- এক থাপ্পড় লাগাব অসভ্য মেয়ে, সিনিয়ারদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় জাননা ? - যাব্বাবা, আমি কোথায় ভাল মনে বলতে গেলাম, তোমার জীন্সটা ফ্যান্টা, আর তুমি চমকে দিলে ? দেখ, সিনিয়ার বলে অত এয়ার নিওনা, মোটে তো দুবছরের বড় – - চমকে দিলাম আবার কী ভাষা, ঠিক করে কথা বল। আমাকে কী বলে ডাকলে তুমি ? আমার নাম শুচিস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছোট করে, স্মিতা। বুঝলে ? - কী করে জানব দিদিভাই, দুনিয়ার লোক তোমায় শ্যামা বলে ডাকে শুনি, তাই আমিও বললাম, শ্যামাদি। খুব অন্যায় করেছি না? পায়ে ফায়ে ধরতে হবে নাকি? ... ...
বাঙালির দ্বিতীয় প্রজন্ম ক্রমশ বাংলাটা ভুলে যাচ্ছে। শুধু বিদেশে বা ভিন রাজ্যেই না, খোদ কলকাতা শহরেও। কিন্তু এসব নিয়ে বলতে গেলে বাঙালি নিজেই হাঁ হাঁ করে উঠবে। তারা সর্বভারতীয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক হচ্ছে। আরও কী-কী হচ্ছে, ঈশ্বরই জানেন। সেখানে এসব ছোটো মনের পরিচয় দেওয়াটা ঠিক না। যদিও, যুক্তি দিয়ে জিনিসটা বোঝা দুষ্কর। বাঙালি যদি দিল্লি কিংবা নিউ-ইয়র্কে গিয়ে হিন্দি কিংবা ইংরিজি ভাষী হয়ে ওঠে, সেটাই যদি দস্তুর হয়, তবে বাংলায় এসে অন্যভাষীদের বঙ্গভাষী হয়ে ওঠারই কথা। আবার অন্যভাষীরা বাংলায় এসে যদি নিজের ভাষা বজায় রাখে, বা রাখতে পারে, অন্যত্র বাঙালিদেরও তেমনই হবার কথা। এর কোনোটাই হয়না। ভারতীয় বাঙালির কাছে এর কোনো ব্যাখ্যাও নেই। সম্ভবত অস্বস্তিকর বলেই। আর সেই জন্য প্রশ্নটা তোলাই ট্যাবু। তুললে কঠিন-কঠিন ইংরিজি গালি বর্ষিত হতে পারে। ... ...
অতএব ভয়ংকর জরিটরি দেয়া বিকটদর্শন সব লাল বেনারসী ধুপধাপ পড়তে লাগল আর তালপাতার সেপাই সেলসম্যানটি নানা ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে সেগুলো গায়ে ফেলে দেখাতে লাগল।জেঠিমার সবগুলোই পছন্দ, কেবলীর কোনটাই না, বাকীদের মধ্যেও মতের মিল নেই। প্রায় হাতাহাতি হতে যাচ্ছে এমন অবস্থায় বুদ্ধিমতী পটলদি হাল ধরেন - "লাল নয়, কাছাকাছি কিছু দেখান"। তেমন-লাল-নয় অর্থাৎ ম্যাজেন্টা, মেরুন, গাঢ় গোলাপী ইত্যাদি বেনারসীর একটি পাহাড় জমা হল, এবার পটলদি নিজের গায়ে ফেলে ফেলে দেখাতে লাগলেন, সকলেরই মোটামুটি পছন্দ এমন কয়েকটি কেনাও হয়ে গেল, ফাঁকতালে পটলদিরও হয়ে গেল একটা। ... ...
৩০০ বছরের মধ্যে শল্য চিকিৎসার ধারা আয়ুর্বেদের মূল ধারা থেকে হারিয়ে যায়। এ জ্ঞান কালের স্রোতে এবং ঐতিহাসিক ঘটনাক্রমে জমা হয়ে থাকে নাপিত, কুমোর বা কামার সহ অন্য বর্গের মানুষের মাঝে। ফ্রান্সিস জিমারম্যান তাঁর “Terminological Problems in the Process of Editing and Traslating Sanskrit Medical Texts” প্রবন্ধে বলছেন যে শুধু এটুকু আমাদের মাথায় রাখলে চলবেনা যে সুশ্রুত-সংহিতা এবং চরক-সংহিতা-র দৃঢ়বদ্ধ টেক্সট হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ১০ থেকে ১৫ শতাব্দী লেগেছে এবং মধ্যযুগের বিভিন্ন ভাষ্য এতে যুক্ত হয়েছে, এর সাথে এটাও মাথায় রাখতে হবে এত দীর্ঘ সময়কালে সমষ্টিগত চিন্তার জগতে প্রচুর ভাঙ্গাচোরা এবং পরিবর্তন ঘটেছে। ... ...
উৎসব হয় কোথায়? মণ্ডপে রাস্তায় বাড়িতে মসজিদে গির্জায় কোন বাড়িতে। উৎসব আসে কোথায়? উৎসব আসে মনে। মন না জাগলে মন না মাতলে উৎসবের কোনো মূল্য নেই। প্রকৃতি সুন্দর। ততক্ষণই, যখন আপনার চোখ ও চোখের ভিতরে থাকা মন প্রস্তুত তাকে দেখতে। ... ...
কুসুমপুরের ঝোপঝাড় জলশূন্য ডোবা, পুকুর পেরিয়ে দমকা একটা মাঠের মধ্যে এসে পড়ে। এই মাঠ, কুসুমপুরের বিশাল ডাহি, সামান্য চড়াই উৎরাই, পাথুরে গেরুয়া ভূমি, মাথার উপর বিস্তীর্ণ আকাশ, দিগন্তে বিলীন এই বিশাল পৃথিবীতে আলো গাঢ় হয়ে আসছে। গাঢ় আলোর ভিতর কৃষ্ণবর্ণের মানুষ একা হাঁটছে; এখন এই রকম দৃশ্য। যেতে হবে বহুদূর। মাঠ পার হয়ে গাঁ পেরিয়ে জঙ্গল, সেই জঙ্গল পেরিয়ে আবার মাঠ জঙ্গল গ্রাম ডাহি এই রকমই তো পথ। কত বছর আগে এই গাঁয়ে এসেছিল বুড়ো তা আর স্মরণে থাকে না। সেই যে বার যুদ্ধের উড়োকল ভেঙে পড়েছিল নিশ্চিন্তার ওপারে তারও অনেক আগে। যুদ্ধের উড়াকল। হ্যাঁ। ঘড়ঘড় শব্দে সে আকাশে চোখ মেলে। মাথায় পাখা ঘুরিয়ে হেলিকপ্টার যাচ্ছে কলাইকুন্ডার দিকে। ... ...
এইবার বাবা তার কারিগরি দক্ষতার প্রকল্প চালু করল। লতানে গাছের জন্য মাচা বাঁধার খুঁটি বানাতে লাগবে বলে বেশ কিছু বাঁশের টুকরো রাখা ছিল। তারই একটাকে নিয়ে এসে দা, করাত, আর কি কি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাটাকাটি করে একটা নল বানিয়ে ফেলা, তারপর সেটার যেদিক থেকে রঙ বের হবে সেদিকের দেয়ালে, তুরপুন দিয়ে ছ্যাঁদা করা ইত্যাদির পরে একটা লম্বা টুকরোর দুই প্রান্তে দুই কাপড়ের টুকরো জড়িয়ে একটা দিক হাতলের কাজে আর অন্য দিকটা বাঁশের খোলের মধ্যে ঢুকিয়ে রঙ টানা আর বের করার পিস্টন বানিয়ে ফেলতেই পিচকারি তৈরি হয়ে গেল। আর আমাদের পায় কে! কিন্তু তিনজনের জন্য দুটো পিচকারি করা হয়েছিল, এইটাতে সুবিধা হয়েছিল না অসুবিধা সেইটা এখন আর নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। যেটা নিশ্চিত করে বলা যায় সেটা এই যে সমস্ত বাহুবলি সিনেমায় যেমন দেখায়, অস্ত্রশস্ত্র যতই ব্যবহার হোক, চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হাতাহাতি সম্মুখ সমরে। প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে শক্তিশালি দলও হেরে যায়, আমারাও আমাদের সেই প্রথম বছরের যুদ্ধে মনে হয় না খুব সুবিধা করতে পেরেছিলাম। পরের বছর থেকে রসদ সংগ্রহের দায়িত্ব নিজেরা নিয়ে নিয়েছিলাম। হাতের তালুতে রঙ মেখে নিয়ে এগিয়ে চলো, যুদ্ধে হেরে যাওয়া কোন কাজের কথা না। মুস্কিল হল, এই রঙের যুদ্ধশেষে সবাই একই রকম হেরে বসে। সবাই রঙে রঙে রাঙা আজব প্রাণী। ... ...
এই বাজারে গুরু নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ এক সামাজিক মাধ্যম। শারদ সংখ্যা পড়তে ঢুকে পড়ুন গুরুতে। আর বেরোবেননা। শরৎ থেকে বসন্ত, বইমেলা থেকে নববর্ষ, জমে উঠুক মোচ্ছব, নজরদারির বাইরে। গুরুর পাতায় পাতায়। এবারের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হবে আগামী কিছুদিন ধরে, প্রতিদিন অল্প কয়েকটি লেখা। পড়তে থাকুন রয়ে সয়ে। ... ...
"ওই দ্যাখ, খাল পরিষ্কার করার একটা লোক পাঁকে পড়ে আর উঠতে পারছে না," কে যেন চিৎকার করে উঠল। সদ্য ঘুম ভাঙা মুখগুলো অমনি একসঙ্গে ঘুরে গেল কাদাজলে ভরা খালটার দিকে। দু'দিন তুমুল বৃষ্টির পর যেটা কানায় কানায় ভরা আর ময়রার দোকানে সদ্য তৈরি গরম রাবড়ির ট্রে-র ওপর থেকে ওঠা অল্প সাদা ধোঁয়ার মতো যার পুরোটা জুড়ে উঠছে তীব্র দুর্গন্ধের ভাপ। এমনিতেই কেষ্টপুর খালের ধারের বস্তিগুলোর ঘুম ভাঙে অনেক সকালে, কল আর পায়খানার দখল নিয়ে মেয়েদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ঢালু পারে জায়গা প্রচুর, কিন্তু আব্রু নেই। তাই ওখানে কেবল বাচ্চা আর পুরুষ মানুষের ভিড়। ঝগড়াঝাঁটি ক্যালোর ব্যালোর লেগেই আছে। তার ওপর আবার একটা জলজ্যান্ত মানুষ খালে নেমে দ্রুত পাঁকে ডুবে যাচ্ছে, এই নতুন উত্তেজনায় গোটা বস্তি ভেঙে পড়ল খালের ধারে। কারও হাতে নিমডালের আধ খাওয়া দাঁতন, কেউ সেফটিপিন আটকান ব্লাউজের ফাঁকে ঝুলে পড়া মাই চোষা বাচ্চা কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে, সোমত্ত মেয়েরা নজর আটকাবে বলে ব্রা হীন নাইটির বুকের ওপর আলগোছে গামছা ফেলে রেখে ঝুঁকে পড়ে ডুবন্ত লোকটাকে দেখার চেষ্টা করছে। এর মধ্যেই আবার ঘরের খেয়ে বনের মোষ-চরানেরা দৌড়ে গেল পুজো প্যান্ডালের পাশে রাস্তা আটকে ফেলে রাখা লম্বা বাঁশ আনতে। ... ...
কিছু হলদে পাতা।সাদা পাতা হলে এদ্দিনে তা হলদে হয়েই যেত বোধহয়। হলদে পাতা হলদে হলে টের পাওয়া দায়। হলদে পাতারা পুরোনো হয় না। লেখাগুলো পুরানো। টুকরো টুকরো কিছু স্টিকি হলুদ পাতায় টুকরো টুকরো কিছু লেখা। কিছু আঁচড়। অনেক কিছু কথা, যা বলতে পারিনি, কিছু কিছু কথা, যা বলব ভেবেছিলাম, বা অল্প কিছু কথা, যা বলেছিলাম। বলতে পেরেছিলাম। টুকরো টুকরো ক’রে। আমি তাদের জমিয়ে রাখতে থাকি। ফ্রেমে। ... ...
ফ্যাশান ম্যাগাজিনটিতে পুরো ডুবে গিয়েছিলেন, তাই গাড়িটা গেইটের কাছে এসে যখন ধাক্কা খেল, তিনিও গাড়িটার সাথে শরিক হলেন, দু'জনে মিলে কিছুক্ষণ ভীষণ দুলে যখন থামলেন, তখন দু'জনেরই জল গড়িয়ে পড়ছে শরীর থেকে। অচিরেই দালানের ভিতর থেকে আসা একটা কানে তালা দেয়া আওয়াজ সেই জল পড়া থামিয়ে দিল। একই সঙ্গে তার স্বয়ংক্রিয় হৃদপিণ্ডটাও যেন থেমে যাওয়ার উপক্রম হল! ড্রাইভার আবুল একটুখানি ঘুরে এসে তা-ই জানালো যা তিনি আগেই জানতেন। দুইদিন পরপরই বদমাশগুলির মাথায় কী একটা কিরকিরা উঠে আর বেতন বাড়ানোর জিকির তুলে কা কা করতে থাকে সমস্বরে! ... ...
আসলে হাওয়ার রাত ছিল সেদিন। ফুলশয্যার খাটে ঘন নীল মশারি ফুলে ফুলে উঠছিল। তখন নীলকমলকে হাতির গল্পটা বলেছিল স্বপ্না। নীলকমল হাসিমুখ করে শুনছিল তারপর বলেছিল -ধ্যাত, সরু গলিতে হাতি ঢুকবেই না। হাতি বিষয়ে নীলকমল সবই জানে-এরকমই মনে হয়েছিল তার নতুন বৌয়ের। তখন স্বপ্না অন্য গল্প বলবে ভাবছিল- বিরাট উঠোনে জ্যোৎস্নায় লক্ষ্মীপ্যাঁচা নামত, সেই গল্প। নীলকমল ততক্ষণে সুকুমারের গল্প শুরু করেছিল। চাঁদ আর জ্যোৎস্না দিয়েই শুরু করেছিল নীলকমল। বলেছিল সুকুমারের আশ্চর্য বাড়ির কথা। বলেছিল, চাঁদ উঠলে সুকুমারের বাড়ির সামনের রাস্তায় আইসক্রীম ট্রাক আসে। লাল নীল আলো জ্বলে,ঘন্টা বাজায়। নীলকমল বলেছিল সুকুমার আইসক্রীম ভালোবাসে। স্বপ্নারও একটা গল্প ছিল আইসক্রীমের। প্রাচীন এক আইসক্রীমের রেসিপির- যা ও এক মেমসাহেবের থেকে পেয়েছিল কুচবিহারে-ওর বাপের বাড়ির পাড়ায়। জীর্ণ এক বাড়িতে থাকত সেই মেম আর তার অন্ধ কুকুর। স্বপ্না অবশ্য সে গল্প বলে নি তখন। সুকুমারের গল্প শুনেছিল চুপ করে। এক বছর শুনেছিল সুকুমারের গল্প। তারপর বছর ঘুরতেই কুচবিহার গিয়ে রুফাসকে নিয়ে এসেছিল। বলেছিল বাপের বাড়ির কুকুর। বলেছিল ছোটোবেলায় ও ইংরিজি শিখেছিল এক মেমের কাছে। ইংরিজি শিখত আর রান্না। রুফাস আর রান্নার বই এনেছিল কুচবিহার থেকে। বলেছিল মেম দিয়েছে। নীলকমল রান্নার বই উল্টে দেখেছিল। সমস্ত উপকরণ, মাপামাপির হিসেব অচেনা ঠেকেছিল নীলকমলের। বলেছিল -এসব এদিকের বাজারে পাওয়া যায় না। বলেছিল - সুকুমারকে বলে দেব, দেশে এলে নিয়ে আসবে। স্বপ্না সে বই তুলে রেখেছিল। রুফাস তখন ছোটো। স্বপ্না বলেছিল মেমের অন্ধ কুকুরের নাতি রুফাস। মেমই নাম রেখেছে। পরে একদিন তুমুল ঝড় জলে শিয়ালদায় স্বপ্নার পিসতুতো দাদার সঙ্গে নীলকমলের দেখা হয়েছিল। দার্জিলিং মেল ধরার কথা দুজনেরই। ট্রেন লেট ছিল সেদিন। অনেকক্ষণ গল্প করেছিল ওরা। মেমের কথা কিছু জানে না স্বপ্নার পিসতুতো দাদা, বরং, সেদিন সে রুপুর কথা বলেছিল আচমকা। বলেছিল, রুপু স্বপ্নার প্রেমিক ছিল কুচবিহারে। বাড়ি ফিরে স্বপ্নাকে সে সব কিছু বলে নি নীলকমল। প্রথম ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়ে সুকুমারের ট্রেন আটকে পড়েছিল পাটনায়-সে গল্প বলেছিল। ... ...
তা, চিত্রাদি তো দুই হাত নেড়ে “কাট কাট” বলতে বলতে হেলেদুলে এসে ধাঁই ধপ্পাস করে একটি চেয়ারে বসলেন, চেয়ারের অসহায় প্রতিবাদ ও মেয়েদের নীচু গলায় সম্মিলিত হতাশার শব্দ একসঙ্গে শোনা গেল। আর অন্যদিক থেকে ছাত্রীদের উপস্থিতি ভুলে গিয়ে ভীষণ গনগনে মুখে তেড়েমেড়ে উঠলেন পরিচালিকা অপর্ণাদি – “আপনি কাট কাট বলে হঠাৎ এইরকম চ্যাঁচালেন কেন ? দিব্যি হচ্ছিল তো” “দিব্যি হচ্ছিল? অই অর্জুন গানের সঙ্গে এত এক্সপ্রেশন দিচ্ছিল কেন? বেজায় ওভার অ্যাকটিং তো। রোজ বলি,আমি চাই সংযত,সুন্দর অভিনয় –” “অর্জুন কোদ্দিয়ে এল? সে তো চিত্রাঙ্গদায় ছিল, গতবছর হয়ে গেছে। তাসের দেশে অর্জুন?” ... ...
রাস্তার ধারে ঝুপসি গাছপালাগুলো অব্দি কুয়াশার কম্বল মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটু বাতাস বইলে দেখায় বিশাল দৈত্যের মাথা নাড়ার মতো। ধোঁয়া-ওঠা বুক নিয়ে এলিয়ে পড়ে থাকা নদীর দিক থেকে কেমন একটা গোঁওওও শব্দ ভেসে আসে, যেন কেউ কাঁদে, কষ্টে গা মোচড়ায়, নিজের গলায় নিজের দশ আঙুল চেপে ধরে। তাতে গা শিরশির করলেও অষ্টমী ভালোই জানে আসল বিপদ লুকিয়ে আছে পেছন বাগে। সে বিপদ যে কখন বিদ্যুতের মতো ঘাড়ের ওপর অব্যর্থ লাফিয়ে পড়বে কেউ জানে না। সে এক আশ্চর্য হলদে আগুনের শিখা, তাকে দেখার আগেই নিজের কানেই শুনতে পাবে নিজের ঘেঁটি ভাঙার মট মট শব্দ, আর কিছু বোঝার আগেই এতো আলহাদের শরীরখানা তেনার কষে ঝুলতে থাকবে। যেন তুমি আর মানুষ নও হে, দাঁত বার করা মরা বেড়াল একটা। শিউরে উঠে অষ্টমী তার কালো ফাটা হাতখানি কোঁকড়া চুলে ঢাকা ঘাড়ের ওপর আলগোছে বুলিয়ে নেয়। রক্ষে কর সোনার বন্ন বনবিবি, মা আমার! ভয় তাকে পেড়ে ফেলে, হঠাৎ এমন কাঁপুনি দেয় যে শরীরের সমস্ত রোঁয়া খাড়া দাঁড়িয়ে ওঠে। ... ...
সুবিদিত হলেও, সত্যজিতের পশ্চিমি ধ্রুপদী সঙ্গীতের দখলের কথা যত বলা হয় তত বলা হয়না ওনার হিন্দুস্তানী সঙ্গীতের দখল সম্বন্ধে। পশ্চিমি ধ্রুপদী সঙ্গীতে ওনার দখল ও উৎসাহ তখনকার গড়পড়তা সঙ্গীতবোদ্ধাদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল সে কথা বহু-আলোচিত। আমি এমনও শুনেছি বন্ধুমহলে ওনাদের একটা খেলাই ছিল একটি কম্পোজিশনের পিস শুনে চিনতে হবে - কম্পোজার চেনা তো তুশ্চু - কন্ডাকটরকে! কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা হিন্দুস্তানী সঙ্গীতে সত্যজিতের দখল ছিল পশ্চিমি সঙ্গীতের থেকে হয়ত বেশিই। গুগাবার গানের বাজির দৃশ্যটি তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ছবির দিক দিয়ে দেখতে গেলে গানের বাজির শুরুয়াৎ কিন্তু হাল্লার রাজসভারও আগে, যখন গুপি-বাঘা ভূতের দেওয়া খাবার খেয়ে হাত-মুখ ধুতে ধুতে ও সঙ্গে রাজকন্যার চিন্তা করার সময়ে দোলায় চড়ে টোড়ি গাইতে গাইতে যাওয়া ওস্তাদের সাক্ষাৎ পায়। সেই দৃশ্য শেষ হয় লয় বাড়িয়ে দ্রুতে খেয়াল গাইতে গাইতে যখন "বাপ রে বাপ, কী দাপট"-এর সঙ্গে ওস্তাদজী হাল্লার রাজসভার দিগন্তে মিলিয়ে যান। এও দেখার বিষয় যে গানের বাজিতে একটি কীর্তন আর একটি ঠুংরি ভিন্ন আর সবই যাকে বলে পাকা গানা। ধ্রুপদ ও খেয়াল। মানে পাকা আর আধা-ধ্রুপদীর বাইরে কোন গান নেই। নো লোকগান। নেই যন্ত্রসঙ্গীতও। এটাও স্রেফ একটা অবজার্ভেশান। কোন বিশেষ কারণ নির্দেশ করার চেষ্টা করছি না। ... ...
আমাদের ছেলেবলায় যখন দূর থেকে দেখতাম দুটি ছেলে আসছে তখন কথা না বলেই তাদের শিক্ষা দীক্ষা টের পাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় ছিলো ছোটো ঢিল ছুঁড়ে মারলেই যে উঃ বলতো সে পাতি বাংলা মিডিয়াম, আর আউচ বললে জানতাম এ তো কোনো সেন্ট মার্কা স্কুলের ছেলে। ৭১' বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ছেলে পিলে এসেছিলো এপাড় বাংলায়। একটা বড় গ্রুপের সাথে আলাপ হয়েছিলো। নাম বলতেই সহাস্যে ঝুঁকে পড়ে হ্যান্ড শেক করে জিগালেন 'আপনি কেমন আছেন'? আমি তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হই, বলি পেট কামড়াচ্ছিলো, ভুটভাট, তো এখন ভালো আছি। তার মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। ওম্মা, দ্বিতীয় ও তৃতীয়্জনও একই কায়দায় আলাপ করার পর টের পেয়েছিলাম উটি আসলে হাঊ ড্যু উ ড্যুর বাংলা সংস্করণ। এখন বোধহয় তাও নেই। উদাসীন হাই আওয়াজ ওঠে দু পক্ষেই। নমস্কার আর কে কবে করে? ... ...
বর্তমানে সোশাল মিডিয়াতে তর্জার একটা মূল ধারা হল আমাদের ধর্মচেতনা। শুধু মাত্র ভারতে নয়, বা এই উপনিবেশে নয়, কিছু স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ বাদ দিলে সম্ভবতঃ বেশিরভাগ দেশেই একধরনের বিবাদমান যুযুধান কিছু গোষ্ঠী পাওয়া যাবে, যারা সদাই এই নিয়ে মাথা কুটে মরছে। ফলতঃ নানান কূট প্রশ্ন মাথায় ঘোরাফেরা করে যে এই ধর্মের সূত্রপাত কোথায়? কৈ বাকি জীবেরা তো ধর্ম অধর্ম নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমাদের মধ্যেই এর প্রকাশ কেন? সেই উদ্দেশ্যেই এই লেখার অবতারনা। এই লেখাটি মূলতঃ ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টোরিয়ার প্যালিওএন্থ্রোপোলজিস্ট জেনিভিয়েভ ভন পেটজিঙ্গারের টেড টক আর কিছু পেপারের সার। ... ...
প্রায় এক হাজার বছর আগের বাংলা। ১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দ, পাল রাজবংশের অন্ধকার যুগ চলছে। সিংহাসন নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই শুরু হয়েছে। সাম্রাজ্যের পরিধি ক্রমশই ক্ষুদ্র হচ্ছে। বাঙালীর গর্ব অতীশ দীপঙ্কর বিক্রমশিলা মহাবিহার ছেড়ে তিব্বতে চলে গেছেন প্রায় ত্রিশ বছর হলো। চারদিকে শুধুই অন্ধকার। তার মধ্যে একটি প্রদীপের দীপ্ত শিখার মতো জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন চিকিৎসক চক্রপাণি দত্ত। প্রথম বিখ্যাত বাঙালি চিকিৎসক, যার রচিত পুস্তক এক হাজার বছর পরেও আজও সমস্ত ভারতবর্ষের আয়ূর্বেদিক কলেজগুলিতে পড়ানো হয়। সে দীপ শিখাও কি নিভে যাবে? ... ...
এইসব অনেক দিন ধরে মিলিয়ে দেখে দেখে তবে ফুলমণি বুঝেছে মানুষের মতোই জঙ্গলের রূপের কোনো ঠিক নাই। সে খালি পালটায়। ঠা ঠা রোদ্দুরে সে একরকম, তো কালো মেঘের নিচে একেবারেই অন্যরকম। রহস্যময়, গহন। আবার শীতের ভোর ভোর খেতখামার, চাষের মাঠে মাকড়সার জালে বিন্দু বিন্দু শিশির আটকা পড়লে জঙ্গল বড় শান্ত, যেন মাহাতো বাড়ির বিয়ার যুগ্যি বড় মেয়েটা। ... ...