এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভাগাড়পাড়া স্কুল থেকে বলছি


    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০১২ | ৭৯৪৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ ১৯:৩৯576249
  • যাঃ সেহ্ষপ্যরায় খানিক বাদ পড়ে গেছে কপি করতে গিয়ে। আবার দিলাম
    -------------------------------------------

    আমার বিস্ময়ের কারণ, বড়দি প্রমীলাদি এত ধীরে আর এত মৃদুস্বরে কথা বলতেন যে সমস্ত ক্লাস একেবারে চুপ করে না থাকলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বেঞ্চি থেকে কিচ্ছু শোনা যেত না় প্রমীলাদির ক্লাসে সবাই একেবারে নিশ্চুপ হয়ে শুনত, উনি পড়াতেন বাংলা দ্বিতীয় পত্র অর্থাৎ ব্যকরণ় সংস্কৃতর সঙ্গে তুলনা করে করে বেশ সুন্দর বোঝাতেন, আমাদের অনেকেরই খুব ভাল লাগত় ওঁর ক্লাস থাকত ঠিক টিফিনের পরের পিরিয়ডে আর এই ক্লাসে একটা দুর্ঘটনা প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ছিল় সম্পূর্ণ নিংশব্দ ক্লাসে ফিসফিসের চেয়ে সামান্য একটু উঁচুস্বরে পড়াচ্ছেন প্রমীলাদি আর এইসময়ই ক্লাসের কোনও এক জায়গা থেকে ভেসে আসবে 'পুঁউঁ' করে একটি আওয়াজ এবং তারপরেই সকলের ইতিউতি চাউনি ও হাসি চাপার প্রাণপণ চেষ্টায় খি খি খুক খুক় কোনও কোনওদিন বড়দি পড়িয়েই চলতেন সবকিছু উপেক্ষা করে, আবার কোনও কোনওদিন বিরক্ত হয়ে হাত থেকে বই নামিয়ে ভুরু কুঁচকে জিগ্যেস করেতেন 'তোমরা সকালে প্রাতঃকৃত্যাদি সমাপন না করেই স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হও?' এরপরে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক আরো কিছু উপদেশ, কিন্তু মুশকিল হল এরকম প্রশ্নে আমাদের নিরুদ্ধ হাসির বাঁধ প্রায় ভাঙো ভাঙো হয়ে যেত, একে তো এই বিপথগামী ঢেকুরের শব্দজনিত হাসি, তদুপরি ঐ প্রশ্নে সে হাসি আরো জোরদার হত মাত্র় এদিকে অনেক মেয়েই সকালে কিছুই খেয়ে আসে না, টিফিনেই কিছুমিছু খায়, কাজেই টিফিনের পরের পিরিয়ডেই এরূপ দুর্ঘটনা বেশী ঘটত় তা বড়দি যেহেতু অত্যন্ত মৃদুভাষী, তাই তিনি তেমন জোরে বকতেও পারতেন না, ফলে একসময় এইসব ঘটনা উনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করাই শুরু করেন ও নিজের মত পড়িয়ে যেতে থাকেন়কিন্তু নিজের চেয়ে দুর্বল ও মৃদুভাষী অঞ্জুদির প্রতি বিরক্তি প্রকাশে তাঁর কোনও দুর্বলতা অবশ্য ছিল না়অনেক পরে, অনেক বড় হয়ে একদিন রাস্তায় কথা বলতে গিয়ে জেনেছিলাম উনি চান নি অঞ্জুদিও ওঁর মত মৃদুভাষী হোক, তাতে যে কেউ কথা শুনতে চায় না পাত্তা দেয় না তা উনি ভালই জানতেন, তাই চেয়েছিলেন অঞ্জুদি নিজেকে বদলে নিক় কিন্তু এইটা যদি উনি একটু সময় নিয়ে অঞ্জুদিকে আলাদা করে বুঝিয়ে বলতেন, তাহলেই হয়ত ফল হত, অঞ্জুদি আরো গুটিয়ে যেত না়
  • Ranjan Roy | ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ ২০:১২576250
  • বাক আপ দমু! আমারও কিছু মনে--।
    নাঃ, এইসব দুর্ঘটনার কথা বলে বয়্স কমাবো না।
  • | ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ ২০:৫০576251
  • আমার খুব আশা ছিল নাইনে উঠে একসেট সাদা সালোয়ার কামিজ হবে পিটিক্লাসের জন্য, কিন্তু ইতিমধ্যে অনেক অভিভাবকরাই সালোয়ার কামিজ কিনতে তাঁদের অপারগতা জানিয়েছেন ফলে আমাদের বছর থেকে ওটা ঐচ্ছিক হয়ে গেল| যারা পারবে তারা পরে আসবে, যারা পারবে না তারা শাড়ী পরেই পিটি করবে| এমনিতেই আমাদের শাড়ী কাঁধে প্লিট দিয়ে পিন আর আঁচলের একদিক ঘুরিয়ে এনে সামনে বাঁদিকে পেটের কাছে পিন করতে হত, যাতে কোনওভাবেই কোমরের কোনও অংশ দেখা না যায়| তা এইভাবে শাড়ী পরায় পিটি করতে তেমন কোনও অসুবিধে হত না, কিন্তু আমাদের বাড়ীতে সালোয়ার কামিজ নামক পোশাকটি নিষিদ্ধ অথচ আমার খুব ভালো লাগে, তাই আশা ছিল যদি স্কুলের দৌলতে পরা হয়, তা সেও হল না| কিন্তু 'ধিতাং ধিতাং বোলে, কে মাদলে তান তোলে' গানের সাথে কাঠিনাচ শিখে ভারী আনন্দ হল, এই গানটা আমাকে প্রায় মাসে চারেক দখল করে ছিল, একটু সুযোগ পেলেই গুনগুনিয়ে নিতাম| নাইনেই আমাদের সেলাই ক্লাস বন্ধ হয়ে ওয়ার্ক এডুকেশান শুরু হয়| কল্পনাদি করাতেন, বেশ ধৈর্য্যশীল, অত্যন্ত যত্ন করে বুঝিয়ে দেখিয়ে দিতেন| নাইন টেনে আমরা বানিয়েছিলাম সাবান, বই বাঁধানো, কুলের আচার, ইঁচড়ের আচার আর লেবুর আচার| এছাড়া বিভিন্ন পাতা সংগ্রহ করে একটা খাতা বানাতে হয়েছিল| আর ক্লাসের সবাই মিলে একদিন ফিনাইল বানিয়েছিলাম| বই বাঁধানো শিখে আমি বাড়ীর বেশ কিছু বই বাঁধিয়ে ফেলেছিলাম, আমার দেখাদেখি ভাই কাগজের পাতা সমান মাপে কেটেকেটে প্রথমে কুট্টি কুট্টি বই বানালো তারপর তাদের বাঁধালো| তিন কি চার সেন্টিমিটার মাপের পুঁচকে পুঁচকে বইগুলো যে কি সুন্দর দেখতে হয়েছিল| কুলের আচার আর ইঁচড়ের আচার মা বানিয়ে দিয়েছিল| কিন্তু সাবান বানানো কিছুতেই আমার দ্বারা হল না| চারবার চেষ্টা করলাম, কোনওবারেই সাবান জমল না, এদিকে মনস্বিতার দিব্বি একব্রেই চমৎকার জমে গেল| ও আমাকে বলেছিল বানানোর সময় ওকে ডাকতে, কিন্তু কি জানি কেন মা কিছুতেই ওকে ডাকতে দিল না, সাবানও জমল না| মা'ই গিয়ে গাতুর সাথে কথা বলে এলো যে ওর পরীক্ষার পরে ওর সাবান আমি জমা দেব| আপাতত ওর একটা সাবান স্কুলে নিয়ে কল্পনাদিকে দেখিয়ে আনা হবে, তারপর আগামী বছর ওর মাধ্যমিকে ওয়ার্ক এডুকেশান পরীক্ষায় দেখানো হয়ে গেলে আবার আমি নিয়ে আসব, তার পরের বছর আমার পরীক্ষার শেষে ফেরত দেব| মনাই একটু দুঃখ পায়, রাগও করে ওকে না ডেকে অমন ত্যাকত্যাকে নরম সাবান বানিয়ে রেখেছি বলে| আমি কিছু বলতে পারি না, মা'র ওপরে রাগ হতে থাকে| এদিকে এমনি সব ঠিকঠাক চললেও গাতুর সাবান আমি যখন স্কুলে দেখালাম তখন সেটা ছিল মেরুণমত অনেকটা লাইফবয় সাবানের রং, অথচ আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন বের করে দেখি সাবানদুটো থেকে থেকে একদম উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়ে গেছে| অমন রং দেখেই বোধহয় পরীক্ষকমশাই আমার একটা সাবান নিয়ে চলে গেলেন| আমি যখন কুন্ঠিতভাবে গাতুকে বলতে গেলাম ও হেসেই কুটিপাটি| অন্য সাবানটা দেখে ও বিশ্বাসই করতে পারছে না যে ও-ই এগুলো বানিয়েছিল|

    এদিকে হোম সায়েন্স যাদের ঐচ্ছিক বিষয় ছিল তারা তিন চারটে রান্না করেছিল দুই বছরে, আমরাও তার ভাগ পেয়েছিলাম খাওয়ার সময়| শুনেছি হিন্দু গার্লসে হোম সায়েন্সের মেয়েরা নাকি এক এক বছরেই আটটা ন'টা করে রান্না করেছে স্কুলে| ওখানে মেয়েদের বাড়ী থেকে বিভিন্ন রান্নার জিনিষপত্র আনতে বললে সবাই নিয়ে আসে, আমাদের স্কুলের মেয়েরা অনেকেই অত খরচ করতে পারে না, তাই বুঝেশুনে অল্প জিনিষ দিয়ে সহজে হয়ে যাবে এমন দুটো করে পদ প্রত্যেক বছরে করান পূরবীদি| আমি অত অঙ্ক করতে নির্ঘাৎ পারব না আর অঞ্জুদির প্রতি মণীষাদিদিমণির ঐ অসীম বিরক্তি আর রাগ দেখে ভয়েও আমি অঙ্কের কথা ভাবিই নি, নিয়েছিলাম বায়োলজি, পদ্মাদি পড়াতেন, বেশ যত্ন করেই পড়াতেন| এদিকে আমি আবার একেবারেই আঁকতে পারি না, তা আমার প্র্যাকটিক্যাল খাতার যাবতীয় ছবি মনস্বিতাই এঁকে দিত, পরে উচ্চমাধ্যমিকেও তাই দিয়েছে| আমি ওর ভূগোল খাতায় ম্যাপ এঁকে রং করে দিতাম, ও আবার আমার ভূগোল খাতায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাড়ীঘরের ছবি এঁকে দিত| মাধ্যমিকের বাংলায় আমাদের দুটো সহায়ক পাঠ ছিল 'কবিতাসংকলন' ও গল্পসংকলন'| গল্পসংকলন আসলে গল্পগুচ্ছের একটা সংক্ষিপ্ত রূপ, গল্পগুলো পড়ে গল্পগুচ্ছ পড়ার ইচ্ছে তীব্র হয়, কোথাও থেকে যোগাড় করা যায় না, বাংলার শিক্ষিকা ছায়াবীথিদি বলেন যদি বাংলায় লেটার পাও আমি তোমাকে গল্পগুচ্ছ চারখন্ড কিনে দেব| আমি যদিও লেটার পাই নি, কিন্তু মাধ্যমিকের পরে স্কুলে থেকে 'বিশেষ পুরস্কার' হিসেবে গল্পগুচ্ছ দেওয়া হয়েছিল|

    কবিতাসংকলনে অবশ্য অনেকের কবিতাই ছিল, সেইখানেই পড়ি কালিদাস রায়ের 'বর্ষে বর্ষে দলে আসে বিদ্যামঠতলে ---' কবিতাটা| কিন্তু কালিদাস রায়ের 'চাঁদ সদাগর' কবিতাটা একেবারে মাথায় গেঁথে যায়| আমার বাড়ীর খাতায় নীল আর কালো কালির কলম দিয়ে বড় বড় করে লিখে রাখি ----
    'শিখাইলে এই সত্য, তুচ্ছ নয় মনুষ্যত্ব, দেব নয় মানুষই অমর
    মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে করে দেবমহিমা নির্ভর'
    পুরুতমশাইদের ওপরে বিতৃষ্ণা দিয়ে যা শুরু হয়েছিল, সত্যনারায়ন পুজোর পরে দিদার 'চন্নামিত্তি' নেওয়ার ডাক ও আমি সবার আগে পৌঁছলেও আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে আগে ভাইকে, ছোটদিকে দিয়ে তারপর আমাকে দেওয়া যার ভিৎ তৈরী করেছিল এই কবিতা তাকে শক্তপোক্ত চারটে দেওয়াল দেয়| তাই এরপরে নাইন থেকে টেনে ওঠার সময়কার ছুটিতে যখন ছোটমামারা বেড়াতে আসলে আমার সবসময় ছোটমাইমার সাথে গল্প করা নিয়ে বড়মামা প্রচন্ড বকে এবং মা বলে 'ঠাকুরকে ডাক' আমি প্রবল বিতৃষ্ণা ও বিরক্তিতে ভাবি ঠাকুর আবার কী! ঠাকুর ফাকুর সব বাজে কথা| এরপরে যখন দিদাও ছুতোনাতায় গল্প করা নিয়ে বকতে থাকে, পড়াশোনা না করা নিয়ে ব্কতে থাকে, তখন আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি, একদিন সুযোগ পেয়েও যাই| ছোটমামারা তখন ফেরত চলে গেছে, দিদাকে নিয়ে ব্ড়মামা, মাইমা গেছে পুর্বাশায়, মেজমামার বাড়ী তখন আমি দোতলার ঠাকুরঘরে এসে ঢুকি, ভেতর থেকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছোট খাট থেকে নামি আনি রামকৃষ্ণ?, সারদামণি, অন্নদা ঠাকুর, কালীঠাকুর, গনেশঠাকুরের ছবি| দেয়াল থেকে পেড়ে আনি কৃষ্ণরাধার ছবি --- তারপর একটা একটা করে ছবির ওপরে উঠে দাঁড়াই, ছবির কাচ যাতে ভেঙে না যায় তাই ঐ ঠাকুরদের বিছানার তোষক নিয়ে ফটোর ওপরে রেখে তার ওপরে দাঁড়াই --- সব ফটো জায়গামত রেখে ধার থেকে টেনে আনি লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি --- এই দুটো ঠাকুরের মূর্তি এনে পুজো হয়, ভোগ দেওয়া হয় আর পুজোর পরের দিন আগের বছরের ঠাকুরের বিসর্জন দেওয়া হয়| এই মূর্তিগুলোর ওপরে দাঁড়ানো যায় না, তাই পা দিয়ে ওদের শাড়ি ডলে দিই, পায়ের আঙুল দিয়ে মূর্তির মাথার চুলগুলো রগড়ে দিই --- তারপর আবার উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসি --- আর মনে মনে বলে আসি যে ঠাকুরের দোহাই দিয়ে দিদারা এত অন্যায় করে, অন্যায় মিথ্যে বলে সেই ঠাকুরকে পা দিয়ে ডলে রগড়ে দিলাম --- ওদের দেখানো 'ঠাকুর দেখবেন ওপর থেকে' এই ভয় আমি মানি না| আমি বহন করি ন, কোনওদিন করবও না ওদের উত্তরাধিকার|
  • ম্যামি | 69.93.199.89 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ০৩:১৬576252
  • তারপর?
  • Ranjan Roy | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ০৭:৪৩576253
  • শেষ দুটো লাইন--- অসাধারণ!
  • siki | 131.241.127.1 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:০৬576254
  • এতদিন বলি নি, শেষটুকু পড়ে এইবারে আমিও দাবি জানালাম।

    এইটা বই হয়ে বেরোক। খুব খুব দরকার এটা লোকজনের কাছে পৌঁছনো।
  • de | 190.149.51.67 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:৩৮576255
  • অসাধারণ! দমদি! আমিও আমার মা কে পড়াতে চাই -- মেয়েকে তো পড়াবোই!
  • sosen | 24.139.199.11 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:৫৬576256
  • কি ভালো ছিল যে এই কবিতা-টা; চাঁদ সদাগর আমার খুব প্রিয় চরিত্র।
    দমুদি, আছি
  • sch | 132.160.114.140 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:৫৮576257
  • বই হয়ে বেরোনোটা জরুরী এটা আর সোসেন দিদিরটা - এই দুটো পড়লে অনেকে অনেক জোর পাবে মনে - আর কিছু তো আমরা করতে পারবনা - এই জোরটুকু যদি দিতে পারি ক'জনকে...............তবু
  • kumu | 133.63.144.178 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:৩৫576259
  • প্রতিটি অক্ষর পড়ি কিন্তু লিখি না কিছু।এত একরকম সব ।

    আজ আমিও এটা ও সোসেনের লেখা বই হয়ে বেরোনোর দাবী জানিয়ে গেলাম।
  • ম্যামি | 69.93.215.201 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৩:২৫576260
  • প্রণাম করতে যাওয়ায় তিড়িং লাফ মেরে দরজা দিয়ে বাইরে গিয়ে পড়েন। এটাও অসাধারণ।
  • sosen | 24.139.199.11 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৩:২৮576261
  • দমুদির বইয়ে আমায় ইলাস্ট্রেশন কত্তে দেবে?
  • ম্যামি | 69.93.215.201 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৩:৩৪576262
  • 'আকাইম্যার কপালের দুই শিঙের মাঝখানে সাদা টিপের মত অংশটা একবার ঝিকিয়ে ওঠে মাথা উঁচু করার মরীয়া চেষ্টায়, তারপর চলে যায় পুরো দলটা।' কী অসাধারণ বর্ণনা।
  • b | 135.20.82.164 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৫:২২576263
  • ওয়াসাধারণ। অসামাইন্য।
  • | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ২১:০২576264
  • ঐশিক/সৌভিক/সুকি/সিকি/রন্জনদা/ম্যমী/কুমু/সুষেণ/দে/স্চ,

    পড়ছেন/পড়ছ যে মন দিয়ে তাতেই একেবারে উলুতপ্লুত হয়ে যাই। একগাল হাসি সকলকে।

    সুষেণ,
    কোনওদিন কেউ যদি বই হিসেবে বের করতে চায় আর আমিও যদি সম্মত হই তবে অবশ্যই তোমাকে বলব। তুমি নিজে নিজে আঁকতে চেয়েছ .... একেবারে চাড্ডবোল উলুতপ্লুত হয়ে গেলাম।
  • | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ২১:০৩576265
  • এহে b বাদ গেছেন। আপনাকেও ধইন্যবাদ একগাদা।
  • aranya | 154.160.226.53 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ ২১:২৮576266
  • বাচ্চা মেয়েটা খুব সাহসী ছিল। ঐ বয়সে ঠাকুরের ফটো/মূর্তি পা দিয়ে মাড়ানো - বেশ টাফ। বিশ্বাস না থাকলেও কোথাও একটা ভয় থাকে
  • pipi | 79.136.3.21 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ০০:৩২576267
  • পড়তে পড়তে কত কথাই যে মনে পড়ছে, যেসব কথা আর কখনো মনে করব না বলে পণ করেছিলাম সেগুলো ভীড় করে আসছে।
    এই লেখাটা ছাপার অক্ষরে বেরোক - আমিও চাই। কিন্তু, গুরুতে আমরা বেশীরভাগ সমমনস্ক লোকজন। কিন্তু তার বাইরে যে বিশাল জনতা - তাদের বেশীরভাগেরই মানসিকতা তো আজ, এখনো ঐ দিদা, বড়্মাইমা এদের মতই। কজন এই লেখাটার প্রকৃত মূল্য দেবে? কজন পারবে ঐ মেয়েটার সাথে একাত্ম হতে? তার ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হতে?
    তবু যদি এ লেখা বই হয়ে কোনদিন বেরোয় আমার বাড়ীর কয়েকটি মনুষ্যপদবাচ্যকে এ বইটি আমি পড়াতে চাইব। জানি কিছুই কখনো বদলাবে না, তবুও.....
  • শিবাংশু | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:৪৫576268
  • দীর্ঘদিন ধরে পড়ছি ।

    সঙ্গে আছি প্রথম থেকেই।
  • siki | 135.19.34.86 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:০০576270
  • দিদা বড়মাইমাদেরই তো পড়াতে চাই! অচলায়তন তো ভাঙতে হবে এখান থেকেই। এ তো বই নয়, এ হবে সেইসব দিদা বড়মাইমাদের জন্য আয়না।
  • siki | 135.19.34.86 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:০১576271
  • আর বই বেরোবার আগে আমি পেজসেটিং করব, প্রুফ দেখে দেব। বুকিং সেরে রাখলাম।
  • kumu | 133.63.144.253 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:০৭576272
  • আমিও প্রুফ দেখব।
    ইয়েস সেইসব দিদাদের আয়না যাঁরা দিনের পর দিন মাছের বড় টুকরো ভাইকে দেন, তুচ্ছ করেন একটি মেয়ের সত্ত্বাকে।
  • pragati | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১৪:৫৭576273
  • দময়ন্তীর লেখা আর সোসেনের লেখা গুরুর গয়নার বাক্স ।
  • | ১২ জানুয়ারি ২০১৪ ১৮:৫২576274
  • নাইন টেনে পড়বার সময়ই বড়দের বই পড়বার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞাটা খানিক আলগা হয়ে যায়, খানিকটা ছায়াবীথিদি আর পদ্মাদির জন্যই বলতে হবে| এই দুজনই বিশেষভাবে আমার ভাষা ও শব্দচয়ন নিয়ে মা'কে বলেন, আমি অব্শ্য সেসব জানতাম না, একদিন মা শুনি দাদাকে বলছে আমার ঐ সমানে গল্পের বই পড়ে যাওয়ারও কিছু উপকারিতা আছে| উপকারিতা বা অপকারিতা নয় ছাপা অক্ষর সত্যিই আমার বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, ঐ অক্ষরগুলোই ভুলিয়ে দেয় সমস্ত ক্ষোভ, রাগ, ছোটখাট অপ্রাপ্তির হিসেব| নিষেধাজ্ঞা আলগা হওয়ার অর্থ অবশ্য অনেক বই এখন সবার সামনেই পড়তে পারি, অঙ্কখাতায় লুকিয়ে, টেস্ট পেপারের মত মলাট দিয়ে পড়তে হয় না| আর একটাসুবিধে হল মা এখন স্কুলের লাইব্রেরী থেকে অনেক বই আনে, সেগুলোও পড়তে পারি, আবার বড়মামা কোন্নগর পাবলিক লাইব্রেরী থেকে যেগুলো আনে সেগুলোও প্রায় সবই পড়তে পারি| পাবলিক লাইব্রেরীতে তিনটে কার্ড, দাদু ছোটমামা আর বড়মামার নামে, তাতে তিনটে বই আনা যায়| ছোটমামা সেই কবে যখন এখানে থাকত তখন নিজের আর দাদুর নামে দুটো কার্ড করিয়েছিল, পরে মেজমামারা এসে কিছুদিন ছিল তখন মেজমামা একটা করায়, সেটা আবার পুর্বাশায় চলে যাওয়ার সময় বড়মামার নামে ট্র্যান্সফার করিয়ে দিয়ে যায়| বড়মামা অফিস থেকে এসে যায় লাইব্রেরী, চেষ্টা করে খুব মোটামোটা দেখে বই আনতে, যাতে একমাসের মধ্যে আর যেতে না হয়| এমনি করেই আমার পড়া হয়ে যায় নীহাররঞ্জন গুপ্তের 'তালপাতার পুঁথি' বিমল মিত্রের 'কড়ি দিয়ে কিনলাম', 'সাহেব বিবি গোলাম' প্রমথ নাথ বিশীর 'লালকেল্লা', 'কেরী সাহেবের মুন্সী' চাণক্য সেনের 'পুত্র পিতাকে' আশুতোষ মুখার্জীর 'আনন্দরূপ' নীহাররঞ্জন গুপ্তের কালো ভ্রমর, মৃত্যুবাণসহ অনেকগুলো কিরীটি রায়ের গল্প| এখানে একটা মজা হত, মা জিগ্যেস করত কী বই পড়ছিস? কার লেখা? আমি হয়ত বললাম নীহার গুপ্ত, মা বলবে বড়দের বই? আমি বলতাম না না সেই যে 'তালপাতার পুঁথি? সেই অনেকদিন আগেকার ইংরেজ শাসন শুরুর সময়কার কলকাতার গল্প --- সেইরকম| মা'ও অমনি শান্ত হয়ে মেনে নিত, আসলে তখন মা'র পক্ষে আর গল্পের বই পড়ার সময় বের করা সম্ভবই ছিল না, ফলে যাচাই করা সম্ভব নয়, এদিকে স্কুলের দিদিমণিদের কাছে শুনেটুনে খুব একটা আর বারণও করতে চায় নি -- তো, এইভাবেই আনন্দরূপ দেখিয়ে পড়ে ফেলি 'নগর পারে রূপনগর', 'পরকপালে রাজারানী', নারায়ন সান্যালের শার্লক হেবোর গল্প দেখিয়ে পড়ে ফেলি 'দন্ডক শবরী' আর সেইটে দেখিয়ে আবার 'হংসেশ্বরী'|

    বড়মামা একবার নিয়ে এল মুজতবা আলীর 'দেশে বিদেশে' --- আহা সে কি বই, সেই থেকে সমানে খোঁচাই বড়মামাকে মুজতবা আলীর আরো বই আনবার জন্য, বড়মামা গিয়ে অত খুঁজতে চায় না, কাউম্টারে যে বইগুলো থাকে তার মধ্যে থেকেই নিয়ে আসে আর এমনি করেই বারবার আনা হয় 'কড়ি দিয়ে কিনলাম', এদিকে বিমল মিত্তিরের লেখা আমার একেবারেই ভাল্লাগেনা| অনেকদিন পরে এনে দেয় মুজতবা আলীর 'শবনম' আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'সোনালী দুঃখ'| দুটো বইই বেশ বাজে লাগে, ফলে আবার নামিয়ে আনি দাদুর আলমারী থেকে বাঁধানো মাসিক বসুমতী, আবার পড়ে ফেলি বারি দেবীর 'বাতিঘর' -- এও কেমন যেন ন্যাকাটে গল্প, তবু এটা থেকেই লালকুঠী সিনেমা হয়েছে, তাই আরেকবার মন দিয়ে পড়ে ফেলি| লালকুঠীর গল্পটা মনাই আমাকে বলেছে আর 'কারো কেউ নই গো আমি, কেউ আমার নয়' তো প্রায় সব পুজোর সময় মাইকে একবার করে বাজবেই| বাঁধানো বসুমতীতেই পড়েছিলাম আশুতোষ মুখার্জীর 'কাল তুমি আলেয়া' আর 'পঞ্চতপা' আরো পড়েছিলাম 'নদী থেকে সাগরে' কার লেখা মনে নেই, কিন্তু এই গল্প থেকেও সিনেমা হয়েছিল, আমাদের বিকেলের গল্পে আমি মনাইকে বই পড়া গপ্প আর ও আমাকে সিনেমার গপ্প বলত, সেই সময় মনাই আমাকে সিনেমার গল্প বলার সময় এই গল্পটা বললে আমি চিনতে পেরেছিলাম| বড়মামা প্রায়ই আনে সুবোধ চক্রবর্তীর 'রম্যানি বীক্ষ্য'র বিভিন্ন খন্ড| রম্যানী বীক্ষ্য পড়তে তখন বেশ ভাল লাগত, একে তো কত কত বেড়াতে যাওয়ার জায়গার গল্প, তার সাথে আবার গোপাল স্বাতীর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম, কিন্তু খান আষ্টেক বই পড়ার পরে গোপাল স্বাতী আর গোপালের মামা মামীমাকে ভারী একঘেয়ে লাগতে লাগল| ততদিনে সুবোধ চক্রবর্তীরই লেখা 'শ্বাশ্বত ভারত' সিরিজের ছয় খন্ড জিজির বাড়ী থেকে এনে পড়া হয়ে গেছে, আর অসুরদের প্রতি করা সমস্ত অন্যায় পড়েটরে দেবতাদের ওপরে বিরাগ বিতৃষ্ণা প্রায় ঘেন্নাই আরো বেড়েছে| এদিকে আমাদের স্কুলেও যে লাইব্রেরী আছে সেটা আমরা কেউ জানতামই না, এখন মা মাঝেমধ্যে বই নিয়ে আসে তাতেই জানতে পারি কাঠের আলমারীতে তালা দেওয়া থাকে বইয়েরা --- প্রতিবছর যখন বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের জন্য বই কিনতে যান দিদিমণিরা ত্খনই পাঠাগার খাতে বরাদ্দ টাকা দিয়েও বই কিনে আনা হয়| তাহলে সেই বই ছাত্রীদের কখনও দেওয়া হয় না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মা বলে 'হ্যাঃ ঐ ভাগাড়ের স্কুলে আবার লাইব্রেরীর বই? পড়বে কে? তোর অসুবিধে কী? তোকে তো দিলাম এনে'| শুনে ধাক্কা খাই জানি এই নিয়ে আরো কথা বললে মা রেগে যাবে, কিন্তু তবু চুপ করতে পারি না বলে ফেলি 'কিন্তু আমরা তো কেউ জানিই না যে এমন গল্পের বই আছে তাহলে আর পড়ব কী করে?' এইবারে মা রেগে যায়, খুব জোরে ধমক দেয়| আমার মনখারাপ লাগে খুব খারাপ --- নিজের জন্য, সব সহপাঠীদের জন্য খারাপ লাগে --- মনে হয় 'ভাগাড়ের স্কুল'এর তাচ্ছিল্য, উপেক্ষা আমাদের চামড়ায় জ্বলুনি ধরিয়ে ধরিয়েই যাবে সারাটা জীবন --- আমরা কেউ কিচ্ছুটি করতে পারব না|
  • | ১২ জানুয়ারি ২০১৪ ১৮:৫৩576275
  • ১৬)
    নাইন টেনে পড়বার সময়ই বড়দের বই পড়বার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞাটা খানিক আলগা হয়ে যায়, খানিকটা ছায়াবীথিদি আর পদ্মাদির জন্যই বলতে হবে| এই দুজনই বিশেষভাবে আমার ভাষা ও শব্দচয়ন নিয়ে মা'কে বলেন, আমি অব্শ্য সেসব জানতাম না, একদিন মা শুনি দাদাকে বলছে আমার ঐ সমানে গল্পের বই পড়ে যাওয়ারও কিছু উপকারিতা আছে| উপকারিতা বা অপকারিতা নয় ছাপা অক্ষর সত্যিই আমার বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, ঐ অক্ষরগুলোই ভুলিয়ে দেয় সমস্ত ক্ষোভ, রাগ, ছোটখাট অপ্রাপ্তির হিসেব| নিষেধাজ্ঞা আলগা হওয়ার অর্থ অবশ্য অনেক বই এখন সবার সামনেই পড়তে পারি, অঙ্কখাতায় লুকিয়ে, টেস্ট পেপারের মত মলাট দিয়ে পড়তে হয় না| আর একটাসুবিধে হল মা এখন স্কুলের লাইব্রেরী থেকে অনেক বই আনে, সেগুলোও পড়তে পারি, আবার বড়মামা কোন্নগর পাবলিক লাইব্রেরী থেকে যেগুলো আনে সেগুলোও প্রায় সবই পড়তে পারি| পাবলিক লাইব্রেরীতে তিনটে কার্ড, দাদু ছোটমামা আর বড়মামার নামে, তাতে তিনটে বই আনা যায়| ছোটমামা সেই কবে যখন এখানে থাকত তখন নিজের আর দাদুর নামে দুটো কার্ড করিয়েছিল, পরে মেজমামারা এসে কিছুদিন ছিল তখন মেজমামা একটা করায়, সেটা আবার পুর্বাশায় চলে যাওয়ার সময় বড়মামার নামে ট্র্যান্সফার করিয়ে দিয়ে যায়| বড়মামা অফিস থেকে এসে যায় লাইব্রেরী, চেষ্টা করে খুব মোটামোটা দেখে বই আনতে, যাতে একমাসের মধ্যে আর যেতে না হয়| এমনি করেই আমার পড়া হয়ে যায় নীহাররঞ্জন গুপ্তের 'তালপাতার পুঁথি' বিমল মিত্রের 'কড়ি দিয়ে কিনলাম', 'সাহেব বিবি গোলাম' প্রমথ নাথ বিশীর 'লালকেল্লা', 'কেরী সাহেবের মুন্সী' চাণক্য সেনের 'পুত্র পিতাকে' আশুতোষ মুখার্জীর 'আনন্দরূপ' নীহাররঞ্জন গুপ্তের কালো ভ্রমর, মৃত্যুবাণসহ অনেকগুলো কিরীটি রায়ের গল্প| এখানে একটা মজা হত, মা জিগ্যেস করত কী বই পড়ছিস? কার লেখা? আমি হয়ত বললাম নীহার গুপ্ত, মা বলবে বড়দের বই? আমি বলতাম না না সেই যে 'তালপাতার পুঁথি? সেই অনেকদিন আগেকার ইংরেজ শাসন শুরুর সময়কার কলকাতার গল্প --- সেইরকম| মা'ও অমনি শান্ত হয়ে মেনে নিত, আসলে তখন মা'র পক্ষে আর গল্পের বই পড়ার সময় বের করা সম্ভবই ছিল না, ফলে যাচাই করা সম্ভব নয়, এদিকে স্কুলের দিদিমণিদের কাছে শুনেটুনে খুব একটা আর বারণও করতে চায় নি -- তো, এইভাবেই আনন্দরূপ দেখিয়ে পড়ে ফেলি 'নগর পারে রূপনগর', 'পরকপালে রাজারানী', নারায়ন সান্যালের শার্লক হেবোর গল্প দেখিয়ে পড়ে ফেলি 'দন্ডক শবরী' আর সেইটে দেখিয়ে আবার 'হংসেশ্বরী'|

    বড়মামা একবার নিয়ে এল মুজতবা আলীর 'দেশে বিদেশে' --- আহা সে কি বই, সেই থেকে সমানে খোঁচাই বড়মামাকে মুজতবা আলীর আরো বই আনবার জন্য, বড়মামা গিয়ে অত খুঁজতে চায় না, কাউম্টারে যে বইগুলো থাকে তার মধ্যে থেকেই নিয়ে আসে আর এমনি করেই বারবার আনা হয় 'কড়ি দিয়ে কিনলাম', এদিকে বিমল মিত্তিরের লেখা আমার একেবারেই ভাল্লাগেনা| অনেকদিন পরে এনে দেয় মুজতবা আলীর 'শবনম' আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'সোনালী দুঃখ'| দুটো বইই বেশ বাজে লাগে, ফলে আবার নামিয়ে আনি দাদুর আলমারী থেকে বাঁধানো মাসিক বসুমতী, আবার পড়ে ফেলি বারি দেবীর 'বাতিঘর' -- এও কেমন যেন ন্যাকাটে গল্প, তবু এটা থেকেই লালকুঠী সিনেমা হয়েছে, তাই আরেকবার মন দিয়ে পড়ে ফেলি| লালকুঠীর গল্পটা মনাই আমাকে বলেছে আর 'কারো কেউ নই গো আমি, কেউ আমার নয়' তো প্রায় সব পুজোর সময় মাইকে একবার করে বাজবেই| বাঁধানো বসুমতীতেই পড়েছিলাম আশুতোষ মুখার্জীর 'কাল তুমি আলেয়া' আর 'পঞ্চতপা' আরো পড়েছিলাম 'নদী থেকে সাগরে' কার লেখা মনে নেই, কিন্তু এই গল্প থেকেও সিনেমা হয়েছিল, আমাদের বিকেলের গল্পে আমি মনাইকে বই পড়া গপ্প আর ও আমাকে সিনেমার গপ্প বলত, সেই সময় মনাই আমাকে সিনেমার গল্প বলার সময় এই গল্পটা বললে আমি চিনতে পেরেছিলাম| বড়মামা প্রায়ই আনে সুবোধ চক্রবর্তীর 'রম্যানি বীক্ষ্য'র বিভিন্ন খন্ড| রম্যানী বীক্ষ্য পড়তে তখন বেশ ভাল লাগত, একে তো কত কত বেড়াতে যাওয়ার জায়গার গল্প, তার সাথে আবার গোপাল স্বাতীর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম, কিন্তু খান আষ্টেক বই পড়ার পরে গোপাল স্বাতী আর গোপালের মামা মামীমাকে ভারী একঘেয়ে লাগতে লাগল| ততদিনে সুবোধ চক্রবর্তীরই লেখা 'শ্বাশ্বত ভারত' সিরিজের ছয় খন্ড জিজির বাড়ী থেকে এনে পড়া হয়ে গেছে, আর অসুরদের প্রতি করা সমস্ত অন্যায় পড়েটরে দেবতাদের ওপরে বিরাগ বিতৃষ্ণা প্রায় ঘেন্নাই আরো বেড়েছে| এদিকে আমাদের স্কুলেও যে লাইব্রেরী আছে সেটা আমরা কেউ জানতামই না, এখন মা মাঝেমধ্যে বই নিয়ে আসে তাতেই জানতে পারি কাঠের আলমারীতে তালা দেওয়া থাকে বইয়েরা --- প্রতিবছর যখন বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের জন্য বই কিনতে যান দিদিমণিরা ত্খনই পাঠাগার খাতে বরাদ্দ টাকা দিয়েও বই কিনে আনা হয়| তাহলে সেই বই ছাত্রীদের কখনও দেওয়া হয় না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মা বলে 'হ্যাঃ ঐ ভাগাড়ের স্কুলে আবার লাইব্রেরীর বই? পড়বে কে? তোর অসুবিধে কী? তোকে তো দিলাম এনে'| শুনে ধাক্কা খাই জানি এই নিয়ে আরো কথা বললে মা রেগে যাবে, কিন্তু তবু চুপ করতে পারি না বলে ফেলি 'কিন্তু আমরা তো কেউ জানিই না যে এমন গল্পের বই আছে তাহলে আর পড়ব কী করে?' এইবারে মা রেগে যায়, খুব জোরে ধমক দেয়| আমার মনখারাপ লাগে খুব খারাপ --- নিজের জন্য, সব সহপাঠীদের জন্য খারাপ লাগে --- মনে হয় 'ভাগাড়ের স্কুল'এর তাচ্ছিল্য, উপেক্ষা আমাদের চামড়ায় জ্বলুনি ধরিয়ে ধরিয়েই যাবে সারাটা জীবন --- আমরা কেউ কিচ্ছুটি করতে পারব না|
  • | ১২ জানুয়ারি ২০১৪ ১৮:৫৭576276
  • যাঃ দুবার এসে গেল।

    অরণ্য,
    গোঁয়ারদের গোঁয়ার্তুমির জন্যই খানিকটা সাহস এসে যায়।

    শিবাংশু/পিপি/সিকি/কুমু/প্রগতি,
    থ্যাঙ্কুসস
  • | ১২ জানুয়ারি ২০১৪ ২০:১৬576277
  • ক্লাস নাইনের পঁয়ষট্টিজনের ক্লাস থেকে কমে টেনে আমাদের ছাত্রীসংখ্যা হয় পঁচিশ| আগেই শুনেছিলাম খুব বেছে তোলা হয় টেনে, কারণাধ্যমিক দিতে তো আর 'অগা বগাকে পাঠানো যায় না'| অগা বগারা নাইন অবধি উঠে গেল কী করে এ প্রশ্ন করার সাহস অবশ্য আমাদের হয় না| ক্লাস নাইনে অঙ্ক করাতেন শৈলদি, হাসিখুশী ছোট্টখাট মানুষটি, ছাত্রীরা কেউ বুঝতে পারে নি বললে ভারী বিচলিত হয়ে যেতেন, অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বোঝাতেন| ওঁকে ছাত্রীরাও কেউ তেমন ভয় পেত না, গোধুলী বা সমাপ্তির মত যারা এমনকি বাংলা ক্লাসেও মুখ খুলত না তারাও শৈলদিকে নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করত, বুঝতে না পারলে বলত| বাংলার ছায়াবীথিদি এমনিতে খুব হাসিখুশী, ক্লাসে অনেক গল্প করতেন, সকলের বাড়ীর খবরাখবর নিতে চাইতেন; কিন্তু কথায় ছুরির ধার, যখন তখন হেসে হেসে অপমান করতেন মেয়েদের| মেয়েদের পোশাক, শরীর , বাড়ন্ত গড়নের দিকেও ছিল তাঁর তীক্ষ্ণ নজর| পদ্ম মাঝি, প্রচন্ড মোটাসোটা, নাইনে তার ওটা তৃতীয় বছর, এখনকার দিন হলে ওকে 'ওবিস' বলত| পদ্ম নাকি নেমন্তন্নবাড়ীর কাঠের ফোল্ডিং চেয়ারগুলোতে বসতে পারত না, বসলেই ভেঙে পড়ে যেত, ওকে ওর স্থুলত্ব নিয়ে ছায়াবীথিদি নিয়মিত বলতেন, এমনকি এও বলেছেন যে বিয়ের পর পদ্মের খুব অসুবিধে হবে ---- এখানে লক্ষ্যণীয় ছায়াবীথিদি নিজেও খুবই মোটা ছিলেন| ফলতঃ এটি তাঁর জীবন থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা কিনা সেই নিয়ে বাংলা ক্লাসের পরে ইলা, শীলা, সুস্নাতা, রীতা বসাকরা আলোচনা শুরু করে| এদিকে আমি রীমা, রীতা মন্ডল ঠিক করে বুঝে উঠতে পারি না বিয়ের সাথে স্থুলত্বের বিরোধটা ঠিক কতটা বেশী, তবে পদ্ম বেচারী এমন সিঁটিয়ে যায় যে পরপর কয়েকদিন স্কুলেই আসে না| ইতিহাসের শান্তিদিও অবশ্য পদ্মকে রোগা হওয়ার চেষ্টা করতে বলেন কারণ তা না হলে মেদের ভারে ওর হার্টে চাপ পড়বে| শান্তিদির কথা শুনে পদ্ম করুণভাবে জানায় ও খায় খুবই কম আর এত মোটা বলে ওর মা'ও ওকে বেশী খেতে দেন না, কিন্তু তাও ও কিছুতেই রোগা তো হচ্ছেই না বরং আরো মোটা হয়ে যাচ্ছে| শান্তিদি ওকে ডাক্তার দেখাতে বলেন| পদ্ম নাকি মহামায়াকে বলেছিল ওর বাবা ওদের পাড়ার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলেন| কিন্তু তিনি নাকি একেবারে কিছু শুনতেই চান নি, খাওয়া কমিয়ে সকালে মাঠে দৌড়াতে বলেছেন, এদিকে দোড়ানো তো দ্যূরের কথা, একটু জোরে হাঁটলেই ওর ভীষণ হাঁফ ধরে যায়| আমাদের সাথে পাশ করতে না পারায় পদ্মকে টিসি নিতে বলা হয়, কারণ একই ক্লাসে তিন বছরের বেশী এমনকি আমাদের ভাগাড়পাড়ার স্কুলও রাখতে রাজী নয়| পদ্ম বা তার বাড়ীর লোক কেউই টিসি নিতে আসেন নি, শুনেছিলাম ও পড়া ছেড়ে দিয়েছে| কে জানে কোনওদিনই ওর অসুখ ধরা পড়েছিল কিনা!
  • nina | 78.37.233.36 | ১২ জানুয়ারি ২০১৪ ২৩:৪৩576278
  • ২০১৪ শুরু করলাম দমুর লেখায় ডুবে----বড্ড ভাল শুরু হল আমার নতুন বছর ----এইটা বই হয়ে বেরোলে এক কপি দমুর অটোগ্রাফ শুদ্ধু বুক করে রাখলাম!
  • Aloka | 24.99.30.251 | ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ ১৯:৩১576279
  • খুব ভালো লাগছে।আবার কবে পাবো
  • | 24.97.53.194 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ ১৩:৪৫576281
  • নীনা/অলকা
    ধন্যবাদ।

    অলকা, এই তো এই সপ্তাহান্তেই শেষ হয়ে যাবে আশা করি। একেবারে অচেনা কারো থেকে মন্তব্য পেলে দিব্বি লাগে :-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন