এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • নানা দেশের উপকথা

    Tim
    বইপত্তর | ২০ জুন ২০০৭ | ৮৮১৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 71.67.115.14 | ১২ জুলাই ২০০৭ ০৫:২৭389539
  • না: সবাই ফাঁকি দিচ্ছে। আরেকটা আফ্রিকার গল্প বলে যাই বরং।
    --------------
    দুই ভাই আর তাদের স্ত্রী নিয়ে এক সুখী পরিবার। বড়ভাই এর একটি ছোট্ট মিষ্টি ছেলে ছিল, নাম তার চিকা। ছোটভাই নি:সন্তান। বাড়ির সব থেকে ছোট সদস্য হওয়ায় চিকা'কে সবাই জ্ঞান দিত। কেউ বলত এটা কর তো কেউ বলত ওটা। সবাই আদর-ও করত বলে চিকা কিছু মনে করত না। একজন শুধু এর ব্যতিক্রম ছিল। সে হল ছোটভাইএর বউ। এই কাকিমাকে চিকা দুচক্ষে দেখতে পারত না। অবশ্য তার কারন-ও ছিল। চিকাকে দেখলেই কাকিমা চিৎকার করে জ্ঞান দিতেন আর ভুল করলেই বকতেন। উনি এরকমই ছিলেন, বাড়ির সবার সাথেই এরকম করতেন। সবাই ভয়-ও পেত খুব।
    ""আমি যখন বড় হয়ে যাব তখন আমিও কাকিমাকে বকতে পারব"" গজ্‌গজ করত চিকা নিজের মনে প্রায়শই। কারন যতই রেগে যাকনা কেন, কাকিমার সব কথাই তাকে শুনতে হত।
    চিকাদের বাড়ির কাছ থেকেই একটা জঙ্গল শুরু হয়েছে। সেই জঙ্গলের গভীরে একটা বিশেষ অঞ্চলে প্রচুর সুস্বাদু ফল হত। কিন্তু সেখানে এক গুহাবাসী অদ্ভুত জন্তু থাকত বলে কেউ যেতে চাইতনা।
  • Tim | 71.67.115.14 | ১২ জুলাই ২০০৭ ০৫:৩৯389540
  • একদিন কাকিমা চিকাকে সেই বন থেকে ফল নিয়ে আসতে বললেন। চিকা তো ভয়েই অস্থির। কিন্তু তার কোন আপত্তি ধোপে টিকল না। প্রকান্ড একটা ঝুড়ি দিয়ে তাকে বনে পাঠানো হল।
    দুরু দুরু বুকে চিকা সাবধানে জঙ্গলের সেই অঞ্চলে এল , যেখানে তার বন্ধুরা ঐ গুহাবাসী জন্তুটাকে দেখেছে। প্রতি পদক্ষেপেই তার মনে হচ্ছিল কেউ এসে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। এদিক ওদিক দেখে সে আস্তে আস্তে কয়েকটা ফল সবে তুলেছে, হঠাৎ ঝোপের আড়াল থেকে জন্তুটা বেড়িয়ে এল। চিকার সাথে একটা ছোট ঢোল ছিল, যা দিয়ে ঐ অঞ্চলে খবর আদান-প্রদান হত। সে করল কি, আচমকাই ঢোলটা বাজাতে শুরু করল। আর কি অবাক কান্ড! জন্তুটা অবাক চোখে খানিকক্ষন ঢোলের দিকে তাকিয়ে থেকে বাজনার সাথে সাথে নাচতে শুরু করল। সারাদিন বাজনা চলল। তার সাথে নাচ। রাত্রি হলে জন্তুটা গুহার ভেতরে ঢুকে গেল। সে রাতে চোখে দেখে না। আর জন্তুটা চলে যেতেই চিকা এক দৌড়ে সোজা বাড়ি। সেখানে অবশ্য তাকে প্রচুর বকা খেতে হল। কাকিমা তার একটা কথাও বিশ্বাস করলেন না। বাড়ির সবাই হয়ত বিশ্বাস করত, কিন্তু কেউ সাহস করে কিছু বলতে পারল না। তখন ঠিক হল পরদিন আবার সবাই মিলে ফল আনতে যাবে। সত্যিকারের জন্তু থাকলে সে নিশ্চই পরেরদিন-ও আসবে। কাকিমা'র যাওয়ার মোটে ইচ্ছে ছিলনা। কিন্তু চিকাকে ভুল প্রমাণ করে বকার এমন সুযোগটা তিনি কিছুতেই হাতছাড়া করলেন না। সুতরাং বাবা, মা আর কাকিমার সাথে চিকা বনে চলল।
  • Tim | 71.67.115.14 | ১২ জুলাই ২০০৭ ০৫:৫২389541
  • গভীর জঙ্গলে গিয়ে সবাই তো মন দিয়ে ফল কুড়োতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কাকিমা করলেন কি, চিকার ঢোলটা একটা গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিয়ে বললেন, "" বেশি করে ফল কুড়ো চিকা, এখন ঢোল নিয়ে খেলার সময় নয়""। এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই ঝোপের আড়াল থেকে জন্তুটা বেরিয়ে এল। প্রথমেই সে চিকার বাবা-মা'কে গিলে ফেলল। কাকিমা দৌড়ে পালাচ্ছিলেন। জন্তুটা তাকেও খেল। তারপর সে যখন চিকার দিকে এল ততক্ষনে চিকা আবার ঢোলটা বাজাতে শুরু করেছে। আবার নাচ শুরু হল। ধীরে ধীরে চিকার ঢোলের তাল দ্রুত হতে লাগল। এক সময় চিকার এমন দ্রুত বাজাতে শুরু করল যে জন্তুটার নাচতে নাচতে গা ঘুলিয়ে উঠল, আর সে চিকার বাবা আর মাকে উগরে দিল। এরপরেই চিকা আবার ধীরলয়ে বাজাতে শুরু করল, যাতে কাকিমা না বেরিয়ে আসেন। কিন্তু চিকার বাবা তাকে জোরে বাজাতে বাধ্য করলেন। তাই একসময় কাকিমাও উদ্ধার পেলেন। এইসব হতে হতেই অন্ধকার ঘনিয়ে এল। জন্তুটাও পালাল। চিকারা সবাই মিলে বাড়ি ফিরে চলল। আশ্চর্যের বিষয়, পুরো রাস্তায় কাকিমা একটা কথাও বললেন না। শুধু তাই নয়, পরদিন সবাই লক্ষ্য করল কাকিমার স্বভাবের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তিনি আর কখনো কারুর সাথে চেঁচিয়ে কথা বলেননি।
  • Arindam | 219.93.33.193 | ১২ জুলাই ২০০৭ ১৩:৩৫389542
  • হাং তুয়া ১৫শ খ্রীষ্টাব্দে মালাক্কার তৎকালীন সুলতানের অন্যতম সেনাপতি (লক্সমানা)। ইতিহাস বলে হাং তুয়ার কাছে এমন একটি মন্ত্রপু:ত তরবারী ছিল, যার প্রভাবে তিনি যুদ্ধে অজেয় ছিলেন। হাং তুয়ার ঘনিষ্ঠ চার বন্ধু - হাং জেবাত, হাং কস্তুরী, হাং লকীর, হাং লেকিউ সর্বক্ষণ ছায়ার মত অনুসরন করতেন হাং তুয়াকে। থ্রী মাস্কেটীয়ার্স নয়, একদম ফাইভ মাস্কেটীয়ার্স!

    হাং তুয়ার জীবন প্রচুর ছোটো বড় ঘটনাবহুল। দু একটা লিখব এর পরে।
  • Blank | 74.130.207.245 | ১৩ জুলাই ২০০৭ ০৯:২৮389543
  • এক গাদা রুপ কথা চুপ কথা তুলে দিলাম এখানে

    http://www.esnips.com/web/FablesMythology

    আমি নিজে পড়ি না বলে কেমন লাগবে জানি না। তবে আছে অনেক গপ্প। শ্রীলঙ্কা থেকে মালয়, হটেনটট থেকে এস্কিমো। সবাই আছে এখানে। কিছু ফোক লোর ও আছে। তবে নোট প্যাড থেকে পিডিএফ বানিয়েছি। তাই প্রিন্ট বা অ্যালাইনমেন্ট প্রবলেম আছে।
  • Blank | 74.130.207.245 | ১৩ জুলাই ২০০৭ ১০:০৪389544
  • আরে কেউ থ্যাংকু তো দাও। ভাল হোক, বাজে হোক, দিলাম তো তুলে।

    আমি আগে থেকে ওয়েলকাম বলে রাখি ।
  • Tim | 204.111.134.55 | ০২ আগস্ট ২০০৭ ০৫:৫১389545
  • থ্যাংকু ব্ল্যাংক :-)
  • PB | 203.212.238.116 | ০২ আগস্ট ২০০৭ ২০:৪১389546
  • আমিও থ্যাংকু দিচ্ছি, তবে আর একটা থ্যাংকু আপনার ঐ টিন টিন টার জন্য। ডাউন লোড করে এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেলেচি। Thank you once again.
  • PB | 203.212.238.116 | ০২ আগস্ট ২০০৭ ২০:৫১389547
  • ও হ্যাঁ মেঘনাথ বধ কাব্য ও। তবে পুরো পড়া হয়নি।
  • tan | 131.95.121.132 | ০৩ আগস্ট ২০০৭ ০৫:৪৯389367
  • মালয়েশিয়ার একটা উপকথা বহুদিন যাবৎ আমি খুঁজছি।
    ছোট্টোবেলা আ মেলায় পড়ে থেকেই বারে বারে ইচ্ছে করে ভলো করে জানতে। গল্পটা দারুণ ছিলো।সাত রাজকন্যা সাতটা হাঁস হয়ে গেছিলো,ওদের রাজপুরী দখল হয়ে গেছিলো,ওদের মাবাবা ও মারা গেলো-ওরা সাতবোন বনে থাকতো-ভারী করুণ মধুর গল্প ছিলো-স্বপ্নে ওদের দেখেছিলো নতুন যারা রাজা হয়েছে তাদের ছেলে-ওদের শাপমুক্তির উপায় সে জেনেছিলো-তাতে এই রাজকুমারের জীবন দিতে হবে,কিন্তু ওরা ফের মানুষ হবে-জেনে রাজপুত্র নিজেই একা একা বনে গেলো...
    যখন এসব কিছুই জানতো না তখন স্বপ্নে রাজপুত্র দেখেছিলো ওর কলিজাটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে...শেষে তো ঐ মেয়েই সবাইকে উদ্ধার করলো... কলিজাবদল হয়ে...নইলে ওর হাঁসবোনেরা তো কেঁদেকেটে কেউ তুলতে পারলো না ঠোক্কর দিয়ে রাজপুত্তুরের কলিজা...অথচ ওভাবে না নিলে এরা শাপমুক্ত হয়ে মানুষ হবে না...গাছের নীচে রাজপুত্তুর ঘুমের ভান করে পড়ে আছে সব জেনে,ইচ্ছে করেই সরিয়ে দিয়েছে গায়ের উত্তরীয়...যাতে এদের ঠোক্কর দিতে সুবিধা হয়...কিন্তু এরা মানে এই হাঁসমেয়েরা কেউ পারে না ঠোক্কর দিতে,খালি কাঁদে...
    শেষে এক বোন বুঝি পারলো,কিকরে যেন তারপরে রাজপুত্রকেও বাঁচালো কোনো দেবতা,এই মেয়েটার সঙ্গে কলিজা এক্সচেঞ্জ করে। ওর হাতে ধরা রইলো রাজপুত্রের হৃদয়,চিরকালের মতন...
    কারুর জানা আছে ঐ উপকথা? জানলে প্লীজ দিন।

  • Tim | 204.111.134.55 | ০৪ আগস্ট ২০০৭ ০৮:৫৭389368
  • -আইরিশ উপকথা-

    অনেকদিন আগের কথা। এক রাজপুত্রের জন্ম দিতে গিয়ে রাণীর অকালমৃত্যু হল। রাজা আবার বিয়ে করলেন, এবং অনতিবিলম্বে নতুন রাণীর আরেকটি ছেলে হল।
    দিন যায়। দুই ভাই একসাথে বেড়ে উঠতে থাকে। বড় রাজকুমার রূপে-শিক্ষায়-বুদ্ধিতে ছোটকে ছাপিয়ে যেতে থাকে। এই দেখে তার সৎমা হিংসেয় জ্বলেপুড়ে অস্থির হয়। বড়কুমার টের পায়। কিন্তু সে বুদ্ধিমান, তাই ঝামেলায় না গিয়ে সে যতটা পারে প্রাসাদের বাইরে বাইরে সময় কাটায়। পাশের হৃদে মাছ ধরে, বাগানে বসে পাখির গান শোনে।
    এরকমই একদিন সে মাছ ধরছে, এমন সময় তিনটে ধবধবে সাদা রাজহাঁস সেই হৃদে এসে সাঁতার কাটতে লাগলো। সাঁতার কাটা শেষ করে ডাঙ্গায় উঠতেই তারা তিনজন অপরূপ কন্যায় পরিণত হল। তারপর এগিয়ে এসে রাজপুত্রের সাথে আলাপ জমালো তারা। সমবয়স্ক হওয়ায় সহজেই তাদের ভাব হল খুব। এরকমভাবে আরো কদিন কাটলো, আর ওদের বন্ধুত্ব ক্রমশ গাঢ় হতে লাগলো।
    এদিকে হয়েছে কি, ঐ সৎমা এক রাখালকে পাঠিয়েছিলেন রাজপুত্রের ওপর নজর রাখার জন্য। সে তো আড়াল থেকে দেখে সব দিয়েছে বলে। তখন রাণী রাখালকে একটা মন্ত্রপূত কাঁটা দিয়ে বললেন, "" যখনই দেখবি ঐ হাঁসগুলো আসছে, অমনি এই কাঁটাটা কুমারের জামায় আটকে দিবি""। গরীব রাখাল ঘাড় নেড়ে চলে গেল। আর গোচারণের ফাঁকে ফাঁকে লক্ষ্য রাখতে লাগলো রাজপুত্রের দিকে।
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৪ আগস্ট ২০০৭ ০৯:১৮389369
  • সেদিনও তিনকন্যা এল। কিন্তু দূর থেকে তাদের দেখেই রাখাল কাঁটাটা ছুঁড়ে দিল রাজকুমারকে লক্ষ্য করে। জাদু কাঁটা জামায় আটকাতেই রাজপুত্র অঘোর ঘুমে ঢলে পড়ল। সেদিন হতাশ হয়ে হাঁসরূপী কন্যারা চলে গেল। তবে যাওয়ার আগে একটা সোনার ছোট্ট বোতাম পরিয়ে দিয়ে গেল রাজপুত্রের জামায়। ওরা চলে যেতেই রাখাল কাঁটাটা খুলে নিল কুমারের জামা থেকে, আর অমনি ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসল রাজকুমার। সোনার বোতামটা হাতে নিয়ে সে গম্ভীরভাবে ভাবলো খানিকক্ষণ। তারপর আপনমনে গান গেয়ে উঠলো।
    পরদিনও একই কান্ড ঘটলো। সেই তিনটি মেয়ে এসে বহু চেষ্টা করেও কুমারের ঘুম ভাঙ্গাতে না পেরে হতাশ হয়ে চলে গেল। সেদিন রাজপুত্র ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করল একটা সোনার আংটি।
    তৃতীয়দিন রাখাল ধরা পড়ে গেল। রাজপুত্র তাকে ধরে একটু চাপ দিতেই সে বলে দিল সব। এও বলল, সব ফাঁস করে দেওয়ায় এবার তার গর্দান যাবে। তখন রাজপুত্র তাকে লুকিয়ে রাখলো এক গোপন আড্ডায়।
    সেদিন আবার চারমাথা একসাথে হল। জানা গেল ঐ তিনটি কন্যা আসলে পূবদেশের রাজকন্যা। তাদেরও দুই বোন কিনা দেখতে শুনতে তেমন ভালো নয়, তাই ঐ দু-বোনের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত বড় তিনবোন হাঁস হয়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার শপথ নিয়েছে। তখন রাজপুত্র-ও নিজের দু:খের কথা বলল।
    রাজকন্যাদের মধ্যে সব থেকে বড়টি বলল, "" তুমিও চলনা আমাদের সাথে! এখানে মিছে পড়ে আছো কেন? সবাই মিলে বেশ মজা করে ঘুরবো""।
    কিন্তু রাজপুত্র মনস্থির করতে পারলো না। তখন তারা ভাবার জন্য একদিন সময় দিয়ে চলে গেল। ঐ একদিন পরেই তারা সেই জায়গা ছেড়ে নতুন দেশে পাড়ি জমাবে।
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৪ আগস্ট ২০০৭ ০৯:৪৩389370
  • তিনবোন চলে যেতেই রাজপুত্র ভাবতে বসল। কিন্তু সে কিছুই গুছিয়ে ভাবতে পারছিল না। বারবার বড়বোনটির মুখ মনে পড়ছিল, আর দীর্ঘশ্বাসে ভরে উঠছিল বুক। অনেকক্ষণ উদাস হয়ে থেকে শেষে একসময় সে ঠিক করলো, পরেরদিন রাজকন্যাদের সাথে বেরিয়ে পড়বে নতুন দেশের সন্ধানে।
    ওদিকে কিন্তু ষড়যন্ত্রের জাল নিবিড় হচ্ছিলো আরো। এক দুষ্টু ডাইনির অভ্যেস ছিলো হৃদের ধার ধরে পায়চারী করা। সে রাজকন্যাদের কথাবার্তা সব শুনে ফেলেছিল। তক্ষুনি সে গিয়ে সব লাগালো রাণীর কাছে। রাণীর গোয়ালে দুষ্টু রাখালের অভাব ছিলনা। তাই পরেরদিন আবার একজন রাখাল হাজির হল আরেকটি মন্ত্রপূত কাঁটা নিয়ে।
    আবারো রাজকন্যারা এসে দেখলো রাজপুত্র ঘুমিয়ে আছে। তারা সাথে করে একটা জাদুপালক এনেছিল, যা রাজপুত্রকেও হাঁস করে দেবে। কিন্তু সব আয়োজন ব্যর্থ হল দেখে তাদের চোখ জলে ভরে উঠলো। বিদায় নেওয়ার সময় সব থেকে বেশি কাঁদলো বড়রাজকন্যা, তার চোখের জল রক্ত হয়ে জমে রইলো রুমালে। সেই রুমালটা ঘুমন্ত রাজপুত্রের বুকের ওপর মেলে দিয়ে তারা চলে গেল।
    ঘুম থেকে উঠেই রাজপুত্র পাগলের মত খুঁজতে শুরু করল তার বন্ধুদের, কিন্তু কোথাও তাদের হদিস পাওয়া গেলনা। হতাশ রাজপুত্র বিবাগী হয়ে বেরিয়ে পড়ল প্রাসাদ ছেড়ে, চলতে লাগলো যতদূর দুচোখ যায়। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন রাণী, এতদিনে তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হল। ছোটকুমারের সিংহাসন নিষ্কন্টক হল দেখে তিনি ভয়ানক খুসী হয়ে উঠলেন।
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৪ আগস্ট ২০০৭ ১০:০৬389371
  • দীর্ঘ সাত বছর ধরে খুঁজেও ঐ তিন রাজকন্যার কোন খবরই পাওয়া গেল না। তখন রাজপুত্র আবার ফিরে এলো তার পুরোনো জায়গায়। সে রোজ গিয়ে সেই হৃদটির ধারে বসে থাকতো আনমনা হয়ে। একদিন এরকম বসে থাকতেই থাকতেই হঠাৎ করে সে তার আকাঙ্খিত খবর পেয়ে গেল। এক ব্যস্তসমস্ত হাঁস জানিয়ে গেল, সেই রাজকন্যা মৃত্যুশয্যায়। বন্ধুকে বাঁচাতে চাইলে রাজপুত্র যেন এক্ষুনি রওনা হয়।
    শুনেই তো রওনা দিল কুমার। তিন সপ্তাহ অবিরাম চলল সে, ঝড়, কুয়াশা ভেদ করে, বন্য জন্তুদের অগ্রাহ্য করে সে চলল। কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহে এক প্রকান্ড পরিখায় অসাবধানে পড়ে সে অজ্ঞান হয়ে গেল।
    জ্ঞান ফিরে রাজপুত্র দেখলো, পাশেই একটা ঘোড়া দাঁড়িয়ে। সেই ঘোড়া অবিকল মানুষের গলায় বলল, "" আমাদের হাতে সময় বড়ই কম। আমার পিঠে বসুন।"" তারপর সেই ঘোড়া উল্কার বেগে ছুটে চলল। হাওয়ার পাশ কাটিয়ে, শব্দের গা ছুঁয়ে ছুটল তারা।
    এইভাবে দুরন্তবেগে ছুটে একসময় দূর থেকে পূবদেশের কেল্লা দেখা গেল। তখন ঘোড়া রাজপুত্রকে বলল, ""কেল্লায় পৌঁছে আমার কথা মনে রাখবেন। আমার যেন কোন অসুবিধে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। আর রোজ অন্তত একবার দেখা করবেন""। এই বলে সে কেল্লায় পৌঁছে দিল রাজকুমারকে।
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৪ আগস্ট ২০০৭ ১০:২২389372
  • রাজপুত্রকে দেখেই রাজকন্যার অসুখ অর্ধেক ভাল হয়ে গেছিলো। সে জানতে চাইলো তার কোন জিনিস রাজপুত্রের কাছে আছে কিনা। তখন কুমার সেই রুমালটা তার পোশাক থেকে বের করে দেখাতেই রক্তের ফোঁটাগুলো সবার চোখের সামনেই মুছে রুমালটা আবার সাদা হয়ে গেল।
    সুস্থ হবার পর ওদের বিয়ে হল মহা ধূমধাম করে। সবাই মহানন্দে উৎসবে মাতলো। রাজপুত্র-ও সবার সাথে হইচই করতে করতে ঘোড়াটার কথা ভুলেই গেল। বেচারা বিনা আদর-যত্নে, অনাহারে মারা গেল একদিন।
    এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরদিনই রাজপুত্র নববধূকে নিয়ে দেশে ফিরলো। সৎমাকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে সে রাজ্যে সুশাসন ফিরিয়ে আনলো। তারপর একদিন বুড়ো রাজা মারা গেলেন, আর বড়কুমার রাজা হল। সেই প্রথম রাখালটি, যে বেচারা গরীব হয়েও কুমারকে সাহায্য করেছিল, সে এখন মন্ত্রী হল। তারপর যা হয়... সব্বাই অনেক অনেকদিন ধরে দারুন সুখেশান্তিতে থাকতে লাগলো।
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৪ আগস্ট ২০০৭ ১০:৫৩389373
  • অসহ্য সব টাইপো হয়েছে তাড়াহুড়োয়। হ্রদের জায়গায় ""হৃদ""গুলো সটান হৃৎকমলে বিঁধছে। দু:খিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
  • tan | 131.95.121.132 | ০৪ আগস্ট ২০০৭ ২১:১৯389374
  • টিম,
    দুর্দান্ত হচ্ছে। চালিয়ে যাও।
    প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপমালার কিছু গল্প শোনাতে ইচ্ছে করছে।

    মাউই হলেন পলিনেশিয়ার পুরানের এক দারুণ বুদ্ধিমান চরিত্র।ইনি ওদের সত্যিকারের হিরো। বীর নায়ক।কিন্তু এই বীর নায়ক যখন জন্মান,তখন তিনি ছিলেন খুব দুর্বল,অসুস্থ- সময়ের আগেই জন্মেছিলেন যে!
    তাঁর মা,তারাঙ্গাদেবী,তিনি এই দুর্বল বাচ্চাটি বেঁচে থাকলে সারাজীবন অসুখে ভুগবে ও কষ্ট পাবে ভেবে একে সমুদ্রে ফেলে
    দিয়েছিলেন।কিন্তু সমুদ্রতীরবাসী একজন সাধু তাকে কুড়িয়ে নিয়ে
    মানুষ করেন।
    দিনে দিনে দারুণ বুদ্ধিমান ও শাণিত হয়ে উঠতে থাকেন মাউই।
    বড়ো হয়ে বহু কীর্তি তিনি করে যান। সেই সব সব কীর্তির কথা
    বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। আমরা ওগুলোর থেকে দুটি বেছে
    নিয়েছি।
    প্রথমটি হলো সমুদ্র থেকে একটি দ্বীপ তুলে আনা আর দ্বিতীয়টি
    হলো সূর্যের ছোটাছুটি কমিয়ে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দেওয়া।

    মাউই একদিন নৌকো নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়েছিলেন। অবশ্য
    মাছ ধরতে বেরোবার আগে তিনি তার এক অতি বৃদ্ধা দিদিমার সঙ্গে
    দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই দিদিমা ছিলেন যাদুশক্তির
    অধিকারিনী। তার কাছে মন্ত্রপূত নানারকম হাড় ছিল,সেগুলি থেকে অনেক
    আশ্চর্য ক্ষমতা সম্পন্ন জিনিস তিনি তৈরী করতেন।
    মাউই তো দিদিমার সঙ্গে দেখা করে তাকে প্রথমেই একটি প্রণাম
    ঠুকে নিল। তারপরে তার জন্য বাড়ী থেকে নিয়ে যাওয়া পিঠে ইত্যাদি
    উপহার দিল। দিদিমা তো আনন্দে আত্মহারা। তিনি তার এই ছোটো
    নাতিটিকে এমনিতেও খুব ভালোবাসতেন।
    "দিদিমা,সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরোব আমরা। তোমার আশীর্বাদ
    চাই।"
    দিদিমা ফোকলা দাঁতে একগাল হাসলেন,বললেন" আহা বাছা আমি
    তো আশীর্বাদ করবই।যাও ভালোয় ভালোয় মনস্কামনা সিদ্ধ করে
    ফিরে এসো বাছা।"
    "কিন্তু দিদিমা, তোমার একটা মন্ত্রপূত হাড় যে আমায় দিতে হবে।
    নইলে ভালো বড়শী বানাবো কি করে?"
    "আরে, কি যে তুই বলিস নাতি তার ঠিক নেই।কতকিছু আছে বড়শী
    বানাবার জন্য,তুই কিনা চাস মন্ত্রপূত হাড়। ওসব নিয়ে
    ছেলেখেলা নয় নাতি,ওসব বড়ো সাংঘাতিক জিনিস।"
    "কে বলেছে আমি ছেলেখেলা করছি? সত্যিই দরকার গো দিদিমা,
    নইলে আমার খুব বিপদ হবে। তুমি দেবে না আমায়?"
    মাউইএর করুণ মুখ দেখে মন গলে গেল বৃদ্ধার।তিনি দিলেন কিন্তু
    সতর্ক করে দিলেন যে খুব সাবধানে এইসব নাড়াচাড়া করতে হবে।
    আর খুব দরকার না থাকলে যেন ব্যবহার না করা হয়।
    মাউই তো মহানন্দে সেই হাড় নিয়ে ফিরে এলো আর বানালো এক সুন্দর
    বড়শী। সেই বড়শী ছিপে লাগিয়ে ভালো টোপ গেঁথে শুভদিনে
    সে রওনা হয়ে পড়লো সমুদ্রে মৎসশিকারে।
    দিন প্রায় কেটে গেল,কোনো মাছ এলো না চারে।মাউই তো হতাশ হয়ে
    প্রায় হাল ছেড়ে দেবো দেবো করছে,এমন সময় কিসে যেন আটকালো
    বড়শী।মাউই সাবধানে প্রথমে সুতো ছাড়তে লাগলো,তারপরে
    দিল টান।উরে বাবা,এ যে ভীষণ ভারী! এ কি বিশাল মাছ,এতো
    ভারী! অবাক হয়ে ভাবছিল মাউই।
    হেইয়ো হেইয়ো করে যে বিশাল জিনিসটি জলের উপরে টেনে তুললো মাউই
    আদতে সেটা মাছই নয়,সেটা একটা গোটা দ্বীপ।দিদিমার মন্ত্রপূত
    বড়শীতে আটকে উঠে এসেছে এক বিরাট দ্বীপ।
    সেই দ্বীপ আজও আছে সেইখানেই,নাম তার নিউজীল্যান্ড- মাউইএর
    মৎস।

    দ্বিতীয় কাহিনীটি সূর্যকে নিয়ে। বহুকাল আগে সেই মাউইএর যুগে দিন
    ছিল খুব ছোটো ।কারণ সূর্য বেশ জোরে ছুটে পার হয়ে যেত আকাশ-
    তাই দিনের আলো ফুরিয়ে যেত খুব তাড়াতাড়ি। মাউই তো একদিন মহা
    বিরক্ত হয়ে গেলেন- তিনি জাল বানাচ্ছিলেন - বানাবার অর্ধেকের
    মাথাতেই সূর্য ডুবে গিয়ে চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল।
    মাউই ভাবলেন যে এবার একটা কিছু না করলেই নয়। এই ভেবে তিনি
    নারকেল ছোবড়ার এক বিশাল দড়ি বানালেন।সেই দড়িতে ফাঁস
    লাগালেন।সকালবেলা পূর্ব সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন
    কখন সূর্য ওঠে সেই অপেক্ষায়। যথাসময়ে সূর্য দেখা দিলেন হাসিমুখে।
    মাউই তৈরী ছিলেন, তিনি অমনি সেই দড়িটার ফাঁস ছুঁড়ে দিলেন
    সূর্যের মাথা লক্ষ্য করে। আটকে গেল ঠিকই কিন্তু সূর্যের তেজে সে
    দড়ি মহূর্তে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। সূর্য হাসতে হাসতে আকাশপথে
    ছুটে চলে গেলেন পশ্চিমের দিকে।
    মাউই কি আর করেন,বিরসমুখে বাড়ীতে ফিরে এলেন। এরপরে তিনি
    খান না দান না,সারাদিন বসে বসে ভাবেন কি করা যায়।
    মাউইএর স্ত্রীর নাম ছিল হিনা।সেও ছিল অতি বুদ্ধিমতী মেয়ে আর
    তারও ছিল নানারকম যাদুক্ষমতা।
    হিনার চুল ছিল দেখবার মতো,একেবারে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত
    লম্বা।সমুদ্রের ঢেউএর মতো বিপুল কেশরাশি।ভগবানের কাছে হিনা
    বর পেয়েছিল যে তার এই পবিত্র চুল কখনো নষ্ট হবে না।
    আগুনে পুড়ে জলে ভিজে বা অন্য কোনোভাবে এর কোনো ক্ষতি হবে না।
    মাউইকে দিনরাত চিন্তা করতে দেখে সে জানতে চাইলো কেন মাউই
    এরকম শুকনো মুখে দিনরাত ভাবে। মাউই তাকে খুলে বললো
    সবকিছু।
    শুনে হিনা হেসে বললো," ও এই কথা? তা এই নিয়ে এতো ভাবছো
    তুমি? আমার এ চুল থেকে বানাও না তোমার দড়ি?"
    বলেই পত্রপাঠ হিনা তার বিশাল চুলের ঝর্ণা একেবারে গোড়া
    থেকে কেটে দিয়ে দিল মাউইকে। মাউই একটু কিন্তু কিন্তু করছিলেন
    প্রথমে- হিনার এমন সুন্দর চুল এভাবে কেটে ফেলতে হচ্ছে- কিন্তু হিনা
    বলে," তাতে কি হয়েছে? এ চুল আবার গজাবে ।এর জন্য অত ভাবনা
    কি?"
    মাউই হিনাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে সেই চুল থেকে পাকিয়ে পাকিয়ে
    তৈরী করলেন বিশাল একগাছা দড়ি,তাতে ফাঁস লাগালেন।
    সকালবেলা আগের মতই পুব সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি।
    যেই না সূর্য দেখা দিয়েছেন তার টুকটুকে মুখটি নিয়ে,অমনি সেই
    দড়ির ফাঁস ছুঁড়ে দিলেন তিনি। অব্যর্থ লক্ষ্য। ফাঁস আটকে
    গেল।
    এবারে আর দড়ি পুড়ে গেল না দেখে সূর্য খুব ঘাবড়ে
    গেলেন।তারপরে তিনি তাঁকে ছেড়ে দেবার জন্য মাউই এর কাছে কাকুতি মিনতি
    করতে লাগলেন।
    মাউই কিন্তু কিছুতেই তাঁকে ছাড়তে রাজী হলেন না। শেষে
    সূর্যকে দিয়ে কড়ার করিয়ে নিলেন যে সূর্য খুবই আস্তে আস্তে
    আকাশপথে চলবেন,মোটেই ছুটোছুটি করবেন না,তবে তিনি ছাড়া পাবেন।
    সূর্য বললেন,"তা আর বলতে? আর কখনো ছুটি? এবার থেকে আমি
    খুব সুবোধ বালকের মতো আস্তে আস্তে গুটি গুটি পায়ে পথ
    চলবো।শিগগীর ছেড়ে দাও,বড্ডো লাগছে।"
    মাউই হেসে বললেন,"মনে থাকে যেন। যদি আর কখনো ছুটেছ
    তাহলে আবার ধরবো তোমায়।তখন হাজার কাকুতি মিনতিতেও আর ছেড়ে
    দেবো না।"
    সূর্য বললেন," না না আর কখনো এরকম করবো না।"
    মাউই তাকে ছেড়ে দিলেন,সেই থেকে সুর্য আকাশপথে ধীরে ধীরে
    চলেন। আমরা তাই পেয়েছি অনেক বড়ো দিন- প্রায় বারো ঘন্টার
    দিন।
  • tan | 131.95.121.132 | ০৪ আগস্ট ২০০৭ ২১:২০389375
  • ফর্ম্যাটিং ঘেঁটে গেছে।ক্ষমাপ্রার্থী।
    সম্পাদক যদি ঠিক করে দেন,তাইলে অনেক ধন্যবাদ।

  • Arindam | 210.24.168.55 | ০৬ আগস্ট ২০০৭ ০৯:২১389376
  • টিম, ট্যান অপূর্ব! আচ্ছা কেউ মুর্শিদাবাদের কলীজাখাকীর গল্প জান?
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৬ আগস্ট ২০০৭ ০৯:৩৬389378
  • অরিন্দম, কলিজাখাকীর গল্প শোনার অপেক্ষায় রইলাম। সময় করে লিখে ফেলো।

  • Tim | 204.111.134.55 | ০৬ আগস্ট ২০০৭ ০৯:৩৭389379
  • ট্যান, দুটো গল্পই অসাধারন। আরো চাই।
  • Arindam | 210.24.168.55 | ০৮ আগস্ট ২০০৭ ১০:০৭389380
  • টিম, অনেকদিন আগে শুনেছিলাম গল্পটা, ঠিক ঠাক মনে নেই। তাই তোমাদের কাছে শুনতে এসেছি, যদি জানা থাকে তোমাদের। এইটুকু মনে পড়ছে কোন এক রাজকুমারীর এক অদ্ভুতুরে অসুখ করেছিল যার দাওয়াই ছিল প্রতি দিন একটা করে জীবন্ত ছেলের কলিজা। সেই রাজকুমারীর প্রেম ছিল এক কৃষকের ছেলের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত সেই ছেলেটি নিজের হাতে নিজের বুক থেকে কলিজা ছিঁড়ে উৎসর্গ করে রাজকুমারীকে। ভাসা ভাসা মনে পড়ছে, এর থেকে বেশি কিছু মনে পড়ছে না। কেউ কি শোনাবে?
  • d | 192.85.47.11 | ০৮ আগস্ট ২০০৭ ১১:৪৫389381
  • হ্যাঁ হ্যাঁ এই গল্পটা আম্মো পড়েছিলাম। এখন আর মনে নেই।

    আচ্ছা রুপকথা বা উপকথার কিছু কিছু আদিকল্প ছিল যা বিভিন্ন দেশের উপকথায় দেখা গেছে বারেবারে বিভিন্ন রূপে। সেগুলো নিয়ে কেউ কিছু বলবে না?
  • Blank | 65.82.130.9 | ০৯ আগস্ট ২০০৭ ০০:৩১389382
  • Fee fi fo fum. I smell the blood of an Englishman
    আর এর সাথে হাঁউ মাউ খাউ, মানুষের গন্ধ পাউ।
    (কার লেখা তে যেন এই মিল টা পড়েছিলাম)
  • tan | 131.95.121.132 | ০৯ আগস্ট ২০০৭ ০৬:০২389383
  • বহু আগে ভাটে এসেছিলো গিলগামেশের উপকথার নাম, তার সঙ্গে এনকিডুর। এদের গল্পের সঙ্গেও নানা দেশের নানা গল্পের তুলনা করা যায়।
    ব্যাবিলনিয়ার গল্প। এপিক অব গিলগামেশ পাওয়া গেছিলো বারোটা পাথরের পাটায়, কিউনিফর্ম লিপিতে। পাঠোদ্ধার হলো, পাওয়া গেলো গল্প। সংক্ষেপে গল্প হলো রাজা গিলগামেশ আর বনে ছোটোবেলা কাটিয়ে পরে রাজধানীতে আসা এনকিডু অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলো(যদিও এরা প্রথম দেখা হওয়ার সময় যুদ্ধ করেছিলো পরস্পর), একসঙ্গে যুদ্ধে যাওয়া, বন কেটে বেড়ানো, দৈত্যবধ-এইসব নানা বীরকীর্তি করে বেড়াতো এরা দুজনে।
    পরে কিকারণে যেন এনকিডু অসুখ হয়ে মরে গেলো, গিলগামেশ সাশ্রুনয়নে "বন্ধুবিনে প্রাণ বাঁচে না" গাইতে গাইতে বাড়ীঘর ত্যাগ করে মলিন বসনে খালি পায়ে চললো অমৃতের সন্ধানে।
    দীর্ঘ বন্ধুর যাত্রার শেষে উৎনাপিৎসিমের বাড়ী গিয়ে হাজির হলো,সে হলো গিলগামেশের প্রপ্রপ্র.... পিতামহ,বহু পূর্বযুগের লোক,অমর দেবতার মতন হয়ে আছেন সঙ্গে ওনার স্ত্রীও অমর হয়েছেন।
    এই পুরাতন দাদুঠাকুমার কাছে গিয়ে হাজির বন্ধুবিহনে শীর্ণ দু:খী বেচারা গিলগামেশ। ঠাকুমা তো গলে জল,কিন্তু দাদু ভারী শক্ত লোক।
    এইখানে উৎনাপিৎসিম এক মহাপ্লাবনের গল্প বলেছেন যেটা নাকি তার জীবনে ঘটেছিলো,সে গল্প হুবহু নোয়ার গল্পের মতন!!!!
    দাদু তো প্রনাতি গিলগামেশকে অনেক পরীক্ষা করে দেখলেন,কিন্তু গিলগামেশ তাতে পাশ করলো না বলে অমৃত দিতে চাইলেন না। শেষে "আহা গো ওকে তুমি দিলে না কিছু? মানুষ হয়ে ভুলে গেলে মানুষের দুর্বলতা?"ঠাকুমার ওকালতিতে দিলেন।
    কিন্তু আসার পথে চুরি হয়ে গেলো সব।বেচার গিলগামেশ আর রাজধানীতে ফিরলো না।
    এইখানে পাথর পাটা শেষ,আরো কিছু ছিলো কিনা গপ্পোকথায় খোদায় মালুম।
    কিন্তু কথা হলো মহাপ্লাবনের চমকপ্রদ মিল।

  • Tim | 204.111.134.55 | ০৯ আগস্ট ২০০৭ ০৮:০২389384
  • আবার রেড ইন্ডিয়ানদের গল্প। এক নি:সন্তান ধীবর দম্পতি সমুদ্রের তীরে বাস করতেন। কত্তা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতেন। তাই বেশির ভাগ দিনই গিন্নিকে একাই থাকতে হত। তাঁর তো কিছুতেই সময় কাটে না। প্রায় প্রতিদিনই তিনি বসে বসে ভাবেন, আহা, যদি একটা ফুটফুটে বাচ্চা থাকতো! এরকমই একদিন, তখন সন্ধ্যা হয় হয়, ছাইরঙা আকাশের দিকে তাকিয়ে একই কথা ভাবছিলেন সেই ধীবরপত্নী। হঠাৎ একটা মাছরাঙা উড়ে যেতে যেতে বলে গেল,
    "" সাগরের জলে ভাসে শামুকের খোল
    সোনার মানিক জ্বলে জুড়ে তার কোল ""
    কে কথা কয়! জেলেনী তো ভেবেই আকূল। মনের ভুল ভেবে আবার আনমনা হয়ে ভাবতে বসেন তিনি। কিন্তু আবারো সেই কথাকটা শোনা যায়। এবার দেখা যায় একটা সাদা সামুদ্রিক পাখি। তখন যেন একটু একটু স্পষ্ট হয় মানে। একছুটে সমুদ্রের ধারে গিয়ে দেখতে পান, অদূরেই ভেসে যাচ্ছে একটা প্রকান্ড শামুকের কে্‌খালা, অন্ধকারেও আবছা আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে সেখান থেকে।

  • Tim | 204.111.134.55 | ০৯ আগস্ট ২০০৭ ০৮:১৭389385
  • সেই শামুকের খোলায় পাওয়া গেল একটি শিশু। জেলেনীর আনন্দ আর দেখে কে। তক্ষুনি তাকে কোলে তুলে নিলেন। পরেরদিন সাগর থেকে ফিরে জেলেও বেজায় খুশি। সব মিলিয়ে বেশ আনন্দেই কাটতে লাগল দিন তাদের।
    কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশু দ্রুতই বেড়ে উঠতে লাগলো। মায়ের কাছে আব্দার করায় তিনি তাকে তামার তৈরী ছোট্ট তীরধনুক বানিয়ে দিলেন। সেই দিয়ে সে শিকার করতে যেত। তবে কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল, ছেলেটির ব্যাপারস্যাপার অন্য বাচ্চাদের থেকে আলাদা। তার গায়ের রং লালচে হয়ে উঠছিলো। দিনের বেশিরভাগ সময়টাই সে সমুদ্রের ধারে বসে কাটাত। যখন সে চুপ করে সমুদ্রের তীরে বসে থাকত, তখন চারিদিক হয়ে উঠত শান্ত, আকাশে উঙ্কÄল আলো খেলে বেড়াত। এইসব দেখে অবাক হতেন তার বাব-মা, কিন্তু ভেবে পেতেন না কেন এমন হয়।
    তারপর একদিন সমুদ্রে প্রচন্ড ঝড় উঠলো। সেই ঝড় চলল দিনের পর দিন। জেলের তো মাথায় হাত। খাবে কি? তখন ছেলেটি এসে বলল, "" আমায় নিয়ে চল তোমার সাথে ।"" প্রথমটায় তো সবাই হেসেই খুন হল তার কথা শুনে। কিন্তু ভবী ভোলার নয়। শেষ পর্যন্ত বাবার সাথে সে সত্যি-ই গেল সমুদ্রে।
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৯ আগস্ট ২০০৭ ০৮:২৫389386
  • যথারীতি গভীর সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়লো তাদের নৌকো। কিন্তু অবাক কান্ড! দেখা গেল ঝড়ের মধ্যে দিয়েও অবিচল হয়ে ভেসে যাচ্ছে নৌকা। নৌকোর নিচের জল যাদুবলে শান্ত হয়ে যাচ্ছে। অথচ সেই বৃত্তের বাইরে ঝড়ের তান্ডব বাঁধনহারা।
    এই দেখে ঝড়ের দেবতা বেজায় রাগ করলেন। অতটুকু পুঁচকে, তার এত সাহস? পাঠানো হল কুজ্ঝটিকা দেবী আর কাজলকালো মেঘের দেবতাকে। কিন্তু দুজনেই হার মেনে পালাতে পথ পেলেন না। তারপর একসময় ঝড়ও থেমে গেল। ছেলেটি তখন তার বাবাকে শিখিয়ে দিল এক অদ্ভুত গান। ঐ গান গাইলেই রাজ্যের মাছ এসে আপনা থেকেই জালে জড়িয়ে যায়।
    এতসব আজব কান্ড দেখে জেলের তো চোখ গোল হয়ে গেছে। ফেরার পথে বহুবার তিনি এইসব ক্ষমতার রহস্য জিগ্যেস করলেন, কিন্তু ছেলে চুপ।
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৯ আগস্ট ২০০৭ ০৮:৩৫389387
  • এর কিছুদিন পরে হঠাৎ এক ভোরবেলা সেই ছেলে বন থেকে অনেক পাখির পালক জোগাড় করে আনলো। তারপর সে ঐ পালকগুলো থেকে নানারকম পোষাক বানিয়ে সেই পোষাক পরে সমুদ্রের ওপর দিয়ে উড়তে লাগলো। সারাদিন সে নানারঙের পোষাকে উড়লো। আর কি অবাক কান্ড! তার পোষাকের রঙে সমুদ্রের জলের রং নীল থেকে হল সবুজ, কখনো বা লাল, কখনো ধূসর। শেষে যখন সে ফিরে আসছে, তখন সমস্ত জল হয়ে উঠল সোনালী, সূর্য পাটে বসছেন।
    ফিরে এসে সে তার বাবা মা কে ডেকে বলল, "" এবার আমাকে চলে যেতে হবে। আমি সূর্যপুত্র। আজ আমার পরীক্ষা শেষ হল, এখন থেকে আমায় আকাশে থাকতে হবে অন্য দেবতাদের সাথে। তবে যাওয়ার আগে তোমাদের কটা কথা বলে যাই। মন দিয়ে শোন।""
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৯ আগস্ট ২০০৭ ০৮:৫৪389389
  • শান্ত স্বরে বলে চলল সে, "" বিকেলের দিকে যখনই দেখবে সমুদ্র আর আকাশ আমার মুখের মত সোনালী হয়ে আছে, বুঝবে পরের দিন ঝড় আসবে না। তখন নিশ্চিন্তে মাছ ধরতে যেও।""
    এইবলে তার মাকে একটা ফিতে দিল। তারপর বিদায় নিয়ে উড়ে চলে গেল পশ্চিমের দিকে।
    আবার বিষাদে ছেয়ে গেল সেই দম্পতির প্রতিপল। জেলেনী ফিতেটা হাতে নিয়ে আনমনা হয়ে বসে থাকতেন সমুদ্রতীরে। সেই ফিতেটায় ফাঁস লাগলে সমুদ্রে ঝড় উঠতো, ফাঁস খুলে দিলেই সব শান্ত।
    প্রত্যেকবার শীতের শুরুতে যখন কনকনে ঠান্ডা কুয়াশা ধেয়ে আসতো সমুদ্র থেকে , তখন নিয়ম করে জেলেনী রোজ পাখির পালক হাওয়ায় ভাসিয়ে দিতেন। সেই পালক হাওয়ায় উড়ে পশ্চিমের দিকে যেত, তারপর তুষার হয়ে পৃথিবীতে নেমে আসত। সব ঢেকে যেত ধূসর বরফে। সেই সঙ্কেত বুঝে অলক্ষ্যেই দিগন্তে হাজির হত তার আদরের ছেলেটি, তখন চারদিক ভরে যেত সোনালী আলোয়। সবাই বুঝে নিত পরদিন সমুদ্র শান্ত থাকবে, যেমনটি কথা দিয়েছিল সে।
    ---x---
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন