২০ বছরে কিছু পাল্টালো কি? সেদিন একটা বড় কাগজ জনমত নির্ধারণের চেষ্টা করত, আজ করে অনেকগুলো গণমাধ্যম। জনতা কি পুরোটাই এর পিছনে দৌড়ে বেড়ায়? না। একটুও কি প্রভাবিত হয় না? হয় নিশ্চয়। তবু, বয়স আমার, তোমার এবং সবার মুখের রেখায় ত্রিকোণমিতি শেখায়, এস, আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ত্রিকোণগুলোর কৌণিক পরিমাপগুলো করার চেষ্টা করি, পুরোটা সম্ভব হবে না জেনেও। চিনি আর বোঝার চেষ্টা করি মম চিত্তে শিলাদিত্যের স্রষ্টাকে.. হ্যাঁ, ওটাই আমার এখনকার রিং টোন। আজ বিশে আগস্ট, দুহাজার বারো। আঠারো বছর আগে, সুমনের জন্যে কোমরে রিভলভার তুলেছিলাম, ব্যস্ত মফস্বলের দিন দুপুরে, ওরা সুমনকে মারবে বলেছিলো, আমাদের অর্গানাইজ করা সুমনের প্রোগ্রামে। ছ ঘরা। দেশি। খুব রিস্কি। সুমন জানতেন না। আজও জানেন না। তখনো আমাদের স্বপ্ন দেখার কাল শেষ হয়নি, যদিও জেনে যাচ্ছি যে এ রাজনীতির গোলকধাঁধা থেকে বিপ্লব বেরবে না। কিন্তু তবু স্বপ্ন দেখছি, কেন না জেনে গেছি, ‘অন্ধকারের তবু আছে সীমানা’। ... ...
মালতীর বাড়ীতে এক তুতো দিদির বিয়ে। বিয়ে বাড়ীর লাখো কথা, হট্টগোল, খাওয়া-দাওয়া, আত্মীয়-কুটুম সে এক এলাহি ব্যাপার! কিন্তু সব ছেড়ে মালতীর চোখ পড়ল দুটো জিনিসে। প্রথমতঃ বিয়ের সব দায়িত্ব দিদির বাবা-মা’র অথচ বিয়ের কার্ডটি বাড়ীর এক অনুপস্থিত দাদুর ( বাবার জ্যাঠামশায়ের ) নামে। আশ্চর্য এই কারণে যে যৌথ পরিবার হলেও নাহয় কথা ছিল – কিন্তু সেসবের পাট চুকেছে বহুদিন আগে। এখন সব যার যার নিজের সংসার। তাই দিদির রোজকার খাওয়া-ঘুম-পড়াশোনার দুনিয়ায় তিনি কোথায়? অথচ এটাই নাকি নিয়ম! আর সেই প্রসঙ্গে শোনা গেল, দিদিকে সম্প্রদান করবেন দিদিরই আরেক প্রবাসী জ্যেঠু। এ তো আরও বড় অনুপপত্তি! ... ...
সব চরিত্র কাল্পনিক দেখে এক সময় আমায় বোঙায় ধরেছিল। সে কথা এই মায়াপাতার লোকজন কিছু কিছু জানেন। তারও আগে রেইনকোটের ভেজা বিষাদ। কিম্বা দোসর-এর সেই সাদা -কালোর নিষ্ঠুর মায়া। মৃত্যু-অপ্রেম আর ভালোবাসার বেঁচে থাকার গিঁট-পড়া কাটাকুটির মধ্যে বিষাদ তার থাবা নামাচ্ছে। বিষাদ, স্নেহময় , তার নখ বসাচ্ছে।কর্তব্য,পূর্বনির্ধারিত। পৃথিবীর কোনো গানের সুর-কোনো জলের স্বাদ,পাতালের কোনো ভোগবতীর ধারা, ফলের রসালতা, পৃথিবীর কোনো ওষুধ, কোনো অ্যালপ্রাজোলাম-ফ্লুওক্সেটিন-সিটালোপ্রাম এই মহৎ বিষণ্ণতার শালপ্রাংশুমহাভুজ শরীরে একটি আঁচড়ও কাটতে পারে না। এই বিষণ্ণতার রাস্তা ধরে ঐ তৃতীয় মানুষটি হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছেন। পাহাড়ী রাস্তার মেঘ-কুয়াশা-তিস্তাজলের মধ্য দিয়ে। সখী হাম মোহন অভিসারে যাঁউ... ... ...
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। মহাবিজ্ঞানী। কিন্তু মানুষটি কেমন ছিলেন? ১৯২২-২৩ সালে এশিয়া-আফ্রিকায় ভ্রমণকালে তিনি যে ডায়েরি লিখেছিলেন তার পাতায় পাতায় মেলে অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য। ২০১৮ সালে এ ডায়েরি প্রকাশিত হয়েছে বই হয়ে। পড়লেন চিকিৎসক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। ... ...
প্রতি সন্ধেবেলা যখনই অফিসফেরতা বাসটা ঠাকুরপুকুর ছাড়িয়ে ডানদিকে বাঁক নেয় ত্রিদিবের আজকাল পেটের ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে ভয় পাকিয়ে উঠতে থাকে। তার মনে হয় কলকাতার সভ্যতা থেকে এবার সে আদিম অন্ধকারের রাজ্যে প্রবেশ করছে। তার নতুন কেনা ফ্ল্যাট হাঁসপুকুর ছাড়িয়ে এক অনন্ত নিঃসীম মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে নিঃঝুম হয়ে। চারদিকে ঘাপটি মেরে থাকা অন্ধকার লাফিয়ে পড়তে চায় সুযোগ পেলেই। সেই অন্ধকারকে টর্চের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা করে দিয়ে দুই পাশের মজা পুকুরের মধ্যেকার সরু রাস্তা দিয়ে পাঁক কাদা আর সাপখোপ এড়িয়ে সন্তপর্ণে মেন গেটের দিকে এগিয়ে যেতে হয় । এই নতুন ফ্ল্যাটের পেছনেই লুকিয়ে রয়েছে গণ্ডগ্রাম। মরা ঝোপ, বুনো জংগল, ক্ষেতের জমিতে সিমেন্ট ফেলে তার ওপর মাথা তুলছে প্লাস্টিক কারখানা, খোলা মাঠের এখানে ওখানে শ্বেতীর মতন জমাট বেঁধে টুকরো টুকরো বাড়িঘর, কলাবন, অবৈধ খাটাল। কলকাতার দিকে কিছুটা এগোলে ঠাকুরপুকুর বাজার। কিন্তু এইদিকটায় বড়ই নির্জন। সন্ধ্যে হয়ে গেলে শুধু টিমটিম করে মোবাইল রিচার্জের দোকান, চায়ের গুমটি অথবা ম্যাড়ম্যাড়ে মুদীর দোকানের আলো জ্বলে। মাঝে মাঝে রাস্তা কাঁপিয়ে বাস বা ট্রেকার চলে যায় গুম গুম করে। এই ধু ধু প্রকৃতির মধ্যে রিয়েল এস্টেট বানাবার কথা সমাদ্দার ছাড়া আর কেউ ভাবতেই পারত না। ... ...
সকাল সকাল দুজন উঠোনে শুয়ে। এক বৃদ্ধ, এক কিশোরী। পুবদিক থেকে এক টুকরো এবড়ো-খেবড়ো বাঁজা জমি বিপুল উৎসাহে উঁকি দিয়ে দেখতে চেষ্টা করছিল, কিন্তু এক গাঁ মানুষের কাঁধ ছাড়িয়ে মাথা তুলতে পারেনি। অবশ্য নতুন করে দেখার কী বা আছে তার? দেখা ছাড়া তার জীবনে আছেই বা কী? বর্ষা যায়, শরৎ যায়, তার শরীরে কেউ লাঙল দেয় না। আগাছা বুকে নিয়ে সারা দিনমান সে হাউ হাউ চেয়ে থাকে দূরের ধানক্ষেত সর্ষে ক্ষেতের দিকে। ক্রমশ গরু-বাছুর ফিরে গেলে তার বুক মাড়িয়ে সন্ধ্যা হেঁটে যায়। কাঁটা উঁচিয়ে রাত্রির বাড়ি ফেরা দেখে একমাত্র বামন খেজুর গাছটা। তারপর সেও ঘুমিয়ে পড়ে। মাঠ জেগে থাকে। সারারাত দেখে আর শোনে। পাশের বাড়িতে সবুজ কপাটওয়ালা দরজা বন্ধ করে রাত ফিসফিস করে। ... ...
পুলওয়ামা বিস্ফোরণ পরবর্তী সময়ে দাঁড়িয়ে দেশজুড়ে যে জিঙ্গৈজমের রবরবা, তা যে মব মানসিকতা সেকথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। যে চারাগাছে গত কয়েকবছর সারজল পড়েছিলো নিয়মিত, আজ তা মহীরূহে পরিণত। সেই একই রেটরিক, যুদ্ধ চাই যুদ্ধ চাই চিৎকার, সেই ইশকুল-কলেজ-অফিস ফেরত ভারতবাসীর আইপিএলসুলভ আবাল মস্তি নিয়ে যুদ্ধের গজল্লা ---কিচ্ছু পাল্টায় নি। যেমন পাল্টায়নি কাশ্মীর নিয়ে মানুষের সীমাহীন অজ্ঞতা, যদিও গুরুচন্ডা৯ প্রকাশিত কাশ্মীরের প্রথম সংস্করণ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় কীই বা লেখা যায়? আমার জানা নেই কোন ভাষায় লিখলে, কোন শব্দ ব্যবহার করলে মানুষকে অন্য মানুষ সম্পর্কে সচেতন করা যায়। ... ...
জনপ্রিয় ধারণায় রাম-রামায়ণ-বাল্মিকীরে কৃষ্ণ-মহাভারত-দ্বৈপায়ন থাইকা প্রাচীন ভাবা হইলেও ঘটনা কিন্তু ঠিক উল্টা। এর পক্ষে পয়লা জোরালো যুক্তিটা হইল দক্ষিণ দিকে আর্যগো ভারত-বিস্তারের কালক্রমের লগে দখলি-মানচিত্রের হিসাব। মহাভারতের ঘটনাস্থল থাইকা রামায়ণ ঘটনাস্থল আরো বহুত পূর্ব দিকে। আর্যগো দক্ষিণ দিকে পা বাড়াইবার ঐতিহাসিক সময়কাল মাথায় রাইখা রমিলা থাপারও মন্তব্য করেন যে রামায়ণ তৈরি হইছে ৮০০ খিপূর অন্তত পঞ্চাশ থাইকা একশো বছর পরে। মানে সাড়ে সাত থাইকা সাতশো খিপূর দিকে... ... ...
দেবতাদের মধ্যে সমযৌনতা খুব একটা অপ্রচলিত নয়, যদিও অনেক সময় এগুলি সঙ্গমের চিত্র বহন করে না, বরং আচারে প্রকাশ পায়। অগ্নি অন্য দেবতার বীর্য গ্রহণ করে। যদিও তিনি স্বাহার স্বামী, তিনি সোমের(চাঁদ) সঙ্গে রমণ করেন, কেননা তিনি মুখ দিয়ে পৃথিবীর উৎসর্গ স্বর্গে বসে পান করেন। হিন্দু শাস্ত্র বলে এটি আসলে মিথুন ভঙ্গিমা, যেখানে অগ্নির মুখ যোনির কাজ করে। রামায়ণ আর শৈব পুরাণে যখন পার্বতী আর শিব উপগত হন, তখন দেবতাদের আশঙ্কা হল এই অনন্ত কাল ধরে চলা সঙ্গমে বিশ্বে প্রলয় আসন্ন। এবং তাঁরা বিশ্ব পিতামাতার মিলনে বাধা দান করে। উচ্ছ্রিতদণ্ড রাগান্বিত শিব স্বর্গে উপগত তাঁর অস্খলিত বীর্য কোনও দেবতাকে ধারন করার নির্দেশ দিলে, অগ্নি সেই বীর্য ধারণ করে পান করেন। তবে কথাসরিৎসাগরে বলা হয়েছে শিব অগ্নিকে এটি পান করতে বাধ্য করেন। বেদে মিত্রা আর বরুণের বহু অন্তরঙ্গতার গল্প রয়েছে। ভগবৎপুরাণে এদের দুজনের এক অযোনিসম্ভূত সন্তানের কথা বলা হয়েছে। বরুণের বীর্য বল্মীক স্তুপের ওপর পড়লে বাল্মিকির জন্ম হয়। উর্বশীকে দেখে মিতা এবং বরুণ বীর্য স্খলন করে জলে পড়লে অগস্ত্য আর বশিষ্ঠ্যর জন্ম হয়। ... ...
জ্যোতি মারা যাবার পর এক দরদী রাজনৈতিক ব্যাক্তি এরকম বলেছিলেন... ভালই হয়েছে, মেয়েটা মরে বেঁচেছে। নইলে জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকত। যদি সমাজের কোনো একটা মানসিক বিকার নিয়ে আমার সত্যিকারের বিবমিষা থাকে, তাহলে এটা। মেয়েটির বেঁচে থাকার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় এই মনোভাব। শুধু অন্য লোকে এ কথা বিশ্বাস করলে সমস্যা ছিল না; অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েটি নিজেও তাই বিশ্বাস করে। সমষ্টি এবং ব্যষ্টির নিঃশ্বাসে মিশে যাওয়া এই বিষাক্ত বিশ্বাসকে আক্রমণ করা ধর্ষককে হত্যা করার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েটিকে আর তার পরিবারকে “কিচ্ছু হয়নি” বলে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আপাত দৃষ্টিতে একথা বলা অন্যায়। কিচ্ছু হয়নি মানে? এত বড় সর্বনাশের পর এই কথা? এই আরেকজন পুরুষতান্ত্রিক শূকর। সংবেদনশীলতার কণামাত্র নেই। এই সব অভিযোগ শুনেও আমি এই কথাটা বলতে চাই এবং বলে থাকি। যাঁদের বলেছি, তাঁরা প্রায় সকলেই আমাকে মার্জনা করেছেন। ব্যক্তিগত স্তরে যাঁদের সে কথা বলার প্রয়োজন হয়নি, কিন্তু যাঁদের এই কথাটা শোনা এবং বিশ্বাস করা প্রয়োজন, তাঁদের জন্য এখানে বলছি। “কিচ্ছু হয়নি।” অপরাধ নিতে পারেন। মার্জনা না করলেও চলবে। কিন্তু এই যে আপনার চরম অভিজ্ঞতাকে একরকম ট্রিভিয়ালাইজ করলাম, সেই অপরাধে আমাকে রোজ সকাল-বিকাল গালি দেবার ফাঁকে এই কথাটা নিজেকেও শোনান। শেষে যদি একদিন এটা বিশ্বাস করতে পারেন, দেখবেন বাঁচতে ইচ্ছে করছে। পাশের বাড়ির মেয়েটি যদি এসে গোপনে কাঁদে আপনার কাছে, তার কানে কানেও এই কথাটাই বলুন, “কিচ্ছু হয়নি। কোথাকার কে লম্পট কী করল, তার জন্য তোর জীবন যাবে? জীবন বুঝি এতই ফেলনা?” ... ...
সিম্পসন’স প্যারাডক্স ‘অমনিপ্রেজেন্ট’, কাজেই মোলাকাত তার সাথে হবেই, জানতে বা অজান্তে … তবে আশা এই যে, একবার গল্পের মত করে ব্যাপার-টা বুঝে নিলে তাকে দেখলে আঁতকে উঠবেন না। বরং একটা উদাহরণ মনে মনে গেঁতে নিন, কখন কোথায় চক-ডাস্টার হাতে জ্ঞানের গোঁসাই হয়ে ট্যান দিতে হবে কেউ বলতে পেরেছে? ... ...
পঁচিশ বছরে দিনকাল অনেক বদলেছে। সেবার বাবরির দিন যা করেছেন করেছেন, সেসব ধুইয়ে আর চলবেনা। অবিলম্বে নতুন করে পরীক্ষা দিন, দেশপ্রেম রিনিউ করান। ... ...
আজকের বিশ্বে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যত লেখালেখি হয়, যতখানি ভাবতে হচ্ছে, সেমিনার, সম্মেলন, গবেষণা করে জানতে চাওয়া হচ্ছে ইসলামকে কিভাবে উগ্রতা থেকে উদার ও সহনশীল করে তরুণ-যুবাদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়- তার এক পার্সেন্টও অন্য কোন ধর্মকে নিয়ে করার প্রয়োজন পড়েনি। ইসলাম ধর্মের উদারপন্থি যেমন আছে তেমনি কট্টরপন্থিও আছে। অন্য ধর্মেও এরকম বিভক্তি দেখা যায়। তবে তারা একে অপরকে “অখ্রিস্টান” বা “অহিন্দু” টাইপ কিছু ঘোষণা করেন না। একে অপরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রক্তাক্ত করেন না। ইসলামে এটা নিত্য সহা এক সত্য। রোজ এক দল নিজেদেরকে প্রকৃত ইসলাম অনুসারী ও বিপক্ষকে ইসলাম থেকে খারিজ বলে দাবী করেন। ইসলামের হাজারো পন্থির সকলের একই কুরআন, একজনই নবী মুহাম্মদ, প্রত্যেক পন্থিদেরই আল্লামা, শাইখুল হাদিস আছেন। তারা আপনাকে কুরআন থেকে দেখিয়ে দিবেন একমাত্র তারাই প্রকৃত মুসলমান ও ইসলাম অনুসারী। নবী মুহাম্মদকে তারাই অক্ষরে অক্ষেরে পালন করেন। আপনার আমার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যে আপনি আমি একজন মুসলমান হিসেবে কাদের খপ্পরে পড়বো সেটা নির্ভর করে সেই অঞ্চলে কারা ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন তাদের উপর। ... ...
আলীয়া মাদ্রাসা আর খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার পার্থক্য মানুষকে বোঝাতে হবে। কিন্তু খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার সমস্যাগুলি তো তাতে চাপা পড়ে যাবে না। এক বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আমরা আধুনিক যুগে জীবিকানির্বাহের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত করে ছেড়ে দিচ্ছি, যাদের একমাত্র রোজগারের রাস্তা, সাঈদী সাহেবের ভাষা্য়, কারো বাপের জানাজা পড়িয়ে ১০ টাকা আয় করা। ধর্মের শিক্ষা সেকুলার প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ এবং স্কলারলি ভাবে ক্লাসিকাল ভাষা আর দর্শন চর্চার মাধ্যমেই হওয়া উচিত, এই ধরনের ধর্ম শিক্ষা পরধর্মবিদ্বেষী মধ্যযুগীয় মানসিকতার পরগাছা শ্রেণীর মানুষ তৈরি করে, তৈরি করে হুজুরদের ক্যাননফডার। আল্লামা শফি, জুনায়েদ বাবুনগরী এই গরিবের ছেলেদের নাস্তিকদের ফাঁসির দাবীতে পথে নামান, পুলিশের গুলির মুখে ঠেলে দেন। বিনিময়ে নিজেরা রোজগার করেন প্রভূত অর্থ। আওয়ামী-বামপন্থী জোট সরকারের বামপন্থী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই মাদ্রাসাগুলিকে চেয়েছিলেন সরকারের আওতায় আনতে, শফি হুজুররা হুমকি দিয়েছিলেন যে তাহলে দেশে রক্তগঙ্গা বইবে। মাদ্রাসা ছাত্রদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগে জল ঢেলে দেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এদের দিয়ে মাদ্রাসায় গ্রেনেড তৈরি করাতে গিয়ে দুটি ছেলেকে বিস্ফোরণে মেরে ফেলেন হেফাজতের নায়েবে আমীর মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী। তবু চেষ্টা করেছিলেন নাহিদ। বাংলাদেশ পারে, আমরা পারিনা কেন? আপনি গেয়েছেন “শোন তালিবান তালিবান/আমি তোমাদের সাথে নেই/ আমি ধর্মে মুসলমান/ আছি লালনের সঙ্গেই”। লালনের হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরের মূর্তি কিন্তু কওমী মাদ্রাসা ছাত্ররা গিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল সুমন। আর তালিবানরা সকলেই মাদ্রাসা ছাত্র, তালেবা শব্দের মানেই ছাত্র, তাই থেকেই তালিবান। তাদের চেয়ে বেশি আরবী আপনি নিশ্চয় জানেন না। বরং এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয়না কেন যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন গ্রামের গরিব সংখ্যালঘু মানুষকে অবৈতনিক সরকারি শিক্ষা আর মিড ডে মিলের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি, কেন তাকে মাদ্রাসায় যেতে হয়? সবাই ছেলেমেয়েকে কোরআনে হাফেজ করতে চান এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শিক্ষার অধিকারের দাবী পিছিয়ে পড়ল, উঠে এল মাদ্রাসা শিক্ষার অধিকারের দাবী? ... ...
বন্ধু সুদীপ্তার বিয়েতে গিয়ে খেয়েছিলুম পেনেটির গুঁফো। বন্ধুদের বাড়ি পানিহাটিতেই। কিন্তু ওরা এই মিষ্টির সন্ধান জানত না। খোঁজ দিয়েছিলেন মীনাক্ষী ম্যাডাম। মীনাক্ষী সিংহ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের পড়াতেন। এই সেদিন সুদীপ্তাই হোয়াটসঅ্যাপে একটা শর্টফিল্ম পাঠাল। তনুশ্রীশংকরের মেয়ে অভিনীত ছবি, ‘থার্ড আই’। তাতে দেখি, মীনাক্ষী ম্যাডামও অভিনয় করছেন। সুদীপ্তার বাবা ম্যাডামকে নেমন্তন্ন করতে গিয়েছিলেন। পানিহাটিতে বাড়ি শুনে ম্যাডামের স্বামী জানতে চেয়েছিলেন, ‘তাহলে গুঁফো খাওয়াবেন তো?’ সুদীপ্তার বাবা অবাক হয়েছিলেন। মিষ্টির এমন পুরুষালি নাম শুনে। তবে তিনি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। গুঁফো বেশ পুরনো যুগের মিষ্টি। এখনকার দোকানদার আর ওই মিষ্টি করেন না। উনি কিন্তু অনেক খুঁজেপেতে, পুরনো দোকানদারকে ধরে বিশেষ অর্ডার দিয়ে মেয়ের দিদিমণির স্বামীর অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন। গুঁফো আসলে সন্দেশ। কিন্তু ভিতরে রসালো পদার্থ থাকে। কামড় বসালে সেই রস রসিকের গোঁফে লেগে যায়। গোঁফে লাগে বলেই এমন নাম। ... ...
আশা করি কাল কলকাতায় কোনো প্রতিবাদ হবে না। প্রতিবাদ হলে কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব, প্রতিবাদকারীদের ধরে চোখ উপড়ে হাঁটু ভেংগে পেটের নাড়িভুঁড়ি বার করে দিতে হবে! সবথেকে ভাল হয় লাশগুলো রাস্তার ওপর সাজিয়ে রাখলে, বা ত্রিফলা ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে দিলে। যাতে প্রতিবাদের প্রতিবাদ করার আগে মানুষের গায়ের রক্ত একবার হিম হয়ে যায়। আশা রাখি, বিপুল জনাদেশে জিতে আসা মুখ্যমন্ত্রী আমাদের এই গণতান্ত্রিক দাবিটুকু পূরণ করবেন। অবশ্য এই দাবিটুকু করতে গিয়েও ‘কুমীর তোর জলকে নেমেছি’ বলে ফেললাম কি না, এখনই ঠিক বুঝতে পারছি না। ... ...
আসামের সর্বাঙ্গীন উন্নতিতে হিন্দু-মুসলমান বাঙালীর একটা বিরাট অবদান রয়েছে। কিন্তু অসমীয়া রাজনীতিবিদেরা চিরকাল সাধারণ অসমীয়াকে বুঝিয়ে এসেছে বহিরাগতরাই আসামের দুর্গতির মূল কারণ। তাদের বিতাড়ন করতে পারলেই এই জমি, এই জলজঙ্গল, এই প্রাকৃতিক অকৃপন সম্পদ, ভাষা-ধর্ম সব কিছুতে আমাদের প্রভুত্ব চলবে। যে করে হোক আমাদের সংখ্যাগরিষ্ট প্রমান করতে পারলেই কেল্লা ফতে। আর তার জন্য প্রয়োজন এদেরকে যত বেসী সংখ্যায় বিতাড়ন। কিন্তু দেশভাগের পর উদ্বাস্তু স্রোত, একাত্তরে খানসেনার দাপটে আতংকিত হিন্দু মুসলিম শরণার্থী আর পরবর্তী সময়ে খেপে খেপে নিজস্ব ও সামাজিক- অর্থনৈতিক কারণে কখনও মুসলিম, কখনও হিন্দু অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে আসামে। ... ...
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মহিলা ছাত্রদের ভর্তি করা নিয়ে চিন্তাভাবনা ১৮৭৬ সাল থেকে শুরু হয়। সেসময়ের বাংলার লেফটন্যান্ট গভর্নর স্যার রিচার্ড টেম্পল এ বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন। ১৮৮১-তে প্রধানত ভর্তি হতে উৎসাহী ছাত্রীদের অভিভাবকদের চাপে এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় “discussing the question of accepting an inferior admission qualification for lady students.” (Centenary Volume, 1935, p.46) এই দলিলের ভাষ্য অনুযায়ী সম্ভবত ১৮৮৪ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে কাদম্বিনী গাঙ্গুলি অ্যাডমিশন নেন (বা বলা ভালো অ্যাডমিশনের অধিকার পান)। উল্লেখ করা দরকার যেহেতু অক্সফোর্ড এবং কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিলনা সেজন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ মহিলাদের ভর্তির ব্যাপারে গররাজি ছিল। ... ...
মুশকিল হলো ঈশ্বর কাকে কোন কথা দিয়েছেন তার তোয়াক্কা না করে সিদন, টায়ার থেকে (আজকের সাইদা, টায়ার- লেবানন) গাজা অবধি সাড়ে ছশো মাইল ব্যাপী সমুদ্রতীর বরাবর বহু মানুষ বাসা বেঁধেছেন কয়েকশ বছর আগেই। তাঁরা ব্যবসা বাণিজ্যে অত্যন্ত তুখোড়, তাঁদের নৌকো, জাহাজ পাড়ি দেয় বন্দরে বন্দরে। ফিলিস্তিনরা (যা থেকে প্যালেসটাইন শব্দটা এসেছে) সমুদ্র বাণিজ্যে অত্যন্ত সফল, উন্নত জাতি। গাজা ফিলিস্তিনদের বৃহত্তম বন্দর।হঠাৎ দক্ষিণ পশ্চিমের মরুভূমি থেকে হাজির হলেন অজস্র ইহুদি – এটা নাকি তাঁদের প্রতিশ্রুত দেশ। এখানে তাঁরা ডেরা বসাবেন। কে দিয়েছে এই প্রতিশ্রুতি? কোন ঈশ্বর? এ কোন আবদার? বললেই ছেড়ে চলে যাবেন তাঁদের বাপ পিতেমোর ভিটে? ... ...
ছোটবেলা থেকেই আস্থা রেখেছিলাম বিজ্ঞানে, সত্যে, যুক্তিতে। ঠিক সেই কারণেই আজ যাদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে বাধ্য হলাম, তাঁদের একএকটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবেই ধরতাম। তাঁরা যখন কিছু লিখতেন, বলতেন, যাচাই না করেই সেই ফ্যাক্টগুলো মেনে নিতাম, অনেক সময় দ্বিমত হতাম তথ্যের ব্যাখ্যায়, কিন্তু তথ্যে বা basic framework এ নয়। একটা আস্থা ছিলো, বিশ্বাস ছিলো, শ্রদ্ধা ছিলো - তাঁদের সততায়, জ্ঞানে, বুদ্ধিবৃত্তিতে। কিন্তু এখন যখন দেখি এঁদের অনেকেই পূর্বনির্ধারিত বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বাস্তবকে অস্বীকার করে অন্ধ বিশ্বাসের প্রচার করেন তখন মানতেই হলো, কোভিড১৯ অনেক কিছুই কেড়ে নিয়ে গেল তার মধ্যে নিয়ে গেলো এই আস্থাটাও, এতেও কম রিক্ত হলাম না – অন্তত ব্যক্তিগত ভাবে । এই বয়সে আস্থার জায়গা খুব কম, সেখানেও যখন টান পড়ে, হতাশ লাগাটা বোধহয় অস্বাভাবিক নয়। ... ...