তিরিশ বছর আগে দু দিনের পরিচয়ে হলুদ, ধূলি ধূসরিত ওয়ারশ দেখেছি । রাস্তায় রাশিয়ান লাদা কিছু ট্রাবান্ত গাড়ি। তাদের কেশে যাওয়া ধোঁয়াতে উৎকট গন্ধ - সেগুলো টু স্ট্রোক এঞ্জিনের মোটর। যুদ্ধে আশি শতাংশ ওয়ারশ বিচূর্ণ হয়। সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ কিছু হয়েছে তবে দেওয়ালে অনেকদিন চুনকাম হয়নি। সেনাটোরস্কা ১৬ নম্বরে আমাদের অফিস । জাতীয় থিয়েটারের প্রায় উলটো দিকে। সে বাড়িও পঞ্চাশ বছর রঙ চুন দেখেনি। রাস্তা থেকে একটা গেট দিয়ে যেন কারো উঠোন পেরিয়ে দোতলায় অফিসে ঢোকা। ঝাকশেভো থেকে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে গেছে। সেই যে বেয়াতা, সন্ধ্যেবেলা একাকী ভারতীয়কে প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেখে সন্দিহান হয়েছিলেন, তিনি অ্যালানের খাস সেক্রেটারি। বেয়াতা মিটিং রুমের ব্যবস্থা করে দিলেন। কর্পোরেট ব্যাঙ্ক আর ব্যাঙ্কিং সম্পর্ক বিভাগ নিয়ে কুল্লে পনেরো জন এলেন আমার বাণী শুনতে । ... ...
বিগত উনিশটি কিস্তিতে বর্ণিত রসিকতার বেশির ভাগ বক্তা, নায়ক বা খলনায়কের নাম আমাদের অচেনা। কোন গল্পটা কে যে কাকে বলল তা কারো জানা নেই। সবটাই মুখে মুখে প্রচলিত, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ঘরানার মতো। তার ওপর কখনো রঙ চড়ানো হয়েছে, স্থান কাল পাত্র বদলে গেছে। সঠিক ফ্যাক্ট চেকিঙ্গের কোন উপায় নেই। তাতে অবিশ্যি স্বাদের কিছু ক্ষতি বৃদ্ধি হয় নি। কৌতুকের কোন তকমা লাগে না। ... ...
যে দেশে এক্কেবারে চলতি ভাষাতেই টুরিস্টকে বলা হয় ‘মুসাফির’ তার রোদ্দুর তো আলাদা হবেই। অন্ধকার আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে সবার আগে সেই কথাটাই মনে হল। আমার ভাঙাচোরা ফারসিই আমাকে বুঝতে দিয়েছে, সৈয়দ তার স্ত্রী তহমিনেহকে মোবাইলে জানাচ্ছে, ‘হিন্দ-এর মুসাফির এসে গিয়েছে। আমরা শিগগির বাড়ি পৌছাচ্ছি’। ‘মুসাফির!’ সে কি সহজ কথা! চকিতে মাথায় খেলে যায়– দিল-এ-ম্যান, মুসাফির-এ-ম্যান! ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ-এর ফারসি শিরোনামের সেই কবিতার গোড়ার পঙক্তিগুলি—‘প্রাণ আমার, মুসাফির আমার/হয়েছে যে আদেশ আবার/দেশ ছাড়ি, তুমি-আমি, আরও একবার।... ইরান শেষে আমাকে মুসাফির করলে! ... ...
সংস্কৃত প্রথম প্রেম। ইতিহাস দ্বিতীয়। ১৯৩০-এর দশকে খ্রিশ্চান মহিলাদের পক্ষে সংস্কৃত শেখা ছিল এক দুরূহ লড়াই। জিতেছিলেন। প্রথাগত পড়াশোনা ইংরেজি ও সংস্কৃততে। বল নাচের ক্লাস বয়কট করে চেয়েছিলেন উদয়শঙ্করের নৃত্যশৈলীর তালিম। হয়নি। বিপ্লবীদের গোপনে সাহায্য। বাড়িতে লুকিয়ে কমিউনিস্ট কর্মীদের আশ্রয়। এবং নিজের লেখালিখির কথা। স্কুলজীবন থেকে শেষ বয়স—স্মৃতিচারণ। আলাপে ইতিহাসের অধ্যাপক কুমকুম রায় ... ...
বইটি পড়তে পড়তে আচ্ছন্ন লাগে, প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হই। একেবারে তরতরে সাহিত্যিক বাচনে গল্পচ্ছলে যেন লেখা হয়েছে বিবরণগুলি। ফলত ইতিহাস হয়ে উঠেছে জীবন্ত, সজীব, নড়ে চড়ে বেড়ানো। আমাদের পড়া যাবতীয় পুরনো সাহিত্যকর্ম, নানা গল্প উপন্যাসে যে বিন্দু বিন্দু পার্টিশন-যাপন, তার যাবতীয় ফাঁক-ফোকর পূর্ণ করার দায় নিয়ে এসেছে এই বই। এই বই আসলে চেয়েছে নিজের শর্তে কথা বলতে, নিজের মত করে চলতে চেয়েছে গদ্যের ভেতর দিয়ে। কোন নস্টালজিয়াকে প্রশ্রয় দেয়নি, একপেশে গল্পও বলতে চায়নি - যেখানে কোনও একটি ধর্মের মানুষই উৎপীড়িত...। এখানে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ এই তিন গোষ্ঠীর মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখের গল্প থেকে যায়। এই গল্পগুলো জুড়ে জুড়ে একটা ছিন্নভিন্ন সময় ও ছিন্ন জনজাতির কথা চলে আসে। একরকম শারীরিক বেদনাবোধ জাগে, ভেতরে ভেতরে ক্ষত বিক্ষত লাগে - কেননা আমার পরিবারও পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ উচ্ছিন্ন পরিবার। ... ...
বহু মানুষ আছেন যাঁরা নিজেদের দাবিগুলো মুখ ফুটে বলেই উঠতে পারেন না, এঁদের মধ্যে অনেকে আছেন যাঁদের দাবি বিষয়ে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। দুর্ভাগ্যের কথা, আমরা যারা নিজের এবং অন্যের মন কী বাত নিয়ে খুব বাতচিত করি, তাদের কাছেও এই দাবি তুলতে না পারা অংশটার গুরুত্ব খুব একটা স্বীকৃতি পায় না। ... ...
সম্প্রতি, ১৯ মার্চ, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুর শহরে বাংলা ভাষাভাষী মানুষজনদের এক বিপুল সমাবেশ দেখা গেল। প্রায় লক্ষাধিক বাঙালি বাংলা ভাষাকে ভালোবেসেই একত্রিত হয়েছিলেন এমনটাই ভাবা যায়। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বাংলা ভাষার দাবি নিয়ে, বাংলা ভাষাটিকে ধীরে ধীরে বিদ্যালয় পঠনপাঠন থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং বাংলা ভাষার পুন:বহালের দাবি নিয়ে জামশেদপুর শহরের, গোপাল ময়দান, বিষ্টুপুরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন। জানি না, সরকারের টনক কতটা নড়বে কিন্তু এই দাবি চাইতে আসা মানুষজনদের দেখে খুব আশাবাদী। তবে কি ২১শে ফেব্রুয়ারির মত, ১৯ শে মে -এর মত আরেকটি দিন ১৯শে মার্চ সংযোজিত হবে ভাষা আন্দোলনে? বাঙালি অলস জাতি এই অপবাদ মুছে ফেলে শুধুমাত্র ভাষার দাবিতে জেগে উঠবে ঝাড়খণ্ডের বাঙালি? ... ...
ভারভারা রাও। তেলুগু ভাষার বিশিষ্ট কবি। জনমনে পরিচিত ‘বিদ্রোহের ভাষ্যকার’ হিসেবে। ভীমা কোরেগাঁও ও প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ অভিযুক্ত করেছে তাঁকে। কারারুদ্ধ কবি ভীষণ অসুস্থ। আদালতের রায় প্রকাশিত হওয়ার আগেই কী জেলবন্দি অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হবে? এ প্রশ্ন তাড়া করছে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকলের বিবেক। এতাবৎ প্রশাসন নির্বিকার। এই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রকাশিত হল তাঁর কবিতার বাংলা তরজমার একটি সংকলন। পড়লেন তৃষ্ণা বসাক। ... ...
এই মিছিলে অংশগ্রহণ করতে সুদূর সিংঘু সীমান্ত থেকে এসেছিলেন সদ্য একশো দিন অতিক্রম করা নজিরবিহীন কৃষক আন্দোলনের সাত জন নেতা। পাঞ্জাবের 'ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন' সংক্ষেপে বিকেইউ এর ডাকোণ্ডা শাখার পক্ষ থেকে ছিলেন মনজিৎ ধানের, ডোয়াবা শাখার তরফে এসেছিলেন মনজিৎ সিং রাই। রাজস্থানের 'গ্রামীণ কিষান মজদুর সভা'র তরফ থেকে বক্তব্য রাখেন রজনীত সিং। এছাড়াও ছিলেন অভিমন্যু কোহার, হরিয়ানার সংযুক্ত কিষান মোর্চার প্রতিনিধি এবং কীর্তি কিষান ইউনিয়নের রামিন্দর সিং। ... ...
বিয়ের দিন স্থিরই হয়ে গেল, শুভস্য শীঘ্রম যেমন বলেছিল আকবর। জ্যৈষ্ঠ পেরিয়েই। আষাঢ়ের তেসরা। আসমতুন্নেসা মেয়েকে নিয়ে এখন এই বাড়িতেই থাকছে, বিয়ে মামাবাড়ি থেকেই হবে। নজরুলের আত্মীয়স্বজনদের খবর দেওয়া হবে কীভাবে, জানতে চাইলেন আলতাফ আলি। আমার কোন আত্মীয় নেই, বলে নজরুল, কুমিল্লার সেনগুপ্ত পরিবারই আমার আত্মীয়, বিরজাসুন্দরীই আমার মা, ওঁদের জানান। আলতাফ বলে, তাহলে কুমিল্লায় চলেই যাই, ওঁরা তো আমাদেরও আত্মীয়, বিশেষ করে আকবরের আর আমার। নজরুল বলে, যাবার আগে আমাকে বলবেন, আমি একটা চিঠি লিখে দেব মাকে। ... ...
জয়া চৌধুরী অনুদিত মেক্সিকোর কবি খাইমে সাবিনেসের কবিতা। ... ...
আমার পাশে যে বসে ছিল তাকে বললাম, “এ তো গামা গাছের ডগাগুলো কেটে দিয়ে গেছে মনে হচ্ছে! সাদা প্লেটে চিজ ছড়িয়ে দিলেই কি গরুর খাবার মানুষের হয়ে যায় নাকি!” পাশের জন বলল “হোয়াট ইজ গামা?” তাকে অনেক কষ্টে আমার বিখ্যাত ইংরাজিতে বোঝালাম, যে এর সাথে ভাস্কো-দা-গামা-র কোন সম্পর্ক নেই। বাড়ির গরুতে খাওয়ার জন্য আমরা জমিতে গামা (বাংলায় অনেক জায়গায় একে গমা বা গ্যামা বলা হয়) চাষ করতাম। এমনি সবুজ লকলকে ডাঁটির মত গাছ জমি থেকে কেটে এনে বাড়িতে খড় কাটার বঁটিতে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কুচাও। আমাকে বলা হল এগুলোকে নাকি ‘অ্যাসপারাগস’ বলে! গামা গাছের ডাঁটির বিজ্ঞান সম্মত নাম যে অ্যাসপারাগস, সেটা কে আর জানত! ... ...
কুররাতুলায়েন হায়দার। স্বাধীনতা-পরবর্তী জমানায় উর্দু সাহিত্যের বহুধাপ্রবাহিত আধুনিক ধারার একটি বিশেষ স্রোতের অন্যতম পথিকৃৎ—যা প্রবাহিত মূলত মনের বিচিত্র উপত্যকা দিয়ে। বহুবর্ণময় তাঁর সাহিত্যের চরিত্রগুলি—এদেশের, বিদেশের, নানা জাতের, নানা শ্রেণির, নানা ভাষার। তেমনই কথাসাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় ছিল তাঁর অবাধ গতায়াত— উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাটক, ভ্রমণকহিনি। সমসাময়িক অন্যান্য উর্দু সাহিত্যিকের থেকে তাঁর দরিয়ার প্রবাহ ভিন্নতর। আলোচনায় লেখক ও উর্দু থেকে বাংলা ভাষায় সাহিত্য-তরজমাকার সঞ্চারী সেন। ... ...
নারী অধিকার”, “গণতন্ত্র”, “জাতির গঠন” এগুলি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর লক্ষ্য ছিল, এসব কথা আফগানিস্তানে ঠাট্টারই নামান্তর! আমেরিকা আফগানিস্তানে এসেছিল এই অঞ্চলের স্থিতি বিঘ্নিত করে একে সন্ত্রাসবাদের মুক্ত-ভূমিতে পরিণত করার মাধ্যমে এর আশেপাশে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলির, বিশেষত চিন এবং রাশিয়াকে ঘিরে ধরার পাশাপাশি এই অঞ্চলের স্থানীয় অর্থনীতিকে ছিবড়ে করে শুষে নেবার লক্ষ্য নিয়ে। অবশ্যই এরকম ভাবার কোন কারণ নেই যে মার্কিন সরকার নিজেদের বাহিনীর এরকম লজ্জাজনক অপসারণ চেয়েছিল, যার ফলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আবার মার্কিন বাহিনীকে ফিরে আসতে হল বিমানবন্দরগুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যাতে তাদের আমলা এবং অন্যান্য কর্মীদের নিরাপদে বার করে নিয়ে যাওয়া যায়। আমরা বিশ্বাস করি, আমেরিকা আফগানিস্তান ছেড়ে গেছে তাদের তৈরি পশুদের (তালিবান) কাছে পরাজিত হয়ে নয়, ফিরেছে তাদের নিজস্ব দুর্বলতার কারণে। এই অপসারণের দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে বলে আমরা মনে করি। ... ...
মণিশংকর মুখোপাধ্যায় ওরফে শংকর। অসাধারণ প্রসাদগুণ তাঁর লেখনীতে। বিপুল তাঁর জনপ্রিয়তা। নিটোল গল্প বলেন। কখনো ঝুঁকি নেন না। নাগরিক সমাজের কয়েকটি স্তরকে খুব ভালোভাবে চেনেন। চারপাশের মানুষগুলিকে খুঁটিয়ে দেখার ক্ষমতা তাঁর আছে। তাঁরা কী পড়তে চান, তিনি তা জানেন। তাই পরিবেশন করেন। লিখেছেন রাহুল দাশগুপ্ত ... ...
উত্তর, মধ্য ও পূর্বভারতে খিচুড়ির পূর্বজর সন্ধানে ঘোরাফেরার পর এবার এবার উঁকিঝুকি বিন্ধ্যাচলের ওপারে। প্রাচীন কালে। আর ওমনি প্রবেশ এক পরমাশ্চর্য দুনিয়ায় — সঙ্গম সাহিত্যে। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
বহুবছর পরে 'দ্য প্যাশন অ্যাকোর্ডিং টু জি.এইচ.' পড়তে গিয়ে এই ঘটনাটা অংশুমানের মনে পড়বে: অংশুমানের মা চিরকালই ভীষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন লোক; ফলে বর্ষাকালে তার খুব সমস্যা হতো। অর্ধেকদিনই খাবার সময় পোকামাকড় এসে পড়লে না খেয়ে উঠে যেত। একদিন রাতে, অংশুমানের মা তখন কলেজে পড়ে, দিদু থালায় ভাত বেড়েছেন দুজনের, হ্যারিকেনের আলোয় খেতে খেতে হঠাৎ একটা আরশোলা দিদুর পাতে এসে পড়ল। দিদু তখন ভাবলেন আরশোলাটাকে পাতের পাশে ফেললে মেয়ের চোখে পড়বে এবং সঙ্গে সঙ্গে থালা ফেলে উঠে যাবে, সারারাত খালিপেটে থাকবে মেয়েটা; ফলে তিনি কোনো শব্দ না করে ভাতসুদ্ধু আরশোলাটাকে মুখে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন। ... ...
পশ্চিমবঙ্গের কাছ থেকে বাংলাদেশ যেমন তিস্তার জল পাওয়ার দাবী তুলেছে, তেমনি আমাদেরও একটি উল্টো দাবী জানানোর জায়গা রয়েছে বাংলাদেশের কাছে। সেটাও নদীর জল নিয়েই। যে সমস্ত নদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকে, তার মধ্যে যেমন দক্ষিণ দিনাজপুরের আত্রেয়ী, যমুনা আর উত্তর দিনাজপুরের কুলিক রয়েছে। এই নদীগুলোর ওপর ‘রাবার ড্যাম’ দিয়ে জল আটকে রেখেছে বাংলাদেশ। এটি হল জাপানি টেকনোলজি। দেখতে অনেকটা লম্বা টিউবের মত। যেখানে বাতাস ভরে ড্যামের আকৃতি তৈরি করে নদীর জলের প্রবাহ রোধ করা হয়। আর তার ফলে ভারতের দিকের নদী পাড়ের স্থানীয় এলাকার মানুষেরা জল সংকটে ভুগছে। চাষের ক্ষতি হচ্ছে। ... ...
সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকের উত্তরসূরী হিসেবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, অপর্ণা সেন বা আরও পরে ঋতুপর্ণরা যখন আলোচনায় চলে আসেন, তখনও কিন্তু কিছুটা ব্রাত্যই রয়ে যান তপন সিংহের মতো কিছু পরিচালক! হ্যাঁ, তপন সিংহ হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি এপার আর ওপারের মাঝের সেই সবুজ, স্নিগ্ধ এক ভূখন্ড যেখানে রয়ে যায় অদ্ভুত এক ভালোলাগা এবং সে ভালো লাগা কেবলই এন্টারটেনমেন্টজনিত ভালো লাগা নয়, সে ভালো লাগায় রয়ে যায় চিন্তার কিছু স্পেস, শিল্পের কিছু অনিবার্য শর্তপূরণ! সম্ভবত 'দ্য হিন্দু' পত্রিকা তাঁর 'দাদাসাহেব ফালকে' পাবার পর তপন সিংহের সিনেমা নিয়ে লিখেছিল – 'Complex ideas through a simple narrative.....!' হ্যাঁ, সত্যি তিনি পারতেন। তাঁর ছবির সুদীর্ঘ তালিকা থেকে মাত্র একটি ছবিকে আলোচনায় আনতে চাই, উদাহরণ হিসেবেই, 'গল্প হলেও সত্যি'! কোনো এক আলাপচারিতায় তপন সিংহ একবার বলেছিলেন – 'আমার হতাশ লাগে এই ভেবে যে দর্শক ছবিটাকে শুধুই হাসির ছবি হিসেবে নিল'! একজন পরিচালক হিসেবে তো হতাশ হবারই কথা এবং ন্যায্য কারণেই। যারা সিনেমাটি দেখেছেন, আরেকবার ভাবুন তো, 'গল্প হলেও সত্যি' কি নেহাতই হাসির ছবি? নির্ভেজাল হাসি আর এন্টারটেইনমেন্ট? রবি ঘোষের অসামান্য অভিনয়ে বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে বাঙালি দর্শকের কি একবারও মনে হয়নি, আপাত হাসির আড়ালে সিনেমাটির এক অন্তহীন স্পেস তৈরির কথা? প্রথম যখন 'গল্প হলেও সত্যি' দেখি, বয়েস নেহাতই কম। সেসময় নির্ভেজাল হাসি নিয়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন সিনেমাটা বেশ কয়েকবার দেখি, অনুভব করেছি একজন কুশলী পরিচালক কীভাবে তৈরি করেন ভাবনার স্পেস!ইংল্যান্ডের পাইনউড স্টুডিও থেকে সরাসরি কলকাতা, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে পরিচালনায়, বাংলা সিনেমার দর্শক পেল এক পরিচালককে যিনি হেঁটে গেলেন মাঝের এক পথ বেয়ে। পাশাপাশি দু'টো পথেরই হাতছানি ছিল। বিস্তর আন্তর্জাতিক ছবি দেখার সুবাদে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ঘরানাগুলোর সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় পরিচয়, অন্যদিকে তথাকথিত আপাত জনপ্রিয়তার হাতছানিও ছিল। দুটো রাস্তাকেই সহজে এড়িয়ে মাঝামাঝির যে পথ তিনি বেছে নিলেন তাতে ঝুঁকি নেহাতই কিছু কম ছিলনা। 'গল্প হলেও সত্যি' দেখতে দেখতে তপন সিংহ সম্পর্কে সেই মন্তব্য বোধহয় ভীষণভাবে অনুভব করি – " A magical union of liberate art and critical populism made Tapan Sinha middle-of-the road – Bengali Cinema. যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে স্টোরিলাইন সেই ধনঞ্জয়ের আবির্ভাব থেকে সিনেমার শেষদৃশ্যে অদ্ভুত এক ধোঁয়াশার মধ্যে তার মিলিয়ে যাওয়া, পুরোটাই এক রহস্যময়তায় ঘেরা! কোথা থেকে এল ধনঞ্জয়, নানান প্রশ্নে তার হেঁয়ালি মাখানো উত্তর, একসময় চলেই বা গেল কোথায়, কোনো উত্তরই যনো প্রাত্যহিক বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনা, কিন্তু ভীষণভাবেই প্রাত্যহিকতায় গড়ে ওঠে এ কাহিনীর নির্মাণ, চরিত্র, আঙ্গিক! ... ...
আমাদের সবাইকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনেকগুলো অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। প্রতিটি অধ্যায় হলো এক একটি জীবন। হোক তা ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী। ছোট্ট এই জীবনে সুখে দুঃখে পাশে থাকার কত আলপনাই আমরা এঁকে ছিলাম, কত ছেলে মানুষই না করেছি, ভাবলে এখন অবাক হই। এই লেখাটি কোনো একাডেমি ধাঁচের রচনা নয় জাস্ট একটা ডায়েরির মতো। জয়ন্তীকে নিকট থেকে দেখার এবং ওর গভীর সান্নিধ্যের কিছু বিশেষ সময়ের, বিশেষ মুহূর্তকে, ছোট ছোট গদ্যের কোলাজে এক ফ্রেমে তুলে ধরার প্রয়াস। ... ...