এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাস্তুহারা

    ranjan roy
    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ | ১১৫৬৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Manish | 117.241.228.137 | ২৫ মে ২০১০ ১৫:৪২428419
  • লেখা কি শেষ?
  • ranjan roy | 122.168.27.19 | ২৫ মে ২০১০ ২১:৫১428420
  • মনীশ! ধন্যবাদ। আমি ভেবেছি পাব্লিকের একঘেয়ে লাগছে, তাই একটু কিন্তু কিন্তু করছিলাম। কাল নামাচ্ছি।
  • SB | 115.117.214.159 | ২৫ মে ২০১০ ২২:৫৫428421
  • আবার কিন্তু কিন্তু মনে হলে বলবেন, আপনাকে মনে করিয়ে দেব
  • Blank | 59.93.198.54 | ২৫ মে ২০১০ ২৩:৪৪428422
  • !! আরে রঞ্জন দা, এটা তে তাড়া দিতে নিজের খারাপ লাগে, কারন মনে হয় যে যাস্ট একটা থ্রীলার টাইপ কিছু শুনবো বলে তাড়া লাগাচ্ছি।
  • ranjan roy | 122.168.177.170 | ০৫ আগস্ট ২০১০ ২২:৪৭428423
  • ইতিমধ্যে জানা গেল ডিজি বিশ্বরন্‌জন যাঁকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আমাদের কেসের জন্যে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন সেই মি: বামরা ( একবছরের একস্টেন্‌শনে থাকা ডি এস পি)ই হলেন ভিলেন। বিল্ডর অমিত শর্মার থেকে ভাল পয়সা নিয়েছেন
    আর পি এইচ কিউ এ আমরা কবে গেছি, কি কথা হচ্ছে--- সব তৎক্ষণাৎ মোবইলে বিলাসপুরে বিল্ডারকে জানিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের কিছু ডকুমেন্ট হাপিশও করে দিচ্ছেন।
    এই না হলে পুলিশ!
    হরিদাস পালের মুখ দিয়ে বেরুল ছোটবেলার স্কুলে শেখা অমৃতবাণী--- বামরা, হনুমানের পোঁদ কামড়া!
    রত্না রায় কড়া চোখে তাকায়।-- চিপ্‌ স্টান্ট ছেড়ে কিছু কাজের কথা ভাব।

    ঠিক হল-- কাল সব দস্তাবেজ নিয়ে স্পীকারের সঙ্গে দেখা করতে হবে। উনি বিলাসপুরের লোক। আর দেখা করতে হবে বিরোধী দল নেতা কংগ্রেসের হুইপ রবীন্দ্র চৌবেজীর পি এ র সঙ্গে।
    কিন্তু স্পীকার ওদের পাত্তাই দিলেন না। কাগজগুলো দেখলেন ও না। বল্লেন-- মামলা এখন আদালতে, যা হবার কোর্টে হবে, আমার কিইবা করার আছে?
    কিন্তু বিরোধীনেতার পি এ বল্লেন পনের দিন পরে বিধানসভার অধিবেশন। আমরা দেখব রিটায়ার্ড পুলিস অফিসারটি যেন আর একস্টেনশন না পায়। আর বিলাসপুরের এস পি প্রমোশন পাচ্ছে, কিন্তু যাতে ভাল পোস্টিং না পায়।
    হরিয়ানা পরিবার গেল হরিয়ানায়। রত্না রায় তার সম্বল "রাইট টু ইন্‌ফর্মেশন' বা RTI এর দরখাস্ত বানিয়ে গেল বিলাসপুরের কর্পোরেশনের কমিশনার আর ইলেকট্রিসিটি বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারের কাছে।
    -- স্যার, ঐ বেনিয়মের বিল্ডার আপনাদের শো'কজ নোটিসের কোন ইজ্জত দেয় নি। একটাও জিনিস শোধরায় নি। আপনারা কবে ওর লাইসেন্স ক্যানসেল করছেন?
    --- আমরা আবার শো'কজ দিয়ে ওকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি।
    --- আর কবার শেষ সুযোগ দিতে থাকবেন?
    --- ম্যাডাম, ওর লাইসেন্স ক্যানসেল হলে আপনার কি লাভ?
    --- বলছেন কি? ব্যাংকের লোন মিলিয়ে ২০ লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করার পরও ওর বদমাইসির জন্যে আজ রায়পুর শহরে ভাড়ার ফ্ল্যাটে আছি। আমাদের মিটার জ্বালিয়ে দিয়েছে। আপনাদের কাছে বন্ধকী ফ্ল্যাট বিনা অনুমতি না জানিয়ে খদ্দের দের বেচেছে। ওদের কোন শাস্তি হওয়া উচিৎ নয়? ওদের বদমাইশি দিন কে দিন বেড়েই চলবে? আপনারা চুপচাপ দেখবেন? একটা কথা বলুন তো, এমন একটা বিল্ডারের অপকীর্তির দিকে চোখ বুঁজে থেকে আপনাদের কি লাভ?
    (চলবে)
  • ranjan roy | 122.168.177.170 | ০৬ আগস্ট ২০১০ ২৩:৩২428424
  • রত্না এবার যায় বিজলীবিভাগের অফিসে। বলে-- আপনারা হুকিং নিয়ে আর টি আই এর যে আবেদন দিয়েছিলাম তার কোন উত্তর দেন নি, মাস খানেক হতে চললো। আর সেইযে গত বছর ১৯শে সেপ্টেম্বর আমাদের মেরে তাড়ানো হল সেইদিন সন্ধ্যেয় বিল্ডারের ইলেক্ট্রিশিয়নকে হুকিং করতে আমরা হাতেনাতে ধরি। আপনাদের ফোন করি। আপনারা এসে কমন মিটার সীল করেদিয়ে বলেন দুদিন পর মঙ্গলে খোলা হবে, লোড টেস্ট করা হবে। তদ্দিন লিফট, ক্যাম্পাসের আলো সব বন্ধ থাকবে। তখন দেখা গেল তিনটে ফ্ল্যাটের লাইট বন্ধ। ওরা নীচে বাইরে বসে ছিল। তারপর রাত্তিরের হামলায় ওই তিনটে পরিবার সামিল ছিল।
    এবার জানতে চাই এক, ওই সীল কারা ভাঙ্‌ল? দুই, কার নির্দেশে? আর তিন, ওই বিজলীচুরির ব্যাপারটায় আপনারা কি অ্যাকশন নিলেন?
    ইঞ্জিনিয়র ভদ্রলোক এক মহিলাকে দেখিয়ে বলেন-- ওই ডেস্কে যান। সব উত্তর পাবেন।
    নতুন মহিলাটি খ্যারখেরে গলায় বলে ওঠেন-- আচ্ছা, আপনিই সেই পরের পেছনে কাঠি করে বেড়ানো মহিলা? কেন বিল্ডারের পেছনে হাত ধুয়ে পড়েছেন বলুন তো? ঘরের কাজকম্ম ছেড়ে এইসব করে অশান্তি বাড়িয়ে কি পান? আপনার স্বামী কিছু বলেন না?
    রত্না রাগতে গিয়েও হেসে ফেলে।
    বলে-- ম্যাডামজী, আমার ঘরের ভাবনা আমাকেই ভাবতে দিন। আমি নিয়মমাফিক ১০ টাকার নন- জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প লাগিয়ে আবেদন দিয়েছি। উত্তর পাচ্ছিনা কেন? হুকিং এর প্রশ্ন আপনারা এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন?
    এবার ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক মি: মূর্তি এগিয়ে এলেন।
    --- কোন হুকিং তো হচ্ছে না, ম্যাডাম। আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি।
    -- তাই নাকি? দেখুন, আপনি সার্টিফিকেট দিয়েছেন যে গত ১ অক্টোবর থেকে আমাদের মিটার ডিসকনেক্ট করা আছে। তাহলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি অব্দই আমাদের বিল আসছে কি করে? এটা হুকিং নয়?
    -- আপনাদের পে করতে হবে না। ওতো আপনার সিকিউরিটি ডিপোজিট থেকে অ্যাডজাস্ট করে নিয়েছি। ওটা ভুলে হয়েছে।
    --- ভুলে চরমাস ধরে বিলিং হয় কি করে? আর যদি ভুলই হয় তবে আমাদের ডিপোজিট থেকে কাটছেন কি করে? আর রিডিং আসছে কেন?
    সব উত্তর পেয়ে যাবেন। এখন আমি ফিল্ডে যাচ্ছি।
    মূর্তি জীপে চড়ে উধাও। মহিলাটি রত্নাকে বলে আগামী সোমবার আসতে।
    রাত্তিরে রায়পুরে বাড়ি ফিরে রঞ্জনকে জানালে ও দাঁত বের করে।
    -- শোনো, মূলোক্ষেতে এক চোর ঢুকেছে। মালিক তাকে ধরে ফেলে । সে বলে আমি চোর নই।
    - তাহলে বাগানে বেড়া টপকে ঢুকেছ কেন?
    -- ঢুকিনি তো, ঝড়ে আমাকে উড়িয়ে এনে ফেলেছে।
    -- তাহলে মূলো তুলেছ কেন?
    --- তুলিনি তো, ঝড়ে আবার আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, বাঁচার জন্যে আমি মূলো আঁকড়ে ধরি। তাতে কিছু মূলো উঠে এসেছে।
    --- বেশ, তাহলে আঁটি বেঁধেছ কেন?
    -- হ্যাঁ, এবার আপনি বলতে পারেন। এই হক আর টি আই অ্যাক্টের মাহাত্ম্য।
    (চলবে)
  • ranjan roy | 122.168.165.111 | ০৯ আগস্ট ২০১০ ০০:৫৮428425
  • সুখবর! সুখবর! রত্না ও রেণুবালার পিটিশন মঞ্জুর হয়ে ডিজি পুরো ব্যাপারটা আবার তদন্তের ভার এক সি আই ডি বিভাগের ডিএসপি র‌্যাংকের অফিস্যারকে দিয়েছেন।
    উনি রত্না- রেণু-প্রবীণের ভার্সন শুনে বল্লেন -- বুঝতে পারছি আপনারা নির্দোষ। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ আছে, বিলাসপুরের মন্ত্রীর চাপ আছে। এই আর্মস্‌ অ্যাক্টের ও হরিজন অত্যাচারের এফ আই আর একটু ভোগাবে, আপনাদের একটু কঠিন সময় যাবে।
    উনি বিলাসপুরে ওই বৈশালী প্রাইড অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা করলেন। ওদের মুখে রত্না রায়ের উপস্থিতিতে হরিয়ানা পরিবার ও সাংবাদিক অমিতাভের গুলি চালানোর গল্পটি শুনে বল্লেন--- দ্বিতীয় গুলিটি কোথথেকে ছোঁড়া হয়েছে?
    -- তিনতলায় প্রবীণ সারদানার জানলা থেকে।
    --- আপনারা তখন কোথায় ছিলেন?
    --- মন্দিরের বারান্দায় বসে গুলতানি করছিলাম।
    -- চলুন, ওপরে গিয়ে দেখি। একি , ওপরে ওদের ফ্ল্যাটে এদিকে তো কোন জানলা নেই? তাহলে?
    -- না না, আসলে ব্যালকনি থেকে।
    -- চলুন, ব্যালকনিতে যাই। কিন্তু ব্যালকনি থেকে তো মন্দির দেখা যাচ্ছে না! বরংএখান থেকে গুলি চললে আপনাদের সীমানার বাইরে সাকেত অ্যাপার্টমেন্ট বা বিচারপতি প্যাটেলের বাড়ির দিকে যাবে। সেখান থেকে তো কোন কমপ্লেন আসেনি!
    আচ্ছা, পান্ডে! এফ আই আর তো তুমি লিখেছ।
    -- হ্যাঁ হুজুর!
    --- এই যে লিখেছ যে----"" অ্যাপার্টমেন্ট হইতে বাহির হইবার একটি মাত্র গেট। সেইটিকে কভার করিয়া হরিয়ানার সার্দানা পরিবার দাঁড়াইয়া থাকে ও গুলি চালায়। নিরুপায় হইয়া প্রাণ বাঁচাইবার তাগিদে সমস্ত ফ্ল্যাটবাসী এককাট্টা হয়, এবং দূরভাষ মারফৎ অন্য কলোনীবাসীদের একত্র করিয়া তিনতলায় নিজেদের ফ্ল্যাটে লুক্কায়িত আক্রমণকারীদের উপর সমবেত ভাবে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া বন্দুক কাড়িয়া লয়।''
    বেশ, এখন কি দেখছ? বেরুনোর জন্যে ক'টা গেট আছে?
    -- দু দিকে দুটো স্যার!
    -- তাহলে তুমি একটা লিখলে কি করে? এই চালান যদি কোর্টে যায় তাহলে ডিফেন্সের উকিল জেরা করে তোমার জামাকাপড় খুলে নেবে, সে খেয়াল আছে?
    এবার ওনার ফেরার পথে পথ আটকায় বিল্ডারের বৌ শিবানী শর্মা। প্রথমে ওর মোবাইলে অফিসারটির ফোটো তুলে নেয়। তারপর জিগ্যেস করে একবার এফ আই আর হয়ে চালান তৈরি হওয়ার পর আবার তদন্ত হচ্ছে কেন? আর আপনি আমাদের গুলি চালানো নিয়ে বক্তব্য বিশ্বাস করছেন না কেন?
    --- করতাম। যদি সত্যিই দুটোর বদলে বেরোনোর গেট একটা হত। আর যদি তিনতলার ২১০ নং ফ্ল্যাটের জানলা বা ব্যালকনি থেকে আপনাদের মনিদেরের চত্বরটি দেখা যেত।
    -- আপনি কত টাকা নেবেন?
    অফিসারটির চোখ কৌতুকে নেচে ওঠে।
    -- আপাতত: কিছুই ঠিক করিনি। করলে আপনাদের জানাব।

    পরের দিন বিলাসপুরের এস পি রায়পুরের রাজ্য পুলিশ মুখ্যালয়ে ডিজি কে ফোন করে জানালেন যে রয়পুর থেকে তদন্তকারী অফিসার এসে ফ্ল্যাটের নিরীহ লোকদের ধমকাচ্ছে, তদন্তের নামে হ্যারাস করছে। জেলে পোরার ভয় দেখিয়ে পয়সা চাইছে।
    --- তাই নাকি?
    --- হ্যাঁ স্যার! আপনি অ্যাকশন নিন।
    --- তা সবাই তো থানায় পয়সা খাচ্ছে, এবার না হয় ওই একটু খাক।
    ---- তাহলে আপনি কোন স্টেপ নেবেন না।
    --- এখন নয়। আগে কিছু খাক-টাক, তারপরে। আপাতত: তদন্ত চলুক। (চলবে)
  • Nina | 68.36.163.248 | ০৯ আগস্ট ২০১০ ০৫:৫১428426
  • রঞ্জন , খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি---যথা ধর্ম তথা জয়' হয় কিনা এই ঘোর কলিতে ,খুব জানার ইচ্ছে---
  • ranjan roy | 122.168.171.242 | ১০ আগস্ট ২০১০ ০০:৩৪428427
  • রত্নার আর টি আই এর কোচ্চেনের ঠেলায় বিজলি বিভাগের লোক গিয়ে ফ্ল্যাটের লোকজনকে আর বিল্ডারকে বলে-- তোমাদের আর কত দেখব? এবার আমার চাকরি যাবে। ওই রায়পুর থেকে আসা বাঙালী ম্যাডামটি এবার আমার চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে দেখা করে জানতে চেয়েছে-- কর্পোরেশনের মর্টগেজ ফ্ল্যাটে কি করে আপনার বিভাগ মিটার সাপ্লাই দিয়েছে? ভবিষ্যতে আপনাকেও পার্টি বানিয়ে কেস করতে পারি।
    খবর আসে বিল্ডারের গ্রুপে ফাটল । মুখার্জি ও সানিস্যান্ডো সি আই ডি অফিসারের কাছে বিবৃতি দিয়েছে যে কোন গুলি চলেনি। কেউ ওদের সঙ্গে ঝগড়া করেনি!
    হরিদাস পাল বাউল নাচার চেষ্টা করে।"" মেনকা মাথায় দিল ঘোমটা''।
    তাহলে আর্মস্‌ অ্যাক্ট এর এফ আই আর এমনিতেই খারিজ হবে? বাকি রইল-- হরিজন অট্রোসিটি।
    হরিজন থানার থেকে জানা যায় যে ওই রিপোর্টটা জুনিয়র অফিসার রাজেন্দ্রর লেখা। বিল্ডারের মুসাবিদা অনুযায়ী। কিন্তু অফিসার বলেন-- আমি সো-কল্ড পীড়িত হরিজন ইলেক্ট্রিশিয়ান এর সঙ্গে দেখা করতে চাই। ওকে দুসপ্তাহ ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ৫০ কিমি দূরের ওর গাঁয়েও না। শেষে পাওয়া গেল বিল্ডারের পত্নীর স্কুলে, সেখানেই চাকরি দিয়ে রাখা হয়েছে।
    ইতিমধ্যে আকাশে কালো মেঘ। মাওবাদী-মামাটি-পকাবুদের মধ্যেও ফাটল ধরে।
    একদিন রেণু এসে রত্নার বাড়ি চড়াও হয়। -- হল তো? কতদিন ধরে বলছি যে একটু চুপচাপ থাকুন ! আগে আমরা হরিজন থানার এফ আই আর ও আর্মস্‌ অ্যাক্টের ফাইল বন্ধ করাই, তারপর না হয় অ্যাটাক করবেন। আপনার লাগাতার বিজলী বিভাগের, কর্পোরেশনের ওপর চাপসৃষ্টিতে কোণঠাসা হয়ে বিল্ডার দুই মন্ত্রীর প্রেশার তৈরী করেছে। আজ আমাকে ডিজি ডেকে বকেছেন-- বলেছেন, "যা হবার কোর্টেই হবে, আমি আর হেল্প করতে পারবো না। আমিও চাকর। রোজ রোজ এই প্রেশার!"
    এবার আমাদের সবাইকেই জামানতের চেষ্টা করতে হবে। নইলে আমরা অ্যারেস্ট হয়ে যেতে পারি। তবে উকিলকে পয়সা দেবার বদলে পুলিশকে পয়সা খাইয়ে পার্মানেন্ট খারিজ করার চেষ্টা করাই প্র্যাকটিক্যাল হবে।
    হরিদাস পাল মাথা নাড়ে। পরে রত্নাকে বলে আমার উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি। খুব খারাপ হলে একদিন বা দু'দিন জেল কাস্টডিতে তোমাকে থাকতে হতে পারে। তার মধ্যে জামিন হয়ে যাবে। দুর্বল কেস , উড়ে যাবে। তুমি মেন্টালি তৈরি আছ? মাটিতে শুতে হবে, পাখা নেই। লপসি দেবে। পায়খানা ভাল নয়।
    -- হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি অ্যাডজাস্ট করে নেব। পরিস্কার আন্ডার গারমেন্ট পৌঁছে দিও, তাতেই হবে।
    কিন্তু রত্না মেয়েদের জানায়। মেয়েরা রঞ্জনকে ঝাড় দেয়।
    -- মায়ের বেলায় কত ক্যাজুয়ালি অ্যারেস্ট হবার কথা বল্লে! আমার মা একদিনের জন্যেও কেন জেলে যাবে? কই, তোমার নিজের বেলায়ও কি তুমি এতটা ক্যাজুয়াল ভাবে ভাব? ( চলবে)
  • Manish | 122.169.26.169 | ১১ আগস্ট ২০১০ ১১:১৭428429
  • Ranjan হাত চালিয়ে
  • ranjan roy | 122.168.207.175 | ১১ আগস্ট ২০১০ ২৩:২৬428430
  • রঞ্জন হতভম্ব। সাফাই দেয়।-- এমনি কিছু নয়। আমি আর তোর মা সবসময় সবচেয়ে খারাপ কি হতে পারে ভেবে নেই। তখন কি করবো ঠিক করে নিয়ে প্ল্যান A, B,C ভেবে নেই। কারণ সব ফ্যাক্টর আমাদের হাতে থাকে না।প্রগ্রেস আমাদের বাঁধা ছকে হয় না। ফলে কখনও হিসেব না মিললে যেন হতাশ না হই বা রাস্তায় বসে না কাঁদি, সেই জন্যে। তাহলেই লম্বা সময় লড়াই \করা যায়।
    মেয়ে মানে না।-- উঁহু, trying to get smart!
    -- আরে, আমি অ্যারেস্ট হলে স্ট্র্যাটেজিক ডিব্যাকল্‌ হবে। অফিস আমাকে নির্দোষ জেনেও সাসপেন্ড করতে বাধ্য হবে। মাইনে আদ্দেক হবে। রিটায়ার করা অব্দি ইচ্ছে করে কেসের ফয়সালা করা হবে না। ফলে টার্মিনাল বেনিফিট সব আটকে থাকবে। তখন ডাল-ভাতের জোগাড় করব না লড়ব? সবাই পরামর্শ দেবে, ঢের হয়েছে, এবার একটা মিটমাট করে ফেল। বলতো আমরা চেষ্টা করি। বুঝলি? বিল্ডার আমাদের ঠিক এই জায়গাটায় আনতে চাইছে।
    ইতিমধ্যে রঞ্জনদের তিণোমূল-মাওবাদী-পকাবু জোটে ফাটল ধরেছে।
    রত্নাকে হরিয়ানী মেয়ে রেণুবালা এসে চেঁচায়।
    --সব আপনার জন্যে হল। কে আপনাকে সদ্দারি করতে বলেছে? বলছিলাম কিছুদিন শান্ত হয়ে থাকুন। ধীরে ধীরে আর্মস্‌ অ্যাক্ট ও হরিজন অট্রোসিটি অ্যাক্টের মামলা দুটো খতম করা হবে। বিলাসপুরের পুলিশি বড়কত্তারা বদলি হয়ে যাচ্ছেন। তদ্দিন ধৈর্য্য ধরুন। তা না , আপনি গিয়ে বিজলীবিভাগ, মিউনিসিপ্যালিটি সব জায়গায় হামলা করে দিয়েছেন। বিল্ডার ভয় পেয়ে সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের জেলে পাঠাতে চেষ্টা করছে, উঠে পড়ে লেগেছে।
    রত্না রেগে কাঁই।
    -- ওরে, তোরা আসার আগে থেকেই আমি বিল্ডারের সঙ্গে আইনী পথে লড়ছি। কেউ আমার গায়ে হাত দিতে বা উল্টাপাল্টা বলতে সাহস করে নি। তোরা "'হামারা হরিয়ানা মেঁ অ্যায়্‌সা হোতা হ্যায়'' আর ""ইঁহাকে লোগ বেকার হ্যায়'' -এইসব বোলে লোকদের অ্যান্টাগোনইজ করেছিস।
    আর ওদের ভয় দেখাতে টেস্ট কার্ট্রিজ দিয়ে হাওয়ায় গুলি ছুঁড়তে কে বলেছিল? বারণ করলাম , তবু তুই নীচের ড্রাইভারের পরিবারের বিছানায় নোংরা জল ফেললি, তাও আমার ব্যালকনি থেকে। আর মুখার্জির ছেলের নাগরা জুতোর মধ্যে কাঁচের গুঁড়ো ভরে দিলি। অন্যদের মানুষ মনে করিস না, না?
    এবার তোদের লড়াই তোরা আলাদা লড়, আমরা আমাদের। তোদের সাহায্য না পেলেও চলবে। হ্যাঁ, ওই ডাকাতির মামলাটায় সাক্ষী দিয়ে দেব। কিন্তু আমরা তোদের কোন সাহায্য নেব না। মাথা খরাপ করে দিলি। এত যে লাফাচ্ছিলি, বলি কিসের জোরে? অ্যাঁ? তুই ডিভোর্স নিয়েছিস। প্রবীন সারদানা তো নেয় নি। কাল যদি প্রবীণের বৌ তোদের ওপর অ্যাডাল্টারির চার্জ লাগায় তো সব লড়াই ভুলে জেলে যাবি। যা, বাড়ি যা!
    রাত্তিরে রঞ্জনের জুনিয়র কলিগের ( প্রাক্তন এস পির ছেলে) ফোন আসে।
    -- দাদা! দিল্লি থেকে আপনার খোঁকিদের ফোন এসেছিল-- আংকল! আমার মা জেলে যাবে, বাঁচান। বাবা তো মাকে জেলে যাবার জন্যে কনভিন্সড করে ফেলেছে। আপনার কাজিন তো বিলাসপুরে মন্ত্রীর ডানহাত, প্লাস ডেপুটি অ্যাডভোকেট জেনারেল। কিছু করুন, প্লীজ।
    আমার খুব খারাপ লেগেছে। ভাই আশীষ শুক্লা কে ফোন করে বলেছি।-- রত্না রায় আমার ভাবীজি, ওঁর যেন কিছু নাহয়।
    --- তোর ভাবীজি আমারও ভাবীজি! খালি ওনাকে বল যেন ওই হরিয়ানী দম্পতির থেকে দূরে থাকে। ওরা ফ্রড। ওদের অনেক দুর্গতি হবে, তোর ভাবীর কিস্যু হবে না।
    রঞ্জনের বিশেষ অঙ্গ জ্বলে যায়। রত্নার ওপর চ্যাঁচ্যায়।
    -- কে তোমাকে বলেছে মেয়েদের দিল্লিতে ফোন করে এইসব বলে খামোকা ভয় দেখাতে/ যতঅণ ফাইলগুলো রায়পুরে আছে ততক্ষণ আমাদের ওপর কোন অ্যাকশন হতে পারে না। কানে হাত না দিয়েই চিলের পেছনে দৌড়চ্ছ?
  • Souva | 122.177.177.18 | ১২ আগস্ট ২০১০ ০৮:২৫428431
  • এই সুতোটা আগে দেখিনি। কাল থেকে আপিশের কাজের ফাঁকে ফাঁকে রুদ্ধশ্বাসে পড়ে যাচ্ছিলাম। রঞ্জনবাবু ও তাঁর পরিবারকে কুর্নিশ, সালাম, আভূমি প্রণাম ও ইত্যাদি। এই প্রায়-অসম্ভব আপোষহীন লড়াইয়ের পেছনে যে উদ্যম, সাহস ও মনোবল, তা আমাদের অনেকেরই শিক্ষণীয়।

    কিন্তু এই ক্লিফহ্যাঙ্গারের উত্তেজনা বেশিক্ষণ নেওয়া মুশকিল। আশা করি আজ আরো কিছুটা অগ্রগতি হবে। বাই দ্য ওয়ে, এটা মোটামুটি কবেকার ঘটনা? মানে কদ্দিন আগে এইসব বাওয়াল শুরু হয়?
  • Nina | 64.56.33.254 | ১৩ আগস্ট ২০১০ ০১:১০428432
  • রঞ্জন , আমিও নি:শ্বাস বন্ধ করে বসে-----
  • ranjan roy | 122.168.105.202 | ১৫ আগস্ট ২০১০ ০১:৪৮428433
  • ( শৌভ, হামলাটা হয় গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর মহালয়ার রাতে। তার আগে ১/৩/০৯ থেকেই আমাদের মিটার জ্বালিয়েদেয়া, তার কেটে দেয়া, জলের পাইপ ভেঙে দেয়া শুরু হয়।একটু স্ট্যাটাস কুয়ো চলে। তারপর এক ভাড়াটে হরিয়ানা পরিবার কে গুন্ডা পাঠিয়ে খালি করানো নিয়ে রত্না রায় প্রতিবাদ করলে ১২/৮/০৯ রাতে ওই মহিলা ও রত্নাকে রাত্তিরে পুলিশ ফল্‌স চার্জে গ্রেফতার করার চেষ্টা করে। তখন থেকেই ব্যাপারটা হয় আমরা/ নয় ওরা চেহারা নেয়।)

    রঞ্জনের কাছে খবর আসে যে ওই হরিয়ানা পরিবারটি ছত্তিশগড়ে ক্ষেতিতে লাভজনক বিনিয়োগ করবে বলে হরিয়ানার ক্যয়্‌থাল ( যেখানে আজকাল খপ্‌ পঞ্চায়েতের সম্মানহত্যার ফতোয়া নিয়ে খুব হৈচৈ হচ্ছে) থেকে অনেকের পয়সা নিয়ে এসেছে। পয়সা ফেঁসে গেছে। ফলে হরিয়ানা থেকেই যাঁরা পয়সা ফেরৎ চাইছেন তাদের চাপ বাড়ছে।
    ইতিমধ্যে বিলাসপুরের ট্রান্সপোর্ট মার্চেন্ট জৈনসাহেবের সঙ্গে রেণুদের ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। ওনার রায়পুরের পুলিশ হাই কম্যান্ডের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ।
    রেণু ওনাকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা বলে।
    লাভ হয় গৃহমন্ত্রী ননকীরাম কঁওরের সঙ্গে কথা বলে। উনি ফাইল পত্তর দেখে সোজা ফোন উঠিয়ে বিলাসপুরের এস পি কে ধমকে দিলেন। ঠিক হল আগে সি আইডি দিয়ে আর্মস্‌ অ্যাকট ও হরিজন অ্যাক্টের তদন্ত পুরো হোক। ফলে রেণুরা খবর পাঠায় যে আপাতত: গ্রেফতারের সম্ভাবনা নেই। ডি এস পি রত্না ও অন্যসবার আলাদা করে স্টেটমেন্ট নেবেন।
    এক বিকেলে রঞ্জন ফোন পেল।
    -- আপনার স্ত্রী রত্না রায়কে বলুন হেড কোয়ার্টারে আধঘন্টার মধ্যে পৌঁছে স্টেটমেন্ট দিতে।
  • ranjan roy | 122.168.231.233 | ২১ মার্চ ২০১১ ০০:২৫428434
  • ৫)
    রত্না পড়িমরি করে হরিজন থানার ডি এস পি'র অফিস-কাম-কোয়ার্টারে পৌঁছয়। উৎসাহের সঙ্গে বয়ান দেয়।
    কিন্তু এ কোন ডি এস পি! লোকটা তো সেই--- নামেও। চেহারাতেও।
    তবে কথাবার্তা অমন কেন? বেশ ত্যাড়াত্যাড়া?
    রত্না যতই বলে--হরিজন অট্রোসিটি অ্যাক্ট শুধু হরিজনের গায়ে হাত তুললে বা হরিজন /আদিবাসীকে গালাগাল দিলেই অ্যাপ্লিকেবল্‌ হয় না, এর জন্যে পাব্লিক প্লেসে ঘটনাটি ঘটা এবং জাততুলে অপমান করা মোটিভ হওয়া প্রাইমা ফেসি প্রমাণ হওয়া চাই; উনি বলেন -ওসব আর্গুমেন্ট। আপনি খালি ফ্যাক্ট বলুন।
    বিল্ডারের বউ তো বলেছে আপনিই নষ্টের গোড়া। আপনি সবাইকে বিল্ডারের বিরুদ্ধে বুদ্ধি দেন, খুব কানুন ঝাড়েন আর ইংরেজি বলে অফিসারদের ইম্প্রেস করার চেষ্টা করেন।
    আপনার আসল উদ্দেশ্য কি?
    রত্না হতভম্ব! তবু চেষ্টা করে ঘটনাটির পৃষ্ঠভূমি, সিকোয়েন্স, ডকুমেন্ট গুছিয়ে প্রেজেন্ট করতে।
    একটু পরে বুঝতে পারে উনি মন দিয়ে শুনছেন না। আঁকিবুকি কাটছেন।
    চলে আসার আগে রত্না শুনতে পায়--- রিপোর্ট জমা করতে একটু সময় লাগবে। আমার দুর্গ-ভিলাই বর্ডারে বাড়ি তৈরি হচ্ছে, ছুটি নিয়ে কাজের তদারক করতে যাচ্ছি। টাকা কম পড়ছে, একটু জোগাড় করতে হবে।
    রঞ্জন সবটা শুনে গম্ভীর হয়। বিলাসপুর গিয়ে উকিল রাজেশের সঙ্গে কয়েকঘন্টা কাটায়।
    রাজেশ জানায়-- ভাবীর ওপর এই কেস প্রাইমা ফেসি দাঁড়ায় না। ওদের বানানূ গল্পকে সত্যি ধরলেও না,। তবে ওরা বদমাইসিটা করবে ছুটির আগের দিন চালান পুট আপ করে অন্দর করাতে যাতে বেইলের আর্গুমেন্ট অন্তত: আটচল্লিশ ঘন্টার আগে না হতে পারে।
    আর আর্মস্‌ অ্যাক্ট তো সবচেয়ে দুর্বল কেস।
    তথাকথিত গুলি চালানোর গল্পকে মেনে নিলেও মোদ্দা ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়? না, গুলি চালানোর সময় বৌদি ওখানে ছিলেন না। বৌদির হাতে কোন বন্দুক ছিল না।
    গুলি চালিয়ে পালানোর সময় একজন সিঁড়িতে পা হড়কে পড়ে যায়। আর বৌদি তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে নেমে এসে তাকে হাত ধরে টেনে তোলেন।
    কিন্তু বন্দুক থানায় জমা পড়ে তথাকথিত ""আক্রান্ত'' পার্টির লীডার মি: মূর্তির হাত থেকে ঘটনার পরের দিন!
    তাহলে আন-অথরাইজড্‌ ভাবে অন্যের লাইসেন্সওলা ওই বন্দুক পুরো একদিন শিকায়তকর্তার কাছেই ছিল? বলিহারি! বল্লিহারি!
  • ranjan roy | 122.168.231.233 | ২১ মার্চ ২০১১ ০০:৪৮428435
  • এরপর একদিন রায়পুরের একই অফিস থেকে ধমকানো সুরে একটি ফোন পেয়ে রত্না ওখানে হাজির হলে ওকে একটি নোটিস ধরিয়ে দেয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে আগামী অমুক তারিখে রত্না যেন বিলাসপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির হয়। হরিজন অত্যাচার নিবারণ অধিনিয়ম অনুসারে বিল্ডারের হরিজন ইলেক্ট্রিসিয়ানকে গালিগালাজ-মারপিটের ঘটনায় রত্না রায়ের সক্রিয় ভূমিকা ডি এস পি(হরিজন থানা)র প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত।
    তাই পুলিশ সেদিন কোর্টে ওদের তদন্ত রিপোর্ট ও চালান পেশ করবে। রত্না যেন হাজির থাকেন।
    রঞ্জন যেন নিজেকে সান্ত্বনা দেয়।
    -- এটাই ওদের হাতে শেষ অস্ত্র। তুমি একবার জামিন পেয়ে বাইরে এলে আর কি করতে পারবে? কেস তো ধোপে টিঁকবে না। আমি জামিন এইসব দেখছি। তুমি ওইদিন সকাল সকাল বিলাসপুরে উকিল রাজেশের বাড়ি যাও। আমি কথা বলে রেখেছি।
    সেই হিসেবে নির্দিষ্ট দিনে রত্না তৈরি হয় বিলাসপুর যাবে বলে; ব্যাগে গুছিয়ে নেয় দু'দিনের মত জামাকাপড়।-- কী জানি, যদি দু'দিন জেল কাস্টডিতে থাকতে হয়।
    রঞ্জন যাবে বিকেলে, উকিলের ফোন পাবার পর। ব্যাংকে রিলিভার নেই, ও ছুটি পাচ্ছে না।
    সকাল সাতটায় ভারী মনে রত্নাকে ও স্টেশনে পৌঁছে দেয়।
    বেলা দশটা নাগাদ ট্রেন বিলাসপুর পৌঁছলে রত্না নেমে হুইলারের দোকান থেকে একটি ম্যাগাজিন কেনে আর একটা ধোসা ও কফি খেয়ে নেয়। পরেরটা কখন জুটবে বলা মুশকিল।
    বাইরে বেরিয়ে ও একটি অটো রিকশায় দরদাম করে উঠতে যাবে হটাৎ শোনে কে যেন ডাকছে-- দিদি, ও দিদি! ইধার আইয়ে, ইধার।
    পেছন ফিরে দেখে একটি কালো হুন্ডাই থেকে ওকে হাত নেড়ে ডাকছে প্রবীণ সরদানা।
    -- অটো ছেড়ে দিন দিদি। আমার গাড়িতে চলুন।
    -- না, আমি অটো ঠিক করে ফেলেছি, ওতেই যাবো।
    -- শুনুন দিদি, রাগ করবেন না। আমি জানি আপনি কোর্টে যাচ্ছেন হরিজন কেসে জামিন করাতে। প্লীজ, ওটা করবেন না। তাহলে ক্ষতি হবে। আপনার কোর্টে যাওয়ার দরকার নেই। জামিন লাগবে না।
    রত্না ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।
    -- দিদি, আমি আপনার-আমার সবার ভালোর জন্যে বলছি। আরে, আমিও তো হরিয়ানার উকিল। আমি বলছি কোন ভয় নেই। আপনি আমার কথা বিশ্বাস না করেন কোন ক্ষতি নেই। নিজের উকিলের কথাই শুনুন। আমার সঙ্গে আপনার উকিলের বাড়ি চলুন। আমি ওনাকেই সব বুঝিয়ে বলবো। তারপর উনি যা বলেন তাই করবেন। কি, রাজি তো?

  • ranjan roy | 122.168.184.180 | ২৮ মার্চ ২০১১ ০০:০২428436
  • রত্না প্রবীণ সরদানার কালো গাড়িতে চড়ে বসে। বন্ধুস্থানীয় উকিল রাজেশের বাড়িতে গিয়ে দুজনে কথা বলে।
    -- ভাবীজি, উনি ঠিকই বলছেন। ওনারা রায়পুর পুলিশের বড়কত্তার অফিসে নিজের ব্যক্তিগত পহচানের প্রভাব খাটিয়ে আর্মস্‌ অ্যাক্ট ও হরিজন অট্রোসিটি অ্যাক্টের দুটো মিথ্যে কেসেরই রফা-দফা করতে চান। এখন আপনি যদি কোর্টে গিয়ে অগ্রিম জামিনের আবেদন লাগান তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট
    থানা থেকে চালান চেয়েপাঠাবে, তা নইলে জামিনের আবেদনের বিচার করা যায় না। ফলে ওটাকে আর চাপা দেয়া যাবে না, এনাদের সব চেষ্টা কাঁচ্চি হয়ে যাবে।
    রত্না মোবাইলে ভাটাপাড়ায় ডিউটিরত রঞ্জনের কনসেন্ট নিয়ে উকিলকে জানিয়ে ফেরত আসে।
    দেখা গেল, আর আদালতে ও দুটো মামলা আর উঠলো না।
    এ দিকে পুলিশ হরিয়ানার পরিবারের ওপর ১৯শে সেপ্টেমবর মাঝরাত্তিরে বিল্ডারের পত্নীর নেতৃত্বে জনা আঠেরো লোকের হামলার জন্যে ওদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছে।
    কিন্তু দফা ৩৯৫এর বদলে লাগিয়েছে ৪৫২।
    অর্থাৎ, ডাকাতির বদলে মাঝরাত্তিরে পাঁচজনের বেশি লোক মিলে সুপরিকল্পিত হামলা, মারধোর, ইত্যাদি।
    হরিয়ানা পরিবার নাক ফোলায়।
    ৩৬গড়ে সবাই পয়সা খায়। জুডিসিয়ারি পর্য্যন্ত।
    রঞ্জনের ছত্তিশগড় প্রেম আহত হয়। বিনা বাক্যব্যয়ে ও সেদিনের স্থানীয় ভাস্কর থেকে আজ কী তাজা খবর শীর্ষক হরিয়ানার কৈথাল এলাকায় জুডিসিয়ারি সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ খাওয়ার খবর দেখিয়ে দেয়।
  • ranjan roy | 122.168.245.123 | ২৯ মার্চ ২০১১ ০১:২৬428437
  • রত্নার পরিশ্রমে সূচনা কে অধিকার কানুনের মাধ্যমে বিজলী বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে নোটিস ধরানো হল।
    -- আমাদের মিটার বিল্ডার জ্বালিয়েছে, কিন্তু আপনার ইঞ্জিনিয়ার কিচুতেই পোড়া মিটারের টেকনিক্যাল রিপোর্ট দিচ্চে না।
    লিখে দিচ্ছে-- মিটার জ্বলে গেছে আর কিছু বলা সম্ভব নয়। কে দায়ী বলা সম্ভব নয়।
    আমরা স্পেসিফিক্যালি জানতে চাইছি মিটারের কোন তারটি জ্বলেছে? পাওয়ার কেবল? কি অন্য কিছু!
    এই টেকনিক্যাল রিপোর্ট পাওয়ার জন্যে নিয়ম অনুযায়ী ২৫০/- ফি দিতে রাজি, কিন্তু দিচ্ছে না।
    এখনো আমাদের বন্ধ মিটারে রিডিং আসছে, অর্থাৎ এখনো হুকিং হচ্ছে। কিন্তু আপনার অফিস অস্বীকার করছে।
    কর্পোরেশনে মর্টগেজ রাখা ফ্ল্যাট বিল্ডার বিক্রি করে দিয়েছে। কর্পোরেশন নোটিস দিয়েছে। আমরা আর টি আই এর ধারা অনুযায়ী জানতে চাইছি যে ঐ মর্টগেজ ফ্ল্যাটে কি করে বিদ্যুৎ কর্পোরেশন মিটার লাগাল? বলছে সেল ডীড আছে।
    জানতে চাইছি ওই ডিড এর সার্টিফায়েড কপি দিন।
    বলছে বিল্ডারের পারমিশন ছাড়া দেয়া যাবে না।
    এবার আপনি আমাদের ওই ইনফর্মেশন গুলো দিন। কারণ, আলটিমেটলি আপনিই কাস্টমারদের কাছে রেস্পন্সিবল্‌।
    একমাসের মাথায় জবাব এল--- সব ঠিক আছে। আমার ইঞ্জিনিয়ার গিয়ে ওই অ্যাপার্টমেন্টে সব চেক করে এসেছে। কোথাও কোন বেআইনী কাজ/হুকিং কিস্যু হচ্ছে না।
    আর ওই সব দস্তাবেজ আইনের ধারা ৮ অনুযায়ী বিল্ডারের অনুমতি ছাড়া দেয়া যাবে না।
    হরিদাস পাল জবাব পড়ে দাঁত বের করে।
    ইতিমধ্যে রত্না আর টি আই এর মাধ্যমে কর্পোরেশন থেকে জানার চেষ্টা করে যে রত্নাদের ফ্ল্যাট ২০৫ এবং ৩০৫ অ্যাপ্রুভড্‌ নক্‌শা অনুযায়ী পূবদিকে কি না। আর যে ফ্ল্যাটে ওদের থাকতে দেয়া হয়েছিল সেটা আসলে নকশা অনুযায়ী ২০৬/৩০৬ কি না? আর ওদুটো পূবের বদলে পশ্চিমে লোকেটেড কি না? বা পূবমুখী কি না?
    আর নকশায় কমন প্যাসেজে দেখানো লিফট আসলে ওদের ফ্ল্যাটের ( যেটায় থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল) ড্রয়িং রুমে ঢোকানো আছে কি না?
    কিন্তু অবাক হয়ে ও দেখে যে কর্পোরেশনের স্টাফদের ব্যবহার, বডি ল্যাংগোয়েজ পাল্টে গেছে।
    ভবন অধিকারী রত্নাকে স্রেফ হাঁকিয়ে দিলেন।
    -- আপনি যা যা চাইবেন সব ইনফর্মেশন আপনাকে দিতে আমরা বাধ্য নই। অনেক দিয়েছি, আর নয়। এবার আপনি আসুন। আমরা আপনার চাকর নই।
    রত্না রাগে মসমস করতে ঘরে ঢোকে।
    হরিদাস পাল গান ধরে-- "" দ্য হোল থিং ইজ দ্যাট, সবসে বড়া রূপাইয়া।''
  • ranjan roy | 122.168.245.123 | ২৯ মার্চ ২০১১ ০১:৪২428438
  • ৭)
    ছত্তিশগড় রাজ্য সূচনা আয়োগ, অর্থাৎ কমিশনার, স্টেট লেভেল অ্যাপেলেট ফোরাম ফর রাইট টূ ইন্‌ফর্মেশন অ্যাক্ট এর এজলাস।
    আজ রত্না ও রঞ্জন অনেক আগে থেকেই এখানে এসে বসে আছে। রঞ্জনের হাতে আর টি আই অ্যাক্টের বই। তাতে আবার উকিলি কায়দায় পেজ মার্ক লাগানো।
    রত্না এখানে অ্যাপীল করেছিল যে কর্পোরেশন ও বিজলী বিভাগ ইনফর্মেশন দিচ্ছে না। কমিশনার দেড় মাস পরে আজকের তারিখ শুনানির জন্যে ধার্য্য করেছেন, সব পক্ষকেই নোটিস গেছে।
    রত্নাকে বলেছেন--- আপনি নিজে, বা অন্য কেউ, বা কোন উকিল এক্‌ল্‌হানে এসে আপনার পক্ষ পেশ করতে পারেন।
    তাই ও হরিদাস পালকে নিয়ে এসেছে।
    ঘন্টা খানেক পরে প্রচন্ড বৃষ্টি মাথায় করে কমিশনার ও তাঁর সহযোগী এলেন।
    হরিদাস পাল দেখাল কেন ধারা ৮(২) এবং ৯ অনুযায়ী ওরা ইনফর্মেশন দিতে বাধ্য।
    কমিশনার কর্পোরেশনকে সাতদিনের মধ্যে রত্নাদের ফ্ল্যাট দেখে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট জমা করতে বল্লেন।
    বিদ্যুত বিভাগের দেখানো সেল ডিডের ফোটো কপি এতই ফিকে যে উনি রেজিস্ট্রার অফ ল্যান্ডকে ডেকে অরিজিনাল রেকর্ড থেকে সার্টিফায়েড জেরক্স কপি রত্নাকে নিখরচায় দিতে বল্লেন।
    তারপর দেখা গেল যে একটি নাটকের সেমিনারে অল্পবয়সী কমিশনার ও আধবুড়ো হরিদাস পাল দুজনেই নিমন্ত্রিত।
    ওদের পুলক আর ধরে না। ওরা খানিকক্ষণ নিজেদের পিঠ নিজেরা চুলকে নিল।
  • ranjan roy | 122.168.245.123 | ২৯ মার্চ ২০১১ ০১:৫৬428440
  • ৮)
    ইতিমধ্যে রত্না-রঞ্জন-হরিয়ানভী পরিবারের তৃণমূল-মাওবাদী-পকাবু যুক্তফ্রন্টে ফাটল গভীরতর।
    একদিকে রত্না রেণুর মাতব্বরি আর রঙ চড়িয়ে মিথ্যে সাক্ষ্য দেয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় রেণু ওদের ""ভীতু'' বলে।
    রত্না বেজায় চটে ওকে বলে-- তোমাদের আগে থেকেই আমরা বিল্ডারের সঙ্গে আইনী রাস্তায় লড়ে যাচ্ছি। তোমরাই বিল্ডারের ইলেকট্রিশিয়ানকে মারলে, বন্দুক এনে ওদের ভয় দেখাতে ব্ল্যাংকশট ফায়ার করলে । ফলে আমাদের লেজিটিমেট লড়াইকে ওরা বদনাম করে ডাইভার্ট করার সুযোগ পেল। ব্যাকফুট থেকে ফ্রন্টফুটে চলে এল। অন্যসব দোনোমোনো ফ্ল্যাটওয়ালাদের ওদের পক্ষে মবিলাইজ করতে পারলো।
    বেসিক্যালি তোমরা আর বিল্ডার একই প্রজাতির। খালি দুর্ভাগ্যক্রমে তোমাদের সঙ্গে জড়িয়ে গেছি।
    তবে একটা কথা শুনে রাখ। আমরা তোমাদের ইশারা অনুযায়ী বাড়িয়ে বা রং চড়িয়ে কিছু কোর্টে বলব না। যা দেখেছি, যা আগে লিখে দিয়েছি--- তাই বলব শেষপর্য্যন্ত।
    এরপর দুই মহিলার মধ্যে বাক্যালাপ বন্ধ হয়ে যায়। রেণু কিছু জানতে বা জানাতে হলে শুধু "" মি: রায়"" হরিদাস পালের সঙ্গেই কথা বলে, ফোনায়।
    কিন্তু এক শারদপ্রাতে রত্না চমকে ওঠে। সক্কাল ছ'টায় কে এতবার করে কলিংবেল বাজাচ্ছে?
    দরজা খুলে দেখে জাঠপুঙ্গব প্রবীণ সরদানা, রেণুর ওকিলসাহাব।
    --- আগে একটু জল আর চা দিন ভাবীজি, তারপর সব বলছি।
  • ranjan roy | 14.97.103.135 | ০১ অক্টোবর ২০১১ ০৬:২৪428441
  • প্রবীণ এসে রঞ্জনের হাত ধরে,- আপনার কম্পিউটারে এই পেনড্রাইভ লাগিয়ে খালি সিডিতে লোড করা যাবে?
    রঞ্জন সতর্ক হয়। বলে-- আমার কম্বো ড্রাইভ খারাপ, সারানো হয় নি। আর গত মাসে আমার ড্রামা টিমের পেনড্রাইভ এটাতে ঢোকানোর পর ভাইরাস ভরে গেছল, মাত্র ফরম্যাটিং করিয়েছি। আপনি প্লীজ মার্কেট খুললে কোন আইটি কাফে থেকে করিয়েনেবেন।
    রত্না বলে--কিন্তু হয়েছেটা কি? পেনড্রাইভে কি আছে?
    প্রবীণ জল খায়, ঢোঁক গেলে, তারপর বলে-- ভালবেসে নিজের ঘর ভেঙেছি; আমার নির্দোষ বৌ-ছেলেমেয়েকে ছেড়ে এসেছি, তাই ভগবান সাজা দিয়েছেন। রেণু এখন আগরওয়াল ট্রান্সপোর্টের মালিক বিনীত আগরওয়ালের ঘাড়ে চেপেছে।
    --মানে? দিদি! কি আর বোলবো! রেণুর বড় লোভ, ওর অনেক টাকা চাই। স্বামীর থেকে ডিভোর্স নিয়ে আমার সঙ্গে এসেছিল, কিন্তু ওখান থেকে খোরপোষ আদায় করছিল। এখন উনি মারা গেছেন। টাকা আসা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু রেণু খরচা কমাতে রাজি নয়। আগরওয়াল অবিবাহিত, ওর কোম্পানিতে ও সর্বেসর্বা। কাউকেই পার্টনার বানাক, কেউ কিছু বলতে পারে না। এখন রেণু আমাকে বলে কি আমি যেন হরিয়াণায় ফিরে যাই; ওখান থেকে সস্তায় ট্রাক হায়ার পারচেজে ডিল করে পাঠাই । ছত্তিসগড়ে বিজনেস ও আর আগরওয়াল সামলাবে! আমি ওদের নৌকর হয়ে থাকবো, ওদের এঁটো খাব? কতবার বুঝিয়েছি রেণু ইয়ে পাপকী কামাই ফলতী
    নহীঁ।
    -- কিন্তু রেণু তো বলতো তোমার প্রপার্টির দামও দু'কোটির বেশি, তাহলে আজ তে্‌পামাকে অবহেলা কেন?
    -- দিদি , আজ আমার প্রপার্টি নিয়ে দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে মামলা চলছে। ওরা বাবার উইলকে চ্যালেঞ্জ করেছে। কবে নিষ্পত্তি হবে কে জানে! রেণুর তো আজ সবকিছু চাই। আগরওয়াল অবিবাহিত, ষাট-সত্তরটি ট্রাকের মালিক। ওই ব্যাটাও রেণুতে মজেছে, যেমন আমি মজেছিলাম। আর আজ না ঘরকা, না ঘাটকা!
    জাঠপুঙ্গবের গাল বেয়ে গঙ্গা-যমুনা বইতে থাকে।
    হরিদাস পালের তো স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে সিট্টি-পিট্টি-গুম্‌!
    কিন্তু কিন্তু করে বলে-- প্রবীণ, তোমার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে? নিজের বৌ-বাচ্চার কাছে ফিরে যাওয়া যায় না?
    -- যায় রায়সাব! সেদিনও ফোনে কথা হয়েছে। ও খুব ভাল। বলেছে- সব তো আপনার, আপনি একদিন ফিরে আসবেন সেই ভরসাতে আগলে বসে আছি। ডিভোর্স দিতে রাজি হইনি কারণ তাহলে ওই চুড়েল আপনার সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে আমাকে ছেলেমেয়ে শুদ্ধু পথে বসাতো। আপনারা পুরুষেরা এত ভোলা হন!
    -- পেনড্রাইভে কি আছে?
    -- সত্যি কথা বলতে রেণুর আর আমার সম্পর্কটা এখন এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে আমি ঘরে ওর তৈরি খাবার খেতে ভয় পাচ্ছি। আদ্দেক দিন না খেয়ে থাকি। চা নিজে বানিয়ে খাই, যদি কিছু মিশিয়ে দেয়? আমি একসপ্তাহের জন্যে দিল্লি গিয়েছিলাম, ও রায়পুরেই ছিল। জানতাম ও খালিবাড়িতে আগরওয়ালকে ডেকে আনবে। তাই চুপচাপ বেডরুমে স্পাই-ক্যামেরা লাগিয়েগিয়েছিলাম। এগুলো তার তোলা ছবি। ঘরে চালিয়ে দেখতে পারিনা, রেণু বড় সতর্ক। তাই আপনাকে বলছি, দেখবেন নাকি চালিয়ে?
    হরিদাস পালের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
    -- না, আপনি কোন কাফেতে গিয়েই দেখুন, সিডিতে লোড করান, যা আপনার মর্জি।
    রত্না জলখাবার নিয়ে আসে।
    -- এটুকু খেয়ে নাও ভাই!আর বলি কি এই ছত্তিশগড় ছাড়। ফিরে যাওয়ায় হরিয়ানায়, বৌ-বাচ্চার কাছে। এখানে শুধু কোর্টের জন্যে যতটুকু ততটুকু আসলেই চলবে। আর আমরাতো আছি।
    -- কিন্তু দিদি, আগরওয়াল পাওয়ারফুল লোক, পুলিশের হাই লেভেলে কন্ট্যাক্ট। রেণুর প্রথমবার জামানত ওই করিয়েছিল। আর আর্মস্‌ অ্যাক্ট এবং হরিজন অ্যাক্টের দুটো কমপ্লেনের দফারফা করতে ওর সাহায্য চাই যে!
    - সাহায্য নাও না! কে মানা করছে, কিন্তু রেণুর ওপর অধিকার বোধ ছাড়। ও কারো নয়। ইগো সামলে ঘরে ফিরে যাও।
    -- তাই হবে দিদি।
    জাঠপুরুষ আবার রুমাল বার করে।
  • ranjan roy | 14.97.103.135 | ০১ অক্টোবর ২০১১ ০৭:২০428442
  • ৯)
    একদিন রায়পুরের হরিজন থানা থেকে ডিএসপির পিএ'র ফোন এল।
    --রত্না রায় ম্যাডাম? আধঘন্টার মধ্যে আমাদের অফিসে চলে আসুন, আর্জেন্ট!
    ওরা দুজন মুখচাওয়াচাওয়ি করে। কি হতে পারে? হয়তো কেস খতম হয়ে গেছে, তার রিপোর্ট সাইন করে নিতে হবে। কিন্তু রত্নার মন কেমন কু-ডাক ডাকছে। রঞ্জন বলে-- যাও, হয়তো কোন স্টেটমেন্টে সাইন করতে বলতে পারে। না পড়ে সাইন করবে না, গন্ডগোলের মনে হলে সময় নেবে, আমাকে মোবাইলে ডাকবে। তোমাকে এভাবে অ্যারেস্ট করবে মনে হয় না। করলে উকিল চাইবে, আমাকে মোবাইলে ডাকবে।
    -- যদি মোবাইল সিজ্‌ করে? কাউকে যোগাযোগ করতে না দেয়?
    -- আমি একঘন্টা অপেক্ষা করবো। তার মধ্যে তোমার কোন খবর বা ফোন না পেলে সোজা দুজন স্টাফ সঙ্গে নিয়ে ওই থানায় যাবো। বেস্ট অফ লাক, যাও!
    পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে রত্নার ফোন পেয়ে রঞ্জন নিশ্চিন্ত হয় এবং একঘন্টার মধ্যে রত্না ফিরে আসে। ওর হাতে একটা নোটিস। তাতে বলা হয়েছে যে হরিজন থানার কমপ্লেন প্রাথমিক তদন্তে সত্যি প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশ কোর্টে চালান পেশ করবে । তাই আগামী সোমবার রত্না রায় যেন বিলাসপুরের আদালতে উপস্থিত হয়, না হলে ওকে গ্রেফতার হতে হবে।
    খানিকক্ষণ ওরা কেউ কোন কথা বলে না। তারপর রঞ্জন বলে-- হ্যাঁ, টাকায় কি না হয়! দেখতেই পাচ্ছি।
    -- ওই ইনভেস্টিগেটিং অফিসার বারবার আমাকে শোনাচ্ছিল যে দুর্গে ভিলাইয়ের পাশে ওর বাড়ি তৈরি হচ্ছে, বড্ড বেশি টাকা লাগছে, জিনিসপত্তরের দাম বেড়ে গেছে। বিল্ডার অমিত শর্মার পক্ষে ওকে শস্তায় বা ফ্রিতে মাল সাপ্লাই করা তো সোজা।
    রঞ্জন ভিলাইয়ে ফাইল নিয়ে বন্ধু উকিল রাজেশ বর্মার সঙ্গে বসে। রাজেশ জানায় এতে ভাবীজির বিরুদ্ধে কোন কেস দাঁড়ায় না। কিন্তু দহেজ অত্যাচারের মত হরিজন অত্যাচার আইনও বেশ কড়া। এতে অ্যান্টিসিপেটরি বেইল হবে না। প্রথমে গ্রেফতার করে সিজিএম কোর্টে চালান পেশ করবে, ও বেইল রিজেক্ট করবে, তখন সেশনে হিয়ারিং হবে, সেখানে একচান্সে বেইল হবে। আমি দুটো অ্যাপ্লিকেশন বানিয়ে রাখছি, দেখব যাতে ওনাকে গ্রেফতার না হতে হয়, কোর্টে সারেন্ডার করিয়ে বেইল করাবো। সোমবার সকালে ভাবীজিকে আমার চেম্বারে পাঠিয়ে দিন। রঞ্জন কিছু মুদ্রা অগ্রিম দেয়।
    সোমবার সকালে রত্না বেলা দশটা নাগাদ একা বিলাসপুর স্টেশনে নেমে বাইরে এসে অটোরিকশা খুঁজছে এমন সময় পেছন থেকে কে যেন দিদি-দিদি করে ডাকলো। ফিরে দেখে একটি ইন্ডিগো কার থেকে নামছে প্রবীন সারদানা।
    -- দিদি, অটোরিকশা ছাড়ুন, আমার গাড়িতে আসুন, পৌঁছে দিচ্ছি।
    -- না, না, অটো ঠিক হয়ে গেছে।
    -- তাতে কি, ছেড়ে দিন। আপনার উকিলের কাছে যাচ্ছেন তো? আমি
    পৌঁছে দেব। তার আগে আমার গাড়িতে বসুন, কিছু দরকারি কথা আছে।
    --কি কথা? ওই রেণুকে নিয়ে আবার কোন সমস্যা?
    রত্নার পিত্তি জ্বলে যায়।
    -- আরে না-না, শুনুন, এত সহজে হাল ছাড়িনি। কাল বিকেলে আমাদের জাঠ সমাজের চাঁইদের নিয়ে গেছলাম পুলিশের বড়কর্তার কাছে। রাত্তির অব্দি উনি আমাদের আর্গুমেন্ট মেনে নিয়ে ফাইল দুটো নিজের কাস্টডিতে নিয়ে নিয়েছেন। এগুলো তে ডিউ কোর্সে ক্লোজার রিপোর্ট লেখাতে হবে। আর বিলাসপুর পুলিসের কাছেও নির্দেশ গেছে। ফলে আজ কোর্টে পুলিশ চালান পেশ করতে অ্যাপিয়ার হবে না। এখন আপনি যদি গিয়ে একতর্ফা জামিনের জন্যে আবেদন দেন তখন যজ অর্ডার করবে যেন পুলিশ জজের সামনে চালান পেশ করে। তখন আগামী তারিখে রায়পুরের পুলিশের বড়কত্তাকেও ফাইল বিলাসপুরে পাঠাতে হবে। ফলে আমাদের ঘুঁটি মারা পড়বে, খেল কেঁচে যাবে। প্লীজ, আমার কথা শুনুন; আমার কথা বিশ্বাস নাই করলেন। আপনার উকিল রাজেশের কাছে চলুন, আমি ওকে সব খুলে বলছি। তারপর ও যা বলে তাই করবেন।
    রত্না হরিদাস পালকে ফোন লাগায়। ও বলে -- বাত জম রহা হ্যায়। দেখ রাজেশ কি বলে!
    রাজেশ বলে -- ঠিক বলেছেন সর্দানা। ভাবিজী সোজা রায়পুরে ফিরে যান, নিশ্চিন্ত হয়ে। কিস্যু হবে না। বরং বেইলের আবেদন দিলেই খুঁচিয়ে ঘা করা হবে।
    রাত্তিরে রঞ্জন দাঁত বের করে।--- ফের সেধে-বাঁশ-পোঁদে-ঢোকাচ্ছিলে?
    --এবার আমি তোমার বিরুদ্ধে মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনারের কাছে কমপ্লেন করব, যাতে নর্দমার মত নোংরা মুখটা পার্মানেন্টলি সীল করে দেয়া যায়।
  • ranjan roy | 14.99.135.46 | ০১ অক্টোবর ২০১১ ১৫:৩৩428443
  • ১০)
    স্টেট লেভেল কনজিউমার ফোরাম এর দিন এগিয়ে আঅসছে।
    উকিল জানাল আগামী পরশু ১৯ মার্চ ফাইনাল আর্গুমেন্ট। তারপর রায় বেরোবে।
    রত্না বলল, তাহলে আমরা ১৯ তারিখ আপনার আর্গুমেন্ট শুনতে আসছি।
    উকিল বলল-- কি দরকার! ওখানে তো সব ডকুমেন্ট আন্ডার এফিডেভিট জমা হয়ে গেছে।
    রঞ্জন বলে-- আমি যে ওদের জবাবের রিজয়েন্ডার বানিয়ে আপনাকে দিয়েছিলাম তাকে ওকালতি ভাষায় মুড়ে সময়মত পেশ করেছেন তো!
    -- অবশ্যই! এখন শুধু ফাইনাল আর্গুমেন্ট। আপনারা আসতে চান, আসুন, কিন্তু অনাবশ্যক।
    রত্না বলে-- হোক অনাবশ্যক। আমাদের যাওয়া উচিৎ। এই উকিলের অল্পদিনের প্র্যাকটিস, একে তুমি কতটুকু চেন? আমি ওকে ডিজনেস্ট বলছি না, কিন্তু এর আর্গুমেন্টের কোয়ালিটি?
    রঞ্জন দাবড়ানি দেয়।-- বলছি তো, কোন দরকার নেই। ও বন্ধু গৌতমের একটি ছ'হাজারের অ্যাপীল কেস জিতিয়ে ছিল। আর এটাতে বেশি সুক্ষ্ম বিচারের কি দরকার। রাইট টু ইনফর্মেশনের পিটিশনের জবাবে কর্পোরেশনের ভবন আধিকারী সার্টিফিকেট দিয়েছে আমাদের পক্ষে যে আমাদের রেজিস্ট্রি অনুযায়ী ফ্ল্যাটের যা নম্বর তা সামনের রো' তে , নকশা অনুযায়ী। কিন্তু বিল্ডার দিয়েছে পেছনের রো' তে। আবার কমন লিফট প্যাসেজের
    বদলে আমাদের ড্রইংরুমের ভেতর দিয়ে গিয়েছে।
    আমরা জিতছি। দরকার হল ধারা ৪২০ এর ক্রিমিনাল কেসে হাজির থাকা। সেখানে তো আমরা নিয়মিত দেড় বছর ধরে হাজির থাকছি।
    রত্না-- সে তো বুঝলাম, তাতে কার কি উবগারটা হয়েছে শুনি? হতচ্ছাড়া
    ঘুষখোর জজ দেড়বছর ধরে নানা বাহানায় কেস রেজিস্টার করছে না, খালি ঘোরাচ্ছে।
    -- কিন্তু আমাদের ডকুমেন্ট এত সলিড আর আর্গুমেন্ট এত ভাল যে এটা ক্রিমিনাল কেস হয় না, আপনারা সিভিলে যান বলে খারিজ করতেও পারছে না। সেটা খেয়াল করেছ?
    -- কত্রেছি।
    -- আর সেই একই ডকুমেন্টগুলো কনজিউমার ফোরামে লাগানো হয়েছে। আমরা জিতছি, হ্যান্ডস্‌ ডাউন। তারচেয়ে ভাব যখন জিতবো তখন বিল্ডার কম্প্রোমাইজ করতে এলে কি কন্ডিশন রাখবে?
    ওরা দিল্লিতে ছোটমেয়ে, মিডলবরোতেবড়মেয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়,- জিতছি, বিল্ডার কম্প্রোমাইজ্‌ করবে। তারপর এই৯ ফ্ল্যাট ওকেই আমরা সেল করে দেব আমাদের দামে।

    ছোটমেয়ে স্বপ্ন দেখে ওর সব লোন শোধ হয়ে গেছে। ও চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে কিছুদিন রেস্ট নিচ্ছে, যেটা নিতে ডাকতার অনেকদিন ধরে বলছে।
    বড়মেয়ে স্বপ্ন দেখে ওর এডুকেশন লোন শেষ হয়ে যাচ্ছে বাড়ি বিক্রি করে পাওয়া টাকার সামান্য এক টুকরোয়।
  • ranjan roy | 14.99.135.46 | ০১ অক্টোবর ২০১১ ১৬:০৭428444
  • রত্না স্বপ্ন দেখে -- আমাদের হিসেব মত ক্ষতিপূরণ শুদ্ধু টাকা দিয়ে দিলে আমরা আমাদের ফ্ল্যাট ওদের সেল করব। যাতে পরে বিক্রি করে টাকা তুলে নিতে পারে। সামনে বিশাল মল তৈরি হচ্ছে। পেছনে ছোট রেলস্টেশনটা বড় হচ্ছে। ফ্লাই ওভারটা শেষ হয়ে এল। এবার এই প্রপার্টির অনেক দাম বাড়বে।
    কিন্তু আমরা বদলা নেব না, ওদের জেলে পাঠাব না। একসময় বৌদি বলে ডেকেচিল বটে! প্রতিহিংসা মানুষকে ছোট করে, বিকৃত করে।
    রঞ্জন স্বপ্ন দেখে এখানকার পাট চুকিয়ে দিয়ে কোলকাতায় ফিরে যাবে।
    ইতিমধ্যে উকিল জানায় যে ২৩ মার্চ রায় বেরিয়ে গেছে। উকিল রায় দেখেনি।
    বলল-- আপনারা রায়পুরে আসেন রাজ্য উপভোক্তা আয়োগের আফিসে গিয়ে সার্টিফায়েড কপি নিন।
    ইতিমধ্যে হটাৎ মোবাইলে একটি মেসেজ আসে: "" রায়পরিবারকে হোলির বধাই।'' সেন্ডারে সস্ত্রীক বিল্ডার ও ওদের বাচ্চা ছেলের নাম।
    কি ব্যাপার! হটাৎ ভূতের মুখে রামনাম!
    রঞ্জন বলে-- সম্ভবত: হোলির মেসেজ কপি করে পাঠাতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে আমাদেরও পাঠিয়েছে। এটা সিরিয়াসলি নেবার দরকার নেই।
    রত্না ভাবে- হতে পারে হেরে গিয়ে সম্পক্কো ভাল করতে চাইছে।

    ২৩ তারিখ রঞ্জন বিলাসপুরে ওর এনজিও'র মান্থলি রিভিউ মিটিংয়ে ব্যস্ত। রত্নার ফোন আসে-- রায়ের কপি দিতে বড্ড ঘোরাচ্ছে, এখন ওদের লাঞ্চ হয়ে গেছে। আধাঘন্টায় দেবে। আমিও ছিনে জোঁকের মত লেগে আছি।
    আধঘন্টা পরে আবার ফোন: রায় হাতে এসেছে।পড়ে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
    -- ক'পাতার রায়?
    -- চোদ্দপাতা।
    -- শোন। শেষপাতায় যাও, অপারেটিভ পার্ট বলে লাস্ট চ্যাপটার। তার লাস্ট লাইনটা পড়।
    -- এতে লিখেছে ,""Petition Dismissed.'' কী হল, কিছু বলছ না যে? অ্যাই রঞ্জন?
    -- আবার পড়, কোথাও কোন ভুল হচ্ছে না তো?
    -- না, না, স্পষ্ট লিখেচে যে পিটিশন ডিসমিসড্‌।
    -- তার মানে আমরা হেরে গিয়েছি, বিল্ডার জিতেছে।
    -- এত অন্যায়! এমন কেন হবে?
    -- আমি নেক্‌স্‌ট ট্রেনে রায়পুর ফিরে আসছি। রাত সাড়ে আটটা হবে। রায়টা পড়ে দেখতে হবে।
    ইংল্যান্ড থেকে বড়মেয়ের স্কাইপে জিগায়,-- রায় বেরিয়েছে?
    -- হ্যাঁ, আমরা হেরে গিয়েছি।
    -- সবসময় তোমার কেঠো ইয়ার্কি ভাল লাগেনা, ঠিক করে বল।
    -- ঠিকই বলছি, মাকে জিগ্যেস কর।
    এবার বড় মেয়ে চুপ হয়ে যায়। তারপর ফুঁপিয়ে ওঠে-- আমাদের কি কোনদিন সোজাসুজি ন্যায় মিলবে না? আমাদের সঙ্গেই কেন এমন হয়?
    -- বাজে বকিস না। পয়সার বা পাওয়ারের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে অনেক সময়ই এমন হয়। কিন্তু এটাই শেষ নয়।
    রত্নার গলার আওয়াজ অসম্ভব শান্ত।- অনেক হল। সারাজীবন কি একটা ফালতু বিল্ডারের সঙ্গে ঝগড়া করেই সময় কাটাতে হবে? ওকে ভুলে যাওয়া ভাল। কোর্ট তো বলছে যে এই ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটটাই আমাদের। তাই দালাল লাগিয়ে ফ্ল্যাট বেচে লোন চুকিয়ে বাকি পয়সা ব্যাংকে রেখে চল কোলকাতায় যাই, নাটক দেখি, ক্ল্যাসিক্যাল গান শুনি। তুমি আবার ভায়োলিন শেখা শুরু কর। আমি একটু কত্থক শিখি। ফিট থাকবো।
    হরিদাস পাল বলে-- এবার বৃন্দাবন গেলে হয় না?
    (চলবে)
  • ranjan roy | 14.97.104.94 | ২০ অক্টোবর ২০১১ ২১:০৬428445
  • এপ্রিল মাস। নানান জায়গা থেকে শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শ আসছে।
    ঘুরে ফিরে একই কথা,-- কি পেলে? অনেক তো হল। এ দেশের কিছু হবে না।
    মেয়েরা বলে- তোমাদের সারা জীবনে আরো অনেক তো সাধ-আহ্লাদ আছে। কতদিন আর একটা বিল্ডারের পেছনে সময় নষ্ট করবে? ওর জীবনে পয়সা আর ক্ষমতা ছাড়া কিছু নেই। এটাই ওর এজেন্ডা। তোমাদের তো তা নয়, এখন ক্লান্তি লাগে না? ওকে ভুলে যাও।
    কেউ কেউ বলেন-- তুমি রাস্তা দেখিয়েছ, এবার ক্ষ্যামা দাও।অন্য ফ্ল্যাট ওয়ালারা যদি মবিলাইজ না হয়, ভয় পেয়ে বিল্ডার-প্রোমোটারের ছাতার তলাতেই থাকে, তুমি একা কি করতে পার!
    তোমাদের কব্জা তো ফ্ল্যাটটায় আছে, টাইটেল ডীড আছে। পারলে বিক্রি করে কোলকাতায় চলে এস, বা অন্য কোথাও ফ্ল্যাট কেন।
    কথাটা মন্দ নয়। বয়েস অনেক হল। এখন খাব-দাব, বই পড়বো, গুরুচন্ডালিতে লিখবো, কোন অনুবাদ যদি কেউ ছাপে তো দু'পয়সা পাবো; সেসবে সময় দেবে , তা না--?
    কিন্তু, একটা কথা মনের মধ্যে ঘোরে । সব কিছুই তো ঠিক ছিল। ডকুমেন্ট হরিদাস পালের পক্ষে। তবে কেমন করে উল্টো রায় হল? রঞ্জন তো এত নিশ্চিন্ত ছিল যে একদিন ও কনজিউমার কোর্টে যায় নি। তবে?
    উকিল কে ফোন করায় বলে- কি করে এমন হল জানিনা, যান, তিরিশদিনের মধ্যে দিল্লিতে ন্যাশনাল ফোরামে আপিল করুন।
    এবার ডিটেল্ড প্রসিডিং ও রায় নিয়ে আসা হল।
    পড়ে তো হরিদাসবাবুর চক্ষু চড়ক গাছ। ওর উকিল পিটিশন হিন্দিতে বানিয়ে ছিল, কিন্তু স্টেট লেভেলের জাজমেন্ট ইংরিজিতে। তাহোক গে, জজসাহেব বা ফোরামের অন্য সদস্যেরা তো হিন্দি ভালই জানেন।
    তাহলে রঞ্জনের পিটিশনের মূল বক্তব্য জজ অমন করে পাল্টে দিলেন কি করে?
    আর তথ্য তো ভুল দিয়েছেন। উনি বলছেন-- ৭/১/১০ এ প্রার্থী রঞ্জন রায় নিজে একটি সার্টিফিকেট দিয়েছে যে ও ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ কব্জা উইথ ফুল স্যাটিসফ্যাকশন পেয়ে গিয়েছে। অতএব--।
    রঞ্জন তন্নতন্ন করে সমস্ত এনক্লোজড ডকুমেন্ট হাতড়ায়-- কোথাও এমন কোন ডকুমেন্ট নেই। যে সার্টিফিকেট প্রেসার দিয়ে বিল্ডার এপ্রিল ২০০৯ এ সাইন করিয়েছিল, তাতে কোন তারিখ নেই। আর আর এটা কি?
    টাউন প্ল্যানিং এর একটা জাল নকশা! তাও কোন সার্টিফিকেশন নেই! মূল কপি নয়, ফোটোকপি! সেটাই জজ মেনে নিয়েছেন? আর রাইট টু ইনফর্মেশন অ্যাক্টে অ্যাপ্লাই করে রত্না যে সার্টিফায়েড কপি জমা করেছে সেটাকে জজ পাত্তাই দিলেন না?
    কিন্তু এই জাল নকশা নিয়ে রঞ্জনের উকিল ওকে জানায়নি কেন?
  • ranjan roy | 14.97.53.182 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ০৬:০৭428446
  • -বিল্ডার ও তো এই লড়াইয়ে অনেক রক্তাক্ত হয়েছে। উকিল, পুলিশ, জজ সব জায়গাতেই পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এখন তুমি যদি ফ্ল্যাট পচ্ছন্দমত দামে বেচে দাও তাহলে ওরও হাড়ে বাতাস লাগবে। নিশ্চয়ই ও আপদ গেল, ভেবে চুপচাপ থাকবে। যা হয়েছে অনেক। ভবিষ্যতে ও কারও সঙ্গে এ'রকম করার আগে দু'বার ভাববে।
    - কিন্তু ন্যাশনাল ফোরাম অফ কনজিউমার'স গ্রিভ্যান্স রিড্রেসাল এ অ্যাপীল করা উচিত। নইলে মনে হবে যে আমরা মামলাবাজ, খামোকা লোকটাকে বদনাম করতে মিথ্যে মামলা করে বেড়াই, যেটা ও বলছে।
    দিল্লিতে ট্যাক্স কন্সাল্ট্যান্ট ছোট মেয়ের সঙ্গে কথা হয়।
    ভাল উকিল খুঁজতে হবে। প্রসিডিওর জানতে হবে। কিন্তু তিরিশদিন সময় যে ফুরিয়ে এল।
    মেয়ের কথানুযায়ী জাজমেন্টের কপি ও নিজের নোটস্‌ পাঠানো গেল।
    পরের দিন মেয়ের উত্তেজিত গলা।
    -- বাবা, তুমি করেছ কি? এই উকিল কোত্থেকে ধরেছিলে? কার কথায়? ওর ক্রেডেনশিয়াল কি?
    পুরো প্রসিডিংস থেকে দেখা যাচ্ছে যে ও বিল্ডারদের ফলস্‌ স্টেটমেন্ট ও জালি নকশার ব্যাপারে রিজয়েন্ডার জমা করেনি। আর মূল পিটিশন ও বেশ উইক। ইস্যুটা একেবারে এলেবেলে ভাবে তুলে ধরেছে।
    -- আমি জিগ্যেস করেছিলাম। ও বল্লো ওর‌্যাল রিজয়েন্ডার দিয়েছিল।
    -- মিথ্যে কথা! রিজয়েন্ডার আর তার সঙ্গে এফিডেভিট ইন ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট হয়; ওর‌্যাল হয় না। শুধু আর্গুমেন্ট ওর‌্যাল হতে পারে। ও তোমাদের সঙ্গে বিল্ডারের টাকা খেয়ে বেইমানি করেছে। আর যদি কোন কারণে ও জমা করে ত্থাকতো বা ওর‌্যাল দিয়ে থাকতো, তাহলে প্রসিডিংস এ লেখা থাকত। উল্টে জজ রায়ে বলছে যে আবেদক কোন এভিডেন্স ঠিকমত দেয় নি। এই পিটিশন ম্যালিশিয়াস মনে হচ্ছে। আমাদের বরাবরের উকিলকে কেন কেস দাও নি? আমি নিয়মিত বলেছি, উকিল ভাল তো?
    রত্না বলে,-- কতবার তোর বাবাকে বলেছি যে কনজিউমার কোর্টের প্রসিডিংস এ চল। উকিল খালি বলে আসার দরকার নেই। তোর বাবা আলসে। এড়িয়ে যেতে পারলে বাঁচে। ৪২০ এর ক্রিমিনাল কেসটায় আমরা নিয়মিত কোর্টে যাই, উকিলের চেম্বারে গিয়ে ফলো আপ করি। তাতে লাভ হয়েছে। যদিও ওখানেও ম্যাজিস্ট্রেট টাকা খেয়ে আমাকেই ধমকাচ্ছিল, আর সমানে তারিখ বাড়াচ্ছিল। দেড় বছরেও কেস রেজিস্টার করেনি। এটাও দেখবি খারিজ হয়ে যাবে। চল, সব ছেড়েছুড়ে কোলকাতায় যাই।
    রঞ্জনের মাথা নুয়ে পড়ে।
    ভাঙা গলায় বলে---ভুল হয়ে গেছে রে! বড় ভুল। আমাদের রেগুলার উকিলের চোখে ছানি পড়ায় অপারেশন করাচ্ছিল। আমি অধৈর্য্য হয়ে এক বন্ধুর কথায় একে লাগালাম। ও ৬০০০/- টাকার একটি অ্যাপীল জিতিয়েছিল।
    -- করেছ কি বাবা! এই ব্যাকগ্রাউন্ডের উকিলকে তুমি কুড়ি লাখ টাকার স্টেট ফোরামের কেস দিয়েছ? আর ও যে পিটিশন বানিয়েছে সেটা বাজে, ইন্‌কমপিটেন্ট ফুল!
    শোন, আমি দিল্লিতে এই লাইনেরই খুব বড় হাউসকে ধরেছি। তিনটে সিটিং হয়েছে। ওঁরা কনভিন্সড্‌; উকিল বেইমানি করেছে। ওর ডকুমেন্টের বেসিসেই বার কাউন্সিলে কমপ্লেইন করে ওর লাইসেন্স বাতিল করানো যাবে।
    আপাতত: হিন্দি ডকুমেন্ট গুলোর সুপ্রীম কোর্টের অথরাইজড্‌ ট্রানে্‌স্‌লটর কে দিয়ে ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়ে দিতে হবে।
    -- দেখ না! উকিল বাড়ি বানাচ্চে। নিঘ্‌ঘাৎ মেটিরিয়াল্‌স আমাদের বিল্ডার ফোকটে সাপ্লাই দিয়েছে। তোর বাবা হল একচক্ষু হরিণ, আর আলসে।
    বল্লেই আমাকে রবীন্দ্রনাথ
    শোনাবে -- মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ!
    এই জন্যেই কোলকাতার ছেলে বিয়ে করতে চাইনি। খালি মার্কস আর কবিতা শোনাবে, চা-সিগ্রেট খাবে। কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা।

    --- আসলে আমি বড্ড টায়ার্ড। রিটায়ারের সময়। ব্যাংকে নতুন সিস্টেম-- কোর ব্যাংকিং শুরু। আমার কোন ট্রেনিং নেই।
    যাতে কোন ভুল না হয়, টাকাপয়সা ভরতে না হয়, টার্মিনাল বেনিফিট গুলো ঠিকমত পাই তার টেনশন। আবার তোর দিদিকে পড়তে বাইরে পাঠাতে হবে তার টেনশন। ট্রেনে রোজ চারঘন্টার আসাযাওয়া। আবার ১২০কিমি দূরে বিলাসপুরে গিয়ে কোর্টের ফলো আপ! কোথাও নিশ্চিন্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার দোষেই সব হল। কোথাও আমার অহংকার হয়েছিল। আমি বেশি জানি, বুঝি। তোর মা ঠিক ছিল।

    -- আমি বলি কি, যা হয়েছে, হয়েছে। তোমরা যা সাধ্যে কুলোয় করেছ, ভাল ফাইট দিয়েছ। এখন তোমার শরীর খারাপ না হয়ে যায়! আর
    অ্যাপীল করতে হবে না। ৪২০ এর পিটিশন এদ্দিনেও রেজিস্টার হয় নি তো? উকিলকে বলে উইড্র করিয়ে নাও। এজেন্ট কে বলে ফ্ল্যাটবেচার বন্দোবস্ত কর। আমার লোন ক্লোজ করে দিয়ে এই চ্যাপটারটা ব্যাড ড্রীম ধরে নিয়ে ভুলে যাওয়া ভাল। চল , কিছুদিন দিল্লি শিফ্‌ট করে আমার সঙ্গে থাকবে। আবার তুমি-আমি-মা-ঠাকুমা মিলে ফ্যামিলি-ফ্যামিলি খেলব, কাজের চাপে টাকার পেছনে দৌড়ে অনেকদিন খেলিনি বাবা!
    -- আমেন!!
  • ranjan roy | 14.97.222.250 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১৫:৪১428447
  • ওম্‌ শান্তি! ওম্‌ শান্তি!
    রঞ্জনের মনে পড়ে গৌতম ঘোষের "" পার'' ফিল্মে গাঁ থেকে উচ্ছেদ হওয়া ওরা
    দুজন বুধিয়া ও তার স্বামী( নাসিরুদ্দিন ও স্মিতা পাটিল) কোলকাতায় এসে নিরুপায় হয়ে গঙ্গায় শুয়োর পার করানোর কাজ নিয়েছিল।
    এখন বাড়ির ভাঙা জানলা, দরজার নেট ও ভাঙা পাল্লা সব মেরামত করে লোকলাগিয়ে দু'বছরের জমে থাকা ময়লা সাফ করিয়ে ফ্ল্যাটটিকে বিক্রয়যোগ্য করে তুলতে হবে।
    রত্না যায় ওর প্রাক্তন কিছু ছাত্র যারা আজ জমিবাড়ি কেনাবেচার দালালদের সিন্ডিকেটে কাজ করছে তাদের জনাদুইকে নিয়ে ওই অ্যাপার্টমেন্টে।
    গেটে অচেনা সিকিউরিটি আটকে দেয়। কোথায় যাবেন, কার সঙ্গে দেখা করতে--সব রেজিস্টারে লিখুন, মোবাইল নাম্বার লিখুন, তবে যেতে পারবেন।
    রত্না হাসে। বলে আমি এই বাড়ির দুটো ফ্ল্যাটের মালিক। আমাকে নিশ্চয়ই সাইন করতে হবে না?
    সিকিউরিটি ভেতরে কার সঙ্গে যেন কথা বলে, ত্যারপর আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলে --যাইয়ে।
    লিফট দিয়ে ওপরে উঠতেই চারদিকে দরজার আড়াল থেকে উঁকিঝুঁকি ফিসফাস শুরু হয়ে যায়। পুরনো কাজের লোক মেয়েটি এগিয়ে এসে প্রণাম করে,--দিদি, কতদিন পরে এলে?
    রত্না ওকে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়, বলে-- কিছু পুরনো জামাকাপড় আর রান্নাঘরের কাজের জিনিস আছে। তোর যা যা লাগবে নিয়ে নে।
    ক'দিনের মধ্যে বাড়ির মেরামতের কাজ শুরু হয়ে যায়।
    রঞ্জনকে জলের লাইন জুড়ে দিতে অনুরোধ করতে হয় সামনের বাঙালী পরিবারকে। ওরা বলে,-- আপনারা চলে আসুন। কেন রায়পুরে খামোকা ভাড়াবাড়িতে আছেন? সব ঠিক হয়ে যাবে।
    রত্না হেসে রঞ্জনকে বলে-- আশ্চর্য! এরাই না দু'বছর আগের সেই রাতে গুন্ডা-পুলিশের সাথে গলা মিলিয়ে চেঁচাচ্ছিল- রায়ম্যাডামকে টেনে ঘর থেকে বের করে দু'ঘা দাও। ওই বেশি কানুন ঝাড়ে! আমরা কি ভুল শুনছি।
    রাত্তিরে রঞ্জনের মোবাইলে সোসাইটির সেক্রেটারির ফোন আসে।
    --আ জাইয়ে রায়সাব! আপনি আমাদের আদরণীয়। এখানে জল-টল আরো কিছু সমস্যা আছে। কমিটির ও নতুন করে ইলেকশন হবে। আপনার পরামর্শ খুব কাজে আসবে। প্লীজ, চলে আসুন।
    ব্যাপারটা কি!
  • ranjan roy | 14.97.222.250 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১৬:৩৬428448
  • ব্যাপারটা বোঝা গেল কদিন পরেই।
    দিল্লি থেকে হরিয়ানভী দম্পতির ফোন এল। ওরা একসঙ্গেই আছে। ওদের ভেতরের ব্যাপারে রঞ্জনেরা আর নাক গলাবে না, ঠিক করে ছিল।
    হরিয়ানভী পরিবার দিল্লি গিয়ে কিছুদিন ঢিলে দিয়েছিল। বলেছিল, --ওদের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র-পলিটিক্যাল সোর্স-মন্ত্রী-শান্ত্রী সব খরচ করতে দিন। ততদিন ধৈর্য্য ধরে থাকুন। আর আমাদের বিরুদ্ধে, মিসেস রায়ের বিরুদ্ধে ফল্‌স্‌ কেসগুলো( হরিজন অত্যাচার নিরোধক আইন এবং অস্ত্র আইন) ঠান্ডা হয়ে বস্তাবন্দী হতে দিন।
    তারপর আমরা দরজা ভেঙে মারপিট-লুটতরাজের কেস কে ফার্স্ট ফরওয়ার্ড করে দেব। দেখবেন, তখন পালাতে পথ পাবেনা।
    এখন আগের ডিজি'র দস্তখতে ওই বানানো কেস গুলো এনকোয়ারি রিপোর্টে ""ফ্যাব্রিকেটেড, নীড নো অ্যাকশন'' নোটিং হয়ে তাকে তোলা হয়ে গেছে।
    এখন সরদানা পরিবার নিয়মিত কোর্টে হাজির হচ্ছে। কড়া মেজাজের মহিল্লা জজ বিল্ডারের বৌ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গ শুদ্ধু চালানে যে আঠেরো জনের নাম আছে তাদের প্রত্যেক হিয়ারিং এর সময় সব কাজকম্মো ছেড়ে কোর্টে এসে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করছে।
    ভবিষ্যতে রায়দম্পতিকেও সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে সাক্ষী দিতে হবে। তাতে সবকটার বিভিন্ন মেয়াদের জেল হওয়ার সম্ভাবনা। মুখুজ্যের ছেলেদুটোর সরকারি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা শুণ্যি হয়ে যাবে।
    তাই চেষ্টা হচ্ছে রায়দম্পতির সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার।
    হরি হে, তুমিই সত্য।
    ঠিক হয়, সময় আসলে আমরা সাক্ষী দেব। যা সত্যি দেখেছি তাই বলব, না কম, না বেশি।
    যাকগে, মরুকগে। যখন বেচেই দেব, তাহলে আর ঝগড়া রাখি কেন? কেন রিটয়ারের পর দিল্লিতে ন্যাশনাল কমিশনে এক লাখটাকা খরচা করে কেস লড়ি? গরীবের ঘোড়া রোগ! এসব আইন আদালত আমাদের জন্যে নয়।
    রত্না ভাবতে চেষ্টা করে যে কবে বিল্ডার ওকে বৌদি বলে ডেকেছিল, কবে ওর কথায় জ্বর নিয়ে ওর সঙ্গে দাঁড়িয়ে সামনের রাস্তা পাকা করতে সাহায্য করেছিল। কবে ভেতরের লাক্সারি হিডেন লাইট, ফলস্‌ সিলিং, ঘোরানো সিঁড়ি ওর কথামত বদলে দিয়েছিল।
    না:, বদলা নয়, বদল চাই। আমরা বড়। বড়প্পন দেখাতে হবে। আমাদের একটা বিল্ডারকে শিক্ষা দেয়া ছাড়া জীবনে আর কোন কাজ নেই কি!
    কনজিউমার ফোরাম তো মায়ের ভোগে গেছে, এবার ৪২০টাও যাবে। তার আগে আমরাই কেন উইথড্র করে নিই না? এখনো তো রেজিস্ট্রি হয় নি।

    রঞ্জন রওনা হয় বিলাসপুর। আর এসবের পেছনে খরচা করা নয়। বুনো হাঁসের পেছনে দৌড়নো নয়। কোর্টে গিয়ে উকিলের সহকারীকে বলে-- আমার লাগানো ৪২০ ধারার ক্রিমিনাল কেসটা উইথড্র করতে চাই। রেজিস্ট্রি হয় নি দেড় বছরেও, তার চেয়ে সিম্পল অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে--।
    লাফিয়ে ওঠেন অ্যাডভোকেট বর্মা,"" কি বলছেন কি মি: রায়! আজকেই আমি আর্গুমেন্ট করে আপনার কেস রেজিস্টার করিয়েছি। নতুন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথমে খারিজ করতে চাইছিলেন। বলছিলেন যখন দেড় বছরেও আগের উনি কিছু করেন নি, তার মানে পিটিশনে কোন দম নেই।
    আমি বল্লাম,-- দম আছে বলেই উনি খারিজও করে যান নি। প্লীজ, আগে আমার আর্গুমেন্ট শুনুন। ম্যাজিস্ট্রেট কনভিন্সড্‌। অর্ডার করেছেন কেস রেজিস্টার্ড করে বিল্ডারকে নোটিস দিতে। আপনি নোটিসের জন্যে কয়েক হাজার জমা করে দিন।
  • dukhe | 122.160.114.85 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১৬:৩৭428449
  • গুচতে আমার প্রথম পড়া টই এইটা । কী সাংঘাতিক কাণ্ডকারখানা আর ধন্যি রঞ্জনদার লড়াই ।
  • Manish | 59.90.135.107 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১৭:৫৪428451
  • রঞ্জন লেখা যেন আবার বন্ধ না হয়ে যায়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন