এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভাগাড়পাড়া স্কুল থেকে বলছি


    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০১২ | ৭৯৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শিবাংশু | 127.201.153.80 | ২০ মার্চ ২০১৪ ১১:০৮576349
  • লেখাটি ঠিক সময়েই শেষ হলো । একটু সম্পাদনা প্রয়োজন হয়তো। লেখিকা নিজেই সেটা করবেন জানিয়েছেন। ই-বইটির অপেক্ষা রইলো।

    দুরন্ত দলিল....
  • ranjan roy | 24.99.161.233 | ২০ মার্চ ২০১৪ ১৬:৩২576350
  • অক্ষ, শিবাংশু'র সঙ্গে একমত।
    এই ভালো। শেষ হয়ে না হইল শেষ।
    দমু নিজেই ভালো ক্রিটিক ও সম্পাদক। ও ঠিক জানে।
    আমার অশেষ শুভেচ্ছা রইল।
  • Swati | 132.166.88.193 | ২২ মার্চ ২০১৪ ১৪:১১576351
  • স্কুল টা এখনো আছে? গল্পটার সঙ্গে কেমন একটা একাত্ম বোধ জন্মে গেছে। 'মেয়েটা'কে বেশ আপন মনে হয় এখন। ওর জীবনের বাকি গল্প শোনার ইচ্ছে রইলো। জানি দ দি ঠিক লেখার গুনে অনবদ্য সব অভিজ্ঞতা শোনাতে সক্ষম। তাই অপেক্ষা করে থাকব।
  • | ২৩ মার্চ ২০১৪ ১৯:৫০576352
  • হ্যাঁ স্বাতী, স্কুলটা এখনও আছে তো। আমাদের সময়কালের শেষজন শিখাদিদিমণি এই ২০১৩ তেই বোধহয় অবসর নিলেন।

    বাকী সকলকে আবারও ধন্যবাদ।
  • kumu | 133.63.144.238 | ২৩ মার্চ ২০১৪ ২২:৩২576353
  • শেষ করার সিদ্ধান্ত দ নেবে।
    পাঠিকা হিসেবে আমি বইটি চাই, চাই।এ তো আমারো গল্প, আরো অনেকের গল্প।
  • i | 147.157.8.253 | ৩১ মার্চ ২০১৪ ০৪:২৯576354
  • সম্পূর্ণ লেখাটি আবার পড়লাম একসঙ্গে। নতুন কিছু বলার নেই সেভাবে। আগেই বলেছি। এই নির্লিপ্তি( যা কোনো কোনো সময় শিউরে ওঠার মত) দ এর কলমে এভাবে পাই নি আগে। এ লেখায় আমিত্ব বর্জন সম্ভব হয়েছে এভাবেই। কোত্থাও নিজেকে ভালো দেখানো, বা পাঠককে কোনো সিদ্ধান্তের দিকে চালিত করা নেই। নির্লিপ্ত উদাসীন বলে যাওয়া। এই লেখাটিকে আমি ভালোবেসেছি। কিছু ক্ষেত্রে আমার অপ্রাপ্তি রয়ে গেছে -সেকথা আগে লিখেছি। আর নতুন করে লিখব না।
    ভার্জিনিয়া উলফের A room of one's own' এর শেষ পাতা থেকে পূর্বেও উদ্ধৃত করেছি; আজও ইচ্ছে করছে-
    'I told you in the course of this paper that Shakespeare had a sister; but do not look for her in Sir Sidney Lee’s life of the poet. She died young — alas, she never wrote a word. She lies buried where the omnibuses now stop, opposite the Elephant and Castle. Now my belief is that this poet who never wrote a word and was buried at the cross-roads still lives. She lives in you and in me, and in many other women who are not here to-night, for they are washing up the dishes and putting the children to bed. But she lives; for great poets do not die; they are continuing presences; they need only the opportunity to walk among us in the flesh. This opportunity, as I think, it is now coming within your power to give her. For my belief is that if we live another century or so — I am talking of the common life which is the real life and not of the little separate lives which we live as individuals — and have five hundred a year each of us and rooms of our own; if we have the habit of freedom and the courage to write exactly what we think; if we escape a little from the common sitting-room and see human beings not always in their relation to each other but in relation to reality; and the sky. too, and the trees or whatever it may be in themselves; if we look past Milton’s bogey, for no human being should shut out the view; if we face the fact, for it is a fact, that there is no arm to cling to, but that we go alone and that our relation is to the world of reality and not only to the world of men and women, then the opportunity will come and the dead poet who was Shakespeare’s sister will put on the body which she has so often laid down. Drawing her life from the lives of the unknown who were her forerunners, as her brother did before her, she will be born. As for her coming without that preparation, without that effort on our part, without that determination that when she is born again she shall find it possible to live and write her poetry, that we cannot expect, for that would he impossible. But I maintain that she would come if we worked for her, and that so to work, even in poverty and obscurity, is worth while."
    উলফ যা বলেছেন শেষ লাইনে, দ এর এই কাজ সেই সব কাজগুলির মধ্যেই পড়বে।
    ইতি ছোটাই।
  • | ৩১ মার্চ ২০১৪ ১১:৫০576355
  • অমা! এইটা আবার কি পদের সমালোচনা হইল? তোকে যে বললাম মুক্তহস্তে সমালোচনা করতে?
    (ক্কেউ কথা রাখে না ..... )
  • sosen | 24.139.199.11 | ৩১ মার্চ ২০১৪ ১২:২৪576356
  • আমি করব, তুমি ই-বুক করে দাও দিকিন
  • sosen | 24.139.199.11 | ৩১ মার্চ ২০১৪ ১২:২৫576357
  • সিরিয়াসলি কিছু ইলাস্ট্রেশন-ও কত্তে চাই ওই ই-বুকে---
  • সে | 188.83.87.102 | ৩১ মার্চ ২০১৪ ১২:৫৮576359
  • এটা পড়ে আমার যেমন মনে হয়েছে - খোলাখুলি বলি।
    আমিত্ব বর্জন হয়েছে বলে আমার মনে হয় নি। এবং "আমিত্ব বর্জন" কেনই বা করতে হবে, কেনই বা নির্লিপ্ত হয়ে সব লিখতে হবে সে যুক্তি আমি বুঝতে পারি না। এটাতো ভীষণভাবে আত্মজীবনীমূলক লেখা - এখানে "আমিত্ব বর্জন" করে কী লাভ হতো/হয় সেটাও বুঝতে পারিনি।
    একটি মেয়ের স্কুল লাইফের কাহিনি - তাতে স্কুল লাইফ আছে আবার বাড়ি/পাড়া/বন্ধু/আত্মীয় এরাও আছে। মেয়েটির একটিমাত্র সিবলিং তার ছোটো ভাইয়ের উল্লেখ পাই যাকে কোথাও ঠিক রক্ত মাংসের চরিত্র হিসেবে দেখা যায় না। সে যেন কোথাও নেই। একটা গরু, গাছ, স্কুলের টিচার - এদের অনেক বেশি জায়গা।
    মনে হয় কিশোরবেলার কিছু অনুভূতি আড়াল করে দেয়া হয়েছে - (যা হয়তো একেবারেই ভুল ভাবছি) সবটাই শুধু কঠোরতা - কোমলতা প্রায় নেই।
    সাহস করে এই সমালোচনা করলাম।
  • অরিন্দম | 69.93.244.208 | ৩১ মার্চ ২০১৪ ২১:৪৭576360
  • এই লেখায়, "আমি" আছে। যে সমাজ ব্যবস্থা আমার "আমি"কে "আমি" করে তুলেছে...যে আমিটাকে "আমি" প্রতিদিন, প্রতিমুহুর্তে নানা রূপে নানা বিভঙ্গে দেখছি.. এটা সেই "আমি"র গল্প।
    সেই "আমি" কী হতে চেয়েছি আর কী হতে পারিনি আর তারজন্য কে বা কারা কতটা অভিযুক্ত তা'নিয়ে কোন দাগিয়ে দাওয়া নেই।
    অভাব আছে, অভিযোগ নেই। স্বপ্ন আছে, প্রকাশ আছে। প্রচার নেই...
    স্মৃতিকাহিনী শুধু মহাপুরুষদের একচেটিয়া হবে কেন!!!!

    দুরন্ত লেখা।
  • P | 203.28.178.61 | ০১ এপ্রিল ২০১৪ ১৪:১১576361
  • দম , এই লেখাটি আমার পড়া গুচ-র অন্যতম সৎ লেখা। এই লেখার লির্লিপ্তি , সততা , সারল্য আর সৌকর্য্যে আমি ভাসলুম আর খুব খুব ভালবাসলুম। একদম এই লেখাটি হল আমার জীবন দেখার একটা নতুন লেন্স।
  • Du | 230.225.0.38 | ০১ এপ্রিল ২০১৪ ১৬:০৯576362
  • দ এর সাথে আমার ছোটবেলার বেশ কিছু মিল, পড়তে পড়তে ভাবছিলাম - আর অনেক ঘটনাও মিলে গেল। কোন দিন দেখা হলে বলবো।
    পড়তে খুব ভাল লেগেছে - আর নির্লিপ্তিটা শুধু এই লেখায় নয় - আজকাল এমনিতেও পাই অনেক সময় - সামওয়ান অ্যাট পীস উইথ হারসেল্ফ।
  • | ০১ এপ্রিল ২০১৪ ২১:৪১576363
  • সুষেণ, অবিশ্যি অবিশ্যি।

    সে, মোক্ষম গ্থাটতি ধরেছেন। মনে হয় কেটে রাখা পাতাগুলো নেড়েচেড়ে জুড়েই দেব। অসংখ্য ধন্যবাদ।

    অরিন্দম, ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।

    পাল্লিন, কদ্দিন কত বছর কিছু লিখিস না মুখপুড়ি!

    দু, তোমাকে তো প্রায় দেখিই না, তার মধ্যেও নজর করেছ দেখেই ভারী খুশী হয়ে গেলাম। হ্যাঁ হ্যাঁ দেখা তো হবেই।
  • টিকেন | 132.163.29.139 | ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ২১:১২576364
  • দমু... পড়লাম ... প্রথমবার একনাগাড়ে, কারন লেখাটার টান আমাকে হুড়মুড়িয়ে পড়তে বাধ্য করছিল ... দ্বিতীয়বার একটু থেমে... কারন লেখাটার মধ্যে যে সূক্ষ্ম ডিটেলস্‌গুলো আছে সেগুলো ছবির মত সাজাচ্ছিলাম পরপর ... চন্নামেত্ত নেওয়ার জন্য তোমার দৌড়ে ঠাকুরঘরের সামনে আসা আর দিদার সেই আগ্রহ উপেক্ষা করে ভাইয়ের জন্য আর ছোটদির জন্য অপেক্ষা করার মধ্যে বিকেলের শেষ আলোয় তোমার উড়ন্ত ফ্রকের ফ্রিল দেখছিলাম... দেখছিলাম মাসিমার সকাল থেকে মাঝরাতের যুদ্ধের শেষে শান্ত ঘুমন্ত মুখের দিকে তোমার তাকিয়ে থাকা...
    ... লেখাটার মধ্যে যা লেখা আছে তার থেকে অনেক বেশি আছে বুঝে নেওয়ার উপাদান । পাঠককে বুঝে নেওয়ার, উপলব্ধি করার যে জায়গাটা দিয়েছ সেটা ভীষণ ভাল লেগেছে...
    মতামত - নাহ্‌, দেব না। কক্ষনো দেব না ।
    তুমি যা লিখতে চেয়েছ তাই লিখেছ, যেভাবে লিখতে চেয়েছ সেভাবেই লিখেছ। যে মেয়েটা প্রতিনিয়ত হাজারো লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে নিজেকে স্বচ্ছতোয়া করেছে, নিজের বক্তব্য নিজের বিশ্বাস দৃঢ় করে তুলেছে দিনের পর দিন সেই মেয়েটার সৃষ্টির চুলচেরা বিচার করার আমি কেউ না । কেমন ভাবে কি লিখলে বা কি না লিখলে লেখাটা কেমন হত তা মাথাতেই আসে নি আমার কারন অন্যভাবে লিখলে আরও কিছু ডিটেলিং অ্যাড বা ডিলিট করলে লেখাটা অন্যরকম হত হয়ত , কিন্তু তাতে কি? ঠিক এইভাবে এই সুরে এই তালে আর এই লয়ে লেখাটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। ভীষণ তুমুল চূড়ান্ত মুগ্ধ করেছে।
  • dd | 132.171.93.206 | ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ২১:২৪576365
  • ইটি কে? শুনি।
  • সিকি | ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ২২:০৫576366
  • ডিডিদার বয়েস হচ্ছে। :)
  • টিকেন | 132.163.22.49 | ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ২২:২২576367
  • ওকি সিকি! ডিডিদা সদ্যজাত। ছোত্তরা অম্নি ভুলেই যায় ... আর আম্মো ইয়াদ রাখনেওয়ালা কেউকেটা কেউ নই । :)
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ২২:৪৭576368
  • কিন্তু কিন্তু, টিকেন নামটা, নাকি স্যার উপাধিটা, ডিডিই দিয়েছিলেন না?
  • N | 69.89.1.182 | ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ২৩:৩২576370
  • এটা ডিডিদার নিজস্ব স্টাইলে করা অনুযোগ, 'এখানে দেখি না কেন?'
  • সিকি | ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৭:০৫576371
  • কিন্তু, কিন্তু, টিকেন বানাম লিখল 'সদ্যজাত'? টিকেন লিখল?

    নাহ, টিকেনের মাথাতেও পাকাচুল বেড়েছে।
  • টিকেন | 132.163.22.49 | ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৮:৩৩576372
  • সিকি... :(
    ন ... :)
    অভ্যু, ... স্যার উপাধিটা ডিডিদার দেওয়া :)
  • dd | 132.171.74.177 | ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৯:২৬576373
  • ওঃ। স্যার টিকেন। সত্তিকারের জেনুইন তো?

    ত্তো ভালো খপোর। এদানী গুচতে মে' মানুষেরা অসম্ভব ভালো লিখছে। একজনের পর একজন। তো স্যার টিকেন(১০০% পিওর)জয়েন কল্লে সিক্স্টীন ব্যানানা পুর্ণ হয়ে উপছে পরবে।
  • টিকেন | 132.163.20.154 | ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৮:৪৪576374
  • ও ডিডিদা,

    এ মাসটায় বেজায় ঝকমারি
    মে' মাস থেকে লিখতে বসতে পারি :-)
  • bratin | 122.79.39.39 | ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৮:৫০576375
  • ও টিকেন তা আছো কেমন? বহু দিন বদে দেখে খুব ভালো লাগছে

    ভাটে এসো।
  • টিকেন | 132.163.20.154 | ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ১২:৫৫576376
  • এই তো ... আছি ব্রতীন... তুমি ভাল আছ?
  • | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ১৯:৫৭576377
  • এখানেই লিখি বরং
  • | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ১৯:৫৭576378
  • সেই কোনকালে যখন ভবানীপুর থানার সামনে দিয়ে ৩২ নম্বর ট্রাম চলত, সেই সময় কালীপুজো মানে ছিল লুচি পায়েসের ভোগ আর ধবধবে সাদা নারকেলের তক্তি| জিজির একটা চার ফুট বাই আড়াইফুট ফ্রেমে বাঁধানো কালীঠাকুরের ছবি ছিল, তারাপীঠের 'নুল্ল্তারামানুল্ল', বেশ শান্তমত চেহারা, খুব চুল মাথায়| সেই ছবিতে রোজকার জল বাতাসা, সন্দেশ বা নকুলদানা পড়লেও ঐ কালীপুজোর দিন লুচি ফুলকপিভাজা অথবা আলু ফুলকপির মাখামাখা তরকারী আর পায়েস ভোগ দেওয়া হত| এছাড়াও চালকলার নৈবেদ্য, ফল আর নারকেলের নাড়ু আর তক্তিও দেওয়া হত, সবই সেইদিন দুপুর থেকে বানানো| এই পর্যন্ত অন্যসব বাড়ীর পুজোর মতই, এরকমই হয়| কিন্তু এর পরের অংশটুকু একেবারে ব্যতিক্রমী, যা আরও তিন, সাড়ে তিনযুগ পেরিয়ে এসেও নিজের আশেপাশে আর দেখলাম না| জিজির এই নুল্ল্তারামানুল্ল'য়ের পুজোটা করত জিজি নিজে| সকাল থেকে উপোষ করে থেকে পুজোর সমস্ত যোগাড় করে ভোগও প্রায় একাহাতে রেঁধে স্নান করে আসত জিজি, তারপর নুল্ল্তারামানুল্ল'য়ের ছবির কাচ গোলাপজল, কেওড়ার জল আর খড়িমাটি দিয়ে ঘষে ঘষে চকচকে করে চন্দন দিয়ে সাজিয়ে জবাফুলের মালা পরিয়ে দিত| তারপর অমাবস্যা লাগলে রাত আটটার পর সমস্ত দরজা জানলা বন্ধ করে, ইলেকট্রিক আলো নিভিয়ে, ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজোয় বসত, সেই পুজো চলত তিনঘন্টা কিম্বা আরও একটু বেশী| কোনও বই বা খাতা কোনওদিন সঙ্গে নিতে দেখি নি, পুজোর সময় কারও সেইঘরে ঢোকার অধিকার ছিল না, তাই কেমনভাবে পুজো করত, কী মন্ত্র বলত তাই নিয়ে আত্মীয়মহলে প্রবল কৌতুহল ছিল| ভোগের রান্নার সময় কিম্বা নাড়ু তক্তি বানানোর সময় তাও মা একটু আধটু সাহায্য করত, কিন্তু পুজোর সময় দরজা ছাদের দিকের জানলা একদম বন্ধ| আমরা যখন ভবানীপুরে ছিলাম, তখন জিজি থাকত চিলেকোঠায়| ঠাকুরেরা এমনিতে দোতলায় মাস্ত রান্নাঘরের উত্তরকোণে পাতা ঠাকুরের আসনে সারাবছর থাকত বটে, তবে কালীপুজোর দিন নুল্ল্তারামানুল্ল পুজো নিতে যেত ঐ চিলেকোঠায়| হয়ত রান্নাঘরের একপাশের ঠাকুরঘরে কাঙ্খিত নিভৃতি ও গোপনীয়তা পাওয়া সম্ভব নয় জেনেই জিজি এমন ব্যব্স্থা করেছিল| একে তো 'মাইয়ামানুষ' নিজে নিজে পুজো করছে, তাও আবার লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়া নয়, কালীর মত রক্তপায়ী ঠাকুরকে ভোগ দিয়ে পুজো, সে যত গোপনেই করুক না কেন, তাকে অমনি অমনি নিশ্চিন্তে করতে দেবে এমন নিঝর্~ন্ঝাট মানুষ মোটেই ছিল না আত্মীয়স্বজনেরা| অতএব তারা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যেত জিজিকে, 'কী কর অতক্ষণ বন্ধ ঘরে? কী মন্ত্র পড়ো? কেমন করে পুজো কর? কার কাছে শিখেছ পুজো?' জিজির একটাই বাঁধা উত্তর ' ও বেটি আমার মা, মায়ের কাছে আমি হাসি কাঁদি, ঝগড়া করি'| শুধু একবার বলে ফেলেছিল 'নিজের মায়ের কাছে তো এসব করবার জো ছিল না -----'| তো, দাদা ছোড়দিরা এই নিয়ে আড়ালে দিব্বি হাসাহাসি করত আর আরেকটু বয়স্ক আত্মীয়গণ কতখানি 'পাপ' হচ্ছে সেই হিসেব করতেন| কালীর মত রাগী ঠাকুর যে 'মাইয়ামানুষ'এর এমন অনাচার বেশীদিন সহ্য করবেন না সে নিয়ে সবাই মোটামুটি একমত হলে সেই বছরের মত আলোচনা শেষ হত|

    অনেক বছরই পুজো শেষ করে বেরোতে জিজির এত রাত হত যে আমি আর জেগে থাকতে পারতাম না, ঘিয়েভাজা লুচির গন্ধ নাকে নিয়ে আমি মা'র করে দেওয়া আলুসেদ্ধভাত কিম্বা দুধভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম আর পরের দিন সকালে উঠেই দৌড়ে দেখতে যেতাম তখনও ঘরের দরজা বন্ধ কিনা| তা অবশ্য হত না, ততক্ষণে জিজির উঠে স্নানও সারা হয়ে যেত আর নুল্ল্তারামানুল্ল আবার রান্নাঘরের কোণে নিজের আসনে বসে যেত| ভোগের লুচি পায়েস সেদিন সকাল খুবজোর দুপুরের মধ্যেই শেষ, নাড়ু ও তক্তি অবশ্য চলত আরো কিছুদিন| কিন্তু বন্ধঘরে পুজোর রহস্য থেকে গেছে আজীবন| জিজি নাকি তারাপীঠের শ্মশানে অমাবস্যার রাতে আসন করে বসেছিল বেশ কয়েকবার, গুরু ছিলেন 'ব্যনার্জীবাবু' জিজি বলত ব্যানার্জীদা| উনিই দিয়েছিলেন এই ছবিটা জিজিকে| এমনিতে অন্যসব ব্যপারে জিজি বেশ খোলামেলা কথাবার্তা বলত, কিন্তু এই কালী সম্পর্কিত ব্যপারে জিজি খোলাখুলি কিছুই বলত না, এদিকে মাঝে মাঝেই নাকি 'তারামা' ছোট্ট মেয়ে হয়ে নুপুর পরে ঝুমঝুম আওয়াজ করে ঘুরে বেড়াত বাড়ীময়, আর তাই শুনে আমি মাঝরাতে জেগে উঠে কান পেতে ঝুমঝুম আওয়াজ শোনার চেষ্টা করতাম, কিন্তু সে আমরা কেউই কখনও শুনি নি| বাবা মারা যাওয়ার পরে এই 'অনাচার' নিয়ে আড়ালে আবডালে জোরদার আলোচনা চলে, সকলেই প্রায় একমত যে এই পাপেই এমন সর্বনাশ হল বাড়ীতে, এবার এই জিনিষ বন্ধ করতেই হবে, নাহলে আরো সর্বনাশ হবে| কিন্তু কি আশ্চর্য্য কেউই কেন যেন জিজিকে গিয়ে সরাসরি পুজো বন্ধ করার কথাটা বলে উঠতে পারল না| দুই একজন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই বছরও পুজো করবে কিনা জানতে চাইলে জিজির সপাট জবাব 'খোকন ভোগ খাবে বলে বসে থাকত, অন্য কোনও খাবার কালীপুজোর দিন খেতে চাইত না, তাই আমি তাড়াতাড়ি মা'কে খাইয়ে দাইয়ে দরজা খুলে দিতাম| এখন আর তাড়াতাড়ি দরজা খোলা কার জন্য? কীসের জন্য?' এর কোনও সঠিক জবাব কেউই দিয়ে উঠতেও পারেন নি, সাহস করে মনের কথাগুলো মুখফুটে বলে উঠতেও পারেন নি| জিজি জিজির মতই পুজো করে গেছে আজীবন|

    আমরা বাবা মারা যাওয়ার মাস পাঁচেকের মধ্যে কোন্নগর চলে আসি, আর কখনও কালীপুজোয় জিজির ওখানে যাওয়া হয় নি| যেতে বলেছে অনেকবার, কিন্তু কোন্নগরের বাড়ীতে ছোটমামা ছোটদিদের সাথে হুল্লোড় করে বাজী পোড়ানো, শুভ্রাদের ছাদ থেকে এবার কটা হাউই ছাড়ল তার হিসেব রাখা, বাড়ীর পাশেই শ্রীপল্লীর পুজোয় ঠাকুর দেখতে আসা লোকের ভীড় দেখা, অষ্টপ্রহর মাইকের গান আর থেকে থেকে উদ্দাম ঢাকের বাজনা --- এইসব ছেড়ে ঐ অন্ধকার ঘরে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে নিভৃত পুজোটুকু দেখতে যাওয়ার কোনও আগ্রহ বোধ করি নি| আর কৈশোর পেরোতে না পেরোতেই সমস্ত ঠাকুর ও ধর্মীয় আচার আচরণের ওপরেই এসে যায় তীব্র বিতৃষ্ণা ও তাচ্ছিল্য| শুনেছি সেই বছর থেকে একেবারে অপারগ হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত প্রতি বছরই প্রায় সারারাত বন্ধ থাকত ঘর| আমরা চলে আসবার পর জিজি ঐ বাড়ীতে একলাই ছিল দুয়েকটি কাজের লোক নিয়ে, তাই নিভৃতিতে ব্যাঘাত আর ঘটে নি| একসময় কলকাতার পাট গুটিয়ে কল্যাণী চলে যেতে বাধ্য হয়, সেখানেও গোপনীয়তার অভাব ঘটে নি, ততদিনে বয়স্ক আত্মীয়গণ প্রায় সকলেই গত হয়েছেন আর দাদা ছোড়দিরা 'পাগলামি' মেনেই নিয়েছে, তাদেরও আর নতুন করে হাসি পায় না| এমনিভাবেই অসম্ভব কষ্ট করে সম্পূর্ণ শুন্য থেকে শুরু করে হাউইয়ের মত উঠে একটি স্কুল স্থাপন করে তার রেক্টর হয়ে অঢেল টাকাপয়সা নিয়ে জ্বলজ্বলিয়ে বেঁচে আবার সেই স্কুল অন্যের হাতে দিয়ে কলকাতা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়ে জিজি পোড়া হাউইয়ের ছাইয়ের মতই ঝরে গেছে|

    এরপরে কোন্নগর কালীতলা কলোনী মহিলা সঙ্ঘের পুজোর মত আরও কোথায়ও কোথায়ও মহিলাদের আয়োজিত পুজো দেখেছি কিন্তু সেখানেও পুরোহিত অবশ্যই টিকিতে জবাফুল আটকানো পুরুষ| এইভাবে সমস্ত প্রচলিত প্রথা ও লোকের বাঁকাকথাকে উপেক্ষা করে নিজের মত করে গোপনে কালীপুজো করতে আর কোনও মহিলাকে দেখি নি| এখন মনে হয় বড় হয়ে স্বাধীন হয়ে অন্তত এক আধবার জিজির কাছে কালীপুজোর সময় গেলেও হত| হয়ত যে সব কথা কোনওদিন কাউকে বলে নি, বলতে পারে নি, তা আমার কছে বলতেও পারত --- তারাপীঠে আসন করে বসার গল্পও হয়ত বলত --- নাহয় সেসব ফ্যান্টাসিই শুনতাম, ফ্যান্টাসি শুনতে ভালই তো লাগার কথা --- অন্তত জিজি তো জানত যে কেউ একজন মন দিয়ে তার কথা শুনেছে|
  • dd | 132.167.174.190 | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ২১:১২576379
  • "'নুল্ল্তারামানুল্ল'" ?

    হোয়াট ??? হোয়াট ইজ দিস ????

    এরম মাস স্কেলে এককীকরন হলে তো খুব মুষ্কিল।
  • 00 | 181.64.40.104 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩৫576381
  • দ, আপনার লেখা র প্রধান আকর্ষন সততা আর একটা অদ্ভুত নিরাসক্তি -- অথ্চ মায়াময়। খুব ভালো লাগল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন