এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভাগাড়পাড়া স্কুল থেকে বলছি


    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০১২ | ৭৯৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • nina | 22.149.39.84 | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ০০:২১576216
  • @ ডিডি ঃ-))
  • | 24.97.235.89 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ১৯:৫২576217
  • গরমের ছুটির কয়েকদিন আগে থেকে আমাদের টিফিনের পরে রোজ একটা দুটো করে পিরিয়ড খালি যেতে থাকে, হয় শিখাদি আসেন নি, নয়ত সুধাদি| রেখাদি মাঝেমধ্যে স্কুলে এলেও ক্লাসে আসেন না| এই পিরিয়ডগুলো আমরা হয় বাইরে নয় ক্লাসে বসে খেলি| বাইরে মানে অবশ্য মাঠে খেলা যায় না, ইরাদি দেখতে পেলেই চীৎকার করে বকেন, অন্য দিদিমনিরাও হয় নিজেরা বকেন নয়ত গিয়ে ইরাদিকে বলে দেন| আমরা টিফিনের সময় যে বেরোই, পরের ক্লাসটা ফাঁকা গেলে আর ক্লাসে আসি না, কমনরুমের পাশ দিয়ে পেছনের রাস্তায় পড়ে বাঁদিক ঘুরে মাস্টারপাড়ার দিকে চলে যাই| ওখানে অনেক অলিগলি, পুকুরপাড়, সেখানে দিব্বি ছোঁয়াছুয়ি খেলা যায়, শুধু খেয়াল রাখতে হয় ভুল করে যেন গোপালবাবুর বাড়ীর দিকে চলে না যাই, তাহলে ধরা পড়ে যাব| মাঝে মাঝে কিছু মেয়ে মিলে কাছাকাছি গোধুলি বা কাজলদের বাড়ী চলে যায়| আমি অবশ্য কারো বাড়ী যেতে সাহস পাই না, ধরা পড়লে মা যে কী করবে আর কত মারবে সেই ভেবেই আর সাহসে কুলোয় না| রীমাও খুব বেশীদূর যা য় না ওরও বাড়ী মাস্টারপাড়াতেই একটু অন্যদিকটায়| ওর বাড়ী থেকে কেউ দেখে ফেললেও ওর বাবা মারবে| তাই আমরা অনেকসময়ই ক্লাসে বসে বসে ম্যাপ পয়েন্টিং খেলি, ফল-ফুল-নাম-দেশ খেলি, কাটাকুটি খেলি| অঞ্জলীদির দেওয়া বাড়ীর কাজের অঙ্কগুলো রীমাকে বাড়ীতে ওর বাবা কিম্বা দিদি দেখিয়ে দেয়, আমি বড়মামার কাছে না যাওয়ার চেষ্টাই করছি সেদিন দিদার কাছে বকুনি খাওয়ার পর থেকে| আমার না পারা অঙ্ক এক আধটা রীমার থেকে দেখে নিই তাই| একদিন ক্লাসেও বলেছি বুঝতে পারিনি তাই করতে পারি নি| অঞ্জলীদি বকেন নি, একটু ঠোঁট টিপে হেসে অঙ্কটা বোর্ডে বুঝিয়ে দিয়েছেন| কিন্তু সেদিনের সেই রাগটা মাঝেমাঝেই আমার মনে কুটকুটিয়ে দাঁত ফোটায়, কাউকে একটা খুব কষ্ট দিতে, কাঁদিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়| ইঁটের পয়েন্টিং করা মেঝের ফাঁক দিয়ে লালপিঁপড়েরা দল বেঁধে বেরিয়ে এসে কোথায় যেন যেতে থাকে সারি দিয়ে, আমি চটি পরা পা তুলে প্রথমে আলতো করে পিঁপড়ের সারির ওপরে বুলিয়ে নিই, লাইনটা ছ্যারাব্যারা হয়ে যায় --- কয়েকটা পিঁপড়ে এদিক ওদিক ব্যস্তভাবে হাঁটাচলা করে পথের খোঁজে -- এইবার আমি পা নামিয়ে আনি ---- ফ্যাট্ ফ্যাট্ আওয়াজ করে বার দুই তিন চটি ঠুকতেই পিঁপড়েদের আর কোনও চিহ্ন থাকে না, আমার চটি থেকে ঝরে পড়া মাটির গুঁড়োয় ঢেকে যায় ইঁটের ফাঁকফোকরে চেপ্টে যাওয়া লালপিঁপড়েদের কুচি|

    আমাদের ক্লাসের দরজা দিয়ে দেখা যায় হাইস্কুলের শুভ্রাদি পিটি করাচ্ছেন, কখনও কখনও হাইস্কুলের মেয়েরা দুইহাতে ছোট্ট ছোট্ট লাঠি নিয়ে তাল দিয়ে দিয়ে সবাই একসঙ্গে গান করে করে নাচে| পিটির দিন হাইস্কুলের এইট, নাইন কিম্বা টেনের মেয়েরা সাদা সালোয়ার, কামিজ আর ওড়না পরে আসে| শুভ্রাদির আদেশ ছিল কামিজের কোমরে সাদা বেল্ট থাকতে হবে আর চওড়া সাদা ওড়না একদিকের কাঁধ বেয়ে নেমে বেল্টের মধ্যে দিয়ে ক্রস করে উঠে অন্যদিকের কাঁধে পরবে, দুই কাঁধে সেফটিপিন দিয়ে আটকানো থাকবে ওড়না| বেল্ট দিয়ে কামিজ বানাতে নাকি খরচ বেশী পড়ে, তাই অনেকেই এমনি সালোয়ার কামিজ ওড়না পিন দিয়ে আটকে পরে আসে| কেউ কেউ এমনকি সালোয়ার কামিজও বানাতে পারে না, তারা একঢালা মেরুণ পাড়, আঁচলওয়ালা সাদা শাড়ি প্লিট দিয়ে পরে আঁচলের একটা দিক ঘুরিয়ে এনে সামনে পেটের কাছে পিন দিয়ে আটকে রাখে| পিটি করার বা কাঠিনাচের সময় শাড়িপরা মেয়েদের কারো পেট, কোমরের কাছে শাড়ি সরে গেলে শুভ্রাদি লাঠি দিয়ে ওখানে একটা খোঁচা দিয়ে ঠিক করতে বলতেন, ফলে সবাই তটস্থ থাকত শাড়ি যাতে একটুও না সরে যায় তার জন্য| আমাদের জুনিয়ার হাইতে কোনও পিটি দিদিমনি নেই, তাই আমরা মুগ্ধ হয়ে ওদের দেখি আর বলাবলি করি আমরা যখন নাইনে উঠব তখন আমরাও করতে পারব| শেষ পিরিয়ড পিটি থাকলে অনেকেই বইখাতা বা যারা ব্যগে করে আনে তারা ব্যাগ এনে কমনরুমের বারান্দার কার্নিশে রেখে দেয়, ছুটির ঘন্টা পড়লে ওখান থেকে টেনে নিয়ে দৌড় দেয়| আমাদের সেদিন শেষ পিরিয়ডে মীনাদির সেলাই ক্লাস, উনি তখনও আগের ক্লাস থেকে বেরোন নি, আমরা দিব্বি চেঁচামেচি করছি এমন সময় হঠাৎ পিটিক্লাসের দিক থেকে ভীষণ গন্ডগোল, হাঁউমাউ করে চীৎকার শুরু হয়ে গেল| আমরা প্রথমে দরজার সামনে, তারপর হুড়মুড়িয়ে মাঠে বেরিয়ে দেখি সাদা রঙের শিংছাড়া একটা প্রায় গরু হয়ে যাওয়া বাছুর কার যেন একটা বই মুখে নিয়ে আর্ধেক চোখ বুঁজে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে, আর যে দিদির বই সেই দিদি হাঁউমাউ করে কাঁদছে আর সবাইকে বলছে ওর বইটা এনে দিতে, ওর বাবা আর কিনে দিতে পারবে না| শুভ্রাদি বেশ অনেকটা দূর থেকে লাঠি বাড়িয়ে হ্যাট হ্যাট করছেন, বাছুরটা শুনছেও না নড়ছেও না| এদিকে এই বাছুরটার মাথায় ছোট্ট ছোট্ট দুটো শিঙের কুঁড়িমত বেরিয়েছে, এখনও শিং বেরোয় নি --- ফলে এটার শিং শুলায় আর এইটা ভীষণ গুঁতিয়ে বেড়ায়, কেউ ওর কাছে যাচ্ছে না|
  • | ০৫ অক্টোবর ২০১৩ ১৪:২৩576218
  • গোলমাল শুনে দপ্তরী মধুসুদনদাদা, আয়া মিনুদি, অন্য দিদিমনিরাও অনেকে বারান্দায় বেরিয়ে আসেন| মধুসুদনদাদা এসে গরুটাকে লাঠি নিয়ে তাড়া করলে গরুটা বইটাকে মুখে করেই দৌড় দেয় --- অন্যদিক দিয়ে মিনুদি এসে একটা দড়ি কেমন করে যেন ছুঁড়ে গরুর গলায় পরিয়ে টান দিতে গরুটা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে --- দড়ির টানে গলাটা লম্বা হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় --- মাথার দুপাশের চোখের কালো মণিদুটো ঝিকিয়ে ওঠে --- মুখ দিয়ে অনেকটা লালা বেরিয়ে লম্বা নালের মত ঝুলে পড়তে থাকে মাঠের ধুলো আর ঘাসের মধ্যে --- বইটা মুখ থেকে খসে পড়ে যায় --- গরুটা 'উমব্যা-অ্যা' করে চীৎকার করে ওঠে ---- শুভ্রাদিও চীৎকার করে ওঠেন 'ও মিনুউউ গরুটাকে মেরে ফেলিস না-আ' ---- মিনুদি হাত থেকে দড়িটা ছেড়ে দেয় --- গরুটা ধাঁইধাঁই করে দৌড় দেয়, ঈষৎ গোবরমাখা ল্যাজটা পেছনে পতাকার মত উঁচিয়ে| লালা আর ঘাসপাতার টুকরো জড়ানো বইটা পড়ে থাকে, কেউ এগোয় না ওটা তুলতে --- এমনকি যার বই সেই দিদিও না| আমরা ক্লাসে ফেরত আসি, নাহলে এবার আমাদের দিকে নজর পড়বে সবার| ক্লাসে এসেই সমাপ্তি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ওর সংস্কৃত 'হেল্পস ট্যু দ্য স্টাডি' বইটা নাকি খুঁজে পাচ্ছে না| আমাদের ক্লাসে তো গরু ঢোকে নি যে খেয়ে নেবে বা মুখে করে কোথাও নিয়ে যাবে| সংস্কৃত ক্লাসেও তো ও দিব্বি বইটা খুলেছিল -- গেলটা কোথায়? বেঞ্চের তলাগুলো দেখা হয়ে যায় --- নেই নেই| শীলা কিসব বলতে থাকে --- সমাপ্তি হয়ত বইটা আজ স্কুলে আনেই নি বা টিফিনে বাড়ী রেখে এসেছে --- এরকম সব ক্থা| সমাপ্তি ভীষণ আপত্তি করে, গোধুলি মনস্বিতারাও আপত্তি করে --- এত ভুল হবে কেন, সমাপ্তি কি বুড়ো মানুষ নাকি? শীলাকে হাতমুখ নেড়ে বলতে দেখেই আমার মনে পড়ে যায় শীলার আমাকে ভ্যাঙচানো 'টিয়া টিয়া টিয়া --' রাগ হতে থাকে, ভয়ংকর রাগ --- দিদার হিসহিসিয়ে ব্কতে থাকা গলাটা মাথার ভেতরে ঢেলে দেয় স্মৃতির বিষ --- আর আমি বলে উঠি 'লাস্ট বেঞ্চের মেয়েদের বইগুলো ভাল করে খুঁজে দেখ সমাপ্তি'| সবাই হঠৎ এক্কেবারে চুপ করে যায়, সমাপ্তি অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকায় --- আমি আরো জোর দিয়ে বাক্যটা আবার উচ্চারণ করি| আমি তো দেখে ফেলেছি লাস্ট বেঞ্চে নিজের বইয়ের সামনে দাঁড়ানো শীলার হঠাৎ নিভে যাওয়া মুখটা, তাই ঠোঁটের কোণা অল্প মচকে একটু হাসি| এইবার কে যেন একটা সায় দিয়ে বলে হ্যাঁ সবার বইখাতাই একবার সবাই খুঁজে দেখুক, আস্তে করে যোগ করে 'গোলমালের সময় ভুল করে এখানে সেখানে রেখে হয়ত বেরিয়ে গেছিলি' ---- আমার উচ্চারণ করা কুৎসিৎ কালো বাক্যটার ওপরে হোয়াইট ওয়াশ করার আলতো চেষ্টায় কে বলে? রীমা? নাকি রীতা? কি জানি আমি খেয়াল করি নি|

    শীলার নিস্প্রভ মুখের দিকে তাকিয়ে আনন্দ পেতে পেতে আমি খেয়াল করি নি মনস্বিতার মুখ রাগে অপমানে লালচে বেগুণী হয়ে গেছে| মনাই এমনিতে সেকেন্ড বেঞ্চে বসে, সেদিন কি জানি কেন লাস্ট বেঞ্চে বসেছিল --- হয়ত জায়গা পায় নি --- হয়ত এমনিই --- আমি খেয়াল করি নি আদৌ| মনাই ভীষণ রেগে বলে 'লাস্ট বেঞ্চ! লাস্ট বেঞ্চের মেয়েদের বই দেখতে হবে কেন??' আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হই, কিন্তু থামি না --- এক অদ্ভুত গোঁয়ার্তুমির বশে আবার উচ্চারণ করি বাক্যটা ---- মনাই আরো কিছু বলে --- আমি শুনি না, হাসিহাসি মুখে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে ---ওদের দিকে'| মনাই ঝটকা মেরে পেছন ঘুরে বেঞ্চে গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পড়ে দুইহাতের মধ্যে মাথা গুঁজে দেয় --- বসে থাকে অমনিভাবে --- কেউ এগোয় না, কিছু বলে না ---- আমার ভেতরের হিংস্র আনন্দটা হঠাৎই কেমন মিইয়ে যায়-- পেটের ভেতরে কেমন খালি খালি লাগতে থাকে| এগিয়ে গিয়ে হাইবেঞ্চের নীচে নীচু হয়ে ওর মুখ দেখার চেষ্টা করি --- দেখা যায় না, ও মুখটা হাতে গুঁজে হাইবেঞ্চের ওপরে রেখেছে| এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওর হাতের ভাঁজে কপালের যেটুকু অংশ দেখা যাচ্ছিল সেইটুকু ধরে আস্তে করে ঠেলে তোলার চেষ্টা করি -- একবার --- দুবার --- তিনবারের বার মনাই ঝটকা মেরে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় --- চোখ টকটকে লাল -- গালে অল্প জলের ধারা --- আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ আমাকে হাতে পিঠে দুমদাম করে মারতে শুরু করে দেয়| ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্রথম দুই তিন ঘা খাওয়ার পরে স্বাভাবিক প্রতিবর্ত্ম ক্রিয়ার বশেই বোধহয় আমিও উল্টে মারতে শুরু করি --- আর আমার হাত যেমন শক্ত তেমনি হাতের জোরও মাশা আল্লাহ্ ---- গোটা ক্লাস হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে, একজনও এগিয়ে আসে না আমাদের ছাড়াতে --- মাঝখানে হাইবেঞ্চ রেখে একজন নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে আর একজন খানিকটা বিস্মিত হয়ে, আমরা পরস্পরকে কিলাতে থাকি --- এরমধ্যেই কে যেন বলে 'মীনাদিমনি ক্লাসে আসছেন'| আমরা দুজনে দুজনকে ছেড়ে দিই --- ও আবার বসে পড়ে, আমি আমার জায়গায় ফিরে এসে বসি --- আড়চোখে তাকিয়ে দেখি ও একবার মুখ গুঁজে বসেও আবার মুখ তুলে বসেছে --- চোখও মুছে নিয়েছে| খানিকটা নিশ্চিন্ত বোধ করি| আমি প্রায় নিশ্চিত এইবার মা'র কাছে অভিযোগ যাবে, আমার কথা, আমার ব্যবহারের জন্য আজ প্রচন্ড মার খেতে হবে, মনাই কিম্বা অন্য কেউ, হয়ত শীলাই নালিশ করে দেবে| কিন্তু কিছুই হয় না, লাস্ট পিরিয়ডের আর অল্পই সময় বাকী ছিল, ছুটির ঘন্টা পড়ে যায়, আমরা বইটই গুটিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা দিই| মনাই আজ আমাদের সাথে পুরোটা আসে না, খানিকটা এসে গাতুকে কি যেন একটা বলে অন্যদিকে চলে যায়, গাতু আমাকে জিগ্যেস করে ওকে অমন দেখাচ্ছে কেন? আমি কিছু বলতে পারি না --- কিরকম একটা লজ্জা হয় --- খুব লজ্জা --- আমি এমনভাবে ঘাড় নাড়ি, যার কোনও অর্থই হয় না| গাতু কী বোঝে কে জানে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চুপ করে যায়, আর কিছু জিগ্যেস করে না| আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে সেদিন বিকেলে মনাই আমাদের বাড়ী আসে, কি সব যেন পড়ার কথা জিগ্যেস করে --- ওর ফুলে ছোট্ট হয়ে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে আমার খুব খারাপ লাগে, লজ্জা করে, একটু একটু কান্নাও পায় --- আমি আস্তে আস্তে বলি 'আমার খুব অন্যায় হয়েছে রে অমন করে বলা' আরো কিছু বলি, কী তা আর মনে নেই| ও-ও বলে কতকিছু, সেসবও মনে নেই| শুধু মনে আছে তারপর থেকেই আমরা দুজনে ভীষণ ভীষণ বন্ধু হয়ে গেলাম --- 'প্রিয়বন্ধু' যাকে বলে| সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত মনাই আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, আরো কত ঝগড়া হয়েছে, খুচখাচ মারামারিও হয়েছে কিন্তু বন্ধুত্ব এখনও রোদ্দুরভরা শীতের সকালের মত ঝকঝকে নরম গরম|
  • | ০৫ অক্টোবর ২০১৩ ১৭:৩৪576219
  • ক্লাস এইটের গরমের ছুটির মধ্যেই বড়মামা একটা টিভি কিনে আনল| ছোটদি ওর মাধ্যমিকের পরেই কলকাতায় ওর মামাবাড়ীতে থেকে পড়তে চলে গিয়েছিল, ছুটিছাটায় কোন্নগরে আসে, কখনও কখনও ছোটদির পরীক্ষা থাকলে বড়মামীমা গিয়ে অনেকদিন করে থেকে আসে শ্যামবাজারে| এইবছর ছোটদির পার্ট ওয়ান পরীক্ষা, পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে, গত কয়েকমাসে ছোটদি যখনই বাড়ী আসে টিভি কেনার কথা বলে, কলকাতায় নাকি প্রায় সবার বাড়ীতেই টিভি থাকে আজকাল| আমার জিজির বাড়ীতে অবশ্য টিভি নেই এখনও| কুটুবাবুর বাড়ীতেও নেই| এদিকে দাদুর মস্ত বড় রেডিওটা আজকাল প্রায়ই খারাপ হয়ে যায়, বিশেদা অনেক সময় নেয় সারাতে| দিদা প্রথমদিকে টিভির কথা শুনলেই বলত 'পুলাপানগুলার পড়াশুনা হইত না'| কিন্তু একে তো ছোটদি পড়েই কলকাতায়, এখানে বেড়াতেই আসে, তায় পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকেই আর আমাদের দুই ভাইবোনকে মা যে মোটেই টিভি দেখতে দেবে না সে নিয়ে কারো কোনও সন্দেহই ছিল না| এখন তো আর দুইবেলা রান্নার পাটও নেই, সকালেই সবকিছু করে রাখা হয়, দিদার রুটি দুখানা রাতে খাওয়ার আগে বানিয়ে নিলেই চলে, দাদু তো দুধ-খই খাবে, বড়মামা বড়মাইমা ভাত, সে দুপুরেই করা, রাতে শুধু গরম করলেই চলে, এই কটা লোকের খাবার গরম করতেই বা কতক্ষণ লাগে ---- সন্ধ্যে রাত্তিরটায় সময় কাটেই বা কী করে --- এইসব সাতপাঁচ ভেবে বড়মামা শেষ পর্যন্ত টিভি নিয়েই এল| সাদাকালো ইসি টিভি, সামনে আবার একটা শাটার লাগানো দরজা| ঐটে খুলে টিভি চালাতে হয়, চোখে উজ্জ্বল আলো লেগে চোখ যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তাইজন্য স্ক্রিনের সামনে আলাদা একটা নীল ফাইবারের স্ক্রিন লাগানো, ফলে সব লোকজন, সব অনুষ্ঠানই নীলাভ স্বপ্নিল লাগে| তখন আমাদের পাড়ায় শুধু দীপুদাদের বাড়ী টিভি ছিল, বড়মামারটা দ্বিতীয় টিভি গোটা শ্রীপল্লীতে|

    যেদিন টিভি আনা হল সেদিন ছিল শনিবার| তখন শনিবারে বাংলা সিনেমা ও রবিবারে হিন্দী সিনেমা দেখানো হত| সেদিনের সিনেমা 'ছদ্মবেশী'| দাদুর ঘরে টিভি বসানো হল, দাদুর প্রচন্ড আপত্তিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে| লোকজন এলে ওটাই বসার ঘর, টিভি ওখানে বসবে না তো ভেতরে থাকবে নাকি? টিভির কার্য্যক্রম শুরু হত বিকেল সাড়ে পাঁচটায়| শুরুর আগে থেকেই টিভি চালিয়ে রাখা হল, পর্দায় রামধনু রঙের চওড়া চওড়া ডোরা --- তার দিকেই তাকিয়ে বসে আছি আমরা সবাই| একসময় শুরু হল দূরদর্শনের অনুষ্ঠান শুরুর বাজনা, গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে এসে গেল দূরদর্শনের লোগো| সিনেমা শুরুর আগে মা আমাদের দুভাইবোনকে বলে দিল এটা বড়দের সিনেমা, আমরা যেন দেখার চেষ্টাও না করি, আমরা ঘরে গিয়ে যেন এবার পড়তে বসে যাই| আমি আর ভাই বেজার মুখে অনিচ্ছুক পায়ে আস্তে আস্তে নিজেদের ঘরে যাই, আবার উঠে এসে জানলার পেছন থেকে দেখতে থাকি -- ঘরে কাউকে নড়াচড়া করতে দেখলে সুরুৎ করে নিজেদের ঘরে ঢুকে যাই, আবার আস্তে আস্তে এসে জানলার পেছনে দাঁড়াই| পর্দায় তখন উত্তমকুমার --- প্রসাদ, উল্টোরথ,নবকল্লোলের পাতায় ছবি দেখা উত্তমকুমার, জিজির মুখে শোনা শিঙাড়া স্টাইলের চুলওয়ালা উত্তমকুমার| ঘন্টা দেড়েক পরে ভাই আর দাঁড়াতে না পেরে আস্তে করে গিয়ে মা'র কোলে শুয়ে পড়ে, মা পর্দা থেকে চোখ না সরিয়েই জিগ্যেস করে কিরে সব পড়েছিস? ভাই দিব্বি ঘাড় নেড়ে আরাম করে শোয় যেন কতই ঘুম পেয়েছে| আমি একটু এগিয়ে দাঁড়াই ভাল করে দেখার জন্য| এদিকে কোথা থেকে কে জানে প্রায় জনা পনেরো বাচ্চা ছেলে, মেয়ে বড় মহিলা চলে এসেছেন টিভি দেখার জন্য| বড়মাইমা তাঁদের জন্য মেঝেতে ঢালা শতরঞ্চি পেতে দিয়েছে| সাড়ে সাতটায় বাংলা খবর হয়, খবর পড়েন ছন্দা সেন| ছোটদি খুব বিজ্ঞের মত বলে 'জান তো ছন্দা সেনের মাথায় পরচুলা, ওঁর মাথায় এমনিতে চুলটুল বিশেষ নেই'| উপস্থিত ছোট ছেলেমেয়েগুলো অবাক হয়ে একবার পর্দায় দেখে একবার ছোটদির দিকে, কেউ কেউ নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে নেয়, কেউ কেউ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে, দাদু বিরক্ত হয়ে গলাখাঁকারি দেয়, দিদা আরো বিরক্ত হয়ে দাদুকে বলে 'চুপ কইর‍্যা শুইয়া থাহো, ভালা না লাগলে পাশ ফির‍্যা শোও'| আরো কতদিন যেন, প্রায় বছর চার পাঁচ, এরকম অনেক চেনা অচেনা লোক আসত টিভি দেখতে, সিনেমার দিন কিম্বা বিশেষ কোনও খেলা দেখানোর দিনে| কোনও কোনওদিন ঘর ভরে গিয়ে বাইরের বারান্দায়ও লোক বসে কিম্বা দাঁড়িয়ে দেখত জানলা বা দরজার ফাঁক দিয়ে|

    মস্তবড় প্রায় অচল রেডিওটা তখনও বসানো দাদুর আলমারীর মাথায়, দুপুরে কেউ হয়ত চালিয়ে মহিলামহল শুনল, কিম্বা সকাল সাতটা চল্লিশে রবীন্দ্রসঙ্গীত, কখনও দিনের পর দিন রেডিও চালালেই ঘরঘর করে আওয়াজ হয়, গান বাজে সঙ্গে বাজে ঘ্যাঁওওও আওয়াজ , কেউ না কেউ তখন কান মুচড়ে থামিয়ে দেয় রেডিওটাকে| প্রায় অচল দাদুও কখনও বসে কখনও শুয়ে থাকে, ঘরে অতিরিক্ত লোক, তাদের কথাবার্তা, উজ্জ্বল নীল আলো, কল্পজগতের হাসিকান্না মেলোড্রামায় বিরক্ত হয়ে, অতিষ্ঠ হয়ে কখনও কখনও বিরক্তি প্রকাশ করে ফেলে, কেউ না কেউ ততোধিক বিরক্তি প্রকাশ করে কিংবা ধমক দিয়ে বুঝিয়ে দেয় দাদুর বিরক্তি অসুবিধে, এসবই এখন নিতান্তই মূল্যহীন, চলেফিরে বেড়ানো লোকগুলির অসুবিধে সৃষ্টি কেবলমাত্র| ছানিপড়া ঘোলা চোখে শুন্য দৃষ্টি নিয়ে টিভির দিকে পিছনফিরে দেওয়ালের দিকে মুখ করে বসে থাকে দাদু, মেরুদন্ড সোজা রেখে| অল ইন্ডিয়া রেডিও ছেড়ে আমরা কলকাতা দূরদর্শন, দিল্লী দূরদর্শনের যুগে ঢুকে যাই|
  • i | 134.168.198.216 | ০৫ অক্টোবর ২০১৩ ১৯:৩৭576220
  • শেষ তিনটে পর্ব পড়লাম। বারবার পড়লাম।
    পিঁপড়ে দেখে পুলকিত হয়েছি-এমন ভাববেন না যেন। ঃ)

    অসাধারণ লেখা বললে কম বলা হয়। শুধু একটা শব্দ কিছুই বলে না। লেখা শেষ হলে অনেক বলার রইল। দ কে কুর্ণিশ।
  • nina | 78.37.233.36 | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ ০৮:১৬576221
  • দ আমি থ !
  • potke | 233.239.133.209 | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ ১৫:২৪576222
  • এই বইটা পাব্লিশ গুরু থেকে করতে পারেনা? আমরা না হয় যথাসাধ্য সাহায্য করলাম।
  • সিকি | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ ১৫:৪৫576223
  • এই ছোটবেলাগুলো প্রায় একদম একরকম। অনেক পুরনো স্মৃতি ঝলক দিয়ে গেল।
  • | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ২২:৪৫576224
  • ১৪)
    হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষার ঠিক পরেই জানা গেল আমাদের জুনিয়ার হাইস্কুলে যে দুজন নতুন শিক্ষিকাপদের জন্য আবেদন করা হয়েছিল, তার মধ্যে একটি অনুমোদন পেয়েছে, এবং সেটি সেলাই ও ওয়ার্ক এডুকেশানের জন্য| অন্যদিকে একটি করণিক পদ ডি আই অফিস থেকে মঞ্জুর করেছে, আবেদন না করা সত্ত্বেও| তার মানে দাঁড়াল মীনাদি'র চাকরিটা হয়ে গেল আর মা'র হল না| মা'র কপালে টিপ পরার জায়গায় ত্রিশুলের মত তিনটে খাঁজ প্রায় স্থায়ী হয়ে জেগে রইল কয়েকদিন| তারপর একদিন স্কুল থেকে এসে আমাকে বলল এবার থেকে মা নাকি স্কুল থেকে বাড়ী আসবে না, রান্নাবান্না সকালেই করে রেখে যাবে, আমি যেন এসে নিজে নিয়ে ভাইকে দিয়ে খেয়ে নিই| কিন্তু ভাইকে তো এখনও খাইয়ে দিতে হয়, নিজে খেলে ভাই প্রায় কিছুই খায় না, সবটা ভাত নিয়ে ফেলে ছড়িয়ে থালার মধ্যে নানারকম ডিজাইন বানিয়ে রেখে দেয়| তাহলে? বলতেই মা বলল আমাকেই খাইয়ে দিতে| তারপর বিকেলে বড়মামা বাড়ী এলে মা জানাল গোপালবাবু বলেছেন মা'র পোস্টটা অনুমোদন পায় নি বটে, তবে পেলেও ওটায় বি এড পাশ হওয়া আবশ্যক| এখন নাকি বিটি কোর্স নাম বদলে বি এড হয়ে গেছে| সরকার থেকে ইংরাজী দিদিমণির অনুমোদন দিলেও বি এড পাশ না হলে মা'কে ওঁরা নিতে পারবেন না| তাই ওঁর প্রস্তাব হল মা যেন এখন ঐ করণিক পদেই যোগ দেয়, সেক্ষেত্রে মাসিক মাইনেটা সুনিশ্চিত হবে, মা যেন হাওড়া গার্লসে বি এডে ভর্তি হয়ে যায়, এদিকে মা যেমন ক্লাস নিচ্ছে নিতে থাকুক, ওঁরা কিছু ক্লাস কম করে দেবেন আর এক পিরিয়ড আগে ছেড়ে দেবেন, যাতে হাওড়া পৌঁছে ক্লাস করতে পারে| রাজী না হলেও তো আর মা'র কাছে অন্য কোনও পথ খোলা নেই, এতে অন্তত সরকারী স্কেল অনুযায়ী নিয়মিত মাসিক বেতনের ব্যবস্থা হবে| আর কমিটি থেকে ব্যবস্থা করে টাকা দিতে হবে না| এটাই আপাতত ভাল ব্যবস্থা হল বলে সবাই একমত হয়, তবু বাতাসে ফিসফিসিয়ে ভেসে বেড়ায় 'কেরাণী' --- 'কেরাণী' ---- আবছা আলোচনা শুনি, সবাই যাতে 'কেরাণী' বলে না ভাবে তাইজন্যই নাকি ক্লাসগুলো দেওয়া হয়েছে, গোপালবাবুর মত মহৎ মানুষ খুবই কম দেখা যায়| শিক্ষিকার বদলে করণিক হওয়াটা একটু নীচুগোছের ব্যপার সেটা বেশ বুঝতে পারি|

    বোধহয় সেপ্টেম্বর মাস থেকে মা ক্লাস করা শুরু করল, আগেই কিছুদিন ক্লাস হয়ে গেছিল, তবে তাতে কোর্সে ভর্তি হতে অসুবিধে হয় নি| বাসন্তিদি, হাইস্কুলের বড়দিমণি প্রমীলাদির ছোটবোন, হাওড়া গার্লসের বি এড কোর্সের অধ্যাপিকা মা'কে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন| মা যখন বাংলাদেশ থেকে এসে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ে নাইন ও টেন পড়ে ম্যাট্রিক দেয়, তখন বাসন্তিদি সেখানকার শিক্ষিকা ছিলেন| প্রাক্তন এই ছাত্রীটির প্রতি তাঁর মায়া ছিল আর ছিল 'যতটা পারি মেয়েদের ডিগ্রী বাড়াবার ব্যবস্থা করে দিই' এই ইচ্ছা, তাই ভর্তির সময় পার হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন| বাসন্তিদি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অসম্ভব সুরেলা কন্ঠে সংস্কৃত স্তোত্রপাঠ করতেন, চন্ডীপাঠও করতেন, কলকাতা দূরদর্শনেও মাঝে মাঝে থাকত তাঁর অনুষ্ঠান| ভুল চিকিৎসায় একটি চোখ তাঁর অন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তা তাঁর জীবনীশক্তিতে থাবা বসায় নি, ঘুরে বেড়াতেন দেশ বিদেশ আর যেখানেই যেতেন সেখানেই তাঁর চারপাশে কয়েকটি নেড়ি কুকুর, দুই একটা বিড়াল| মা'র কাছে শুনেছি হাওড়া গার্লসে তিনি ক্লাসে এসে ডায়াসে বসামাত্রই একটা মোটাসোটা লালচে নেড়ি এসে তাঁর কোলে ওঠার চেষ্টা করত, দুই একবার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি বলতেন 'যা এবার আমাকে পড়াতে দে', কুকুরটি আস্তে আস্তে ডায়াস থেকে নেমে দুদিকের ফার্স্ট বেঞ্চের মাঝের জায়গাটুকুতে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকত, কখনো কখনো দুই থাবার ফাঁকে মুখ রেখে একটু ঘুমিয়েও নিত্| আবার ক্লাস শেষ হলে আস্তে আস্তে উঠে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে ওঁর পেছন পেছন চলে যেত|

    মা'র দিন শুরু হত তখন ভোর সাড়ে তিনটে কি চারটেয়| উঠে বাসিকাপড় ছেড়ে মুখ্চোখ ধুয়েই মা রান্না শুরু করত| একটা শুক্তো কিম্বা তিতাভাজা, শীতের দিন হলে শাক, একটা ডাল, ডালের সাথে খাবার জন্য হয় ঝিরিঝিরি আলুভাজা, নয়ত পোস্ত বড়া কিম্বা পোস্তআলুর বড়া, নয়ত বেগুনভাজা/পটলভাজা, একটা নিরামিষ তরকারী, মাছের ঝোল, সকালের খাবার, কোনও কোনওদিন টিফিনের জন্য একটা শুকনো তরকারী, রুটি| তারপর সাড়ে পাঁচটায় কলে জল এলে ভাত বসিয়ে মা যেত স্নান করতে, স্নান করে এসে ঠাকুরকে দিতে দিতেই আমি উঠে মুখ ধুয়ে তৈরী হয়ে নিতাম| তারপর রুটি তরকারী বা পাঁউরুটি জেলি খেয়ে স্কুলে বেরিয়ে যেতাম গাতু আর মনাইয়ের সাথে| মা ভাইকে উঠিয়ে দাঁত মাজিয়ে মোটামুটি তৈরী করে রেখে বেরিয়ে যেত, স্কুলে যাতে প্রেয়ারের আগে পৌঁছতে পারে, অ্যাটেনড্যান্স খাতায় লালকালি না পড়ে, তাই হনহন করে হাঁটত| স্কুলে মোটামুটি তিনটে পিরিয়ড ক্লাস থাকত আর দুটো অফ, সেই অফ পিরিয়ডে মা বসে ছাত্রীদের বেতন নিত, বুককিপিং শিখত| ছাত্রীদের বেতন ছিল মাসে দু'টাকা, উন্নয়ন ফী বাবদ| দশটায় বেরিয়ে আবার হনহনিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্টেশান, ট্রেন ধরে হাওড়া, সেখান থেকে কলেজ| ফিরতে ফিরতে হত প্রায় বিকেল সাড়ে চারটে পাঁচটা| হাতমুখ ধুয়ে ভাত খেতে বসে --- দিনে একবারই ভাত খেতে পারে মা, তারপর স্কুলের কিছু কাজ বা খাতাদেখা, সন্ধ্যে হলে ভাইকে নিয়ে পড়তে বসানো, ভাই কিছুতেই পড়তে চায় না, কবিতা মুখস্ত করে না --- মা ধৈর্য্য হারায় --- চীৎকার করে বকে, মারেও --- আবার চেষ্টা করে পড়া বুঝিয়ে দিতে ---- এই হট্টগোলের মধ্যে আমি প্রাণপণে ইতিহাস পড়ি ---- অঙ্ক করি --- কখনও কখনও ভয়ে ভয়ে বড়মামার কাছেও নিয়ে যাই --- ন'টা বাজলে মা আমাদের রাতের খাবার দেয়, ভাঁড়ার ঘরের কোণে বসিয়ে প্রথমে ভাইকে খাইয়ে দেয়, তারপর তার একটু পাশে আমাকে খেতে দেয়| খেয়ে উঠে ভাইয়ের আর আমার এঁঠো তুলে বাসন কোণায় স্তুপ করে রেখে জায়গাটা প্রথমে এককুচি গোবর আর অল্প জল দিয়ে মুছতে হয়, তারপর ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে| প্রচন্ড ঘেন্না করে আমার ---- অন্য কোনও প্রাণীর বর্জ্য কীভাবে আরেকরকম প্রাণীর ব্যবহার্য্য মাটিকে শুদ্ধতা দেয় তা মাথায় আসে না| কোনো কোনোদিন গোবর ততটা শুকনো না থাকলে, জলে দিয়ে মোছার পর লাল টুকটুকে সিমেন্টের মেঝেতে ঘোলা রঙের দাগ হয় --- খেয়াল করলে দেখা যায় আসলে সেগুলো অনেক ঘোলা ঘোলা বিন্দুর সমাহার --- সদ্য পেটে যাওয়া খাবারদাবারগুলো গলা দিয়ে ফেরত আসতে চেয়ে তোলপাড় করে পেটের ভিতরে -- আমি কোনোমতে দরজার গায়ে আটকে থাকা নধর ফর্সা টিকটিকিটার দিকে তাকিয়ে আরো জল দিয়ে ভিজিয়ে ন্যাকড়া চিপে চিপে জল ফেলে থুপথুপিয়ে চেপে চেপে ঘষে ঘষে মুছি --- বাথরুমে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ঘষে ঘষে ধুই, মাইসোর স্যান্ডেল সাবান ---- ভয়ে ভয়ে হাত তুলে নাকের কাছে আনি ---- নাঃ বেশ চন্দনের মত গন্ধ| এইবার ঘরে এসে আমাদের মশারি টাঙিয়ে দিয়ে মশারির একপাশ তুলে চাদর দিয়ে গুঁজে রেখে বাইরে খাটের একধারে মা নিজের পড়াশোনা নিয়ে বসে --- একটু পরেই প্রথমে আধশোয়া ও পরে পুরো শুয়ে পড়ে, বই তুলে নেয় হাতে --- আস্তেধীরে বই নেমে আসে বুকের ওপরে ----- মা অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে --- টিউব লাইটটা জ্বলতে থাকে ---- আমি জেগে গেলে ডেকে দিই, মা উঠে কেমন লাজুক মুখে আবার বই নিয়ে বসে ---- আবার ঢুলে পড়ে ---- কখন কত রাতে আলো নিভিয়ে শোয় তা টের পাই না|
  • hu | 12.133.58.76 | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ১৪:২৫576226
  • পড়ছি
  • sosen | 125.242.251.82 | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ১৫:১৩576227
  • আছি। হাঁটছি।
  • | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৮:২০576228
  • এই বছরই হাপিয়ার্লির পরে আর পুজোর ছুটির আগে আরো দুটো ঘটনা ঘটে| মা যবে থেকে বি এড পড়তে যাওয়া শুরু করে তারও বেশ মাসখানেক আগে হঠাৎ এক সকালে বাড়ীতে, পাড়ায়, স্কুলে সাংঘাতিক হইচই, উত্তমকুমার মারা গেছেন| এদিকে আমাদের তো বড়দের সিনেমা দেখা বারণ ছিল, সেই টিভি এল দিনে দরজার পাশ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা ছদ্মবেশী আর টিভিতেই দেখা খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন --- এই হল আমার দেখা উত্তমকুমার| তা তাতে আমার বাপু খুব একটা ভাল টাল লাগে নি, বরং জয়বাবা ফেলুনাথের ফেলুদা সৌমিত্রকে দারুণ ভাল্লেগেছে, সবুজ দ্বীপের রাজা'র কাকাবাবু সমিত ভঞ্জও খারাপ না| কিন্তু এই ডালের বড়ার মত নাকওয়ালা চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়া লোকটাকে নিয়ে সকলের এই চোখ ছলছল আদিখ্যেতা দেখে আমি একেবারে অবাক হয়ে যাই| আমার ম, যে নাকি সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকে আর রাগলেই কপালে ভাঁজ পড়ে পড়ে যার টিপের জায়গায় কেমন ত্রিশূলের মত খাঁজ খাঁজ হয়ে গেছে, সেও কেমন নরম নরম মুখ করে ছলছল চোখে ঘোরে!! কতজন যে কেঁদে ভাসাল তার ঠিক নেই --- স্কুলে শ্যামা, সুতপা, ছবি, চৈতালী, মনাইরা ভীষণ আলোচনা করে, এমনকি রীতা মন্ডলও তাতে যোগ দেয়! রীতাকে যে এত সিনেমা দেখতে দেওয়া হয় তা তো জানতাম না! শুধু আমি আর রীমা বিশেষ কিছু বলতে পারি না, আমি তাও দুটো সিনেমা দেখেছি, রীমা নাকি একটাও দ্যাখেনি| আমি যখন বলি 'এম্যাগো ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়!', রীতা বলে না ওঁর ঠোঁট খুব লালচে, ওর দিদি দেখেছে সামনাসামনি, সাদাকালো টিভিতে অমনি দেখায়, তাই আমার মনে হচ্ছে আলগা রং লাগানো, ওটা ঠিক নয়| আমি আর কিছু বলতে পারি না| রীতার দিদি রীনা অন্য কোন স্কুল থেকে যেন ক্লাস ফোরের বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়ে আমাদের স্কুলে এসে সিক্সে ভর্তি হয়েছিল, আমরা তখন ফাইভে| সেই থেকে ওর দিদিকে বৃত্তি পাওয়া মেয়ে বলে আমরা খুব সম্মান করতাম, দিদিমণিরাও ভালবাসতেন| সে যখন দেখেছে, তার ওপরে তো আর কথা চলে না| এদিকে টিভিতে পরপর দেখানো হতে থাকে উত্তমকুমারের সিনেমা, তার মধ্যে দুই তিনটে আমারও দেখার অনুমতি মেলে| তারই মধ্যে একটা নায়ক, আর একটা কি করে জানি না, বন পলাশীর পদাবলী| 'বড়দের সিনেমা'র সংজ্ঞা অনুযায়ী এটা বড়দেরই সিনেমা, সে যাই হোক এই সিনেমাটার গানগুলো যে কি ভাল লাগল ---- লুকিয়ে চুরিয়ে বড়দের কান বাঁচিয়ে আমিও গুনগুন শুরু করলাম
    'আহা চলিতে চলিতে বাজায় কাঁকন পরনে নীলাম্বরী
    পাগল আমি ও রূপ দেখে, মনে হয় যে অঙ্গ থেকে
    ও রূপ চুরি করি, চুরি করি ---;'
    ছোটদি একদিন শুনতে পেয়ে যায়, বলে ধুস এটা নয় আরো ভাল গান হল
    'দেখুক পাড়া পড়শীতে, কেমন মাছ গেঁথেছি বঁড়শীতে-এ
    দেখুক ক্যানে পড়শীতে
    এ যে রুই কাতলা মিরগেল তো লয়
    মারে প্রেমের কাঁটা জান নিতে'
    আমি ভীষণ তর্ক জুড়ে দিই না না সবচে ভাল
    'ভোলা মন, মন আমার এমন করে ছিঁড়ল ক্যানে একতারাটার তার
    তোর উদাস বাউল নেই তো বাউল আ-আ-আ-আ-আর'
    তর্ক মেটে না, মনাইয়ের সাথেও খুব তর্ক হয়| ও উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা বলতে একবারে গদগদ হয়ে যায়, আমি বলি ভ্যাট ডালের বড়ার মত নাক, তবে হ্যাঁ বনপলাশীর পদাবলীর গানগুলো খুব সুন্দর| মনাই বলে উত্তম-সুচিত্রার সব সিনেমার গানই সুন্দর সুন্দর| বিকেলবেলা গল্প করার সময় মনাই আমাকে শাপমোচনের গল্প বলে, ইন্দ্রাণীর গল্প বলে --- আমি গল্পের সাথে মিলিয়ে নিই 'সুরের আকাশে তুমি যে গো শুকতারা' , 'শোনো বন্ধু শোনো প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা' কিম্বা 'সূর্য্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো; গোধুলীর রঙে হবে এ ধরণী স্বপ্নের দেশ তো'| এতদিন এ সব গান শুনেছি বিবিধ ভারতীতে সন্ধ্যে ৫টা ৪৫ মে 'মনের মত্ গান, মনে রাখা কথা' অনুষ্ঠানে আর কখনও সখনও কালীপুজোর সময় পাড়ার মাইকে| তাও ছোটদি না থাকলে মনের মত গান শোনা হয় না| আর এখন তো ছোটদি থাকলেও আমি ইকেলটা মনাইয়ের সাথে গল্প করেই কাটিয়ে দিই| গল্পের সাথে গানের মিশেলে আস্তে আস্তে ডালের বড়ার মত নাক ছাড়িয়ে মূখ্য দর্শনীয় হয়ে ওঠে উত্তমকুমারের স্ক্রীন প্রেজেন্স, সাদাকালো টিভির পর্দা জুড়ে উজ্জ্বল এক উপস্থিতি, আসলে তা অনুপস্থিতিই| ঠিক সময়মত নানারকম ছলছুতো করে দেখতে থাকি বৃহষ্পতিবারের চিত্রমালা, এখনও ফেলুদা সৌমিত্রকে অসাধারণ লাগে, কিন্তু উত্তমকুমারকে দেখে আর অত নাক সিঁটকাই না, কানে গলায় কতদিন যেন সমানে লেগে থাকে
    'মন আ-আমা-আ-আর এমন করে ছিঁড়ল ক্যানে একতারাটার তার
    তোর উদাস বাউল নেই তো বাউল আ-আ-আ-আ-আর'
  • a x | 86.31.217.192 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৮:২৫576229
  • :-)

    তারপর?
  • sosen | 125.242.254.174 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৯:০৫576230
  • প্রথম বনপলাশীর পদাবলী দেখে সাংঘাতিক ভালো লেগেছিল। এখনো মনে আছে।
  • | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৯:০৭576231
  • সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ছোটমামার মেয়ে দোলন হল, হল অবশ্য দিল্লীতে, ছোটমাইমার বাপের বাড়ি, কিন্তু তাতে আমাদের উৎসাহের কিছু কমতি হল না| সেই ভাই আর খুকু প্রায় পিঠোপিঠি, তাও খুকুকে খুব একটা কোলে টোলে নিতে পারি নি, খুকু খুব একটা কোলে আসতে চাইত না| আসবে তো কোন্নগরে ছোটমাইমা পুঁচকিটাকে নিয়ে, রাঁচিতে ছোটমামার ওখানে যাওয়ার আগে এখানেও দুই একমাস থেকে যাবে| এমনিতে ছোটমাইমার সাথে আমার খুব ভাব সেই ছোটমামার বিয়ের পর ছোটমাইমা যখন এখানে মাস কয়েক ছিল, তখন থেকেই| ছোটমাইমাই প্রথম জানে কিশোরকুমার নামক প্রতিভার গল্প| এর আগে আমাদের বাড়ীতে হিন্দী গান, হিন্দী সিনেমা একেবারে কঠোরভাবে বারণ ছিল, এমনকি অনেকসময় পাড়ার মাইকে হিন্দী গান বাজলেও দাদু বা বড়মামা সমস্ত জানলা বন্ধ করে দিতে বলত| কিন্তু হায়, গান তো দরজা খটখট করে খোলা দেখে তবে ঢোকে না, তাই ভাই উঠোনে দৌড়াতে দৌড়াতে মনের আনন্দে গায় '---- কাঁহা জান ফাঁসায়ি-ঈ ম্যায় তো সুলি পে চড়্ গ্যয়া হায় হায় --- ক্যায়সা সিদাসাদা ক্যায়সে ভোলাভালা হাঁ হাঁ---', মা বা দিদা শুনতে পেলে ডেকে নিয়ে খুব বকে| অনেকদিন আগে ছোটমামা একটা রেকর্ড প্লেয়ার কিনেছিল, চিনুমামা একবার বেড়াতে এসে তাতে দুদিন ধরে কিশোরকুমারের 'মেরে নয়না শাঁওন ভাদো' রের্ক্ডটা সমানে বাজিয়ে যাওয়ার পর দিদা চিঠি লিখে রাঁচিদিদাকে অভিযোগ জানিয়েছিল| এরকম যখন অবস্থা, তখন ছোটমাইমা আমাকে কিশোরকুমারের ব্যান হয়ে যাওয়ার গল্প বলে, ব্যান ওঠার গল্প বলে আর ছোট্ট ট্র্যানজিস্টারে বিবিধ ভারতী ধরে কিশোরকুমারের গান হলেই আমাকে ডেকে ভলিউম খুব আস্তে করে দিয়ে শোনায়, সিনেমার গান হলে গল্পটা বলে দেয়, অন্য গানগুলোর কথা বলে| ছোটমাইমার কাছেই আমি প্রথম বনিএমের গান শুনি, অ্যাবা শুনি, ক্লিফ রিচার্ডস শুনি, জানতে পারি লিরিলসুন্দরীর নাম কারেন ল্যানেল| সেই ছোটমাইমার একটা পুঁচকি হয়েছে আর তাকে নিয়ে এখানে এসে থাকবে গোটা শীতকালটা, কারণ রাঁচিতে ভীষণ ঠান্ডা, এই খবরে আমার উল্লাসের সীমা থাকে না| শুরু হয়ে যায় দিনগোণা|

    এদিকে মা স্কুল থেকেই ক্লাসে চলে যায়, বাড়ীতে এসে আমি স্নান করতে করতেই দিদা ভাইকে কুয়োতলায় নিয়ে স্নান করিয়ে দেয় তারপর দুজনকে একসাথে খেতে দিয়ে ভাইকে খাইয়ে দেয়| মা সব আলাদা করে দুজনের থালায় রেখে যায় শুধু দুটো মাছের টুকরো আর ঝোল একটা বাটিতে থাকে| আমার খাওয়া হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি কিন্তু দিদা আমাকে মাছের বাটিতে হাত দিতে দেয় না --- নিজে বাটি থেকে একটা একটা করে মাছের টুকরো তুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে --- চোখে দেখে বোঝা না গেলে বাটির মধ্যে দুটোকে পাশাপাশি রেখে বোঝার চেষ্টা করে কোনটা বড়, কোনটা একটু মোটা --- তারপর যেটাকে একটু ছোট মনে হয় সেই টুকরোটা আমার পাতে তুলে দেয়, বাটি কাত করে ঝোল ঢেলে দেয় --- আলু বা অন্য কোনও তরকারি থাকলে তার টুকরো দেয় দুয়েকটা --- রোজ রোজ --- সপ্তাহে ছ'দিন একইরকম| ডিম থাকলেও একই ব্যপার, ভাই বেচারি আবার তখন মাছ খেতে একেবারেই ভালবাসত না| এমনি করে দিনগুলো দিব্বি কেটে গিয়ে শীতকালও এসে গেল, পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল, ছোটমাইমাও দোলনকে নিয়ে এসে গেল| ছোটমামা ওদের রেখে আবার রাঁচি গেল কিছুদিন বাদে এসে নিয়ে যাবে| এইসময় লালীরও বাছুর হয়েছে দিন পনেরো কুড়ি হল, প্রচুর দুধ বাড়ীতে, সবাই খুশী বাচ্চাটা একদম টাটকা দুধ পাবে| লালীর বেশীরভাগ বাছুরগুলোও এঁড়ে হয়, দুধ ছাড়লেই ওদের বিক্রী করে দেওয়া হয়, আকাইম্যাই ছিল বকনা| দাদু অসুস্থ হয়ে প্রায় ঘরবন্দী হয়ে যাওয়ার পর আকাইম্যাকে বিক্রী করে দেওয়া হয়েছিল| দাদু সুস্থ ছিল সময় অনেক চেষ্টা করেছিল আকাইম্যাকে 'গাভীন' করার, ভেট ডেকে এনে চিকিৎসাও করিয়েছিল, তারপর আকাইম্যা দুইবার 'ডাক'ও দিয়েছিল, সেইমত ওকে পাল খাওয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কানাইপুরে| কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু ফল হয় নি, এদিকে আকাইম্যা আবার ভারী বদমেজাজী ছিল, যখন তখন সুযোগ পেলেই গুঁতিয়ে দিত| তাই দাদু অসুস্থ হওয়ার পর দিদা বড়মামাকে বলে ওকে বিক্রী করে দিতে, কিন্তু কোনও কশাই যেন না কেনে| তাহলে ওকে কে নেবে? আর কেনই বা নেবে? ওকে দিয়ে তো আর হালচাষও করানো যাবে না, তাহলে? শেষপর্যন্ত অবশ্য খোকা মিস্তিরির পরিচিত আরেকজন এসে কিনে নিয়ে যান, ওঁর সর্ষেতেলের ব্যবসা, নাকি ঘানি টানাবেন| আকাইম্যা কিছুতেই যেতে চায় না, মাথা বেঁকিয়ে গলা থেকে দড়ি খোলার চেষ্টা করে, খোঁচা খোঁচা শিঙ দিয়ে গুঁতানোর চেষ্টা করে, হাত ছাড়িয়ে দড়িশুদ্ধ দৌড় দেবার চেষ্টা করে --- যাঁরা নিতে এসেছিলেন তাঁদের একজন হাতে ছপটি দিয়ে নির্মমভাবে সপাৎ সপাৎ করে মারেন --- টানতে টানতে ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে নিয়ে যান --- আকাইম্যার কপালের দুই শিঙের মাঝখানে সাদা টিপের মত অংশটা একবার ঝিকিয়ে ওঠে মাথা উঁচু করার মরীয়া চেষ্টায়, তারপর চলে যায় পুরো দলটা|
  • de | 130.62.197.176 | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৯:৫৬576232
  • অপূর্ব হচ্ছে!! এই লেখাটা বই হয়ে বেরোক!
  • | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ২০:১১576233
  • ১৫)
    নতুন বছরে ক্লাস নাইন, শাড়ী পরে যেতে হবে স্কুলে, মেরুণ পাড় সাদা শাড়ী| মা একদিন কলকাতা গিয়ে গড়িয়াহাটের অমৃত বস্ত্রালয় থেকে কিনে আনল লালচে মেরুণ পাড় কোরা রঙের শাড়ী আর অমনই লালচে মেরুণ রঙের ব্লাউজ| শাড়ীটা অবশ্য বাড়ী আনল না ভবানীপুরে নেমে সোজা নদীয়া শাল রিপেয়ারিঙ্ স্টোর্সে ধুয়ে কোরা তুলতে দিয়ে এল| আর্জেন্টে কাচিয়ে কোরা তুলে ধপধপে সাদা শাড়ীটা জিজি এসে দুদিন বাদে পৌঁছে দিয়ে গেল| এদিকে কোন্নগরের শ্রীদুর্গা বস্ত্রালয় থেকেও একটা মেরুণ পাড় শাড়ী কেনা হল, এটা আর কোরা টোরা নয়, কালচে সাদা রঙ প্রথম থেকেই আর পাড়টাও কেমন জামের কষের মত বেগুনীমত মেরুণ| আমার তো ওটা একদমই মেরুণ মনে হল না, কিন্তু আমাদের স্কুলের ড্রেস বলে নাকি ওরা ওরকম শাড়ীই বিক্রী করে| দুটো কিনে রাখা হল কারণ দুই বছর চালাতে হবে আর বর্ষাকালে ভিজে টিজে যেতে পারে, এইসব ভেবেই| আমি অবশ্য শাড়ী পরতে শিখে গেছি সেই ক্লাস সেভেন থেকেই| প্রথম বোধহয় জিজি একটা সবুজ রঙের শাড়ী দিয়েছিল হলুদ পাড়ওয়ালা, ভেতরে বড় বড় হলুদ রঙের চক্রের মত ছিল| ওটা আমি মাঝে মাঝে শখ করে বাড়ীতে পরতাম| সেভেনে পুজোর সময় নাকি জন্মদিনে মা কিনে দিল খুব সুন্দর একটা হাল্কা বেগুনী রঙের ডিসিএম মিলসের ছাপা শাড়ী| ছোটদি যখন ক্লাস সেভেন তখনই নাকি দিদা ওকে পুরো শাড়ী ধরাতে চেষ্টা করেছিল, পারে নি অবশ্য বড়মাইমাদের আপত্তিতে, আমাকে এই নাইনে উঠতেই দিদা একবার বাড়ীতেও শাড়ী পরার কথা বলতে আমি একেবারে না শোনার ভান করেছিলাম| তারপর মা'কে বলেছিল কিনা জানি না, তবে মা আমাকে কিছু বলে নি| মা'র দুয়েকটা রঙীন শাড়ী তখ্নও আছে, সেগুলোও আমার| বাবা যেদিন অসুস্থ হয় তার আগের দিন মা বোম্বে ডাইং থেকে একটা খয়েরী রঙের ওপরে সাদা ফুল আঁকা পাড়, গায়ে সাদা ছোট ছোট তারার মত ফুলফুল শাড়ী কিনে এনেছিল নিজের জন্য| পরেরদিনই বাবা সন্ধ্যেবেলা অসুস্থ হয় আর তার পরের সকালেই মা'র বাকী জীবনের মত রঙীন শাড়ী পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যায়| সেই শাড়ীটা অপয়া বলে কেউ নিতে চায় নি, মা'ও দিতে চায় নি| বড়মাইমা একবার বলেছিল ওটা বুড়ীর মা-মাসিকে দিয়ে দিতে, মাসিও সাদা শাড়ী পরে, ওর কোনও মেয়েকে দিয়ে দেবে নিশ্চয়| মা কিছুতেই রাজী হয় নি, খালি বলে 'না শাড়ীটা যদি সত্যি অপয়া হয় --- জেনেশুনে কার সর্বনাশ করব?' আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছি এই শাড়ীটাও আমি পরব, আমিই পরব| আর একটা শাড়ী আছে মায়ের, চকোলেট রঙের সিল্ক,সোনালি জরির পাড়, জরির চৌকো চৌকো বুটি একটু দূরে দূরে| ওটা আমি দুই তিনবার সরস্বতী পুজোয় বা স্কুল ছুটির দিনে পরেছি| খুব পছন্দ আমার শাড়ীটা, এটাও নাকি ছোটদি নিয়ে নিতে চেয়েছিল, মা আর পরবে না বলে, কিন্তু শাড়ীটা একটু হাতে ছোট, ছোটদির ছোট হয়, তাই রয়ে গেছে| আমি বেঁটেখাটো মানুষ, ক্লাস ফাইভের পর আর লম্বা হই নি, তাই আমার অসুবিধে হয় না|

    জিজির এদিকে আবার শাড়ী কেনার ভীষণ ঝোঁক, নিজের জন্যও কেনে মা, ছোড়দি, দিদিভাইদের জন্যও কেনে, এখন আবার আমার জন্যও কিনে আনে| এখন জিজির স্কুলটা বেশ দাঁড়িয়ে গেছে, কাকে কাকে সব ধরেটরে যেন আইসিএসই বোর্ডের অ্যাফিলিয়েশান পেয়েছে, ফলে জিজির স্কুলের বাচ্চারা এখন সরাসরি আইইসিএসই পরীক্ষায় বসতে পারে, আগে কয়েকবছর নবনালন্দা স্কুল থেকে পরীক্ষা দিতে হত| ঐজন্য তখন বেশী ছাত্রছাত্রী হত না| এখন প্রচুর ছাত্রছাত্রী আসছে তাই জিজির এখন হাতে অনেক টাকা থাকে আর তাই প্রত্যেক মাসেই প্রায় রমেশ মিত্রর মোড় ছাড়িয়ে জগুবাজারের দিকে এগোলে যে রামকৃষ্ণ বস্ত্রালয় আছে, সেখান থেকে শাড়ী কিনে আনে| সেই যখন ঠাকুর্দা মারা গেল, তখনও তো বাবা কলেজে পড়ে, বাড়ীতে খুব অভাব, জিজির শাড়ী ছিঁড়ে গেছিল সবকটা, ঠাকুমা বলেছিল জিজিদের জ্যাঠামশাই এলে তাঁকে বলতে --- জিজি শাড়ীর কথা বলায় তিনি নাকি বলেছিলেন 'যা পাড়ার কারো থাইক্যা মাইগ্যা পর গা'| সেই অপমানে জিজির নাকি শাড়ী দেখলেই মাথার মধ্যে সব গোলমাল হয়ে যায় আর খালি খালি কিনে ফেলে| অত অত শাড়ী একলা পরবে কী করে! তাই চেনা অচেনা আধাচেনা সবাইকে দিয়ে বেড়ায় ---- কতজনে সামনে দিব্বি হেসে হেসে শাড়ী নিয়েছে আর আড়ালে 'পাগলী -- যে কোনও শাড়ী একটু ভাল বললেই দিয়ে দেয়' বলে হাসাহাসি করেছে, জিজি জানেও সেটা,তবু নিজেকে থামাতে পারে না| জিজির সেই জ্যাঠামশাই কবে মারা গেছেন --- তাঁকে দেখাতে না পেরেই বোধহয় জিজি বাকী সমস্ত পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে চায় জিজির স্বোপার্জন কিনে নিতে পারে গোটা একটা দোকানের সমস্ত শাড়ী --- বাকী পৃথিবী ফুটে থাকা কাঁটার কথা জানে না --- হাসে, মুখ ভ্যাঙচায় --- জিজি রক্তাক্ত হয় --- তবু থামতে পারে না|
  • I | 24.96.29.157 | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ২০:৪৬576234
  • পড়ছি। চলুক।
  • π | ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ ০০:৫৮576235
  • পড়ছি ...
  • | 24.97.152.29 | ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:১২576237
  • দেআইপাই,
    থ্যাঙ্কুস :-)
  • siki | 135.19.34.86 | ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ ১১:৩৮576238
  • চুপ করে বসে আছি। পড়া হয়ে গেছে।
  • | ০২ জানুয়ারি ২০১৪ ১৫:৫১576239
  • ক্লাস নাইন মানে হাইস্কুল, জুনিয়ার হাইয়ের পাট শেষ, আর টালির চাল মাটির মেঝে নয়, নাইন টেন দুটো ক্লাসই মূল বিল্ডিঙে পাকা ঘর। মেয়েদের স্কুলের সেই বাড়ী অবশ্য তৈরী হয়, শুরুই হয় নি মোটে। শুনতে পাই আবার নাকি স্কুল কমিটির নির্বাচন আসছে, এবারে গোপালবাবুদের জিতে যাওয়ার কথা, যাঁরা ওদের বিরুদ্ধে স্কুলের ফান্ড আটকে রাখার, অপব্যবহার করার এমনকি নয়ছয় করার অভিযোগ এনেছিলেন এই তিন বছরে তাঁরাও সেই ফান্ড নিয়ে কিছু করে উঠতে পারেন নি। কেউ কেউ নাকি জিজ্ঞাসা করেছিলেন মেয়েদের স্কুলের বাড়ী তৈরী কবে শুরু হবে? তার উত্তরে সেই রেজিস্টার্ড সোসাইটির ফান্ড ব্যবহারের আইনগত অসুবিধের কথাই শোনা গেছে, যা গোপালবাবুরাও বলতেন। তাহলে যে অতসব অভিযোগ ছিল? সেসব নাকি সব মিটে গেছে। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের কথা যাঁদের নামে অভিযোগ ছিল, তাঁরাও কেউ কিছু রাগমাগ করেন না, অন্তত আমরা দেখি না। শোনা যায় ছেলেদের স্কুল মানে রাজেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যালরের কমিটি দর্শনবাবুদের হাতেই থাকবে আর মেয়েদেরটা গোপালবাবুদের। কোনও স্কুলেরই পড়াশোনা, পরিকাঠামোর অবস্থা বিন্দুমাত্রও পরিবর্তন হয় না, সব যেমন ছিল তেমনই থেকে যায়। আমার ভারী অবাক লাগে, মা'কে জিগ্যেস করলে মা বিশেষ কিছু বলতে চায় না, খুব একটা মাথা ঘামায় এমনও মনে হয় না। শুধু পুরবীদিদিমণি অনেকটা বিতৃষ্ণা নিয়ে বলেন 'লালঝান্ডাপার্টি এরকমই বদমাইশ, মিথ্যে কথা বলে কচি কচি ছেলেগুলোর মাথা চিবিয়ে খায়।' মা শুনে আবার বলে হ্যাঃ পুরবী নিজেই তো এক লালঝান্ডিওয়ালি। স্কুলে একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারি পূরবীদির বর নাকি লালপার্টি করতেন সেই সূত্রেই ছেলেও শুরু করে ক্লাস টেন থেকেই, তারপর মাধ্যমিক কোনোমতে পাশ করে গেলেও সারা দিনরাত পার্টির কাজ করে করে উচ্চমাধ্যমিক আর পাশ করতে পারেই নি, এখনও পারে নি। কথা ছিল পার্টি থেকেই ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করবে, সেও হয় নি এখনও, হওয়ার খুব একটা আশাও নাকি নেই অন্তত উচ্চমাধ্যমিকও পাশ না হওয়ায়। উনি আর ওঁর বর দুজনেই যদিও চাকরি করেন, তবু ছেলের নিজস্ব কোনও রোজগার নেই, নিজের পায়ে দাঁড়ানো বলতে যা বোঝায় সেটা হওয়ার কোনও উপায়ও দেখা যাচ্ছে না। কেমন যেন অদ্ভুত লাগে, সব কেমন যেন গুলিয়ে দেওয়া। একে তো 'পার্টি' বলতে যা ধারণা ছিল সেটা একটু ধাক্কা খেল, তার ওপরে পূরবীদিদিমণি নিজে পার্টি করতেন এমন কথা কেউই বলল না, ওঁর বর এবং ছেলে করে অথচ মা কেমন অবলীলায় ওঁকেও 'লালঝান্ডিওয়ালি' বলে দিল, ওঁর একেবারে অন্য মত জেনেও!! অনেক প্রশ্ন জমা হয় মনে কিন্তু কাউকেই জিজ্ঞাসা করার সাহস হয় না। একদিন দিদিমণিদের মধ্যে আলোচনাও শুনে ফেলি যে স্কুলের আলাদা বাড়ী ঝটপট না হওয়াই ভাল, হয়ে গেলেই দুপুরে স্কুল হয়ে যাবে, তখন অনেক বেশীক্ষণ স্কুলে থাকতে হবে, এমন চার সাড়ে চার ঘন্টাতেই মিটে যাবে না। মনের উপরে আরও একটা ধুলোটে পরত জমা হয়।

    ক্লাস নাইনে উঠে আমার রোল নাম্বার হল ৩৭, গত্ পাঁচ বছরের রোল নাম্বার ছিল ১ ফলে আমার কেন যেন ভীষণ খারাপ লাগতে থাকে। জিগ্যেস করে জানতে পারি হাইস্কুলের যে ফার্স্টগার্ল মিতা গোস্বামী সে আমার চেয়ে প্রায় ১৩৩ নম্বর কম পেয়েছে, তাও হাইস্কুল বলে ওর রোল নাম্বার ১। আমি বাড়ীতে এসে মা'কে জিগ্যেস করি তাহলে আর আমরা এক্স্কুল একস্কুল বলি কেন? অন্য স্কুল থেকে এলে যেমনি হয় তেমনই তো হয়েছে। মা বলে না না এখানে তো আর অ্যাডমিশান টেস্ট দিতে হয় নি, আমি বলি দিতে হলেই বা কী হত? আমি তো পরীক্ষা দিয়েই হিন্দু গার্লসে চান্স পেয়েছিলাম, হীরালাল পালেও পেয়েই যেতাম, আর আমাকে ফাইভেই তাহলে হাইস্কুলে দাও নি কেন? তাহলে তো এখন আমার রোল নাম্বার ১-ই থাকত। মা কিছু বলতে পারে না বলে প্রমীলাদির সাথে একবার কথা বলবে। তারপর আবার মত বদলে বলে গোপালবাবুর বাড়ী গিয়ে কথা বলবে নাহয়। গোপালবাবু, বিজয়বাবুর সাথে কথা বলেও অন্য কিছু হয় না। সকলেই বারবার বুঝিয়ে বলেন আরে রোল নাম্বার দিয়ে কী আসে যায়, নাইনের অ্যানুয়ালে ফার্স্ট হলেই তো আবার্ ক্লাস টেনে উঠে ১ হয়ে যাবে। বুঝতে পারি কিছুতেই কিছু হবে না। আমার খালি খালি কেমন অপমান লাগতে থাকে --- মনে হয় আমার অর্জনগুলি নষ্ট করে দিতে পারলেই সবাই খুশী হয়। ভারী অসন্তোষ জমা হয় মনে, পাঁচ বছর ধরে ক্লাসে নিজের এক নম্বর জায়গা নিয়ে ছোট্ট একটা গর্বের জায়গা গড়ে উঠেছিল। বাড়ীতে আমাকে ওরা যাই বলুক না কেন, আমি জানতাম স্কুলে, আমাদের ক্লাসে আমিই সেরা --- আমি সেলাই পারি না ভাল হাতের কাজ করতে পারি না, কিন্তু তবুও সব মিলিয়ে আমার টোটাল নম্বর সবচেয়ে বেশী থাকে -- ডানদিকের ফার্স্টবেঞ্চের প্রথম জায়গাটা আমারই বাঁধা। সেই ফাইভে আমি যে স্কুলে যেতে চাইতাম সেখানে এরা দিল না, আবার রোল নাম্বারটাকেও অকারণে কেমন পিছিয়ে দিল --- তাহলে সিক্সে হাইস্কুলেই ভর্তি করে নি কেন রে বাপু? একবার অন্য একটা মন বলে এবারে আর কেউ ফেলের মধ্যে ফার্স্ট বলতে পারবে না, সঙ্গে সঙ্গে এই মন ফুঁসে উঠে বলে 'ফার্স্ট' শব্দটাই তো মুছে দিল। দু তিনদিন রাগ করে পেছনে গিয়ে থার্ড বা ফোর্থ বেঞ্চে বসি --- কিন্তু নাইনের ঘরটা মস্ত হলঘর, ফার্স্ট বেঞ্চ থেকেই বোর্ড অনেকদূর, থার্ড বেঞ্চ থেকে কিছুই দেখতে পাই না --- আবার গুটিগুটি ফেরত আসি ফার্স্টবেঞ্চে। কার ওপরে যে রাগ করেছিলাম কে জানে! কেউ তো খেয়াল করেও দেখে নি। এখানে ছায়াবীথিদি, কণিকাদি, বেলাদি, মীরাদিরা আমাকে মা'য়ের মেয়ে বলে চেনেন, কেউ কেউ যেমন শান্তিদি, পদ্মাদিরা দাদুর নাতনী বলেও চেনেন, কিন্তু আমি কেমন, কোথায় বসতাম সেসব কেউই জানেন না। ক্লাসেও এতদিনকার পঁচিশ তিরিশ জন মেয়ের বদলে পঁয়ষট্টি জনের জমজমাট ক্লাস তাই এইসব বেঞ্চ বদলাবদলি কেউই খেয়াল করে না। প্রথমদিকে একটু আলগা আলগা থাকলেও দেড় দুই সপ্তাহের মধ্যেই হাইস্কুলের মেয়েদের সাথ্যে আমরা দিব্বি মিশে গেলাম, শুধু আমার মাঝে মাঝেই, এমনকি বছরের শেষ দিকেও, নাম ডাকার সময় ৩৭ এ 'উপস্থিত' বলতে মনে থাকত না।
  • oishik | 52.107.175.153 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ২৩:৩৯576240
  • দমুদি তোমার সোনার কলম হোক
  • Ranjan Roy | ০৩ জানুয়ারি ২০১৪ ২৩:৫০576241
  • ঐশিকের প্রার্থনায় গলা মেলালাম।
  • সুকি | 212.160.18.53 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ১০:৪৩576242
  • এই লেখাটি বই হয়ে বেড়োক এই কামনা করি - তা হলে একসাথে জমিয়ে পড়া যাবে (মানে ওয়েট করতে হবে না আর পরের কিস্তির জন্য)
  • sosen | 111.63.136.179 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ ১০:৪৬576243
  • এই তো আবার এই উইকেন্ডে পাওয়া যাবে :P
  • souvik | 132.175.14.137 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ ১৪:১০576244
  • এই লেখাটা আর সোসেন এর লেখাটার ছাপা হবার খুব দরকার।সবাই তো আর internet এ পরতে পারেন না তাই তাদের কে পড়ানোর জন্য atleast বই হিসাবে বার করুন।যেমন আমার মা,তাকে অমি লেখা গুলো পড়াতে চাই কিন্তু internet এ মা পড়্তে পারেন না।
  • | ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ ১৬:০৪576245
  • নাইন টেন কেমন যেন হুড়মুড়িয়ে কেটে গেল, ঠিক করে মনেও পড়ে না কার পরে কে এল, কী হল| শুধু মনে আছে আত্মীয়স্বজন সবাই মিলে হঠাৎ আমাকে বোঝাতে শুরু করে দিল মাধ্যমিকে খুব বেশীরকম ভাল নম্বর পাওয়া কত জরুরী আর কতই সহজ| হাতেগরম সব উদাহরণ আসতে লাগল কোথায় কে দিনে চোদ্দ ঘন্টা পড়ে, কে ষোলো আর কে আঠেরো| আমি ভাবি তাহলে এমন কেউও আছে নাকি যে দিনে বাইশ কিম্বা ২৩ ঘন্টাই পড়ে! কিন্তু না তেমন কারো খবর পাওয়া যায় না| মা খোঁজখবর করে আমাকে রাজেন্দ্র স্মৃতির মাস্টারমশাই সুপ্রকাশবাবুর কাছে ভর্তি করে দিয়ে এল একদিন, বেতন মাসে পঁচিশ টাকা| এমনিতে তিরিশ তবে মা জুনিয়র হাইস্কুলে ক্লাস নেয় একথা শুনে উনি পাঁচ টাকা কম দিতে বলেন| মনাইও এখানেই ভর্তি হল, আর ছিল দুজন আমাদের ক্লাসের আর দুজন ক্লাস টেনের মেয়ে| মোট ছয় জন, সপ্তাহে তিনদিন বিকেলে চারটে থেকে ছ'টা| ঠিক কেন আমাকে প্রথমেই ইংরিজির কোচিঙে ভর্তি করা হল, সেটা আমি বুঝি নি, আমার আসলে অসুবিধে হত অঙ্ক নিয়ে, বাকী সবই ক্লাসে যা পড়ানো হত তাতেই বুঝে যেতাম| এদিকে ভাই ততদিনে ক্লাস থ্রী, সেই শিশু শিক্ষা সদন ছেড়ে এখন পড়ে হাতির কুলে শিবচন্দ্র শিক্ষা ভবনে| শিবচন্দ্র দেবের আদর্শে ওঁর কোনও উত্তরপুরুষ বাচ্চাদের জন্য ক্লাস ফোর অবধি স্কুল চালু করেছিলেন, এখনও সরকারী অনুমোদন পায় নি তাই কালীতলা কলোনী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ক্লাস ফোরের বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ায়| পড়াশোনা নিয়ে কোনও অহেতুক চাপও দেয় না আর ক্লাসে নাকি অল্প ছাত্রছাত্রী নিয়ে খুব যত্ন করে পড়ায়| এদিকে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ক্লাস সিক্সের আগে ওদের ইংরাজী পড়ার কথা নয়, আর ওরাই এই নিয়মের প্রথম ব্যাচ| কিন্তু এই স্কুলটা অল্প স্বল্প ইংরাজী পড়ায়, এইসব কারণেই ভাইকে ওখানে দেওয়া| মা বি এডে ভর্তি হওয়ার পর ভাইয়ের পড়া আর একদমই প্রায় দেখতে পারত না, আর যেটুকুও বা দেখাতে যেত ভীষণ রেগে যেত, চেঁচামেচি মারধোর করত, ঐজন্য সবার পরামর্শে শিবচন্দ্র শিক্ষাভবনের গুরুদাস স্যারকে ঠিক করে দিল ভাইকে বাড়ী এসে পড়ানোর জন্য| তা ভাইয়ের ইংরিজী শিক্ষে নিয়ে আপামর আত্মীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী খুবই চিন্তিত| এইসব দেখেশুনেই বোধহয় মা তাড়াতাড়ি আমাকেও ইংরাজীর কোচিঙে দিল|

    কিছুদিন বাদে অঙ্কের জন্য একজন অল্পবয়সী ভদ্রলোক, যাঁকে আসলে 'ছেলে' বললেই ঠিক হয়, নিযুক্ত হলেন| ইনিও সপ্তাহে তিনদিন পড়াতেন, তবে বাড়ী এসে| সন্ধ্যেবেলা দুই আড়াই ঘন্টা অঙ্ক করাতেন| এঁর আসল নাম মোটেই মনে পড়ে না, বাড়ীতে 'অন্ধকারাইশ্যা' বলে উল্লেখ করা হত| ইনি এলেই অবধারিত লোডশেডিং হয়ে যেত আর তিন চার ঘন্টা করে থাকত, এক আধদিন হয়ত আসেন নি আর কোনও কারণে কারেন্টও যায় নি, ব্যাস নাম হয়ে গেল 'অন্ধকার রাশি যার' আর তাই থেকেই অন্ধকারাইশ্যা| ইনি তখন বি কম পাশ করে টিউশনি করতেন, থাকতেন আমাদের স্\কুলে যাওয়ার রাস্তায় পড়ে যে চ্যাটার্জী কলোনী, তারই রাস্তার ওপরের একটা বাড়ীতে| স্কুলে যাওয়া আসার পথে কোনদিন যদি দূর থেকে এঁকে দেখতাম, কে জানে কেন, ইনি সঙ্গে সঙ্গে সুড়ুৎ করে বাড়ীরে ভেতরে চলে যেতেন| প্রথম যেদিন দেখেছিলাম আমি দূর থেকেই মাস্টারমশা-আ-ই বলে চীৎকার দিয়েছিলাম সেদিন উনি দাঁড়িয়েছিলেন বটে তবে খুবই অপ্রস্তুত ভঙ্গীতে 'ওহ স্কুল থেকে আসছ?' বলেই ঢুকে গেছিলেন, আমি উত্তর দেওয়ার আগেই| আমি অবশ্য মেজমামার মত কিছু বলতাম না| মেজমামারা কুচবিহার থেকে বদলী হয়ে এসে কোন্নগরে কিছুদিন ছিল, সেইসময় অনেকদিনই সকালে অফিস যাওয়ার আগে বাজারে যেত, এসে হুড়মুড়িয়ে স্নান করে খেয়ে অফিসে যেত| রোজই নাকি বেরোলে রাস্তায় রায়দাদু জিগ্যেস করত 'কি সুহাষ বাজারে যাও? ' কয়েকদিন 'হ্যাঁ' বলার পরে একদিন মেজমামা বলেছে 'না মশারি টাঙাই' তারপর বাড়ী এসে বলে 'রোজ রোজ একই কথা কয়, আজ দিসি বইল্যা| তা আমি অমন কিছু তো বলি নি| দুর্গাপুজোর পরে যেদিন ইনি পড়াতে এলেন, মা গেই বলে রেখেছিল প্রণাম করতে, আমার অবশ্য একেবারেই ইচ্ছে ছিল না অমন ছোকরা মত প্রায় অচেনা একজনের পায়ে হাত দেওয়ার| তা প্রণাম না করলে আবার পিটুনি খাব ভয়ে উনি ঘরে ঢুকতেই আমি নীচু হওয়ার উপক্রম দেখেই উনি 'না না' করে ওঠেন| কিন্তু মা দরজা থেকে 'না না শিক্ষককে প্রণাম না করলে বিদ্যালাভ হয় না' বলায় আমি অগত্যা আরো নীচু হই, কিন্তু ইনি একেবারে তিড়িং লাফ মেরে দরজা দিয়ে বাইরে গিয়ে পড়েন| এরপরে অবশ্য মা'ও আর জোর করে নি| ক্লাস টেনে ওঠার মাস চারেক পরে উনি একটা চাকরি পেয়ে পড়ানো ছেড়ে দেন, তারপরে আমি গোপালবাবুর অঙ্ক কোচিনে ভর্তি হই, ব্যস! সপ্তাহের আরো তিনদিনের বিকেলও আলোজ্বলা ছোট্ট ঘরে কাটাবার ব্যবস্থা হয়ে যায়, উপরি পাওনা ঐ তিনদিন বিকেলবেলাও ভাগাড়ের গন্ধ্ শোঁকা|
  • sosen | 125.241.61.224 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ ১৭:২৬576246
  • তাপ্পট, তাপ্পট ?
  • | ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ ১৯:০০576248
  • আমরা যেবার নাইনে, অঞ্জুদিরা সেবারে মাধ্যমিক দিল| অঞ্জুদি জুনিয়র হাইস্কুল থেকে ক্লাস সিক্সের বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিল| তখন আমরা ফোরে একবার আর সিক্সে একবার বৃত্তি পরীক্ষা দিতাম| অঞ্জুদি বৃত্তি পাওয়ায় স্কুলে সবাই ভাবত অঞ্জুদি মাধ্যমিকেও দারুণ করবে| নাইনে উঠে অঞ্জুদি অতিরিক্ত বিষয় নেয় অঙ্ক যেটা মণীষাদির করানোর কথা| মণীষাদি অসম্ভব বিরক্ত হতেন ক্লাস অতিরিক্ত অঙ্কের ক্লাস নিতে, আমরা অনেকেই শুনেছি দেখেছি সেই বিরক্তির ঝাঁঝালো ঝাপটা| অঞ্জুদি মানুষটা ভারী নিরীহগোছের, খুব আস্তে কথা বলে একটু দূর থেকে প্রায় শোনাই যায় না| বলিয়ে কইয়ে একেবারেই নয়, ক্লাসে প্রশ্ন জিগ্যেস করতে এলেও নাকি খুবই কুন্ঠিত ভঙ্গীতে আসে| অঞ্জুদির দিদি মঞ্জুদি বেশ কয়েকবার ফেল টেল করে অঞ্জুদির সাথেই নাইন টেন পড়ে এবারে একসাথে পরীক্ষা দেবে| সে অবশ্য অত মৃদুভাষী নয়, তবে পড়াশোনায় ভাল না বলে তাকে দিদিমণিরা এমনিই কেউ খুব একটা পাত্তা দিতেন না অনেকটা লম্বা অঞ্জুদি ঈষৎ ন্যুব্জ হয়ে বইখাতাগুলো হাতে করে বুকের কাছে ধরে যখন স্কুলে আসত তখন আমি অনেকদিনই দেখে অবাক হয়ে ভাবতাম বৃত্তিপাওয়া মেয়ে এমন মৃদুভাষী কুন্ঠিতভাবে চলে কেন? সবচেয়ে আশ্চর্য্য লাগত বড়দির বিরক্তি দেখে| বড়দিও অঞ্জুদির ওপরে খুব রাগ করতেন বিরক্তি দেখাতেন কেন অমন মিনমিন করে বলে| একধরণের নিরূপায়ভাবে তাকিয়ে থেকে অঞ্জুদি সকলের বিরক্তি সয়ে যেত| মণীষাদি ওকে বলতেন অঙ্ক ছেড়ে বায়োলজি বা হোম সায়েন্স নিতে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে| মাধ্যমিকে অঞ্জুদি কোনওরকমে ফার্স্ট ডিভিশান পায়, জুনিয়র হাইস্কুলের দিদিমণিদের আশা চূর্ণ করে অঞ্জুদি কোনও বিষয়েই লেটার পায় না| স্কুলে মার্কশিট আনতে যাওয়ার দিন যখন প্রণাম করতে যায়, তখনও বড়দি নাকি ওর মৃদুভাষী সত্ত্বাটির প্রতি নিজ বিতৃষ্ণা জ্ঞাপন করেন| বড়দির এই বিতৃষ্ণা মা'র কাছে শুনে আমি খুব অবাক হই, মাও খুব অবাক হয়েছিল, অঞ্জুদির জন্য আমার মায়া হয়|

    আমার বিস্ময়ের কারণ, বড়দি প্রমীলাদি এত ধীরে আর এত মৃদুস্বরে কথা বলতেন যে সমস্ত ক্লাস একেবারে চুপ করে না থাকলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বেঞ্চি থেকে কিচ্ছু শোনা যেত না| প্রমীলাদির ক্লাসে সবাই একেবারে নিশ্চুপ হয়ে শুনত, উনি পড়াতেন বাংলা দ্বিতীয় পত্র অর্থাৎ ব্যকরণ| সংস্কৃতর সঙ্গে তুলনা করে করে বেশ সুন্দর বোঝাতেন, আমাদের অনেকেরই খুব ভাল লাগত| ওঁর ক্লাস থাকত ঠিক টিফিনের পরের পিরিয়ডে আর এই ক্লাসে একটা দুর্ঘটনা প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ছিল| সম্পূর্ণ নিংশব্দ ক্লাসে ফিসফিসের চেয়ে সামান্য একটু উঁচুস্বরে পড়াচ্ছেন প্রমীলাদি আর এইসময়ই ক্লাসের কোনও এক জায়গা থেকে ভেসে আসবে 'পুঁউঁ' করে একটি আওয়াজ এবং তারপরেই সকলের ইতিউতি চাউনি ও হাসি চাপার প্রাণপণ চেষ্টায় খি খি খুক খুক| কোনও কোনওদিন বড়দি পড়িয়েই চলতেন সবকিছু উপেক্ষা করে, আবার কোনও কোনওদিন বিরক্ত হয়ে হাত থেকে বই নামিয়ে ভুরু কুঁচকে জিগ্যেস করেতেন 'তোমরা সকালে প্রাতঃকৃত্যাদি সমাপন না করেই স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হও?' এরপরে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক আরো কিছু উপদেশ, কিন্তু মুশকিল হল এরকম প্রশ্নে আমাদের নিরুদ্ধ হাসির বাঁধ প্রায় ভাঙো ভাঙো হয়ে যেত, একে তো এই বিপথগামী ঢেকুরের শব্দজনিত হাসি, তদুপরি ঐ প্রশ্নে সে হাসি আরো জোরদার হত মাত্র| এদিকে অনেক মেয়েই সকালে কিছুই খেয়ে আসে না, টিফিনেই কিছুমিছু খায়, কাজেই টিফিনের পরের পিরিয়ডেই এরূপ দুর্ঘটনা বেশী ঘটত| তা বড়দি যেহেতু অত্যন্ত মৃদুভাষী, তাই তিনি তেমন জোরে বকতেও পারতেন না, ফলে একসময় এইসব ঘটনা উনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করাই শুরু করেন ও নিজের মত পড়িয়ে যেতে থাকেন| কিন্তু নিজের চেয়ে দুর্বল ও মৃদুভাষী অঞ্জুদির প্রতি বিরক্তি প্রকাশে তাঁর কোনও দুর্বলতা অবশ্য ছিল না|
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন