তখনই সবাই জানতে পারে যে, এই দু’মুখো যন্ত্রটি আদতে ফরেনের মাল। সাগরবালার শ্বশুর অর্থাৎ অজাত ফরেনের বাবা ফরেন শব্দটির ধ্বনিমাধুর্যে বিমোহিত হয়ে পড়ে। খেতে নিড়ানি দিতে দিতে, পিঠের দাদ চুলকোতে গিয়ে, এমন কী রাতে বিছানায় তার বউ মালতীকে সোহাগ করার সময় ফলুই বর্মন ‘ফরেন’ শব্দের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়। শব্দটি নিয়ে সে মুখের ভেতরে এধার ওধার করে। তখন ধানের গোছ, দাদনিসৃত রস ও মালতীর শরীরের উষ্ণতা পার হয়ে সে নতুন এক রকম সুখ টের পাচ্ছিল। মালতী সন্তানসম্ভবা সে ঠিক করে ব্যাটাছুয়া যদি জন্মায়, তবে তার নাম হবে ফরেন বর্মন। বিশেষত তার নিজের নাম ফলুই হওয়ায় ‘ফ’-এর বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এ-ও ঠাকুরের এক লীলা। ... ...
বিগত উনিশটি কিস্তিতে বর্ণিত রসিকতার বেশির ভাগ বক্তা, নায়ক বা খলনায়কের নাম আমাদের অচেনা। কোন গল্পটা কে যে কাকে বলল তা কারো জানা নেই। সবটাই মুখে মুখে প্রচলিত, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ঘরানার মতো। তার ওপর কখনো রঙ চড়ানো হয়েছে, স্থান কাল পাত্র বদলে গেছে। সঠিক ফ্যাক্ট চেকিঙ্গের কোন উপায় নেই। তাতে অবিশ্যি স্বাদের কিছু ক্ষতি বৃদ্ধি হয় নি। কৌতুকের কোন তকমা লাগে না। ... ...
শুরুতেই একটা কথা বলে রাখা ভাল, যে, তার শিল্পগত দিক নিয়ে এখানে একটি কথাও বলা হবেনা। এখানে মূলত চাহিদা, যোগান ইত্যাদি গোদা ব্যাপার নিয়ে কথা হবে। কারণ, যদিও ‘মান’ পড়ে যাবার জন্য অনেকে সিরিয়াল নির্মাতাদের দোষ দেন, অনেকে সৃষ্টিশীলতার অভাবের কথা বলেন, তার কিছু বাস্তব ভিত্তি থাকাও খুবই সম্ভব (আবার নাও থাকতে পারে), কিন্তু মনে রাখা দরকার, যে, যতই শিল্পের তকমা দেওয়া হোক, আর পাঁচটি পণ্যের মতই, টিভি সিরিয়ালও একটি পণ্য। ঠিক কেমন মাল বানাতে হবে, এ নিয়ে টুথপেস্ট বা গাড়ি কোম্পানিরা যেমন বিস্তর গবেষণা করে একটি পণ্য বাজারজাত করে, টিভি সিরিয়ালের ক্ষেত্রেও অবিকল তাই। ... ...
আজ থেকে বছর পঁচিশ আগেও মফস্বল শহরগুলো অন্যরকম ছিল। তখন সাজগোজ বলতে চোখের তলায় কাজল, হাল্কা লিপস্টিক আর কপালে টিপ। প্রায় সব কিশোরীরই তখনও লম্বা ঢালা চুল থাকত। ভেজা চুলের নিচের দিকে আলগোছে বিনুনী বেঁধে তারা ইশকুলে যেত। মায়ের অত্যাচারে অথবা কারো কারো ক্ষেত্রে নিজের শখেই মুসুরডাল বাটা কি দুধের সরের প্রলেপ পড়ত মুখে মাঝেসাঝে। এর চেয়ে বেশি কেউ করতও না। যারা করার কথা ভাবত তাদের যেন একটু দূরেই সরিয়ে রাখা হত। যে রূপচর্চা করে তার লেখাপড়ায় মন নেই এমন নিদান দেওয়া একেবারেই বিরল ছিল না। আমার জীবনও এভাবেই চলছিল। পরিবারের সদ্য বিয়ে হয়ে আসা যুবতীটির নিখুঁত ভ্রূযুগল দেখে কখনও হয়ত ইচ্ছে জাগত নিজেরটিও অমন হোক। কিন্তু সে ইচ্ছা আর বাস্তবের মাঝে "সাজগোজে মন চলে গেছে, এর আর লেখাপড়া হবে না" জাতীয় মন্তব্যের উঁচু দেওয়াল থাকত। তখন ভাবতাম, শুধু মফস্বলের বাংলা মিডিয়ামেরই বুঝি এমন কপাল পোড়া। কলকাতার কলেজে পড়তে এসে বেশির ভাগ সহপাঠিনীর অসংস্কৃত ভুরু দেখে সে ব্যাথার খানিক উপশম হল। লম্বা বিনুনী, তেলতেলে মুখ, এবড়োখেবড়ো ভুরু আর লোমশ হাত-পা নিয়েই কলেজ জীবন পেরিয়ে গেল। এমনকি প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রেও এই অমার্জিত রূপ বিশেষ বাধার সৃষ্টি করেছিল সেরকম খবর নেই। ... ...
২০১৯ সালের ২১শে জুন, আমার ছেলের মৃত্যুর দু-ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ মিডিয়াকে জানায় যে তারা এই মৃত্যুতে মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখছেনা। আমার ছেলে পাশের বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঐ বাড়ির অ্যাকসেস আমার ছেলের ছিলো না। ছাদে যেতে গেলে আলাদা অ্যাকসেস লাগে। আজ অবধি পুলিশ আমাকে জানায়নি কে আমার ছেলেকে ছাদের দরজা খুলে দিয়েছিলো। ছাদে একটা সুইমিং পুল আর জিম আছে, দুটোই বড়োদের জন্য। সেই দিনটা শুক্রবার ছিলো, সময়টা গ্রীষ্ম। একটা গোটা বছর ধরে পুলিশকে চাপ দিয়ে যাওয়ার পর জানা যায় ছাদে একটি পরিবার ছিলো, যাঁরা পুলিশের কাছে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলো। কিন্তু পুলিশ আমাকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছে না। ঐ বাড়িতে বা আসেপাশে বাড়িতে থাকা বেশ কিছু লোক আমার ছেলের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। পুলিশ তাঁদের কারোর স্টেটমেন্ট নেয়নি। ... ...
জ্যাক কিংএর গল্পটাই ধরুন। জ্যাক কেমিক্যাল এঞ্জিনীয়র। বহু বছর পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে সম্মানের চাকরি। তারপর সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিংএ যোগ দেওয়া। সমস্যার সূত্রপাত তখনই। জ্যাক কোস্টাল ওয়াটার সংরক্ষণের রিপোর্ট দাখিল করলেন ক্যাবিনেটে। রিপোর্টে পোর্ট পিরির লেড স্মেল্টারটিকে ভারি ধাতু দূষণের দায়ে সাব্যস্ত করলেন জ্যাক। ক্যাবিনেট থেকে নির্দেশ এল পোর্ট পিরির যাবতীয় রেফারেন্স অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার। অথচ ততদিনে সি এস আই আর ও র বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন লেড স্মেল্টারের ভারি ধাতু কিভাবে মারাত্মক ক্ষতি করছে সে অঞ্চলের জীবজগতের। বলাই বাহুল্য, কিং তাঁর মত থেকে একচুলও বিচ্যুত হ'লেন না। বরং মন্ত্রী, আমলাবর্গের কাছে বারংবার দরখাস্ত করে যেতে লাগলেন। কোনোরকম সাড়া না পেয়ে, বাধ্য হয়ে মিডিয়ায় গেলেন কিং। অর্থাৎ ফুঁ পড়ল বাঁশিতে। সঙ্গে সঙ্গে কিংএর পোজিশন 'রিডানড্যান্ট। এরপর সেই এক গল্প- মানসিক রোগীর তকমা সেঁটে দিয়ে চাকরিটি কেড়ে নেওয়া। ... ...
তা, চিত্রাদি তো দুই হাত নেড়ে “কাট কাট” বলতে বলতে হেলেদুলে এসে ধাঁই ধপ্পাস করে একটি চেয়ারে বসলেন, চেয়ারের অসহায় প্রতিবাদ ও মেয়েদের নীচু গলায় সম্মিলিত হতাশার শব্দ একসঙ্গে শোনা গেল। আর অন্যদিক থেকে ছাত্রীদের উপস্থিতি ভুলে গিয়ে ভীষণ গনগনে মুখে তেড়েমেড়ে উঠলেন পরিচালিকা অপর্ণাদি – “আপনি কাট কাট বলে হঠাৎ এইরকম চ্যাঁচালেন কেন ? দিব্যি হচ্ছিল তো” “দিব্যি হচ্ছিল? অই অর্জুন গানের সঙ্গে এত এক্সপ্রেশন দিচ্ছিল কেন? বেজায় ওভার অ্যাকটিং তো। রোজ বলি,আমি চাই সংযত,সুন্দর অভিনয় –” “অর্জুন কোদ্দিয়ে এল? সে তো চিত্রাঙ্গদায় ছিল, গতবছর হয়ে গেছে। তাসের দেশে অর্জুন?” ... ...
অনেক দূরের একটি নক্ষত্র, যার আলো আর তাপ সে একদা খুব ভালোবাসতো, আর এখনো সে শীত বুঝলে সেই আলো আর তাপের কাছে ফিরে ফিরে যায়, যদিও অনেক কাল খুব একটা দেখাশোনা নেই। এইমাত্র সেই নক্ষত্রপতনের শব্দ হল। লোকটার মন খারাপ লাগছে। তার বেঁচে থাকার টুকরোটাকরা দিয়ে তাই সে লিখে ফেলছে আবোলতাবোল। সেই সব দিনগুলি-রাতগুলির কথা, যাদের মধ্যে একদা সেই নক্ষত্রের আলো, আগুন আর জলের ছাপ পড়েছিল। ... ...
অসাম্য, হিংসা, জাতি-লিঙ্গ দ্বেষ রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থায় কম নেই। বস্তুত রাষ্ট্রীয় ন্যায় প্রতিষ্ঠাই করা হয় ‘পুলিশ’ নামক হিংসা সংগঠনটির মাধ্যমে। রাষ্ট্রের বিচার ব্যায়বহুল, নিম্নতর পুলিশ থেকে উচ্চতম প্রধান বিচারপতি সকল পেশাজীবীর জন্য রাষ্ট্র যা ব্যয় করে তা সাধারণ মানুষের কাছে অকল্পনীয়। প্রশান্ত ভূষণের এক টাকা জরিমানার পিছনে দেশের মানুষের কয়েক লক্ষটাকা নিশ্চিতভাবে খরচ হয়েছে আদালত-পদ্ধতিতে। ... ...
বৈজ্ঞানিকদের পুর্ব-লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে বিশেষ কাজে লেগেছে। সেগুলো হল – (১) করোনা ভাইরাসের দেহের স্পাইক প্রোটিনের ভূমিকা সম্বন্ধে আগাম ধারণা থাকা, (২) ইমিউনিটির ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে “নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি”-র ভূমিকা, (৩) নিউক্লিক অ্যাসিড (যেমন আরএনএ বা ডিএনএ) ভ্যাক্সিন প্ল্যাটফর্মের উন্নত চেহারায় বিবর্তন এবং (৪) ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়াকে ধাপে ধাপে (sequentially) করার পরিবর্তে সমান্তরাল ভাবে (parallel) করা, কিন্তু যারা ভ্যাক্সিন স্টাডিতে অংশগ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে কোন ঝুঁকি না নিয়ে। পূর্বোল্লেখিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে – “কার্যকারিতা কেবলমাত্র তখনই নির্ধারণ করা যাবে যখন যাদেরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে এবং অতিমারির হটস্পটের মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার (match) করা যায় ... এজন্য প্রাথমিক এন্ড পয়েন্টগুলোকে সতর্কতার সাথে নির্বাচন করতে হবে (এ বিষয়ে এর আগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি), নির্বাচন করতে হবে স্টাডি-ডিজাইন এবং স্যাম্পেল সাইজের (অর্থাৎ কতজনের ওপরে ট্রায়াল দেওয়া হবে) সম্ভাব্যতার পুনর্মূল্যায়ন বিবেচনায় রাখতে হবে।” ... ...
আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ আগমনের কয়েক ঘন্টার মধ্যে লিখে ফেলা এই প্রতিবেদনের সঙ্গে রামধনির খারিজ হওয়া বয়ান হুবহু মিলে যায়। এই মিল আপতিক বা সাজানো হওয়া কঠিন, কারণ সংবাদপত্রের প্রতিবেদকের পক্ষে বহুদিন পরে রামধনি আদালতে গিয়ে কী বলবেন সেটা আন্দাজ করা অসম্ভব। যেটা সম্ভব, সেটা হল, রামধনি হয়তো আদালতে সত্যি কথাই বলছিলেন। এটি অবশ্য একটি সম্ভাবনাই, কিন্তু সেটা ফেলে দেবার মতো নয়। এবং আদালতে সংবাদপত্র প্রসঙ্গটি আসেইনি। রক্তের দাগের প্রসঙ্গটি অবশ্য এসেছিল। হাইকোর্টে ধনঞ্জয়ের কৌঁসুলী প্রশ্ন তোলেন, যে, এই নৃশংস খুনের(হেতালের শরীরে ২১ টি আঘাত ছিল) পরেও কোনো সাক্ষীই কেন ধনঞ্জয়ের হাল্কা রঙের জামাকাপড়ে কোনো রক্তের দাগ দেখতে পায়নি? সরকারপক্ষের আখ্যানে এর কোনো উত্তর নেই। বিচারক রায়দানের সময় এই ধাঁধার সমাধান করেন এই ভাবে, যে, যেহেতু খুনের আগে ধর্ষণ হয়েছে, তাই খুনের সময় ধনঞ্জয়ের শরীরে জামাকাপড় ছিলনা। এবং সেখানে রক্তের দাগ লাগার তাই কোনো প্রশ্নই নেই। ... ...
সবটাই দামোদর নদের বালি উত্তোলন নিয়ে। ও হলো সোনার খনি। তিনি এক ব্যবসায়ীকে নিষিদ্ধ করেছেন চিঠি দিয়ে, সেই ব্যবসায়ী দিন পনের বাদে গাড়ি হাঁকিয়ে আমাকে এসে বলছেন, স্যার বলে পাঠালেন, কাগজপত্র, চালানে সই করে আমার কাজ শুরু করিয়ে দিতে। বললাম, স্যার চিঠি দিয়ে বন্ধ করেছেন, স্যার চিঠি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা রহিত না করলে তো আমি কোনো চালানে স্বাক্ষর করতে পারব না, লিজ অর্ডার দিতে পারব না। যাদব মশায় জোরাজুরি করতে লাগলেন। তিনি আমাকে হঠাৎ বলেছিলেন, আপনার বই কী বেরুলো স্যার, কত কপি ছাপা হয়, আমি কিনিয়ে নিবো। অপমানিত লেগেছিল। স্যরি। আপনি নিজেই তো বাংলা পড়তে পারেন না, আমি অফিসে বই বেচতে বসি না। তিনি না পেরে আবার জেলা সদরে ছুটলেন। বলে দিলাম, লিখিত অর্ডার যেন তিনি না নিয়ে আসেন। অফিসিয়াল চিঠি যেভাবে আসে, সেই ভাবেই আসে যেন। স্যার অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, তাঁর পাঠানো ব্যবসায়ীকে আমি প্রত্যাখ্যান করায়। ... ...
নড়াইলে লোহাগড়া সাহাপাড়ায় গত শুক্রবার( ১৫ জুলাই, ২০২২) পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়িঘর, দোকানপাট এবং মন্দিরে হামলা করেছে ধর্মান্ধরা। কারণ? কোন কারণ যদিও লাগে না, এবারও তেমন কোন কারণ নাই। শুক্রবার জুম্মার নামাজ এখন ভিন্ন ধর্মালম্বীদের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে যাচ্ছে। জুম্মার নামাজের পরে হুট করেই তাদের নজরে আসে যে ধর্মের তো প্রচণ্ড অপমান হয়ে গেছে, মান উদ্ধার না করলেই না! তারা মান উদ্ধারে নেমে গেছিল বিকালের মধ্যে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কেউ অনুভূতিতে আঘাত করেছে আর সেই আঘাতে কাতর হয়ে এরা গিয়ে নিরপরাধ মানুষের বাড়িঘরে হামলা করেছে! এবং, তাদের ধারণা এতে ধর্মের যে ক্ষতি হয়েছিল তা পূরণ হয়ে গেছে! ... ...
আগুনের আঁচে কিম্বা গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে নষ্ট হল আরও অন্তত কুড়ি-তিরিশখানা ছাউনি এই উপরে বলা সম্পূর্ণ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া দোকান ছাড়াও। সবই নানা রকমের খাওয়ার দোকান। মিষ্টি- ইডলি-দোসা- চা- আখের রস- চাওমিন- শরবৎ এই রকমেরই আর কি। দোকানিদের অধিকাংশই স্থানীয় মানুষ। হাতে গোনা কয়েকটা দোকান চালান বিহার এবং উৎকলবাসীরাও। বাঁশের এবং সরু কংক্রীটের স্তম্ভের ওপরে দরমা-পলিথিন শীট দিয়ে ঢেকে তৈরি এই দোকানগুলো ছিল বেশ কিছু চাকুরের নিত্য প্রয়োজনীয়তা এবং তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে অন্তত দোকানপিছু একটা বা দুটো পরিবারের জীবিকাও। ... ...
ক্লাস টেনে পড়ার সময়ে বরানগরের স্কুল থেকে বীণা সিনেমায় টেন কমান্ডমেনটস সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইংরেজি প্রায় কিছুই বুঝিনি ; দুর্দান্ত সব সিনারি মনে থেকে গেছে। বাইবেলের সঙ্গে সেই আমার প্রথম পরিচয়। সে কথা দাভিদকে বলার মানে হয় না। এই গ্রন্থের যে নতুন পুরনো দুটো আলাদা খণ্ড আছে জানি কিন্তু কিছু মানুষ কেবল প্রথমটা পড়েন,দ্বিতীয়টা পড়া মানা আর কিছু মানুষ দুটোই পড়েন সেটা জানতে বহু বছর লেগে গেছে। জ্ঞানোদয় হলো এক ইনটার ব্যাঙ্ক কুইজ কনটেস্টে। আমার দলে গুরকান এন্সারি, তুর্কি এবং জশুয়া কোহেন। একটা প্রশ্ন এলো – যিশুর ভাইয়ের নাম কি? জশের সাহায্য খুঁজলাম। সে বললে বস, আমি তো কেবল আমাদের বাইবেলটা পড়েছি! অন্যটা নয়! ... ...
যা বোঝা যাচ্ছে, অনুশাসনের সময় ক্রমে আসিতেছে। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই অনির্দিষ্টকালের জেলবাস। কার্টুন আঁকলেই একরাত্রি হাজতযাপন। পুলিশেরও রেহাই নেই। অনুমতি ব্যতিরেকে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো, ধর্ষণকে ধর্ষণ বললেই সিধে ব্যারাকপুরে ট্রান্সফার। অনেক অকর্মণ্য অপোগন্ডোই কদিন আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় দুটো শিং এঁকে আর মুখে দুটো শ্বদন্ত এঁকে ফেসবুকে সেঁটে দিয়ে অপার আনন্দ লাভ করছিলেন, আর এতদ্বারা কী প্রমাণিত হইল, জিজ্ঞাসা করলেই বুক ঠুকে বলছিলেন "পেইড ব্যাক ইন হিজ ওন কয়েন"। তাঁদের ফুর্তির দিন শেষ। ... ...
তা এই বাড়ির কোনকিছুই ওর নিজস্ব মনে হয় না, হয়ও নি কোনোদিন। আর শুধু বাড়ির কেন, এই পৃথিবীতে কোথায়ও কি ওর নিজস্ব কিছু আছে আদৌ! চাকরিটা বাবার জন্য শুরু করতে হয়েছিল, বিয়ের পরেও ছাড়তে পারে নি রমেনের জন্য। দাদার জন্যই লাইব্রেরীর চাকরি করেও পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক সঙ্ঘের হয়ে গণসঙ্গীত গেয়ে নাটক করে বেড়াতে পেরেছে। সেইটুকুই ছিল ওর নিজের আনন্দে বাঁচা। বাবা মায়ের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতো দাদা। সেই দাদাটাও অমন করে চলে গিয়ে পম্পাকে একেবারে শূন্য করে দিয়ে গেল। সেই যে ওর বুকের মধ্যে একটা আস্ত মরুভূমি ঢুকে গেল, সে কেবলই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একটু একটু করে প্রাণরস শুষে নিয়ে ওকে এমন তব্দাধরা কাঠের পুতুল বানিয়ে দিল। ফুলশয্যার রাত থেকে রমেন হিসহিস করে বলত ‘দ্রৌপদী! দ্রৌপদী এসছে আমার ঘাড়ে!’ পম্পাকে ব্যবহার করত ঠিক বাথরুমের মত। ওই করেই দুই ছেলে হল দেড় বছরের তফাতে। ... ...
যারা ভাবছেন, বিয়ের অধিকার না পাওয়া গেল তো কী এসে গেল, ইকুয়াল ডোমেস্টিক পার্টনারশিপ তো দেওয়াই হচ্ছে, তাদের জন্য একটা ছোট্ট সওয়াল। ধরুন কোন স্কুলে বলা হল, সবাইকে সমান ভাবে পড়ান হবে, একভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, খাতা দেখা হবে, শুধু খাওয়ার জলের কলটা ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা হবে, মেনে নেবেন? জল একই থাকবে, শুধু কলটাকে সবুজ রঙ করে দেওয়া হবে? জানি আপনি মেনে নেবেন না, কেননা আপনি যদি মেনে নেওয়ার দলের হতেন তা হলে এই লেখাটা এতদূর পড়তেন না। দিনের শেষে সাম্যের অধিকার এক মৌলিক অধিকার, যে অধিকারের প্রশ্নে আপোষ করা চলে না। ... ...