এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভাগাড়পাড়া স্কুল থেকে বলছি


    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০১২ | ৭৯৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sosen | 24.139.199.11 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৪:৪৯576282
  • একি, দমুদি লেখা শেষ করে দ্যায়, খেলব না
  • | ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৭:৪৮576283
  • এমনিভাবেই আমাদের অবাক প্রশ্ন , দিদিমণিদের অবজ্ঞা, আরো অনেক টুকিটাকি খুশী, লোভ, হিংসে নিয়ে আমরা পৌঁছে যাই ক্লাস টেন পেরিয়ে মাধ্যমিকের দোরগোড়ায়| ক্লাস টেনে আমরাই ছিলাম সরস্বতীপুজোর উদ্যোক্তা, প্রত্যেক বছর প্রত্যেক স্কুলেই তাই হয়| সরস্বতীপুজোর সময় অঞ্জলী দিতে হয় বাড়ীতে একবার আবার স্কুলে গিয়েও| বাড়ীতে আমি চেষ্টা করি না দেওয়ার, বাড়ীতে হয় না| মা জোর করে ধমক দিয়ে অঞ্জলী দেওয়াতে নিয়ে আসে, কিছুতেই মুখ দিয়ে বেরোয় না 'না আমি অঞ্জলী দেব না', বরং মুখ বুজে ফুল বেলপাতা হাতে নিই --- একটাও মন্ত্র উচ্চারণ করি না বরং মনে মনে আওড়াই 'মানুষই দেবতা গড়ে তাহারই কৃপার পরে করে দেব মহিমা নির্ভর' ---- আবার ফুল বেলপাতা ছুঁড়েও দিই মূর্তির পায়ের দিকে| মনে মনে যা তীব্রভাবে অস্বীকার করে চলি মুখে কিছুতেই তার প্রকাশ হয় না বরং দিব্বি সকলের মন পছন্দ কাজগুলো আপাতভাবে চালু থাকে --- মনে মনে বলি এই ঠাকুরটা আসলে কেউ নয় কিচ্ছু নয় আমরা ফুল বেলপাতা দিচ্ছি তাই --- কিন্তু তাহলে বাকীদের বলে দিচ্ছি না কেন? মা বকবে? মারবে? বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে বলবে 'জিজির বাড়ী চলে যা' --- হ্যাঁ বলতেও পারে ---- তাহলে আপাতত এসব না বলাই ভাল --- যখন স্বাধীন হয়ে যাব, চাকরি করব তখন বলব -- তখন কেউ কিছু বলতে পারবে না -- কিছু বললেও তখন আর আমার কিচ্ছু যাবে আসবে না --- অতএব মনের মধ্যে তৈরী হয়ে ওঠে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে আপাতত মিথ্যে ভান করে নেওয়া একটা চতুর মন --- নিজের এই মনটাকে আমি নিজেও ঠিক পুরোটা বুঝে উঠতে পারি কি না কে জানে! এই মন আমাকে দিয়ে চন্নামিত্তি নিয়ে মাথায় ঠেকানোর মত একটা ভঙ্গী করায় --- আমি দুধ-ঘী-মধুর সুস্বাদু তরল জিভ দিয়ে সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে হাতটা পায়ের তলায় মুছে ফেলি| নিজের মনে অবিরাম দ্বন্দ্ব চলতে থাকে, সকলের চোখের আড়ালে এ আমার কেমন প্রতিবাদ? এ তো ভন্ডামি --- মন বলে হ্যাঁ ভন্ডামিই তো, ইস্কুলে ইরাদি যখন বলেছিল 'তোমায় তো মা দেখিয়ে দেন ট্র্যানশ্লেসান' ত্খনও তো বলে ওঠো নি 'না না মা তো কিচ্ছু পড়া দেখায় না আমাকে' সেইটে ভন্ডামি ছিল না? আমি বলি আহা তখন ঐটে বললে মা তো ভীষণ রাগ করত, মন বলে আর এইটে বললে বুঝি ক্যাডবারি কিনে দেবে? আরও অনেক বেশী রাগ করবে| আমি বলি কিন্তু সত্যি যদি সরস্বতী জ্যান্ত হয়ে কম নম্বর পাইয়ে দেয়? মন বলে তাহলে তো বুঝেই যাবে আমরা মানুষরা বানাই না, আর ঠাকুররা রাগ করলে নম্বর কম হয়| আমি ব্যাজার হয়ে বলি তখন বুঝে কি ঘন্টা হবে আমার? মন খুশী হয়ে বলে বলে ধ্যুৎ চল তো আজ তো আর পড়াশোনা নেই, কেউ খোঁজ করবে না, এখন চুপিচুপি ওপরে গিয়ে প্রসাদ আর নবকল্লোলের ছবিগুলো দেখি বরং|
  • sch | 126.203.173.124 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৮:৪৩576284
  • এই লেখা এভাবে শেষ হবে না কি --- দূর - দমুদি জিতে যাবে তবে শেষ হবে
  • Aloka | 24.99.195.55 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৯:১৯576285
  • সরস্বতী পুজো আর মাধ্যমিক এর মধ্যে অনেক টা সময় থাকে ।সেই সময়্টা ? এত তাড়াতাড়ি শেষ হলে চলবেনা
  • | ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৯:৪৮576286
  • ক্লাস টেনে একটা নতুন জিনিষের সাথে পরিচয় হয়েছিল --- প্রশ্নোত্তরের বই| স্কুলে বোধহয় কোনও দিদিমণি বলেছিলেন, সেই শুনে মা গিয়ে একদিন তিনটে মোটা মোটা বই কিনে নিয়ে এল, বাংলা, ইতিহাস আর ভূগোলের| বাংলা নিয়ে আমার তেমন কোনও ভয়টয় ছিল না, কিন্তু ইতিহাস ভূগোল নিয়ে বিলক্ষণ ছিল| ইতিহাস পড়াতেন শান্তিদি, এমনিতে মানুষটা ভারী ভাল ছিলেন| স্কুলের যে কোনও অনুষ্ঠানে তাঁরই মূল উদ্যোগ থাকত, গান নাচ, বিভিন্নরকম খেলার আয়োজন করানোর| কিন্তু পড়ানোর সময় শুধুই বই দেখে রিডিং পড়ে যেতেন ---- এখন যখন ভালবেসেই ইতিহাসের বই পড়ি, তখন ভাবতে অবাক লাগে এমন চমৎকার বিষয়টাকে কি জাদুবলে অমন কঠিন করে তুলেছিলেন উনি! ওঁর কি ইতিহাস পড়তেও ভাল লাগত না? ভূগোলের মীরাদি অবশ্য পড়াতেন যথাসাধ্য যত্ন করে, কিন্তু হাইস্কুলের মেয়েরা, যারা এর আগের দিদিমণি লীনাদির কাছে পড়েছে ফাইভ সিক্সে তারা বলে লীনাদির পড়া আর বাড়ী গিয়ে পড়তে হত না, সব এমনিই মনে থেকে যেত| লীনাদি বিয়ে হয়ে অ্যামেরিকা চলে যাওয়ায় মীরাদি আসেন| ওদের কাছে শুনে শুনেই হয়ত আমাদেরও মীরাদির পড়ানো তেমন ভাল লাগত না --- এখন মনে করলে বুঝি অন্য দিদিমণিদের মত ঈষৎ তাচ্ছিল্য নিয়ে নয়, মীরাদি পড়ানোর চেষ্টা করতেন ওঁর যথাসাধ্য| কিন্তু কোনও কারণে অনুপস্থিত লীনাদির কাছে জনপ্রিয়তায় হেরে যাওয়ায় মেয়েরা ওঁর পড়া কেউ বোঝার চেষ্টাও খুব করত না| ঐ মোটা মোটা সাজেশান বইগুলোতে অনেক প্রশ্নোত্তর লেখা ছিল, কিন্তু একবার পড়া হয়ে যাওয়ার পর আমার আর দ্বিতীয়বার পড়তে ইচ্ছে করত না কোনোটাই| খালি গল্প শুনতাম কোথায় কে যেন এবিটিএ টেস্ট পেপার তিনবার করে আর এসটিএ টেস্ট পেপার তিনবার করে শেষ করেছে --- কে যেন শুধু স্ন্বান খাওয়া আর অল্প একটু ঘুম ছাড়া সবসময় পড়ে --- কে যেন সমস্ত গল্পের বই নিজে নিজেই তালাদেওয়া আলমারীতে তুলে দিয়েছে, শুধু পড়ে আর লেখে --- কারা যেন বলে একটা স্টার আর দুই তিনটে বিষয়ে লেটার পাওয়া তো খুবই সাধারণ ব্যপার, মাধ্যমিক তো এখন নিরক্ষরতা দূরীকরণ পরীক্ষা হয়ে গেছে| আমি শুনে যাই --- প্রাণপণে আরও বেশী করে পড়ার সময় বাড়ানোর চেষ্টা করি --- আমার ভাল লাগে না পড়তে, যে গল্পগুচ্ছের ছোট সংস্করণটা বারবার উল্টেপাল্টে পড়তাম নাইনে, সেটা আর ছুঁতেই ইচ্ছে করে না --- খালি মনে হয় জিজি 'সেই সময়' কিনেছে নিয়ে এসে পড়ে ফেলি| মা বলে রেখেছে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলে ঐ বই পড়তে পাব, জিজিকেও বলে রেখেছে ভুলেও যেন ঐ বই এখন কোন্নগরে না আসে --- মা জানে না অনেকদিন আগে ছোটমামা যখন হিন্দমোটরে চাকরি করার সময় বাড়ীতে 'দেশ' রাখত তখন আমি সেই সময় পড়তাম লুকিয়ে লুকিয়ে --- কিন্তু বিন্দুবাসিনী আর গঙ্গানারায়ণের কী হল সে তো আমার জানা হয় নি, খুব জানতে ইচ্ছে করছে যে এখন ---- আমি বই খুলে আকাশ পাতাল ভাবি ---- চুপ করে থাকতে দেখলে মা অনেকসময়ই বলে 'জোরে জোরে পড়' --- আমি যা হোক একটা বই টেনে নিয়ে যে কোন একটা পাতা খুলে জোরে জোরে পড়তে শুরু করি| একটা ছাইছাই রঙের ভয় ঘিরে থাকে সবসময় ---- আমি পারব না, এরা যা চাইছে সেই 'মাধ্যমিকে প্রচন্ড ভাল রেজাল্ট করতে' নির্ঘাত পারব না|

    আর দেখতে দেখতে মাধ্যমিক পরীক্ষা এসে শেষও হয়ে যায়| আমাদের সিট পড়েছিল হীরালাল পাল স্কুলে --- সেই স্কুল যেখানে শুভ্রা রিঙ্কুরা রোজ দল বেঁধে পড়তে যেত, সেখানে আমরা যাই পরীক্ষা দিতে --- শুভ্রাদের সিট পড়েছে হিন্দমোটরের দেশবন্ধু গার্লসে -- দুবেলা পরীক্ষা --- আমার মর্নিং স্কুলের অভ্যেস, তিন চারঘন্টা পরেই মনে হয় এবারে তো ছুটি হয়ে যাবে, আর লিখতে ইচ্ছে করে না| দ্বিতীয়ার্ধের পরীক্ষায় তো একেবারেই ইচ্ছে করে না লিখতে| হীরালাল পাল স্কুল আমাদের বাড়ী থেকে বেশ দূরে, সেই নবগ্রামের প্রায় শেষপ্রান্তে| তাই সকালে পৌঁছে দিয়ে আসা আর বিকেলে নিয়ে আসার জন্য মা ঠিক করে দিয়েছিল লক্ষ্মীদাদার রিক্সা| লক্ষ্মীদাদা আসলে বুড়ীর মা-মাসির জামাই, ওর মেয়ে বুড়ীর বর, আগে নাকি ও-ও দাদুদের বাড়ী কাজ করত, বাইরের কাজ, উঠোন বাগান সাফ করা, গরুর কাজ, গরু দোয়ানো এইসব, পরে রিক্সা চালাতে শুরু করে| বড়মাইমা বলে লক্ষ্মীদাদার নাকি ভীষণ মুখ, মুখের ওপরে ঠাশঠাশ করে কথা বলে --- এদিকে আমি দেখি লক্ষ্মীদাদা কথা প্রায় বলেই না, কিছু জিগ্যেস করলেও হুঁ হাঁ দিয়ে কাজ সেরে দেয়| তবে কোনও রিক্সাওলা অন্যায়ভাবে ঘাড়ের ওপরে এসে পড়লে তাকে একেবারে মজা দেখিয়ে দেয়| টিফিনের সময় প্রতিদিন মা আসে একটা ডাব, মাখনলাগানো চারটে ক্রীম ক্র্যাকার বিস্কুট আর একটা সন্দেশ নিয়ে| ডাবটা খেতে আমার একদম ভাল লাগে না, কিন্তু মা শোনে না, খালি বলে 'ডাবে পেট ঠান্ডা হয় খেয়ে নে'| শেষ পরীক্ষার দিন সকালে অঙ্ক আর বিকেলে ঐচ্ছিক বিষয়, আমার তো বায়োলজি| টিফিনের সময় থেকেই শরীর একটু একটু খারাপ লাগে, মা'কে কিছু বলি না --- আর তো তিনঘন্টা তারপরেই ছুটি ছুটি, তিনমাসের মত ছুটি --- আজ সারা সন্ধ্যে আমাদের পোস্তায় বসে মনাইয়ের সাথে গল্প করব| তার পরের কথা আর ভাবতে ইচ্ছে করে না --- দ্বিতীয়ার্ধে প্রশ্নপত্র দেওয়ার পর পরই আমার গা গুলিয়ে ওঠে আর বসতে পারি না --- দৌড়ে বাথরুমের দিকে যেতে চাই, পারি না --- পরীক্ষাহলের সামনের বারান্দায় বমি করে ফেলি --- বমির দমকে বারান্দায়ই বসে পড়ি ---- লজায় মাটিতে মিশে যেতে, দোতলার বারান্দার মেঝে ফুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করে --- স্কুলে কোনওদিন এমন হয় নি আর অন্য স্কুলে এসে এ কি লজ্জা ছিহ্! লম্বা, কোঁকড়াচুল, কালো চশমাপরা রমা কাঞ্জিলালদি এসে বারবার বলেন সিকরুমে গিয়ে শুয়ে পরীক্ষা দিতে -- আমি কিছুতেই রাজী হই না --- বেঞ্চে বসে লেখার চেষ্টা করি, ছবি আঁকার চেষ্টা করি ----শেষঘন্টা বেজে যায় ---- আর ছুট্টিইইইইইই|
  • | ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ ২১:৪২576287
  • কর্মশিক্ষা পরীক্ষার দিন ইস্কুলে গিয়ে শুনলাম রীতা বসাকের নাকি বিয়ে হয়ে গেছে!! সে আবার কি এই আট দশদিনের মধ্যে কারো বিয়ে হয় নাকি? আর বিয়ে এখন? সে তো চাকরি করে তবে করতে হয়! ওমা রীতzঅ সত্যি সত্যি কপালে মাথায় একগাদা সিঁদুর পরে হাতে অনেক চুড়ি শাঁখা পলা এইসব পরে পরীক্ষা দিতে এল| ওকে ঘিরে রইল কয়েকজন, কিসব ফিসফিস করে গল্প আর খি খি করে ওদের হাসি চলতে লাগল, আমাদের ঘেঁষতেই দিল না ধারেকাছে| কি যেন একটা গোপন জগত ওরা আমাদের থেকে আড়াল করে রাখল| রাখল তো রাখল ভারী বয়েই গেল, কর্মশিক্ষা আর শারীরশিক্ষা শেষ হতে না হতেই ছোটমামা এল রাঁচি থেকে আর মা'কে জিগ্যেস করল আমায় নিয়ে যাবে কিনা| আমি তো একপায়ে খাড়া --- দিব্বি লাফাতে লাফাতে চলে গেলাম ছোটমামার সাথে| হাওড়া-রাঁচি-হাতিয়া এসপ্রেসের স্লিপার ক্লাসের আপার বার্থে শুয়ে শুয়ে আমি ব্লেড দিয়ে সীটের মধ্যে লিখি 'হাতিয়ায় হাতি যায়' আর কি আশ্চর্য্য দেখো সেই কামরাতেই ফেরার সময়ও আমার সিট পড়ে -- সেই আপার বার্থেই!! ছাইরঙের চামড়ার মধ্যে আমার সেই অ্যাঁকাব্যাঁকা লেখা ঠিক গোলছাপটার পাশেই| রাঁচিতে ছিলাম মাত্র এক সপ্তাহ, প্রথমে দারুণ ভাল লাগলেও তৃতীয় দিন থেকেই মন খারাপ লাগতে শুরু হল --- একে তো ওদের ওখানে মাত্র দুটো বই পেলাম পড়বার সেই বই দুটোই পাঁচ ছবার করে পড়া হয়ে গেল, তাও ছোটমামা আর বদলে আনে না --- একদিন সকালে উঠে ছোটমামার স্কুটারে চেপে আমরা গেলাম প্লেন দেখতে| রাঁচিতে ছোট্ট এয়ারপোর্ট দিব্বি সামনে গিয়ে দেখা যায় প্লেন হুউশ করে উড়ে যায়, নেমে আসে| কিন্তু হুড্রু, জোনা, নেতারহাট কিচ্ছু দেখা হয় না, ছোটমামার তো অফিস আর ছোটমাইমা দোলনকে নিয়েই নাজেহাল হয়ে থাকে সারাদিন| মনে মনে ভারী ইচ্ছে হয় ওসব জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার, কিন্তু হয় না বেড়ানো, কেউ উল্লেখও করে না, আমিও বলতে পারি না কিছু| আমার খালি ফিরে আসতে ইচ্ছে করে, মনাইয়ের সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করে| এক সপ্তাহ বাদে ছোটমামারা শকুন্তলা কালীপুজোয় আসবে বলে ঠিক করে আর আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি| রাঁচি থাকতে ছোটমামা বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি একদিন একলা একলা বেরোই রাস্তাঘাট, জায়গাটা ঘুরে দেখতে, ছোটমাইমাকে বলেছিলাম 'তুমি তো না করবে না, তাই বেরোব'| আমার কেমন যেন ধারণা হয়েছিল ছোটমাইমা মানা করবে না, কিন্তু ছোটমাইমা আমাকে কিছু না বললেও ছোটমামাকে বলে দেয়, ছোটমামা কোন্নগরে এসে মা'কে নালিশ করে, আমার বক্তব্যও কিছুটা বদলে পেশ হয়ে দেখলাম, কিন্তু আমার কিছু বলতে, আপত্তি করতে ইচ্ছে হয় না| আমার আজকাল আর আগের মত সকলের সাথে কথা বলতে, সবকথায় উত্তর দিতে ইচ্ছা হয় না, বরং চুপ করে দেখতে আর মনে মনে ভাবতে বেশ লাগে|

    শকুন্তলা কালীপুজোর সময় জিজি আসে আর বলে এবার তাহলে আমার সাথে চল| আমি আবার একপায়ে খাড়া, একে তো কলকাতা, তায় জিজির বাড়ীতে এখন গাদা গাদা বই, তাছাড়াও সামনেই দুটো বাড়ী পরে তরুণ সমিতির লাইব্রেরী, সন্ধ্যে হলেই গিয়ে বই বদলে আনা যায়| আর ফিরতে চাইলেও অসুবিধে নেই, জিজিকে বললেই এসে ঠিক দিয়ে যাবে| জিজির বাড়ীতে এসে পড়া হয় আশাপূর্ণা দেবীর অনেক বই| আশাপূর্ণা দেবীর গল্প নিয়ে একবার ভারী মজা হয়েছিল| কি একটা উপন্যাস, মা স্কুলের লাইব্রেরী থেকেই এনে দিয়েছিল 'বালুচরি' নাকি 'বালুচর' নাম| সেই উপন্যাসের শেষ নিয়ে কোন দিদিমণির সাথে যেন মতদ্বৈধ হয় আমার --- সবই অবশ্য মা'র মাধ্যমে, মা'ই এসে বলে উনি এরকম বলছেন| আমি প্রচুর চেষ্টাচরিত্র করেআশাপূর্ণা দেবীর ঠিকানা যোগাড় করে ফিরতি পোস্টকার্ড জুড়ে দিয়ে একটা চিঠি লিখেছিলাম আর কি আশ্চর্য্য! তিনি সেই পোস্টকার্ডে উত্তর লিখেও পাঠিয়েছিলেন| উত্তরটা আমার পক্ষে হওয়ায় আমি মা'কে জোর করেছিলাম স্কুলে নিয়ে দেখাতে --- সেই থেকে স্কুলেও আমার বেশ ডেঁপো মেয়ে বলে নাম হয়ে যায়, তা তখন স্কুল প্রায় শেষেরই দিকে আর ততদিনে বেশ টের পাচ্ছিলাম আমার চারপাশে একটা অদৃশ্য বর্ম গড়ে উঠছে, যাতে ধাক্কা খেয়ে ঠিকরে যাচ্ছে সব টিটকারি, ঠাট্টা, ব্যঙ্গ আর কটুবাক্য| কিন্তু আশাপূর্ণা দেবী যত পড়ি তত আমার দেখা সব লোকজনকে যেন আরো বেশী করে চিনতে পারি| কেমন একটা আবছা বোধ হয় সত্যবতীর মতই আমিও হয়ত কোনোদিন চেনা সক্কলকে ছেড়ে কোথাও একটা চলে যাব| চেনাপরিচিত আত্মীয়রা প্রায় কেউ ঠিক আমার স্বজন নয়, হতে পারবেও না -- এই বোধ আমাকে গভীর শূন্যতা দেয়, একইসাথে একধরণের স্বস্তিও দেয়| খুব আস্তে ধীরে অনেক গভীরে কোথাও একটা শেকড় ছেঁড়া শুরু হয়|
  • sosen | 125.241.88.210 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ ২১:৪৬576288
  • :-)
  • nina | 78.37.233.36 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ ০৫:৫১576289
  • স্বজনরা কেন যে সুজন হয়না---
  • ঐশিক | 133.252.160.213 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:০৬576290
  • জানি সব ভালো জিনিস ই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এই লেখাটা শেষ হলে আমার মন খারাপের দিন গুলোর কি হবে?
  • hu | 188.91.253.21 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:১১576292
  • পড়ছি দমদি।

    সবাই শেষ হবে হবে করছে কেন?

    বালুচরী নামের সিনেমাও হয়েছিল কি? সাবিত্রী চট্টোপাধ্যয় করেছিলেন? একটা শাড়ী নিয়ে গল্প যেটা মেয়েটির কোনদিন পরা হল না? বিশদে মনে নেই। খুব দুঃখের কিছু ছিল এটাই মনে থেকে গেছে।
  • ac | 132.163.24.195 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২১:৫৪576293
  • খুব আস্তে ধীরে অনেক গভীরে কোথাও একটা শেকড় ছেঁড়া শুরু হয়|
    প্রথম থেকে আজ অবধি একটানা চার ঘন্টা । শুধু ধন্যবাদ বললাম।
  • | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২৩:০২576294
  • আমার তরফ থেকেও ধন্যবাদ। :-)
  • Swati | 132.167.231.239 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০০:৪৮576295
  • অনেক খন যুদ্ধ করছি ঠিক করে বাংলা লেখার জন্য। আজকেই সকালে লিঙ্ক তা পেলাম আর অফিস-এ বসে পরা সুরু করলাম। এখনো পরে চলেছি কিন্তু এখন ঘুমোতে যেতে হবে। শেষ দু পাতা এখনো বাকি।

    Lekhika দি কে একটা কথা না বললে ঘুম হবে না আজ। আমার মামাবারিও কোন্নগর-এর নবগ্রাম-এ। ীরালাল স্কুল -এর খুব কাছেই বাড়ি। মা ওখানেই পড়েছে। খানিক আগে মা কে ফোনে করে এই সব জায়গাগুলোর কথা জিগ্গেস করলাম। বন্যার কথা জানতে চাইলাম। মা অবাক হয়ে গ্যাছে। সে যাই হোক। পরছি আর ঠিক imagine করে নিতে পারছি যদিও আমি সব জায়গা চিনিনা। কি ভিশন মন কেমন করছে কলকাতা, কোন্নগর, ছোটবেলার জন্য। এক বছর বাড়ি যেতে পারিনি। বাড়ি গেলেই মামাবাড়ি যাই। আর মশাগুলো এখনো এক রকম-ই আছে। পুরোটা পড়ে আবার কমেন্ট করব। আপাতত এক রাশ ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।
  • সিকি | 158.195.135.17 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৪:১১576296
  • কোন্নগরেও কি ভূত আছে?
  • | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২১:৪৩576297
  • আমারও ভাল লাগল স্বাতী। :-)
  • Swati | 132.178.207.229 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০০:৪৭576298
  • এই শেষ করলাম। ঠাকুর দেবতা নিয়ে ভাবনাচিন্তা গুলো একদম এক রকম। ইচ্ছে করে বই-এর উপরে পা লাগলেও প্রনাম না করা, পুজোয় অঞ্জলি দিতে না যাওয়া। তবে এগুলো আমি যেদিন থেকে ভাবা সুরু করেছি সেদিন থেকেই বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু বড় হয়ে নতুন নতুন মানুষদের সঙ্গে আর এসব বিতর্কে যেতে ইচ্ছে করে না। চুপ করে থাকায় শ্রেয় মনে করি। আর হিন্দু মুসলিম নিয়ে ছোটবেলায় অনেক তর্ক বিতর্ক করতাম। এখন ওসব শুনলে একটা হতভম্ব ভাব জাগে মনে। মানুষ এত বছরেও এত টুকুও সুভবুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে উঠতে পারেনা কেন? সব চেয়ে খারাপ লাগে যখন দেখি নিজের কাছের মানুষরাই ওরকম উদ্ভট সব কথা বলে। আর কি ভিশন সোচ্চার তারা এসব বলতে। এত টুকু লজ্জাও পায়না এসব অন্যায় কথাগুলো বলতে।
    দ দি তুমি একদম আমার মত করে ভাব দেখি। তোমার মত অত কষ্ট পেতে হয়নি বটে কিন্তু মারধর আর অন্যায় কথা অনেক শুনতে হয়েছে রেবেলীয়াস আর অবাধ্য মুখড়া ছিলাম বলে। আমারও ছোট ভাই। তোমার ভাই আর তোমার মধ্যের কান্ড কারখানা-র গল্প শুনতে ইচ্ছে করছে। লিখবে? আমি ভাই অন্ত প্রাণ। বিটকেল বোরিং লাইফ-এ দুটো জিনিস-ই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে/রাখে সেটার একটা হলো ভাই আর অন্য তা গুচ্ছ গুচ্ছ গল্পের বই। আরো লেখ। please ।
  • kihim | 127.194.207.116 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২৩:০৪576299
  • দ কে এক্টা কথা বলার ছিল - আপনি তো জানেন এই লেখাটার আমি খুব ভক্ত। কমেন্ট গুলো ও পড়ি। কিন্তু এতদিন একটা পার্টিকুলার গতিপথ ছিল তো এখন হঠাৎ করে মেঝের বর্ণনা বা পি`পড়ের কথাগুলো তে এক্টু কেমন জানি লাগছে (জানি এটা ফিডব্যাক পেয়ে আপনি বদল করেছেন তাও না বলে পারলাম না)।
  • juni | 77.84.191.139 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০১:৪৮576300
  • আমি অনেক দিনের নী পা। যখন থেকে 'দ' এর এই লেখা টি পড়তে আরাম্ভ করেছি, তখন থেকেই আপনাকে একটি বিরাট ধন্যবাদ দিতে চাই ছিলাম। কিছুটা সংকোচ কারণ আপনি আমাকে কোনো ভাবেই চেনেন না, একদম অপরিচতের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে যদি আপনার ভালো না লাগে সেই জন্যই একটু দ্বিধা করছিলাম, কিন্তু আজ এই দ্বিধা সরিয়েই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানালাম । লেখা টি শুধু অপূর্ব তা নয়, আজ এখানে দাঁড়িয়ে অতীতের সেই প্রত্যেকটা মূহুর্ত কে এই রকম নির্লিপ্ততার সঙ্গে ফিরে দেখা - সেটাই আমাকে সবচেয়ে অভিভূত করেছে।অনেক ভুলে যাওয়া সময় কে আপনি এনে দিয়েছেন । ভালো থাকবেন আর আরও লিখবেন।
  • Abhyuday | 138.192.7.51 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৭:২৫576301
  • জুনি, আপনার সঙ্গে কি আমার পরিচয় হয়েছিল? ২০০৭ সালের আশেপাশে? ব্লাড ডোনেশন সংক্রান্ত ব্যাপারে।
  • | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৩:৪০576304
  • কিহিম,

    ফীডব্যাক পেয়েই বদল করেছি এটা এত নিশ্চিত হচ্ছেন কী করে? ধরুন এই ফীডব্যাকটা নাহয় এখানে রয়েছে, কিন্তু জনান্তিকেও তো কেউ কেউ কিছু জানিয়ে থাকতে পারেন এবং তাতেও লেখার গতিপথ কিছু বদল হয়েও থাকতে পারে .....:-)

    'একটু কেমন জানি' লাগাটা যদি একটু বিস্তারিত করেন তাহলে বরং বুঝতে সুবিধে হবে। যেমন কেউ কেউ জানিয়েছেন যে এবারে একটু একঘেয়ে লাগছে। তো, সেটা আমি বুঝেছি। ভাবছি কী করা যায় মানে কাটাছেঁড়া জোড়া চলছেই। আপনার বক্তব্যটা আরেকটু বিস্তারিত করলে সেটা নিয়ে ভাববো।

    জুনি,
    ওপেন ফোরামের ওটাই মজা। সবাই অপরিচিতই থাকে প্রথমে। পরে একসময় পরিচিত হয়ে যায়। নিঃসঙ্কোচে মতামত দেবেন। আর ধন্যবাদ জানবেন তো অবশ্যই।

    স্বাতী,
    পরে কখনও হয়তো লিখবো।
  • | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৩:৪০576303
  • কিহিম,

    ফীডব্যাক পেয়েই বদল করেছি এটা এত নিশ্চিত হচ্ছেন কী করে? ধরুন এই ফীডব্যাকটা নাহয় এখানে রয়েছে, কিন্তু জনান্তিকেও তো কেউ কেউ কিছু জানিয়ে থাকতে পারেন এবং তাতেও লেখার গতিপথ কিছু বদল হয়েও থাকতে পারে .....:-)

    'একটু কেমন জানি' লাগাটা যদি একটু বিস্তারিত করেন তাহলে বরং বুঝতে সুবিধে হবে। যেমন কেউ কেউ জানিয়েছেন যে এবারে একটু একঘেয়ে লাগছে। তো, সেটা আমি বুঝেছি। ভাবছি কী করা যায় মানে কাটাছেঁড়া জোড়া চলছেই। আপনার বক্তব্যটা আরেকটু বিস্তারিত করলে সেটা নিয়ে ভাববো।

    জুনি,
    ওপেন ফোরামের ওটাই মজা। সবাই অপরিচিতই থাকে প্রথমে। পরে একসময় পরিচিত হয়ে যায়। নিঃসঙ্কোচে মতামত দেবেন। আর ধন্যবাদ জানবেন তো অবশ্যই।

    স্বাতী,
    পরে কখনও হয়তো লিখবো।
  • khim | 127.194.195.119 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৩:৫৯576305
  • কেমন মানে বাউন্ডারিটা বদলে যাচ্ছে। এতদিন জগৎ টা মোটের ওপর মানুষদের নিয়ে ছিল, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, কাটাছেঁড়া, লেখিকার নিজের মধ্যের টানাপোড়েন ইত্যাদি। হঠাৎ করে মেঝের বর্ণনা, পিঁপড়ের সারি দিয়ে আসা - ঠিক জেল করছে না মনে হচ্ছে - হয়তো এতদিন ছিল না বলে। লেখিকার যে এক্টা উদাসীন উপস্থিতি বা নৈবর্তিক বাচন পদ্ধতি - সেই সুর টা অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।

    অব্শ্য এটা আমার মনে হওয়া ইত্যাদি বলে বিনয় করলাম না - that is obvio যে এটা আমার ই মনে হওয়া, অন্য কারো এরম মনে নাও হতে পারে। আর আবার বদল করবেন এরকম কোন ও দাবি ও নেই ঃ)
  • kihim | 127.194.195.119 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:০২576306
  • o haa nishchita haoyaTaa hayto uchit hala naa - tabe oi phiDabJaak er parei duTo lekhaay mejhe aar piprhe r dekhaa pelaam - taai mane hala aar ki.
  • | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:০৬576307
  • আচ্ছা
    আসলে দীর্ঘদিন ধরে লেখায় একটা কন্টিন্যুইটির সমস্যা হচ্ছেই।

    শেষ হলে পুরোটা একসাথে নিয়ে দেখতে হবে।

    অনেক ধন্যবাদ। শুধু 'ভাল লাগছে' জাতীয় মন্তব্যের চেয়ে এই ফীডব্যাকগুলো অনেক দরকারী।
  • Juni | 77.84.191.139 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৩:৪০576308
  • অভ্যুদয়, মনে তো পরছেনা, তবে একসময়ে আশা ফাউন্ডেশন এর নিউ ইয়র্ক চাপ্টার এর সঙ্গে একটু যোগাযোগ ছিল , এখন আর নেই ।
    'দ'- ভালো লাগলো আপনার উত্তর পেয়ে।
    যাই হোক আপনার আর অভ্যুদয়ের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলাপ হয়ে খুশি হলাম।

    এই সঙ্গে জানিয়েদি যে আমি সোসেন, কুমু , কেকে, হুচি, দে , শ্রাবনী এবং ব্যাং এর লেখাও পড়তে খুব ই ভালো বাসি। প্রত্যেকের লেখার মধ্যে এমন একটা অনন্যতার পরিচয় পাই, যে সেটার মূল্য আমার কাছে এই প্রবাসে অপরিসীম। আপনাদের সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৪:৫২576309
  • পরিচয় হয়ে ভালো লাগল। আমার সঙ্গে আই এস আইয়ের শিবুদার (ব্যানার্জ্জী) এক আত্মীয়ার পরিচয় হয়েছিল, একই নাম, তাই ভাবলাম...
    তবে তিনি সম্ভবতঃ গুরুর শিবুদার রাজ্যে থাকেন।

    আশার NYC/NJ চ্যাপ্টার এখন আবার অ্যাকটিভ হচ্ছে নতুন করে।
  • | ১৫ মার্চ ২০১৪ ১২:৪৩576310
  • ১৭)
    গরমের দুপুরে একটা ম্যাজিক আছে| শীতের দুপুরের মত চকচকে ঝলমলে খোলামেলা নয় আবার বর্ষার দুপুরের মত ঝাপসা কাঁদুনেমতও নয়, বেশ গম্ভীরমত দুপুর, ধোঁয়াধোঁয়া রহস্য ভেসে থাকে এখানে ওখানে| গরমের দুপুরে বাইরের বারান্দার লাল টুকটুকে চকচকে মেঝেটা হুউশ করে ম্যাজিক কার্পেট হয়ে যায়, তখন ওর কোণাটায় যেখানে দাদুর ঘরের জানলা আর দিদার ঘরের জানলা নব্বই ডিগ্রী কোণে দাঁড়িয়ে আছে সেইদিকটার ছায়ায় চুপটি করে বসে থাকলে ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে ঘুরে বেড়ানো যায় একেকদিন একেক জায়গায়| সেই আগে যখন বুড়ীরমা মাসি সমস্ত বাসন মেজে কাপড় কেচে গোয়ালঘর পরিস্কার করে গরুর জাবনা দিয়ে বাড়ী চলে যেত চান করে আসবে বলে তখন থেকেই দুপুরটা গুটি গুটি পায়ে এগোতে থাকত আমাদের বাড়ীর দিকে| ততক্ষণে কাকগুলো শ্রীদুর্গামিলের পুকুরে ডানা ভিজিয়ে এসে কাজলকাকুদের ঝাঁকড়া আমগাছে পাতার ছায়ায় লুকিয়ে বসে আছে আর ওদের আশেপাশেই কচি কচি আমের্ পাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকে গম্ভীর দুপুর| বুড়ীরমা-মাসি এসে দিদা বড়মাইমাদের সাথে বসে খাবে, মা'ও খাবে তখন| তারপর বাসন মেজে দিয়ে পান মুখে দিয়ে মাসি বাড়ী চলে যাবে, দিদা আবার ভাল করে চান করে এসে পান মুখে দিয়ে শোবে| সকাল দ্শটা বাজতে না বাজতেই দিদার ঘরের দক্ষিনের দুটো জানলাই বন্ধ হয়ে যায় রোদ্দুরের তাত ঠ্যাকাতে, বারান্দার দিকেরটাও আধখানা খোলা থাকে, সেটাও বারোটার পরে একদম বন্ধ, তাই দিদার ঘর খুব ঠান্ডা হয়ে থাকে, ঘুমঘুম ঠান্ডা| মা'ও চলে আসবে ঘরে| খাওয়া শেষ করে বড়মাইমা এত্তবড় পিতলের ডাবর নিয়ে বসবে পান সাজতে, দিদার ঘর আর ভাঁড়ার ঘরের দরজাটায়| ডাবরের মাথায় ঢাকনিটায় বসানো আছে ছোট্ট ছোট্ট পিতলের কৌটোয় সুপুরির কুচি, খয়ের, জর্দা, কিমাম, এলাচির দানা, কাশীর মশলা, চুন লাগানোর পিতলের ছোট্ট দন্ড মাথাটা চ্যাপ্টা, একটা কুচকুচে কালো বড়সড় জাঁতি| সাথে থাকবে মাটির ভাঁড়ে ভেজানো চুন আর ছোট্ট একটা পিতলের হামানদিস্তা| বুড়ীরমা-মাসির পান সাজা হবে দুটো পান দিয়ে, বড়মাইমার পান দেড়খানা পাতা দিয়ে আর দিদার একখানা পাতা| দিদারটা সেজে নিয়ে যেমন তেমন একটা খিলি করে হামানদিস্তায় ঢুকিয়ে দেওয়া থাকবে| দিদা যেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে কাপড় মেলতে যাবে অমনি হয় বড়মাইমা নয়ত মাসি প্রথমে থুপথুপ আর একটু চেপ্টে গেলেই ঢুপঢুপ করে দিদার পানটা একদম থেঁতো করে ফেলবে| অমন কচিসবুজ রঙের পানটা তখন একদম কালচেলাল রঙের একটা দলা হয়ে যায়, আর কি সুন্দর গন্ধ তাতে| ঐটে হল দুপুরের গন্ধ, গরমের দুপুরের| শীতের দুপুরে অমন গন্ধ থাকে না তো| শীতের দুপুরের গায়ে কমলালেবু আর বড়ির ডালবাটার গন্ধ লেগে থাকে| মাসি বাড়ী চলে গেলে দিদা চৌকিতে উঠে শুয়ে পড়ে, বড়মাইমা কোনো কোনোদিন ওপরে নিজের ঘরে যায়, আবার বেশী গরম থাকলে দিদার ঘরের মেঝেতেই শুয়ে পড়ে, মেঝেটা খুব ঠান্ডা আর একটুও ধুলো নেই| শুতে ভারী আরাম| চৌকির চারটে পায়ার নীচে দুটো করে ইঁট দিয়ে উঁচু করা, মাটিতে শুলে দেখা যায় নীচী রাখা ঝুড়িভর্তি সুপুরি, যেগুলোর খোলা ছাড়ানো হয়ে গেছে, আর সাদা চাদরে বাঁধা বাসনপত্র| ওগুলো সব পিতল আর তামার পুজোর বাসন| খুব গরমে একেকদিন আমি আর ছোটদিও মাটিতে শুয়ে পড়তাম| দেওয়াল থেকে ছয় ইঞ্চি ছেড়ে লাল মেঝের ওপরে এক ইঞ্চি চওড়া কালো বর্ডার| ঐটে হল ধর্মডাঙার মাঠের সীমানা| ধর্মডাঙার মাঠ যেখানে অবাধ্য ছেলেদের নিয়ে গিয়ে পুলিশে গুলি করে মেরে ফেলে| আর ইঁট দিয়ে উঁচু করা চৌকির পায়াগুলো তো আসলে জমিদারবাড়ীর খিলান| না না জমিদারবাড়ী নয়ত ঐটে মোক্তারদাদুর বাড়ীর খিলান, সুরথের মোক্তারদাদু|
  • sosen | 125.241.44.252 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ১৩:৫২576311
  • বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমানা বদলায়, এমনটাই মনে হয়।
  • i | 134.168.164.92 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ১৮:৫৭576312
  • অপূর্ব!! অপূর্ব!!

    আর মোক্তারদাদুর কেতুবধকে মানে সুরথের মোক্তারদাদুকে এখনও কেউ মনে রেখেছেন দেখে খুব ভালো লাগলো।
  • | ১৫ মার্চ ২০১৪ ১৯:১৯576314
  • দুপুরবেলা সব ঘরের জানলা বন্ধ করে দেওয়া হলেও দাদুর ঘরের জানলা দাদু কিছুতেই বন্ধ করতে চায় না| যতদিন নিজে সুস্থ ছিল ততদিন তো বাইরের্ দরজাটাও খুলে রাখত, এখন অবশ্য বড়মাইমা দাদুর খাওয়া হলেই দ্রজা বন্ধ করে দক্ষিণের দুটো জানলার নীচের দিকগুলো বন্ধ করে দেয়, খুব রোদ্দুর থাকলে দাদুর মাথার দিকের জানলাটার ওপরের দিকও বন্ধ করে দেয়| তারপর সবাই যখন যে যার ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে তখন চুপি চুপি গিয়ে দাদুর ঘরে দরজা খুলে আস্তে করে বারান্দায় বেরিয়ে বাইরে থেকে ভেজিয়ে দিতে হয়| আর নাহলে বাথরুমের দিক দিয়ে বেরিয়ে পুরো বাগান ঘুরে এসে ঐ দক্ষিণ পশ্চিম কোণাটায় চুপ করে বসে পড়তে হয়| তারপর ,,,,,,,, তারপর হঠাৎ হুউউশ --- লালবারান্দা আমাকে নিয়ে যায় গড়ের মাঠে, সেই যে সবুজ ঘাসের মধ্যে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে দুটো মেয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে ---- 'পাপাসা মামাসা আইসক্রিম'| আমার খুব লোভ হচ্ছে, কিন্তু জিজি তো কিনে দেবে না, মা জানতে পারলে ভীষণ বকবে যে জিজিকে| জিজি একটা কোয়ালিটি আইসক্রিমের কাপ কিনে দেয়| কুটুবাবু বলে দৌড়ো দেখি কত জোরে দৌড়োতে পারিস? কিন্তু আমার চোখ ঐ দুটো মেয়ের দিক থেকে নড়ে না ---- ঐটাই কি পাপাসা মামাসা? ইস্কুলে শর্মিষ্ঠা খেয়ে এসে বলেছিল প্রথমে, তারপরে তো মৌসুমি, সুলগ্না, দেবলীনা, দেবযানী সংঘমিত্রা সব্বাই খেয়ে ফেলল| ঐ আইসক্রিমের সাথে নাকি পেন্সিলবাক্স দেয়| শর্মিষ্ঠা একটা নিয়েও এসেছিল সাদা রঙের বাক্স, বটলগ্রিন ঢাকনা, ভেতরে কি সুন্দর আইসক্রিম আইসক্রিম গন্ধ| জিজি বলে ওসব বাজে খাবার, সবচেয়ে ভাল হল কাসাট্টা আইসক্রিম, কুমড়োর ফালির মত প্লেটে করে আসে| বলতে বলতেই দ্যাখো লালবারান্দা কেমন কোয়ালিটি রেস্টুর‍্যান্টে নিয়ে চলে এল| সেখানে কিন্তু আমি কাসাট্টা খাই নি, সেখানে তো খেতে হয় টুটি ফ্রুটি| এই এত্তবড় গ্লাস, আধখানা ফলের টুকরোয় ঠাসা আর বাকীটা আইসক্রিম| সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী পরে বাবা বসে বসে অর্ডার দিচ্ছে আর আমরা কত্তজন, আমি, ভাই, মা, জিজি, দাদা, মীনামা, ছোড়দি সব্বাই সাদা চাদরপাতা টেবিলের চারিদিকে বসে আছি| ঘরটার ভেতরে কি সুন্দর ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব আর আইসক্রিমের গন্ধ| গ্লাসটা একটা প্লেটে বসিয়ে দিয়ে যায় পাশে একটা ফুল আঁকা ছোট্ট কাগজের রুমাল, একটা পাতলা ফিনফিনে ছোট্ট ছোট্ট চৌকো চৌকো খুপরিকরা বিস্কুট আর লম্বা হাতলের স্টীলের চামচ| দ্যাখো দ্যাখো অমনি আবার গড়ের মাঠে ফেরত --- মা'র সাথে ট্রামে করে আমি আর ভাই বাড়ী যাব| যা বাবাকে ভাল করে দেখতেই পেলাম না তো| কেমন যেন দেখতে ছিল? ঐ দেয়ালের ছবিটার মত কোট প্যান্ট টাই পরা? হ্যাঁ অমনিই তো লাগত অফিস যাবার সময়| সেই যে আমি খাটে চড়ে গলা বাবার জড়িয়ে ধরে দুইগালে চুমু খেয়ে বলতাম 'চুমু চুমু আদর আদর সাবধানে যাবে সাবধানে আসবে--' আমার দেখাদেখি ভাইও করত, ভাইয়ের জন্য বাবাকে আবার অনেকটা নীচু হতে হত| আর বাবা তো ভীষণ ঘামত, গাল দিয়ে একেবারে ঘামের ধারা গড়াতে থাকত, সেটা আবার হাতে করে মুছিয়েও দিতাম ---- কে যে শিখিয়েছিল আমাকে এটা!? মা তো বলে মা শেখায় নি, তাহলে কি জিজি? কিন্তু কেমন ভিজে ভিজে ছিল বাবার গাল --- গায়ে সিগারেটের গন্ধ --- চৌকোমত কালোফ্রেমের চশমা ----- যাঃ লালবারান্দা আবার দাদুর ঘরের সামনে চলে এসেছে, ঐ যে কে যেন উঠোনের কুয়োয় বালতি ফেলল ঝপাং করে ব্যাস! ম্যাজিক শেষ|
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন