এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গল্পের টই

    M
    অন্যান্য | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯ | ৯২৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kallol | 115.184.106.13 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৭:১০424485
  • লামার গল্পে জেলের দেওয়ালে কি? বোধহয় গোসাপ।
  • Lama | 117.194.226.140 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৭:২৮424486
  • রঞ্জনদা, বাকিটা?
    নাকি শেষ হয়েও হইল না শেষ?
  • ranjan roy | 122.168.221.97 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৮:৪৪424487
  • শ্যামল! আমাদের শ্যামু!
    মফ:স্বল শহর থেকে যখন কলেজে পড়তে কোলকাতায় এলাম। প্রথম দর্শনেই আমরা বন্ধু হয়ে যাই। আমি পিজিতে থাকতাম। দশমাস পরেই বদলাতে হত। ও বল্লো-- আমাদের বাড়িতে আয়। কোন সমস্যা হবে না, ভালো থাকবি। কি জানি কেন রাজি হইনি। সংকোচ কাটেনি। তবে খাওয়াদাওয়া একবেলা ওর বাড়িতেই হতে লাগলো। পড়াশুনো-নোটস্‌, সিনেমা-আড্ডা তর্কবিতর্ক যেমন হয় আর কি!
    না, ওর বাড়িতে কোন অবিবাহিত বোন ছিলো না। ওর বাবাকে ছোটবেলায়ই হারিয়েছে, মাসীমা পেন্‌শন পান। ছোট বাড়িটা মেশোমশায় করে যেতে পেরেছিলেন। ও কিছু টিউশন করে, চলে যেত।
    চলে ঠিকই যেত যদিনা--! যদিনা ওর মাথায় দেশোদ্ধারের ভূত চাপত।
    কতবার বুঝিয়েছি। ওসব কাজ আমাদের আগের জেনারেশন করে গেছেন। আমাদের কাজ দেশটাক্বে গড়ে তোলা। ওসব চীন-রুশ-ভিয়েৎনামকে শ্রদ্ধা করেও বলেছি আমাদের দেশের বিশেষ অবস্থায় ওগুলো প্রাসংগিক নয়।
    তর্কাতর্কি মাঝে মাঝে উচচগ্রামে উঠলেও কখনও মনান্তর হয় নি।
    কিন্তু ব্যাপারটা চরমে উঠলো যখন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষায় বসলো না।
    আমি হতচকিত! কিসের গুষ্টির পিন্ডির রাজনীতি! মাসীমার কথা একবারও ভাবলো না?
    হেসে বলেছিলো-- যদি শচীমাতা না কাঁদতো তাহলে কি নিমাই জগৎকে প্রেম ধর্ম শেখাতে পারতো!

    ওরে শালা! তুই এখন নিজেকে জগৎত্রাতা ভাবছিস? নিজের সম্বন্ধে কি লার্জর দ্যান লাইফ ইমেজ!
    কোলকাতার বাঙালীদের শালা এই ব্যামো! কেউ প্রেমে পড়ে পরীক্ষা দেবে না ,তো কেউ জগৎত্রাতার ভূমিকা নিয়ে।
    কিন্তু সত্যি সত্যিই একদিন ও চলে গেল। ক'দিন পরে বাড়িতেপুলিস এল। মাসিমার অবস্থা তথৈবচ। ছমাস পড়ে একদিন বাড়িতে এল চুপিচুপি। খবর পেয়ে আমিও গেলাম। বল্ল- তুইতো এখন চাকরি করছিস্‌। দে না কিছু টাকা, আর জামাকাপড়। আমাদের দুটো শেল্টার রেইড হয়েছে। আমার আপাতত: যাওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু ভাবিস না। দু-একদিনের মধ্যেই যোগাযোগ করে আমি চলে যাবো। ওর অনুরোধ ঠেলতে পারিনি। কিন্তু দ্বিতীয় দিন ভোরে পুলিস হানা দিল।
    আমি কয়েক দিন মাসীমাকে সঙ্গে নিয়ে কোর্ট-কাচারি করলাম। হেবিয়াস কর্পাসের রিট লাগালাম। পুলিশ জানালো পরের দিনই ওরা শ্যামলকে ছেড়ে দেয়। আশা ছিল ওকে ফলো করে ওর স্কোয়াড কে ধরবে। কিন্তু ও নাকি ওদের চোখে ধূলো দিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে।
    আস্তে আস্তে মাসীমার কথা আমার মনে ফিকে হয়ে এল। আমি যে শ্যামলকে ভুলতে চাই। ও ওর আলাদা ব্যতিক্রমী জীবন স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছে। আমি সে পথের পথিক নই। আমি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন চাই। তাই শ্যামলকে ভুলতে চাই। ভুলে গেলাম। চাকরিতে উন্নতি করলাম। তোফা আছি। শ্যামলের কথা মনেই হয় না। বৌয়ের কাছেও কোনদিন শ্যামলের গল্প করিনি।
    কিন্তু আজ? আজ অমার মনে ঢেউ তুলেছে দশ বছর আগের স্মৃতি। মনের কোন গুপ্তঘরে এরা অ্যাদ্দিন ঘাপটি মেরে ছিল ?
    এসব কথা মৃণালকে বলা যায় না। খালি বল্লাম-- আমাকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে চল।
    মাসীমা অবাক হয়ে আমাকেদেখে বল্লেন-- কী রে হরি! বৌয়ের আদরযত্নে বেশ মুটিয়েছিস তো!
    তারপর আমার মুখের ভাব দেখে গলার স্বর নামালেন। কিছু মনে কর না, বাবা। মাথার ঠিক নেই। আমার ঘরে ছাদের চিলে কোঠায় চল, কিছু কথা আছে।
    গিয়ে দেখি একটা রেকাবিতে দুটো মুড়ির মোয়া আর গুড়ের চা।
    মাসীমা বল্লেন--- বুকে একটা ফিক ব্যথা হচ্ছে আজকাল। না ডাক্তার-কোবরেজ করাতে চাইনে। খালি একটা কথা। শুনচি শ্যামু নাকি বেঁচে আছে? তুমি জান কিছু?
    একবার যোগাযোগ করে ওর হাতের লেখা চিঠি নিয়ে আসতে পারবে? তাহলে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে মরতে পারি।
    আমি? আমি কি করে? তাছাড়া আমার তো এতবছর কোন যোগা যোগ নেই। আর মনে মনে ভাবি ওদের আড্ডাখানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে আমার চাকরি বজায় রাখা যাবে কি?
    -- তাহলে পারবে না? ভাবছিলাম যদি কেউ পারে তো হরিই পারবে। আজকাল বড় চাকরি করে, কত যোগাযোগ। ঠিক আছে বাবা, তবে এসো। তোমাকে শুদুমুদু কষ্ট দিলাম। (চলবে)
  • ranjan roy | 122.168.228.118 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৯:৫৫424488
  • মুর্দানগর
    ------------
    (৩)
    কিন্তু আমার ভেতরে ভেতরে কিছু একটা হচ্ছিল। কেন হচ্ছিল আমি নিজেই জানি না।
    মোদ্দা কথা হল আমি সাতদিনের ছুটি নিলাম। বৌকে বল্লাম যে অফিস থেকে একটা গোপন ইনভেস্টিগেশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সম্ভবত: এক-দুবার বাইরে যেতে হতে পারে।
    গোপন ইনভেস্টিগেশনই বটে। কোত্থেকে যে এত সাহস পেলাম, খুঁজে খুঁজে কিছু যোগাযোগ, কিছু খবর। আবার পুলিসের থেকেও সাবধান থাকা। শেষমেষ জানতে পারা গেল মুর্দানগর স্টেশনের কাছে কোন গলিতে ও থাকে। একটা টেলিফোন বুথের পাশে। দুটো বড় বাড়ির মাঝখানে একটা টালির চাল। বন্ধ দরজায় থেমে থেমে তিনবার টোকা, কোড হল সাবমেরিন।
    কিন্তু এখন এই মাঝরাতে মুর্দানগর স্টেশনের জনশুন্য এই অদ্ভুতুড়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে মনটা দমে গেল। কাজটা কি ঠিক করলাম? বেশ হঠকারী পরিকল্পনা নয় কি? রাতটা এখানেই কাটিয়ে সক্কালে খুঁজবোখন। কিন্তু খুঁজে যদি না পাই? খালিহাতে কোলকাতায় ফিরবো? মাসীমাকে কি বলবো?
    না:, পাবো না মানে! আলবাৎ পাবো। পেতেই হবে। গন্তব্যস্থল তো পৌঁছেই গেছি। এখন শুধু দিনের বেলায় একটু কায়দা করে খোঁজপাত্তা করা।
    তবে এই হতচ্ছাড়া স্টেশনে রাতকাটাতে মন চাইছে না। দূর ছাই! স্টেশন থেকে বেরিয়ে পড়ি। হেঁটে একটু এগোই। হয়তো চায়ের কোন দোকান খোলা পাওয়া যেতে পারে। আর সিগ্রেটও তো ফুরিয়ে এসেছে।
    নভম্বরের শুরু। তেমন ঠান্ডা পড়েনি, কিন্তু একটু কুয়াশার ভাব। স্টেশনের বাইরে কুয়াশাঢাকা ল্যাম্পপোস্টগুলো হ্যালোজেনের আলো জ্বেলে একচোখো দানবের মত তাকিয়ে আছে।
    আশচর্য্য! স্ট্যান্ডে অটো বা রিকশা কিছুই চোখে পড়ছে না।
    মরুকগে! স্টেশনের কাছেই কোন গলিতে ওর ঠিহা। কী যেন সেই গলির নাম? হ্যাঁ, সুরদাস গলি।
    এখন কাকেই বা জিগ্যেস করি। হাঁটতে লাগলাম। কুয়াশা যেন একটু গাঢ় হচ্ছে। দুটো সিগ্রেট বাকি। আন্দাজে একটা দিক ধরে হাঁটতে থাকি যাতে কোন দোকানপাট বা স্টেশনের বাজারের দেখা পাই। দুটো রাস্তা বদলালাম। কিন্তু সবগুলি যেন একই রকম দেখাচ্ছে। হয়তো কুয়াশার জন্যে।
    ভাবলাম যদি এই সময় কুয়াশার ভেতর থেকে কোন কপালকুন্ডলা আবির্ভূতা হয়ে বলে-- পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ?
    নিজের মনেই হেসে উঠলাম।
    আর তক্ষুণি ব্যাপারটা ঘটলো।
    ( আগামী কিস্তিতে সমাপ্য)
  • Lama | 117.194.226.140 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১০:১৬424489
  • রঞ্জনদা, পরের কিস্তিটা যত তাড়াতাড়ি পারেন লিখতে অনুরোধ জানাই।

    বেশিক্ষন শ্বাস বন্ধ করে রাখতে পারি না এই বয়েসে। আর প্রাণায়াম ইত্যদি করার অভ্যেস নেই :(
  • ranjan roy | 122.168.228.118 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১০:৩৮424490
  • আজ রাত্তিরে, মাক্কালী! এখন বিলাসপুর যাচ্ছি, ছুটি নিয়ে , উকিলের সঙ্গে দেখা করে বাঁদরগুলোর বেইল আটকাতে।
  • Lama | 117.194.226.140 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১০:৪৭424491
  • হ্যাঁ, বাঁদরগুলোর কয়েকদিন জেলের আদর খাওয়া দরকার, যাতে আর কোনদিন কারো সঙ্গে চ্যাংড়ামো করার সাহস না পায়।
  • Nina | 72.45.133.34 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১২:০১424492
  • রঞ্জন, ওরে বাবা এ কেমন থামা---:-((

    দেয়ালে ওটা কি ছিল লামা:-((
  • M | 59.93.161.34 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৩:১৮424493
  • আহা! টইটা কেমন ঝলমলিয়ে গেছে, তোমরা এমন রাখো, আবার নিভিয়ে দিয়োনা বাপু।
  • M | 59.93.161.34 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:০৬424495
  • আমার এক বন্ধুর কথা, সে হয়তো শিগগিরি গুরুতে ভুমিষ্ঠ হতো,কিন্তু সেকেন্ড টাইম কারোরে ভুমিষ্ঠ করতে যাচ্ছে,--

    আমার তখন বিয়ে হয়ে গেছে, বন্ধুদের মধ্যে আমি প্রথম, ছুটি দ্বিতীয়, বাকিরা তাপ্পর, আমি গদ্দারি করেছিলুম,নইলে কথা ছিলো আমরা সাত আট পিস মেয়ে একসঙ্গে নেচে কুঁদে জেবন কাটাবো, অন্য কিছু ভাইবেননা য্যানো।

    তো আমি ছুটির বাড়ী পৌছেছি, আরো সবাই হাজির পর্নশ্রীর ঠেকে, তো সেই মামনি দেরী করছেন, তার দেরী সব সময়, যখন এসে দেখবে আমি এসব বলছি উদমা ক্যালাবে নিগ্‌ঘাত।

    এলেন, কিরে এত দেরী?

    আর বলিসনা নিলাদ্রী কে না বলতে গেছিলাম।

    ও নাকি রোজ ই নীলাদ্রীদাকে না বলতে যাচ্ছে, শেষে যখন বিয়ের কার্ড হাতে ধরালো দেখি সেই নীলাদ্রী দা।

    কিরে? তুই তো রোজ না বলতে যেতিস না?হ্যাঁ কি করে হয়ে গেলো?

    বলে কিনা নীলাদ্রীদা বলেছে না বললেই একটা ছেঁড়া জামা, ছেঁড়া প্যান্টু পরে একমুখ দাড়ী করে, তাতে আবার উকুন থাকবে, আর নাক দিয়ে যা গড়াবে তাই শুকিয়ে থাকবে, এভাবে ওদের বাড়ীর সামনে ঘুরে বেরাবে। তাই বেচারি আর না বলে নি।

    ক্ষী ক্ষান্ড!
  • til | 220.253.71.161 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:১০424496
  • নীলাদ্র্রী না পোঁটাদ্রি?
    মাগো কি ঘেন্না, ওয়াক!
  • M | 59.93.161.34 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:১৮424497
  • হি হি,
    সত্যি দুটোতেই সমান বিচ্ছু।ওদের সাথে গল্প করলে পেটে ব্যাথা হয়ে যেতে বাধ্য।

    আর ওদের মেয়েটাও তাই।আমরা একদিন রাত এগারোটার সময় আড্ডা টাড্ডা মেরে হঠাৎ ঠিক হলো আরো আড্ডাবো, ছুটির শ্বশুর বাড়ী গিয়ে, ওদের জয়েন্ট ফ্যামিলি, কিন্তু ভীষন ভালো মানুষ ওনারা, রাত পৌনে একটায় পৌছালাম বোধহয়।মাসীমনি দরজা খুললেন,ওদের মেয়ে সব চেয়ে ছোট, টুক করে গলে ভিতরে ঢুকেই একগাল হেসে বললো আমরা আবার এসে গেছি। তারপর চিল চিল যাষ্ট চিল গাইতে গাইতে ঢুকে গেলো। আমরাও পিছে পিছে....
  • til | 220.253.71.161 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:৫৫424498
  • আম্মো যাবো।
  • til | 220.253.71.161 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৫:২১424499
  • তিলের নাড়ু (২)

    সুসি ম্যাথ্যুস

    আমাদের অপারেশানস রিসার্চ পড়াতেন বোম্বাইতে। জী হাঁ, টীচার তাও পিজি তে। এই ইনস্টিট্যূটে সকল ছাত্রকে অ্যাডাল্ট ভাবা হতো। ক্লাশে সিগারেট নো প্রবস (তখনকার দিনে তো!)।
    উনি নামী ব্যারিস্টারের বউ ছিলেন, ক্রিমিন্যাল লইয়ার। সব টাকা বোধ হয় শাড়ীতে খরচ করতেন। রোজই একটা করে আলাদা শাড়ী পরে আসতেন। ওঁর অফিসে কি একটা বুঝতে গিয়ে আমি জিজ্ঞেসই করি, " আপনার কত শাড়ী?"। সত্যি ই তাকে এক শাড়ী রিপিট করতে দেখিনি দু বছরে, অবশ্য ফটো তুলে তো রাখিনি। প্রায় সেরকমই।

    বড্ডো ভাল মানুষ, তখন কত বয়েস তাঁর? ৪০ এর এদিক ওদিক বড় জোর। সারা ক্লাশ ওর প্রেমে পড়েছিল, ফুল অ্যাটেন্ডান্স সর্বদা।
    একটা ডায়াস ছিল ক্লাশে, এক ফুট খানেক উঁচু, তার ওপর টেবিল , পেছনে লম্বা ব্ল্যাকবোর্ড (সেটা অবশ্য কাঁচের হাই ফাই বোর্ড), কিন্তু বোর্ডটা লম্বা অনেকটাই, ডায়াস পেরিয়ে যেত প্রায় চার পাঁচ ফুট।
    লম্বা ইকোয়েশান লিখতে লিখতে উনি খেই হারিয়ে ডায়াস পেরিয়ে যেতেন, ফলে পতন!
    ছেলে গুলো এই মুহুর্তের অপেক্ষায় থাকতো, কি নির্মম! উনি পড়ে গেলে সব আলু থালু, সেই দৃশ্য এনজয় করতো।
    আমি একদিন না পেরে, ক্লাশের শুরুতেই বোর্ডে গিয়ে একটা verical লাইন টেনে দিয়ে এলাম, সেখানে গেলেই ওঁর সম্বিৎ ফিরবে, কিনারায় পৌঁছে গেছেন।
    she appreciated it
    এবং সেই লাইনটার নাম দিলেন,
    Til's line ( as in Macmehan line etc)।
    উফ, সে কি গর্ব আমার!
    ---

    বিগ M, কিছু বোঝা গেল? ছড়ালাম কি খুব?

  • M | 59.93.210.138 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৭:০১424500
  • তিল,
    ধুর মহায়! আপনে মোটেই ছড়ান না।
    সব সময় ডরান ক্যান?

    নাড়ু তৈরী ছাড়নেকা নেহি।
  • til | 220.253.71.161 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২২:৪৩424501
  • ওহ, বলতে ভুলে গেছি।
    তারপর থেকে ক্লাশে ঢুকে প্রথমেই চক দিয়ে Til's line টেনে দিতেন বোর্ডে।

    কতযুগ আগেকার কথা, বিগ M তাগাদা দিতে মনে পড়লো।

    তখনকার দিনে শনিবার হাফ ছুটি মাত্র। উনি মাঝে মাঝেই ক্লাশ swap করে শনিবারে নিতেন আর বাড়ী থেকে প্রচুর খাবার আনতেন, সবার জন্যে। আমরা জনা বিশ ছাত্র ,নো ছাত্রী তখন, দুটো সেকশন মিলে ৪০জন, অন্য সেকশনের ছেলেদের কি হিংসে। কেক, চোপ, বিস্কুট,চানাচুর, হ্যান ত্যানা। আসলে চাকরীটা শখ করে, ওঁর সাবজেক্টে ভালই নাম ছিল। ধনী মানুষের বউ, মাইনের টাকা উড়িয়ে দিতেন বোধহয়।

    টীচার হো তো অ্যায়সা।
  • Lama | 117.194.226.140 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২২:৫৪424502
  • (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

    দু তিন মানুষ উঁচু লালরঙের পাঁচিলের গোড়ায় উর্দি পরা এবং সাদা পোষাকের পঁচিশ তিরিশ জনের একটা দল জমায়েৎ হয়েছে- সবার দৃষ্টি সটান ঊর্ধমুখী, সকলের মুখই অল্পবিস্তর হাঁ। সাদা কালো গ্রুপফটোর মত এক চরম নৈ:শব্দ।

    নীরবতা ভঙ্গ করল হাবিলদার পান্ডেজী: "আজীব জানোয়ার বা!!!"

    ড: সেন এক অসুস্থ কয়েদির ওষুধপত্রের নিদান দিয়ে কোয়ার্টারে ফিরছিলেন, ভিড় দেখে তিনিও ভিড়ে গেছেন। বিড় বিড় করে ইংরেজীতে কিছু বললেন। ভালভাবে লক্ষ্য করলে "দেয়ার আর মোর থিংস', "হোরেশিও',"হেভন', "আর্থ' ইত্যাদি শব্দগুলো বোঝা যায় । আবার অস্বস্তিকর নীরবতা।

    এবারেও নীরবতা ভঙ্গ করল পান্ডেজী: "সাহাবকো খবর ভেজনা চাহিয়ে'।

    **** **** **** ****

    দাদু সবে অফিস থেকে কোয়ার্টারে ফিরে জুতো আর টুপি খুলে রেখে বাবা আর বড়পিসিকে নিলডাউন করিয়েছেন, এমন সময় সেপাই এসে হাঁপাতে হাঁপাতে সেলাম ঠুকে দাঁড়াল।

    তারপর সেপাই দাদুকে কি বলল, কি করে দাদু ঠাম্মার মুখঝামটা উপেক্ষা করে পাজামা আর গেঞ্জি গায়ে জেলখানা ফেরৎ গেলেন,পঁচিশ তিরিশজন লোক "আজীব জানোয়ার'কে পাকড়াও করতে কিরকম গলদ্‌ঘর্ম হল সেসব এখানে অপ্রাসঙ্গিক। তবে মাঝরাতের দিকে একবাড়ি ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে আর নিলডাউন বাবা আর বড়পিসিকে (তাড়াহুড়োয় দাদু এদের দুজনকে মুক্তি না দিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিলেন) চমকে দিয়ে চার পাঁচজন মানুষের একটা দল হৈ হট্টগোল করতে করতে বাড়ি ঢুকল। তাদের কাঁধে পেল্লায় এক কাঠের প্যাকিং বাক্স।

    কাঠের বাক্স সন্তর্পনে মাটিতে নামানো হল। দাদুর নির্দেশে পান্ডেজী বাক্সের ডালা একটু ফাঁক করে যা দেখাল,তাতে সদ্য ঘুমভাঙ্গা ঠাম্মার মুখনি:সৃত "মরণদশা', "হাড়মাস কালি হয়ে গেল' ইত্যাদি বাক্যবন্ধ কর্পূরের মত উবে গেল।

    (ক্রমশ:)
  • ranjan roy | 122.168.255.34 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০১:৫৫424503
  • মুর্দানগর
    --------
    (৪)

    পেছনে কার পায়ের আওয়াজ যেন। খানিকক্ষণ আগেও মনে হচ্ছিল দু একবার। এবার যেন প্রত্যয় হল। হ্যাঁ, আমার পেছনে আরো কেউ আসছে। না, ঘাড় ঘোরালে কাউকে দেখতে পাচ্ছিনে, পায়ের আওয়াজ থেমে গেছে। কিন্তু চলতে শুরু করলে আবার সেই।
    তাহলে কি কেউ আমাকে ফলো করছে? কিন্তু কেন?
    আমি হাঁটার গতি বাড়ালাম। আবার কমিয়ে দিয়ে হটাৎ পেছন ফিরলাম। উঁহু, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। অবশ্যি কুয়াশা বড্ড বেশি।
    এবার ডানদিকে একটা সরু গলির মধ্যে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
    বাঁচা গেছে! পায়ের শব্দ আর নেই। এবার শেষ সিগ্রেটটা ধরালে হয়। দেশলাইয়ের খোঁজে পকেট হাতড়াচ্ছি এমন সময় অবাক কান্ড! আমার ডান হাতটা কেউ পেছন থেকে মুচড়ে ধরেছে। আর একজন চেপে ধরেছে আমার কলার। আমি তাদের দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু শরীরী উপস্থিতি টের পাচ্ছি।
    অন্তত: দুজন লোক আমাকে হিঁচড়ে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায়? জানিনে। চেঁচাব? কে শুনবে? আর আর গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না যে!
    হটাৎ গলি শেষ। একটা বিরাট ময়দান। কোন জনসভা হচ্ছে। আমি হকচকিয়ে দেখতে লাগলাম।
    দূরে বেশ উঁচু এক মঞ্চের ওপর জনা তিনেক ব্যক্তি। একজন বৃদ্ধ, অন্যটি মাঝবয়েসী আর তৃতীয়টি নারী।
    বক্তা কিছু বললেন আর বিশাল সভায় একটা শব্দহীন অট্টহাসির হা-হা-হা-হা ঝোড়ো বাতাস বয়ে গেল।
    আমাকে ওরা ভীড়ের মাথার ওপর দিয়ে যেন প্রায় হাওয়ায় ভাসিয়ে মঞ্চের দিকে নিয়ে চলল।
    মঞ্চের ওপর আসীন তিনজন আমাকে মনদিয়ে দেখছেন। কারুর চেহারা স্পষ্ট নয়। কেমন যেন কুয়াশা ঘেরা। তবে সবার চোখের তীব্র দৃষ্টি আমাকে পেনসিল টর্চের আলোর মতন বিঁধছে।
    --- তুমি কি জান তুমি সীমান্ত অতিক্রম করে বিনা অনুমতি অনুপ্রবেশ করেছ?
    বৃদ্ধের এমন সম্ভাষণে হকচকিয়ে যাই।
    আমতা আমতা করে বলি-- আমি কিস্যু জানিনে। আমি তো মুর্দানগরের ট্রেনের টিকিট কেটে উঠেছিলাম। আর সেই স্টেশনের্নাম শুনে নেমে পড়েছি।
    দ্বিতীয় জন বল্লেন--- সত্যি কথা বল। তোমার দলের নাম কি? তোমরা ক'জন?
    কি মতলবে ঢুকেছ?
    -- বিশ্বাস করুন স্যার! আমি একা। আর কোন বদ মতলবে আসিনি।
    প্রথমজন--- হ্যাঁ, হ্যাঁ, অন্তর্ঘাতের জন্যে খুব বেশি লোকের দরকার নেই। ন্যাকামি ছেড়ে দলের নাম বলে ফেল।
    --- কি বলছেন স্যার! অন্তর্ঘাত? আমি তো ভায়োলেন্সেই বিশ্বাস করি নে। জানেন তো আমার দলের নাম হল "" হৃদয়ের দিকে হলুদ সাবমেরিন''।
    ( এটা আমি কি বল্লাম! এটা আমি ক্যানো বল্লাম!)
    সারা সভা জুড়ে আবার সেই নি:শব্দ হাহাহাহা!
    - হল তো? মিথ্যে কথা ধরা পড়বেই। এই না বলছিলে তোমার কোন দল নেই?
    -- সত্যি বলছি, আমার মাথা খারাপ। আমার কোন দল নেই। সকাল বেলা অব্দি আমাকে একটু ঘুমুতে দিন, সকাল হলেই--।
    দ্বিতীয় জন যেন একটু অবাক।
    --- সকাল? সকাল কাকে বলে?
    ( এরা কি পাগল? না আমায় নিয়ে ইয়ার্কি মারছে?)
    -- সকাল মানে, সকাল মানে এই রোদ ওঠা, অন্ধকার কেটে যাওয়া।
    --- রোদ ওঠা? অন্ধকার কেটে যাওয়া? এখানে এমন কিস্যু হয় না। কোন রোদ ওঠেনা। আলো ফোটে না। কাজেই সকাল বললে কোন মানে হয় না।
    সত্যিকথা বল? এখানে কেন এসেছ?
    -- কি মুশকিল আমার এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে।
    ( আমার একটু একটু করে রাগ হচ্ছে।)
    -- বন্ধু? বন্ধু কাকে বলে?
    -- যাচ্চলে! আপনারা "সকাল" বোঝেন না, আপনাদের "বন্ধু' কি করে বোঝাই!
    --- চালাকি কোর না, সত্যি কথা বল। আমরা কথা বের করতে জানি।
    --- বন্ধু মানে? মানে যার সঙ্গে ঝগড়া হলে মন ভার হয়। যার সঙ্গে সব কিছু ভাগ করে নিতে চাই। যার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদি, মানে যাকে ভালবাসি।
    একটি পাতলা আওয়াজ শুনলাম-- ভালোবাসা!
    ( আবার সেই কহকশা! সেই অন্তহীন নি:শব্দ পাগল করা হাহাহাহা অট্টহাসি!
    উ:, পাগল করে দেবে!)
    এবার এগিয়ে এসেছে সেই নারী। ঝোলা জোব্বামত পোশাকের অন্তরালে তার বয়স বোঝা ভার। কিন্তু ঈগলের মত বাঁকা নাক, আর পেন্সিল্টর্চের মত তীব্র দৃষ্টি।
  • ranjan roy | 122.168.255.34 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০২:১৬424504
  • কিছু বোঝার আগেই তার লম্বা হাত জড়িয়ে ধরেছে আমাকে, পিষে ফেলতে চাইছে। এই হিমশীতল আলিঙ্গনের চাপে আমার দম বন্ধ হয়েআসে। তার মধ্যেও কেমন অনুভবে বেজে ওঠে--- আরে! এই নারীর স্তন নেই, স্তন নেই!
    কিন্তু আমার মুখের মধ্যে ওর জিভ! সে লকলকিয়ে খেলা করছে। তার উত্তাপ যেন স্টীম ইঞ্জিনের মত।
    উ:, এবার পচা রক্ত আর বাসী মাংসের স্বাদ। ঢুকে যাচ্ছে আমার ভিতরে, ছড়িয়ে যাচ্ছে আমার সঙ্কÄ¡য়।
    চেতনা হারানোর শেষ ভগ্নাংশে শরীরের সমস্ত অবশিষ্ট শক্তি জড়ো করে জোরে এক ধাক্কা! আর কি আশ্চর্য! ময়াল সাপের বাঁধন আলগা হয়েছে। এবার প্রাণপণে দৌড়ই।
    পেছনে ধাবমান পায়ের শব্দ, নেকড়ের গর-গর্‌।
    আমার পায়ে এখন শত হরিণের বল। দৌড়ের বাঁকে পেরিয়ে যাই মাঠ, বাজার, স্টেডিয়াম,শ্মশান।
    আবার লোকালয়। ফুটপাথের ধারে সাদাকাপড়ে মাথামুড়ি দিয়ে শুয়ে সারি সারি মানুষ। ওদের কারো ঘুম ভাঙছে না। দৌড়চ্ছি বটে, কিন্তু পেছনে ধাবমান নেকড়ের দলের সঙ্গে ব্যবধান ক্রমশ: কমে আসছে। আমার চাতি যেন ফেটে যাবে। জিভ ঠেলে বেরিয়ে আসছে, আর কদ্দূর!
    আরে! একটা মোড় ঘুরতেই কুয়াশায় জেগে উঠেছে একটা লাইট হাউস। ব্যস, ওইটুকু পার হলেই--। দ্বিগুণ উৎসাহে দৌড়তে থাকি। নেকড়েদের গর্‌গর্‌ একেবারে ঘাড়ের পেছনে। একটা বাঁক ঘুরতেই ফুটপাথে সারিসারি শুয়েথাকা সাদা কাপড়ের নীচের থেকে একটা হাত বেরিয়ে এসে আমার পা' ধরে হ্যাঁচকা টান মেরেছে। পড়ে যেতেই সেই হাত আমাকে যত্ন করে টেনে নেয় সাদা চাদরের তলায়।
    কানে বাজে আমার নিরুদ্দেশ বন্ধুটির চেনা স্বর:
    বড্ড হাঁপিয়ে গেছিস, হরি! আয় এখানে শুয়ে পড়।।
    (সমাপ্ত)
  • til | 220.253.71.161 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৮:২২424506
  • সর্বস্ব
    --

    সুহাস কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি যে কলকাতায় তার নিজের বাড়ী হবে! কলকাতা, সাধের কলকাতা, রাজারহাটে দুঘরের ফ্ল্যাটই নাহয়, তাই সই। কলকাতা তো বটে, বিনা শিয়ালদা হয়ে, লোকাল বাসে বাড়ী ফেরা? এ তো স্বপ্নের অতীত।

    দ্রুত বদলে যাচ্ছে কলকাতার স্কাইলাইন, বাইপাসের ধারে , রাজারহাটে এক নতুন শহর গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে, একটু একটু করে, এ এক নতুন কলকাতা সুহাসের চোখে; ডালহৌসি বা শিয়ালদার ফরডাইস লেনের মেসবাড়ীর সেই কলকাতা যেন কবেকার কোন সুদূর অতীতের, শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের কলকাতা, যেন উনবিংশ শতাব্দীর!

    তখন সাবিত্রীরা মেসে বাসন মাজতো। বা গল্পের নায়করা সামান্য ছুতোয় পশ্চিমে হাওয়া বদল করতে যেত। ঢং ঢং, ঘটাং ঘটাং করে রাতের শেষ ট্রাম গুমটিতে ফেরৎ যেত অবসন্ন শরীরে; আবার শ্যামবাজারে খাল পাড়ে, ভোরের ১২ নম্বর ট্রাম, তারের জালের সামনে ইলেকট্রিক বাল্বের হলুদ ম্যাড়মেড়ে হেডলাইট জ্বেলে চোখ মুছতে মুছতে দিন শুরু করতো।

    উনবিংশ শতাব্দীর? সুহাস আপনমনে বিড় বিড় করে বলেই উঠলো, ধুৎ, এইতো সেদিন। পঞ্চাশের দশকের শেষ আর ষাটের শুরুতেও কলকাতা তো এমনই ছিল; সুহাসের পরিষ্কার মনে পড়ে, লিষ্টি মিলিয়ে মিলিয়ে জিনিষপত্র ভরে শিবপুরের হোস্টেলে যাবার প্রথম দিনটার কথা। এখন ভাবলেই অবাক লাগে, সেই লিষ্টে একজোড়া টাওয়েল ও ছিল, গ্রামের ছেলে সে, সারাটা জীবন গামছা ব্যবহার করে এসেছে, তোয়ালে কেবল বালিশের ওপর পাতা দেখতে অভ্যস্ত, ভেবেই পায়নি এ সব কি আদিখ্যেতা! এখন বোঝে সেটা আসলে এক রকমের কলোনিয়াল উত্তরাধিকার, কবে ম্যানুয়াল লেখা হয়েছিল, 'সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে"।

    সুহাসের সেই কলকাতায় কেবল কলকাতার লোকেরাই থাকতো, ফ্যান্সি লেনের গলিতে বা সেই সব দামী জামাকাপড় পরা ক্লাশমেটরা, যারা সপ্তাহান্তে শনিবার দুপুরে ক্লাশ শেষ হলে পর, হাওড়া ষ্টেশন থেকে পাঁচ বা ছ নম্বরের ঢাউস স্টেট বাস ধরে সাউথ ক্যালকাটায় যেত। সুহাসদের কাছে সে এক অজানা দেশ, পুর্ণ, বিজলী সিনেমাহলের দেশ - ফাইন্যাল ইয়ার পাশ করা অবধিও যা তার কাছে অজানা অচেনাই রয়ে গিয়েছিল। তাদের কলকাতা শিয়ালদা, হাওড়া ষ্টেশন, হ্যারিসন রোড বা বড়জোর মেট্রো সিনেমা , লাইটহাউস, মেরে কেটে প্ল্যানেটারিয়াম অবধি।
    সেই কলকাতায় নিজেদের বাড়ী? সে তো কল্পনার ও অতীত, কোনদিন ভাবেওনি সুহাস। পাশ করে কিছুদিন মেসে থেকে ট্রেনিং করেছিলো নেতাজি সুভাষ রোডের এক ক্রেন ডিজাইন কোম্পানীতে , তারপর ভাসতে ভাসতে এ শহর সে শহর ঘুরে শেষে সুদূর মেলবোর্ন।

    গন্তব্যে পৌছুনো, নাকি যাত্রার শেষ। কোনটা? শেষেরটাই বোধহয়, ক্লান্ত শরীর নিয়ে টেন ডাউন বম্বে-হাওড়া মেল সাঁতরাগাছি পৌঁছে গেছে, আর একটুখানি মাত্র, দরমার বেড়ার চায়ের ষ্টল, পুকুরঘাটে বাসন মাজার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, সুহাসেরও এবার ঘরে ফেরার পালা, অন্তত সেই ইচ্ছেতেই রাজারহাটে একটা দুঘরের ফ্ল্যাট কিনেছে। এবারের ভারত ভ্রমণ সেই কারণেই, বাড়ীর চাবি হাতে পাবে। উ: বিশ্বাস হতে চায় না, কলকাতা থেকে লোকাল বাসে বাড়ী পোঁছুনো, শিয়ালদা না হয়ে! নিজেকে আকবর বাদশার সঙ্গে তুলনা করবে কি!

    হঠাৎ তার মনে হল, মানুষের জীবনটা এতই ছোট, মহাকাল তো অনেক বড় ব্যাপার, এই শিয়ালদার চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম বা ওপরের স্ট্রাকচারের ট্রাসগুলো তার ষোলবছরে যেমন ছিল এখন তেমনিই রয়ে গেছে, মাঝখান থেকে তারই যাত্রার সমাপ্তির ওয়ার্নিং বেল বেজে উঠলো, এবার খাতা জমা দিতে হবে।

    কদিন ধরেই রাজারহাটে যেতে হচ্ছে সুহাসকে, ফ্ল্যাটের কোন কাজ বাকী আছে কিনা, কোন ডিফেক্ট আছে কিনা, হ্যান্ড ওভারের আগে খুঁটিয়ে দেখে না নিলে পরে কোম্পানী কোন দায়িত্ব নেবে না। তাই এত সতর্কতা। স্বভাবে সে আবার খুঁতখুঁতে টাইপের, তার ওপর এতদিন বিদেশে থেকে নজরটাও গেছে উঁচু হয়ে, বিশেষত বাড়ীর ফিনিশিঙের ব্যাপারে। তার মেলবোর্নের বাড়ীটা জমি কিনে তারপর বানানো; যে পথে সাধারণত: ভারতীয়রা যায় না, কে আর উটকো ঝামেলা নিতে চায়! সবাই রেডিমেড বাড়ীতেই খুশী।

    রাজারহাটের এদিকটায় এখন বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে, বিশাল বিশাল ট্রাক, কংক্রীট মিক্সারের আনাগোনা, লোহার শিক আনলোড করছে ট্রাক থেকে, কোথাও বা অতিকায় ক্রেনের কেরামতি; শীতের শেষ এখন , বসন্ত তো কবেই উধাও কলকাতা থেকে- গরম পড়তে শুরু করেছে, মাঝে মাঝেই অল্প হাওয়া দিতেই ধূলো উড়ছে। এখানে ওখানে সব অতিকায় উঁচু বাড়ী তৈরী হচ্ছে, ভারা বাঁধা। মিস্ত্রী মজুর, ক¾ট্রাক্টরের লোকজনের ঘোরাফেরা, দু একটা সাইকেল রিকশা আর মাঝে মধ্যে এক আধটা গাড়ী হুস করে চলে যাচ্ছে নব্বই ফুট চওড়া ছ লেনের নতুন রাস্তা দিয়ে।
    সুহাসদের ব্লকটা বড় রাস্তাটা থেকে সামান্যই ভেতরে, প্রথম দিন রিকশাচালক ওকে মোড়ে নামিয়ে দেখিয়ে দিল।

    'বাবু চা খেলে কিন্তু আমার বউ এর দোকানেই খাবেন, ঐ যে ওখানে'। ছোট বড় কয়েকটা ঝুপড়ি মোড়টায়, ঝুপড়ি ও বলা যায় না, কোন রকমে একটা আচ্ছাদন দেয়া আর কি। সুহাস কথাটা গায়ে মাখলো না, তবে মনে মনে প্রশংসা করলো রিকশাচালকের মার্কেটিং দক্ষতার। জিজ্ঞেস করতে সাহস হল না, তারা কি রাজারহাটের এই সব গ্রামের আদি বাসিন্দা। হুম, গ্রামের তো নাম ছিল, আটঘরা, তেঘরা, সবটাই তো রাজারহাট নয়। কেমন কেমন লাগে সুহাসের, তার যেখানে ব্লক, সেখানে এই কিছুদিন আগে হয়ত কারুর পুকুরঘাট বা তুলসীতলা ছিল। না এসব চিন্তা করলে ভাত খেতেই পারবে না সে। আজ থেকে ষাট সত্তর কি দেড়শো বছর পরে লোকে ভাবতে বসবে, এই ঝাঁ চকচকে শপিং সেন্টারের পাশে আটঘরা কথাটা কেমন যেন বেমানান। আজকের কলকাতায় বাদুড়বাগান যেমন।

    বাড়ীর ইন্সপেকশান বেশ খাটুনির এবং সময় সাপেক্ষ। কয়েক ঘন্টা কেটে গেছে খেয়ালই নেই সুহাসের, সেই কখন এসেছে, একদিনে শেষ হবে না। যাবার পথে চায়ের তেষ্টা পেতে সুহাস কি ভেবে ঐ রিকশাচালকের বউ এর দোকানেই গিয়ে পৌঁছুল। দোকান? একটা কালো প্ল্যাস্টিকের ছাউনি দেয়া খেলাঘর টাইপের, বাঁশের চালাও বলা যায় না তাকে। কয়েকটা ইঁটের ওপর ভাঙ্গা স্ল্যাব বসানো বেঞ্চি। তবে চায়ের জন্যে কিন্তু অত্যাধুনিক ফ্লাস্ক, কটা বয়েম ভর্তি বিস্কুট আর হাবি জাবি। হুস হুস করে প্রাইমাক্স স্টোভ চলছে না এটাই বাঁচোয়া। খদ্দের হলো সব ওখানে কাজ করতে আসা কুলি কামিন, মিস্ত্রী মজুর, ড্রাইভার , খালাসী আর কি।

    ওষুধের গেলাসের সাইজের প্ল্যাস্টিকের কাপে কি সুহাসের পোষায়, মগ ভর্তি চা কফি খেতে অভ্যস্ত সে; 'আর এক কাপ দেবেন তো'। বেশ ক্ষিধে পেয়েও গেছে, সঙ্গে আরেকটা বিস্কুট ও নিল। আর তখনই নজর পড়লো মহিলার প্রতি, চেনা চেনা ? কেমন যেন একটা আলগা সৌন্দর্য্য মহিলাটির। সুহাসের জীবনে এই রকম থমকে থাকা মুহূর্ত বেশ কয়েকবার ই এসেছে; তবে হাতে গোনা যায়।
    এই রকম করে সুহাসিনীর আবির্ভাব নতুন নয় তার জীবনে, কি ভাবে যেন চোখ আটকে আসে, ফেরানো যায় না। কিন্তু এই মহিলার তো ময়লা ছাপা শাড়ী পরনে, বয়স? চল্লিশ ও হবে না হয়ত, অপুষ্টিতে, ঐ পরিবেশে যৌবন বড়ই ক্ষণস্থায়ী ; কিন্তু একি? কাটা কাটা চোখ মুখ, অবিন্যস্ত রঙচটা শাড়ীতে ঢাকা শরীর, অথচ? সুহাস বুঝতে পারছে আবার এইখানে, এই ইঁট কাঠ, লরী ট্রাক, ভাঙ্গা চোরা রাস্তা, ভারাবাঁধা সবচেয়ে আনরোম্যান্টিক পরিবেশের মধ্যে তার রাশিয়ান রুলে' আর একবার কটাক করে আটকে পড়েছে নতুন এক গাঁটে। নতুন সুহাসিনী। বুক ঢিপ ঢিপ করতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। প্রমাদ গুনলো সে, একি, সুহাসিনী এইখানে, এই পরিবেশে।

    বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে পঞ্চান্ন নম্বর বাসের লেডিজ সীটে বসা সেই মেয়েটি- কালো ফ্রেমের পুরু চশমার নীচে ঢাকা চোখ, লাল পাড় সাদা শাড়ীর সেই মেয়েটির মুখ এখনও তার মনে আঁকা রয়েছে, কত কত বছর আগেকার কথা; উনিশশো আটষট্টি অর্থাৎ আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে দেখা সেই মুখ। অথবা উনিশশো তিয়াত্তরের ১৫ নম্বর ট্রামের সেই মেয়েটি? সুহাস তখন ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতো, শিয়ালদা নেমে ট্রাম ধরে অফিস। সামনে দিয়ে অন্য খালি ট্রাম গেলেও ছেড়ে দিত, যতক্ষণ না ১৫ আসে। মেয়েটিকে এখন ও চোখের সামনে দেখতে পায় সে, পেঁজা তুলোর মতন নরম তার শরীর, অন্তত সুহাসের তাই মনে হত, রোজ কলেজ স্ট্রীটের স্টপে নেমে যেত, সেই সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ; কথা বলব বলব করেও সাহস করে উঠতে পারেনি। বরাবরের লাজুক সে, তার ওপর পকেট গড়ের মাঠ, বাবা মারা গেছেন, সংসারের অগাধ দায়িত্ব কাঁধের ওপর।

    সেই সব সুহাসিনীরা এখন কে কোথায় কে জানে। তারাও নিশ্চয় বয়সী হয়েছে, অবশ্যই তাই। সে কিন্তু মনের গোপন কুঠরীতে তাদেরকে রেখে দিয়েছে সেই টাইম ক্যাপসুলে, ভোলেনি। এও এক ধরনের বিলাসিতা। নিজের মনটাকেও তাদের স্মৃতির সঙ্গে অমলিন রেখেছে, বাড়তে দেয়নি।

    নতুন সুহাসিনীকে বেশ গেরেমওয়ালী মনে হল, রোদে পোড়া কালো মুখখানা কিন্তু ছিপছিপে চেহারা, খরিদ্দাররা অর্ডার করছে, নি:শব্দে চায়ের গেলাস, বিস্কুটটা বা সিগারেটটা এগিয়ে দিচ্ছে; সবাই ওকে বেশ সম্ভ্রম করে। একটু সেক্সি ভাব অবশ্য সব মিলিয়ে। সে অবশ্য এসব তেমন করে ভাবছিল না। চোখে ধরেছে, ক্লিক করেছে, ভাল লেগেছে, মনের ক্যামেরায় ছবি গেঁথে গেছে , ব্যস। সে তো ক্রীড়নক মাত্র।

    পরদিনও একই রুটিন প্রায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ঘরদোর পর্য্যবেক্ষন করা , বাথরুমে জল আসে কিনা, ব্যালকনিতে জল সরে কিনা, বিরক্তিকর কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজ; শেষে কিসের টানে আবার সুহাসিনীর চায়ের দোকানে। দু দু গেলাস চা ও তার সাথে দু দুটো বিস্কুট। হুঁ, নি:শব্দে সুহাসিনীকে দেখা। না, শুধুই দেখে যাওয়া, নিকষিত হেম এক্কেবারে।

    তৃতীয় দিন দোকানে সুহাস একা, ভর দুপুর যদিও, মানুষের ভিড় নেই, আশে পাশে সামান্য দুরেই অবশ্য লোকজন, কিন্তু সুহাসিনীর দোকানে কেবল সে , একাকিনী। কোন খরিদ্দার নেই।

    সুহাস ভাঙ্গাচোরা স্ল্যাবের বেঞ্চিতে বসতেই সুহাসিনী বিনা প্ররোচনায় বলে উঠলো, ' দু কাপ চা, দুটো বিস্কুট' । মুখ তুলে তাকাতেই সুহাস তাঁর মুচকি হাসি দেখতে পেল। ভুবনভোলানো হাসি, এক লহমার জন্যে পৃথিবী যেন ঘুরতে ভুলে গেল, এক রতি কাল থেমে রইল। থতমত খেয়ে উঠলো সুহাস, একি, সুহাসিনী কি তার মনের কথা পড়ে নিয়েছে নাকি। ভারী মুশকিল তো, এই প্রথম সে কোন সুহাসিনীর সঙ্গে কথা বলছে! বরাবরের লাজুক সুহাস, বলে উঠলো, কি করে জানলেন?
    সুহাসিনী আপার রিপিট করলো, দু কাপ চা, দুটো বিস্কুট,তাই তো? ঠোঁটের কোনে সেই হাসি।

    বিস্কুট এগিয়ে দিতে গিয়ে কেমন যেন অসাবধানে, নাকি ইচ্ছে করেই তাঁর বুকের কাপড় এমনিতেই সরে গেল, ময়লা জীর্ণ সেলাই ছেঁড়া ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে বুক দুটো কিছুক্ষনের জন্য সুহাসের সামনে উন্মুক্ত হয়ে রইলো, যেন তাঁর খেয়ালই নেই।

    কেন জানিনা সুহাসের মনে হলো, সুহাসিনী বলতে চাইছে, 'পথিক, আমার তো কিছুই নেই, এই বিবর্ণ শাড়ী আর তেলচিটে ব্লাউজ, খেলনা দোকান; তোমায় দেখে মনে হয় তুমি পরদেশী, তোমার চোখ আর মনের কথা কিন্তু আমার নজর এড়ায়নি। কি দেখলে আমার মধ্যে? আমার না আছে লিপষ্টিক, না ভাল শাড়ী, কিসে যে তোমায় ভোলাই; আর রূপ যৌবন? সময়, হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর অপুষ্টি সবই তো নিয়ে নিয়েছে এই বয়সেই, তবু যেটুকু আছে , এই নাও, দ্যাখো, আমার সর্বস্ব তোমায় উৎসর্গ করলাম।

    বাইরের রোদ জল, ধুলো বালি থেকে বাঁচানো সেই সম্পদটুকু কিন্তু প্রায় অক্ষুণ্নই রয়ে গেছে, সময় তাতে তেমন ছোপ ফেলতে পারেনি এখনও।
    ---
    সাতদিন বাদে।

    'ফেরার সময় হল বিহঙ্গের'। এয়ারপোর্টের পথে সুহাস ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলে উঠলো নতুন রাস্তা দিয়ে যেতে। সেই দোকান ঝুপড়ির কাছে আসতেই ড্রাইভারকে থামতে বললো, থামতে না থামতেই আবার মত বদল, চলুন সোজা এয়ারপোর্টে, দেরী হয়ে যাবে নতুবা।
    সুহাসিনী মনের ক্যামেরাতেই থাকুক, পরে যখন আবার আসবে, এই সব ঝুপড়ি নতুন কোন কাজের সাইটে উঠে যাবে, হারিয়ে যাবে, আদুরে মধ্যবিত্ত মহিলারা লাল শ্লীভলেস ব্লাউজ পরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পাশের ফ্ল্যাটের বউটির সঙ্গে গল্প করবে।
    হারিয়ে যাবে? যাক না, শুধু স্মৃতিটুকু থাক।

    -----------------------

    (পুন:প্রকাশিত ফ্রম জমিয়ে আড্ডা ডট কম)
  • Nina | 72.45.133.34 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৯:৩৮424507
  • লামাআআআআআআআআআঅ----এরম কল্লে খেলবনা।:((

    তিল নাড়ু থামিওনা, প্লিজ।

    ক্ষি ক্ষান্ড! ভ্যালেনটাইন উইকএন্ড--টোনাটুনি বেড়াতে এসেছি বার্কশায়ারে----বরটা কখন থেকে ডাকাডাকি করে ঘুমিয়েই পড়ল--আর আমি কিনা কম্পু নিয়ে বসে আছি? এমৎ চন্ডালের ন্যায় কর্ম করিয়া যতপরনাস্তি লজ্জিত হয়ে লেখা থামালুম-----দুদিন আর এমুখো হবনা---(পারব কি?)
  • chandona | 24.34.249.18 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৮:৪৮424508
  • এই টিল
    এতো ভালো নাড়ু তুমি বানানো শিখলে কোথাথেকে? ;-)
  • chandonaa | 24.34.249.18 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৮:৫৫424509
  • বন্ধুগণ
    sorry আগের comments টায় আমার mail ID ভুল ছিল
    ,,,,,, ণিনা দি ইস তোমার জন্য আমার দুখু হচ্ছে গো, ভ্যালেন্টাইনের
    আনন্দ টা মাঠেই মারা গেল শেষ বেস thats nat fare ;-)
  • M | 59.93.208.40 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২৩:০১424510
  • এই এক গাঁও,ঐ এক গাঁও,--মধ্যে শুনো মাঠ--
    খানিকটা তা'র ধানে ভরা, খানিক ভরা পাট।
    এ-গাঁও যেন ফাঁকা ফাঁকা,হেথায় হোথায় গাছ;
    গেঁয়ো চাষীর ঘরগুলি সব দাঁড়ায় তারি পাছ।
    ও-গাঁয় যেন জমাট বেঁধে বনের কজল কায়া
    ঘরগুলিরে জড়িয়ে ধ'রে বাড়ায় ঘরের মায়া।

    ভারী সুন্দর বলছিস তো।এটা কোন কবিতা।

    ঘোড়ার মাথা, তোকে কিছু বলে কোনোদিন সুখ পাওয়া যায় না।

    এটা কবি জসীম উদ্দিনের নক্সী-কাঁথার মাঠ।

    তো হঠাৎ বললি?

    আমি ভাবছিলাম এমন একটা গাঁয়ে গিয়ে থাকলে কেমন হতো? তুই বেশ সকালে এক পেট পান্তা বা এক ধামা মুড়ী খেয়ে মাঠে চড়তে যেতিস?

    হোয়াআআআআট?

    ও না! স্যরি, মাঠে চাষ করতে যেতিস, আর খাটা খাটনির জন্য পুরো পাথরে কোঁদা চেহারা হতো তোর ঠিক রূপাইয়ের মতো।

    তা আমি খুব খারাপ নাকি? অন্য কাউকে মনে ধরলো?

    হ্যাঁ ধরছে, তো? অমন ভুঁড়ি।

    আর তুই যে বুড়ি , ভুলে গেছিস?

    কে এই রূপাই? অ্যাঁ?

    ভ্যাঁ, এ আমি কার হাতে পড়লাম?এটা ঐ গল্পের নায়ক।

    তালে ঠিকাছে।

    শোন না, কি রোমান্টিক,

    নতুন চাষা ও নতুন চাষানী পাতিল নতুন ঘর,
    বাবুই পাখীরা নীড় বাঁধে যথা তালের গাছের 'পর।
    মাঠের কাজেতে ব্যস্ত রূপাই, নয়া বউ গেহ-কাজে,
    দুইখান হ'তে দুটি সুর যেন এ উহারে ডেকে বাজে।
    ঘর চেয়ে থাকে কেন মাঠ পানে,মাঠ কেন ঘর পানে,
    দুইখানে রহি' দুইজন আজি বুঝিছে ইহার মানে।

    বাহ! কিন্তু............

    আবার কিন্তু কিসের?

    আজ কবিতা শোনাচ্ছিস কেন?

    এও বুঝলিনা,
    সিম্পল!
    তোকে মিস কচ্ছি।
    খুউউউউউউউউব!

  • M | 59.93.210.3 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৫:৫৮424511
  • টইটা তুলে দিলুম।
    লামা ওটা কি ছেলো?:X
  • til | 220.253.71.161 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:০৩424512
  • তুলে দেয়া যায়?
    এই রে!
  • M | 59.93.210.3 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:০৭424514
  • অর নাড়ু কাঁহা?
  • M | 59.93.210.3 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:০৭424513
  • ডুবে গেছিলো তো।
  • til | 220.253.71.161 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:৫৪424515
  • বিগ M,
    এই নিন, এক রেকাবী নাড়ু। তিতকুটে লাগলে মুখ বিকৃত করবেন না যেন।
  • til | 220.253.71.161 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:৫৫424517
  • একদা তিলের গলায় কাঁটা ফুটিয়াছিল

    সেই কবে থেকে নিজে নিজেই মাছ খেতে শিখেছি- "যখন আমার রথীর মত বয়স ছিল" তখন থেকে। তার আগে কাকিমা কাঁটা বেছে আঙুলে টিপে টিপে নি:সন্দেহ হলেই তবে মুখে তুলে দিতেন। বিশেষ করে রাত্তিরে খাবার সময়, ঘুম ঘুম চোখ, হাট থেকে আনা রুই বা পোনা মাছ, আবার বায়না ধরলে কোন কোন দিন সকালের পান্তাভাতও খাইয়ে দিতেন। আহা, পান্তাভাত প্রচুর আমানিসহ (ভাত ভেজা জল), garnished withKL (কাঁচা লঙ্কা) এবং served with আগের দিনের বাসি মাছের ঝোল!
    আমার থিওরি হল মাছ খাওয়াও একটা experience এর ব্যাপার; মাছের অ্যানাটমির বিশেষ করে অস্থি সজ্জার সম্যক জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়, কৈ মাছের পেটের দিকের সেই বাঁকা কাঁটা অথবা ফলুই মাছের কাঁটার ডিজাইনে যে পার্থক্য আছে, যেটা একমাত্র অভিজ্ঞতাতেই ট্যাকল করা সম্ভব; খয়রা মাছের সুক্ষ্ম কাঁটা যে চিবিয়ে খাওয়াই শ্রেয় সে কি বলার অপেক্ষা রাখে? আচ্ছা, আমিই বা কেন বেওকুফের মত কাজ করছি- যারা এই লেখা পড়ছেন তারা সকলেই বাঙালী অতএব মায়ের কাছে মাসীর গল্প হয়ে যাচ্ছে।
    হুঁ, যাহা বলিতেছিলাম। ২০০৭ এর মাঝামাঝি এক সন্ধ্যেবেলা ডিনার টেবিলে কতিপয় অতিথি, একটু আনকা কিছু পরিবেশনের তাগিদে পেঁয়াজ, সরষে দিয়ে সরল পুঁটির ঝাল রান্না হয়েছে। সরল পুঁটিগণ তার ছমাস আগে বাঙলাদেশের কোন নদী নালায় আত্মসমর্পন করেন এবং আমি মাস দুয়ের আগে মেলবোর্ন ভ্রমনের সময় সেখানকার দোকান থেকে সযত্নে বয়ে আনি- মহার্ঘ্য সওদা! এইখানে একটু কিন্তু আছে, আমাদের লঙ্কা ওদের কাছে মরিচ তেমনি আমাদের সরপুঁটি ও তাদের সরলপুঁটি যে এক species নয় তা কে জানতো! ভেবেছিলাম অপভ্রংশে ল হাওয়া! ( এই হাওয়া হয়ে যাওয়াটাকে ব্যাকরণে কি যেন একটা বলে, অভি...,অভিকর্ষ, অভি...., অভিসার (?)। না:, ভুলেই মেরে দিয়েছি।

    খাওয়া দাওয়া চলছে, সঙ্গে যথারীতি দেশোদ্ধার, ইন্ডিয়াতে কি অবস্থা ইত্যাদি, ফিশ উইথ লেমন প্লাস সাদা ফেনিত দ্রাক্ষারস..........। খক, খক..... এই রে মনে হচ্ছে গলায় যেন খচ খচ করছে, কাঁটা ফুটলো কি! যথারীতি এক দলা ভাত, আস্ত কলা সব দাওয়াই প্রয়োগ করা হল; নাহ, তাতেও ফল হল না।
    কি অনাসৃষ্টি কান্ড, অতিথিদের সামনে, ভাগ্যিস বড় সড় পার্টি নয়, সামান্য দু চার জন মাত্র। দেবব্রত ওরফে দেবু, ডাক্তার হাসপাতালের ব্যাপারে এক্সপার্ট- 'চলো, হাসপাতালেই যাওয়া যাক"। শনিবার উইকএন্ডে তা ছাড়া আর ডাক্তারই বা কোথায় মিলবে।
    আবার হাসপাতাল, হে ভগবান! এবং এমার্জেন্সীতে। গেটকীপার নার্স দিদিমণি- যিনি সাব্যস্ত করেন ভর্তি করা হবে কিনা বা কি প্রায়োরিটি, সব শুনে বললেন অপেক্ষা করুন। স্বাভাবিক, আমার তো প্রাণসংশয় নয়, আরও কত কত রোগী আছেন, অপেক্ষায়। যাইহোক, ঘন্টাচারেক অপেক্ষার পর ভেতরে নিয়ে গেল, উইকএন্ডের এমার্জেন্সী ওয়ার্ড, নামকরা হাসপাতাল- ফাইভ স্টার হোটেলের মত ঝকঝকে (ইয়েস, পাবলিকই), কিন্তু তা সঙ্কেÄও প্রচন্ড গাদাগাদি মনে হল, বেশ ব্যস্ততা। আসলে আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তি, কাঁটা বিঁধে আছে , এই যা! জ্ঞান টনটনে, আমার তো অমনি মনে হবেই! বেডে শুইয়ে যথারীতি সব রকম টেস্ট। লজ্জাও করছে, রাত বেরাতে জ্বালাতন করা। যে নার্সই আসছেন, জিজ্ঞেসবার্তা করতে আমি ডিসক্লেমার দিয়েই শুরু করছি, " sorry সিস্টার,...তোমাদেরকে বিরক্ত করছি, তোমরা এত ব্যস্ত ইত্যাদি কাঁদুনি গাইছি।' তো তারা সান্ত্বনা দিচ্ছেন, আরে না না, এরকম কাঁটা ফোটা কেস মাঝে মাঝেই আসে, "তুমি একা নও"।

    সংক্ষেপে সারি, এক্সরে হলো, কোন সন্দেহ নেই, কাঁটা বেশ ভেতরেই জমিয়েই বসে আছেন; ENT সার্জন পরদিন সকালে আসবেন, অতএব আবার অপেক্ষা।
    তিনি এলেন, সকালে হাতে ছোট্ট গীটারের মতন বাক্স। ভীষণ সিরিয়াস ডাক্তারবাবু, প্রৌঢ়, মুখে হাসি নেই তবে মুর্তিমান আত্মপ্রত্যয়। একটা নাকছাবির হীরের সাইজের ক্যামেরা লাগানো আধশক্ত দড়ি মতন কি একটা নাসিকার মধ্যে চালান করে দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রায় দিলেন, "Book him for OT"। তিনি যা বললেন, মর্মার্থ হল, এমনি হাঁ করিয়ে বের করতে পারবেন না।
    যা: গেল! আবার অপেক্ষা, এবার অপারেশন থিয়েটারের এর ante room এ। বুঝুন ঠেলা, এ যাত্রা জলজ্যান্ত সুস্থ আমি; অনেক সত্যিকারের অসুস্থ রোগীর সাথেই অপেক্ষা করছি। ভয় তো আছেই আর আছে লজ্জা, ছি ছি, একি কান্ড বাধিয়ে বসেছি। ও: এর মাঝে শনিবারের রাত গড়িয়ে রবিবারের দুপুর হয়ে এসেছে। দেবু, মাঝে মাঝেই আসছে যাচ্ছে, সে এখানকার ইউনিভার্সিটিতে এর‌্যোনটিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ায়, কাছেই তার অফিস, মাঝে মাঝে গিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখে আসছে।
    অপেক্ষা তো বেড়ে যাবেই, কোন একটা এমার্জেন্সী কেস আসছে আমি আবার লাইনের পেছনে পড়ে যাচ্ছি। তেষ্টায় বুক ফেটে যাচ্ছে, সরল পুঁটির কাঁটা হলে কি হবে, জেনারাল অ্যানেস্থেসিয়ার সকল জটিল পদ্ধতি মেনে চলতেই হবে যে!
    অবশেষে, স্বর্গদ্বারে প্রবেশপত্র মিললো, আবার সেখানকার নার্স দিদিদ্বয়কে কাঁদুনি গেয়ে শোনালাম। তারাও বললেন, এরকম কেস তারা মাঝে মাঝেই সামলান। আমায় ছেলে ভোলালেন কিনা কে জানে। অত:পর, একটি ট্যাবলেট এবং ছোট্ট ইঞ্জিশান!
    * * *
    অসম্ভব শান্ত, প্রায় নি:শব্দ একটা বিরাট লম্বা হলে ঘুম ভাঙ্গলো, সিস্টার রেডি ছিলেন, একটা ছোট্ট ক্লীয়ার প্ল্যাস্টিকের শিশিতে আমায় উপহার দিলেন সেই সরল পুঁটির বক্র কন্টক!
    ইতোমধ্যে তেইশ ঘন্টা পার।
    ভাবছিলাম, জীবন মৃত্যুর মধ্যে মাত্র একচুল ফারাক! আচ্ছা পটকে গেলে? কি লজ্জা, কি লজ্জা। সরল পুঁটি খাইতে গিয়া পটল তুলিয়াছেন ....; তবে হ্যাঁ, যথার্থই Bongsসুলভ পটকানো বটে, তাই না?

    Moral: না জানিয়াসু অচেনা অজানা মৎস্যম মা ভক্ষ:।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন