হাজার বছর ধরে ইহুদি পেটানো, পোড়ানো এবং খ্যাদানো এক জনপ্রিয় ক্রীড়ায় পরিণত হয়েছে। যিশু খ্রিস্টকে ক্রুসে চড়ানোর অপরাধের কলঙ্ক ইহুদিদের মাথায় লাগানো রইল। তার ওপরে ইউরোপের গ্রামে গঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় কেউ রটিয়ে দিলো ইহুদিরা খ্রিস্টান শিশুর রক্ত দিয়ে তাদের পুজো আচ্চা করছে (ব্লাড লাইবেল) অথবা তারাই ভয়ঙ্কর প্লেগের (ব্ল্যাক ডেথ) কারণ। আম জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি সোঁটা নিয়ে ইহুদি হত্যায় লেগে গেলো। খুন কা বদলা খুন। নাৎসিরা কোনমতেই এই খেলাটির পেটেন্ট দাবি করতে পারে না। বরং ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার মত আরেকটি নতুন ক্রীড়া উদ্ভাবনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ইংল্যান্ডের প্রাপ্য। জাতি ধর্ম দিয়ে চিহ্নিত করে কি ভাবে একটা গোটা টিমকে রেড কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করা যায় সে খেলা দেখাল ইংরেজ। সিনাগগ বন্ধ হয়েছে, আত্ম পরিচিতির জন্য ইহুদিদের বিশেষ ব্যাজ পরা আবশ্যক (সাড়ে ছশো বছর বাদে নাৎসিরা এঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে)। ... ...
টিভিতে সিরিয়াল দেখা বন্ধ রেখে এক দুই তিন করে ছায়াপিণ্ডরা সব পাশের বাড়ির ছাদে উঠে আসছিল। অন্ধকারে লাল বিন্দু দেখতে পেল বিপ্লব- সিগারেট ধরিয়ে মজা দেখছে সুধীন। এই সময় বাড়ির সামনে বলাইএর রিক্সা এসে দাঁড়িয়েছিল।মিঠুকে নামিয়ে দিয়ে ফিরে যাচ্ছিল বলাই। টেনে টেনে প্যাডেল করছিল। কমজোরি আলোয় এ'পাড়ার প্যাঁচালো গলি আবার তার সমস্ত রহস্যময় বাঁক নিয়ে উপস্থিত। অসম্পূর্ণ এক্কাগাড়ির মত লাগছিল বলাইএর রিক্সাকে। ভৌ ভৌ করল কালু। রিক্সার পিছনে দৌড়োলো খানিকক্ষণ। ছন্দা দ্রুত নামছিল সিঁড়ি বেয়ে - দরজা খুলে দেবে। বিপ্লব ওর পিছনে। মিঠু ঘরে ঢুকে ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলল সোফায়- সকালের পারফিউমের গন্ধ উবে গিয়ে অদ্ভূত গন্ধ বেরোচ্ছে গা থেকে- অচেনা আর অস্বস্তিকর। ... ...
যজ্ঞবাহারের নামে শুনে, আমার পেটের ভিতরে টিম টিম করে জ্বলতে থাকা খিদের আগুনটা যজ্ঞের আগুনের মত দপ করে উঠল। ঘনঘন হাতের ঘড়ি দেখছি। বউয়ের নজরে সেটা চলে আসতে জেরা শুরু হল: - এত ঘন ঘন ঘড়ি দেখার কি আছে? কিসের এত তাড়া তোমার? - না, মানে চারে চারটের মধ্যে হোটেলে ফিরতে হবে। - হোটেলে ফিরতে হবে? কেন? - তোমার মনে নেই, চেক ইন করার সময় বলে দিল যে বিকেল চারটে থেকে ছ’টার মধ্যে টেরাস রেস্টুরান্টে ফ্রি-তে স্ন্যাকস্ এবং ড্রিঙ্কস্ দেবে? - হ্যাঁ, শুনেছিলাম তো। কিন্তু এত সুন্দর মন্দিরের সামনে তোমার এখন খাওয়ার কথা মনে এল? এই তো খানিক আগে গন্ডেপিন্ডে লাঞ্চ করলে। এর মধ্যেই আবার এক্ষুনি বিকেলের স্ন্যাকসের দিকে নজর? আর তা ছাড়া মন্দির-স্থাপত্য দেখার থেকে তোমার বিকেলের স্ন্যাকস কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ... ...
প্রাণকৃষ্ণ দত্তের কলিকাতার ইতিবৃত্ত বইতে পড়লাম, কলকাতার বহু প্রাচীন পরিবারে এখনও সতীর সিঁদুর পুজো করা হয়। তার অর্থ, আমার মামার বাড়ির পরিবার, বইয়ে বর্ণিত তেমনই একটি পরিবার। জেনে-ইস্তক আমার শরীরের শিরা উপশিরা কাঁপছে। চোখে ভাসছে সেই দৃশ্য – বইতে যেমন পড়েছি, সালঙ্কৃতা, মাথায় সিঁদুর, পায়ে আলতা, আলুলায়িত কেশ, খালি পা, বধূকে পথ দিয়ে ধরে নিয়ে চলেছে নাপিতানীরা। সিদ্ধি জাতীয় কিছু খাইয়ে চেতনা কিছুটা বিস্রস্ত করে দেওয়া হয়েছে। পথে মাঝেমাঝেই লোকেরা এসে সতীর সিঁদুর নিয়ে যাচ্ছে। চিতার ওপরে মৃত স্বামীর মাথা কোলে নিয়ে চিতায় বসেছেন বধূ, ডালপালা দিয়ে ঢাকা দেওয়া হল। অগ্নিসংযোগ করা হল, লোক ভেঙে পড়েছে, চারিদিকে ঢাক-ঢোল বাজছে, জয়ধ্বনি উঠেছে – লেলিহান আগুনের শিখায় জ্বলে যাচ্ছে বাংলার উজ্জ্বল ইতিহাস, চৈতন্যের ভক্তিবাদ, সন্ন্যাসীদের শিবজ্ঞানে জীবসেবা – কান মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। ছি ছি ছি! আর আমি ভাবতে পারছি না। ছয় প্রজন্ম আগে, কে মা তুমি প্রাণ দিয়েছ? তোমার মৃত্যু নয়, জীবন জানতে চাই আমি। তুমি কোন বাড়ির মেয়ে, কি তোমার নাম? কোনো সূত্র তো নেই। ... ...
এ অধ্যায়ে ফের শুরু হল উন্যানয়েম্বের জীবনের বর্ণনা ও মিরাম্বোর সঙ্গে আর এক প্রস্থ যুদ্ধ। ... ...
ঘৃণায় উস্কানি দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদেরই মঞ্চ, দেখেও দেখেননি ফেসবুকের কর্তাব্যক্তিরা। ফ্রান্সিস হাউগেন মুখ খোলার পরে এ কথাটা প্রথম সামনে এল, এমনটা কিন্তু নয়। এমনকী হাউগেন আরও যেসব অভিযোগ এনেছেন, যেমন ফেসবুক যে মুনাফাকেই অগ্রাধিকার দেয়, নরেন্দ্র মোদী-সহ দেশবিদেশের দক্ষিণপন্থীদের নানা ভাবে সাহায্য করে এবং পক্ষান্তরে মুসলিম ভীতিকে চাড়িয়ে দেয়- এ বিষয়েও ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা একপ্রকার ছিলই। তথাপি হাউগেনের আন্তঃতথ্য যাচাই এবং ফাঁস করে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বহু কারণে। এই উন্মোচনের জেরেই হয়তো মার্কিন প্রশাসন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কংগ্লোমারেট ফেসবুক তথা মেটা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কিছু কঠোর বিধিনিষেধ আনতে পারে। ... ...
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার Technical Advisory Group on SARS-CoV-2 Virus Evolution (TAG-VE) গত ২৬ নভেম্বর সার্স-কোভ-২-এর যে নতুন প্রজাতি “ওমিক্রন” (গ্রিক অ্যালফাবেট অনুযায়ী নামকরণে ইংরেজির O) আফ্রিকায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে তাকে VOC (Variant of Concern) বলে অভিহিত করেছে। আমরা, ভারতের পৃথিবীর সমস্ত সাধারণ মানুষ, ঘরপোড়া গরু। তাই সিঁদুরে মেঘে ডরাই। আমরা এখনো স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে পারিনি। যতই “নিউ নর্ম্যাল”-এর মতো আদুরে নামে ডেকে একে স্বাভাবিক বানানোর চেষ্টা হোক না কেন, আমাদের এ জীবন পূর্নত অ-স্বাভাবিক। এজন্য এই মারণান্তক ভাইরাসের (২০১৯-এর নভেম্বরের শেষ থেকে যার নমুনা মিলছিল চিনের য়ুহান প্রদেশে) দাপট ২ বছর পার করলেও নতুন নতুন চেহারায়, নব নব অবতার রূপে হাজির হচ্ছে এই ভাইরাস। আমরা চাপা আতঙ্কে বাস করছি – আবার কোন প্রিয়জনকে হারাতে যেন না হয়। ... ...
পাড়ার বাসস্টপ পেরিয়ে একটু গিয়েই মেট্রো স্টেশনটা, প্ল্যাটফর্ম এর পাশের দোকান থেকে প্রতিদিন এক কাপ চা না খেলে দিন শুরু হয় না, ট্রেনে চেপে বসলাম, আমার পাশে একটা মেয়ে বসলো দুই স্টপ পর, প্রতি দিন ৩ ঘন্টা ট্রেনে বসতে ভালো লাগে না, লোক জন কথাও বলে না। মেয়েটার চুল ছোট করে ছাঁটা, মেটে লাল রঙের। মুখ দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু তারপর হঠাৎ, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "কিছু জিজ্ঞেস করবেন? এতক্ষণ ধরে কারো চোখে কারোর তাকিয়ে থাকা একটু ইমপোলাইট, তাই না?" ... ...
অবিনাশই অনিল বাবুকে দেখা করাল বুধন কাঠুরিয়ার সাথে। সে একগাল হেসে অনিল বাবুকে বলল "হে হে, চিন্তা করবেননি বাবু রাতের অন্ধকারে যা কাজ করবাে না কাকপক্ষীতেও টের পাবেনি। শুধু এইটা পাবাে তাে?" বুধন দুবার হাতের তর্জনী দিয়ে বুড়াে আঙ্গুলে টোকা দিল। অনিল বাবু ইঙ্গিতটা বুঝে গেলেন, পার্স থেকে একটা দুহাজার টাকার নােট বার করে বুধনের হাতে দিয়ে বললেন "এটা অ্যাডভান্স, এরপর আরাে পনেরাে আছে।" "তা, কবে কাজটা করব বাবু?" টাকাটা নিয়ে বুধন জিজ্ঞেস করল। "এই মঙ্গলবার রাতে" বললেন অনিলবাবু। ... ...
আসলে, মেধা-যুক্তি-বিতর্কের সঙ্গে কায়েমি স্বার্থ কোনওদিনই পেরে ওঠে না। তখন, সব কালে, একটি পথই অনুসৃত হয়। চরিত্রহনন আর কুৎসা রটনা। একেবারে, এক জিনিস ঘটেছিল খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের গ্রীক দার্শনিক এপিকিউরিয়াসের সঙ্গে। মূলতঃ লুক্রেশিয়াসের রচনা থেকে তাঁর দর্শন রেনেসাঁসের সময় ইওরোপ জানতে পারে। এবং পরম শক্তিশালী, জ্ঞানবিপণির চাবিকাঠির রক্ষক চার্চ, তাঁর দর্শন - যার সঙ্গে যাবজ্ জীবং সুখং জীবেৎ - এর আশ্চর্য মিল - কে অসংযত বেলেল্লাপনার সমার্থক বলে দেগে দেয়। ইংরিজিতে এপিকিউরিয়ান বলতে লাগামছাড়া ইহসুখবাদী (হেডনিস্ট) এক মানুষকে বোঝানো হয় আজও। ... ...
এখন সূর্য পাটে বসছিল। স্মিতা বিকেল থেকেই পুকুরের পাশে বসে আছে। বাবলুদারা এখনও ফেরে নি। একটা মানুষের পুড়ে যেতে কতক্ষণ লাগে স্মিতা জানে না। অস্থিরতা কমাতে সে জলের কাছে বসেছিল। রোদ কমে আসায় জলের রঙ ঘন সবুজ এখন।পাখির ছানা টুই টুই টুই টুই করে ডাকছিল- সকালের সে কী না কে বলবে? ভাঙাচোরা ইঁটের গাঁথনির ওপর কালো পিঁপড়ের সারি- স্মিতা যেখানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে এ যাত্রার শুরু বা শেষ কিছুই দেখা যায় না, যেন এক অনন্ত ক্যারাভ্যান। স্মিতার পায়ের কাছে দু চারটে ফাটা নিমফল- পিঁপড়ের সারি নিমফলের পাশ কাটাতে সামান্য বেঁকে যাচ্ছিল যেখানে, স্মিতার চটি পরা পায়ের পাতা তার খুব কাছে। স্মিতা ওর পায়ের পাতা পিঁপড়ের লাইনের একদম ওপরে নিয়ে আসছিল, সরিয়ে নিচ্ছিল পর মুহূর্তে- অনিত্যতাকে স্পর্শ করতে চাইছিল এইভাবে, সম্ভবত। ... ...
সন্ন্যাসী এক পা এগিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রাখলেন। যেন কি অপরিসীম শক্তি তার শরীরে প্রবেশ করল। নিজেকে গুটিয়ে রেখো না। তোমার গায়ের যে কালো রঙের চামড়াটা, সেটা ঠিক আমার পরনের কমলা রঙের পোশাকের মত। আবরণ মাত্র। আসল লোকটা ভিতরে আছে – সেখানে আমাদের সবার যিনি ঈশ্বর, তিনি কোন ফারাক রাখেননি ব্রাদার। সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল আমি মানুষ। পড়ে থাকা ঝাড়ুটা তুলে হাতে ধরিয়ে দিলেন। তুমি যে কাজই কর না কেন, সব কাজের মধ্যেই ঈশ্বর আছেন। অন্য সব কোট-প্যান্ট পরা লোকের মতই, তোমারও আমার সামনে এসে কথা বলার সমান অধিকার। ডিওয়েনের সেদিন মনে হয়েছিল, যেন শুধু তার জন্যে একটা মন্ত্র উচ্চারণ করলেন সন্ন্যাসী। উনি চলে যাচ্ছিলেন, কি মনে করে আবার ফেরত এলেন। স্মিত হেসে নিজের মাথার কমলা রঙের কাপড়টা খুলে তার হাতে দিলেন, এটা তোমার কাছে রাখো ভাই। ... ...
টেবিল টেনিস ভারতবর্ষের অন্যতম জনপ্রিয় ইন্ডোর স্পোর্টস। মোটামুটি একটু জায়গা আর মাথার উপর ছাদ থাকলেই, ক্লাব, অফিস, কলেজ, স্কুল, রিক্রিয়েশন রুম এমন কি পাড়ার ফাঁকা জায়গাতেও একটা টেবিল টেনিস বোর্ড গজিয়ে যায়। বাংলা, কেরালা, তামিল নাড়ু বা মহারাষ্ট্র হলে অবশ্য ক্যারম সে জায়গা নিয়ে নেবে। কিন্তু টেবিল টেনিসের জন্য রাজ্যের নামের দরকার পড়ে না। তবুও বিশ্বের দরবারে টেবিল টেনিসে ভারতের সেরকম সাফল্য নেই বললেই চলে। ... ...
তীরে এসে তো আর প্রেস্টিজ ডোবাতে পারিনা, তাই মুখে হিন্দি শেখা ডাকাবুকো অভিনেতার মত হাঁ হাঁ কিঁউ নেহি টাইপের ভাব করে ভেসে পড়তে হলো। এই অঞ্চলটা প্রায় একইরকম তবে বৈচিত্র্য আরো বেশি। মিনিট কুড়ি ধরে সেখানেও কুস্তি করে তারপর একসময় মুক্তি পেলাম। বীরের মত জল থেকে উঠে এলাম, মুখের ভাবটা আরো ঘন্টা দুই জলে থাকতে পারলেই ভালো হতো। শুনলাম ৫০-৫৫ বছরের ঐ ভদ্রলোক, যিনি সপরিবারে স্নরকেলিং করতে এসেছেন, তিনি অগাধ সমুদ্রে সাঁতার দিয়ে একটা কচ্ছপের পেছনে ধাওয়া করেছিলেন। তারপর এতদূরে চলে যান (এবং কচ্ছপটা এতই দ্রুতগামী) যে তাঁর ভয় হতে থাকে ফিরতে পারবেন না। অতঃপর বুদ্ধিমানের মত ফিরে এসেছেন। বুঝলাম যে লড়াইটা আদপেই সংস্কৃত আর হিন্দির না, বস্তুত তারা হলো "অলসো র্যান" ক্যাটাগরি। আসল হিরো হলো হলিউড, সেখানে সবই সম্ভব। কচ্ছপটা জোর বেঁচে গেছে। ... ...
হইচইয়ের 'মন্দার' নামক এই সিরিজ দেখতে বসে, সমকালীনতা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশই থাকেনা একদম প্রাথমিক কিছু দৃশ্যের পর। দেখা যায় সমুদ্রতীর, দেখা যায় মোটরসাইকেল। দেখা যায় পোলানস্কিসুলভ 'আধুনিক' হিংস্রতা। সিরিজের একদম শুরুতে সমুদ্রতীরে ডাইনি এবং তার চেলা যখন মাছকে গেঁথে ফেলে বর্শায়, সেই দৃশ্যের সঙ্গে পোলানস্কির প্রথম দৃশ্যের অদ্ভুত মিল। আলোর তফাতটুকু বাদ দিলে স্কটল্যান্ড এবং বঙ্গের সমুদ্রতীর একদম এক হয়ে যায় মরা মাছ আর মরা সৈনিকের ছটফটানিতে। ডাইনিদের পদচারণা এবং আচার-অনুষ্ঠানে। পোলানস্কির সিনেমায় ঘোড়সওয়াররা টগবগিয়ে আসে সৈকতে। মন্দারে ঘোড়া নেই, তার জায়গায় আছে মোটর সাইকেল। ধূধূ সমুদ্রসৈকত দিয়ে মন্দার মোটরসাইকেল চালিয়ে যায় পিছনে একজন আরোহীকে নিয়ে। ... ...
মাঝরাতে শিশু কন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে যখন একটু মাথা গোঁজার নিরাপদ আশ্রয় দরকার, যখন গার্হস্থ্য হিংসার ফলে বাড়ি ছেড়েছে প্রমানিত হলে রাষ্ট্রের অনেক পরিষেবা পাওয়া সহজ হয়ে যায়- পাওয়া যায় উপার্জনের রাস্তা , মাথা গোঁজার জায়গা এবং পেট ভরানোর খাবার-তখনও মেয়েটি সমানে বলতে থাকে যে, সে কিন্তু গার্হস্থ্য হিংসার শিকার নয়, তার মেয়ের বাবা তাকে মারেনি, ভয়ানক গাল মন্দ করেনি, পরকীয়ায় লিপ্ত নয় । শুধু সে নেশা করে ফিরে চেঁচিয়ে ওঠে, দরজায় ঘুসি মেরে দরজায় গর্ত করে দেয় আর কিছু বাসন কোসন ছুঁড়ে ফেলে ভাঙে। পরের দিন আবার ঠিক হয়ে যায়। সে আসলে মেয়েকে খুবই ভালবাসে, তাকেও বাসে। ... ...
সকালে উঠে ব্রাশ্ করে কচৌরি গলিতে কচুরি খেতে যাওয়ার সময় মনটা লুচি-লুচি হয়ে থাকে। আলতো করে ফুলে ওঠা লুচি। কিন্তু আঙুল দিয়ে টোকা মেরে ফুটো করে গরম বাষ্প বের করে দিলে লুচির যেমন অবস্থা হয়, হঠাৎ মনেরও তাই। কিছুদূর যেতেই তিনজনের সঙ্গে দেখা। ম্যাটাডোরে পাশাপাশি শুয়ে আছেন ওঁরা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কমলা-হলুদ কাপড়ে মোড়া। জ্বলছে ধুপ। ইতস্তত গাঁদার পাপড়ি। সবাই এক আঙুলে প্রণাম সারছে। পথচারী কেউই খুব একটা বিচলিত নয়। তিনজনেরই গন্তব্য মণিকর্ণিকা। মুখ হাঁ হয়ে যায়। এ কি সিস্টেম? আমাদের শ্মশান হয় গ্রামের প্রান্তে, শহরের উপকণ্ঠে। শহরের মধ্যিখানে শ্মশান? না হওয়ার হাজার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে, জানি। .... অত জানি না। তবে মণিকর্ণিকা কান ধরে শিখিয়ে দেয় - আজ যারা জিলিপি খেতে খেতে প্রণাম ঠুকলে, কাল এই জিলিপি প্রণাম যে তাদেরই প্রাপ্য হবে না - এই গ্যারান্টি খোদ মহাদেবও দিতে পারবেন না। ... ...
আপেল পাই জিনিসটার সাথে যদি আগে পরিচিত না থাকেন, এবং আমস্টারডামে গিয়ে প্রথমবার ট্রাই করেন, তাহলে হয়তো আপনার মনে এটা হালকা ভাবে ভেসে উঠতে পারে, যে – এটা কি আর এমন ব্যাপার, যার জন্য এত নামডাক? খুব বেশি কারিকুরি তো দেখতে পাচ্ছি না এই আপেল পাই-এ! এই ভাবনাটা মনের মধ্যে এলেই নিজেকে একটু ক্যালিব্রেট করে নেবেন – ভেবে নিন আপনাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করছে প্যারামাউন্ট-এর সরবত, নকুড়ের সন্দেশ বা আমিনিয়ার বিরিয়ানি নিয়ে! এইসব খাদ্য এমন সুউচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে, যে পার্থিব তর্ক করে কিছু হবে না – যার হয়, তার হয় টাইপের কেস। ... ...