বাড়িতে ফিরে শ্রীকান্তর কিছুই ভাল লাগছিল না। এসে একটু হাত:মুখ ধুয়ে খেঁজুরের গুড় দিয়ে দুটো রুটি খেয়ে পড়তে বসে গেল। পড়াতেও মন বসছিল না। তবু পড়তে হল কারণ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেকেন্ড টার্মের তিনটে পরীক্ষা আছে। সন্ধেবেলা শ্রীকান্তর প্রিয় খাবার মায়ের হাতে তৈরী তেলেভাজা চিঁড়ে ও বাদাম ভাজাও স্বাদহারা মনে হল! নন্টে-ফন্টে-এর বই দেখতে দেখতে খেল সে কিন্তু সেই আমেজটা ঠিক পেল না। এই এক সমস্যা শ্রীকান্তর—ঝগড়া হলে, মারপিট হলে বা কথাকাটাকাটি হলে ওর মনটা বড় নির্জীব হয়ে ওঠে। এ রকম কোন ঘটনার পরবর্তী তিন-চারদিন খাওয়া-দাওয়া, পড়াশুনা , খেলাধূলা সব কিছুর থেকে উদাসীন হয়ে যায়। এই সময় শুধু সুযোগ পেলেই ... ...
"আগে আমাদের একবার বলতে পারতিস, ডাইরেক্ট চিঠি না করে।", ক্লাস ইলেভেনের সায়েন্সের ফাস্ট বয় গোবিন্দ কথাগুলো বলল স্বর্ণেন্দুর উদ্দেশ্যে। ক্লাস ইলেভেন সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে স্বর্ণেন্দু, সৌমিত্র, শুভাশিষরা গেছিল। সৌমিত্র বলে, " দাদা, তুমিই বলো আমাদের জায়গায় তোমরা থাকলে কি করতে?" গোবিন্দর পাশে বসে থাকা অনামিক বলে, "আমরা হলে কি করতাম সেটা বড় কথা নয়। তোরা তো একবার আমাদের সাথে কথা বলতে পারতিস্। আমরা কি তোদের শত্রু?" তাপস পেছন থেকে বলে, "সব কিছু এত ধপাধপ হয়ে গেল!" অনামিক বলে, "তাই বলে প্রেয়ারে গান না করে স্যারেদের অপমান করবি,!" স্বর্ণেন্দু বলে, "সেই জন্যেই তো ক্ষমা চাইতে এসেছি।" সেকেন্ড বেঞ্চ থেকে সুমন বলে, "কি ভেবেছিস্ এই ক্ষমা চাইলেই সব মিটে ... ...
এরপর ফাস্ট পিরিয়ড শেষ হল। সেকেন্ড পিরিয়ড শেষ হল। এক এক করে বাকি দুটো পিরিয়ড হয়ে টিফিন হল। এখনও পর্যন্ত আজকের সকালে বিষয়টা নিয়ে কেউ আলোচনা করে নি। যেন কিছুই হয়নি। চার চারজন স্যার ক্লাস নিলেন কিন্তু এ ব্যাপারে কেউই কিছু বললেন না—ভালো-মন্দ কোন কিছুই নয়। এমনকি ছাত্ররাও একে অপরের সাথে কেউ কোন আলোচনা করে নি। টিফিনে সবাই টিফিন খাচ্ছে কিন্তু সবই যেন স্বাদহীন! টিফিনে তেমন কেউ বাইরেও যায় নি, ওই ছোট বাইরে বা বড় বাইরে বাদে—এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন সেযুগে বেঙ্গলী মিডিয়ামে ছাত্রছাত্রীরা ইউরিনালকে ছোটবাইরে আর ল্যাটিরিনকে বড়বাইরে বলত। টিফিনের সময সবাই যখন এক জায়গায় বসে টিফিন খাচ্ছে, তখন স্বর্ণেন্দুই ... ...
ক্লাস নাইনের প্রত্যেকটা সেকশানের ঘরের সামনে, করিডোরে এমন কি বড় বেদীর ওপরও ক্লাস নাইনের বেশির ভাগ ছাত্র—তিন সেকশান মিলিয়ে কমসে কম একশ কুড়ি জন তো হবেই—সবাই নীলডাউন হয়ে রয়েছে প্রায় সারাদিন ধরে! কারণ সরস্বতী পুজোর আয়োজনের অধিকার তাদের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাই তারা কোন স্যারকে পড়া দিচ্ছে না, অংক করছে না, অর্ধেক ছেলে স্কুলে বই আনছে না! স্যারেরা বেত দিয়ে মারলেও তারা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠছে না! 'বেত' বলতে গিয়ে মনে পড়ল, এযুগের স্টুডেন্টরা তো 'বেত' কি? তাই জানে না! নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত দেবদেবীদের মত স্যারেরা যে সকল অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ছাত্রদের নেতিবাচক প্রবৃত্তিগুলিকে বধ করতেন; সে সকল ... ...
ধ্যুর্ শালা ... ...
সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে শ্রীকান্ত ও তার বন্ধুদের প্রথম আন্দোলন শুরু হয় — যা ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতি পদক্ষেপে করতে হচ্ছে। ডাকু বলত, "জীবনটাই একটা আন্দোলন – সংগ্রাম।"ডাকু হল শ্রীকান্তর এক জিগরি দোস্ত। শ্রীকান্তকে বাবা প্রথম ডাকুই খাইয়েছিল। ডাকুই শ্রীকান্তকে প্রথম বারে নিয়ে গেছিল। আরো অনেক কিছু প্রথমের অভিজ্ঞতা ডাকুর সহচার্যে শ্রীকান্ত পেয়েছিল। ডাকুর কথায় পরে আসা যাবে। দেখেছেন আবার কেমন ভুলভাল বিষয়ান্তরে চলে যাচ্ছি! চলুন ফিরে আসি সরস্বতী পুজোর আন্দোলনে। ঘটনাটা ওই ডিসেম্বর নাগাদ শুরু হয়। যখন দিনের শেষ পিরিয়ডে ইতিহাস ক্লাস চলাকালীন পড়ানোর শেষে আবদ্দুল্লা-স্যার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন, "এবারের পুজো তো ইলেভেনের দাদারা করবে—তোরা কেউ কেউ ওদের সাহায্য করবি।" ২০২৩-এর ... ...
সরস্বতী পূজা বাঙালীর জীবনের প্রথম ঈশ্বরারাধনা। পরবর্তী জীবনকালে বাঙালী ধীরে ধীরে অর্থহেতু লক্ষী পূজা, গৃহশান্তি হেতু নারায়ণ পূজা, মানত করে কালী পূজা-দুর্গা পূজা, শনিবার শনিবার বারের ঠাকুর পূজা, অবাঙালী বন্ধুর সংস্পর্শে এসে গনপতি পূজা বা ধনতেরসে কুবের পূজা করলেও অফিসিয়ালি বাঙালী জীবনের প্রথম পূজা সরস্বতী পূজা তা সে বাঙালী পড়াশুনাতে ভালোই হোক আর খারাপই হোক বা পড়াশুনা করুক বা না করুক। শ্রীকান্ত যখন ক্লাস নাইনের ছাত্র তখন কনভেন্ট বা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলোর এত রমরমা ছিল না। তখন কনভেন্ট বা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার সৌভাগ্য হত একমাত্র বড় ব্যবসায়ী বা ওই আই.পি.এস-এর সন্তানদের। বড় ডাক্তার বা অধ্যাপকদের পছন্দ ছিল রামকৃষ্ণ মিশন বা ... ...
আমি লিখতে খুব ভালবাসি কিন্তু তেমন ভালো লিখতে পারি না। যদিও অনেকে বলেন, "ভালোই তো লিখিস্।" —এখন জানি না এই 'ভালো' শব্দটা সান্ত্বনা পুরস্কার কিনা। সেই যাই হোক, অনেক কষ্টে একটা রহস্য উপন্যাস লেখার পর লেখার চেয়েও বেশি কষ্ট করে এক প্রকাশককে পেলাম –আইনি জটিলতা ও ব্যক্তিগত কারণে সেই ভালোমানুষটির নাম উহ্য রাখলাম। সত্যি বলতে বিরাট ভদ্র ও ভালো মানুষ বলেই উনি আমার বইটি প্রকাশ করেছিলেন। একে তো লেখনীর ওই ছিরি! তার উপর রহস্য উপন্যাস!– বাংলা সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা লাঞ্ছিত ও অবহেলিত বিষয়! সবাই পড়ে, বেস্ট সেলারগুলির মধ্যে রহস্য উপন্যাস অবশ্যই থাকে কিন্তু সবাই ভ্রূ কোঁচকায়!— তবু পড়ে ও পড়ে বেশিভাগ ... ...