এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • লটনের ছাগল

    Abhyu
    অন্যান্য | ১৮ আগস্ট ২০১৪ | ১৪৪০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ২১:৩৩649399
  • আমার তিন মাস
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ২১:৩৩649400
  • *আবার
  • ব্যাং | 132.172.33.82 | ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ২১:৫০649401
  • আমি চেঁচিয়ে উঠি "বাবা!"
    ধুতিপাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করেন "এটা কি ক্ষুদের মেয়ের বাড়ি?"
    আমার চিৎকার শুনে বাবা ততক্ষণে আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। বাবা জিজ্ঞেস করল "কাকে খুঁজছেন?"
    উনি আবার বললেন "ক্ষুদের মেয়ের বাড়ি? ক্ষুদের জামাই নিশ্চয়ই? আর এই বুঝি ক্ষুদের নাতনি?"
    বাবা বলে "এখানে ক্ষুদে-টুদে বলে কেউ থাকে না। আপনি কত নম্বর ফ্ল্যাট খুঁজছেন?"
    "ক্ষুদে আমাকে কিছুদিন আগে এই বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বলেছিল, ক্ষুদে কোলকাতায় এলে এই বাড়িতেই ওঠে।"
    এবার বাবা রেগে যায় "বলছি তো ক্ষুদে-ফুদে কাউকে আমরা চিনি না।"
    আমি তো জানি বাবা কেন এত রেগে গেছে। বাবা রেগে গেছে মোহনবাগান হেরেছে বলে। তাই এত খারাপ করে কথা বলছে। বাবা যাতে আরো রেগে না যায়, তাই আমি এবার বাবার পিছন থেকে মুখ বাড়িয়ে বলি "আপনি কি খুদুমামাকে খুঁজছেন? খুদুমামা তো সিউড়িতে থাকে। এখানে থাকে না।"
    বলতে বলতেই আলো চলে আসে। সিঁড়ির বালবটা জ্বলে ওঠা মাত্র আলো পড়ে ভদ্রলোকের টাকটা চকচক করে ওঠে। চোখের চশমার কাচদুটোও।
    "ক্ষুদে তোমার মামা হয়!"
    "হয় তো। মনিকামামির ভাই তো খুদুমামা। খড়গপুরে পড়ে।"
    "পড়ে!!! কিছু একটা গন্ডগোল হচ্ছে।" বলতে বলতে ভদ্রলোক সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান।
    আমি পিছন পিছন দৌড়াতে দৌড়াতে বলি "খুদুমামাকে কিছু বলতে হবে? আমাকে বলুন, আমি পরের বার সিউড়ি গেলে খুদুমামাকে বলে দেব আপনার কথা।"
    কিন্তু আর কিছুই না বলে উনি চলে যান।
    বাবা উপর থেকে ডাক দেয়, "এখন আর বেরোনোর দরকার নেই, যে বইটা পড়ছিলে, সেটাই পড়ো।"
  • ব্যাং | 132.172.33.82 | ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ২২:১৩649402
  • আমি দরজা বন্ধ করতে করতে ফিকফিক করে হেসে ফেলে বাবাকে বলি "বাবা ওনার টাকটায় আলো পড়ে কেমন সুন্দরবাবুর টাকের মত জ্বলজ্বল করছিল না?"
    "সুন্দরবাবু? ও আচ্ছা, হেমেন্দ্রকুমারের সুন্দরবাবু!!! হা হা হা।"
    বাবাকে এতক্ষণ বাদে হাসতে দেখে আমার খুব আনন্দ হয়। ভাগ্যিস এখন মা বাড়ি নেই, নয়তো কারুর টাক নিয়ে আমি আর বাবা হাসছি দেখলে খুব বকত দুজনকেই।

    এমন সময় দরজায় বেল। বেল বাজলেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খোলাটা আমার কাজ। দরজা খুলে দেখি ভালোমাসি, বড়মামা আর দাদুভাই। বড়মামা আর দাদুভাইয়ের গম্ভীর থমথমে মুখ। (মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে গেছে কিনা) আর আমার ভালোর হাসি হাসি মুখ।
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ২২:১৯649403
  • তারপর?
  • ব্যাং | 132.172.33.82 | ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ২২:২৯649404
  • সিউড়ি থেকে বাসে এসেছে, রেডিওয় খেলা শুনতে শুনতে।

    কাল বড়মামার পায়ে একটা অপারেশন হবে, তাই দাদুভাই আর ভালো এসেছে, মাকে আর বাবাকে সাহায্য করবে বলে। হসপিটালে যাতায়াত করতে হবে তো! কাল আমি যখন ইস্কুলে থাকব, তখন ওরা গিয়ে বড়মামাকে হাসপাতালে ভরতি করে দেবে। তারপর অপারেশন হবে।

    আমি জানলা দিয়ে চেঁচিয়ে বলি "অ মা! শিগগির এসো। ভালো, দাদুভাই আর বড়মামা এসেছে।"

    রাতে খেতে বসে আমার মনে পড়ে যায় সন্ধ্যেবেলায় যিনি ক্ষুদে নামের কাউকে খুঁজতে এসেছিলেন তার কথা। আমি মাকে বলি সব কথা। দাদুভাই শুনে বলে, "মাথায় কি টাক ছিল? ধুতিপাঞ্জাবি পরা তো? নমামা নিশ্চয়ই। আমার মামাবাড়ির নাম ক্ষুদে।"
  • ব্যাং | 132.172.33.82 | ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ২৩:২৮649405
  • এবার মা বাবার উপার খুব রেগে যায়। "তুমি আমার বাবার মামাকে বসতে বল নি?"
    বাবা কাচুমাচু হয়ে বলে "আমি কী করে বুঝব উনি বাবার নমামা? উনি বলছিলেন ক্ষুদের কথা। আমার তো ওই নাম জানা ছিল না। আমি তো বুঝতে পারি নি ঠিক। মেজাজটাও ঠিক ছিল না, মাথাটাও কাজ করে নি সেই সময়।"
    মা আরো রেগে যায়, "কোন জিনিসটা যে কাজ করে, কে জানে? মেজাজের কথা আর নিজ মুখে নাই বা বললে? মোহনবাগান হারায় অত যদি মেজাজ খারাপ হয়, তাহলে ওই খারাপ মেজাজ নিয়ে মোহনবাগানের টেন্টেই থেকো, বাড়ি ফেরার দরকার নেই। হেরে হেরে গোহারা হচ্ছে, আর গেরস্তর সংসারে অশান্তি লাগাচ্ছে!"
    এমন সময় বড়মামা খুবই থমথমে গলায় বলে "লীগটেবিলে আমরা নেমে যাচ্ছি, আর তুই বাবার মামাবাড়ির ডাকনাম কেন সবাই জানে না বলে ঝগড়া করছিস? আজ দলটার কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল, কোনো ধারণা আছে তোর?"
    ভালোও বলে "চুপ কর না দিদি? বাবার মামাবাড়ির ডাকনাম এর আগে কি তুইই জানতিস?"
    দাদুভাই বলে "জানবি কী করে তোরা? মামারা তো বরাবরই ভাগলপুরে থাকত। বেশি আসা- যাওয়া ছিল না। চিঠিপত্রেই যা যোগাযোগ ছিল। আমার মা চলে যাওয়ার পরে শুধু মেজোমামা এসেছিল মায়ের শ্রাদ্ধে। তখন আর কিসের ডাকনাম আর কিসের ভালোনাম! অপারেশন ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলে একবার গিয়ে দেখা করে আসব। তোর মাথা গরম, তোর যেয়ে কাজ নেই, আমি আর মিমে যাব বরং।"
    মিমে অম্নি আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলে "দাদুভাই, শুধু তুমি আর আমি। হি হি হি, ওনার টাকটা না সুন্দরবাবুর মত। হি হি হি।
    উফফ, আ আ আ! আর বলব না, ভুল করে বলেছি, ছেড়ে দাও। ক্ষমা করে দাও মা। খুব লাগছে কানে!"
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ২৩:৩০649406
  • :)
  • Abhyu | 107.81.102.141 | ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০০:১৩649407
  • ঘুমিয়ে গেলে নাকি?
  • ranjan roy | 24.96.35.126 | ১১ এপ্রিল ২০১৬ ২৩:৫৮649409
  • এ কী! ইয়ে সন্নাটা? ইয়ে গুমসুম মিজাজ! ইয়ে বেদরদী জুবান? কব তক?
  • yaang | 113.2.135.106 | ২২ মে ২০১৬ ১৮:৫৪649410
  • পরেরদিন সকালবেলায় আমি স্কুলবাসে ওঠার আগেই বড়মামাকে নিয়ে বাবা, দাদুভাই আর মা চারজনে একটা ট্যাক্সি ধরে চলে গেল বড়মামাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে। বড়মামার পায়ে অপারেশন হবে দুপুরবেলায়। আমিও যেতে চেয়েছিলাম হাসপাতালে। অমি কক্ষনো হাসপাতালে যাই নি। শুধু জন্মেছিলাম সেখানে, কিন্তু তারপরে সেই যে আমাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছিল, আর কখনো যেতে দেওয়া হয় নি।

    সকালে আমি কত করে বললাম হাসপাতালে নিয়ে যেতে, কিন্তু মায়ের সেই এক কথা "হাসপাতালটা ছোটদের বেড়াতে যাওয়ার জায়গা নয়।"
    যেই না বলেছি "তুমি যে সেদিন বললে আমি এখন বড় হয়ে গেছি! ক্লাস থ্রী অনেক উঁচু ক্লাস। যত উঁচু ক্লাস হবে, তত ঘন্টা করে রোজ পড়াশুনা করতে হবে! ক্লাস টেনে গিয়ে দশ ঘন্টা পড়া নিয়ম, এখন ক্লাস থ্রী তাই আমাকে দিনে তিন ঘন্টা করে পড়তে হবে। তিন ঘন্টা তো অনেকক্ষণ সময়, তার মানে ক্লাস থ্রী উঁচু ক্লাস আর আমিও ঢের বড় হয়ে গেছি।" অম্নি মা যে চিরুনিটা দিয়ে আমার চুলের জট ছাড়িয়ে দিচ্ছিল, সেটাই মাথায় ঠাঁই করে বসিয়ে দিল মুখে মুখে কথা বলার জন্য। অবশ্য অম্নি দাদুভাইয়ের কাছে বকুনিও খেল আমাকে মারার জন্য। দাদুভাইয়ের কাছে বকুনি খেয়ে আরো রেগে গিয়ে অ্যাত্তো চেপে চেপে আমার মাথায় চিরুনি বসিয়ে চুল আঁচড়ে দিতে লাগল যে স্কুলবাসে উঠেও আমার কানের পাশগুলো ব্যথা করছিল।

    কিন্তু তাও আমার বেশি মনখারাপ হয় নি কারণ দাদুভাই আমাকে বলেছে যে স্কুলছুটির পর আমি বড়মামাকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পারি। দাদুভাই আমাকে আফ্রিকাতেও নিয়ে যাবে বলেছে, আমার স্কুলের পড়া শেষ হলে। দাদুভাই আর আমি মিলে আফ্রিকার সব জঙ্গলগুলো ঘুরে দেখব। দাদুভাইয়ের মত করে জঙ্গলের গল্প আর কেউ বলতে পারে না। দাদুভাইয়ের মত অত সাহসীও আর কেউ নেই। দাদুভাইকে দেখে সেই চিতাবাঘটা কেমন চুপচাপ জল খেয়ে নিয়েছিল, কিছু বলে নি দাদুভাইকে! ভৈঁরোলাল কত করে বলেছিল "বাবুজী, মত যাও" কিন্তু দাদুভাই শোনে নি। জলের গামলাটা চিতার সামনে নামিয়ে দিয়েছিল। তা নয়তো সেদিন চিতাবাঘটা জল খুঁজতে খুঁজতে দাদুভাইদের তাঁবুগুলোর মধ্যে ঢুকে যেত। দাদুভাই বলেছে, খরা হলে মানুষদের থেকেও বেশি কষ্ট জন্তুদের। জন্তুদের কষ্ট না দিলে তারাও মানুষদের কষ্ট দেয় না। জন্তুদের খুশি রাখলে মানুষরাও খুশি থাকে।
  • | ২২ মে ২০১৬ ১৯:৩৯649411
  • বোঝো! ইয়াং যে ব্যাং সেটা বুঝতে ২ সেকেন্ড লাগল।
  • Ekak | 53.224.129.52 | ২২ মে ২০১৬ ২০:০১649412
  • চারপাশে এত ছাগলের মধ্যে এই লটনের ছাগলটাই বেস্ট ছাগল ।
  • | ২২ মে ২০১৬ ২০:৩০649413
  • অ্যাকদম! :-)
  • byaang | 113.2.135.106 | ২২ মে ২০১৬ ২০:৩৩649414
  • বিকেলবেলায় স্কুল ছুটি হলে স্কুলবাসে উঠতে গিয়ে দেখি, দাদুভাই, মা আর ভালো দাঁড়িয়ে আছে স্কুলবাসের ঠিক সামনে। আমরা এখন হাসপাতালে যাব বড়মামাকে দেখতে। দাদুভাই ছিল বলেই নিশ্চয়ই মা রাজি হল আমাকে হাসপাতালে যেতে দিতে। দাদুভাই নিশ্চয়ই একজন সত্যিকারের মরদ। দাদুভাইই বলেছে "মরদ কা বাত, হাতি কা দাঁত।" সকালে আমাকে বলেছিল হাসপাতালে নিয়ে যাবে স্কুলছুটির পর, এখন ঠিক এসে গেছে আমাকে নিয়ে যেতে।

    আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে দাদুভাইয়ের হাত ধরি। আমি আজ প্রথম হাসপাতালে যাব। হাসপাতালে গিয়ে বড়মামাকে দেখতে পাব। শুধু কেমন করে অপারেশন করে সেটাই দেখা হল না! ট্যাক্সি করে আমরা হুশ করে পৌঁছে যাই আরজিকর হাসপাতালে।

    ওমা, হাসপাতাল মানে একটা বাড়ি না! এই বাড়িগুলোর মধ্যে কোনটায় তাহলে যেতে হবে বড়মামাকে দেখতে? দাদুভাইয়ের হাত ধরে থাকি। ইস এত খারাপ গন্ধ কোত্থেকে আসছে? দাদুভাই আমাকে নিয়ে যে বাড়িটায় ঢোকে, সেটায় আমাদের সামনে দিয়ে দুটো বিড়াল ঢুকে গেল! বিল্ডিংটার পাশে কত নোংরা ফেলে রেখেছে! বড়মামাকে এই বাড়িটায় রেখেছে! একটা বিশাল বড় হলঘরে আমরা ঢুকি। ঘরটায় কত কত খাট! খাটগুলোয় লোকেরা শুয়ে আছে। সব লোক খাটে শুয়ে নেই, অনেকে মাটিতেও বিছনা করে শুয়ে আছে। তাদের বিছানায় যেন পা না লাগে এইভাবে আমি খুব সাবধানে যেতে থাকি আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকি। খানিকক্ষণ বাদে ডুকরে কেঁদে উঠে বলি, "দাদুভাই আমি আর সামনে যেতে পারব না। তুমি আমাকে হাসপাতালের বাইরে রেখে এসো।"

    দাদুভাই আমার কান্না দেখে থমকে দাঁড়ায়, "কী হয়েছে মিমে? ব্যথা পেয়েছ? ভয় পেয়েছ? কোনো ভয় নেই, যারা শুয়ে আছে তারা সবাই সেরে উঠবে। ডাক্তাররাবাবুরা ওদের ভালো করে দেবে। বড়মামাও আর কয়েকদিন পরেই বাড়ি চলে আসবে। আবার আগের মত ক্রিকেট খেলবে। তুমি মনখারাপ কোরো না" বলতে বলতে দাদুভাই আমার হাত ধরে হাঁটতে থাকে। একটা খারাপ গন্ধে আমার খুব কষ্ট হতে থাকে, হঠাৎ দেখি ঘরের একটা দেওয়ালের কোনায় অনেকটা সাদা ভাত পড়ে আছে, রক্তলাগা ব্যান্ডেজ পড়ে আছে। আর সেই ভাত, ব্যান্ডেজ, তুলোর উপরেই একজন সাদা শাড়ি পরে এসে হাতের সাদা রঙের একটা গামলার মত কিসের থেকে যেন হিসু ফেলে দিল। দেখেই আমার শরীর কেমন করতে থাকে, ভীষণ দমবন্ধ করা কষ্ট হতে থাকে, খুব বমি পেতে থাকে। আমি বমি চাপতে চাপতে দাদুভাইয়ের হাত ছাড়িয়ে হলঘরের উল্টোদিকে দৌড়তে থাকি। পিছন পিছন মা আর ভালো-ও দৌড়তে থাকে, আমাকে ধরতে। মাটিতে শুয়ে থাকা অত অত লোকের বিছানায় পা না দিয়ে দৌড়নো কি সহজ! মা এসে ঠিক আমার হাত ধরে ফেলে।

    মা খুব রাগ রাগ চোখমুখ করে বলে, "এখন শিক্ষা হয়েছে? অতবার করে যে বলেছিলাম হাসপাতাল ছোটদের জায়গা নয়! তখন আমার কথা ভালো লাগে নি। এখন কেন পালানো হচ্ছে? মুখ বন্ধ করো। এক্ষুনি কান্না বন্ধ করো। যদি এখানে তুমি বমি করেছ, আমি এখানেই খুব মারব কিন্তু! ওকি! ওয়াক তুলছ নাকি? মুখ বন্ধ করো, মুখ বন্ধ করো। বমি গিলে ফেলো বলছি এক্ষুনি।" বলতে বলতে মা আমার মুখে ঠাস ঠাস করে চড় মারতে থাকে, যাতে আমি বমি গিলে ফেলি মারের ভয়ে। দাদুভাই তাড়াতাড়ি করে হেঁটে এসে আমাকে কোলে তুলে নেয়। আমাকে বলে "তুমি চোখ বন্ধ করে থাকো, কিচ্ছুটি দেখো না। বড়মামার বেডে পৌঁছে গিয়ে আমি বলে দেব তোমাকে, তখন তুমি চোখ খুলো। তাহলে আর বমি পাবে না। তুমি তোমার মুখটা আমার কাঁধে গুঁজে দাও, যাতে নাকটা চাপা পড়ে, তাহলে তুমি আর খারাপ গন্ধও পাবে না। কোনো ভয় নেই, আমি তো আছি।"

    দাদুভাইয়ের কাঁধে পরম ভরসায় মুখ গুঁজে দিই, চোখ দুটো-ও চেপে বন্ধ করে রাখি। একদম বড়মামার কাছে গিয়ে খুলব।
  • byaang | 113.2.135.106 | ২২ মে ২০১৬ ২১:২০649415
  • দাদুভাই যেই বলল, "এবার চোখ খুলে দেখো কে শুয়ে আছে" অম্নি চোখ খুলে দেখি বড়মামা কেমন ঘুম ঘুম চোখে, পুরো খোলা চোখ না, আধ খোলা চোখে কিন্তু হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে দেখে আস্তে আস্তে বলল "তোমার এখানে আসার কী দরকার ছিল?"

    বড়মামার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা চাদর দিয়ে বড়মামার পা অব্দি ঢাকা। আমি টিভিতে সিনেমায় দেখেছি, এরকম চাদরে পা ঢাকা থাকলে আসলে পা কেটে নেওয়া হয়। চাদর সরিয়ে নিলে বুঝতে পারা যায় অপারেশনের সময় পা কেটে নেওয়া হয়েছে, তখন কাটা পা ধরে খুব কাঁদতে থাকে। এটা মনে পড়া মাত্রই খুব ভয় হয়, ডুকরে উঠে বড়মামাকে বলি "বড়মামা, তুমি এক্ষুনি চাদর সরিয়ে দেখো, তোমার পা দুটো রেখেছে কিনা? নাকি কেটে নিয়েছে? বড়মামা, তুমি কেন হাসপাতালে আসতে গেলে এ এ এ এ এ? দাদুভাই, তুমি এখনই আমাকে আর বড়মামাকে বাড়িতে রেখে এসো ও ও ও ও ও। ও হো হো হো হো"

    মা এবার খুব জোরে আমার কান টেনে ধরে, "বাইরের ঘর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমা দেখে খুব পেকেছ, না? যত সব কুকথা মুখে! তুমি চলো আজ বাড়িতে, তারপর তোমাকে দেখাচ্ছি। হাসপাতালকে নাট্যশালা বানিয়ে ছাড়ল হতচ্ছাড়া মেয়ে!"
  • sosen | 177.96.49.239 | ২২ মে ২০১৬ ২১:২২649416
  • ঃ)))
  • | ২২ মে ২০১৬ ২১:২৫649417
  • নাট্যশালাই বটে!:-))))
  • byaang | 113.2.135.106 | ২২ মে ২০১৬ ২১:৫৫649418
  • দাদুভাই মাকে আর ভালোকে বলে "তোরা কথা বল, আমি মিমেকে নিয়ে বাইরে দাঁড়াচ্ছি।"

    দাদুভাইয়ের কোলে চেপে বাইরে এসেও আমি ফোঁপাতে থাকি। একবার কান্না শুরু হলে আমি অনেকক্ষণ ধরে ফোঁপাতে থাকি। মা বলে মায়াকান্না। দাদুভাই আমাকে খুশি করতে বলে "মিমে, যাওয়া হবে নাকি তাহলে আমার মামার বাড়ি?"
    "তোমার মামার বাড়ি? কোথায় সেটা? এই খারাপ হাসপাতালের পাশে নয়তো?"

    দাদুভাই কেমন একটা গলায় বলে, "আমার মামার বাড়ি! সেই রাস্তায় ঢুকলে তোমার গায়ে কাঁটা দেবে। রাস্তার নামটাও আশ্চর্য্য এক নাম! সে এক আশ্চর্য্য জায়্গা! ওরা বেরিয়ে এলেই আমরা সেখানে যাব। কেমন? এখন আর কেঁদো না।"

    কিছুক্ষণ পরে মা আর ভালো বেরিয়ে এলে আমরা একটা বাসে চড়ি দাদুভাইয়ের মামাবাড়ি যাওয়ার জন্য। বেশ অনেকক্ষণ পর আমরা বাস থেকে যেখানে নামি, সেই জায়্গাটায় দেখি লোডশেডিং হয়ে আছে। চারপাশে খুব পুরনো পুরনো দোতলা তিনতলা বাড়ি সব। বাড়িগুলো-ও অন্ধকার, অন্ধকার, কোনোটার থেকে বটগাছের ঝুড়ি নেমেছে। দাদুভাই ঠিক বলেছিল তবে! আশ্চর্য্য জায়গা! সত্যিই আমার গা ছমছম করা মজা লাগছে এই সব সরু সরু গলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে। জায়্গাটার নামটাও চমৎকার। বৌবাজার! কী মিষ্টি নাম!
  • Abhyu | 107.81.98.56 | ২৩ মে ২০১৬ ০০:১০649420
  • ব্যাংদি ছোটো থেকেই এক্কেরে ইয়ে!
  • byaang | 113.2.135.106 | ২৩ মে ২০১৬ ০০:১২649421
  • ইয়ে মানে কী? হাসপাতাল অত নোংরা রাখা হয় ইচ্ছে করে সেটা আমি কী করে জানব?
  • byaang | 113.2.135.106 | ২৩ মে ২০১৬ ০০:১৮649422
  • * বট্গাছের ঝুরি নেমেছে।
  • byaang | 113.2.135.106 | ২৩ মে ২০১৬ ০০:৪৩649423
  • এরকম সরু সরু অন্ধকার অন্ধকার রাস্তা আমার খুবই ভালো লাগে। আর এই রাস্তাটা এত ভালো যে শেষই হতে চায় না, যাতে আমি অনেকক্ষণ ধরে হাঁটতে পারি। দাদুভাইয়ের মামারা একটা জায়গার মত জায়গায় থাকে বটে!

    "দাদুভাই তুমি যে বলেছিলে রাস্তার নামটাও খুব আশ্চর্য্যের? কী নাম এই ভালো রাস্তাটার?"

    দাদুভাই উত্তর দেওয়ার আগেই মা পিছন থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, "ভালো রাস্তা? এটা ভালো রাস্তা? হেঁটে হেঁটে পায়ে ব্যথা হয়ে গেল। আর কত দূর বাবা? তুমি নির্ঘাত রাস্তা ভুল করেছ। আগে যদি জানতাম এত হাঁটতে হবে আমি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে যেতাম।"

    দাদুভাই বলে "অনেক বছর পরে আসছি। রাস্তাগুলো ঠিক মনে নেই।"

    "মনে নেই যখন কাউকে জিজ্ঞেস করো, আর তো ভুল রাস্তায় হাঁটতে পারি না আমি।" বলতে বলতে মা বেদম চেঁচামেচি শুরু করে দেয় রেগে গিয়ে।

    উল্টোদিক থেকে দুইজন হেঁটে আসছিল হাতে টর্চ নিয়ে, দাদুভাই তাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করল "এটাই কি সার্পেন্টাইন লেন?"

    তারা বলল "সার্পেন্টাইন লেন ছাড়িয়ে অনেকটা এগিয়ে এসেছেন। কত নম্বর বাড়ি যাবেন সার্পেন্টাইনে?" বাড়ির নম্বর শুনে তারা হদিশ বলে দেয় শর্টকাটের।

    বাঃ! ভারি ভালো নাম তো! সার্পেন্টাইন লেন। যেমনি লম্বা নাম, তেমনি শক্ত উচ্চারণ, বানানও নিশ্চয়ই বেশ শক্তই হবে!

    যতক্ষণে আমরা সার্পেন্টাইন লেনে দাদুভাইয়ের মামারবাড়ি গিয়ে পৌঁছাই, ততক্ষণে রেডিওতে খবর শুরু হয়ে গেছে।
  • byaang | 113.2.135.106 | ২৩ মে ২০১৬ ০০:৪৫649424
  • কেউ যখন পড়ছেই না, ব্রেক নেওয়া যাক তাহলে।
  • aranya | 154.160.130.93 | ২৩ মে ২০১৬ ০১:০২649425
  • খুব ভাল হচ্ছে
  • avi | 113.24.86.115 | ২৩ মে ২০১৬ ০১:০৬649426
  • এ বাবা, সে কি কতা! পড়ছি তো। সার্পেন্টাইন লেন, ডিঙাভাঙা লেন এগুলো দারুণ জায়গা তো। মাঝখানের গলিগুলো, যার প্রতি বাঁকে একটা করে চা তেলেভাজার দোকান থাকে, মাঝে মাঝে সাইকেল চলে, আর সন্ধ্যের মুখে লোকজন হুড়মুড় করে শ্যালদা দৌড়ায়, এদিকে শ্রদ্ধানন্দ পার্ক থেকে হাড়কাটা গলি হয়ে ওদিকে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার অব্দি পুরো জায়গাটারই একটা মন কেমন করা টান এখনো আছে। সার্পেন্টাইন লেন এন আর এসের লোকজনের প্রেম করার প্রখ্যাত জায়গা ছিল, আমরাও মাঝে মাঝে ইন্টারকলেজ সম্পর্কে জড়ালে পৌঁছে যেতাম। বেশ ভালো লাগছে মানসভ্রমণের সাথে সাথে। আর ছোট মিমের জাস্ট জবাব নেই। :)
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ২৩ মে ২০১৬ ০২:৩৭649427
  • পড়ছে না কি হে? আমি তো নির্বাচনের আফটারশকে গুরুতে আসাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপর আকা/রিমির খোঁজে ভাটে এসে দেখি তুমি লিখছ, তাই শুধু এইটার জন্যেই আসছি।

    আর ইয়েটা হচ্ছে পা কেটে নেওয়ার জন্যে :)
  • kumu | 132.161.64.135 | ২৩ মে ২০১৬ ০৭:০৮649428
  • এই লেখাটি হল তৃষ্ণার জল।এটির জন্যই গুরুতে আসছি।
  • :) | 132.177.21.246 | ২৩ মে ২০১৬ ০৭:২৫649429
  • 'চারপাশে এত ছাগলের মধ্যে এই লটনের ছাগলটাই বেস্ট ছাগল ।'

    এককের সাথে দেখা হলে আইসকিরিম খাওয়াবো।
  • sosen | 184.64.4.97 | ২৩ মে ২০১৬ ০৭:৪৫649431
  • ইকিরে পড়ছি তো
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন