নেহাতই চক্ষুলজ্জা বশে নেহাম্যাডাম একটি প্ল্যান বানিয়ে আনলেন, যার মাথামুন্ডু, এবিসিডি, শুরু বা শেষ কিসুই নাই, যেটি অনায়াসে যেকোন সুস্থবুদ্ধি লোকের সেরিব্রাল অ্যাটাক ঘটানোর উপযুক্ত। হাতে সময় একেবারেই নাই, চাগরির দায় বড় বিষম, হিড়িম্বা রাত জেগে এক্ষপির প্ল্যান বানালেন, প্রত্যেকের দায়িত্ব আলাদা শীটে লিখে দিলেন। অন সেকেন্ড থট, যত সলিউশন বানাতে হবে, প্রতিটি তৈরি করার মেথডও লিখে হাতে হাতে ধরিয়ে দিলেন। (আগে একবার নেহা স্ট্যান্ডার্ড অ্যাসিড সল্যুশন বানানোর জন্য “একটু হেল্প” চেয়েছিল।) ... ...
ধর্ষণ বলতে যেহেতু আমরা পুরুষ কর্তৃক অনিচ্ছুক নারীদেহের দখল নেওয়া বোঝাচ্ছি, পুরুষের মনোভাব এবং চিন্তাধারার পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তবে সে কতো যুগের কতো সাধনার ফল তা জানা নেই । তথাকথিত শিক্ষার দৌড় দেখা হয়ে গেছে মি টুর দৌলতে। অন্তর্জালে যে পরিমাণ রেপ থ্রেট দেখা যায় তাতে মনে হয় মেয়েদের শায়েস্তা করার ঐ একটি পদ্ধতিই আমাদের শেখা। খুবই লজ্জা হয় যখন দেখি রেপিস্টের ধর্ম তুলে সেই ধর্মের নিরপরাধ মেয়েদের ধর্ষণ করবার ডাক দেওয়া হয়। চিত্তশুদ্ধির প্রচেষ্ট জারি থাকুক, আপাতত আর কিছু করতে না পারি রাষ্ট্র প্রশাসন এবং সমাজের ঘাড় নোয়ানোর জন্য আমরা সমস্বরে চিৎকার তো করতে পারব। সমস্ত ট্যাবু ভেঙে ফেলে প্রত্যেকটি ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রবল আলোচনা,উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, চেঁচামেচি । ধর্ষণকে ঘিরে থাকা বোবা নৈশব্দকে ভেঙে ফেলে একেবারে অনর্থ করা যাকে বলে। আমরা এখন পরিষ্কার জানি ধর্ষণ শুধু লালসার কারণে হয়না । মেয়েদের ওপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবার একটি হাতিয়ার এটি। ... ...
তরজমার চ্যালেঞ্জ বিচিত্র। বিখ্যাত পোর্তুগিজ সাহিত্যিক রুই জিঙ্ক। তাঁর একটি উপন্যাসের নাম ‘Osso’। শব্দটি প্যালিন্ড্রোম । তরজমার অনুমতি দেওয়ার সময় লেখকের কড়া শর্ত—বাংলা নামটিও যেন প্যালিন্ড্রোম হয়! আবার অন্য এক কেতাবের তরজমাকালে তাঁর শর্ত পোর্তুগিজ ভাষায় সর্বনামের লিঙ্গবিভাজন রীতি যেন বাংলাতেও বজায় থাকে! এমনই নানা সমস্যার কথা আলোচনা করলেন তন্নিষ্ঠ ভাবে জিঙ্কের সাহিত্য বাংলায় তরজমারত পোর্তুগিজ ভাষার শিক্ষক ঋতা রায়। ... ...
এর মধ্যেই এক অবাঙালি পরিবার এলেন। এরা মাঝে মাঝেই আসেন। স্বামী গেঞ্জি কারখানায় কাজ করেন। স্ত্রীর গ্রেড থ্রি ম্যালনিউট্রিশানে ভোগা চেহারা। আঠাশ বছর বয়েসে ওজনও আঠাশ কেজি। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভোগায় অমন চেহারা হয়েছে। ... তারপর তিনি তাঁদের দুঃখের সাত কাহন শোনালেন। গেঞ্জি কারখানার মালিক গত মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছেন। তাতে অবশ্য পুরুষটি বিশেষ দোষ দেখেন না। মালিকেরও আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নয়। তার উপর চৈত্র সেলের সময় ব্যবসা ভালো হবে ভেবে ধার দেনা করে অনেক কাঁচামাল তুলেছিলেন। মহিলা ভালো বাংলা জানেন না। তিনি এক জগাখিচুড়ি ভাষায় জানালেন গত দুই সপ্তাহ ইনসুলিন বন্ধ। এখন শরীর অত্যন্ত দুর্বল। হাঁটতে গেলে মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছেন। গ্লুকোমিটারের গোটা দুই স্ট্রিপ অবশিষ্ট ছিল। তাই দিয়ে সুগার মাপলাম। পাঁচশো বত্রিশ। বললাম, 'ইনসুলিন না নিলে তুমি শিওর মারা পড়বে।' ... পুরুষটি বললেন, 'ডাক্তারসাব, পনেরো তারিখে লকডাউন উঠলেই বাড়ি ফিরব। হাতে টাকা পয়সা নেই। খাওয়া জুটছে না। বাড়িওয়ালা বাড়ি থেকে বের করে দেবে বলেছে। তার আগে যমুনাকে খাড়া করে দিন।' একজন সহৃদয় মানুষের সাহায্যে এক ভায়াল ইনসুলিনের ব্যবস্থা হলো। কিন্তু মহিলা যে ডোজে ইনসুলিন নেন, তাতে খুব বেশি দিন চলবে না। তাতেই তাঁরা খুব খুশি। বারবার ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, যদি আচ্ছে দিন সত্যিই আসে, তাহলে আবার দেখা হবে। তখনও আমরা কেউই জানিনা লকডাউন ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যেতে যেতে মহিলাটি আবার ফিরে এলেন। আমায় অবাক করে ছেঁড়া চটের ব্যাগ থেকে একটা নতুন হেলথ ড্রিংকস এর কৌটো বার করলেন। যেটার বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয় এটা খেলে বাচ্চার তিনগুণ বেশি বুদ্ধি ও শক্তি হবে। মহিলা তাঁর বিচিত্র ভাষায় জিজ্ঞাসা করলেন, 'যদি এটা রোজ দু-চামচ করে মেয়েকে খাওয়াই, তাহলে মেয়ের এই মহামারীতে কিছু হবে নাতো।' আমি গালাগালি দিতে গিয়ে থমকে গেলাম। কাকে গালি দেব? সর্বস্ব দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখতে চাওয়া ওই অশিক্ষিত মা-কে? ... ...
করোনা ছড়ানোতে অশীতিপরদের ভূমিকা একেবারে শূন্য। তাদের ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ নেই, খাদ্যতালিকায় প্যাঙ্গোলিন বা বাদুড় না থাকারই কথা। না চাইলেও তাদের বেশিরভাগই কোয়ারেন্টাইন্ড হয়ে থাকতে বাধ্য। থাকেনও প্রায় বারোমাস। চাহিদা বলতে পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাদ্য, বিশ্রাম, যত্ন, চিকিৎসা আর সবচেয়ে যা অধরা, ঐ কিঞ্চিৎ ভালবাসাবাসি। এর ঠিক উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে যৌবনের স্পর্ধা, যা অতিমারীর কালেও ভ্রমণ সূচি বা রাত-জাগা হুল্লোড়ে পার্টি বাতিল করে না । আমাদের বয়স অল্প, আমরা ফিট, আমাদের প্রাণে মরবার ভয় নেই, এই বিবেচনায় যারা অকুতোভয়। তাদের ওপরেই কিন্তু ঝুলছে এই ডেমোক্লিসের খাঁড়া - বয়স্ক প্রিয়জনকে মেরে নিজে বাঁচবে কিনা। সমস্যাটা বুড়োবুড়ি নিকেশ হয়ে গেলে ক্রমশ নীচের দিকে নামবে, বৌ না আমি, কে বেশি বাঁচবার অধিকারী ? আমিই যদি না থাকি তাহলে আমার সন্তানকে রাষ্ট্রের পক্ষে প্রয়োজনীয় করে গড়ে তুলবে কে ? এই প্রশ্নগুলো আসতে বাধ্য কারণ এই অতিমারী আমাদের সভ্যতার ভিত ধরে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ফিরে আসছে বেঁচে থাকবার অন্ধ আদিম দৌড়, যেখানে বাঁচবার একমাত্র অধিকারী সে, যে সবচেয়ে তন্দুরস্ত বা বলশালী। বাঁচো, শুধু নিজের জন্য বাঁচো, অন্য সমস্ত বিবেচনা তুচ্ছ হয়ে যাক তার কাছে। ... ...
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। কেমন ভাবে পাঠ করব আমরা তাঁর কবিতা? সে কবিতা একদিকে যেমন ভুবনায়নের কাউন্টার কালচার তৈরি করছে, তেমনই নিজে হয়ে উঠছে বিশ্বের মাইক্রোকজম। ‘কবিদের সমস্ত জায়গায় একটা সমান্তরাল এবং আদিগন্ত রাখিবন্ধনের ব্যাপার আছে। সেই জায়গাতে আমাকে শনাক্ত করার কাজটা কিন্তু তোমাদেরই করতে হবে,’ এমনই ছিল কবির নিজের অভিপ্রায়। লিখছেন হিন্দোল ভট্টাচার্য ... ...
প্রকৃতপ্রস্তাবে বর্তমানের বিজেপি হল ভারতীয় জনমনের প্রকৃত প্রতিফলন। এই সরকার দেশের উদার-গণতন্ত্রের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে জনগণকে একেবারে তার উলঙ্গ প্রতিলিপির সামনে সটান দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিজেপি দেশকে একটি বাইনারির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ... ...
তিনদিন পরেই প্রয়াত হলেন রমানাথ রায়। গভীর, শাণিত ও তির্যক তাঁর সৃষ্ট গল্প ও উপন্যাস। তথাকথিত বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসির ভেদরেখাও লঙ্ঘিত হয় প্রায়শ। সহমর্মিতা তাঁর সাহিত্যের বড়ো সম্পদ। ১৯৬৬। ‘এই দশক’ পত্রিকা প্রকাশ দিয়ে শুরু হয় ‘শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন’। ছিলেন তার প্রথম পাঁচ পদাতিকের একজন। লিখছেন আকৈশোর বন্ধু ও এ আন্দোলনের সহস্রষ্টা শেখর বসু ... ...
আমরা দুজনে ভাগ হয়ে যাই, একজন গাইড সহ দলটিকে নানাবিধ প্রশ্ন করতে থাকে। বিশেষত তারা যখন হেডগেওয়ারের কলকাতা পর্বের ছবিগুলির সামনে। অন্যজন আরএসএস হেডকোয়ার্টারের ‘আইন’ অমান্য করে ছবি তোলে, এবং সঙ্গে সঙ্গে তা হোয়াটসঅ্যাপে আমরা গ্রুপে শেয়ার করে দেয়। বলাবাহুল্য মোবাইল কেড়ে নেওয়ার বা জোর করে ছবিগুলি ডিলিট করার সম্ভাবনা ছিলই। এই ঘৃণ্য ঘটনার ছবি তোলা যাতে আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতার নিরীহ মুসলমানদের রক্তপাত করে ‘শৌর্য’ প্রকাশ করা যায়, তা আমাদের মানবিক কর্তব্য বলেই আমরা মনে করেছি। ... ...
মেঘনাদ সাহা। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জগতে স্মরণীয় নাম। কঠোর দারিদ্র ও ‘নিচু’ জাত হওয়ার অভিশাপ— এ দুয়ের সঙ্গে লড়াই করে বিজ্ঞানচর্চার শীর্ষ পরিসরে পৌঁছনর জীবনকাহিনি সমসাময়িক বঙ্গীয় সমাজের এক অনবদ্য দলিলও বটে। ঝরঝরে ভাষায় লেখা একটি বই। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক সুমিত্রা চৌধুরী ... ...
এই পরিস্থিতির সাথে আমি আগেও পরিচিত। আমাদের আর একজন গৃহ সহায়িকা অঞ্জুদিকে পাশের পাড়ার এক বাড়িতে বলেছিল, 'তুমি ডাক্তারবাবুর বাড়িতে কাজ করো। ডাক্তারবাবু রোজ জ্বরের রোগী দেখছেন। ওই বাড়িতে কাজ না ছাড়লে আমাদের বাড়ি আর কাজ করতে পারবে না।' অঞ্জুদি আমাকে হেসে বলেছিলেন, 'বললুম, আপনাদের কাজটাই তাহলে ছেড়ে দিই। তবে আপনারা জ্বর হলে কোথায় যাবেন? ডাক্তার কি দেখাবেন না?’ ... ...
-কুল ডাউন বাডি। স্যরি বাঙালি বাবু, তোমার এখনও অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। এই যে এখানে যত লোক দেখছ তার মধ্যে একশও পাবে না তোমার মতো। এরা সবাই বিশ্বাসী। যে কঠিন জীবন এরা কাটায় সেখানে দৈব মহিমায় বিশ্বাসী না হয়ে কোনও উপায় নেই। সো দে বিলিভ ইন মিরাকুলার হিলিং পাওয়ার অব দেবী গডেস ইয়ালাম্মা। ব্যাঙ্গালোরের আইটি হাব কিংবা কলকাতার শপিং মল আমার দেশ নয়। এখানে যা দেখছ, ভালমন্দ মিলিয়ে সেটাই ভারতবর্ষ। তোমার আমার দেশ। -তুমিও কি বিশ্বাস কর বালা? এই কুপ্রথায়? এত অমানবিক...বাচ্চা মেয়েগুলোকে নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলা… ... ...
১৯৮৭ সাল। বিজ্ঞানী ডেরেক লভলে পোটোম্যাক নদীর তীরে এসে সন্ধান পেয়েছিলেন সেই অদ্ভুত অধিষ্ঠানের। তারপরে ১৯৮৮ সালে কেনেথ নিয়েলসন পেয়েছিলেন দ্বিতীয় বিদ্যমানতার সন্ধান। এগুলি আর কিছুই নয়—কাদামাটিতে মিশে থাকা দুটি ব্যাকটেরিয়া মাত্র। কিন্তু তাতেই অনাবিল অব্যয় নিথর করে দিয়েছিল হৃদকম্পন। মানুষের জীবনের সবচেয়ে আদিম প্রশ্নটি হল, প্রাণ কী? উত্তরে সেদিন যেন অতলস্পর্শী ছুঁয়ে দিয়ে গেছিল অপলকে। ... ...
কবিতা কি সত্যি কখনো অস্ত্র হয় বা হয়েছে? মানে ঠিক যেভাবে দেখাতে চায় মেরুকরণের রাজনীতি, কবিকে নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে? নাকি তার জায়গাটা একটু আলাদা যা চিনতে না পেরে আমরা কবিতার প্রাসঙ্গিকতাকে ওই একই খোপে ঢোকাতে চাই ও বারংবার ব্যর্থ হয়ে নিরাশায় ভুগি। আদতে, সমালোচকদের মধ্যে একটা মাপকাঠি কাজ করেছে চিরকাল, যে, যথেষ্ট দেকার্তিয়ান না হলে, সেইটে আধুনিক রাজনীতির অংশ হয় না। ... ...
প্রথমবার জেলে যাওয়ার পরই সুধারাণী বুঝে গেছিলেন তার বিবাহিত জীবনের পরিণতি কী হতে চলেছে। তার মেধাবী স্বামী শুধু পড়াশোনা করার জন্যই কলকাতায় যান নি। পড়াশোনার পাশে পাশে দেশকে স্বাধীন করার সংকল্পও নিয়ে রেখেছেন। গোপন বিপ্লবী জীবন কাটানোর মাঝেমাঝে হয়ত গ্রামে এসে কোনো এক রাতের জন্য স্ত্রীর সাথে দেখা করতেন, আবার সকাল হলে চলে যেতেন। পুলিশ খবর পেলে বাড়িতে হানা দিত। এভাবেই চলত দিনের পর দিন। কখনো বা স্বমীর অনুরোধে কোনো বিপ্লবীকে লুকিয়ে রাখতেন বাড়িতে। তার পরিচর্যা করতেন। একদিনের জন্যও হয়ত বিবাহিত জীবনের সুখ লাভ করেন নি। তবু কোনোদিনও কোনো অভিযোগ করেন নি। দেশের কাজ মনে করেই হয়ত হাসিমুখে সমস্ত কিছু সহ্য করে গেছেন। যখন কালাপানির সাজা হল তখন থেকে দেশের কাজের পাশাপাশি সংসারের হাল নিয়েও দুশ্চিন্তা শুরু হল৷ বৃদ্ধ শ্বশুর তখন পুরোপুরি ছেলের বৌ এর ওপর নির্ভরশীল। বিয়ের সময় সুধারাণী পড়তেন ক্লাস এইটে। পড়াশোনায় বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর তখনকার প্রথা অনুযায়ী পড়াশোনা ছাড়তে হয়৷ এরপর স্বামী ঘরছাড়া থাকার সময়ে বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা শেষ করেন। সংসারে টানাটানি দেখা দিল চাকরির চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু একেই তো চাকরির পক্ষে বয়স বেশি হয়ে গেছিল, তারওপর যখন সবাই শুনতেন ফণীভূষণের স্ত্রী, তখন আরোই ভয়তে চাকরিতে বহাল করতেন না। হয়ত কয়েকমাসের জন্য কোথাও পড়ানোর কাজে ঢুকেছেন, ফণীভূষণের স্ত্রী পরিচয় বাইরে আসার সাথে সাথেই চাকরিটা খোয়াতে হত। এভাবেই কোনোরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংসার। ... ...
ভ্যাকসিন নিয়ে সবার মধ্যে এতো ভয়, অথচ করোনা নিয়ে কারও মন কোনো ভয় আছে বলে মনে হচ্ছে না। সব দলই ভোটের আগে জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ইশতেহারে দারুণ দারুণ কথা লিখেছেন। কিন্তু সেসব দলের মিছিল, জনসভা দেখলেই টের পাওয়া যায়, ওই কথা গুলি কেবল কথার কথা। নিশ্চিতভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন বাংলায় ঢুকে পড়েছে, তখনও তারা জনসভায়, মিছিলে ভিড় বাড়াতে ব্যস্ত। যেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্কের ব্যাবহার ইত্যাদির কোনো অস্তিত্ব নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নীতি- আদর্শগত নানা রকম পার্থক্য আছে, কিন্তু এই একটা ব্যাপারে তারা মোটামুটি একই রাস্তায় হাঁটছে। ... ...
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকাল রিসার্চ (ICMR) এর স্বীকৃতি পেলে বাজারে আসতে চলেছে COVID 19 সনাক্তকরণ আর এক সহজ ও দ্রুত উপায়, Chitra GENELAMP-N. তিরুবনন্তপুরমের শ্রী চিত্রা ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজির একটি দল ডঃ অনুপ ঠেক্কুভীত্তিল এর নেতৃত্বে RT-LAMP (Reverse Transcription Loop Mediated Isothermal Amplification) রাসায়নিক বিক্রিয়া কে কাজে লাগিয়ে এই দ্রুত সনাক্তিকরণ কিটটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা সর্বাধিক ২ ঘণ্টা র মধ্যে এর মধ্যে SARS Cov2 ভাইরাস এর N-জিন টির উপস্থিতি রোগী র অনুনাসিক বা লালারস থেকে সনাক্ত করতে সক্ষম হবে। এই সনাক্তিকরণ প্রক্রিয়া র জন্যে যে যন্ত্রাদি দরকার তার মুল্য হবে আয়াত্বের মধ্যে, সাথে সাথে এই পরীক্ষার উপাদান গুলি ও খুব খরচ সাপেক্ষ নয়। ডিপার্টমেন্ট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি র অধীনের এই প্রতিষ্ঠানের গবেষক ডঃ অনুপ আশাবাদী যে রোগী পিছু মাত্র ১০০০ টাকায় এই পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। যা এখন বাজার চলতি পরীক্ষার তুলনায় বেশ সস্তা এবং দ্রুত। ... ...
জামিনে মুক্ত বারোটি বর্ণহিন্দু পরিবারের পুরুষ, মহিলা, এমনকী নাবালকরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে সুরেখা, সুধীর, রোশন, আর সতের বছরের প্রিয়াঙ্কার ওপর। ভাইয়ালাল সেই সময় বাড়ির বাইরে ছিলেন, বাঁচাতে পারেননি তাঁর পরিবারের কাউকে। বাড়ি থাকলেও বাঁচাতে পারতেন বলে মনে হয় না। হয়ত নিজেই বাঁচতেন না। বর্ণহিন্দু মহিলারা টেনে বের করে আনে সুরেখা, সুধীর, রোশন, প্রিয়াঙ্কার দলিত দেহগুলি, আর ছুঁড়ে দেয় তাদের পুরুষদের উন্মত্ত বাহুতে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হতে। ... ...
প্রথম যে জিনিসটা বোঝা দরকার, সেটা হচ্ছে ভারতবর্ষের কৃষির কোনো স্ট্যান্ডার্ড ফর্ম নেই। ভারতবর্ষের কৃষিব্যবস্থা প্রত্যেক জায়গায় বেশ কিছুটা আলাদা। যেমন ধরুন কেরালা। কেরালায় প্রায় প্রত্যেক কৃষকেরই একটা করে হোমস্টেড ল্যান্ড আছে। সবথেকে বোধ হয় বড় কাজ, যেটা সিপিএম গভর্নমেন্ট করেছিল সেটা হচ্ছে হোমস্টেড ল্যান্ড দেওয়া। ওয়েস্টবেঙ্গলে তার যে করেস্পন্ডিং কাজটা সিপিএম করেছিল, সেটা হচ্ছে গিয়ে যেটাকে বলে ওই জমিতে ভাগচাষিদের সত্তা দিয়ে দেওয়ার কথা। আমি যে সময়টায় ঘুরে দেখেছিলাম সেই সময় থেকে শুরু হয়েছিল নকশাল আন্দোলনের, পরে যাতে ভাগচাষিরা শুধু তাদের ভাগ পায় এমন নয়, তাদের জমিতে মোটামুটি একটা থাকার ব্যবস্থা হয়। আমি তখন প্রথম লক্ষ করি, আমার তখনকার কিছু পুরোনো ছাত্র, আমার প্রথম জেনারেশন ছাত্র, যাদের মধ্যে কয়েকজন তখন মন্ত্রীও ছিল, এদের কৃষি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ... ...
ভারতবাসীর মনে হিমালয় পর্বতমালা এক রোমান্টিক ধারণায় অবস্থিত। আমরা ছোটবেলা থেকেই উত্তরে গিরিরাজ হিমালয় এবং তার ভাবগম্ভীর একটি মূর্তিকে কল্পনা করি ধর্মীয় অনুষঙ্গে। সেখানে দেবতাদের বাস, হিন্দু দর্শনের বহু তীর্থ এই হিমালয়ে অবস্থিত। হিমালয়- যা দুর্গম, যা উচ্চ, যা ভয়ংকর সুন্দর। কিন্তু কয়েক দশক ধরে যেভাবে উন্নয়নের নামে এখানে গাছ কাটা হয়েছে এবং ভয়ঙ্কর সব বাঁধ তৈরি করা হয়েছে তা নিয়ে সমতলের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। সময়ের সাথে সাথে স্থানীয়দেরও অনেকেই উন্নয়ন মানে চাকরি এই আপ্তবাক্য মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সুন্দরলাল বহুগুণার মত মানুষ বরাবর আন্দোলন করেছেন। সুন্দরলাল গোটা বিশ্বের কাছে চিপকো আন্দোলনের মাধ্যমে হিমালয়ের ভয়াবহ পরিবেশ ধ্বংসকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন কীভাবে অরণ্য ধ্বংসের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ায় কাজের সন্ধানে পুরুষদের দূরদূরান্তে যেতে হয়। থেকে যান মেয়েরা, যাদের উপর থাকে সমস্ত দায়িত্ব। ... ...