এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • ছোটদের জন্য অনুবাদ

    Paramita
    বইপত্তর | ২৪ নভেম্বর ২০০৮ | ১৪৩৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sayan | 160.83.72.211 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৮ ২০:৪৩404740
  • এটা কি এখানেই শেষ না আরও আছে?
  • rimi | 168.26.215.135 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৮ ২১:০৯404741
  • সেদিন রাতে দোকান বন্ধ করে মুদী চলে যাওয়ার পরে গবলিন দরজার ফুটো দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে সোজা চলে চিলেকোঠায়। অবশ্য যাবার আগে সে মাখন খেয়ে যেতে ভোলে নি! যাই হোক, চিলেকোঠায় ছাত্রটির ঘরের বন্ধ দরজার ফুটোয় গবলিন চোখ রাখল। কি আশ্চর্য্য ব্যপার! মোমের অল্প আলোয় ছাত্রটি সেই পুরোনো বইটা খুলে পড়ছে - কবিতা। আর সঙ্গে সঙ্গে আধো অন্ধকার ঘরের মধ্যে ফুটে উঠছে অদ্ভুত সুন্দর ছবি -ফুলে ভরা সবুজ সতেজ এক গাছ, গাছের ডালে বসে একটা ছোট্টো পাখি গান গাইছে, গানের সুরে চারিদিক ভরে গেছে। গবলিন সবকিছু ভুলে মুগ্‌ধ হয়ে শুনতে লাগল। এত সুন্দর কোনোকিছু সে আগে কখনো দেখে নি, কখনো শোনে নি। ছাত্রটি পড়া শেষ করে যখন বইটা বন্ধ করল, ধীরে ধীরে সেই গাছে, সেই পাখি, সেই সুর মিলিয়ে গেল। গবলিনের এত ভালো লাগছিল যে সে ভাবল এখন থেকে সে ছাত্রটির সঙ্গে এই চিলেকোঠাতেই থাকবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার মনে পড়ল মাখনের কথা। না: মাখন ছেড়ে বাঁচা কি করে সম্ভব...? গবলিন চটপট চিলেকোঠা থেকে নেমে এসে তার প্রিয় প্যাকিং বাক্সের মধ্যে ঢুকে মাখনের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে ঘুমিয়ে পড়ল আরামে।

    পরেরদিন গবলিনের ঘুম ভাঙতেই অন্য দিনের মতনই প্রথমেই তার মনে পড়ল মাখনের কথা। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রটির সেই অদ্ভুত বইএর কথাও মনে পড়ল। সারাদিন সে অপেক্ষা করে রইল কখন রাত আসবে। রাতে মুদী দোকান বন্ধ করে চলে যেতেই গবলিন চটপট মাখন খেয়ে সোজা চলে গেল চিলেকোঠায়, কবিতা শুনতে। আজও সেই সুন্দর দৃশ্য, সুন্দর সুর। প্রাণ ভরে কবিতা শুনে গবলিন নিচে নেমে এসে প্যাকিং বাক্সে শুয়ে শুয়ে ভাবল - জীবনটা একটু অন্যরকম হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু এও কম চমৎকার নয়! মাখনও আছে, আবার কবিতাও আছে!

    এমনি করেই দিন কাটে। মুদী সারাদিন জিনিষপত্র বিক্রি করে, মাখন ওজন করে। আর রাতে ক্যাশবাক্স বের করে টাকা গোণে। ছাত্রটি সারাদিন আধপেটা খেয়ে পড়াশুনা করে, আর রাত্রে সেই পুরোনো ছেঁড়া বই থেকে কবিতা পরে। গবলিন রাতে মাখন খেয়ে ছাত্রের কবিতা শোনে, আর সারাদিন ধরে আনন্দে থাকে।
  • rimi | 168.26.215.135 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৮ ২১:২২404742
  • একদিন গভীর রাতে, যখন মুদী টাকা গোণা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছে, ছাত্র কবিতা পড়া শেষ করে ঘুমিয়েছে, এমন কি গবলিনও প্যাকিং বাক্সে শুয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে, হঠাৎ মুদীর বাড়ির একটা ঘর থেকে গল গল করে আগুন আর ধোঁয়া বেরতে লাগল। "আগুন আগুন" বলে কারা চিৎকার করতে লাগল। ঘুম ভেঙে গবলিন তড়াক করে উঠে বাইরে বেরিয়ে এল। মুদী তখন তার ক্যাশবাক্স দু হাতে জড়িয়ে বাড়ি থেকে তখন পালাচ্ছে। মুদীর বৌও দৌড়চ্ছে, হাতে তার গয়নার বাক্স। যে যার সবচেয়ে মুল্যবাণ সম্পত্তি আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যস্ত। আমাদের ছোট্টো গবলিন কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে সোজা উঠে গেল চিলেকোঠায়। সেখানে ছাত্রটি তখনও ঘুমোচ্ছিল। আর ভাঙা টেবিলের উপরে পড়ে ছিল সেই ছেঁড়া পুরোনো বই। গবলিন তাড়াতাড়ি সেই বইটা হাতে নিয়ে ছাত্রটির ঘরের জানলা দিয়ে উড়ে চলে গেল পাশের বাড়ির ছাতে, যেখানে আগুন নেই। যাবার সময়ে ছাত্রটিকে জাগিয়ে দিয়ে যেতে ভোলে নি সে।

    ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজিয়ে দমকলের লোক এল। আগুন নিভল। ক্যাশবাক্স হাতে মুদী আর গয়নার বাক্স হাতে মুদীর বৌ হাসি হাসি মুখে ফিরে এল। গবলিনও বইটা নিয়ে চিলেকোঠায় ফিরে এসে যত্ন করে টেবিলের উপরে বইটা রাখল। তার মুখেও হাসি। কেননা এই বাড়ির সবথেকে মুল্যবাণ জিনিসটি সে রক্ষা করতে পেরেছে।
  • kali | 160.36.241.16 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ০০:৪৪404743
  • রিমির লেখার হাত চমৎকার। গল্পটাও খুব ভালো।
  • sayan | 160.83.72.211 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ০০:৪৯404744
  • আজ থেকে গবলিন আমার বন্ধুভূত হল।
  • Blank | 59.93.247.102 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ০১:০৫404745
  • আমি গবলিন পুষতে চাই
  • sayan | 160.83.72.211 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ০১:২৪404746
  • না গবলিন আমার পুষ্যি। তোর কাছে তো শুঁড়োলা মোষ আছে!
  • Blank | 59.93.247.102 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ০১:৩৫404747
  • আচ্ছা ফিফটি ফিফটি
  • aja | 71.106.244.161 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ২২:২৬404748
  • কার কাছে গবলিনের মুড়ো, কার কাছে ন্যাজা?
  • Binary | 24.66.94.142 | ০৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ১০:৫৫404567
  • গবলিনের আবার মুড়ো-ন্যাজা কি ? গবলিন তো অ্যামিবা-র মতো।
  • sayan | 24.0.145.33 | ০৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ১৩:০২404568
  • সাইটোপ্লাজম ব্ল্যাঙ্কি'র। নিউক্লিয়াস আমার।
  • kS | 122.170.17.190 | ০৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ১৩:৩০404569
  • আজ পড়লাম গবলিনের গল্প। দারুন সুন্দর, মাখনের মতই। রিমি খুব যত্ন করে লিখেছে। গল্পটি কোন বইয়ের? কার লেখা?
  • d | 117.195.36.32 | ০৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ১৩:৩৪404570
  • গবলিনের গল্পটা হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের লেখা।
  • san | 123.201.53.144 | ০৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ১৩:৩৯404571
  • আমাকেও একটা গবলিন দেওয়া হোক।
  • kS | 122.170.17.190 | ০৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ১৩:৪১404572
  • ঠিক, ঠিক, গল্পের গোড়াতেই লিখে দিয়া ছিল, ভুলে গেছিলাম :)
  • kS | 122.170.22.193 | ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ ১২:৫৮404573
  • আর গল্প কই?? এই সুতোটা দারুণ লোভনীয় হয়ে উঠছিলো
  • P | 78.16.187.217 | ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ ১৯:২৪404574
  • অনেকদিন পর একটা মন ভালো করা টই। ছোটো শহরে বড় হয়ে বিদেশী গপ্প এত কম পড়েছি , গুরুতে যখন ভস্তক ইত্যাদির বই নিয়ে গপ্প হয় তখন খুব মন খারাপ হয় , ছোটোবেলায় হাতে পাই নি বলে। এ টই খানিকটা হলেও সে দু:খ মেটাচ্ছে বই কি।

    অনেক ধন্যযোগ , রিমি।ঝরঝরে অনুবাদ আপনার । শুধু একটা পাকামি , রিভকার গপ্পে ওগুলো সব রাব্বি বদলে র‌্যাবাই হবে না ?

    গল্প চলুক। মামু এগুলোকে আলাদা করে রাখলে আরো ভালো হয়। টই ভীড়ে হারিয়ে না যায়।
  • rabaahoota | 121.241.109.13 | ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ ২০:১১404576
  • ও হ্যাঁ, ফ্ল্যাশ এ তৈরি... আর প্রোফেশনালি মানে, আমি ডিজাইনার, তবে animator নই।
  • sayan | 160.83.72.211 | ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ ২০:৪২404578
  • দিব্যি হয়েছে। আরেকটু গোলগাল ভূত হলে ভালো হত। আমার নিজস্ব মত।
  • rimi | 168.26.215.135 | ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ ২১:২৯404579
  • হা:হা:হা: দিব্বি হয়েছে। আচ্ছা, আরেকটু সময় পেলে আমিও একখান গবলিন নামাবো। কিন্তু হায় আমার এখন কেবল মিটিন আর পরীক্ষা :-((

    রবাহূতো, আপনার সঙ্গে কি কিছু কথা বলা সম্ভব?

    পি, অনেক ধন্যবাদ। হ্যাঁ, অ্যামেরিকায় র‌্যাবাইই বলে লোকে। আমারই ভুল। :-))
  • rabaahoota | 121.241.109.13 | ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ ২১:৩৬404580
  • হুঁ, সম্ভব! আমি টই পড়ি নিয়মিত, ভাট মাঝে মধ্যে, আর মেল আইডি kb.sayan, জি মেল
  • Binary | 198.169.6.69 | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৮ ২১:৪৯404581
  • আরেট্টা বলি। এও রাশান বই-এর। তবে, অরিজিনাল অনুবাদটা মনে নেই।

    খরগোস বেড়াতে বেরিয়েছে। রাস্তায় দেখা সজারুর সাথে।
    -- 'চল বেড়িয়ে আসি গে' বললে খরগোস
    -- 'তা চল' বললে সজারু
    চলেছে তারা, রাস্তায় দেখে একটা ভাঙ্গা গাছের ডাল। সজারু সেটাকে পরিস্কার করে লাঠি বানায়। খরগোস ঠাট্টা করে বলে --
    -- 'হেই কাঁটা মাথা, ওটা দিয়ে কি হবে রে ?'
    -- 'এটা যে সে লাঠি নয়, এ হল, জাদু লাঠি, বিপদ-তারণ-পাঁচন'। বলে সজারু। হে হে করে হাসে খরগোস।
    চলেছে তারা। চলতে চলতে পথে চোরাবালি। খরগোস চলে লাফিয়ে লাফিয়ে, সজারু চলে লাঠি ঠুকে ঠুকে, মাটি পরখ করে করে। ঠাট্টা করে খরগোস। তারপর, ঝপাং করে পরে চোরাবালিতে।
    -- 'বাচাঁও বাচাঁও', বলে খরগোস। আর সজারু লাঠি এগিয়ে দেয়। লাঠি ধরে কোনোরকমে উপরে ওঠে খরগোস। হাঁপায়। আর সজারু বলে,
    -- 'হুঁ হুঁ বাবা, যে সে লাঠি নয়, এ হল 'বিপদ তারণ পাঁচন,লাঠি ধরে বাঁচন'"।
    আবার চলেছে তারা। হঠাৎ দেখে তেড়ে আসছে হুমদো ভালুক। সজারু উঠে পরে ওকগাছের ডালে, তারপর লাঠি এগিয়ে দেয় খরগোসের দিকে। লাঠি ধরে ওকগাছে ওঠে খরগোস। ভালুক ফিরে যায়, আর গাছ থেকে নেমে সজারু বলে,
    -- 'হুঁ হুঁ বাবা, যে সে লাঠি নয়, এ হল 'বিপদ তারণ পাঁচন,গাছে উঠে বাঁচন'"।
    আবার চলেছে তারা। আর ঝোপের ধারে ওৎ পেতে আছে নেকড়ে। ঝাঁপিয়ে পরে খরগোসের উপর। খরগোস, ঠ্‌ক্‌ঠ্‌ক করে কাঁপে, ভয়ে। আর সজারু, লাঠি বাগিয়ে, দমাদ্দম লাগায় নেকড়ের পিঠে। লাঠি খেয়ে খরগোসকে ছেড়ে দিয়ে, নেকড়ে পালায়। আর সজারু বলে,
    -- 'হুঁ হুঁ বাবা, যে সে লাঠি নয়, এ হল 'বিপদ তারণ পাঁচন,লাঠির ঘায়ে বাঁচন'"।
    তারপর খরগোস আর সজারু বাড়ি ফেরে। 'চলি রে', বলে সজারু, টা টা করে খরগোস। আর সজারু লাঠিটা ফেলে দেয় জঙ্গলে। খরগোস বলে,
    --'আরে লাঠিটা ফেলে দিলি ? এটাতো জাদু লাঠি, বিপদ-তারণ-পাঁচন !!'
    মুচকি হেসে চলে যায় সজারু। আর খরগোস ভাবে, 'সত্যি তো, লাঠিতে আর কি জাদু, আসল জাদু তো বুদ্ধিমন্ত মাথা আর দয়াবন্ত বুক'

  • kS | 122.169.12.25 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১১:৩৪404582
  • এটা তুলে দেবার লোভ সামলানো গেলো না, আমার পরিচিত এক কবির লেখা কয়েক লাইন।

    আদ্যিকালের গল্পকথা, মাটির ছাঁচে গড়া
    কী যেন এক মাধুর্যরস ভরা-

    ভূত-প্রেত বা দত্যি দানো, অযথা আজগুবি,
    তবু সে সব ভালোলাগার রোমাঞ্চকর ছবি

    আজকে নিপুণ কারিগরীর যুগে
    হয়তো এদের দাম কমেছে,
    আছড়ে পড়া পশ্চিমী হুজুগে

    তবু তারা চিরদিনের ধন,
    ফিরে ফিরে জানায় শিশুর মন।

    - অনিন্দ্য
  • shrabani | 124.30.233.101 | ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১২:২৬404583
  • ফাঁকা অফিসে ও গুরুতে বসে বসে ছোটোবেলায় বড়দিদার একটা গল্প মনে হল তাতে ছড়ার মত দুলাইন সুর করে করে দিদা যখন শোনাত, ঘুমের ঘোরে কি যে মিষ্টি লাগত!
    আমি খুব বেশী বাংলা ছোটোদের বই পড়িনি, হয়ত এটা কোনো বইয়ের প্রচলিত গল্প! তবে আমি শুনেছি দিদার কাছেই, আর সেইভাবেই মনে আছে। লিখছি এখানে, অনুবাদ নয় তবুও।

    --------------**********-------------
    অনেক কাল আগে এক গ্রামে দুই ভাইবোন থাকত। তাদের কোথাও কেউ ছিলনা, তাই তাদের খুব দু:খ। লোকালয় থেকে দুরে জঙ্গলের ধারে কোনোরকমে একটা কুঁড়ে বানিয়ে দুজনে থাকত। ভাই জঙ্গলে ঘুরে কাঠ কুড়িয়ে আনত, সেই কাঠ বিক্রি করে ভাইবোনের দিন চলত। বোন সারাদিন একা একা বাড়িতে থাকে। আশেপাশে কেউ নেই যে দুটো মনের কথা কয়। তাই সে মাঝে মাঝে কাছের জঙ্গলের থেকে ফুল ফল কুড়োতে যেত ভাইয়ের জন্য।

    একটু দুরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটা খুব সুন্দর পুকুর ছিল, টলটলে তার জল, জলে পদ্মফুল। সারাদিন কত নাম না জানা পাখিরা এসে সেই পুকুরে জল খেত। একদিন বোন জঙ্গলে ফুল তুলতে গিয়ে পথ হারিয়ে সেই পুকুরধারে গিয়ে হাজির। তার তো খুব ভাল লাগল, ফুল পাখি এইসব দেখে । এত সুন্দর মিষ্টি পুকুর সে আগে কখোনো দেখেনি। তাই জলে নেমে মনের খুশীতে পাখিদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে স্নান করতে থাকল আর পদ্মফুল তুলতে থাকল।
    এমনি করে অনেকক্ষণ কেটে গেল। বেলা অনেক হয়েছে কিন্তু মেয়ের আর খেয়ালই নেই। সে জলে খেলা করেই চলেছে। সে তো আর জানেনা যে এই পুকুরের মালিক আসলে এক বাঘ।
    অনেক পরে যেই সে জল থেকে উঠতে যাবে, ঠিক এমনি সময় বাঘমশাই এসে হাজির।
    "কে তুমি আমার পুকুরে নেমেছ? এত আস্পদ্দা। উঠে এস, এক্ষুনি তোমায় খেয়ে ফেলব।"
    বাঘ দেখে মেয়েটি তো ভয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। তবু কোনোরকমে বলে ওঠে,
    "আমি অমুকের বোন, ভুল করে এসে পড়েছি, দয়া করে এবারের মত ছেড়ে দিন বাঘমশাই।"
    বাঘ তো শোনেনা। ঘড় ঘড় ঘ্র্যাম ম ম ম.... শব্দে তর্জন গর্জন করতেই থাকে। মেয়েটি ভয় পেয়ে কাঁদতে থাকে। কান্না শুনে বাঘ একটু নরম হয় আর তখনই তার মাথায় একটা ফন্দি আসে। বাঘের বউ নেই, ছোটো ছোটো দুটি ছানা আছে। বাঘ শিকারে গেলে তাদের দেখবার লোক নেই। এইসব ভেবে বাঘ মেয়েটিকে বলে,
    "তোমায় আমি এক শর্তে বাঁচিয়ে রাখতে পারি।"
    মেয়ে তো তখন ভয়েই সারা। বেলা পড়ে এসেছে, একটু পরে অন্ধকার নেমে আসবে। তার ভাইটি ঘরে এলে কে তাকে খেতে দেবে? তাই সে বলে,
    "কি শর্ত বাঘমশাই, আপনি যা বলবেন আমি তাতেই রাজী।"
    "ঠিক তো?"
    "ঠিক ঠিক, এক্কেবারে ঠিক।"
    শর্তের কথা না শুনেই সে রাজী হয়ে যায়, ভাবে বেঁচে থাকলে তখন বাঘের কবল থেকে বেরনোর কোনো রাস্তা বার করা যাবে।
    কিন্তু শর্ত শুনে তো সে হাঁ। বাঘ তাকে বিয়ে করতে চায়। তাকে বাঘের বাড়ীতে গিয়ে থাকতে হবে, আর বাঘের দুটি ছোট্ট ছানাকে দেখাশুনা করতে হবে।
    মেয়ে তখন কি আর করে? আর তো কোনো উপায় নেই! বাঘ নাহলে হয়ত তাকে মেরেই ফেলবে। তাই সে ভাবে, তার চেয়ে এখন বাঘকে বিয়ে করে বাঘের বাড়ী যাওয়া যাক, পরে বাঘ যখন থাকবেনা সুযোগমত তখন পালিয়ে গেলেই হবে।

  • shrabani | 124.30.233.101 | ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১২:৩২404584
  • সেইমত বোনটি বাঘকে বিয়ে করে তার সঙ্গে গভীর জঙ্গলে তার বাড়ী যায়। বাঘের বাড়ীতে অভাব কিছু নেই। রান্না বান্না করে, ছানাদের আর বাঘকে খেতে দেয়। এমনি করেই দিন কাটে। বাঘ রোজ শিকারে যায়। তার ছানারা খেলতে যায়। তখন মেয়েটি একা বসে ভাইয়ের কথা ভেবে কাঁদে। কিন্তু কি ভাবে পালিয়ে বাড়ী যাবে বুঝতে পারেনা। এই গভীর জঙ্গলে, সে বাড়ীর রাস্তাই খুঁজে পাবেনা। আর এসব হল বাঘের এলাকা, বাঘ তাকে সহজেই আবার ধরে ফেলবে!

    এদিকে ভাই তো ঘরে এসে দেখেছে বোন নেই। সে চারিদিক তন্ন তন্ন করে খোঁজে, বোনকে আর পায়না। দিন যায়, ভাই কাজকম্ম ছেড়ে বোনকে খুঁজে বেড়ায় এ গ্রাম ও গ্রাম, জঙ্গল, চারধারে। এইভাবে খুঁজতে খুঁজতে একদিন সে গভীর জঙ্গলে চলে যায়। ক্লান্ত হয়ে একটা গাছের নীচে বসেছে, এমন সময় দেখে দুরে রান্নার ধোঁয়া উঠছে। এই জঙ্গলে আবার কে রান্না করছে!
    ধোঁয়া টা লক্ষ্য করে কিছুদুর গিয়ে দেখে একটা বাড়ি। বাড়ির দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে তার বোন বেরিয়ে আসে। দুজনে দুজনকে দেখে তাদের আনন্দ আর ধরেনা। বোন দেখে, না খেয়ে দেয়ে ঘুরে ঘুরে ভাইয়ের মুখ শুকিয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ভাইকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে যত্ন করে চান করিয়ে ভাত খেতে দেয়।
    খাওয়াদাওয়ার পরে সে সব কথা খুলে ভাইকে বলে। ভাই শুনে তো রেগে আগুন, তক্ষুনি বাঘ কে মেরে ফেলতে ছোটে আর কি! বোন কোনোরকমে তাকে আটকায়।

    বাঘের ছানা দুটি খেলতে গিয়েছিল, তারা বাড়ী ফিরে ভাই কে দেখে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে,
    " এ কে মা?"
    মেয়েটি বলে,
    "এ আমার ভাই, তোদের মামা।"
    সন্ধ্যে হয়ে এল, বাঘের ঘরে ফেরার সময় হয়ে গেল। বোন ভাবে, বাঘ এসে ভাইকে দেখলে তাদের দুজনকেই মেরে ফেলবে। আর তার আগে যদি দুজনে পালাতে যায়, বাঘ ঠিক ওদের ধরে ফেলবে। বাঘ খুব জোরে দৌড়তে পারে তো তাই বাঘের সঙ্গে দৌড়ে পালিয়ে ওরা পেরে উঠবেনা। এই সব ভাবনার মাঝে বোনের চোখ পড়ে উঠোনে খোঁড়া একটা গর্তর দিকে। অনেক ভেবেচিন্তে বোন ভাইকে সেই গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে ওপরে শিল চাপা দিয়ে লুকিয়ে ফেলে।

    একটু পরেই বাঘ বাড়ী আসে। এদিক ওদিক নাক টেনে, শুঁকে শুঁকে বলে,
    " কেমন যেন মানুষ মানুষ গন্ধ ছাড়ছে?"
    তার বউ খেতে দিতে দিতে বলে,
    "তা আমি তো মানুষই না কি? আমারই গন্ধ, আর কিসের গন্ধ হবে!"
    বাঘ আর কিছু বলেনা, খেতে থাকে। বাঘের ছানারা উঠোনে খেলতে খেলতে বাঘকে বলে,

    -"বাবা গো বাবা, তোমার শালা, আমার মামা
    মায়ের সহোদর ভাই
    শিলের তলায় কুঁই কুঁই করে
    তুলে দাওনা খাই"-

    বাঘ একটু কান করে শুনে বলে,
    "কি হল ওরা কি বলছে?"
    বোন বলে,
    " ওরা তো রোজই ছড়া বানিয়ে বলতে থাকে, কে জানে আজ কি বলছে।"
    বাঘের ছানারা বলতেই থাকে,

    -"বাবা গো বাবা, তোমার শালা, আমার মামা
    মায়ের সহোদর ভাই
    শিলের তলায় কুঁই কুঁই করে
    তুলে দাওনা খাই"-

    বাঘ ছানাদের এক ধমক দেয়। তারা আর কি করে? ধমক খেয়ে চুপ করে যায়। এরপর রাতের বেলা বাঘ ঘুমোতে যায়, বোনটি তার পা টিপে দেয়। ছানারাও আর বাঘের বকুনির ভয়ে গোল করেনা। শেষে একসময় তারাও ঘুমিয়ে পড়ে।

    সবাই ঘুমিয়ে পড়লে বোন চুপিচুপি উঠোনে নেমে শিল তুলে গর্ত থেকে ভাইকে বার করে। এরপরে দুই ভাইবোনে মোটা দড়ি দিয়ে বাঘ আর তার ছানাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধে। বোন উনোনে বড় বড় ডেকচিতে জল ফোটায়। দুজনে সেই ফুটন্ত জল গায়ে ঢেলে বাঘেদের মেরে ফেলে।
    বাঘের তো অনেক সোনাদানা টাকাপয়সা ছিল যা বাঘ মানুষকে মেরে তাদের থেকে নিয়ে এসে বউকে দিত। সেইসব সোনাদানা পয়সা এখন ভাইবোনের হয়ে যায়। তারা সেসব দিয়ে গ্রামে ফিরে ভাল বাড়ী বানিয়ে সুখে শান্তিতে বাস করতে থাকে।

    -----------------********------------------
  • Arijit | 61.95.144.123 | ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১২:৩৬404585
  • টুনটুনির বইয়ে সম্ভবত আছে এই গল্পটা। মজন্তালি সরকারের আশেপাশে।

    "বাবা গো বাবা
    তোর কি শালা, মোর কি মামা
    মার কি সোদর ভাই
    শিলের তলে কুমকুম করে
    তুলে দে না খাই'

    :-)
  • shrabani | 124.30.233.101 | ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১২:৪৩404586
  • তাই হবে! আমার ছোটোবেলার বাংলা গল্প দিদাদের কাছে শোনাই বেশী, নিজে পড়ার অভিজ্ঞতা কম! এও দেখেছি একই গল্প একেকজনের মুখে একেকরকম!:)
  • Arijit | 61.95.144.123 | ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১২:৫২404587
  • এখন খুঁজে পেতে পড়ে ফেলো - স্পেশ্যালি ওই রাশান বইগুলো যদি পাও। আমি এই সেদিনও পেনসিল ও সর্বকর্মা পড়লুম...:-))
  • shrabani | 124.30.233.101 | ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১২:৫৭404589
  • রাশান এর ইংরেজী অনুবাদের অনেককটা আমার ছিল। তুমি কি বাংলার কথা বলছ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন