এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভাগাড়পাড়া স্কুল থেকে বলছি


    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০১২ | ৭৯৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • siki | 132.177.251.70 | ০৬ মে ২০১৩ ০৭:১০576116
  • ধুত্তেরি।

    ধুত্‌!
  • r2h | 78.224.201.112 | ০৬ মে ২০১৩ ০৭:২৫576117
  • | 24.97.103.84 | ০৬ মে ২০১৩ ০৮:৪৮576118
  • এইরে! সিকি খুব বিরক্ত হয়েছে ....
    কেন বিরক্তি সেটা একটু বলা যাবে সিকি?
  • siki | 132.177.251.70 | ০৬ মে ২০১৩ ০৯:১৫576119
  • বিরক্ত হয়েছি নিজের ওপর। অনেক কিছু মনের মধ্যে ভিড় করে আসচে, কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

    তুমি লেখা থামিও না।
  • সে | 203.108.233.65 | ০৬ মে ২০১৩ ১০:৪৩576120
  • সুন্দর এগোচ্ছে।
  • ranjan roy | 24.99.218.207 | ০৬ মে ২০১৩ ১০:৫৪576121
  • আমি মনে মনে কোন্নগরের নিঝুম বাড়িতে আছি, এদিক ওদিক উঁকি দিচ্ছি। রাঁচিদিদা ও মা কে দেখছি। আর দিদা?

    অপেক্ষায় আছি।
  • sch | 132.160.114.140 | ০৬ মে ২০১৩ ১১:০৪576122
  • এই লেখাটা যদি পরের বুকফেয়ারে গুরু থেকে চটি হিসেবে বের না হয় ক্রিমিন্যাল অফেন্স হবে।
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ০৬ মে ২০১৩ ১৩:৪৬576123
  • দমুদি দারুন লাগছে
  • nina | 79.141.168.137 | ০৭ মে ২০১৩ ০৮:৪৫576124
  • দ --মানেই দুরন্ত !
  • jhumjhumi | 127.194.233.41 | ০৭ মে ২০১৩ ১৮:৪৬576126
  • ভালো লাগছে। লেখা চলুক।
  • a x | 138.249.1.206 | ০৮ মে ২০১৩ ২২:৪৩576127
  • তারপর?
  • Paramita | 132.179.108.191 | ০৯ মে ২০১৩ ০৮:৪৪576128
  • তারপর?
  • | 24.97.185.184 | ১১ মে ২০১৩ ১২:৫০576129
  • আস্তে আস্তে 'নতুন বৌ' ছোটমামীমা পুরানো হতে থাকে, ছোটমামা একা একা রাঁচি চলে যায়, সেজমামারা, অন্য সব আত্মীয়রা ফেরত চলে যায় নিজের নিজের জায়গায়, প্যান্ডেল খুলে বাঁশের খাঁচা একমাস ধরে ফেলে রাখে ডেকোরেটার, তারপর সেটাও খুলে নিয়ে যায়্, আমাদের স্কুল খুলে যায়| স্কুলের মাঠ বাড়ী সব একইরকম আছে, কোনও নতুন বাড়ী তৈরী শুরু হয় নি| আমরা সেই মাটির মেঝে, ছিটেবেড়ার দেওয়াল আর টালির চালওয়ালা ঘরেই ক্লাস করি, রেখাদিদিমণি ক্লাসে এসে '১৭ পাতা থেকে ২১ পাতা পর্যন্ত মুখস্থ করে আসবে' বলে চটি খুলে পা তুলে চেয়ারে বাবু হয়ে বসে কাদের যেন খাতা দেখতে থাকেন, নয়ত বাইরে মাঠের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকেন -- কোনও কোনওদিন ইচ্ছে হলে ঐ পড়া দেওয়া পাতাগুলো রিডিং পড়েন ---- ওঁর গলার আওয়াজ আস্তে আস্তে নামতে নামতে শেষে আর কিছুই বোঝা যায় না, শুধু ফার্স্ট বেঞ্চ থেকে একটা অস্পষ্ট বিজবিজ ধ্বনি শোনা যায়| সময় কাটাতে আমরা চন্ডীচরণ দাশের মস্ত ম্যাপবই খুলে ম্যাপ পয়েন্টিং খেলতে শুরু করি --- এই করে করে সেভেন এইট দুইবছরে ম্যাপ পয়েন্টিঙে আমরা সক্কলে দারুণ চৌকশ হয়ে উঠি, কিন্তু ভূগোল সকলের কাছেই একটা চরম বিভীষিকা হয়ে থেকে যায় --- ইতিহাসও তথৈবচ, ইতিহাস বই দেখলেই সরিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে| অথচ ইতিহাসটা সুধাদি মোটামুটি বলেই দিতেন ক্লাসে, সুধাদির গলার আওয়াজ বেশ মিষ্টি, টানা গড়গড় করে যখন রিডিং পড়ে দেন, দিব্বি ভাল লাগে শুনতে| কিন্তু বাড়ী এসে আর কিছুতেই পড়তে ইচ্ছে করে না| মা পড়ায় ইংরিজি আর সংস্কৃত| সংস্কৃত ভাষাটা কি সুন্দর! জোরে জোরে পড়লে টুংটাং করে কানে বাজে -- খুশী হয়ে ছোটদির মাধ্যমিকের ঐচ্ছিক সংস্কৃতের বই থেকে অনেক শ্লোক মুখস্থ করে ফেলি আমি| আমাদের একজন নতুন দিদিমণি এসেছেন জীবন বিজ্ঞান পড়াতে, নাম শিখাদিদিমণি, দেখতে অনেকটা হাইস্কুলের মণীষাদিদিমণির মত, ঐরকমই রাগী, খুব বকাবকি করেন, আমরা তাই নিজেদের মধ্যে ওঁকে 'ছোটমণীষাদি' বলে ডাকি| অঞ্জলীদি অঙ্ক আর ফিজিক্যাল সায়েন্স পড়ান, দিব্বি সুন্দর বুঝিয়ে দেন, ভাল লাগে পড়তে অঙ্ক করতে| কিন্তু অঙ্কে কোথায় যেন একটা ফাঁক থেকে যায়, বছরের শুরুর দিকে অনেকদিন ছুটিতে ছিলেন অঞ্জলীদি, এখন তাড়াতাড়ি করে সিলেবাস শেষ করার চেষ্টা করেন, এদিকে বাড়ীতেও দাদু আর অঙ্ক দেখিয়ে দিতে পারে না, বীজগণিতের বইয়ের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে 'আমি জানি না রে এই অঙ্কগুলা, মনে পড়তাসে না ----' তারপর কেমন ফ্যালফ্যালে চোখে আস্তে করে উঠে বারান্দায় গিয়ে বসে থাকে| পাটীগণিত দাদু শিখিয়ে দিয়েছিল, বীজগণিত আর জ্যামিতি আমার আর সারা জীবনেও ঠিক করে শেখা হয় না|

    ছোটমামার বিয়ের সময় এসে সেজমামা বার বার করে মা'কে বলে গেছে পুজোর ছুটি পড়লে আমাদের নিয়ে ফরিদাবাদ যেতে, সেখান থেকে দিল্লী আগ্রা, হরিদ্বার, দেরাদুন মুসৌরি এইসব বেড়ানো হবে| ছোটমামীমা ওর বাবা মায়ের কাছে দিল্লীতে চলে যাবে মহালয়ার দিনেই, ছোটমামা রাঁচি থেকে ছুটি নিয়ে আসবে, আমরাও গেলে সবাই মিলে বেড়ানো হবে| বর্ষাকালের মাঝামাঝি থেকে সেজমামা বারবার টিকিট কাটার তাগাদা দিয়ে চিঠি লেখে -- মা একটা পত্রলিপি খাতায় বারবার কিসব হিসেব করে, তারপর একদিন খুব সক্কালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে নিয়ে মা ট্রেনে করে হাওড়া গিয়ে লঞ্চে করে গঙ্গা পেরিয়ে ফেয়ারলি প্লেস ঘাটে নেমে খানিক হেঁটে চলে যায় কয়লাঘাটা রেলওয়ে রিজার্ভেশান সেন্টার, লক্ষ্মীপুজোর পরের দিনের জন্য ডিলাক্স এক্সপ্রেসে টিকিট কাটা হয়, আমার আর মায়ের ফুল, ভায়ের হাফ টিকিট| ছোটমামীমা নাকি এইসব জায়গায় অনেকবার গেছে, কলকাতা থেকে যত আত্মীয়স্বজন ওদের দিল্লীর বাড়ীতে যেত সব্বাই নাকি এই জায়গাগুলোতেই যেত| ছোটমামীমা আমাকে মানালির গল্প বলে, কাশ্মীরের গল্প বলে, পহেলগাঁওয়ের গল্প বলে --- সেসব নাকি আরো অনেক সুন্দর জায়গা| মা'কে বলতে মা'ও বলে হ্যাঁ মানালি খুব সুন্দর, রোটাংপাসও নাকি অসম্ভব সুন্দর, বাবা আর মা গেছিল সেখানে| আমি বলি তাহলে তো আমরা সেখানে গেলেই পারি, মা প্রথমে কিচ্ছু বলে না, অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে| আরেকটু জোর দিয়ে বলি 'তাহলে মানালিই চল মা, আমরা তো দেখি নি ঐ জায়গাটা'| মা খুব আস্তে আস্তে বলে 'তোরা বড় হয়ে চাকরি করে নিজেরা যাস ----- এই যে যাচ্ছি, কতগুলো খরচ হয়ে যাবে --- তোর বাবার অফিস থেকে পাওয়া টাকা জমানো ছিল তাই ভেঙে যাচ্ছি --- কদিন পরে যদি চাকরিটা না থাকে তাহলে তোদের পড়াশোনা কী করে হবে বলত? সেজদা বলেছিল সমস্ত টাকাটা দেবে --- কিন্তু তাই কি হয় নাকি? আমার কি সাহস --- মা সমানে বকতাসে --- দাদাও বারণ করসে -- অসন্তুষ্ট ---- তোদের বাবা আজ থাকলে তো তোদের প্রত্যেক ছুটিতে বেড়াতে নিয়ে যাইত --- কত্ত প্ল্যান প্রোগ্রাম ছিল তার'| মা এমনিতে দাদু, দিদা বড়মামা, মেজমামা, সেজমামার সাথে বাঙালভাষায় আর ছোটমামা আর আমাদের সাথে চলতি বাংলায় কথা বলে| কিন্তু এইসময় মা'র ভাষা মিলেমিশে যাচ্ছিল --- বাবা --- বাবা--- কত কতদিন বাদে বাবার কথা কেউ বলল --- কেউ না কেউ না মা বলল ---- বাবা নাকি খুব আয়েশ করে বেড়াতে ভালবাসত, কোথাও গেলে অন্তত দুইরাত থাকবেই, দৌড়ঝাঁপ করে সবকিছু একসাথে দেখে নেওয়া একেবারেই পছন্দ করত না| অনেকদিন বাদে আবার সেই ধুসর খোলসটা এসে আমাকে ঢেকে ফেলতে থাকে --- শরতের আকাশ মুছে ঘোলাটে মেঘ ছেয়ে যায় চারিদিকে --- বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ মুছে যেতে থাকে আস্তে ধীরে|
  • san | 24.98.44.132 | ১১ মে ২০১৩ ১৪:৪২576130
  • পড়তেই যদি এত কষ্ট হয় , তো লিখতে কী হয় ? ঃ-(
  • siki | 132.177.55.178 | ১১ মে ২০১৩ ১৫:৩২576131
  • :-(
  • bb | 127.195.191.171 | ১১ মে ২০১৩ ১৫:৪৬576132
  • সত্যি দ কে একটা বড় সেলাম। কত অনায়াসে এই কষ্টগুলি লিখে যাচ্ছেন।
  • | 24.97.234.5 | ১১ মে ২০১৩ ১৭:৪১576133
  • পুজো কেটে গিয়ে লক্ষ্মীপুজো এসে যায়| সেই বাবা ট্যুরে নিয়ে যেত কিম্বা আমরা কটক থেকে কলকাতা আসবার সময় যে স্যুটকেস নিয়ে আসতাম সেরকম একটা মাঝারি বড় স্যুটকেসে আমাদের জামাকাপড় আরো কিসব যেন ভরা হয়, ট্রাঙ্কের ওপর থেকে লেপ কম্বলের গাদা সরিয়ে হোল্ডল বের করা হয়, ট্রেনে বিছানা লাগবে সেসব নেবার জন্য| হোল্ডলে চাদর বালিশ ভরার পর বাঁধতে যেতেই চামড়ার স্ট্র্যাপ ফটাশ করে ছিঁড়ে যায়| মা আবার বেরিয়ে গিয়ে চলচ্চিত্রমের কাছের ব্যাগের দোকান থেকে সারিয়ে আনে| লক্ষ্মীপুজোর প্রসাদে খিচুড়ি পায়েস কম করে বানিয়ে লুচি আর আলুফুলকপিভাজা বেশী করে বানায় মা, ট্রেনে খাবার জন্য ঐই সঙ্গে নেওয়া হবে| আমার আর ভাইয়ের সবকটা ভাল জামা ভরে নেওয়া হয়, আর পুজো হয়ে যাওয়ার পর প্রসাদ খাওয়ার সময় থেকে ভাই বমি করতে শুরু করে| আগে যতদিন ছোটমামা এখানে ছিল ছোটমামার পাড়ার সমস্ত বন্ধুরা দিদাদের বাড়ী ভোগ খেতে আসত| দোতলায়্ ভেতরের বারান্দায় ঠাকুরঘরের সামনে সবাই লাইন করে বসত, দিদা আর বড়মামীমা পরিবেশন করত খিচুড়ি, আলুভাজা, ফুলকপির তরকারি, টমেটো খেজুরের চাটনি, কিশমিশ দেওয়া গোবিন্দভোগ চালের ঘন পায়েস আর বাড়ীর দুধের সরতোলা ঘিয়েভাজা ধবধবে সাদা লুচি| অরুণদা, বিশেদা, শঙ্করদারা হইহই করে খেতো| ছোটমামার বন্ধু বলে আমাকে দিদা বলত ওদের মামা বলে ডাকতে, কিন্তু অরুণমামা বললেই কেমন হাসি পেয়ে যায়| তাছাড়া শুভ্রা, শঙ্করী, মালুদের দাদাদের তো দাদাই বলব| দিদাটা এমন বোকা ----| কিন্তু গতবছর ছোটমামা চাকরি নিয়ে রাঁচি চলে যাওয়ার পর থেকেই লক্ষ্মীপুজোয় আর কেউ প্রসাদ খেতে আসে না, বড়মামীমা মা'কে দিয়ে যায়, মা'ও গিয়ে ওদের ঘরে দিয়ে আসে| আর বুড়ীর মা-মাসির জন্য রেখে দেওয়া হয় দুইঘরেই, একটা খায় আর আরেকটা ধরে বাড়ী নিয়ে যায় মাসি, সঙ্গে বেঁচে যাওয়া ফলগুলোও দিয়ে দেওয়া হয়| আমরা কেউই প্রায় ফল খেতে চাই না তো, কদমা আর রঙীন মঠগুলোও দিয়ে দেয় দিদা| বেঁচে যাওয়া মিষ্টিগুলো দেওয়া হয় না কিন্তু| ওগুলো রেখে রেখে অনেকদিন ধরে খাওয়া হবে| আমাদের ঘরের পুজোয় অত মঠ, কদমা থাকে না, দুই টাকার গুজিয়া আর পাঁচ টাকার সন্দেশ, খিচুড়ি, আলুভাজা ফুলকপিভাজা কিম্বা শুকনো শুকনো তরকারি, টমেটোর চাটনি, পায়েস আর লুচি| আর থাকে বাতাসা দিয়ে চালকলামাখা, নারকেলের জল আর চিড়া| এই চালকলামাখা খেয়েই ভাইয়ের বমি শুরু হয়| সারারাতে প্রায় সাতবার বমি করে, ভোর সাড়ে পাঁচটায় আলো ফুটতেই মা ওকে কোলে নিয়ে ড পি কে রায়ের বাড়ী চলে যায়, সেই আমাদের স্কুলের কাছে বাড়ী ওঁর| উনি দেখেশুনে ওষুধ দেন আর বলেন দুই ঘন্টায় যদি আরো বমি করে তাহলে হাসপাতালে নিয়ে দেখানই ভাল| ডিলাক্স এক্সপ্রেস ধরার জন্য আমাদের ন'টার সময় বেরোবার কথা বাড়ী থেকে| স্নান করে তৈরী হব কিনা বুঝতে পারি না, মা কিন্তু তাড়া লাগায়, পাঁউরুটি টোস্ট খেয়ে চানে যেতে বলে| দিদা এসে বারবার করে না করে বেরোতে, মা শুধু বলে দেখাই যাক না, রাত দেড়টার পর থেকে তো আর বমি হয় নি| দিদা, বড়মামা, বড়মামীমা সবাই একটু একটু রাগ করে, দাদুও একবার বলে ভেবে দেখতে, মা বলে হ্যাঁ ভাবতাসি তো, কিন্তু তৈরী হওন লাগে অক্ষণই, না যাইলে কাপড় জামা বদলাইতে আর কতক্ষণ!চান করতে গিয়ে আমি শুনতে পাই বড়মামীমা বলছে 'কি জেদ বাবা! মনে করেছে যখন আর কারো কথা শুনবে না, আরে ছেলেটা অত অসুস্থ, ট্রেনের মধ্যে যদি বাড়াবাড়ি হয়!'
  • | 24.97.234.5 | ১১ মে ২০১৩ ১৮:৪২576134
  • নিউদিল্লী স্টেশানে সেজমামা আর ছোটমামা আমাদের নিতে এসেছিল| সেখান থেকে আবার লোকাল ট্রেনে চেপে আমরা ফরিদাবাদ গেলাম, কেমন ছোট ছোট একতলা বা দোতলা বাড়ী, রাস্তার একধার থেকে একটা বাড়ী শুরু হলে টানা চলতে থাকে, আটটা বা দশটা বাড়ী পরে গিয়ে শেষ হয় আরেকটা রাস্তার মোড়ে, বাড়ীগুলোর মাঝে কোনও ফাঁকফোকর নেই, বাগান বা খোলা জায়গা বাড়ীর সামনে কিম্বা পিছনে, পাশের দিকে বাড়ীগুলোর দেওয়াল কমন| একে নাকি রো-হাউস বলে, এইসবদিকে খুব নাকি দেখা যায়, জায়গা বাঁচে| কিন্তু আলো হাওয়া? সে নাকি প্রচন্ড গরম আর প্রচন্ড শীতের সময় বাইরে থেকে বেশী না আসাই ভাল| বেশ সমান মাঝারি চওড়া রাস্তা আর কেমন একটু অন্যরকম দেখতে রিক্সা চলে| ছিমছাম পরিস্কার ছোটমত শহরটাকে বেশ ভালই লাগল আমাদের, শুধু একটাই সমস্যা, আমাদের কথাও কেউ তেমন বোঝে না, আমরাও অন্যদের বুঝি না| সেজমামা বা সেজমামীমা কেউ সঙ্গে না থাকলে খুব মুশকিল| কীভাবে কীভাবে যেন বাটাচক নামে একটা জায়গায় আমরা পৌঁছোলাম, সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে সেজমামার বাড়ী, সেখানে ছোটমামীমা আগে থেকেই এসে ছিল| ভাই এখন দিব্বি চাঙ্গা, ট্রেনেই চুপচাপ বসে থেকে আর ইলেকট্রলের জল খেয়ে আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সুস্থ হয়ে গেছে| ছোটমাইমা এখানে আর ঘোমটা দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘুরছে না, সেজমামা বলে 'আমি বারণ করসি', মা বলে 'ভাল করসস'| তারপর দিদার নিয়মকানুনের কড়াকড়ি নিয়ে পাঁচজনে মিলে খানিক নিন্দে করে, আমরা ততক্ষণে সামনের সিমেন্ট বাঁধানো উঠোনে একটু খেলা করি| প্ল্যান ঠিক হয় ছোটমামা, ছোটমাইমা আর আমরা তিনজন পরশু সকালে বেরিয়ে দিল্লীর আই এস বি টি গিয়ে হরিদ্বারের বাস ধরব, সেজমামা ছুটি পায় নি, যেতে পারবে না| এমনি হইহই করে একে একে দেখা হয়ে যায় হরিদ্বার, হৃষিকেশ, লছমনঝুলা, আগ্রা, মথুরা, বৃন্দাবন, জয়পুর| কিন্তু জয়পুরে হাওয়ামহল দেখা হয় না, সেদিন বন্ধ ছিল, দেখা হয় না দিল্লী এযাত্রা, হয় না দেরাদুন মুসৌরীও| আর এই বেড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে পড়া হয়ে যায় সেজমামার আলমারি থেকে পুরো বিভুতি রচনাবলী, বঙ্কিম রচনাবলী| মা একবার বাধা দিতে গেছিল সব খন্ড না পড়তে, বড়দের বলে, সেজমামা হেসেই উড়িয়ে দেয়, বলে বই হল বই, তার আবার ছোটদের বড়দের কী? এরপরে তো বলবি বড়দের রোদ্দুর, বড়দের আলো, মা আর কিছু না বলে চুপ করে যায়| পথের পাঁচালি, অপরাজিত আগেই পড়া, দাদুর আলমারীতে ছিল, নতুন করে পড়া হয় কেদার রাজা, ইছামতী, অনুবর্তন, দেবযান, চাঁদের পাহাড়, মিসমিদের কবচ, হীরামাণিক জ্বলে, তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প, দুইখন্ড ভর্তি অজস্র ছোটগল্প| পড়তে পড়তে মন খারাপ হয় -- ভাল হয় ---- আবার খারাপ হয় --- আবার ভাল হয়| একসময় মনে হয় মরে না গিয়ে আফ্রিকা পালিয়ে গেলো হয় তো, শঙ্করের মত| কিম্বা লছমনঝুলার ব্রীজের সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা আরো ওপরের দিকে চলে গেছে সেটা দিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে গেলেও হয় তো| এই ফরিদাবাদে থেকে যেতে পারলেও হোত, এখানে মা'ও বেশ ভাল মেজাজে থাকে, সবসময় বকেঝকে না| কিন্তু কালীপুজোর পরের দিন আবার আমরা নিউ দিল্লী স্টেশানে গিয়ে কালকা মেলে চড়ে বসি| ফিরে এসে শুনি এরমধ্যে দাদু আরো একবার পড়ে গেছিল বাথরুমে| দাদু আমাদের দেখে বলে 'যাক যাওনের আগে তগো লগে দেখাটা হইয়া গেল'| অনেকদিন বাদে মা আবার শব্দ করে কেঁদে ওঠে -------
  • sosen | 111.63.157.152 | ১১ মে ২০১৩ ১৮:৪৯576135
  • ছুটির দিনগুলোয় দমুদি মনটা ওরম খারাপ-ভালো-খারাপ করে দেয়। কিচ্ছু করতে ইচ্ছে করেনা।
  • Blank | 69.93.241.65 | ১১ মে ২০১৩ ১৯:৩৫576137
  • ঃ(
  • | 24.97.20.68 | ১১ মে ২০১৩ ২১:৪৮576138
  • ১১)
    আমাদের সেই উমনো ঝুমনো ছেলেবেলায় শীত আসত রাজার মত| চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে যেত দুর্গাপুজোর পর থেকেই| লক্ষ্মীপুজোর ভোগ রান্নার সময় একপ্রস্থ আলোচনা হত শীতের আগমন কিম্বা অনুপস্থিতির কারণে ফুলকপির স্বাদের তারতম্য নিয়ে| শীতের কপির স্বাদ যে না-শীতের কপির থেকে একেবারে আলাদা সে নিয়ে কারো কোন সন্দেহ ছিল না| ইস্কুলের পুজোর ছুটি খোলার আগেই বাগানে কোদাল পড়ে যেত| আশ্বিনমাসে ভাল রোদ্দুর পেলে বাগানের মাটি একেবারে সাদাটে রঙ ধরে থাকে| অ্যাই বড় বড় ফাট, তাতে সরু মোটা কালো কালো ইকড়ি মিকড়ি| ধাঁই ধপাধপ ধাঁই ধপাধপ সে মাটি কুপিয়ে, জল দিয়ে, খুরপি দিয়ে মিহি করে নিড়িয়ে শুকনো গোবরগুঁড়ো আর বর্ষাকাল থেকে বাগানে পচানো পাতা, তরকারির খোলা, কয়েকগাছি খড় মেশানো কম্পোস্ট সার মিশিয়ে এক সপ্তাহ ফেলে রাখা হবে| এক সপ্তাহ জমিটুকুনি রোদ্দুর খাবে, ভিজে ভাব আস্তে আস্তে শুকিয়ে কালচে মাটি ধুলোটে রঙ ধরবে তারপর তাতে সরু সরু ফাট ধরবে| এ ফাট কিন্তু আশ্বিনের রোদে জ্বলা মস্ত মস্ত ফাট নয়, এ হল মিহিমত ফাট, যেন বা সুনীতিপিসী চুল শুকাতে বসে হিলিকিলি করে বিলি কেটে এলিয়ে রেখেছে কাঁচাপাকা চুলের রাশি| এবারে সরু খুরপি দিয়ে নিড়িয়ে খোল পচানো জল দেওয়া হবে| আহা তার কি গন্ধ!! পুবের জানলা সবসময় বন্ধ রাখতে হয় প্রায়| দুদিন, তিনদিন দুবেলা করে খোল পচানো জল দেবার পর একদিন বিকেলের রোদ পশ্চিমে ঢললে এইটুকু টুকু ফুলকপি, ওলকপি, শালগম আর বেগুনের চারা বসানো হবে| কচি কচি চারাগুলো এক্দম ঘাড় নুইয়ে নেতিয়ে পড়ে থাকে, যেন আর বাঁচবেই না| এইবারে তাতে ঝাঁঝরি করে জল দিয়ে রাতের মত রেখে দেওয়া, এরমধ্যে খবরের কাগজের টুকরো আর ঝাঁটার কাঠি দিয়ে বানানো হয়েছে ছোট ছোট টোপর| পরদিন বেলা ন'টা বাজলেই সব চারাগাছে টোপর পরানো হয়ে যাবে, নাহলে অত কচিচারা সারাদিনের রোদ্দুরে শুকিয়েই মরে যাবে যে! বিকেল চারটেয় আবার তারা টোপর খুলে নেতিয়ে শুয়ে থাকবে,ঝাঁঝরিতে চান করবে| এই চলবে যতদিন না চারাগুলো একটু ডাঁটো হয়ে রোদ্দুরের সাথে খেলতে শিখে যায়|

    ওদিকে আমাদের স্কুল আধঘন্টা পরে শুরু হয়৷ আর সক্কাল সাড়ে ছটার মধ্যে দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পৌঁছাতে হয় না, সাতটা বাজার ৫-১০ মিনিট বাদে গেলেও দিদিমনিরা তেমন কিছু বলেন না৷ স্কুল ছুটি হয় কিন্তু সেই একই সময়, সাড়ে দশটা৷ ক্লাসের সময় এমনিভাবে কমে যাওয়াটা ভারী ভাল লাগত৷ যেন একটা মুক্তির স্বাদ, রুটিন পড়াশোনা থেকে খানিক আলগা হওয়া৷ আর সেসময় তো নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেই বার্ষিক পরীক্ষা হত৷ দিদিমনিরা যাতে খাতা দেখার জন্য বেশীদিন সময় পান, তাইজন্য নভেম্বরেই পরীক্ষা শেষ করার চেষ্টা থাকত স্কুলগুলোর৷ তাছাড়া ডিসেম্বরে আবার ক্লাস টেনের টেস্ট পরীক্ষাও হবে৷ সে ভারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার৷ তাই আমরা ছোটরা ডিসেম্বরটা বেশীরভাগ পুরোই ছুটি পেতাম৷ কিন্তু তার আগে নভেম্বরের মাঝামাঝি কোনও এক সময় থেকে প্রতি রবিবার ইতুপুজো হত৷ এই পুজোটা খালি আমার বড়মামীমা করত৷ সে নাকি টানা সতেরো বছর করতে হয়৷ ইতুপুজোর জন্য প্রতি শনিবারে টাটকা মুড়কি বানাত দিদা আর বড়মামীমা৷ রবিবারে তাই আসত প্রসাদ হয়ে, চালকলার সাথে মাখা হয়ে৷ ভাইয়ের জন্য আলাদা একটা বাটিতে করে আসত শুকনো মুড়কি, ও খুব ভালোবাসে তাই৷ আমিও খুব ভালোবাসতাম শুকনো মুড়কি, কিন্তু 'মেয়েদের আবার অত নোলা কি?' তাই আমার ছোটবেলার স্মৃতিতে 'শুকনো মুড়কি' একটা একটু হ্যাংলামত লোভের নাম হয়ে থেকে গেছে৷
  • | 24.97.58.31 | ১২ মে ২০১৩ ১৬:৪৭576139
  • নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে আরও পাওয়া যেত কাঁচা আমলকি৷ মামার বাড়ীতে ৫-৭ কিলো আমলকি কিনে কুচি কুচি করে কেটে সামান্য নুন মাখিয়ে বারান্দায় খবরের কাগজ বিছিয়ে তাতে শুকানো হত৷ দুপুরে যখন বড়রা সবাই ঘুমোয় কিম্বা গল্পের বই পড়ে তখন কয়েকটা তুলে এনে ছাদে বা উঠোনের কোণার দিকে বসে চুষে চুষে খাওয়া আর শেষ হলে একগ্লাস জল খেয়ে নেওয়া, একেবারে রোজের রুটিন৷ এদিকে বার্ষিক পরীক্ষার ফল বেরোবে সেই ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ৷ ততদিন মনের আনন্দে সারাদিন খেলা আর বই পড়া৷ মাঝেমধ্যে টুকটাক বেড়ানও হত৷ আর বেড়ান মানেই গরম জামা নাও রে, টুপি নাও রে, কারো অল্প ঠান্ডা লেগে থাকলে তার জন্য মাফলারও দরকার, যাতে উত্তুরে হাওয়ায় আরও বেশী ঠান্ডা না লাগে৷ হাতে বোনা সেসব সোয়েটার, মাফলার আবার বংশানুক্রমে বয়ে চলত, রিইউজেবল ফাংশানের মত৷ ছোটদির সরষে রঙের চওড়া বর্ডার দেওয়া অফ হোয়াইট সোয়েটারটা ছোটদির পর আমি পরেছি বছর চারেক, তারপর সেটা সেজমামার মেয়ে খুকু পরে বছর দুই, তারপর যথাক্রমে ছোটমামার দুই মেয়ে রনি, বনি এবং সবশেষে বনির মামাতো বোন মৌটুসী পরে৷ এদিকে গরমজামার এত রিইউজেবিলিটি থাকলে কি হবে, ওদিকে মা, মামী, জিজি, মীনামা'রা পুজোর পরে পরেই দোকানে গিয়ে নানারকম উল কেনা শুরু করে দিত৷ আর ছিল প্যাটার্ন হান্ট৷ কারো গায়ে যদি এমন কোনও সোয়েটার দেখা গেল, যার গায়ের নকশা একদম নতুন, সেটার প্যাটার্ন উলকাঁটায় তুলতে না পারা পর্যন্ত এই মা-মামী কুলের রাতের ঘুম চলে যেত প্রায়৷ এরমধ্যে সবচেয়ে আগ্রাসী ছিল জিজি| জিজি শিকারীর ক্ষিপ্রতায় গিয়ে পাকড়াও করত নতুন নকশাওলা সোয়েটার পরিধানকারি/কারিণীকে৷ তারপর নানারকম একথা, সেকথা আশকথা পাশকথায় ভুলিয়ে সোয়েটার খুলিয়ে সামনে পেছন ভাল করে দেখে নকশা মাথার মধ্যে গেঁথে নিয়ে বিজয়গর্বে ফিরে আসত৷ পরবর্ত্তী দুই তিনদিনের মধ্যে সেই নকশা উলেকাঁটায় তুলে ফেলে তবে শান্তি৷ তারপর শুধু সময়ের অপেক্ষা৷ সেই নকশাকরা সোয়েটার হয়ত পাবে দাদা কিম্বা আমি, নয়ত ছোড়দি এমনকি আমার পুঁচকে ভাইয়ের জন্যও হতে পারে তা৷

    জিজি প্রতিবছর আট থেকে দশখানা সোয়েটার বুনত৷ মাঝেমধ্যে উলের চাদরও বুনে ফেলত একটা দুটো৷ এখন ভাবলে প্রায় অবিশ্বাস্য লাগে, জিজি ছোটবেলায় বার দুই গরমজলে পুড়ে গিয়েছিল, ফলে বাঁ হাতের আঙুলগুলো, বিশেষ করে বুড়ো আঙুল চামড়া দিয়ে জুড়ে গেছিল অন্য আঙুলগুলোর সাথে৷ তারজন্য বাঁ হাতের কাঁটা ধরত মুঠো করে; ঐ প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এত অজস্র অজস্র গরমজামাকাপড় বুনত প্রতিবছর৷ আর সেসব কি ডিজাইন! এখনকার মন্টি কার্লো ইত্যাদির অমন ডিজাইন কিনতে গেলে মানিব্যাগে ম্যানহোল তৈরী হয়ে যাবে৷ আমাকে একটা আকাশী নীল রঙের ছয় কাটের উলের ফ্রক বানিয়ে দিয়েছিল, তাতে সাদা কুরুশের কাজ করা ঝালর, ফুলপাতা বসানো, সাদা ক্রচেট সুতো দিয়ে বোনা আড়াই ইঞ্চি চওড়া বেল্ট৷ সঙ্গে একই কম্বিনেশানের টুপি৷ আরেকবার, আমি গোলাপী রঙ ভালোবাসি বলে আমাকে টানা দুইমাস ধরে জিজি লোভ দেখাচ্ছে যে আমার জন্য নাকি একটা দারুউণ সুন্দর গোলাপী সোয়েটার বানানো হচ্ছে৷ এত দেরী হওয়ার কারণ সেই অসাধারণ সোয়েটারের নকশার উপযুক্ত ম্যাচিং উল পাওয়া যাচ্ছিল না৷ শেষে সরস্বতী পুজোর আগের দিন জিজি এল সেই সোয়েটার নিয়ে৷ বার করে আস্তে আস্তে খুলে ধরল আমার সামনে৷ শকিং পিঙ্ক পুলওভার বুকের কাছে চার আঙুল চওড়া ধপধপে সাদা অংশে তুঁতে, উজ্জ্বল সোনালী হলুদ আর সেই শকিঙ পিঙ্ক দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জ্যামিতিক নকশা৷ খুব কাছ থেকে হাতে নিয়ে না দেখলে বোঝা যায় না মেশিনে না হাতে বোনা৷ কিন্তু হায় অত শকিং রঙ তখন আমার একটুও পছন্দ হল না, আমার মুখের ভাব দেখে জিজি কতকিছু বলল৷ কিন্তু ছোটরা বড় নির্মম হয়, তাই আমি অবলীলায় বলে দিলাম 'এটা একটা বিশ্রি জামা৷ অত ক্যাঁটক্যাঁটে রঙ আমি কক্ষণো পরব না'৷ বেচারী কত আশা করে নিজের স্বপ্ন আর ভালবাসা মিলিয়ে মিশিয়ে বুনেছিল সেই গরমজামাখানা৷ সেই জামা আমি বড় হয়ে কলেজে পড়ার সময় অনেক পরেছি৷ যে দেখত সেই প্রশংসা করত, আমারও শকিঙ পিঙ্ক আর তখন মোটেই খারাপ লাগত না৷ কিন্তু জিজিকে সেকথা কেন যেন কখনও সেরকম করে জানানো হয় নি৷ আজ যখন এটা জানিয়ে দেওয়ার আর কোনওই উপায় নেই, তখন জিজির সেই কেমন একটা হতাশ দু:খীমত তাকিয়ে থাকাটা বারবার মনে পড়ে --- সময়কে তো আর আগের তারিখে সিস্টেম রেস্টোর করা যায় না|
  • nina | 79.141.168.137 | ১৩ মে ২০১৩ ০২:০১576140
  • দমু, ঐ গোলাপী সোয়েটার পরে একটা ছবি তুলে ফেবু তে ডিপি করে দাও----সব্বই দেখবে সুন্দর জিনিষটা---
    বলবে সুন্দর, সুন্দর----হয়ত তোমার ভাল লাগবে আর তোমার ভাল লাগাই তো জিজি চাইতেন--তাই না?
  • Ishnai | 111.63.164.171 | ১৩ মে ২০১৩ ০৯:২৬576141
  • আলো- ছায়ার মায়ার খেলা । বাঃ !
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ১৩ মে ২০১৩ ১০:৪১576142
  • তিব্ব পতিবাদ দমুদির জন্যে
    সোমবার সকালে আপিসে এসে এইটা পড়ে কি করে কাজ করব?
  • | 24.97.183.191 | ০২ জুন ২০১৩ ১৯:৫৯576143
  • সেই বছরের শীতকালও এইসব নিত্য নৈমিত্তিকতার টুকরো টাকরা নিয়ে চলছিল| বেড়াতে যাওয়ায় এবার গোটা পুজোর ছুটিজুড়েই প্রায় কোনওরকম পড়াশোনা হয় নি, তাই পরীক্ষার আগে যে ক'দিন ক্লাস হল, তাতে ভালই হেনস্থা হল, মা'র কাছে নালিশও করলেন রেখাদি, অঞ্জলীদি, শিখাদি| বাড়ীতে কিছু মারধোরও পড়ল, আর দিনের মতে দিন কেটে গিয়ে বার্ষিক পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল| এবার পুজোবার্ষিকী আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, প্রভাতীগুলো আগে পড়া হয় নি, তাই সময় কাটাতে সমস্যা নেই কোনও| বড়দের বই পড়া আমার বারণ, কিন্তু মা'র পরীক্ষার খাতাদেখা আছে তাই শারদীয়া প্রসাদ, নবকল্লোল, উল্টোরথও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে ফেলি, মা টের পায় না| ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে দুপুরবেলা জিজি আসে কাঁদতে কাঁদতে| মীনামা মারা গেছে সকাল এগারোটায়, দাদা চাকরি করে অমৃতসরে, টেলিগ্রাম গেছে, দাদা আসলে সব হবে| মা জিজির সাথে কল্যাণী চলে যায়, আমি আর ভাই ভ্যাবলাচোখে তাকিয়ে বসে থাকি বারান্দায়| 'মারা গেছে' শ্ব্দদ্বয়ের মানে আমি এখন স্পষ্ট বুঝি, ভাইও মনে হয় অনেকটাই বোঝে, কিন্তু তবু সেবারও ঐ শব্দদুটো কেমন পিছলে পিছলে যেতে থাকল, মানে বুঝলেও তাকে যেন ঠিক করে বুঝে ওঠা যায় না, শুধু আমার পৃথিবীর আউটলাইনটা আরো একটু ঝাপসা হয়ে যেতে থাকে|

    মা ফিরে আসে অনেক রাতে, নাকি পরেরদিন সকালে, এখন আর ঠিক করে মনে পড়ছে না| মা'র কাছে শুনি মীনামাকে বরফের বিছানায় শুইয়ে রেখে দাদার জন্য অপেক্ষা করছিল সকলে, জানি মরে গেলে আর শীত লাগে না, কিন্তু তাও বারবার মনে হয় মীনামা যে বড্ড শীতকাতুরে ছিল| জিজি এসে কয়েকদিন পরে আমাকে কল্যাণী নিয়ে গেল, আবার সেই গাদাগাদা অচেনা লোক, সেই একগাদা হাবিজাবি মন্ত্র আর বারবার করে 'প্রেত প্রেত' করতে লাগল ঠাকুরমশাই, আবার আমার ইচ্ছে করে এই ঠাকুরমশাই নামের লোকটাকে ধাঁইধাঁই করে মারতে --- মীনামার মত ভালমানুষ যে কাউকে কোনোদিন একটু জোরে বকে নি, সবসময় হাসিহাসি মুখে থাকত, তাকেই এই পাজী লোকটা 'প্রেত প্রেত' বলছে! আমাকে যারা যারা ভালবাসত তাদেরকে এই ঠাকুরমশাইরা 'প্রেত' বলে ডাকে আর তারপর একগাদা কাপড়চোপড়, বাসনপত্র, খাবারদাবার এমনকি বিছানা বালিশ, ছাতা পর্যন্ত পোঁটলা বেঁধে নিয়ে চলে যায়!! এই নামাবলি জড়ানো একটু কুঁজোমত লোকগুলোর প্রতি এক তীব্র বিতৃষ্ণা প্রায় বিদ্বেষ জন্ম নিতে থাকে আমার মনে|

    সময় নিজের নিয়মে বয়ে গিয়ে ব্ছরটা শেষ হয়ে নতুন বছরের ক্লাস শুরু হয়ে যায়, দাদা ফেরত যায় অমৃতসরে| এর মধ্যে দাদু আরও কয়েকবার আস্তে করে পড়েটরে গেল, আজকাল দাদু বাথরুমে যাওয়ার সময় দিদা বা বড়মামীমা নজর রাখে, বৃদ্ধ মানুষটির তাতে বড় অপমানবোধ হয়, সারাজীবন সোজা হয়ে হাঁটা মানুষটির কারো ঘাড়ে বা কাঁধে ভর রেখে চলতে বড় লজ্জা হয়, ফলতঃ বৃদ্ধ সুযোগ খোঁজে, দয়াময় সময় তাকে সুযোগ করে দেয়; দুপুর ও বিকেলের সন্ধিক্ষণে যখ্ন সবাই যে যার ঘরে, ভেতরের বারান্দা য্খন ফাঁকা, বৃদ্ধ নেমে আসে খাট থেকে, হেঁটে যেতে চেষ্টা করে বাথরুমের দিকে, নিষ্ঠুর সময় দেখিয়ে দেয় সে কেড়ে নিয়ে গেছে তার পায়ের জোর, শরীরের ভারসাম্য --- ঘর, বারান্দা কিম্বা বাথরুমের কোনও এক জায়গায় সে পড়ে যায়| গটগটিয়ে হেঁটে যাবার দিন তার শেষ এটা দেখাতেই যেন সময় তাকে রোজ ঐসময় ভুলিয়ে নিয়ে যেতে চায় আর মাটিতে আছড়ে ফেলে শিক্ষা দিতে চায়| সময় কেড়ে নিয়েছিল তার বাড়ীঘর, দেশ, পেশা ও নিরাপত্তার ঘেরাটোপ, সময়কে অগ্রাহ্য করে একবস্ত্রে দেশ ছেড়ে সে পাড়ি দিয়েছিল অন্য দেশে, খুঁজে নিয়েছিল নতুন পেশা, আবার গড়ে তুলেছিল নিজস্ব গৃহ, স্থাপন করেছিল গৃহদেবতার আসন| আজ সময় শেষ পর্যন্ত বাগে পেয়েছে তাকে, এটা কিছুতেই সে মেনে নিতে পারে না, মাটিতে পড়ে অসহায় বিড়বিড় করে 'আমি পারতাম, আমারে ছাইড়্যা দাও', ধরে তুলতে আসা লোকজন প্রথমে কিছুদিন দুঃখ পায়, বুঝিয়ে বলতে চায়, সময় টান ধরায় তাদের ধৈর্য্যে, বিরক্তি বাড়ে, অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে কাছের লোকেরা, দরজার বাইরে থেকে হাঁসকল লাগানো হয়, খাট সরিয়ে মেঝেতে টানা বিছানা করে দেওয়া হয়, পতনসম্ভাবনা কমানোর জন্য| সব পরামর্শ আজকাল দিদা কিম্বা বড়মামার সাথেই করে সবাই, দাদু কিছু জিজ?ণাসা করলে হয় উদাসীন 'পরে কইতাছি' আর নয়ত অসহিষ্ণু 'শুইয়া বইসা থাক না, এখন বিশ্রাম লও, তুমার অত সবেতে মাথা দেওনের কাম কি অহনও!?' এরপরে এগারো বছর ধরে আমরা দেখব এক বনস্পতির ঘুণ ধরে আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যাওয়া|
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ০৩ জুন ২০১৩ ১০:২৫576144
  • দমদি খুব ভালো লাগছে, সাথে আছি
  • siki | 132.177.170.179 | ০৩ জুন ২০১৩ ১০:৩১576145
  • জাস্ট হন্টিং, হন্টিং। এইভাবে বোধ হয় কেউ আগে লিখতে পারে নি।

    দ, প্লিজ প্লিজ আরেকটু লেখো।
  • titas | 127.194.193.209 | ২০ জুন ২০১৩ ০৯:১৮576146
  • যাহ, আর কই? ঃ(
  • nina | 22.149.39.84 | ২০ জুন ২০১৩ ১৮:০১576148
  • খুব ভাল সময় তুলে দিয়েছিস তিতাস--
    উইকএন্ড এসে গেল--দমু লেখার সময় পাবে

    অ দমু উ উ --বসে আছি পড়ব বলে--
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন