এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মঠের দেশে, পরণকথার দেশে

    I
    অন্যান্য | ১৩ অক্টোবর ২০১১ | ৬৪৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • siki | 123.242.248.130 | ১৬ নভেম্বর ২০১১ ১১:৩৯494536
  • লাইক, লাইক, লাইক।

    আর কতোবার বলব? ভাল্লাগেনা!
  • Mridha | 192.131.177.18 | ১৭ নভেম্বর ২০১১ ০৩:১১494537
  • খুব ভালো লাগলো আপনার এই লেখা 'I' বাবু। একটা বড়সড় মতামত তৈরি করছিলাম, কিন্তু বিধিবাম, আমার laptop চুরি গেলো। বয়সে মনে হয় আপনি আমার সমবয়সিই হবেন, অমিও ৮৮ মাধ্যমিক, লেখা পড়তে পড়তে বার বার মনে হচ্ছিলো এ যেন আমার নিজের অনুভুতি, আমি যদি ঐ জায়গায় থাকতাম আমার অনুভুতিও হয়তো ঠিক এই রকমই.... কি জানি, ভালো লেখকের এটাই মনে হয় গুন, তবুও বলি, পুরোটা আরেক বার প্রথম থেকে পড়ে কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকলাম..........

    Akela Nahin Main
    Khuli Aankhon Se Neend Mein Chalta
    Girta Zyada Kam Sambhalta......

    Let Me In Without A Shout
    Let Me In I Have A Doubt
    There Are More,Many More
    Many Many Many More Like Me......

  • pipi | 129.74.191.152 | ১৭ নভেম্বর ২০১১ ২০:৫১494538
  • কিছু বলার ভাষা নেই! কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। এখনো অবধি ইন্দোদার বেস্ট লেখা, আমার কাছে।
  • sumeru | 117.194.96.28 | ১৮ নভেম্বর ২০১১ ০৮:৪৩494539
  • ল্যাখা তো শেষ হয় নাই। ম্যালা বাকি।
  • aka | 75.76.118.96 | ১৮ নভেম্বর ২০১১ ০৮:৫০494540
  • আই এগ্রি উইথ পিপি। অসম্ভব ভালো হইছে এই টই, লেখা। আগামী বার এক পিস ছবি লেব উইথ সই।
  • Manish | 59.90.135.107 | ১৮ নভেম্বর ২০১১ ১১:২৫494541
  • অসা
  • pharida | 182.68.182.77 | ১৯ নভেম্বর ২০১১ ০৮:৩৮494542
  • এই টইটা তুলে দি - লিস্টিটে এইটা না দেখলে বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে - :))
  • i | 137.157.8.253 | ১৯ নভেম্বর ২০১১ ০৯:৩৪494543
  • হুঁ। ঠিক কথা।
  • | 124.168.27.96 | ২১ নভেম্বর ২০১১ ১৭:১০494544
  • rimi | 168.26.205.19 | ২১ নভেম্বর ২০১১ ২১:৩১494546
  • ইন্দোদাদা, অনেকদিন লেখো নি। এবার আবার শুরু করো।
  • I | 14.99.106.169 | ২২ নভেম্বর ২০১১ ২২:২১494547
  • ভাইগ্না আর ভাইগ্নাবৌ দেখতে অনেক মানুষ এলেন। প্রথমদিন এসেছিলেন মামীর স্কুলের হেডমাস্টারমশায়, সামনের বাড়ির লুনা আপা ও তাঁর মেয়ে নাফসিন। লুনা আপারা কর্তা-গিন্নী মামার সহকর্মীও বটে, পাতারহাট কলেজে পড়ান। পরদিন ভোরবেলা এলেন বাড়িওয়ালা খালু। খালু'র একশোর কাছাকাছি বয়স শুনলাম; ঋজু শরীর,একটুও না ঝুঁকে হাঁটেন- সাদা দাড়িতে আর চামড়ার ভাঁজে ছাড়া আর কোথাও যেন বার্ধক্য এঁকে ছোঁয় নি। ভাইগ্না কলকাতা ইউনিভার্সিটি অ্যাফিলিয়েটেড মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ দিয়েছে শুনে ফিরে গেলেন ওঁর যৌবনের গল্পে। সেকালের কলকাতা ইউনিভার্সিটি'র গ্রাজুয়েট ইনি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এখনো খুব গর্ব। খালু কথা বলতে ভালোবাসেন , এদিক-ওদিক ঘুরে রাজনীতিতে পৌঁছে গেল কথা। ইনি মুজিবুর রহমানের অনুরাগী, বললেন, মুজিব চাইলেই নানা দেশে থরে থরে নানানতরো সম্পত্তি করতে পারতেন, একবার শুধু "হ্যাঁ' বলতে হতো। না, তিনি তা চান নি, তার বদলে " হে চাইলে রক্ত, হে চাইলে মৃত্যু, হে চাইলে স্বাধীনতা'। আমরা ওঁর শব্দচয়ন মুগ্‌ধ হয়ে শুনি।

    আগের সন্ধ্যায় আমরা বেড়িয়েছিলাম পাতারহাটের পুজো দেখতে। বেশ অনেকটা হাঁটা , প্রায় আধ ঘন্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিট মত, খালের ধার দিয়ে, তবে মেহেন্দীগঞ্জের "সিটি সেন্টারে' পৌঁছনো যাবে। অন্ধকার, আলো মিটমিট করছে গৃহস্থবাড়িতে, কেননা লোডশেডিং এবং বাড়িগুলিও কখনো সখনো দূরে দূরে ছড়ানো। খালের ধার ধরে পরপর অজস্র স-মিল, কাটা-আধকাটা গাছের কাঁচা গন্ধ নাকে এসে লাগছে;অন্য কোনো রাসায়নিকের গন্ধ মেশানো আছে কী তাতে?

    হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই মামী'র স্কুলে। যদিও অন্ধকার, স্কুল তখনো বন্ধ নয়, দোতলার একটি ঘরে কুপি জ্বালিয়ে একদল কচি-কাঁচা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়া তৈরী করছে। এত রাতে কেন? মামী বলেন, এইসব ছেলেমেয়েদের বাবা-মায়েরা নিরক্ষর, এরা বাড়িতে পড়া বুঝতে পারে না, তাই স্কুলেই সন্ধ্যাবেলা এদের জন্য বিশেষ টিউশ্যনের বন্দোবস্ত হয়েছে। শুনে বড় ভালো লাগে। অন্ধকারের মধ্য দিয়ে টুপি-দাড়িওলা এক ভদ্রলোক বেরিয়ে আসেন, আমাদের দেখে বলেন-"আরে, আসেন আসেন !' ইনি মামীর সহকর্মী ; একদা-ছাত্রও বটে। ইনি আমাদের লাইব্রেরী ঘরে বসিয়ে চা না খাইয়ে ছাড়বেন না। মামী ওঁকে নাম ধরে ডাকেন, বলেন মেহমানরা এখন পূজা দেখতে বেড়িয়েছে, এখন চা খেতে গেলে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে যাবে। শুনে উনি অবাক হয়ে যান, মলিনা-দিদিমনির মেহমানেরা স্কুল দেখতে এসে শুধু- মুখে ফিরে যাবেন, ঘটনাটি ওঁর কাছে এতই অসম্ভব মনে হয় যে মুখে বাক্য সরে না, বলেন -"হেয়া হইবে কেমতে !' অবশেষে ওঁর ভালোবাসার কাছে হার মানি আমরা, লাইব্রেরী ঘরে গিয়ে বসি। লাইব্রেরী ঘরটি বেশ বড়, সেটি স্টাফরুমও বটে, অজস্র কাগজ-ফাইল-সরকারী নথি-দলিল-দস্তাবেজ-পরিকীর্ণ হয়েও ঘরটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঘরের দেওয়ালে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নাম ও ছবি সাঁটা একটি বোর্ড, বিভিন্ন খেলাধূলা-বৃক্ষরোপণ ইত্যাদিতে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণের ছবি টাঙানো;একটি দেওয়াল থেকে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা-র বড়সড় পোর্ট্রেট ঝুলছে, একশ বছরের ওপার থেকে সেই মহাপ্রাণ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। মামীর সেই সহকর্মী নিজের হাতে জল গরম করে আমাদের চা করে খাওয়ালেন, কাকে দিয়ে বিস্কুট আনিয়ে নিলেন কাছের দোকান থেকে। অন্ধকারের মধ্যে এইরকম সব চিকচিকে ভালোবাসার জাল ছড়ায় বাংলাদেশের জোনাক-পরী-মাকড়শা'রা; রাতটি উষ্ণ হয়ে ওঠে।

    পথে প্রচুর মানুষ মামী ও মামাকে (এই এলাকায় আবার মামীর জনপ্রিয়তা বেশী, সকলেই প্রায় মামী'র প্রাক্তন/বর্তমান ছাত্রছাত্রী-লোকে কলেজে যাক না যাক, প্রাথমিক স্কুল পেরোয় অনেকেই) আদাব-নমস্কার জানান; মেহমান দেখে সবার একই আব্দার-বাসায় চলেন ! শুধু মুখের কথায় কি আর মেহমানদারী হয়, বাসায় গিয়ে চা-জল খাবেন, তবে না আপ্যায়ণ ! সবচেয়ে ভালো লাগে এঁদের এই নি:সংকোচ ডাক, আমরা হলে সঙ্গতির কথাও ভাববো কখনো-সখনো-এঁদের সে-সবের পরোয়া নেই। যার যেমন ক্ষমতায় কুলোয়, বাসায় যা আছে তাই দিয়ে আপ্যায়ণ করবো-এই ভালোবাসা। এমনি কনফিডেন্স। সেই মুজতবা আলীর কথা -দোস্ত ! তুমহারা রোটি, মেরা গোস্ত। শহরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমরা এসব জিনিষ ফেলে এসেছি অনেকদিন হল।

    অবশেষে পৌঁছই পূজামন্ডপে। ছোট গ্রাম্য পূজা, আড়ম্বরহীন। কিন্তু আওয়াজ দিয়ে আড়ম্বরের অভাব পূরণ করার চেষ্টা হয়েছে বোঝা গেল। মাইকে তারস্বরে বাজছে হিন্দী গান, তার সঙ্গে তাল দিয়ে কচি-কাঁচা ও দড়কচাদের নৃত্য। খোকা এবং খুকীদের-হ্যাঁ , খুকীদেরও- সে নৃত্য দেখলে পরে হাঁ হয়ে যেতে হয়, সে কী অসম্ভব সব মুদ্রা, গাঢ় সব পেলভিক থ্রাস্ট ঐটুকুন টুকুন সব বাচ্চাদের! মামী সামনে গেলেন না,নাকি অধিকাংশই ওঁর ছাত্রছাত্রী, ওঁকে দেখলে পরে তাদের "কালঘাম ছুড্‌ইয়া যাইবো অনে'।
    ফেরার পথে বাজার। বাজারটি বেশ বড়। সাহাবাবু'র বড়সড় মুদী দোকান, বৃদ্ধ মালিক পেটের ওপরে পুঁচকে নাতিকে বসিয়ে দোল খাওয়াচ্ছেন, দোকান চালাচ্ছেন ওঁর ছেলে, মস্ত নাদাপেট। দোকান থেকে আটা-ময়দা-হলুদ-পেঁয়াজ-চিঁড়ের মিশ্র গন্ধ ওঠে। ওপাশে অনেক কাপড়ের দোকান, এদিকে কেমিস্ট শপ, কাঁচা বাজার-আঁটিতে মোড়ানো লাল শাপলা, পরণকথার মৎস্যকন্যার চুলের মত লম্বা তাদের ডাঁটি। মামা ঐ শাপলা কেনেন কয়েক আঁটি, কাল চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না হবে। চকচকে পটল, আমড়া, আলু-বেগুন-ঝিঙ্গা-ওল-গাঁঠি ও মানকচু ডাঁই করে রাখা। সাইকেল চালাতে চালাতে আনমনে কেউ একটি অচেনা গানের সুর শিস দিয়ে গেয়ে ওঠে। রাস্তার কুকুরেরা দূরে মোড়ের মাথায় খেঁই খেঁই করে।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২২ নভেম্বর ২০১১ ২৩:২৩494548
  • আমার নাম অ্যালিস---আমি ওয়ান্ডারল্যান্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছি ------
  • rimi | 168.26.205.19 | ২২ নভেম্বর ২০১১ ২৩:২৭494549
  • খুব ইচ্ছে করছে বাড়িওয়ালা খালুর কথা আমিও শুনি। ছোটোবেলার দাদু মাস্টারমশাইর কথা মনে পড়ছে। তিনিও ছিলেন ঋজু শরীর বৃদ্ধ, একেবারে ধবধবে সাদা দাড়ি ছাড়া আর কোথাও বার্ধক্যের চিহ্ন ছিল না। তিনিও এইরকম বাঙাল ভাষায় অনর্গল কথা বলতেন। দেশভাগের গল্প, স্বাধীনতার গল্প (ভারতের), ওপার থেকে এপারে আসার গল্প মুগ্‌ধ হয়ে শুনতাম ওঁর মুখে। বাঙাল ভাষা যে এত মিষ্টি হতে তা দাদুমাস্টারমশাইর কথা না শুনলে কোনোদিন বুঝতে পারতাম না।
  • I | 14.99.106.169 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০০:১৭494550
  • রিমি দেখছি খুব রিলেট করতে পারছে-কখনো ওর খালপাড়ের বাড়ির কথা মনে পড়ছে, কখনো মাস্টারদাদু।
    কাল আবার যাবো তোদের খালপাড়ের বাড়ির কাছে।
    তবে এ বিষাদ অন্য জিনিষ রে ! এ বিষাদের জন্ম অন্য পৃথিবীতে, সে পৃথিবীতে তুই-আমি বড়ো হই নি।
  • I | 14.96.140.46 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০২:০১494551
  • আজানের মাইকটি আমাদের জানালা'র পাশেই গাছপালার সবুজে ঈষৎ মুখ লুকিয়ে। ভোর চারটে'র সময় শ্লেষ্মা ও খোয়াবজড়িত গলায় আজান উচ্চারিত হলে ঘুম ভেঙে যায়; কিছুটা বেভুল হয়ে পাশ ফিরে শুয়ে খানিকক্ষণের মধ্যে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। আমার আর ভোরে ওঠা হয় না। সকাল আটটা-সাড়ে আটটার রৌদ্র জামরুল গাছের ফাঁক দিয়ে আমার চোখে এসে পড়ে ঘুম ভাঙায়; মামা বলেন, -বাজার যাবা না ? মামা'র প্রাত:ভ্রমণ ততক্ষণে কমপ্লিট।

    মামা'র সঙ্গে বাজারে বেরোই। ক্যামেরাটিকে গলায় ঝুলিয়ে নিতে ভুলি না। সকালের কচি রোদ্দুরে গাঁগঞ্জের মাছ-তরকারির বাজারে ভালো ছবি হবে এই অনুমান করি। হাঁটতে হাঁটতে মামা আর আমি গপ্পগাছা করি। চৈ চৈ হাঁস হেলতে দুলতে রাস্তার ওপর থেকে পাশের ডোবায় গিয়ে নামে। রে¾ট্রী গাছের উঁচু মোটা ডালে পরগাছা'র চিলু চিলু পাতা হাওয়ায় দোল খায়। পাশ দিয়ে রিক্সা যায় ক্যাঁচকোঁচ করে, রিক্সাদের সকলেরই লাল রংয়ের গদি ও পর্দা, পর্দায় চিত্র-বিচিত্র জরির কাজ। উল্টোদিকের রিক্সায় বসে থাকেন ঘুম-ভরা চোখ নিয়ে মধ্যবয়সী, তাঁর পায়ের কাছে গাবদা স্যুটকেস। মামা বলেন-কী, সকালের লঞ্চে আইলা? মধ্যবয়সী সম্মতিসূচক মাথা নাড়েন। মেহেন্দীগঞ্জ সার্কিট হাউসের গোলাপী পাঁচিল, ভেতরের সবুজ ঘাসের লন, গেটের মাধবীলতা'র ঝাড়শুদ্ধ খুশী হয়ে ওঠে চেনা মানুষকে ফিরতে দেখে। রাস্তার একপাশে পারিবারিক কবরস্থান, ভাট-কালকাসুন্দি- আম-জাম গাছের জঙ্গলে ঘেরা কবরটির ওপরে একটি দরদ-ভরা কবিতা লেখা। কবিতার অনেক নীচে ধুলোমানুষ অক্টোবরের ওম মেখে হাড়গোড়গুলিকে জড়িয়েমড়িয়ে আয়েসে পাশ ফিরে ঘুম দেন। কবিতার শিকড় তাঁর করোটির মধ্যে খালি জায়গায় কাচ্চাবাচ্চা শিকড়ছানাদের নিয়ে জমিয়ে বসেছে মনে হয়।
    পীচ রাস্তা'র ওপরে একজায়গায় কিছু মানুষ জড়ো হয়েছেন। কোনো গ্রাম্য মজলিশ? বিচার-সালিশী? কিছু দুর্ঘটনা? কাছে গেলে ভুল ভাঙে। সেটি আসলেই একটি মিনিবাজার, ব্যাপারীরা অল্প ক-জনা ঢাকা পড়ে গেছেন খরিদ্দারের ভীড়ে। নানা জাতের মাছ,কাটা পোনা বাদে, মামার দাবী সকলি টাটকা ( না হওয়ার কারণ নেই) ও কিছু সবজিওলা। আস্তে আস্তে ব্যাপারীর ভীড় বাড়ে; এটি একটি অস্থায়ী ছোট বাজার, বেলা দশটার মধ্যে বেচাকেনা সেরে বাজার উঠে যাবে। ডিম এখনো হালিতে বিক্কিরি হয়, মামাকে হাঁসের ডিমের কথা বলতে আমি বেমালুম ভুলে যাই। এই ক্লাটার্ড ভীড়ের মধ্যে কোনো ছবি হয় না।

    জলখাবার সেরে আমাদের গল্পের ঝুড়ি খোলা হয়। ঝুলির গল্পেরা এই ব্যবহারে অভ্যস্ত , তাদের চোখে আলো লাগলে তারা ভ্রু কুঁচকে তাকায় না। তারা বহুকালের পুরনো নয়, তবু বহু ব্যবহারে জীর্ণ। মানুষের রক্তের আঠা লেগে তারা একেই বড় চিটচিটে, তাদের কারো কোণ ভাঙা, কোথাও দু-তিনটি পাতা একসাথে জোড়া লেগে গেছে। যুদ্ধের গল্প, উলুখাগড়ার গল্প। নেই-মানুষ, পুতুল-মানুষেরা তারাহীন আকাশের তলা দিয়ে, বেগুণী-কালো মেঘের তলা দিয়ে স্টেনগানের র‌্যাটাট্যাট বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে মহাদেশের পর মহাদেশ ডিঙিয়ে চলেছে। সে এক ভয়ঙ্কর ঝড়জলের রাস্তা, শিশুর পা চিরে দু-ফাঁক হয়ে যাচ্ছে, বিষ কন্দ খেয়ে মানুষের গলা ফুলে যাচ্ছে,ওপরে ঘাসের চাপড়া বিছোনো মাটির গর্তে লুকোতে গিয়ে প্রাণদায়ী বাতাসের অভাবে কারো মুখ হাঁ হয়ে যাচ্ছে। বসুদেব মাথার ঝুড়িতে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর নবজাত সন্তান, সামনে সামনে চলেছে শেয়ালনী, মাথার ওপরে ছাদ দেবার জন্য নেই শুধু কোনো বাসুকী। কেবল বিষাক্ত ঢেউ, শীতল হাওয়া, বৃষ্টির ছাট, চেরা বিদ্যুত খুবলে খাচ্ছে মানুষ ও তার সন্তানের অন্ত্র। উপমহাদেশের বৃহত্তম মাস মাইগ্রেশন। এক কোটি মানুষ দেশের সীমানা পেরিয়ে চলেছেন পরদেশ। পথে পথে সন্দেহ -অবিশ্বাস-ক্ষুধা -পোড়া রক্ত-দগ্‌ধদেহ, পথে পথে তপ্তজলপূর্ণ দুর্গম নদী, তীক্ষ্ণক্ষুরসমাকীর্ণ অসিপত্রবন, কণ্টকময় শাল্মলীবৃক্ষ। বৃষ্টির তোড়ের মধ্যে কেউ কাউকে দেখতে পায় না আর, কেউ কাতর স্বরে বলে-দোহাই আলি, আর তার ওপর দিয়ে বিলাপ, অবিচ্ছিন্ন বিলাপে ভেসে যায় বিশ্বসংসার-"ও মা ! ও সমইরা ! মাগো ! হে রাধেশ্যাম ! ভগবান , ভগবান গো ! রাধাশ্যামের বিগ্রহ, তরা তারে ডাকাইতের হাতে সমর্পণ করলি? অহন কি হইবো রে সমইরা? অহন কি হয়?'

    মেসমেরাইজড হয়ে শুনি। কত শোনা গল্প, একই গল্প প্রায় সকলের, শুধু ডিটেইলের রকমফের, তাও। কোথায় কাছের মানুষ শান্তিবাহিনীর প্রধান হয়েছেন, তাঁর কাছে এসে নিরূপায় কেঁদে পড়া। তিনি বলেন, মাস্টারমশায়, একা তো বাঁচতে পারবেন না, সবাইকে নিয়ে একসাথে আমার গ্রামে এসে ওঠেন, দেখি কী করা যায়। ভরসা পেয়ে অসহায় মানুষ আরো সব সমান অসহায় সাথীদের নিয়ে বড় স্কুলঘরে এসে ওঠেন। সেই রাত্রেই তাঁদের আশ্রয়দাতা চারদিক স্টেনগানধারী রাজাকার বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলে এক স্কুলবাড়ি শুদ্ধ লোককে পুড়িয়ে মেরে ফেলেন।
    আবার উল্টোটাও শুনি। মা'র কাছেই তো শুনেছি কত মুসলিম পরিবার বিরাট প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই এক্সোডাসে তাঁদের আশ্রয় দেন, নিরাপদ পথের সন্ধান বাতলে দেন। এমনকি শান্তিবাহিনীতে নাম লিখিয়েও ( অনেকেই সেকালে বন্দুকের ডগায় বাধ্য হয়ে শান্তিবাহিনী-রাজাকার হয়েছিলেন) কত মানুষ কত হিন্দু পরিবার-মুক্তিবাহিনীর পরিবারকে রক্ষা করেছেন ( মিহির সেনগুপ্ত'র ধানসিদ্ধির পরণকথা বইতে এরকম একজন মানুষের উল্লেখ আছে, নিজের হিন্দু বন্ধুকে বাঁচাতে যিনি নিজে শহীদ হন)। মামা বলেন, সত্যাশ্রয়ী এক হিন্দু মাস্টারমশায়ের কথা, যিনি নিজের প্রাণ বাঁচাতেও মিথ্যা কথা বলবেন না, কিছুতেই তাঁকে দিয়ে বলানো যাবে না, তিনি একজন মুসলিম এবং পাকপন্থী। তিনি রাজাকারদের হাতে ধরা পরলে এলাকার প্রভাবশালী শান্তি -বাহিনী প্রধান স্বয়ং তাঁকে ছাড়াতে আসেন, বলেন , ইনার মাথা আউলাইয়া গেসে, ইনি আমার চাচা লাগেন। সত্যবাদী মানুষটি প্রতিবাদ করে বসেন-হ্যায় মিথ্যা কথা কয় ! তারপর কীভাবে তাঁকে কত কষ্টে বাঁচানো হয়, সে এক ভিন্ন গল্প।

    জনপদটির ইতিহাস এইরকম। এই রক্তকর্দমময় উলঙ্গিনী'র রণরঙ্গভূমি, এ একই সঙ্গে মুণ্ডহীন কবন্ধ ও অমৃতগন্ধ স্বাদু জলধারা প্রসব করে।

    "ধানক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত
    এইখানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম
    এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রণাম
    এখনো নদীর বুকে
    মোচার খোলায় ঘোরে
    লুটেরা, ফেরারী !
    শহরে-বন্দরে এত অগ্নি-বৃষ্টি
    বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক-একটি অপরূপ ভোর,
    বাজারে ক্রুরতা, গ্রামে রণহিংসা
    বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা
    বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরুষতার মেলা
    বুলেট ও বিস্ফোরণ
    শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ
    রাত্রির শিশিরে তবু কাঁপে ঘাসফুল-
    এ আমারই সাড়ে-তিন হাত ভূমি
    যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
    আমি বিষপান করে মরে যাবো।...

    বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ....এ আমারই সাড়ে-তিন হাত ভূমি
    যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
    আমি বিষপান করে মরে যাবো।।"
    (যদি নির্বাসন দাও, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
  • Lama | 117.194.231.108 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০২:১৬494552
  • ডাক্তার, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে "যদি নির্বাসন দাও' এর আবৃত্তি শুনে মানে না বুঝেই মন কেমন করত ছোটবেলায়- অনেকদিন পর আবার
  • Lama | 117.194.231.108 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০২:২৩494553
  • কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে।
    নিথর দীঘির পাড়ে বসে আছে বক।
    আমি কি ভুলেছি সব?
    স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক?
    আমি কি দেখি নি কোনো মন্থর বিকেলে শিমূল তুলোর ওড়াউড়ি?
  • siki | 123.242.248.130 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০৮:৪৭494554
  • আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
    আমি বিষ পান ক'রে মরে যাবো

    মাথা নিচু করলাম।
  • pharida | 61.16.232.26 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ১৫:৪৩494555
  • রাজা এই লেখা পড়লে আমাদের ছেড়ে দিত !
  • nk | 151.141.84.194 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ২৩:১৫494558
  • হয়, রাজা আমাদের ভাষা বোঝেন না।
    এ লেখা পড়লে রাজা আমাদের তো বটেই, নিজেকেও ছেড়ে দিতো। :-)
  • I | 14.96.3.190 | ২৪ নভেম্বর ২০১১ ২৩:০৬494559
  • কথা ছিল মেঘনার পাড় দেখতে যাওয়ার। কিন্তু রাস্তা অত্যন্ত ভাঙ্গা, যাতায়তে সময় লাগবে প্রচুর, উপযুক্ত যানবাহন নেই, ফিরে আসতে রাত হয়ে যাবে-এইসব ভেবে কাটিয়ে দেওয়া গেল। বদলে আমরা বিকেলবেলায় কীর্তনখোলার শাখানদীতে নৌকাভ্রমণ করতে বেরোবো ঠিক হলো।

    ফেরিঘাট যাওয়ার উঁচু রাস্তাটি হঠাৎ করে এসে শেষ হয়ে গেছে; যেন পৃথিবীর শেষ প্রান্ত, ওপারে আর কিছু নেই,আর একটু উঁকি দিয়ে দেখতে গেলেই কেউ উল্টে পড়ে যাবে মহাশূন্যের অনন্তের মধ্যে। ঐ সরু রাস্তার প্রান্তে দুপাশে সার দিয়ে দাঁড় করানো রিক্সা, কিছু সিএনজি। হাঁটা মুশকিল। রাস্তা দুধারে ঢালু, রাস্তার পাশের ঝুপড়িগুলোও তাই, যেন যে কোনো মুহূর্তে নদীতে গড়িয়ে পড়ে যাবে বলে বসে আছে। বেলা পড়ে আসছে। পড়ন্ত বেলার হলদে- কমলা রোদ এসে পড়ছে ফেরিঘাটের মানুষজনের চুলে-চোখেমুখে-দাড়িতে-শাড়ি ও লুঙ্গিতে। ঘাটের দোকানগুলিতে সার সার সাজানো কোল্ড ড্রিংকের বোতল, কলার কাঁদি, বান রুটি ও চিপসের প্যাকেটের মধ্যে বিকেলের লালচে আলো ও ঘনিয়ে আসা ছায়া আনমনে আসা-যাওয়া করে। আমরা নৌকায় উঠি।
    মাঝির সঙ্গে সম্ভবত: তাঁর ছেলে , ডোরাকাটা নীল-বেগুনী লুঙি পরা; দুজনেই যন্ত্রের মত মসৃণতায় নোঙর তুলে নেন,দড়ি ছাড়েন। আমাদের ইঞ্জিন-লাগানো নৌকা সাঁ সাঁ করে ছুটে যায় ডুবতে বসা সূর্যের দিকে। পশ্চিমের আকাশে কোদালে মেঘ ভেসে যায়, ডুবন্ত সূর্যের আলো ও সন্ধ্যা'র ছায়া তাদের গায়ে কমলা-লালচে-বেগুনী-ছাই-নীল-গাঢ় নীল রঙের তেল রং ঘনিয়ে তোলে। সূর্যের দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের মাঝি, তাঁর হাতের হাল, তাঁর সমস্ত অবয়বের কালো শিল্যুয়েট সূর্যকে পিঠে নিয়ে দাঁড়ানো কথাপুরুষের মত লাগে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি মাঝির হাতে-ধরা হালের মত অবিকল একটি দণ্ডের মেঘচ্ছায়া পড়েছে অস্তগামী সূর্যের গায়ে; সারা পশ্চিম আকাশ জুড়েই।
    একটা ঘন্টা বেশ আয়েসে কেটে যায় নদীর খোলা বুকে, তাজা হাওয়ায়। আমরা নৌকার গলুইতে মুখোমুখি বসি কাঠের তক্তায়। অসীম তড়াক করে উঠে যায় নৌকার ওপরের তক্তাবিছোনো অংশে, উঁচু প্রান্তটিতে উঠে সে বসে থাকে প্রার্থনার ভঙ্গিতে । টুংকাই আরামে গা এলিয়ে দেয় তক্তার ওপরে। সকল কোলাহলের বিরলতা, নদী ও আকাশের আদিম প্রাকৃতিকতা একরকমের স্নিগ্‌ধ শান্তি আনে মানুষের মনে, আমাদের উদাস মুখের সন্ধ্যাছায়ায় তার আঁচ পড়ে। ফেরার পথে নৌকা ফেরিঘাট এড়িয়ে ঢুকে পড়ে খালে। দুপাশের গ্রামীণ ঘরগেরস্থালিতে তখন সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়ে নামছে। তারই মধ্যে মামী আমাদের দেখান খালের ধার ঘেঁষে নোঙর করা বেদেদের নৌকো। যাযাবর শ্রেণীর এই মানুষেরা নৌকায় করে নদীতে-নদীতে ঘুরে বেড়ায়; কি করে এদের জীবন চলে,এই জনপদে এসে এরা কী বা করে, সেকথা আর জানা হয় না। এদেরই জাতভায়েদের কথা লেখা হয়ে আছে ময়মনসিংহগীতিকায়, দেশে দেশে এরাই সাপ ধরে, ভানুমতী'র খেলা ও বাঁদর নাচ দেখায়, জড়িবুটি বেচে, চুরিচামারি যত না করে মার খায় তার চেয়ে ঢের বেশী। এদের রক্ত ছড়িয়ে আছে এশিয়া- ইউরোপের দেশে দেশে, জিপসী-রোমানী মানুষের গানে ও নাচে, ম্যান্ডোলিন-সিম্বালোমে, বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধে, যুদ্ধের মধ্যবর্তী শান্তিতে।

    বাসার কাছাকাছি একটি ঘাটে এসে দাঁড়ায় নৌকা। সঙ্কীর্ণ ঘাট, রোদে শুকিয়ে আসা কাদা'র মধ্য দিয়ে কসরৎ করে উঠতে হয় ঘাটের একমাত্র কংক্রীটের পৈঠার ওপর। তার পর অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে সরু পায়ে-চলা পথ পেরিয়ে, ঝোপঝাড় এড়িয়ে আমরা বড় রাস্তায় উঠি। আরো প্রায় মিনিট দশেক হাঁটা অন্ধকারে। জোনাকিরা গায়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সাইকেলের ঘন্টি বাজে টিং টিং। একটু জিরিয়ে নিতে আমরা চায়ের দোকানে বসি। চায়ের দোকানে ডাবও বিক্রি হয়, কুপির টেরাবেঁকা আলোয় ডাবওলা মস্ত মস্ত ডাব কেটে আমাদের হাতে ধরিয়ে দেন। এই শান্তি, এই বিশুদ্ধ অন্ধকার ছেড়ে ফিরে যেতে হবে কাল বাদে পরশু। ভেবে মন খারাপ লাগে; ভালোও।
  • Tim | 24.13.11.220 | ২৪ নভেম্বর ২০১১ ২৩:৫৫494560
  • এই বিশুদ্ধ অন্ধকার ছেড়ে একদিন বেরোতে হবে আমাদেরো, ইন্দোদার লেখা শেষ হলে। এই ভেবে মন খারাপ হয়।
  • I | 14.96.3.190 | ২৫ নভেম্বর ২০১১ ০০:৪৫494561
  • যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে। বোঁচকাবুঁচকি নতুন করে বাঁধাছাঁদা শেষ। দুপুরের লঞ্চ ধরে আমরা যাবো এবার বরিশাল শহরে, সেখানে তুলিদের বাসায় রাত কাটিয়ে ভোর ভোর বনগাঁর বাস। যাওয়ার দিন ঐ ভোরবেলাতেই স্বরূপকাঠি থেকে সুষেণ মা-কে পৌঁছে দেবে বরিশাল বাস টার্মিনাসে।

    মামা আর অসীম আমাদের নিয়ে যাবে বরিশাল। আমাদের রওনা করে দিয়ে তারা ফিরবে পাতারহাট। পায়ে পায়ে এগিয়ে দিতে আসেন মামী, আসেন লুনা আপা , ভাবী। ক'টা দিন সুখ-সু:খে কাটলো যা হোক। যে দিন যায়, সেই দিনই সুখের-আমার ঠাকুমা খুব বলতেন। কিছুদিন আগেই মামীর একটি অপারেশন হয়েছে, আমাদের কাছে বলেন নি, বললে যদি না আসতাম ! অপারেশনের ঘা এখনো পুরোপুরি শুকোয় নি, তাই নিয়েই আমাদের আনতে ঢাকা যাওয়া-ঘোরাঘুরি-আদর-আপ্যায়ণ। আর এখন যাওয়ার সময় মামীর চোখ টলটল। ব্রীজের তুষের ওপর মামীর চোখের পানি পড়ে। পেছনেই দাঁড়িয়ে আছেন ভাবী, আছেন লুনা আপা। কাল রাতেই সবাই মিলে এঁরা রান্না করেছেন ইলিশ মাছের বিরিয়ানি,খেয়েছি সবাই হুল্লোড় করে। সকাল বেলা সাথী আমাদের গান শুনিয়েছে; অসীম ঘাড়ে করে হারমোনিয়াম বয়ে এনেছে লুনা আপার ঘর থেকে। এইসব ছোট ছোট টুকরো টুকরো ঘটনা- ফেরিঘাট থেকে ফেরার পথে গ্রামের পুজোয় গিয়ে দাঁড়িয়েছি। চক্রাকার আলো ঘুরছে প্রতিমাকে ঘিরে। আমরা এসেছি শুনে পুজোর কর্তা নিজে হাতে আলো নিবিয়ে সাদা আলো জ্বালিয়ে দিলেন, ছবি তুলতে যাতে আমার অসুবিধা না হয়। নিজে এসে হাতে করে প্রসাদ খাওয়ালেন। দু:খ করলেন, এখন আর সে জাঁকজমক নাই। নাফসিন মুখচোরা টুংকাইকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ভাব করলো, ওর হাতে নিজের চকোলেট গুঁজে দিল। অন্ধকারের মধ্যে কে যেন বললেন-আমরা এখানে হিন্দু-মুসলমান দু:খে-সুখে ভালোই আছি। এই আপনারা বাবরী মসজিদ নিয়ে কাউতাল করেন, তখন একটু নাড়া লাগে। সুষেণের অভিযোগ মনে পড়ে-তোমরা ইন্ডিয়ানরা আমাগো নীচু চক্ষে দ্যাহো। সুষেণ জল-রাজনীতির কথা বলে, ভারতবর্ষের বড়দাদাসুলভ ভঙ্গির কথা বলে। অসীম ভাইয়ের জন্য নিজের হাতখরচের পয়সায় পাড়ার দোকান থেকে কিনে আনে পুতুল ও লজেন্স। দুটোয় মিলে খেলতে গিয়ে অসীমের মাথা দেওয়ালে গিয়েছে ঠুকে,আমি এগিয়ে আসায় অসীম দু-হাত মেলে ধরে টুংকাইয়ের সামনে গিয়ে হিউম্যান শিল্ড হয়ে দাঁড়ায়-ভাইয়েরে মারবা না। এই অসীম, সাত বছর বয়স থেকে রাস্তায় ঘুরে পয়সা রোজগার করেছে। প্রথমে খোয়া ভাঙত, তার পর ভাপা পিঠা নিয়ে নিয়ে বাজারে বাজারে বিক্কিরি করত। কে জানি ওকে স্কুলে ভর্তি করে দেন; মামী ওকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। জীবন ওকে এই শিশু বয়স থেকেই কীরকম আটাচাক্কিতে পিষছে, তবু ও একটুও তেতো হয় নি, ওর মুখের হাসি একটুখানিও ম্লান হয় নি। আমাদের অসীম পালোয়ান !

    আপাতত: আমরা দাঁড়িয়ে আছি ব্রীজের এপাড়ে। ঘাড় হেঁট করে মামী কাঁদছেন অঝোরে, পিছনে দুই নারী দাঁড়িয়ে, মুখ ম্লান। আমাদের মেয়েরা ! নত হয়ে ওঁদের প্রণাম করি। রিক্সাওয়ালা তাড়া দেন।

    আবার সেই কীর্তনখোলা ! নির্মেঘ আকাশের তলায় দুপুরের কড়া আলোয় সে ঝকঝকিয়ে উঠছে। দুপারে সুপুরিবনের সারি দ্রুত সরে যাচ্ছে পেছনে। জল কেটে ঝুকঝুক আওয়াজ করে স্টীমার চলেছে, তার চাকার ঢেউয়ে ঢেউয়ে মাছ লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। টুংকাই দেখে খুশী হয়। ঘন্টা দুয়েকে আমরা বরিশাল পৌঁছে যাই। স্টীমারঘাট থেকে রিক্সা নিয়ে ঝাউতলায় তুলিদের বাসায়। তুলিরা কেউ বাড়ি নেই, মামার কাছে রেখে যাওয়া চাবি দিয়ে দরজা খুলে আমরা দোতলায় উঠি। পুরনো আমলের বাড়ি, কড়িবরগা সব অনেকদিনের।। সামনে ছোট বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি মানুষের অবিশ্রান্ত যাতায়ত। বাড়ির ঠিক নীচেই কোণার দিকেই ঝাউতলা বারোয়ারি সমিতি'র দুর্গাপূজা। আজ দশমী, দেবীর বরণ চলছে। কান ফাটানো হিন্দী গানের উপদ্রব। এমন অত্যাচার সারা রাত চললেই গেছি। রঙ্গীন আলোয় বাড়ির আশপাশের ঝোপজঙ্গল একটু পরিষ্কার হয়। কামিনী গাছের ঝাড় দেখি। শিউলি ফুলের গন্ধ নাকে এসে লাগে। এবারের পুজোয় এই প্রথম। তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ি। আলো নিভে যায়, ঘুম আসতে চায় না। হিন্দী গান বাজতেই থাকে অবিরত। যতক্ষণ না ঘুম আসে।
  • Du | 117.194.199.130 | ২৫ নভেম্বর ২০১১ ১৭:১৭494562
  • এর একটা অডিও চটি বার করলে হয় না? চুপচাপ পড়ে যেন সুবিচার হয় না, মনে হয়, ঠিক ভাবটি নিয়ে কেউ যদি পড়ে শোনাতো ।।
  • maximin | 59.93.200.161 | ২৫ নভেম্বর ২০১১ ১৮:৪১494563
  • পড়ব বলে তুলে রেখেছিলাম। আজ সারাদিন ধরে পড়লাম। কী যে অপূর্ব লাগল কী আর বলি!
  • I | 14.99.87.45 | ০১ ডিসেম্বর ২০১১ ২২:৩৭494564
  • ভোর ভোর উঠে পড়ি। চন্দ্রদ্বীপ ছেড়ে যাবার সময় হয়েছে। লোকে ভালোবেসে বলে বাংলার ভেনিস। টুংকাই ঘুম -ভরা চোখে উঠে এদিক-ওদিক চায়; আবার শুয়ে পড়ে। কোনোমতে তাকে টেনে তুলি।
    রাস্তা শুনশান। অল্প একটা-দুটো রিক্সা চলছে । খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে একটি সিএনজি ধরলাম। গতকাল কিছুই দেখা হয় নি বরিশালের, ইচ্ছেই করছিল না। আজকে যাবার পথে ঝাঁকিদর্শন। পেছনে পড়ে থাকে বিবির পুকুর, অশ্বিনী দত্তের নাম-জড়ানো টাউন হল, শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ। ফেলে এলাম বি এম কলেজ,ওর করিডোরে একসময় একা একা হাঁটতেন জীবনানন্দ দাশ। এই বরিশাল শহরের রাস্তায় একদা জীবনানন্দের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে কী নাকাল হয়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ, মনে পড়ে। ( "কোন জীবানন্দ?' "জীবনানন্দ দাশ।' "কইথে পারি না।'... "কাম করেন কোথায় তিনি, জানেন?') আর মনে পড়ে যায়, শঙ্খ ঘোষ, হ্যাঁ, অন্তত: শঙ্খ ঘোষ তো বলেইছিলেন "বরিশালের স্টিমারঘাটের ঝাউশোভিত স্নিগ্‌ধতা আর সৌন্দর্য'র কথা। তবে ?

    আপাতত: অবশ্য স্টিমারঘাট নয়, আমরা এসে পৌঁছেছি বাস-স্ট্যাণ্ডে। আমাদের নির্ধারিত বাসটির সামনে। বাসের কন্ডাকটর সায়েবের সঙ্গে মামা আলাপ করিয়ে দেন ফোনে, বহুবার যাতায়তের সুবাদে মামা'র সঙ্গে ওঁর বেশ পরিচিতি। কণ্ডাকটর সাহেব সামনের স্টপে উঠবেন, আমাদের আশ্বাস দেন, পথে কোনো সমস্যা হবে না। খানিক পরেই সুষেণ ও বাহিনী এসে পৌঁছয় মা-কে বগলদাবা করে। সুষেণ, ওর মা, দুই দাদা, দাদা'র ছেলেমেয়েরা। স্বরূপকাঠি থেকে একটি মাইক্রো ভাড়া করে ওঁরা সেই ভোরে রওনা দিয়েছেন , স্রেফ আমাদের চোখের দেখা দেখবার জন্য। আমার পিসীশ্বাশুড়ি ছোট্টখাট্টো মানুষ, সাদা থান পরা, কপালে একটি তিলক, আমায় জড়িয়ে ধরে বললেন, "তুমি আইলা না, আমি তো তোমারে না দেইখ্যা থাকতে পারলাম না !' খারাপ লাগে, কী করে ওঁকে বোঝাই , বাংলাদেশে আসার আগে থেকেই রীতিমত শারীরিক সমস্যা চলছে, এর ওপর শরীর মহাশয় এত যাতায়ত আর ভালোবাসার অত্যাচার স্রেফ নিতে পারত না। মা'র কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই ফোনে শুনছিলাম,কীরকম অ্যাগ্রেসিভ ভালোবাসায় ওঁরা অতিথির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার সঙ্গে এইটা ন্যাও, ঐটা ন্যাও। মা একবার মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন, বা: তোমাদের এখানকার নকুলদানা'র সাইজ তো বিরাট ! সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে পড়ে ওঁর ব্যাগে নকুল দানার জাম্বো প্যাকেট গুঁজে দেওয়া হল। জামা-কাপড় (পরিবারের সব সদস্যর নামে নামে),মিষ্টি, ফল, নকুল দানা,এবং নারকেল ! হ্যাঁ, নারকেল ! ব্যাগে জায়গা নেই ? তো কি? নতুন ব্যাগ কিনে দিচ্ছি এই যে। আস্ত এক নতুন ব্যাগ ভরা উপহার এবং পুরনো লাগেজদের নিয়ে মা এসে বাসস্ট্যাণ্ডে হাজির হয়েছেন অতএব। আর কিছু? আর কিছুই কী দেওয়া যায় না? হ্যাঁ, কেন যাবে না, এই তো -সুষেণ তার চোখ থেকে সানগ্লাশ খুলে ধরিয়ে দিচ্ছে টুংকাইয়ের হাতে।

    গ্রুপ ছবি নেওয়া হয়;সকালের কুয়াশা'র মধ্যে বাষ্প জমতে থাকে। বাস হর্ণ দেয়, সবাই উঠে যাই যে যার সীটে। বাস ছাড়ে। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ হাত নাড়ে, চোখ মোছে। একটি যথাযথ বিদায়ের দৃশ্য। বিদায় বিদায় বাংলাদেশ। পেছনের মানুষরা ছোট হয়ে আসে বিদায়ের মরসুমে। কেবল একটি বিহারী পাগল,বাস স্ট্যাণ্ডে দাঁড়ানো খড়ি-ওঠা, নোংরা জামা,চুল ও দাড়িতে অগোছালো বিহারী মুসলমান দৃশ্যটিকে জিভ ভেংচায়। শরীর বেঁকিয়ে সে নাচে,আকাশের দিকে আঙুল তোলে। আকাশের দিকে সে অভিযোগ ছুঁড়ে দেয়। কিম্বা অনুযোগ। অভিমান। কিন্তু ঈশ্বর তাকে কোলে তোলেন না। কাঁটাতার তার চারপাশে ঘন হয়ে আসে। এই উপমহাদেশের জন্মদাগ। মিনিট কয়েক নিরালম্ব শূন্যে ভেসে থেকে সেও তার বেড়ীডাণ্ডা-বমির দাগ ও শুকনো বিষ্ঠা নিয়ে, তার নির্বিকার স্বদেশ-পরদেশ নিয়ে অবশেষে শূন্যেই মিলিয়ে যায়।

    (শেষ)
  • nyara | 203.83.248.37 | ০১ ডিসেম্বর ২০১১ ২৩:১৪494565
  • বাংলা ভাষায় একটি ক্লাসিকের জন্ম হল। ডাক্তারের বই বেরোলে অ্যাকাডেমি, রবীন্দ্র ইত্যাদির পুরস্কারের জন্য পাঠানো হোক।
  • Tim | 198.82.23.118 | ০১ ডিসেম্বর ২০১১ ২৩:৪৭494566
  • ডিট্টো। দুর্ধর্ষ লেখা হবে , প্রত্যাশিতই ছিলো। কিন্তু ইন্দোদা সব প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেছে বারবার।
  • rimi | 168.26.205.19 | ০২ ডিসেম্বর ২০১১ ০০:৪৬494567
  • এই লেখার PDF চাই। পাওয়া যাবে কি? আমি কয়েকজনকে পড়াতে চাই এই লেখা।
  • nk | 151.141.84.194 | ০২ ডিসেম্বর ২০১১ ০০:৪৮494569
  • "আমার উন্মন বাদ্যকর" এর রিমঝিম আনন্দবিষাদের ভৈরবীর পরে এত দীর্ঘদিনের খাঁ খাঁ খরায় বসে প্রতীক্ষা করেছি কবে আবার, কবে আবার---আজ ঝরঝর ধারাজলে সব শূন্যতা পুর্ণ হয়ে গেল বড়াই, ছাপিয়ে গেল এ মাটির কলস।
    ভালো থেকো, অনেক ভালো থেকো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন