৯৯৬ এর ১৭ই মে। আলফা আন্দোলনে তখন ভাঁটার টান শুরু হয়েছে। হিতেশ্বরের কুশলী প্রয়োগে আলফা ভাগ হচ্ছে। আত্মসমর্পন পন্থী আলফারা তৈরী করেছে সালফা। সারেন্ডারড আলফা। স্কুটারে চড়ে ছোট ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পরাগ। অসমীয়া ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিক অসমীয়া প্রতিদিনের সম্পাদক। গৌহাটির চাঁদমারীতে প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে গুলি করে মারে চারজন সালফা সদস্য। সিবিআই চার্জশিট দেয়। ছয় জন অভিযুক্তের মধ্যে তিন জন মৃত। দু জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটই জমা পড়েনা। আর একমাত্র মৃদুল ফুকন ওরফে সমর কাকতি তেরো বছর কেস চলার পর প্রমাণাভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। ... ...
জনপ্রিয় সিনেমা আসলে সমাজের মূলধারার চিন্তার প্রতিফলন।আমাদের সমাজে বেশীরভাগ তথাকথিত উদার মানুষ, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং যারা সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন, দূর্ভাগ্যজনকভাবে তারা অনেকসময়ই নিজেদের বিশ্লেষণকে এই সিনেমাটির মত করেই সীমিত করে রাখেন।আমরা অনেক সময়ই নিজেদের সুবিধাভোগী অবস্থান থেকে, ‘উচ্চ’ অবস্থান থেকে, ভুক্তভোগীদের, এক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে মুসলমান সমাজের অবস্থা বিশ্লেষণ করতে চাই।এটি খুবই বিপজ্জনক ঝোঁক।যেমন, অনেক সভা-সমিতিতে দেখি, হিন্দু মৌলবাদের কথা বললেই, লোকজন বলেন যে, সব মৌলবাদই খারাপ। সমান গুরুত্ব দিয়েই নাকি মুসলমান মৌলবাদের কথা বলতে হবে।নিশ্চই মৌলবাদ মাত্রই খারাপ।কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হিন্দু মৌলবাদ বেশী বিপজ্জনক কারণ মুসলমানরা এদেশে সংখ্যালঘু।সংখ্যাগুরুর মৌলবাদ এবং সংখ্যালঘুর মৌলবাদ কখনই এক নয়। ... ...
রমাপদ চৌধুরীর একটি বিখ্যাত ছোটগল্প ‘ভারতবর্ষ’। গল্পটি বহুচর্চিত। আপাত একটি গল্পের আড়ালে যে বার্তা তিনি দিয়েছেন, সেটি চিরকালের সংকটের কথা। একটি সার্থক গল্পের ভেতরে তো সব সময় অন্য একটি গল্প লুকিয়ে থাকে। একটি অন্তর্লীন মেসেজ থাকে মননশীল পাঠকের জন্য। নইলে গল্প তো ঘটনার হুবহু বর্ণনায় খবরের কাগজের রিপোর্টিং হয়ে যেত। এই গল্পেও সেই বার্তাটুকু রয়েছে। একটি জনজাতি, এ গল্পে প্রোটাগনিস্ট তাকেই ‘ভারতবর্ষ’ বলেছেন, মাহাতোগাঁয়ের কালো কালো মানুষগুলো কেমন করে ভিখারি হয়ে গেল – খুব নিরপেক্ষ ভঙ্গিতে সেই আখ্যান বর্ণিত হয় এই গল্পে। ... ...
ইদানিং আরেক পরেশানি হয়েছে মতির এই দলজিৎ সিংকে নিয়ে। ছেলেটার নাম তাই। খুব ভাব এখন মতির সঙ্গে। প্রায়ই আসে এ পাড়ায়। পেছনের গেট দিয়ে সোজা ঢুকে পড়ে মতির আস্তানায়। আঙ্কল আঙ্কল করে পাগল। অবাক হয়ে যায় শক্ত মোটা ভিশতি দেখে। খুঁটিয়ে জানতে চায় কী করে তৈরী হয়। অগত্যা অমলতাসের হলুদ পাঁপড়ির ওপর থেবড়ে বসে মতি খবর দেয় কী করে বকরি ইদের পরে সেরা ছাগচর্ম বেছে নিয়ে তাকে ফোটানো হয় বিরাট লোহার কড়াইতে। তার সঙ্গে মেশানো হয় কিকার গাছের বাকল। এই বাকলের সাপ্লাই আসে অনেক দূরের দেশ আফ্রিকার উত্তরি ভাগ থেকে। বারবার ফোটানোর পর কম-সে-কম কুড়িদিন ভিজিয়ে রাখা হয় ওই কড়াইতে। কিকার-জল থেকে চামড়া যখন তোলা হয় তখন সে আর চামড়া নেই। হয়ে গেছে ইষৎ হলদে মাখনের মত নরম। এইবার আচ্ছা করে মোষের চর্বি ঘষা হয় বাইরে দিকটাকে জলনিরোধক করার জন্য। কিকার-জলের এত গুণ যে সব দূর্গন্ধ, সব খতরনাক জীবানু ধ্বংস করে চামড়াকে একেবারে ঝাঁ চকচকে করে দেয়। শেষে দক্ষ হাতে ভিশতিতে সেলাই পড়ে। ... ...
স্বাধীনতার সত্তর বছর পরে, নব্য উদারবাদী অর্থনীতির স্বর্ণযুগে বসে, ছাপাখানার প্রথম যুগের এই বহুভাষী সংস্কৃতি হয়তো আজকের দিনে বোঝা একটু কঠিনই। পুঁজির ভাষা ইংরেজি। ক্ষমতার ভাষাও। তার সাথে অবশ্যই রয়েছে রাষ্ট্রশক্তির প্রচ্ছন্ন মদতে হিন্দি আগ্রাসন, যার ফলস্বরূপ উত্তর ভারতের নানান হিন্দুস্তানি ভাষা এক এক করে জমি হারিয়েছে। এই প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে রোশন কিশোর লাইভমিন্টে একটি লেখায় বলেন, “হিন্দি, অথবা সরকারি হিন্দি … আস্তে আস্তে বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে অসংখ্য লোকের কথ্য ভাষাকে গ্রাস করেছে। একজন সাধারণ দিল্লীবাসীর ক্ষেত্রে সেই ভাষা হয়তো পাঞ্জাবি, হরিয়ানভি, বা উর্দু। ... ...
শুরুতেই একটা কথা বলে রাখা ভাল, যে, তার শিল্পগত দিক নিয়ে এখানে একটি কথাও বলা হবেনা। এখানে মূলত চাহিদা, যোগান ইত্যাদি গোদা ব্যাপার নিয়ে কথা হবে। কারণ, যদিও ‘মান’ পড়ে যাবার জন্য অনেকে সিরিয়াল নির্মাতাদের দোষ দেন, অনেকে সৃষ্টিশীলতার অভাবের কথা বলেন, তার কিছু বাস্তব ভিত্তি থাকাও খুবই সম্ভব (আবার নাও থাকতে পারে), কিন্তু মনে রাখা দরকার, যে, যতই শিল্পের তকমা দেওয়া হোক, আর পাঁচটি পণ্যের মতই, টিভি সিরিয়ালও একটি পণ্য। ঠিক কেমন মাল বানাতে হবে, এ নিয়ে টুথপেস্ট বা গাড়ি কোম্পানিরা যেমন বিস্তর গবেষণা করে একটি পণ্য বাজারজাত করে, টিভি সিরিয়ালের ক্ষেত্রেও অবিকল তাই। ... ...
ভাঙড় চুক্তিতে খুব পরিষ্কার করে লেখা আছে ওখানে পাওয়ার গ্রিডের বদলে একটি আঞ্চলিক সাবস্টেশন হবে। এই বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে আন্দোলনকারীরা বলছেন তাঁরা কথা রেখেছেন। আন্দোলনের শুরু থেকে তাঁরা বলে আসছিলেন পাওয়ার গ্রিড হতে দেবেন না এবং তাঁরা সেটা দেন নি। অর্থাৎ দাবীদাওয়ার প্রশ্নে কোনও সমঝোতা তাঁরা করেন নি। লিখিত চুক্তিকে 'ফেস ভ্যালু'তে নিলে এই বক্তব্য ভুল নয়। যদিও এর মধ্যে একটু ফাঁক আছে। প্রযুক্তির চালু পরিভাষায় বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহণ এবং বিতরণের পুরো ব্যবস্থাকে একযোগে 'পাওয়ার গ্রিড' বলা হয়। যদিও এই সংজ্ঞা খুব কঠোর ভাবে মেনে চলা সংজ্ঞা - এমন নয়। অনেক সময় অনেকটা অঞ্চল জুড়ে অনেকগুলো সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন লাইনকে মিলে আলগা ভাবে একটা 'ট্রান্সমিশন গ্রিড' বলা হয়ে থাকে। ... ...
স্থানীয় মানুষের সংস্কৃতি-ভাষা বাঁচানো দরকার এই নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না। কিন্তু এন আর সি মহাযজ্ঞে অসমিয়া জাতীয়তাবাদীরা আখেরে হিন্দুত্ববাদীদের খেলার বোড়ে না বনে যান। আর, “জাতি খতরে মেঁ হ্যায়” জাতীয় হুলুস্থুলু করার আগে খতরাখানা কী, অনুপ্রবেশের তথ্য কী, প্রশ্নগুলোর নির্দিষ্ট জবাব দরকার। ... ...
বাংলাদেশে গত ২৯ জুলাই জাবালে নূরের দুটি বাসের রেষারেষির মধ্যে একটি বাস ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একদল শিক্ষার্থীর উপর উঠে যায়। এতে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই নিহত হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাদের সহপাঠীরা। ধীরে ধীরে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকার সব রাজপথে গড়ে তোলে “নিরাপদ সড়ক আন্দোলন”। অভূতপূর্ব এই স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন খুব শিগগিরই স্ফূলিঙ্গ থেকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায় শহর থেকে বন্দরে, নগর থেকে নগরে, সারা বাংলাদেশে। শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি, পুলিশ ও ছাত্রলীগের লাঠিপেটা উপেক্ষা করে ট্রাফিকের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বুঝিয়ে দেয় সিস্টেমের গলদ। ... ...
আমরা গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনীয়ারিং এন্ড টেকনোলজির ছাত্রছাত্রীরা মালদা থেকে এখন আপনার পথে পথে। সেই পথে পথেই ঘুরছি, পথেই অবস্থান, পথেই রাত কাটাচ্ছি। বারো দিন হয়ে গেল। কিন্তু, কেন? আমাদের ডিপ্লোমার বৈধ সার্টিফিকেট ও উচ্চশিক্ষার দাবিতে বিটেক এ লাটেরল এন্ট্রি তে ভর্তির দাবি নিয়ে আমরা লড়ে যাচ্ছি বহুদিনধরে। রাজ্যের কারিগরি সংস্থা আমাদেরকে তিন বছরের ডিপ্লোমার সিলেবাস পড়ার পর দুবছরের ডিপ্লোমা দিতে চাইছে যেটা কোনো সরকারি,বেসরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষাই ভর্তির জন্য বৈধ নয়।আমরা লাটেরল এন্ট্রিতে ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়েছিলাম স্টেট কাউন্সিল এর আন্ডার এ রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম আমাদের সব ডাটা ও ডকুমেন্টস আপলোড করেছিলাম তারপরেও আমাদের দুবছরের ডিপ্লোমা দিচ্ছে যদিও স্টেট কাউন্সিল অন্যান্য ইনস্টিটিউট কে তিন বছরের ডিপ্লোমা দেয়। ... ...
কেরালার বন্যাবিধ্বস্ত বিভিন্ন অঞ্চলে দিনরাত কাজ করে চলেছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্টরা। তাঁদেরই মধ্যে একটি দল কাজ করে চলেছেন কেরালায় কাজ করা লক্ষ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য। এঁরা এসেছেন বিহার, ওড়িশা, আসাম, পশ্চিমবঙ্গের মত সুদূর রাজ্যগুলি থেকে। সহদেবন এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিবন্ধটি লিখে আমাদের পাঠিয়েছেন সুমগ্না ভৌমিক। ... ...
৯ টা জেলায় শতকরা বাতিল আবেদনপত্রের সংখ্যা হল একেবারে এক, ১২.৫ (দশমিকের পরে প্রথম ঘর অবধি কাছাকাছি পূর্ণসংখ্যা ধরে)। ১১ টা জেলায় এই সংখ্যা হল ৭.৫ (কাছাকাছি পূর্ণসংখ্যা ধরে) আর ৪ টে জেলায় ১৭.৫ এর কাছাকাছি। প্রত্যেক জেলার আবেদনকারীর সংখ্যা আলাদা আলাদা, বাতিল আবেদনের সংখ্যাও তাই। এদের অনুপাত এবং তার শতকরা হিসেবও সেইরকম আলাদা আলাদা হওয়া উচিত। অর্থাৎ ৩৩ টা জেলার থেকে ৩৩ টা আলাদা সংখ্যা আসা উচিৎ যাদের মধ্যে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে প্রায় কোনো মিল বা পুনরাবৃত্তি বা সম্পর্ক থাকার কথাই নয়। তাহলে এতগুলো জেলার বাতিল আবেদনকারীর সংখ্যার শতকরা হিসেব কি করে একই রকম হল ! ... ...
সবকটা বিষয়কে মাথায় রাখলে আন্দোলনের অতি বড় সমালোচকও মানতে বাধ্য হবেন এই চুক্তিকে গ্রামবাসীরা যদি 'জয়' বলে মনে করেন তাহলে তাঁরা খুব ভুল কিছু করবেন না। অলীক চক্রবর্তী যদি তর্কের খাতিরে সরকারের কাছে সম্পূর্ণ বিকিয়ে গিয়েও থাকেন এবং বিকিয়ে গিয়েও গ্রামবাসীকে এইরকম একটি লিখিত চুক্তি আদায় করে দিতে পারেন, যা কিনা এযাবৎকালের কোনও গণ আন্দোলনে ঘটে নি, তাহলেও তাঁকে গ্রামবাসীরা মাথায় তুলে কেন রাখবেন না তা পরিষ্কার নয়। উল্টোদিকে সরকার বা পিজিসিআইএলের দিক থেকে দেখলেও এই চুক্তি যথেষ্ট ইতিবাচকই। একটা সাবস্টেশন এবং সংলগ্ন লাইনগুলো অতখানি তৈরী হয়ে যাওয়ার পর যদি পরিকল্পনা বাতিল করতে হত, তাতে শুধু যে বিশাল আর্থিক ক্ষতি হত তাই নয়, সারা ভারত জুড়েই গ্রিডকে শক্তিশালী করার যে প্রক্রিয়া চলছে তা অনেকখানি ধাক্কা খেত। ২২০ কেভির যে লাইনগুলো ভাঙড় থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পরিবহন নিগম (WBSETCL) টানবে সেগুলো অতি অব্শ্যই নিকটবর্তী এবং একটু দূরবর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের সাথে যুক্ত। সেগুলি না হলে সেই প্রক্রিয়াও ভালোরকম ব্যহত হত। গ্রিড সংযুক্তিকরণের জন্য যে ১৬ টি লাইনের পরিকল্পনা ছিল তার মধ্যে যেগুলো চুক্তি মোতাবেক বাতিল হল, সেগুলোকে পিজিসিআইএলকে অন্যভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। ... ...
আসলে বুঝি না, দেশ মানে একটা রাজনৈতিক-ভৌগোলিক সীমানা নয়, দেশ মানে জবরদস্তির ভক্তি নয়, দেশ মানে একাত্মতা। দেশ মানে একটা ভূখন্ড যাকে আমি চিনি এবং যে আমাকে চেনে। সেই ভূখন্ডের সীমানা যা কিছুই হতে পারে। তাই আমার আমেরিকান সিটিজেন দিদি বৎসরান্তে 'দেশে' ফেরে আর আমার কাজের দিদি 'দেশে' যায়। আমি বাবা-মাকে কলকাতায় ফোন করি। ফোন রেখে দিয়ে বলি, বাড়িতে ফোন করেছিলাম। আমায় কেউ বকে না। কেউ বলে না, কেন মুম্বাইয়ে যেখানে থাকো সেইটা কি বাড়ি না? সেটা কি গাছতলা? কেউ বকে না। তাই আমি কলকাতায় গেলে নির্দ্বিধায় বলি, "বাড়ি গেছিলাম", ফিরলে বলি, "বাড়ি থেকে ফিরলাম"। আসলে বুঝি, বাড়ি মানে ইঁট, সিমেন্ট, জানলা নয়। বাড়ি মানে অন্যকিছু। ঠিক কি সেটা জানি না। ... ...
আজ অবধি কোথাও কোনো চেষ্টাই হয়নি মালদা জিকেসিআইইটি-র ঘটনাপরম্পরা লিপিবদ্ধ করে রাখার। এদিকে আন্দোলন শুরু হয়ে ২ বছরের ওপর ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। এর মধ্যে নানান ঘটনা ঘটে গেছে। এইসব ঘটনার সংখ্যা এতই বেশি যে বর্তমানে আন্দোলনরত ছাত্ররাও সঠিকভাবে দিনক্ষণ, তারিখ বা নাম উল্লেখ করতে পারছে না। সমস্তটাই "ওই ঘটনাটা ঘটার ৬ দিন পর মোটামুটিভাবে ধরা যায়" জাতীয় বাক্য হিসেবে আসছে। সেখান থেকে সঠিক তথ্য ছেঁকে তোলার জন্য দরকার নির্ভরযোগ্য প্রমান। অর্থাৎ কিনা, সেই সময়কার ফেসবুক পোস্ট, কলেজ কর্তৃপক্ষের তারিখ নির্দেশ করা চিঠি (যার কিনা সূত্র পুনরায় ফেসবুক পোস্টই) অথবা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন। এই দু'বছরে বেশ কিছু প্রতিবেদন আবার হারিয়েও গিয়ে থাকতে পারে অ্যালগোরিদম-এর দৌলতে। ... ...
এটা ভালো লক্ষণ যে এবারের আন্দোলনে কলকাতা সহ আরো বহু বাইরের অঞ্চলের মানুষের সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। এই সমর্থনের প্রক্রিয়ায় যদি তাঁরা বুঝতে পারেন যে বন্ধ বাগান আর তাতে অনাহার মৃত্যুর বাইরেও চা বাগানের সমস্যাটা অনেক গভীর, তাহলে একটা কাজের কাজ হবে। মালিকদের ভয়াবহ মুনাফাখোরি নীতি, ফাটকাবাজ মালিকদের দৌরাত্ম্য আর তাতে সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন আর উদাসীনতাই যে মূলতঃ চা শিল্প আর শ্রমিকদের বিপর্যয়ের মূল কারণ, এই ভিত্তিটায় দাঁড়ানো দরকার। বন্ধ বাগান বা অনাহারে মৃত্যু সমস্যায় একটা সামান্য অংশ, ন্যূনতম মজুরি না দেওয়ার মত চা বাগানের সার্বজনীন সমস্যাগুলো ছড়িয়ে আছে কমবেশি সমস্ত বাগান জুড়ে। ... ...
রমেশ একটু চিন্তায় পড়ে যান, এখন পূর্ব পাকিস্তান যাওয়া মানেই বিপদের আশঙ্কা পদে পদে। অমলা বা পারুকে সঙ্গে নেবার প্রশ্নই নেই, অমরকেও না নেওয়াই উচিৎ। তাঁর যদি কিছু হয়েই যায় পথে তবে অন্তত বাকীরা বেঁচে থাকবে। কিন্তু তাঁরও কি যাওয়াটা উচিৎ? আর উচিৎ হলেও আদৌ সম্ভব হবে কি? অথচ যোগেশ একা ঐ দেশে ছোট্ট শিশুটার মুখে প্রথম ভাত তুলে দেবে আর বংশের মধ্যে সবার বয়োজ্যষ্ঠ তিনি, তাঁরই তো এই অনুষ্ঠান করার কথা --- আর তিনিই দূরদেশে চুপচাপ বসে থাকবেন। অমলা বোঝেন রমেশের মনে দ্বন্দ্ব চলছে, বলেন ঐ দূর বিদেশে মেজ ঠাকুরপো একলা একলা কি যে করছে! রমেশ কেমন চমকে ওঠেন ‘বিদেশ!?’ কোনটা বিদেশ আর কোনটাই বা স্বদেশ তাঁদের আজ? ময়মনসিংহ তাঁদের উর্দ্ধতন তিন কি চার পুরুষের জন্মভূমি, তাঁদের ও। পৈত্রিক উত্তরাধিকার যা কিছু, সবই ময়মনসিংহে, যা আজ ‘বিদেশ’ হয়ত বা ‘শত্রুদেশ’ও। আর এই কলকাতা শহর, এখানে তো বাসাবাড়ি। ... ...
এই আটক-হওয়া মানুষদের অবস্থা বন্দীদের থেকেও খারাপ। তিনি ক্যাম্পের একটি দুঃখজনক বিবরণ দিয়েছেন, যেখানে দেখিয়েছেন যে এঁরা অন্যান্য "নাগরিক বন্দীদের" তুলনায় কেমন অনেক বেশি বিধি নিষেধের মধ্যে থাকেন। কোকড়াঝাড় কারাগারের নারী বন্দীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মহিলাদের প্রায় এক দশকের মধ্যে একটি মোটামুটি ৫০০ বর্গ মিটারের ঢাকা জায়গার বাইরে বেরোতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই আটক-হওয়া মানুষদের অধিকার সম্পর্কে কেন্দ্র বা রাজ্যের থেকে কোন নির্দেশিকা বা নির্দেশ নেই। আসাম জেল ম্যানুয়ালের দ্বারা এই আটককেন্দ্রগুলি পরিচালনা করা হয়। রাজ্য আটক-কেন্দ্র ও কারাগারের মধ্যে বস্তুতঃ কোন তফাত করে না , এবং জেল কর্তৃপক্ষ আটক-হওয়া-মানুষ আর কোন অপরাধের-দায়ে-অভিযুক্ত বা দোষী-প্রমাণিত-হওয়া কারাবন্দীদের মধ্যে বেছে বেছে আসাম জেল ম্যানুয়ালের বিধিগুলোর প্রয়োগ করেন। জেল-নিয়মের আওতায় থাকা বন্দীরা প্যারোল বা কাজ-করে-মাইনে পাওয়ার মত যে সব সুবিধাগুলি পান, সেগুলোর থেকে এই আটক-হওয়া মানুষেরা বঞ্চিত। পুরুষ, নারী ও ছয় বছরের উপরের ছেলেদের তাদের পরিবার থেকে পৃথক করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি বলে যে কীভাবে এই নির্বিচারে, অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাবন্দীদের মত অবস্থায় আটক করে রাখা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। প্রতিবেদনটি আরও জানায় যে আসন্ন NRC র ( যা কিনা সম্ভবতঃ লাখ লাখ মানুষকে রাজ্যহারা করবে) প্রেক্ষিতে কিভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার, বিশেষতঃ সব থেকে পবিত্র সংবিধানের আর্টিকল ২১ দ্বারা সুনিশ্চিত করা যে অধিকার, বিপন্ন। এই সব রাজ্যহারা মানুষদের নিয়ে কী করা হবে, সে বাবদে ভারতের কোন নীতি নেই। সুতরাং, আটক শিবির সম্পর্কে সত্যিগুলো বাইরে বেরিয়ে এসেছে। রিপোর্টে অনেককিছু আছে এবং পরিস্থিতির গভীরতা বোঝার জন্য, আমি আন্তরিকভাবে চাই যে সবাই এই নিবন্ধ এবং পূর্ণ রিপোর্টটি পড়ুন ... ...
দু’কামরার ছ’শো তিরিশ ফুট ফ্ল্যাটে ততোধিক ছোটো ব্যালকনিটায় বসানো টব, ঝোলানো টবে নানান ফুল, পাতাবাহার গাছে এমন ভাবে ভরিয়ে রেখেছে যে দূর থেকে দেখলে যে কেউ ব্যালকনি না ভেবে ছোট্ট একটা বাগান বলেই মনে করবে। তাতানের ছ’বছর বয়েস পর্যন্ত সোনারপুরের একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতো ওরা। ছোটোবেলায় খাওয়া নিয়ে খুব ঝকমারি ছিল। ভীষণ ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবেরও ছিল তাতান। হঠাৎ তখন পাঞ্চালী আবিষ্কার করে গাছ-গাছালির কাছে নিয়ে গেলে ছেলে একদম চুপ করে থাকে। বড়ো বড়ো নরুনচেরা চোখদুটোয় গাছপালাদের অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো। গাছ দেখতে দেখতে মুখের খাবার থুঃ করে ফেলে না দিয়ে বিনা বাধায় খেয়ে নিত। তাতানের পাঁচ বছর বয়েসে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়। সে বছর সাংঘাতিক এক কালবৈশাখীর ঝড়ে শোভনদের সেই ভাড়াবাড়ির ছোট্টো বাগানটায় বেশ ক’টি গাছ উপড়ে ভেঙে পড়ে। ... ...
অতুলনীয় মেধা,অতি উজ্জ্বল ছাত্রজীবন ও তীক্ষ্ণ ধীশক্তির অধিকারী হিসাবে সুপরিচিত অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর কালাজ্বরের প্রতিষেধক বিষয়ক গবেষণা আরম্ভ হয়। ক্যাম্পবেল কলেজে (বর্ত্তমানে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে) শুরু হয় ভীষণ মারণব্যধি কালাজ্বরের বিরুদ্ধে তাঁর ঐতিহাসিক সংগ্রাম। গবেষণার জন্য তিনি পেলেন ছোট একটি ঘর, যেখানে জলের কল, গ্যাস পয়েন্ট বা বিদ্যুত সংযোগ কিছুই নেই। কিন্তু এইসব অসুবিধা নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে একটি পুরনো কেরোসিন ল্যাম্প সম্বল করে প্রকৃত বিজ্ঞানতপস্বী উপেন্দ্রনাথ শুরু করেন তাঁর গবেষণা। ধাতুঘটিত যৌগকে রোগনিরাময়ের জন্য ব্যবহার করার পদ্ধতি তখন খুব বেশি প্রচলিত হয়নি। এই প্রসঙ্গে, মিশরের রাণীরা রূপটান হিসেবে ঘন নীল রঙের একধরণের অ্যান্টিমনি পেষ্ট ব্যবহার করতেন, অর্থাত অ্যান্টিমনির ভেষজ গুণের কথা তখনও জানা ছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথমে Paul Ehrlich ও তাঁর সহযোগীরা আর্সেনিক, অ্যান্টিমনি ইত্যাদির যৌগকে সিফিলিস, আফ্রিকান স্লীপিং সিকনেস ইত্যাদি অসুখের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করেন। ... ...