এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • ভাঙা প্রেম

    Paramita
    নাটক | ১৩ জুন ২০০৯ | ৩৬৩০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dipu | 207.179.11.216 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ০৯:৫৯416920
  • ৯০-৯১ এ রোকেয়া সদ্য প্যান্ট পরতে শিখেছে, মাঝে মাঝেই খুলে ফেলে। ওর জন্যি মাসিই ঠিক আছে।
  • raatri | 59.93.162.0 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ১১:০৬416921
  • মন দিয়ে পড়ছে না কেউ?একটা কম্বিনেশন বাদ গেল কি করে?
    চ) বিভাস-ওর বাবার বন্ধুর মেয়ে,যে কলকাতা চেনে না
  • P | 163.244.62.141 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ১৫:০৩416922
  • এদ্দিন পরে এসে টই এ এত হুল্লোড় দেখে ঢুলে পল্লুম। ইস্‌স কি জিনিষ মিস কচ্ছিলুম !
    তেকোনা আপনি তো হেব্বি লেখেন , হুল্লাট হচ্ছে।

    আর এই যে নিতাই আর পাই , এমন শিরশিরোনো প্রেমের মধ্যে এইসান খিল্লি ?? ভাল্লাগে না মাইরী :-))))))
  • UM | 115.118.194.50 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ১৭:৫৪416923
  • নাম বলবো না কি আর কিছু বলবে না?

    তেকোনা লেখা অসাধারন ফেলে আশা সময় মনে পরিয়ে দেয়
  • T | 203.101.108.91 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ১৮:২০416924
  • আমার ভোট-ও ঐ রাত্রির দেওয়া "চ" option-এই।
    ওফ, রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছি, এর পর কি হয়!
  • a x | 143.111.22.23 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ২১:২৫416925
  • তেকোনা প্রেম টেঁ কে না :-)

    দ, একদম ঠিক, তেকোনা পুরো সিরিয়ালের সাস্পেন্স মেন্টেন করে প্রতি কিস্তি শেষ করছেন! :-) তবে এই প্রেমের গল্পের চেয়েও তেকোনার লেখায় যে ছোট ছোট ডিটেলগুলো আসে, সেগুলো পড়তে খুব ভালো লাগছে।
  • Samik | 219.64.11.35 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ২১:৩২416926
  • স্মৃতি সততই ইয়ে ...

    কিন্তু তেকোনা কি আজ সত্যিই লিখবে না? ওর পাকাচুলগুলো তা হলে ...
  • d | 117.195.35.34 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ২১:৩৯416927
  • ঠিক অক্ষ। ঐ একটু করে বড় হয়ে যাওয়া। "বড় হয়ে গেছি' এইটা অনুভব করা, আরও সাদা, কালো, ধুসর ডিটেলগুলোই দুর্দান্ত। আর সেখানেই এইটা আর পাঁচটা গল্পের চেয়ে আলাদা হয়ে গেছে।
  • Tim | 198.82.29.162 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ২২:৪৮416928
  • তেকোনা লেখেনা ক্যান?
  • tkn | 122.161.164.238 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ২২:৫৫416930
  • এই তো ও... এতক্ষণে বসার সময় পেলাম :-) এবার... শমীক :-(
  • Samik | 122.162.236.217 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ২৩:১৩416931
  • না না, আমি কিছু বলি নি তোও ... লেখো লেখো ...
  • bibhas | 168.26.215.135 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০০:২০416932
  • একি? লেখাটা আর আপডেট হচ্ছে না কেন? এটা শেষ না হলে আমি লিখি কেং কয়ে?
  • Bablee | 85.5.94.142 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০১:১৩416933
  • ওফ্‌ফ্‌প্‌স, এ তো আমাদের সময়ের স্বপন কুমারের রোমোহর্শক গল্পের মত।

    office এ গিয়ে ৫ বার শুধু গুরু দেখছি, কখন পরের update আসে, আর বাড়িতে এসেও প্রথমে গুরু।

    স্বপন কুমারের style এ বলা যায় :

    এর পর কি হল?
    তেকোনা কাকে দেখে চমকে উঠল ?

    জানতে হলে পড়ুন গুরুর পরের সঙ্খা

    :)
  • teman keu na | 122.161.164.238 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০৯:২২416934
  • বিভাস! আমার সঙ্গে একই ট্রামে অথচ অন্য আর একটা মেয়ের পাশে বসে আছে বিভাস! ও কিন্তু দেখতে পেল না আমাকে। সাড়ে একুশ ডিগ্রী ঘাড় ঘুরিয়ে কন্ডাক্টরকে টাকা দিল, টিকিট নিল। পাশের মেয়েটা খুব বেশি কাছে বসে আছে মনে হচ্ছে এতদূর থেকে। অবশ্য ট্রামের সিটগুলোও তো আর সোফা নয়! কাছেই বসতে হবে। ছোটো ঘাড় অবধি চুল পনিটেল করা মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছিল না একটুও। কার সঙ্গে কোথায় চলেছে বিভাস ট্রামে করে? সামনে গিয়ে চমকে দেবো? এ: হাতে আলুকাবলি নিয়ে :-( ঠিক হবে? খুব খুশি হবে হঠাৎ আমায় দেখে জানি। কিন্তু মেয়েটা কে? মিতালী কিছু একটা বকবক করছে কানের কাছে। কিন্তু আমি মোটেই শুনছি না। তাকিয়ে আছি একদৃষ্টে। (হে ভগবান, একবার তো ঘাড়টা ঘুরিয়ে দাও!!!)
    এর মধ্যে আরো কিছু লোকজন উঠতে শুরু করেছে পর পর। ভীড় না হলেও খুব খালিও নেই ট্রামটা। তারই মধ্যে আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি বিভাসের দিকে। লোকে জানেনা তাই একাগ্রতার কথা উঠলেই অর্জুনের নাম করে। মাছের চোখে দেখার থেকে ঢের কঠিন একগাদা লোকের মাঝখান দিয়ে প্রেমিকের মাথার দিকে তাকিয়ে থাকা। এখন তো বিভাস পিছন ফিরলেও চট করে আমায় দেখতে পাবে না। হেদুয়ার ঠিক আগে উঠে দাঁড়ালো ওরা। গেটের দিকে এগিয়ে আসতে আসতেও ও বার বার পিছন ফিরে মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছিল। বেশ ছোটোখাটো চেহারার খুকি খুকি টাইপের একটা মেয়ে। মানে যাকে দেখেই মনে হয় কখোনো মটরশুঁটিও নিজে ছাড়িয়ে খায়নি। খুব একটা লম্বা নয় মেয়েটার হাইট কিন্তু তাই বলে এতো খাটোও না যে ওপরের হ্যান্ডেলটা ধরতে পারবে না। কিন্তু সেটা না ধরে মেয়েটা বিভাসের হাতটা ধরেছিল। আমি ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম, হয়তবা খানিকটা নির্লজ্জের মত, খানিক ক্যাবলার মতও। "এই, শুনছিস?' ঠেলা দিল মিতালী আমায়
    'হুঁ, বল' আমিও ঘাড় না ঘুরিয়ে উত্তর দিলাম (নিজে জমাট প্রেমের মধ্যে থাকলে লোকে বড্ড কথা বলে কিন্তু আর কেউ শুনছে কিনা সেটা খুব একটা খেয়াল করে না, এটাই বাঁচোয়া)
    প্রায় গেটের কাছাকাছি পৌঁছে বিভাস আমার দিকে তাকাল এবং আমারই মত থমকে গেল।
    আমি কথা বলতে যাব ভাবতে ভাবতেই ওদের স্টপেজ এসে গেছে। কন্ডাক্টারেরও কি তাড়া বাবা! এমনিতে তো লোডশেডিং হলে ঘন্টার পর ঘন্টা বৌবাজার আলো করে দাঁড়িয়ে থাকো! আর আজ এক সেকেন্ড তর সইছে না :-( হুড়মুড় করে নামিয়ে দিল ওদের। আমার মনে হচ্ছিল তখুনি নেমে পড়ি, ওর সঙ্গে কথা বলি একটু, কিন্তু ও তো কিছুই বলল না। এমনকি হাসলোও না। কেমন "একি! তুমি!" এই রকম একটা এক্সপ্রেশন থেকে বেরোনোর আগেই নেমে গেল। কেন কে জানে, আমার সেই সময় আবার সৌরভের কথা মনে পড়ল। ও হলে নির্ঘাত না নেমে দাঁড়িয়ে পড়ত। ইস্‌স্‌স্‌স, এসব কি হচ্ছে!
    ফর্ম নেওয়া, জমা দেওয়া, ভর্তি হওয়া এসবের মধ্যে আমরা কলেজস্ট্রীট চিনছিলাম। বৃষ্টির সময় আসে নি তখোনো। তবু একদিন আকাশ কালো করে বৃষ্টি এলো ভরদুপুরে। প্রেসিডেন্সির ফুটপাথে পুরোনো গল্পের বই খুঁজছিলাম আমি আর শ্বেতা (ওরও আমার মত বইরোগ আছে) আচমকা এক পশলা ভিজে সুখ ঝাঁপিয়ে পড়ল কলেজস্ট্রীটে। জানি জানি, ভয় পেলেন তো! এখুনি এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যাবে, ট্রাম আটকে যাবে, এসবের ভয়! এসব কিছু হয় নি, শুধু আমি পড়লাম, প্রেমে, কলেজস্ট্রীটের। জলের ছাটের মধ্যে নিজেকে অত বইয়ের মাঝে দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিল এখানেই থমকে যাক সব। বড় গাছগুলো ছুঁয়ে নেমে আসা বৃষ্টি আমার কুসুমরঙা সালোয়ার কামিজ, পিঠ বেয়ে নেমে আসা বিনুনি, খাদিমের চটি সব ভিজিয়ে ভিজিয়ে আমায় আপন করে নিচ্ছিল। আমরা দৌড়ে রাস্তা পেরিয়ে কফি হাউসে ঢুকলাম.. সিঁড়ির পাশের সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি ভাবছিলাম এই মুহুর্তে কাকে দেখতে চাই এখানে? কার সঙ্গে দেখা হলে খুব ভালো লাগবে?
    কনফিউজড আমি। বিভাসকে ভালোবাসি। ঐ চারটে চিঠিই আমার সব। বিভাসের পাত্তা পাই না পাই ঐ চিঠির আঁচেই নিজেকে সেঁকে সেঁকে জীবন কাটানোর কথা আমার। ওগুলো ঠিক সময়ে আমায় না দেওয়ার জন্য আমি মৌয়ের ওপর রেগে আছি। এ সবই সত্যি। কিন্তু বিভাস ফিরে আসার পর সব কেমন অন্যরকম লাগে আমার। দেখা হলে খুব ভালো লাগে, না দেখা হলে কষ্টও হয় খুব। কিন্তু কোনো বড্ড ভালোলাগা বা বড্ড খারাপলাগার সময় কেন যে ঐ হাসিমুখটা মনে পড়ে যায় :-( । মাঝরাতের রঙ ধরা এক দুপুরে বৃষ্টির সোঁদা গন্ধের মধ্যে কফি হাউসের ঐ বিশাল দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র আমি টের পাচ্ছিলাম যে আমি মোটেই নিজেকে চিনিনা। নিজের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমি নিজের চোখেই চোখ রাখতে পারছি না আর।

    স্যারের বাড়ি গেলাম মার্কশিট নিয়ে। পড়তে যাব নেক্সট উইক থেকেই। মৌও আমার সঙ্গেই ক্লাস করবে স্যার বললেন। ভালোই হল। আমার কষ্ট হচ্ছিল মৌয়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায়। রাগ করে থাকতে পারিই না আমি। খুব জলদি সেটা অভিমানে গড়িয়ে যায়। আর অভিমান, কে না জানে, আমার নয়, অমিতাভ আর জয়ার। সে আর আমার কাছে কদিনই বা থাকবে। মোটের ওপর আমি মৌকে ক্ষমাই করে দিয়েছিলাম। তাছাড়া এক হৃদয়ে কতজনের ওপরে আর অভিমান রাখব? বিভাস তো একাই একশো। যা খেল দেখায় সে তাতে তার ওপর অভিমানেই আমি টইটুম্বুর হয়ে আছি আপাতত। সেদিনের পরে আর দেখা হয় নি ওর সঙ্গে আমার। আমিও নতুন মেলা ডানার ভারে ক্লান্ত হচ্ছি তাড়াতাড়ি। বেরোচ্ছি না বেশি। রিহার্সালও অনেকটা সময় খেয়ে ফেলছে তার ওপর। স্যারের কাছেও রিহার্সাল থেকেই গেছি। ফেরার পথে দেবীগড় :-)। একাই ফিরছি মনে মনে একটা গোলাপের পাঁপড়ি ছিঁড়তে ছিঁড়তে- দেখা হবে/দেখা হবেনা/দেখা হবে ... (এটা মনে মনে করাই বেস্ট। ঠিক ততগুলো পাঁপড়িই থাকবে যতগুলো আপনি চান। ইচ্ছে করলেই থামতে পারবেন)। হল দেখা। মাঠে গোল হয়ে বসে গুলতানি চলছিল কোনো। বিভাস আমায় দেখেই উঠে এল।
    "ভালো আছ?'আমি হাসলাম
    "না। তুমি কেমন আছ?"
    'ভালো নেই? কি হয়েছে??' আমি বোধহয় জোরে বলে উঠেছিলাম
    ও পিছন ফিরে বন্ধুদের দেখল 'চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি। তুমি বাড়ি যাবে এখন?'
    'বাড়িইতো ফিরছি...'(ও কি আর কোথাও যাওয়ার কথা বলবে!!)
    "একটু দেরী হলে অসুবিধা হবে? নইলে একটু...'
    (দোলা লাআআগিল আজি দক্ষিণপবনে - যাক্‌ক্‌ক্‌ক, শেষপর্যন্ত :-)))
    "না, অসুবিধা হবে না..."
    "তাহলে চলো একটু হাঁটি..... সেদিন, এমন আচমকা দেখা হয়ে গেল যে আমি ঠিক ....."
    "আমি তোমায় ট্রামে উঠেই দেখেছিলাম... ডিপো থেকে উঠেছিলাম আমরা..."
    "ও তাই?" (অদ্ভুত তো! আমি হলে তো চেঁচিয়ে উঠতাম - দেখেছিলে তো ডাকোনি কেন? এ কি নিস্পৃহ ছেলেরে বাবা!)
    "হুঁ। আচ্ছা, ঐ মেয়েটি...' ('কে' এটা বলতে কোথাও একটা আটকালো আমার। যেই হোক, ঐ হাতধরে নামার সময়টার কিছু মুহুর্ত আটকে আছে চোখে)
    "ও দেওয়ালি। বাবার বন্ধুর মেয়ে। আমাদের এখানে আছে। এখানে অ্যাডমিশন নিচ্ছে ইলেভেনে। তোমাদের ব্যাচ'
    'দেওয়ালি? আরে! দারুন নাম তো! খুব আনকমন'
    'হুঁ, ও ও খুব আনকমন'
    (আচ্ছা, এরকম শুনলে একটা হিংসে হিংসে রাগ হবে না? বলুন??)
    'বা: ভালো তো। কোথায় ভর্তি হবে?'
    'দেখা যাক। পরে ও ফাইন আর্টসে ভর্তি হবে। দারুন আঁকে ও। একটা পোড়ো বাড়ির স্কেচ বানিয়েছে এত্ত জীবন্ত যে দেখলে তুমি অবাক হয়ে যাবে'
    বিচ্ছিরি লাগছিল আমার। একবারো বলেনি যে আমার গান ওর ভালো লাগে অথচ দেওয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনেছে। যা সৌরভের মুখ থেকে শুনেছি তা তো ওর মুখ থেকে শোনার কথা আমার! সে সব বলা নেই :-( আর এখন অন্য কারুর প্রশংসার পাতা লিখছে আমার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে!!! প্রথম দিন প্রেমহাঁটনের এই টপিক??
    'তোমার বাড়িতে কে কে আছেন?' আমি কথা ঘোরালাম
    'কে কে আছেন মানে? সবাই আছে বাবা ছাড়া'
    "জানি, উনি ভিলাইতে থাকেন, তোমরা গেছিলে ওখানে তোমার বন্ধুরা বলেছিল। কিন্তু আর কে কে আছে জানিনা তো। মানে তোমার আর ভাইবোন আছে কিনা...'
    হেসে ফেলল বিভাস 'আমার দাদা আছে। রুরকিতে পড়ে। আমি আর মা এখানে আছি। আর এখন...'
    সব্বনাশ! আবার দেওয়ালিতে ফিরবে রে! আমি চট করে স্টিয়ারিং ঘোরালাম "তোমাদের রেজাল্ট কবে বেরোচ্ছে?'
    "এই তো, হয়ে এল.... সৌরভ তোমার কথা জিজ্ঞেস করে মাঝে মাঝে" (বুকের মধ্যে একটা টুং বেজে উঠল)
    'সৌরভ! কি জিজ্ঞেস করে?'
    'তোমার সঙ্গে দেখা হচ্ছে কিনা, কি বলছ তুমি... এইসব'
    অস্বস্তি হচ্ছিল আমার। ঐ স্বপ্নটা যেন আঙুল নেড়ে নেড়ে বলছে 'বল, বলে দে ওকে যে তুই আমায় দেখেছিস! বলে দিতে হয়, সব বলে দিতে হয়...'
    বললাম না। আরো অনেক কিছুই তো বলার কথা, তার কোনোটাই তো বলি না, বলছি না, এটাও বলব না
    "তুমি মৌয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিয়েছ একদম?'
    'বন্ধ করিনি। ওর সঙ্গে দেখা হলে কথা বলি। নিজে আর যাই না ওদের বাড়ি'
    'ও খুব কষ্ট পাচ্ছে'
    'তোমায় বলেছে??' আমি হাঁটতে হাঁটতে ওর সাইড প্রোফাইলে শ্যেন দৃষ্টি রাখলাম (তারমানে নির্ঘাত সবই বলেছে)
    'হুঁ..আমি ওদের বাড়িতে গেছিলাম '
    'কেন?'
    'জানতে যে কেন ও মিথ্যে বলেছিল। ওর ঐ মিথ্যে আমার জীবনে.....'
    'কি? তোমার জীবনে কি?'
    'কিছু না... বাদ দাও'
    'কি বলল মৌ?'
    'কিছুই বলল না তেমন। বোধহয় আমার সঙ্গে রিলেশন হলে তোমার বাড়িতে অনেক সমস্যা হবে, সেসব ভেবে তোমায় দেয় নি চিঠিগুলো'
    'এ কথা বলেছে মৌ?'
    'হ্যাঁ। খানিকটা এরকমই শোনাল। কাঁদছিল মৌ। বলছিল আমার জন্য ওর তোমার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে... আমায় ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বারণ করেছে'
    অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল আমার। একই সঙ্গে মৌকে ভালোবাসার আর ঘেন্না করার একটা অনুভূতি। আসলে বিশ্বাসটা একেবারেই হারিয়ে গেছে তাই একবার মনে হল পুরোটাই নাটক ওর, কিন্তু ভালোবাসাটা হারায় নি, তাই একটা নরম বোধ ছুঁয়ে গেল আমায় (ভালোবাসাটা বোধহয় সত্যিই থেকে যায়। অবিশ্বাস করতে করতেও ওটা মরে যায় না, অন্তত: আমার)
    'তুমি ওর সঙ্গে ভাব করে নিও... কষ্ট পাচ্ছে ও
    কিছু বললাম না আমি। আসলে সবাই কিছু না কিছু নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি আমরা আর সবাই ভাবছি আমার কষ্টটাই সেরা কষ্ট।
    বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হল। মার কি হয়েছে কে জানে। মুখ গোমড়া করে আছে। ম্যানেজ করার জন্য জলদি হাতমুখ ধুয়ে রান্নাঘরে গেলাম "হেল্প করে দেব, মা?'
    'না, তুমি নিজের কাজ করো'
    (রেগে গেলে মা তুমি বলে)
    আমি আর কথা বাড়ালাম না। ঘরে এসে নতুন কেনা বইগুলো নাড়াচাড়া করতে বসলাম। মন বসছে না তেমন। কিছু একটা ভালো লাগছে না আমার। কি সেটা? আজ প্রথম বিভাসের সঙ্গে হেঁটেছি কতটা। এত কথা বলেছি। তাও এরকম লাগছে কেন? একটা কারণ হতে পারে যে আজও ও পরে কবে দেখা হবে এই নিয়ে কিছু বলে নি। কিন্তু তাতে কিই বা যায় আসে? সবাই কি গাইডবুক দেখে প্রেম করবে নাকি? আমাদের প্রেমের বাপু অমনই ধরন। নো অ্যাপো, স্ট্রেট মুখোমুখি। মন্দ কি? এটাই বরং বেশি এক্সাইটিং। কিন্তু তবু এমন কেন লাগছে কে জানে। মৌয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো হত। না, এত চড়া আলোর মধ্যে এসব গূঢ় ব্যাপারস্যাপার ভাবা সম্ভব না। তাও আবার কানের কাছে বোনের বল্লাল সেন লক্ষণ সেনের কীর্তিকলাপ মুখস্ত করা চলছে। আমি আমার খোলা আকাশের নিচের গুহায় চললাম........
    ঠিক ঐ তারাগুলোর মতই ছোটোছোটো চিকমিকে প্রশ্ন গেঁথে আছে আমার মধ্যে। বিভাস বলল ভালো নেই। কেন কে জানে? মৌয়ের মিথ্যেটই বা এমন কি ওর ক্ষতি করেছে? দিব্যিতো আমায় পেয়ে গেছ বাপু! আর আমিই বা বিভাসকে ভালোটালো বেসে হঠাৎ হঠাৎ ঐ টোলটুকুর জন্য এমন ছটফটাচ্ছি কেন?? বড় হওয়া মানে প্রেমে পড়া, প্রেমে পড়া মানে জটিল হওয়া, জটিল হওয়া মানে কিছুতে মন দিতে না পারা, একা হতে শেখা, নিজের কাছে নিজে অচেনা হয়ে যাওয়া..... বৃষ্টিহীন গুমোট একটা সন্ধ্যে বিভাসময় হওয়া সঙ্কেÄও আমি আমার জন্য খুব মনকেমনিয়া হয়ে গেলাম... ইস্‌স্‌স, আমি একটুও ভালো নেই, একটুও না :-(

  • rimi | 24.42.203.194 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০৯:৩৩416935
  • প্রথম পুরষ্কার তাহলে রাত্রিই পেল। জানতামই :-)))
  • tkn | 122.161.164.238 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০৯:৪২416936
  • :-))
  • rokeyaa | 203.110.243.21 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০৯:৪৫416937
  • ডি: ১) তেকেনা মাসি বাড়াবাড়ি রকমের ভালো লেখেন। ওনাকে এলসি তে নেওয়া হোক।
    ২) আমারো অনেকগুলো ভাঙ্গা প্রেম আছে, যার মধ্যে একটার নাম দেয়ালী :(
  • sahana | 117.254.72.238 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০৯:৫৭416938
  • খুব ভালো লাগছে । আর এত সব চেনা চেনা রাস্তা , চেনা কফি হাউস, ট্রাম, সুমনের গান,রাত্রিবেলার ছাত, একটা পুরোনো সময়ের গন্ধ এক্কেবারে দশ বছর পিছিয়ে দিয়েছে আমায়। খুউউব ভালো লাগছে।
  • dipu | 207.179.11.216 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১০:০১416939
  • হ্যাঁ, তেকেনার লেখা যাকে বলে একেবারে ফাটাফাটি রকমের যাতা।
  • aishik | 122.166.22.73 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১০:০৯416941
  • তেকোনা
    প্লীঈঈঈঈঈস্‌স্‌স্‌স্‌স্‌স্‌স লেখোনা.............
  • Tim | 71.62.121.158 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১০:২৪416942
  • যাতা রকমের ভালো হচ্ছে লেখাটা। একেকটা লাইন ছবির মত লাগছে। দারুণ! :)
  • papiya | 71.169.197.254 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১১:১১416943
  • উফ: সাড়ে একুশ ডিগ্রি !!!! যাতা একেবারে
  • Samik | 219.64.11.35 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১৩:০৪416944
  • তেকোনাকে ব্ল্যাঙ্ক চেকে FC লিখে দিলম।
  • vikram | 193.120.76.238 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১৪:১২416945
  • এইটাকে অবিলম্বে একত্র করে পয়সা দিয়ে বিক্কিরি করা হউক।
  • pinaki | 131.151.102.250 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১৪:৪৭416946
  • সত্যি মাইরি। এইটা যদি পাই দিদিমণি ছাপা গুরুতে ধারাবহিক করে দেয় না, এক লাফে বিক্কিরি ৫০০ থেকে ৫০০০ হয়ে যাবে।
  • d | 117.195.32.190 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২১:০৬416947
  • তেকেনার মা তো হারমোনিয়ামের তলা থেকে চিঠিগুলো পেয়ে খুব গম্ভীর হয়ে গেছেন। এদিকে মৌয়ের মিথ্যে বিভাসের জীবনে "দেওয়ালি' এনে দিয়েছে।
    তারপর .....
  • bubu | 218.186.12.249 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২২:০৬416948
  • তেমন কেউ না সমিপেষু
    -----------------------------------------

    ..... it was the best of time
    it was the worst of time ....


    পাগলী আমি তোকেই ভালোবাসি
    ও পাগলি তুই ঘুম জাগানো পাখি
    বনের মাঝে লুটিয়ে পরা রোদ
    দেখতে, শুধু দেখতে তোকেই রোজ কলেজে আসি

    পাগলী, তোর কি মনে পরে সেই দিন
    যেদিন আকাশে সোনা রোদের আলো
    সুশান্ত স্যার রিডিং পড়ার ফাকে
    চোখের সাথে চোখের দেখা হল

    ও পাগলী তুই লজ্জা পেয়েছিলিস
    ও পাগলী তুই হেসেও ছিলিস খুব
    এক সে আকাশ বাদলা ভোরা দিনে
    জোট পাকিয়ে একসাথে ক্লাস ডুব

    সেদিন ফাকে টিউটোরিয়াল ক্লাশে
    কাগজ পেলাম মৌয়ের হাত দিয়ে
    "বাইরে দাড়াস" এটাই শুধু লেখা
    আমার জন্য নতুন খবর নিয়ে

    বাইরে টোটো সে সারাদিন ধরে
    সন্ধ্যে শেষে রাত্রি এল ঘোর
    তুই বল্লি ,"খেলবি? চোর পুলিশ?
    ..... পুলিশ আমি, দুষ্টু তুই এক চোর

    ভিজেছিলেম সারা বিকেল ধরে
    বৃষ্টি শেষে বাড়ি ফেরার পালা
    বাড়ি ফিরেই শুনলি খবর জোর
    তোর যে বিয়ে, উঠবে গলায় মালা

    বাবার আদেশ, ডাক্তার বর তোর
    মানা নিষেধ কিছুই কেউ শুনল না
    বিয়ের পরে পড়বি যদি পড়
    মানা নিষেধ কিছুই চললনা

    কেঁদেছিলেম, সারাটা রাত ধরে
    তবুও তোকে বলিনি, বলতে পারিনি, চাইনি,
    হোক আমার খারাপ
    তোর তো সুখের সময়

    বিভাস দারুন ভালো ডাক্তার জানি
    হয়্‌ত তোকে ভিষন ভালোবাসে
    তবুও তোকে দেখতে শুধু আজো
    একটা ছেলে রোজ ঘুরে যায় ক্লাশে I

    :)
  • dipu | 59.164.190.43 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২২:২৩416949
  • আরিব্বাস!
  • teman keu na | 122.163.79.117 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২২:৫০416950
  • রাতে খেতে বসি আমরা সকলে একসঙ্গে। আজ বোন আগে খেয়ে শুয়ে পড়েছে। বাপী দু দিনের জন্য বাইরে গেছে। আমি আর মা খেতে বসলাম। আগে স্কুল থেকে এসে গড়গড় করে গুচ্ছ কাহিনী নিয়ে বসতাম মার কাছে। আজকাল সময়ও হয়না তেমন। খেতে বসেও কথা কমই হয়। রুটি তরকারী আর গুড় নিয়ে বসল মা। এখন আর আগের মত গম্ভীর লাগছে না
    "মা, আজ রিহার্সালে মোমদিদি এসেছিল"
    "তাই? ও এবার তোদের সঙ্গে প্রোগ্র্যাম করছে না?"
    "না। মোমদিদি জাস্ট একটাই নাচে আছে"
    শোন, মার গলাটা একটু অন্যরকম শোনালো "তুই যে কলেজে ভর্তি হওয়ার ডিসিশন নিলি, পরে অসুবিধা হবে না তো?"
    "অসুবিধা হবে কেন?"
    "না, এতদিন বাড়ির কাছে স্কুল ছিল। এখন এতটা রাস্তা যাচ্ছিস আসছিস, পড়তে যাওয়া আসা...'
    'কি হয়েছে বলত মা?"
    "কিছু না রে। আজ মৌয়ের মায়ের সঙ্গে দেখা হল রাস্তায়। বলছিল কলেজে ভর্তি হয়ে ভুল করলি তুই..
    "আর কিছু বলেছে?"
    "না তো! আবার কি বলবে?' অবাক হয়ে তাকালো মা (কেমন হয়ে যাচ্ছি আমি! সবসময় ভয় পাই আসলে যে এই হয়ত মা জেনে গেল...)
    "আচ্ছা, মৌ আর আসে না কেন রে? তুইও ওদের বাড়ি যাস না"
    "এমনিই, ভালো লাগে না...
    'হুঁ, মিতালী আর শ্বেতার সঙ্গে বেশি বন্ধুত্ব হয়েছে আজকাল' মিষ্টি করে হাসল মা 'জানিস, আমারও এরকম হত। কলেজে আমার বন্ধু ছিল কস্তুরী। খুব ভালো বন্ধু ছিল আমার.. কিন্তু ওর ওপর কোনো কারণে রাগ হলেই আমি পম্পা, সৌগত, অপর্ণাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে চলে যেতাম। অথচ কস্তুরী কখনও ওরম করত না, লাইব্রেরী তে গিয়ে বইটই পড়ত ...। একবার একটা সামান্য করনে ঝগড়া হয়ে একমাস কথা বন্ধ ছিল আমাদের মধ্যে.... না পারছে ও কথা বলতে, না পারছি আমি.......' হারিয়ে যাচ্ছিল মা কথা বলতে বলতে আর আমার চোখের সামনে ফুটে উঠছিল একটা মেয়ের আদল। আমারই মতো একটু খেয়ালী, একটু কনফিউজড, খুব খুব রোম্যান্টিক আর ভীতু একটা মেয়ে বসে আছে সামনে মনে হচ্ছিল আমার।
    'সৌগত কে?'
    'আমাদের সঙ্গে পড়ত আই.এ তে। দুনিয়ার মেয়েদের ফাই ফরমাস খাটত হাসিমুখে। সকলের প্রেমে পড়ত, আবার উঠেও যেত ঝেড়ে ঝুড়ে...'
    'তোমার ছেলে বন্ধুও ছিল?'
    'কেন থাকবে না? আমরা কি কলেজ করিনি? তোরাই করছিস বুঝি শুধু?'
    খুব ভালো লাগছিল মার সঙ্গে গল্প করতে আমার 'তোমার ছোটোবেলার গল্প করো না কেন মা?'
    'সকলের ছোটোবেলাই খুব স্পেশাল রে'.. মার গলাটা একটু পাল্টে এল "এখন ভাবছিস অনেক বড় হয়ে গেছিস তোরা। আরো কয়েকবছর পরে পিছন ফিরে দেখবি এই ইলেভেন টুয়েলভের সময়টাও কেমন বাচ্চাবেলা লাগবে... যদি কোনো কারণে মৌয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়ে থাকে তাহলেও মিটিয়ে নিস। ধীরে ধীরে সব বন্ধুরাই একা হয়ে যায়, যতদিন পারি তার মধ্যেই সবাই মিলে একসঙ্গে ...' চোখে জল এসে গেছে মার
    'কি হয়েছে!' আমি একদম হাঁ
    ওমা! কি হয়েছে?
    কিছু না, শেষ রুটির টুকরোটা দিয়ে তরকারীটুকু কাচিয়ে নিল মা "আমার বুঝি বন্ধুদের জন্য মন কেমন করতে নেই!'
    করে বুঝি!! মায়েরও বন্ধু ছিল এটাই তো মনে থাকে না আমার। আজন্ম দেখে আসছি আমাদের বন্ধুদের মায়েরাই সব মায়ের বন্ধু। পাড়ার কাকিমা জেঠিমারাও মোটামুটি বন্ধুর মতই। কিন্তু এসবের আগেও, মা যে মেয়ে ছিল আর সেই মেয়েটার যে একটা আমার মতো জীবন ছিল সেটা প্রায় অবিশ্বাস্য লাগে আমার।

    ফাংশানের আর দশদিন বাকি। মোমদিদি প্রতিবছর লিড রোলে থাকে। এবছর শুধু একটা নাচে আছে। ডাক্তারী পড়ছে মোমদিদি এখন। শুধু পড়াশুনো নিয়েই ব্যস্ত থাকে। স্কুলের ফাংশান বলেই এসেছে এবার। খুব তোড়জোড় করে কার্ড বিক্রি চলছে আমাদের। মা তিনটে কার্ড একস্ট্রা কিনল, পিসিমণিদের জন্য। আমি দুটো কার্ড নিয়ে মৌদের বাড়ি গেলাম।
    তুই?
    হুঁ, পড়তে যাবি তো কাল থেকে?
    'হ্যাঁ, যাবো তো। আমি আজও স্যারের বাড়ি গেছিলাম। চল ওপরে চল' মৌকে দেখে মনে হচ্ছিল কিচ্ছুই হয় নি আমাদের মধ্যে কোনোকালেই। সত্যিই তো। সেই কিন্ডারগার্টেন থেকে বন্ধু আমরা। মাঝে স্কুল আলাদা হয়েছে কিন্তু বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে আরো। আর বিভাস আর আমি দুজনেই যখন দুজনের আছি তখন ওর সঙ্গে ঝগড়া রাখারও মানে নেই।
    "রবীন্দ্রজয়ন্তীর কার্ড এনেছিলাম'
    "দে। মা সেদিনই জিজ্ঞেস করছিল তোদের ফাংশন হচ্ছে কিনা'
    "হচ্ছে। ভানুসিংহ হচ্ছে আমাদের। আর সিনিয়রদের ক্ল্যাসিক্যালের প্রোগ্রাম'
    'শোন, আগেরবার তোর সঙ্গে যে তবলা বাজাচ্ছিল...'
    'হুঁ, আবীরদা। সকলের সঙ্গেই বাজায়'
    'এবার ওর সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিবি প্লিজ?'
    'কেন? তুই তবলা শিখবি?' হেসে ফেললাম আমি। জানি আবীরদাকে আগেরবারও দেখে মৌ খানিক ঝারি করেছিল। ফাংশানের পরে সব থেকে বেশি হ্যাংওভার ওরই থাকে।
    'তোর কলেজ কেমন লাগছে? একদিন যাবো তোর সঙ্গে তোর কলেজে'
    'আগে আবীরদাকে দেখে নে খানিকটা, তারপরে না হয়..' খুব মজা লাগছিল আমার। এখন আর রাগও নেই ওর ওপর। ও ও বিভাসের কথাই তুলল না একবারো। আমিও না। বোস, মাকে বলি ম্যাঙ্গো শেক বানাতে বরফ দিয়ে, নিচে গেল মৌ। আমি ওর টেবিলের ওপর নতুন অনেক বই দেখলাম, ওর সাবজেক্টের বই সব। শুধু বাংলা ইংলিশই আমাদের কমন, আর সব পাল্টে গেছে এখন.. আজ আর ওর বই খাতায় হাত দিলাম না। অলরেডি একবার হাত দিয়ে যথেষ্ট ছ্যাঁকা লেগেছে। আর দিয়ে কাজ নেই...

    মৌয়ের ওখান থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে যেতে গিয়েও উল্টো রাস্তা ধরলাম। দেবীগড়ে এখন কারুর থাকার কথা না, তবু, কে বলতে পারে... ইন কেস... ছিলনা কেউ। হাঁটতে হাঁটতে মাঠ, রক, বাবলুদার দোকান পেরোচ্ছিলাম আমি। গন্তব্যহীন হাঁটার মধ্যে একটা মজা আছে। আমি মনে মনে ভাবছিলাম এখন যদি কারুর সঙ্গে দেখা হয় আর সে জিজ্ঞেস করে 'কোথায় যাচ্ছ?' আমি মিত্তি করে হেসে বলব "রাজভবন যাচ্ছি"। এটা ভেবেই আমার হাসি পেয়ে গেল.. আর তখনই পাশ থেকে গলা পেলাম "একি! তুমি একা একা হাসো নাকি?"
    সৌরভ! (বিশ্বাস করুন, এতো আনন্দ আমার বিভাসকে দেখেও হয় না। ওকে দেখলেই কেমন বুকের মধ্যে গুরুগুরু, চোখের পাতায় তিরতিরে একটা ভাব, এসব উদভুট্টি ব্যাপার স্যাপার হতে থাকে, কিন্তু এ একেবারেই অন্যরকম। জাস্ট খুশি। খুব খুব খুশি হলাম আমি)
    'আপনি!!'
    'আচ্ছা, তুমি আমায় এমন বুড়ো বানিয়ে দাও কেন বলত?'
    হেসে ফেললাম আমি "না, মোটেই বুড়ো বানাই না'
    'হ্যাঁ, রাইট। বানাবে আবার কি? আমি অলরেডি বুড়ো। তোমার থেকে দু বছরের সিনিয়ার'
    'আজ্ঞে না। বুড়ো কেউ বলে নি (আমি ভাববাচ্যে চলে গেলাম টু বি অন দ্যা সেফ সাইড)
    "আজ্ঞে আমায় আপনি বললে আমার নিজেকে বুড়োই লাগে। এর পরে বেশিক্ষন কথা বললে বাড়ি গিয়ে দেখব আমার চুল পাকতে লেগেছে'
    দারুন মজার কথা বলে সৌড়ভ, সাধে কি স্বপ্নেও... ছি:: (মনে মনে নিজের কান মুলে দিলাম কষে)
    'কোথায় যাচ্ছ?'
    'রাজভবন' :-)
    "ও: তাই! এ: আগে জানলে একটা চিঠি দিয়ে দিতাম তোমার হাতে, পৌঁছে দিতে পারতে' (কি ফাজিল!! আমার সঙ্গে টক্কর!!)
    "আমি তো রাজভবন যাচ্ছি। কিন্তু তুমি কোথায় চললে??' (কি অবলীলায় আমি তুমিতে চলে গেলাম)
    'বই জোগাড় করতে, বন্ধুর বাড়ি'
    'ও' আমি একটু সিরিয়াস হলাম 'আমিও কিছু রাজভবন যাচ্ছি না :-) মৌকে ফাংশনের কার্ড দিতে গেছিলাম, তারপরে এমনিই হাঁটতে ইচ্ছা করল'
    ফাংশন? কিসের?
    গানের স্কুলের
    শুধু বন্ধুরাই দেখতে পারে সে ফাংশন?
    হুঁ, তাই তো :-) (বিভাসের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাকেই বেশি কথা শুরু করতে হয়। এখানে তার উল্টো। মজা লাগছে আমার)
    'তাহলে তো আমি...'
    ওর দিকে তাকালাম আমি 'তুমি? হুঁ ভাবতে হবে.. তুমি আমার কে? (এ কথা কেন হঠাৎ বলেছিলাম কে জানে। আমিও কি মনে মনে সৌরভেরই সঙ্গ কামনা করছিলাম, তাই ওকে সামনে পেয়ে নিজেও :-(
    ঘুরে তাকালো সৌরভ "ঠিক, আমি তোমার কে? অন্তত: এখোনো অবধি আমি তোমার কেউ না। আমি শুধু বিভাসের বন্ধু...
    ওর গলার মধ্যে কিছু একটা ছিল। আমার ইচ্ছা করছিল তখনি ওর হাতটা নিজের হাতে নিতে 'না, তুমি আমারও বন্ধু, আমারও....'
  • teman keu na | 122.163.79.117 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২২:৫৯416952
  • বুবু,

    দিনগুলি তো কবেই গেছে চলে
    স্মৃতিরা সব শীতের ঝরা পাতা
    দুষ্টু সে চোর আজও পলাতক
    পুলিশ একা ভরছে টইয়ের পাতা :-)

    ইতি
    তেমন কেউ না
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন