জুলাই ও নভেম্বর ১৯৩২ পর পর দু বার নির্বাচন হয়। কোন দল সরকার গঠন করতে পারে না। জানুয়ারি ১৯৩৩ আবার নির্বাচন। কোন দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে নি (নাৎসিরা পায় ৩৩% ভোট) । ভোট ক্লান্ত জনগণকে রেহাই দেবার জন্য ছিয়াশি বছরের বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিনডেনবুরগ হিটলারকে কোন রকমে একটা জোড়া তালি দিয়ে সরকার গঠনের অনুমতি দিলেন। ক্ষমতা দখল করেই মার্চে আবার নির্বাচন ডাকলেন হিটলার। ক্রুপ থুসেন সহ যাবতীয় শিল্পপতিরা তাদের কোষাগার খুলে দিলেন – প্লেনে চড়ে এই প্রথম কোন রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনী প্রচার করলেন। বিপুল অর্থ ব্যয় করেও সংখ্যা গরিষ্ঠ হল না নাৎসি পার্টি -তারা পেলো ৪৩% ভোট। জার্মান জাতীয় দলের সঙ্গে একত্রে হিটলার আবার সরকার গঠন করলেন। দু মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের দরোজা বন্ধ হল। সে দরোজা আবার খুলবে দেড় দশক বাদে। ... ...
ওলায় বসে জানলার কাচটা নামিয়ে দিল সৌম্য। এমনিতেই এসি ওর পছন্দ নয়, তার ওপর এই প্যানডেমিকের সময় মনে হয় একটু খোলামেলা থাকাই ভাল। সৌম্য ভেবেছিল তুহিনদের বাড়ি যেতে যেতে ও রজতের সাথে মায়ের এখানে আসার ব্যপারটা নিয়ে একটু কথা বলে নেবে। সোহিনীদেবী রজতকে চেনেন সৌম্যর বন্ধু এবং ওদের ডিটেক্টিভ এজেন্সি সৌরলোকের পার্টনার হিসেবে। তিনি জানেন, যে কাজের প্রয়োজনে রজতকে প্রায়ই সৌম্যর বাড়ি থেকে যেতে হয়। তাই সৌম্যর বাড়িতে সব সময়ই রজতের জন্য স্পেয়ার টুথব্রাশ, জামাকাপড়, ঘরে পরার পায়জামা, চপ্পল ইত্যাদি থাকে। কিন্তু রজত আর সৌম্য যে কাজের পার্টনারের থেকেও বেশি কিছু, সেটা ওঁর জানা নেই। ফলে, সোহিনীদেবী কলকাতায় এলেই রজতকে কিছু দিনের জন্য পাততাড়ি গোটাতে হয়। এবং প্রতিবারই এই নিয়ে একটা মন কষাকষি হয়। ... ...
রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল সতী রেগুলেশন অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে বড়লাট লর্ড বেন্টিঙ্ক। উক্ত আইন বলে কোম্পানির আওতায় থাকা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সমস্ত অঞ্চলে সতীদাহ নিষিদ্ধ এবং সতীদাহে সাহায্য করা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষিত হয়। সেই সময় এই প্রেসিডেন্সির আওতায় মূলতঃ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা, উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চল ছিল। উক্ত অঞ্চলগুলিতে বিগত কয়েক বছরে সালপ্রতি প্রায় ৬০০ সতীদাহ হয়েছিল। বেন্টিঙ্ক ১৮২৯-এর এক রিপোর্টে লিখছেন সে বছর নথিভুক্ত ৪৬৩ জন সতীর মধ্যে ৪২০ জন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার এবং তার মধ্যে ২৫০ জনের বেশি কলকাতা-বিভাগের। লক্ষ্যণীয়, বোম্বে এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে সতীদাহের সংখ্যা এর থেকে অনেক কম ছিল। এবং এই বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা-বিভাগে সতীদাহের সংখ্যা মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, পাটনা বা বেনারসের থেকে দশগুণের বেশি। আরও গুরুত্বপূর্ণ উইলিয়াম কেরির রিপোর্ট, যেখানে তিনি বলছেন ১৮১৫ থেকে ১৮১৮-র মধ্যে এই এলাকায় সতীদাহের সংখ্যা বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছিল। এবং সাধারণ ধারণার উল্টোদিকে দেখা যায় সতীদের মধ্যে অধিকাংশ মোটেই ব্রাহ্মণ নয় বরং ১৮২৩ সালের রিপোর্টে ৫১% জাতিতে শূদ্র। ... ...
পুলিশকে কিছু কথা বলতে যাচ্ছেন কেউ। তর্কাতর্কি হচ্ছে। পুলিশের দিক থেকে যেহেতু বলার কিছু নেই, তাই তাঁরা কিছুক্ষণ বাদেই তেড়ে এসে তুমুল মারধোর করছেন দু-চারজনকে, এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ঘোষণা করছেন, গ্রেপ্তার করা হল। আমার দিকেও তেড়ে এসে ঘুষি চালিয়ে দেন এক পুলিশ মহাবীর। যদিও, আমি শান্ত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু করিনি। স্লোগান-টোগান তো দূরস্থান। হিন্দুত্ববাদী কোনো হামলাকারীর গায়ে বলাবাহুল্য একটুও আঁচড় পড়েনি। পুলিশের তর্জন-্গর্জন, মার-্ধোর শুধু একপক্ষের উপরেই বর্ষিত। এবং পুরোটাই পরিচালিত হয় নীল কোট পরিহিত একজন পুরুষ ও সাদা পোশাকের একজন মহিলা অফিসারের নেতৃত্বে। তাঁরা বস্তুত জনতাকে প্ররোচিত করছিলেন। যে ভঙ্গীতে কান্ডটা করছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে, পুরোটাই ইচ্ছাকৃত। হয় তাঁরা মব কন্ট্রোলের কিছুই জানেন না, কিংবা জানেন, কিন্তু তাঁদের গেরুয়াকরণ সুসম্পন্ন হয়েছে। ... ...
হিন্দুস্তানবাসী এই অধার্মিক শাসনকে সহজে মেনে নেয়নি। বাবর মারা যেতেই আর এক ধার্মিক বীর সুর শাহ দেহলি দখল করে নেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তৈরি করেন হিন্দুস্তানের প্রথম হাইওয়ে, জিটি রোড। এই প্রকল্পের আদলেই পরবর্তীতে স্বর্ণ চতুর্ভুজ সড়ক মহাযোজনার সূত্রপাত হয়। দুঃখের কথা এই, যে, এই হিন্দু মহাপুরুষ বেশিদিন রাজত্ব করতে পারেননি। কালিঞ্জর দুর্গের কাছে সন্ত্রাসবাদীরা তাঁকে গান পাউডার দেগে হত্যা করে। পৃথিবীতে সেই প্রথম সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ। রাজস্থানের মরুভূমির এক মরুদ্যানের কাছে এই হামলা হয়েছিল বলে এর নাম ছিল ওয়েসিস অ্যাটাক। নাম বদলে এখন একেই বলা হয় আইসিস আক্রমণ। আইসিসের আক্রমণের প্রথম শহীদ সুর শাহ অযোধ্যার মন্দির পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। কিন্তু খুবই রামভক্ত ছিলেন বলে তাঁর স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয় সাসারামে। সুর শাহের বংশধররাও গুজরাতে চলে যান। মোদী বংশের মত শাহ বংশও সেখানে খুব বিখ্যাত হয়। পরবর্তীকালে এই দুই বংশধররাই বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে সমস্ত পরাজয়ের শোধ তোলেন। গুজরাতি এবং হিন্দি ভাষায় লিখিত 'বাল অমিত' গ্রন্থে এই দিগ্বিজয়ের সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায়। ... ...
প্রায় এক হাজার বছর আগের বাংলা। ১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দ, পাল রাজবংশের অন্ধকার যুগ চলছে। সিংহাসন নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই শুরু হয়েছে। সাম্রাজ্যের পরিধি ক্রমশই ক্ষুদ্র হচ্ছে। বাঙালীর গর্ব অতীশ দীপঙ্কর বিক্রমশিলা মহাবিহার ছেড়ে তিব্বতে চলে গেছেন প্রায় ত্রিশ বছর হলো। চারদিকে শুধুই অন্ধকার। তার মধ্যে একটি প্রদীপের দীপ্ত শিখার মতো জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন চিকিৎসক চক্রপাণি দত্ত। প্রথম বিখ্যাত বাঙালি চিকিৎসক, যার রচিত পুস্তক এক হাজার বছর পরেও আজও সমস্ত ভারতবর্ষের আয়ূর্বেদিক কলেজগুলিতে পড়ানো হয়। সে দীপ শিখাও কি নিভে যাবে? ... ...
আমি একজন সারভাইভর। আমি আমাকে ধর্ষণ করার জন্য কাউকে অনুরোধ করি নি, আমি ধর্ষণ উপভোগও করি নি। এটা ছিল আমার জীবনে সহ্য করা সবচেয়ে কষ্টকর অত্যাচার। কোনও ধর্ষণ কখনও কোনও মেয়ের দোষে ঘটে না। ধর্ষণকে নিয়ে আমাদের সমাজে পালন করে চলা অদ্ভুত নীরবতা আর অবাস্তব কাল্পনিক মিথকে ছিন্নভিন্ন করে দেবার উদ্দেশ্যেই আমার এই লেখা। আমি এই লেখার মাধ্যমে শুধু এইটুকু সবাইকে জানাতে চাই যে মেয়েরা কোনও সহজলভ্য ভোগসামগ্রী নয়, ধর্ষণের মত অপরাধ একজন মেয়েকে, মানুষ হিসেবে, সামাজিক ও মানসিকভাবে সবচেয়ে একা করে দেয়। ... ...
অমৃতসরে তিরিশের দশকের আর পাঁচটা ভাবনা চিন্তা করা যুবকরা যখন ভগত সিং এবং বলশেভিক বিপ্লবের আগুনের আঁচ অগ্রাহ্য করতে পারছেন না, সেখানে মান্টোর তৈরী হয়ে ওঠার গল্পটা আমাদের দেশের অন্যান্য ভাষা সাহিত্যের আধুনিকতার সূচনাপর্বের পর্বের ছবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রচুর পড়ছেন, অসকার ওয়াইল্ড, চেকভ, পুশকিন, মপাসাঁ, হুগো। অমৃতসরেই সমাজবাদী 'মুসাওআত' পত্রিকায় কর্মরত আবদুল বারি আলিগ নামক এক সাংবাদিকের পাল্লায় পড়ে হুগো এবং অস্কার ওয়াইল্ড অনুবাদ করছেন, এবং বারি সাহেবের উদ্যোগে অমৃতসরেই এই সব অনুবাদ কিছু প্রকাশিত হচ্ছে ১৯৩৩-১৯৩৪ এর সময়টার মধ্যে। এর পরে টিবিতে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং আমাদের সৌভাগ্য যে সেরেও উঠছেন, কিন্তু তার পরে লাহোরে চলে যাচ্ছেন একটা পত্রিকার কাজ নিয়ে। সেখান থেকে নাজির লুধিয়ানভির আমন্ত্রনে 'মুসাবিরা' পত্রিকাটিতে কাজ করার জন্য বম্বে আসছেন ১৯৩৬ নাগাদ। এর পরে কিন্তু আবার ১৯৪২ নাগাদ দিল্লী চলে যাচ্ছেন রেডিওতে নাটক আর নানা স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ নিয়ে, মন পড়ে থাকছে বম্বের বন্ধুদের কাছে। ... ...
ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব অনেক দিন ধরেই কমছিল। আয়া সোফিয়ার মসজিদীকরণ সেই ভাবনায় সীলমোহর দিল। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কি এমন ঘটছে যার জন্য মানুষ আবার মধ্যযুগে ফিরে যেতে চাইছে? সাম্য, উদারতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি যে ঝোঁক বিংশ শতকের আধুনিক রাষ্ট্রগঠনে দেখা যাচ্ছিল তার থেকে এত তাড়াতাড়ি মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইছে কেন? আধুনিক রাষ্ট্রনির্মানের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শ অনুপাত কী হওয়া উচিৎ? রাষ্ট্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে আলাদা করে দেওয়ার গুরুত্ব আধুনিক রাষ্ট্রগুলো বুঝেছে। সুফলও পেয়েছে। কিন্তু বহুত্ববাদে আঘাত না দিয়ে কিভাবে ব্যবহারিক জীবনে ধর্ম বর্জনের চর্চা চলবে সেটা এখনও আয়ত্ত্ব করা যায়নি। ... ...
মেডিকাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ২০০২ সালে কোড অফ এথিকস-এ বলেছে ডাক্তারদের যথাসম্ভব জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা উচিত। বিভিন্ন সময় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি ডাক্তারদের ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করতে বারণ করেছে। তাহলে ব্র্যান্ড নামে ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে কেন? বাজারজাত হচ্ছে কেন? একদিকে সরকার ব্র্যান্ড নামের ওষুধ, অযৌক্তিক নির্দিষ্ট মাত্রার মিশ্রণ (irrational fixed dose combinations), ক্ষতিকর ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করতে দেবে আর ডাক্তারদের বলবে এসব লেখা যাবে না — এমনটা হয় নাকি! সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তেমনটা করত যেমন করেছিল আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশের সরকার — অযৌক্তিক নির্দিষ্ট মাত্রার মিশ্রণ (irrational fixed dose combinations), ক্ষতিকর ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নিষিদ্ধ করে। ... ...
আমরা কারিগর ব্যবস্থার মানুষেরা, বড় কৃষক বা কুলাক আর কর্পোরেট কৃষকের মধ্যে মৌলিক ভেদ করি। কুলাকেরা গ্রামের মাটিতে থাকে। সে বৃহত্তর গ্রাম সমাজের অংশ, গ্রামের ওঠাপড়া, অন্যান্য সমাজের ভাল থাকা মন্দ থাকায় তার যায় আসে, গ্রামের কারিগরদের, তার কৃষির কাজের অঙ্গাঙ্গী হাতিয়ার। সে সাধারণত একফসলি চাষ করে না – তাই সামগ্রিকভাবে যান্ত্রিক পুঁজিনির্ভর কৃষি তার পথ নয়। তার উৎপন্ন ফসলের বাজার গ্রামে বা তার আশে পাশে। তার মূল লক্ষ্য বিদেশের বাজার নয়, স্থানীয় বাজার, উদ্বৃত্ত সে বিদেশে পাঠায়। কিন্তু কর্পোরেট কৃষকেরা দেশিয় চাষের জোর, তার মৌলিকতা, ফসল বৈচিত্র বিষয়ে চরম উদাসীন। ... ...
এইসব অনেক দিন ধরে মিলিয়ে দেখে দেখে তবে ফুলমণি বুঝেছে মানুষের মতোই জঙ্গলের রূপের কোনো ঠিক নাই। সে খালি পালটায়। ঠা ঠা রোদ্দুরে সে একরকম, তো কালো মেঘের নিচে একেবারেই অন্যরকম। রহস্যময়, গহন। আবার শীতের ভোর ভোর খেতখামার, চাষের মাঠে মাকড়সার জালে বিন্দু বিন্দু শিশির আটকা পড়লে জঙ্গল বড় শান্ত, যেন মাহাতো বাড়ির বিয়ার যুগ্যি বড় মেয়েটা। ... ...
এই প্রথম তার সাথে আমার কথা হয়। এর পর যখনই ছাদে যেতাম তখন তার সাথে বিভিন্ন রকমের গল্প হত। আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতাম তাই সাধারণত সকাল বেলা চায়ের কাপ হাতেই ছাদে যেতাম বেশি। ছুটির দিনে কখনো কখনো বিকেলের দিকে। বিকেলের আকাশ আমার খুব ভালো লাগে। এই সময়ে আকাশ আস্তে আস্তে রং বদলায়। এর বৈজ্ঞানিক কিছু কারণ আছে। সূর্যরশ্মির বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিচ্ছুরণ।। কিন্তু ওসব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। বিকেলের পশ্চিম আকাশ যখন নিজের রং বদলাতে বদলাতে সন্ধ্যার দিকে ধাবিত তখন আমার একে মনে হয় কিছু মধ্যবিত্ত অসম্পূর্ণ স্বপ্নের অব্যক্ত প্রগাঢ় বেদনার সম্মিলিত রূপ। যখন সময় পেতাম তখন আমি এই বেদনার গাঢ় রং বোঝার চেষ্টা করতাম, যদিও আমার জীবনযাপনের সাথে এর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। ... ...
নোটবন্দীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল, দেশজুড়ে তার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াই বা কী ছিল, এসবই এখন ভারতবাসী মাত্রেই তো বটেই, পৃথিবীর প্রায় সকলেরই মোটামুটি জানা। তবু হয়তো আলোচনার কারণে সে সব চর্বিত চর্বণ দু’য়েকবার উঠে আসবে। এটিএমের সামনে সেইসব সুদীর্ঘ লাইন, লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু, নগদ টাকার হাহাকার, ছোট ব্যবসাদারদের আর্তনাদ, আরও অসংখ্য গল্প এখন এদেশের লোকগাথা হয়ে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু আজ আমরা মূলতঃ দেখব, পাঁচ বছর পর, নোটবন্দী আমাদের কী দিল না দিল, সেই ব্যালান্স শিটের হিসেব। ... ...
বছর যেতে আর কি? আমরা এখন বড় হয়ে গেছি। আমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি জুটেছে। ওদিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তিন ভুবনের পারে বলে একটা ছবিতে কি ইনোসেন্ট এক মস্তানের রোলে কী অসাধারণ অভিনয় করেছেন! তনুজা তাঁর শিক্ষয়িত্রী স্ত্রী। পল্টুদা অবশ্য মস্তান হতে পারে নি। তবে সুন্দরই আছে। সাধারণ একটা সরকারি চাকরি করে। পাত্র হিসেবে তেমন কিছু নয়, তবে বিয়ের আশা ছাড়ে নি। মা বাবা তো নেই। ধনমাসীমা বলে এক ধনবতী মাসীর পালিত পুত্র। ধনমাসীমা বলেন “জন্মকালে মা-হারা দুর্ভাগারে কে আর মাইয়া দিবো।” আমরা ভাবি আহা, পল্টুদা সাহিত্য ভালবাসে, মিশুকে, পরোপকারী। কেউ না কেউ ভালবাসবেই ওকে। কিন্তু তেমন কেউ দেখা দিল না। ... ...
ঘটনাক্রম জটিল থেকে জটিলতর হয়ে চলেছে, কিন্তু কথায় আছে না: "আশায় বাঁচে চাষা"। আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ব্রিকস দেশগুলির (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) আসন্ন ১৪ তম শীর্ষ সম্মেলন। যে কোনো দেশ, যে আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা সনদ, রোম সংবিধি অনুমোদন করেছে, সে দেশের এখতিয়ারের মধ্যে আসা একজন অভিযুক্ত যুদ্ধপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য। দক্ষিণ আফ্রিকা, এই বছরের ব্রিকস আয়োজক, সে আবার আইসিসির এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সুতরাং, চেপে বসুন দর্শকবৃন্দ, খেলা চালু হলো বলে! ভয় একটাই: জুমা'দের মতো বিশ্বাসঘতকেরা থাকতে আল-বশির'দের আর নাগাল পায় কে? ভাববেন না, আমি আগে থাকতেই কূ গাইছি, আসলে ঘরপোড়া গরু তো, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরাই! ... ...
হইচইয়ের 'মন্দার' নামক এই সিরিজ দেখতে বসে, সমকালীনতা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশই থাকেনা একদম প্রাথমিক কিছু দৃশ্যের পর। দেখা যায় সমুদ্রতীর, দেখা যায় মোটরসাইকেল। দেখা যায় পোলানস্কিসুলভ 'আধুনিক' হিংস্রতা। সিরিজের একদম শুরুতে সমুদ্রতীরে ডাইনি এবং তার চেলা যখন মাছকে গেঁথে ফেলে বর্শায়, সেই দৃশ্যের সঙ্গে পোলানস্কির প্রথম দৃশ্যের অদ্ভুত মিল। আলোর তফাতটুকু বাদ দিলে স্কটল্যান্ড এবং বঙ্গের সমুদ্রতীর একদম এক হয়ে যায় মরা মাছ আর মরা সৈনিকের ছটফটানিতে। ডাইনিদের পদচারণা এবং আচার-অনুষ্ঠানে। পোলানস্কির সিনেমায় ঘোড়সওয়াররা টগবগিয়ে আসে সৈকতে। মন্দারে ঘোড়া নেই, তার জায়গায় আছে মোটর সাইকেল। ধূধূ সমুদ্রসৈকত দিয়ে মন্দার মোটরসাইকেল চালিয়ে যায় পিছনে একজন আরোহীকে নিয়ে। ... ...
বন্দনা মহাকুর, বয়েস ১৫ বছর। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন। হতদরিদ্র বাবা মার ৫ মেয়ে, অথচ গায়ে কাজ নেই। তাই কলকাতায় সব মেয়েকেই কাজে পাঠানো। ছোট মেয়ে বন্দনাকে দমদম শেঠবাগান এর শ্রাবণী সাহা সঞ্জয় সাহার বাড়িতে ২৪ ঘণ্টার বাচ্চা দেখার কাজে দেয় মাস ছয়েক আগে। মাইনে পাওয়ার কথা ছিল পনেরো’শ। কাজে ঢোকার দেড় মাসের মাথায় একবারই কলকাতার বাসন্তি কলোনিতে মেজোদিদির বাড়ি এসেছিল বন্দনা। দিদির সাড়ে চার বছরের ছেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে- একদিনের জন্য। মাইনেও মিলেছে মাত্র একমাসের। একটা মেয়ের পেটের চিন্তা করতে হচ্ছে না তাতেই খুশি ছিল গরীব বাবা মা। কিন্তু গত মাসে হঠাত ফোন, বাবা-মা-দিদিকে ডেকে শ্রাবণী সাহা জানায়, তোমাদের মেয়ে দেড় লাখ টাকার সোনার গয়না চুরি করে তোমাদের দিয়ে এসেছে। ... ...
ডিমানিটাইজেশন বা বিমুদ্রাকরণের যে নীতিটি সরকার আম জনতার ওপর চাপিয়ে দিলেন কালো টাকা উদ্ধারের নাম করে, তার নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রবল আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। অধিকাংশ বিরোধী দল সংসদ থেকে রাস্তায় প্রতিবাদে সামিল। জনগণ অবর্ণনীয় কষ্টের মুখোমুখি। ব্যাঙ্ক কর্মী থেকে লাইনে দাঁড়ানো বৃদ্ধ মানুষ - শহীদের সংখ্যা আশি পেরিয়ে গিয়েছে। ... ...
ইদানিং আরেক পরেশানি হয়েছে মতির এই দলজিৎ সিংকে নিয়ে। ছেলেটার নাম তাই। খুব ভাব এখন মতির সঙ্গে। প্রায়ই আসে এ পাড়ায়। পেছনের গেট দিয়ে সোজা ঢুকে পড়ে মতির আস্তানায়। আঙ্কল আঙ্কল করে পাগল। অবাক হয়ে যায় শক্ত মোটা ভিশতি দেখে। খুঁটিয়ে জানতে চায় কী করে তৈরী হয়। অগত্যা অমলতাসের হলুদ পাঁপড়ির ওপর থেবড়ে বসে মতি খবর দেয় কী করে বকরি ইদের পরে সেরা ছাগচর্ম বেছে নিয়ে তাকে ফোটানো হয় বিরাট লোহার কড়াইতে। তার সঙ্গে মেশানো হয় কিকার গাছের বাকল। এই বাকলের সাপ্লাই আসে অনেক দূরের দেশ আফ্রিকার উত্তরি ভাগ থেকে। বারবার ফোটানোর পর কম-সে-কম কুড়িদিন ভিজিয়ে রাখা হয় ওই কড়াইতে। কিকার-জল থেকে চামড়া যখন তোলা হয় তখন সে আর চামড়া নেই। হয়ে গেছে ইষৎ হলদে মাখনের মত নরম। এইবার আচ্ছা করে মোষের চর্বি ঘষা হয় বাইরে দিকটাকে জলনিরোধক করার জন্য। কিকার-জলের এত গুণ যে সব দূর্গন্ধ, সব খতরনাক জীবানু ধ্বংস করে চামড়াকে একেবারে ঝাঁ চকচকে করে দেয়। শেষে দক্ষ হাতে ভিশতিতে সেলাই পড়ে। ... ...