এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • লটনের ছাগল

    Abhyu
    অন্যান্য | ১৮ আগস্ট ২০১৪ | ১৪৪০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • de | 190.149.51.67 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৭:৩৪649497
  • ইকি! কেন??????
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৭:৩৫649499
  • সায়নের এই পোস্টের পরে আর এইখানে আমি লিখব না। :-X
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৭:৩৬649500
  • এবারে সিকি আর কুপ্রীত এসে কী করবে আন্দাজ করতে পারছ না দে?
  • সায়ন | 212.21.223.85 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৭:৩৯649501
  • ইকি মুশকিল! আর্ধুর কেউ কিছু কুমন্তব্য করবে না। তুমি লিখতে থাকো।
  • de | 190.149.51.67 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৭:৪০649502
  • আচ্ছা, ওদের বারং করে দেবো এখন - তুমি লেখো তো!
    টেনশনে পড়ে গেসলাম!
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৭:৪৫649503
  • ঃ) ওরা কুমন্তব্য করুক বা না করুক, আমারই বেজায় হাসি পেয়ে যাচ্ছে।

    আচ্ছা লিখছি।
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৮:০৩649504
  • লটন ঘুম থেকে উঠে সিরির নাড়ু পড়ে থাকতে দেখলে কী কী করতে পারে, সেই ভেবে ভয়ে আমার আর ঝুমার প্রাণ প্রায় উড়ে যায় আর কি! একটা নাড়ু পড়ে থাকলে তাও নাহয় বলা যেত, হাত ফসকে পড়ে গেছে। কিন্তু দুটো সিরির নাড়ুই তো আর এক সঙ্গে হাত ফসকে পড়তে পারে না। লটন যদি এসে রাঙাদিদাকে বলে দেয়, যে এবাড়ি থেকে ওর বাড়িতে নাড়ু ছুড়ে ফেলা হয়েছে! ঝুমাকে তো নাড়ু দেওয়া হয় নি, আমাকেই দেওয়া হয়েছিল, তার মনে আমিই দুটো-ই ফেলে দিয়েছি। ভয়ের চোটে মাথা আর কাজ করে না।
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৮:০৪649505
  • *তার মানে আমিই দুটো-ই ফেলে দিয়েছি।
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৮:১২649506
  • এদিকে ছোটনমামা ততক্ষণে ছাদের ঘরের উপর থেকে নেমে এসেছে। নেমে এসেই বলে , "চল আর ছাদে থাকিস না, বিকেল হয়ে এল। চল নীচে যাই।"

    ঝুমা বলে, "তুমি যাও, আমরা দুজন এক্ষুনি আসছি।"

    আমি কিছুই বলি না, আমি শুধু মনে মনে আপ্রাণ প্রার্থনা করতে থাকি, "ঠাকুর ছাগলটাকে নাড়ু দুটো খেয়ে নিতে বল। ঠাকুর, লটন ওঠার আগেই ছাগলটাকে নাড়ুগুলো খাইয়ে দাও। ঠাকুর গো, আর কক্ষনো খাবার জিনিস ফেলব না। এমনকি কোলকাতায় গেলে দুধও আর জানলা দিয়ে ফেলব না। শুধু, আজকের দিনটার জন্য ছাগলটাকে নাড়ু দুটো খাইয়ে দাও।"

    পাপীদের প্রার্থনা আর কবে ভগবানের কান অব্দি পৌঁছেছে! তাই লটনের ছাগলও সিরির নাড়ুদুটো খেয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করে না।
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৮:২০649143
  • দিদা নীচ থেকে ডাক দেয়, "মেমসাহেব, নেমে এস। বাড়ি যেতে হবে।"

    অগত্যা নামতেই হয়। ঝুমার অবস্থাও আমার থেকে কিছু ভালো নয়। আমি তো বাড়ি চলে যাব। নাড়ুকাহিনী জানাজানি হলে ঝুমাকেই তো সবাই আগে বকবে।

    নীচে এসে খালি থাকা ফেরত দিই। ঝুমার মা আমাকে আদর করে বলেন, "এই তো লক্ষ্মী মেয়ে, পুরো থালা শেষ করে দিয়েছে। একটুও খাবার নষ্ট করে নি।"

    হায় রে, সত্যিটা যে লটনের ছাগলের সামনে এখনও পড়ে আছে। ছোটনমামা একটা রিকশা ডাকতে যায় আমি দিদার সঙ্গে ফিরব বলে। রিকশা নিয়ে যে কোনো সময় এসে যাবে। কিন্তু আমি যাই কী করে? মরিয়া হয়ে বলে উঠি, "আমাকে একবার লটনদের বাড়ি যেতে দেবে?"

    দিদা বলে "ও কী! গুরুজনদের নাম ধরে ডাকতে আছে? আর ওদের বাড়ি যাবে কেন?"

    বলি, "ছাগল দেখতে।"
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৮:২৬649144
  • "ছাগল দেখতে!!!" দিদা এত অবাক হয়ে যায় যে এছাড়া আর কিছু বলতেই পারে না।

    রাস্তার দিকের বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে থাকা রাঙাদাদু বলে ওঠেন, "আহা, যাক যাক। যেতে দাও। ছোট মেয়ে। কোলকাতায় তো পোষা ছাগল, পোষা হাঁস এসব দেখতে পায় না, ওকে যেতে দাও। আর লটনের সঙ্গে আমার ঝগড়া, তাতে ওর কী! যাক ও।"

    রাঙাদাদুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় প্রায় নুইয়ে পড়ি। একবার লটনদের বাড়ি ঢুকতে পেলেই নাড়ু দুটো কুড়িয়ে আনব। কিন্তু বাদ সাধেন রাঙাদিদা। উনি আমাকে কিছুতেই লটনের বাড়ি যেতে দেবেন না একা। এমনকি ঝুমা আর আমি, এই দুজনকেও যেতে দেবেন না। ছোটনমামা এসে আমাদের নিয়ে গেলে তবে যেতে দেবেন। কিন্তু ছোটনমামা গেলে তো আমাদের মুশকিল। ছোটনমামার সামনে তো আর নাড়ু কুড়ানো যাবে না।
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৮:৩৯649145
  • বড়ই আতান্তরে পড়ে যাই। এবার?

    মনে মনে ভগবানকে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এবার ভগবানের কাছে চাহিদা অন্য। এক্ষুনি যেন ঝুপ করে অন্ধকার নেমে যায়। লটনের ঘুম ভাঙার আগেই। অন্ধকারে হয়তো লটন নাড়ুদুটো দেখতে পাবে না।

    ভগবানের বোধ হয় এবার একটু দয়া হয়। সত্যি সত্যিই বিকেলের আলোর জোর কমে আসে। ওদিকে ছোটনমামাও রিকশা নিয়ে ফিরে আসেন। আমাকে আর দিদাকে রিকশায় তুলে দিয়ে বলেন, "কাল সকালে আবার তোর মামার সঙ্গে চলে আসবি। আমরা ছড়া বানানোর খেলা খেলব।"

    দিদার সঙ্গে যখন বাড়ি ফিরি, ততক্ষণে প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে। নিজেই নিজেকে আশ্বস্ত করি, এতক্ষণে নিশ্চয়ই ছাগলটা নাড়ু দুটো খেয়ে নিয়েছে। ঝুমা বলেছিল, ছাগলটা সারাক্ষণ নাকি খায়। তখন হয়তো জাহাজের পালটা খেয়ে এসে ওর তত খিদে ছিল না। এতক্ষণে হয়তো খেয়ে নিয়েছে।

    দিদা বাড়ি ঢুকেই স্নান করতে চলে যায়, স্নান করে, কাচা কাপড় পরে সন্ধ্যে দেবে। মা এসে কুয়োতলায় আমার হাত পা ধোয়াতে ধোয়াতে বলে, "ওখানে খাওয়া নিয়ে অসভ্যতা কর নি তো? সব শেষ করে খেয়েছ?" কোনোরকমে ঘাড় হেলাই। চোখের সামনে ভাসছে লটনের খাটিয়ার সামনে পড়ে থাকা নাড়ুদুটো।
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৮:৫২649146
  • দিদা স্নান করে বেরিয়ে বলে, "ওকে আজ খাওয়া নিয়ে জোরাজুরি করিস না।"

    ঝুপ করে লোডশেডিং হয়ে যায়। ভুটুমামা আর ছোটমামা বাড়ি এসে বলে যায় কেবল ফল্ট হয়েছে। আজ রাত্তিরে আর জ্যোতিবাবুর আসার আশা নেই।

    ছোটমাসি, পাপড়িমাসি আর রতনমাসি দরজার বাইরে থেকে বলে "আজ চাঁদের আলোয় ডিআই আপিসের চাতালে আমাদের জলসা হবে।"

    দিদা বলে "ঐ কর, তোমাদের বইখাতাগুলো দিয়ে আমি উনুন ধরাই। কয়লার খরচা বাঁচে।"

    ভালোমাসির হাত ধরে ডিআই অফিসের সিঁড়িতে গিয়ে বসি। মা-ও আসে। দিদা আসে না। দিদাকে এখন লন্ঠনের আলোয় রাতের রান্না করতে হবে।

    চাঁদের আলোটা কেমন মরা মরা! মরা মরা বলতে নেই, ম্লান চাঁদের আলো বলতে হয়। ভালো করে কারুর মুখ দেখতে পাই না অত কম আলোয়। সাদা নয়নতারাগুলো ফুটে আছে। কাল সকালে ওরা গোলাপি হয়ে যাবে। শিউলিগাছটাতেও সাদা ফুল ছেয়ে আছে। কাল সকালে শিউলি তুলেই বড়মামার সঙ্গে রাঙাদিদাদের বাড়ি চলে যেতে হবে।

    ঝুমামাসি প্রথম গানটা শুরু করে, আনন্দধারা বহিছে ভুবনে। এটা আমাদের স্কুলের অ্যাসেমব্লিতেও গাওয়া হয়। ঝুমামাসি দুইতিন লাইন গাওয়ার পরেই ছোটোমাসি, পাপড়িমাসি, টুকটুকিমাসি, শিখামাসি সবাই মিলে গলা মেলায়।
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৯:৩৪649147
  • ওদের গানের আওয়াজে আরো সবাই বেরিয়ে আসে। প্রলয়্মামা এসে বলে "আমি একটা আবৃত্তি করি?" প্রলয়্মামার মেয়ে লিপি আমার কানে কানে বলে "দেখবি, বাবা এখন শিশুতীর্থ কবিতাটা বলবে। আজই দুপুরে পড়ছিল কবিতাটা।" প্রলয়্মামার কবিতা বলা শেষ হলে বাবলা-টুবলা দুই ভাই এসে "লিচুচোর" কবিতাটা বলে। আমাকেও সবাই ঠেলা দেয় একটা গান গাওয়ার জন্য। আমার গান গাইতে ভালো লাগে না। আমি তাই "আমি আজ কানাই মাস্টার, পোড়ো মোর বিড়ালছানাটি" বলি।

    ডিআই অফিসের আট দশ ধাপ বিশাল লম্বা লম্বা সিঁড়িগুলোতেই স্টেজ, আবার সেখানেই সেই সিঁড়িগুলোতেই সবাই ধাপে ধাপে বসে ছোটোমাসিদের জলসা দেখছে।

    আমার কিন্তু এইসব জলসা-টলসা কিচ্ছু ভালো লাগে না। আমার মন পড়ে আছে লটনের ছাগলের কাছে। হে ঠাকুর, হয় ছাগলটাকে নাড়ুদুটো খাইয়ে দিও, নয় কাল সকালে আমাকে বা ঝুমাকে নাড়ুদুটো পাইয়ে দিও। আর কারুর চোখে যেন না পড়ে। সবার মাথার উপর দিয়ে বিচ্ছিরি করে ডাকতে ডাকতে একটা পাখি গিয়ে অর্ধেন্দুমামাদের বাড়ির ছাদের পাঁচিলে বসে। মেয়েরা অনেকে মাথায় হাত দিয়ে নমো করে, ওটা তাহলে লক্ষ্মীপ্যাঁচা। হায় হায় এ কী করলাম! "প্যাঁচা" বললাম! দিলাম তো ওর খাবার টকিয়ে! সন্ধ্যেবেলায় "লক্ষ্মীর বাহন" না বলে "প্যাঁচা" বললে ওদের খাবার টকে যায়। আমাকে দিদামা বলেছে। আজ আমি শুধুই খারাপ কাজ করে চলেছি।

    এখন ঝুমামাসি "গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে" গাইছে। ঝুমামাসি গাইতে গাইতে যেই "হৃদয়ে প্রণয় কুসুম" বলল, আমি মায়ের কোলে শুয়ে শুয়ে দেখলাম রতনমাসি ছোটমাসিকে কনুই দিয়ে একটা ঠেলা মারল। ছোটমাসি রতনমাসির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসল। তবুও আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না। রতনমাসি আমাকে বলে, "দেখেছিস, আমাদের কেমন লোডশেডিং হলে জলসা হয়! হয় তোদের কোলকাতায় এমন মজা?" আমার রাগ হয়ে যায় রতনমাসির উপর। সবসময় আমাকে বোঝাতে থাকে, কোলকাতা কত খারাপ। ভালোমাসির কোনো কারণে মনখারাপ। গাইছেও না, কবিতাও বলছে না। চুপ করে বসে আছে।

    মা আমাকে ধাক্কা দিয়ে জাগায়, বলে "না খেয়ে ঘুমোবে না কিন্তু" শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি।
  • T | 24.139.128.15 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৯:৪৩649148
  • আহা হা, এমন যদি শৈশব পাওয়া যেত। খুব ভালো লাগছে পড়তে।
  • hu | 102.46.98.165 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৯:৪৫649149
  • ব্যাংদির মাসিদেরও বুঝি কিন্নরদল বলা হত?
  • byaang | 132.178.250.33 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৯:৪৮649150
  • ঃ-)

    এবার তোদের ব্যাংদিকে রান্না করতে যেতে হবে। আবার পরে লিখব।
  • Blank | 69.93.247.64 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০০:৫৬649151
  • প্রথমত ব্যাং দি বড় হয়ে কেউ একটা হবে।
    দ্বিতীয়ত আকাশে ঘুড়তে খুব ভাল্লাগে। খালি মাঝে মাঝে কাদার মতন অন্ধকার থাকে।
    তৃতীয়ত হাইব্রিড ছাগল বানানো উচিৎ, যাদের রেডিমেড খাওয়া যাবে।
  • Abhyu | 78.117.213.187 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৪:০৩649152
  • বুনু তো ভুলেই মেরেছিস যে এখানে একমাত্র আমিই নিয়মিত উড়ে থাকি, হাতটাকে ডানার মত ব্যবহার করে। নীচে বড়ো সবুজ মাঠ বা নীল নদী/সমুদ্দুর থাকে। স্বপ্নে যদিও, কিন্তু বেশ লাগে।
  • byaang | 52.104.62.91 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৬:১৮649154
  • যত বাজে কথা! আমি সেই কবে থেকে উড়ি! এই অভ্যু যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাঁটতে শিখছে, তখন আমি একবার চৌরঙ্গীর মোড়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় দুই হাত ডানার মত নাড়িয়ে আকাশে উড়ে যেতে চেয়েছিলাম ভাদ্র মাসের রোদ্দুর দেখে আনন্দে অধীর হয়ে, ট্রাফিক পুলিশ শুদ্ধু সাক্ষী আছে, কারণ সে উড়ন্ত আমাকে জল অফার করেছিল। ভাদ্র মাসের রোদ্দুরে নাকি অনেকেরই এমন হয়, সে কথা ও বলেছিল।
  • Atoz | 161.141.84.164 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৬:৪০649155
  • হি হি হি ঃ-)
    আমি ভাবলাম পুলিশটাকে শুদ্ধু টেনে নিয়ে তুমি বুঝি উড়ে গেলে।
    কী দৃশ্য, আকাশে পুলিশ ঝুলছে, তার কাঁধ উড়ন্ত তোমার মুঠিতে। ঃ-))))
  • siki | 132.177.245.40 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৭:২৩649156
  • ব্যাং মনে হচ্ছে অনেকটাই বানিয়ে লিখছে। এ রকম ছোটবেলা কারুর হতে পারে না। অনেক অনেক জন্ম আগে আনন্দমেলায় পড়তাম এ রকমের গল্প।

    চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এটা কি এবারে বই হয়ে বেরোতে পারে?

    দিল্লি এলে ব্যাংয়ের করিমে ট্রিট পাক্কা।
  • byaang | 132.167.73.236 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৮:১৩649157
  • সকালে ঘুম ভাঙা মাত্রই দিদার কাছে কয়লাঘরে দৌড় লাগাই, "দিদা আমি বড়মামার সঙ্গে রাঙাদিদার বাড়ি যাব।" দিদা রাজি হয়ে গেলেই মা আর "না" বলতে পারবে না।

    দিদা কয়লা ভাঙতে ভাঙতে বলে, "ঠিক আছে, তোমার বড়মামা আগে উঠুক, তারপরে হবে সে সব। তুমি তাহলে এখন চটপট করে তোমার হাতের লেখা, অঙ্ক কী কী আছে, সে সব সেরে নাও। তোমার মা ওঠার আগেই আমার কাছে লক্ষ্মী হয়ে খেয়ে নাও, কাল রাতে তো না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলে।" আমি আজ সব কথাতেই রাজি হয়ে যাই। দিদা স্নান করতে যায়, আমি বসে বসে প্রশ্নের অঙ্ক করি। দিদা স্নান করে এসে আমাকে দুধ্মুড়িকলা দেয়, আজ আমার দুধমুড়িকলা খেতে একটুও বমি পায় না। বড়মামা ঘুম থেকে ওঠার আগেই আমার বাংলা আর অঙ্ক পড়া শেষ।

    বড়মামা ঘুম থেকে উঠে ঘর থেকে বেরোনো মাত্রই আমি গিয়ে বড়মামার হাত ধরে ঝুলতে থাকি, "আমি রাঙাদিদার বাড়ি যাব" বলে। দিদাও বলে, "ওকে রাঙামাসিমার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে, তুই বাজার সেরে নিস। ফেরার সময় নিয়ে আসিস।" বড়মামা জলখাবার শেষ হওয়ার আগেই আমি নিজেই জামা পরে নিয়ে উঠোনে বড়মামার সাইকেলের কাছে ঘুরঘুর করতে থাকি। বড়মামা এসেই আমাকে সাইকেলের সামনের রডে বসিয়ে নিয়ে হাওয়ার সঙ্গে রেস করতে করতে রাঙাদিদার বাড়ির দিকে যায়।
  • byaang | 132.167.73.236 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৮:২৩649158
  • বড়মামাকে সাহস করে বলেই বসি, "বড়মামা আমাকে আগে লটনের বাড়ি নিয়ে যাবে? তারপরে রাঙাদিদার বাড়ি যাব।"

    বড়মামা বলে "আমি তোমাকে রাঙাদিদাদের বাড়িতে নামিয়ে দেব। তুমি ছোটনমামার সঙ্গে ওদের পাশের বাড়ি যেও। আমাকে বাজার করতে হবে। অত সময় নেই।"

    রাঙাদিদাদের বাড়ি যাওয়া মাত্রই একটা ছোট শোরগোল পড়ে যায় আমাকে নিয়ে। আমি কত ভালো মেয়ে, কাল ছোটনমামা বলে দিয়েছিলেন, বড়মামার সঙ্গে সকাল সকাল চলে আসতে, অম্নি আমি ঠিক তাই করেছি। আমার মতন ভালো কেউ কক্ষনো দেখে নি। এদিকে ভয়ে আমার মুখ শুকিয়ে আছে। ঝুমা এসে আমার হাত ধরে। আমাকে নিয়ে ছাদে উঠতে যায়, রাঙাদিদা ঝুমাকে বলেন, "আসা মাত্রই ছাদে কেন? ওকে নিয়ে এখানে বসে বা ঘরে বসে খেলা কর, ভোরের হাওয়া লেগে গেলে ওর ঠান্ডা লেগে যাবে। বড় সর্দির ধাত মেয়েটার।"

    রাঙাদাদু বলেন , "যেতে দাও, যেতে দাও। কোলকাতার পায়রার খুপরিতে বাস, খোলা বাতাস কতটুকুই বা পায়! যাও দিদিরা, তোমরা ছাদে গিয়ে খেলা কর।"

    ঝুমা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলে, "ভয় পাস না। আমি চায়্নার মা-কে বলে দেব। আমাদের বাড়ির কাজ সেরে ও তো লটনদের বাড়ি যাবে, তখন ও উঠোন ঝাঁট দেওয়ার সময় নাড়ুগুলো ফেলে দেবে। আমি দেখেছি নাড়ুগুলো পড়ে আছে এখনও।"
  • byaang | 132.167.73.236 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৩২649159
  • ছাদে উঠে খোলা দিকটায় যাওয়া মাত্রই ঝুমার মা ঝুমাকে নীচ থেকে ডাকেন, জলখাবার খেয়ে যাওয়ার জন্য। ঝুমা আমাকে রেখে দৌড়িয়ে নেমে যায়। আমি লটনদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, খাটিয়া আছে, খাটিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে লটন অন্য একটা লুঙ্গি পরে দাঁতন দিয়ে দাঁত মাজছে, একটু দূরে নাড়ুগুলো পড়ে আছে, লটন অবশ্য সেই দিকে দেখছে না, কিন্তু ছাগলটা নেই।

    ছাগলটা এত সকালবেলা কোথায় গেল? তাহলে কি আবার পাল খেতে গেছে? ছাগলটা কি রোজ সকালে পাল খেতে যায়? ময়ূরাক্ষী নদীতে এত এত পালতোলা জাহাজ আর নৌকা আছে?

    কিন্তু নাড়ুদুটোর কী হবে? চায়নার মা যদি আজ না আসে? যদি নাড়ুগুলো পেয়ে বলে দেয়? যদি চায়নার মা আসার আগেই লটন নাড়ুদুটো দেখতে পেয়ে যায়?

    আর ভাবতে পারি না। অসীম সাহসে ভর করে একটা কাজ করেই ফেলি শেষ অব্দি। লটন নামের পুরুষটির সঙ্গে আমার প্রথম বাক্যালাপ। ছাদ থেকে একটু জোরে একটু চেঁচিয়ে বলি, "ছাগলটা কোথায়? পাল খেতে গেছে?"
  • Abhyu | 78.117.213.187 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৪৩649160
  • হ্যা হ্যা হ্যা
  • Nina | 78.37.233.36 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৪৪649161
  • হা হা হা হা হা একমাত্র বেঙ্গি পারে এমন লেখা লিখতে---- তারপর বেঙ্গি লটন কি বল্ল--- ছাগল জাহাজ দেখতে গেছে?? হোহোহোহো
  • byaang | 132.167.73.236 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৫৪649162
  • লটন কেমন একটু চমকে গিয়ে দাঁতন করতে করতে উপরদিকে তাকায় গম্ভীর মুখে রাগ রাগ চোখে।

    একটু থমকাই। আমার তো ওনাকে কিছু বলে ডাকা উচিত। বড়দার (আমার দিদার দাদা) বয়সী মনে হয়, দাদু বলব কি? নাকি মামা? জেঠু বললেই ভালো হত? মা বলে দিয়েছে, কোলকাতায় কাউকে ডাকতে হলে জেঠু, জেঠিমা, কাকু, কাকিমা, পিসি, দাদু ঠাকুমা এসব বলতে হবে, আর এখানে সবাই মামা-মামি, মাসি-মেসো, দাদু-দিদা। কী বলব? দাদু বললে রেগে যাবেন না তো? লটনমামা বলব? ঠিক করতে না পেরে আবার বলি "ছাগলটা কি রোজ পাল খেতে যায়?"

    এতক্ষণে আমার প্রশ্নটা বোধ হয় ওনার মাথায় ঢোকে। আমার প্রশ্নের উত্তর "হ্যাঁ" বা "না"য়ে দেওয়াই যায়, কিন্তু সেই উত্তর না দিয়ে আমাকে গম্ভীর গলায় পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, "ইস্কুলে পড় না? কোন ক্লাস?"

    আমার প্রশ্নের উত্তর না দিলে আমিই বা ওনার প্রশ্নের উত্তর দেব কেন? আমারও এবার একটু রাগ হয়ে যায়, বলি, "রোজ রোজ ওর পাল খেতে কষ্ট হয় না? অত বড় জাহাজের পাল একবারে খাওয়া যায়? আমি ওকে কাল এই নাড়ু দুটো খেতে দিয়েছিলাম। ও খায় নি কেন? ছাগলকে খাওয়ার জিনিস খেতে দিতে হয়। অত বড় পাল খেয়ে শেষ করা খুব কষ্টের।"

    এতক্ষণে ওনার নজর পড়ে নাড়ু দুটোর দিকে। বিস্ফারিত নেত্রে একবার নাড়ুদুটোর দিকে তাকান একবার আমার দিকে। কাউকে কখনও দাঁতন করতে করতে কেঁপে কেঁপে হাসতে দেখেছেন? আমি দেখেছি। কোনোরকমে "আমার ছাগল ও বাড়ির বৌদির তৈরি করা সিরির নাড়ু খায় না" বলে দাঁতন করতে করতে হাসতে হাসতে উঠোন পেরিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের বাড়ির ভিতর ঢুকে যান।

    আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলে কী ক্ষতি হত কে জানে!! ছাগলকে ভালো শিক্ষা দিতে পারেন নি, খাওয়ার জিনিস খাওয়াতে শেখান নি, রোজ রোজ পাল খাওয়াতে পাঠান। আবার কেমন জোরে জোরে বলেন, "আমার ছাগল সিরির নাড়ু খায় না"!!!!!
  • byaang | 132.167.73.236 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৫৭649163
  • শেষ।

    আর যদি আমাকে কেউ আবার লিখতে বলে তাড়া লাগায়, সে যেন রোমান সভ্যতার আইন-শৃঙ্খলা, সাহিত্য, স্থাপত্যকলা, অঙ্কনবিদ্যায় পারদর্শীতা এসব নিয়ে কুড়ি পাতার প্রোজেক্ট লিখে দ্যায়।
  • | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৫৮649165
  • কিন্তু নাড়ুদুটোর কী হল? পিঁপড়েও তো ধরেনি মনে হচ্ছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন