বিনায়ক রুকুর ছবি ও কবিতায় দীপাবলী। ... ...
৫ বছরের ছেলে হারিয়ে গেছিল হালদার বাড়ির। সবে রমতা সাধু ডেরা পেয়েছি শিব মন্দিরের ধারে তখন। রাম জানে ক মুহূর্ত নাকি ক মাস। ও বাড়ির উঠোনে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হালদার বাড়ির ছ'ভাই ছেলে ধরা ভেবে বিড়াল যেভাবে ইঁদুর ঝাঁকায় সেই ভাবে ঝাঁকাতে আমার ল্যাঙট থেকে দুটো বেলফুল পড়লো ভুঁয়ে। কষ থেকে রক্ত পড়ছে দরদর করে। মনটা আলাদা করে ফেলার চেষ্টা করছি শরীর থেকে। শুনেছি ব্যথা টের পাওয়া যায়না। কখনো কামড়ে ধরছি নিজের ঠোঁট। কোন জন্মে যেন পড়েছিলাম ব্যথার গেট থিওরি। জ্বলন্ত বাম কপালে লাগালে সুপারফিসিয়াল ব্যথার চোটে দপদপানি গভীর ব্যথা ফটক দিয়ে ঢোকার সুযোগ পায়না। ... ...
এই দেখুন, শহুরে হাওয়া লেগেছে, গ্রীষ্ম গ্রীষ্ম করছি। আরে ওর আসল আদি অকৃত্রিম নাম তো, গরমকাল। ছুটির নাম গরমের ছুটি। সামার জানতাম সামার ভ্যাকেশন নাগরিক ব্যাপার। কলকাতায় শুনছি। গরমকালে চৈত মাস পড়তে না পড়তে শুরু হয়ে যায় সকালের ইশকুল। সকালের না মন্নিং স্কুল। পোশাকি নাম মর্নিং তো জানে না, তার আর আর নাই। মন্নিং স্কুল ভারি মজা। ছটায় স্কুল। টিফিন আধ ঘন্টা নয়, পনের মিনিট। আর ওই পনের মিনিটেই কত মজা। আধঘন্টা টিফিন মানে বাড়িতে ভাত খেতে আসা। বাড়ির কাছেই স্কুল। প্রাথমিক বিদ্যালয় আমাদের পূর্বপুরুষদের দেওয়া জায়গায়। পুকুরের এপার ওপার। দু মিনিটও নয়। মন্নিং ইশকুলে টিফিন নিয়ে যাই সবাই। টিফিন মানে মুড়ি গুড়/ বাতাসা বা চিনি। মাঝেমধ্যে আলুভাজা জিরে দিয়ে। কখনো বেসনের বড়া। ও জল দিয়ে মেখে খেতে কী মজা। ... ...
স্বপন তখন তরুণ ছিল। এ সব শুনেছে, খুব যে বুঝেছে এমন না। কিন্তু সত্যি সত্যি দেখা গেল এই সব লোকগুলো পড়ছে তাদের কাগজ। তারা অমিতাভ নাইটের বদলে খাবারের দাম কেন বাড়ছে তা নিয়ে যতটা গভীরে যাওয়া সম্ভব খবরের কাগজে ততটা গিয়েই খবর করতো। খবরের পাঠকের দুনিয়া কলকাতা শহরে ভাগ হয়ে যেতে শুরু করলো। সুখবাজার অমিতাভ নাইটে জোর বেশি দিত। আরেকটা কাগজ ছিল ‘দিনকাল’ বলে। তারা বাংলা সমাজতন্ত্রীদের, বিশেষ করে আলো বসুর কুকীর্তি নিয়েই মত্ত থাকতো। পরের পর তদন্তমূলক সাংবাদিকতা তাদের ব্যানার হেডলাইন হত। সেটা আর সুখবাজার পড়তো ফেডারেশনের সমর্থকরা। বাংলা সমাজতন্ত্রীদের নিজেদের দলীয় মুখপত্র ‘লোকশক্তি’ পড়তো পার্টি মেম্বার আর সমর্থকরা। উত্তেজিত তর্ক-বিতর্ক এক সময় থামলে তখন শোনা যেত ‘সমকালীন’-এর পাঠকদের গলা। কী হয়েছে, কেন হয়েছে, কী হবের ব্যাখ্যা নিয়ে তারা হাজির! কাগজ বাড়ছিল। বাড়ছিল বলে ছোট আর মাঝারি বিজ্ঞাপন আসছিল নিয়মিত। দেরী হত মাইনেতে বিজ্ঞাপনদাতা আর পাঠকের টাকা আদায় করতে লোক কম ছিল বলে। বেশি ছিল না মাইনে। কিন্তু স্বপনের মনে হত একটা কাগজ করছে যার একটা জায়গা আছে। পাড়ার সাধারণ লোকেরা, সে যে দলের সমর্থকই হোক, স্বপনকে বলতো কাগজটা কিন্তু খবরটা করে। সরাসরি যারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে জড়িয়ে তারা অবশ্য চুপ থাকতো, কিন্তু তারাও চেষ্টা করতো ‘সমকালীন’ কী লিখেছে জেনে তবে কথা বলতে চায়ের দোকানে। সে সব ভেঙে দিয়েছিল বীতশোক। তার আগে অব্দি স্বপন বুঝেছিল একে বলে সম্পাদকীয় নীতি। আর অমিতাভ, শালা শ্বশুরবাড়ির পয়সায় মদ-মেয়েবাজি করে, গদার-ত্রুফো আওড়ে চ্যানেল পলিসি বানাবে? কিম্বা অনুরাগ বা জয়ন্ত ওই সব চিটিংবাজী করে বানাবে পলিসি? ... ...
মোহন ফরেস্ট চেক পোস্টে যখন আসে সে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে। তার জিনসের প্যান্ট ফেঁড়ে গিয়ে পায়ে অল্প অল্প রক্ত বেরোয়। নাম জিজ্ঞেস করলে সে বলল তার নাম আনিস। তার কথাবার্তা ঠিক ছিল না। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে কেইবা ঠিকঠাক কথাবার্তা বলতে পারে। অনেকটা ঘোরের মধ্যে সে বার বার তার মোটর বাইকের দিকে দেখাচ্ছিল। আর বলছিল একমাত্র প্ল্যাটিনা নামের বাইকে চড়েছিল বলে সে পালাতে পেরেছে। ব্যাপারটা কী , কার হাত থেকে সে পালাতে পেরেছিল, এসব না বলে খালি বাইকের কথা বলায় অভিজ্ঞ ফরেস্ট গার্ডরা সব বুঝতে পারে আর এক গ্লাস গরম দুধের ব্যবস্থা করে। সেই দুধ খেয়ে ধাতস্থ হয়েও আনিস খানিকক্ষণ চুপ মেরে বসেছিল তারপর ধরা গলায় আদমখোরের কাহিনী শুরু করল। ... ...
ক্যাপ্টেন সোহরাবকে দিয়ে শেখ আব্দুর রহমানকে বলান যে সে যদি প্রাণে বাঁচতে চায় তাহলে যেন জোরে পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান দেয়। জিপের পেছনে রহমান পরিষ্কার সোহরাবকে বলে বাজান আমার যে পুত্র নাজিরের খালের ঘাটলায় ৫০ সালে পানিতে ডুবে মরেছে সে থাকলে এখন তোমার মত হইত, এই মুহূর্তে কেন জানিনা তোমারে মোর তার মত মনে হইল, তবে বাজান ওই শ্লোগান দেওয়া আমার পক্ষে সোম্ভব না। সোহরাব আবারও অনুরোধ করে বাজান আপনে আমার ধর্মের বাপ, আমারে পাপের ভাগী করবেননা শ্লোগানডা দেন। আব্দুর রহমান কঠোর আরও, সোহরাবের দিকে না তাকিয়ে বলে সোম্ভব না । ক্যাপ্টেন সিপাহীদের ইঙ্গিত করেন পুকুর পাড়ে দাঁড় করাতে । পুকুরের দিকে মুখ করে দাঁড় করাতে গেলে শেখ আব্দুর রহমান ফিরে যায় এবং বলে পিঠমে নেহি বুকমে গুলি চালাও এবং তারপর তার ওই উর্দু- বাংলা মিশ্রণে বলে সে নবীজীর বংশ তার বুকে নবীজীর চুম্বন রয়েছে, তোমাদের গুলি পিছলে যাবে । এই ঘটনা শ্রোতারা এমনভাবে শুনতে থাকে যেন তারা ’৭১ সালের আব্দুর রহমানের ওই ঘটনার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। গল্পকারের সহকারী তার ওস্তাদকে ইশারা করতে থাকে ওস্তাদ যেন তার আসল কাজ শুরু করে। সহকারী গল্পের মাঝে আরও দু’একবার ইশারা করেছিল, ওস্তাদ থামেনি। এবারেও তার ওস্তাদ গল্পকার থামেনি, বরং সহকারীর উদ্দেশ্যে গল্পকার শ্রোতাদের বলে দেয় যে ছোড়াটা চির-কৃমির বড়ি বিক্রি শুরু করে দিতে বলে এবং বড়ি বিক্রির পরে নাকি লাগলে আবার শুরু করা যাবে। কোন গল্পের মাঝ পথে তা থামিয়ে ক্যানভেসারের বড়ি বিক্রির রীতি সম্পর্কে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা হতাশ হয় কেনোনা গল্পটি চির-কৃমির বড়ি বেচার মধ্যে হারিয়ে যাবে। কিন্তু ওস্তাদ তার সহকারী ও শ্রোতাদের সাফ কথা জানিয়ে দেয় সে কৃমির বড়ি আজ বিক্রি করবে না। শ্রোতারা ফিরে যেতে চায় তাদের গল্পে। গল্পকার চমক দেয় তার গল্প বলায় একথা বলে তাহলে বড়ি বিক্রি নাই যখন কিসসাটাও ক্ষান্ত দেই। শ্রোতারা এর প্রতিবাদে গরম মিছিল-শ্লোগানের মত প্রতিবাদ করেন। সত্য কিন্তু তাদের মুখ-ভঙ্গিতে হতাশার দৃশ্যটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ... ...
সবে দোকানের ঝাঁপ খুলেছি। ঝিলমিল ঝিলমিল প্রজাপতি রোদ্দুর মিছিল করে দোকানে ঢুকে পড়ল আমার কফির দোকানে। আমিই মালিক আমিই বারিস্তা। আমার তো পুঁজি খুব কম। ছোট্ট দোকান। তবে জায়গাটা এক্কেবারে মোড়ের মাথায়। মোড়ের মাথা মানে চারদিক থেকে ঢালু পাথর বাঁধানো রাস্তা উঠে এসে এখানে মিলেছে। একটা দামাল ঝামড়া বেদানা গাছ। তার ঠিক পাশটায়। সেদিক থেকে মোটামুটি জমজমাট। এখন সবে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। আমি কফির মেশিন গুছিয়ে রাখছি। ক্যাকটাসগুলো জানালার কাছে রেখে দিচ্ছি। বোগেনভিলিয়া লালে লাল হয়ে আছে আমার দোকানের কাচের দরজার ওপর। আমি হাট করে দরজা খুলে রেখেছি। রোদ মেখে ফুলের একটা লালচে রং আমার লালসাদা চেক চেক কফিটেবিলের নকশা বুনছে। আন্দালুসিয়ার সেভিয়াতে বরাত জোরে একটু দোকানের ব্যবস্থা হয়ে গেল কোনোমতে। সে আর-এক গপ্প। পরে বলবখন। ... ...
খুবই গোলমেলে অ্যাসাইনমেন্ট। ‘আমার জার্মানি’ বইটার রিভিউ করতে বসেছি। গোদা বাংলায় পুনর্বার দেখা (Review) কি দেখব, কোনখান থেকে দেখব। শুধু জার্মানি হলে কথা ছিল। স্টেট ব্যাঙ্কের চাকরি ১৯৭২ সালে। জলপাইগুড়ি বহরমপুর শ্যামবাজার ব্রাঞ্চে কাজ শেখা। তিন বছর বাদে দু-বছরের জন্য জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট অফিসে বদলি। ফ্রাঙ্কফুটের প্রথমদিন একটি অসামান্য অবদান। পুরো লেখাটার মধ্যে ছড়িয়ে আছে রসিকতার মণিমুক্ত। যে লেখক নিজের দুঃখ নিয়ে নির্মল রসিকতা করতে পারে তার লেখনি কোন মার্গে উঠতে পারে এই অধম রিভিউ রাইটার তা কল্পনাও করতে পারেননি। আসার সময় হাতে ছিল ১২৫ ডলার তার মধ্যে ৫৫ ডলার নিজের সুটকেসের লাইনিংয়ের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন। হাতে পেনসিলের মতো করে ধরা ছিল ৭০ ডলার। হীরেন পৌঁছে গেলেন ফ্রাঙ্কফুর্টে কিন্তু সুটকেস পৌঁছলো না। নিজের অসহায় অবস্থার বিবরণে যে স্যাটায়ার লুকিয়ে আছে, তা এককথায় নান্দনিক। ... ...
সারা ভারত জুড়ে বছরভর যে মাইলের পর মাইল পদযাত্রা চলে এগুলো তারই সামান্য কয়েকটা টুকরো দেখলাম আমরা। এরকম আরো অজস্র হেঁটে-চলার, হাঁটতে হাঁটতে বসে পড়ার, পড়ে মরে যাবার নির্মম কাহিনী রয়েছে সমৃদ্ধ দত্তর লেখা ‘হাঁটার গল্প’ বইয়ে। এই লকডাউনে যারা হেঁটে গেল দেশজুড়ে তারা কজন পৌঁছল গন্তব্যে? কেমন ছিল সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরন্তর হাঁটার অপমানগুলোর কাহিনী? কত রকমের মাইগ্রেশান হয় দেশে? শিক্ষার নিরিখে একেবারে নীচের দিকে থাকা বিহার আর একদম উপরে থাকা কেরলে মাইগ্রেশানের হার এত বেশি কেন? কী সেই অন্তর্নিহিত সমীকরণ যার ফলে দলে দলে মানুষ বাইরে যায়? এইরকম নানা প্রশ্নের উত্তর এই বইতে খোঁজার চেষ্টা করেছেন লেখক। ... ...
এই পরিস্থিতির সাথে আমি আগেও পরিচিত। আমাদের আর একজন গৃহ সহায়িকা অঞ্জুদিকে পাশের পাড়ার এক বাড়িতে বলেছিল, 'তুমি ডাক্তারবাবুর বাড়িতে কাজ করো। ডাক্তারবাবু রোজ জ্বরের রোগী দেখছেন। ওই বাড়িতে কাজ না ছাড়লে আমাদের বাড়ি আর কাজ করতে পারবে না।' অঞ্জুদি আমাকে হেসে বলেছিলেন, 'বললুম, আপনাদের কাজটাই তাহলে ছেড়ে দিই। তবে আপনারা জ্বর হলে কোথায় যাবেন? ডাক্তার কি দেখাবেন না?’ ... ...
রাজগৃহ। পরিব্রাজনরত গোতম এসে পৌঁছেছেন। বেণুবনে যেখানে কাঠবিড়ালিদের খাওয়ার জায়গা সেইখানে উপবিষ্ট হলেন সন্ন্যাসীসমাগমে। সহসা তাঁর উদরে বায়ু-বিকার দেখা দিল। সন্ন্যাসী আনন্দ দ্রুত সেই রোগের উপশমের লক্ষ্যে এক পথ্য প্রস্তুত করে পরিবেশন করলেন বুদ্ধকে। ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন প্রভু। কিন্তু আমরা পেয়ে গেলাম খিচুড়ির এক সুনির্দিষ্ট পূর্বজ। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
বাংলায় আদম পীরের প্রভাব সেই একাদশ শতকের পূর্ববর্তী সময়কালে থেকে আজও সমানভাবে বিদ্যমান। হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয়ী সংস্কৃতির এক অসামান্য ভাবধারা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশে আদম পীর বিশেষ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গিয়েছেন। আদম পীর সম্পর্কে খুব সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যথেষ্ট মুশকিলের ব্যাপার। আদম পীরকে অনেকেই হযরত পীর আদম বলে অভিহিত করে থাকেন। কেউ কেউ বলেন বাবা আদম শহীদ। কিন্তু তাঁর জন্ম কোথায় ,তাঁর তিরোধানই বা কোথায়, কিভাবে হয়, মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তারিখ --এই সব কোনো কিছুই সঠিকভাবে জানতে পারা যায় না। তাঁর পারিবারিক পরিচয় ও কিন্তু খুব সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। খানিকটা অনুমান এবং অনুরাগীদের রেখে যাওয়া পরম্পরাগত বিফরণ এবং তাঁদের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন গল্পগাছা কে নির্ভর করেই আদম পীর সম্বন্ধে কিছু কিছু ধারনা আমাদের উঠে আসে। ... ...
না, যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, এটা দার্জিলিং বা মসালা চা নয়। এই "এক কাপ চা" লেখাটা ক্যালিফোর্নিয়ার, স্যান ডিয়েগোর একটি হাই স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম (স্পেশাল এডুকেশন) নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের যৌন শিক্ষার ক্লাসের বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে। এখানে হাইস্কুলে ঢুকেই যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্য ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে শিক্ষাদান অনেকটাই সহজ, কিন্তু এদের? যারা অটিস্টিক, বা ADHD (মনোযোগ ঘাটতি) কিম্বা ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত, অথবা প্রায় অন্ধ ও বধির তাদের কী করে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যাবে? অথচ দিতেই হবে, কারণ যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা এদেরই সব থেকে বেশি, কয়েকজন তো শিশুকালেই তাদের সৎ বাবা অথবা মায়ের পুরুষ বন্ধুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারাতেই বসেছে। ... ...
বাজার অর্থনীতির নিয়মে স্বাস্থ্যপরিষেবাকে চলতে দেওয়ার বিরুদ্ধে কয়েকটি অমোঘ যুক্তি রয়েছে। প্রথমত, বাজারের অত্যাবশ্যক শর্ত, তথ্যের সাম্য। অর্থাৎ, ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুজনেই কেনার জিনিসটা নিয়ে সমান অবগত থাকবেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে, হাজার গুগলের সহায়তা সত্ত্বেও, চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে এই তথ্যের সাম্য আসা একেবারে অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, ফ্লোরিডার বিচারকের যুক্তিটি। কেনার বাধ্যবাধকতা কাজ করলে বাজারের নিয়ম খাটে না। আপনার যদি দামে না পোষায়, এবং তদসত্ত্বেও যদি আপনি কিনতে বাধ্য হন, তাহলে বাজারের নিয়ম চললো কি? আপনি যদি সত্যিই অসুস্থ হন, তাহলে তো আপনি যেকোনো মূল্যেই, ঘটিবাটি বিক্রি করে হলেও, চিকিৎসা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতি বছর, এই দেশে কয়েকলক্ষ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যাচ্ছেন, স্রেফ চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে। অন্তত খাতায়কলমে, তত্ত্বগতভাবে, বাজার অর্থনীতি কিন্তু এমন পরিস্থিতির কথা বলেন না। তৃতীয়ত, বাজারের নিয়ম অনুসারে, ক্রেতা এবং বিক্রেতার সম্পর্কটি সরাসরি এবং সেইখানে তৃতীয় ব্যক্তির সরাসরি লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্ন নেই (মধ্যবর্তী মুনাফাভোগী বা দালালের প্রশ্ন আনছি না)। ... ...
তবে ভাইরাসকে নিয়ে সহবাস করা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি হতে যাচ্ছে একথা বলার জন্য পণ্ডিত হবার প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত মনে পড়বে কাম্যুর প্লেগ উপন্যাসের কথা। সে উপন্যাসের মূল চরিত্র ডঃ রু (Rieux) ফ্রান্সের কাল্পনিক ওরান শহরের মহামারি প্লেগের চিকিৎসা করতে গিয়ে বলছেন – “I have no idea what’s awaiting me, or what will happen when this all ends ... For the moment I know this: there are sick people and they need curing.” মানুষ যত্ন চায়, মমতা চায়, সহমর্মিতা চায়। তাই “what will happen” জানা না থাকলেও আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এমনকি ভারত সরকারের করোনা অতিমারির জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজের মাত্র ০.৭৫% (১৫,০০০ কোটি টাকা) স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও। ... ...
গ্রামীণ জীবন ও কৃষি বিষয়ের প্রখ্যাত সাংবাদিক পি সাইনাথ এবং অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশের বক্তব্যের সংক্ষেপিত অনুলিখন, রাইট টু এডুকেশন ফোরামের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হল। এই আলোচনাসভাটি গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবং মূলত বুদ্ধিজীবীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, বিষয়টি রাজনৈতিক হলেও, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনে যে মতাদর্শের ভূমিকা থাকে তার অবশ্যম্ভাবী উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও, আলোচনাটি, বক্তাদের গুণেই দলীয়, বিশেষত নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে খুব সম্পর্কিত কিছু হয়ে ওঠেনি। ... ...
আজ আমাদের অগ্রজ মনোজ মিত্রর জন্মদিন। তিনি ৮০ সম্পূর্ণ করে ৮১-তে পা দিলেন। ভারতীয় নাটক, নাট্য সাহিত্যে তাঁর অবদান পাঠক এবং নাটকের দর্শক মূল্যায়ণ করবেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে দূরের পাঠক হয়ে তাঁর নাটক পড়ি। এবং উচ্চ মানের সাহিত্য পাঠের স্বাদ পেয়ে থাকি। অসামান্য বহুমাত্রিক সংলাপ পড়ে মুগ্ধ হই। সেই ১৯৫৯ সালের মৃত্যুর চোখে জল একাঙ্ক থেকে চাকভাঙা মধু, পরবাস, সাজানো বাগান, গল্প হেকিম সায়েব, রাজদর্শন, যা নেই ভারতে, অশ্বত্থামা, আশ্চর্য ফান্টুসি, ভেলায় ভাসে সীতা, অলকানন্দার পুত্র কন্যা......তালিকা বাড়াব না। ১৯৭৫-৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে নরক গুলজার নাটকের সেই গান, ' কেউ কথা বলো না, কেউ শব্দ করো না, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না' তিনিই লিখেছিলেন। সেই গান এখন ভেসে বেড়ায় সব রকম সেনসরশিপের বিরুদ্ধে। ... ...
এই অসুখের পোশাকি নাম মানডে ব্লুজ। কাজে যাবার অনীহা। বিশেষ করে রবিবার সন্ধ্যায় এই মহামারীর প্রকোপ বাড়ে। আর লোকে ভিড় জমায় এই ক্যাফেতে। বিয়ার আর বাংলা খেয়ে নিজেদের চাঙ্গা করার জন্য। টেবিলে-টেবিলে ধোঁয়া ওঠে। গজল্লায় গমগম করে চারদিক। ফুর্তির ফোয়ারা ছোটে। মেয়েরা প্রেমিকের কোলে উঠে বসে। ছেলেরা হেঁড়ে গলায় গান গায়। ... ...
ইংরেজিতে ক্যুইয়র কথাটার সাধারণ মানে “অদ্ভুত” বা “উদ্ভট”। এই শব্দটার সাথে এক দীর্ঘ ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ইতিহাসে দেখা যায় যে ক্যুইয়র কথাটা ইংরেজি সাহিত্যে এবং কথ্য ভাষায় ব্যবহার হতো যা কিছু অদ্ভুত তার প্রিফিক্স হিসেবে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় এই শব্দটি ব্যবহার হতে লাগল অপমানসূচক ভাবে, গাল হিসেবে, বুলি করার জন্য - এবং মূলত সমকামী-রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য। এটার মানে এই নয় কিন্তু যে ক্যুইয়র ব্যাপারটা বিদেশী। আমাদের বিরুদ্ধে অনেক সময়েই শুনি, যে আমাদের আন্দোলনটা নাকি গভীর একটা চক্রান্ত। রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নানান ন্যারেটিভ বেরোয়। সনাতনপন্থীরা বলেন যে আমরা নাকি ভারতীয় সংস্কৃতির কেউ নই, আদপে আমরা পশ্চিমি ষড়যন্ত্রের সভ্যতা দুর্বলকারী সংস্কৃতিভাঙানি কাপুরুষ। ... ...