হিন্দি সিনেমার গান শুনে বাঙালি কেন উলুতপুলুত হয়, আপাতদৃষ্টিতে বোঝা মুশকিল। যে ঘরানার গানের শ্রেষ্ঠ লিরিক নাকি 'মেরা কুছ সামান তুমহারে পাস পড়া হ্যায়', অর্থাৎ কিনা 'আমার কিছু মালপত্তর তোমার কাছে পড়ে আছে' আর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ লিরিক তর্কযোগ্যভাবে 'বিড়ি জ্বালাইলে', অর্থাৎ কিনা 'সিঁড়ির নিচে বিড়ির দোকান', সে গান শুনলে এমনিই ভদ্রজনের মাথা হেঁট হয়ে যাবার কথা। হিন্দি বলয়ের কথা আলাদা, ওদের এরকমই কপাল। ইউপি-বিহারে আধুনিক কালে কোনো জীবনানন্দ জন্মাননি। আর অতীতের গৌরব যা ছিল, সেসব স্টিমরোলার চালিয়ে কবেই ফ্ল্যাট করে দেওয়া হয়েছে। ব্রজবুলি বা মৈথিলির যে মাধুর্য তাকে র্যাঁদা মেরে বাতিল করেই আধুনিক হিন্দুস্তানির বাড়বাড়ন্ত। আর লক্ষ্ণৌ এর যে ডায়লেক্ট গায়ে -কাঁটা দেওয়া ঠুংরি গজল উৎপাদন করেছে একটানা, বাহাদুর শার সঙ্গে তাকে প্রাথমিকভাবে বার্মায় নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। দূরদর্শনের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম এসে তৎসম হিন্দুস্তানি দিয়ে কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিয়েছে। অভাগা হিন্দিবলয়ের অধিবাসীদের দুর্ভাগ্যে তাই খোঁটা দিয়ে লাভ নেই। সবই কপাল। কিন্তু বাঙালিরা কেন "আমার কিছু মালপত্তর (ওহো আহা), তোমার কাছে পড়ে আছে (ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ)" বলে আহা উহু করে বোঝা মুশকিল। ... ...
পৃথিবীটা কখন বদলাল ভাবি। সেটা কি যেই মুহূর্তে নিস্তার ভাইয়ের বোন নুসরা বেগমের পদক্ষেপ পড়েছিল কেশব ব্যানার্জির বাড়িতে তখন থেকে? মনে পড়ল নিস্তার ভাই সেদিন খুব উত্তেজনা নিয়ে দরজা খুলে দিয়েছিলেন, কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন, হয়তো তিনি ভবিষ্যৎ দেখেছেন সেটাই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহাবিশ্বের কার্য ও ফলাফলের মধ্যে একটা সমীকরণ রয়েছে, সেইজন্য আলোর গতির বেশি গতিবেগে আমরা সংকেত আদানপ্রদান করতে পারি না, তাই মহাবিশ্ব নুসরা বেগম হয়ে নিস্তার ভাইয়ের কথায় বাদ সেধেছিলেন, আমার পুরনো পৃথিবীর সমাপ্তি সেখানেই হয়েছে। মহাবিশ্ব ভবিষ্যতে কী হবে সেটা আমাকে জানতে দিতে চায়নি। তাই নুসরা বেগমকে ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে আসতে হয়েছিল। দিনটা কী ছিল মনে করার চেষ্টা করি, ১৯৭৫য়ের ৮ই অগাস্ট। হয়তো নিস্তার ভাই আমাকে শেখ মুজিবের আসন্ন মৃত্যু সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলেন। ... ...
এই বাজারে গুরু নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ এক সামাজিক মাধ্যম। শারদ সংখ্যা পড়তে ঢুকে পড়ুন গুরুতে। আর বেরোবেননা। শরৎ থেকে বসন্ত, বইমেলা থেকে নববর্ষ, জমে উঠুক মোচ্ছব, নজরদারির বাইরে। গুরুর পাতায় পাতায়। এবারের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হবে আগামী কিছুদিন ধরে, প্রতিদিন অল্প কয়েকটি লেখা। পড়তে থাকুন রয়ে সয়ে। ... ...
তাহলে কী নিয়ে লিখবো আমি! কেউ কি বলতে পারবেন কী নিয়ে লিখতে সরকার, রাজনৈতিক দল, মৌলবাদী, জনগণ, স্বাধীনতা পক্ষ-বিপক্ষ সব গোষ্ঠী শান্ত থাকবে? আছেন কি কেউ বুদ্ধি দেওয়ার মতো? হ্যালো... ... ...
"ওই দ্যাখ, খাল পরিষ্কার করার একটা লোক পাঁকে পড়ে আর উঠতে পারছে না," কে যেন চিৎকার করে উঠল। সদ্য ঘুম ভাঙা মুখগুলো অমনি একসঙ্গে ঘুরে গেল কাদাজলে ভরা খালটার দিকে। দু'দিন তুমুল বৃষ্টির পর যেটা কানায় কানায় ভরা আর ময়রার দোকানে সদ্য তৈরি গরম রাবড়ির ট্রে-র ওপর থেকে ওঠা অল্প সাদা ধোঁয়ার মতো যার পুরোটা জুড়ে উঠছে তীব্র দুর্গন্ধের ভাপ। এমনিতেই কেষ্টপুর খালের ধারের বস্তিগুলোর ঘুম ভাঙে অনেক সকালে, কল আর পায়খানার দখল নিয়ে মেয়েদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ঢালু পারে জায়গা প্রচুর, কিন্তু আব্রু নেই। তাই ওখানে কেবল বাচ্চা আর পুরুষ মানুষের ভিড়। ঝগড়াঝাঁটি ক্যালোর ব্যালোর লেগেই আছে। তার ওপর আবার একটা জলজ্যান্ত মানুষ খালে নেমে দ্রুত পাঁকে ডুবে যাচ্ছে, এই নতুন উত্তেজনায় গোটা বস্তি ভেঙে পড়ল খালের ধারে। কারও হাতে নিমডালের আধ খাওয়া দাঁতন, কেউ সেফটিপিন আটকান ব্লাউজের ফাঁকে ঝুলে পড়া মাই চোষা বাচ্চা কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে, সোমত্ত মেয়েরা নজর আটকাবে বলে ব্রা হীন নাইটির বুকের ওপর আলগোছে গামছা ফেলে রেখে ঝুঁকে পড়ে ডুবন্ত লোকটাকে দেখার চেষ্টা করছে। এর মধ্যেই আবার ঘরের খেয়ে বনের মোষ-চরানেরা দৌড়ে গেল পুজো প্যান্ডালের পাশে রাস্তা আটকে ফেলে রাখা লম্বা বাঁশ আনতে। ... ...
পুরো রাজনীতি আজকে দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে পড়েছে। দেশে বলুন বা আন্তর্জাতিক স্তরে, দক্ষিণপন্থী প্রবণতা হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সাহেব থেকে বৃটেনের ব্রেক্সিটওয়ালারা থেকে আমাদের খাঁটি স্বদেশি মোদি সরকার – হক্কলে ভূমিপুত্র রাজনীতির ডালে দক্ষিণমুখী বাসা বেঁধেছেন। আসাম ব্যতিক্রম নয়। আসাম আন্দোলনের সময়ে কিন্তু ছবিটা এরকম ছিল না। বামপন্থীরা হিংস্র জাতীয়তাবাদীর স্রোতের প্রতিকূলে গিয়েছিলেন, নিজের রাজনীতি রাখার ধক দেখিয়েছিলেন। বিনিময়ে পার্টি (সি পি আই, সি পি এম – দুই পার্টিই) বহু কমরেডের শাহাদত স্বীকার করেছিল। আজ বছর চল্লিশ পরে দলগুলোর সেই তাত্বিক বা ব্যবহারিক ক্ষমতা দেখা যাচ্ছে না যে একটা ঠিকঠাক রাজনৈতিক লাইন নিতে পারে। ... ...
কিন্তু, আমরা দেখি আকাদেমির সদস্যদের মধ্যে ভাষাবিদ কেউই নেই। সকলেই প্রায় সাহিত্যিক, কয়েকজন আমলা বা প্রকাশক এবং সাহিত্যিকদের মধ্যেও মাত্র একজন এইমুহূর্তে সরাসরি অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ, ভাষাচর্চার লোক প্রায় কেউই নেই। সাহিত্যিকরা ভাষাকে দিশা দেখাতে পারেন, কিন্তু ভাষার সংস্কার বিশারদদের কাজ। এবং বাংলাভাষা যেহেতু বহুভাষার থেকে পুষ্টিগ্রহণ করে, বিবিধ ভাষার এক্সপার্টদের আকাদেমির প্রথমসারির নিয়ামকের ভূমিকায় থাকার দরকার তা নেই। তাহলে কারা আছেন? যাঁরা আছেন, তাঁরা সকলেই প্রায় সাহিত্যিক, তদুপরি তাঁরা সকলেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ। আকাদেমির চেয়ারম্যান বাংলার বিশিষ্ট নাট্যকার, কিন্তু তিনি তো মন্ত্রীও। তিনি নিরলসভাবে রাজনীতিটিও করেন। আকাদেমির আরেকজন প্রভাবশালী সদস্যের কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, তিনি কবি। ২০১৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান, উৎপলকুমার বসু তখনও সাহিত্য আকাদেমি পান নি। ... ...
আরে, বলতে চাইছেন কী এক্স্যাক্টলি? লকডাউনটা ভুল - এই তো?? এককথায় ঠিক নাকি ভুল - বলা মুশকিল। কিন্তু, তার চেয়েও বড় কথা - বলে আর লাভ নেই। আমরা তো লকডাউনের চতুর্থ সপ্তাহে আছি। লকডাউনই বলুন বা সোশ্যাল ডিস্টান্সিং - তার আর্থিক প্রভাব গভীর। শুধু গরীব লোকই না - আঁচ পড়বে আমার বা আপনার উপরেও - কিন্তু, অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষেরা যেমন ঘোর বিপদে, নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে, আপনি বা আমি ততোখানি নই। লকডাউন ঠিক হয়েছিল, নাকি ভুল - এ নিয়ে আলোচনা করার সময় অনেক পাওয়া যাবে - স্রেফ লকডাউন করে করোনার থাবা থেকে কত লক্ষ বা কত কোটি মানুষকে বাঁচিয়ে দেওয়া গেল, সে নিয়েও হাওয়া গরম করার সময় পরে মিলবে - আপাতত এটুকু নিশ্চিত করা যাক, যাতে লকডাউনের কারণে অনাহারে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত না হতে পারে। ... ...
বাঘটা সুবিধা দিচ্ছে না। এখন জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ডান দিকে তাকাচ্ছে। এখনও গুলি পিছলে যাবার ভয় আছে। আব্দুল ওহাব আবার নিজের পজিশন বদলানোর কথা ভেবে বাদ দিয়ে দেয়। আজকে না পারলে কালকে হবে। কিন্তু উল্টাপাল্টা গুলি করে খামাখা একটা নিশ্চিত শিকার হাতছাড়া করা ঠিক না। এখনও যা বেলা আছে তাতে কাজ শেষ করে বড়ো নদীর ওই পাড়ে খালের ভেতরে দাঁড়ানো মহাজনের ট্রলারে দাঁত-নখ দিয়ে চামড়ার ঠিকানা বলে বেলাবেলিই বাড়ি ফিরতে পারবে। অবশ্য বড়ো নদীতে ফরেস্টারদের সামনা সামনি পড়ে যাবার ভয় আছে। গুলির শব্দ শুনলে টহল বোট নিয়ে তারা হয়ত এদিকে চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্য আব্দুল ওহাবেরও উত্তর মুখস্থ করা আছে। তাকে যদি জিজ্ঞেস করে সে কোনো গুলির আওয়াজ শুনেছে কি না। সে নির্দ্বিধায় উত্তর দেবে- আপনাগের বন্দুকের একটা দেওড় ছাড়া তো আর কিছু শুনিনি ... ...
রোজাভাঃ টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে,সিরিয়ার উত্তরে এবং তুরস্কের সীমান্তে আবদুল্লা অচালানের রাষ্ট্রবিহীন গণতন্ত্র তত্ত্বের ভিত্তিতে গত ৬-৭ বছর ধরে যে অভূতপূর্ব গণতান্ত্রিক পরীক্ষা এবং এক বৈকল্পিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে সে সম্বন্ধে ইতিপূর্বে গুরুর ব্লগে দুটি পর্বে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। আগের লেখাটির সময়সীমা ছিল ২০১২ সালের রোজাভা বিপ্লব শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত – রোজাভা বিষয়ক তৃতীয় পর্ব প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে এবং রোজাভার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের সূত্রে কেবল মাত্র গুরুচন্ডা৯-র পাঠকদের উদ্দেশ্যে ইস্তাম্বুল থেকে রোজাভার ‘বৈকল্পিক’ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটি লেখা পাঠিয়েছেন ‘ইয়াসিন দুমান’। ইয়াসিন দুমান বর্তমানে ইস্তাম্বুলে পি এইচ ডি ছাত্র, কুর্দিশ অ্যাক্টিভিস্ট এবং রোজাভার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত – ইয়াসিন দুমানের লেখাটির অনুবাদ,লেখক পরিচিতি এবং ফুটনোট সহযোগে রইল আপনাদের উদ্দেশ্যে -পাঠক যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন রাখেন ( ইংরাজিতে রাখলে আমাকে কষ্ট করে অনুবাদ করতে হয়না) তাহলে লেখক যথাসম্ভব উত্তর দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা যারা আমাদের বর্তমান সময়ের এই অসাধারণ উচ্চাভিলাষী সামাজিক পরীক্ষা নিরীক্ষা বিষয়ে আগ্রহী তারা এই সূত্রে রোজাভার সাথে একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ,মত বিনিময় গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা রাখি। ... ...
হাজার বছর ধরে ইহুদি পেটানো, পোড়ানো এবং খ্যাদানো এক জনপ্রিয় ক্রীড়ায় পরিণত হয়েছে। যিশু খ্রিস্টকে ক্রুসে চড়ানোর অপরাধের কলঙ্ক ইহুদিদের মাথায় লাগানো রইল। তার ওপরে ইউরোপের গ্রামে গঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় কেউ রটিয়ে দিলো ইহুদিরা খ্রিস্টান শিশুর রক্ত দিয়ে তাদের পুজো আচ্চা করছে (ব্লাড লাইবেল) অথবা তারাই ভয়ঙ্কর প্লেগের (ব্ল্যাক ডেথ) কারণ। আম জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি সোঁটা নিয়ে ইহুদি হত্যায় লেগে গেলো। খুন কা বদলা খুন। নাৎসিরা কোনমতেই এই খেলাটির পেটেন্ট দাবি করতে পারে না। বরং ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার মত আরেকটি নতুন ক্রীড়া উদ্ভাবনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ইংল্যান্ডের প্রাপ্য। জাতি ধর্ম দিয়ে চিহ্নিত করে কি ভাবে একটা গোটা টিমকে রেড কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করা যায় সে খেলা দেখাল ইংরেজ। সিনাগগ বন্ধ হয়েছে, আত্ম পরিচিতির জন্য ইহুদিদের বিশেষ ব্যাজ পরা আবশ্যক (সাড়ে ছশো বছর বাদে নাৎসিরা এঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে)। ... ...
ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রায়ই একটা কথা বলেন। তিনি বলেন, একটা দেশ কেমন তা জানতে হলে, সেই দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে তা জানতে হবে। আমাদের দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে? এখানেই লজ্জায় মুখ লুকাতে হয় সংখ্যাগুরুর। আমারা ভাল রাখতে পারিনি আমার প্রতিবেশীকে। নানা প্রতিবেদন, গবেষণা প্রমাণ করছে যে আমরা কত যত্ন করে দেশের বিশাল একটা অংশের মানুষকে স্রেফ দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। গবেষণা বলছে, প্রায় একটা দেশের মত জমি আমরা দখল করেছি শুধু মাত্র দেশছাড়া করেই! কত চমৎকার না ব্যাপারটা? এই যে পরিস্থিতি – তা হুট করেই তৈরি হয়েছে? আকাশ থেকে নাজিল হয়েছে গজব? সংখ্যাগুরুর পায়ের পাতা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত নানা অনুভূতি। পোশাকে অনুভূতি, জুতাতে অনুভূতি, চোখের দৃষ্টিতে অনুভূতি। পান থেকে চুন খসলে এই সব অনুভূতি আঘাত প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে সংখ্যালঘুর কোন অনুভূতি নাই। পেটে নাই, রক্তে নাই, ঘরবাড়ি কোথাও কোন অনুভূতি নাই। ... ...
-কুল ডাউন বাডি। স্যরি বাঙালি বাবু, তোমার এখনও অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। এই যে এখানে যত লোক দেখছ তার মধ্যে একশও পাবে না তোমার মতো। এরা সবাই বিশ্বাসী। যে কঠিন জীবন এরা কাটায় সেখানে দৈব মহিমায় বিশ্বাসী না হয়ে কোনও উপায় নেই। সো দে বিলিভ ইন মিরাকুলার হিলিং পাওয়ার অব দেবী গডেস ইয়ালাম্মা। ব্যাঙ্গালোরের আইটি হাব কিংবা কলকাতার শপিং মল আমার দেশ নয়। এখানে যা দেখছ, ভালমন্দ মিলিয়ে সেটাই ভারতবর্ষ। তোমার আমার দেশ। -তুমিও কি বিশ্বাস কর বালা? এই কুপ্রথায়? এত অমানবিক...বাচ্চা মেয়েগুলোকে নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলা… ... ...
সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে যেমন ১৪ কিমি দূরত্বের কথা বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চলছে, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফায়েত্তি কাউন্টিতে ১৯৭৯-৮০ সালে ১২৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময়ও স্থানীয় মানুষকে এভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। এমনকি কিছু দিন পরে এর ক্ষমতা বাড়িয়ে ১৬৯০ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করা হয়। ফলাফল সাথে সাথে বোঝা না গেলেও ৬৬ থেকে ১৩০ ফুট উচু বিশালাকৃতি পেকান বৃক্ষগুলো(একধরণের শক্ত বাদাম, কাজু বাদামের মতো) যখন একে একে মরতে শুরু করল ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের হিসেবে ফায়েত্তি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বিশেষত সালফার ডাই অক্সাইডের বিষ ক্রিয়ায় পেকান, এলম, ওক সহ বিভিন্ন জাতের গাছ আক্রান্ত হয়েছে, বহু পেকান বাগান ধ্বংস হয়েছে, অন্তত ১৫ হাজার বিশালাকৃতির পেকান বৃক্ষ মরে গেছে। এবং এই ক্ষতিকর প্রভাব কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এমনকি ৪৮ কিমি দূরেও পৌছে গেছে। ... ...
তিনতলার ঘরে মস্ত বড় পালঙ্কের এক কোনায় বসে যুঁই আপনমনে সরু সরু দুটো কাঁটা আর খুব শক্ত আর সরু একলাছি সুতো দিয়ে নক্সা বুনছিল; একে বলে কুরুশের কাজ, নতুন শিখেছে ও নমিতা, ছোটমাসীমার দেওরের মেয়ের কাছে, বেশ দিব্বি ছোট ছোট কয়েকটা কাপডিশ বসাবার নকশাদার ঢাকনি বানিয়েও ফেলেছে। পুর্ববঙ্গে থাকতে ওরা জানত শুধু উলবোনা, চটের আসন বোনা আর টুকটাক রুমালে সুতো দিয়ে নকশা করা। ছোটমাসীমার নিজের চারটিই ছেলে কিন্তু তাঁর দেওর ভাসুরদের বেশ ক’টি মেয়ে, সকলের সাথেই যুঁইয়ের বেশ ভাব হয়ে গেছে এই কয়দিনে। মাঝে একবার খবর পেয়ে সাঁতরাগাছি থেকে সেজমাসীমা তাঁর বড়ছেলেকে নিয়ে এসে দেখে গেছেন যুঁইকে। কিন্তু তাঁকে কেমন অচেনা লাগে ওর, কিরকম অদ্ভুত ভাষায় কথা বলেন উনি। ছোটমাসীমাদের ভাষাও যুঁইদের থেকে খানিকটা আলাদা, কিন্তু তাও অনেকটাই মিল আছে, কিন্তু সেজমাসীমার ভাষা, উচ্চারণ সব কেমন আলাদা হয়ে গেছে। সেজমাসীমা আসবেন তাই দিদিমণিও এসেছিলেন খড়দা থেকে। দিদিমণি বলেন ‘তুই অ্যাক্করে এদেশী হইয়া গেছস শেফালী, তর কথাবার্তা আর আমরার দ্যাশের নাই’ সেজমাসীমা দিব্বি হেসে কেমন করে বলেন ‘যা বোলোচো মা। অ্যাগদম তোমার জামাইয়ের ভাষায় কতা কইচি।’ ... ...
রোটশিল্ড অফিসে বসে কাজ করছেন অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে। দরজায় কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর দিকে না তাকিয়েই রোটশিল্ড বললেন “একটা চেয়ার টেনে বসুন”। তিনি বসলেন। রোটশিল্ড কাগজ থেকে কিছুতেই মাথা তুলছেন না। অভ্যাগত নিজেকে অপমানিত বোধ করে একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “আমার নাম ব্যারন হারতসবেরগ- গোল্ডবেরগ”। রোটশিল্ড মাথা না তুলেই বললেন, “তাহলে দুটো চেয়ার নিয়ে বসুন”। ... ...
সত্যি বলতে কি, উৎসবের মিষ্টি কিন্তু লৌকিক মিষ্টিগুলোই। লৌকিক মানে যার তেমন বাজার মূল্য নেই। একসময় প্রচুর চলত। এখন পুজোআচ্চার সঙ্গে জুতে গিয়ে কোনও ক্রমে মান বজায় রেখেছে। অথবা ঘরোয়া ভাবে মাঝে মাঝে উদয় হয়ে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। যেমন মালপোয়া। এখন অবশ্য কিছু কিছু মিষ্টির দোকানেও মালপোয়া তৈরি করে। ধানেরও সাধ দেয়। বাংলায় যাকে বলে নল দেওয়া। আশ্বিন মাসের শেষ দিনে ধান জমিতে নল দেওয়া হয়। নল দেওয়া মানে ধানগাছকে সাধভক্ষণ করানো। এই সময়ে ধানগাছে শিস ধরতে শুরু করে। ধানের সবুজ খোলকের ভেতরে তখন সাদা তরল। চাষিরা বলেন, ধানের দুধ। মানে ধানগাছ গর্ভবতী হয়েছে। ধানের সবুজ খোসা যত সোনালি হবে এই দুধ তত শক্ত হবে। শেষে চাল। ধানে দুধ এলেই চাষিরা সাধভক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ... ...
বিমানবাবুরা জামায়েত উলেমায়ে হিন্দের পদাধিকারী বলে সিদ্দিকুল্লাকে সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি মনে করেন। পড়াশোনা করার জন্য বিখ্যাত কমরেডরা ‘জামায়েত উলেমায়ে হিন্দ’ শব্দবন্ধের মানে জানে না, সংস্থাটির ইতিহাস জানে না। চাড্ডিমান্য সংজ্ঞা অনুযায়ী দাড়ি আর টুপি ছাড়া সিদ্দিকুল্লার কোন নেড়েগুণ নাই। অধুনা রাজনৈতিকোচিত হার্মাদপনা, বাটপাড়ি অবশ্যই আছে। তবু, বিমানদা যখন বলেছেন, তখন সিদ্দিকুল্লা জামাতে উলেমায়ে হিন্দের পদাধিকার বলেই সাম্প্রদায়িক। তাই বিমানদার এককাঠি সরেস, নিরেট, একেবারে একটা আস্ত জ্যান্ত পীরজাদা চাই! উলেমায়ে হিন্দ বনাম স্বয়ং শ্রীমান পীরজাদা! ইহা ধ্রুপদী প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। ... ...
মনে করুন সেই ছোট্টবেলার ভূগোল বই – সৌরজগতের ছবি আঁকা। প্লুটো তখন-ও লাইনের শেষে টিমটিম করে দাঁড়িয়ে আছে, আর বাকিরা আগে-পিছে উঁকি মারতে মারতে ঘুরে চলেছে – আমাদের দেখা সৌরজগতের প্রথম ‘মডেল’ এবং বলাই বাহুল্য, সেটিও খুঁটিয়ে দেখলে ‘ভুল’-ই। তবে এক্কেবারে ডাহা ভুল নয়, অন্তত সূর্য তো মধ্যিখানে, তাই না? একটা সময় তা-ও ছিল না, যেমন ধরুন টলেমি আর কোপারনিকাস – টলেমি-র মডেল ‘জিওসেন্ট্রিক’ আর কোপারনিকাসের ‘হেলিওসেন্ট্রিক’। ‘জিওসেন্ট্রিক’ অর্থাৎ পৃথিবীর চারদিকে সূর্য বা অন্য গ্রহ প্রদক্ষিণ করে এমন কথা এখন বাচ্চারাও শুনলে হাসবে। আর বড়দের মধ্যে? সেই এক বিখ্যাত কন্সপিরেসি-থোরিস্ট কে-সি-পাল ছাড়া আর কেউ এ কথা বিশ্বাস করবেন, এমন ভাবনা-ই অসম্ভব, কিন্তু টলেমি নেহাত বোকা বা গোঁড়া মানুষ ছিলেন না। ছিলেন একজন জিনিয়াস! ... ...
রুবির বাঘের নাম শান্তনু। বাঘ যেমন হয়-পেল্লায়, ডোরা কাটা, বিশাল খণ্ড ত ল্যাজ। ভারি বলিষ্ঠ থাবা ঘিরে সাদা নরম রোঁয়া। বিষণ্ণ পোখরাজ চোখ। কানের পিছনে, থাবায় গভীর ক্ষতচিহ্ন। এখন রাত বারোটায় মোড়ের মিষ্টির দোকানের ঝাঁপ বন্ধ - দু ধাপ সিঁড়ির নিচে ভাঙা ফুটপাথ-সেখানে এক ছটাক ঘাসের দখল নিয়ে কাড়াকাড়ি স্ট্রীটলাইট আর জ্যোৎস্নার; দুটো লাল গাড়ি পর পর পার্ক করা। মিত্র সুইটস আর গাড়ির মাঝখানে ঐ জ্যোৎস্নার ওপর হিসি করছিল শান্তনু - আকাশের দিকে মুখ, সামনের দুপায়ে শরীরের সম্পূর্ণ ভর, পিছনের পা ভাঁজ করা এবং লম্বা ল্যাজ মাটির সঙ্গে সমান্তরাল-ওর পিঠের ডোরা এই মুহূর্তের চাঁদের আলোয় সিপিয়া আর সাদা। রুবির হাতে একটা বড় কালো চাদর ভাঁজ করা; সে শান্তনুর পিঠে হাত রেখে সটান দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছিল। রুবি যেন এক বন্ধ দরজার পাল্লা-যার আড়ালে বসে, প্রকৃতির ডাকে নিশ্চিন্তে সাড়া দিচ্ছিল শান্তনু- ঝাঁঝালো বুনো গন্ধ সিঁড়ির ধাপ বেয়ে পৌঁছোচ্ছিল মিত্র সুইটসের সাইনবোর্ড অবধি, ঘাসের ওপর চাঁদের আলো তরল আর হলুদ হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশঃ। ... ...