকম পরিমাপযন্ত্র একমাত্র ছাত্রের মূল্যায়ন বাদে কিছু আছে বলে আমার জানা নেই) যাচাই করার আগে যাচাই করার দরকার গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটিকেই। যে ব্যবস্থা দীর্ঘদিন যাবত পূর্ণ সময়ের নিয়োগ না করে, ক্লাস পিছু পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ বেতন দিয়ে টিকে আছে (যখন এই কম বেতন পাওয়া কর্মীদের চাকরি নিশ্চিত হয়নি তখন থেকে) সেই সিস্টেমের যোগ্যতা থাকে কি নিযুক্ত কর্মীর যোগ্যতা বিচার করার? বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামক ইউজিসির নির্ধারিত ক্লাস পিছু অর্থের অনেক কম টাকায় কাজ করিয়ে নেওয়া এই ব্যবস্থা বা অব্যবস্থা যেটুকু ভদ্রস্থ অবস্থায় আছে সেটুকু অবশ্যই এই বৈষম্যের শিকার হওয়া শিক্ষকদের কাঁধে ভর করে। তাই গালভরা ডিগ্রি বা একাডেমিক যোগ্যতার ধুয়ো তুলে (যা অবশ্য এঁদের অনেকেরই আছে) স্যাক্ট শিক্ষকদের খারিজ করার অধিকার কারোরই নেই। ... ...