"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ১২ … উৎকণ্ঠিত প্রহরী দ্রুতপায়ে কাছে এসে বলেন, আরে! বাবুজী আপনি ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন? বলি, এই একটু ঘুরেফিরে দেখছি আশপাশ। সে রীতিমতো বিষ্মিত হয়ে বলে, ঘুরেফিরে দেখছেন মানে? আপনাদের গাড়ি, দলের বাকি লোক কোথায়? এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। গাড়ি! দল!! মানে? আমি তো একাই এসেছি, হেঁটে। প্রহরীর চোখ প্রায় কপালে উঠে যায়। একা এসেছেন! হেঁটে!! কোথা দিয়ে? আমি ভেবেই পাচ্ছি না এতে এতো বিচলিত হওয়ার কী আছে। বলি, বাঁকড়ে হনুমান মন্দির দেখে আসার পথে ডানদিকে যে গেট দেখলাম সেখান দিয়ে ঢুকে মোরাম পথ দিয়ে হেঁটে এসেছি। কিন্তু আপনি এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? হঠাৎ সে চুপ করে খানিকক্ষণ আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। তার খালি পা। হয়তো ঘরে জুতো খুলে বসেছিল, উত্তেজনায়, তাড়াহুড়োতে পরে আসতে ভুলে গেছে। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ১১ … আমার চেহারা, পোষাক, হাবভাবে প্রথাগত ভক্তসূলভ ছাপ নেই। হয়তো সে জন্যই মুখ্যবাবা জানতে চান, এভাবে কষ্ট করে আশ্রমে থাকতে চান কেন? সুরয়ায়াতে লাল্লুকে দেখানো বেড়ালটা আবার ঝোলা থেকে বার করি। এমন যাত্রায় সেটাকে অনেকবার বার করতে হয়েছে। তবে বেড়াল দেখেও বাবা লাল্লুর মতো প্রভাবিত হলেন না। বাবার মুখভাব ক্রনিক আমাশা রুগীর মতো অপ্রসন্ন। তবু স্বরে কয়েক আউন্স সেন্টিমেন্ট মাখিয়ে বলি, যদি রাতটা এখানে কাটাতে আসি, মোহনী মহারাজের কৃপা থেকে বঞ্চিত হবো না তো? মূখ্যবাবা হয়তো এমন ছিনে জোঁকের পাল্লায় আগে পড়েন নি। নিস্তার নেই দেখে নিমরাজি ভঙ্গিতে অস্পষ্ট ভাবে মাথা নাড়েন। সেটাই আমি ভিসা অন এ্যারাইভালের প্রতিশ্রুতি ধরে নি। প্ল্যান-এ বস্তির টাইমকলের লাইনে বালতি রাখার মতো আশ্রমের যজ্ঞশালার বুড়ি ছুঁয়ে থাকে। আমি জোড়হস্তে নমস্কার করে বিদায় নিই। হোবো শৈলীতে ঘুরতে হলে গাত্রচর্মটা নাসিকাশৃঙ্গী প্রাণী গোত্রের ভাবলে কোনো সমস্যা হয় না। ... ...
এই লেখাটির প্রথম পর্বটি না পড়ে - - - দ্বিতীয় পর্বটি পড়া একদমই বাঞ্ছনীয় নয় - - - তাতে ছন্দপতন অনিবার্য ... ...
এ্যাঁ! তিনিবাবু! এটা আবার কারুর নাম হয় নাকি? আমি, আপনি, উনি, তিনি এসব তো সর্বসাধারণের যে কেউ হতে পারে, অর্থাৎ সর্বনাম। পরিবর্তনশীলও বটে। যেমন ধরুন, আপনি আমার কাছে আপনি কিন্তু আপনি আপনার কাছে আমি। আমরা তো সেই অর্থে সবাই একই সময়ে আমি, আপনি, উনি, তিনি হয়ে বিরাজ করি। ... ...
পারস্পরিক সম্পর্কে বহুদিন ধরে যদি কারুর মধ্যে কিছু কাঙ্ক্ষিত উপাদানের অভাব ও অবাঞ্ছিত উপাদানের আধিক্য পরিলক্ষিত হয় তাহলে ঝগড়াঝাঁটি না হয়েও প্রাকৃতিক নিয়মেই সেই সম্পর্ক ক্রমশ শীতল হয়ে অবশেষে কোমায় চলে যেতে পারে। যেমন কারুর স্বভাবে যদি দেখা যায় সুক্ষতা, সৌজন্যবোধ, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতার অভাব এবং ইর্ষা, সংকীর্ণতা, স্পর্শকাতরতার আধিক্য। যদি কারুর নজর হয় শকুনের মতো - গোলাপ বাগিচা বা পদ্মপুকুর ছেড়ে তাদের দৃষ্টি যদি খুঁত ধরার জন্য প্রায়শই নিবদ্ধ থাকে ভাগাড়ে। তজ্জনিত কারণে তাদের মন্তব্য মনে জ্বালা ধরায়। এসব ক্ষেত্রে এমন সংসর্গ পরিত্যাগ করাই বাঞ্ছনীয়। চালে কয়েকটি কাঁকড় থাকলে বেছে খাওয়া যায় - উল্টোটা বৃথা শ্রম। ... ...
অবশ্য ওহেন কাব্যিক উপমা তখন সুমনের মাথায় আসেনি। সেসব এসেছে পরে - স্বপ্ন লজ্জাহীন, সবিনয় নিবেদন বা বাংরিপোসির দু রাত্তির জাতীয় মুচমুচে উপন্যাস পড়ে। বছর দুয়েক পরের কথা, কেতকীর সাথে সুমনের আলাপ তখন কেতকীদের বাড়ির ছাদে নিয়মিত সান্ধ্যআড্ডার সুবাদে জমে ক্ষীর। সুমন গেছে হায়দ্রাবাদ বেড়াতে। সালারজং মিউজিয়ামে Awakening of Galatea ছবির সামনে অভিভূত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সুমন। এক অদ্ভুত ভালো লাগার আবেশে ছেয়ে যায় সুমনের মন। ব্রিটিশ চিত্রকর হার্বাট গুস্তভ শ্মালজ অঙ্কিত ১৯০৭ সালের সেই অয়েল অন ক্যানভাসের প্রতিলিপির অভিঘাত উদ্দাম উন্মাদনাময় নয়, বরং আচ্ছন্ন করা এক শিরশিরে মাদকতায় যেন অবশ হয়ে যায় সত্তা। অনন্য সুন্দর সেই সৃষ্টি! দু বছর আগে সেই সন্ধ্যায় চাঁদনী রাতে সুশ্রী নদীর খোয়াইয়ের যে অস্পষ্ট খোয়াব ভাবনায় উঁকি দিয়েছিল - তার স্বরূপ যেন তখন চোখের সামনে উদ্ভাসিত। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ১০ … মঠ প্রাঙ্গণের বাইরে এসে ইতস্ততঃ ছড়িয়ে থাকা ভগ্নস্তুপে খানিক পায়চারি করি। সামান্য যে কয়েকজন দর্শক এসেছিল তারা সবাই চলে গেছে। এখন এলাকাটা একদম নির্জন। খাড়া সিঁড়ি ধরে গড়ির প্রাচীরে চড়ে ওপর থেকে চারপাশে চেয়ে দেখি। প্রায় হাজার বছর আগে এই গড়ির পরিবেশ তখন আশ্রমিকদের উপস্থিতিতে কেমন প্রাণবন্ত ছিল তা এখন শীতের এই নির্জন বিকেলের মরা আলোয় অনুভব করা কঠিন। আশ্রম কাছেই তাই ফেরার তাড়া নেই। ফিরতেও ইচ্ছে করছে না। গড়ির দুজন সিকিউরিটি গার্ডের সাথে মঠ চত্বরে অনেক গল্প হয়েছে। ওরা আসছে মেন গেট বন্ধ করতে। আমায় পাঁচিলের মাথায় বসে থাকতে দেখে হেসে বলে, চলে আসুন স্যার, ছটায় গেট বন্ধ হবে। নেমে গেট পেরিয়ে হাঁটতে থাকি আশ্রমের দিকে। একপাল গরু মোষের দল গলায় ঘন্টা বাজিয়ে ঘরে ফিরছে। দু একটা বাছুর শৈশবের চাপল্যে খানিক লাফালাফি করছে। বয়স্কদের চলার ছন্দে দীর্ঘ দোহনের, নিত্য জাবর কাটার ভাবলেশহীন শ্রান্তি। দাঁড়িয়ে যাই। এ দৃশ্য বহুবার দেখেও আশ মেটে না। ... ...
এই বনসাই হিমলিঙ্গটিকে মৃত্যুঞ্জয়নাথের পবিত্র তুষারলিঙ্গ বলে ইউটিউবে পোষ্ট করলে গনেশের দুগ্ধপানের মতো পাবলিক খেতেও পারে। যে দেশে অহরহ দেখা যায় বিশ্বাসে মিলায় বস্তুর নমুনা - যে দেশে "গো করোনা, গো" ভজন গেয়ে মন্ত্রী নাচেন ধৈ ধৈ করে, সে দেশে এই সামান্য ঘটনাও এক অলৌকিক চমৎকার হিসেবে বিবেচিত হতেই পারে। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৯ … বলি, কিছু মনে করবেন না হাফিজভাই, মুসলিম হয়েও আপনি তো এই হনুমান মন্দির সম্পর্কে অনেক খবর রাখেন! উনি বলেন, এখানে হিন্দু মুসলিম ভেদভাব নেই। বহুদিন ধরে আমরা মিলেমিশে আছি। এই দেখুন না খবর পেলাম ঐ মন্দিরে বার বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। গতকাল পর্ষদের ইলেকট্রিসিয়ানকে ধরে খুঁজে বার করলাম এক জায়গায় লুজ কনেকশন ছিল। দাঁড়িয়ে থেকে তা ঠিক করালাম। তারপর উনি কপালে হাত ঠেকিয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকে এই মন্দিরের কথা অনেক শুনেছি। স্থানীয়রা এই হনুমানজীকে খুব জাগ্ৰত বলে মানে। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৮ … এটাকে চান্দেরী ভ্রমণ বৃত্তান্তের পুনশ্চঃ বলা যায় ....আমার প্রশ্ন শুনে করণ করুন ভাবে আমতা আমতা করে। করণের মতো মানুষের জীবনে বিশেষ কিছু না জেনেও দিব্যি চলে যায় তাই যেখানে এতদিন আছে সেই স্থানের নামটির তাৎপর্য জানার কৌতূহলও হয়নি ওর। শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত কোট - যা রোমিও জুলিয়েট না পড়েও কোথাও উদ্ধৃতি পড়েই জেনেছি - “What's in a name? That which we call a rose by any other name would smell just as sweet.” মনে হয় এমন খামচা মারা জানার আগ্ৰহ ওর নেই। ... ...