দেখা যাচ্ছে, “পারাপার”-এর নির্যাতন এ গল্পে এসে বিস্তৃত হয়েছে আরো তৃণমূল পর্যায়ে। হয়ে উঠেছে আরো বেশি নির্মম; প্রাণঘাতী। তাই “এই সময়”-এ এসে জহিরকে লিখতে হয়েছে, পাড়ার মাস্তাদের (তিন ভাই—আবু, হাবু, শফি) হাতে নিহত মোহাম্মদ সেলিম নামের এক কিশোরের কথা। একটি অসম বয়সী কিশোর-যুবতীর প্রেমের ট্রাজেডীর আড়ালে জহির এই গল্পে যে ম্যাসেজটি দিয়েছেন তা হলো, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ষোলকলা-পূর্ণ হয়েছে। কারণ, স্বাধীনতা বিরোধী মওলানা জব্বার (জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা বদু মওলানার এক্সটেনসশন), এরশাদ সাহেব, মালেকা বানু আর মেজর ইলিয়াস, সবাই আজকে গাঁটছড়া বেঁধেছে। ... ...
বলা ভালো, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে 'ব্লগ', 'ব্লগার', 'ফেসবুক' ইত্যাদি এখন সাধারণজনের কাছে অনেক পরিচিত শব্দ। কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশের ৪২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তরুণরা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ মোড়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। অভূতপূর্ব এই গণজাগরণটি খুব শিগগিরই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। কারণ ৪২ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া তথা ১৯৭১ এর অমিমাংসিত অধ্যায়টির যৌক্তিক মিমাংসা না হওয়া জনমনে ব্যপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছিলো। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না হওয়ায় এটি গণবিস্ফোরণে পরিণত হয়। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে তারুণ্যের এই জাগরণ। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ১৯৯২ সালে প্রধান যুদ্ধাপরাধী ও জামাতে ইসলামের তৎকালীন আমীর গোলাম আজমের বিরুদ্ধে গণআদালত গঠন এবং তাকে প্রতীকী ফাঁসির রায় দিয়ে চলমান আন্দোলনটির প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন। ... ...
অনন্তর,পরিশেষে বলা জরুরি,ভৌগলিক অবস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য এই যে,বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহে সাম্প্রদায়িক সংকট যথেষ্ট প্রকট। অন্তত এই বিবেচনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। কিন্তু এর অবনতি ঘটিয়ে যারা ফায়দা হাসিলে সচেষ্ট তারাই যে এই সাম্প্রদায়িক অপরাধটি সংঘটিত করেছে তা বুঝতে বাড়তি কোনো বিদ্যেবুদ্ধি কিংবা তথাকথিত বুদ্ধিজীবি হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। এটা সত্যি যে,রামুতে কতিপয় মুসলিম সন্ত্রাসির নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও হামলা হয়েছে নোয়াখালির দাঙ্গার পর সন্দেহ নেই এটিই সবচে' বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ধর্মান্ধ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দিয়ে সুকৌশলে যারা এই সাম্প্রদায়িক অপরাধ সংঘটনে পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করেছে অবশ্যই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ইতোমধ্যে রামু নিয়েও শুরু হয়েছে পরস্পর দোষারোপের সেই নোংরা রাজনীতি। তবে কি অচিরেই আমরা রামুর এই সহিংস ঘটনাটিকেও বিস্মৃতির অতলেই হারিয়ে যেতে দেখবো? আর সেটি কি আদৌ আমাদের জন্যে মঙ্গলজনক হবে? আর কতকাল সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিশেবে বিবেচিত হবে? সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক রাজনীতিকরা স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধিতে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা কিংবা জংগিবাদের ধুয়ো তুলে খাল কেটে কি কুমিরকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে যাবে? এদেশের অসাম্প্রদায়িক প্রকৃত মুসলিমদের কি কিছুই করণীয় নেই? তারা কি শুধুই হাত গুটিয়ে বসে বসে দেখবে আর ইসলামের মহত্বই প্রচার করে যাবে? একজন নির্যাতিত বাংলাদেশি বৌদ্ধের তুলনায় একজন নির্যাতিত রোহিঙ্গা কিংবা ফিলিস্তিনি মুসলিমের প্রতি এদেশীয় ধর্মপ্রাণ মানুষের মমতা কি আসলেই বেশি? হ্যাঁ,এইসব,সবকিছুই বিবেচনাপূর্বক রামু ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু সমাধানকল্পে একটি স্বচ্ছ বিচারবিভাগীয় তদন্ত এই মুহূর্তে সত্যিই ভীষণ জরুরি। তা না হলে যে সভ্যতার পোড়াঘ্রাণে বারম্বারই অসহ হয়ে উঠবে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাই নয় কি? ... ...
মেডিকাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ২০০২ সালে কোড অফ এথিকস-এ বলেছে ডাক্তারদের যথাসম্ভব জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা উচিত। বিভিন্ন সময় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি ডাক্তারদের ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করতে বারণ করেছে। তাহলে ব্র্যান্ড নামে ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে কেন? বাজারজাত হচ্ছে কেন? একদিকে সরকার ব্র্যান্ড নামের ওষুধ, অযৌক্তিক নির্দিষ্ট মাত্রার মিশ্রণ (irrational fixed dose combinations), ক্ষতিকর ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করতে দেবে আর ডাক্তারদের বলবে এসব লেখা যাবে না — এমনটা হয় নাকি! সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তেমনটা করত যেমন করেছিল আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশের সরকার — অযৌক্তিক নির্দিষ্ট মাত্রার মিশ্রণ (irrational fixed dose combinations), ক্ষতিকর ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নিষিদ্ধ করে। ... ...
২ নম্বর মিথকথাঃ সহবাস সম্মতির বয়স কমিয়ে ১৬ করা হলে ধর্ষণ,বেশ্যাবৃত্তি ও নারী চালান আরো বেড়ে যাবে। ঘটনাঃ এই সম্মত সহবাসের আইনী বয়স কিন্তু ১৬ বছরই ছিল, সেই ১৯৮৩ সাল থেকে শুরু করে একটানা ৩০ বছর। হঠাৎ করে, মাত্র নয় মাস আগে, কোনো রকম আলাপ, আলোচনা বা বিতর্কের মধ্যে না গিয়েই সরকার একটি নতুন আইন চালু করেন, Protection of Children from Sexual Offences Act, May 2012 নামে এবং কলমের এক খোঁচায় সম্মতির বয়স বাড়িয়ে ১৮ করে দেন। JVC কমিটি এই সংশোধনী ধারাটির বিরোধিতা করেন ও সম্মতিসুচক সহবাসকারীদের অযথা দণ্ডনীয় অপরাধী হিসেবে গণ্য না করার সুপারিশ করেন। না, সম্মতিসুচক সহবাসের বয়স ১৬তেই ধরে রাখার মানে এইই নয় যে অল্প বয়সে বা বিয়ের আগেই যৌনসংসর্গকে অনুমোদন করা বা উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কোনো ভাবেই এই আইন অপ্রাপ্তবয়স্কদের কোনো শিক্ষা দিচ্ছে না। বরং এই আইন মোতাবেকে এইটাই ঘটছে যে, সম্মতিসূচক সহবাসের জন্য কোনো কিশোর কিশোরীকেই তৎক্ষণাৎ অপরাধী মেনে গারদে ঢোকানো হচ্ছে না। এই ‘সম্মতির বয়স’এর মানে এইটাই যে কোনো কোনো কিশোর বর্তমানে ১৮ বছরের কমবয়েসি কোনো মেয়ের সাথে সহবাস করলেই সে অপরাধী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এবং ঘটনাটিকে বিধিসম্মত ভাবে ধর্ষণের আওতাতেই ফেলা হচ্ছে। ভারতীয় সমাজ আদৌ চায় না যে এইসব অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের সম্মতিসূচক যৌন সংসর্গের জন্যও অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হোক বা কোনো কিশোরকে এইজন্য ধর্ষক হিসেবে সাজা পেতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক তরুণই এর ফলে জেলে যেতে পারেন। কেউ কোনো নালিশ ঠুকলেই এইসব ছেলে মেয়েরা শুধুমাত্র সম্মত সহবাসের দরুনই গারদে বা কোনো ‘হোম’এ আটকা পড়ে যাবে। ... ...
তো বস্টনের গপ্পো বলতে গেলে প্রথমেই যেটা বলতে হবে তা হল আমার অ্যাপার্টমেন্টের কথা। পয়সা বাঁচাতে (থুড়ি সেন্ট বাঁচাতে) আমি একটা পাঁচজনের সঙ্গে শেয়ার করা বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। যেহেতু এটা আমার প্রথমবার দেশের বাইরে তাই চেয়েছিলাম একটা মিশ্র সংস্কৃতির বাড়িতে থাকতে। তো ভগবান/জেসাস আমার ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেন নি। আমাদের বাড়িতে আমরা দুজন মেয়ে তিনজন ছেলে, তিনজন স্ট্রেট, একজন গে একজন লেসবিয়ান, দুজন কাপল, একজন ভারতীয়, চারজন আমেরিকান, একজন হিন্দু, দুজন খ্রিস্টান, দুজন ইহুদি, আর আমি যাকে আমার সম্ভাব্য বয়ফ্রেন্ড হিসেবে দেখছি সেই পাকিস্তানি মুসলিম ছেলেটিকে ধরলে একেবারে সর্বধর্মসমন্বয়। এবার এই বাক্যটা আরেকবার মন দিয়ে পড়লেই বুঝে যাবেন আমিই আমাদের বাড়ির বস্টনে বং-গে। ... ...
শাহবাগের মোড়– প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনটি একটি বারুদের স্তুপে স্ফুলিংগ সংযোগ সূচনায় গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন । সেখান থেকে গণজাগরণ, গণ বিস্ফোরণটি ঘটে। প্রথমদিকে আন্দোলনটি শুধু কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠে। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তরুণদের আহ্বানে খুব শিগগিরই এতে ব্যপক সাড়া মেলে; কারণ সচেতন নাগরিকরা কাদের মোল্লার মতো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, শীর্ষ জামাত নেতার শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় মেনে নিতে পারেননি। তরুণরা এই আন্দোলনটিতে পথ দেখালেও শিগগিরই ছাত্র-জনতা সকলেই এতে যোগ দেন; দেশের জেলা শহরগুলোতে তো বটেই, এমনকি উপজেলা পর্যায়েও গণদাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। জনমত তৈরি হয়, শুধু কাদের মোল্লা নয়, সব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি –ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনটি দানা বাঁধে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী, বাঙালি ও সমমনারাও খুব শিগগিরই ১৯৭১ এর মানবতা বিরোধী অপরাধ বিরোধী আন্দোলনটির সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করতে থাকেন। এই নয়া বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ হয়ে শাহবাগের চেতনা ছড়াতে থাকে দেশে দেশে। ... ...
সম্প্রতি অমর্ত্য সেন আনন্দবাজারে ও এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে খাদ্য ও পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।দুটো সাক্ষাৎকারের ব্যাপ্তিই ভর্তুকির বাইরে গেছে। তবে আমরা এই আলোচনায় কেবল ভর্তুকিতে নজর রাখব। তার কারণ কেন্দ্রীয় সরকার ডিজেলে ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেবে, মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়া সেরকম ইঙ্গিত দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, সংসদে খাদ্য নিরাপত্তা আইন পেশ করা হবে, এরকম একটা গুজব শোনা যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা আইনের ভর্তুকির চাপ নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে। ... ...
অনভ্যস্ত ফার্স্ট ইয়ার আমাদের পক্ষে বুঝে ওঠা সত্যিই কষ্টকর যে ইউনিয়ন না থাকা মানে দিন দিন আমাদের কথা বলার ন্যূনতম অধিকার চলে যাওয়া । প্রেসিডেন্সির ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য সাতচল্লিশ থেকে সত্তর পেরিয়ে আজও প্রাসঙ্গিক, তাকে রক্ষার দায় যদি নাও বোধ করি, তাও, নিজেরা হেসেখেলে নিজেদের ক্যাম্পাসটায় বেঁচে থাকার জন্যই বোধয় একটা সুস্থ স্টুডেন্ট’স বডি প্রয়োজন । যা হচ্ছে হোক যদি চলতে থাকে , তেমন হাল হবে নাতো , নীম্যোলার যেমন বলে গেছিলেন , ওরা যখন ধরতে আসবে তখন কেউই থাকবে না যে প্রতিবাদ করবে . . ... ...
তিনটি কিশোর, একই গ্রামের ছেলে। প্রায় সমবয়স্কও বটে। কিন্তু তিনটে জীবন পৃথক হবে। শিক্ষালয়ের ছাঁচে পড়ে দুটি কাছাকাছি থাকবে, আরেকটির সঙ্গে তাদের দূরত্ব খুব কমবে না। এ কি শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা? নাকি কিশোরদের যে বংশে জন্ম তার শিক্ষা-দীক্ষার সুবিধা-অসুবিধে? নাকি আদতে শাসনই শিক্ষাকে সেই ছাঁচটাই বানাতে সাহায্য করছে যা খুব বেশি গভীরে যেতে অসমর্থ? এই দুই প্রাজ্ঞ ঋষি মেনে নিয়েছেন একে সত্য বলে যে দুটি বীজ পৃথক বলে দু-তরফের শিক্ষাও পৃথক হবে। শিক্ষা পৃথক হলে সমাজে তাদের অবস্থানও পৃথক হবে। কিন্তু পাঞ্চালের আর এক গুরু কৃপবর্মার ভগিনীপতি নিজে কিন্তু তা মানেননি। তাই তাঁর সঙ্গে বিরোধ হয়েছে পাঞ্চালের রাজার। সেই বিরোধ তাঁর জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এখন। তিনি অসম অবস্থাকে অতিক্রম করে পাঞ্চালের রাজার সমতায় পৌঁছে দেখাতে চান এ সত্য না। তাই তাঁর কাছে যখন গাঙ্গেয়র দূত পৌঁছল তখন কালবিলম্ব না করেই তিনি রওনা দিলেন হস্তিনাপুরের পথে। পাঞ্চালে তিনি গুরু-ও নন এখন, আর হস্তিনাপুরে তাঁর করায়ত্ত্ব হতে পারে সব। গো শকটে সমস্ত তল্পিতল্পা তুলে দিয়ে, নিজে চললেন পায়ে হেঁটে। অন্তত পাঞ্চাল দেশ তিনি হেঁটেই পেরোবেন। এ তাঁর জন্মভূমি। আজ যাচ্ছেন, কবে ফিরবেন তা তাঁর জানা নেই। হাতে একমুঠো ধুলো নিয়েছেন নিজের পৈতৃক ভিটের। ... ...
উনি বললেন, শুনুন তবে। আমাদের ডিভিশনের এক কাস্টমার ভুটান বাম্পার লটারিতে ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছে। টিকিটটা সে আমাদের দিয়ে গেছে, প্রোসীড্স কালেক্ট করতে। এদিকে ইনসিয়োর্ড পোস্ট করতে গিয়ে জিপিও বলছে, দেশের বাইরে ইনসিওর হয়না। আমি বললাম, হ্যাঁ, তাও তো বটে, ভুটান তো অন্য দেশ। গাঙ্গুলী সাহেব বললেন, তখন সবাই আলোচনা করে ঠিক হল, আমাদেরই একজন চলে যাবে টিকিট নিয়ে। তখন দত্ত যাবে বলে ঠিক হ’ল, তার প্লেনের টিকিট ফিকিটও কাটা হয়ে গেল, তারপর শুরু হ’ল ঝামেলা। ঘোষ এসে বলল, ও কেন যাবে? আমাদের কাডারের কেউ যাবে। দত্তই বা ছাড়বে কেন, এই নিয়ে তুলকালাম। দুটো দল হয়ে গেল ডিভিশনে। যত বোঝাই, মশাই, এটা প্লেজার ট্রিপ নয়, সোজা গিয়ে কাজ ফুরোলেই চেক নিয়ে রিটার্ন। এতে এক দিনও বাড়তি নেই, যে একটু ঘুরেঘারে দেখবেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আসলে দু পক্ষেরই জেদ চেপে গেছে, কেউ ছাড়বেনা। ব্যাপারটা এমন হ’ল, যে বাইরে বেরোলে দেখে নেব টাইপের জায়গায় চলে গেল। এদিকে আমারও জেদ চাপতে শুরু করল, তবেরে, দুদলের কাউকেই পাঠাবনা। এদিকে দিন তো বসে থাকবেনা, সোমবার হচ্ছে টিকিটের প্রাইজ মানি ক্লেম করার শেষ দিন। তাই তো বলি, এবার রামনাম জপতে জপতে কোনও রকমে আপনি প্লেনে চেপে- আমি বললাম, দাঁড়ান স্যার, সবই তো বুঝলাম কিন্তু এর মধ্যে আমি এলাম কোত্থেকে? আমি তো আপনাদের এপাড়ার লোক নই, এই দু দলের কোনওটাতেই বিলং করিনা, তবে? ... ...
এখনো সেই মানছি না, মানব না? বামপন্থী হয়েও আপনার স্ট্রীট কালচারের ওপর রাগ? খেয়াল করছেন না এখন ইতিহাসে সমাজতত্ত্বে সাব-অল্টার্ন নিয়ে কথা বলা ইন-থিং? স্ট্র্রীট কালচারটাই মেইন স্ট্রীম হয়ে যাচ্ছে? নতুন নন্দনতত্ত্ব তৈরি করছে মানুষ। মহারাষ্ট্রের দলিত সাহিত্য পড়েছেন। ওরা 'নীরস -তরুবর -পুরতভাগে" না লিখে " শুষ্কং-কাষ্ঠং-তিষ্ঠতি-অগ্রে"টাই লিখছে। ফুলন দেবীকে নিয়ে শেখর কাপুরের ফিলিমটা দেখেছেন? যেখানে ফুলনকে ধর্ষক বাবু লোহারের খপ্পর থেকে বের করে আনা প্রেমিক ডাকাতটি ওকে গুলি চালাতে শেখাচ্ছে? মায়ের গালিটি কেমন আদর মাখানো উচ্চারণে বলে ফুলনকে সম্বোধন করছে? শুনুন, যারা হানি সিং এর গান ব্যান করতে চাইছে আর যারা বিহারীরাই ধর্ষক বলছে তারা একই রাশির লোক, একই নক্ষত্রে জন্মেছে। মূল বিতর্কের ট্র্যাক বদলে দিচ্ছে। এরা আসলে পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আড়াল করতে চায়, বদলাতে চায় না। হানির গানে যদি তাৎকালিক চটকের বেশি কোন নান্দনিক আবেদন না থাকে তো কদিন বাদে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। আজ ক'জন বাবা সায়গল শোনে? ওসব ছেড়ে শীলা দীক্ষিতের বাড়ির দিকে ধর্ণায় যাবেন তো বলুন। আমি যাচ্ছি। ... ...
অবশ্য আরও একটা কারণও থাকতে পারে। এত অস্থির হবার। আসলে সব ছাপিয়ে আরও একটা কথা মনে পড়ছে। মেয়েটা সেই রাতে সিনেমা দেখে ফিরছিল। লাইফ অফ পাই। সে তো আমিও এই সেদিন দেখে এলাম। বৌ-বাচ্চা নিয়ে। পপকর্ন খেলাম। আমার পরিচিত মেয়েটি, মেয়েরা, অনেকেই তো দেখেছে, যারা দেখেনি দেখবে সিনেমাটা। কে জানে কোনদিন তাদের কেউ খবরের কাগজে "ধর্ষিতা" হয়ে যাবে কিনা। নাম অবশ্য জানা যাবেনা এই বাঁচোয়া, কারণ, আব্রু রক্ষার্থে সেসব আমরা চেপে রাখতে জানি। আমরা ভদ্র ও সভ্য হয়েছি। লোকলজ্জা থেকে বাঁচানোর জন্য আমরা ভিক্টিমের নাম মিডিয়ায় উচ্চারণ করিনা। আমাদের ধর্ষিতাদের কোনো নাম হয়না। ... ...
সরকার কোনও চেষ্টা করে নি আমজনতার মধ্যে এই ক্ষোভ প্রশমিত করার। নিজের নিজের নিরাপদ সিকিওরিটির ঘেরাটোপের মধ্যে তাঁরা ব্যস্ত থেকেছেন ধর্ষণ সংক্রান্ত বিল নিয়ে কবে আলোচনায় বসা যায়, তাই নিয়ে, কিংবা অন্য কোনও বিষয় নিয়ে। সরকারপক্ষের এই নীরবতাই এক বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল গত বাইশ আর তেইশে ডিসেম্বরের বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের। গত শনিবার সকাল থেকেই দেখেছিলাম দলে দলে ছেলেমেয়ের দল, যাদের বয়েস সতেরো থেকে পঁচিশের মধ্যে, দলে দলে চলেছে ইন্ডিয়া গেটের দিকে। কোনও নেতা ছিল না তাদের। নিজেরাই চলেছিল। হাতে ব্যানার, পোস্টার, তাতে কালো আর লাল অক্ষরে লেখা তাদের ঘৃণা আর ছিছিক্কারের ভাষা। এর আগেও দিল্লির রাস্তায় ছাত্রদের, যুবকদের, এনজিওদের মিছিল দেখেছি, সেই মিছিলের মুখগুলো আমার লাগত এক রকমের। বিষয় হয় তো কোনও ঘটনা বা নিয়মনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, কিন্তু প্রতিবাদের আগুন থাকত না মিছিলকারীদের চোখেমুখে। সামনের লাইনের দু তিনজন শ্লোগান বা “নারা-বাজি”তে ব্যস্ত থাকতেন, বাকি পেছনের সারির লোকজন নিজেদের মধ্যে হাসি তামাশা করতে করতে পথ হাঁটতেন। কখনও সামনে মিডিয়ার ক্যামেরা দেখা গেলে সোৎসাহে হাত নেড়ে নিজের অস্তিত্ত্ব প্রকাশ। মিছিলের মুখপাত্র যখন রাগী রাগী মুখ করে নিজেদের দাবিদাওয়া পেশ করতেন বাড়ানো মাইক্রোফোনের সামনে, তখনও ব্যাকড্রপে দেখা যেত অগুনতি উৎসাহী মানুষের হাসিমুখ আর তাদের হাত নাড়া। আমরা সবাই টিভিতে অনেক দেখেছি এই ধরণের ক্লিপিং। এই প্রথম, গত শনিবারে, একটা নয়, অন্তত তিন চারটে মিছিল দেখলাম, কমবয়েসী ছেলেমেয়ের দল, তাদের কারুর মুখে হাসি নেই, নিজেদের মধ্যে ঠাট্টাতামাশা নেই। গনগনে রাগ মুখে মেখে তারা চলেছে ইন্ডিয়া গেটের দিকে। হাতে পোস্টার। ... ...
অসুস্থ সভ্যতার চিকিৎসা চাই -- কিছু জমায়েতের টুকরো টাকরা ... ...
বিদুর বালকের চোখে দেখলেন এক ঝলসানো ক্রোধ! অর্জুন সোজা তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। রেখাটা গাঢ় হল মাত্র। বিভাজন ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। কৌরব বংশ একত্রিত হলে যা হতে পারতো তা শুধু কষ্টকল্পনা এখন থেকে। ওই বালকের ক্রোধ বলে দিচ্ছে গৃহযুদ্ধের দামামা বেজে গেল। এখন এই বালককে আপ্তবাক্য শুনিয়ে লাভ কি? অথচ তিনি বিদুর। দুর্যোধন তাঁরও ভ্রাতুষ্পুত্র, ঠিক এঁদেরই মতন। মহারাজ পাণ্ডু আর মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের বিবাদেও তিনি কিন্তু পক্ষ নেননি কোনো। শুধু পাণ্ডবদের ন্যায্য অধিকারের জন্যই কুরুসভায় দাঁড়িয়েছিলেন। তাহলে এখন তাঁকেও কি পক্ষ নিতেই হবে? গাঙ্গেয়র মতন তিনি যে এড়িয়ে যেতে পারছেন না। গাঙ্গেয় তাঁর মতন সম্পর্কের, মোহের অথবা প্রেমের বাঁধনে যে বাঁধা নেই। তিনি, ধর্মবেত্তা বিদুর যে প্রথম প্রেমের কাছে সদা সমর্পিত, তাঁর কী হবে? ... ...
আমার বন্ধু সন্দীপ একটা কবিতার কাগজ বার করে। বেশ কিছুদিন ধরেই বলছে, পরের সংখ্যার জন্য অন্তত গোটা দশেক পদ্য ওর চাই। বড়ো অস্থির সময় যাচ্ছে আজ। কতোবার বসার চেষ্টা করলুম, কতো খসড়া। কতো বার প্রথম দু ' তিনটে লাইন লেখার পরে নিরাশ ছিঁড়ে ফেলা। অথচ কতো কথা বলার বাকি থেকে যাচ্ছে, কতো চমক দেওয়া শব্দবন্ধ মাছির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে মাথার চারিধারে। কিন্তু শাদা কাগজে কালো অক্ষরে তারা ধরা দিতে চাইছে না। মাঝে মাঝে হয় এমন। সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয়। নিজেকে বাহুল্য বোধ হতে থাকে। গানের কাছে যাই, মানুষের কাছে যাই, বইয়ের কাছে যাই, কিন্তু শব্দ বাঁধার রেশ গুলো খুঁজে পাইনা। প্রিয় কবিদের প্রচুর পদ্য বারবার পড়ি, কতো জাদুর মতো প্রতীক, তৈরি শব্দের মায়া মাথায় ঝিলিক দিয়ে পালিয়ে যায়। পদ্যের শরীরে যদি প্রাণটাই প্রতিষ্ঠা না করা গেলো তবে তার অলঙ্কার কী প্রয়োজন। মৃতদেহের মাথায় হিরের মুকুট ? ... ...
জনসচেতনতা থেকে কী ভাবে জন-আন্দোলন গড়ে ওঠে তার অভিনব নিদর্শন পাওয়া যায় এখানে—শুরু থেকে শহীদ হাসপাতালের প্রচারের বর্ষামুখ ছিল ডায়রিয়ায় মৃত্যুর বিরুদ্ধে। এই প্রচারে জনসাধারণ ডায়রিয়া-প্রতিরোধে যথাযথ পানীয় জলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হন। ছত্তিশগড় মাইন্স শ্রমিক সংঘ ও ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা এই সচেতন মানুষদের নিয়ে পানীয় জলের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে তোলে তার চাপে ১৯৮৯-এ স্থানীয় প্রশাসন ও ভিলাই স্টীল প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ দল্লী-রাজহরা ও তার আশেপাশের গ্রামগুলোতে ১৭৯টা নলকূপ বসাতে বাধ্য হয়। ... ...
আমাকে মোটামুটি ঠেলে গুঁতিয়েই পাঠিয়ে দিল। ক্যাশ মেমো কাটার পর বলল, মনে কর না স্কুলতুতো এক দাদা তোর সিক্সটিফাইভ মেরে দিল। ওটা জলে গেছে ধরে নে। তবে যাওয়ার আগে আসল কথাটা শুনে যা। বাটা কিছু জুতো এক্সপোর্ট করে। তাদের কোয়ালিটি আমাদের দেশের দোকানে রাখা জুতোর থেকে অনেক ভাল। কতটা ভাল, পরে বুঝবি। তারই কিছু সারপ্লাস এখানে মাঝে মাঝে আসে। ভারতের কোনও শহরের অন্য কোনও বাটার দোকানে এগুলো পাবি না। এখানেও সব সময়ে পাবি না। ইস্কুলের ছেলে বলে ডেকে গছালাম। বাড়ি গিয়ে গালি দিস। ... ...
আজ তিনদিনের রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন শেষ হলো। রাত সাড়ে দশটা বেজে গেছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই চারদিক খোলামেলা প্রাঙ্গনে, পাশেই জুবিলি পার্ক, হুহু করে শীতহাওয়া ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। শীতহাওয়া, কিন্তু তাজা, তৃপ্ত স্পর্শ তার, চোখ মুখ স্নিগ্ধ করে দেয় তার স্নেহ। ভিড় পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছি। ... ...