যেভাবে বারবার 'পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসকারী' ইত্যাদি হালকাভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে – সেটাও খুব তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে নেই। পাওয়ার গ্রিডের বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি রয়েছে, ডিটেলে ক্ষতির পরিমাণ লিপিবদ্ধও করা আছে। সেগুলো মূলতঃ যখন টাওয়ার বসানো আর তার লাগানো হচ্ছে, সেই সময়কার এককালীন ক্ষয়ক্ষতি। কিন্তু কোথাও এমন উদাহরণ নেই যে চাষের জমির ওপর দিয়ে হাই ভোল্টেজ লাইন গেলে সেখানে আর চাষ করা যায় না। বা ফসলের উৎপাদন মারাত্মক ব্যহত হয়, মাছ মরে যায় – ইত্যাদি ইত্যাদি। বরং এই অভিযোগগুলোর স্বপক্ষে একটাও প্রামাণ্য কেস স্টাডি নেই। সায়েন্টিফিক কমিউনিটির (যারা বিজ্ঞান গবেষণার কাজ করে) মধ্যে এরকম কোনো কনসেন্সাস বা ঐক্যমত্য তো দূরস্থান, 'একাংশের মধ্যে সিরিয়াস কনসার্ন' – এরকম কিছুও শোনা যায় না । গোটা পৃথিবীজুড়ে লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার ব্যাপী হাই ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন আছে। চাষের জমি, পুকুর, ভেড়ি – এসবের ওপর দিয়েই আছে বহু দশক ধরে। চাষ, মাছের ভেড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে – এরকম অভিযোগ শোনা যায়নি। সত্যিই যদি যেত, যদি একটা অঞ্চলেরও বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তিত হয়ে থাকতো গত পঞ্চাশ বছরে, তাহলে সেটার প্রমাণ থাকতো চোখের সামনেই। সেটা একটা উদাহরণ হয়ে যেত। কিন্তু শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটা প্রযুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে আমাদের চোখ কান সবসময় খোলা রাখা উচিৎ। পৃথিবীতে চাকা আবিষ্কারের সময় থেকে শুরু করে আজ অব্দি একটাও এমন প্রযুক্তি বোধহয় নেই যার কোনো পরিবেশগত কুপ্রভাব নেই। আর বিজ্ঞান, প্রযুক্তি – এই কথাগুলো শুনলেই সেগুলোকে অন্ধভাবে ভক্তি শ্রদ্ধা করারও কিছু নেই। ভবিষ্যতে যদি কোনো ক্ষতি সত্যিই চোখে পড়ে সেগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে। ... ...
এটা সেই রাতের ঘটনা। ১৪ই মার্চ রাত। দিনের বেলার "অপারেশন নন্দীগ্রাম' শেষ হবার পর রাতে সিপিএম স্থানীয়ভাবে একটি বারো ঘন্টার বন্ধ ডাকে। এই রকম একটি প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে লোকজন এমনিতেই সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঢুকে পড়ে, সেখানে এরকম একটি বন্ধ ডাকার অর্থ কি? দিনের আলোয় প্রথম পর্বের পুলিশি আক্রমণের পর, যখন খবর আসছিল, ৬০ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে, মানুষের মৃত্যুতে আমরা শিহরিত, আতঙ্কিত হচ্ছিলাম, তখনও জানা ছিলনা, এই গণহত্যার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পর্বটি এখনও বাকি থেকে গেছে। ঠিক তখনই, মহাকরণে আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিব এই দ্বিতীয় এবং ভয়ঙ্করতম পর্বটির পরিকল্পনা করছিলেন। সেই পরিকল্পনাকে কাজে পরিণত করতে বন্ধ এবং রাতের অন্ধকারের প্রয়োজন ছিল তো বটেই। ... ...
৩৫ বছর এই রাজ্যে তথাকথিত বাম শাসন ছিলো, যেখানে বড় মাত্রায় সমাজের প্রায় প্রতিটি বর্গের মানুষ কোন না কোন ভাবে পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলো। রাজনৈতিক ভাবে কী হয়েছে, সে আলোচনা স্বতন্ত্র, কিন্তু আসলে গোটা সমাজ জুড়ে কোন দর্শন চারিয়ে গেছে তার দিকে নজর দিতে হবে। পার্টির সমর্থক পার্টির লোকাল কমিটির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে না, পার্টির লোকাল জোনালের বিরুদ্ধে, জোনাল জেলার বিরুদ্ধে, জেলা কমিটি রাজ্য কমিটির বিরুদ্ধে, রাজ্য কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটি পলিটব্যুরোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারবে না। পলিটব্যুরো যা ঠিক করছেন তা স্তরে স্তরে পালন করার নির্দেশ আসছে, এর মধ্যে দিয়ে ‘কেন্দ্র’র প্রতি আনুগত্য এবং নির্ভরশীলতা তৈরি হয়, সেই সমাজে সব থেকে যা শক্তিশালী হয়, তা ফ্যাসিবাদী মনোভাব। ... ...
একথা কারো আর অজানা নেই যে, হাজার হাজার কৃষক সুদূর নাসিক থেকে ২০০ কিমি মিছিল করে আসছে শিল্পনগরী মুম্বাই এর রাজপথের দখল নিতে। সেই মিছিল দেখার জন্য তাড়াহুড়ো করে বিকেল ৫ টা নাগাদ ভিকরোলি তে পৌঁছতে দেখা গেল স্রেফ ১০-১২ জন মানুষ মাথায় গেরুয়া টুপি পরে দাঁড়িয়ে। মিছিল টা তো বামপন্থীদের। আরও অনেক বড় হবার কথা। নাসিক থেকে যত এগোচ্ছে, সংখ্যা নাকি তত বাড়ছে। আর ফেসবুক ফিড বা মিডিয়ার ছবিতে যা দেখেছি, লাল পতাকায় ছয়লাপ। এ তাহলে কী? ... ...
৫০০-১০০০ এর নোট বাতিল কেন ? মোদীর এবং সরকারী যুক্তি - ফেক ভারতীয় কারেন্সির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী,ড্রাগ এবং আর্মস স্মাগলারদের মত সরকারবিরোধী কার্যকলাপের অর্থের স্রোত বন্ধ করে দেওয়া । ৭০ বছর ধরে চলে আসা কালো অর্থ ব্যবস্থার মাজা ভেঙ্গে দেওয়া ইত্যাদি । কিন্তু যদি ধরুন আমাদের নূতন নোট ছাপবার দ্বায়িত্ব সরকার এমন এক কোম্পানির ওপর ন্যস্ত করে যাঁদের ভারত সরকার ইতিমধ্যে পাকিস্তানে নকল ভারতীয় টাকা ছাপানোর কাজে সহায়তা করবার অপরাধে ব্ল্যাক লিস্টেড করে রেখেছে ? চমকে উঠবেন না ! পড়তে থাকুন, আপনার -আমার বিপদের কথা । ... ...
বিষয়টা একটু অদ্ভুতই। বস্তুত ধনঞ্জয়ের উকিলই যখন ধনঞ্জয়ের বয়ানের উল্টো কথা বলেন, তখন মনে হয়, এ যেন শুধু নিয়মরক্ষার খেলা। আখ্যানটি পূর্বনির্ধারিতই আছে। যারা এই আখ্যানের বিরোধিতা করছেন, সে শুধু বিরোধিতা করার জন্য। আসলে তাঁরাও অন্য কোনো আখ্যানে বিশ্বাস করেননা। এবং বিরোধিতাটাও শুধু নিয়মরক্ষার্থে এবং সেটাও পূর্বনির্ধারিত এই আখ্যানেরই অংশ। এই সেই আখ্যান যেখানে উকিল ধনঞ্জয়ের পক্ষের সমর্থন করতে গিয়ে এমন কথা বলবেন, যা, ধনঞ্জয়ের বয়ানকেই মিথ্যে প্রমাণ করে সরকারি আখ্যানের ভাষ্যকে জোরদার করবে। দুজন প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের অসঙ্গতিগুলিকে উপেক্ষা কিংবা সম্পাদনা করে এমন মাপে নিয়ে আসা হবে, যাতে তারা খাপে খাপে মিলে যায় আদালত-স্বীকৃত আখ্যানের সঙ্গে। যেন জিগস পাজল মেলাতে বসা হয়েছে হাতে একটি র্যাঁদা নিয়ে। এখানে সমাধানটি পূর্বনির্ধারিত। যদি কোনো টুকরো না মেলে, তাকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে, কিংবা ছেঁটে করে নেওয়া হবে মাপমতো। বিরোধিতাটাও হতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বার্থে। কিন্তু সেটাও মাপমতো, যাতে সেটা মূল আখ্যানের পক্ষে যায়, বা সরাসরি পক্ষে না গেলেও মূল আখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিপজ্জনক না হয়। বিপজ্জনক স্ববিরোধিতাগুলি কেউ কেউ গুরুত্বই পাবেনা আদালত চত্বরে। ... ...
উচ্চশিক্ষায়তনগুলির ঝকঝকে দেওয়াল, চকচকে আসবাব, ছিমছাম পড়ুয়ার দল। ধূলো ঢোকে না - এমন পরীক্ষাগার, মাছি গলে না - এমন পাহারা। খাওয়া ভাল, হাওয়া ভাল, সবচেয়ে ভাল - পরিবেশ। সত্যিই কি সবই পাউরুটি আর ঝোলাগুড়? ছায়া পড়ে না, আলোকোজ্জ্বল করিডরের কোথাও? মেঘ জমে না - সাজানো ক্যাম্পাসের ওপর? নিঃসীম অন্ধকার নেই কোনো ঝলমলে মুখের আড়ালে? আছে হয়তো - খবরে আসে না। কিল খেয়ে কিল হজম করেন - কখনো ছাত্র, কখনো শিক্ষক। অনুচ্চারিত কোড আছে কোথাও - আর্মি ক্যাম্পসদৃশ। চোখের তলায় পরিশ্রমের কালি দেখা গেলেও, পিঠের বিশাল ডিপ্রেশনের বোঝা অদৃশ্যই থাকে। ঘনঘন নষ্ট হয় একেকটা স্বপ্ন। কদাচিৎ, একটা করে জীবনও শেষ হয়ে যায়। কোথাও তো দরকার, এই গুনগুন, ফিসফাস গুলোর জায়গা হওয়ার? অ্যাকাডেমিয়ার কণ্ঠস্বর অনেক, বক্তব্যও বিভিন্ন - এ সব কথা মনে রেখেই, শুরু হল গুরুর নতুন বিভাগ, "উচ্চশিক্ষার আনাচেকানাচে" ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী - উচ্চশিক্ষার অঙ্গনের যে সব কথা এতদিন জানাতে পারেননি কোথাও - লিখে পাঠান গুরুচণ্ডা৯-তে। নিজের কথা, পাশের কিউবিকলের কথা, পরিবারের লোকের কথা। এমন কাউকে চেনেন - যাঁর আছে এমন অভিজ্ঞতার সঞ্চয়? লিখতে বলুন তাঁদের। সব লেখাই প্রবন্ধ হতে হবে তার মানে নেই। প্রবন্ধ আসুক, অভিজ্ঞতার ভাগাভাগি হোক, বিতর্ক জমুক। ফিসফিসগুলো জোরে শুনতে পাওয়া গেলেই হল। আজকের লেখা - 'নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক' একজন প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা। ... ...
চে-র টাট্টু খোদাই একজন অসৎ মানুষ বিজেপিতে গেছে বলে এতো এতো খিল্লি! তার মতোই আর কয়েকজনও বিজেপিতে গেছে। কিন্তু লেসার ইভিলে যে পাল্লা অনেক ভারি! পয়সা ছড়িয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে কিনে নিলে, ট্রেন্ড দেখে যার সম্ভাবনা খুবই বেশি বলে সবাই বলছে, তখন কী হবে? ... ...
ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘকাল মদ নিষিদ্ধ সম্ভবত গুজরাটে। সেখানকার প্রায় ১৫% আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনধারায় সংস্কৃতিতে এর কী দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, সেই নিয়ে কোনও কাজ হয়েছে কী না জানিনা। তবে ২০০২ সালের দাঙ্গার হিংসালীলায় জনজাতির মানুষদের সামিল করা গিয়েছিল, সেটা জানি। ... ...
শুধু বলি, স্পষ্টভাবে বলুন - যা বলতে চাইছেন, দায়িত্ব নিন। উত্তরটি গ্রহণযোগ্য না-ই হতে পারে - সর্বজনগ্রাহ্য তো কখনোই হবে না - তবুও, স্পষ্ট অবস্থান ও উচ্চারণ জরুরি। শুধুই নেতি নেতি করে আধ্যাত্মিক সত্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকলেও, রাজনৈতিক লক্ষ অর্জন মুশকিল। বিরোধিতা করার মুহূর্তে বিরুদ্ধ কোনো একটি দলের পক্ষে বোতাম টেপা জরুরি। আমার পক্ষে সেই বোতাম বামেদের - আপনি সিদ্ধান্ত নিন, সেই বোতাম কাদের। ... ...
একথা নিশ্চিত যে, দ্রুতগামী যান, যেমন রেল, প্লেনই মারীর মহামারী বা অতিমারী হয়ে ওঠার মূল বাহন। আমরা যদি প্রাক ব্রিটিশ যুগের আর্থ-সামাজিক মডেল দেখি, এই সংগঠিত যান-চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলার বদলে দেশের শাসকদের লক্ষ্য থাকত সড়কপথ নিরাপদ রাখা, কিছু নির্ধারিত বাণিজ্য জলপথে চালানো। সমসত পণ্যের স্থানান্তরণ নয়। বাণিজ্যের সংগঠন উত্তর-ব্রিটিশ ধনতান্ত্রিক যুগের লক্ষণ এবং এই সংগঠনের পিছনে জনগণের শ্রমের মূল ভাগ নিয়োজিত হয়। প্রাক ব্রিটিশ বাংলা যখন পৃথিবীর এক বিশাল অংশে বস্ত্র সরবরাহ করত, সে বিকেন্দ্রিভূত, অসংগঠিত উৎপাদন এবং বাণিজ্যের এক মডেল চালাত। যার ফল হিসেবে দেখা যায়, সেইসময়ে বাংলায় মানুষ মোটের উপর স্বচ্ছল। আর, এই বাজারটা যুখন উত্তর-পলাশী যুগে ইংল্যান্ডে গেল, সেখানে স্থানীয় লোক বড় সংগঠিত উদ্যোগকেন্দের কাজ করতে শুরু করল, তাদের জীবনধারণ আগের থেকেও খারাপ হয়ে পড়ল (ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা, এংগেলস, ১৮৪৫)। হয়ত কিছুটা একই ভাবে সংগঠিত ধনতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র শহরগুলি গড়ে ওঠার সময়ে মানুষের ভালো থাকার মূল অক্ষগুলি অবহেলিত হল, কারণ এই শহরের বিকাশ হল কেবলমাত্র ঐ কেন্দ্রিভূত উদ্যোগ ও বাণিজ্যকে পুষ্ট করার স্বার্থে। তাই কি আমরা দেখতে পারি উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা হয়ে ওঠে এশিয়াটিক কলেরার বিশ্ব-আঁতুরঘর? ... ...
-দুনিয়ার সেরা ইঞ্জিনিয়ারেরা বসে এমন একটা জায়গা বানিয়ে দিতে পারবে? এখানে যে জড়িবুটি হয়, তাই খেয়ে আমাদের বাপদাদা পরদাদারা বেঁচেছে, আমরা বাঁচছি, আমাদের ছেলেপুলে নাতিপুতি বাঁচবে। কিন্তুই খাদান হলে? যা বক্সাইট আছে সেটা তুলে ফেলতে নাকি পঁচিশ বছর লাগবে। তারপরে কী হবে? পঁচিশ বছরের জন্য কশো বছর বন্ধক রাখব আমি? কুমুটি মাঝির গলায় ছিল অনাগত প্রজন্মের ভার। অস্ত সূর্যের আলো এসে পড়েছিল তাঁর মুখে। পায়ের কাছে গর্তগুলো চেয়েছিল অক্ষিবিহীন কোটরের মতো। বনে কোথাও একটা কাঠঠোকরা ঠক ঠক করে শব্দ করছিল। আপাতত ভবিষ্যৎ বন্ধক রাখতে হবে না কুমুটি মাঝিদের। তবে, "তারপর তারা সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিল" - রূপকথার এই শেষ লাইন লেখার সময় আসেনি এখনও। নিয়মগিরি পাহাড়ের নীচে লাঞ্জিগড়ে রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার রিফাইনারি, তার জঠরে খিদে, পাহাড়ের গা বেয়ে কনভেয়ার বেল্ট করিডোর পড়ে আছে অজগরের মতো। ... ...
সরকারিভাবে বাড়ির সকলের টেস্ট হল যেহেতু আমরা সকলেই দাদুর সঙ্গে ছিলাম। রিপোর্টে জানা গেল আমাদের কারও কোভিড পজিটিভ (asymptomatic) , কারও নেগেটিভ, কারও 'inconclusive'..হেলথ ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা হল। আমরা CMOH এর পারমিশন নিয়ে সকলে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। তারপর থেকে যে কোনো প্রয়োজনে পাশে ছিলেন ডাক্তার বন্ধু, দাদা আরও অনেকে। এদিকে আমি ফেসবুকে প্রতিদিন সকলের সেরে ওঠার আপডেট দিতে থাকি। অনেকে তাতে আশ্বস্ত হন। ফেসবুক মারফৎ অনেক পরিচিত - অপরিচিতদের সন্ধান পাই যাঁরা আমাকে সাহায্য করতে থাকেন। খুব কঠিন ছিল দু বছরের বোনপোকে ঘরে আটকে রাখা বা দূরে সরিয়ে রাখা। ওকে আটকানোর জন্য ওর দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। কঠিন ছিল দিদাকে সামলানো। Alzheimer's patient - তাঁকে শুতে বললে সেটা তিনি বুঝতে সময় নেন কমপক্ষে ১৫ মিনিট। কিছুই আর বুঝতে পারেন না। কাউকে চেনেন না। ... ...
কিন্তু, অধিগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়াটাই যে বেআইনি ছিল, এই ব্যাপারে উনি কোনো সন্দেহ রাখেননি। ওনার মতে, যেহেতু আগেই জমি চিহ্নিত হয়েছিল, ও ক্যাবিনেট মিটিঙে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছিল, সেহেতু চাষিদের অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে থাকা অসন্তোষ, অভিযোগের বা আপত্তির, তৎকালীন ল্যান্ড-কালেক্টর কোনো বিচার করেননি, আর, মেকানিকালি উপেক্ষা করেছেন, বা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আগে থেকেই নিয়ে ফেলা সিদ্ধান্তের ওপর সিলমোহর ফেলতে একটা আই-ওয়াশ বা ছলনার মাধ্যমে চাষিদের ও জমির মালিকদের অভিযোগের বিবেচনা করা হয়েছিল, যার অন্তিম পরিণতি, সেই অভিযোগগুলির উচিত বিবেচনা না হওয়া। কমপেনসেশন বা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ যেভাবে ঠিক হয়েছে সে নিয়েও উনি প্রশ্ন তুলেছেন। অতএব, ওনার মতে, জমি অধিগ্রহণ জনস্বার্থে হয়ে থাকলেও, অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি। ... ...
আমাদের এই ভাঙা-চোরা, কালি-ঝুলি মাখা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা যে গণতন্ত্র আছে সেটাকে রক্ষা করাই আমাদের এখন প্রধান কাজ। ভবিষ্যৎ প্রমাণ করবে, কিন্তু এই মুহূর্তে বলা যায়, সেই কাজে বাঙালি একটা বড় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করল, এবারের ভোটে বিজেপিকে রুখে দিয়ে। বাঙালি বজেপির বিরুদ্ধে একটা শক্তিকে চেয়েছিল। বিজেপিও তার বহুমাত্রিক, সর্বগ্রাসী আক্রমণ দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছিল কে তার প্রধান শত্রু। সিপিএমের ‘বিজেমূল’ প্রচারে মানুষ একেবারেই কান দেয়নি। বাঙালির কাছে এই মুহূর্তের বাস্তবতা এটাই যে, তৃণমূল নেত্রী মমতা ছাড়া তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনও শক্তি ছিল না। যারা তাঁকে ভোট দিলেন, তাঁদের অনেকেই তৃণমূল নেত্রী অতীতে কী কী বলেছেন, কী কী করেছেন এই সব অসংখ্য প্রশ্ন এবং তর্ক সরিয়ে রাখলেন। বিজেপির পরাজয় তারই পরিণতি। ... ...
অমিয়ভূষণ মজুমদারের জন্ম ১৯১৮ সালের ২২শে মার্চ। এ বছর তাঁর জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু এ কথাও আমাদের জানা এই বিরল প্রজাতির লেখকের জন্মশতবর্ষ সাহিত্যসংস্কৃতি জগতের প্রখর আলোর নীচে আসবে না। বিপণন কৌশলের অন্যতম শর্ত হয় সাধারণ্যে গ্রহণযোগ্যতা। প্রতিষ্ঠান তাই চায়। জনচিত্তজয়ী লেখমালা, চলচ্চিত্র, ক্রীড়া ও অন্যান্য বিনোদনের জন্য প্রচারের পাদপ্রদীপের আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তাকে আরও মহিমা দান করে কৌশলী প্রতিষ্ঠান। ব্যতিক্রমী স্রষ্টার জন্য থাকে কিছু মননশীল পাঠক, ব্যতিক্রমী সৃষ্টির গৌরবকে তাঁরা অনুধাবন করতে পারে, সেই রচনাকে তাঁরা কুর্নিশ জানায়। এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে নগণ্য। কিন্তু কালোত্তীর্ণ মহৎ সৃষ্টির তাতে কিছু আসে যায় না। সেখানেই অমিয়ভূষণ সৃষ্টি আলাদা হয়ে গেছে চলাচলের নিরাপদ পথ থেকে। আর এক মজুমদার, কমলকুমারের মতই তাকেও বিদগ্ধ পাঠক এবং সমালোচক ‘লেখকদের লেখক’ হিসেবে গণ্য করেছেন। ... ...
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে (এখানে ইউরোপ ধরে নিতে হবে) ১৮৪৮-এর রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন (বিশেষ করে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে) স্বাস্থ্যের জন্য একটি জাতীয় আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। নতুনভাবে জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং আইন-কানুন, সোশ্যাল মেডিসিন এবং এপিডেমিওলজির মতো স্বাস্থ্যের নতুন শাখা তৈরি হল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হল মেডিসিনের দর্শনের জগতে – নতুন করে বিশিষ্টতা পেলো প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বা আগাম রোগ-প্রতিরোধের বিষয়। টমাস কুনের অনুসরণে বলা যায় মানুষের গণ আন্দোলন এবং স্বাস্থ্যের দাবীতে সোচ্চার হওয়া মেডিসিনের দর্শন ও ভাবনার জগতে একটি “প্যারাডাইম শিফট” ঘটালো – বেড সাইড মেডিসিনকে অতিক্রম মেডিসিন এলো জনসমাজে এবং জনস্বাস্থ্য একটি আলাদাভাবে চিহ্নিত অবস্থান হল। ... ...
ওঁরা বলছেন, এর বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে। বলছেন আমরা স্বাস্থ্যকে পণ্য হিসেবে দেখে ‘ওয়াল স্ট্রীট হেলথ কেয়ার’ চাইনা । স্বাস্থ্য ও একটি মানবিক অধিকার, এই অধিকারের জায়গা থেকে পরিষেবা চাই। বলছেন, চালু করতে হবে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা (ন্যাশানাল হেলথ প্রোগ্রাম)। একজনের কাছ থেকেই সব খরচ আসবে - ‘সিঙ্গল পেয়ার বিমা’, আর এই একজন হবে সরকার। কানাডার মডেলে। সোজা কথায়, দেশে ইতিমধ্যেই বৃদ্ধদের জন্য যে ‘মেডিকেয়ার’ চালু আছে, সেটাই দেশের সবার জন্য চালু করতে বলা হচ্ছে। দেশের জনগণের উপর ২% ট্যাক্স বা চাকুরিদাতাদের উপর ৭% পে-রোল ট্যাক্স বসালেই এই ব্যবস্থার টাকা উঠে আসবে। প্রোগ্রেসিভ পেরোল ট্যাক্সের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এই টাকার পরিমাণটা এখনকার প্রদেয় প্রিমিয়াম বা কো পে র খরচের চেয়ে অনেক কম। আর এর ফলে আসবে প্রকৃত সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা। এই ব্যবস্থার দাবি অনেকদিনের। একাধিক স্টাডিতে দেখানো হয়েছে, বেসরকারি বিমা উঠিয়ে একটামাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করলে শুধু পরিচালনাখাতে খরচ কমানো যাবে প্রতি বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ স্বাস্থ্যখাতে খরচের এক-চতুর্থাংশ জমানো যাবে। এটা সবার জন্য স্বাস্থ্যের খাতে ব্যয় করা যেতে পারে। এছাড়া তো আছেই মুনাফাজনিত লাভ কমানো। ... ...
পুষে রাখা সারমেয়র যত্ন কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে প্রায়ই পড়ি খবরের কাগজে। কালীপুজোর রাতে বাজির প্রবল আওয়াজে বাড়ির কুকুরটি যেন ভয় না পায়, জানালার সামনে মাইক বাজিয়ে ডিজে সঙ্গীত হলে প্রিয় সারমেয়টি যেন আতঙ্কিত না হয়, তা নিয়ে বহু টোটকা দেন পশু বিশেজ্ঞরা। হৃদযন্ত্রের সমস্যার ভোগা আপনার মানুষ-প্রিয়জনকে এই অত্যাচারের হাত থেকে থেকে কিভাবে নিরাপদ রাখা যায়, তার তুলনায় অনেক বেশি নিউজপ্রিন্ট খরচ হয় পোষ্যের যত্নের সন্ধানে। কিন্তু ঘরে পুষে রাখা অবাধ্য পশুকে কিভাবে লাগাম দিতে হয়, তা নিয়ে চোখে পড়ে না কিছু। অন্যের শরীরে দাঁত বসিয়ে দিলেও দিনের শেষে সেই সারমেয় ‘অবলা’ই থেকে যায়। ... ...
আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোন লেসবিয়ানদের সাথে মিশিনি, আমি নিজে লেসবিয়ান, কিন্তু কেউ যদি আমাকে লেসবিয়ানদের চরিত্র নিয়ে সংজ্ঞা লিখতে বলে, আমি পারব না। আমি কি, তা আমি জানি। আমি মোটেও মানিনা, সবার চরিত্র, চাহিদা সমান হয়। তাই দুম করে কাউকে ট্যাগ করে দেওয়া থেকে যতটা পারি বিরত থাকি। হোমোফোবিকদের কাছ থেকে বহু আক্রমণ আসে। শুনতে শুনতে সয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে আসা আক্রমণ আর খারাপ লাগে না। তারা আক্রমণ করবেই, টিটকিরি মারবেই জানা কথা... ... ...