এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মঠের দেশে, পরণকথার দেশে

    I
    অন্যান্য | ১৩ অক্টোবর ২০১১ | ৬৪৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • I | 14.99.91.65 | ০৪ নভেম্বর ২০১১ ০০:৩৩494470
  • *স্যুট পরে
  • I | 14.99.91.65 | ০৪ নভেম্বর ২০১১ ০১:২৪494471
  • বারদি একটি শান্ত গ্রাম; বড়জোর একটি গঞ্জ। রাস্তার দুপাশে ধান ক্ষেত, জলা জমি, কচুরি পানা-শাপলা-ছোট ছোট জলজ ফুল, ফিঙে ও বক; হাঁটু ডুবিয়ে কচুরি পানা তুলছেন গ্রামের মানুষ। সরু প্রবেশ পথের দুধারে চায়ের দোকান, ছাগল বাঁধা, সে আপনমনে কাঁঠালপাতা চিবোচ্ছে, ঝাঁকায় মুরগীর ছানা খুঁটে খুঁটে গম খাচ্ছে। এইখানে একটি বাজার শুরু হল। বাজারের মুখে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাশি রাশি ভোটের পোস্টার। কলেজ নির্বাচনে অমুককে ভোট দিন। তমুককে ভোট দিন। আর ঝাঁপিয়ে পড়লেন দু-পাশের দোকানীরা -মিষ্টি নিয়ে যান। মোমবাতি-মঠ-কদমা-বাতাসা-ধূপকাঠি নিয়ে যান বাবার দর্শনে।

    বাবার মন্দির কিন্তু অত হাইফাই কিছু না। বেশ মডেস্ট ভাব। ছোটখাটো। মন্দির চত্বরে আমগাছ, বেলগাছের ছায়া পড়েছে। নিকোনো মাটির মেঝেতে শিবলিঙ্গ; সরু কাঠিতে লাল সুতলি বাঁধা, তার মাঝখানে সপত্র বেল ডাল পোঁতা; সামনে মন্দির, এখনো খোলে নি। মেয়েরা জমকালো শাড়ি পরে শিবলিঙ্গকে নমস্কার করছেন, ধূপকাঠি জ্বালছেন, প্রদীপের শিখার তাপ নিচ্ছেন। পাশে ছোট দুর্গাপুজো হচ্ছে। সেই মাটির প্রতিমা, সবকিছু মাটির। না, একচালা নয়। পেছনে বড় বাঁধানো জায়গা, দোতলা কি তিনতলা বাড়ি, থাকার জায়গা সম্ভবত:, ওপাশে একটি চারদিক খোলা ছাদওলা মার্বেলের মেঝেবিশিষ্ট বিশ্রামের জায়গা। আশ্রম কমপ্লেক্সে জটাজুট-রক্তাম্বর-ত্রিশূল-রুদ্রাক্ষধারী নগ্নপদ দুয়েকজন সন্ন্যাসী দেখলাম, কেমন তান্ত্রিক ভাব; তাঁদের সঙ্গে লোকনাথ বাবা'র সম্পর্ক কী কে জানে। হয়তো খেতে পাবেন বলে এসেছেন।
    খাবারের সন্ধানে আরো কিছু মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন এখানে। কিছু বিধবা প্রৌঢ়া ও বৃদ্ধা। ভক্তদের কপালে তিলক পরিয়ে সাহায্য চাইছেন। দর্শনার্থী খুব বেশী নেই, তাই প্রত্যেককেই এঁরা দল বেঁধে ঘিরে ধরছেন। মুশকিল ! এত খুচরো টাকাও নেই যে এঁদের সন্তুষ্ট করি। মা বললেন-ইন্ডিয়ান টাকা আছে, নিবেন? এক বৃদ্ধা বললেন-হেয়াই দেন। হয়তো ইন্ডিয়ান কারেন্সি ভাঙিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় এঁদের জানা আছে।
    খানিক পরেই দুর্গা ঠাকুরের সামনে আম গাছের তলায় গান-বাজনা শুরু হয়ে গেল। গ্রামীণ ব্যাণ্ড। কমলা জামা, সাদা লুঙি পরা, গলায় গামছা ঝোলানো একজন খুব দরদ দিয়ে ক্লারিওনেট বাজাচ্ছেন, নানান বিভঙ্গে-কখনো সোজা দাঁড়িয়ে, কখনো ঘাড় পিছনে হেলে, কখনো সামনে ঝুঁকে পড়ে, মনে হচ্ছে খুব আর্তি তখন-যেন লাখ লাখ দর্শক তিন ধারে, আর সপুত্রকন্যা মা তো সামনে রয়েইছেন। ফ্লুটে একজন, কাড়া-নাকাড়া বাজাচ্ছেন আরো দুজন। দর্শক বলতে জনা কুড়ি স্থানীয় শিশু-বৃদ্ধ-যুবতী আর বাইরের লোক আমরা কিছু। এই ব্যাণ্ডের সুখনিবিড় বর্ণনা শুনেছি ছোটবেলায় ঠাকুমা'র কাছে। আজ ঠাকুমা নেই; কাকপক্ষীটি হয়ে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে হাজার মাইল উড়াল দিয়ে কি তিনি শুনতে এসেছেন দেশগাঁয়ের সুর?
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৪ নভেম্বর ২০১১ ০১:৫৩494472
  • ডাগদারের লেখাগুলো--শেষ হয় যেন সেই উস্তাদ বিলায়ত খানের, লাস্টে --ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি বাজানো---অপূর্ব!
  • I | 14.99.91.65 | ০৪ নভেম্বর ২০১১ ০২:১০494473
  • ফিরে আসছি। আবার সেই চড়া -পড়া নদী, নির্মীয়মান অবৈধ সব কনস্ট্রাকশন। ঢাকা শহরের জ্যাম। জ্যামের ফাঁকে -ফোকড়ে শহরের পথশিশুরা, বড়-মেজ-ছোট,টুংকাইয়ের বয়সীও কেউ কেউ, বই বিক্রি করছে , খেলনা বিক্রি করছে। অনাথ এরা অনেকেই, এতিমখানা থেকে বেরিয়ে পড়েছে, হাজারে হাজারে ছড়িয়ে যাচ্ছে শহরের পেটের মধ্যে নানা খানা-খোঁদলে। এদের পেটের খোঁদল তবু ভরছে না। বানভাসি মানুষজন যেন, জমিহারা মনিষ্যি, বাঁধের ওপর এসে বসত করে চলেছে তো চলেছেই, মোড়ল-মুরুব্বি-বাঁধ ইঞ্জিনীয়ার-সরকার-দেশ কারো কথা শুনছে না। বাঁধ আর কতদিন টিকবে হে অছিমদ্দি ভাই? বাঁধ ভাঙ্গলে দেশ বাঁচবে? হারামজাদার বাচ্চারা শুনলে তো !

    ভালো লাগছে না। রাস্তার দুধারে অজস্র ভোট দিন ! ভোট দিন ! ধ্বনি ইঁট-পাথর-কংক্রীট হয়ে জমে আছে। নানা রংয়ের ছাত্র দল নানা রংয়ের কালিতে দেয়াল লিখে ভরিয়ে দিয়েছে। দেয়াল , তোমার কী লিখন? কে পারে পড়তে? রাস্তায় আসতে আসতে মওলানা ভাসানী-র মত দেখতে এক বৃদ্ধকে দেখলাম। লাল মওলানা, তুমি আছো কোনখানে? ঘুমাও ক্যা?

    মওলানা ভাসানীকে ভারত আবার বেশ সন্দেহের চক্ষে দেখত। ভয়ও পেত। নাকি চীনপন্থী। বৃদ্ধ কখন যে কী বলে বসেন, কী করে বসেন। এশিয়ার মুক্তিসূর্যের বিশেষ পরওয়া করতেন না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে লড়ছেন বলে ভারতের হেজিমনি দেখলেও ছেড়ে কথা কইতেন না। তাই কি আর করা, ৭১ সালে আসাম যাওয়ার পথে ভারতীয় সেনা একরকম তাঁকে গ্রেপ্তার করে দিল্লী উড়িয়ে নিয়ে যায়। সেখানে ইন্দিরা-র সঙ্গে একপ্রস্থ কথোপকথনের পর তাঁকে নজরবন্দী করে রাখা হয় দেরাদুনে, "র'-এর হেডকোয়ার্টার্সের নাকের ডগায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তবে তাঁর মুক্তি। ৭২-এর জানুয়ারী মাসেই আবার বৃদ্ধ অবিলম্বে বাংলাদেশের মাটি থেকে সকল ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবী তোলেন।
    মওলানার স্বপ্ন তাঁর দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি'র মতই বারেবারে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। তবু তিনি সবসময়েই ছিলেন দলের ওপরে, মত-পথের ওপরে দাঁড়ানো জাতির বিবেক। রবীন্দ্রনাথের থেকে উনিশ বছরের ছোট। মুজিবের একনায়কতন্ত্র তাঁর হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল হয়তো। যে মুজিব বহুদলীয় গণতন্ত্রে এমন বিশ্বাসী ছিলেন। আবার মুজিব-হত্যার খবর শুনে শিশুর মত কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি।
    ১৯৭৬ সালে, মওলানা'র বয়স তখন ৯৬, ভারতের ফরাক্কা বাঁধ তৈরী ও জল-রাজনীতির বিরুদ্ধে লং মার্চে নেতৃত্ব দেন তিনি। এই শেষবারের মত গর্জন শোনা গেল লাল মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী'র । এর ছ-মাস পরে নভেম্বর মাসে ঢাকা শহরে মারা যান তিনি।
  • I | 14.99.91.65 | ০৪ নভেম্বর ২০১১ ০২:২২494474
  • শামসুর রাহমানের এই কবিতাটি, অনেকের পড়া হয়তো, তাও এটা দিয়েই শেষ করছি আজকের পালা :

    "শিল্পী কবি, দেশী কি বিদেশী সাংবাদিক
    খদ্দের, শ্রমিক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, সমাজসেবিকা,
    নিপুণ ক্যামেরাম্যান, অধ্যাপক, গোয়েন্দা, কেরানি,
    সবাই এলেন ছুটে পল্টনের মাঠে, শুনবেন
    দুর্গত এলাকা প্রত্যাগত বৃদ্ধ মৌলানা ভাসানী
    কী বলেন। রৌদ্রালোকে দাঁড়ালেন তিনি, দৃঢ়, ঋজু,
    যেন মহাপ্লাবনের পর নূহের গভীর মুখ
    সহযাত্রীদের মাঝে ভেসে ওঠে, কাশফুল-দাড়ি
    উত্তুরে হাওয়ায় ওড়ে। বুক তাঁর বিচূর্ণিত দক্ষিণ বাংলার
    শবাকীর্ণ হু-হু উপকূল, চক্ষুদ্বয় সংহারের
    দৃশ্যবলীময়, শোনালেন কিছু কথা, যেন নেতা
    নন, অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার। জনসমাবেশে
    সখেদে দিলেন ছুঁড়ে সারা খাঁ খাঁ দক্ষিণ বাংলাকে।
    সবাই দেখলো চেনা পল্টন নিমেষে অতিশয়
    কর্দমাক্ত হয়ে যায়, ঝুলছে সবার কাঁধে লাশ।
    আমরা সবাই লাশ, বুঝি- বা অত্যন্ত রাগী কোনো
    ভৌতিক কৃষক নিজে সাধের আপনকার ক্ষেত
    চকিতে করেছে ধ্বংস, পড়ে আছে নষ্ট শস্যকণা।...

    ... বল্লমের মত ঝলসে ওঠে তাঁর হাত বারবার
    অতি দ্রুত স্ফীত হয়, স্ফীত হয়, মৌলানার সফেদ পাঞ্জাবি
    যেন তিনি ধবধবে একটি পাঞ্জাবি দিয়ে সব
    বিক্ষিপ্ত বেআব্রু লাশ কী ব্যাকুল ঢেকে দিতে চান।'

    (সফেদ পাঞ্জাবি)

  • Manish | 59.90.135.107 | ০৪ নভেম্বর ২০১১ ১৪:২৯494475
  • জিও ডাক্তার
  • I | 14.96.185.89 | ০৫ নভেম্বর ২০১১ ০৮:২৯494476
  • মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের রোম্যান্টিসিজম করে লাভ নেই। বহু লক্ষ লোক আদর্শের টানে প্রাণ দিয়েছিলেন এ যেমন সত্যি, আন্দোলনের রাশ সবসময়েই যে বাংলাদেশের এলিটদের হাতে ছিল এ কথাও সত্যি। এবং এই নেতৃবর্গ ১০০ শতাংশ নি:স্বার্থ দেশপ্রেমের জন্য স্বাধীনতা আন্দোলনে নামেন নি। দেশ স্বাধীন হতেই বাংলাদেশ নামক পিঠের ভাগ নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল। পিঠেয় কামড় বসানোর জন্য নেতারা -বড় , মেজ ছোট, বামপন্থী, মধ্য বাম, দক্ষিণপন্থী নির্বিশেষে-নালেঝোলে একাকার। এই সুযোগে কিছু লুম্পেনও দিব্যি করে খেয়েছে। আখতারউজ্জামান ইলিয়াসের ভাষায় " এককালের গুণ্ডা ও এখন দেশপ্রেমিক'-এদের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না কিংবা এখনো নেই।

    স্বাধীনতার পর মুজিব এসে দেশবিরোধী রাজাকারদের গণ-ক্ষমা প্রদর্শন করলেন। জাতীয় রক্ষী বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হল বামপন্থী ও অন্যান্য বিরোধীদের নির্দয় ভাবে লিকুইডেট করবার জন্য। স্বজন পোষণ শুরু হল, দুর্নীতি-অরাজকতা চরমে। ঘোষিত সেকুলার মুজিব ধীরে ধীরে ইসলামের দিকে ঝুঁকলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে তিক্ততা ভোলার চেষ্টা শুরু হল; ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো শুরু হল। আর ৭৫-এ তো সেই রক্তাক্ত অভ্যুত্থানমালা; মুজিব-পরিবারের নিষ্ঠুর হত্যা। অনেকেই বিশ্বাস করেন জেনারেল জিয়া মুজিব -হত্যার প্ল্যান সমর্থন না করলেও গোটা ব্যাপারটা খুব ভালোভাবেই জানতেন এবং কোনো বিরোধিতা তো অবশ্যই করেন নি। নভেম্বরের হঠকারী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সমর্থকদের ক্যুদেতা-র পরে জিয়াকে ডেকে এনে মসনদে বসানো হল; এবং জিয়া প্রথম সুযোগেই বন্দুকের নল ঘুরিয়ে ধরলেন তাঁরই মুক্তিদাতাদের দিকে। রাষ্ট্র ধীরে ধীরে দক্ষিণপন্থার দিকে ঘুরলো। জামাত ও গোলাম আজমকে পুনর্বাসিত করা হল। বিরোধী গলা দমিয়ে রাখতে জিয়া কারো থেকে পিছিয়ে ছিলেন না।
    ৯২-তে "ঢাকার সুচিত্রা সেন' শহিদ-জননী জাহানারা ইমাম অজস্র সমমনস্ক মানুষ-স্বাধীনতা সংগ্রামী,বুদ্ধিজীবী-ছাত্রছাত্রী-সাধারণ মানুষ -এঁদের নিয়ে তৈরী করলেন ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটি। ঘাতকদের বিচার দূর অস্ত, উল্টে জাহানারা ইমাম ও তাঁর সাথীদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা রুজু করলেন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। ৯৬-তে হাসিনা এলেন সরকারে। অনেকেই আশা করলেন, এবার নিশ্চয়ই ঘাতক-দালালদের বিচার হবে। হা, কী দুরাশা ! পর্দার আড়ালে হাসিনার সঙ্গে জামাতের কি ডিল হল কে জানে, সব বিলকুল ধামাচাপা পড়ে গেল। যেমন হয়ে থাকে এই উপমহাদেশে।
  • Nina | 69.141.168.183 | ০৫ নভেম্বর ২০১১ ২২:০৯494477
  • তুলে দিলম
  • I | 14.99.227.226 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ০১:০০494478
  • আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখালিখির ভুবনে আমি এই বাংলাদেশকে দেখতে পাই। আখতারুজ্জামানের লেখা , সবাই জানেন, কী অসম্ভব ড্রাই, খানিকটা পড়লে গলার ভেতরটা কেমন শুকিয়ে আসে, তেষ্টা পায়। একবারে অনেকটা পড়া যায় না। ভুল স্বপ্নে যেমন হয়। কেননা, লেখক, ঘোষিতভাবে ভাবালুতায় বিশ্বাস করেন না।
    স্বপ্নের কথায় সবার আগে ঐ গল্পটি মনে পড়ে। জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল। লালমিয়া তার প্রতিরাতের স্বপ্ন নিয়ে কেমন নাজেহাল। বুলেট তার খাবের গল্প শুনতে চায় না, অনর্গল চ্যাংড়ামি মারে। ছ্যামড়ার দোষ না, বাপের রক্ত। বাপ ইমামুদ্দিন জন্মে কোনোদিন তাকে বিশ্বাস করে উঠতে পারল না। অথচ ন্যাংটোবেলার দোস্ত। তার সকল কথায় টিপ্পনি, সকল বাখোয়াজির মধ্যে ফাল হয়ে ঢোকা- লাল মিয়া তো কোনোদিনই মানুষের কাছে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারল না এই শালার ইমামুদ্দিনের জন্য। এমন কি সেই যে যুদ্ধে গেল জগন্নাথ কলেজের ছোকড়াদের উস্কানিতে , লাল মিয়াকে একবারও ডেকে দেখল না পর্যন্ত। আর গেলি তো গেলি , রথখোলার মোড়ে ট্রান্সফর্মারে গ্রেনেড ছুঁড়ে পালালি কিনা নবাবপুরের রাস্তায় ! কেন, খানকিপাড়া পেরিয়ে ইংলিশ রোড ধরে লালমিয়ার বাসায় যদি এসে পৌঁছতে পারতি কোনোরকমে, তাহলে কি লালমিয়া তাকে কাচতে দেওয়া কাপড়চোপড়ের গাদার মধ্যে লুকিয়ে রাখতে পারত না? তাইলে কি আর অমন মিলিটারির গুল্লিতে ঝাঁঝরা হওন লাগে ?

    এহেন লালমিয়া ইদানিংকাল তার খাব নিয়ে বড় ব্যতিব্যস্ত। রাতে শুলে প্রায়ই সে দেখতে পায় নমাজ হাসিল করার কালে তার "বগলে বইসা নমাজ পড়ে এক বুজর্গ শাহ সাহেব। বহুৎ খাবসুরত। মগর তার পাও দুইখান দেখলাম উল্টাদিকে মানে পায়ের পাতাগুলি...'

    কতকাল তো পেরিয়ে গেল, ইমামুদ্দিন মিলিটারির গুলিতে ঝাঁঝরা হল,তার সদ্যজাত ছেলে বুলেটের কাছ থেকে তার মা-কে ("তুমহারি কোক সে নিকলা হায় তব তো তুম রাইফেল হোগি ! ...ইয়ে রাইফেল সিজ করো'-মিলিটারি কর্তা বলেন) ছিনিয়ে কোথায় নিয়ে চলে গেল মিলিটারি , আর তার কোনো খোঁজ মিলল না, লালমিয়ার মাহাজন নাজির আলি রাজাকার হালচাল খারাপ দেখে কোথায় পালাল, আবার মওকা বুঝে ফিরেও এল, মন্ত্রীর মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসা করে টাকা করল, গার্মেন্টসের ফ্যাক্টরি করবার বন্দোবস্তও পাকা, আর এখন কিনা লাল মিয়া এমনতরো খাব দেখে। বুলেট তাতে বিশ্বাসও করে না ছাই। সেই বুলেট যে জন্মের কয়েকদিনের মধ্যে পেচ্ছাব করে কয়েক হাত দূরে থাকা ইমামুদ্দিনের বুক ভিজিয়ে দেয়। আর সন্তুষ্ট বাপ ইমামুদ্দিন নবজাতকের প্রস্রাবের বেগ সম্পূর্ণ অনুমোদন করে বলে-"প্যাসাব করে, মনে লয় বুলেট ছাড়তাছে।'

    কিন্তু লালমিয়ার খাব দেখা কি পুরো বৃথা যাবে ? খাব দেখার তাগিদে বুলেটেরও এক রাতে ঘুম আসতে চায় না, ছটফটানি হয়। বাইরে বড় রাস্তার মোড়ে বিকট আওয়াজ হলে সে উঠে বসে ভাবে- এতো গ্রেনেডের আওয়াজ ! তবে কি তার বাবা গ্রেনেড হাতে আবার ফিরে এল, নাজির আলিকে সে আর এবারে কি শুধু লাথি মেরে ছেড়ে দেবে ; আর খানিক পরেই বুঝতে পারে যে না, এ হল ট্রাকের টায়ার ফাটার শব্দ। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বুলেট শুয়ে পড়ে ও খানিকক্ষণ পরেই অনেক বড় একটা চারকোণা মসজিদের সামনে সে লালমিয়া-বর্ণিত সেই লালচে ফর্সা রং , দুধের নহরের মত দাড়িওলা, ঘিয়ে আলখাল্লা- পরা মানুষটিকে দেখতে পায়। একটি বড়ো চেয়ারে বসা লোকটি, পাশের বেঞ্চে আর ২-৩ জন অপরিচিত লোক।
    "বুলেট লোকটির কাছে গিয়ে মাথা নুয়ে বলে, "আসসালামালায়কুম।'
    "ওয়ালেকুম সালাম ইয়া রহমতুল্লা ওয়া বরকতুহ ওয়া মাগফেরাৎ' পরিচিত ওল্টানো পা-ওয়ালা এবং বেঞ্চে বসে থাকা অপরিচিত ওল্টানো পা-ওয়ালারা কোরাসে জবাব দিলে বুলেট সরাসরি জিগ্যেস করে " আচ্ছা হুজুররা,বহুতদিন তো হইয়া গেল, আপনেরা আপনাগো পাওগুলি মেরামত করেন না ক্যালায়?'
    এই কথায় তারা খুব রেগে বুলেটের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু পায়ের পাতা তাদের পেছন দিকে থাকায় তারা যতই হাঁটে বুলেটের কাছ থেকে ততই সরে যায় ।... লোকটির পায়ের পাতাজোড়া মেরামত করতে হলে ওগুলো আগে ফেলে দেওয়া দরকার-এই বিবেচনায় বুলেট ও দিকে কী ছুঁড়বে তাই নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়ে। ... এইরকম ভাবতে ভাবতে তার বড্ডো পেচ্ছাপ চাপে। ... একরকম বাধ্য হয়েই বুলেট ছাদ থেকে হলুদ প্রস্রাবের ধারা বইয়ে দেয় নিচের দিকে। এরই মধ্যে সে তাগ করেছে গাল থেকে দুধের নহর বইয়ে দেওয়া ঘিয়ে রঙের আলখাল্লার ওল্টানো পায়ের পাতা ।...

    ... এইসময় ঘুম ভেঙে গেলে বুলেট তার লুঙিতে পানির অল্প তাপ পায় এবং উঠে দেখে তার লুঙ্গি তো বটেই, এমনকী তার ডানদিকে শোয়া হাশেমের মায়ের পোলা হাশেমের হাফপ্যান্ট সম্পূর্ণ ভিজে গেছে । দূর ! এটা সে কী করল ? দাদী কলুটোলার পীরসাহেবের তাবিজ এনে দিলে তার বিছানায় পেচ্ছাব করা বন্ধ হয়েছিল কতদিন আগে, আজ আর-এক শাহ্‌ সাহেবের অছিলায় সেই তাবিজ কি নাকচ হয়ে গেল? তবে তার টার্গেট মিস করার দু:খ প্রবল হওয়ায় বিছানা ভেজাবার লজ্জা আপাতত চাপা পড়ে। টার্গেট মিস করাটা তার ঠিক হল না। একরকম জোর করে পরপর দুই গ্লাস পানি খেয়ে বুলেট ফের শুয়ে পড়ল। শিওরের বালিশ ঠিকমত উলটিয়ে নিলেও ডানদিকে সম্পূর্ণ ভিজে যাওয়ায় বুলেটকে শুতে হয় বাঁ-পাশ ফিরে ।''
  • I | 14.99.227.226 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ০২:০২494480
  • "মিলির হাতে স্টেনগান' গল্পে আব্বাস পাগলার এক্ষুনি একটা স্টেনগান চাই। কেননা খানকির বাচ্চা এনিমি আর্মি আর কোলাবরেটররা দুনিয়ার পুরোটাই কব্জা করে এখন আসমান চোদানোর তালে আছে। " এন্টায়ার স্কাইস্ক্রেপ হ্যাজ বিন রেপড মিজারেবলি'। মধ্যরাতের চাঁদের অপর -পিঠে দখলদার বাহিনীর কাঁটাতার-ঘেরা ক্যাম্প, বাঙ্কার আর ট্রেঞ্চ, খানা-খন্দ।

    "বুঝলি? চান্দের পশ্চিম দিকে'-চোখ বন্ধ করে আব্বাস পাগলা দিকনির্ণয় করে, "হিলি রেঞ্জ থাইকা ফাইভ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল কইরা কয় মাইল উড়তে পারলেই নদী, বহুত বড়ো নদী'।

    "নদীর নাম কি'? হঠাৎ জিগ্যেস করে ফেলেও মিলি আব্বাস পাগলার কাছে ধমক খাওয়ার ভয়ে কুঁকড়ে যায় না, কারণ চাঁদের নদীর নাম জানা তার খুব দরকার। "নাম কইতে পারুম না।' আব্বাস পাগলা বিরক্ত হয় না, "নদীর আবার নাম কিয়ের ? এই চুতমারানিরা গেছে, খানকির বাচ্চাগুলি অহন নাম দিবো।-নাম দিবো, দাগ দিবো, খতিয়ান করবো, কবলা করবো, দলিল করবো, মিউটেশন করবো-হালারা বাপদাদাগো সম্পত্তি পাইছে তো, বুঝলি না? নদীর দোনো পাড়ে পজিশন লইয়া রেডি হইয়া আছে। দুনিয়ার পানি বাতাস মাটি আগুন পাত্থর তো জাউরাগুলি পচাইয়া দিছে, অহন পচাইবো চান্দেরে।'

    দশটা নয়, পাঁচটা নয়, একটামাত্র স্টেনগান হাতে পেলেই পাগলা আব্বাস আলি মাস্টার কিন্তু গোটা এনিমি আর্মি উড়িয়ে দিতে পারে, হেড কোয়ার্টারের ফাইনাল অর্ডারেরও তোয়াক্কা আর করে না। কিন্তু রানা স্টেনগান দিচ্ছে না। রানা মিলির বড় ভাই, সদ্যস্বাধীন দেশে সে আর তার বন্ধুরা ইন্ডেন্টিং ফার্ম খুলেছে, আজ আনকোরা টিভি সেট আনছে তো কাল ঢাকা ক্লাবের প্রোগ্রামে যাচ্ছে, পরশু নতুন পারমিট পাচ্ছে। চাইলেই দিতে পারে, রানা স্টেনগান তবু দেয় না, বেইমান সব ।

    উল্টে তাকে ভর্তি করে দেয় পিজি হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ডে, রানা আর তার বন্ধুরা। হাসপাতালের উঁচু দালানের ফাঁক দিয়ে আব্বাস পাগলা আর কী সৈন্যসমাবৃত মহাকাশ দেখতে পাবে?
    একরাত্তিরে চাঁদের উল্টোপিঠ থেকে প্রবল গুলিগোলা চলে। গুলির আওয়াজ কী ! গুলিবর্ষণ বন্ধ হয়ে একসময় ভোর হয়, রানার ঘরে গিয়ে মিলি দেখে, ভাইয়া টেবিলে মাথা রেখে চেয়ারে বসে আছে। তার চুল ছুঁয়ে আলগোছে শুয়ে আছে ছিদ্রময় একটি লোহার অস্ত্র। যুদ্ধের পর এইটা নিয়ে রানা বাড়ি ফিরেছিল।
    আর একটু বেলা হলে জানা যায় বড়োরাস্তার মোড়ে দুটো ব্যাঙ্ক লুট হয়ে গেছে। ব্যাঙ্কের দরজার সামনে দুটো লাশ পড়ে আছে।

    আরো কিছুকাল পরে একদিন ক্লিন শেভ করা , মাথার চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো একজন যুবক মিলিদের দরজায় কড়া নাড়ে; ঝকঝকে দাঁতে মিলির দিকে তাকিয়ে সে হাসে। আব্বাস পাগলা।

    'কেমন আছো, মিলি?' মিলির দিকে তাকিয়ে সে বলে। "রানার সঙ্গে একটু দরকার ছিল'।

    "এক মিনিট' বলে মিলি ঘরে চলে যায় ও মিনিট তিনেক পরে ফিরে এসে আঁচলে ঢাকা স্টেনগান তার হাতে তুলে দিতে চায়-"তাড়াতাড়ি নিন। আম্মা এসে পড়বে।'
    আব্বাস পাগলার মুখ ঝুলে পড়ে-"আমি ভালো হইয়া গেছি। তুমি বোঝো না? আমার ব্যারাম ভালো হইয়া গেছে।
    ...রানারে একটু বুঝাইয়া কইও। রানারা কয় বন্ধু একটা ইন্ডেন্টিং ফার্ম করছে। রানা ইচ্ছা করলে আমারে প্রভাইড করতে পারে ।... আচ্ছা আসি'। বলে আব্বাস মাস্টার বেরিয়ে যায়।

    আর ছদে উঠে মিলি দেখে , "ধোয়ামোছা মসৃণ ঘাড় নিচু করে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে আব্বাস মাস্টার। গোলগাল মুণ্ডুটা তার অতিরিক্ত নোয়ানো। এটা তার ধড়ের সঙ্গে কোনোমতে সাঁটা। তার পেছনে আর একটি মানুষ, এর মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল, ঝাঁকড়া চুলওয়ালা মাথাটিও সংশ্লিষ্ট ধড়ের ওপর ঢিলেঢালা ভাবে ফিট-করা। কয়েক পা এগিয়ে গেলে এই দুটোর কোনটা যে আব্বাস মাস্টারের তা ঠাহর করা যায় না।...'

    ----

    " রঘুপতি চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলেন, ""মিথ্যা কথা ! সমস্ত মিথ্যা ! হা বৎস জয়সিংহ, তোমার অমূল্য হৃদয়ের রক্ত কাহাকে দিলে ! এখানে কোনো দেবতা নাই, কোনো দেবতা নাই। পিশাচ রঘুপতি সে রক্ত পান করিয়াছে ।''

    --
  • madhuchhanda paul | 14.96.54.236 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৩:০৬494481
  • #২৪৪৭;#২৪৬৮;#২৫০৭; #২৪৭০;#২৪৯৪;#২৪৮০;#২৪৯৭;#২৪৭২; #২৪৪৭;#২৪৫৩; #২৪৫৫;#২৪৯৪;#২৪৩৯;#২৪৬৫; #২৪৭৬;#২৪৯৪;#২৪৩৪;#২৪৮২;#২৪৯৪;#২৪৭০;#২৫০৩;#২৪৮৬; #২৪৭৯;#২৪৯৪;#২৪৫১;#২৫২৭;#২৪৯৪;#২৪৮০; #২৪০৪; #২৪৫৩;#২৪৯৫; #২৪৫৮;#২৪৭৮;#২৫১০;#২৪৫৩;#২৪৯৪;#২৪৮০; #২৪৮২;#২৫০৩;#২৪৫৪;#২৪৯৪; , #২৪৫৮;#২৫০৭;#২৪৫৪;#২৫০৩;#২৪৮০; #২৪৮৮;#২৪৯৪;#২৪৭৮;#২৪৭২;#২৫০৩; #২৪৭০;#২৫০৩;#২৪৫৪;#২৪৬৮;#২৫০৩; #২৪৭৪;#২৪৯৪;#২৪৫৮;#২৫০৯;#২৪৫৯;#২৪৯৫; #২৪৩৮;#২৪৭৮;#২৪৯৪;#২৪৮০; #২৪৮৬;#২৫০৯;#২৪৭৬;#২৪৮৬;#২৪৯৭;#২৪৮০;#২৪৭৬;#২৪৯৪;#২৫২৪;#২৪৯৬;#২৪৮০; #২৪৭২;#২৪৯৪; #২৪৭০;#২৫০৩;#২৪৫৪;#২৪৯৪; #২৪৭০;#২৫০৩;#২৪৮৬;#২৪০৪;
  • madhuchhanda paul | 14.99.72.86 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ২০:৩৬494482
  • কি যে ভালো লাগছে পড়তে বোঝাতে পারবনা । আমিও সঙ্গী হয়েছি আপনাদের ।
  • dri | 117.194.227.186 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ২২:৫১494483
  • বেশ হচ্ছে ইন্দোদাদা। মানে, ভেরি ভেরি বেশ।

    বোঝা যাচ্ছে খুব মন দিয়ে বেড়িয়েছো। খুব প্রাণ দিয়ে বেড়িয়েছো।

    সামরানের ডকুমেন্টারিও পড়লাম। কিছু কিছু লেখা খুব চুপ করিয়ে দিতে পারে। ছেলে কেমন আছে?
  • I | 14.96.45.134 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ২৩:২২494484
  • আমার ছেলে ভালো। সামরানদি'র ছেলেও ভালো। পশশু দেখা হল।
  • I | 14.96.45.134 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ০১:৩০494485
  • এবার সত্যি সত্যি যাওয়ার সময় হল,ঢাকা ছেড়ে। দুপুর থেকে স্বর্ণা মাঝেমধ্যেই ফোঁড়ৎ ফোঁড়ৎ করে নাক টানছে; আর প্রতি আধ ঘন্টা -একঘন্টা অন্তর অন্তর একটা জীনস-এর ট্রাউজার, একটা শাড়ি, টুংকাইয়ের শার্ট-প্যান্ট ইত্যাদি বের করে আনছে-দাদা, এইডা আপনে নেন, ও দিদি, এইডা তোমার, ও সোনা, দ্যাহো তো তোমার এইয়া হইবে গায়ে ? দামী দামী সব গার্মেন্টস, এক্সপোর্ট কোয়ালিটি, পাউন্ডে দাম লেখা। দেওয়ার কোনো শেষ নেই, দিয়ে আর শান্তি হচ্ছে না তার।

    বিকেল পাঁচটা নাগাদ বেরোনো হল, সদর ঘাট যদিও এক ঘন্টার দূরত্ব এবং লঞ্চ ছাড়ার সময় সাড়ে সাতটা, তবু কে রিক্স নেয় বাবা, ঢাকার যে জ্যাম ! দেড় ঘন্টা এক্সট্রা হাতে নিয়ে বেরোলে তবে নিশ্চিন্দি। সুষেণও চলেছে আমাদের সঙ্গে, কেননা বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে মা আর আমাদের পথ আলাদা হয়ে যাবে, মা যাবেন স্বরূপকাঠি, সুষেণদের বাড়ি, সুষেণ নিয়ে যাবে ওঁকে; আমরা মামা'র সঙ্গে পাতারহাটের লঞ্চে উঠবো। যাওয়ার বেলা স্বর্ণা চোখের জলে ভাসিয়ে দিল, এক রাতের আলাপ কেবল, মামী আর মামাতো দিদি -জামাইবাবু, আগে কোনোদিন চোখেও দেখে নি; মামাকেই দেখে নি তো আমরা কোন দূরস্থান।

    দাঁড়িয়ে আছি রোডের পাশে, সুষেণ গেছে গাড়ি ডেকে আনতে। দশ মিনিট যায়, পনেরো মিনিট যায়, আধ ঘন্টা, পঁয়তাল্লিশ মিনিট, সুষেণের দেখা নেই। অধৈর্য হয়ে উঠছি, ভাবছি নিজেরাই গাড়ি দাঁড় করাবো নাকি, আর তাছাড়া সুষেণ গাড়ি পেলেই বা, আসবেটা কেমন করে, জ্যাম তো এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে, শেষ কুড়ি-পঁচিশ মিনিট একটাও গাড়ি এক চুলও নড়ে নি। শেষমেষ কখন যেন জ্যাম একটু ছাড়ল, সুষেণও গাড়ি নিয়ে এসে হাজির হল, ততক্ষণে হয়তো ঘন্টাখানেক পেরিয়ে গেছে। যাত্রাবাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করতেই এক ঘণ্টা লেগে গেল ! এর নাম তবে পাল্টে অযাত্রাবাড়ি করে দেওয়া হোক। কিন্তু পথের দেবতা তখনো মুখ মুচকাইয়া হাসিতেছেন ।
    বিশেষ নতুন কোনো কথা নয়, কেবল পুনরাবৃত্তি, সেই জ্যাম-অনন্ত অপার জ্যাম; সওয়া সাতটা , আমরা তখনো এসে পৌঁছই নি আমাদের গন্তব্যে, গাড়ি চলেছে তখন শ্যামবাজারের মধ্য দিয়ে। সরু গলি, দুপাশে আলু-পেঁয়াজ-রসুন-আদার পাইকারি আড়ত, সার সার ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, রিক্সা-সাইকেল-পথচারী-গাড়ির অনির্বচনীয় জঙ্গল ; আমাদের পোস্তার বাংলাদেশী সংস্করণের মধ্য দিয়ে চলেছেন ভেবে নিন সোজা কথায়, আর হাওড়া স্টেশন থেকে গাড়ি এই ছাড়ে কি সেই ছাড়ে ভাবলে আপনার গায়ে যেমন পুলক লাগে, চোখে ঘনায় ঘোর-তাকে হৃদয়ের মধ্যে ফুটিয়ে তুলুন, আমাদের মনের ভাব পেয়ে যাবেন। ড্রাইভার সাহেব এতক্ষণ এদিক-ওদিক করে অনেক চেষ্টা করেছেন, এবারে এক্কেবারে হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন - অহন রিস্কা ধইর‌্যা নেন, লগেলগে পৌঁছাইয়া যাইবেন অনে। আইস্যাই পড়ছেন,কিন্তু দ্যাখছেন অবস্তাডা, গাড়ি আর আউগ্যাইবো না।
    সব ভালো যার শেষ ভালো। ঢাকায় এসে রিক্সা -সফর বাকি থাকবে, এটা হয় কখনো? মনে একটা খেদ রয়ে যেত না? তিনটে রিক্সায় পাঁজাকোলা করে সুষেণ সলটবহর আমাদের ও নিজেকেও তুলে দেয়; রিক্সা চালকেরা এ গলি- ও গলি হয়ে লিট্যারালি দৌড়তে শুরু করেন, কী অসম্ভব ক্ষিপ্র ! এর মধ্যে আবার মায়ের রিক্সা থেকে মাল গড়িয়ে পড়ে যায়, রিক্সা থামিয়ে আবার তাকে স্থাপন করা এক পর্ব, মা'র কাছে মালপত্তর একটু বেশীই চাপানো হয়ে গেছে, তাড়াহুড়োয় আর মাথার ঠিক থাকে ? সাতটা বেজে পঁচিশ মিনিটে হাঁপাতে হাঁপাতে গলদঘর্ম হয়ে আমরা রিক্সাপার্টি সদরঘাটের সামনে এসে পৌঁছই, চালকেরা হ্যা: হ্যা: হাঁফ ছেড়ে গলার গামছা ঘুরিয়ে বাতাস খান ও গায়ের ঘাম মোছেন; ওঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। মায়ের রিক্সার তরুণ চালক ভ্রু কুঁচকে বলেন -"হ্যারে দিছেন বেবাক মালপত্তর, হ্যায় বুড়া মানুষ, পারে ?' আমরা লজ্জায় অধোবদন হই।

    জেটি থেকে আমরা লঞ্চে উঠি, আমাদের লঞ্চটির নাম পারাবত ১১। সুষেণ কেরানী'র সঙ্গে কথা বলে এসে জানায় আমাদের কেবিন লঞ্চের তেতলায়। উঠি তেতলায়। সাতটা চল্লিশ বেজে গেছে তখন, মামাদের দেখা নেই। লঞ্চ ছাড়ারও নামোনিশান নেই। ফোন লাগাই, মামা বলেন,-ও তোমরা আইসা পড়ছো! আমরা আইতেআছি, এজায়গায় বহুতই জ্যাম, আটটা নাগাদ পৌঁছাইয়া যামু।
    তাইলে যে বলল সাড়ে সাতটায় লঞ্চ ছাড়বে ! সে কি তবে কেবলি কথার কথা, শুধু পটে লিখা ! সওয়া আটটা নাগাদ মামারা সদলবলে এসে পৌঁছন, আমি ক্যাঁক করে অরুণ মামাকে চেপে ধরি, অরুণ মামা বাধ্য হয়ে কবুল করেন, এখানে ঐরকমই লেখা থাকে-আমাকে টিকিট দেখান, টিকিটেও লেখা ছাড়িবার সময় সাড়ে-সাতটা-- কিন্তু আসলে ন'টা-সওয়া নটা'র আগে ছাড়ে না। হয়তো ডেক প্যাসেঞ্জার ভর্তি না হওয়া অবধি ছাড়ার নিয়ম নেই। হা হতোস্মি !!
    আমাদের দলের মোট যাত্রী সংখ্যায় অনেক,-আমরা,আমাদের সঙ্গে মামা-মামী, অরুণ-মামা-অঞ্জনা মামী-নীপা মামী-নীতা এবং তুলি-মামীর বড় ভাইয়ের মেয়ে। শেষের দলটি চলেছে বরিশালে মামীদের গ্রামের বাড়ি কীর্তিপাশা, সেখানকার পুজোয় দশমীর দিন ঠাকুরবরণ ও গেট টুগেদার। তুলিকে দেখেছিলাম আমার বিয়েতে, তখন অনেক ছোট ছিল, এখন রীতিমত গ্ল্যামারাস তরুণী।

    লঞ্চটি আয়তনে বিশাল, তিন তলা, নিচের তলায় ডেক প্যাসেঞ্জার, ওপরের দুটি তলায় কেবিন। তিন সারি কেবিন, দুদিকের কেবিন নদীর মুখোমুখি বলে নন-এসি, মাঝের সারি এসি; ভাড়া একই। ২৫-২৬ টি কেবিন এক এক তলায়, সর্বমোট নাকি শ'পাঁচেক যাত্রী পারাপার করেন এক ট্রিপে। লঞ্চের মধ্যেই রসুই ঘর, দোকান পাট, ডাইনিং এরিয়া, চাইলে ঘরেও সার্ভ করা হয়; স্বয়ংসম্পূর্ণ ইউনিট যাকে বলে। এ জিনিষ আগে দেখিনি, ছোটোখাটো একটা জাহাজ বললেই চলে। এই পথে লঞ্চ কেবল রাতেই চলে; পরে শুনলাম, নাকি দিনের বেলায় নদীর অকূল বিস্তার দেখে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারেন, তাই এই ব্যবস্থা। ঠেকে শেখা।
    দাঁড়িয়ে আছি লঞ্চের তেতলার ডেকে,ফুরফুরে হাওয়া আসছে বুড়িগঙ্গার। ভালো লাগছে। অদূরে ঢাকার স্কাইলাইন, অন্ধকারে ঝলমল করছে। চারিদিকে যাত্রীর ব্যস্ততা, রকমারি ফেরিওলা, আনারসের নৌকো। সার দিয়ে অজস্র লঞ্চ দাঁড়িয়ে আছে, বড়-মেজ -ছোট; তাদের আলো-জ্বলা ঠমক-চমক বুড়িগঙ্গার কালো জলে এসে পড়েছে, জল তিরতির করে কাঁপছে, সঙ্গে সঙ্গে লাল-সাদা-হলুদ আলোরাও। এদিকে -ওদিকে এক একটা লঞ্চে ভোঁ বেজে উঠছে, গম্ভীর বিষণ্ন ভোঁ, মাঝি-মাল্লারা কাছি গুটিয়ে আনছে, ধীরে ধীরে জেটির থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে লঞ্চ, এখন আর পাশে লোহা-কংক্রীট নেই, চারিধারে কালো জল এসে ঘিরে ধরছে, সর্চলাইটের আলোয় কাটাকুটি হয়ে যাচ্ছে বুড়ীগঙ্গার অন্ধকার। ছাড়ছে লঞ্চ, বন্দরের কাল হল শেষ। এই বেজে উঠল ভোঁ, আমাদের লঞ্চেও। বদর বদর !
  • I | 14.99.47.2 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ০১:৩৪494486
  • চলেছি বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে । সদরঘাট একটু ছাড়ালেই নদীর বিপুল বিস্তার। এক পাড়ে ঢাকা শহর তার লোক-লস্কর , হাইরাইজ-বস্তি-বাখরখানি-ঘাম -তেল-আদার ব্যাপার নিয়ে দূরে সরে যাচ্ছে; মাইটি বুড়িগঙ্গা মাইটিতর হচ্ছে। দূরে আলোর রেখা দেখা যায়, ওয়েল্ডিংয়ের ঝলক, জাহাজ-লঞ্চের কাঠামো,- বুড়িগঙ্গার পাড় ধরে ধরে ঢাকার শিপ বিল্ডিং ইয়ার্ড, রাতের অন্ধকারের মধ্যে মানুষ আর যন্ত্র মিলেমিশে কাজ করে চলেছে বিশ্রামহীন। তিনতলার ডেকে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি, হু হু হাওয়ায় চুল উড়ে যাচ্ছে। ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ এসে লাগছেল লঞ্চের গায়ে, ঢেউয়ের টানে ভেসে আসা সব কচুরিপানা, অসংযুক্ত, বিচ্ছিন্ন। সার্চলাইটের আলো মাঝেমধ্যেই জ্বলে উঠছে, দূরে কোনো জেলে- নৌকো দেখা গেলেই ভোঁ বাজিয়ে তাকে সাবধান করা হচ্ছে। ছোটবেলায় পড়া "চলো সোভিয়েত দেশ বেড়িয়ে আসি" মনে পড়ছে ( মনে আছে? সেই ওপেনিং লাইন-"দিমকা আমার বন্ধু'?), মনে হচ্ছে মাইটি ভোলগা-র ওপর দিয়ে চলেছি, ভোলগা বোটম্যানের গানটাই যা মিসিং। বা ওল্ড ম্যান রিভার। এই পেরিয়ে এলাম একটা ব্রিজ, আমাদের মাথার ওপরের কংক্রীটের সাঁকো দিয়ে সাঁ সাঁ ছুটে গেল নৈশ শহরযানসমূহ। পায়ের তলায় অকূল কালো,আকাশ তত কালো নয়, তারাভরা নয়,যতটা তারাভরা হলে পরে গা শিউরে উঠতে পারে; কেননা মেঘলা।

    বুড়িগঙ্গাকে নিয়ে ছোট একটা ভূগোলের ইতিহাস আছে। এককালে এই নদীখাতই ছিল পদ্মা-গঙ্গার আদি খাত, সেকালে পদ্মা রামপুর-বোয়ালিয়ার পাশ দিয়ে চলনবিলের মধ্যে দিয়ে (ট্রেনে আসতে আসতে এই চলনবিল আমরা দেখেছি, বিপুল বিস্তার, প্রথম দর্শনে আমি একে পদ্মা বলে ভুল করেছিলাম; পরে জানলাম খুব একটা ভুল করিনি) ঢাকার পাশ দিয়ে মেঘনা-খাড়িতে গিয়ে সমুদ্রে মিশত। পরে অবশ্য পদ্মা ফরিদপুর-বাখরগঞ্জের দিকে সরে যায়। বুড়িগঙ্গার নামের মধ্যে পদ্মার সেই প্রাচীন ঢেউটুকু রয়ে গেছে, পদ্মাকে এককালে বড় গঙ্গা বলা হত, ভাগীরথীকে ছোট গঙ্গা, কেননা গঙ্গার দুই প্রবাহের মধ্যে পদ্মাই ছিল প্রশস্ততর; এখনো তাই। কৃত্তিবাস ওঝার লেখাতেও (১৪০০ সালের দ্বিতীয় দশক) এই বড়গঙ্গা-ছোটগঙ্গা ভাগাভাগির কথা রয়েছে। কৃত্তিবাস লিখেছিলেন ফুলিয়ার পশ্চিমে বহে গঙ্গা তরঙ্গিণী-এই গঙ্গা ছোট গঙ্গা-ভাগীরথী। এবং এগারো পেরিয়ে বারোয় এসে : "পাঠের নিমিত্ত গেলাম বড় গঙ্গাপার।'

    বুড়িগঙ্গাই এই; আসল পদ্মা তাহলে কী ভয়াল হবে ! এবং সেই জায়গা, যেখানে পদ্মা-যমুনা -মেঘনা এসে মিশেছে , চাঁদপুরের কাছাকাছি সেই জলস্থান ! মামা'র একবার সুযোগ হয়েছিল দিনের বেলায় এই জলপথ পেরোনোর, দেখতে পেয়েছিল সমুদ্রের মত অকূল সেই সঙ্গম। নাকি তিন ধারার তিন জলের রং সম্পূর্ণ আলাদা, দেখলেই বোঝা যায়; কন্যাকুমারিকার মত? আপসোস, সেসময় ঘুমিয়ে থাকবো, আর জেগে থাকলেই বা কী; কষটে অন্ধকারে দেখতে পাবো না তো কিছুই।
    চাঁদপুর ! নামটা শুনলেই কেমন আমোদ হয়। অবন ঠাকুর মনে পড়ে যায় , বুড়ো আংলা। চাঁদপুরের সেই দুষ্টু শেয়াল-

    তাকুড় তাকুড় তাকা !
    যাচ্ছে শেয়াল ঢাকা !
    থাকে থাকে থাকে
    হুক্কাহুয়া ডাকে !
    চাঁদপুরের কাঁকড়া-বুড়ি
    কামড়েছে তার নাকে !

    অবন-বুড়োর রীতিমত পক্ষপাত ছিল পূব বাংলার দিকে, অন্তত: বুড়ো-আংলা লেখার কালে। সেই যখন আকাশ থেকে মাটি যেন শতরঞ্জি হয়ে গেছে দেখে রিদয় মজা পেয়ে হাততালি দিয়ে উঠেছে, আর হাঁসের দল যেন তাকে ধমকে দিয়ে বলছে-"সেরা দেশ-সোনার দেশ-সবুজ দেশ-ফলন্ত-ফুলন্ত বাংলা দেশ', তখন তো তারা বাখরগঞ্জোর ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কিংবা আরেকটু পরে রিদয় সেই যে দেখল-"হাঁসেরা সোজা যে উত্তরমুখো চলেছে , তা নয়। তারা এ গ্রাম সেগ্রাম, এ ক্ষেত ও ক্ষেত, এ বিল ও বিল করে হরিংঘাটা , মেঘনা-এই দুই নদীর মাঝে যা কিছু আছে সব যেন দেখতে দেখতে চলেছে-বাংলা দেশের সুন্দরবন, ধানক্ষেত, পদ্মদিঘি, বালুচর, খালবিল ছাড়তে যেন তাদের মন উঠছে না। বাখরগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, যশোহর, ফরিদপুর হয়ে ধলেশ্বরী নদী পেরিয়ে ক্রমে হাঁসের দল চাঁদপুরের দিকে চলল-পুবমুখে।'

    আমার এই লেখাটার মত। এই একমুঠো তো বেড়ানো, অথচ তার পুবমুখে চলা আর শেষ হচ্ছে না, পরণকথার মত তার গায়ে নানা রংয়ের কাঁথাকানি-তাপ্পি-ঝুলপি-ঝালপি কখন যে উড়ে এসে জুড়ে বসছে, আর এখন হদিশ করে উঠতে পারছি না। এইটুকু ময়দার মধ্যে এতখানি ঈস্ট!-বেক করতে গিয়ে ফুলে-ফেঁপে বড় হয়ে সে একদম ছাদ ছুঁই ছুঁই কাণ্ড। তো ফাঁপা তো ফাঁপাই সই, ঈস্টই আমার ইস্টো , বাংলাদেশের পদ্মদিঘি, ধানক্ষেত, খালবিল ছাড়তে আমারই বা কোন মন চাইছে ! এই একরকম রাতটা কাটে,লেখাটা শেষ হয়ে গেলে আবার তো একলা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকা, কেউ কোত্থাও নেই, কোনো দেশ নেই, বাঙালের কোনো দেশ হয় না। একলা মানুষের থাকার মধ্যে থাকে শুধু প্যাঁট প্যাঁট করে তাকিয়ে থাকার দেওয়াল।
  • Tim | 198.82.29.11 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ০৬:৫০494487
  • ইন্দোদার লেখা এটা মনে করিয়ে দিলো।

    http://www.raaga.com/play/?id=213955
  • I | 115.117.253.199 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ১৩:০৫494488
  • অনেকদিন পরে কবিতাটা মনে করিয়ে দিলি টিম ! কিন্তু শুনতে পাচ্ছি না, আমার ল্যাপিকে বোধায় বোঙায় ধরেছে। মনে মনেই শুনি !
  • kallol | 119.226.79.139 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ১৫:২৬494489
  • আহ, ডাগদার হক কথা কৈছনি - বাঙ্গালের কোন দেশ হয় না।
    তোমার আর তোমার কলমের জয় হোক।
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ১৮:১০494491
  • ভাবসিলাম ল্যাখাটা শ্যাষ অইলেই কিসু লিখুম। কিন্তু ডাগতার zআ ল্যাখতাসে মাইzখানেই লিখি, সত্যই দুরন্ত ল্যাখা। বরই টানতে আসে। উনার ভালো হউক।
  • kanti | 202.90.105.92 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ১৯:০৫494492
  • কবি-ডাক্তার না ডাক্তার-কবি, কিছু কথা কইতে ভাষা হারিয়ে যায়। কি করে কথা সাজিয়ে এমন জীবন্ত ছবি
    লেখো। তোমার তুলি আর কলম একাকার হোয়ে যায়। তোমার জয় হোক। কান্তি
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ১৯:১৮494493
  • ডাগদার ,
    কি আর বলি--যাই বলি কমই হবে!
    কবিতাটা আমিও শুনতে পেলাম না--কবিতাটা কি এখানে লিখে দেয়া সম্ভব?
    এই লেক্‌গাটা চটি বই হিসেবে বেরোলে আমি একখান কপি বুক করে রাখলাম।
  • I | 14.96.105.72 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ২১:৪০494494
  • কী বলব ! ইন্দ্রানীদি'র কথা ধার করেই বলি-পাঠককে আমার অবনত শ্রদ্ধা জানাই ।
  • Tim | 198.82.27.119 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ২১:৫০494495
  • ইন্দোদার লেখা পড়তে পড়তে, বিশেষ করে বুড়িগঙ্গার জায়গাটা পড়তে পড়তে আমি শুনতে পেলাম, মনশ্চক্ষে দেখতে পেলাম "" জল জংলার দেশ- দেখবার আছেটাই বা কি!""
    এখানেও আছে উদ্বাস্তু। দেখো তো শুনতে পাও কিনা।

    http://www.hummaa.com/music/song/udbastu-recitation/115073#
  • I | 14.96.105.72 | ০৯ নভেম্বর ২০১১ ২৩:৩৩494496
  • শুনতে পাচ্ছি রে টিমদাদা ! থ্যাংকু থ্যাংকু !
  • I | 14.96.105.72 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ০০:২৭494497
  • আমাদের কেবিনের সামনে বসেছে আসর। কেবিন খোলা রেখে যাওয়া যায় না, নাকি খোলা পেলে জিনিষপত্তর সরিয়ে চক্ষের নিমেষে জলে ঝাঁপ দেবে, এমন সব দুর্ধর্ষ সাঁতারু চোর-নইলে ডেকে বসেই আড্ডা হত। থাকগে, কে যায় ডেকে, তার চেয়ে বরং এখানেই ভালো। টুংকাইকে নিয়ে ডেকে বরং সমস্যাই হত, এখানে লাফায়, ওখানে লাফায়! প্রতিটি কেবিনের সামনে একজোড়া করে চেয়ার গাঁথা, হ্যাঁ, গাঁথাই, রীতিমত সিমেন্ট করে আটকানো, যাতে কেউ সরিয়ে নিতে না পারে। তাতে দুজন বসেছে, বাকিরা কেউ ঘরের মধ্যে বিছানার ওপর, অধিকাংশই করিডোরে, চেয়ারের পাদদেশে, সেখানটা একটু উঁচু করে রকের মত করে বাঁধানো, সেইখানে। রকে বসে তুমুল গুলতানি চলছে। আমাদের দলটা মহিলাপ্রধান, টুংকাই একমাত্র পুরুষসিংহ, তো সে এক্কেবারে আনডিভাইডেড অ্যাটেনশন পেয়ে ধন্য, এত মেয়ের কাছে এত অ্যাটেনশন জীবনে এই প্রথমবার পেল, তার পুরো মাথাখারাপ হওয়ার যোগাড়। মেয়েরা তাকে নিয়ে তেড়ে মস্করা করছে, সে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে হাসতে হাঁই হুঁই করে এর-ওর দিকে তেড়ে তেড়ে যাচ্ছে।
    তারপর খাওয়ার সময় হল। লঞ্চের কর্মচারী কোত্থেকে একটা ভাঁজ করা ডাইনিং টেবল নিয়ে এলেন, তাই পাতা হল কেবিনের মধ্যে। কেউ কেউ বিছানায় বসে ডাইনিং টেবলের ওপর, কেউ কেউ থালা হাতে নিয়ে চেয়ারে ও রকে বসে গেলেন। মেনু অতি সিম্পল, ভাত, মাংস, চিংড়ি মাছ ও বরিশাইল্যা প্রথা মেনে সর্বশেষে ডাইল। মাংস মুখে দিয়ে একদম তরর্‌, এত ভালো মাংস বহুদিন খাই নি; এবং আরো জরুরি তথ্য, এমন অদ্ভুত তরকারি -দেওয়া মাংস আগে কখনো খাই নি, কেননা মাংসে আলুর সঙ্গে অপর যে সব্জি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হল কচু। সার্থক জনম রে তোর মুরগী, এমন মাখনজিত কচুর নম্র আলাপের সঙ্গে তুই সঙ্গত করতে পেলি, তুই ধন্য। চিংড়ি মাছও মাখোমাখো, আঘিলু ফুর্তিতে সেও এক্কেবারে স্বর্গীয়। আমি তো কেয়াবাত কেয়াবাত বলছি আর জল খাচ্ছি, কেননা স্বর্গের রান্নায় যে ঝালের কিঞ্চিৎ পক্ষপাত সেকথা সবাই জানে, সেইসঙ্গে লঞ্চের রাঁধুনে'র চোদ্দগুষ্ঠিকে ফেলে চুমু-টুমু খেয়ে চলেছি, তার গোহালে দুগ্‌ধবতী কপিলা গাভী, তার ঘরের চালায় রসবান ভীমকায় নবীনকদলীপত্রবর্ণ অলাবু, তার ঘরের চালার ওপরের আকাশে জলভারনম্র কৃষ্ণগ্রীব নীরদ ও চালার তলায় স্তোকভারনম্রা-মধুহাসিনী-মধুভাষিণী একখানি রাঙা টুকটুইক্যা ছোট বউ এক্ষুণি পাঠিয়ে দেবার জন্যে আল্লামিঞার কাছে দরবার করে চলেছি, আর মন বলে চলেছে -কেন, এ তো জানা কথা, কেন তুমি বইয়ে -পত্তরে মাঝিমাল্লার রান্না করা ইলশ্যা মাছের কথা শোনো নাই, গোয়ালন্দ ঘাটের হোটেলের রসুইধারকগণের হাতের তারের কথা জানো না- এমন সময় প্রকাশ পেল , মাংস ও চিংড়ি মহম্মদপুরের বাসা থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে করে সদ্য আনীত হয়েছে। অঞ্জলীমামীর খুড়ে দণ্ডবৎ হতে যাবো, তিনি জিভটিভ কেটে বিষম খেয়ে ওঁর ননদের ( আমার নিজের মামী) পাদপদ্মখানি দেখিয়ে দিলেন। এখন নোবেলখানি আমি কার পায়ে থুই !
  • I | 14.96.105.72 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ০১:২২494498
  • খেয়েদেয়ে হজমীগুলিটি মুখে পুরে এবার শুতে যাবার পালা। একে একে নিবিছে দেউটি, হেঁউ হেঁউ করে ঢেঁকুর ও যুগপৎ হাঁউ হাঁউ করে হাই তুলতে তুলতে যে যার কেবিনমুখো হচ্ছে, শুধু আমাদের কেবিনেই কিঞ্চিৎ অশান্তি। রাসলীলা এত অল্পে ভঙ্গ হওয়ায় আমাদের নবীন কেষ্টঠাকুরটি কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ, নাদান সে তো আর বেদব্যাস পড়ে নাই, কুরুক্ষেত্রের ময়দানে নামতেও তার ঢের দেরী, তাই জানে না সকল সঞ্চয়ই পরিশেষে ক্ষয় পায়, উন্নতির অন্তে পতন হয়, মিলনের অন্তে বিচ্ছেদ ইত্যাদি ইত্যাদি। বুঝিয়েসুঝিয়ে উদুখলের ভয় ও নিদ্রাভঙ্গে ব্রজসুন্দরীগণের প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে তাকে ঘুম পাড়ানো গেল; কিম্বা, জীবনানন্দীয় সংশয়ে বলতে হয়, জানিনা তাকে ঘুম পাড়ানো গেল কিনা, কারণ সম্ভবত: তার আগেই আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।

    মাঝরাত্তিরে দড়াম করে একটা আওয়াজ ও মায়ের আর্ত চীৎকারে জেগে উঠলাম। বুক ধড়াস ধড়াস করছে, আলো জ্বালিয়ে বোঝা গেল, উঁচু কাবার্ডের ওপরে যে দু-লিটারী জলের বোতলটি রাখা ছিল, সেটি সটান পপার চ মমার চ মায়ের মাথা পেঁচিয়ে ল্যাণ্ড করেছে। জলটল ঘষে , ব্যথা একটু কমেছে-মায়ের কাছ থেকে এমত আশ্বাস পেয়ে ঘুমচোখে আলো নিবিয়ে আবার চাদরের তলায়, হু হু হাওয়া আসছে জানলার ফাঁক দিয়ে।
    আরো বেশ খানিকক্ষণ গেছে কি যায় নি, অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বাইরে প্রচুর লোকের গলা, ত্রস্ত হাঁটাহাঁটি, না:, কিছু তো একটা হয়েছে নির্ঘাত ! বেরোবো ? কিন্তু বাকিরা তো ঘুমিয়ে, এভাবে দরজা খোলা রেখে... শেষমেষ যখন দরজার কাচের বাইরে মামার ছায়া পেলাম আধো-অন্ধকারে , তখন মন ঠিক করে বেরিয়েই এলাম।
    এতক্ষণে বোঝা গেল গোটা ব্যাপার। লঞ্চ আসলে একটি ডুবোচরে ল্যাণ্ড করেছে, তাই ঐ আকস্মিক ধাক্কা, জলের বোতলের পতন ইত্যাদি। মামাদের ঘরে তো আয়নার কাচ ভেঙে চৌচির। এবং চরের ওপর থেকে এখনো বেরোনো যাচ্ছে না ,প্রায় ঘণ্টাখানেক কেটে গেছে, লঞ্চের ভবিষ্যৎ কী তাই নিয়ে তাবৎ টিয়াপাখী উদ্বিগ্নমুখে যে যার প্রেডিকশন জানিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ কারো কথা শুনছে না। একজন জানালেন এরকমই এক ডুবোচরে লঞ্চ একবার পাক্কা দু-দিন আটকে ছিল, তাঁর বটঠাকুরদা'র আপন মেজোসম্বন্ধীর খুড়তুতো ভাগিনা তাঁকে নিজের মুখে বলেছে। মামা'র হিসেব আবার অন্য, বলছেন-এইয়া কী চর মোনাই না ভাসান চর-- চর মোনাই zদি অয়, বোজ্‌জো , হেইলে আমাগো সাইধ্যের সুবিদা, একখান টলার ধইর‌্যা এক ঘন্টায় পাতারহাড পৌঁছাইতে পারি।
    সকলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, না তাকালে চরম বেয়াদবি হয়, এই ভাবনায় আমিও ঘেঁটি অবনত করি। দেখি লঞ্চের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত একজন মাল্লা একটি লগি হাতে নিয়ে জল মাপতে মাপতে দ্রুত পায়ে চলেছেন এবং সারেংয়ের সঙ্গে সান্ধ্যভাষায় কথোপকথন চালাচ্ছেন কিন্তু "এক বাঁও মেলে না', "দো বাঁও মেলে না', ইত্যকার রবীন্দ্রানুরাগীর- পরিচিত শব্দবন্ধ একবারও উচ্চারণ করছেন না। যা বোঝা গেল, লঞ্চের সামনের দিকে জল, পিছনে জল নেই ( নাকি উল্টো?), আরো বেশ খানিকটা ম্যানুভারিং করা প্রয়োজন; এবং তাই করে করে আধা ঘন্টা বাদে লঞ্চ সত্যি সত্যি ছাড়ল। টিয়াপাখীরা মনোবেদনায় অধোবদনে গ্রীবা লাল করে যে যাঁর কামরায় প্রস্থান করলেন।

    আর ঘুম এল না, কেবিনে ফিরে দেখি সবাই মোটামুটি জেগে গেছে, টুংকাই সগর্বে জানাল সে একটুও ঘুমোয় নি, তবে খুব চেপে ধরলে "মিনিট পনেরো ঘুমিয়ে থাকলেও থাকতে পারে'। ঘড়িতে তিনটে -সাড়ে তিনটে, কালো আকাশ তখনো পাতলা হয় নি, কিন্তু আমরা এসে গেছি প্রায়;আর ঘন্টাখানেকের মধ্যে লঞ্চ বরিশালের ঘাটে এসে ঠেকল, তবে এখনি আমরা নামবো না, ব্যস্ততা কিছু নেই,আলো ফোটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
  • Nina | 69.141.168.183 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ০৫:০৭494499
  • বড্ড ভাল লাগছে
  • nk | 151.141.84.194 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ০৬:৪৫494500
  • বড়াই, দিনান্তে একবার দেখে যাই এই মন্দির, ধূপদীপ জ্বলে, কাঁসর-ঘন্টা বাজে, কত না লোকসমাগম, আমি শুধু চাতাল থেকেই গড় করে যাই গলায় আঁচল দিয়ে।

    অঢেল দিয়ে যাও মন্ত্র আর প্রসাদ। আমার ভাগেও জুটেছিলো চারটি নকুলদানা, কয়েক টুকরো কলা আর ভিজাচাল। বড় ভালো লাগলো।
  • rimi | 75.76.118.96 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ০৬:৪৮494502
  • হ্যাঁ আমারো, খুব বেশি রকমের ভালো লাগছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন