এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাস্তুহারা

    ranjan roy
    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ | ১১৫৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 115.184.115.235 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৯ ০০:১৬428506
  • বিশ্বরঞ্জন গাড়িতে বসে কথা শুনে নির্দেশ দিলেন ---সবাই যেন অ্যারেস্ট হয়! আর এদের বসিয়ে ভালো করে ডিটেইলড রিপোর্ট লেখাও। একজনকে এই কেসের ব্যাপারে এক্সক্লুসিভ দায়িত্ব দেয়া হল।
    ওনার গাড়ি বেরিয়ে গেল। আমাদের নিয়ে এসি কনফারেন্স হলে বসিয়ে কফি-বিস্কিট দেয়া হল। আর কোনের দিকে কাঁচের দরজা দিয়ে এয়ার টাইট করা কামরায় একের পর এক আলাদা করে আমাদের বয়ান লেখাতে লাগলেন একজন চশমা পড়া সৌম্যদর্শন অল্পবয়সী অফিসার।
    হলে বসে সেদিনের খবরের কাগজ পড়তে পেলাম। সিটি এডিশন খুলে আমাদের চক্ষুস্থির।
    ভোরবেলাতেই আমাদের আসামী করে খবর ছাপা হয়ে গেছে।
    খবরে কোথাও বিল্ডার বা তার স্ত্রীর নামগন্ধ নেই। -- ভাড়াটের সঙ্গে ফ্ল্যাটমালিকদের কমিটির ক্ষমতার লড়াইয়ে গুলি চলেছে। জাঠপরিবার ভাড়াটে এবং ক্রিমিনাল স্বভাবের। রেণু ক'দিন আগেও ৪২০ ধারায় ১৫দিন জেলে ছিল।এতে অন্য ফ্ল্যাটবাসীরা ওদের বাড়ি ছাড়তে বলে। এ নিয়ে বচসা হলে ওরা কমিটির প্রেসিডেন্ট মি: মূর্তির ওপর গুলি চালায়। পুলিশে খবর দেয়া হলে পুলিশ আসতে দেরি করে।
    তখন ভাড়াটেদের পক্ষে রত্না রায় গিয়ে মিসেস মূর্তি ও অন্যান্যদের সঙ্গে হাতাহাতি করে। শেষে জাঠপরিবারের বেড়াতে আসা বন্ধু অমিতাভ আবার ব্যালকনি থেকে গুলি চালায়। তখন রায়েরা স্বামী-স্ত্রী অমিতাভের পাশে দাঁড়িয়ে প্ররোচনা দিচ্ছিল।
    এবার সমস্ত কলোনীবাসী ভয় কে জয় করে যা থাকে কপালে, ভেবে ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্দুক কেড়ে নেয়। তারপর
    ওদের কাবু করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
    অপরাধীরা থানায় অসহযোগ করে। উঁচুতলায় যোগাযোগের ধমকি দেয়। নিজেদের বয়ান দিতে অস্বীকার করে এবং ভোর রাতে সেপাইদের বড় বাইরে যাওয়ার সুযোগে পালিয়ে যায়। সূত্র অনুযায়ী অপরাধীরা এখন নাকি রায়পুরে এক পুলিশের হোমরাচোমরার আশ্রয়ে আছে।
    আমরা মুখচাওয়াচাওয়ি করি।
  • ranjan roy | 115.184.115.235 | ১৪ ডিসেম্বর ২০০৯ ০১:০১428507
  • দুপুরে মেয়ের ফোন এসেছিল।
    -- বাবা, বেশ কিছু রিপোর্টার আর চ্যানেলের লোক এসেছে। কিন্তু বিল্ডারের লোকজন আর ফ্ল্যাটের কিছু লোক ওদের ওপরে আসতে দিচ্ছে না। নীচেই কান্না-কান্না সুর করে একতরফা ওদের বয়ান লেখাচ্ছে, ওরা তাই লিখে চলে যাচ্ছে। কেউওপরে আসছে না।
    এদিকে তোমাদের রায়পুরের পুলিশের কাছে যাবার খবর পেয়ে বিল্ডার অমিত শর্মা নিজের লোকজন এনে আন্টিদের করিডোরে ফেলে রাখা ফ্রীজ, সোফা, টেবিল সব ঠেলেঠুলে ২১০ নম্বর ফ্ল্যাটে ঢুকিয়েছে। আর ভাঙা দরজাটা কোনোরকমে ঠুকেঠুকে লাগিয়ে দিয়েছে।

    সবার বয়ান শেষ, এবার আমার পালা। অফিসারের পাশে যে অল্পবয়েসী মেয়েটি কম্পুটারে টাইপ করছে তার বাড়ি যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
    আমি তাকে বলি-- বেটি, চিন্তা না করো, হম সংক্ষেপ মেঁ লিখায়েঙ্গে।
    কিন্তু বলতে গিয়ে আমার কথা আটকে যায়। হটাৎ যেন আমার গলা কেউ চেপে ধরেছে। কোথা থেকে একটা কান্না গলা ঠেলে উঠে আসছে। চব্বিশ ঘন্টায় এই প্রথম আমার কথা কেউশুনছে, বলতে দিচ্ছে। একটু মানুষের মত ব্যবহার করছে।
    একটু হেসে মাপ চেয়ে জল খেয়ে আমার বয়ান লেখাই। আমার সামনেই ভদ্রলোক পি এইচ কিউ এর নিজস্ব অফিসার এক মহিলাকে ফোনে নির্দেশ দেন।
    বলেন-- এদের যে একতরফা মেরেছে সেটা স্পষ্ট। কাজেই তুমি কাল বা পরশু ওখানে সরেজমিনে তদন্ত করে একটা রিপোর্ট এখানে দিও।
    এবার ফেরার পালা। সবাই বেশ উল্লসিত।
    ডিজি নিজে বলেছেন-- কাজেই কাল বা ওই স্পেশাল অফিসারের তদন্তের রিপোর্ট জমা হলে সব কটা অ্যারেস্ট হবে।
    আমি সন্দেহ প্রকাশ করি। ডিজির নির্দেশ মেনে তদন্তের প্রক্রিয়া পুরো না হওয়া পর্য্যন্ত কিছুই হবে না, যখন বিলাসপুরের কলেক্টর, এস পি এবং বিলাসপুরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিল্ডার লবিকে ব্যাক করছে বলে খবর।
    রাত্তিরে ইন্ডিকায় ছ'জন ফেরার সময় ক্লান্তি ও আয়ে ব্যথা চেপে ধরে। ঠিক হয় পুলিশ সঙ্গে করে তবেই ২১০ নম্বরে যাওয়া। কারণ ভেতরে কি অবস্থা করে রেখেছে কেউ জানেনা।প্রথম এϾট্র পুলিশের সামনে হওয়াই ভাল।
    আমরা নিজেদের ফ্ল্যাটে যাব। মা ও দুইমেয়ে ওদের বন্ধু আছে। বড়শালীকে ওরা গিয়ে সন্ধ্যের সময় কোলকাতার ট্রেনে তুলে দিয়েছে।
    কিন্তু রোববার রাত দশটায় বিলাসপুরে ঢুকে দেখি আই জি , এস পি , থানেদার সবাই কোরবায়।
    কারণ, গুরুতর। বালকোয় নির্মাণাধীন কারখানায় বিশাল চিমনি ভেঙে পড়ে বেশ ক'জন শ্রমিক মারা গেছেন। লোকে চাইনীজ এক্সপার্টদের ঘেরাও করেছে।
    তবে থানেদার ও সি এস পি একঘন্টার মধ্যে ফেরৎ আসছে, দেখা করবে।
    ভাড়ার গাড়িটা এবার ছেড়ে দিতে হবে। মেয়েদের ফোনে নির্দেশ দিই--- ঘড়ি দেখে ১৫মিনিট পড়ে প্রাঙ্গণের সাইডের গেটের
    চাবিটা নিয়ে নীচে আসবি। আমার দ্বিতীয়
    ফোন ফেলে চাবি দিয়ে দরজা খুলবি। তোর মা ও রেণুরা ১০০ মিটার দূরে রস্তায় আঁড়িয়ে থাকবে। ভাড়াটে গাড়ির ড্রাইভার আমার্সঙ্গে এসে রেণুদের ফোর্ড গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাইরে নিয়ে আসবে।
    অপারেশন সফল হল।ভাড়ার গাড়ি ছেড়ে জাঠপরিবারের গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াবো, খাবর খাবো---- যতক্ষণ না থানেদার, সি এস্পি এরা ফেরে।
    ও হরি! ৩০০ মিটারও যাইনি, গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। কে বা কাহারা একটা টায়ার চাকু দিয়ে ফাঁসিয়ে রেখেছে।
  • Nina | 68.45.145.174 | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৭:৫৪428508
  • ইস! এইখানে গল্পের টায়ারে চাকু মেরে থামিয়ে দিলেন!
  • SB | 114.31.249.105 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৪:১৩428509
  • এখনো টায়ার ঠিক হোল না? :(
  • UM | 115.118.194.50 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৫:২৬428510
  • ranjanda র আবার কিছু বিপদ হলো নাতো ?
  • ranjan roy | 115.184.62.209 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ২০:০২428511
  • দেখা গেল গাড়িতে জ্যাক নেই। আমি আর প্রবীণ হাঁটতে শুরু করলাম। অত রাত্তিরে কোথাও অটো রিপেয়ার শপ খোলা নেই। ২০০ মিটার হাঁটার পর এক যুবকংগ্রেসের অফিসে ইয়ং ছেলেদের গাড়ি দাঁড়ানো দেখে চাইলাম।
    জ্যাক নিয়ে এসে আমার মাথায় ভাঁজ। আমি আনাড়ি, অমিতাভের সারা শরীরে ব্যথা, প্রবীণের অনেক আগের একটা অ্যাকসিডেন্টে হাঁটুর মালাইচাকি ভাঙা,-হাঁটু মুড়ে বসতে পারে না।
    অবাক করলো জাঠসুন্দরী রেণু। চটপট বসে জ্যাক লাগালো, স্প্যানার লাগালো, চাকা খুলে অবদলে ফেললো।
    এবার রত্না বল্লো--সবাই মিলে এলোমেলো না ঘুরে তোমরা কোন হোটেলে ওয়েট কর। সি এস পি'র ফোন আসলে দেখা করে পুলিশ নিয়ে এসে তার পর তোমাদের ফ্ল্যাট ২১০ য়ে ঢুকবে। আমাকেও ডেকে নিও।
    আর বাইরে খেও না। আমি সবার জন্যে একটা পাঁচমিশেলী তরকারী, ডাল আর আচার রেডি করে রাখবো।
    আমরা আমাদের ফ্ল্যটে ফিরলাম। নীচে কিছু লোক খবর পেয়ে জমা হয়েছে। মা এসে রত্না কে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলো।
    বল্লো- এইসময় মেয়েদুটো থাকায় অনেক সুবিধে হয়েছে। নইলে খালি বাড়িতে আমার--।
    রত্না রান্নাঘরের থেকে লম্বা হাত বাড়িয়ে লেবু ছিঁড়ে আনা ও উনুনে ঠ্যাং ঢুকিয়ে রান্নাকরার স্টাইলে কিছু করল।
    এমনসময় টি আই মি: সিং কে নিয়ে জাঠ পরিবার ফিরে এলো। চারপাশের ফ্ল্যাটের থেকে কৌতূহলী মুখ এবং নীচের জমায়েত থেকে কিছু উৎসুক চোখ।
    রত্না গেল ওদের সঙ্গে। মেয়েরাও গেল। আমি লোক্যাল চ্যানেলে কালকের ঘটনার রিপোর্টিং দেখতে লাগলাম।
    অ্যাংকর ছেলেটি নাটকের সূত্রে আমার ভালই পরিচিত। গত কয়েকমাসে প্রোমোটার যখন আমাদের মিটার জ্বালিয়ে জলের লাইন কেটে আমাদের জ্বালাতন করছিল, তখন আসবো বলেও আসেনি। পরে বলেছিল-- আমি সব জানি, কিন্তু মালিকের মানা আছে।
    এখন সে মাইক হাতে নিয়ে বলছে কি ভাবে রায়পুরের পুলিশের বড়কর্তাদের দাক্ষিণ্যে বিলাসপুরের গুলি চালিয়ে দেওয়া খতরনাক অপরাধীরা এখনও অ্যারেস্ট হয় নি, পালিয়ে গেছে।
    ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বিল্ডার নয়, কালকের কিছু ফ্ল্যাটের বাসিন্দে কাঁদো কাঁদো সুরে শোনাচ্ছেন কেমন করে হরিয়ানা থেকে আসা এক অপরাধী চরিত্রের মহিলা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে হুড়্‌দঙ্গ্‌ মচিয়েছে। আর রত্না রায় বলে আর এক উৎপাত করনেওয়ালী বয়স্ক মহিলা এইসব অ্যান্টিসোশ্যাল এলিমেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
    ( মাওবাদী-ঘাসফুল আঁতাত?)

    ইতিমধ্যে রত্নার ক্রুদ্ধ চিৎকারে প্যাসেজ কম্পমান। সমস্ত ফ্ল্যাটের দরজা ধড়াধড়্‌ বন্ধ হচ্ছে। মেয়েরা এসে বলে--- বাবা, শিগ্গির চলো, মাকে সামলাও।

    আমি গিয়ে যা দেখলাম।
    ওরা দুপুরে তাড়াহুড়ো করে দরজা লাগিয়েছে বটে, কিন্তু ছিটকিনি বন্ধ হচ্ছে না। দরজার ফ্রেম ভাঙা, বাথরুমের কমোড ভাঙা, বেডরুমের ভাঙা দরজায় সাদা সানমাইকার ওপর অস্যংখ্য লাথিমারা পায়ের ছাপ। গয়নার বাক্স ভাঙা, তোষকের তলায় রাখা জমি বিক্রির আগাম টাকা নেই কিচেনে মাইক্রো- ওয়েভ জ্বলে গেছে। এমনকি টপার-ওয়ারের কিছু মশলারাখার কৌটো নেই।
    এইসব দেখার পর টি আই( কোলকাতার SHO) রত্নাকে অনুরোধ করে-- ম্যাডাম, আপনারা স্টেটমেন্ট না দিয়ে রায়পুর চলে গেছিলেন, তাতে FIR ঠিকমত লেখা সম্ভব হচ্ছে না। ওপরতলায় আমাদের বদনামী হচ্ছে, একটু কোঅপারেট করুন। রত্না হটাৎ ফেটে পড়ে।
    ---- কিসের স্টেটমেন্ট মশাই! কিসের কো-অপারেশন? সারারাত আমাদের বসিয়ে রেখে বয়ান নেওয়া হয়নি, এখন ন্যাকামি হচ্চে?
    দরজাভাঙা অবস্থায় আপনাআমাদের তুলে নিয়ে গেলেন। বল্লেন--- পুলিশ গার্ড আছে, সব সুরক্ষিত থাকবে। তাহলে কি করে প্রোমোটারের লোক এসে দরজা লাগায়? কি করে গয়না-টাকাপয়সা গাপ হয়ে যায়? তারপর থানার ব্যাকিংয়ে প্রেস-কেবল্‌ এ উল্টো সীধে স্টেটমেন্ট?
    তারমানে পুলিশের লোক গয়না -টাকাপয়সা-পিস্তল চুরি করেছে?
    আপনাদের থেকে এইসব জিনিসের ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক, তারপর স্টেটমেন্ট দেব, আগে নয়।
    আপনি ছিলেন না বলে দায়িত্ব এড়াতে পারেন? সব তো আপনাদের ডিপার্টমেন্টের লোকজনই করেছে।
    কত পয়সা খেয়েছেন আপনারা বিল্ডারের কাছে? বলুন!
    আপনি খান নি? বেশ, তাহলে ফ্ল্যাটেলুকিয়ে থাকা চেহরাগুলোকে টেনে বার করুন। সবার ফ্ল্যাট সার্চ করুন। চোরাই মাল ঠিক পেয়ে যাবেন। আর না পেলে? সব কটাকে মারুন , হ্যাঁ, চোরের মার! ততক্ষণ মারুন যতক্ষণ না মাল ফিরিয়ে দেয়। তারপর আমার স্টেটমেন্ট নিতে আসবেন।
    আমি ওর টাইরেড থামাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হই।
    ( মনে মনে জাস্টিফিকেশন খুঁজি-------- ফ্রান্সে নাজিরা হারার পর আন্ডারাগ্রাউন্ড গেরিলা ম্যাকি কোলাবোরেটরদের ওপর টর্চার করা, বাংলাদেশ মুক্ত হলে রাজাকারদের ওপর মুক্তিবাহিনীর টর্চার ইত্যাদি)।
    সমস্ত অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে পিনড্রপ সায়লেন্স।
    রত্না বিড়্‌বিড়্‌ করে-- কাপুরুষের দল! নীচে পুলিশ বসিয়ে ওপরে দাদাগিরি! পাঁচজন মিলে একটা মেয়েকে মারা!
    ---- আপনি শান্ত হোন ম্যাডাম! সব হবে, অপরাধীদের শাস্তি হবে, খোয়া মালপত্র উদ্ধার হবে। ঠিক আছে, আপনি না হয় পরেই স্টেটমেন্ট দেবেন। কাল রায়পুর মুখ্যালয় থেকে ম্যাডাম গুপ্তা আসছেন।
  • ranjan roy | 115.184.62.209 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:০৭428512
  • পরের দিনটা কাটলো উৎকন্ঠায়, আশায়। না রায়পুর থেকে কোন পুলিশ অফিসার এলেন না।
    সকাল এ গোটাচারেক ফ্ল্যাট থেকে কয়েকজন মহিলা ও পুরুষের প্যাসেজে চেয়ার লাগিয়ে বৈঠক, উঁচু গলায় কমেন্ট শোনা গেল। রত্না সকালে কুকুর নিয়ে ফেরার সময় ওই বৈঠকের পরে পড়ে থাকা কিছু মোল্ডেড ওয়ারের চেয়ারগুলোকে সবাইকে দেখিয়ে একেক লাথিতে প্যাসেজের এমাথা থেকে ওমাথায় পৌঁছে দিল।
    আমি প্রোভেকেশনে পা না দিতে বারণ করলাম। সন্ধ্যেয় থানা থেকে একজন সিপাহী এসে সি এস পি র সই করা কিছু সামনস্‌ কয়েকজনকে সার্ভ করে গেল। থানায় বয়ান দিতে ডাকা হয়েছে। আমরা ঠিক করলাম, রায়পুরের পুলিশের সঙ্গে কথা না বলে কেউ যাব না। ইতিমধ্যে প্রবীণকে রায়পুর পি এইচ কিউ ডেকেছে ভালো করে মেডিক্যাল চেক আপ করার জন্যে।
    সেদিন ছিল সোমবার,ঈদের ছুটি। আমার কলিগ ও বামপন্থী বন্ধু শাকিরের ঘরে সবাই প্রতিবারের মত বিরিয়ানি খেতে ও আড্ডা দিতে এককাট্টা হয়েছে। খালি আমি নিজের ঘরে।
    সেখান থেকে আমার বন্ধু বিজয় বর্মার( যার যোগাযোগে এক রাত্তির আগে সি এস পি কে ডাকা হয়েছিল) ফোন এল---- দাদা, ছোটভাই বাবলু বিল্ডার্স লবির সঙ্গে কথা বলেছে। ওরা বলেছে রায়পরিবারের সঙ্গে আমাদের কোন প্রবলেম নেই। ওদের সঙ্গে কোন ডিসপিউট নেই। কিন্তু ওই জাঠপরিবারের সঙ্গে তাল দেয়া আন-অ্যাকসেপ্টেবল্‌। ওদের আমরা বিলাসপুর-ছাড়া করে হরিয়ানায় ফেরত পাঠাবো। রায়দের ওদের পক্ষে দাঁড়ানো চলবে না।
    তাহলে রায়েরা আরামসে বিলাসপুরে ওদের ফ্ল্যাটে থাকতে পারে।
    দাদা, আপনি কী বলেন?
    আমার ভিতরে কিছু একটা ছিঁড়ে যায়। শুনি হরিদাস পাল বলছে---- আমি বিলাসপুরে কার সঙ্গে মিশবো,আমার ওঠাবসা কার সাথে হবে------- এ'সব কোন বিল্ডার্স লবি ঠিক করতে পারে না। ওদের কোন রাইট নেই। আমি ওই ফ্ল্যাটে পেমেন্ট করে এসেছি, ভিক্ষেচেয়ে নয়। দরকার হলে বিলাসপুর ছেড়ে দেবো, কিন্তু ওদের সাথে কোন আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে যাবো না।
    বাবলুকে বল্‌--- আমার জন্যে যেন কোন চেষ্টা না করে!
    বর্মা বলে --ঠিক আছে।
    তারপর বইরে এসে বলে--আপনার বামপন্থী বন্ধুরা, সবাই এড়িয়ে গেল। কোন আলোচনা পর্য্যন্ত করতে চাইলো না। সিপি এমের নন্দু, শাকির, বিজলী ইউনিয়নের খান্ডে সবাই ভাব দেখালো--- এটা রায়দের গোঁয়ার্তুমির ফল, বিশেষ করে রায় গিন্নির। ভদ্রমহিলা বরাবরই প্রবলেম তৈরি করেন।
    দাদা, কেবল সমাজবাদী পার্টির সিনিয়র আনন্দ মিশ্র, উনি আপনাকে খুব ভালো বাসেন। উনিই তুল্লেন, চাইছিলেন কি করা যায় , এনিয়ে কিছু কথাবার্তা হোক, শেষে সবার ঠান্ডা ভাব দেখেউনিও চুপ মেরে গেলেন।

    রাত্তিরে রেণু ও জার্নালিস্ট অমিতাভ শোবে কি করে? ২১০ নং এর দরজাই বন্ধ হয় না যে!
    রত্না বল্লো--- আমার ফ্ল্যাটে জায়গা হয়ে যাবে। আর তোমাদের ওখানে শুতে পার। আমি বাইরে থেকে আমার প্যাডলক লাগিয়ে দিতে পারি। সকাল ৬টায় খুলে দেব। রাত্তিরে কোন অসুবিধা বুঝলে মোবাইলে কল্‌ করবে, আমি ও রঞ্জন পৌঁছে যাবো।
    ( স্বামীর অবর্তমানে রেণু ও অল্প পরিচয়ের বন্ধু অমিতাভ কি দরজা বন্ধ করে শুতে অস্বস্তি বোধ করছে?)
    আমি--- জোরাজুরি কোর না। তুমি অপশন দিয়ে দিয়েছ, ওদের ডিসাইড করতে দাও।
    রত্না-- যুদ্ধের ময়দানে এতসব ন্যাকামি চলে না। কই, ও যখন জেলে ছিল আর ওর স্বামী ও আমার নামে হরিজন অত্যাচারের চার্জে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বেরিয়েছিল, তখন ভিলাই-রায়পুর পালিয়ে থাকার সময় আমি তো রাত্রে ভাইবোন পরিচয় দিয়ে হোটেলের একই কামরায় থাকতে
    কোন ন্যাকামি করিনি?
    --- রেণুও করছে না। তবু ডিসিশন ওদের নিতে দাও।
  • Nina | 68.45.145.174 | ১৭ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৩:৫৯428513
  • উফ! নি:শ্বাস বন্ধ করে বসে রইলুম--
  • Manish | 117.241.229.13 | ১৮ ডিসেম্বর ২০০৯ ১০:৩১428514
  • বন্ধু নীরব কেন।
  • M | 59.93.215.191 | ১৮ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:২৫428516
  • উ: রঞ্জনদা, আজ ই প্রথম পড়লাম, আমি আপনাকে কলকাতা অপশন না নিতে বলেছিলাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমাদের কলকাতা এতটা খারাপ নয়, অন্তত কেউ তো এগিয়ে আসবেই।
  • SB | 59.93.255.214 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯ ০০:২৩428517
  • @M, রঞ্জনদা কে বলেছিলাম, কলকাতাতেও ২০১১'র এরকম হবে (রঞ্জনদা, খচবেন না :-) )
  • Nina | 68.45.145.174 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৪:১৫428518
  • তাপ্পর কি হল???????
  • dukhe | 117.194.226.140 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৯:৫৪428519
  • ২০১১-র জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই, কলকাতায় এখনই এরকম হয়ে থাকে । পুলিশ এবং প্রোমোটারকুল যে কী জিনিস!
  • Manish | 117.241.228.18 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৪:৪২428520
  • থিক, তা গ্‌ফ্‌ফর,খুদে বাহিনিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে
  • Manish | 117.241.228.18 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৬:০৪428521
  • *ঠিক
  • a x | 75.53.196.154 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯ ২০:০৩428522
  • SB বোধহয় এটাই চাইছিলেন, একবার বলে দেখলেন কেউ কিছু বলেনা, তাই আরেকবার। এবং এই টইতেও।
  • Arpan | 122.252.231.12 | ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯ ২১:০৬428523
  • যা:, সবাই দেখি হাল ছেড়ে দিয়েছে! ;-)
  • Nina | 68.45.145.174 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৯:৩০428524
  • রঞ্জন, আজ তো রোববার, ছুটির দিন। কই বসুন লিখতে---বসে আছি তো আমরা উৎকন্ঠা নিয়ে।
  • SB | 219.64.144.169 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ ১০:৫১428525
  • @অক্ষ: আরে না না! এই টই ঘেঁটে দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ভুল হয়ে থাকলে দু:খিত।
  • ranjan roy | 115.184.74.138 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ ১১:১২428527
  • [ ডি: SB, একদম খচিনি। আসলে আমার লেখার উদ্দেশ্য নিজের কথা সাতকাহন করে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে সহানুভূতি আদায় করা নয়। ৩৬গড় বা বিজেপি শাসন কত খারাপ আর বঙ্গ বা বাম সরকার কত ভালো নয়। বিল্ডাররা কত খারাপ তাও নয়।
    আমার লক্ষ্য ঐ আমারই মত সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষদের মানসিকতাকে বোঝার চেষ্টা করা--- কি ভাবে বা পরিবেশের কোন চাপে ওরা গুন্ডার সঙ্গে একাত্ম হওয়াতেই নিজের পরমার্থ দেখতে পায়।
    আপনার-আমার মত লোকেরাই লোভের কোন পর্যায়ে গিয়ে ডিসিস্‌শন নেয় যে ছেলেবৌকে আর বাঁচতে দেয়া যায় না।
    হয় বিষ দাও, নাও কেরোসিন ঢেলে দাও, নয় ওকে বাধ্য কর সুইসাইড করতে।
    এ'ব্যাপারে রাজ্যে রাজ্যে খুব তফাৎ নেই-- শুধু প্রকাশ ভঙ্গীটা আলাদা।
    আমরা কি কোলকাতায় বাড়ি খালি করাতে গিয়ে দুই স্থানীয় মাস্তান ভাইদের এক বয়স্ক মহিলাকে রাস্তায় উলঙ্গ করে দেয়ার ন্যক্কারজনক ঘটনা ভুলে গেছি। আর নববর্ষের রাতে সার্জেন্ট বাপি সেনের ঘটনা? মেট্রোর আন্ডারগ্রাউন্ডে মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা?
    বিজন্সেতুতে আনদমার্গীদের পুড়িয়ে মেরে মধ্যযুগীয় বর্বরতা? সেই সকালে আমি পার্কসার্কাসের বাড়িতে ছিলাম যে!
    সাম্প্রতিককালে রিজবানুর ঘটনায় লালবাজারের ভূমিকা কি ছিল?
    ভুলি নাই, কমরেড্‌।
    এর জন্যে সিপিএম-বিজেপি- কংগ্রেস-ঘাসফুল নয়, দায়ী আমরা। যারা পাড়ার মস্তানকে কাউন্সেলর বানাই। তারপর তাকে স্কুলের ফাংশনে ডেকে তার হাত থেকে উন্নয়নের চেক নিয়ে তাকে লেজিটিমাইজ করি।]

    লিখবো দুপুর বেলায়। এখন একটু উকিলের কাছে যেতে হবে যে!
    রত্না রায় আমাকে ছাড়ছে না। আমার লেখার মুড পাংচার করে বল্লো-- এদিক-ওদিক থেকে টুকলি আর কাট-পেস্ট করে ছেপে শস্তা-হাততালি না কুড়িয়ে কাজের কাজ কর।:))))))
    বলছে--তোমার কোন নিজস্ব চিন্তা নেই, খালি চুরিবিদ্যা!
    তবে বন্ধুরা নিশ্চিন্ত থাকুন--- পোরো সেফ্‌ আছি। রত্না এখন থেকেই কোলকাতা যাওয়ার লম্বা প্ল্যানিং করছে। তাই লীগ্যাল ব্যাপারগুলোকে তাড়া দিচ্ছে।
    আজ বিকেলের মধ্যে অনেকখানি লিখবো। মাক্কালী!
  • SB | 219.64.144.169 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ ১১:৩৭428528
  • রঞ্জনদা কে ক! অপেক্ষায় থাকবো, আর আমাকে আপনি আপনি করবেন না :)
  • ranjan roy | 115.184.31.177 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:১৬428529
  • পরের দিনও কেউ এল না।
    রায়পুর থেকে খবর এল যে কিছুদিন দুই পরিবারেরই রায়পুরে সরে থাকা ভাল।
    রেণুরা রায়পুরে একটি ভাল ডুপ্লেকস্‌ বাড়ি খুঁজে নিয়েছে। বলছে--পাশেই আরো খালি আছে, আপনারাও চলে আসুন।
    আমাদের ঘরে মিটিং বসল।
    আমি বল্লাম- বিলাসপুরে থেকেই লড়বো। আমি ভাড়াটে নই, কোন অজুহাতে আমাকে খালি করানো যাবে না।
    মেয়েরা বল্লো-- মেনে নিলাম। কিন্তু ১০দিন্‌পরে আমরা দিল্লি চলে যাবো। এখানে তোমরা কতখানি সেফ্‌?
    রাত্তিরে রোজ ভাটাপাড়াস্টেশন থেকে সাত কিলোমিটার আসার সময় রাস্তায় তুমি সফট টার্গেট নও? বেশি কিছু না, দুটো লুম্পেনকে মদ খাইয়ে দেবে। তারা তোমাকে মোটরবাইকের ধাক্কায় ফেলে দিয়ে দো-চার লাথ-মুক্কা জমিয়ে পালিয়ে যাবে। তুমি হোস্টাইল পুলিসকে কমপ্লেন করবে? তারা তোমার জীবন ব্যতিবস্ত করে তুলবে।
    তুমি রায়পুরে চলে যাও। বর্মা আংকলকে বলে রায়পুরে ক®¾ট্রালিং অফিসে তোমার পোস্টিং করিয়ে নাও। কিন্তু রেণু আন্টিদের সঙ্গে নয়, আলাদা।
    বিজয় বর্মার সঙ্গে কথা বল্লাম।
    ও বল্লো-- এই হোস্টাইল অ্যাপার্টমেন্টে আপনি ৫% সেফ, বিলাসপুরে অন্য পাড়ায় বাড়িভাড়া করে গেলে ৫৫%, আর রায়পুরে গেলে ৯৫%।
    আর ভেবে দেখুন, এইরকম হামলা সম্ভব হয়েছে আপনারা হঠাৎ বড়লোকি দেখিয়ে শহরের বাইরে বড়লোকের পাড়ায় ফ্ল্যাটে চলে গেলেন,ঐ হতচ্ছাড়া মুখুজ্জের কথায়। ওই মিনোচা কলোনীর লোকেদের সঙ্গে আপনার কোন পরিচয় নেই। ওরা আলাদা ক্লাস। দশহাজার বর্গফুটের প্লটে ৫০০০ বর্গফুটের কনস্ট্রাকশন বানিয়ে গোটাদুই কালোকাঁচে ঢাকা ঢাউস গাড়ি নিয়ে সারা শহরের প্রতি নাকসিঁটকিয়ে থাকা লোকজন।
    আর আপনার অ্যাপার্টমেন্টের লোকজন ?আদ্দেক আপনার মতই পাতি মধ্যবিত্ত, কিন্তু বিল্ডারকে ভগবান ভাবে, বড়লোকদের তেল লাগায়। কারণ একদিন ওদের মত হওয়ার স্বপ্ন দেখে।
    আমার কথা শুনে থাকতেন শহরের মাঝখানে, ধরুণ আমাদের মত একটু ঘিঞ্জি পাড়ায়, আপনাদের ওপর মাঝরাতে এমন হামলা হতে পারতো না।
    মাইরি বলছি, মাঝরাতে পুলিশ এসে বাড়ি ঘিরবে আর গুন্ডারা হামলা চালাবে?
    দশটা ইয়ং ছেলে বেরিয়ে আসতো? পুলিশের কাছে কৈফিয়ৎচাইতো। তারপর চারপাশের বাড়িগুলোতে আলো জ্বলে উঠতো, দলে দলে লোকজন বেরিয়ে পড়তো, পুলিশ আর কটা গুন্ডা পালাতে পথ পেতো না।
    পুলিশ এসব ভালো করেই জানে, তাই সে চেষ্টাই করতো না।
    আর এমন দূরে বাড়ি নিয়েছেন যে আপনার ওখানে যাওয়াও একটা প্রোজেক্ট। আগে আমরা রোজ আড্ডা দিতাম। কিন্তু আপনি দিনের পর দিন সমানে দূরে বাড়ি নিতে থাকলেন।
    সেদিন রাতে যদি আমার মোবাইল অফ থাকতো, বা আমি বিলাসপুরের বাইরে থাকতাম তো?
    আপনার ভাগ্য ভালো তাই কনট্যাক্ট হল, আর ছোটভাই পৌঁছে গেল। আপনি আর ভাবীজি নিজেদের স্বভাব এইবয়সে তো পলটাবেন না। এড়িয়ে গিয়ে চুপ করে থাকবেন না। কাজেই আপনাদের সেফটির দিকটা আগে ভাবা উচিৎ।
    কথা হল বর্মা ওর বাড়ির কাছে বিল্ডার্স গিল্ডের থেকে স্বতন্ত্র এক্‌জন প্রোমোটারের বানানো অ্যাপার্টমেন্টে খালি ফ্ল্যাটের খোঁজ করে রাত্তিরে জানাবে।
    রেণুরা প্যাকার্স অ্যান্ড মুভার্স এর সঙ্গে কথা বলে পরশু রায়পুরে শিফট হয়ে যাবে। বাঁধাছাঁদা জোর কদমে চলছে।
    ইতিমধ্যে ছোটমেয়ের দিল্লির বন্ধুর কনট্যাক্টে এক পুলিস অফিসার ফোন করে রায়পুর থেকে জানালেন যে আপনারা নিশিন্ত থাকুন, আপনাদের গায়ে আঁচ লাগবে না। আপনারা ন্যায় পাবেন , একটু সময় লাগবে।
  • ranjan roy | 115.184.31.177 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:৫৫428530
  • পরের দিন ঘরের মধ্যে রেণুদের ও রত্না রায়ের মধ্যে কিসব ফিসফাস হতে লাগলো। আমি একটু অবাক হলাম। ওদের কয়েকবার যাতায়াতের পর রত্নাকে দেখা গেল কাপড়ে মোড়া কি একটা নিয়ে ওপরের ডিভানে লেপের নীচে ঢোকাল।
    কি জিনিস রে বাবা? আমিও জানিনা।
    টিভি দেখতে দেখতে মেয়েরা উঠে দাঁড়াল। আমি বই পড়ছিলাম। আমাকে ডেকে বল্লো--- বাবা, ওপরে চলো। আর মাকেও ডাক, কথা আছে।
    আমাদের ওপরে দেখে রত্না যেন একটু চমকে উঠলো!
    -- মা, ডিভানটা খোল।
    -- কেন? হটাৎ কি হল?
    -- সেটা তুমিই ভাল করে জান, মা।
    --- এমনি বাঁকা বাঁকা কথা বলছিস্‌ কেন?
    -- তাহলে সোজা করেই বলছি, তুমি আংকলদের ঘর থেকে কাপড়ে মোড়া কী এনে ওখানে লুকিয়েছ?
    --- ইট ইজ নান অফ ইয়োর কন্সার্ন!
    -- হাও ক্যান য়ু সে সো? দ্যাটস্‌ আওয়ার কনসার্ন অ্যাজ ওয়েল। টেল আস মম্‌।
    রত্না কিছু বলে না। খালি ওর লরির হেডলাইটের মত জ্বলে ওঠা চোখ সবার মুখের ওপর ঘুরতে থাকে।
    --- তাহলে আমিই বলি মা, সাইজ দেখে মনে হচ্ছে ওই কাপড়ে মোড়া বস্তুটি আসলে জার্নালিস্ট অমিতাভ তিওয়ারির চুরি যাওয়া পিস্তল। তাহলে চুরির গল্পটা মিথ্যে, ওরা ঝুটা রিপোর্ট লিখিয়েছে। এখন এই মাল আমাদের ঘরে কেন লুকোতে হবে? অধিকারের প্রশ্নে ওদের সঙ্গে দাঁড়ালে কি ওদের সমস্ত অপকম্মের ভাগীদার হতে হবে? আর বাবা, তুমি চুপ কেন?
    ( ঘাসফুল-মাওবাদী-সুশীলদের মোর্চা সিরিয়াস প্রশ্নের মুখে)।
    রত্না মুখ খোলে-- হ্যাঁ, ওটা সেই রিভলবারই বটে। তিওয়রির ছিনিয়ে নেয়া লাইসেন্সড- রিভলবার। সেদিন মারপিটের সময় কেড়ে নিয়েছিল। আর ডাবল ব্যারেল বন্দুকও। চুরির রিপোর্ট মিথ্যে নয়।
    আসলে ওরা পরে বুঝতে পেরে দরজা লাগানোর সময় এটাকে চালের টিনের মধ্যে গুঁজে দিয়ে গেছে। আজ প্যাকিংয়ের সময় চোখে পড়েছে। দোনলা বন্দুক থেকে গুলি চলার গল্প বানিয়ে আমাদের ওপর আর্মস্‌ অ্যাক্ট লাগিয়েছে। আর এই রিভলবারটা এমনি করে অবভিয়াসলি পুলিসই রাখিয়েছে, যাতে সার্চের সময় চালের টিন থেকে বের হলে আমাদের কমপ্লেনটাকে মিথ্যে প্রমাণ করা যায়।

    -- বুঝলাম, কিন্তুআমাদের ঘরে যদি সার্চ হয়? হবে না তুমি কি করে জোর দিয়ে বলতে পারো? পুলিস জানে কোথায় রাখা আছে। সেখানে না পেলে ওরা ভাববে না কি রায়েদের ঘরগুলিও দেখি? আর পুলিসি খানাতল্লাসিতে তোমার ওই বাচ্চাদের মত লুকোনো হাতিয়ার একমিনিটে বেরিয়ে পড়বে। তারপর?
    আন-লাইসেন্সড-হাতিয়ার জব্দ হলে তোমরা দুজন অন্দর। জামিন হতে কয়েক মাস। আমাদের ওপর ও চার্জ ফ্রেম হবে। আমার পরিশ্রমে
    গড়ে তোলা লিগ্যাল ক্যারিয়ার চৌপট।
    সত্যি যদি তোমরা গুলি চালাতে, হাতিয়ার লুকিয়ে রাখতে আমার তার জন্যে ভুগতে তত দু:খ হবে না। কিন্তু যাদের সঙ্গে ভালো করে চেনাজানা হয়নি, তাদের হাতিয়ার রাখতে তুমি কি করে এত সহজে রাজি হলে? অ্যাডভেঞ্চার? তুমি পারো ও বটে! আমরা সরেজমিনে হাজির, ছোট বাচ্চা নই, তুমি একবারও আমাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার মনে করলে না?
    এক্ষুণি ওদের বল , মেয়েদের আপত্তি আছে, এটা আপনারা নিয়ে যান।
    খানিকক্ষণ রত্না গিয়ে কিসব কথা বল্লো, ওরা এসে নিয়ে গেল। আমি হাঁফ ছাড়লাম।
    এমন সময়ে হাসিহাসি মুখে সালোয়ার কামিজ পরা একজন শ্যামলা ইয়ং মেয়ে হাজির হলেন, সঙ্গে স্থানীয় থানা থেকে আসা দুই সাব ইন্সপেক্টর।
    --- আমি রায়পুরের পুলিস হেডকোয়ার্টারের বিশেষ নির্দেশে তদন্তে এসেছি, অফিসার কিরণ গুপ্তা।
  • Nina | 68.45.145.174 | ২১ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৮:২০428531
  • রঞ্জন, আপনার মেয়েদুটিকে ভালবেসে ফেল্লাম। বড় ভাল লাগে যখন আমিও মেয়ের বকুনি খাই আর দেখি ওর পরামর্শটাই ঠিক।

  • M | 59.93.203.167 | ২১ ডিসেম্বর ২০০৯ ১২:২০428532
  • রঞ্জনদা, অমন একটা ভয়ের ঘটনা ও কেমন ক্যাসুয়ালী মজা করে বলছেন!

    আর আমার একটুও ভালো লাগেনা যখন দেখি আমার এগারো বছরের কুঁচোটা আমার থেকে বেশী বুঝছে,(বাস্তবিক ই বেশী বোঝে)আর আমাকে খামোকা বকাঝকা করছে।
  • M | 59.93.203.167 | ২১ ডিসেম্বর ২০০৯ ১২:২১428533
  • ক্যাজু।।।ধুৎ
  • Santanu | 82.112.6.2 | ২৪ ডিসেম্বর ২০০৯ ১০:০৪428534
  • রঞ্জনদা, কলকাতা থেকে ফিরে টেবিলের কাজ শেষ করে, গুচর পুরোনো লেখা পড়ছি। বাপরে কি কান্ড আর আপনাদের কি সাহস! তাড়াতাড়ি চলে আসুন কলকাতায়, দিব্য আড্ডা হবে।

    তবে একটা ব্যপার একটু বলুন তো, না হলে এই লেখাটা ঠিক ফলো করতে অসুবিধা হচ্ছে -

    যা বুঝলাম, আপনারা ফ্ল্যাট মালিক আর আপনাদের পেছনে হাত ধুয়ে লেগেছিল কারণ আপনারা রেনুবালা গুপ্তা দের সাপ্পোর্ট করেছিলেন, বেশ,

    প্রশ্ন হল, রেনুবালা গুপ্তা ভাড়াটে, পুরো ব্যাপারে তাদের বাড়িওলার কি রোল ছিল আর রেনুবালা গুপ্তা বিল্ডারের পাকা ধানে কি মই দিয়েছিল?

    তবে ঐ, প্রশ্নগুলো খুব কিছু ইম্পর্টান্ট নয়, যাস্ট কাটিয়ে দিতে পারেন।
  • Partho | 202.177.144.3 | ২৪ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৯:২১428535
  • রঞ্জন-দা আড়াই দিন ছুটি আছে, অনেকটা লেখা চাই।
  • SB | 59.93.216.6 | ২৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ১০:৩৭428536
  • রঞ্জনদা, তারপর?
  • d | 117.195.39.77 | ২৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ১০:৪০428538
  • শান্তনু,

    আগের অংশগুলো ভাটে বিভিন্ন টুকরো টুকরো বলেছেন আগে। আগে মানে ধর জুন জুলাই থেকে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন