এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভাগাড়পাড়া স্কুল থেকে বলছি


    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০১২ | ৭৯৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 24.96.164.164 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৪:৩৫576082
  • ৯)
    দুর্গা, লক্ষ্মী, কালী সবপুজো শেষ হয়ে স্কুল খোলে| মাঠের জায়গায় জায়গায় মাটি তখনও তকতকে নরম, পাশের মাঠ এখনও জলে ভরা, জল নামার জায়গা নেই| শিমূল গাছটা কিন্তু তেমনি সোজা হয়ে আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, তেমনি সবুজ পাতাভরা ঝাঁকড়া মাথা| আর আছে ধুতরা, আকন্দ, ঘেঁটু আর আরো কিসব বুনোফুলের ঝোপগুলো| এরা কেউ জমা জলে মরে নি? নাকি আগের গাছগুলো মরে গিয়ে এরা আবার নতুন করে হল? নাঃ, তাহলে এত তাড়াতাড়ি এত বড় হবে কী করে? স্কুলের টিউবওয়েলের জল খেতে বারণ করেন দিদিমণিরা, স্কুলের দক্ষিণ পশ্চিমকোণের গোলাপী রঙের তিনতলা বাড়ীর সাথে ব্যবস্থা হয়েছে, আমরা গিয়ে ওদের টিউকল থেকে জল খেয়ে আসতে পারব| সারা সকাল ধরে দলে দলে মেয়ে যায়, ঝড়াং করে গেট খোলে, কলকলিয়ে কথা বলতে বলতে, হাহা হিহি করে হাসতে হাসতে ক্যাঁ-অ্যা-চ ক্যাঁ-অ্যা-চ করে টিউকল পাম্প করে করে জল খায় আবার ঝড়াং করে গেট বন্ধ করে ফেরত আসে; ওঁরা বিরক্ত হন কিনা জানা যায় না, তবে এই জিনিষ চলতেই থাকে পাঁচদিন, দশ দিন, পনেরো দিন, কুড়ি দিন| তারপর একদিন নাইনের দিদিরা খুব কিরকম যেন মুখ করে বলল 'আমরা আর ঐ বাড়ীতে জল খেতে যাব না, যতদিন না স্কুলের কল ঠিক হচ্ছে ততদিন জল খাব না|' টিফিন টাইমে গুজগুজ ফুসফুস, চাপা গুমোট ভাব চারিদিকে, কিন্তু আমাদের তো কেউ কিছু বলেটলে না| দিদিমণিরা কেউ খেয়াল করলেন কিনা কি জানি| পরেরদিন রীমা এসে বলল ও দিদির কাছে শুনেছে ঐ বাড়ীটার দোতলায় দাঁড়িয়ে একটা ছেলে নাকি ওদের দেখে দাঁত বের করে নিঃশব্দে হাসত, ওরা যেন দেখতে পায় নি এমন ভাব করে চলে আসত, কাল ছেলেটা 'ঐটা' বের করে তুলে নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখিয়েছে| আমরা তো এখন আর তত ছোট নেই, অনেকেই এর মধ্যে 'বড় হয়ে'ও গেছি, তাই বুঝতে অসুবিধে হয় না, শুনে কেমন গা গুলানো ভাব হয় যেন এক্ষুণি বমি হবে, গলা দিয়ে উঠে আসবে রাতের খাবারের টুকরো টাকরা,টকজল, ভাসিয়ে দেবে এই ক্লেদ, ঘেন্না| কিন্তু বুঝি না কেন ছেলেটা অমনি করল? কেন বন্যা হয়ে যাওয়ার এতদিন পরেও আমাদের কলের জল ঠিক হয় নি? কেন আমাদেরকেই অন্য জায়গায় যেতে হয় জল খেতে? কেন এখনও স্কুলের বাড়ী তৈরী শুরু হয় নি? বমি হয় না, শুধু গলার কাছে বমিভাব দলা পাকিয়ে থাকে| দিদিমণিরা কিছু জানতে পারেন কিনা জানি না, তবে দুই একদিনের মধ্যেই কারা সব এসে স্কুলের টিউকলের জল পরীক্ষা করে বলে গেল আমরা খেতে পারি| এমনিতেও কেউ আর ওখানে যাচ্ছিল না, এখন তো আর দরকারই নেই| শুধু আমি টের পাই শৈশবের শক্ত সিমেন্ট বাঁধানো উঠোন থেকে নেমে যাচ্ছি 'বড় মেয়ে' হওয়ার মাঠে -- কোথাও তলতলে কাদাভরা -- কোথাও কচি সবুজ ঘাসভরা ঝুরঝুরে মাটি --- কোথাও বা আবার সবুজ ঘাসের নীচে থকথকে কাদা, ওপর থেকে কিচ্ছুটি বোঝা যায় না, পা দিলেই বসে যাবে পা -- হাঁটু পর্যন্ত এঁটে ধরবে আঠালো কালো কাদা| নিজে নিজেই বুঝে যাই আমাকে ঐ সবুজ ঘাস আর ঝুরঝুরে মাটি দেখে দেখে খুঁজে খুঁজে এগোতে হবে, যতদিন না শক্ত মাটি, সিমেন্টের রাস্তা পাচ্ছি| নরম না-বোঝা বেলায় ফেরবার কোনও উপায় নেই|
  • | 24.97.154.81 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৬:৫৮576083
  • এইবারে অ্যানুয়াল পরীক্ষার প্রশ্ন হয় খুব সোজা, পরীক্ষাও হয় বেশ একটু দেরী করে, তাও শিবানীরা পাশ করতে পারে না| ওরা আরো অনেকের সাথেই বন্যার সময় স্কুলে এসে উঠেছিল, ফিরে গিয়ে দেখে ওদের বাড়ী ভেঙে বসে গেছে মাটির মধ্যে অনেকটা, আর চালের টালি কারা যেন খুলে নিয়ে চলে গেছে, ওর বাবা নাকি প্রায় বেশীরভাগ দিনই গিয়ে দেখে আসতেন, তখন ঠিকঠাকই ছিল, জল নেমে যেতে ওরা বাড়ী ফেরার তোড়জোড় শুরু করার পরই হাওয়া হয়ে যায় টালিগুলো| কারা যেন 'রিলিপ' দিতে এসেছিল, তারা কয়েকটা বাঁশ, দরমার বেড়া, বেশ কয়েকটা মোটা মোটা চাটাই দিয়ে গেছে, তাই দিয়েই কোনও মতে একটা মাথাগোঁজার জায়গা বানিয়ে তাতেই আছে ওরা চারবোন, বাবা মা, ঠাকুমা আর পিসি| শিবানী আমার সাথে আর কথা বলে না, আমি কিছু জিগ্যেস করলে অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়| ও কী শুনতে পেয়েছিল দিদার বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো? অতদূর থেকে কী করে পাবে? তাহলে কি দিদার মুখেই ফুটে উঠেছিল এমনভাব যা ওকে এত দূরে ঠেলে দিল, কিছুতেই আর ভাব করার কোনও উপায় নেই! শিবানী দুয়েকবার বলে ওরা ওপারে কানাইপুরে চলে যাবে, ওখানে লোক এমন খারাপ নয়, এপারের লোকজন খুব খারাপ| কানাইপুরের নাম শুনেছি আমরা, রেললাইনের ওপারে নবগ্রাম, তার পরে কানাইপুর| কে জানে সে কতদূর! রেজাল্ট বেরোবার পরে শিবানীদের আর স্কুলে দেখি নি| হয়ত ওরা কনাইপুরে গিয়ে নতুন টালিওলা বাড়ী বানিয়েছিল, হয়ত ওদের বাবার কারখানার লকাউট খুলে গিয়েছিল, হয়ত সেখানে বন্ধুর বাড়ী গেলে বন্ধু সাদরে ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসে গল্প করে, বাড়ীর লোক বকে দেয় না|

    সপ্তম শ্রেণী সেই ঢোকার মুখের সরু রাস্তার ধারে মাঠের কোণায় টালির চাল আর চাটাইয়ের বেড়া দেওয়া মাটির ঘর| বন্যার পর মাটি আরেকবার গোবরগোলা দিয়ে শক্ত করে লেপা হয়েছে| এখানে যতখুশী চেঁচানো যায়, মূল স্কুল থেকে খুব একটা শোনাটোনা যায় না, দিদিমণিরাও এতদূরের ক্লাসে একটু দেরী করেই আসেন, ঘন্টা পড়তেই চলেও যান| আমাদের নতুন অঙ্কদিদিমণি অঞ্জলীদি, বেশ যত্ন করে অঙ্ক করান| ইনি আবার নাকি আমার মায়ের ছাত্রী ছিলেন, সেই মা যখন বিয়ের আগে হিন্দু গার্লসে পড়াত তখন| বীজগণিত নামে একটা নতুন বিষয় শুরু হয়, সংস্কৃত শুরু হয়, বিজ্ঞান দুটো ভাগ হয়ে যায়, ফিসিক্যাল আর লাইফ সায়েন্স| প্রথমে বিয়ের জন্য আর তার একমাস পরে কি যেন অসুখ হয়ে অঞ্জলীদি অনেকদিন ছুটি নেন, বীজগণিত করানোর কেউ থাকে না, পাটীগণিত আমাকে দাদু এত ভাল করে শিখিয়েছে যে কেশব নাগের বই দেখে দেখে আমি নিজেই করে যাই, অঙ্কের ফাঁকা ক্লাসে অন্য কাউকে কাউকে দেখিয়েও দিই| কিন্তু বীজগণিত আর জ্যামিতি বাঘ হয়ে ভয় দেখায় বইয়ের মধ্যে থেকে| ছোটমামার বিয়ে হবে, তাই দাদু খুব ব্যস্ত, ভাল মেয়ে খোঁজা, দোতলায় একটা বাথরুম বানানো, বাড়ী রঙ করানো, কাজের তো শেষ নেই| মা বলে স্কুলে শুনেছে সবাই বলছিল ইংরিজি আর সেলাইয়ের দিদিমণি রাখতে গিয়ে ফান্ডে তো আর টাকাপয়সা নেই, নাহলে তিন চারমাসের জন্য একজন অঙ্কের দিদিমণি রাখা যেত, আমাকে বারবার বলে ভাল করে পড়াশোনা করতে, বাবা আকাশ থেকে দেখে খুশী হবে| বাবা আকাশ থেকে দেখছে এই কথাটা আমার আর আজকাল তেমন বিশ্বাস হয় না, তবে মা'কে কিছু বলি না| আজকাল ছোট ছোট মাছ আমি নিজেই যতটা পারি বেছে খেয়ে নিই, মাছ যে খেতেই হবে, আমাদের বাড়ীর সক্কলে বিশ্বাস করে মাছ না খেলে পোস্টাই হয় না, মাথা খোলে না, তাই সপ্তাহের ছয়দিনই যে কোনওভাবে মাছ যোগাড় করে মা| আমি এখন জানি কাটাপোনার অনেক দাম, রোজ খাওয়া সম্ভব নয়| মা বলে নিজে নিজে পড়তে, অনেক পড়লে বড় হয়ে অনেক ভাল চাকরি পাব, আরো বলে কেউ বললেও, হাজার বললেও যেন কক্ষণো চাকরি ছেড়ে না দিই| আমি চুপ করে শুনি|
  • sosen | 125.241.79.121 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৭:০৯576084
  • দমুদি, পড়ছি--
  • Blank | 180.153.65.102 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৭:১৪576085
  • আরো লেখা কই?
  • | 24.97.81.87 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৯:৩০576086
  • এপ্রিল মে মাসে শকুন্তলা কালীপুজো খুব বিখ্যাত, এই কালী আগে ডাকাতে কালী নামেই পরিচিত ছিল, ১৮৩৬ এর পর যখন ইংরেজ সরকার রেললাইন বসানো শুরু করে, তার পরেও অনেকদিন পর্যন্ত গোটা কোন্নগর নবগ্রাম অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা, মাঝখান দিয়ে সরু পায়েচলা পথ, জঙ্গলে এলাকা ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন ডাকাত আর ঠগীদের ডেরা| বৈশাখ মাসের কৃষ্ণা তৃতীয়া বা তার ঠিক পরের শনিবারের রাতে এই ডাকাতে কালীকে পুজো দিয়ে বচ্ছরকার ব্যবসা শুরু করত ডাকাত ও ঠগীর দল| মস্ত অশ্বত্থ গাছের নীচে মায়ের থান সম্বচ্ছর পড়ে থাকে রক্তমাখা হাঁড়িকাঠ নিয়ে, গাছের ওপরে বাস করে দলে দলে শকুন, তাই এই থানের আরেক নাম শকুন্তলা মায়ের থান| চন্দ্রভূক অমাবস্যার রাতে কে বা কারা এসে পুজো দিয়ে যায়, ছাগবলি, মহিষবলি, কখনও কখনও বা নরবলিও দেয় মনস্কামনা পূরণের জন্য, তারপর গায়ে রেড়ীর তেল মেখে হাতে লাঠি কিম্বা কাটারি নিয়ে বেরিয়ে যায় 'কাজে'| এই একদিন শুধু ঢাকঢোল পিটিয়ে আলো জ্বালিয়ে মায়ের পুজো হয়, নিয়মমত মূর্তি বানানো হয় সূর্যাস্তের পর, দ্বিতীয় প্রহর শেষ হলে পুজো শুরু আর সূর্যোদয়ের আগেই মায়ের বিসর্জন হবে গঙ্গায়| কাছাকাছি আরো তিনটি জায়গায় একই নিয়মে পুজো হয়, তবে তারা তত জাগ্রত ঠাকুর নয় বলে কথিত| বিদেশী শাসক ঠগী ও ডাকাত দমনের জন্য জঙ্গল কেটে সাফ করে, যাকে হাতের সামনে পায় তাকেই জেলে পুরে দেয়| আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে সমৃদ্ধ জনপদ, গড়ে ওঠে শকুন্তলা কালীর মন্দির| নিয়মিত পুজো কিছু হয় না, তবে লোকে এসে খালি বেদীতে জল ঢেলে যায়, শনি মঙ্গলবারে একটু ঘটা বেশী হয়, বাকী তিনটি থানেরও একইরকম গতি| দুটি কোন্নগরের মধ্যেই, আর একটি নাকি কানাইপুর ছাড়িয়ে| বৈশাখ মাসে পুজোর দিন অগণিত লোকে ভোরবেলায় গঙ্গা স্নান করে বেদীতে জল ঢালে, ভোর চারটে থেকে জল ঢালা শুরু, লাইনের শুরুর দিকে থাকার জন্য আর বৈশাখের চড়া রোদ্দুর এড়ানোর জন্য লোকে আগেরদিন রাত বারোটা থেকে গিয়ে লাইন দেয়, আমাদের বাড়ী থেকে মাইকে শোনা যায় 'জলঢালা যাত্রীদিগের প্রতি অনুরোধ তাঁরা নিজেরা সুশৃঙ্খলভাবে জল ঢালুন ও অপর যাত্রীকে জল ঢালার সুযোগ করে দিন| গর্ভগৃহে অযথা ভীড় বাড়াবেন না|' পূণ্যার্থীদের কেন যাত্রী বলা হয় জানি না| যাঁরা দন্ডী কাটার মানত করেছিলেন এবং মনের ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে তাঁরা গঙ্গায় স্নান করে দন্ডী কেটে মন্দিরে যান, সঙ্গে কেউ একজন থাকেন জলের ঘট নিয়ে, মন্দিরে পৌঁছে সেই জল ঢালেন বেদীতে| কঠিন,প্রায় অসম্ভব কোন ইচ্ছেপূরণ ও ভক্তির তীব্রতা অনুযায়ী কেউ কেউ সেই বারোমন্দির ঘাট থেকে সোয়া কিলোমিটার রাস্তা পুরোটাই দন্ডী কেটে আসেন কেউবা রাজেশ্বরীতলা থেকে অর্ধেক পথ আর কেউ আবার মন্দিরের অল্প কিছু দূর থেকে| প্রায় বিকেল পর্যন্ত চলে এই জল ঢালা ও দন্ডী কাটা, কত দূর দূর থেকে লোক আসে ট্রেনে বাসে করে|

    বন্যার পরে এবারে শম্ভু চ্যাটার্জী স্ট্রীটের অবস্থা ভয়াবহ, মস্ত মস্ত গর্ত আর ভাঙা খোয়ায় ভর্তি| পুজোর মাসখানে আগে প্রথমে রাস্তায় খোয়া আর স্টোন চিপস ফেলা হল, বয়স্করা বললেন নতুন মিউনিসিপালিটি রাস্তায় তাপ্পি দিচ্ছে, মানুষকে খুশী করার জন্য| তারপর দেখা গেল বেশ ভাল করে রোলার চালিয়ে পিচ ঢেলে আবার রোলার চালিয়ে সুন্দর করে রাস্তা বানানো হল| সবাই একবাক্যে প্রশংসা করতে লাগল, জল ঢালা, দন্ডী কাটার বেশ সুবিধে হল| পুজোর দিন মদিরের পাশে দুটো মিউনিসিপালিটির জলের ট্যাঙ্কার সারাদিনরাত রইল| এখন আর সূর্যাস্তের পর ঠাকুর বানানো সম্ভব নয়, তাই ঠাকুর অনেক আগে থেকেই বানানো হয়, শুধু চক্ষুদান হয় সূর্যাস্তের পর, তারপর সমবায় ব্যাঙ্কের ভল্ট থেকে ঠাকুরের সোনার গয়না বের করে পরিয়ে মন্দিরে নিয়ে আসা হয়, ঠাকুরের নাকি একশোভরির ওপরে সোনার হয়না, সব ভক্তদের দেওয়া, কোনও ব্যাঙ্ক অতরাতে খোলা থাকে না, তাই সমবায় ব্যাঙ্কে রাখা হয় আর ঐ একদিন সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা সারারাত খোলা থাকে, বিসর্জনের আগে গয়না খুলে আবার ভল্টে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, সূর্যোদয়ের আগেই বিসর্জন হয়, হতেই হয়| কোনও কারণে একটুও দেরী হয়ে গেলে সবাই খুব ভয়ে থাকে, কারো না কারো প্রাণহানি নাকি হবেই হবে| এই পুজোর ব্যবস্থাপকরা কেউ ব্রাহ্মণ, কায়স্থ বা বৈদ্য নন, সকলেই ডোম, নমশুদ্র বা অন্য কোনও অন্ত্যজ শ্রেণী, যাঁদের পূর্বপুরুষরা একসময় এই অঞ্চলে থাকতেন, পুজো করতেন, উচ্চশ্রেণীর লোকে উপহাসের সুরে বলে এঁরাই ছিলেন সেইসব ঠগী ও ডাকাত| তবে খুব বেশী কিছু কেউই বলেন না, কারণ 'মা' নাকি 'খুব জাগ্রত'| ভক্তরা সারাদিন উপোস করে মাঝরাতের পর পুজো শেষ হলে চরণামৃত পান করে তবে উপোস ভঙ্গ করেন| আমাদের বাড়ীতে তো মা, বড়মামীমা, দিদা উপোস করেই, অনেকবারেই জিজি আসে, বড়মামীমার দিদি মানে মণিমা-মাসী আসে, সমস্ত বাড়ীতেই প্রায় আত্মীয়্স্বজন আসে| এইবার শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পৌরসভা থেকে বাঁশ বেঁধে দন্ডীর জন্য লেন বানিয়ে দিয়েছে, জায়গায় জায়গায় বড় বড় ফ্লাড লাইট লাগিয়ে দিয়েছে যাতে যাত্রীদের রাত্যরে অসুবিধে নাহয়, পানীয় জলের গাড়ী দিয়েছে| পাড়ার কয়েকজন বড়রা ফিসফাস করে 'হবে না, ওরা তো ছোটলোকদের মাথায় তুলবেই, ওদের ভোটেই তো এল'| কেউ কেউ আবার বলেন 'তা যাই হোক সুবিধে তো ভালই করেছে, যে জন্যই করুক, উপকার তো সবাই পাচ্ছি'| ভোররাতে জল ঢেলে এসে সারাদিন উপোস করেও মা আমাকে আর ভাইকে নিয়ে মেলায় যায়| ভাই ট্যামটেমি কেনে, ছোট্ট কাঠের গাড়ী কেনে, গাড় গোলাপী আর সবুজ রঙ করা বাক্সমত, কাঠের গন্ধের সাথে কাঁচা রঙের গন্ধ মেশামেশি| আমি কাঁচের চুড়ি কিনব, কিছুতেই সামনে সাম্নের দোকানেরগুলো পছন্দ হয় না| মা বাড়ী এসে ভাইকে রেখে আবার আমাকে নিয়ে বেরোয়| দিদারা খুব আপত্তি করে, সারাদিন উপোসের পরে, আমাকেও কিসব যেন বলে লোভ টোভ ---- কিন্তু মা ওসব কিছুতে কান না দিয়ে আমার হাত ধরে বলে 'চল দেখি কালীতলা কলোনীর ভেতরের মাঠের দোকানগুলো, উদ্বাস্তু সহায়ক সমিতির কাছের দোকানগুলো দেখে আসি'| আমিও আর কোনওদিকে কান দিয়ে নিশ্চিন্তে মা'র হাত ধরে বেরিয়ে যাই| সাদা, কালো আর জলরঙের ওপরে সোনালী কাজ করা চুড়ি কিনি, গাঢ় সবুজ রঙের পাতলা ফিনফিনে চুড়ি কিনি গোছাভরে আর কিনি লাল টুকটুকে ঢেউ খেলানো একগোছা| সবই এক ডজন করে| দুইহাতভরে চুড়ি পরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখি --- মনে হয় এই জগতে আনন্দ ধরে রাখার জায়গাই নেই --- কি যে সুন্দর এই পৃথিবীটা|
  • | 24.97.81.87 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৯:৩১576087
  • থিঙ্কুস সুষেণ :-)
  • sosen | 125.241.22.138 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ১৯:৫৭576088
  • আ: মনটা ভালো হয়ে গেল। :)
  • siki | 132.177.254.141 | ২৯ মার্চ ২০১৩ ২১:১২576089
  • তারপর?
  • | 24.97.252.114 | ৩১ মার্চ ২০১৩ ১৯:১৯576090
  • কালীতলায় সারারাত ধরে হাজারের ওপরে পাঁঠাবলি হয়, একটা দুটো মোষের বাচ্চাও| বলির মানত থাকলে আগে থেকে নাম লিখিয়ে স্লিপ নিতে হয়} নবগ্রাম, রিষড়া, ধর্মডাঙা, মোড়পুকুর থেকে যত লোক পাঁঠা নিয়ে যায়, সব আমাদের বাড়ীর সামনের রাস্তা দিয়েই যায়, পাঁঠাগুলো কি কিছু বোঝে? নাকি অত আলো লোকজন দেখে ঘাবড়ে যায়? অনেক পাঁঠাই কিছুতেই যেতে চায় না, রাস্তায় বসে পড়ে, ম্যাঁ-হ্যাঁ-হ্যাঁ করে চীৎকার করতে থাকে, ইচ্ছাপূরণের সুখে তৃপ্ত মালিক তার পাঁঠাকে টেনে হিঁচড়ে, তাও না হলে কোলে তুলে মন্দিরে গিয়ে লাইন দেয়| বলির পরে মাথা ও ধড়ের কিছু অংশ মন্দির কমিটি রেখে বাকী পাঁঠা মালিককে ফেরত দেয়| পরেরদিন মন্দিরের পিছনে সেই মাথা বিক্রী হয়, লোকে লাইন দিয়ে কেনে, মহাপ্রসাদ, তাই বাড়ী নিয়ে পেঁয়াজ রসুন ছাড়া 'নিরামিষ পাঁঠা' রেঁধে খায়| এইবারে আমাদের বাড়ীতেও জোড়া পাঁঠা এনে রাখা হয়েছে| গতবছর ছোটদির উচ্চমাধ্যমিক ছিল, ভীষণ কঠিন সেই পরীক্ষায় পাশের জন্য বড়মামীমা একটা আর দিদা একটা পাঁঠা মানত করেছিল| এইবারে সেই উদযাপন, দাদু আর বড়মামা গিয়ে কিনে আনে সর্বসুলক্ষণযুক্ত নিখুঁত দুটি পাঁঠা, একটা বাদামী আর সাদায় মেশা আর একটা কুচকুচে কালো, যেন কালো মখমলি ভেলভেটের তৈরী| ভাই আর আমি মালতীপাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়াই, ছোটমামা বলে ওরা নাকি কাঁঠালপাতা ভালবাসে, সে গাছ সেই গোয়ালের পিছন দিকে আর গোড়ায় কাঠপিঁপড়ের বাসা, চুপিচুপি হারিকেনের কেরোসিন একটু নিয়ে পায়ে মেখে সে পাতাও ছিঁড়ে এনে খাওয়াই, সে হয়ে গেল আজ প্রায় দশদিন| আমি ভেবেছিলাম এদের পুষতে আনা হয়েছে| আজ দুই হাতভরে কাঁচের চুড়ি কিনে ঝলমলে খুশীতে বাড়ী ফিরে অবাক হয়ে দেখি ওদের স্নান করানো হয়েছে, জিজ্ঞাসা করে শুনি মানতের কথা, ওদের নাকি বলি দেবার জন্যই কিনে আনা হয়েছে, ছোটমামা লোভ দেখায় আগামীকাল দুপুরে সুস্বাদু মাংসভাতের, মহাভোগের| গা গুলিয়ে ওঠে আমার, আর অন্ধকার অমাবস্যা ঢুকে যেতে থাকে আমার ভেতরে, ছেয়ে ফেলে মাথা, চোখ --- ওদের যে এখনও নাম রাখা হয় নি, ঠিক করতে পারি নি বলে ---- ওরা যে এখনও ভীষণ ছোট --- ওদের গায়ে তো বেশী মাংসই নেই, তাহলে বলি দেবে কেন? আমাকে কেউ বলে নি কেন ওদের বলি দেবে!? মনিমা-মাসী বলে 'তুই তো আচ্ছা ন্যাকা মেয়েরে! এতদিন ধরে এনে রাখা হয়েছে আর তুই নাকি জানতিস না? কোন জগতে তোর মন পড়ে থাকে শুনি?' কে যেন বলে 'একটা শুভকাজে অমন অলক্ষণের মত গোমড়া মুখ করে থেকো না, যাও ঘরে যাও'| কে বলল? মা? নাঃ মা'র তো ভীষণ মাথা ধরেছে, নির্জলা উপোস করে অত ঘোরাঘুরিতে| সন্ধ্যেবেলা স্নান করানোর জন্য, নাকি কিছু বুঝতে পেরে কে জানে, ওরা কেমন শক্তমত হয়ে গেছে, গায়ে হাত দিলেই পিঠ কাঁপিয়ে শক্ত আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে| দাদু, বড়মামা আর ছোটমামা ওদের নিয়ে চলে যায় মন্দিরে লাইন দিতে, বড়রা সবাই উপোস করে ক্লান্ত, ঘরে পাখার নীচে একটু গড়িয়ে নিতে যায়, যতক্ষণ না চরণামৃত আসে| আমি ভেতরের বারান্দায় পা ঝুলিয়ে অন্ধকার উঠোনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকি ভেতরে বাইরে অন্ধকার নিয়ে| কচি পাঁঠা, বাচ্চা মোষ বলি দেওয়া হয়, বড় ছাগল বা মোষ তো দেয় না| গল্পের বইয়ে পড়েছি যক বসাতেও আগে বাচ্চা ছেলেকে অন্ধকুপে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলত| বাচ্চাদেরই বলি দেয়, মারে, তাহলে আমাকেও কি মেরে ফেলতে পারে? মন বলে খুব পারে, ওরা মারার আগেই তুই নিজেই মর না কেন| চমকে উঠি কিরকম, শরীরের মধ্যে আনচান করে ওঠে --- সে কি ভয়, নাকি মৃত্যুর অমোঘ টান? জানি না, কিন্ত অন্যমন বলেই চলে -- দেখ না তোকে ওরা আর শাস্তি দিতে পারবে না, খুব জব্দ হবে| আমি ফিসফিস করি -- না না একবার মরে গেলে আর ফিরে আসা যায় না, কিন্তু সে আমার নিজের কানেও পৌঁছায় না, ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত বাড়তে থাকে,বাইরে একটু দূর থেকে ভেসে আসা রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া পাঁঠাদের ডাক, কালীতলা থেকে ভেসে আসা উদ্দাম ঢাক ও কাঁসির শব্দ আমার মাথায় বুনে চলে মৃত্যুর নকশা, এঁকে চলে রক্তেভেজা চিত্রকল্প, কল্পনা সানার দাদা, যিনি কালীতলায় সমস্ত বলি একা হাতে দেন, আমার মাথার ওপরে তুলে ধরেছেন ঝকঝকে খড়্গখানা কে যেন আমার পা দুটো টেনে ধরেছে, হাড়িকাঠে আটকানো গলায় চাপ লাগছে, আমি উঠে পালাতে চাইছি, পারছি না, দিল -- এইবার নামিয়ে দিল খড়্গটা| নাঃ পালাতে চাই না, মেরে ফেল আমাকে তোমরা, আমি এক্ষুণি মরে যেতে চাই ----

    কতদিন, মাস বছর পরে বুঝেছিলাম, তীব্র মৃত্যুকামনার মধ্য দিয়ে সে ছিল এক কিশোরী শরীরের প্রথম জেগে ওঠা|
  • sosen | 111.63.201.149 | ৩১ মার্চ ২০১৩ ১৯:৩০576092
  • আছি। সুন্দর ডিটেইলিং।
  • | 24.96.178.150 | ৩১ মার্চ ২০১৩ ২০:৫০576093
  • ১০)

    দেখতে দেখতে গরমের ছুটি এসে যায়, ছুটির দিনও আমরা একটু দেরী করে স্কুল ছাড়ি, যদি বাড়ী তৈরীর কোনও তোড়জোড় চোখে পড়ে| বাড়ীও তৈরীও শুরু হয় নি, অভিভাবকদের সাথে দিদিমণিদের মিটিংও হয় নি, বন্যায় ধুয়ে গেছে সেইসব কথাবার্তাই| আমাদের স্কুলে সবই চলছে আগের মতই যেমন চলছিল| আশেপাশে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে, বেশ দ্রুতই হচ্ছে| মেথরপট্টির মধ্যে একটা ঝকঝকে নতুন টিউবওয়েল বসানো হয়েছে, বেশ উঁচু করে সিমেন্ট বাঁধানো চারদিকে, একটা পৌরসভার টাইমকলও বসানো হয়েছে| আর শুরু হয়েছে যাদের বাড়ীতে পাকা বাথরুম নেই, তাদের সক্কলের বাড়ীতে পাকা বাথরুম বানিয়ে দেবার উদ্যোগ| পৌরসভা নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোন্নগর থেকে খাটা পায়খানা তুলে দেবে| যাদের বাড়ীতে পাকা বাথরুম আছে, তারা অনেকেই খুব অসন্তুষ্ট, তাদের মতে আগে সমস্ত রাস্তাঘাট ঠিক করা হোক, রাস্তায় সমস্ত লাইটপোস্টে লাইট লাগানো হোক, তারপর 'ছোটলোক'দের বাথরুম বানিয়ে দিলেই হবে| পাড়ায় মরা কুকুর বা বিড়াল ফেলবার জন্য মেথরপট্টির ছেলেদের ডাকলে ওরা আজকাল দশ কুড়িটাকা চায়, তাতেও অনেক লোক খুব রেগে যাচ্ছে, এই সরকার এসে নাকি 'ছোটলোক'দের মাথায় তুলছে| সব মামারা এলে বাড়ীতে এই নিয়ে সাংঘাতিক তর্ক বেধে যায়| যে দিদা কখনও দাদুর সামনে জোরে কথা বলে না, সেই দিদা এই 'ছোটলোকদের মাথায় তোলা' নিয়ে খুব ক্রুদ্ধ হয়ে জোরে জোরে কথা বলে, বড়মামা সায় দেয়, ছোটমামাও, সেজমামা আর দাদু বারেবারেই বলে কাউকে পয়সা না দিয়ে কোনও কাজ করানো অন্যায়, আর যার জন্যই করুক, উপকার তো সকলেরই হবে| এই খাটা পায়খানা উঠিয়ে দিলে, ভাগাড়ে আর অত গন্ধ হবে না, চাই কি ভাগাড় হয়ত অন্য কোনও ছোট জায়গায় সরিয়েও নেওয়া হতে পারে| দিদা মানে না, ঘোমটা আরেকটু টেনে দিয়ে বড়মামাকে বলে 'তাইনরে ক য্যান বেশী কথা না কয়, ঐসব আমার জানা আসে'| গরমের ছুটির প্রায় শেষদিকে ছোটমামার বিয়ে, তাই তর্ক বেশীদূরে এগোতে পারে না অন্য কোনও কাজের কথায় চাপা পড়ে যায়| আমার মনে দাদুর কথায় একটু আশা হয়, হয়ত আমরা যখন ক্লাস নাইন টেনে উঠব, ততদিনে কোন্নগরের সব বাড়ীতে সেপটিক ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা হয়ে যাবে, আর ভাগাড়টা উঠে অন্য কোথাও চলে যাবে| 'বালিকা শিক্ষা সদনের বাড়ী'ও নিশ্চয়ই ততদিনে হয়েই যাবে| স্কুলটা তখন বেশ শুভ্রাদের স্কুলের মত হয়ে যাবে, কেউ আর আমাকে বলবে না 'ও তুই ভাগাড়পাড়া স্কুলে পড়িস', বলবে না 'আরে ওখানে যারাই পড়ে তাদের সব্বার মাথায় উকুন থাকে' তোর নেই? সেকিইই?' দাদু শুনতে পেলেই বলে 'অর মাথা খুব গরম, হের লাইগ্যা উকুন আইতে পারে না, কুনোদিনও অর উকুন হয় নাই'| শুনে কেউ কেউ মুচকি হাসে, কেউবা আবার বলে 'ও চুল আরেকটু বড় হলেই হবে ঠিক'| তারপরই এইসব ভাবনা মিলিয়ে গিয়ে মনের ভিতরে কেউ চুপি চুপি বলে 'দূর তুই ওসব দেখে কি করবি? তুই তো তার আগেই মরে যাবি| সবার মাঝখান থেকে আমি একা হয়ে যাই, আরও একা, আমি চুপ করে কোনও একটা ঘরের কোণায় বসে থাকি চারপাশে ছেয়ে আসে এক রূপোলী ধুসর জগৎ , কেবলই লোভ দেখায় 'চল মরি, মরতে বড় মজা' --- আমি মৃত্যুর উপায় খুঁজতে থাকি, গোয়াল থেকে নারকেল দড়ি নিয়ে বই দেখে ফাঁস বানাবার চেষ্টা করি, কিন্তু ভেবে পাই না সকলের চোখের আড়ালে কীভাবে মরা যায়| কেউ কিচ্ছু টের পায় না, আমি সবার থেকে আস্তে আস্তে আলাদা হয়ে যেতে থাকি, নিজেকে ঢুকিয়ে নিই এক অদৃশ্য কেসের ভেতরে, আজকাল আর রাগ, দুখ কিছুই হয় না, খুশীও না, কেমন একটা বোদা ধুসর লাগে সবকিছু|
  • a x | 118.207.195.174 | ০১ এপ্রিল ২০১৩ ০০:২৯576094
  • পড়ছি, দমু। আর অবাক হয়ে যাচ্ছি এইভাবে সবকিছু এরকম মনে আছে দেখে। প্রতিটি ঘাসের স্পর্শ, প্রতিটি জন্তুর ত্বকের স্পর্শ, প্রতিটি গন্ধ, প্রতিটি হঠাৎ-পাওয়া আনন্দ, প্রতিটি রাগ, অক্ষমতা, ধূসরতা সব যেন আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে ঐ ছোট মেয়ে।
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ০১ এপ্রিল ২০১৩ ১২:১৫576095
  • দমুদি খুবই ভালো লাগছে,
  • সে | 203.108.233.65 | ০৮ এপ্রিল ২০১৩ ১৬:৪৩576096
  • বাঃ
  • mila | 212.21.158.13 | ১৯ এপ্রিল ২০১৩ ১৪:২৯576097
  • এইটা আর এগোবেনা? :(
  • ranjan roy | 24.99.228.144 | ১৯ এপ্রিল ২০১৩ ১৫:৩৪576098
  • দমু, দমু-উ-উ-উ!
    ও দুই বিনুনি করা বাচ্চা মেয়ে। জেগে ওঠ, জাগো।
    বেলা যে যায়!
  • | 24.96.179.164 | ১৯ এপ্রিল ২০১৩ ২৩:০৮576099
  • লিখব।
    এখন হাতে ব্যথা।
  • TKN | 132.163.64.136 | ২১ এপ্রিল ২০১৩ ১৫:৪৭576100
  • ভীষণ ণ ণ ণ ণ ভাল লাগল ... লাগছে...লাগবে
    এক সময় যখন নিজে এ পাড়ায় রাত জেগে আবোলতাবোল লিখতাম তখন লেখার নিচে বাকি সকলের মন্তব্য, খুনসুটি, মতামত সব খুব আগ্রহ নিয়ে নিজে পড়তাম তারপর আবার লিখতাম... সকলেই কিছু কিছু টিকাটিপ্পনী দিলে নিজের বেশ একটা ভাল লাগাও তৈরি হত বেশ সবাই পড়ছে ভেবে। দেখেছিলাম লিখতে বসে ইন্সট্যান্ট ফিডব্যাক পেলে ভালই লাগে। দম-এর ও কি তেমন লালচে খুশি লাগছে গালে? লাগছে নির্ঘাত এক ছটাক হাসি মিশিয়ে । তবে আমি নিজে যখন এই লেখাটা পড়লাম তখন মাঝের বাকি লেখাগুলো হুড়মুড়িয়ে পেরিয়ে গিয়েই পড়লাম। মন আর চোখ কিছুটা ছুটেই পেরিয়ে এল মাঝের সব পোস্ট ... বাকি সব কথোপকথন ডিঙ্গিয়ে ডিঙ্গিয়ে এগোতে এগোতে মনে হচ্ছিল সবাই এত কথা বলেছে কেন? পরের পার্ট টা কই!!
    একটানা পড়ে ফেলার তাগিদ সৃষ্টি করতে পারাটা একজন লেখকের খুব বড় অ্যাচিভমেন্ট... দমু, লেখাটা পড়তে আগ্রহী করছে খুব... কিছুটা বোধহয় লিখতেও। সত্যিই ভীষণ ভাল লাগল ...
  • kd | 47.228.104.188 | ২১ এপ্রিল ২০১৩ ১৬:৫২576101
  • দেকেচো দেকেচো তোমরা ? dএর লেখা তেকেনাকে ফিরিয়ে এনেচে ৷

    তেকেনা, এসে যখন পড়েছোই, আবার পালিয়ে যেও না যেন ৷ তোমার লেখা এখানে অনেকেই মিস করে ৷
  • dd | 132.167.1.183 | ২১ এপ্রিল ২০১৩ ১৭:২২576104
  • স্যার তেকোনা ? ব্রেশ ব্রেশ। ফিরে এসতে আজ্ঞা হোক।
  • | 24.97.30.140 | ২১ এপ্রিল ২০১৩ ১৭:৩৪576105
  • আরে! এসো, বোসো, চা নিমকি খাও। আর লিখতে আগ্রহী করছে যখন সো-ও-জ্জা লিখতে শুরু করে দাও। :-)
    ঐ দেখো দাদারা সব ডাকাডাকি করছেন।
  • | 24.97.223.44 | ২১ এপ্রিল ২০১৩ ১৮:৪৩576106
  • গরমের ছুটির শেষদিকে ছোটমামার বিয়ে হয়ে গেল| কত জায়গা থেকে কতসব আত্মীয়স্বজনরা এল, বরযাত্রী যাওয়ার জন্য আমার একটা দারুণ সুন্দর সিল্কের জামা হল, সেটা আবার চমৎকার ফিটিংসের বানিয়েও দিলেন নবগ্রামের টেলার মাসিমণি| এঁর কাছেই আমাদের ফ্রক, মা'দের ব্লাউজ ইত্যাদি বানানো হত| ইনি মাঝেমধ্যে খুব অদ্ভুত ডিজাইনের জামা বানাতেন| এইবছরই ক্লাস শুরুর আগে মা আমার জন্য মেরুণ রঙের স্কার্ট আর সাদা ব্লাউজ বানাতে দিল, স্কার্টে খুব কম প্লিট দিয়ে কেমন একটা বস্তামত বানিয়ে দিলেন আর ব্লাউজটা আরও খারাপ, মা বলেছিল আমি বড় হচ্ছি কিনা, তাই একটু ঢিলেঢালা বানাতে, তা উনি ব্লাউজটার দ্বিতীয় বোতামের নীচে থেকে আস্তে করে চওড়াটা বাড়িয়ে গেছেন, ফলে কোমরের কাছে গিয়ে সে ব্লাউজ পুরো শায়ার মত ছড়ানো| তাকে স্কার্টে গুঁজেও পরা যায় না, আবার না গুঁজলে ফৎ ফৎ করে উড়তে থাকে| এদিকে এই সেটটা বানানোই হয়েছে সেভেন-এইট দুই বছর চলার জন্য, নাইন থেকে তো শাড়ী| আবার আরেক সেট বানাতে তো কাপড়ের খরচ, মজুরীর খরচ, মা এত বিরক্ত হয়ে বলল 'একটু বেঢপ হয়েছে তো কী হয়েছে? স্কুলে কি ফ্যাশান করতে যাও?' যে আমি আর কিছু বলতে পারলাম না, ঐ জামাই পরে যাই, প্রথমদিকে সবাই একটু মুচকি মুচকি হাসত, এখন আর কেউ কিছু বলে না| ঐজন্য বরযাত্রী যাবার জামাটা নিয়ে খুব ভয় ছিল, তা সেটা উনি খুব সুন্দর করেই বানিয়ে দিলেন| নবগ্রাম মিষ্টিমহল ছাড়িয়ে এগোলে রাস্তাটা দুইভাগ হয়ে যায়, বাঁদিকে গেলে পোস্টাপিস, আর একটু এগিয়ে মস্ত খাটাল, তারপর সেবক সঙ্ঘ, মহাদেশ পরিষদ ইত্যাদি; আর বাঁদিকে না বেঁকে অল্প ডাইনে হেলে সোজা এগিয়ে গেলে এই টেলারিং শপটা আসত, রাস্তার বাঁদিকে একটা পুকুর, আর্ধেকটা শ্যাওলা আর জলঝাঁঝিতে ঢাকা, একদিকে জলে শ্যাওলা নেই, সেদিকের মাটির ঘাটে দুই একজন বসে বাসন মাজে, গা ধোয়, জল থেকে একরকম আঁশটেমত গন্ধ আসে আর আসে মশা| সে প্রায় টুনটুনি পাখির সাইজেরও মশা আসে, নবগ্রামের মশা আর লোডশেডিং দুইই খুব বিখ্যাত তখন| দোকানে টেলার-মাসিমণির দুই মেয়ে বসে বসে বোতাম লাগাত, হেম সেলাই করত ফ্রকের নীচে, উনি মেসিন চালাতেন, কেমন বির্ব্ণ চেহারা যেন রং ফুরিয়ে যাওয়া রঙপেন্সিলে আঁকা, মুখে কখনও হাসি দেখি নি, মাঝে মাঝে অনেকদিন করে দোকান বন্ধ থাকত, একটু দূরের ছোট্ট পানের দোকানদার বলত অসুস্থ| আস্তে আস্তে রেডিমেড জামা পরা বাড়ছিল, বানানো কমছিল| ক্লাস নাইনে উঠে শুনলাম ওঁকে মানকুন্ডুতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে - নাকি মাথার গোলমাল| সেদিন ঐ বেঢপ জামাটার জন্য যত রাগ করেছি, তার কথা ভেবে লজ্জা করেছিল| এই যে আমি কোনও সেলাইই করতে পারি না, আমার কি উচিৎ হয়েছিল মনে মনে অত রাগ করা| দোকানটা আস্তে আস্তে পুরানো হয়ে হয়ে ভাঙা দরজা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে উঠে গেল, আমার বেঢপ জামাটার জন্য দিয়ে গেল এককুশি মায়া|
  • nina | 79.141.168.137 | ২১ এপ্রিল ২০১৩ ২০:৩৫576107
  • তে--কো--না----দাদারা শুধু নয় দিদিরাও যোগ দিল----ফিরে আয় কলমে---বড্ড মিস করি--

    আর দমু--রাগের কি আর উচিৎ অনুচিত হয়--রাগ যখন হয় তখন হয়----আপাতত আমার বেশ আনন্দ-লেখাটায় আবার হাত পড়ল--
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২২ এপ্রিল ২০১৩ ১২:১৬576108
  • দমুদি সাথে আছি, তেকোনা দি আপনার লেখা খুব মিস করি, আবার লিখলে খুব ভালো লাগত
  • hu | 188.91.253.11 | ২২ এপ্রিল ২০১৩ ১২:৩৫576109
  • বড় মায়া। আমার অমন একটা বেঢপ সোয়েটার ছিল। সোয়েটার তো আর বছর বছর কেনা হবে না। তাই ক্লাস ফাইভেই বড় দেখে কিনে রাখা হয়েছিল যাতে বেশ ক'বছর পরা যায়। টেনে স্কুল ছাড়ার সময়েও সেটা বেশ বড়ই ছিল। একেই বড়, তার ওপর বেঢপ সোয়েটারের লজ্জায় সোয়েটার পরিহিতাও বেশ কুঁকড়ে থাকত মনে হয়। আজ ভাবতে বসে দেখি লজ্জা-দুঃখ উধাও। পড়ে আছে শুধু মায়া। হয়তো এমনই হয়। হয়তো সে এখনও আছে বক্স খাটের গর্ভে পুরোনো জামা-কাপড়ের সাথে!
  • siki | 132.177.25.86 | ২২ এপ্রিল ২০১৩ ১৩:০৭576110
  • তেকেনা স্যার, আপনি যেখানেই থাকুন ইত্যাদি ইত্যাদি।

    দ, আরও বেশি চাই। মন দিয়ে পড়ছি।
  • | 24.96.173.137 | ০৫ মে ২০১৩ ১৯:৪৯576111
  • ছোটমামার বিয়ের কয়েকদিন আগে যখন বাইরের রঙকরা শেষ হয়ে ভেতরের ঘরে চুনকাম হচ্ছে, আমাদের ঘরটাতেও হচ্ছে, দুপুরবেলায় আমাদের ঘর থেকে বিরাট জোরে দুমম দড়াম করে আওয়াজ হল; আমরা সব দিদার ঘরের সব জানলা দরজা বন্ধ করে মেঝেয় শুয়ে ছিলাম, হুড়মুড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি দাদু পড়ে গেছে| খাটের ছোবড়ার গদির ওপরে চেয়ার রেখে পাখার ব্লেড থেকে চুন মুছতে গিয়েছিল, চেয়ার পিছলে মাটিতে চিৎ হয়ে পড়েছে| খোকা মিস্তিরি বারবার নাকি মানা করে গেছিল অমনিভাবে না উঠতে, হাত পা ধুয়ে এসে ঘরাঞ্চির উপরে উঠে পরিস্কার করে দেবে| সবাই খুব ভয় পেয়ে যায়, দাদু কিন্তু নিজে নিজেই উঠে বসে, মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে| বরফ দেওয়া হয় মাথায়, পেছনটা ফুলে আলুমত হয়ে যায়| দিদা খুব বকে দাদুকে, বড়মামীমা রাগ করে বলে 'মেয়ে! মেয়ে! মেয়ের কষ্ট হবে বলে অত্কান্ড করে গিয়ে উঠসেন উপরে বয়সটা কি কম হইসে? আপনার বড়ছেলে ঘর যখন চুইনকাম করাইতাসে, পরিস্কারও লোক দিয়া করাইয়াই দিত! এখন এই যে ঘটনাটা ঘটাইলেন, তারেই তো অফিস থেকে আইসা ছুটতে লাগব!' দাদু মুখতুলে বড়মামীমার দিকে তাকায় --- একটু কি অবাক! বড়মামীমা তো সামনাসামনি দাদুকে এরকমভাবে বলে না কখনও কিছু, ক্লান্তভঙ্গীতে দেওয়াল ধরে উঠে দাঁড়ায়| খোকামিস্তিরি সাবধানে একহাত দিয়ে সাপটে ধরে দাদুর ঘরে খাটে এনে বসিয়ে দেয়, কে যেন বালিশ ঠিক করে দেয়, দাদু চুপ করে শুয়ে পড়ে| বাইরের গেটের আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখি মা কোনফাঁকে যেন শাড়ি পাল্টে তৈরী হয়ে কোথায় বেরিয়ে যাচ্ছে --- অসম্ভব ফর্সা মা'য়ের কান আর গাল টকটকে লাল হয়ে আছে| বড়মামীমা তাড়াতাড়ি ডেকে বলে 'এই দিদি কই যাস এই দুফর রোদ্দুরে? তর দাদা আইসা যাইবখনে', মা কান দেয় না, দ্রুত হেঁটে চলে যায়, কিছুক্ষণ বাদে রিকশা করে কানাই-ডাক্তারকে নিয়ে ফেরৎ আসে| এমনিতে দাদুর কিছু হলে ডঃ পি কে রায়কেই দেখান হয়, আমাদের কিছু হলেও তাই| কিন্তু উনি তো কারো বাড়ীতে গিয়ে দেখেন না, তাই কানাইবাবু| উনি প্রেশার মেপে, দেখেটেখে বিশ্রাম আর ঘুমের উপদেশ দিয়ে হাই প্রেশারের ওষুধ লিখে দিয়ে চলে যান|

    তার পরের পরেরদিন সকাল থেকে উঠোনে, সামনে ম্যারাপবাঁধা শুরু হয়ে যায়, মন্টুমামাদাদু, মামীদিদা, পর্ণা পার্থকে নিয়ে রাঁচি থেকে চলে আসে, জামশেদপুর থেকে বড়মামাদাদু, মামীদিদা আর শীলুমাসি, ফরিদাবাদ থেকে সেজমামা, সেজমামীমা, খুকুকে নিয়ে, রাঁচিদিদা, চিনুমামাকে নিয়ে এসে যায়; বাড়ীর সামনে মস্ত উঁচু গেট হয় সাদা আর লাল কাপড় দিয়ে, ছবিমাসি নাকি সাদা আর হলদে রঙের গেট বানাতে বলেছিল, তাই নিয়ে সবাই খুব হাসাহাসি করে --- বিয়ের প্যান্ডেল আবার লাল কাপড় ছাড়া হয় নাকি!! সকালগুলো আসে সোনালী রঙের জুতো পরে আর দিনগুলো দৌড়ে দৌড়ে চলে যায়| বিয়ের আগেরদিন ছোটমামাও আসে রাঁচি থেকে, হিন্দমোটরের পুরানো অফিসে গিয়ে নেমন্তন্ন করে আসে, পাড়ার বন্ধুদের বলে, দাদু বাড়ীর মধ্যেই ঘুরেফিরে সব তদারক করে বেড়ায়| আগেই দাদু আর দিদা গিয়ে বেশীরভাগ নেমন্তন্ন করে এসেছে, যে কটা বাকী ছিল বড়মামা দিদাকে নিয়ে গিয়ে করে আসে, দাদুকে বেরোতে দেওয়া হয় না| আমরা বাঁশ বেয়ে বেয়ে খেলে বেড়াই, বাড়ীতে এত লোক রাত্রে শোবার জায়গা কম পড়ে যায়, শীলুমাসি আমাদের ঘরে এসে শোয় অনেক রাত্রি অবধি গল্প করে মা আর শীলুমাসি| খুব কালো বলে নাকি শীলুমাসিকে কোনও পাত্রপক্ষ পছন্দ করছে না, অনেক বয়স হয়ে গেছে তাই| মা বলে 'সে কপালে যখন আছে, তখনই হবে বিয়ে, আগে চেষ্টা করলেই কি আর হবে! বরং তুই পাড়ানো টড়ানো কিছু একটা যোগাড় করে নে --- ঐটা কক্ষণো ছাড়িস না'| সারাবাড়ী জুড়ে ছাদ থেকে লাল হলদে টুনিলাইটের চেন ঝুলিয়ে সাজানো হয়েছে, তারই আলোয় ঘরে কেমন আলো আলো ভাব, সারাদিনের হইচই আর হুড়োহুড়িতে, নিত্য নতুন উত্তেজনায় ক্লান্ত আমাকে শীলুমাসির সমস্যা বিন্দুমাত্রও স্পর্শ করে না, একটা ফুর্তি ফুর্তি মন নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি|
  • | 24.97.214.234 | ০৫ মে ২০১৩ ২২:৩০576112
  • বিয়ের দিন ভোর চারটেয় উঠে 'নান্নিমুখ' করতে গিয়ে দাদু আবার মাথা ঘুরে পড়ে গেল, দাদুকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে মামাদাদু, মেসোদাদুরা বড়মামাকে দিয়ে নান্দীমুখ করিয়ে নিল আর তক্ষুণি স্থির হয়ে গেল, দাদু নয় বরকর্তা হিসাবে বড়মামা যাবে বিকেলে, উপোস টুপোস যা করার সেও দাদু নয় বড়মামাই করবে| সবচেয়ে ছোটছেলের বিয়ে, যা নাকি দাদুর 'শেষ দায়িত্ব' ছিল, নিঃশব্দে সে দায়িত্বের হস্তান্তর হয়ে যায়| দাদু চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে, কাউকে কিচ্ছু বলে না, ঘুমায়ও না, ডাকলে সাড়া দেয়, খাবার দিলে খেয়ে নেয়, আর চুপটি করে শুয়ে থাকে| বাড়ীময় হইহই চলতে থাকে --- চলতেই থাকে , শুধু দাদুর ঘরে একটু কম| তাও ওটাই বাইরের বারান্দা থেকে ভেতরে যাবার মূল ঘর, বাগানের দিকে প্যান্ডেল করে আটকে রেখেছে, তাই কিছু হইচই এখানেও হচ্ছে বৈকী| ওদিকে উঠোনের একদম পিছনদিকে ছোট কুলগাছটা কেটে মস্ত গর্ত খুঁড়ে উনুন বানানো হয়েছে, হরিঠাকুর তার দুজন স্যাঙাত নিয়ে সেখানে রান্না শুরু করেছে -- ঠিক বিয়েবাড়ী বিয়েবাড়ী রান্নার গন্ধ| আসল ভোজ তো পরশুদিন, কিন্তু আজ আর কাল অতলোকের রান্না করার জন্য ওদের আজ থেকেই আসতে বলা হয়েছে| এদিকে উঠোনে কুয়োত্লার সামনে ছোটমামাকে ঘিরে 'গায়ে হলুদ'এর প্রচন্ড হুল্লোড়, হলুদ মাখানো -- সব মামীরা, মামীদিদারা ওখানে| মা আর রাঁচিদিদা আরো দুই একজন নিরামিষ রান্নাঘরের দায়িত্বে| বুড়ীর মা-মাসি আজ বুড়ীকে নিয়ে এসেছে, বুড়ীর মাথায় দুদিকে উজ্জ্বল কমলা ফিতে দিয়ে ফুল করা কলাবিনুনি, পরনে টিয়ারঙের জর্জেট শাড়ি আর কমলা ব্লাউজ, খুশীতে মুখটা চকচক করছে| এমনিতে বুড়ী ফ্রকই পড়ে কিন্তু আজ ওর মা ওকে জোর করে শাড়ি পরিয়েছে, এই কদিনই নাকি ওকে শাড়িই পরতে হবে| কিন্তু শাড়ি পরে যে বুড়ীটাকে কি সুন্দর লাগছে কি বলব| মস্তবড় গামলায় সারারাতধরে রিঠা ভেজানো ছিল, আজ সকালে বুড়ীর মা-মাসি রিঠাগুলোকে কচলে কচলে জলের সাথে মিশিয়েছে, সাথে অ্যাত্তব্ড় একবাটি আমলকীবাটা| সেই গামলা থেকে প্রত্যেকের জন্য কয়েক মগ করে জল বালতিতে তুলে দেয় মাসি মাথা ঘষার জন্য| যার যত লম্বা চুল তাকে তত বেশী জল আর খানিকটা করে ঐ ঋথা আমলকীবাটার কাথ দেয়| তাই দিয়ে মাথা ঘষে চুল ফুলিয়ে বিকেলবেলা সেই স্লিকের জামা পরে গলায় একটা লকেটওলা মালা পরে, কানে, হাতে সব পরেটরে সেজেগুজে বাসে চড়ে বরযাত্রী যাই| এই লকেটটা বাবা পছন্দ করে আমার জন্য এঁকে দিয়ে বানিয়ে দিয়েছিল, সবাই খুব ভাল বলে ওটা দেখে| দাদু তেমনিব হাবেই শুয়ে থাকে ---- শুধু বর যাত্রা করার আগে সবাই ডাকলে উঠে ছোটমামার্মাথায় ধানদূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করে আবার শুয়ে পড়ে --- আমরা রওনা দিই, দাদু শুয়ে থাকে --- আর দিদা, রাঁচিদিদা থাকে --- আর থেকে যায় মা| মা'কে নাকি যেতে নেই --- আমি আর একটা নতুন শব্দ শিখি 'এয়োতি'|
  • sosen | 125.242.207.75 | ০৫ মে ২০১৩ ২৩:২৪576113
  • পড়ছি পড়ছি
  • Lama | 126.202.204.61 | ০৬ মে ২০১৩ ০০:২৩576115
  • কি যেন বলতে চাই। বলতে আর পারি না
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন