এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • চাগ্রীর গপ্পো

    সে
    নাটক | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ | ২১৩৪৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৯652408
  • কোলকাতায় সর্বত্র রোলের দোকান তৈরী হয়ে গেছে। যেখানেই দোকান, সেখানে বিশহাত দূর থেকেই গন্ধ পাওয়া যায়। ম্যাক্স্‌ম্যুলার ভবনের চত্তরে ঢুকেই বুঝলাম যে এখানেও একটি রোলের দোকান আছে। প্রদীপবাবু প্রথমেই বাড়ীটার ভেতরে ঢুকলেন। সেখানে মোটামুটি সব বন্ধ হয়ে এসেছে, কয়েকজন ছাত্রছাত্রী সন্ধেবেলার ক্লাসের শেষে বেরিয়ে আসছে। মোটকথা, উনি হয়ত কারোকে খুঁজতে এসেছেন, এইরকমই মনে হোলো। তারপরে আমাকে বললেন, এইখানে একসময় রেগুলার আসতাম, জার্মান শিখেছি। এখন পুরোনো লোকজনদের স্টাফদের একজনকেও দেখতে পাচ্ছি না।
    এবার আমরা ফের নীচে নেমে এলাম। খোলা আকাশের নীচে কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল পাতা, এখানেই সেই রোলের দোকান। কাচের শোকেসে বিস্কুটের গুঁড়োয় মোড়া ফিশ্‌ রোল তো আছেই, অন্য অপশন হচ্ছে পরোটায় মোড়া এগরোল, তাওয়া গরম আছে, বললেই ভেজে দেবে। দুখানা এগরোল নিয়ে ঐ লাল প্লাস্টিকের টেবিলে মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসলাম আমরা। আমার সঙ্গে এঁর ঠিক কী কথা আছে, সেটা এখনো জানি না। মনে অল্প একটা দুটো ক্ষীণ সন্দেহ আছে। ঐ দৃষ্টি, শুভ্রা, এরা কি আমার এগেইন্‌স্টে কম্‌প্লেইন করেছে? এদের না বলে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে টিফিন খেয়েছিলাম - আইন ভঙ্গ করেছি, এসবের রিপোর্ট কি পৌঁছে গেছে এঁর কাছে? নাকি ছাত্ররা কোনো রিপোর্ট দিয়েছে যে আমি ভালো করে পড়াতে পারি না। আমি নিজে কেমন পড়াই, সেটা তো নিজে বুঝি না। ছেলেরা যদিও খুব মন দিয়ে ক্লাস করে, আমাকে ভালোও বাসে বলে মনে হয়। আমি ঝালঝাল এগ্‌রোলে ছোটো ছোটো কামড় দিই।
    দুনিয়ায় কতো রকমের চমক যে অপেক্ষা করে আছে তা কে বলে দেবে। রোল আদ্দেকও শেষ হয় নি, প্রদীপবাবু আমাকে বলেন, যে কথাটা বলব বলে তোমাকে এখানে আনলাম, সেটা হচ্ছে, ... (উনি একটু থামেন) আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
  • s | 117.131.42.250 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৯:৪২652409
  • জিও বস! এই নাহলে 'সে' ঃ-)
  • - | 109.133.152.163 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১০:১৬652410
  • সব কিছুরই সঙ্গে প্রাইস ট্যাগ লাগানো থাকে ঃ-)
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১০:৪৫652411
  • হঠাৎ করে এইরকমের বক্তব্য শুনবার জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি। ফলে চমকে গিয়ে ভুলভাল এক্স্‌প্রেশন বেরিয়ে গেল, আমি ফ্যাক্‌ করে হেসে ফেলেছি।
    হাসছ কেন? এতে হাসবার কি হোলো?
    ততক্ষনে মুখের হাসি উড়ে গিয়েছে। মাথা ভোঁ ভোঁ করছে, মিস্টার মুখার্জি এদিকে অনেক কথা বলে চলেছেন, সমস্ত কিছু কানে ঠিকমতো ঢুকছেও না, শুধু ভেবে চলেছি এখন কী কর্তব্য আমার। তিনি কথা বলেই চলেছেন।
    তোমার আপত্তি নেই তো? মানে তুমি এখন চাকরি করছ, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছো, স্যালারী ধীরে ধীরে বেড়ে যাবে, এরপরে অন্য কোনো ভালো জবে শিফ্‌ট্‌ করতে পারবে, তোমাকে প্রথম যেদিন দেখলাম, মানে যেদিন আমার অফিসে এসেছিলে...
    সর্বনাশ! কোথাকার জল কোথায় গড়িয়েছে। এই লোকটা কি পাগোল নাকি? কথা নেই বার্তা নেই, আমাকে ঠিক করে চেনেও না, কোথায় থাকি, কী আমার ব্যাকগ্রাউন্ড, কে কে আছে আমার, একে পছন্দ করি কি না, কোনোকিছু না জেনেই বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে কেন? একে থামানো দরকার। হাওয়া দিচ্ছে, রোলের ছেঁড়া কাগজগুলো টেবিল থেকে উড়ে গেল। বাকি রোলটা নামিয়ে রাখলাম।
    আপনি আমাকে কতটুকু চেনেন মিস্টার মুখার্জি?
    এখনো মিস্টার মুখার্জি? নাম ধরে বলতে পারো, আপনি আপনি করছ কেন?
    হ্যাঁ, কিন্তু আমার সম্বন্ধে কিছু না জেনেই..
    তোমার সমস্ত কাগজপত্র তো দেখেছি, তাছাড়া আমার বাড়ীতেও কোনো আপত্তি করবে বলে মনে হয় না, আর যদি করেও, মানে কাস্টটা আমার কাছে কোনো বাধাই নয়।
    এরকম আরো অনেক কিছু তিনি বলে চললেন।
    আমাকে তখন মাথার মধ্যে দ্রুত ক্যালকুলেশন করে যেতে হচ্ছে। কতটুকু বলব। মিনিমাম কতটুকু বললে একে থামানো যায়।
    দেখুন, আমার কিছু বক্তব্য আছে।
    হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, বলো।
    প্রথমতঃ (আমি মনে জোর এনে ফেলে বলি) আমি আপনার এই প্রস্তাবে রাজি নই।
    কেন?
    মানে, আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারব না। কারন অনেক...

    এইবারে আমি গড়গড় করে কিছু শক্তপোক্ত কারন দেখিয়ে দিই। উনি অবাক হয়ে সেসমস্ত শোনেন, পুরোটা ওঁর মাথায় ঠিকমতো রেজিস্টার হয় কিনা সেটা বুঝতে পারি না। কীরকম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। তারপরে গম্ভীর হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে উল্টে আমায় দোষারোপ করেন, কেন আমি এইসমস্ত তথ্য লুকিয়েছি। ওঁকে ঠকানোই নাকি আমার উদ্দেশ্য ছিলো। আমার প্রতি একরাশ ঘৃণার মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়ে তিনি ম্যাক্স্‌ম্যুলার ভবনের মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যান। আমিও উঠে পড়ি। আত্মপক্ষ সমর্থন করে অযথা শক্তিক্ষয় করবার কোনো কারন দেখি না। গেটের দারোয়ান তখন মিস্টার মুখার্জিকে চেঁচিয়ে ডাকে।
    আপনার ব্যাগ ফেলে যাচ্ছেন!
    তিনি ফিরে এসে নিজের ব্যাগ হাতে নিয়ে জোরে জোরে হেঁটে চলে যান গুরুসদয় রোডের দিকে।
    আমি ধীরে সুস্থে দাঁড়িয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বাড়ীর পথ ধরি।
    পুরো ঘ্টনাটা ভেবে কীরকম হাসি পেয়ে যায়, সেইসঙ্গে প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা শুরু হয় ভেতরে। আমার চাকরিটার কী হবে? এই লোকের সাহায্যে আমি চাকরি পেয়েছি, সেই চাকরি পাবার বিনিময়ে আমাকে বিয়ে করতে হবে, এ কেমন যুক্তি? অবশ্য আমার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অল্প কিছু জানার পরে ইনি খুবই ঘাবড়ে গিয়েছেন দেখলাম। বিয়ে ফিয়ে তখন আউট অফ্‌ কোয়েশ্চেন হয়ে গেছে। কিন্তু লোকটা ভয়ঙ্কর রেগে গিয়েছে যা হোক। আমি একে ঠকিয়েছি? এতো খুব অদ্ভুত ধরনের আরোপ! আমার নিজের কি কোনো ইচ্ছে অনিচ্ছে পছন্দ অপছন্দ এসব কোনোকিছুই থাকতে নেই? এ ভাবেটা কি নিজেকে? একটা চাকরি জোগাড় করে দিয়েছে বলে মাথা কিনে ফেলেছে? যা বুঝছি গোড়া থেকেই নিজে নিজে সমস্ত প্ল্যান করেছে, আমাকে তো কিছু জিগ্যেসও করে নি। চাকরিটাও এখন আমার কাঁধে একটা বোঝা হয়ে উঠলো।
    শেষের দিকে লোকটা যেরকম হিংস্র মতো হয়ে উঠেছিলো, সে যদি আমার ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য ঐ ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে রটিয়ে দেয় প্রতিশোধ চরিতার্থ করতে? হয়ত তেমন কিছু করবে না, কিন্তু এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ঐরকম রক্ষনশীল প্রকৃতির এম্‌প্লয়ার এসব জেনে গেলে কি আমায় আর রাখবে?
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১১:১৫652412
  • পরের দিন আমি আর সেন্টারে যাই না। ফোন করে ডালিয়াকে বলে দিই, অসুস্থ আছি।
    সত্যিই অসুস্থ বোধ করছি তখন। সারাটা দিন ধরে ভেবে চলি, কী এখন কর্তব্য আমার। ঐরকম বদ্ধ পরিবেশ এমনিতেই আমার পোষাচ্ছে না, তার ওপরে এই নতুন যে ঘটনাটা ঘটল, সেতো সমস্ত এক্স্‌পেক্‌টেশানের বাইরে। যতদিন ঐখানে কাজে যাব, ততদিন আমায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আস্বস্তি নিয়ে কাটাতে হবে। দুহাজার দুশো টাকার জন্যে এ অনেক বেশি দেওয়া। কোম্পানীতো ঐ একটাই না, গিজ্‌গিজ্‌ করছে চতুর্দিকে। খুঁজলে অন্য কিছু পাওয়া যাবে না, এটা বিশ্বাস করি না।
    তার পরের দিন একটু করে গেলাম সেখানে। দশটা বেজে গিয়েছে। ইচ্ছে করেই দেরি করেছি, কারন খাতায় নাম সই করে ঢোকা আজ আমার উদ্দেশ্য নয়।
    ডালিয়া আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
    ভালো আছো আজ?
    হ্যাঁ।
    জ্বর হয়েছিলো বুঝি? দৃষ্টি ম্যাডাম কিন্তু অ্যাটেন্‌ডেন্সের খাতা ভেতরে নিয়ে গেছে।
    আমি ভেতরে ঢুকে শুভ্রাদেবীর ঘরে টোকা দিই। উনি একাই ছিলেন। ভেতরে ঢুকলাম। চাকরি পাবার সময় এঁর কাছেই এসেছিলাম, আজ চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি সেটা এঁকেই জানাতে হবে।
    বোসো। তোমার কালকের ক্লাসটা প্রেমাংশুস্যার নিয়েছেন।
    থ্যাংক্‌স্‌। আমি একটা কথা বলতে এসেছিলাম। এই চাকরিটা আমি ছেড়ে দিতে চাই।
    কেন? হঠাৎ? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে? কে বলেছে, আমাকে নাম বলো, আমি ডিস্‌ক্লোজ করব না।
    না। সেসব কিছু নয়।
    তাহলে?
    আসলে আমার ঠিক পোষাচ্ছে না। অ্যাড্‌জাস্ট করতে পারছি না।
    ও হ্যাঁ, বুঝেছি। ঐ লাঞ্চ ব্রেক তো? নো প্রবলেম, তুমি বাইরে গিয়ে লাঞ্চ খেতে পারো। অতটা রেস্ট্রিক্‌শানের কোনো মানে হয় না, আমিও এ ব্যাপারে ভাবছিলাম। তুমি খুব ভালো পড়াও কালকে স্টুডেন্টরা বলেছে। দুটো মাস যেতে দাও, আমরা সিরিয়াসলি ভাবছি তোমার ইন্‌ক্রিমেন্টের জন্যে।
    কীসের জন্যে?
    ইন্‌ক্রিমেন্ট। স্যালারীটা যাতে একটু বাড়ানো যায়, আরো স্টুডেন্ট ঢুকছে নেকস্ট উইক থেকে। ওকে? ঠিক আছে তো?
    না। ঠিক নেই। আমি ডিসাইড করে ফেলেছি চাকরিটা ছেড়ে দেবার।
    অন্য কোথাও ভালো অফার পেয়েছো?
    না।
    কাম অন। তুমি ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দ্যাখো। কেউ কোনো কিছু বলেছে তোমাকে তাই মাথা গরম করে চলে যাচ্ছো।
    না ম্যাডাম। আমি ভেবে চিন্তেই এসেছি আজ। প্লীজ। আমায় কি কোনো চিঠি লিখতে হবে?
    শুভ্রা ম্যাডাম একটু চুপ করে থাকেন, তারপরে বলেন, না, চিঠি দেবার দরকার নেই।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১১:১৭652413
  • এই চাকরির গল্পটা এখানেই শেষ। এখন আরেকটা বিরতি। বিরতির পরে আবার হাজির হবো।
  • de | 69.185.236.52 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১১:১৯652414
  • বাঃ!
  • Tim | 188.91.253.22 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১২:১৪652415
  • এই সুবাদে আমার ইভার কথা মনে পড়লো। যত্রতত্র প্রপোজিত হতে হতে আর না করতে করতে হতাশ হয়ে একদিন খুব দুঃখ করেছিলো একটু শান্তিতে বন্ধু পাতানোর উপায় নেই বলে।
  • d | 144.159.168.72 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:৪৮652416
  • ইঃ আম্মো ফ্যাকাল্টি ছিলাম এমন এক কম্পু চিটিং ইনস্টিতে। তবে হাঃ নয় সঃ। কিছু জিনিষ যেমন ঐ ছাত্র ধরার চেষ্টা এমন চেনা এমন চেনা যে মনে হয় আমারই কথা।

    তবে আমায় যে কোনও কারণেই হোক, কোথাও প্রপোজিত হতে হয় নি, সেইজনিত বিরক্তি ও উৎপাতটা এড়ানো গ্যাছে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৪:১২652418
  • ব্রেক শেষ। এবারে আর বেল টেল দিচ্ছি না। এখন আমরা সো ও জা চলে যাব কোলকাতার কেন্দ্রস্থলে, চৌরঙ্গীতে। চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশাল সেন্টার। এখানেও চাকরি। পড়ানোর চাকরি। ইন্‌স্টিটিউট্‌ অফ্‌ কম্পিউটার ইন্ঞ্জিনীয়ার্স!
    রসুন, বলছি।
  • a | 213.219.201.58 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৫:৩৭652419
  • পুরো পাখা হয়ে পড়েছি।
  • AS | 160.129.102.168 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ২০:২৬652420
  • সাগ্রহে পড়ছি
  • ranjan roy | 24.97.234.175 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৫652421
  • এই না হলে সে? অসাধারণ সব গল্পের খনি! কী সব অভিজ্ঞতা!
  • কল্লোল | 125.242.139.96 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ১২:৫০652422
  • এ কি অনন্ত ব্রেকরে বাবা। প্রায় এবিপি আনন্দর কাছাকাছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:০৮652423
  • পারছিনা এখন রেগুলার লিখতে। অনেক কাজ। প্লীজ সবুর করুন।
  • কল্লোল | 125.242.146.157 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ২১:১২652424
  • ঠিক হ্যায়। তবে মেওয়াই ফলুক।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:৪৫652425
  • এই জিগ্‌ জ পাজলওয়ালা গল্পগুলোর মধ্যে মধ্যে যে ফাঁক ফোকরগুলো আছে, সেইসবখানে ঢুকে যায় ছোটোছোটো অনেক ঘটনা। চাকরী খোঁজার গল্প সেই ফাঁক বুজিয়ে দিতে পারে। হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন যে ফ্যাকাল্টির চাকরিটাই ছিলো আমার কোলকাতায় প্রথম চাকরি। ও চাকরি ছেড়ে দেবার পরে মাইনের টাকাটুকু আদায় করতে প্রচুর ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো। বহুবার চক্কর কাটাতে হয়েছিলো কোম্পানীর ক্যামাকস্ট্রীটের জয়পুরী মার্বেলের শান দেয়া সেন্টারে। তারপরে অনেক রকমের চাকরি করেছি। শুধু চাকরি নয়, অর্থোপার্জনের জন্যে কিছু কাজ করেছি যেগুলো স্বল্পমেয়াদী কাজ। সেগুলোকে ঠিক বাঁধাধরা চাকরি বলা চলে কিনা জানিনা।
    তা সে যাই হোক, হালকা করে ভূমিকা যখন করছিই তখন বলে রাখা ভালো যে, অ্যাডহিয়ার অ্যাড্‌ভার্টাইজিং এর চাকরিটা খোয়াবার পরে ফ্যা ফ্যা করে কিছুদিন অনেক জায়গায় ঘুরলাম। অনেক খুচরো অভিজ্ঞতা হোলো, এবং সেইসঙ্গে খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে দেখে ওয়াক্‌ ইন্‌ ইন্টারভিউয়ে উপস্থিত হয়ে যেতাম ফি হপ্তায় গড়ে প্রায় দু থেকে তিন দিন। এতে একটা জিনিস হোতো। দিব্যি সময় কেটে যেত। সেইসঙ্গে অনেক কিছু জানা হোতো।
    এইরকম একটা ওয়াক্‌ ইন্‌ ইন্টারভিউ হচ্ছিলো কালেঘাট এলাকায়। কোনো কোম্পানী সেল্‌স্‌ পার্সন খুঁজছে। বাড়ী বাড়ী গিয়ে বেচতে হবে। কী বেচতে হবে সেটাও জানিনা। লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। ওখানে একজনের হাতে একটা খবরের কাগজ ধরা, সেখানে একটা বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। মেয়েদের কোনো একটা পলিটেকনিক কলেজের জন্যে শিক্ষক চাই। কোলকাতার বাইরে। গিয়ে থাকতে হবে। পে স্কেল লেখা আছে। সেই পে স্কেল খুব অদ্ভুতভাবে লেখা। এত জটিলভাবে যে কিছু লেখা যায়, সেই বিজ্ঞাপন না পড়লে বোঝা অসম্ভব। তাও ভালো, অ্যাট্রাক্‌টিভ স্যালারী লেখেনি, কিংবা স্কাই ইজ্‌ দ্য লিমিট ও নয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাকরি এটা এবং যোগ্যতা যা চেয়েছে সেটা আরামসে হয়ে যাবে। যার হাতে কাগজতা ছিলো, তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কাগজটা নিজের হাতে নিয়ে, বিজ্ঞাপনটা ভালো করে পড়ে সমস্ত কিছু নোট করে নিলাম। বিকাশ ভবনে দরখাস্ত জমা দিতে হবে। সঙ্গে অনেক রকমের কাগজপত্র চাই। এই চাকরিটায় একটা জিনিস আমার খুব পছন্দ হলো, থাকার ব্যবস্থাটাও এখানে রয়েছে। কষ্ট করে মাথার ওপরের ছাদ খুঁজতে হবে না।
    আমি আর ওয়াক্‌ ইন্‌ ইন্টারভিউয়ের ওখানে সময় নষ্ট না করে, সোজা রওনা দিলাম সল্টলেক।
    তখনো সল্টলেকের বিভিন্ন এলাকা বোঝানোর জন্যে লোকে জলের ট্যাঙ্কের নম্বর ব্যবহার করত, কিন্তু ঠিকানায় ছিলো সেক্টর নম্বর যেটা করুণাময়ী বলে একটা জায়গায়, অর্থাৎ সল্টলেকের ডালহৌসী স্কোয়ার। প্রচুর গভর্ণমেন্টের অফিস সেখানে গিজ গিজ করছে, প্রত্যেকটার শেষে ভবন। যাইহোক, বিকাশভবন সহজেই খুঁজে পাওয়া গেলেও, তার মধ্যে ফর্ম সংগ্রহের জন্যে অনেক ওপর নীচ করতে হোলো। জমা দেবার শেষ তারিখ হতে তখনো অনেক দিন হাতে আছে। ফর্মটা হাতে পেয়ে খুব আনন্দ হলো। কোথায় এসে জমা দিতে হবে সেই জায়গাটাও দেখে গেলে ভালো হয় মনে করে সেখানে গেলাম।
    তারপরে জমা দেবার নির্ধারিত লাস্ট ডেটের বেশ কয়েকদিন আগেই সমস্ত নথিপত্রসহ যেমনটি যেমনটি চেয়েছে ঠিক তেমনটি তেমনটি করে খুব যত্ন নিয়ে ফর্ম ভর্তি করে বিকাশভবনের ঐ জমাদেবার কাউন্টার খুলবার নির্ধারিত সময়ের অল্প আগেই এসে উপস্থিত হলাম। আশেপাশে কয়েকজন লোক ঘোরাঘুরি করছিলো, তাদের জিগ্যেস করতে, একজন ঝুঁকে আমার ফর্মটা দেখে বললেন, এ শুধু শুধু জমা দিলে কি আর হবে?
    কেন একথা বলছেন?
    ভদ্রলোক আর কোনো কথা বলেন না।
    আবার জিগ্যেস করি, এরকম বললেন কেন?
    তিনি পাশের অন্য লোকদুটি লোকের দিকে তাখিয়ে চোখ চাওয়াচাওয়ি করেন আর হাসেন। এসেব দেখে অস্বস্তি হয়। একটু সরে যাই ওখান থেকে। তখন দেখি ঐ ওঁদেরই একজন ইশারায় আমায় ডাকলেন সেদিকে। এগিয়ে গেলাম।
    দেখি কী ফর্ম?
    দেখালাম।
    আর সব কাগজ এনেছেন?
    সব এনেছি।
    রেফারেন্স লেটার কার থেকে এনেছেন?
    রেফারেন্স লেটার তো নেই।
    ওঁরা আবার নিজেদের মধ্যে হাসেন। তারপরে বলেন, এখনো তো জমাদেবার লাস্ট ডেট চলে যায় নি। আপনি পারলে একটা চিঠি করিয়ে এনে এটার সাথে জমা দিন।
    কার থেকে রেফারেন্স লেটার আনব বলুন তো?
    ওঁরা আবার হাসেন, তারপরে ওঁদেরই একজন বলেন, একটাই তো জায়গা আছে, লালবাড়ী থেকে।
    কোথা থেকে?
    লালবাড়ী চেনেন না?
    না।
    কোনো মিনিস্টার বা এমেলের থেকে দু লাইন লিখিয়ে এনে একসাথে জমা করে দিন। টাইম আছে তো আরো কয়েকদিন। দেখুন না চেনাশোনা কেউ থাকে যদি। আমার তো এতে কোনো লাভ নেই। অনেকেই তো আনে দেখি আজকাল।
    এতক্ষনে বুঝতে পারি এঁরা কী বলছেন। ওঁদের সাজেশানমতো ফিরে যাই সেদিন, ফর্ম জমা না দিয়ে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:৫৬652426
  • মিনিস্টার বা এমেলে খুঁজতে হবে। মিনিস্টার হলেই ভালো হয়। কিন্তু তারা আমায় রেফারেন্স বা রেকমেন্ডেশান লেটার দেবে কেন? কারা আছেন এখন মন্ত্রীসভায়? দেশে ফেরা ইস্তক কেবল চাকরি খোঁজা নিয়েই এত ব্যস্ত থাকি, জীবন সংগ্রামে এত সময় ও শক্তিক্ষয় হয়, যে দেশের অন্যান্য খবর কিছুই জানা হয়ে ওঠে না। কত নতুন নতুন শব্দ শিখছি। লালবাড়ী। একজন শুনেছিলাম কে যন বলেছিলো লালদুর্গ। এখন বোঝা যাচ্ছে, একই জায়গা। চাকরির দরখাস্তের সঙ্গে এটা অপরিহার্য শর্ত। মোটকথা যা বুঝলাম, এই সরকারি চাকরিটায় ইন্টারভিউয়ে ডাক পেতে হলে লালবাড়ীর চিঠি চাই। চিন্তার বিষয়। চেনাশোনা একজন মন্ত্রী চাই।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৫:২৫652427
  • টানা দুটো দিন অনেক ঘোরাঘুরি করে, একে ওকে তাকে জিগ্যেস করে করেও কোনো মন্ত্রী খুঁজে পাওয়া গেল না। তারপরে আরও এক মহা সমস্যা হয়েছে। আমি নিজে তো কোনো পোলিটিক্যাল পার্টির মেম্বার নই। পোলিটিক্যাল পার্টির মেম্বার না হলে মন্ত্রীমশাই কেন আমার রেকমেন্ডেশান লেটার দেবেন? মেম্বারশিপ থাকলেও নাকি ব্যাপারটা সহজ নয়। মেম্বারদের মধ্যেও উচ্চ নীচ ভেদাভেদ রয়েছে, যাকে বলে অর্গ্যানাইজেশনাল হায়ারার্খি, তার সঙ্গে রয়েছে চেনাশোনা কার কতটা, কোন মিনিস্টার কতটা ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী এগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
    দুটো কাজ করা যায়। এক, কোনো রেফারেন্স ছাড়াই কাগজপত্র জমা দেওয়া, অর্থাৎ শিওর রিজেক্শান। দুই, যেকরে হোক ঐ লালবাড়ীর কোনো একজনের থেকে চিঠি লিখিয়ে আনানো। এতে ফল কতটা হবে জানা নেই, কিন্তু ক্ষীণ আশা থাকবে যে, দরখাস্ত প্রথম দফাতেই নাকচ হয়ে যাবে না। ইন্টারভিউ অবদি তো যাওয়া যাবে।
    অনেক চিন্তা ভাবনা খোঁজ খবরের পরে মাথা খাটিয়ে একজনকে বের করে ফেললাম। তিনি আগে মন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু সম্প্রতি মন্ত্রীত্ব খোয়া গেছে। নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। ঠিকানা জোগাড় করে পরদিন ভোরবেলাতেই উপস্থিত হয়ে গেলাম দক্ষিণ কোলকাতায় তাঁর বাসভবনে। সাধারন হাউজিং সোসাইটি, গ্রাউন্ড ফ্লোর। খুবই স্বল্প ভাড়ার আবাসন। কিন্তু দেখা করব কেমন করে? ঢুকতেই দেয় না। অত্যন্ত উগ্রস্বভাবের দেহরক্ষীঅ গোছের একজন লোক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দেয়, যেমন রুক্ষ্ম ও উগ্র তার কথাবার্তা, তেমনি ভয়ানক চোখের দৃষ্টি। কিন্তু আমিও দমবার পাত্রী নই। রীতিমতো মরিয়া। লোকটিকে মোকাবিলা করবার পরে, বসবার ঘরে ঢুকতে পারি, অপেক্ষা করবার জন্যে। ইনি এখন মন্ত্রী নন, তাতেই এইরকম ভয়ঙ্কর গার্ড। সাধারন পোশাকের যদিও। পুলিশ কিনা জানিনা, হলেও পোশাক দেখে বুঝবার উপায় নেই। যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন না জানি আরো কেমন গার্ড ছিলো ভেবেই আঁতকে উঠি।
    আবছা মনে পড়ে, ইনি মন্ত্রী হবার অনেক আগে ছোটোবেলায় এঁকে দেখেছি। বাবার বন্ধু ছিলেন। আজ কি উনি সেসব মনে রেখেছেন? সম্ভবত না। বাবা বহু বছর আগে মারা গেছেন ভেবে এই প্রথম আমার আনন্দ হয়। বাবার মৃত্যুর জন্যে আনন্দ। ভাগ্যিস তাকে এই পৃথিবী দেখে যেতে হয় নি।
  • de | 24.139.119.172 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৬:৪০652429
  • আমি কখনো চাগ্রী খুঁজি নি এভাবে - অচেনা জগতের স্বাদ পাচ্ছি এই লেখাটা পড়ে -
  • সে | 188.83.87.102 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:২১652430
  • প্রাক্তন মন্ত্রীমশাইয়ের দেহরক্ষী আমাকে কন্স্‌ট্যান্ট্‌ ওয়াচে রেখে চলেছেন। ঐ ঘরেই একটা ল্যান্ড টেলিফোন রয়েছে, সেখানে বাইরের জগৎ থেকে ফোন আসছে, তিনিই সেসব ফোন অ্যাটেন্ড করছেন। দরজার বাইরের আরো কিছু দর্শনার্থীর আগমন হলো, তাদের প্রথমদফায় দেহরক্ষীর ইন্টারভিউ পাশ করতে হচ্ছে। পাশ করে আরো দুজন ভেতরে ঢুকলেন। দর্শনের সময় সকাল নটা থেকে।
    নটার সমান্য পরে প্রাক্তন মন্ত্রীমশাই ভেতরবাড়ী থেকে বসবার ঘরে এলেন। আমরা সকলেই উঠে দাঁড়িয়েছি, আমি যেহেতু লাইনে প্রথম তাই হড়বড়িয়ে নিজের পরিচয় দিলাম ও আসবার কারন জানালাম। একটা ক্যারেকটার সার্টিফিকেট হলেই চলবে, রেফারেন্স লেটার কি রেকমেন্ডেশান লেটারের দুরাশা করি না। তিনি আমায় ভেতর বাড়ীতে যেতে বললেন, সেটা হচ্ছে ডাইনিং স্পেস। সেখানে কিছুক্ষন ওঁর স্ত্রীর সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে অপেক্ষা করতে লাগলাম। দুলাইনের একটা ক্যারাকটার সার্টিফিকেট পেতে বিশেষ বেগ পেতে হয় নি। মহামূল্যবান সেই কাগজখানি হাতে নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বাড়ীর অন্য একটা দরজা দিয়ে বেরিয়ে হাঁটা দিলাম রাণীকুঠির বাসস্টপের দিকে। এখন আর দেরী নয়, হাতে স্বর্গ এলো বলে। আবার বিকাশ ভবন। সমস্ত কিছু জমা করে দিয়ে তবে শান্তি। এবারে শুধু অপেক্ষা করবার পালা। কবে আসবে ইন্টারভিউয়ের চিঠি।
    বিকাশ ভবনে যখন কাগজ জমা করছিলাম তখন আরো কিছু লোকও সেখানে ছিলেন ঐ দরখাস্ত জমা দেবার লাইনে। সেখানেই খুচখাচ কিছু আলোচনা শুনলাম। সমস্তই কর্মখালি সংক্রান্ত। তখনই কানে এলো যে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশানালে ইন্স্‌টিটিউট অফ্‌ কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ার্সে ফ্যাকাল্টি নিচ্ছে। এই সরকারি চাকরির ব্যাপারটায় ভরসা পাচ্ছি না মনে, পুরো ব্যাপারটাই এত জটিল, এখানে দরখাস্ত তো দেওয়া রইলই, এই ফাঁকে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশানালে কপাল ঠুকে একবার ঢুঁ দিয়েই দেখিনা।
  • Manish | 127.214.45.68 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:৫৪652431
  • প্রশান্ত শুর
  • সে | 188.83.87.102 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ২২:১০652432
  • -----------------------------------------------------------------------
    ছুটি প্রায় ফুরিয়ে এলো। শেষের কদিন একটু বেড়াবো বিশ্রাম নেবো ঠিক করেছি। সেই কারনেই কদিন লিখব না। তারপরে আবার যেই কে সেই কন্টিনিউ করব চাগ্রীর গপ্পো। এখন বড়ো করে একটা ব্রেক।
    -----------------------------------------------------------------------
  • সে | 188.83.87.102 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৫:২৮652433
  • চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশানালের বাড়ীটা বরাবর বাইরে থেকেই দেখেছি। খুব ছোটোবেলায় যখন পাতাল রেল তৈরী হচ্ছিলো সেই সময়েই এই বাড়ীটাও একটু একটু করে তৈরী হতে দেখেছি, কিছু গল্প কানাঘুষো শুনেছি এই বাড়ীটাকে কেন্দ্র করে। বাইরের দেয়ালে টালির কারুকার্য চকচক করত। উঁচু বাড়ী বলতে চৌরঙ্গীর রাস্তায় ছিলো তিনটে বাড়ী টাটা সেন্টার, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশানাল আর এভারেস্ট বিল্ডিং। হিমালয় আরেকটু পরে তৈরী হয়। সেই চকচকে টালি ভেঙে ভেঙে পড়ছে, রক্ষনাবেক্ষন হয়না বলেই মনে হয়। রংচটা বাড়ীটা দেখে কেমন যেন মনে হয় হঠাৎ বুঝি দুড়দাড় করে ভেঙে পড়বে। করুণাময়ী থেকে অতদূরে পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। বাড়ীটার পেছনদিকের দরজা দিয়ে ঢুকবার ব্যবস্থা। সেখানেই সিঁড়ি ও লিফ্‌ট। আবর্জনা পানের পিক থুতুময় অপরিষ্কার এবং অন্ধকার সিঁড়িতে আলোর ব্যবস্থা অনিয়মিত। গোটা কয়েক লিফট চলছে, তাতে হুড়মুড় করে ঢুকছে বেরোচ্ছে লোকজন। জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ উঁচু একটা তলায় পৌঁছলাম। পুরো বাড়ীটাই এতটা অপরিষ্কার কিনা জানিনা, কিন্তু যে তলায় পৌঁছলাম সেটাও বেশ নোংরামতো। কিন্তু অদ্ভুত সৌভাগ্য আমার, তখনো চলছে ওয়াক্‌ ইন্‌ ইন্টারভিউ। শুধু তাই ই নয়, আর মাত্র দুজন আমার আগে, বাকী সকলের ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ খুব বেশিক্ষণ দাঁড়ানোর ব্যাপারও নেই। একটু দাঁড়ানোর পরেই ডাক এলো। মোটামুটি বড়োসড়ো একটা ঘর, সেখানে কাচে ঢাকা সবুজ রেক্সিনে মোড়া মস্ত এক সেক্রেটারী টেবিলের ওপারে বসে রয়েছেন এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। টেবিলের ওপরে গুচ্ছের কাগজপত্র এবং সেই টেবিলের আরেক ধারে বসে আছেন আরো একজন চশমাপরা ভদ্রলোক, ইনি বয়সে একটু বেশিই হবেন, কারন এঁর মাথার চুলে ভালো করেই পাক ধরেছে। যা বুঝলাম দুজনেই ইন্টারভিউ নেবেন। আমি গুটিসুটি টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
    এত দিন যাবদ যতগুলো চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছি তার মধ্যে কিছু ইংরিজিতে, কিছু বাংলায়, এই ইন্টারভিউটা বাংলায়। এর মানে কিন্তু এই নয় যে পড়াতে হবে বাংলায়। যাঁরা ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তাঁরা বাংলায় প্রশ্ন করেন। গোড়ার দিকটায় কায়দা করে ইংরিজি বলতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু অচিরেই বুঝলাম বাংলায় উত্তর দিলেই এঁদের সুবিধে হবে। প্রশ্নকর্তাকে অসুবিধেয় ফেলা ঠিক নয় এ শিক্ষা এতদিনে পেয়ে গেছি। কিন্তু যে বিষয়টা পড়াবো, সেই বিষয় নিয়ে এঁদের কোনো প্রশ্নই নেই। কোনো দরখাস্তও আনিনি সঙ্গে। ঠিক কোন বিষয় পড়াতে হবে সেটাও এঁরা পরিষ্কার করে বলছেন না। পড়াশুনোর শংসাপত্রগুলো (সমস্তই অরিজিনাল) সামনেরজনের হাতে দিয়েছি, তিনি সেগুলো অল্প উল্টেপাল্টে দেখে, গলা খাঁকরালেন।
    এখানে অ লেবেল আর অ্যা লেবেল আছে।
    এটা একটা স্টেটমেন্ট। আমি শুনে চলেছি। যদিও অ লেবেল ও অ্যা লেবেল কী বস্তু বুঝিনি, কিন্তু বুঝি যে নি সেটা এঁদের বুঝতে দিচ্ছি না।
    এবারে বি লেবেল ও হয়ে গ্যাছে।
    এই বাক্যটি বলে তিনি আবার গলা খাঁকরালেন। এবার অন্যজন (যাঁর কাঁচাপাকা মাথা) বলতে শুরু করলেন।
    আপনাকে বি লেভেলের কয়টা ক্লাস নিতে হবে।
    এতক্ষণে কিছুটা বুঝেছি! লেবেল নয় লেভেল। এঁরা, বি লেভেল এর কোনো কম্পিউটাএর কোর্সের কথা বলছেন। যদিও এই লেভেলগুলো সম্বন্ধে আমার আইডিয়া শূণ্য। অ হয়ত ও, অ্যা টা বোধহয় এ, এঁর উচ্চারণ বিকৃতিতে অ অ্যা এইরকম শোনাচ্ছে।
    আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম।
    আপনাকে পার ক্লাস দেড়শো টাকা দেবো।
    দেড়শো?
    হ্যাঁ দেড়শো। এখন তো খুব বেশি স্টুডেন্ট নাই।
    কী পড়াতে হবে?
    এবার ওঁরা দুজনেই একটু উশ্‌খুশ্‌ করেন, একে অন্যের দিকে তাকান, দেখে মনে হয় পরিষ্কার জানেন না বিষয়টা ঠিক কী। আরো দুয়েকবার গলা খাঁকরানি, তারপরে একটা কাগজ থেকে কিছু চ্যাপ্টারের নাম পড়ে শোনানো শুরু করলেন। তা শুনে বুঝে উঠবার মতো কান তখনো তৈরী হয় নি আমার। কাগজটা চেয়ে নিয়ে পড়ে নিলাম। পড়ানোর জন্যে সহজ বিষয় নয়, এর জন্যে স্টাডি মেটিরিয়াল চাই। কিন্তু এখনই এঁদের সে প্রশ্ন করাটা নিরাপদ নয়। বিষয়গুলোর নাম একটা কাগজে টুকে নিলাম। যা বুঝতে পারছি, বই সংগ্রহ করতে হবে।
    কবে থেকে ক্লাস নিতে হবে?
    আমার প্রশ্ন শুনে এঁরা রুটিন দেখতে মনোযোগী হন।
    মঙ্গলবার সকালে। মঙ্গলবারে আর বেস্পতিবারে।
    আমি মনে মনে দ্রুত হিসেব করি, দেড়শো ইন্টু দুই, মানে সপ্তায় তিনশো, মাসে চারটে সপ্তাহ, অর্থাৎ বারোশো টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে। ওঁরা আবার নিজেদের মধ্যে নীচু গলায় কী যেন বলাবলি করেন।
    কয়টা ক্লাস লাগবে আপনার পড়াতে?
    আবার গলা খাঁকরানি।
    এক কাজ করেন, সপ্তায় একটা করে ক্লাস নেন ছটা ক্লাসে সিলেবাস শেষ করে দেন।
    ছটা ক্লাসে? (আমার কোনো ধারণাই নেই সিলেবাস কতো বড়ো, কিন্তু এখন পেছপা হলে চলবে না)
    ছটা ক্লাস। ব্যাস।
    আমি হতবম্ব হয়ে ভাবছি কী উত্তর দেবো। এরকম বার্গেইন মাছের বাজারেও দেখিনি। আমাকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাঁচাপাকা এবার ফাইনাল করে ফেলতে চান ব্যাপারটা।
    ঠিক আছে, পার ক্লাস ওয়ান সেভেনটি ফাইভ। এর বেশি হবে না।
    একবার ভাবি উঠে চলে আসি ওখান থেকে। খুঁজে নে তোরা টিচার, যে পড়াবে এই সাবজেক্ট। কিন্তু কড়কড়ে কিছু টাকা এভাবে হাতের মুঠো থেকে চলে দিতে দেওয়া যায় না। আমার খুব টাকার দরকার।
    তেল চক্‌চকে মধ্যবয়সীই সম্ভবত ডিসিশান মেকার। কী একটা ভেবে নিয়ে তিনি গলা খাঁকরান।
    ঠিকাসে। দুশো ফাইনাল।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৫:৪২652434
  • বই জোগাড় করতে হবে। পুরো বিষয়টা ইংরিজিতে পড়াতে হলে ইংরিজি পরিভাষা জানা দরকার, সেইসঙ্গে বি লেভেলের জন্যে কতটা দরকার সেটাও জানতে হবে। কোথায় পাবো বই? বিভিন্ন চাকরি খুঁজবার সময়ে এবং ফেরিওয়ালাবৃত্তির সময়ে গরমের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যে একটা লাইব্রেরী কার্ড বানিয়েছিলাম ব্রিটিশ কাউন্সিলের। সেই মেম্বারশিপ কার্ডের এতদিনে সঠিক সদ্‌ব্যবহার হতে চলেছে। লাইব্রেরী এখনো খোলা রয়েছে, আজকের দিনটাও মোটামুটি ভালোই কাটছে, দৌড়ে চলেই যাই এখন থিয়েটার রোড। যদি ভালো ভালো বই পেয়ে যাই, সুন্দর করে পড়াতে পারি, এই সব চিন্তা মাথায় ঘোরে। তারপরে সরকারি চাকরির ইন্টারভিউয়ের ডাক যদি আসে, এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার। লাইব্রেরীর কার্ডটা এখনো ভ্যালিড রয়েছে।
    লাইব্রেরীতে ঢুকে বই খুঁজতে কিছু সময় লেগে গেল। তবু যাহোক তাহোক করে কয়েকটা বই সঙ্গে নিয়ে একটা টেবিলের ওপরে রেখে সবে বসেছি। সর্বনাশ! আমার সামনের চেয়ারে খুব মনোযোগ দিয়ে একজন পড়াশুনো করছেন, কাগজে লেখালেখি করছেন। দেড় বছর কেটে গিয়েছে মধ্যিখানে, কিন্তু ঐ মুখ কি ভুলবার? প্রদীপ মুখার্জ্জি।
  • ranjan roy | 24.99.147.42 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৫:৫১652435
  • ক্লিফ হ্যাংগার!
  • সে | 188.83.87.102 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৬:২৩652436
  • লাইব্রেরীর মধ্যে কথা বলা ঠিক নয়।
    দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে থ হয়ে গিয়েছি। গল্প উপন্যাস হলে এটাএকটা চরম রোম্যান্টিক মুহূর্ত হতে পারত, কিংবা বিষাদমুখর সিকোয়েন্স। এক্ষেত্রে সেরকম কিছুই হলো না। কিন্তু এই অন্তিম অফিস আওয়ারে মিস্টার মুখার্জি ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরীতে কেন? উনি কি তবে বেল্‌স্‌ হাউসে আর চাকরি করছেন না এখন? চাকরিটি কি স্বেচ্ছায় ছেড়েছেন, না খোয়া গিয়েছে? এইসব প্রশ্ন আমার মাথায় খেলে যায়। হাতের সামনে এদিকে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ডিজাইন খোলা রয়েছে। প্রথমটায় ঠিকমতো ঠাওর করতে পারছিলেন না মনে হয়। এই দেড় বছরে আমার চেহারার বিস্তর অবনতি হয়েছে। পোড় খাওয়া ঝলসানো উস্কো খুস্কো মুখে নবতম সংযোজন কপালের একপাশে ভুরুর ওপরে গভীর কাটমার্ক। আগের দিনে এরকম কাটমার্ক পুরুষের চেহারায় ম্যাচোভাব বাড়িয়ে তুলত, কিন্তু এই দাগ আমার মুখের ম্যাচোত্ব বৃদ্ধি করেছে কিনা জানিনা। অবশ্য মিস্টার মুখার্জি আমায় দেখে আনন্দিত হয়েছেন বলে মনে হয় না, বরং কিছুটা বিরক্ত হয়েছেন বলেই মনে হলো আপাতভাবে । তবু আমিই আগবাড়িয়ে সৌজন্য সম্ভাষন শুরু করলাম লো ভলিউমে।
    কী খবর? সব ভালো তো?
    মিস্টার মুখার্জি হাসির মতো মুখ করে সম্মতিসূচক মাথা হেলালেন। এরপরে অল্পক্ষন চুপ। তারপরে উনিই আমায় প্রশ্ন করলেন।
    এখন কোথায় আছো?
    এই "আছো"র মানে হল, চাকরিস্থল। আমি দ্রূত হিসেব করে নিই কী বলব।
    পড়াচ্ছি। ইন্স্‌টিটিউট অফ কম্পিউটার ইন্ঞ্জির্নীয়ার্সে।
    টেকনিক্যালি তো আমি মিথ্যে বলছিনা। আধ ঘন্টা আগে কাজ একটা পেয়েছি তো। এর সামনে নিজেকে বেকার বলে পরিচয় দেবার দরকারটাই বা কী? দেড় বছর আগে গর্বের সঙ্গে দাপট দেখিয়ে চাকরি ছেড়ে এসেছিলাম, সেই অহংকার এক বিন্দুও যেন চূর্ণ না হয়। অসংখ্য দুঃখ দুর্দশা গেছে, হাজারো লাঞ্ছনা, প্রাণ পর্যন্ত বিপন্ন হয়েছে একাধিকবার, কিন্তু সেসবের আঁচ যেন না পান মিস্টার মুখার্জি।
    বাহ্‌। গুড।
    ছোটো উত্তর দেন তিনি। এবার আমি প্রশ্ন করি।
    আর তুমি কী করছ এখন? ঐ বেল্‌স্‌ এই কি..
    না, আমি এখন চাকরি ছেড়ে কম্পিটিটিভ পরীক্ষার জন্যে প্রিপেয়ার করছি।
    বাহ্‌। খুব ভালো।
    এখন আর এখানে পড়া হবে না। আমি ধীরে ধীরে বইপত্র গুটিয়ে ফেলি। কম্প্যাক্ট বই খুঁজতে হবে। তবে এই লাইব্রেরীতে নয়। এখানে এলেই আরো কত চেনামুখ বেরিয়ে পড়বে।
    ভাবতে হবে, কার কাছে পাওয়া যাবে স্টাডি মেটিরিয়াল। আমি বেরিয়ে যাই ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে। এখন হাঁটতে হবে অনেকক্ষন।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৭:০৬652437
  • এটা হতে পারে মাসে আটশো টাকার চাকরি; লোকের বাড়ী সকাল বিকেল বাসন মাজলেও ছশো থেকে আটশো পাওয়া যায় নিজের চোখেই দেখেছি। এরকম তিনচার বাড়ী কাজ করলেই আড়াই হাজার রোজগার করা যায়। কিন্তু আমি তো বাসন মাজার ঝি নই, আমি হচ্ছি পাশ করা ইঞ্জিনীয়ার, লেখাপড়া জানা ভদ্রমহিলা। আমায় ডিওইএসিসি পাঠক্রমের বি লেভেলের একটা শক্ত বিষয় পড়াতে হবে মাত্র ছটা ক্লাসের সময়সীমায়। অন্ততঃ আট কি দশটা চ্যাপ্টার। তার বেশিও হতে পারে। ক্লাস প্রতি আমায় এরা দেবে দুশো টাকা। তাও নির্লজ্জের মতো দরদাম করে, তবে। কজন ছাত্র, তাদের প্রশ্নোত্তর, এসব তো রয়েইছে, সেইসঙ্গে এরা সব পরীক্ষায় বসবে, তাদের পাশ করানোর একটা কর্তব্য দায়বদ্ধতা সবই তো থেকে যায়। বই পত্রও কিছু দিলো না আমায়। আমি সেরকমভাবে চাই ও নি। কিন্তু ঐ ঘরটায় দেয়ালের শেল্‌ফে কিছু বইয়ের দিকে নজর গেছল। সবই অন্য বই। এই বিষয়টার ওপরে একটা বইও নেই ওদের কাছে।
    হাঁটতে হাঁটতেই বুদ্ধি খুলে যায়। হেঁটে মেরে দিলাম পুরো একডালিয়া অবধি। একজন মানুষকে জানি, তাঁকে যদি পাওয়া যায় আজ। বিশ্বভারতীর সর্বেসর্বা - কিন্তু বলা যায় না, আজ হয়ত কোলকাতাতেই আছেন। সাহস করে ঢুকে পড়ি তাঁর বাড়ি। আধ ঘন্টার মধ্যে জোগাড় হয়ে যায় বই। একটাই বই, তাতেই মোটামুটি সব আছে। বাকীটার জন্যে স্মৃতিশক্তিই ভরসা। বইটা সাতদিনের মধ্যে ফেরৎ দেবার কড়ারে নিয়ে আসি। সঙ্গে ফাউ পাই আরেকটা ট্রেনিং সেন্টারের সন্ধান। ক্যাড্‌ ক্যাম। সাধে বলছি, আজ দিনটাই পয়া?
  • সে | 188.83.87.102 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৮:১৫652438
  • বই সংগ্রহ হয়ে যাওয়ায় একটা চিন্তা কমে গেল। ঝপাঝপ ঠিক করে ফেললাম কী কী পড়াবো, কবে কবে কোনটা কোনটা পড়ালে দিন পাঁচেকেই পুরো সিলেবাস শেষ করানো যাবে। অল্প বিস্তর ক্লাস টেস্ট নিতে হবে। একটা পুরো দিন হাতে রাখব রিভিশানের জন্যে। দুদিনের পড়া পুরো গুছিয়ে প্লান করে নিলাম। বাকিটুকুও করে রাখা যাবে, বই ফেরৎ দিতে এখনো হাতে সময় রয়েছে। ফোটোকপি করানো যায়, কিন্তু সে অনেক খরচ হয়ে যাবে।
    মঙ্গলবার আমায় ক্লাসরুম দেখিয়ে দিলেন অখিলদা। সেই একরকমের মানুষ আছে না, যাদের দেখলেই মনে হয় ভালোমানুষ, তেমনি লোক। একটা তিন ফুট বাই ছফুট খুপরি ঘরে তিনি বসেন। কাঠের পার্টিশান করা ঘর। সেখানে ওঁর বসবার জায়গার পেছনে ডাঁই করা রয়েছে পর্বতপ্রমাণ রাশিরাশি ফাইল আর ধুলোভরা কাগজের বান্ডিল। সেঘরে ঢুকে দাঁড়াবার জায়গা পর্যন্ত নেই। সেখানেই একটা নড়বড়ে ডেস্ক ও চেয়ারজুড়ে অখিলদার কাজের জায়গা। আমার ক্লাস অন্য ফ্লোরে, ক্লাসরুমে চারপাঁচ সারি বেঞ্চি, সেখানেই গাদাগাদি করে ছাত্রছাত্রীরা বসেছে। ফার্স্ট বেঞ্চ ও দেয়ালে লাগানো বোর্ডের মধ্যিখানে যেটুকু জায়গা সেখানে কেবল দাঁড়ানো যায়। আমার নিজের বসবার জন্যে কোনো চেয়ার সেখানে নেই। চেয়ার আঁটবেইনা সে জায়গাটায়। জনা পনের ছাত্রছাত্রী ক্লাসরুমে ঢুকে গেলে তবেই দরজা বন্ধ করে ক্লাস শুরু করা যায়। আমি ফুলস্পীডে পড়ানো শুরু করে দিলাম। সকলে একইরকম ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেনি। কেউ বোঝে, কেউ ভালো করে বোঝে না। এরা শুধু এটুকু জেনেই পড়তে এসেছে যে এর পরে পরীক্ষায় বসে পাশ করলে, তারপরে চাকরি পাবে। আমি প্রাণপনে চেষ্টা করি যাতে সকলেই বিষয়টা বুঝতে পারে। তবু ফাঁক থেকেই যায়। ভিতটাই যে অনেকজনের নড়বড়ে। সেই ভিত তৈরী করিয়ে পড়াতে গেলে সিলেবাস শেষ করবো কেমন করে? আমার হাতে যে মাত্র ছটা দিন। এরা অন্য বিষয়ের ক্লাসও করছে। সেসব ক্লাসেও সবাই সবকিছু বুঝছে বলে বিশ্বাস হয় না। বড্ড অনিশ্চিত লাগে। হু হু করে সময় ফুরিয়ে যায়।
    ক্লাসের শেষে আরো কাজের সন্ধানে চলে যাই সোজা ডেকার্স লেন। এখানেই তো ক্যাড ক্যামের অফিস। ওরা কি লোক নেবে এখন?
  • সে | 188.83.87.102 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৮:৩০652440
  • আসলে আমি তো কারো রেফারেন্স নিয়ে আসিনি, কেবল একটা উড়ো খবর নিয়ে এসেছিলাম যে এখানে হয়ত লোক নেওয়া হচ্ছে। তার ওপরে সুপারিশের কোনো চিঠি বা ফোন কল, বা কোনো চেনা লোকের নাম- কিছুই বলতে পারলাম না। আমার উদ্দেশ্য যে একটা চাকরি চাওয়া, সেটাই কেন জানি না বোঝাতে পারলাম না তাদের। ডেকার্স লেনের সেই ভদ্রলোক আমার সঙ্গে কথাই বলতে চান না, বসতে বলা তো দূরে থাক। দিনের পর দিন পোড় খেয়ে খেয়ে হয়ত আমার চেহারাটাই এমন বদলে গিয়েছে যে লোকে সর্বদাই সন্দেহের চোখে দেখে। যেন আমার আসল উদ্দেশ্য চাকরি চাওয়া না, যেন অন্য কোনো দুরভিসন্ধি নিয়ে এসেছি - চাকরিটা একটা ছুতো। হয়তো তিনি এমন ভাবছেন না, কিন্তু তাঁর কথায় বার্তায় আচরণে ভঙ্গীতে সেরকমই যেন প্রকাশ পায়। যেন তাড়াতে পারলেই বাঁচে। আর এইরকম করলেই তখন আরো জেদ চেপে যায়। যখন বুঝেই যাই যে লোকটা অহেতুক দুর্ব্যবহার করছে, তখন তাকে উত্যক্ত করবার একটা ইচ্ছে হয়। এরকম ইচ্ছে আগে হোতো না, কিন্তু পোড় খেতে খেতে ক্রমশঃ মনে হয় কিছুটা বদলে যাচ্ছি। যাইহোক, এই লোকটা যতই আমায় তাড়াতে চায়, আমি ততই তাকে প্রশ্ন করে চলি। শেষে সে বাধ্য হয়ে বলল, পার্ক স্ট্রীটেও এদের আরেকটা অফিস আছে। এই একটা খবর পাওয়া গেল। হাঁটা দিলাম পার্ক স্ট্রীট।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন