এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • লটনের ছাগল

    Abhyu
    অন্যান্য | ১৮ আগস্ট ২০১৪ | ১৪৫৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Abhyu | 78.117.213.187 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৯:২৭649141
  • এখানে ব্যাংদি "ছাগলে খায় নি সিরির নাড়ু" নামে একটা গল্প লিখবে।
  • byaang | 132.166.177.180 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৯:৩৪649252
  • কী জ্বালা! সে তো দিদার রাঙামাসীর বাড়ির গল্প। সিউড়ির টইয়ে গেলেই বেশ হত। তবে নতুন টই যখন খোলাই হল, তা এখানে লিখি। কিন্তু যেদিন আমি "লটনের ছাগল" গল্পটা লিখব বলেছিলাম, তারপর কেন গল্পের নাম বদলে "ছাগলে খায় নি সিরির নাড়ু" করে দিলাম, তা যখন কেউ জানতে চাইল না, তখন নিজেই বলে দিই।

    সেদিন সকাল থেকে লটনের কথা মনে পড়ছিল, তারপর তো এখানে লিখলামও যে আমি লটনের ছাগলকে নিয়ে লিখতে চাই। কিন্তু তারপর মা আর ছোটমাসীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, লটন হল গিয়ে আমার মা-মামা-মাসিদের দাদু, আর বেজায় মামলাবাজ লোক। মায়ের রাঙাদাদু উকিল হয়েও লটনের সঙ্গে পেরে ওঠে নি। তাই আমি ভয়্টয় পেয়ে একসা হয়ে গল্পের নাম বদলে দিয়েছি।
  • i | 147.157.8.253 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৯:৪২649363
  • আমারও একটা টল্প আছে-'হেলেনের ছাগল'। হেলেনকে আমি বনগাঁ লোকালে দেখতাম। ছাগলকে দেখি নি। পরে লিখব কখনও।এখন এইটা পড়ব।
  • byaang | 132.166.177.180 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৯:৫৮649441
  • আমার দিদার রাঙামাসির মত বিজয়ার হরেক রকম মিষ্টি বানাতে আর কেউ পারত না। আর আমার মা-মামা-মাসিদের মতন বিজয়া-করিয়েও ঐ শহরে খুব কম ছিল। বিজয়া-করিয়ে মানে কী জানতে চাইছেন তো?

    শুনে রাখুন, বিদ্যাসাগর কলেজের কোনো প্রফেসরের উপর কোনো ছাত্র বা ছাত্রী যদি প্রতিশোধ নিতে চাইত, তাহলে তারা বিজয়া দশমী অব্দি হাতপা কোলে করে বসে থাকত, দশমীটি পেরোলেই, অম্নি আমাদের বাড়ি এসে আমার মা-মামা-মাসিদের ডেকে নিয়ে যেত সেই প্রফেসরের বাড়ি বিজয়া করতে যাওয়ার জন্য।

    ভাবছেন বিজয়া করে প্রতিশোধ নেওয়া সে কেমন ব্যাপার? তাহলে ডিটেলে বলি, শুনুন।

    ধরুন, সেই প্রফেসরের বাড়ি সক্কালবেলায় প্রথম বিজয়াটি সেরে এল আমার বড়মামা। খানিক বাদে আমার ছোটোমামা জনা কয়েক বন্ধুকে নিয়ে ওনার বাড়ি বিজয়া করে এল। ওদিকে বড়মামা হয়তো ইলামবাজারে গিয়ে খেপ খেলে ফেরার পথে সন্ধ্যেবেলায় গোটা টীমকে নিয়ে আবার সেই প্রফেসরের বাড়ি বিজয়া করে এল। টীমের বাকি ছেলেরা ওনার বাড়ি বিজয়া করতে এলে , সেই টীমেরই লোক হয়ে বড়মামা কি না এসে থাকতে পারে! এদিকে তার আগেই বিকেলবেলায় কিন্তু আমি, ছোটোমাসি, আর ভালোমাসি ওনার বাড়ি বিজয়া করে এসেছি। রাত একটু হলে বিজয়া করতে যেত আমার মা, সঙ্গে আমি, ভালোমাসি আর ছোটোমাসি। মার একা একা বিজয়া করতে যাওয়াটা মানায় না তো। পরের দিন সকালবেলায় ছোটোমাসি গেল রতনমাসিদের নিয়ে ওনার বাড়ি বিজয়া করতে। বলতে ভুলে গেছিলাম, দুপুরবেলায় টাইপ ক্লাস থেকে ফেরার পথে ভালোমাসি কিন্তু ব্যাচের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ওনার বাড়ি একবার বিজয়া করে এসেছে। আর বিকেলবেলায় মা গেল নিজের পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ওনার বাড়ি নষ্টলজি কাম বিজয়া করতে, সঙ্গে ফাউ আমি।

    এবার বুঝেছেন তো বিজয়া-করিয়ে কাদের বলে!
  • byaang | 132.166.177.180 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১০:০৫649452
  • রাঙামাসির গল্প হাতের কাজটা সেরে এসেই বলছি। ততক্ষণ আপনারাও সব একটু কাজিয়ে নেন তো।
  • byaang | 132.166.177.180 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১১:১৯649474
  • জল পায়
  • byaang | 132.166.177.180 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১১:১৯649463
  • তা এমন ডাকসাইটে সব বিজয়া-করিয়েদের মধ্যে বড় হতে হতে আমার শিক্ষানবিশিটাও মন্দ হচ্ছিল না। তবে আমি ডাউন খেয়ে যেতাম কোয়ান্টিটি বনাম স্পীডের ব্যাপারটায়। ক্লাস থ্রী অব্দি আমি এত ধীরে ধীরে খেতাম যে আমার খাওয়ার দৃশ্য দেখলে আপনাদের ইচ্ছা করত - আমার গালে একটা বিরাশি সিক্কা বসিয়ে দিয়ে, আমার কান ধরে হিড় হিড় করে পাত থেকে তুলে আনতে।

    এদিকে কোয়ান্টিটি বনাম স্পীডের ব্যাপারটাও মোটেও ফেলনা ছিল না আমার মামার বাড়িতে, আমার মায়ের মামার বাড়িতে, এমনকি আমার দিদার মামার বাড়িতেও। এইসব বাড়ির মহিলারা ছিলেন সাক্ষাত অন্নপূর্ণার অংশ। এনাদের পরিমিতি জ্ঞানটা অনেক উঁচু তারে বাঁধা ছিল, এনারা যখনই কারুর থালা সাজাতেন, অম্নি বেরোত ওনাদের, না না দাঁত-নখ বেরোত না, (এসব চিন্তা আপনাদের মাথায় আসেই বা কী করে!) বেরোত ওনাদের ইয়াব্বড় বড় থাবা। সেই থাবা ভরে ভরে খাবার তুলে ঠুসে ঠুসে ওনারা থালা সাজাতেন। দিদার মামার বাড়ি মানে তো দিদামায়ের (দিদামা = দিদার মা) বাপের বাড়ি। আজও সেই বাড়ির আনাচেকানাচে শোনা যায় দিদামায়ের ঠাকুমার দীর্ঘশ্বাস। তিনি কাউকে কম খেতে দেখলেই শিউরে উঠতেন। শেষের দিকে তো আর কথা বলতেন না, নিখাকিদের ন্যাকাপনায় অতিষ্ঠ হয়ে ঘেন্নায় মৌন নিয়েছিলেন, তাই কাউকে শিউরে উঠে "আর পারব না, ভাতের পাতেই পেট ফেটে মরে যাব" বলতে শুনলে ভারি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন। তো এই থালা সাজানো ব্যাপারটা কিংবদন্তীর রূপ পায় দিদামায়ের ঠাকুমার সময়ে। মজুমদার বাড়ির গুরুজনেরা আজও বলেন যে দিদামায়ের ঠাকুমা নাকি সত্যি সত্যি পাশে বেড়াল বেঁধে রাখতেন থালা সাজানোর সময়ে। কোনো বিড়াল যদি হাইজাম্প দেওয়ার সময়ে পা-স্লিপ করে সেই থালায় ল্যান্ড করত, তো সেই পা-স্লিপ করা বিড়ালের বরাত খুলে যেত। দিদামায়ের ঠাকুমা নাকি পা-স্লিপ করা বিড়ালটিকে সেই থালাটি ধরে দিয়ে, ভারি নিশ্চিন্ত হয়ে পুনরোদ্যমে নতুন থালা সাজাতেন সমপরিমাণে খাদ্যব্স্তু বেড়ে দিয়ে। এবারে অবশ্য বিড়ালকে লাফ দেওয়া প্র্যাক্টিস করানোর জন্য নয়, কোনো এক মানবসন্তানকে অভুক্ত না রাখার অভিপ্রায় নিয়ে। দিদামা যখন অষ্টমঙ্গলায় বাপের বাড়ি এল, আর নতুন বর মানে মায়ের দাদু যখন ভাতের থালা দেখে প্রায় মুচ্ছো যাচ্ছিলেন, তখন নাকি দিদামায়ের ঠাকুমা থমথমে গলায় দিদামায়ের বাবাকে বলেছিলেন, "নিখাকিদের গুষ্টিতে মেয়েটার বিয়ে দিলি, বংশের প্রথম মেয়ে, খেয়ে-পরে বাঁচলে হয়! ছেলেদের দেওয়া জলের আগে কিন্তু বাপমায়ে মেয়ের হাতের জল পয়। তোর কি আর সে ভাগ্যি হবে?"
  • byaang | 132.166.177.180 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১১:৪২649485
  • ভেবে দেখুন একবার মহিলার বাক্যির বাঁধুনিটা ! নিজের পেটের ছেলেকে স্মরণ করিয়ে দিলেন যে সে মরলে চতুর্থীতে তার মেয়েই আগে বাপকে জল দেবে, তাই মেয়ে যাতে সারাজীবন দুধেভাতে থাকে তার বন্দোবস্ত করাটা বাপ যেন নিজের প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বেই করে।

    ঐ যে সেই কোন এক টইয়ে দজ্জাল কারে কয়, দজ্জাল কারে কয় জিগাচ্ছিলেন আপনারা। এবার নমুনা পেলেন তো?
  • byaang | 132.166.177.180 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১১:৪৩649496
  • তা এহেন ঠাকুমার নাতনী হল দিদামা, আর দিদামায়ের আপন বোন হল দিদার রাঙামাসি। সম্পর্কর বাঁধুনিটাও বুঝলেন আশা করি।
  • dd | 132.172.71.17 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১১:৪৮649142
  • মাগ্গো। আমদের বেং যে ক্ষী ভালো ল্যাখে! ক্ষীঃ ভাল্লো।

    উনি দেশোদ্ধারেই মত্ত হয়ে সাহিত্য সংসকৃতি সব দিলা জলাঞ্জলি।
  • de | 190.149.51.68 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১২:১৯649153
  • ব্যাং আর কুমুদি এরা আমাদের লীলুদি - নং ১ আর ২ -

    বিজয়া করিয়ে পড়ে খুব হাসলাম!
  • সিকি | 135.19.34.86 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১২:৩৫649164
  • মাক্কালী, পুউরো একসাথে শীর্ষেন্দুর হিউমর আশাপূর্ণার ঝাঁঝ আর লীলা মজুমদারের লেখনীর স্টাইল। তুলকালাম হয়েছে।

    আরোচ্চাই।
  • byaang | 132.166.177.180 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১২:৪১649175
  • তা এহেন ঠাকুমার থেকে ট্রেনিং পাওয়া দিদামা, দিদামার বোন রাঙাদিদা এনারা কেমন বিজয়ার থালা সাজাতেন, তা সহজেই অনুমেয়।

    যদিও এটা রাঙাদিদার বিজয়ার থালার সিরির নাড়ুর গল্প, তবুও দিদামার ঠাকুমার আরেকটি গল্প আপনাদের শোনাই।

    দিদামার ঠাকুমার বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই ওনার মা মারা যান, এবং সৎমা সেই সংসারে আসেন। তা এমন কোনো মধুর সম্পর্ক ওনাদের মধ্যে গড়ে ওঠে নি, যার মাহাত্ম্যি আমি আপনাদের শোনাতে বসেছি। তো দিদামায়ের ঠাকুমার একটি বিশ্বাস ছিল, যেটি আমিও মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। বিশ্বাসটি এই যে ছেলেরা মোটেও বংশের ধারা বয়ে নিয়ে যায় না। সে বেদপুরানে যাই বলা থাকুক না কেন। ও মেয়েরাই বয়ে নিয়ে যায় এক সংসার থেকে আরেক সংসারে। প্রতিটি মেয়ে তার মা-ঠাকুমা-দিদিমাদের থেকে শিখে নেওয়া ধারাটি নিয়ে নতুন পরিবারে ঢোকে, এবং সেই ধারাটিই ছড়িয়ে যেতে থাকে পরবর্তী প্রজন্মে। তার থেকে তার পরের, তারও পরের। (দুচ্ছাই সায়েন্স ফিক্শন লিখতে বসেছি নাকি, রাঙাদিদা সিরির নাড়ু বানিয়ে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবে) তো এমন বিশ্বাসে বিশ্বাসী দিদামায়ের ঠাকুমা তো নিজের নতুন মাটির সঙ্গে রেষারেষি করে নিজের মরা মায়ের সব কটা ধারাই বলুন আর ঐতিহ্যিই বলুন, সেই সব ভারি নিষ্ঠাভরে বাপের সংসারে চালু রাখলেন। নতুন মাটিকে কোনোরকম চান্সই দিলেন না, নিজের মায়ের থেকে শিখে আসা কোনো ধারা চালু করতে। একদিন এক শুভক্ষণে বাপের সংসারটি ছেড়ে নতুন সংসারে চলেও গেলেন মাতৃতন্ত্রের বাহিকা হয়ে। আর নতুন মা-ও অম্নি একটা নিজের সংসার পেয়ে গেলেন, নিজের স্টাইল মতন চালানোর।

    তো অনেক বছর বাদে কী এক উপলক্ষ্যে দিদামায়ের ঠাকুমা সপরিবারের বাপেরবাড়ি আসবেন। (উনি বিশেষ বাপের বাড়ি আসতে চাইতেন না, নতুন মায়ের মেলেচ্ছপনা উনি সইতে পারতেন না, তাই) দিদামায়ের ঠাকুমারও ততদিনে ছেলেপুলে হয়েছে অনেক, আর ওনার নতুনমায়ের ছেলেপুলেদেরও বিয়েথা হয়েছে ততদিনে। দিদামায়ের ঠাকুমার নৌকা ভিড়ল ঘাটে, খবর গেল বাড়িতে। ঘাট থেকে বাড়ি অব্দি বেশ খানিকক্ষণের পথ। তো সেই পথ পেরিয়ে উনি যখন ভেতরবাড়িতে পৌঁছলেন, শুনলেন নতুন-মা নিজের ছেলে বৌদের বলছেন, "নেও নেও, হল তোমাদের? হাত চালিয়ে সারো। এক্ষুনি উমাতারা একপাল ছেলেপুলে নিয়ে ঢুকল বলে, বাপের অন্নের পাহাড় ধ্বংসাতে! ওকি অলুক্ষুণে রাক্ষুসে খাওয়া বাপু ছেলেপুলেদের! তা যেমনি মা, তেমনি ছাঁ-ই তো হবে সব! মা-টি নিজেই যে ছেলেপুলেদের এম্নি স্বভাব করেছে!"

    এই অব্দি শুনে দিদামায়ের ঠাকুমা আর দাওয়ায় উঠলেন না। খ্যারখেরিয়ে বললেন "নতুন মা, তোমাকে পেন্নাম করে আর এই অবেলায় তোমাকে নাইতে বাধ্য করবা না বাপু। তোমার বুড়ো বরটি সেরেস্তা থেকে ফিরলে, তাকে জানিয়ে দিও, উমাতারা এসেছিল একপাল ছেলেপুলে নিয়ে, তবে অন্ন ধ্বংসায় নি, বাপের ভিটেতে পায়ের ধুলো দিয়ে সেই ধুলো পায়েই আবার ফিরে গেছে জম্মের শোধ। নাও তুমি তোমার অন্ন আগলাও যক্ষিবুড়ি হয়ে।"

    জম্মের শোধ তো জম্মের শোধই। বাবা মরার খবর পেয়েও যান নি।
  • byaang | 132.166.177.180 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১২:৪৫649186
  • বুঝে দেখুন, আমার শিরায় শিরায় কেমন সব রক্তের ধারা বইছে! তাও তো এখনো আপনাদের দিদামায়ের শেয়াল পেটানোর গল্পটা বলি নি। খুব যে তুচ্ছু করেন আমাকে, আমি যদি একবার রেগে গিয়ে আমার কালো জিভ দিয়ে কোনো শাপমন্যি খসাই না, দেখবেন তখন কী হয়!
  • byaang | 132.166.89.61 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১২:৪৯649208
  • ভয় পাবেন না অত, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শুধু আমাকে রাগাবেন না।
    আসুন আমার সঙ্গে রাঙাদিদার বাড়ি চলুন।
  • kiki | 127.194.77.80 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১২:৪৯649197
  • খুব সুন্দর হচ্ছে। ঃ)
  • byaang | 132.166.89.61 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৩:০৯649219
  • রাঙাদিদার বাড়ির বিজয়ার আকর্ষণ ছিল এমনি অপ্রতিরোধ্য যেন প্রচন্ড শক্তিশালী এক চুম্বক, যেন বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল, যেন মৌচাক, যেন আরো কী কী সব যেন! ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। বরং উদাহরণ দিই।

    ধরুন, বড়মামা হয়তো বাজার সেরে বাড়ির ফেরার পথে কোনো এক বন্ধুর বাড়ি থেকে বিজয়া সেরে এসে বাড়ি ঢুকছে, আর ছোটোমামা হয়তো তখন উঠোনে বসে রেডিও সারাচ্ছে, বড়মামা ছোটোমামাকে শুধোবে, "রাঙাদিদার বাড়ি বিজয়া সেরে এসেছিস?'
    ছোটোমামা তার উত্তর হ্যাঁ-নায়ে না দিয়ে বড়মামাকে সাসপেন্সে রেখে পাল্টা শুধোবে, "তুই সেরে এসেছিস?"
    মা হয়তো তখন বারান্দা থেকে দিদার শাড়ি কুঁচোতে কুঁচোতে বলবে, "তোরা আগে সেরে আয়, দেখে আয় সিরির নাড়ু হয়েছে কিনা, তারপর আমি যাব।"
    ছোটোমাসি অম্নি গলা সাধা বন্ধ করে মাঝের ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলবে, "তোমরা কে কখন যাবে যেও বাপু, আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না, আজই লাইব্রেরি থেকে ফেরার পথে আমি রাঙাদিদার বাড়ি বিজয়া সেরে আসব।"
    অমন যে আমার গুরুগম্ভীর দিদা, তিনিও মন্দ্রস্বরে বলে উঠবেন, "ও বাবু, বাজার থেকে ট্যাংরা মাছ আনলি, কিন্তু পেঁয়াজকলি আনলি না? আমিই তাহলে কাপড় ছেড়ে যাই, একবার বাজার ঘুরে আসি, ফেরার সময় রাঙামাসির বাড়ি হয়ে আসব। বচ্ছরকারের প্রণাম ফেলে রাখলে চলে?"

    আর জানবেন উপরের সব্বার সঙ্গে কিন্তু আমি ধ্রুবক রূপে বিরাজমানা হব প্রতিবার, মানে যতবার এনারা একে একে রাঙাদিদার বাড়ি বিজয়া করতে যাবেন। ছোটোমাসি একা গেলেও আমি তার সঙ্গে রাঙাদিদার বাড়ি যাব হেঁটে বিজয়া করতে, দিদা একা গেলেও তো আমি যাব্বই যাব্ব দিদার সঙ্গে রিক্শা করে, বড়মামা একা গেলেও সাইকেলের রডে আমাকে বসিয়ে নিয়ে যাবে, ছোটোমামা তো আর একা যাবে না, নিশ্চয় কৌশিকমামার সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে যাবে, আর রডে বসে যাব আমি। আর মা গেলেও আমি সঙ্গে যাবই, মা অবশ্য হাঁটাবে। তাতে কিছু না, জেলখানার কয়েদিরা কী অপূর্ব্ব রামায়ণ সাজিয়েছিল দুর্গাপুজোর সময়ে, মাকে তার বর্ণনা দিতে দিতে হাঁটার পাব্যথা টেরই পাব না। মা তো আর ঠাকুর দেখতে যায় না। খালি বাড়ি বসে আড্ডা দেয়। দিদা আমাকে কী সুন্দর ঠাকুর দেখায়!
  • সিকি | 135.19.34.86 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৩:২৬649230
  • কী মিত্তি কী মিত্তি লাগছে।
  • byaang | 132.166.89.61 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৩:৩৩649241
  • তা রাঙাদিদার বিজয়ার থালায় যেমনটি ভ্যারাইটি থাকত, অমনটি এই বুড়োবয়স অব্দি এসেও আর দেখলাম না। নাড়ুই থাকত ছয় রকমের। সব দুটি দুটি করে। মোয়াও থাকত চার রকমের। তাও দুটি দুটি করে। গজাও থাকত তিন না চার রকমের। বড়গুলো দুটি করে। কুচোগুলো অ্যাত্তো করে। নোনতার থালায় থাকত দুই রকমের নিমকি, দুই রকমের সিঙারা, আর ঘুগনির বাটি। সব রাঙাদিদার নিজের হাতে বানানো। আর মিষ্টির থালায় থাকত। রসগোল্লা, পান্তুয়া, বোঁদে, ক্ষীরক্দম্ব, সন্দেশ দুই রকমের, বালুসাই। সে সবও রাঙাদিদার নিজের হাতে বানানো। (একটু দিদার হয়ে অহংকার করে নিই, আমার দিদাও নিজের মা-মাসিদের থেকে এই সব গুণগুলি পুরোমাত্রায় রপ্ত করে নিয়েছিলেন) তবুও রাঙাদিদার বিজয়ার থালা, রাঙাদিদার বিজয়ার থালাই, অমন ভ্যারাইটি, অমন কোয়ান্টিটি আর দেখলাম না।
  • byaang | 132.166.89.61 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৩:৪৩649253
  • তা এই তিন থালা বিজয়ার থালা রাঙাদিদার বড় বউমা সাজিয়ে দিতেন একটি বড় ট্রে করে। পার হেড একটি করে ট্রে। আর পার ট্রে তিনটে করে থালা, আর এক বাটি করে পায়েস।

    আমাদের বাড়ির বিজয়া-করিয়েরা যে লুব্ধ হবেনই এমনধারা ব্যব্স্থাপনায়, সে তো জানা কথাই। কিন্তু আমার রাঙাদিদার বাড়ি যাওয়ার কারণ ছিল অন্য। সেটি ছিল রাঙাদিদার নাতনি, প্রায় আমারই সমবয়সী। সে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ত অন্য কোন বড় শহরে, সেও পুজোর সময়ে আসত আর আমিও আসতুম। তখন আমি যদি শুনতাম, কেউ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, অম্নি চোখ গোলগোল করে তাকাতুম, ভয় খেতুম, তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে গলা দিয়ে আওয়াজই বেরোত না, খালি দেওয়ালের সঙ্গে মিশে যেতে চাইতুম। কিন্তু রাঙাদিদার নাতনিটি ছিল বড় ভালো মেয়ে। সে আমার সঙ্গে কথা বলার সময়ে খেয়াল রাখ্ত, ভুলেও যেন একটিও ইংরিজি সে বলে না ফেলে, ভুলেও যেন আমাকে মন খারাপ করিয়ে না ফেলে। ফলে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হতে মোটেও দেরি হয় নি।

    আর আকর্ষণের আরেকটা কারণ ছিল রাঙাদিদাদের বাড়ির ছাদটা। পুরো ছাদটা না। ঐ ছাদের যে দিকে পাঁচিল ছিল না, ফলে আমরা পা ঝুলিয়ে পা দুলিয়ে বসে বিজয়ার থালা শেষ করতে করতে লটনদের বাড়িটা দেখতে পেতাম। ছাদের সেই দিকটা।
  • de | 69.185.236.54 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৪:৫৭649264
  • অন্ততঃ বছর কুড়ি কোন বিজয়া করিনি! ঃ((
  • dc | 52.104.61.233 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৫:৩৩649275
  • এই টইটার নাম রাখা উচিত ছিল 'লটন সাহেবর ছাগল', বা 'লটনদের আশ্চর্য্য ছাগল'। তাহলে গল্পোটা আরো জমে উঠত।
  • ঐশিক | 24.140.33.186 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৫:৩৭649286
  • যাক তাইলে এইবারে নিশিন্ত হলাম, এবারে পুজোর পরে বিজয়া করতে ব্যাং-দির বাড়ি তেই যাব, কানমলা খেতে হলেও যাব
  • ranjan roy | 132.176.225.253 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৫:৪১649308
  • বিজয়া করব লুরুতে ব্যাংয়ের বাড়িতে!!!
    অনেকদিন পরে প্রাণখুলে হাসলাম, দারুণ লেখা।
  • dc | 52.104.61.233 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৫:৪১649297
  • ইশ বিজয়ার থালার বর্ণনা পড়ে আমারও যেতে ইচ্ছে করছে।
  • শিবাংশু | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৬:৫৮649319
  • বাহ, নিখুঁত ডিটেলস। একেবারে থ্রি ডাইমেনশন বর্ণনা । পড়তে পড়তেই আইঢাই অবস্থা। ভাবাই যায়না, শায়েস্তা খানের সময়ে এখনও এভাবে ফিরে যাওয়া যায়... :-)
  • Abhyu | 78.117.213.187 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৮:১৮649330
  • দুর্দান্ত :)
  • byaang | 132.166.89.61 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৯:৩৩649341
  • দেখেছেন কান্ড! ক্ষীরতক্তি লিখতে গিয়ে ক্ষীরকদম্ব লিখে বসে আছি। রাঙাদিদার নিজের হাতে বানানো ক্ষীরতক্তি থাকত অন্য সব মিষ্টির পাশে। নানারকমের ক্ষীরতক্তি। মাছ ক্ষীরতক্তি, আম ক্ষীরতক্তি, তালশাঁস ক্ষীরতক্তি, শাঁখ ক্ষীরতক্তি। তা আমার নিজের দিদার বিজয়ার থালায়ও ঐ ক্ষীরতক্তিগুলো থাকত। দিদার রাঙামাসির থেকে শিখেছিল দিদা, দিদার থেকে দিদার মেয়ে ভালোমাসি, আর আমার ভালোমাসির থেকে শিখেছিলুম আমি ক্ষীরতক্তি বানাতে। (হ্যাঁ হ্যাঁ এই আমি, যিনি কিনা হন্যে হয়ে সর্ষের টই খুঁজে বেড়ান, সেই আমি)

    যারা আমার লুরুর বাড়িতে বিজয়া করতে আসবেন, তারা আগে আমাকে সেই কালো রঙের ছাঁচগুলো জোগাড় করে দিতে পারবেন ক্ষীরতক্তি বানানোর? আম ছাঁচ, তালশাঁস ছাঁচ, শাঁখ ছাঁচ, আর মাছ ছাঁচ।

    ক্ষীরতক্তি ছাড়া বিজয়ার থালা সাজানো যায় না।
  • sosen | 218.107.71.70 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ২০:২৫649352
  • দারুণ, দুর্দান্ত, ব্যাপক।
  • byaang | 132.166.89.61 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ২১:১০649364
  • না তো এখনো লটনের কথা বললাম, নাই তার ছাগলের কথা। তার আগেই সবাই মিলে হাত্তালি দিয়ে কেমন শেষ করে দিতে চাইছে! ঃ(
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন