মাউন্ট বাউতে ভাল আছিস তাহলে? অ্যাবসিন্থ হাতে নিয়ে গুছিয়ে বসে জিজ্ঞেস করল ডিওয়েন। সেসব কতা বাদে হবে। আগে তোর কথা ক’ তো দেকি। শিকাগোর কতা। শুনেচি ওধারে নাকি সাদা আর কালোর মদ্দে কোন ফারাক নেই কো। বলতে গিয়ে একবার থমকাল ডিওয়েন। নেই আবার আছেও। সেরকম না হলে আমি আবার ফিরে এলাম কেন। তবে হ্যাঁ, সেগ্রিগেশন নেই সেটা ঠিক। স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে মুচকি হাসল সে। আমি যখন ট্রেনে করে যাচ্ছিলাম, ট্রেন যেই ইলিনয় ঢুকেছিল, আমি কি করেছিলাম বল তো একবার? কি? সিধা ঢুকে গেলাম সাদাদের কামরায়। একটা অদ্ভুত কথা কি জানিস, আমাদের এই দক্ষিণের শহরে থেকে থেকে আমরা ভাবি – যা কিছু সাদাদের, সব বুঝি ভাল। ওদের বাগানওলা বাড়ি, জামা কাপড় ধোপদুরস্ত, মেয়েরা হাঁটছে মাটির দু’ ইঞ্চি উপর দিয়ে – ওদের দিকে তাকালে পর্যন্ত গায়ের চামড়া খুলে নেবে। আর আমাদের নিগ্রোদের সব নোংরা, ভাঙাচোরা। অথচ ওই কামরায় ঢুকে কি দেখেছিলাম বল তো? কামরার মেঝেতে যত কাগজ, খেয়ে ফেলা উচ্ছিষ্ট, কি নেই! ঠিক আমাদের নিগ্রোদের কামরার মতই গন্ধ। সাদা মেয়েরাও বসেছিল সেই কামরায়, ওই নোংরার মধ্যেই। পা পুরোদস্তুর মাটিতে। They also piss and shit like us. ... ...
আজ ষষ্ঠী, রাত ফিকে হলেই সপ্তমী। ভোট, ভাইরাস আর ভিড়ের ভয়েবচ সামলাতে না সামলাতেই এসে পড়েছে আরও একটা উৎসবের উপলক্ষ্য। আর এই বিস্তীর্ণ মানচিত্রের কোথাও কোথাও আলো ক্রমে আসিতেছে, আর তার পাশে মঞ্চের বাইরে মাটিতে, আলোর বৃত্তের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেউ কেউ। নতুন নতুন গল্প শুরু হবে এখন-ই, সুতোর টানে আস্তে আস্তে জীবন্ত হয়ে উঠবে এক-এক করে চরিত্র। আসুন তাহলে এই ক'টা দিন, প্যান্ডেলের বাইরে দু'টো চেয়ার টেনে একটু বসা যাক নিরিবিলি আড্ডার মেজাজে, এই তো আমরা-ই ক'জন ... আসুন তার এক ফাঁকে পর্দা তুলে উঁকি মারি মঞ্চের ভেতরে ও বাইরে, ভিড় ছেড়ে চলুন এসে বসি ইন্টারনেটের এই ঠেকে। একটু একটু করে জমে উঠুক কথা ও বার্তা। এবারের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হবে আগামী কিছুদিন ধরে, উৎসবের পুরো মরশুম জুড়েই যতটুকু পুজোর গন্ধ গায়ে মেখে নেওয়া যায়। চোখ রাখুন গুরুর শরৎ ২০২১-এর পাতায়, প্রতিদিন নতুন লেখা জুড়ছে, জুড়বে। পড়তে থাকুন রয়ে সয়ে। ভাল লাগলে ভাগ করে নিন, না লাগলেও। ... ...
দুর্গাপুজোর সময় থেকেই আপনারা নিশ্চই এরকম অনেক ছবি দেখেছেন যেখানে মডেলরা বিভিন্ন দেবীর সাজে ছবি তুলেছেন। সেরকম কিছু ছবি দেখে আপনারা নাক সিঁটকেছেন, কিছু দেখে ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন. কিন্তু আমি বাজি রেখে বলতে পারি, এই লেখার সঙ্গে যে ছবিগুলি আছে সেরকম আপনারা আগে কোথাও দেখেননি। কেন বলুন তো? এই ছবিগুলোর যিনি মডেল তিনি কোনো মহিলা নন বরং একজন পুরুষ। তাঁর নাম সৌরভ গোস্বামী। কী, একটু চমকে গেলেন তো? চমকানোরই কথা! এই চমক, এই ব্যতিক্রম দিয়েই শেষ হল এবারের উৎসব সংখ্যা। ... ...
গুচ্ছকবিতা - আনন্দগামী বাস থেকে ... ...
দুর্গাপূজার আগে আগে মিস্ত্রী আনা হতো ধান রাখার কড়োই তৈরি করার জন্য। তাদের পাণ্ডা ছিল শীতল কাকা। তারা এসে অনেকদিন থাকতো, খেতো, আর কড়োই বুনতো। এই কাজটা সবাই পারে না। একটা কড়োই বুনতে অনেকদিন সময় লাগতো। মড়াই বোনা বরং অনেক সহজ। মড়াইটা খড় পাকিয়ে বিচালি তৈরি করে বুনতে হতো, আর কড়োই বাঁশের বাতা দিয়ে। মড়াই নিয়মমতো ছোট-বড় করা যেতো। কড়োই একবার তৈরি হয়ে গেলে আর কিচ্ছুটি করা যেত না । -- " বুঝলা দাদুভাই, ষাট মণ, আশি মণ, নানা মাপের কড়োই হইতো। যতো বড় পরিবার, যতো সম্পন্ন গিরস্থি -- তত বড় কড়োই। " প্রথমে মাটিতে বাতা পুঁতে পুঁতে গোল করে পানের ডাবরের মতো একটা ফ্রেম বানানো হতো। তারপর তারমধ্যে আরো সরু সরু বাতা দিয়ে দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করে কড়োই বোনা হতো। ঝুরি, চুপড়ি, ধামা বানানোর মতোই একটা পদ্ধতি। কড়োইয়ের ফ্রেম এতো বড় তাই দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া যেতো না। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়ি হলে, দড়ি দিয়ে বেঁধে পাঁচিল টপকে অনেক কষ্ট করে ভিতরে নিয়ে যেতে হতো। অনেক লোকও লাগতো তার জন্যে। এইসব কঠিন কঠিন কাজ করার সময় তারা মুখে নানা আওয়াজ করতো। গান করতো। শীতলকাকা যখন কাঠের কাজ করতে আসতো, ঠাকুমারা চুপ করে তার কাজ দেখতেন। জল থেকে কাঠ বা তালগাছের কাঁড়ি তুলে এনে সেগুলো ‘বাইশ’ দিয়ে কি সুন্দর মসৃণ করে ছুলে ছুলে দরজা জানলার ফ্রেম বানিয়ে ফেলতো। যন্ত্রগুলোর নামও শেখাতো শীতলকাকা। বাটালি, বাইশ, করাত, ছেনি, হাতুরি আরো অনেককিছু থাকতো তার ব্যাগে। -- "একটাই প্রশ্ন শীতলকাকা প্রত্যেকবার আমাগো জিগাইতো। “আচ্ছা কওতো, একটা ব্যাগে একশোটা যন্ত্র আছে, তা থেকে ‘বাইশ’টা তুইলা নিলে কটা থাকব ?” বাইশ বিয়োগ কইরাই উত্তর দিতাম। কাকা ঘাড় নাড়াইয়া কইতো, “উহুঁ হয় নাই , হয় নাই। ভালো করে ভাবো।” আমরাও চিৎকার কইরা কইতাম, “নিশ্চয়ই হইসে, তুমি ভুল কইতাসো।” সে বলতো, “না রে বোকা নিরানব্বইটা হইব। একটা যন্ত্রের নামই তো ‘বাইশ’।” প্রত্যেকবার এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হতেই হতো। অন্যেরা ঠিক বললেও, লানছু ঠাকুমা প্রতিবার গল্পটা শোনার জন্য, ভুল উত্তর দিতেন। কাকা ছিলেন তার নামের মতোই শান্ত শীতল। ... ...
সন্ধেবেলা এই তেলেভাজার ভ্যানটা নিয়ে আসে মা-মেয়েতে মিলে। দুটো সাতমহলার মাঝের গলিতে দাঁড় করিয়ে দেয়। সন্ধেবেলা তুষ্টিকে ফ্ল্যাট থেকে বার করে, বুটিকে নিয়ে আসে আজকাল নীলু। কুসুমের তেলেভাজার ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে উল্টো দিকে। সন্ধের পর মিন্টিকে ছেড়ে আর কোথাও বেরোতে চায় না শ্রেয়সী। মিন্টি অভিমান করে আজকাল। তবু আজ বেরোতেই হত। অনেকদিন বাদে উদয়ন এসেছে কলকাতায়.... ... ...
এ অধ্যায়ে স্ট্যানলে বর্ণনা করছেন এক আফ্রিকান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধ যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা। ... ...
মা রকমারি সরবৎ বানাতে পারত। দেশি লেমোনেড – লেবু চিনির সরবৎ তো ছিলই, এছাড়া কাঁচা আমপোড়া সরবৎ, পাকা আমের ভাজা মশলা দেওয়া সরবৎ, রোজ সিরাপ মিশিয়ে তরমুজের সরবৎ, মিষ্টি দইয়ের ঘোল, টক দই আর পুদিনার সরবৎ - এইসব। হাতিবাগানে সিনেমা দেখতে গেলে, বাবা একটা দোকানে গুঁড়ো বরফ দেওয়া আম আর দইয়ের সরবৎ খাওয়াত। আর ধর্মতলায় গেলে প্যারামাউন্টের সরবতের ভাণ্ডার তো ছিলই। সর্দি-কাশি হলে মা মিছরি, গোলমরিচ, তেজপাতা আর আদা ফুটিয়ে, গরম সরবৎ বানিয়ে, কাপে করে নিয়ে এসে বলত, খেয়ে নে। গলায় খুব আরাম হত। ... ...
আমরা যারা সেই ছুটিতে বাড়ি যেতে পারতাম না, তাদের জন্য গ্রেস হাউসে ক্রিসমাস-ইভে ডিনারের আয়োজন করা হত। আসলে আমরা একটা পরিবারের মতই ছিলাম – তাই আমাদের ওয়ার্ডেন ক্রিস এবং অফিস-কর্মী অ্যালেন-ক্যাথি তাদের পরিবার নিয়ে আমাদের সাথেই ওইদিন ডিনার করত, ক্রিসমাস ট্র্যাডিশনাল ডিনার। ডিনার করে রাতের দিকে আমি যোগ দিতাম জেন আর যোসেফের সাথে, মধ্যরাতের চার্চ সার্ভিসে। রাত বারোটায় চার্চে ওই দিন এক স্পেশাল প্রার্থনার আয়োজন করা হত – আমরা বাড়ি থেকে হেঁটে যেতাম হারবোর্ন চার্চে। সেই রাতের প্রার্থনা আমাকে বারে বারে মনে করিয়ে দিয়েছে মানুষের ধর্ম নয়, নিজেদের মধ্যে ভালোবাসাটাই বড় ব্যাপার – আর সমস্ত ধর্মের মূল কথা তাই। একই ভাবে আমার প্রিয় বন্ধু আহসানের সাথে রমজানের মাসের সময় ইফতার করতে যেতাম স্টুডেন্ট গিল্ডে – সেও সেই ভালোবাসার গল্প, ধর্মের ভেদাভেদের উর্দ্ধে। তবে সেই সব নিয়ে অন্য একদিন লিখব। ... ...
বলাই বাহুল্য, আমাদের নবতিপর ঠাকুমার ভালো নাম সুষমা হলেও শাকপাল্হার নামেই ডাক নাম ছিল ‘শুশনি’। বয়সে ছোট ছিল বলেই আমরা ‘ন্যাঙটা ভুটুঙ সাধের কুটুম’ তার ছোট বোনকে ‘ছুটকী ঠাকুমা’ বলেই হাঁকাহাঁকি করতাম। আমাদের দলে ভিড়ে বড়ঠাকুমাও সময় সময় তার ছোটবোনকে ‘ছুটকী' নামেই সম্বোধন করত। তা, ঘাসের ডগায় ‘কাঁকর-পড়া’ শুরু হলে, ‘বিরি বাইগন’ গাছে মাকড়শার জালের উপর হিলঝিল করে ‘কাঁকর’ পড়লে – সুবর্ণরেখা নদীধারে কারিকুরি পাখিরা এসে মেলা বসালে, হি-হি ঠান্ডা হাওয়া চালালে – আমাদের নবতিপর ঠাকুমাও কেমন যেন আনচান করে – - এই বুঝি সে আসে – আসে – - কে? কে ঠাকুমা? - কে আবার! তোদের ছুটকী ঠাকুমা। অ্যাই! অ্যাই ললিন! অ্যাই অ্যাই ছিমন্ত! যা না রে! টিক্কে আগেই যা, দেখবু ‘ধঁচা-বঁধা’ গাড়ি করি ছুটকি আসেটে। ... ...
এরপরে কৃষ্ণ যখন তার বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে বা এমনি কথা বলছে, সেই ভাষ্যও খুব কনভিন্সিং – কেমন অবলীলায় তথাকথিত বাংলা স্ল্যাঙ ব্যবহার হচ্ছে, ঠিক এমনটা করেই তো আমরাও কথা বলেছি বা বলি! এতো আমাদের নিজেদেরই গল্প - নড়েচড়ে বসি! তারপর চাকুরীর ট্রান্সফার নিয়ে টাকা-পয়সা খাবার ব্যাপারটা গল্পে দেখা দিয়ে যায় – ওদিকে দেখি প্রাইভেট মাষ্টার-দের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয়। এ সবই জীবনের বড় কাছাকাছি, বাস্তবেরও – ব্যাকগ্রাউন্ডে প্যানপ্যানে চেনা মেলোড্রামাটিক মিউজিক বা হিন্দী গান বাজে না। বরং শুরু হয় কীর্তন – সাত্যকির গলায়। এ জিনিস আগে দেখি নি, শুনি নি বাংলা সিরিজ বা সিরিয়ালে গানের এমন প্রয়োগও - প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। ... ...
ভাল ক্যামেরা হাতে নিয়ে “গ্রাম দেখাব” বলে শুট করতে গ্রামে চলে গেলে গ্রাম হয়তো ভালই দেখা যায়, কিন্তু সিনেমা তো ঠিক ফোটোগ্রাফির প্রদর্শনী নয়। নায়ককে "যাও বাবা, চোঙা ফুঁকে পাড়ার লোককে চাট্টি ভালোভালো কথা শুনিয়ে এস" বলে উপন্যাসের মাঠে খেলতে নামিয়ে দিলে যেমন ভালো সাহিত্য হয়না, তেমনই সিনেমা বা সিরিজ ভাল হতে গেলে ড্রোনে চড়ে ফোটোগ্রাফিক গ্রামদর্শনের চেয়ে অধিক কিছু প্রয়োজন। বস্তুত এ সিরিজে ড্রোনের ব্যবহার এত বেশি, যে, পরিচালককে নির্দ্বিধায় ড্রোনাচার্য আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দৃশ্যশ্রাব্যের কুরুক্ষেত্রে, এমনকি "ভালো খেলিয়াও পরাস্ত" হতে গেলেও সঙ্গে কিছু কুশলী অস্ত্রচালনাও প্রয়োজন। ন্যূনতম যেটুকু দরকার, তা হল টান-টান, নির্মেদ চিত্রনাট্য। পরিচালনা এবং সম্পাদনার ক্ষেত্রে একাধারে দরকার মমত্ব এবং কঠোর ও নির্মম কুশলতা। ... ...
এক যে ছিলো মফঃস্বল। নাম তার ফুলকুমারী। এক ছোট্টো নদীর ধারে। চায়ের দোকান, বেকার ছেলে পুলে আর তাদের খিস্তিখামারীর খুনসুটি। যেমনটা হয় আর কি। বিরহী-ও একটা গ্রামের নাম। বাংলার গ্রাম। অনেক পথ পেরিয়ে, ধূ ধূ রাস্তা এসে শেষ হয় এক নদীতে। সে নদী পেরিয়ে আবারও তেপান্তর পার করে তবে গ্রাম বিরহী। আর তার টাঁড় জমির মাঝে এত্তোটুকুন বিরহী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই অবধি পড়ে একটা ছবি ভাবুন। দেখবেন নদীর ধারে গাছ গাছালিতে ভরা সবুজ ক্ষেতের মাঝে ভেসে থাকা মাটির ঘর জেগে উঠবে চেতনে আর সোঁদা মাটির গন্ধ পেতে থাকবেন। ... ...
এই অজানা, অনামী মুন্সি বা পণ্ডিতরাই অনুবাদে আসল ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই সমস্ত আইনের পুস্তিকাগুলো যে পণ্ডিতদের অনুবাদ, তার বড় প্রমাণ – সব পৃষ্ঠার ওপরে ‘শ্রীশ্রীদূর্গা সহায়’, ’শ্রীশ্রীহরি’ ইত্যাদি স্মরণিকা পাওয়া গেছে। কিন্তু নিজেদের অধিকারের বলে ইংরেজ ওপরওলারা অনুবাদের ধরণ, শব্দের ব্যবহার ঠিক করে দিতেন। আর সেখানেই সমস্যার জন্ম শুরু। হ্যালহেডের প্রভাব ও আধিপত্য এইসব ইংরেজ ‘অনুবাদক-অফিসার’দের ওপর প্রচণ্ড ছিল। আর এই হ্যালহেডই প্রথম থেকে প্রচলিত বাঙলা-আরবি-ফার্সি বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন। কঠোরভাবে নির্দেশ ছিল আরবি-ফার্সি চলিত (অসাধু) বাঙলা বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারের জন্যে। ফলে, এই সময় থেকে এই অনুবাদগুলির মাধ্যমে আরবি-ফার্সি শব্দ বাদ পড়া শুরু হল এবং সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বাড়তে লাগল। ... ...
দুই তিন বছর আগের কথা। মেয়ের পাঠ্য বইগুলি নাড়াচাড়া করতে করতে প্রথম হাতে এল ‘সহজ পড়া’ প্রথম পর্ব, লেখক সুদেষ্ণা মৈত্র। বইটা মেয়েকে পড়াতে পড়াতে কেমন ভালো লাগতে শুরু করল। তারপরেই শিশু সাহিত্য সংসদের ক্যাটালগ খুঁজে সংগ্রহ করলাম ‘সহজ পড়া’ দ্বিতীয় পর্ব। এইবার আরো মুগ্ধ হলাম। সেই ১৯৯৭ সালের এক ডিসেম্বর মাসে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সুদেষ্ণা মৈত্রের ‘সহজ পড়া ’ বইটির দুটি খণ্ড। প্রকাশক শিশু সাহিত্য সংসদ। আপাতভাবে শিশুপাঠ্য এই বইদুটি বিভিন্ন বিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকার অন্তর্গত। কিন্তু এই দুটি বই পাঠ্যতালিকার গুরুগম্ভীর গণ্ডি পেরিয়ে শিশুদের এক আশ্চর্য কল্পনার ভুবনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। ... ...
গামছা-সুকানকে চিনতে হলে আপনি হাওড়া থেকে বর্ধমানের মেন লাইনের লোকালে চেপে বসুন। মেমারির গায়ে গায়ে একটি ছোট স্টেশন নিমো। আগে ছিল দুটো লাইন – আপ-ডাউন প্ল্যাটফর্ম, ইদানীং মাঝে একটা তিন নম্বর শুরু হয়ে লোকের ভোগান্তি বেড়েছে। কারণ, পুরুষানুক্রমে যে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব সামলায়, সে হরদম অন্যমনস্ক হয়ে ভুল প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা করে। আর শেষ মুহুর্তে তার কোর্স-কারেকশনের পাল্লায় পড়ে বুড়োবুড়ি-মেয়েমদ্দ সবার হেনস্থা, দৌড়োদৌড়ি। তাই দৌড়তে দৌড়তে বাউরি বউ চেঁচিয়ে ঘোষণা করে – এবার গোপালকে ক্যাল দিতে হবে। নিমো গ্রামের গল্প - পড়লেন রঞ্জন রায়। ... ...
বৃত্তরৈখিকের শেষ পর্ব আজ। লেখকের কথায়ঃ "বৃত্তরৈখিককে উপন্যাস বলেছি, কিন্তু হয়তো ইতিহাসও বলা চলতো। মোটামুটি বিশ শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে সত্তরের দশকের গোড়ায় যাঁদের যৌবনের শুরু এবং পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে বেড়ে ওঠা, বাংলাভাষী সেই মধ্যবিত্তদের একদলের ইতিহাস এই রচনার রসদ। পাঠযোগ্যতার খাতিরে একটা গল্পের বুননের চেষ্টা এতে আছে – উপন্যাস নামের আকাঙ্খা সেখানেই – সেটা কতটা মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে পাঠকই তা বলতে পারবেন। কাহিনীর পাত্রপাত্রীদের পুর্ববর্তী প্রজন্মের কথা কোন কোন ক্ষেত্রে গল্পের খাতিরে এসে পড়লেও এই ইতিকথার প্রধান চরিত্ররা মোটামুটি ভারতের স্বাধীনতার সমবয়েসী। এবং এই স্বাধীনতার মতই আশাবাদিতা এবং নৈরাশ্য, আদর্শ এবং আদর্শচ্যুতি, মেধানিষ্ঠা এবং নিম্নগামী মেধা এখানে পাশাপাশি উপস্থিত।" ... ...
বেগুন ভাজার গন্ধে ঘরের পরিবেশ সহজ হয়ে আসছিল। টিউব লাইটের আলো ঘরময়, বারান্দার আলোর নিচে টবের ক্যাকটাস; কুন্তী, গুলগুলে সোফায় গোল্লা পাকিয়ে ঘুমোচ্ছিল, পুরোনো সব ছবির আড়াল থেকে মুখ বের করছিল গায়ে ছিট ছিট টিকটিকি- এই সব মুহূর্তগুলো অদ্ভূত- মিঠুর খিদে পাচ্ছিল আবার; মনে হচ্ছিল, যেন কিছুই ঘটে নি, যেন এ যাবৎ মৃত লোকজন বেঁচে বর্তে আছে- যেন অফিসফেরতা ট্রেন থেকে নেমে কমলালেবু, সন্দেশ কিনছে স্টেশনের কাছে, একটু পরেই বাড়ি ঢুকবে কড়া নেড়ে। বারান্দা থেকে মুখ বাড়ালেই যেন দেখা যাবে, মাণিক বেগুন বিক্রি করছে কুপি জ্বেলে। মুড়ি খাচ্ছে। মায়া জমছিল মিঠুর গলায়। ... ...