এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাস্তুহারা

    ranjan roy
    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ | ১১৫৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  •  ranjan roy           | 115.184.40.180           | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ০১:২৮428361
  • আবার বাস্তুহারা
    -----------------
    { পাইদি অনেকদিন ধরে বলছিলো ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষের ( রাজনৈতিক - ধামি রে ক - পেটের তাড়না , যে কারণেই হোক ) কথা নিয়ে কিছু লিখতে , মানে কিছু ভাবতে। সংবেদনশীল বিষয় , কিন্তু গুছিয়ে ভাবতে পারছিলাম না। এমন সময় আমাকেই হতে হল বাস্তুহারা। যে বিলাসপুর শহরে আমার এত বন্ধুবান্ধব , নব্বইয়ের দশক থেকে একটানা উনিশবছর কাটালাম -- সেখান থেকে পিঠটান ! তবে কি আমি সত্যিকারের ছত্তিশগড়িয়া হতে পারিনি ? এখানকার লোকের চোখে বাঙালীই রয়ে গেলাম ? নিজের সম্বন্ধে যা ভাবতাম তা আসলে মানসিক বিলাসমাত্র ? তাহলে আমার ঠাঁই কোথায় ? আগামী বছর রিটায়ার করে কোথায় আস্তানা গাড়বো ? এই বালস্য বাল জীবনের তৃতীয় ইনিংস
    কোথায় খেলবে হরিদাস পাল ? কোন মাঠে ? কোন পিচে ? বড়মেয়ে শোনালো শাহরুখ খানের কোন হালে রিলিজ হওয়া ফিলিমের ডায়লাগ্‌ ,- যার সারমম রে হল বরফের নিয়তি
    তার আদি জলের উৎসে মিশে যাওয়া। তবে কি কোলকাতা ? কিন্তু আমার চেনা কোলকাতা তো কবে হারিয়ে গেছে। আজকের কোলকাতায় পা ' রাখা মানে গাল রে ফ্রেন্ডের অন্য বাড়িতে বিয়ে হয়ে গেলে মিষ্টির বাক্সহাতে সেখানে দেখা করতে যাওয়া।
    কি করবো ? উত্তর জানা নেই। তাই এলোমেলো ভাবনাচিন্তাগুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা।

    এক
    ভয়ের ত্রিমাত্রিক চেহারা
    ----------------------
    ১৯শে সেপ্টেম্বর , শনিবার। সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেল। মহালয়ার প্রিয় গান "" বাজলো তোমার আলোর বেণু '' শুনতে ক্যাসেট চালালাম। যারা ভোরে ডাকতে বলেছিলো তাদের কাউকেই ডাকা হয় নি। সামান্য অপরাধ বোধ নিয়ে ব্যাংকে গেলাম ডিউটি করতে ট্রেন ধরে। আগামী অষ্টমীর দিন ছুটি নেবো। গাড়ি নিয়ে সপরিবারে যাবো দেড়শ ' কিলোমিটার দূরে ইস্পাতনগরী ভিলাইয়ে , ভাইবৌ - ভাইঝির কাছে। আমার মা - বৌ - মেয়ে ওখানে কালীবাড়ির পূজোয় অঞ্জলি দেবে , আমি প্রসাদ খাবো। রাত্তিরে পূজোপ্যান্ডেলের স্টেজে ভাইবৌ - ভাইঝির গ্রুপের গান শুনবো , বিশেষ করে হিন্দিতে গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত।
    সেসব তো অনেক পরের কথা। আপাতত: শনিবার , ব্যাংকে হাফ - ডে মজদুরি করে মুম্বাই - হাওড়া মেল ধরে বিলাসপুর ফিরবো , দুই - মেয়ে ( লরেল - হাডি রে) দিল্লি থেকে
    দুপুরেই বাড়ি পৌঁছে মায়ের হাতের রান্না মাংসভাত খেয়ে টেনে ঘুম দিচ্ছে। আমি ফিরলে রাত্তিরে জমিয়ে আড্ডা দেবে যে ! কাল রোববার , পরশু সোমবার --- টানা দু ' দিন ছুটি।
    "" মন যে খুশি - খুশি আজ '' গুনগুন করতে করতে সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ আমাদের ফ্ল্যাটবাড়ি "" বৈশালী প্রাইড্‌ '' এ ঢুকছি। কিন্তু কোথাও বেসুর বাজলো। গ্রাউন্ড ফ্লোর কিরকম অন্ধকার , অন্ধকার ! অথচ অধিকাংশ ফ্ল্যাটে আলো আছে। আমাদের ফ্ল্যাটেও।
    একি ! সিঁড়ির নীচে যেখানে একটা বোডে রে সবার মিটার লাগানো সেখানে দুজন বিজলী কম রে চারী কাজ করছে , প্যানেল ডোর খোলা আর আমাদের হ্যারিকেন - মাকা রে এমাজে রে ন্সি লাইট হাতে আমার গিন্নি দাঁড়িয়ে , আর কোমর থেকে ঝুঁকে গভীর মন:নিবেশ করে মেরামতির কাজ দেখছেন হরিয়ানাওয়ালা মি: সাদা রে না , ২১০ ফ্ল্যাটের ভাড়াটে।
    হ্যাঁ , এছাড়া ওঁর অ¡রেকটি পরিচয় বেশি প্রাসংগিক। বিল্ডার এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে দাঁড়িয়ে এখন শুধু আমরা দুই পরিবার।বাকি ফ্ল্যাটওলারা হয় বিল্ডারের আপাত শক্তিশালী স্থানীয় পলিটিক্যাল সোস রে ওলা শিবিরে যোগ দিয়েছে , আর নইলে "" সক্কালে অফিস যাই , রাত্তিরে বাড়ি ফিরে শাকভাত খেয়ে চুপচাপ পাশ ফিরে শুই '' -- কাজেই
    মলে নেমে কুমিরের সংগে বিবাদ ! পাগল নাকি ,- বলে "" পতলী গলী '' তে সেঁধিয়েছে।
    সিঁড়ির বাঁকে দাঁড়িয়ে পড়ি। -- ক্যা বাত্‌ হ্যায় ?
    প্রবীণ সাদা রে না বিরক্তিতে খিঁচিয়ে ওঠে। --- মৎ পুছিয়ে ! ইন্‌ শালোঁ কী হারামীপন্থী সে উব্‌ গয়া হুঁ। ফির হামারে মিটার সে হুকিং। আজ রঙ্গে হাত পকড়া হুঁ। ওহি চার মন্‌জিল কে সদা রে র। শালে ফ্ল্যাট কা রেজিস্ট্রেশন নহী কিয়ে , বিজলী মিটার নেহি লিয়ে। পর ডাক্ট লগাকর সেন্টলাইজড - এসি চালা রহে , তিন কমরেঁ মেঁ। ওহি বিল্ডার কে লাইনম্যান সে হুকিং কর রহা থা। ভাগ কে চৌথা মন্‌জিল মে সদা রে র কে ফ্ল্যাটমেঁ ছুপ গয়া।
    মিসেস বল্লেন -- ফিউজ কল আফিসে কম্‌প্লেন নিচ্ছিল না। চিফ ইঞ্জিনিয়ার কে ফোন করায় দুজন গাড়ি করে এসে ধরেছে। মিস্ত্রিটা প্যানেলের তারগুলো খোলা রেখে পালিয়েছে। বড় রকম শট রে সাকি রে ট হতে পারতো। এখন বিভাগের লোকজন চেক করছে।
    আমি হাসিমুখে ঘরে উঠি। লিফট্‌ কাজ করছে না। আজ হাঁফ ধরলো না। হেঁটে তিন তলায় উঠে ঘরে উঠি। বাড়িতে হৈচৈ চলছে। দুই মেয়ে ও বড়টির বয়ফ্রেন্ড এসেছে।
    কিন্তু আবার হিন্দমোটর থেকে বড় শালি এসেছেন। শ্বশুর মশায়ের ক্যান্সারে গত হওয়ার পর ভাইবোনদের কাগজে কিসব সই চাই। ইতিমধ্যে রেণুবালা গুপ্তা ঢোকে হৈহৈ করে। -- মি: রায় , শুনেছেন ? দু ' দিন লিফট চলবেনা , জলের ও কষ্ট হতে পারে। কারণ বিজলী বিভাগের ওরা কমন লাইনের মিটার সীল করে দিয়েছে। বলেছে - কাল পরশু ছুটি। মঙ্গলবার এসে লোড চেক করবে। তদ্দিন এই লাইন বন্ধ।
    আমি ভাবি --- অবোধের গোবধে আনন্দ। মেয়েগুলো এসেছে। এখন জলের কষ্ট ?
    --- আরে রায় ! বাঙালীরা সহজে মুষড়ে পরে। চিয়ার আপ্‌। লাইন বন্ধ হওয়ায় তিনটি ফ্ল্যাটে অন্ধকার নেমেছে। ঐ সদা রে র , গুড্ডি সেনগুপ্ত , আর বিল্ডারের বৌয়ের বচপন্‌ স্কুলের প্রিন্সিপালের। মানে বুঝলেন ? ওরাই কমন মিটারের থেকে হুকিং করছিলো। এখন তিনদিন ওদের আলো - হাওয়া বন্ধ। প্লাস অপরাধীরা টেকনিক্যালি ধরা পড়লো।
    --- দুত্তোর ! ওদের বাড়িতে ছোট ছেলে মেয়ে আছে , কি করে ভ্যাপসা গরমে রাত কাটাবে ? তাও তিনদিন ? নিঘ্‌ঘাৎ মরিয়া হয়ে কিছু করবে।
    ---- ধুর ! আপনিও যেমন ! মিসেস রায়ের কমপ্লেনে কাল কপো রে রেশনের কমিশনার এসে এখানে কন্‌স্‌ট্রাকশন চেক করে গেছে। ওরা ভয় পেয়েছে। আর সদা রে রের বাড়িতে বাচ্চা কোথায় ? সদা রে রনী তো বাঁজা মেয়েমানুষ।
    -- কি যে বাজে বকো রেণু !
    আসি তবে বলে রেণু হাসিমুখে চলে যায়।
    বড়দি বল্লেন - মেয়েটি বেশ হাসিখুশি , ভালো দেখতে। কিন্তু কথাবাতা রে কেমন যেন ক্রুড্‌।
    আমি বলি -- হরিয়ানার স্টাইল ঝাড়ে। কিন্তু অন্যের দুদ রে শায় খুশি হওয়ার কি আছে ?
    মিসেস বল্লেন -- রন্‌জনের কথায় কান দিস না। ওরা রেণুকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে একমাস আগেই ১৫ দিন জেলে রেখেছিল। জামিন হতে দেয় নি। জেলে পয়সা খরচ করে ওকে প্রায় না খাইয়ে রেখেছিলো। ডাক্তর খালি মরফিন দিয়ে শুইয়ে রাখতো। শরীর ভাঙছে। ও একটু আনন্দ করতেই পারে , তোমাকে তো ভুগতে হয় নি ! হলে বুঝতে।
    আমার খালি এক্যু রে ল পোয়ারোর মত মনে হয় যেন খুনের গন্ধ পাচ্ছি।
  • aka | 168.26.215.13 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ০১:৩২428460
  • কোন সহৃদয় কি ঠিক করে দিতে পারেন?
  • ranjan roy | 115.184.40.180 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ০১:৩৫428471
  • কি করবো? বাংলাপ্লেনে লিখে কপি-পেস্ট করতে গেছি কিন্তু এডিটর খুলছে ইউনিকোডে।
  • Sayantan | 159.53.78.142 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ০১:৩৮428482
  • কপি করা কন্টেন্টটা এখনও আছে?
  • Ishan | 12.163.39.254 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ০১:৪২428493
  • বাঙ্গলাপ্লেন এ লিখে পেস্ট করলে এইরকমই হবে তো। এটায় শুধু বাংলিশে পোস্ট করা যায়। আর ইউনিকোড ভার্সানে ইউনিকোডে।

    এইটা আমি ঠিক করে দিচ্ছি। ধৈর্য ধরিয়ে।
  • ranjan roy | 122.252.231.12 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ০১:৫২428504
  • আবার বাস্তুহারা
    -----------------
    {পাইদি অনেকদিন ধরে বলছিলো ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষের (রাজনৈতিক - ধামি রে ক - পেটের তাড়না, যে কারণেই হোক ) কথা নিয়ে কিছু লিখতে, মানে কিছু ভাবতে। সংবেদনশীল বিষয়, কিন্তু গুছিয়ে ভাবতে পারছিলাম না। এমন সময় আমাকেই হতে হল বাস্তুহারা। যে বিলাসপুর শহরে আমার এত বন্ধুবান্ধব, নব্বইয়ের দশক থেকে একটানা উনিশবছর কাটালাম -- সেখান থেকে পিঠটান! তবে কি আমি সত্যিকারের ছত্তিশগড়িয়া হতে পারিনি? এখানকার লোকের চোখে বাঙালীই রয়ে গেলাম? নিজের সম্বন্ধে যা ভাবতাম তা আসলে মানসিক বিলাসমাত্র? তাহলে আমার ঠাঁই কোথায়? আগামী বছর রিটায়ার করে কোথায় আস্তানা গাড়বো? এই বালস্য বাল জীবনের তৃতীয় ইনিংস
    কোথায় খেলবে হরিদাস পাল? কোন মাঠে? কোন পিচে? বড়মেয়ে শোনালো শাহরুখ খানের কোন হালে রিলিজ হওয়া ফিলিমের ডায়লাগ,- যার সারমম রে হল বরফের নিয়তি
    তার আদি জলের উতে্‌স মিশে যাওয়া। তবে কি কোলকাতা? কিন্তু আমার চেনা কোলকাতা তো কবে হারিয়ে গেছে। আজকের কোলকাতায় পা’ রাখা মানে গাল রে ফ্রেন্ডের অন্য বাড়িতে বিয়ে হয়ে গেলে মিষ্টির বাক্সহাতে সেখানে দেখা করতে যাওয়া।
    কি করবো? উত্তর জানা নেই। তাই এলোমেলো ভাবনাচিন্তাগুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা।]

    এক
    ভয়ের ত্রিমাত্রিক চেহারা
    ----------------------
    19শে সেপ্টেম্বর,শনিবার। সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেল। মহালর প্রিয় গান "“বাজলো তোমার আলোর বেণু’' শুনতে ক্যাসেট চালালাম। যারা ভোরে ডাকতে বলেছিলো তাদের কাউকেই ডাকা হয় নি। সামান্য অপরাধ বোধ নিয়ে ব্যাংকে গেলাম ডিউটি করতে ট্রেন ধরে। আগামী অষ্টমীর দিন ছুটি নেবো। গাড়ি নিয়ে সপরিবারে যাবো দেড়শ’ কিলোমিটার দূরে ইস্পাতনগরী ভিলাইয়ে, ভাইবৌ - ভাইঝির কাছে। আমার মা - বৌ - মেয়ে ওখানে কালীবাড়ির পূজোয় অঞ্জলি দেবে, আমি প্রসাদ খাবো। রাত্তিরে পূজোপ্যান্ডেলের স্টেজে ভাইবৌ - ভাইঝির গ্রুপের গান শুনবো, বিশেষ করে হিন্দিতে গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত।
    সেসব তো অনেক পরের কথা। আপাতত: শনিবার, ব্যাংকে হাফ - ডে মজদুরি করে মুম্বাই - হাওড়া মেল ধরে বিলাসপুর ফিরবো, দুই - মেয়ে (লরেল - হাডি রে) দিল্লি থেকে
    দুপুরেই বাড়ি পৌঁছে মায়ের হাতের রান্না মাংসভাত খেয়ে টেনে ঘুম দিচ্ছে। আমি ফিরলে রাত্তিরে জমিয়ে আড্ডা দেবে যে! কাল রোববার, পরশু সোমবার --- টানা দু’ দিন ছুটি।
    "“মন যে খুশি - খুশি আজ’' গুনগুন করতে করতে সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ আমাদের ফ্ল্যাটবাড়ি "“বৈশালী প্রাইড’' এ ঢুকছি। কিন্তু কোথাও বেসুর বাজলো। গ্রাউন্ড ফ্লোর কিরকম অন্ধকার, অন্ধকার! অথচ অধিকাংশ ফ্ল্যাটে আলো আছে। আমাদের ফ্ল্যাটেও।
    একি! সিঁড়ির নীচে যেখানে একটা বোডে রে সবার মিটার লাগানো সেখানে দুজন বিজলী কম রে চারী কাজ করছে, প্যানেল ডোর খোলা আর আমাদের হ্যারিকেন - মাকা রে এমাজে রে ন্সি লাইট হাতে আমার গিন্নি দাঁড়িয়ে, আর কোমর থেকে ঝুঁকে গভীর মন:নিবেশ করে মেরামতির কাজ দেখছেন হরিয়ানাওয়ালা মি: সাদা রে না, 210 ফ্ল্যাটের ভাড়াটে।
    হ্যা,ঁ এছাড়া ওঁর আঅরেকটি পরিচয় বেশি প্রাসংগিক। বিল্ডার এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে দাঁড়িয়ে এখন শুধু আমরা দুই পরিবার।অবাকি ফ্ল্যাটওলারা হয় বিল্ডারের আপাত শক্তিশালী স্থানীয় পলিটিক্যাল সোস রে ওলা শিবিরে যোগ দিয়েছে, আর নইলে "“সক্কালে অফিস যাই, রাত্তিরে বাড়ি ফিরে শাকভাত খেয়ে চুপচাপ পাশ ফিরে শুই’' -- কাজেই
    মলে নেমে কুমিরের সংগে বিবাদ! পাগল নাকি,- বলে "“পতলী গলী’' তে সেঁধিয়েছে।
    সিঁড়ির বাঁকে দাঁড়িয়ে পড়ি। -- ক্যা বাত হ্যায়?
    প্রবীণ সাদা রে না বিরক্তিতে খিঁচিয়ে ওঠে। --- মত পুছিয়ে! ইন শালোঁ কী হারামীপন্থী সে উব গ হুঁ। ফির হামারে মিটার সে হুকিং। আজ রঙ্গে হাত পকড়া হুঁ। ওহি চার মনি্‌জল কে সদা রে র। শালে ফ্ল্যাট কা রেজিস্ট্রেশন নহী কিয়ে, বিজলী মিটার নেহি লিয়ে। পর ডাক্ট লগাকর সেন্টলাইজড - এসি চালা রহে, তিন কমরেঁ মেঁ। ওহি বিল্ডার কে লাইনম্যান সে হুকিং কর রহা থা। ভাগ কে চৌথা মনি্‌জল মে সদা রে র কে ফ্ল্যাটমেঁ ছুপ গ।
    মিসেস বল্লেন -- ফিউজ কল আফিসে কমে্‌প্‌লন নিচ্ছিল না। চিফ ইঞ্জিনিয়ার কে ফোন করায় দুজন গাড়ি করে এসে ধরেছে। মিস্ত্রিটা প্যানেলের তারগুলো খোলা রেখে পালিয়েছে। বড় রকম শট রে সাকি রে ট হতে পারতো। এখন বিভাগের লোকজন চেক করছে।
    আমি হাসিমুখে ঘরে উঠি। লিফট কাজ করছে না। আজ হাঁফ ধরলো না। হেঁটে তিন তলায় উঠে ঘরে উঠি। বাড়িতে হৈচৈ চলছে। দুই মেয়ে ও বড়টির বয়ফ্রেন্ড এসেছে।
    কিন্তু আবার হিন্দমোটর থেকে বড় শালি এসেছেন। শ্বশুর মশায়ের ক্যান্সারে গত হওয়ার পর ভাইবোনদের কাগজে কিসব সই চাই। ইতিমধ্যে রেণুবালা গুপ্তা ঢোকে হৈহৈ করে। -- মি: রায়, শুনেছেন? দু’ দিন লিফট চলবেনা, জলের ও কষ্ট হতে পারে। কারণ বিজলী বিভাগের ওরা কমন লাইনের মিটার সীল করে দিয়েছে। বলেছে - কাল পরশু ছুটি। মঙ্গলবার এসে লোড চেক করবে। তদ্দিন এই লাইন বন্ধ।
    আমি ভাবি --- অবোধের গোবধে আনন্দ। মেয়েগুলো এসেছে। এখন জলের কষ্ট?
    --- আরে রায়! বাঙালীরা সহজে মুষড়ে পরে। চিয়ার আপ। লাইন বন্ধ হওয়ায় তিনটি ফ্ল্যাটে অন্ধকার নেমেছে। ঐ সদা রে র, গুড্ডি সেনগুপ্ত, আর বিল্ডারের বৌয়ের বচপন স্কুলের প্রিন্সিপালের। মানে বুঝলেন? ওরাই কমন মিটারের থেকে হুকিং করছিলো। এখন তিনদিন ওদের আলো - হাওয়া বন্ধ। প্লাস অপরাধীরা টেকনিক্যালি ধরা পড়লো।
    --- দুত্তোর! ওদের বাড়িতে ছোট ছেলে মেয়ে আছে, কি করে ভ্যাপসা গরমে রাত কাটাবে? তাও তিনদিন? নিঘ্‌ঘাত মরিয়া হয়ে কিছু করবে।
    ---- ধুর! আপনিও যেমন! মিসেস রায়ের কমপ্লেনে কাল কপো রে রেশনের কমিশনার এসে এখানে কন্‌স্‌ট্‌রাকশন চেক করে গেছে। ওরা ভয় পেয়েছে। আর সদা রে রের বাড়িতে বাচ্চা কোথায়? সদা রে রনী তো বাঁজা মেয়েমানুষ।
    -- কি যে বাজে বকো রেণু!
    আসি তবে বলে রেণু হাসিমুখে চলে যায়।
    বড়দি বল্লেন - মেয়েটি বেশ হাসিখুশি, ভালো দেখতে। কিন্তু কথাবাতা রে কেমন যেন ক্রুড।
    আমি বলি -- হরিয়ানার স্টাইল ঝাড়ে। কিন্তু অন্যের দুদ রে শায় খুশি হওয়ার কি আছে?
    মিসেস বল্লেন -- রন্‌জনের কথায় কান দিস না। ওরা রেণুকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে একমাস আগেই 15 দিন জেলে রেখেছিল। জামিন হতে দেয় নি। জেলে পয়সা খরচ করে ওকে প্রায় না খাইয়ে রেখেছিলো। ডাক্তর খালি মরফিন দিয়ে শুইয়ে রাখতো। শরীর ভাঙছে। ও একটু আনন্দ করতেই পারে, তোমাকে তো ভুগতে হয় নি! হলে বুঝতে।
    আমার খালি এক্যু রে ল পোয়ারোর মত মনে হয় যেন খুনের গন্ধ পাচ্ছি।

  • Samik obo Ranjan Roy | 122.162.75.97 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ০৯:০৮428515
  • আবার বাস্তুহারা
    -----------------
    { পাইদি অনেকদিন ধরে বলছিলো ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষের (রাজনৈতিক - ধার্মিক - পেটের তাড়না, যে কারণেই হোক ) কথা নিয়ে কিছু লিখতে, মানে কিছু ভাবতে। সংবেদনশীল বিষয়, কিন্তু গুছিয়ে ভাবতে পারছিলাম না। এমন সময় আমাকেই হতে হল বাস্তুহারা। যে বিলাসপুর শহরে আমার এত বন্ধুবান্ধব, নব্বইয়ের দশক থেকে একটানা উনিশবছর কাটালাম -- সেখান থেকে পিঠটান! তবে কি আমি সত্যিকারের ছত্তিশগড়িয়া হতে পারিনি? এখানকার লোকের চোখে বাঙালীই রয়ে গেলাম? নিজের সম্বন্ধে যা ভাবতাম তা আসলে মানসিক বিলাসমাত্র? তাহলে আমার ঠাঁই কোথায়? আগামী বছর রিটায়ার করে কোথায় আস্তানা গাড়বো? এই বালস্য বাল জীবনের তৃতীয় ইনিংস কোথায় খেলবে হরিদাস পাল? কোন মাঠে? কোন পিচে? বড়মেয়ে শোনালো শাহরুখ খানের কোন হালে রিলিজ হওয়া ফিলিমের ডায়লাগ,- যার সারমর্ম হল বরফের নিয়তি তার আদি জলের উৎসে মিশে যাওয়া। তবে কি কোলকাতা? কিন্তু আমার চেনা কোলকাতা তো কবে হারিয়ে গেছে। আজকের কোলকাতায় পা রাখা মানে গার্ল ফ্রেন্ডের অন্য বাড়িতে বিয়ে হয়ে গেলে মিষ্টির বাক্সহাতে সেখানে দেখা করতে যাওয়া।

    কী করবো? উত্তর জানা নেই। তাই এলোমেলো ভাবনাচিন্তাগুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা। }

    এক
    ভয়ের ত্রিমাত্রিক চেহারা
    ----------------------
    ১৯শে সেপ্টেম্বর,শনিবার। সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেল। মহালর প্রিয় গান "বাজলো তোমার আলোর বেণু' শুনতে ক্যাসেট চালালাম। যারা ভোরে ডাকতে বলেছিলো তাদের কাউকেই ডাকা হয় নি। সামান্য অপরাধ বোধ নিয়ে ব্যাংকে গেলাম ডিউটি করতে ট্রেন ধরে। আগামী অষ্টমীর দিন ছুটি নেবো। গাড়ি নিয়ে সপরিবারে যাবো দেড়শ' কিলোমিটার দূরে ইস্পাতনগরী ভিলাইয়ে, ভাইবৌ - ভাইঝির কাছে। আমার মা - বৌ - মেয়ে ওখানে কালীবাড়ির পূজোয় অঞ্জলি দেবে, আমি প্রসাদ খাবো। রাত্তিরে পূজোপ্যান্ডেলের স্টেজে ভাইবৌ - ভাইঝির গ্রুপের গান শুনবো, বিশেষ করে হিন্দিতে গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত।

    সেসব তো অনেক পরের কথা। আপাতত: শনিবার, ব্যাংকে হাফ - ডে মজদুরি করে মুম্বাই - হাওড়া মেল ধরে বিলাসপুর ফিরবো, দুই - মেয়ে (লরেল - হার্ডি) দিল্লি থেকে
    দুপুরেই বাড়ি পৌঁছে মায়ের হাতের রান্না মাংসভাত খেয়ে টেনে ঘুম দিচ্ছে। আমি ফিরলে রাত্তিরে জমিয়ে আড্ডা দেবে যে! কাল রোববার, পরশু সোমবার --- টানা দু' দিন ছুটি।

    "মন যে খুশি - খুশি আজ' গুনগুন করতে করতে সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ আমাদের ফ্ল্যাটবাড়ি "বৈশালী প্রাইড' এ ঢুকছি। কিন্তু কোথাও বেসুর বাজলো। গ্রাউন্ড ফ্লোর কিরকম অন্ধকার, অন্ধকার! অথচ অধিকাংশ ফ্ল্যাটে আলো আছে। আমাদের ফ্ল্যাটেও।

    একি! সিঁড়ির নীচে যেখানে একটা বোর্ডে সবার মিটার লাগানো সেখানে দুজন বিজলী কর্মচারী কাজ করছে, প্যানেল ডোর খোলা আর আমাদের হ্যারিকেন - মার্কা এমার্জেন্সি লাইট হাতে আমার গিন্নি দাঁড়িয়ে, আর কোমর থেকে ঝুঁকে গভীর মনোনিবেশ করে মেরামতির কাজ দেখছেন হরিয়ানাওয়ালা মি: সার্দানা, ২১০ ফ্ল্যাটের ভাড়াটে।

    হ্যাঁ, এছাড়া ওঁর আরেকটি পরিচয় বেশি প্রাসংগিক। বিল্ডার এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে দাঁড়িয়ে এখন শুধু আমরা দুই পরিবার।আবাকি ফ্ল্যাটওলারা হয় বিল্ডারের আপাত শক্তিশালী স্থানীয় পলিটিক্যাল সোর্সওলা শিবিরে যোগ দিয়েছে, আর নইলে "সক্কালে অফিস যাই, রাত্তিরে বাড়ি ফিরে শাকভাত খেয়ে চুপচাপ পাশ ফিরে শুই' -- কাজেই

    জলে নেমে কুমিরের সংগে বিবাদ! পাগল নাকি,- বলে "পতলী গলী' তে সেঁধিয়েছে।

    সিঁড়ির বাঁকে দাঁড়িয়ে পড়ি। -- ক্যা বাত হ্যায়?

    প্রবীণ সার্দানা বিরক্তিতে খিঁচিয়ে ওঠে। --- মত পুছিয়ে! ইন শালোঁ কী হারামীপন্থী সে উব গ হুঁ। ফির হামারে মিটার সে হুকিং। আজ রঙ্গে হাত পকড়া হুঁ। ওহি চার মনিজল কে সর্দার। শালে ফ্ল্যাট কা রেজিস্ট্রেশন নহী কিয়ে, বিজলী মিটার নেহি লিয়ে। পর ডাক্ট লগাকর সেন্টলাইজড - এসি চালা রহে, তিন কমরেঁ মেঁ। ওহি বিল্ডার কে লাইনম্যান সে হুকিং কর রহা থা। ভাগ কে চৌথা মনিজল মে সর্দার কে ফ্ল্যাটমেঁ ছুপ গ্যয়া।

    মিসেস বল্লেন -- ফিউজ কল আফিসে কমেপ্লন নিচ্ছিল না। চিফ ইঞ্জিনিয়ার কে ফোন করায় দুজন গাড়ি করে এসে ধরেছে। মিস্ত্রিটা প্যানেলের তারগুলো খোলা রেখে পালিয়েছে। বড় রকম শর্ট সার্কিট হতে পারতো। এখন বিভাগের লোকজন চেক করছে।
    আমি হাসিমুখে ঘরে উঠি। লিফট কাজ করছে না। আজ হাঁফ ধরলো না। হেঁটে তিন তলায় উঠে ঘরে উঠি। বাড়িতে হৈচৈ চলছে। দুই মেয়ে ও বড়টির বয়ফ্রেন্ড এসেছে।

    কিন্তু আবার হিন্দমোটর থেকে বড় শালি এসেছেন। শ্বশুর মশায়ের ক্যান্সারে গত হওয়ার পর ভাইবোনদের কাগজে কিসব সই চাই। ইতিমধ্যে রেণুবালা গুপ্তা ঢোকে হৈহৈ করে। -- মি: রায়, শুনেছেন? দু' দিন লিফট চলবেনা, জলের ও কষ্ট হতে পারে। কারণ বিজলী বিভাগের ওরা কমন লাইনের মিটার সীল করে দিয়েছে। বলেছে - কাল পরশু ছুটি। মঙ্গলবার এসে লোড চেক করবে। তদ্দিন এই লাইন বন্ধ।
    আমি ভাবি --- অবোধের গোবধে আনন্দ। মেয়েগুলো এসেছে। এখন জলের কষ্ট?

    --- আরে রায়! বাঙালীরা সহজে মুষড়ে পরে। চিয়ার আপ। লাইন বন্ধ হওয়ায় তিনটি ফ্ল্যাটে অন্ধকার নেমেছে। ঐ সর্দার, গুড্ডি সেনগুপ্ত, আর বিল্ডারের বৌয়ের বচপন স্কুলের প্রিন্সিপালের। মানে বুঝলেন? ওরাই কমন মিটারের থেকে হুকিং করছিলো। এখন তিনদিন ওদের আলো - হাওয়া বন্ধ। প্লাস অপরাধীরা টেকনিক্যালি ধরা পড়লো।

    --- দুত্তোর! ওদের বাড়িতে ছোট ছেলে মেয়ে আছে, কি করে ভ্যাপসা গরমে রাত কাটাবে? তাও তিনদিন? নিঘ্‌ঘাত মরিয়া হয়ে কিছু করবে।

    ---- ধুর! আপনিও যেমন! মিসেস রায়ের কমপ্লেনে কাল কর্পোরেশনের কমিশনার এসে এখানে কনস্ট্রাকশন চেক করে গেছে। ওরা ভয় পেয়েছে। আর সর্দারের বাড়িতে বাচ্চা কোথায়? সর্দারনী তো বাঁজা মেয়েমানুষ।

    -- কি যে বাজে বকো রেণু!

    আসি তবে বলে রেণু হাসিমুখে চলে যায়।

    বড়দি বল্লেন - মেয়েটি বেশ হাসিখুশি, ভালো দেখতে। কিন্তু কথাবার্তা কেমন যেন ক্রুড।

    আমি বলি -- হরিয়ানার স্টাইল ঝাড়ে। কিন্তু অন্যের দুর্দশায় খুশি হওয়ার কি আছে?

    মিসেস বল্লেন -- রঞ্জনের কথায় কান দিস না। ওরা রেণুকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে একমাস আগেই ১৫ দিন জেলে রেখেছিল। জামিন হতে দেয় নি। জেলে পয়সা খরচ করে ওকে প্রায় না খাইয়ে রেখেছিলো। ডাক্তর খালি মরফিন দিয়ে শুইয়ে রাখতো। শরীর ভাঙছে। ও একটু আনন্দ করতেই পারে, তোমাকে তো ভুগতে হয় নি! হলে বুঝতে।

    আমার খালি এর্ক্যুল পোয়ারোর মত মনে হয় যেন খুনের গন্ধ পাচ্ছি।

  • d | 117.195.40.31 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ২১:২৭428526
  • উরে বাবারে তিন তিনবার! প্রথম আর দ্বিতীয়বারের মধ্যে নাহয় সময়ের তফাৎ খুবই কম, একজন ঠিক করছিল অন্যজন তের পায় নি। কিন্তু এই তৃতীয়বারটা ...........
    কি আজব! কি বিচিত্র!

    :))))))))))))))))))))))))))))))))))))))
  • ranjan roy | 115.184.91.31 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ২৩:২৬428537
  • হুর্‌রে! হয়ে গেছে। এখন থেকে সোজা এডিটরে লিখবো।
    কাল সাতটায় অফিসের জন্যে রওনা দিতে হবে। কাল রাতে লিখবো।
    পর, ইতনা প্যার?
    সির্ফ তিনবার!!:)))))))))))))))))))
  • Samik | 122.162.75.103 | ২৬ নভেম্বর ২০০৯ ০০:৪৮428362
  • আরে! তিন্নংটা তো আমি লিখে দিলাম। বানান টানান ঠিক করে এডিট করে তুলে দিলাম।
  • Sayantan | 159.53.46.141 | ২৬ নভেম্বর ২০০৯ ০৩:৪৪428373
  • রঞ্জনদা, পরের কিস্তি কই?

    শমিক'কে একটা ধন্যযোগ, এফর্ট দিয়ে গোটা লেখাটা ঠিক করে দেবার জন্য।
  • ranjan roy | 115.184.91.122 | ২৭ নভেম্বর ২০০৯ ০০:০১428384
  • (২)

    ওপরে গিয়ে আড্ডা জমালাম। মেয়েরা এনেছে বেশ কটা ডিভিডি। তাতে বেশ ক'টায় ইংরেজি সাব টাইটলস্‌, নইলে ওদের নাকতলা স্কুলে পড়া বাবা কানে শুনে ইংরেজি বুঝতে পারে না।:))
    ""মনোরমা সিক্স ফিট আন্ডার'', ""খুদা কে লিয়ে'',""বাইসাইকল ডায়েরি'' আরো গোটাকয়েক। এরপর বইয়ের পালা। ""পার্সিপলিস'' বলে একটা গ্রাফিক নভেল ওদের বিশেষ পছন্দ। আবার পাঁচ ফিট এগারো ইঞ্চি তালঢ্যাঙা বড়োমেয়ে সঙ্গে এনেছে ওর দু'ইঞ্চি কম বয়ফ্রেন্ড। দুজনেই অ্যানিমেশনে থ্রি-ডি গেমিং এর কাজ করে। দু'জনেই আপাতত: বেকার। অন্তর্জালে কাজ ধরে ফ্রি-ল্যান্সিং করছে।
    বেশ হাসিখুশি জিমে যাওয়া ইউপি'র ছেলে।
    দুইমেয়ে ওদের বোকাসোকা বাবাকে সতর্ক করে দিল-- তুমি যেন বেশি---পুত্রমিত্রবদাচরেৎ করতে যেও না।
    --আমি করি?
    ---হ্যাঁ, কর। বেশি ফ্রেন্ডলি হতে গিয়ে বয়সের কথা ভুলে যাও। নো সিলি জোকস্‌, নো চীপ কমেন্টস্‌।

    আমি দু:খ-দু:খ ভাব করে নীচে নেমে আসি।
    বড়শালি আর গিন্নি মেয়ে সদ্য প্রয়াত শ্বশুরমশায়ের বাড়ি, ফিক্‌স্‌ড ডিপোজিট-- সব মায়ের নামে ট্রান্সফার করার কাগজে দস্তখত করছেন। আমি কোথায় যাই?
    এমন সময় দাঁত বের করে হাসতে হাসতে রেণু আবার ঢোকে। আজ সকালেই দিল্লি থেকে ফিরেছে।
    --- আরে রিপোর্টার অমিতাভ তিওয়ারি এসে ক'দিন আমাদের বাড়িতে থাকছেন।
    ---তো?
    ---ওনার লাইসেন্স পিস্তল আছে। সেটাকে উনি হোলস্টারে করে কাঁধে ঝুলিয়ে ঘোরেন। তাতে অন্যেরা ভয় পাচ্ছে। আমি আবার রটিয়ে দিয়েছি যে ও আমাদের স্পেশাল সিকিউরিটি গার্ড।
    ---- দেখ, কাউকে বেশি ভয় পাওয়ানো ঠিক না। লোকে ডেস্পারেট হয়ে যায়।
    --- আপনার যত কথা! বাঙালীরা বড্ড সাতপাঁচ ভাবে, করে এইটুকু। অ্যাদ্দিন আমার সাথে যা করেছে---।
    দিদি অবাক হন। --- কী করেছে?
    -- কী না করেছে!
    এবার আমার স্ত্রী সরব হন।
    ---- মাসদেড়েক আগে জন্মাষ্টমীর আগের রাত্রে রাত বারোটার সময় মহিলা এ এস আই তিওয়ারি চারটে পুলিশ নিয়ে ঘরের দরজায় ধাক্কা। কি না আমাকে আর রেণুবালা গুপ্তাকে থানায় নিয়ে যাবে।
    সেদিনও ওরা মাত্র দুপুর বেলায় দিল্লি থেকে ফিরেছে।
    আর আমিও ঝিয়ের মুখে কোন কিছু গন্ডগোল হবার প্ল্যান হচ্ছে শুনে সোজা এসপি অফিসে গিয়ে কথা বলে আসি।
    যখন রঞ্জন বল্লো যে রাত্তিরে কোন মহিলাকে থানায় নিয়ে যাওয়া বে-আইনী তখন মহিলা পুলিশ বল্লো যে এস পি সায়েব ওনার অফিসে ডেকেছেন। এই বলে রেণুকে ওর হাসব্যান্ডের সঙ্গে গাড়িতে করে নিয়ে গেল। আমাকেও তৈরি হয়ে আসতে বল্লো।
    রঞ্জন এস পি কে মোবাইলে কন্ট্যাক্ট করায় উনি বল্লেন--- আমি কোন মহিলাকে রাত্তিরে ডেকে পাঠাইনি।
    তখন রঞ্জন ওনাকে বল্লো যে ও তাহলে আর মিসেস রায়কে পাঠাচ্ছে না। কিন্তু উনি যেন রেণুবালা কে কোথায় এবং কেন ওনার নাম করে নিয়ে গেছে একটু দ্যাখেন।
    তারপর ও সিভিল লাইনস্‌ থানায় ফোন করে টি আইকে বল্লো ---আপনারা এস পি'র নাম করে মিথ্যে কথা বলে এদের রাত্তিরে তোলার চেষ্টা করে বে আইনি কাজ করছেন। আপনাদের গেমটা কী?
    থানেদার বলে-- কোন বেআইনি কাজ হচ্ছে না। রেণুবালার নামে ৪২০ ধারার নাম্‌জদ কমপ্লেন আছে। তাতে দিনরাত-স্ত্রী-পুরুষ ভেদ নেই, আর মিসেস রায়ের নামে কোন কেস নেই। আপনাদের ভুল হয়েছে।
    আমরা তখন বিভিন্ন দৈনিক প্রেসে ফোন করে বলি- সিভিল লাইনস্‌ থানায় গিয়ে এই বেআইনি কাজটা একটু দেখুন।
    ওর স্বামী ফিরে এসে বলে ---ওকে মহিলা থানায় আটকে রেখেছে। আমি মেমো সাইন করিনি।

    সকালে আমি ,রঞ্জন আর রেণুর স্বামী প্রবীণ সার্দানা থানায় যাই। দেড় বছর আগের একটা জমির দালালের মিথ্যে কমপ্লেন নিয়ে ৪২০ এর কেস বানিয়েছে। ঐ কেসের তৎকালীন ইনভেস্টিগেটর মি: পাঠকের সঙ্গে দেখা করি। উনি জানান যে এটা পুরোপুরি ফলস্‌ কম্পপ্লেন। উনি রিপোর্ট জমা করেছিলেন। ছ'মাস আগে রিটায়ার্ড , তাই আজ ওনার কথার কোন মূল্য নেই। উকিল জানায় --- এতে জামিন পাওয়া কঠিন। প্রথমে সিজিএম কোর্টে আর্জি,-- ওটা রিজেক্ট হবেই, রুটিন ব্যাপার। তারপর সেশন কোর্টে যেতে হবে। আমি দুটো পিটিশনই বানিয়ে রেডি, কিন্তু দেখবেন- ওরা চালাকি করে বেলা তিনটের পরে রেণুকে কোর্টে পেশ করবে। যাতে আজ সেশনে শুনানি না হয়। তারপর কাল-পরশু-তরশু তিনদিন কোর্ট বন্ধ। ফলে বেশ ক'দিন জেলে থাকতে হবে।
    তাই হল। কিন্তু মহিলা থানায় অল্পবয়েসী মেয়ে কনস্টেবলরা ৫০০ টাকা করে পেয়ে রেণুকে খেতে দিচ্ছিল না। মুসুম্বির জুস, গ্লুকোজ কিচ্ছু না। খালি বলবে--ওপর থেকে হুকুম নেই। কিছু হয়ে গেলে কে দায়িত্ব নেবে?
    শেষে আমি ওর মাসী সেজে বল্লাম যে আমিও উপোস করে আছি। যতক্ষণ এই মেয়ে কিছু না খাবে ততক্ষণ আমিও--।
    এইসব করে দুটো নাগাদ ফলের রস খাওয়ালাম। যখন কোর্টে তুললো তখন ওর পা ফুলে গেছে।
    সক্কালে দেখি গোটা চারেক পেপারে রেণুর ছবি।
    ""ঠগ মহিলা একবছর পরে রাত্তিরে গ্রেফতার। হরিয়াণার থেকে এসে সাদাসিধে ছত্তিসগড়ি গ্রামের চাষাদের জমিবিক্কিরির নামে লাখ-লাখ টাকা আত্মসাৎ করেদিল্লিতে পালিয়ে গেছিলো। কাল রাত্তিরে গোপনসূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ ধরে এনেছে,''।
    কোর্টে পেপারের কাটিং পেশ করা হয়। এজলাসের বারান্দায় আমাদের বিল্ডার ও তাদের সঙ্গীসাথীরা আমাদের দেখে একগাল হাসে। বাঙালী বিল্ডারটি রঞ্জনকে বলে--দু:খিত, এই পরিবেশে আপানার সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
    রঞ্জন বলে----ওয়ক্ত ওয়ক্ত কা বাত হ্যায়।
    জামিন পেতে ১৫দিন লাগে। এর মধ্যে জামিন হয়েছিলো, কিন্তু শেষমুহুর্তে বিল্ডাররা জামিনওলা লোকটিকে গায়েব করে দেয়।
    আমরা খবর পাই যে শহরের সমস্ত বিল্ডাররা এককাট্টা হয়েছে। এটা ওদের কাছে হেজিমনির প্রশ্ন। জেলে ওর মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয় না। ডাক্তার মরফিন দিয়ে শুইয়ে রাখে।
    এদিকে বিল্ডারের হরিজন লাইনম্যান( যে দুই পরিবারের বিজলি তার কাটতো, আর হুকিং করাতো) কে দিয়ে রেণু, রেণুর স্বামী ও রত্না রায়ের নামে কথিত রূপে চামার বলে গালি দেয়া ও মায়ের গালি দিয়ে মারপিট করার চার্জে "হরিজন অত্যাচার অধিনিয়ম'এর ধারা লাগিয়ে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বের করা হয়। রেণুর জামিন হলেই অন্য ধারায় আবার ভেতরে করবে।
    আমি ও সার্দানা রায়পুর ও ভিলাইয়ের মধ্যে ঘুরেফিরে থাকি এবং আজ মানবাধিকার আয়োগ, কাল মহিলা আয়োগ, কোন দিন পুলিশমন্ত্রী, কোনোদিন ডায়রেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ করে বেরিয়েছি। আর রঞ্জন হরিজন থানার দালালের সঙ্গে ঘুস দেবার বার্গেনিং এর নামে টাইম নিয়ে রেখেছে।
    অবশেষে রায়পুরে পুলিশের হাই লেভেলে হরিয়ানার লোকজন পাওয়া যায়। তাঁরা ইন্টারেস্ট নেওয়ায় জামানত হয়।
    আমরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কর্পোরেশনে, উপভোক্তা ফোরামে যাচ্ছি। এখন রেণু যদি ওদের একটু বন্দুক দেখিয়ে ভয় পাইয়ে থাকে ক্ষতি কি?
  • SB | 59.93.198.121 | ২৭ নভেম্বর ২০০৯ ০০:০৯428395
  • কি ভয়ংকর!!
  • aranya | 173.54.108.10 | ২৭ নভেম্বর ২০০৯ ০৮:৫৭428406
  • রঞ্জন-দা, আপনাকে কুর্নিশ। কি সব ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছেন, আর আপোষ না করে লড়ে গেছেন, জাস্ট ভাবা যায় না।
  • jontor | 67.80.19.0 | ২৮ নভেম্বর ২০০৯ ০৯:৫৬428417
  • কি ভয়ংকর অবস্থা। ভাবা যায় না জাস্ট!
  • d | 115.118.230.113 | ২৮ নভেম্বর ২০০৯ ১৬:৫৩428428
  • হুঁ: এ তো সবে শুরু। এরপরে আরও যা সব কান্ড আছে।
  • ranjan roy | 115.184.83.63 | ২৮ নভেম্বর ২০০৯ ২১:১১428439
  • আবার রেণু নাচতে নাচতে আসে। --- একটা মজা হয়েছে। ওপরের সর্দারণী, ঐ যারা রেজিস্ট্রি না করেও সে¾ট্রালাইজড্‌ এসি চালাচ্ছে, তিনটে কামরায়, মিটার নেয় নি, আমাদের মিটার ও কমন মিটার থেকে হুকিং করতে গিয়ে আবার আজ ধরা পড়েছে, ও না গুড্ডি সেনগুপ্ত'র বাচ্চা কোলে নিয়ে যাচ্ছিলো। তা আমার জার্নালিস্ট দোস্ত অমিতাভ তিওয়ারি চেঁচিয়ে উঠেছে---- আরে দেখ, দেখ,-- কার বাচ্চা চুরি করে পালাচ্ছে! তা ওনা দৌড়ে অন্য ফ্ল্যাটে ঢুকে গেল।
    --- এসব বলতে গেল কেন?
    --- জানেন না? ওর তো কোন ইস্যু নেই।
    রঞ্জন বিরক্ত হয়।
    -----রেণু, কিছু মনে কোর না, এটা কিন্তু অমানবিক।
    --আপনি ছাড়ুন তো, ওরা যে আমার ক্যারেকটার নিয়ে যা তা পাব্লিকলি বলছে তখন?
    -- ওরা যদি গু খায়, আমরাও কি তাই করবো? অনেক প্ররোচনা আসবে, কিন্তু আমাদের ওদের স্তরে নামা উচিৎ নয়। তাহলে আমাদের আর ওদের মধ্যে কি তফাৎ?
    রেণু চুপ করে যায়।
    রত্না রায় ওর কাঁধে হাত রাখেন।
    --- আয়, একটু বিরিয়ানি খেয়ে নে। তোর কর্তা, থুড়ি ওকিল্‌সাহাবকেও ডেকে নে।
    একটু পরে ওরা বিরিয়ানি খেয়ে ঘরে গেল।
    দিদি বলেন- এইবার আয়, আমি যে কাজে এসেছি। আমাদের বোনেদের বাবার রেখে যাওয়া বাড়ি আর টাকাপয়সায় কোন দাবী নেই, সব মা পাবে-- এই কাগজটায় সই করে দে।
    রত্না হাসে। --দিচ্ছি, তার আগে তোর ভগ্নীপতিকে ওপরে যেতে বল। আমাদের বোনেদের ব্যাপারে ও আউটসাইডার। ওর হাজিরির কোন দরকার নেই।
    ওপরে আড্ডা জমেছে।
    রঞ্জন মেয়েদের বলে--- আমার কোন ছবি যদি তোদের কাছে থাকে তাহলে অর্কুটে পোস্ট করে দে না! আমার বন্ধুরা চাইছে।
    ---অর্কুট! তুমি আবার অর্কুট-ফেসবুক খুলেছ?
    বলেছি না, যে পাড়ায় তোমার সোমত্ত মেয়েরা আড্ডা মারে সেখানে তুমি যাবে না! তুমি জান না, অনেক সময় লোকে অনেক উল্টো-সিধে কমেন্ট করে।
    --- আরে প্যাচাল না পেড়ে আমারটা খুলে দ্যাখ! সব স্ট্যান্ডার্ড কমেন্ট। তোদের মত চ্যাংড়ার দল নয়।
    --- আচ্ছা, বাবা। দিল্লি ফিরে করেদেবো। তোমার আইডি দিয়ে দিও।
    --- তবে বাবা, তোমার ছবি দেখলে সবাই জেনে যাবে, তুমি কত বুড়ো! ফলে তুমি যদি অর্কুটের থ্রুতে একটু আধটু পরকীয়া করার স্বপ্ন দেখে থাকো, সে গুড়ে বালি।
    ---- আহারে, দ্যাখ না, বাবার মুখটা কেমন কাঁদো-কাঁদো হয়ে গেল। ধ্যাৎ, আমাদের বাবা অমন নয়। ছোটবেলা থেকেই গুড্‌ বয়।
    ---- হ্যাঁ-হ্যাঁ, ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না! তাহলে কেন বলে ""জগার্স পার্ক'' খুব পছন্দ? আরে পুরুষরা আলাদা প্রজাতি, কোন বিশ্বাস নেই।
    রঞ্জন আড়চোখে মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের দিকে তাকায়। স্পষ্টত:ই ও নিজের বাড়িতে দুই প্রজন্মের মধ্যে এ ধরনের কথাবার্তায় অভ্যস্ত নয়। অস্বস্তি ঢাকতে কষ্ট করে কেঠো হাসি ঠোঁটে ধরে আছে।
    এমন সময় রত্না ঘরে ঢোকে।
    পোষা তিব্বতি কুকুরটিকে একচক্কর ঘুরিয়ে এনেছে। রোজ রাত্তিরে এগারটার পরে গোটা পাড়ার কুকুর যার যার আস্তানায় ঢুকে গেলে ও কুকুর নিয়ে বেরোয়। শীত-গ্রীষ্ম বারোমাস।
    --- কী হল? এত তাড়াতাড়ি যে?
    -- বলছি আগে সব দরজাগুলো বন্ধ কর। নীচে কিছু একটা হচ্ছে। প্রায় তিরিশ জন লোক এককাট্টা হয়েছে। আমাদের ছ'টা ফ্ল্যাটের সবাই, আর বাইরের অচেনা লোক। বিল্ডার শর্মাকে দেখছি না, কিন্তু ওর বৌ শিবানী আছে, ওই লীড করছে। আমাকে দেখেই মেন রোডে যাওয়ার গেটটা দৌড়ে গিয়ে বন্ধ করলো। আমি এদিকের গেটের দিকে যাচ্ছি তো রাগী রাগী মুখ করে ক'জন এগিয়ে এলো, ওদের মধ্যে গুড্ডি সেনগুপ্ত সবার আগে। কিন্তু আমার কুকুরটা কিছু তেই আমাকে এগুতে দিল না। ওর গরর্‌-গরর্‌ শুনে ওরা থমকে গেল। তারপর শিবানী মোবাইলে দেখলাম কাকে যেন ডাকছে-- হ্যাঁ, হ্যাঁ, এখনই আসতে হবে, কেন পারবেনা? এক্ষুণি এসো।
    তারপর কুকুরটা আমাকে টানতে টানতে ওপরে নিয়ে এলো।
    ইতিমধ্যে আমরা আমাদের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দুটো তলারই প্যাসেজের দিকের দরজার নেটডোর ও বড় দরজা বন্ধ করে লক্‌ ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছি। বিল্ডার একটা ছোটো লিভারের বাজে লক লাগিয়ে ছিলো। রত্না দু'মাস আগে একটু বেটার লক্‌ ও লুক-থ্রু করার কী-হোল্‌ লাগিয়ে নিয়েছিল।
    আমি বল্লাম--- যাই হোক, কোন কারণেই আমরা রাত্রিতে দরজা খুলবো না। পুলিশ আসলেও না। আমরা ক্রিমিনাল না। আমাদের বিরুদ্ধে কোন অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট নেই। আমরা ফেরারি নই।
    আগের বার রেণুরা দরজা খুলে ভুল করেছিল। তখনই জেনে গেছি এমনিতে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ঢুকতে পারে না।
    ----রঞ্জন, তুমি মোবাইলে রেণুদেরও জানিয়ে দাও, সামথিং ইজ গোয়িং টু হ্যাপেন, যেন দরজা না খোলে।
    -- ওরা বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে, আজই দিল্লি থেকে ফিরেছে, খুব টায়ার্ড। রিং যাচ্ছে, কেউ তুলছে না।
    যাকগে, সবাই শুতে যাও, কিন্তু সতর্ক থেকো। কেউ দরজা খুলবে না। হয়তো কিছুই হবে না, কিন্তু সাবধানের মার নেই।
    সমস্ত তালা আর একবার চেক করে রত্না নীচে যায়, আমি আর মেয়েরা উসখুস করি, আড়মোড়া ভাঙ্গি।
    হটাৎ নীচের ফ্লোরের দরজায় দুম্‌-দুম শব্দ। কে বা কারা জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে। তার সঙ্গে
    সম্মিলিত কন্ঠের চিৎকার---- দরওয়াজা খোল্‌, দরওয়াজা খোল্‌!
    আমরা স্ট্যাচু হয়ে যাই, কেউ কারো মুখের দিকে তাকাই না।
    রত্না দৌড়ে ওপরে আসে।--- শুরু হয়ে গেল, শুরু হয়ে গেল।
    আবার চিৎকার।-- খোল্‌ বে! জলদি খোল্‌!
    আমি বলি-- কৌন্‌? কৌন্‌ হ্যায়?
    ---- অন্দর আকে আচ্ছি তরহ বাতায়েঙ্গে কৌন হ্যায়।
    ----- রাত বারহ্‌ কে বাদ কোই কাম নহী। সুবে আও।
    --- হমলোগ্‌ অরুণ সিং কে আদমী।
    ---- হম কিসী অরুণ সিং কো নহী জানতে, দরোয়াজা নহী খুলেঙ্গে। ( চলবে)
  • Blank | 59.93.254.224 | ২৮ নভেম্বর ২০০৯ ২২:২৬428450
  • তারপর !!
  • pi | 72.83.98.106 | ২৯ নভেম্বর ২০০৯ ২০:৪৫428459
  • হ্যাঁ,তারপর ?
  • ranjan roy | 115.184.29.77 | ২৯ নভেম্বর ২০০৯ ২২:৫৬428461
  • অরুণ সিং? হ্যাঁ, রঞ্জন মুখে যাই বলুক, জানে বইকি। ছিল স্কুলের টিচার, ইদানীং উঠতি ল্যান্ড- মাফিয়াদের একজন। বিলাসপুর ও তার আশেপাশে কিছু বিবাদিত জমির টুকরো ও সরকারী জমির এককোণা, এইসব হাতিয়ে একটু লাইমলাইটে এসেছে। কিন্তু ওকে চর্মচক্ষে কোন দিন দেখেনি। দুজনের দুনিয়া একেবারে আলাদা। আপস মেঁ কোঈ পালা নহী পড়া।
    তবে, ওর লোকজন এখানে কেন? মনে পড়েছে, রেণু-প্রবীণদের জমির কেনাবেচার কারবার। ওদের সঙ্গে যাতায়াত আছে, ইদানীং রেণুদের ২১০ নং ফ্ল্যাটের মালিক ভিকি বুখারীর কথায় অরুণ সিং ওদের ফোন করে ----ওরা যেন ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়। তাহলে কি বিল্ডার আজ গুন্ডা এনে রেণুদের ফ্ল্যাট খালি করাতে চাইছে? একঢিলে দুই পাখি!
    তবে এটা তো দ্বিতীয় বার। তিনমাস আগেই রেণুদের বিজলীর তার কেটে দেওয়ায় জাঠপুঙ্গব প্রবীণ সর্দানা বিল্ডারের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি এবং তার মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত করে সম্ভাষণ করেছিল আর বাঙ্গালী রায়পরিবারের মতন থানাপুলিশ না করে সোজা কাটা তার নিজের লোক দিয়ে জুড়ে নিয়েছিল। সেবারই বিল্ডার ফ্ল্যাটমালিক বুখারীর সঙ্গে এক ভাড়াটে-ওঠানো বাঙালী দাদা কার্তিক ঘোষকে পাঠিয়েছিল।
    রাত সাড়ে এগারোটায় মুশ্‌কো চেহারার কার্তিক এসে চেঁচামেচি লাগিয়েছিলো--- হরিয়ানা থেকে আসা এই জাঠপরিবারের বাপের ঠিক নেই, ওরা যেন দশ মিনিটের মধ্যে ২১০ নং ফ্ল্যাট খালি করে দেয়। ফরমান জারী করে শ্রীমান সিগারেটের কষটান দিতে থাকে। চারপাশের ফ্ল্যাটের দরোজাগুলো চটপট্‌ বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি গায়ে লাগা বাঙালী পরিবারেরও,--- যার হার্ট অ্যাটাক মতন হওয়ায় নতুন ভাড়াটে আসা প্রবীণ নিজে গাড়ি চালিয়ে নার্সিং হোমে নিয়ে গেছলো।
    কিন্তু রাত্তিরে কুকুর ঘুরিয়ে তিনতালায় ওঠা রত্না রায়ের চোখ পড়লো কার্ত্তিকের দিকে।
    ---- আপ কৌন হ্যায়, অউর ইতনী রাতকো? ইঁহা ক্যা কর রহে হ্যায়?
    ----আপনার কী? ম্যাডাম, নাক না গলিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে যান।আমি এই হারামীদের কব্জাকরা ফ্ল্যাট খালি করাতে এসেছি, সঙ্গে মালিকও আছে। ---- বেশ কথা, কাল সকালে আসুন নইলে ছুটির দিনে আসুন।
    এত রাত্তিরে আউটসাইডার এখানে এসে চেঁচামেচি করবে--এটা ঠিক নয়।
    কী হল? পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনি শান্তভাবে নেমে যান, নইলে আমি পুলিশে ফোন করবো।
    --- আমাকে বিল্ডার আশীষ সরকার পাঠিয়েছে। আপনি চাইলে মোবাইলে কথা বলতে পারেন।
    --- কী ব্যাপার আশীষ? আজকাল বাড়ি বানানো ছেড়ে গুন্ডাগর্দি করছো নাকি? বদনাম হয়ে যাবে যে! তোমার হীরোকে এক্ষুণি ফেরৎ নাও।
    কার্তিক ফেরৎ গেল। কিন্তু সেইদিন থেকে জাঠপরিবার সার্দানা ও বাঙ্গালী পরিবার রায়েদের মধ্যে বিল্ডার-বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গড়ে উঠলো। ( মাওবাদী ও সুশীলসমাজ? নাকি ঘাসফুল ও সুশীল? অথবা মাওবাদী ও ঘাসফুল?)
    বিল্ডার সরকার ও শর্মা দেখলো একা রায়-ম্যাডামই নাকোদম করকে রকখী থী আবার সঙ্গে জুটলো পয়সাওলা ফোর্ড আইকন গাড়ীওলা অল্পবয়সী জাঠসুন্দরী, যে জমি ও ক্ষেতি করে আর সঙ্গে লাইসেন্সড্‌ রিভলবার রাখে! কোন ভদ্রঘরের মেয়ের রিভলবার নিয়ে ঘোরার কী দরকার?
    ফলে নতুন গড়ে ওঠা ফ্ল্যাটওলাদের সমিতির প্রত্যেক বৈঠকে বিল্ডারের বৌ শিবানী বিষছড়াতে লাগলো।
    -- ওই জাঠপরিবার নষ্টের গোড়া, কোন ক্যারেক্টার নেই। সিঁদুর পরে না। আর ওরা স্বামীস্ত্রী ও নয়। ভদ্রলোক ওর স্বামীর বন্ধু, এদের এখান থেকে বের করে দেয়া উচিৎ।
    আর ঐ দেখুন সিনিয়র মহিলা রত্না রায়, কোন অক্কল নেই, পুলিশ ও বিজলী অফিসে দৌড়য়। ওই খালি অমন চরিত্রহীন মহিলার সঙ্গে আছে। চলুন, সবাই মিলে ওদের ফ্ল্যাটে যাই, বের করে দেই।
    সমিতির কোষাধ্যক্ষ রঞ্জন বলে--- এগুলো আমাদের এক্তিয়ারের বাইরে। খালি করতে শুধু ফ্ল্যাটের মালিক বলতে পারে। ভাড়াটে হিসেবে তো ওরা কোন গন্ডগোল করছে না, কাউকে বিরক্ত করছে না, লাউড করে গান বাজাচ্ছে না, চেঁচামেচি করছে না।

    আজকে তাহলে ওরা সফল হয়ে যাবে?
    ওর আশংকা সত্যি করে আবার চীৎকার শোনা যায়। --- ওকিল্‌সাব, দরোজা খোলিয়ে, বাহার আইয়ে।
    --- ইঁহা কোঈ ওকিল-ভকিল নহী রহতে হ্যায়।
    ধাক্কাধাক্কি,চেঁচামেচি বন্ধ হয়। রঞ্জন স্বস্তির নি:শ্বাস ছাড়ে।
    আবার শোনা যায়, ধম্‌ ধম্‌ করে আওয়াজ, তবে একটু এগিয়ে ,২১০ নম্বরে।
    রঞ্জন সবাইকেআশ্বস্ত করে। ভুল করে এখানে এসেছিল। ওদের বাড়িতে গেছে। কোন ভয় নেই। ওদের কাছে দুটো বন্দুক আছে।
    সব ঠিক হয়ে যাবে। --ওদের মোবাইলে কন্ট্যাক্ট কর।
    দু'মিনিটের মধ্যে রঞ্জনের অনুমানকে ভুল প্রমাণিত করে প্রচন্ড আওয়াজে কারো ঘরের দরোজা ভেঙে পড়ে। শিকার ধরার উল্লাসধ্বনিতে ভরে যায় করিডর। আর একটি নারীকন্ঠের যন্ত্রণাদীর্ণ চিৎকারে সারা অ্যাপ্যার্টমেন্ট কেঁপে ওঠে।
    --- বাবা, এতো মনে হচ্ছে রেণু আন্টিকে মারছে, আমরা বেরুবো না?
    বড়শালী ফুঁপিয়ে ওঠেন---- রঞ্জন, এত সেই মেয়েটার গলার স্বর! খানিকক্ষণ আগে বিরিয়ানি খেয়ে গেছে, তোমরা কিছু একটা কর! (চলবে)

  • SB | 59.93.203.131 | ৩০ নভেম্বর ২০০৯ ০০:০৫428462
  • মারাত্মক!! তবে ranjanদা, ২০১১'র পরে এখানেও এসব হবে :-)
  • ranjan roy | 115.184.93.68 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:১৪428463
  • কি করবে রঞ্জন? কি করতে পারে? সেই মূহুর্তে ও নিজেকে চিনতে পারে-- যে আসলে ও একটি শৃগাল, সিংহচর্মধারী শৃগাল।
    ( শেয়ালটা হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা করে--
    দোহাই বাবা মার্কস্‌, দোহাই লেনিন ঠাকুর, মাও ঠাকুর! কিছু একটা লজিক দাও, কিছু আর্গুমেন্ট দাও।
    একটা হাতে-গরম আর্গুমেন্ট পেলে আমি যে আমার যে কোন কাজকে জাস্টিফাই করতে পারি। ধর্ষণকেও বিপ্লবের স্বার্থে প্রমাণ করতে পারি। আমি যে কখনও ভুল করি না, করতে পারি না। আমি আগে যা করেছিলাম, তখন তাই ঠিক ছিল। আজ যা করছি তাও ঠিক। কাল যা করবো সেটাও সময়ের হিসেবে ঠিকই হবে। আমি যে এই ঐতিহ্যের ধারকবাহক।)
    সেই শেয়ালের গলায় শোনা যায়-- আমরা কেউ বেরুবো না। তাতে জনা ত্রিশের হাতে মার খাওয়া ছাড়া কিছুই হবে না।এতে ওদেরই সুবিধে হবে। তারচেয়ে ফোন করে পুলিশ আনালে ওদের বেশি সাহায্য করা হবে।
    ইতিমধ্যে রত্না সমানে মোবাইলের বোতাম টিপছে। মেয়েরা দিল্লির বন্ধুদের। কারু কারু বাবা উচ্চপদস্থ, যদি এখানে কালেক্টর বা কাউকে কিছু যোগাযোগ করতে পারে।
    --- হ্যালো, সি এস পি ঠাকুর সাহাব বলছেন? আমি ২০৫, বৈশালী প্রাইড থেকে বলছি,শিগ্গির ফোর্স পাঠান।এখানে--
    সিটি সুপারিন্ডেন্টের গলা শোনা যায়।
    --আরে, আমাদের ফোর্স তো ওখানেই আছে, ঠিক আপনাদের কলোনীতেই। একটু আগে আপনাদের অ্যাপার্টমেন্টে গুলি চলেছে না? সেই জন্যে গেছে।
    --- গুলি? না, না, কোন গোলাগুলি নয়। আধাঘন্টা হল বিল্ডারের বৌ আরও কিছু বাইরের গুন্ডা এসে দরজা ভাঙার চেষ্টা করছিল। ২১০ এর ডোর ভেঙে মহিলাকে মারছে। শিগ্গির আসুন।
    সি এস পি'র মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়।
    ইতিমধ্যে আমার মোবাইলে প্রবীণের আওয়াজ।
    --- রায়, বেরুবেন না। আমি নিজের বেডরুমে দরজা বন্ধ করে পুলিশ ডাকার চেষ্টা করছি, লাগছে না। আপনি শিগ্গির পুলিশকে কন্ট্যাক্ট করুন।
    আমি নিশ্চিত, আমার স্ট্যান্ড ঠিক।
    হটাৎ আরও দুটো দরজা ভাঙার আওয়াজ।
    আবার শিকার ধরার শ্বাপদউল্লাস।

    বুঝতে পারি, প্রবীণ ও তাদের জার্নালিস্ট বন্ধুকে মারতে মারতে ঘরের বাইরে বের করছে। ওদের ঘরের জিনিসপত্র ফ্রীজ, ডাইনিং টেবিল সব টেনে এনে প্যাসেজে ফেলা হচ্ছে। এবার মহিলাদের হুংকার।
    ---হারামজাদী------।
    রেণুর চিৎকার-- খব্‌র্‌দার,মুখার্জি! তোমার ছেলেরা যেন আমার গায়ে হাত না দেয়! ( চলবে)
  • Bishorgo | 122.172.39.222 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:১৮428464
  • প্লিজ এখানে থামবেন না। সারাদিন ধরে বার বার এই টইটা রিফ্রেশ করছি পরের কিস্তি পড়ার জন্য।
  • ranjan roy | 115.184.93.68 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:৩০428465
  • সরি বিসর্গ,
    আমাকে যে সাতটায় ঘর থেকেবেরিয়ে পৌনে আটটার ট্রেন ধরে সোয়া ন'টায় ভাটাপাড়ায় ব্যাংকে পৌঁছতে হবে। আবার কাল রাত্তিরে ন'টা নাগাদ বাড়ি ফিরে খেয়েদেয়ে গিন্নির সাথে আলপচারিতা সেরে লিখতে বসতে সেই সাড়ে দশটা। ভদ্রমহিলা দিন-দিন ""গুরুচন্ডালী''র ওপর খাপ্পা হচ্ছেন।:)))
    বিলাসপুর ছেড়ে রায়পুর আসায় আমার যাতায়াতের সময় দু'ঘন্টাবেড়ে গিয়ে লেখার সময় কমে গেছে।
    তারপর বোধির কাছে একটা কমিটমেন্ট আছে। ওটাকে অবহেলা করা যায় না।
  • ranjan roy | 115.184.6.14 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:৪১428466
  • মহিলাদের আওয়াজ আমাদের দরজার সামনে থামে। বিল্ডারের স্ত্রী শিবানীর গলা স্পষ্ট চিনতে পারি।
    --- রায়ম্যাডামকো ভী ঘরসে খিঁচকে নিকালো। ওহী জ্যাদা বদমাস হ্যায়। বহুত কানুন বাতাতী হ্যায়? উস্‌কো তো--।
    -- কিঁউ? বুলা তেরা গুরু রায় ম্যাডামকো! তেরেকো সামনে করকে ঘরমেঁ দুবককে্‌ বৈঠি হ্যায়?
    আরে, এতো মিসেস সিং এর আওয়াজ! কিছুদিন আগেও তো রত্না ওনার অনুরোধে ওনার জন্যে ওয়াশিং মেশিনের মিস্ত্রি এনে দিয়েছে, শুধু তাই নয়, উনি জোর দেওয়ায় সারাক্ষণ সামনে দাঁড়িয়ে ওদের মেশিনটা রিপেয়ার করিয়ে দিয়েছে।

    --- কিতনী ঢিট্‌ হ্যায় তু রেণু! বুলা না ম্যাডামকো! তেরে পুকারসে ও জরুর বাহর আয়েগী।
    রেণু বলে--- এতক্ষণ এত্‌সব শোনার পর আমি ডাকলেও উনি বাইরে আসবেন না। এত বোকা উনি নন।
    আমি খেয়াল করি রেণু ব্যথায় চেঁচালেও কাঁদছে না। আমার বুকের মধ্যে কোথায় একটা জিতে যাওয়া ঢেউ ওঠে।
    ---হারামজাদী! রেন্ডি! তুই তবে ওকে ডাকবি না?
    আবার মারের আওয়াজ। আবার চীৎকার! এবার মনে হল মাটিতে ফেলে মারছে।
    আমি""নবভারত'' প্রেস এ ফোন করি। আমার চেনা পরিচিত বামপন্থী ও লিব্যারাল রিপোর্টারদের খোঁজ করি। গণেশ তিওয়ারি? কিশোর দিবসে? কেউ অফিসে নেই। ঠিকানা দিয়ে বলি ভীষণ ভাবে মারছে, কাউকে ক্যামেরা শুদ্ধু পাঠান। ওরা বলে --পাঠাচ্ছি। কেউ আসেনা।
    আবার আমাদের দরজায় আঘাত। এবার পুরুষ-মহিলাদের মিলিত হুংকার।
    আমি ভয়ে কেঁপে সিংহগর্জনে বলি।
    --- কোন কারণেই সকালের আগে দরজা খুলবো না। বাড়িতে দিল্লি থেকে সদ্য আসা আমার দুই জোয়ান মেয়ে আছে। ৮৬ বয়সের হার্টের রোগী মা আছে।
    ওরা হাসে, বলে দরজা ভেঙে ঢুকবে। ধাক্কা পড়তে থাকে। ভাগ্যিস আগে নেটের দরজা আছে। ওটা না ভেঙে মূল দরজায় ঠিক চোট করা যাবে না। কিন্তু আর একটু পরে সবইতো ভেঙে পড়বে। তখন?
    কল্পনা করি। আমার মেয়েদের মারছে। সবার আগে রত্নাকে মাটিতে পেড়ে ফেলে পেটাবে। অত সোজা হবে না। কিন্তু অতগুলো লোক?
    মেয়ের বয়ফ্রেন্ড ছেলেটি বলে--আংকল, দরজা ভাঙলে সবচেয়ে আগে আমি থাকবো, তারপর আপনি। দুটোকে আমি ঠিক নিয়ে নেবো।
    আমি খেয়াল করি -- ডিস্ট্রিক্ট লেভেলে কবাড্ডি খেলাআমার স্ত্রী বরফের চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে। চওড়া কব্জির ফুলে ওঠা শিরা দেখা যায়। পাশে টানটান ভঙ্গিতে পোষা কুকুরটা।
    আমি চেঁচাই---- আমরা ছ'জন তৈরি আছি। এস, যে প্রথমে ঢুকবে তার মাথাটা ফাটবে।
    ( মেয়েরা ইশারায় জানতে চায় --ছয়জন?
    আমি কুকুরটাকে দেখাই। এর মধ্যেও ওরা হেসে ফেলে।)
    ফিসফিস করে ওরা তখনকার মত সরে যায়।প্যাসেজের অন্যমাথায় মারপিট ও চিৎকার চলতে থাকে।
    একজন মেয়ে গিয়ে ঠাকুরমার ঘরের দরজাটা বন্ধ করে। আমরা মার শ্রবণশক্তি চলে যাওয়ায় একইসঙ্গে মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ দিই।
    স্ত্রী বলেন-- বিজয় বর্মাকে খবর দাও।
    ( আমার ঘনিষ্ট বন্ধু বর্মা, যার মেয়ে মুসলমান বিয়ে করায় উৎপন্ন সমস্যা নিয়ে দু'বছর আগে একটা সূতোয় লিখেছিলাম।)
    বর্মা জানায়, ওর ছোটভাই জিদ্‌ করায় ওর কলেজের সময়কার চেনা সি এস পি আর কে সাহু ফোর্স্‌ নিয়ে আসছে। আমি ঘড়ি দেখি-- আর কতক্ষণ?
  • tkn | 122.163.79.91 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:৫১428467
  • রঞ্জনদা, আর কতক্ষন? বসে আছি যে!!!
  • SB | 59.93.204.243 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:৫৩428468
  • হ্যাঁ! রঞ্জনদা আম্মো বসে আছি!
  • Nina | 68.45.145.174 | ০৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৮:৫০428469
  • গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। কি কান্ড । ম গের মুল্লুক
    যে- my prayers are with you 24/7 রঞ্জন।
  • UM | 115.118.194.50 | ০৪ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৩:১৮428470
  • লেখাটা পড়তে পড়তে প্রচন্ড রাগ হছে। আর নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। আমরা নাকি Civilized !!!
  • I | 59.93.220.138 | ০৪ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৭:৫০428472
  • মন খারাপ হয়ে যায়।

    রঞ্জনদা'র লেখা অসম্ভব ভিস্যুয়াল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন