এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • নানা দেশের উপকথা

    Tim
    বইপত্তর | ২০ জুন ২০০৭ | ৮৮২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • goppee | 131.95.121.132 | ১২ আগস্ট ২০০৭ ০৫:৩৭389423
  • পরদিন তো রাজার সভায় এলাহি কান্ড। হীরা জহরতে কিংখাবে মখমলে সোনার রুপায় ঝলমলে করে সাজানো হয়েছে সভাভবন। রসুইখানায় আরো এলাহি কান্ড।দেশ-বিদেশের যতো রাজকীয় খাদ্যদ্রব্য রান্নার সুবাসে বাতাস ম ম করছে।

    ধীরে ধীরে লোকজন আসতে আরম্ভ করলো। প্রথমে বড়ো রাজপুত্র তার স্ত্রীকে নিয়ে,তারপরে মেজো রাজপুত্র তার বৌকে নিয়ে,তারপরে গুটি গুটি পায়ে ইরাবান,নতমুখ।
    "সে কি রে,তোর বৌকে আনলি না?"বড়দা জিজ্ঞাসা করলো।
    "সে আসছে,একটু পরে।"কোনোরকমে বললো ইরাবান।
    দেখতে দেখতে ঘন্টা কেটে গেল,এরপর রাজার আদেশে বড়ো টেবিলে খাবার পরিবেশন যেই শুরু হয়েছে, সকলে পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিয়েছে মাত্র, এমন সময় ঘড় ঘড়াম ঘড়াম্‌ম্‌ম করে ভীষন আওয়াজে সকলে কেঁপে ওঠে।
    রাজামশাইএর ভুরু কুঁচকে ওঠে। "কিসের আওয়াজ?"

    ইরাবান আস্তে আস্তে আস্তে ভয়ে ভয়ে বলে,"ও কিছু না,আমার ব্যাঙ বৌ বুঝি এলো কৌটোয় চড়ে।"

    রাজসভাগৃহের সমস্ত সোনারূপাহীরাজহরতের ঝালকানিকে
    নিÖপ্রভ করে দিয়ে দুয়ার ঠেলে প্রবেশ করে এক অপরূপা রাজকন্যা।আকাশের মতো নীল তার শাড়ী,তাতে অসংখ্য তারার চুমকি বসানো। তার চুলে পম্পাসরোবরের ঢেউ,তার মধ্যরাত্রিনীল দুচোখের তারায় উজ্বল আলোর কারুকাজ।তার দুইটি বাহু পুষ্পিত লতার মতো, তার চলা উর্মিল। সকালবেলাকার শ্বেতপদ্মের মতো সুন্দর তার মুখ, তাতে আনন্দের জ্যোতি।

    রাজকন্যা এসে রাজামশাইকে প্রণাম করে বলে,"পিতা, আমি আপনার কনিষ্ঠা পুত্রবধূ। আপনার আশীর্বাদ চাই।" অতি মধুর সুরেলা তার কন্ঠস্বর।
    রাজামশাই ভারী খুশী হয়ে আশীর্বাদ করেন।

    এরপর রাজকন্যা তার ডানহাত নড়ায়, নীলশাড়ীর আঁচল
    ওড়ে, সভার ডানপাশে দেখা দেয় আশ্চর্য সুন্দর এক সরোবর। তাতে কলহংসেরা খেলা করে বেড়ায়।

    রাজকন্যা তাঁর বাঁহাত নাড়ায় , সভার বাঁপাশে সৃষ্টি হয় এক তুষারাবৃত পর্বত, তাতে ঝর্ণারা স্তব্ধ হয়ে আছে। রাজকন্যা,হাতে তালি দিতেই ঝর্ণাগুলি প্রাণ পেয়ে ঝরঝর করে ঝরে পড়তে থাকে সে যাদুপাহড় বেয়ে,নদী হয়ে বয়ে
    যায়-যাদুসরোবরে এসে মেশে।

    রাজারানী খুব খুশী,অন্যরাও খুশী,শুধু ইরাবানের দুই দাদা আর তার বৌরা খুশী নয়।

    রাজারানী তাদের এই যাদুকরী পুত্রবধূকে আদর করে নিমন্ত্রণ খাওয়াচ্ছেন, এমন সময় দেখা গেল ইরাবান সভায় নেই।

  • goppee | 131.95.121.132 | ১২ আগস্ট ২০০৭ ০৫:৪৩389424
  • চমকে উঠে ভানুমতী রাজার অনুমতি নিয়ে প্রায় দৌড়ে এলো তার মহলে। এসে দেখে যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গেছে। ইরাবান ভানুমতীর রেখে যাওয়া ব্যাঙের ছালটা পুড়িয়ে দিয়েছে। সে বুঝতেই পারেনি কি করে বসেছে।সে ভাবছে বেশ বাহাদুরির কাজ করেছে। ভানু কপাল চাপড়ে মাটিতে পড়ে কাঁদতে লাগলো একেবারে একটা বাচ্চা মেয়ের মতো। ইরাবান বিস্মিত।
    পরে ভানুমতী বললো,"এ কি করলে রাজপুত্র? এক বছর এইভাবে
    ব্যাঙ সেজে থাকতে পারলেই আমার অভিশাপের মুক্তি হতো। তুমি সেটুকু ধৈর্য ধরতে পারলে না ইরাবান?তোমার প্রাসাদে তোমার রানী হয়ে সারাজীবন আমি সুখে থাকতে পারতাম।কিন্তু এখন? আর উপায় নেই।এখুনি আমাকে নিয়ে যাবে অমর।সে আমাকে বন্দী করে রাখবে।সে
    বড়ো নিষ্ঠুর।আর আমার মুক্তি হবে না।"
    ইরাবান এসে জড়িয়ে ধরলে রাজকন্যাকে। বললো, "কে তোমাকে নিয়ে যাবে রাজকুমারী? কেউ নিয়ে যেতে পারবে না।মিথ্যে তুমি ভয় পাচ্ছো ভানুমতী। দেখো, এই তো আমি। চোখ মোছো।কেন তুমি কাঁদছো?"
    কিন্তু তখনি একটা দারুণ ঝড় এলো,তার মধ্যে থেকে হা হা হা হা করে একটা বিকট হাসি ভেসে এলো। ঝড়ের ধাক্কায় উল্টে পড়ে গেলো ওরা দুজন।
    বিদ্যুৎ চমকে উঠলো আকাশে, ভীষন বজ্রের ধ্বনি কানে তালা লাগিয়ে দিলো প্রায়। ভয়ে ইরাবান চোখ বন্ধ করলো।
    ঝড় থামলে যখন রাজপুত্র উঠে বসলো, তখন ঘরে সে একা।রাজকুমারী ভানুমতী আর কোথাও নেই।

    ইরাবান দৌড়ে গেলো বাগানে। না সেখানো কেউ নেই। ছুটে গেল, কহ্লারসরোবরের ধারে,সেখানেও কেউ নেই।ছুটে গেল তার প্রাসাদের ঘরে ঘরে,না ভানুমতী কোথাও নেই।

    এবার কাপাল চাপড়ে মাটিতে পড়ে নিজেই কাঁদতে লাগলো সে।কেন সে না জেনে বোকার মতো---

    কিন্তু সেই রাত্রির পরে ভোর হলো। ইরাবান যোদ্ধার পোশাকে তার প্রিয় ঘোড়া তুরীয়ানের পিঠে বসে বেরিয়ে এলো বাইরে। রাজপ্রাসাদে গিয়ে সব বললো বাবামাকে। তারপরে বাবার অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। হারিয়ে যাওয়া ভানুমতীকে উদ্ধার করে আনার জন্য। সে জানে এ কাজ কঠিন, খুবই কঠিন।তবু সে এও জানে, যে একাজ না করে তার আর কোনো উপায় নেই।
  • goppee | 131.95.121.132 | ১২ আগস্ট ২০০৭ ০৫:৪৬389425
  • দিনের পর দিন সে চলে আর চলে আর চলে। কোথায় যাবে, কিভাবে খুঁজবে,কাকে জিজ্ঞাসা করবে,কিচ্ছু জানেনা।তবু চলে।তার তুরীয়ানকে ছুটিয়ে নিয়ে চলে রাজ্য থেকে রাজ্যান্তরে।

    সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়, সূর্য অস্তে নামে, ক্লান্তি এসে ইরাবানকে আর তার তুরীয়ানকে আচ্ছন্ন করে। তারা থামে, পথের ধারের কোনো সরাইখানায় আশ্রয় নেয়। রাত্রিটা সেখানে কাটিয়ে আবার পরদিন ভোরে চলা শুরু করে।

    এইভাবে পার হয়ে যায় অনেকদিন।একদিন দুপুরবেলা এক নদীর ধারে ইরাবান দেখে একজন জটাজূটধারী সাধু বসে আছেন। সেদিন খুব গ্রীষ্ম, ইরাবান অত্যন্ত ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত বোধ করছিল। তুরীয়ানেরও মুখে ফেনা উঠে গেছিল। নদীর ধারে থেমে নদীর জল পান করে দুজনেই একটু সুস্থ হলো।

    এবার রাজপুত্তুর সাধুর কাছে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করে মাটিতে বসলো একটু বিশ্রাম করবে বলে।
    সাধু নিজে থেকেই বললেন, "কি চাও তুমি বৎস?"
    রাজপুত্র মুখ তুলে খুব ক্লান্ত গলায় বললো,"আমি একজনকে খুঁজছি। বহুদিন ধরে। আমি কি সফল হবো?"
    সাধু হেসে বললেন,"জানি তুমি কাকে খুঁজছো।"
    রাজপুত্র দারুণ অবাক হয়ে গেছে, বললো,"আপনি জানেন? কাকে খুঁজছি?"

    সাধু বললেন,"তুমি খুঁজছো তোমার স্ত্রী, যাদুকরী রাজকুমারী ভানুমতীকে। কি, আমি ঠিক বলেছি?"

    ইরাবান সাধুর পায়ে লুটিয়ে পড়ে বললো," আপনি আমায় দয়া করুন। আমারই ভুলে আমি তাকে হারিয়েছি। বলুন কি করলে তাকে ফিরে পাবো?"

  • goppee | 131.95.121.132 | ১২ আগস্ট ২০০৭ ০৫:৪৯389426
  • সাধু বললেন,"তুমি সব কথা জানোনা। জানো কি যাদুকরী ভানুমতী জন্মেছিল তার বাবা যাদুসম্রাটের চেয়েও বেশী যাদুজ্ঞান নিয়ে? তাই তার বাবাই তাকে অভিশাপ দেন।সে ব্যাঙ হয়ে যায়।পরে তা থেকে মুক্তির উপায়ও একটা ঠিক হয়।সেই পথেই সব চলছিল।কিন্তু তুমি ওর ছদ্মবেশ আগে ভাগে পুড়িয়ে দিয়ে গন্ডগোল করে ফেলেছ। এখন তাকে নিয়ে গেছে অমর কাশ্যপ।সে ওকে বন্দী করে রেখেছে অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গায়। সেখানে পৌঁছনো অত্যন্ত কঠিন,প্রায় অসম্ভব।"

    কঠিন প্রতিজ্ঞার গলায় ইরাবান বলে,"যতো কঠিনই হোক, আমাকে সেখানে যেতেই হবে।দয়া করুন সাধুবাবা।পথ বলে দিন।আমাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে দিন।"

    ইরাবান এত কাতরভাবে অনুনয় করছে দেখে সাধুবাবার মন গলে জল। তিনি ওকে পথ বলে দিলেন অমর কাশ্যপের সুরক্ষিত পুরীতে পৌঁছনোর। আরো বলে দিলেন,"শোনো রাজপুত্তুর। মন দিয়ে শুনে নাও। অমর কাশ্যপের প্রাণ আছে ছোট্টো এক সোনার সূচের ডগায়। সেই সূচ আছে এক ডিমের ভিতর।সেই ডিম আছে এক হাঁসের পেটে। সেই হাঁস আছে এক খরগোসের পেটে আর সেই খরগোস আছে এক বিরাট বটগাছের কোটরে। সেই গাছ নিত্যদিন পাহারা দেয় অমর,তার চোখের মণির মতো।যদি সেই দুরূহ সূচ উদ্ধার করে তার ডগাটা ভেঙে ফেলতে পারো তবেই কাশ্যপ মরবে। তাহলেই, একমাত্র তাহলেই ভানুমতীর মুক্তি।"
  • goppee | 131.95.121.132 | ১২ আগস্ট ২০০৭ ০৫:৫৪389427
  • শুনে ইরাবানের মনটা একটু দমে গেল।পারবে কি এত সাংঘাতিক কঠিন শর্ত পালন করে উদ্ধার করে আনতে তাকে? তবু সে মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে বললো,"আশীর্বাদ করুন, যেন সফল হই।"
    সাধুবাবা দুহাত তুলে আশীর্বাদ করলেন তাকে। রাজপুত্র ঘোড়া চড়ে রওয়ানা হলো রাজকন্যা উদ্ধারে।

    পথে প্রথমে পড়লো কনকনে ঠান্ডা তুষারের নদী। সেই ঠান্ডা সহ্য করে ওপারে পৌঁছে পড়লো এক গহন জঙ্গল। অসংখ্য হিংস্র বন্যজন্তু সমাকীর্ন সে জঙ্গল পার হয়ে পড়লো এক বিশাল উঁচু পাহাড়।
    সেই পাহাড়ের পাদদেশে বসে ইরাবান যখন বিশ্রাম নিচ্ছে
    তখন ধেয়ে এলো এক বিরাট ভল্লুক। তাকে মারতে যখন ইরাবান অস্ত্র তুলেছে, সে কাতর অনুনয় করে বললো,"মেরো না মেরো না রাজপুত্তুর। হয়তো কখনো আমি তোমার কোনো উপকার করতেও পারি বা।" রাজপুত্রের দয়া হলো।সে ভল্লুককে চলে যেতে দিলো।
    এবার ঘোড়া নিয়ে এগোতে এগোতে পথে পড়লো এক খরগোস।তাকে মারতে গেলেও সে মানুষের গলায় বললো,"মেরো না মেরো না রাজপুত্তুর।হয়তো আমি কোনোদিন তোমার কোনো উপকার করতে পারি।" রাজপুত্তুর তাকেও ছেড়ে দিলো।
    সেইদিন সন্ধেবেলা এক বিরাট উপত্যকার কাছে পৌঁছে রাজপুত্র দেখলো, আকাশে অনেক হাঁস উড়ছে। খিদেও পেয়েছিল খুব রাজপুত্রের, ধারে কাছে দোকানপাটও কিছু ছিলনা।তাই রাজপুত্তুর ভাবলো,"একটা হাঁস মেরে রোস্ট করে খেলে কেমন হয়?" ভেবে যেই না তীর ধনুক তুলেছে হাঁস মারবে বলে,অমা এক হাঁস অমনি মানুষের গলায় বলে কিনা,"রাজপুত্তুর যদি তুমি হাঁস না মারো,তাহলে কোনোদিন আমি তোমার কোনো বড়ো উপকার করবো।"
    ইরাবান অবাক হয়ে তীর ধনু নামিয়ে ফেললো,মাটিতে উষ্ণীষের শয্যা পেতে সে রাতে অনাহারেই সে নিদ্রা গেলো।

  • goppee | 131.95.121.132 | ১২ আগস্ট ২০০৭ ০৬:০১389428
  • পরদিন আবার ঘোড়া চড়ে সে চললো। চলে আর চলে, চলে আর চলে। অবশেষে পৌঁছলো সমুদ্রতীরে। সেখানে এক বিরাট পাইক মাছ শুয়ে ছিল সমুদ্রতীরের বালিতে। ক্ষুধার্ত রাজপুত্র যেই না তাকে মারতে গেছে অমনি সে বললো,"মেরো না গো, ভালোমানুষের ছেলে। কি জানি হয়তো কোনোদিন আমি তোমার কোনো উপকার করবো।" দয়ালু রাজপুত্র তাকে জলে ছেড়ে দিলো।

    আরো বহুদিন অনেক পথ চলে সে অবশেষে পৌঁছালো কাশ্যপের পুরীতে। দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছিল সেই বিরাট বটগাছ। কিকরে সে গাছের কোটর থেকে খরগোসকে বার করবে ভেবে ভেবে মাথা কুটছে,এমন সময় কোথে্‌থকে এসে উদয় হলো সেই ভল্লুক।
    সে তিনলাফে গাছের কাছে পৌঁছে কোটরের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বার করে আনলো খরগোসটাকে। কিন্তু খরগোস ভল্লুকের মুঠো ছাড়িয়ে ছুট দিলো খুব জোরে। রাজপুত্র হায় হায় করছে, অমনি সেই পুরানো বন্ধু খরগোস এসে ছুটে পিছু নিল পলাতক খরগোসের। সেই গিয়ে ঘাড়ে কামড়ে ধরলো খরগোসটার। রাজপুত্র যেই গিয়ে তলোয়ার দিয়ে খরগোসটাকে কেটেছেন অমনি তার পেট থেকে হাঁস বেরিয়ে উড়ে গেলো আকাশে। এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রাজপুত্র কপাল চাপড়াচ্ছেন,অমনি রাজপুত্রের সেই বন্ধু হাঁস এসে এই হাঁসের পিছু নিল।বন্ধু হাঁস যেইনা গিয়ে এই পলাতক হাঁসের ঘাড়ে পড়েছে, অমনি এই হাসের পেট থেকে ডিম খসে পড়লো নীচে সমুদ্রে।জলে ডুবে গেলো তা।
    এবার আর কোনো আশা নেই ভেবে রাজপুত্র জলের ধারে বসে কাঁদছেন অমনি জল থেকে মাথা তুললো সেই পাইক মাছ। ডিমটা তার মুখে ধরা।
    রাজপুত্র তো আহ্লাদে আটখানা। অনেক ধন্যবাদ দিয়ে ডিমখানা নিয়ে পাথরে ঠুকে ভাঙলো রাজপুত্তুর।সেই ছোট্টো সূচখানা জ্বলজ্বল করে উঠলো আলোয়। রাজপুত্র ডগাটা ভেঙে ফেলে পাথরের টুকরো দিয়ে ঘষে ঘষে চূর্ণ করে ফেল্লেন। তার সঙ্গে ধ্বংস হলো অমর কাশ্যপ।
    এবার রাজপুত্র চললেন কাশ্যপের পুরীতে। সেখান থেকে বন্দিনী রাজকন্যা ভানুমতীকে উদ্ধার করে নিয়ে চললেন নিজ রাজ্যে।
    যেদিন তারা রাজারানী হিসাবে অভিষিক্ত হলেন, সেইদিন রাজ্যের সমস্ত লোকতো নিমন্ত্রিত হয়েছিলই, তাদের সঙ্গে খুশীভরা মনে যোগ দিয়েছিল সেই বন্ধু ভালুক, হাঁস, খরগোস আর পাইক মাছ।

    তারপরে? তারা সুখে শান্তিতে সংসার করেছিল বহু বহু
    বছর।
    *************************

  • Tim | 204.111.134.55 | ১২ আগস্ট ২০০৭ ০৮:৩৫389429
  • দুর্দান্ত গল্প। বিভিন্ন দেশের রূপকথার মধ্যে কি অদ্ভুত মিল!
    এবার একটা ভিয়েতনামের গল্প বলি :

    অনেক অনেকদিন আগের কথা। নদীর ধারের এক প্রাসাদে থাকত এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যা। তার বাবা রাজকর্মচারী হওয়ায় তাদের প্রতিপত্তি ছিল খুব। সেই অপরূপা মেয়ের দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যেত না। সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকত। আর মেয়েটিও বেজায় অপ্রস্তুত হত। তখন তার বাবা করলেন কি, একটা উঁচু চিমনীর মত কেল্লা বানিয়ে তার সব থেকে ওপরের ঘরে মেয়েটিকে রেখে দিলেন। সেই ঘরের জানলা দিয়ে নিচের নদী আর তাকে ঘিরে চারদিকের সবুজ উপত্যকা দেখা যেত, কিন্তু নিচ থেকে কেউ মেয়েটিকে দেখতে পেতনা। এইভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে মেয়েটিকে রেখে তার বাবা নিশ্চিন্ত হলেন।
    জানলার ধারে একা একা বসে থাকতে থাকতে কন্যা স্বপ্নরাজ্যে পাড়ি দিত। মনের চোখে দেখত কোন এক রাজপুত্র শাদা ঘোড়ায় চড়ে আসছে তার জন্য। এইরকমই একদিন সে জানলার ধারটিতে এসে বসেছে, স্বপ্নেরা ডানা মেলতে শুরু করল বলে, এমন সময় নিচ থেকে সে অপূর্ব করুণ এক বাঁশীর শব্দ শুনতে পেল। ভাল করে লক্ষ্য করে সে দেখতে পেল নদীর বুকে এক ছোট্টো নৌকো। সেই নৌকোর একপাশে হেলান দিয়ে বসে একজন বাঁশী বাজাচ্ছে। তার বাঁশীর সুরে কি যেন ছিল, মেয়েটি মন্ত্রমুগে্‌ধর মত চুপ করে বসে শুনলো অনেকক্ষণ। তারপর একসময় যখন সে আওয়াজ দূরে মিলিয়ে গেল, সে অবাক হয়ে দেখলো তার দুচোখ জলে ভরে গেছে।
    ঐ বাঁশীওয়ালা ছিলো আসলে এক গরীব জেলে। সে রোজ ঐ নদীতে নৌকা বেয়ে মাছ ধরতে যেতো। সেই প্রথমদিনের বাজনা শোনার পর থেকেই মেয়েটি রোজ অপেক্ষা করত কখন সেই বাঁশীওয়ালা আসবে। তারপর বাঁশীর শব্দ শুনতে পেলেই সে জানলা দিয়ে ফুলের পাঁপড়ি ছুঁড়ে দিত। আর জেলেও বুঝতে পারত কেল্লায় তার এক বন্ধু আছে, যে তার বাঁশীর সুরে পাগল। এইভাবে কেউ কাউকে না দেখলেও দুজনের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
    তরুণ জেলেটি জানতো না যে প্রবল ক্ষমতাবান রাজকর্মচারীর মেয়ে থাকে ঐ কেল্লায়। পরে যখন সে জানলো সব কথা, ভয়ে তার প্রাণ উড়ে গেল। পরদিন থেকেই সে অন্য নদীতে মাছ ধরা শুরু করলো।
    সেদিন মেয়েটি অনেকক্ষণ তীর্থের কাকের মত বসে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গেল। এমনি করে একের পর এক দিন চলে গেল, সে এল না। বাঁশীর সুর না শুনতে পেয়ে মেয়েটি তো পাগল হওয়ার জোগাড়। দিন দিন সে ফ্যাকাসে হয়ে বিছানার সাথে মিশে যেতে লাগলো। কিন্তু সে মুখ ফুটে কাউকে বলতেও পারেনা, পাছে তার বাবা রাগ করে এক সামান্য জেলেকে ভালবাসার জন্যে।
    শেষে মেয়েটির এক পরিচারিকা খানিকটা আঁচ করতে পেরে কত্তামশাইকে সব বলে দিল। তখন চারদিকে খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল। অল্পদিনেই জেলেকে ধরে নিয়ে আসা হল কেল্লায়। তার দিকে একবার তাকিয়ে হতাশ গলায় রাজকর্মচারী বললেন, "" আমার কাছে আমার মেয়ের জীবন অনেক বেশি দামী। তাই সে যদি সুখী হয়, তাহলে আমি তোমার সাথেই তার বিয়ে দেবো।"" এইকথা শুনে জেলের তো আনন্দে পাগল হবার উপক্রম। কিন্তু তবু সে সংযত স্বরে জানালো, "" আমি কখনো-ই চাইনি আমার বন্ধুর জীবন-মৃত্যু আমার ওপর নির্ভর করুক। আমি শুধুই ওকে খুশী করতে বাজাতাম।""
    তখন জেলেকে মেয়েটির ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। বাঁশীর পরিচিত সুর কানে যেতেই সে সুস্থ হয়ে উঠল। ধড়মড় করে উঠে বসেই সে দেখতে পেল জেলেকে। আর অমনি তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। এমন সুন্দর বাঁশী বাজায় যে, তাকে দেখতেও খুব সুন্দর হবে, এমনটাই ভেবেছিল সেই মেয়ে। কিন্তু তার ধারণা ভুল। জেলেকে অত্যন্ত কদাকার দেখতে ছিল। তাই একবার তাকিয়েই সেই মেয়ে মুখ ফিরিয়ে চলে গেল। সবাই বুঝে গেল, যে এই বিয়েতে খোদ পাত্রীর-ই মত নেই আর।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১২ আগস্ট ২০০৭ ০৮:৫৭389430
  • এই ঘটনায় কিন্তু সেই তরুণ জেলে দারুণ আঘাত পেল। নিজের প্রতি ঘৃণায় সে কাউকে মুখ দেখাতো না।
    তারপর একদিন সবাই দেখলো, সেই জেলের প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে তার ঘরের মেঝেতে। তার একপাশে বাঁশীটা রাখা, অন্যপাশে একটা ঝলমলে হীরে। জেলেকে সবাই বেশ পছন্দই করত, তাই ওর আত্মার শান্তির জন্যে তারা সেই ছোট্টো নৌকোর সামনে হীরেটা আটকে, বাঁশীসমেত নৌকোটা নদীতে ভাসিয়ে দিল। ভাসতে ভাসতে সেই নৌকোটা যখন কেল্লার পাশ দিয়ে যাচ্ছে, রাজকর্মচারী দূর থেকে ঐ হীরেটার ঝলকানি দেখে লোক লাগিয়ে সেটা নৌকো থেকে খুলে নিলেন। তারপর কারিগড় ডেকে ঐ হীরে দিয়ে একটা ছোট্টো পাত্র বানিয়ে মেয়েকে উপহার দিলেন।
    একা একা জানলার পাশে বসে মেয়েটি অপলক চোখে সেই পাত্রের দিকে তাকাতেই সেই জেলের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠলো তাতে। মেয়েটি সেদিনের সেই ঘটনায় খুব অনুতপ্ত ছিলো। আজ সেকথা মনে করে সে খুব কাঁদলো। তার চোখের জলে ঐ পাত্র কানায় কানায় ভরে উঠতেই দূর থেকে বাঁশীর সুর শোনা গেল। সেই পরিচিত সুর। মেয়েটি তন্ময় হয়ে শুনতে লাগল।
    অনেকক্ষণ পরে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিচারিকারা এসে দেখলো, জানলার ধারে মেয়েটির নিথর দেহ পড়ে আছে। আর সেই হীরের পাত্রটা কোথাও নেই।
    ------------
  • goppee | 131.95.121.132 | ১৪ আগস্ট ২০০৭ ০৬:২৬389431
  • গ্রেকো-রোমান উপকথার শক্ত রাগী রাগী টাফ টাফ সব দেবতাদের সাংঘাতিক-সাংঘাতিক গল্প শুনে আমাদের যখন তিরিক্কি মেজাজ,তখন চীন দেশের একটি গল্প স্নিগ্‌ধ জলের মতন, মিঠে সরবতের মতন আমাদের মেজাজ জুড়িয়ে দিয়েছিলো। আজকে সেই গল্প বলতে ইচ্ছে করছে।
    জীবনদেবতা শাউশিং আর মৃত্যুদেবতা পি-তাউয়ের গল্প।
    চীনদেশে স্পাইকা বা চিত্রা তারাকে জীবনদেবতা ও দীর্ঘ আয়ুর দেবতা শাউশিং এর সঙ্গে অ্যাসোসিয়েট করা হয়। জ্বলজ্বলে হাসি চোখে নিয়ে একমুখ সাদা দাড়ি সেই বৃদ্ধ দেবতা সস্নেহে পৃথিবীর মানুষের দিকে তাকিয়ে আছেন।
    এর সম্পর্কে কবিতা আছে অনেক, আমাদের বাঙালি কবি তারই একটার অনুবাদে বলেছেন,"মেঘের মতন সাদা চুল তার, সাদা দাড়ি ধবধবে/মুখে লেগে আছে প্রাণের হাসির ফেনাই বুঝিবা হবে/কেহ যদি তারে কখনো শুধায় এ হাসি কোথায় পেলে/সাধু হেসে কয় পেয়েছি হৃদয় আঁখিজলে ধুয়ে ফেলে..."
    চীনদেশের এক পরিবারে এক পুত্র জন্মালে খুব আনন্দের জোয়ার বয়ে গেলো পরিবারে।কিন্তু সে আনন্দ স্থায়ী হলো না,জ্যোতিষী গণনা করে দেখলেন ছেলেটির আয়ু মাত্র ১৯ বছর। এত তরুণ বয়সে সে মারা যাবে।
    বাবামা দু:খ বুকে চেপে যত্ন আত্তি করেন ছেলের,দিনে দিনে সে বেড়ে উঠতে থাকে,সুন্দর হতে থাকে,শক্তিশালী হতে থাকে,শস্ত্র ও শাস্ত্রশিক্ষায় পারঙ্গম হয়ে ওঠে।তার দিকে চেয়ে গোপণে বাবামায়ের দীর্ঘশ্বাস পড়ে।
    এসব কথা কি বেশীদিন চেপে রাখা যায়? একদিন সেই ছেলেও জেনে ফেললো সব।কিন্তু তরুণ বয়সে মৃত্যুভাবনা নিয়ে বিষন্ন হয়ে বসে থাকতে কারুর ভালো লাগে না,সে তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করে যায়,মাঝে মাঝে শুধু একটা ভয় চমকে ওঠে তার মনের মধ্যে,আঠেরো হয়ে এলো তার,আর মাত্র একটা বছর পরে এই সুন্দর পৃথিবী, এই স্নেহময় বাবামা, এই এত এত ভালো ভালো বন্ধুবান্ধব সব ছেড়ে... জোর করে মন থেকে ভাবনা তাড়িয়ে দেয় সে,কিন্তু একেবারে তাড়াতে পারে না।
    এই করে দিন যায়, এখন সে আরো বড়ো, আর মাত্র কয়েকটা সপ্তাহ সে থাকবে বেঁচে।সে শিকারে গিয়ে ইচ্ছে করে দলছাড়া হয়ে গভীর অরণ্যে ঢুকে চুপ করে এক গাছতলায় বসলো।বসে বসে নানা কথা ভাবতে ভাবতে একসময় গভীর ঘুমে সে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো।
  • goppee | 131.95.121.132 | ১৪ আগস্ট ২০০৭ ০৬:৪২389433
  • ঘুম ভেঙে দেখে বেলা পড়ে এসেছে,ঢলে পড়া সূর্য তির্যক আলো ঢেলে দিচ্ছে গাছের ফাঁকফোঁকড় দিয়ে।
    বনের মধ্যে একটুখানি ঘাসে ঢাকা পরিষ্কার জায়্‌গায় দুই বুড়ো বসে দাবা খেলছেন,একজনের পোশাক বনের মতন সবুজ,আরেকজনের পোশাক রাত্রির মতন নীল,তাতে তারা আঁকা।ছেলেটি গিয়ে এদের কাছে চুপ করে বসলো।এনারা দুজন কিছু বললেন না,যেমন দাবা খেলেছিলেন খেলেই চললেন।
    নীলপোশাক বুড়ো ভারী গম্ভীর আর সবুজপোষাক বুড়ো বেশ হাসিখুশী।নীলপোশাক চাল দিলেন,বললেন ৩৮।আহা বেশ মাঝামাঝি,কমও নয়,বেশীও নয়।
    সবুজ পোশাক দাবার চাল দিলেন,বলললেন ৫০।এও মাঝামাঝি।
    নীলপোষাক বুড়ো আবার চাল দিলেন,৭।ঈশ, খুব কম।

    অনেকক্ষণ খেলাটা দেখে ছেলেটা বুঝলো এরা মানুষের জীবনও মৃত্যু দাবা খেলে ঠিক করেন,সবুজ পোশাক বুড়ো জীবনদেবতা হলেন শাউশিং আর নীলপোশাক হলেন মৃত্যুদেবতা পিতাউ।
    এদের পায়ে লুটিয়ে পড়ে সেই তরুণ বললো,"আপনারা আমার জীবন নিয়ে আরেকবার খেলুন।দয়া করুন।আমার মা বাবা আমাকে এভাবে হারিয়ে বাঁচবেন না।"
    জীবনদেবতা শাউশিং স্নেহকরুণ হেসে কইলেন,"বাছা,এতো ছেলেখেলা নয়। জীবনের আর মরণের খাতায় একবার উঠে গেলে আরকি সেই সংখ্যা পালটানো যায়? কিন্তু পিতাউ এর কাছে তুমি প্রার্থনা করো বাছা,জীবন আমার হাতে,কিন্তু মৃত্যু তো ওনার হাতে।"
    পিতাউ গম্ভীর লোক বটে কিন্তু রাগেন নি। ছেলেটা যখন ওনার পায়ে পড়ে কাকুতি মিনতি করছে,তখন উনি আস্তে আস্তে ওকে ধরে তুললেন,বললেন,""শোনো, খেলা একবার হয়ে গেলে আর কিছু করা যায় না। তবে একটা উপায় আছে,তোমার আয়ু উল্টে দিচ্ছি, ছিলো ১৯, করে দিলাম ৯১।কি এবার খুশী?""
    ছেলেটা কিচ্ছু বলতেই পারলো না,আনন্দে আপ্লুত হয়ে লুটিয়ে পড়ে এদের প্রণাম করে যখন মাথা তুললো তখন ওনারা কেউ নেই।রোদও নেই,সন্ধ্যে নেমে গেছে।দক্ষিণ আকাশ থেকে ওকে চেয়ে দেখছেন শাউশিং আর উত্তর আকাশ থেকে পিতাউ।
    এরপর একানব্বই বছর সে এদের প্রদীপ দিয়েছে,আর প্রার্থনা করছে সকলের মঙ্গল।

  • goppee | 131.95.121.132 | ১৪ আগস্ট ২০০৭ ২২:৪৩389434
  • বিভিন্ন কনস্টেলেশান নিয়ে উপকথা আছে দেশবিদেশে। কালপুরুষ(ওরায়ন) নিয়ে অনেক গল্পকথা। একদিন বলবো সময় এলে।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৪ আগস্ট ২০০৭ ২৩:১৪389435
  • আবছা মনে পড়ছে, শিশিরকুমার দাসের লেখা একটা বইতে পড়েছিলাম মনে হয় কিছু এরকম গল্প, বইটার নাম বোধহয় ছিলো "" তারায় তারায়""। এমনিতে কালপুরুষ আর সপ্তর্ষিমন্ডল নিয়ে প্রচুর গল্প আছে। লিখে দিও একে একে সময় করে।
  • goppee | 131.95.121.132 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ০৬:২৪389436
  • হ্যাঁ টিম,"তারায় তারায়" বইখানা অসাধারণ সুন্দর ছিলো,অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প আর অপূর্ব বর্ণনা। আজ আর বইখানা আমার কাছে আর নেই,শুধু কিছু কিছু গল্পের টুকরো টুকরো মুক্তোদানা রয়ে গেছে স্মৃতিতে।
    তোমার কাছে আছে বইখানা? থাকলে দাও না কিছু কিছু গল্প!

  • Tim | 204.111.134.55 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ০৬:৫৩389437
  • আনা হয় নি আমারো। :(
  • goppee | 131.95.121.132 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ০৭:০২389438
  • মিশরের উপকথা কিছু দেবে? অথবা এস্কিমোদের? অথবা সেই টিটিকাকার কাছের মানকো কাপাকের গল্প? অথবা পশ্চিম আফ্রিকার গল্প?
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ০৭:১৮389439
  • সাইবেরিয়া আর মায়া সভ্যতার গল্প চলবে? :)
  • goppee | 131.95.121.132 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ০৭:২১389440
  • হ্যাঁ হ্যাঁ,চলবে না মানে? দৌড়ে চলবে।
    পলিনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, ওশিয়ানিয়া---সব চলবে।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ০৭:২২389441
  • :-)
    তুলে দেবো আজ।
  • goppee | 131.95.121.132 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ০৭:৩৩389442
  • ছোটোবেলা কিং মিডাসের গল্প আমি একেবারে বাঙালিমতে শুনেছিলাম।রাজা তো সক্কালবেলাতেই এক বর পেয়ে বসেছেন। যা ছোঁবেন তাই সোনা হয়ে যাবার বর পেয়ে আনন্দে নাচতে নাচতে দুপুর করে ফেলেছেন,স্নানের সময় হয়ে গেছে।তেল মাখতে গেছেন,তেল হয়ে গেছে সোনার তাল,গামছা নিতে গেছেন গামছা হয়ে গেছে সোনার পাত!
    ভাবা যায়, গ্রীক রাজা জবজবে করে তেল মেখে গামছা নিয়ে স্নানে যাচ্ছেন!!!!!!
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ০৭:৩৯389444
  • :-)
    আমলকির রাজা মিডাস। গামছা নিয়ে দুধপুকুরে নাইতে যান। দুধ গড়িয়ে পড়ে কষ বেয়ে। :)
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ০৭:৪৮389445
  • তারায় তারায় বইটার যতটুকু মনে আছে লিখে দিও। বেশ ছিল বইটা।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ১১:০৪389446
  • মায়া সভ্যতায় প্রচলিত সৃষ্টিতত্বের গল্প:
    **********
    পৃথিবী তখনো তৈরী হয়নি। শুধু আকাশ আর সমুদ্র নিয়ে ছিল এই মহাবিশ্ব। চারদিক অন্ধকার, নি:ঝুম। প্রাণের চিহ্নমাত্র নেই। তখন হাওয়ার দেবতা , তেপে কুকুমাজের কাছে গিয়ে বাকি দেবতারা তাঁর সাহায্য চাইলেন। কুকুমাজ তখন ঝড়বৃষ্টির দেবতাকে নিয়ে আলোচনায় বসলেন। ঠিক হল, মাটি চাই, নইলে কেউ বাঁচবে না। তখন প্রথম পৃথিবী শব্দটা তৈরী হল। যেইনা ওঁরা শব্দটা উচ্চারণ করলেন, অমনি সমুদ্রের জল সরে গিয়ে মাটি বেরিয়ে পড়লো, তারপর সেই মাটি কোথাও উঁচু হয়ে পাহাড় হল, পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে নদী হল। চোখের পলকে সেখানে সবুজ অরণ্য গড়ে উঠলো।
    এতবড় একটা কান্ড করায় সবাই নিশ্চই দেবতাদের জয়গান করবে, এমনটাই ধারণা ছিলো ওঁদের। কিন্তু কোথায় কি! আওয়াজ যা কিছু ছিলো, তা ঐ গাছের পাতার সরসর আওয়াজ, বা নদীর জলের একটানা শব্দ। তখন দেবতাদের এক ইশারায় অজস্র প্রাণী সৃষ্টি হয়ে জল-স্থল-আকাশ আওয়াজে ভরিয়ে তুললো। মেন আশা নিয়ে কান পেতে শুনে দেবতাদ্বয় আরো গম্ভীর হলেন। কেউ তো ওঁদের কথা কইছে না। তবে আর লাভ কি হল?
    তখন তাঁরা দুজন মিলে কাদা দিয়ে একটা মানুষ বানালেন। বানিয়েই হুকুম দিলেন, "" বলো! তাঁদের কথা বলো যাঁরা তোমায় বানিয়েছেন। শপথ কর তুমি তাঁদের গৌরব প্রচার করবে আর বিশেষ দিনে পশু বলি দিয়ে আমাদের তুষ্ট করবে""। কিন্তু সেই মাটির পুতুলের মুখ দিয়ে অস্পষ্ট কিছু আওয়াজ ছাড়া কিছুই বেরোল না। এতে ভারি রেগে গিয়ে তক্ষুনি সেই পুতুলটা তাঁরা নষ্ট করে দিলেন। আর অভিশাপ দিলেন যে , ঐসব পশুরা, যাঁরা দেবতার অনুগ্রহ স্বীকার করেনি, তাদের চিরকাল দাস হয়ে থাকতে হবে।
    হতাশ দুই দেবতা এরপর গেলেন দুই আদি দেব-দেবীর কাছে, আদর করে দেবসমাজে ওঁদের বলা হয় দাদু আর দিদা। এই দুই বুড়োবুড়ি সাতেপাঁচে থাকেন না, খালি ধ্যান করেন। তো, সব শুনে ওঁরা আবার ধ্যানে বসলেন। ধ্যান শেষে শস্যবীজ আর শাঁস থেকে তাঁরা সৃষ্টি করলেন প্রথম মানব-মানবী। যদিও তারা প্রাণহীন শুকনো কাঠের মত ছিলো। না ছিলো তাদের বোধবুদ্ধি, না ছিলো অনুভব করার ক্ষমতা। তারা জন্ম নিয়েই যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে লাগলো, অচিরেই তাদের অসংখ্য সন্তান-সন্ততি হল, কিন্তু কাজের কাজ হল না। অর্থাৎ দেবতারা যা চেয়েছিলেন। কেউ শপথের একটা বাক্য-ও বলল না। তখন দেবতারা ভয়ংকর রেগে গিয়ে প্রলয় শুরু করলেন। তিল তিল করে তৈরী সমস্ত সভ্যতা ধ্বংশ হতে শুরু করলো। আকাশ কালো হয়ে গাঢ় আঠালো বিষবৃষ্টি নামলো, পোষা প্রাণীরা বিদ্রোহ করল। শেষে ওদের সমস্ত ছেলেমেয়েনাতিনাতনি সবাই মরে গিয়ে ঐ দুজন মানুষ একা হয়ে গেল। থাকার জায়গা নেই, গুহায় ঢুকলে গুহার ছাদ ভেঙ্গে পড়ে, গাছে চড়লে ডাল ঝাঁকিয়ে নিচে ফেলে দেয় সেই গাছ। এভাবে কেউ বাঁচতে পারে? ওরাও বাঁচলো না। তবে মরে যাওয়ার পরে ওদের থেকে সৃষ্টি হল কিছু বানরের। তারা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো আর নিজেদের মধ্যে অর্থহীন ভাষায় কিসব বলতো। এইভাবে কেঠোমানুষের যুগ শেষ হল।
    তারপর একসময় ঝড় থামলো। প্রথমবার সূর্য আর চাঁদ আকাশ আলো করে দেখা দিলো। কিন্তু তখনো দেবতাদের রাগ কমেনি, পুজো পাওয়ার খিদেও মেটেনি। তাই শুরু হল আরেক যুগ।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৫ আগস্ট ২০০৭ ১১:৪০389447
  • ঐ ভয়ানক প্রলয় দেখে পশুপাখীরা দেবতাদের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলো। কিন্তু তারা তো আর পুজো করতে পারেনা। তাই দেবতাদের দরকার ছিলো এমন প্রাণী যারা আরেকটু উন্নত হবে।
    প্রলয়শেষে দেবতারা শিয়াল, টিয়া আর কাককে পাঠালেন এমন কিছু খুঁজে আনার জন্য যা দিয়ে মানুষের হাড় আর মাংস বানানো যায়।
    শেষে এক দুর্গম উপত্যকার গুহায় পাওয়া গেল প্রচুর অদ্ভুৎদর্শন শস্য আর ফলমূল। চমৎকার স্বাদগন্ধের সেইসব মহার্ঘ্য বস্তু নিয়ে আসা হল সেই আদি দুই দেবদেবীর কাছে। তখন দেবতাদের সেই দিদা সমস্ত একসাথে করে শিলে বাটতে শুরু করলেন। দেখতে দেখতে সমস্ত মিশে গিয়ে নরম মাংসপিন্ড তৈরী হল। জল থেকে হল রক্ত, কাঠ থেকে হল হাড়। তারপর যেইনা ঝড়ের দেবতা একটা মানুষের অবয়ব গড়ে মাটিতে ফেললেন, অমনি তা থেকে শত মানবমানবী জন্ম নিলো। এই নতুন মানুষেরা সব দিক থেকেই নিখুঁত ছিলো। ওদের গায়ের রং ছিলো সোনার মত। রেশমি কালো চুল আর অতলস্পর্শী দৃষ্টির এই মানুষের ভাষাও ছিলো খুব মিষ্টি।
    জন্মানোর সাথে সাথে তাদের শপথবাক্য পাঠ করতে বলা হল। এবার আর তারা ভুল করলো না। আভূমি নত হয়ে উপাসনা করলো স্রষ্টাদের। কিন্তু দেবতাদের সন্দেহে ভরা মন। তাঁরা ভাবলেন, এত বুদ্ধিমান এরা, কিছুদিনেই নিজেরা সব জেনে নিয়ে পুজো বন্ধ করে দেবে। তাই তাঁরা আকাশ মেঘে ঢেকে দিলেন, মানুষদের বুদ্ধি আর দৃষ্টি ঘোলাটে করে দিলেন।
    সেই থেকে মানুষ তার ক্ষুরধার বুদ্ধি আর দূরদৃষ্টি হারালো। তাই আমরা সবকিছু বুঝতে পারিনা, সবকিছু দেখতে পাইনা। এই জগতের সমস্ত রহস্য চিরকাল আমাদের কাছে অধরাই থেকে যাবে। সেই থেকে আমরা দেবতার উপাসনা করি, ধন্যবাদ জানাই :

    ধন্যবাদ জানাই তোমায়, বারবার
    আমাদের বানালে
    চোখ মুখ নাক দিলে
    কথা বলি, শুনতেও পাই
    ইচ্ছেমত চলে বেড়াই
    জ্ঞান বাড়লো ধীরে ধীরে
    কোনটা কাছে, কোনটা দূরে
    বুঝি এখন ছোটো-বড়ো
    ভাঙ্গছো তুমি, তুমি-ই গড়ো
    জানাই তোমায় কৃতজ্ঞতা
    তুমি-ই মোদের পিতামাতা।।
    **********************

  • tan | 131.95.121.132 | ১৬ আগস্ট ২০০৭ ২৩:৫৭389448
  • খুব ভালো লাগলো টিম। আরো কয়েকটা শোনাও না!
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৭ আগস্ট ২০০৭ ০১:২৯389449
  • হ্যাঁ, তুলে দেবো সময় করে।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৭ আগস্ট ২০০৭ ০৭:৪১389450
  • অ্যাজটেক সভ্যতার গল্প :
    **********************
    এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার পর দেখতে দেখতে চারযুগ কেটে গেল। প্রত্যেক যুগে একেকজন করে দেবতা সূর্য্যরূপে পূজিত হলেন, বিনিময়ে পৃথিবী পেল বেঁচে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ। পঞ্চম যুগের শুরুতে দেবতারা টিয়তিওয়াকানে জড়ো হয়ে আলোচনায় বসলেন। তখন সন্ধ্যে হয় হয়।
    পরবর্তী সূর্য্য হওয়ার আহ্বান করা মাত্রই টেকাসিতেকাল নামের এক দেবতা লাফিয়ে উঠে নিজের নাম প্রস্তাব করলেন। অনেক দিন থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছিলো ঐ গৌরবময় পদ অলঙ্কৃত করার। কিন্তু কোন কারণে কিছু দেবতা তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাই তাঁরা একরকম জোর করেই নানাহুয়াজিন নামের এক ব্রাত্য দেবতার নাম প্রস্তাব করলেন। নানাহুয়াজিন অতি কদাকার দর্শন, রুগ্ন ছিলেন বলে তাঁকে সবাই তাচ্ছিল্য করত। তিনি তো ভয়ে ভয়ে নিমরাজি হলেন। সূর্য্য হওয়া তো মুখের কথা না। তার জন্য শুদ্ধাচারের মাধ্যমে নিজেকে মহৎ কাজের জন্য প্রস্তুত করতে হত। তারপর সেই পবিত্র দেহে শুরু হত আগুনের উপাসনা। এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ন হলে তবেই সেই দেবতা সূর্য্য হয়ে অগাধ ক্ষমতা ভোগ করতেন।
    যথারীতি বিশাল এক আগুন জ্বালিয়ে উপাসনার প্রক্রিয়া শুরু হল। টেকাসিতেকাল অভিজাত দেবতা, তাঁর পুজো দেখে সবাই ধন্য ধন্য করলো। খড়ের বদলে সোনা, ঘাসের বদলে রেশম আর নিজের রক্তের বদলে রক্তপ্রবাল গাঁথা মুকুট দিয়ে মহাসমারোহে তাঁর পুজো হল। বহুমূল্য ধূপকাঠির ধোঁয়ায় চারদিক ভরে উঠলো। নানাহুয়াজিনের এসব কিছুই ছিলোনা, তিনি সাধারণ খড়, আগাছা আর নিজের রক্ত দিয়েই পুজো সারলেন, ধূপ না থাকায় নিজের গায়ের চামড়া শুকিয়ে পোড়ালেন। এইভাবে দেখতে দেখতে চারদিন কেটে গেল। পরীক্ষার সময় উপস্থিত।
    লেলিহান আগুন ঘিরে দেবতারা দাঁড়ালেন, তারপর সমস্বরে আত্মাহুতির আহ্বান জানালেন। প্রথমেই এলেন টেকাসিতেকাল। কিন্তু যতই আগুনের কাছে যেতে লাগলেন, ততই আতঙ্কে তাঁর পা জড়িয়ে যেতে লাগলো। চারবারের চেষ্টাতেও যখন তিনি সফল হলেন না, তখন নানাহুয়াজিনের ডাক পড়লো। তিনি চোখ বন্ধ করে ভয়ে ভয়ে এগোলেন। আসন্ন মৃত্যুযন্ত্রণায় তাঁর মন আচ্ছন্ন, পা কাঁপছে। তবু একছুটে পৌঁছে গেলেন আগুনের কেন্দ্রে, আর দেখতে দেখতে ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে গেলেন আকাশে। এইসব দেখে লজ্জা পেয়ে টেকাসিতেকাল-ও আগুনে আত্মাহুতি দিয়ে হাওয়ায় মেলালেন, তাঁর দেখাদেখি একটা ঈগল আর একটা চিতাবাঘও তাই করলো। আগুনের তাপে ঈগলের ডানা পুড়ে কালো হল, চিতাবাঘের গায়ে চাকা চাকা দাগ হল।
    তারপর একসময় আগুনের আঁচ কমে এলো। চারদিক আবার আবছা অন্ধকারে ঢেকে গেল। ততক্ষণে রাত শেষ হয়ে এসেছে। দেবতারা উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন।
    বেশ কিছুক্ষণ পরে, পুবের দিক লাল করে বিশাল এক রক্তগোলকের মত নানাহুয়াজিনের উদয় হল। তাঁর তেজে দেবতাদের চোখ ঝলসে গেল। তাঁর নতুন নাম হল টোনাতিয়া, সূর্য্যদেবতা। কিন্তু কি মুশকিল! একটু পরে টেকাসিতেকাল-ও এসে উপস্থিত। দেবতারা তো রেগেই আগুন। কিন্তু বিস্তর ভয় দেখিয়েও টেকাসিতেকালকে থামানো গেলনা। তিনি দ্বিতীয় সূর্য্য হয়ে শত্রুতা শুরু করলেন। তখন দেবতাদের মধ্যে একজন একটা খরগোশ ধরে ছুঁড়ে মারলেন টেকাসিতেকালকে লক্ষ্য করে। খরগোশটা তাঁর গায়ে লেপ্টে গিয়ে টেকাসিতেকালের আলোর তেজ কমিয়ে দিলো। তখন তিনি চাঁদ হয়ে রাতের শিফটে চলে এলেন। সেইজন্য এখনো চাঁদ উঠলে সবথেকে আগে দেখা যায় খরগোশের পায়ের ছাপ, আর খরগোশ শিকারীদের সুবিধে হয়।
    ওদিকে আবারো মহা গোলমাল বেঁধেছে। নানাহুয়াজিন ঠায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। তাঁকে নড়তে বলায় তিনি সমস্ত দেবতাদের রক্ত আর কলজে দাবী করলেন। তখন দেবতাদের আদেশে শুকতারা খানিক যুদ্ধ করলো তাঁর সাথে, কিন্তু সে পেরে উঠবে কেন? উল্টে তার আলো-টালো কমে গিয়ে সে বরফ হয়ে গেল। সেই থেকে শুকতারা উঠলেই পৃথিবীতে শীতল হয়।
    কোনভাবেই নানাহুয়াজিন বা টোনাতিয়াকে ঠেকানো গেলনা। তখন সমস্ত দেবতারা মৃত্যুবরণ করলেন। আর তাঁদের সব গয়নাগাঁটি, অস্ত্রশস্ত্র মানুষদের দিয়ে দেওয়া হল, যা সেই থেকে মন্দিরে পূজিত হয়ে আসছে।
    রক্ত আর প্রাণের বলিতে সন্তুষ্ট হয়ে টোনাতিয়া আকাশপথে চলমান হলেন। সূচনা হল পঞ্চম যুগের, যা এখনো চলছে।
    **********************************

  • Tim | 204.111.134.55 | ২০ আগস্ট ২০০৭ ১০:২১389451
  • মুখবদলের জন্য সাইবেরিয়ার কটা গল্প বলি।
    (১)
    চার ছেলেমেয়ে তাদের মায়ের সাথে ছোট এক কুটিরে বাস করতো। স্বামী না থাকায় ঐ মহিলাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। তিনিই মাছ ধরতেন, রান্না করতেন, ঘর পরিষ্কার করতেন, আবার পশুর চামড়া ছাড়িয়ে রোদে শুকোতেও দিতেন। ওদিকে ঐ ছেলেমেয়েগুলো ছিলো বড় পাজি ও অবাধ্য। তারা তাদের মাকে কোন সাহায্য তো করতই না, উল্টে সারাদিন বরফের মধ্যে খেলে জামাকাপড় নোংরা করে আনতো, আর সেই জামা কাচতে তাদের মায়ের অস্থিচর্মসার হয়ে যেত। মায়ের কাকুতি মিনতি তারা পাত্তাই দিতো না।
    দিনের পর দিন খাটতে খাটতে শেষে ঐ মহিলা অসুস্থ হলেন। সেদিন-ও বিচ্ছুগুলো খেলতে গেছিলো দূরের কোন একটা জায়গায়। তাদের মা সারাদিন অসুখের ঘোরে ভুল বকলেন, কতবার আধো তন্দ্রায় ওদের নাম ধরে জল চাইলেন, কিন্তু কেউ এলোনা, ওরা তখন বরফে গড়াগড়ি দিয়ে চমৎকার এক খেলায় মেতেছে। সন্ধের দিকে ছেলেমেয়েরা বাড়ি ফিরে তাদের মাকে কোথাও খুঁজে পেল না। ঘর খালি দেখে তারা বনের পথে পথে, নদীর তীরে, পাহাড়ের গুহায় তন্নতন্ন করে খুঁজলো। তাদের কান্না জড়ানো স্বর এখানে ওখানে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলো শুধু, মা'র দেখা পেল না কেউ। শেষে দেখা গেল, অনেক উঁচু দিয়ে কি যেন এক পাখী উড়ে যাচ্ছে। পাখীটা নেমে আসলে পর দেখা গেল, প্রকান্ড এক কোকিল। কিন্তু তার পায়ের একটা আঙুলে পরা তামার আংটা দেখে ছেলেমেয়েরা বুঝলো ঐটেই তাদের মা। কোকিল বসলো না সেখানে। এক ঝলক বাচ্চাদের দেখে নিয়েই সে উড়ে চললো দূরে, আর থেকে থেকে তার ডাক ভেসে আসতে লাগলো, ""চলি দূর, চলি দূর..... দেরী হল, চলি চলি""। কাঁদতে কাঁদতে ছেলেমেয়ের দল মায়ের পিছনে ছুটে চললো। দিনের পর দিন ছুটতে ছুটতে তাদের পায়ের রক্তে পথ ভাসলো, আকাশেও সেই রঙের ছোঁয়া লেগে চারদিক বিষন্ন সোনালী আলোয় ভরে উঠলো। কিন্তু সেই মা ফিরলেন না। সেই থেকে কোনো কোকিল আর বাসা বানায় না, ছেলেমেয়েদের মানুষ করে না। আর ঐ দুষ্টু থেকে লক্ষ্মী হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের পায়ের রক্তছাপ টকটকে লাল মস হয়ে ছড়িয়ে আছে তুন্দ্রার পথেঘাটে।
    --------------
  • Tim | 204.111.134.55 | ২১ আগস্ট ২০০৭ ০৪:১৬389452
  • (২)
    এক উপজাতির সর্দারের মেয়ের ছিলো দারুণ বুদ্ধি আর সাহস। সে পোষা জন্তুর পাল নিয়ে তুষারাবৃত ধূ ধূ প্রান্তরে স্লেজ ছুটিয়ে বেড়াতো। গ্রাম থেকে অনেক দূরে তাঁবু খাটিয়ে দিনের পর দিন থাকতো। তারপর খাবার ফুরিয়ে গেলে, শীতের শুরুতে সে তার সবচাইতে প্রিয় লাল টকটকে হরিণটা নিয়ে বাড়ি ফিরত। এখন, এই মেয়ের গায়ের রং ছিলো জ্যোৎস্নার মত। এই দেখে একদিন পুন্নিমের রাতে চাঁদের ভারি ভালো লেগে গেল তাকে। নিজের রূপোর স্লেজে চড়ে রাতের বুক চিরে চলতে চলতে চাঁদ ভাবলো, এই মেয়েই আমার উপযুক্ত কনে। এরেই বিয়ে করব।
    যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তক্ষুনি সে নেমে এলো মেয়েটির খোঁজে।
    মেয়েটা তখন তখন তার হরিণের পিঠে চেপে চাঁদের আলোয় বেড়াচ্ছিলো। চাঁদকে নেমে আসতে দেখেই তার মতলব বুঝে নিয়ে হরিণটা বরফের মধ্যে একটা গভীর গর্ত খুঁড়ে সেখানে মেয়েটিকে লুকিয়ে রাখলো। বরফ চাপা দিয়ে গর্তটা বুজিয়ে ফেলতে না ফেলতেই চাঁদ এসে হাজির। কিন্তু কোথায় কি! চারদিক দিনের আলোর মত পরিস্কার। শুধু একটা লালচে হরিণ চরে বেড়াচ্ছে। অনেক খুঁজেও সেখানে মেয়েটিকে না পেয়ে চাঁদ অন্যদিকে চলে গেল। আর অমনি হরিণটা বরফ সরিয়ে বের করে আনলো তার মালকিনকে। ঝড়ের বেগে দৌড়ে হরিণ তাদের তাঁবুতে পৌঁছালো। কিন্তু মেয়েটি আগে থেকেই জানতো চাঁদ আবার আসবে, এবার একেবারে তাঁবুতেই এসে খুঁজবে ওকে। তখন দুজনে মিলে ভাবতে বসলো।
    হরিণটা বলল সে ইচ্ছে করলে তার মনিবকে যা খুশি বানিয়ে দিতে পারে, হাতুড়ি, তাঁবুর খুঁটি বা একগাছি চুল, যা বলবে তাই। কিন্তু মেয়েটির এইসব হতে ইচ্ছে ছিলোনা। সে বলল, আমাকে একটা ছোট্ট প্রদীপ করে দে। তাতেই হবে। বলামাত্র সে একটা ছোট্ট সুন্দর প্রদীপ হয়ে আলো দিতে শুরু করলো।
    যথারীতি চাঁদ এলো গভীর রাতে। সে আঁতিপাতি করে খুঁজলো সারা তাঁবু, কিন্তু কিচ্ছু পেলনা। শেষে হতাশ হয়ে সে যখন বেড়িয়ে গিয়ে স্লেজে উঠবে, ঠিক তক্ষুনি তাঁবুর মধ্যে থেকে কে যেন হেসে উঠলো। তারপর রিনরিনে গলায় বলল, "" এই যে, এই যে আমি""। একদৌড়ে চাঁদ তাঁবুতে এসে ঢুকলো। আবার একপ্রস্থ খোঁজ। আবার ব্যর্থতা। এইভাবে চলতেই থাকলো খেলাটা। ওদিকে রাত যত ফুরিয়ে আসতে লাগলো, ততই চাঁদের হাত-পা অবশ হয়ে আসতে লাগলো। মেয়েটিও জানতো যে রাত পোহালে চাঁদ দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই আরো কিছুক্ষণ পরে, যখন চাঁদ প্রায় অবসন্ন হয়ে পড়েছে, তখন মেয়েটির নিজমূর্তি ধরলো। তারপর একটা মোটা কাছি দিয়ে আচ্ছাসে চাঁদকে বেঁধে, কটমট করে তার দিকে চেয়ে বলল, ""এইবার??""
    চাঁদের তো ততক্ষণে অবস্থা খারাপ। কোনমতে চিঁ চিঁ করে সে অনেক কাকুতি মিনতি করলো, একা একা রাতের আকাশে ঘুরে বেড়ায়, তার বাড়ি নেই, দেখাশুনো করার কেউ নেই, এইসব দু:খের কথা। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না দেখে সে বলল, "" দয়া করে আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমার জন্য দিন গুণে দেবো, তোমাদের দিনের হিসেব নিয়ে এত অসুবিধে, এরপর থেকে আমি গুনেগেঁথে দিন-হপ্তা-মাস-বছর সব বানিয়ে দেবো। শুধু এইবারটির মত মাফ করে দাও।"" এতক্ষণে দয়া হল মেয়েটির। চাঁদ ছাড়া পেল। ততক্ষণে সকাল হয়ে গেছে। কোনক্রমে কাঁপতে কাঁপতে চাঁদ ফিরে গেল। সে তার কথা রেখেছিলো। সেই থেকে সময়ের হিসেব শিখে গেল মানুষ। আর রাতের পর রাত আলো জ্বেলে কৃতজ্ঞচিত্তে ছুটতে লাগলো চাঁদের ঝলমলে রূপোর স্লেজ ।
    -----------------
  • Tim | 204.111.134.55 | ২১ আগস্ট ২০০৭ ১৩:০০389453
  • (৩)
    অনেক অনেক দিন আগেকার কথা। সুয্যিমামা তখন নিয়ম করে তুন্দ্রায় আলো ফেলেন। রাতে তাঁর বোন চাঁদ জ্যোৎস্নায় ভাসিয়ে দেয় চরাচর। একদিন সূর্য তাঁর বোনকে পাঠালেন পৃথিবী থেকে কিছু বেরি তুলে আনার জন্য। চাঁদ তো ভারি খুশি। তক্ষুনি সে আকাশ বেয়ে টুপ করে নেমে এলো মাটিতে, তার হালকা পদক্ষেপে একটা ঘাসও নুয়ে পড়লো না। নেমেই তার সাথে দেখা হয়ে গেল শ্রীমতি কাক্কিনির। এই মধুরস্বভাবা কাকটির সাথে তার বন্ধুত্ব হতে দেরি হল না। দুজনে মিলে অনেক ফল কুড়োলো সারাদিন ধরে।
    এত পরিশ্রম চাঁদ কোনদিন করেনি। আকাশের পথে পথে আরামে হালকা পায়ে ঘুরে বেড়ানো, আর মাটিতে খেটেখুটে ফল কুড়োনো তো আর এক জিনিস না, তাই সে ক্লান্ত হয়ে ঘাসের ওপর ঘুমিয়েই পড়লো।
    ঘুমন্ত চাঁদকে একদৃষ্টে দেখতে দেখতে কাক্কিনি ভাবলো, "" তাইতো! এ তো অনায়াসে আমার ভাইয়ের কনে হতে পারে।"" পরের দিন কাক তার সদ্যলব্ধ বান্ধবীকে নিজের বাড়ি নিয়ে চলল। সেখানে তো কাক্কিনির ভাই চাঁদকে একবার দেখে আর চোখই ফেরাতে পারে না। রাতের বেলা ভাইবোনে পরামর্শ করে ঠিক হল, পরের দিন ভোরে বেরি কুড়োতে যাওয়ার সময় বোনের বদলে ছদ্মবেশী ভাই চাঁদকে সঙ্গ দেবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। পরেরদিন সক্কাল সক্কাল উঠে ভাই দিদির বাদামী চামড়াটা জড়িয়ে তৈরী হয়ে রইলো। তারপর দুজন মিলে চললো বনের পথে, ফল কুড়োতে। আগেরদিনের মতই চাঁদ আবার ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো দিনের শেষে। অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে উঠে সে দেখলো, তার আশেপাশে কেউ নেই। শুধু একটা ভারি সুন্দর দেখতে ছুরি পড়ে আছে পাশে। ছুরিটা জামার মধ্যে লুকিয়ে ফেলে সে খানিকক্ষণ এদিক সেদিক কাককে খুঁজে হতাশ হয়ে ফিরতি যাত্রা শুরু করলো। দাদা সূর্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আছে, দেরি হলে বকা খাবে।
    কিন্তু সবে কিছুটা উড়েছে আকাশপথে, অমনি তার জামার ভাঁজ খুলে ছুরিটা নিচে পড়ে গেল। তারপর তাকে আরো অবাক করে দিয়ে সেটা উড়তে শুরু করে ধীরে ধীরে চাঁদের পাশে এসে পৌঁছোলো। তখন দেখা গেল এ আর কেউ নয়, সেই কাক্কিনির ভাই। সে বেশি সময় নষ্ট না করে সোজাসুজি প্রেম নিবেদন করে জানালো চাঁদ যেন তাকে সাথে করে নিয়ে যায়। কিন্তু তা হওয়ার জো নেই, কারণ সূর্যের প্রখর তেজে সেখানে পৌঁছোবার অনেক আগেই কাক পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
    তাই চাঁদের আর ফেরা হল না। সে পৃথিবীতে থেকে গিয়ে কাকের সাথে ঘর বাঁধলো। তারপর অল্পদিনেই তাদের ফুটফুটে এক ছানা হল। ওদিকে অনেকদিন অপেক্ষা করে করে সুর্যের ক্রমে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলো। তিনি রেগে দ্বিগুণ তেজে জ্বলতে লাগলেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা ছোট্ট ছোট্ট রশ্মি হয়ে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ঘুরে ঘুরে তাদের পিসিকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু চাঁদকে কোথাও পাওয়া গেল না। তখন সূর্য নিজে মাটিতে নেমে এলেন। পুরো তুন্দ্রা অঞ্চল তাঁর তেজে ঝলসে উঠলো। প্রতিটি গুহাকন্দর, জলাশয়ের প্রতিটি অংশ স্পষ্ট দেখা যেতে লাগলো। শেষে আলো পড়লো কাকের কুটিরেও। এবং এক পলকেই চাঁদ ধরা পড়ে গেল। সূর্য বোনের কোন অজুহাতই শুনলেন না। তখন কাক রুখে দাঁড়ালো। তুমুল তর্ক করেও বোঝা গেল না কার অধিকার বেশি, ভাইয়ের, না স্বামীর। তখন একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হল।

  • Tim | 204.111.134.55 | ২১ আগস্ট ২০০৭ ১৩:৩০389455
  • ঠিক হল, দুপক্ষই একদল করে দক্ষ তাঁতি নিয়োগ করবে। যার দল সবথেকে তাড়াতাড়ি একসেট পোষাক বানিয়ে দিতে পারবে, সেই জয়ী। কাকের দলে এল শ্রীমতি কাঠবিড়ালি, আরমিন, ভোঁদর আর ভালুক। সূর্য ডাকলেন শ্রীমতি ইঁদুর, গফার, শেয়াল আর নেকড়েকে। দুদলকেই একদফা করে হরিণের চামড়া দেয়া হল। তারপর শুরু হল সেলাই। চতুর কাক বেছে বেছে সেরা সেলাইকারদের নিয়েছিলো, তাই সূর্যের দল গো-হারা হেরে গেল। তখন মরিয়া হয়ে সুয্যিমামা বাঁকা পথ ধরলেন। একদল রশ্মি পাঠিয়ে নিয়ে আসা হল স্ফটিকসুন্দরীকে। কাককে প্রস্তাব দেওয়া হল, সে যদি চাঁদকে ছেহে দেয়, তাহলে তাকে ঐ পরমাসুন্দরীর সাথে বিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কাক রাজি হল না। তখন সূর্যের রশ্মিদল গিয়ে ধরে আনলো তুষারসুন্দরীকে। এইবার কাকের সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। স্ফটিক আর তুষার দুজনের সাথেই বিয়ে হয়ে গেল কাকের। বোন আর আদরের বোনপোকে নিয়ে সূর্য রওনা দিলেন। সূর্য চলে যাওয়ার পরেই কাক নিজের ভুল বুঝতে পারলো যখন সূর্যরশ্মি ছাড়া স্ফটিক আর তুষার নিজেদের সৌন্দর্য হারালো। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওদিকে সূর্য কোন ঝুঁকি নিলেন না। একের পর এক দেশ পেরিয়ে সুদূর দক্ষিণে চলে গেলেন তাঁর বোনকে নিয়ে। সেই থেকে তুন্দ্রায় শীতকাল এত দীর্ঘ। বছরের বেশিরভাগ সময় তাই এখানে আঁধার আর কনকনে ঠান্ডার রাজত্ব চলে।
    -------------
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন